খুব সাধারণ একটা ছেলে; নাম মাসুদ কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেই জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতের সাথে। যার হাতের ইশারায় দেশ জুড়ে ঘটতে শুরু করে একের পর এক হঠকারী ঘটনা। সেই মুহূর্তেই কয়েক দশক পরে দেশে ফিরে আসে নব্বই দশকের আরেক মাফিয়া ত্রাস দাউদ খলিল; যাকে মাফিয়া জগত চেনে ‘দ্য গডফাদার কিলার’ নামে। জেল থেকে বের হওয়া অর্ক, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আব্রাহাম রাতুল; দুজনেরই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় অদৃশ্য শক্তির উৎসকে খুঁজে বের করা। যার কারণে তছনছ হয়ে গেছে অর্কের জীবন, যে কিনা পুরো দেশে পেতে রেখেছে অদৃশ্য এক জাল। এই গল্প অন্ধকার জগতের গল্প, যে গল্পের নির্মাতাই বিধ্বংসী। যেখানে প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে পরাজিত মানুষের গল্প। যারা আলোর দেখা পেয়েও সেই আলো কখনই স্পর্শ করতে পারে না। বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর পরের গল্প গডফাদার।
" Organized crime constitutes nothing less than a guerilla war against society."
ফ্লাপের কথা: খুব সাধারণ একটা ছেলে; মাসুদ কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেই জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতের সাথে। যার হাতের ইশারায় দেশ জুড়ে ঘটতে শুরু করে একের পর এক হঠকারী ঘটনা। সেই সময়ই দেশে ফিরে আসে নব্বই দশকের আরেক মাফিয়া ত্রাস দাউদ খলিল; যাকে মাফিয়া জগৎ চেনে 'দ্য গডফাদার কিলার' নামে। জেল থেকে ফিরে আসা অর্ক, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আব্রাহাম আব্রাহাম রাতুল; দুজনেরই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় অদৃশ্য শক্তির উৎসকে খুঁজে বের করা। যার কারণে তছনছ হয়ে গেছে অর্কের জীবন, যে কিনা পুরো দেশে বিছিয়ে রেখেছে অদৃশ্য এক জাল। এই গল্প অন্ধকার জগতের গল্প, যে গল্পে নির্মাতাই বিধ্বংসী। যেখানে প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে পরাজিত মানুষের গল্প। যারা আলোর দেখা পেয়েও সেই আলো কখনই স্পর্শ করতে পারে না। বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর পরের গল্প 'গডফাদার' ।
#গুরুত্বপূর্ণ_কিছু_চরিত্র
#মাসুদ_কবির খুবই সাধারণ একটি ছেলে মাসুদ কবির। যে একসময় হয়ে ওঠে অদৃশ্য ত্রাস। যে কখনও অমিত, কখনো কৌশিক নামে পরিচিত। সবকিছু কলকাঠি নেড়েও রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। #আব্রাহাম_রাতুল অর্কর মেন্টর। দুনিয়ার কাছে সে মৃত। কিন্তু কাজ করছে গোপন প্রজেক্টে। #অর্ক অর্ক ক্রাইম কনসালটেন্ট। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় বসে গোপন প্রজেক্টে কাজ করে যাচ্ছে। #দাউদ_খলিল সাধারণ ঘরে জন্ম হলেও একসময় হয়ে ওঠে গডফাদার এর সক্রিয় সদস্য। তারপর স্ত্রী মারা যাওয়ায় দুই গডফাদার কে একসাথে খুন করে হয়ে যায় গডফাদার কিলার। #রায়হান মাসুদ এর বন্ধু ও সহকারী। #বজলু রায়হান এর বন্ধু। পরে মাসুদ এর দলে যোগ দেয়। #রুদ্র মাসুদ এর স্কুল জীবনের একমাত্র বন্ধু। মাসুদ তার মাকে বাঁচাতে কিডন্যাপিং করে। পরে রুদ্রর নামে রেস্টুরেন্ট খুলে তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করে। #তারেক মাসুদ এর ইউনিভার্সিটির বড় ভাই। #অনন্যা মাসুদ এর প্রেমিকা। যাকে নিয়ে মাসুদ নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখে। #মৌ সিদ্দিক গডফাদারের মেয়ে। যে দাউদকে বিয়ে করে অন্য শহরে চলে যায়। #সামিয়া যে জিরো জিরো থ্রী এর অদৃশ্য মেম্বার। রাইসা নামে সে মাসুদের বডিগার্ড হিসেবে কাজ করে। #তূর্য তূর্য কম্পিউটার সাইন্সের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র।। সে মাসুদের হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৮০ কোটি টাকা চুরি করে। #সোবাহান_তালুকদার তারেকের মামা। সে অবৈধ লাইনে ব্যবসা করে। মাসুদ তার একটা চালান পার করে তার কাছের মানুষ হয়ে যায়। পরে মাসুদ এর পরামর্শে নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং একসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে যায়। #লিজা লিজা মাসুদের ইউনিভার্সিটির বন্ধু। সে মাসুদের সবচেয়ে বিপদের সময় তার পাশে ছিল। #মৃদুলা ট্রেনিং প্রাপ্ত আন্ডারকাভার অ্যাসাসিন। সে মাসুদের হয়ে একটা সিরিয়াল কিলিং পরিচালনা করে। #দিয়াগো_কার্লোস জমজ দুই ভাই। বাংলাদেশে এসে আত্মগোপন করেছিল। পরে মাসুদের হয়ে কাজ করে। #সামস দাউদ এর বন্ধু। প্রথমে দোলোয়ার গডফাদারের হয়ে কাজ করে। পরে দেলোয়ার ও সিদ্দিক মারা গেলে সে গডফাদার হয়ে যায়। #রাজ্জাক রাজ্জাক পেশায় ড্রাইভার। মাসুদের দলের হয়ে বিভিন্ন যায়গায় কাজ করে।
কাহিনী সংক্ষেপ: খুব সাধারণ একটা ছেলে মাসুদ কবির। তার একমাত্র বন্ধু রুদ্র। রুদ্রের বাবা বেঁচে নেই। মা অনেক অসুস্থ। মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। মাসুদ ঠিক করে সে মাসুদের মায়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করবে। সে পরিকল্পনা করে কিডন্যাপিং করে বিশাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান এর ছেলে রাব্বিকে। এদিকে মাসুদের ইউনিভার্সিটির বড় ভাই তারেকের বোনের বান্ধবী অনন্যার প্রেমে পড়ে যায় মাসুদ। কোলকাতার রেললাইনের পাশে ছালায় ঘেরা একটা ঝুপড়ি ঘরে জন্ম নেয় দাউদ। দাউদের বয়স যখন ১১ বছর তখন মাদ্রাসা থেকে এসে একদিন দেখে তার মায়ের ঘরে জগলু। সে মাদ্রাসায় ফিরে যায়। একদিন মাদ্রাসার এক হুজুর তাকে রুমে ডেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। যখন দাউদের বয়স ১৪ তখন সে মায়ের ঘরে যায়। পরদিন পুলিশ দাউদের মাকে ধরে নিয়ে যায় কারণ দাউদের মায়ের ঘরে জগলুর পুরুষাঙ্গ কাটা লাশ। তারপর সেদিনই দাউদ মাদ্রাসায় ফিরে হুজুরের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসলে দেখা যায় হুজুরের পুরুষাঙ্গ কাটা লাশ। এরপর দাউদকে কেউ কোলকাতায় দেখেনি। দু বছর পর দাউদকে দেখা যায় ঢাকায়। সে নজরে পরে যায় গডফাদার দেলোয়ার এর নজরে। সে কাজ করা শুরু করে দেলোয়ার এর হয়ে। তারপর ঘটনাচক্রে সে বিয়ে করে দেলোয়ার এর প্রতিদ্বন্দ্বী সিদ্দিক হোসেন এর মেয়ে মৌ কে। সব ছেড়ে দিয়ে দাউদ মৌ কে নিয়ে অন্য শহরে গিয়ে সংসার শুরু করে। একদিন বাসায় এসে দেখে তার বাড়িতে আগুন লেগেছে। সে আগুনে মৌ মারা যায়। দাউদ ছুটে যায় খুনের প্রতিশোধ নিতে। অর্ক জেল থেকে বের হয়ে বাসায় বসে সময় পার করছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসে আব্রাহাম রাতুল কোনো এক পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে একে একে জড়িয়ে যায় আরো অনেকে। কী হবে পরবর্তী ঘটনা? জানতে হলে পড়তে হবে গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় এবং বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর পরবর্তী বই গডফাদার।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া বইটি গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় বই। প্রথম পর্বে এয়ারপোর্ট নভেলা আকারে সকল চরিত্রদের সাথে পরিচয় করিয়ে প্লটে পাঠকদের কাছে তুলে ধরেন লেখক। তারপর দ্বিতীয় পর্বে খুব সুন্দর ভাবে সাধারণ জীবন থেকে অন্ধকার জগতে প্রবেশের প্রক্রিয়া খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে লেখক। কিছু মানুষ জীবনে আলোর দেখা পেলেও সবসময় সেই আলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে পারেনা। একসময় অন্ধকার জগতই হয়ে ওঠে তার। একজন মানুষের অন্ধকার জগতে বেড়ে ওঠা থেকে নানা চড়াই উৎরাই এখানে উঠে এসেছে। তার চেয়েও বেশি যেই বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে তা হলো মাসুদ কবির এর জীবনটা খলনায়কের হলেও এখানে এমন ভাবে সেই চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে আপনি কখন অন্ধকার জগতের মাসুদের পক্ষে ভাবা শুরু করবেন বুঝতেই পারবেন না। প্রতিটা চরিত্র নিখুঁত এবং দৃঢ়ভাবে তৈরি করা। পড়ার সময় আপনি প্রতিটা চরিত্র আলাদাভাবে অনুভব করতে পারবেন। সর্বোপরি বইটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সময়টা উপভোগ করেছি।
#প্রিয়_উক্তি ১/ যা মানুষ বুঝতে পারে না তা সে ভয় পায়। ২/ মানুষ নাকি খুবই উঁচু বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী! অথচ এই উঁচু বুদ্ধিমান প্রাণীদের সব নির্ধারণ হয় জন্ম দিয়ে! জাত, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরীব সব! ৩/ সৃষ্টিকর্তা অহংকার পছন্দ করে না, সৃষ্টির শুরু থেকেই যখন কোনো মানুষ অহংকার করতে শিখেছে তখনই এমন কোনো পরিস্থিতি হয়ে যায় যখন মানুষটা একেবারে শেষ হয়ে যায়। ৪/ মরুভূমিতে যদি কোন মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এই মুহূর্তে কি চাও? তার একমাত্র চাওয়া হবে এক গ্লাস পানি। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর কি মরুভূমিতে তৃষ্ণা মেটে? বরং পেয়ে যায় এক সাগর পিপাসা। ৫/ শত শত বছর আগের কোনদিন কোনো এক নির্মম ঘটনায় আমরা কত সহজেই আক্রান্ত হই কিন্তু আমাদের সময়েও যে কত কত নির্মম ঘটনা ঘটছে তা খুঁজতে যাই না। ৬/ নিজের চোখে নিজের বিশুদ্ধতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ৭/ ভারতের প্রেসিডেন্ট মোদির মত বেকুপ আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মত একটা স্টুপি��� কেমনে হয়?
