সৈকত একজন নামকরা গায়ক। যার গানে ডুবে থাকে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু তার এই খ্যাতি অসুখের মতো মনে হয়। এই অনুভূতি তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। কিন্তু ছয়-সাত বছর আগে এই জীবনটাই চেয়েছিল সে। তবে আজ কেন এই জীবন অসহ্য লাগছে? নিহাব এক যুগান্তকারী আইডিয়া নিয়ে হাজির হলো স্বপ্নঘরে। এই আবিস্কার তার পরিচিত এনে দিলো বিশ্ব দরবারে। কিন্তু হঠাৎ-ই একমাত্র কাছের মানুষটি কীভাবে যেন বদলে যেতে শুরু করল। সে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে? হুট করেই এক নিমিষে মিথ্যে হয়ে যায় সৈকত ও নিহাবের জীবন, হুট করেই ফিরে যায় নিজদের অতীতে। যে অতীতে গিয়ে নিহাব কিছু মনে করতে না পারলেও সৈকত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কী ঘটে গেছে দুই ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে? মরিয়া হয়ে অদ্ভুত এই পরিস্থিতির কারণ খুঁজতে যেয়ে লক্ষ করে তারা আটকে আছে এক মরীচিকায়; জীবনটাই যেন দেজা ভ্যু! এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই টিনা নামের এক মেয়ে তাদের শোনায় এক অবিশ্বাস্য গল্প! কী সেই গল্প? আসলে কী ঘটেছে ওদের সাথে? দেজা ভ্যু’র শেষ চালটা তাহলে কার ছিল?
একসিলেন্ট একটা কনসেপ্ট নিয়ে গল্পটা। বার বার পড়ার সময় একটা গল্পের কথাই মনে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারুন একটা সাইফাই বই।।যারা সাইফাই গল্প পছন্দ করে তাদের জন্য মাস্ট রীড। স্বপ্নের জগতে হারিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাগতম ✌️
এটাকে লাইট সাই-ফাই বলা চলে। গতানুগতিক সাই-ফাই এর মত কোনো তথ্যগত জটিলতা নেই, ঘুরপ্যাঁচ নাই। তবে কাহিনী গত প্রচুর জটিলতা আছে। একের পর অবাস্তব ধারণা নিয়ে এসেছেন লেখক, একটু পরপর মনে হতে পারে অপ্রয়োজনীয় সিন আসছে— কিন্তু বইটা শেষ করার পর সেই ধারণাটা সম্পুর্ন অমূলক প্রমাণ করে ছেড়েছে লেখক। বইটার প্লটটা খুবই স্পর্শকাতর। একটু বেশী বলতে গেলেই স্পয়লার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ছোট করে বললে, এই গল্প নিহাব ও তার বন্ধু সৈকতের স্বপ্ন কে কেন্দ্র করে। সৈকত, যার ইচ্ছে গায়ক হওয়ার। কিন্তু সে মনে মনে যেই না কোনো গানের সুর-কথা ঝালাচ্ছে সেই গানটা সে প্রকাশ করার আগেই কোনো এক স্টুডিও হুবহু সেই গান প্রকাশ করে ফেলছে। আবার নিহাব, যে স্বপ্নে ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সেইভার সেল আবিষ্কার করেছে এবং কোনো এক সাইন্স ফেয়ার এর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর কিছু মাস পর হঠাৎ দেখতে পায় এক স্বনামধন্য কোম্পানি সেই সেলটা আবিষ্কার করেছে। কিভাবে সম্ভব? তারপর তারা দুজন এবং টিনা একসাথে নেমে পড়ে রহস্য সমাধানে।
এটাকে ম্যাজিক রিয়েলিজম জনরাতেও ফেলা যায়। অনেক অবাস্তব বিষয়কে লেখক বাস্তবানুগ করে তুলেছেন লেখক। লেখক আমিনুল ইসলামের আগের বই 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' এ যেই ব্যাপারটা আমার চক্ষুশূল হয়েছে তা হলো, বইয়ের ফিনিশিং এবং ডিটেইলিং। এই বইয়ে সেই সমস্যা দুটো বেশ ভালো ভাবেই কাটিয়ে উঠেছেন। বইয়ের ফিনিশিং ছিলো একেবারে 'আনপ্রেডিক্টেবল'। ডিটেইলিংও বেশ ভালো, চরিত্রদের দিকে একটু বেশি মনোযোগ দেওয়াটা বেশ ভালো লেগেছে। তাছাড়া লেখকের লেখনী, প্লটও বেশ দারুণ ছিলো। পরিশেষে, ইয়াং এডাল্ট সাই-ফাই হিসেবে বেশ উপভোগ্য এই বইটি। রেকমেন্ডেড।
"আমার মনে হয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচা আর খুশি আলাদা জিনিস" - সৈকত ( পৃষ্ঠা নং ১০০ )
চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মিলেনা বাস্তব জীবনে। উল্লেখিত উক্তি অনুযায়ি বাস্তবতায় মানুষ শুধু হাঁফ ছেড়েই বাঁচে। কিন্তু খুশির দেখা কি মিলে?
