পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে একটা ধূমকেতু। নীল গ্রহের বুকে তার আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা আক্ষরিক অর্থেই নগণ্য। কিন্তু... কোনোভাবে, কারও সযত্ন পরিকল্পনার ফলে, তিল-তিল করে তার গতিপথকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য একটাই— যাতে সেই মৃত্যুদূত পৃথিবী থেকে প্রাণের সব চিহ্ন মুছে দেয়। সত্যব্রত বোস এই ব্যাপারটা লক্ষ করেছিলেন। কিন্তু সেই তথ্য সবার চোখের সামনে তুলে ধরার আগেই তাঁর সঙ্গীদের ও গবেষণাগারকে ধ্বংস করে দেওয়া হল। তাঁর সম্বন্ধে ছড়িয়ে দেওয়া হল এক মারাত্মক অপবাদ। প্রাণের মায়া না থাকলেও পৃথিবীকে তার গোপন শত্রুদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অরুণাচল প্রদেশের আদিম জঙ্গলের এক কোণে আশ্রয় নিলেন ডক্টর বোস আর তাঁর ছেলে জিষ্ণু। কিন্তু শত্রুর নজর এড়িয়ে তাঁরা কতদিন বাঁচতে পারবেন? সবচেয়ে বড়ো কথা, পৃথিবীকে কি আদৌ রক্ষা করা সম্ভব হবে? কেউ কি এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করতে পারবে? নিতান্তই হালকা ভাবে, "বইটা একটু উলটে-পালটে দেখে নিই" ভেবে হাতে তুলে নিয়েছিলাম এই হার্ডকভারটিকে। আর তারপর... সারা দিনে যখনই ফাঁক পেয়েছি তখনই এটাকে নিয়ে বুঁদ হয়েছি। অবসর পাওয়ামাত্র এটিই হাতে তুলে নিয়েছি। তারপর ডুব দিয়েছি কুটিল হিংস্রতা আর অদম্য লড়াকু মানসিকতার মধ্যে চলতে থাকা লড়াইয়ে। ঘড়ির কথা ভুলেই গেছি এই বুদ্ধিদীপ্ত, বর্ণনার নৈপুণ্যে অনন্য এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখাটির রসাস্বাদন করতে গিয়ে। সত্যি বলছি, শেষ কবে এইরকম শ্বাসরোধী কল্পবিজ্ঞান অ্যাডভেঞ্চার পড়েছিলাম, মনেই করতে পারছি না! লেখাটিতে প্রাপ্তবয়স্ক উপাদান নেই। কিন্তু তবু এ এক কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্ক লেখা, যা আমাদের বুঝিয়ে দেয়, ভালোবাসার মানুষের জন্য, ভালোবাসার এই সভ্যতার জন্য, ভালোবাসার এই গ্রহের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়াই আসলে জীবন। সেই অন্তিম অভিযানের সন্ধান আমাদের দেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার নেই। লেখাটি এককালে 'জয়ঢাক' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সেটিকে এমন সুমুদ্রিত, সু-অলংকৃত আকারে আমাদের কাছে পরিবেশন করে কল্পবিশ্ব পাবলিকেশন বিশেষভাবে ধন্যবাদার্হ হলেন। বইটির লে-আউট দারুণ। সামান্য ক'টি টাইপো শুধরে নিলে এটি সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠবে। রোমাঞ্চকর কল্পগল্পের প্রতি কিছুমাত্র অনুরাগ থাকলে এই বইটি সংগ্রহ করুন ও পড়ুন। ঠকবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।
বিজ্ঞানী সত্যব্রত বোস, হঠাৎ বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন সুইফট টাটল নামক একটি ধূমকেতুকে। ধূমকেতুটির পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা কাগজে কলমে অনেক কম হলেও তিনি বুঝতে পারেন যে এক অশুভ শক্তি সেই ধূমকেতুকে পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তাই তিনি এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য গোপনে এক পরিকল্পনা শুরু করেন, যা নিয়েই বইটার বাকি অংশ লেখা। - 'অন্তিম অভিযান' বইটা মোটাদাগে একটি অ্যাপোক্যালিপ্টিক সায়েন্স ফিকশন। সায়েন্স ফিকশন হলেও নিকট ভবিষ্যতের ঘটনা বলে সেখানে আমাদের পরিচিত ব্যপারগুলোর খুব একটা পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায় না। তবে বইতে যে ধরণের সাই ফাই উপাদানগুলো দেখানো হয়েছে তা খানিকটা অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে, আর সেগুলোর নামকরণগুলোর বেশিরভাগই মনঃপূত হয়নি। - অ্যাপোক্যালিপ্টিক সায়েন্স ফিকশন হিসেবে 'অন্তিম অভিযান' এর প্লটটা চলনশীল হলেও লেখনশৈলী একেবারেই ভালো লাগেনি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরর্থকভাবে জটিল শব্দ প্রয়োগ করার কারণে সাধারণ ঘটনা বুঝতেও বেগ পেতে হয়েছে অনেক সময়। বইতে পৃথিবী, চাঁদ আর মঙ্গল গ্রহ মিলিয়ে বেশ কিছু বাসিন্দাদের দেখা পেলেও এদের চরিত্রায়ণে তেমন কোন শেড দেখতে পেলাম না, যাদের চরিত্রে এরকম শেড ছিলো তাদেরকে বইতে এক্সপ্লোরই করা হয়নি। বইয়ের প্লটকে ঘিরে যে ঘটনাপ্রবাহ ঘটেছে একদমই সাদামাটাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যার বিশাল স্পয়লার ভূমিকাতেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। - পশ্চিমবঙ্গের বই হিসেবে 'অন্তিম অভিযান' বইয়ের প্রোডাকশন ঠিকঠাকই লেগেছে, আর প্রচ্ছদের ক্ষেত্রে ফ্রন্ট কভারের চেয়ে ব্যাক কভার বেশি অর্থবহ লাগলো। বইতে বেশ কিছু ইলাস্ট্রেশন থাকলেও সেগুলো থাকা না থাকায় গল্প পড়ায় তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি। এক কথায়, ইন্টারেস্টিং প্লট থাকার পরেও লেখনশৈলীর দুর্বোধ্যতার কারণে গল্পটা যেরকম হওয়ার কথা ছিলো তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। তারপরেও যারা সব ধরনের বাংলা সায়েন্স ফিকশন পড়তে পছন্দ করেন তারা বইটা পড়তে পারেন।