#লেখক নতুন লেখক হিসেবে লেখকের লেখা খুবই সাবলীল। গডফাদার পড়ে অবশ্য মনে নতুন লেখকের বই পড়ছি। গডফাদার বইটি গডফাদার সির��জের দ্বিতীয় বই এবং লেখকের চতুর্থ উপন্যাস। এছাড়াও একই সাথে প্রকাশিত হয়েছে এক মলাটে দুই বইয়ের আলোকে ' দেজা ভু ' এবং ' তোমার দেয়া আমার কোনো নাম ছিল না '।
#উৎসর্গ বই খুলেই প্রথমে যে বিষয়টা ভালো লেগেছে তা হলো এর উৎসর্গ পত্র। এরকম উৎসর্গ পত্র খুব কমই চোখে পড়ে। যাদের উৎসর্গ পত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ আছে এটা তাদের মোহিত করবে।
#প্রচ্ছদ বইটির প্রচ্ছদ যে চমৎকার হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর এই প্রচ্ছদটি করেছেন সকলের খুবই গুণী একজন প্রচ্ছদকার আদনান আহমেদ রিজন। প্রচ্ছদটিতে আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৫/৫।
#প্রোডাকশন বরাবরের মতই সতীর্থের প্রোডাকশন খুবই ভালো। বইটি স্ট্যান্ডার্ড সাইজের হার্ডকভার। কাগজের মান এবং বইয়ের ছাপা মানসম্মত। ( কয়েক যায়গায় কিছু বানান সংশোধন এর প্রয়োজন।)
“Organized crime constitutes nothing less than a guerilla war against society.”— Lyndon Baines Johnson - ❛গডফাদার❜ - মাসুদ কবির, ছোটবেলা থেকেই সমাজের অন্ধকার দিক দেখে বড় হওয়া একজন মানুষ। তাই বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই সমাজ পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকে সে। তার সেই পরিকল্পনায় যোগ হয় রুদ্র, রায়হান, তুর্য, ফিরোজ, রাজ্জাক সহ আরো অনেকে। - আব্রাহাম রাতুল, সরকারের এক বিশেষ টাস্ক ফোর্সে কাজ করতো সে আর অর্ক। তারা হঠাৎ বুঝতে পারে যে ঢাকা শহরে এক নতুন গডফাদারের আবির্ভাব হয়েছে, যার কারণে সৃষ্টি হতে থাকে নানা ধরনের অরাজকতা। এদিকে ঢাকায় পা রাখেন গডফাদার কিলার খ্যাত দাউদ খলিল। এখন পুরো দেশ জুড়ে এইসব অরাজক পরিস্থিতির শেষ পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য পড়তে হবে লেখক আমিনুল ইসলামের গ্যাংস্টার ভিত্তিক ক্রাইম থ্রিলার ❛গডফাদার❜ । - ❛গডফাদার❜ বইটি লেখকের 'গডফাদার' সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব। তাই এই পর্বটি ভালোভাবে বোঝার জন্য সিরিজের আগের বই 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' পড়া আবশ্যক। সেই গল্পে প্রথম আবির্ভাব হওয়া এক চরিত্রকে ঘিরেই ❛গডফাদার❜ গল্পটি লেখা হয়েছে। বইয়ের কাহিনিশৈলী এবং বর্ণনাভঙ্গি প্রথম থেকেই বেশ টানটান ছিলো, সিরিজের আগের বইয়ের মতো তাড়াহুড়োর জায়গা বেশ কমই দেখলাম এই বইতে। তবে এই বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড বা গ্যাংস্টার বিষয়ক ব্যপারগুলো যত ভালোভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এর কাউন্টার পার্ট হিসেবে পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনির অংশগুলো ততটা স্ট্রংলি ফুটে উঠেনি বলে মনে হয়েছে। - ❛গডফাদার❜ বইয়ের প্রধান চরিত্র মাসুদ কবির। একজন উঠতি গডফাদার হিসেবে তার চরিত্র বেশ ভালোভাবে লেখা হয়েছে, তবে একেবারের শেষের কিছু ঘটনায় তার চরিত্রের ইমপ্যাক্ট কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে হলো। গডফাদার কিলার হিসেবে দাউদ খলিল চরিত্রটা কাহিনির সাথে ভালোভাবে মিশে গিয়েছে। বাকি সাপোর্টিং চরিত্রগুলো মোটামুটি লাগলো। গ্যাংস্টার ভিত্তিক গল্প হিসেবে বেশ কিছু সিনেম্যাটিক ঘটনার উল্লেখ থাকলেও তা পড়তে খুব বেশি খারাপ লাগেনি। - ❛গডফাদার❜ বইয়ের প্রোডাকশন বাহ্যিকভাবে ওভারঅল ভালোই, প্রচ্ছদটা অবশ্য মোটামুটি লেগেছে। বইয়ের বানান ভুল আর টাইপোও কিছু ছিলো। তবে সেগুলো খুব বড় সমস্যা বলে মনে হয়নি। - এক কথায়, গ্যাংস্টার-আন্ডারওয়ার্ল্ড ঘরানার বাংলা মৌলিক থ্রিলারে বেশ ভালো মানের এক সংযোজন হচ্ছে ❛গডফাদার❜ যা সব দিক থেকেই এই সিরিজের প্রথম বইকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তাই যারা গ্যাংস্টার-আন্ডারওয়ার্ল্ড ভিত্তিক ক্রাইম থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন তারা ❛গডফাদার❜ বইটা পড়তে পারেন, তবে তার আগে সিরিজের প্রথম বই 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' পড়া আবশ্যক।
গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তি “গডফাদার” বইয়ের মাধ্যমেই কাহিনী মূল প্রেক্ষাপট শুরু। মাসুদ কবির বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সাধারণ একটা ছেলে এক সময় হয়ে ওঠে অসাধারণ। অন্ধকার জগতের ত্রাস। একের পর কান্ড ঘটিয়ে হয়ে উঠতে থাকে এক অদৃশ্য গডফাদার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায়ই ছোট ছোট কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পরতে থাকে অন্ধকার দুনিয়ায়। এরপর হঠাৎই আবির্ভূত হয় 'দ্য গডফাদার কিলার' দাউদ খলিল যাকে ঢাকা শহরে সবাই এক নামে জানত। দাউদ খলিল একটা শক্তিশালী ক্যারেক্টার যার অতীত ছিলো খুবই ভয়ানক। বইয়ের প্রত্যেকটা চরিত্র বেশ দারুণ ভাবে বিল্ডআপ করা হয়েছে। যে সব চরিত্রে বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন সেখানে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে যেখানে কম প্রয়োজন সেখানে কম দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কিছুই বইয়ের প্রতি বিরক্তি টেনে আনে নি। বইয়ের প্রায় প্রত্যেকটি পৃষ্ঠাতেই টানটান উত্তেজনা ছিল যা অপর পৃষ্ঠা দ্রুত উল্টাতে বাধ্য করবে। বড় ছোট মিলিয়ে বেশ কয়েকটি একশন সিকুয়েন্স রয়েছে যা লেখক বেশ দক্ষতার সাথেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
আমরা সাধারণত বইয়ের মূল চরিত্রের প্রতি আকর্ষিত হই কিন্তু এই বইয়ের মূল চরিত্র মাসুদ কবির যা কর্মকান্ডে আপনি আকর্ষিত হবেন না। কিন্তু তার বুদ্ধিমত্তা আমাকে বেশ ভালো ভাবেই আকর্ষন করেছে। বইয়ে আপনি অন্ধকার জগতের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের ফিল পাবেন যেমন মারামারি, খুন, কিডন্যাপিং,হ্যাকিং, ব্যাংক লুট এরকম আরও অনেক কিছু আর মজার ব্যপার হচ্ছে প্রত্যেকটির নিখুঁত কাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
পূর্বের বইয়ের (বাটারফ্লাই ইফেক্ট) তুলনায় লেখকের শব্দচয়ন, গল্প বলার ভঙ্গিমা, উপস্থাপন করায় বেশ পরিবর্তন হয়েছে, এখন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মতোই তার লেখা প্রতিটি শব্দে ফুঁটে উঠেছে।
বইয়ে কয়েকটা বানান ভুল চোখে পড়েছে। আর সতীর্থের প্রডাকশন তো বরাবরের মতোই অসাধারণ এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
যাদের ক্রাইম থ্রিলার, অন্ধকার জগতের জীবন, অ্যাকশন এই বিষয় গুলো ভালো লাগে তাদের জন্য বইটি অবশ্যই পাঠ্য। আর যারা এগুলো পড়েননি তারাও পড়ে দেখতে পারেন হতাশ হবেন না। আর সিরিজের প্রথম বইটি (বাটারফ্লাই ইফেক্ট) পড়া না থাকলে সেটা অবশ্যই আগে পড়ে নিবেন তাহলে কাহিনী বুঝতে সুবিধা হবে। প্রথম বইতো আগুন লাগানোর একটা পরিকল্পনা মাত্র এই বইয়ে এসে সেই আগুন যেনো দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে।
পরিশেষে, লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন অসাধারণ বই পাঠককে উপহার দেয়ার জন্য। ভবিষ্যতে আরও দারুণ কিছুর অপেক্ষায়। শুভ কামনা রইল।
লেখক ভিন্ন তরিকায় দেখিয়েছেন গল্পটা। একটা আলোর গল্প না বলে অন্ধকারের গল্প বলেছেন লেখক। ভালোই ছিল। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করেছি। তবে আমার মতে, মাঝখান দিয়ে প্রেম কাহিনিটা না ঢুকালে আরো মজা আসতো, ওইটার ফলে গতি কিছুটা স্মিত হয়ে যায়। এন্ডিংটাও ঠিক পছন্দসই হয়নি, অনেকটাই সাধারণ ফিল্মি। বিশেষভাবে কেজিএফ এর মতো। লেখকের লেখনী ভালো ছিল। তবে কিছুক্ষেত্রে বাংলা শব্দের জায়গায় লেখক ইংলিশ ব্যবহার করেছিলেন, যা আমার দৃষ্টিতে একটু কটুই লেগেছিল। মাসুদ চরিত্রটাকেও বেশ ভালো লেগেছে। অন্ধকার জগতের পার্ফেক্ট চ��িত্র। সর্বোপরি ভালোই ছিল যাত্রাটা।
❝শত শত বছর আগের কোনোএক নির্মম ঘটনায় আমরা কত সহজেই আক্রান্ত হই কিন্তু আমাদের সময়েও যে কত কত নির্মম ঘটনা ঘটছে তা খুজতে যাই না��❞
ওপরের অংশটির সাথে বাস্তবিক প্রেক্ষাপটের মিল পাওয়া যায়;সদ্য প্রয়াত নায়িম কেই দেখুন!! সড়কে প্রাণ প্রতিদিন ই যায় যায় অবস্থা অথচ আমরা তবুও শান্ত ভাবে বসে থাকি||অথচ ভিন্ন দেশের ইস্যুতে,ভিন্ন দেশের যুদ্ধ,দূর্দশা নিয়ে নিয়ে আমাদের আমলারা হাসি তামাশা করে বেড়ান!!