পঙ্কিলতায় ভর্তি রিয়ালিটিতে খুশি হতে না পারলেও স্বপ্নে তা অনেক সময় পাওয়া যায়। 'লুসিড ড্রিম' বলে একটি বিষয় আছে। যেখানে যিনি স্বপ্ন দেখছেন তিনি বুঝতে পারেন যে ড্রিমের মধ্যে আছেন। এই বিশেষ ধরণের স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলে তো সব অপ্রাপ্তি থেকেই মুক্তি মিলবে মানুষের।
নিহাব। সৈকত। দু'জন আপাত ব্যর্থ মানুষ হিসেবে শুরু করলেও যার যার ক্ষেত্রে কিংবদন্তিতে পরিণত হন। কিন্তু এত বড় সাফল্য পাওয়ার পরও কোথায় কি জানি এলোমেলো, উল্টাপাল্টা লাগে দু'জনের কাছেই। সবকিছু যেন এক বড় ধরণের ফাঁকি।
দেজা ভ্যু! এই শব্দের সাথে অনেকেই পরিচিত। কোন নতুন স্থানে যাওয়ার পর বা কোন একদম নিউ ইভেন্ট ঘটার পর অনেক সময় এক আজব অনুভূতি হয়। আরেহ! এসব তো আগেও হয়েছে! নাকি? ফ্রেঞ্চ এই শব্দটির সাথে পরিচয় না থাকলেও এই ধরণের মানসিক অবস্থা দিয়ে হয়তো অনেকেই গিয়েছেন।
ঘটনাচক্রে সৈকত এবং নিহাব চলে যান সেই ব্যর্থতার গ্লানিময় অতীতে। নাকি দুর্দান্ত সফলতার লুসিড ড্রিমই দেখছিলেন এতদিন এই দু'জন? সময়, স্বপ্ন এবং বাস্তবতার এক গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়েন নিহাব এবং সৈকত, এবং সেইসাথে হয়তো আরো অনেকে।
আমার পড়া আমিনুল ইসলামের দ্বিতীয় বইয়ের মধ্য দিয়ে এক ধরণের গোলমেলে কিন্তু সুন্দর ভ্রমণ হয়ে গেল। লেখক হিসেবে গতবারের চেয়ে বেশি পরিণত মনে হয়েছে তাঁকে এই গ্রন্থে। রিভিউ পড়ে অনেকে হয়তো বিখ্যাত কোন নভেল বা মুভির সাথে মিল পেয়ে যেতে পারেন তবে লেখনীর মধ্যকার যে নিজস্বতা পেয়েছি আমিনুলের তা প্রশংসনীয়।
প্রায় সব গল্পই তো হাজারবার বলা হয়ে গেছে। গল্পকথনে দক্ষতা দেখিয়ে এই সাইফাই থ্রিলারে দারুন কাজ করেছেন লেখক। সায়েন্স ফিকশনের অতিরিক্ত প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কাটখোট্টা বয়ান না দিয়ে এই এয়ারপোর্ট নভেলায় ফাস্ট পেইসড আখ্যান রচনা করেছেন আন্ডাররেটেড এই লেখক। তাঁর প্রাঞ্জল ভাষায় গল্পকথন এবং প্রয়োগের দক্ষতা তাঁকে হয়তো আমার প্রিয় লেখকে পরিণত করবে।
স্বপ্ন এবং বাস্তবতার পার্থক্য বুঝা অনেক সময় তো বেশ কঠিনই। সাইফাই এই থ্রিলারের মত এমনো তো হতে পারে যে এই রিভিউ আসলে আপনি স্বপ্নেই পড়ছেন।
লুসিড ড্রিম নিয়ে আগেও একটা বই পড়েছিলাম দারুণ লেগেছিলো। এটাও অনেক ভালো লাগলো। কনসেপ্টটা দারুণ লেগেছে। আমিনুল ভাইয়ের সাই-ফাইয়েও দক্ষতা দারুণ। আর শেষে উনি যে মুভির কথা বলেছেন সেটা থেকে অনুপ্রাণিত হলেও দারুণ ছিলো বলতে হয়। লাস্টে পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন রহস্যটা। আশা করি সামনে আরো সাই ফাই এর উপর বই পাবো লেখকের কাছ থেকে।
মাত্রই শেষ করে রিভিউ লিখতে বসলাম এখনো মাথা হ্যাং হয়ে আছে আসলে এতক্ষণ কোথায় ছিলাম আমি....
দেজা ভ্যু কি? দেজা ভ্যু হলো ফ্রেঞ্চ শব্দ যার অর্থ হলো যা ইতোমধ্যে দেখা হয়েছে এমন। প্রথম দেখেও মনে হয় আগেও দেখেছি। যেমন অনেক সময় আমাদের কারো কারো মনে হয় এই জায়গায় আমি আগেও এসেছিলাম অনেককিছুই চেনাজানা মনে হয় দেজা ভ্যু তেমনই।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইটার শুরুর পৃষ্ঠাই আপনাকে বইয়ের প্রতি আকর্ষন প্রচুর বাড়িয়ে তুলবে। এরপর ধীরে ধীরে যখন ভিতরে প্রবেশ অনেককিছুই মাথা গোলাতে শুরু করে দিবে। যতই সামনে এগোচ্ছিলাম ততই মাথার মধ্যে ঘুরতেছে আসলে হচ্ছেটা কি? তারপর আরও সামনে যেতে যেতে অনেক কিছুই খোলাসা হতে থাকে। সাই-ফাইয়ের প্রতি যদি বেশি টান থাকে তাহলে এই বই তাদের জন্য দারুণ উপভোগ্য হবে। লেখকের শব্দচয়ন, কাহিনীর বিল্ডাপ, চরিত্র গঠন সবকিছুই বেশ সুন্দর ভাবে করেছেন।
ফ্ল্যাপঃ সৈকত একজন নামকরা গায়ক। যার গানে ডুবে থাকে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু তার এই খ্যাতি অসুখের মতো মনে হয়। এই অনুভূতি তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। কিন্তু ছয়-সাত বছর আগে এই জীবটাই চেয়েছিল সে। তবে আজ কেন ওই জীবন অসহ্য লাগছে? নিহাব এক যুগান্তকারী আইডিয়া নিয়ে হাজির হলো স্বপ্নঘরে। এই আবিষ্কার তার পরিচিতি এনে দিলো বিশ্ব দরবারেন কিন্তু হঠাৎ-ই একমাত্র কাছের মানুষটি কীভাবে যেনো বদলে যেতে শুরু করলো। সে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে? হুট করেই এক নিমিষে মিথ্যে হয়ে যায় সৈকত আর নিহাবের জীবম, হুট করে ফিরে যায় নিজেদের অতীতে। যে অতীতে গিয়ে নিহাব কিছু মনে করতে না পারলেও সৈকত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কী ঘটে গেছে দুই ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে? মরিয়া হয়ে অদ্ভুত এই পরিস্থিতির কারণ খুঁজতে যেয়ে লক্ষ করে তারা আটকে আছে এক মরীচিকায়; জীবনটাই যেন দেজা ভ্যু! এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই টিনা নামের এক মেয়ে তাদের শোনায় এক অবিশ্বাস্য গল্প! কী সেই গল্প? কি ঘটেছিল ওদের সবার সাথে? জানতে এখনই বইটি হাতে নিয়ে নিন।