গডফাদার বই এর মূল বিষয়বস্তু হল-অন্ধকার জগতের বাসিন্দা/মাফিয়া/আন্ডারওয়ার্ল্ড|| সাধারণ একজন মানুষ ট্রমাটাইজড হয়ে কত ভয়ংকর অস্ত্রে পরিণত হতে পারে আর তার ফলাফল নিয়েই এই বই এর যাত্রা||
যাহোক, সহজেভাবে বললে—বইটিকে অতি সাধারণ মনে হতে পারে; তাই একটু ঘুরপ্যাঁচে ব্যক্ত করলাম। এই বইয়ে কে কার চেয়েও বড়ো খেলোয়াড়; এই নিয়েও আমোদ-প্রমোদ-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিছক মনোরঞ্জনের জন্য তো নয়। পাঠক যেন কোনোভাবে স্বস্তি থাকতে না পারে, সেই উদ্দেশে লেখক পুরো গল্পটি সাজানোর প্রচেষ্টা করেছে। বইয়ের অবসানে না আসা পর্যন্ত কারও ধারণায় থাকবে না যে—এইরকম একটি ঘটনা গঠতেও পারে; তা-ও এইভাবে!
⚫️আখ্যান— "খুব সাধারণ একটা ছেলে মাসুদ কবির | বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি নিজেই জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগিতের সাথে|| যার হাতের ইশারায় দেশ জুড়ে ঘটতে শুরু করে একের পর এক হঠকারী ঘটনা || সেই সময়ে দেশে ফিরে আসে নব্বই দশকের আরেক মাফিয়া ত্রাস দাউদ খলিল;যাকে মাফিয়া জগত চিনে "দ্য গডফাদার কিলার" নামে !!
⚫️পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛গডফাদার❜ অসাধারণ একটি বই। উত্তেজনাকর পরিপূর্ণ থ্রিলার। গল্প ছিল সাবলীল আর আকর্ষণীয়। গতানুগতিক ভাব থাকলেও সব মিলিয়ে দারুণ লেগেছে|| লেখক কে ত জানিয়ে রেখেছিলাম মাসুদ এর পরিণতি মন মতন না হলে উনার নামে মামলা করবো :3
⚫️সূত্রপাত—
গল্পের শুরুটা মাসুদ নামের এক যুবককে ঘিরে। রুদ্র নামক বন্ধুর সাথে আড্ডায় জানতে পারে রুদ্রর মা অসুস্থ||নিজের মা না থাকার কষ্ট টা খুব ভাল করেই বুঝে মাসুদ||তাই রুদ্রকেও যেন নিজের মাকে হারাতে না হয় সেজন্য নেমে পরে ভয়াবহ এক কাজে||কিডনাপ করে বসে শহরের নামীদামী একজনের বাচ্চাকে||গল্পের শুরু যেন এখান থেকেই||এরপঅর আস্তে আস্তে মাথানাড়া দিয়ে উঠে আর ও অনেক অপকর্ম || কিন্তু সদ্যযৌবনে পা দেওয়া ছেলেটিও পড়ে যায় প্রেমে||সব ছেড়ে ছুড়ে যখন সাধারণ জীবন কাটানোর চিন্তা শুরু করে,তখন ই ধাক্কা খাই||মেয়েটি ত্যাগ করে তাকে||এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় এর উদাসী মাসুদ থেকে হয়ে যায় দেশের সেরা টেরর এর মধ্যে অন্যতম|| এভাবেই চলতে থাকে অন্ধকার জগতে তার ত্রাসে রাজত্ব|| তবে সবকিছুর শেষ আছে,তাই মাসুদের ও শেষ আছে; আর এই শেষ জানতে হলে বইটি নিয়ে বসে পড়ুন||
⚫️চরিত্রায়ন—
চরিত্রায়নের সফলতা তখন ই আসে,যখন আপনি কোনো চরিত্রের প্রতি বায়াসড হতে পারবেন||আমি মাসুদের ফ্যান ভাই|| I just want Masud to rule!! বাকি চরিত্র গুলোও ভাল ছিল,একটার সাথে আরেক ক্যারেকটার এর যোগসাজশ টা আস্তে আস্তে ধরতে পারবেন কিন্তু ততক্ষণে ডুবে যাবেন মাসুদের দুনিয়ায় 🖤
⚫️খুচরা আলাপ—
বই টা অনেক বেশি ফিল্মি স্টাইলে লেখা|| যা একাধারে আনন্দ যেমন দিয়েছে,তেমনি মাঝে মাঝে বিরক্তিকর ও লেগেছে||মাফিয়াদের পুরো জীবন টাই সিনেমাটিক,তাই তাদের নিয়ে লেখা টাও সিনেমাটিক ই হবে!! পুরো বই এ শুধু শেষের কয়েকটা পৃষ্ঠা বাদে বাকি অংশে ডুবে ছিলাম প্রায়||
বইটা নিয়ে যতটা এক্সপেকটেশন ছিল, সেটা এই বই শতভাগ পূরণ করেছে৷ দুর্দান্ত এক থ্রিলার। মাসুদ কবিরের যাত্রাটা অনেকদিন মনে থাকবে। উত্থানটাও। লেখক আমিনুল ইসলাম প্রতি বইতেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। শুভকামনা। ❤️
গল্পটা অনেক স্ট্রং। পড়তে গিয়ে মনে হয়নি এটা লেখকের দ্বিতীয় প্রকাশিত বই। চরিত্র গুলো খুব ভালো ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এই সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট খুব অ্যাভারেজ ছিল। তাই গডফাদারের ব্যাপারে বেশি এক্সপেক্টেশন ছিল না। কিন্তু পড়তে গিয়ে মজা পেয়েছি। বাটারফ্লাই ইফেক্টকেও জাস্টিফাই করছিল গডফাদার। এই ধরনের ক্রাইম থ্রিলার গুলোতে রহস্য অনুমান করে ফেলার বা টুইস্ট ধরে ফেলার মত কোন ব্যাপার থাকে না৷ শুধু এর পর কি হবে সেটা জানার জন্য এগুতে থাকা। সেই হিসেবে শেষে কোন টুইস্ট পেলে সেটা সারপ্রাইজ হিসেবে কাজ করে। ওই সারপ্রাইজটাও এনজয় করেছি।
গডফাদার। নাম এবং প্রচ্ছদ দেখলে অনেকেরই সেই ক্লাসিক মুভির কথা মনে পড়ে যাবে। তবে এই উপন্যাসের সাথে ঐ মুভির মিল আছে শুধুমাত্র মাফিয়া বা আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে।
যারা আমিনুল ইসলামের 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' পড়তে চান তাঁরা রিভিউটি এড়িয়ে যেতে পারেন। উক্ত নভেলাটি না পড়লেও চলে যায় তবে পড়ে নিলে মনে হয় আরো বেশি মজা লাগবে।
সমাজে ভালো মানুষ আছেন। আবার আছেন খারাপ মানুষ। আসলে কি তাই? ভালোর মাঝে নিকষ অন্ধকার আবার খারাপের মাঝেও সুন্দর আলো কি থাকতে পারে না? সাদা এবং কালোর মাঝে গ্রে এড়িয়ার কথা তো অনেকেই বলেন। মাঝে মাঝে মনে হয় ঐ গ্রে এড়িয়াও অনেক অংশে বিভক্ত।
ছোট্ট একটি ঘটনা থেকে অনেক বড় পরিণতি সৃষ্টি হতে পারে। এইরকম হয়ে যাওয়াটাই তো বাটারফ্লাই ইফেক্ট। গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব অর্কের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনারই সমসাময়িক। অর্কের কথা মনে আছে তো? সেই ডিটেক্টিভ যে বাটারফ্লাই ইফেক্ট এবং 'তোমার দেয়া আমার কোনো নাম ছিল না' উপন্যাসিকাতে ছিলেন।
অর্কের ফেঁসে যাওয়া। রাতুলের গায়েব হয়ে যাওয়ার পিছনের স্ট্রিং একজনই নাড়িয়েছেন। মাসুদ কবির, অমিত হাসান অথবা কৌশিক আহমেদ বিভিন্ন নামে তাঁর সাথে দেখা হবে এই নভেলে। ক্ষুরধার বুদ্ধির অধিকারি এই রহস্যময় ব্যক্তি বাটারফ্লাই ইফেক্ট ব্যবহার করে ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে চান আন্ডারগ্রাউন্ডের নাম্বার ওয়ান ম্যান। মারাত্মকভাবে মেন্টালি ডিস্টার্ভড এই সাধারণের অসাধারণে পরিণত হওয়ার কাহিনী দেখতে পাওয়া যায় এই গ্রন্থে।
ছোট্ট একটি ঘটনা কত সুদূরপ্রসারীভাবে কাউকে আমূল পাল্টে দিতে পারে তা সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন। নিজের মানবিক আচরণের কারণে মাসুদ কবির যেমন বিশ্বস্ত সঙ্গী-সাথী পেয়ে যায় ঠিক তেমনি ভয়ানক অমানবিক কর্মকান্ড করতেও তাঁর কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু একইরকম কষ্টে ভুগা দাউদ খলিলও দেশে ফিরছেন। 'দ্য গডফাদার কিলার' নামে পরিচিত এই ধুরন্ধর মানুষটির অতীত ভয়াবহ। তিক্ত এক অভিজ্ঞতার কারণে তিনি একে একে গডফাদারদের শেষ করে দেন দেশে-বিদেশে।
মাসুদ কবিরের এই গল্পে কিভাবে আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষ ক্রুর বাস্তবতার শিকার হয়ে অন্ধকার জগতে পা রাখেন তা দেখানো হয়েছে যথাযথভাবেই। সমাজে ভালো মানুষ যেমন আছে, খারাপরাও আছে। ভালো মানুষদের থাকার অধিকার থাকলে, খারাপদের সমাজে থাকার অধিকার থাকবেনা কেন? জন্ম থেকে তো কেউ খারাপ হয়ে আসেনা। রাজনীতিতে মাফিয়ার ��্রভাব, কারো ডান হাত কিভাবে নির্ধারিত হয়, মাফিয়া জগতেও আকস্মিক মানবতার আলো মিট মিট করে ওঠা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের বর্ণনা একজন ভালো গল্পকথকের মতই বলেছেন লেখক।
আমিনুল ইসলামের লিখা বইয়ের মধ্যে এটি আমার পড়া চতুর্থতম। আমি আমার আগের রিভিউগুলোতে বারবার একটা কথা বলেছি যে একটি গ্রন্থে স্টোরিটেলিং বা গল্পকথন আমার কাছে অন্যতম প্রধান বিষয়। লেখকের দারুন স্টোরিটেলিং এর দক্ষতা অপ��ক্ষাকৃত কম আলোচিত। একইসাথে আমার মতে আমিনুল ইসলাম একজন আন্ডাররেটেড লেখক।
উপন্যাসে অনেক ধরণের অনুসঙ্গ আনার পরও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা প্রশংসনীয়। তবে এই বইয়ের দুই মোড়কের মাঝে গিমিক আছে বেশ কিছু্। একটি ইন্টারেস্টিং দ্বৈরথ বা মাফিয়া থ্রিলার সিরিজ জমাতে এরকম গিমিক অবশ্য দেখা যায় প্রায়। তবে লেখালেখির ক্রাফ্টের কথা বললে টুইস্ট নির্ভর নয় গডফাদার। তবে কিছু চমক তো আছেই।