বানান, মলাট ও বাধাইঃ বইয়ে অল্পকিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে যা পড়ায় তেমন কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি। আর সতীর্থের প্রোডাকশন তো সব সময়ই দারুণ হয় এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এক মলাটে দুই বই হলেও বেশ ভালোই বাধাই হয়েছে।
যারা অল্প সময়ে অসাধারণ নভেনার স্বাদ নিতে চান তারা অবশ্যই বইটা একবার চেখে দেখবেন। এক কিংবা দুই বসাতেই শেষ করতে পারবেন। বইটা অবশ্যই রেকমেন্ড করব। আর যারা সাই-ফাই পড়তে ভালোবাসেন তারাও অবশ্যই পড়বেন এবং কেউই শেষ না করা পর্যন্ত বই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন না।
ইনসেপশান থেকে ইন্সপায়ার্ড স্টোরিলাইন। লুসিড ড্রিমিং নিয়ে ইউনিক একটা প্লট। অনেকদিন পর একটা সাই ফাই পড়ে মনে ধরলো। হাইটেক সোসাইটি দেখানোর যে প্রয়াস বইয়ের শুরুতে দেখানো হয়েছে তা ভালো লাগেনি। আমিনুল ইসলাম যদি তার লেখনীটাকে আরেকটু শক্তিশালী করতে পারতেন তাহল্র ৫★ দেওয়া যেত।
ধীরে ধীরে গড়ে উঠা স্বপ্ন যখন বাস্তবে রূপ নিতে থাকে তখন জীবন রূপকথা মনে হয়। এমনটাই হচ্ছে নিহাবের সাথে। মাকে হারানোর পর তাই ঠিক করে ফেলে এমন কিছু করবে যেন বাকিদেরও প্রিয়জন হারাতে না হয়। ❝সেইভার সেল❞ তারই ফল, সারাবিশ্বে পড়ে গেছে হইচই। কিন্তু... কিছু একটা যেন ঠিক নেই! বড় কিছু অর্জনের পিছনে ত্যাগও বড়োই হয়। বড় গায়ক হওয়ার পরও যেন হিসাবের খাতায় ত্যাগের পরিমাণই বেশি সৈকতের। শেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে রাখবে না আর এ জীবন!
ঘুম থেকে জেগে উঠে সৈকত। স্বপ্ন নয় যেন বাস্তবই ছিল... কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বপ্ন দেখা ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে বাস্তবেও! তাহলে কি সে অতীতে চলে এসেছে? কিন্তু বিপত্তি তো তখন বাঁধে যখন সৈকতের ভবিষ্যতে গাওয়া গানগুলো কেউ একজন বর্তমানে গেয়ে চলেছে! চমকে উঠে নিহাব, সেইভার সেল তার ভাবনা তাহলে অন্য কেউ কীভাবে আবিষ্কার করে ফেললো? কেউ কি তাদের ভাবনার মধ্যে হানা দিয়েছে? নাকি বদলে গেছে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ? অজানা রহস্যের জবাবের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে সৈকত, নিহাব, টিনা। কিন্তু জড়িয়ে পড়ে এক ভয়ানক খেলায়...
সদ্য ঘুম থেকে উঠেই মনে থাকে না স্বপ্নে কী দেখেছি আবার এমনও হয় কয়েকবছর আগের দেখা স্বপ্ন মনে থেকে যায়। কেন? আসলে স্বপ্নে কী দেখেছি এটা বিষয় না। স্বপ্ন মনে কী প্রভাব ফেলেছে এটাই মূখ্য।তাইতো অনেক সময় স্বপ্ন মনে না থাকলেও অব্যক্ত অনুভূতি ঠিকই রয়ে যায়।
কলেবরে ছোট সাইজের সাইফাই থ্রিলার। বইয়ের কনসেপ্ট দুটো থিওরীর উপর বেজড ❝দেজা ভ্যু❞ আর ❝লুসিড ড্রিম❞। বই নিয়ে বলার আগে থিওরীগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করি। ❝দেজা ভ্যু❞ (Deja vu ) ফরাসি শব্দ, আক্ষরিক অর্থ ❝already sean❞ বা ❝ইতিমধ্যে দেখা❞। কখনো কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে যদি মনে হয় এই ঘটনা আগেও হয়েছে কিন্তু বাস্তবে আসলে এমন কিছুই হয়নি। ব্যক্তি যখন নিজেই বুঝতে পারে সে স্বপ্ন দেখছে আবার বাইরের জগতের প্রতিও সজাগ, এই পর্যায়ই ❝লুসিড ড্রিমিং❞। চরিত্রগুলো স্বপ্ন দেখছে নাকি দেজা ভ্যুর শিকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখক এই ধোঁয়াশাই রেখেছেন।
বইয়ের ঘটনাগুলো বেশ কয়েকটা টাইমলাইন দেখানো হয়েছে। প্রথমের অংশগুলো কিছুটা কনফিউজিং। কোন টাইমলাইনে আসলে চরিত্রগুলো আছে ভাবনা পড়ে গেছিলাম। এক টাইমলাইন থেকে আরেক টাইম লাইনে জাম্প করে যাওয়া... তবে লাস্টে কানেক্টেড। সাথে আছে এডভেঞ্চার, মিস্ট্রি, থ্রিলারের টুইস্ট। শুরু আমাজনে হলেও প্রেক্ষাপট দেশীয়। সহজ-সাবলীল উপস্থাপনা সাথে অতিরিক্ত আলোচনা বর্জিত। কাহিনী যথেষ্ট ফাস্ট ফরওয়ার্ড। তবে দুজায়গায় আরও ডিটেলিং এর দরকার ছিল। নিহাবের সাথে টিনার পরিচয় আর এত সহজেই বলে দিলো সাফিনের ঘটনা! কেমন জানি একটা খটকা মনে হচ্ছিল। তাই লাস্টে খুব একটা সারপ্রাইজ হয়নি। তবে এন্ডিংটা জাস্ট অদ্ভুত। শেষ হয়েও যেন রেশ থেকে যায়।
দেজা ভ্যু পড়ে শেষ করলাম। অনেকদিন পর একটা দুর্দান্ত গতির বই পড়লাম। জনরায় সাইফাই। সাইফাই আমার কম পড়া হয়। কেন যেন মনে হয় মাথার উপর দিয়ে যায়। এটাতে অবশ্য ব্যাতিক্রম রয়েছে। কারণ এটা একেবারে হার্ডকোর সাইফাই না বলে হয়তো। সত্যি বলতে লেখক আমিনুল ইসলামের লেখা এখানে অবাক করেছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো, পরিপূর্ণ আর অসাধারণ মনে হয়েছে। এটা যদি উপন্যাসিকা না হয়ে আরো বড় হতো তাহলে পড়ে আনন্দ পেতাম আরো বেশি, তবে তখন আর গতিটা থাকতো না। দেজা ভ্যু আসলে দুইজন মানুষের বিভিন্ন টাইমলাইনে আটকে যাওয়া কিছু মানুষকে নিয়ে লেখা। তাদের পরিণতি, তাদের মস্তিষ্ক প্রসূত কর্মকাণ্ডের সম্ভার। একের পর এক টুইস্ট ছিলো। বিষয়টা ভালো লেগেছে। যখনই মনে হয়েছে বই তো প্রায় শেষ, এখানেই হয়তো সমাপ্তি তখনই লেখক আরেকটা নতুন টুইস্ট দিয়ে পাঠককে ধরে রেখেছেন। নিয়ে গিয়েছেন শেষ পাতা পর্যন্ত। টানটান উত্তেজনাপূর্ন এই উপন্যাসিকাটি চমৎকার লেগেছে। লেখক চমৎকার ভাবে এর সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। মনে হচ্ছিলো কোনো রহস্যের জট খুব ধীরে ধীরে খুলছেন, কোনো তারাহুরো ছাড়াই। আর এই বিষয়টাই বেশ ভালো লেগেছে। বিস্তারিত এবং বিস্তৃত একটি উপন্যাসিকা। চরিত্রগুলোর মধ্যেও বেশ সামঞ্জস্যতা লক্ষ করেছি। অনেকদিন পর থ্রিলার কিংবা সাইফাই পড়লাম। তাও এমন গতির যে, পাতার পর পাতা উ��্টিয়েছি অনায়াসে।
বইটার শেষ পর্যায়ে গিয়ে, ঘুমের ভেতর আমি নিজেও একটা জটিল স্বপ্ন দেখেছি! এই বই মস্তিষ্কে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল! বাংলাদেশে এধরনের কনসেপ্ট নিয়ে মৌলিক থ্রিলার লেখা হচ্ছে দেখে খুব ভাল লাগলো। আমার বেশ ভাল লেগেছে। রাইটিং আরেকটু পোক্ত হলেই ৫ স্টার দেওয়া যেত। স্বপ্নের দুনিয়ায় স্বাগতম!