মাসুদ কবিরের সামনে মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের এবং প্রশাসনের অন্যান্য প্রতিপক্ষের পাশাপাশি সবচেয়ে মারাত্মক প্রতিপক্ষও এসে দাড়িয়েছে। টিম ০০৩।
গডফাদার সিরিজের আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। অন্ধকার জগতের অনেক আখ্যান আছে এই এক নভেলে। পাঠকের হয়তো কোন কোন অন্ধকার চরিত্রকে ভালো লেগে যেতে পারে।
গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় বই গডফাদার শেষ করলাম, বইটি মূলত ভিলেন কারেক্টারকে ফোকাস করে লেখক লিখেছেন, এবং বলতেই হয় একইসাথে সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট বইয়ের সাথে চমৎকার ভাবে কানেক্টেড করেছেন চমৎকার ভাবে।এই বইয়ের মূল কারেক্টার হচ্ছে মাসুদ কবির, বইয়ে এই কারেক্টারটাই হাইলাইট করা হয়েছে তাই মাসুদ কবিরকে পছন্দ হতে পাঠক বাধ্য।
বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে কোনোরূপ বোরিং ফিল হয়নি, কেননা প্রত্যেকটা পৃষ্ঠাতেই লেখক বলতে গেলে অ্যাকশন বা চমক রেখেছেন, সেই সাথে প্রথম বইয়ের সাথে ভালোভাবেই লিংক করে দিয়েছেন। তাছাড়া দেশে বেশ কিছু আলোচিত রাজনৈতিক ঘটনা, দূর্ঘটনা ঘটেছিলো তা লেখক অতি সূক্ষ্মভাবে বইয়ের গল্পে ঢুকিয়ে দিয়েছেন যা পড়ে বেশি ভালো লেগেছে। বইয়ে প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, দূর্নীতি, রাজনৈতিক করালগ্রাস, সমাজের অন্ধকার দিক ইত্যাদি নানান বিষয়কে এক মলাটে এনেছেন লেখক।
মাসুদ কবিরের ছোটোবেলা, রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উত্থান পতনের গল্প লেখক চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। একই সাথে সিরিজের প্রথম বই পড়ার সময় যে সকল দূর্বলতা গুলো চোখে লেগেছিলো তা অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠেছেন।
বইয়ের সম্পূর্ণ কাহিনি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে বলতে গেলে গল্প অনেকটা সিনেমার মতো হয়ে গেছে, ওয়ান ম্যান আর্মি টাইপ। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে লেখক একটু বেশিই প্রধান কারেক্টারকে ফোকাস করেছেন। বইয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা ভূমিকার দরকার ছিলো, যতটুকুও বা ছিলো তাতে ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আরেকটা বিষয়, বইয়ের ডিটেইলিংয়ের অভাব বোধ করেছি বেশি, বিশেষ করে ফাইটিং বা অ্যাকশনের যখন বর্ণনা দেওয়া হচ্ছিল তখন। এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খারাপ লেগেছে যে এন্ট্রিপার্টির অ্যাকশনের বর্ণনাটা এড়িয়ে যাওয়া। তাছাড়া লেখক যদি একটা টাইম ফ্রেম মেইনটেইন করতেন তাহলে বেশ ভালো হতো, এতে আগেই বুঝা যেতো অধ্যায়টা কি নিয়ে বা কখনকার বর্ণনা হচ্ছে ।
পরিশিষ্ট: গল্পটা দারুণ, অন্তত মৌলিকে এই ধরনের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা আগে পড়া হয়নি। একই সাথে বইয়ের পুরোটা জুড়েই উপভোগ করেছি। কেউ যদি বইটা পড়েন আশাকরি ভালো লাগবে, যদিও খুব বেশিই সিনেমাটিক মনে হবে। আর পড়ার ক্ষেত্রে আগে সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট আগে পড়ে ফেলবেন, এই বই পড়ার পর পড়লে আর মজা পাবেন না, এই বইয়ে বাটারফ্লাই ইফেক্টের স্পয়লার তো আছেই ব্যাকস্টোরিও উঠে এসেছে।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট বইয়ের শেষের দিকে এক ব্যাক্তির নাম বের হয়ে এসেছিল যার নাম "মাসুদ কবির". বস্তিতে বড় হয়ে ওঠা, অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারানো ছেলেটির সাধারণ কেউ থেকে গডফাদার হয়ে ওঠার গল্প এটি। বন্ধুদের সাথে মিলে অনৈতিক কাজ করার মধ্য দিয়ে তার বড় কিছু হওয়ার দানা ধীরে ধীরে বাঁধতে শুরু হয় যদিও অনৈতিক কাজটি মাসুদ তার বন্ধুর স্বার্থেই করেছিল। এরপর তার আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। কোথায় জায়গা মতো টোপ ফেলতে হয় তা মাসুদের খুব ভালো করে জানা। মাসুদের সাথে টিপিক্যাল গ্যাংস্টারদের মিল নেই বললেই চলে। টিপিক্যাল গ্যাংস্টারগুলো যেমন চব্বিশ ঘন্টা গালি গালাজ ও মেয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকে মাসুদ তার বিপরীত। তবে তার জীবনেও অনন্যা নামের একজনের আগমন ঘটেছিল যা তার মনের মধ্যে আবারও একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করার আশার খোরাক যোগায় যার স্থায়ীত্ব খুব বেশি দিন টিকেনি। একলা, নিঃসঙ্গ জীবন যার তার যেমন কোনো পিছুটান নেই, মাসুদেরও ঠিক সেরকম জীবন ছিল, সেজন্য অসাধারণ হওয়ার তালিকায় নিজের নাম জুড়তে খুব বেশি সময়ের তার দরকার পড়েনি।
মাসুদকে ঠেকাতে গডফাদার কিলার দাউদ খলিল পর্যন্ত বাংলাদেশে পাড়ি জমান। আরেকদিকে জিরো জিরো থ্রি নামের টিম লেগে পড়ে মাসুদকে ধরার উদ্দেশ্য। এই টিমের তিনজন সদস্যর মধ্যে দু'জন হলো বাটারফ্লাই ইফেক্ট বইয়ের পরিচিত দুটো নাম আব্রাহাম রাতুল ও অর্ক। দেশের মাফিয়া চক্রের ইতি টানতে তারা প্রস্তুত।
গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় বই এটি। বইটা এক বসায় শেষ করার মতো। মাসুদ কবির এর ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এক কথায় চমৎকার। আজকের মাসুদ কেন এমন পেশা বেছে নিলো তা লেখক খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আমার মনে হয় লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে মাসুদের চরিত্র এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন অনেক পাঠক চাইবে শেষে মাসুদ যেন ধরা না পড়ে বা মারা না যায়। বাকি পাঠকদেরটা না বলতে পারলেও আমার বেলায় এমনটাই হয়েছে, গল্পটা পড়ে মাসুদের প্রতি এক প্রকার সফট কর্নার তৈরি হয়েছে। মাসুদের এই পৃথিবী থেকে ভালো কিছু পাওয়ার ছিল।
যদি অতিরঞ্জিত ব্যাপার নিয়ে বলি তাহলে হঠাৎ করে অমিত চরিত্রের আবির্ভাব কেমন যেন খাপছাড়া লেগেছে। লেখক একটা টুইস্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু অমিতকে নিয়ে আরেকটু বিশদ বর্ণনা থাকলে ভালো হতো। এছাড়া বইটিতে নামের ভুল বেশ চোখে পড়েছে। আবার প্রারম্ভ অংশটুকু হুবহু চুয়াত্তর অধ্যায়ে তুলে দেওয়াটা কেমন যেন।
‘মাফিয়া' সম্পর্কে আমরা কতটুকু অবগত আছি বা কতটুকু জানি। আমরা অনেকেই হয়ত তাদের সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণাই রাখি, আবার অনেকে একটু কম। চলুন বইয়ের মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে যেনে নিই মাফিয়া কী বা কাকে বলে, এদের উৎপত্তি স্থল এবং এদের কাজ সম্পর্কে।
ম���ফিয়া শব্দটির উৎপত্তি সিসিলিতে। অনেকের মতে এটি আরবি উৎসের শব্দ। সিসিলি এক সময় মুসলিম শাসিত আমিরাত বা রাজ্য ছিল। তাই মাফিয়া যে আরবি উৎসের শব্দ সেটি সরাসরি প্রত্যাখান করা যায় না। সিসিলির এপানি এবং মারসালা অঞ্চলের কিছু গুহা বা গোপন আস্তানায় সরকার বিরোধী, বিদ্রোহী, অবিভাসী, অপরাধী প্রভৃতি লুকিয়ে থাকত আরব শাসকদের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ সেখানে অভিযান চালাত। তাই অভিযান কারী মুয়াফা থেকে স্হানগুলোর নাম হয়ে যায় মাফিয়ে। বলা হয় আরবি মুয়াফা থেকে উদ্ভূত মাফিয়ে থেকে মাফিয়া।
আর একটি মতে, সিসিলীয় শব্দ মাফয়ুস্থ বা মাফিয়ে কিংবা ইতালীয় মাফিয়োসো হতে মাফিয়া শব্দের উদ্ভব। মাফিয়ুস্থ ও মাফিয়োসো শব্দের অর্থ সদম্ভে হাঁটা, বাহাদুরি, সাহসিকতা,নির্ভীকতা প্রভৃতি। উনিশ শতকে মাফিয়ুস্থ শব্দের অর্থ ছিল মস্তান, উদ্ধত, নির্ভীক, উদ্যমী এবং গর্বিত।
মাফিয়ার সংঙ্গাঃ পরস্পর নির্ভরশীল কিন্তু নিবিড় সম্পর্কহীন অথচ পরস্পর যোগাযোগবদ্ধ অভিন্ন সাংগাঠনিক কাঠামো এবং আচরণবিধি পালনকারী অপরাধী দলসমূহের জোটকে মাফিয়া বলে।