খুব একটা জমেনাই আমার। প্লট ভালোই। তবে খাপছাড়া লেগেছে কিছুটা। লেখায় আর গল্প দুটোতেই বেশ অপরিপক্কতা আছে। লেখকের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আরেকটু যদি সময় দিতেন, ফেলে রাখতেন, যত্ন নিয়ে ঘষামাজা করতেন, ভালো কিছু হতে পারতো হয়তো।
বইঃ দেজা ভ্যু লেখকঃ আমিনুল ইসলাম প্রকাশনীঃ Satirtho Prokashona দেজা ভ্যু!! ধরুন আপনি কোথাও ঘুরতে গিয়েছেন হঠাৎ করে মনে হলো যে এই জায়গায় তো আমি আগেও এসেছি, এই জায়গা তো আমি চিনি!! এটাই দেজা ভ্যু।
ক্রিস্টোফার নোলানের "ইনসেপশন" মুভিটা দেখেছেন? আচ্ছা দেখেন নি? কোনো সমস্যা নাই, একটা উদাহরণ দেই; ধরুন আমি রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে স্বপ্ন দেখলেন আবার সেই স্বপ্নের ভেতরেই আরেকটা স্বপ্ন দেখলেন!!! অর্থাৎ একজন মানুষ কয়েকটা স্তরে স্বপ্ন দেখল!!বুঝেন নাই?? সমস্যা নাই,চলুন দুইজন মানুষের গল্প আপনাদেরকে বলি সৈকত,বাবা মায়ের চাপে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসা যুবক,যার ইচ্ছা গায়ক হওয়ার। তাই সে বাসা থেকে বের হয়ে সব ছেড়ে দিয়ে বড় গায়ক হওয়ার আশায় বড় শিল্পী হওয়ার আশায় তিন বছর ধরে নানা জায়গায় অডিশন দিতে থাকে।অবশেষে তার স্বপ্ন সত্যি হয়,সে হয় অনেক বড় গায়ক!!তবুও তার মনে চেপে থাকা হতাশা দুঃখ বেদনার কারণে একদিন সে আত্নহত্যা করে!! সৈকতের গল্প এখানেই শেষ হবার ছিল, কিন্তু না! হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করে বাসের একটা সিটে! মানে কি?? সে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল?? নাকি সে তার সময় থেকে অনেক পিছে চলে এসে?? সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো স্বপ্নে তার লেখা গানগুলা অন্য এক গায়ক গেয়ে এলবাম প্রকাশ করেছে! এ কি করে সম্ভব? নিহাব,বুয়েট থেকে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা যুবক তার নতুন আবিষ্কার "সেইভার সেল" এর মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে। মানুষ এখন রোগ হওয়ার আগেই তার চিকিৎসা আপনা আপনি পেয়ে যাচ্ছে! এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পাওয়া নিহাবের ঘুম ভেঙে যায়!! এটা ছিল নিছক তার স্বপ্ন, ভ্রম!! কিন্তু হঠাৎ করে একদিন সে দেখতে পায় সে যে আবিষ্কারের কথা ভেবে রেখেছিল সেই সেইভার সেল অন্য কেউ আবিষ্কার করেছে!! এ কি করে সম্ভব?? সে কি আদৌ কোনো স্বপ্ন দেখছে নাকি সে এখন আছে বাস্তবে?? উত্তর খুজতে থাকে নিহাব আর সৈকত!! আচ্ছা এমন নয় তো তারা আসলে স্বপ্নের ভেতরেই আরেকটা স্বপ্ন দেখতেছে তারা আসলে বাস্তবেই নাই নাকি এর পেছনে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে??সবকিছু কেমন যেন "দেজা ভ্যু " হয়ে যাচ্ছে!!উত্তর খুজতে থাকে তারা। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ অনেকদিন পর একটা সুন্দর সাইফাই থ্রিলার বই পড়লাম,কন্সেপ্ট টা "ইনসেপশন " ঘরানার হলেও লেখকের লেখা অনেক ঝরঝরে মনে হয়েছে।বইটিতে অনেক বিষয় নিয়ে কথা উঠে আসছে যেমন:প্রিমনিশন,লুসিড ড্রিমিং। একটানে শেষ করার মতো বই এটা। বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে আসলে নতুন কিছু বলার নাই রিজন ভাইয়ের করা প্রচ্ছদ টা আসলেই বইয়ের কাহিনীর সাথে মিলে যায়,সুন্দর হয়েছে। আর বইয়ের দুই এক জায়গায় বানান ভুল আছে সেদিকে একটু নজর দিলেই বইটি পারফেক্ট একটা সাই ফাই থ্রিলার।
দেজা ভ্যু এর সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। লেখক খুবই সুন্দর ভাবে দেজা ভ্যু এবং লুসিড ড্রিম দিয়ে গল্পটি সাজিয়েছেন। ধন্যবাদ লেখককে। আশা করব তিনি আমাদেরকে ভবিষ্যতে আরও ভালো ভালো বই উপহার দিবেন।
স্বপ্ন নিয়ে যেকোনো সাইফাইই লেখা হোক না কেন, অবধারিতভাবেই একটা মুভির সাথে তুলনা চলে আসবে। এই টপিকে এমনই গ্রাউন্ডব্রেকিং ছিল এই মুভি। সবাই বুঝে গেছেন সেটা কোনটা। তো এখানেও এই মুভির সাথে একটা কম্পারিজন টানা হবেই অবচেতনভাবে। এটা না লেখকের দোষ, না পাঠকের। দেজা ভ্যু আমাকে অনেকটা মোহায়মিনুল বাপ্পীর ভ্রম সমীকরণের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। কারণ কিছুটা প্লটগত ও টুইস্টগত সামঞ্জস্য আছে। কিন্তু দেজা ভ্যু পিছিয়ে থাকবে এর ল্যাক অফ ইম্প্যাক্টের জন্য। পরিণতিটা বেশ সাদামাটা লেগেছে। পড়তে খারাপ লাগে নি, কিন্তু মনে কোনো দাগও কেটে যেতে পারে নি। ওয়ান টাইম রিড হিসেবে উপযুক্ত।
“দেজা ভ্যু" এবং “লুসির ড্রিম" এই দুটি থিওরি সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতটুকু। আমরা অনেকেই হয়ত এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এই শব্দ দুটো বা এই থিওরি দুটোর সাথে পরিচিত না থাকলেও ; এই কর্মকান্ড কম বেশি আমরা সবাই করেছি। বই নিয়ে কথা বলার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক “দেজা ভ্যু" এবং “লুসির ড্রিম" থিওরি দুটো সম্পর্কে। আশা করি এই থিওরি দুটো সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকলে বইটি বুঝতে কোনো ঝামেলায় পরতে হবে না।
❝ দেজা ভ্যু ❞ ▬▬▬▬▬▬
. “দেজা ভ্যু" শব্দটি মূলত ফরাসি শব্দ। ইংরেজিতে যার অর্থ ‘already seen'। সহজ বাংলায় আমরা বলতে পারি ‘ ইতিপূর্বে দেখা' বা ‘পূর্বদৃষ্ট'।