মাফিয়া শব্দের সঙ্গে অপরাধীর সংশ্লিষ্টতা: ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে “ mufiusi di la Vicaria " ( “ ভিকারিয়ার মাফিয়োজি ") শিরোনামের নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর মাফিয়া শব্দটি অপরাধ বা অপরাধীর গোপন সংগঠনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য হয়ে যায়। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে পালের্মোর প্রিফেক্ট ফিলিপ্পো আন্তেনিও গুয়ালতেরিও - এর একটি দাপ্তরিক প্রতিবেদনে মাফিয়া শব্দটির প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবহার হয়। এর পর থেকে শব্দটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহার হতে থাকে।
মাফিয়ারা বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে মাদক, অস্ত্র, অবৈধ পন্য প্রভৃতিসহ যেকোনো চোরাচালানে সহায়তা, বিবাদে মধ্যস্থতা ও বিপদে কাঙ্খিত সহায়তা প্রদান এবং অবৈধ অর্থ লেনদেন বা চুক্তির সমন্বয় আর দেখভাল মাফিয়াদের প্রধান কাজ। মাফিয়া সদস্যরা সার্বভৌম সংস্থার সদস্য হিসেবে নিজেদের সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত বলে দাবি করে।
🔹ফ্লাপ হতেঃ
খুব সাধারণ একটা ছেলে; নাম মাসুদ কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতের সাথে। যার হাতের ইশারায় দেশ জুড়ে ঘটতে শুরু করে একের পর এক হঠকারী ঘটনা। সেই সময়ে দেশে ফিরে আসে নব্বই দশকের আরেক মাফিয়া ত্রাস দাউদ খলিল; যাকে মাফিয়া জগতে চেনে ‘দ্যা গডফাদার কিলার' নামে। জেল থেকে বের হওয়া অর্ক, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আব্রাহাম রাতুল; দুজনেরই লক্ষ হয়ে দাঁড়ায় অদৃশ্য শক্তির উৎসকে খুঁজে বের করা। যার কারণে তছনছ হয়ে গেছে অর্কের জীবন, যে কিনা পুরো দেশে বিছিয়ে রেখেছে অদৃশ্য এক জাল।
এই গল্প অন্ধকার জগতের গল্প, যে গল্পের নির্মাতাই বিধ্বংসী। যেখানে প্রতিটা অধ্যায়ে রয়েছে পরাজিত মানুষের গল্প। যারা আলোর দেখা পেয়েও সেই আলো কখনোই স্পর্শ করতে পারে না।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর পরের গল্প ‘গডফাদার'।
🔹পাঠ – প্রতিক্রিয়াঃ
গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় বই “গডফাদার"। বইটি বাটারফ্লাই ইফেক্টের সিকুয়েল। বেশ কিছুদিন আগে শেষ করেছি বইটা। ২৭৮ পৃষ্ঠা এবং পচাত্তরটি অধ্যায়ের সমন্বয়ে নির্মিত বেশ মোটাসোটা একটি বই। সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট পড়ার পর নিজের ইন্টারেস্ট আর ধরে রাখতে পারিনি। খুব দ্রুতই পড়ে ফেললাম সিরিজের সিকুয়েল “গডফাদার"। বইটি লেখা হয়েছে মূলত মাফিয়া নিয়ে, অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের নিয়ে। সম্পূর্ণ বইটি শেষ করার পর তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলতে পেরেছি ; “আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে বেশ ভালোভাবেই সম্পূর্ণটা পড়ে শেষ করেছি।"
গডফাদার সিরিজের সবচেয়ে ইউনিক দিক হচ্ছে সিরিজের প্লট। সিরিজটা সম্পন্ন করতে লেখকের যে কতটুকু পরিশ্রম হয়েছে, তা সিরিজটা সম্পন্ন করেই বুঝতে পারলাম।
গডফাদার বইটিকে বলা যায় এক উত্তেজনাপূর্ণ থ্রিলার। বইটির শুরু থেকেই গল্প এগিয়ে গেছে রেসিং কারের গতিতে। সম্পূর্ণ বই জুড়ে রয়েছে নানা ঘটনার সমাহার। বিশ্বাসঘাতকতা, বন্ধুত্ব, অসাধারণ টুইস্ট, অ্যাকশন, রাজনৈতিক করাল গ্রাস, ভাঙ্গা গড়ার গল্প, নাটকীয়তা, রোম্যান্স, সুখ, দুঃখ সহ আরো অনেক কিছুই রয়েছে বইটিতে।
বইটি যদিও ক্রাইম থ্রিলার নিয়ে লেখা হয়েছে। তবুও লেখক গল্পের ভিতরে দিয়েছেন রোমান্টিকতার ছোঁয়া। অন্ধকার জগতের ব্যাস্ত গল্পের মধ্যে সামান্য রোমান্টিকতা বেশ ভালোই উপভোগ করেছি আমি।
বইয়ের ভালো খারাপ দুটো দিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনি গডফাদার বইটিও। তবে এই বইয়ের ভালো খারাপের তুলনা করতে গেলে বইয়ের ৮৫% ই ভালো বলব আমি।
পুরো গডফাদার সিরিজ জুড়ে লেখকের একটি দিক আমার কাছে একটু নরমাল মনে হয়েছে। সেটা হচ্ছে তাড়াহুড়ো। যেটা বাটারফ্লাই ইফেক্টে একটু বেশি, এখানে একটু কম।
বইটিতে সিকুয়েন্স চেঞ্জ হয়েছে খুব দ্রুত। এক টাইমলাইন থেকে অন্য টাইমলাইনে খুব দ্রুত যাওয়ায় ; পড়ার সময় সামান্য বেগ পেতে হয়েছিল। তাছাড়া বইয়ের একশন সিনগুলো তুলে ধরা হয়ে একটু তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে। বিষয়গুলো আর একটু ডিটেইলসে লিখলে খারাপ হতো না। আশা করি পরবর্তী এডিশনে লেখক তার তাড়াহুড়োর যায়গাগুলো খেয়াল করবেন।
🔹চরিত্রায়নঃ
চরিত্র বিল্ড আপে সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্টে একটু ঝামেলা ছিল। তবে লেখক গডফাদার বইয়ে সব চরিত্র গুলো বিল্ড আপ আরো জোরদার করেছেন।
গডফাদার বইয়ের চরিত্র গঠন পদ্ধতি ছিল মনমতো। প্রধান চরিত্রে ভূমিকা রেখেছেন মাসুদ কবির। মূল চরিত্র হিসেবে খুব ভালো ভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন লেখক। বইটি পড়ার পর এই চরিত্রটিকে ভালো লাগবে না এমন ব্যাক্তি হয়ত একজনকেও খুজে পাওয়া যাবে না। আর ভালো লাগার মূল কারণই হচ্ছে লেখকের চরিত্র বিল্ড আপের সুন্দর পদ্ধতি। এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে যেন পাঠক নিজেই মূল চরিত্রের ভিতরে ঢুকে যায়। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল।
চরিত্র গঠনে লেখকের আর একটি দক্ষতা ছিল দেখার মতো। সেটা হচ্ছে গল্পের ভিলেনকে গল্পের মূল চরিত্র বানিয়ে দেয়া। অর্থাৎ গল্পে মাসুদ কবির ছিলেন একজন মাফিয়া এবং তিনিই মূল চরিত্র।
প্রধান চরিত্র মাসুদ কবিরের পাশাপাশি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল ; যার নাম দাউদ খলিল। যিনি গল্পের মধ্যে ‘দ্যা গডফাদার কিলার' নামে পরিচিত।
এছাড়া রুদ্র,অর্ক, রাতুল,মৃদুলা,সোবহান তালুকদার, রায়হান, জমজ ভাই দিয়াগো ও কার্লস সহ আরো বেশ কিছু চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় পুরো বইটি জুড়ে। এই চরিত্রগুলোকেও খুব ভালোভাবেই বিল্ড আপ করতে পেরেছেন লেখক।
🔹গল্প বুনট » লেখন–শৈলী » বর্ণনাভঙ্গিঃ
একজন নবীন লেখক হিসেবে লেখকের লেখন শৈলীর প্রশংসা করতেই হয়। সহজ ও সুন্দর শব্দ চয়নে পাঠকদের আকৃষ্ট করে নিয়েছেন তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে।
গল্প বুননে লেখক তার সুনিপুনতার পরিচয় রেখেছেন। একটা ঘটনার পর অন্য একটি ঘটনা নিদারুণ ভাবে সাজিয়ে গেছেন শেষ অবধি।
বর্ণনাভঙ্গি নিখুঁত বলবনা তবে বেশ শক্তপোক্ত। লেখকের সুন্দর বর্ণনাভঙ্গির মাধ্যমে গল্পটা দৃশ্যায়ন করা সম্ভব হয়েছে। বইয়ের আসল স্বাধ পেয়েছি তার বর্ণনাভঙ্গির মাধ্যমে। তবে কিছু যায়গায় বর্ণনাতে সামান্য ঘাটতি লক্ষ করা গেলেও লেখকের সাবলীল বর্ণনার কাছে তা নিতান্তই তুচ্ছ।
🔹লেখক নিয়ে কিছু কথাঃ
লেখক আমিনুল ইসলামের নতুন করে পরিচয় দেয়ার মতো কিছুই নেই। তার লেখার সাথে আমার পরিচয় হয় গডফাদার সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্টের মাধ্যমে। গডফাদার সিরিজ পড়ে শেষ করার পর আমার পছন্দের লেখকের তালিকায় তার নামটাও যোগ করে রেখেছি। বলা চলে তার লেখার ভক্ত হয়ে গেছি এখন আমি। আগামীতে লেখক থেকে আরও বেশি আশা থাকবে।আশা করি তিনি নিরাশ করবেন না। গডফাদার সিরিজের জন্য তাকে বার বার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
🔹বানান ও সম্পাদনাঃ
সম্পাদক এবং বানান সংশোধক তাহমিদ রহমান ও আনন্দ অকৃষ্য বইটিকে নির্ভূলভাবে পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি। যা বইটি সম্পূর্ণ পড়লেই বুঝা যায়। তাই বলে একদম নির্ভূল ছিল তা না। সম্পাদনায় সামান্য ত্রুটি লক্ষ করা গেলেও বানানে বেশ কিছু ভূল চোখে পড়ার মতো। টাইপিং মিস্টেক,একই শব্দ বার বার একসঙ্গে ব্যবহার,আদালা দুটি শব্দ একসঙ্গে মিলে যাওয়ার মতো ভূল গুলোও লক্ষের বাইরে নয়। সব ভূল তুলে ধরতে না পারলেও কিছু ভূল আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
⚈ পৃষ্ঠা :৩৫ –“ ‘এখনা' থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার।" বাক্য গঠনে এখনা স্থানে এখান হবে।
⚈ পৃষ্ঠা :৩৮ – “ কামনার দৃষ্টিতে মানুষকে তাকিয়ে থাকতে ‘দেখ' সে। "বাক্য গঠনে দেখ স্থানে দেখে হবে।
⚈ পৃষ্ঠা ৮০ – “ আগে আগুন দিয়ে ‘যায়া' যাক। এখানে যায়া স্থানে যাওয়া হবে।
⚈ পৃষ্ঠা ৮২ – ‘ঘটানাটা' স্থানে ঘটনাটা হবে।
⚈ পৃষ্ঠা ১০২ – ‘ দোকানরকে’ স্থানে দোকানদারকে হবে।
⚈ পৃষ্ঠা ১৪২ – ‘সবকেছু' স্থানে সবকিছু হবে।
⚈ পৃষ্ঠা ১৭৩ – “একমাত্র এই কাজটাই ‘করলমাসুদ'।" এখানে দুটি শব্দ একসাথে ব্যবহার হয়েছে।
⚈ পৃষ্ঠা ২৭৫ – “ ‘কিন্তু কিন্তু' আমি নিজেকে মারতে পারব।" এখানে একই শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়েছে।
🔹অবসানঃ
গডফাদার সিরিজের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুটি। লেখক আরো কাজ করতে চেয়েছিলেন সিরিজটির উপর। কিন্তু কিছুদিন আগে লেখকের এক ঘোষণার মাধ্যমে যানা যায় কোনো এক কারণে তিনি সিরিজটিকে আর বাড়াতে পারবেন না। তাই দ্বিতীয় পার্টেই সিরিজের অবসান ঘটে। এর ফলে গডফাদার বইটির শেষটাও ঘটে একটু ভিন্ন ভাবে।
গডফাদার সিরিজের শেষ বই গডফাদারে যদিও লেখক খুব সুন্দর একটা ইতি টেনে দিয়েছেন। তবুও কেন যেন মনে হয় বইয়ের শেষটা এখনো অপূর্ণই রয়েছে।
🔹প্রোডাকশনঃ
সতীর্থের প্রোডাকশন নিয়ে কোনে কথা হবে না। বরাবরের মতোই দারুণ কাজ করেছে গডফাদার বইটিতেও। ক্রিম কালারের পৃষ্ঠা, হার্ডকভার, শক্তপোক্ত বাঁধাইয়ের অসাধারণ মেলবন্ধনে বইটি নির্মিত৷ এত সুন্দর মলাট, পৃষ্ঠা বাঁধাইয়ের কারণে বইটি ধরেও যেমন ভালো লেগেছে তেমনি পড়েও। সতীর্থের জন্য শুভকামনা রইল।
🔹প্রচ্ছদঃ
প্রচ্ছদ এর কথা বলতে গেলে এককথায় বলব অসাধারণ। কালার কম্বিনেশন জোস লেগেছে। সাদা,কালো এবং নীলের মাঝে ফুটে উঠেছে দুই গডফাদারের প্রতিচ্ছবি। নামলিপির প্যাটার্নও ভালো লাগার মতো । নামলিপিকে একটা হাত কিছু সরঞ্জামের মাধ্যমে আটকে রেখেছে। সব মিলিয়ে প্রচ্ছদটা দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার মতো।
বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী আদনান আহমেদ রিজন ভাই। তার প্রতিটা প্রচ্ছদ আমার মন কেড়ে নেয়। তেমনি এটিও। ভাইয়ের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল, তিনি যেন এমন সুন্দর সুন্দর কাজ সবসময় চালিয়ে যেতে পারেন।
🔹খুচরা আলাপঃ
আমি বাটারফ্লাই ইফেক্টের রিভিউয়ে বলেছিলাম বইটির প্লট সাধারণ কোনো মুভি বা বইয়ের গল্পকেও হার মানিয়ে দেয়ার মতো। এখন সম্পূর্ণ গডফাদার সিরিজটা পড়েও ওই একই কথা বলতে হচ্ছে আমাকে।
যদি কেউ ক্রাইম থ্রিলার জাতীয় জনরার বই পড়তে চান। যেখানে রয়েছে অসাধারণ সব অ্যাকশন, রয়েছে চমৎকার কিছু টুইস্ট, রয়েছে চরিত্রের গভীরতা। নিঃসন্দেহে বইটি তাকে আমি পড়তে বলব।
একটা কথা বলে নেয়া ভালো, বইটি কিন্তু শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। কারণ বইয়ে কয়েক জায়গায় লেখক কিছু অ্যাডাল্ট সিনের বর্ণনা এবং অ্যাডাল্ট কথাবার্তা ব্যবহার করেছেন। অবশ্য এই অ্যাডাল্ট কথাগুলো লেখক এমন এমন পজিশনে এমন সব চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন, যার ফলে বইটি হয়ে উঠেছে আরো ইন্টারেস্টিং।
বইটির আর একটি ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট হচ্ছে বইয়ে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার। প্রায় প্রতিটা পাতায় লেখক ইংরেজি ভাষার ব্যাবহার করে গেছেন। যা বইটি পড়ার সময় বই পড়ার উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
সতর্কীকরণ
➣ এই বইয়ে উল্লেখিত সকল ঘটনা ও বর্ণনা সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে মিল খুঁজে পেলে দায় কোনো ভাবেই লেখকের নয়।
➣ গডফাদার সিরিজের প্রথম বই ‘বাটারফ্লাই ইফেক্ট' পড়ার পর এই বইটি পড়ার অনুরোধ রইল। নতুবা এই বইয়ের কিছু অংশ খাপছাড়া বলে মনে হতে পারে।
"দুনিয়ার কোনো এক প্রান্তে দ্য থার্টিন টেবিলে মিটিং চলছে। একটা চেয়ার ফাঁকা সেখানে। একজন বলে, আমাদের সিটটা পূরণ করে ফেলা উচিত। একটা এরিয়া হাতের বাইরে, সব ঝামেলা এজন্যই বেঁধে গিয়েছে। অপর পাশ থেকে একজন উত্তর দেয়, আমরা সেটা করতে পারি না, নিয়ম অনুযায়ী যতদিন না তার মৃত্যুর খবর আমরা নিশ্চিত হতে পারছি ততোদিন এই সিট তারই থাকবে"
গডফাদার সিরিজের প্রথম বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট। গত বছরের প্রথম দিকে সতীর্থ প্রকাশনার সাথে পরিচয় হয় এই বইটা এবং কেপির ইনসেইন আর্জ বইয়ের মাধ্যমে। "গডফাদার " গডফাদার সিরিজের দ্বিতীয় বই। অনেকেই বইয়ের নামটা দেখে মুভি কিংবা মারিও পূজোর বইয়ের সাথে রিলেট করার চেষ্টা করে৷ তবে এই বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই কোনো এসবের।
"When you get to political machines that can control a state, then You're really into organized crime- almost. You're fighting a political mafia" বাটারফ্লাই ইফেক্টের গল্পটা খুবই সাদামাটা, সরলগতির গল্প। বইটা শেষ করার পর অনেক আনসলভ ব্যাপারস্যাপার থেকে যায়, সবকিছুরই পরিপূর্ণতা পাবে গডফাদার বইয়ে। অবশ্য সবকিছুর বলাটা ভুল। কেননা গডফাদারের পরবর্তী বইও নাকি সামনে আসবে। স্কুল জীবনে ঘটা ঠুনকো এক ঘটনা কীভাবে অন্ধকার জগতের সাথে এতটা সম্পর্কযুক্ত হয়? তারই জবাব মিলবে গডফাদার বইয়ে। গডফাদার অন্ধকার জগতের গল্প। মাফিয়া বা আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে লেখা এই বইয়ে নায়কদের স্থান নেই, শুধু ভিলেনরাই বসবাস করে। "জীবনে কিছু মুহূর্ত আসে যে মুহুর্তে মানুষ নিজেকে অসম্ভব রকম সুখী ভাবে। তার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ভালোলাগা ঝড়ের মতো ছুটে বেড়ায়। হঠাৎ করেই মানুষটা আবিষ্কার করে সহস্র জীবনেও এর থেকে সুখী হওয়া সম্ভব না। এর থেকে বেশি কিছু তার চায় না, কখনও না। জীবনের সব পেয়ে গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ সে।"
"খুব সাধারণ একটা ছেলে; নাম মাসুদ কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেই জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতের সাথে। যার হাতের ইশারায় দেশ জুড়ে ঘটতে শুরু করে একের পর এক হঠকারী ঘটনা। সেই মুহূর্তেই কয়েক দশক পরে দেশে ফিরে আসে নব্বই দশকের আরেক মাফিয়া ত্রাস দাউদ খলিল; যাকে মাফিয়া জগত চেনে ‘দ্য গডফাদার কিলার’ নামে। জেল থেকে বের হওয়া অর্ক, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আব্রাহাম রাতুল; দুজনেরই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় অদৃশ্য শক্তির উৎসকে খুঁজে বের করা। যার কারণে তছনছ হয়ে গেছে অর্কের জীবন, যে কিনা পুরো দেশে পেতে রেখেছে অদৃশ্য এক জাল। এই গল্প অন্ধকার জগতের গল্প, যে গল্পের নির্মাতাই বিধ্বংসী। যেখানে প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে পরাজিত মানুষের গল্প। যারা আলোর দেখা পেয়েও সেই আলো কখনই স্পর্শ করতে পারে না।"
"Organized Crime constitutes nothing less than a guerilla war against society" বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপ লিখতে গেলে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে আমাকে। এত বেশি চরিত্র এত্ত এত্ত টাইমলাইনে ঘটনাপ্রবাহ আর সেইসাথে ঘটনার মারপ্যাঁচ। রেললাইনের বস্তির পলিটিক্স থেকে শুরু করে দ্য থার্টিন টেবিল পর্যন্ত বিস্তৃত। ঘটনাক্রমে মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিলো রোমান্টিক উপন্যাস পড়ছি। আমি যত সামনে আগাচ্ছিলাম সবকিছুই আউট অব দ্য বক্স পাচ্ছিলাম। বইয়ের প্লটের বিস্তৃতিও দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। এখন পর্যন্ত লেখকের যা যা বই পড়েছি তাতে আমার মনে হয়েছে উনি সবসময়ই আউট অব্য দ্য বক্স লিখে। এই বইটা তার উপযুক্ত প্রমাণ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থ্রিল আর প্রতি চরিত্রের ডিসেকশনে সাসপেন্স বজায় ছিল বরাবরই। প্রায় তিনশো পৃষ্ঠার এই বইয়ের প্লট যতটুকু বিস্তৃত তা সচরাচর এই জনরার অন্য কোনো মৌলিক থ্রিলার বইয়ে আমি দেখিনি। জানুয়ারিতে পড়ে শেষ করা বইয়ের আজকে তিনমাস পর এটার রিভিউ লিখতে গিয়ে বুঝছি আমার মাথায় কিচ্ছুটি নেই। তাই কাহিনী সংক্ষেপের দিকে গেলাম না। আই বইটা নিয়ে যদি কোনো মুভি বা সিরিজ হয় তাহলে লেখকের পরিশ্রম পুরোটাই সার্থক হবে। এই কথাটা বলার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, আমি পড়ার সময় বারবার ভাবছিলাম এই প্লট সাজিয়ে বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর ঘটনার সাথে ডট কানেক্ট করতে লেখকের কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। মাঝে মনে হবে অনেকটা নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করা সবকিছু। বইয়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে কখনো মাসুদ কবির কিংবা কখনো অমিত হাসান গুরুত্বপূর্ণ(!) আলাদাভাবে এই দুইটা চরিত্রের কথা বলার পেছনে এই বইয়ের বিশাল একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। বইয়ের শেষে যে ট্যুইস্ট ছিল I didn’t see it coming. The criminal is the creative artist কথাটাকে বইয়ের প্রধান চরিত্রের সাথে খুব ভালোভাবে খাপ খাওয়ানো যায়। ক্যারেক্টার বিল্ড আপের ক্ষেত্রে এই বইয়ে সার্থকতা শতভাগ। এই বইয়ের ঘটনা বেশ ভালোই জটিল, বেশকিছুদিন আগে পড়েছিলাম তাই রিভিউতে বেশ অসামঞ্জস্যতা আছে। লেখকের অন্যান্য বইয়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয়, ১। দেজা ভ্যু ২।এল ডোরাডো এল ডোরাডো ফ্যান্টাসি জনরার বই। খুব শিগগিরই এই ট্রিলোজি প্রকাশ পাবে। বর্তমানে লেখকের যে বই পড়ছি, যুদ্ধের সহস্র বছর পর।
এই প্রথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ হচ্ছে ক্ষমতা এবং একই সাথে সবচেয়ে ভয়ানক জিনিশও ক্ষমতা। ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে মানুষ সবকিছু করতে পারে হোক সেটা ভালো কিংবা মন্দ।
ক্ষমতা, ভালোবাসা, দুঃখ, বিশ্বাসঘাতকার সংমিশ্রণে এক গল্প "গডফাদার"। এই বইটি পড়ার পূর্বে অবশ্যই "বাটারফ্লাই ইফেক্ট" পড়ে আসতে হবে। নতুবা কিছু জায়গা খাপছাড়া মনে হবে।
"গডফাদার" গল্পের শুরু মাসুদ কবির নামে এক ইউনিভার্সিটি ছাত্রের যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান একজন ছেলে। পছন্দ করে বই পড়তে এবং বিশেষ করে হিউমেন সাইকোলজি নিয়ে পড়তে। ছোটবেলার কিছু ট্রমার কারণে তার জীবনের মুল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় এই পৃথিবী ধ্বংস করা। জীবনের প্রথম কিডন্যাপিংও সে করে ফেলে একদম নিখুঁতভাবে। তারপর শুরু হয়ে যায় তার গডফাদার হয়ে উঠার অধ্যায়, যা তাকে নিয়ে যায় অসীম ক্ষমতার চূড়ায়।
এই বইয়ের কিছু উল্লেখযোগ্য চরিত্র হচ্ছে:
অনন্যা: মাসুদের জীবনের একমাত্র প্রেম, যা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
রুদ্র: মাসুদের জীবনের একমাত্র বন্ধু।
রায়হান: মাসুদের রুমমেট এবং পরবর্তীতের তার দলের এক সক্রিয় সদস্য।
বজলু: রায়হানের বন্ধু এবং দক্ষ স্নাইপার।
আব্রাহাম রাতুল: সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা দলের এক চৌকস অফিসার এবং স্পেশাল গ্রুপ জিরো জিরো থ্রি এর অন্যতম অপারেটর।
অর্ক: সাবেক নৌ অফিসার এবং বর্তমান ডিবি অফিসার, যার জন্যে মাসুদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার এক জীবন।
লিজা: মাসুদের ইউনিভার্সিটি সহপাঠী এবং মাসুদকে পছন্দকারী।
দাউদ খলিল: দ্য গডফাদার কিলার।
এছাড়াও আরো অনেক চরিত্র রয়েছে যেমন সোবহান তালুকদার, ফিরোজ, রাইসা, কিবরিয়া, কার্লোস, ডিয়েগো ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত অভিমত: মাসুদ কবির চরিত্র আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে বেশ ভালো লেগেছে। লেখকের লেখনীতে এক ধরনের মোহ ছিল যার দরুন আমি বিমোহিত হয়ে প্রতিটি শব্দ পড়েছি। জীবনে অল্প বয়সে বাবাকে এবং পরে মাকে হারানো মাসুদের বড় হওয়া মাদরাসার শিক্ষকও তাকে বিদায় জানায় পৃথিবী থেকে। খুবই ছোট বয়সে এই ট্রমা থেকে আসলে সে বেছে নেয় মিথ্যার পথ। অত্যধিক বই পড়ার জন্যে তার সব বিষয়ে জ্ঞান তৈরি হতে থাকে যা তাকে সাধারণ হতে অসাধারণের কাতারে নিয়ে যায়। কিন্তু সবকিছুরই একটা শেষ থাকে। এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই অনন্ত না। মাসুদ কবিরও না। বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় বেশ ভালো কিছু টুইস্ট আছে, যেগুলো পাঠককে বেশ ভালো থ্রিল দিবে। সকলকে বইটি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। তবে এরপূর্বে "বাটারফ্লাই ইফেক্ট" অবশ্যই পড়তে হবে।
খুব সাধারণ একটা ছেলে; মাসুদ কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেই জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগতের সাথে। যার হাতের ইশারায় দেশ জুড়ে ঘটতে শুরু করে একের পর এক হঠকারী ঘটনা। সেই সময়ই দেশে ফিরে আসে নব্বই দশকের আরেক মাফিয়া ত্রাস দাউদ খলিল; যাকে মাফিয়া জগৎ চেনে 'দ্য গডফাদার কিলার' নামে। জেল থেকে ফিরে আসা অর্ক, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা আব্রাহাম আব্রাহাম রাতুল; দুজনেরই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় অদৃশ্য শক্তির উৎসকে খুঁজে বের করা। যার কারণে তছনছ হয়ে গেছে অর্কের জীবন, যে কিনা পুরো দেশে বিছিয়ে রেখেছে অদৃশ্য এক জাল। এই গল্প অন্ধকার জগতের গল্প, যে গল্পে নির্মাতাই বিধ্বংসী। যেখানে প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে পরাজিত মানুষের গল্প। যারা আলোর দেখা পেয়েও সেই আলো কখনই স্পর্শ করতে পারে না। বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর পরের গল্প "গডফাদার"।
◑ পাঠ প্রতিক্রিয়া:
“গডফাদার” বাটারফ্লাই ইফেক্টের সিকুয়েল।বেশ কয়েকদিন আগে বইটা শেষ করেছি। বছরের শুরুতেই এতো দারুণ একটা বই পড়া হবে ভাবতে পারি নাই। আমি নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ এবছর আমি যত বই পড়ব তার মধ্যে সেরা ১০ এ এই বইটা থাকবে!!! কি নেই এখানে? ড্রামা, একশন, টুইস্ট, ভাঙাগড়ার গল্প, দুঃখ, বিষন্নতা, রোম্যান্স! সব কিছুর একটা অসাধার��� কম্বিনেশন। একটার পর একটা ঘটনা সুন্দর করে সামনে আসছিল। গল্পের পরতে পরতে ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের টুইস্ট। ছিল বড়সড় ধাক্কাও। লেখকের এই বইটার ক্ষেত্রে একটা জিনিস লক্ষ করলাম, লেখক খুব দ্রুত সিকুয়েন্স চেঞ্জ করে ফেলেছেন, জাম্প করে এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনায় চলে গেছেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টাইমলাইন স্কিপ করে গেছেন। যারা বইটা পড়ছেন তারা বুঝতে পারবেন, বিশেষ করে মাসুদের গডফাদার মাসুদ কবীর হওয়ার মেজর ২ বছরের টাইমলাইনটা। এই বিষয়টা ওই টাইমে কিছুটা খারাপ লাগছিল, মনে হচ্ছিল এসব ঘটনার আরো ডিটেইলিং দরকার ছিল তবে পরে বুঝতে পারি, এরকম কিছু কিছু জায়গায় স্কিপ করে না গেলে বইটা এতো উপভোগ্য হত না,পাঠক চমকাইত না। কিন্তু যেহেতু এখানে কিছু মেজর টাইমলাইন স্কিপ করা হয়েছে, ইনশাআল্লাহ সেগুলো হয়তো লেখক সিরিজের পরবর্তী বইয়ে আরো জটিল ও জোড়ালোভাবে নিয়ে আসবেন। আবার এই বইয়ের কিছু কিছু জায়গা পড়ে মনে হচ্ছিল আমি কোনো ক্রাইম থ্রিলার না, বলতে গেলে একদম পিওর রোমান্টিক কোনো উপন্যাস পড়ছি। রোমান্টিক জনরাটা এমনিতে পছন্দ না করলেও এখানে বিষয়টা বেশ উপভোগ করেছি। বইটা পড়ার সময় কিছু কিছু জিনিস অনেক নাটকীয় লেগেছে। কিছু কিছু বর্ণনা, কিছু কিছু কর্মকাণ্ড(বিশেষ করে মাসুদ যে অবস্থানে পৌছে গেছে)। তবে জীবন যে নাটকের থেকেও নাটকীয়। তাই আমাদের এই আলোর ঝলকানিতে ভরপুর জগতের আড়ালে যে এক অন্ধকার জগৎ আছে, সেখানে নাটকীয়তাও আছে, যা হয়তো আমাদের অজানা আমাদের কল্পনাতীত। তাই এটাকে আমি এই বইয়ের নেতিবাচক দিক হিসেবে ধরতে রাজি নই।
◑ চরিত্রায়ণ:
চরিত্রায়ণের ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় মাসুদ কবীরকে নিয়ে। ভার্সিটি পড়ুয়া এক ছাত্র যার রয়েছে এক দুঃখজনক অতীত (যা মূলত বাটারফ্লাই ইফেক্টে উঠে এসেছে)। বন্ধুর মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড়ের ঘটনার মাধ্যমে প্রথমেই দেওয়া হয় তার তুখোড় বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। তারপর ধীরে ধীরে উঠে আসে তার অন্ধকার দুনিয়ার মহাত্রাস হওয়ার গল্প। যার জীবনে আসে দুঃখ, অনিশ্চয়তা, প্রেম, হতাশা, দুনিয়াকে জয় করার স্বপ্ন!!! আমার মতে চরিত্রায়ণের ক্ষেত্রে একজন লেখকের সার্থকতা তখনই, যখন বইয়ের সবথেকে নেতিবাচক চরিত্রের জন্যও পাঠকের মনে একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়। যাকে পাঠক ফিল করতে পারে,তার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা হয়, তার দুঃখে দুঃখ পায়, যার সফলতায় পাঠকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কেননা গল্পের নায়ককে তো সবাই পছন্দ করে, ভালোবাসে পর্যন্ত। সেখানে ভিলেনকে এভাবে উপস্থাপন করা আমার মতে লেখকের সফলতা। মাসুদ কবির ছাড়াও এই বইয়ের আরেকটা ইন্ট্রেসটিং চরিত্র ছিল যার নাম দাউদ আলী। যে একপর্যায়ে হয়ে ওঠে ❝দাউদ খলীল-দ্য গডফাদার কিলার❞। পাশাপাশি রাতুল, রুদ্র, মৃদুলা, অর্ক, সোবহান তালুকদার, জমজ ভাই দিয়াগো ও কার্লস সহ আরো অসংখ্য চরিত্রের অবতারণা করেছেন এবং প্রতিটা চরিত্রকেই আমার মতে সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।
◑ লেখনশৈলী:
লেখক আমিনুল ইসলামের লেখার সাথে আমার পরিচয় ঘটে ❝বাটারফ্লাই ইফেক্ট❞ এর মাধ্যমে। লেখকের শুরুর দিকের কাজ হওয়ায় শুরুরদিকে বেশ অপরিপক্ক ছিল লেখা, যদিও ধীরে ধীরে সেটায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। তবে গডফাদার নিয়ে বললে, এই বই পড়ে মনেই হয় নাই যে কোনো নবীন লেখকের বই পড়ছি। বিশেষ করে বলতে গেলে প্লট নির্বাচন, কাহিনীর বুনট, শব্দচয়ন আগের অনেক ভালো। এই বই পড়ার পরে লেখকের প্রকাশিতব্য মৌলিক ফ্যান্টাসি ❝যুদ্ধের সহস্র বছর পরে❞ বইটি পড়ার অপেক্ষায় আছি এখন। আশা করি সেখানে হয়তো তার লেখার সাথে আমরা নতুনভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পাব।
◑ বানান ও সম্পাদনা:
সতীর্থে প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত গডফাদার বইয়ের সম্পাদনা বেশ ভালো হয়েছে। পাশাপাশি বানান ভুলও তেমন চোখে পড়েনি। যা ছিল তা খুবই সামান্য, আশাকরি সেগুলো পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করা হবে।
◑ প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন কোয়ালিটি এবং অন্যান্য:
বইটার প্রচ্ছদ করেছেন প্রচ্ছদশিল্পী আদনান আহমেদ রিজন ভাই। বইয়ের কাহিনী প্রবাহের সাথে বিশেষ করে নামের সাথে বেশ মানানসই একটা প্রচ্ছদ। পাশাপাশি সাদা, কালো আর নীলের কম্বিনেশন প্রচ্ছদকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে।
আর সতীর্থের প্রোডাকশন নিয়ে তেমন কিছু বলার নাই, বরাবরের মতোই দারুণ প্রোডাকশন দিয়েছে। বোর্ড থেকে শুরু করে ক্রিম কালারের কাগজ কোয়ালিটি সবই বেশ ভালো। আর আমার সতীর্থের রেগুলার সাইজের হার্ডকভারের বই আগে দেখার সুযোগ হয় নাই, তাদের ক্রাউন সাইজ আর রেগুলার সাইজের পেপারব্যাকের সাথেই এতোদিন পরিচিত ছিলাম। কিন্তু ২৭৮ পৃষ্ঠার হার্ড কভারের এই বইটা খুব সহজেই খুলে পড়া যায়। আশা করি ভবিষ্যতেও সতীর্থ থেকে এমন দারুণ দারুণ কন্টেন্ট এর এমন প্রোডাকশনের বই পাব।
◑ বইয়ের পছন্দের কিছু অংশ:
✪ মানুষ নাকি খুবই উঁচু বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী! অথচ এই উঁচু বুদ্ধিমান প্রাণীদের সব নির্ধারণ হয় জন্ম দিয়ে! জাত, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরীব সব!
✪ সৃষ্টিকর্তা অহংকার পছন্দ করে না, সৃষ্টির শুরু থেকেই যখন কোনো মানুষ অহংকার করতে শিখেছে তখনই এমন কোনো পরিস্থিতি হয়ে যায় যখন মানুষটা একেবারে শেষ হয়ে যায়।
✪ শত শত বছর আগের কোনদিন কোনো এক নির্মম ঘটনায় আমরা কত সহজেই আক্রান্ত হই কিন্তু আমাদের সময়েও যে কত কত নির্মম ঘটনা ঘটছে তা খুঁজতে যাই না।
✪ মরুভূমিতে যদি কোন মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এই মুহূর্তে কি চাও? তার একমাত্র চাওয়া হবে এক গ্লাস পানি। এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর কি মরুভূমিতে তৃষ্ণা মেটে? বরং পেয়ে যায় এক সাগর পিপাসা।
◑ ব্যক্তিগত রেটিং: ৯/১০
◑ পরিশিষ্ট:
বইটা পড়ার সময় এবং শেষ হবার পরেও আমি আমিনুল ভাইকে অনেক বিরক্ত করছি কেননা যদিও এই বইয়ে একটা সুন্দর এন্ডিং দেওয়া আছে তবুও আমার মনের মধ্যে একটা কথাই আসছিল,
শুরুতে বেশ প্রমিজিং লাগছিল। তবে মাঝে মাসুদ-অনন্যার প্রেম, কিংবা মাসুদ-লিজার ফ্রেন্ডশিপ গল্পে অতিরিক্ত মেদ ছাড়া কিছুই মনে হয়নি। প্রথমদিকে পড়তে খারাপ লাগছিল না। বাহুল্যজনিত কারণে বইয়ের গতি বেশ ধীর হয়ে গিয়েছিল। চাইলে কম বর্ণনায় শেষ করা যেত। দাউদ খলিলের পার্ট টুকু বেশ ভালো ছিল। তবে তার এমন আকস্মিক পতন মানতে পারিনি। মাসুদ চরিত্রে একইসাথে আলো-আঁধারির সমসত্ত্ব একটা মিশ্রণ দেখা দিয়েছে। মাসুদের চরিত্রায়ণ ভালোই লেগেছে। ভিলেইন টাইপের চরিত্রগুলো যখন গল্পের মূল আকর্ষণ হয় তখন তাতে আলাদা একটা মাত্রা আসে। গল্পে নানা জায়গায় মাফিয়া-গডফাদারদের আগমন ঘটেছে। তাদের মধ্যকার গতর আর মগজের লড়াইও ভালো লেগেছে। মাঝে ব্যাংক লুটের ঘটনাটাও আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য। শেষদিকে কেজিএফ টাইপ একটা দুনিয়া কাঁপানো আবহ সৃষ্টি করেছেন লেখক৷ ওই অংশটুকুতে গল্প পুরো জমে গিয়েছে। তারপরও শেষের টুইস্টটা ঠিক মানতে পারিনি। ওভারঅল মোটামুটি লেগেছে। যেরকম প্রত্যাশ্যা নিয়ে পড়েছি তার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি বইটা।
বইটি পড়ে একটু বোর তো হয়নি বরং ছিলো নেক্সটে কী হবে তা জানার প্রবল আগ্রহ। নিতান্তই একটা ভালো বই।
সাধারণ থেকে অন্ধকার জগতের সাথের পরিচয় তারপর ফুলে ফেঁপে ওঠার এই ব্যাখ্যা পড়তে যেমন ভালো লেগেছে তেমনি ভাবিয়েছে। মাসুদ কবির পুরো বইয়ে আমার ভালো লাগার একটা চরিত্র। মাসুদের দূরদর্শিতা,রহস্যময় ব্যাপারটা, চুতুর পরিকল্পনা ছিলো তারিফ করার মতো।চরিত্রগুলোর বাকস্টরি সসমাজের বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরায় পড়তে আরো ভালো লেগেছে।
সংক্ষিপ্ত রিভিউ। Godfather was a bomb! পুরোপুরি স্যাটিসফাইং। প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত ক্রুশিয়াল প্ল্যানিং এর দৃষ্টান্ত দেখা গেছে। চমৎকার প্লট, প্লটের দারুণ এক্সিকিউশান। এ বই পড়ার আগে বাটারফ্লাই ইফেক্ট পড়াটা ম্যান্ডাটরি। ক্রাইম থ্রিলার পড়ার ইচ্ছা থাকলে হাইলি রেকোমেন্ডেড। ৪.৭৫/৫ (প্রিন্টিং মিস্টেক চাইলেও ওভারলুক করা গেলো না। তাই .২৫ কাটা)
সেরা একটা বই ছিল লেখক সুন্দর করে জুড়ে দিয়েছেন টুইস্ট আর টুইস্ট। মাসুদ কবিরের চরিত্র অসাধারণ লাগলো।লেখকের অসম্ভব সুন্দর লেখনীতে এক মুহূর্ত ও বিরক্ত লাগেনি।