. দেজা ভ্যু বা পূর্বদৃষ্ট হলো একটি নিশ্চিত অনুভবের অভিজ্ঞতা যা একজন ইতঃপূর্বে এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে অথবা সচক্ষে দেখেছে ( একজন ব্যক্তি অনুভব করে যে ঘটনাটি ইতিপূর্বে অথবা সাম্প্রতিক ঘটেছে), যদিও পূর্ববর্তী পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সঠিক ঘটনাটির সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
. সহজ ভাষায় বললে বলা যায়; এই মূহুর্তে আমরা যে কাজটি করছি, ঠিক কোনো এক সময় এই একই কাজ করছিলাম। এমন চিন্তা হরহামেশাই মাথায় ঘোরে। যাকে বলা হয়ে থাকে “দেজা ভ্যু"।
. মূলত কিশোর ও তরুণ বয়সীরা সবচেয়ে বেশি শিকার হয় দেজা ভ্যুর। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, দেজা ভ্যুর সঙ্গে ডোপামিন লেভেলের একটা যোগসূত্র থাকতে পারে। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ডোপামিন লেভেল সবচেয়ে বেশি থাকে।
. এমিল বোর্যাক নামে একজন প্যারা সাইকোলজিস্ট “দেজা ভ্যু" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৮৭৬ সালে ফরাসি জার্নাল ফিলোসোফিকে একটি চিঠি লেখেন। যেখানে তিনি ‘আগে যেন দেখেছি' এই অনুভূতির বর্ণনা করেছিলেন “দেজা ভ্যু" শব্দটি দিয়ে।
. বহুদিন পর্যন্ত দেজা ভ্যুকে একটি প্যারানরমাল বা অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা বলে মনে করা হতো। গবেষণা অনুযায়ী, আমাদের মধ্যে দুই - তৃতীয়াংশ মানুষ জীবনে একবার হলেও দেজা ভ্যু দেখে থাকেন।
◑ দেজা ভ্যু কেন ঘটে?
. বিজ্ঞানীদের ধারণা, আমাদের এই দেজা ভ্যুর অনুভূতির জন্য দায়ী হচ্ছে মস্তিষ্কের একটি অংশ যার নাম ‘ টেম্পোরাল লোব '। মস্তিষ্কের এই অংশটির কোন সার্কিট থে���ে যখন কোন স্মৃতির সংকেত দেয়, যেটা আসলে তখন দেয়ার কথা নয়, তখনই ঘটে দেজা ভ্যু। এটাই আমাদের মধ্যে কোনো বিষয় সম্পর্কে বিভ্রম তৈরী করে। মনে হয় কোথায় যেন দেখেছি আগে।
. তবে এ নিয়ে আরো দ্বিমত রয়েছে।
. অনেকে বলে থাকে এটি প্যারালাল ইউনিভার্সের সংঘাতে ঘটে থাকে। আবার অনেকে এটি পূনর্জন্মের তত্ত্ব দিয়েও ব্যাখ্যা করে থাকে।
❝ লুসিড ড্রিম ❞ ▬▬▬▬▬▬
. সচেতন মনে অধ্যাবসায় এবং চেষ্টার দরুন কেউ যদি স্বপ্ন দেখা কালীন বুঝতে পারে যে সে স্বপ্ন দেখছে বা স্বপ্নের মধ্যে রয়েছে তবে সেই স্বপ্ন দেখাকে ইংরেজিতে বলা হয় লুসিড ড্রিমিং। মনো বিজ্ঞানের একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় এই লুসিড ড্রিমিং।
. ১৯৭০ সালে, কিথ হেরেন নামের একজন প্যারাসাইকোলজিস্ট লুসিড ড্রিমিং কীভাবে হয় তা জানার জন্যে গবেষণা শুরু করেন। অ্যানাল ওসলি নামের এক স্বেচ্ছাসেবক সেই রিসার্চটিতে দেখান লুসিড ড্রিমিং, রেম স্লিপ ( REM Sleep) - এর সময় দেখা যায়। REM বা Rapid Eye Movement যা কিনা খুবই স্বাভাবিক এবং স্বপ্ন দেখা শুরু হলে চোখের পাতার অনিয়মিত কাঁপন থেকেই এর নাম এমন দেয়া হয়।
. নিউরোলজিস্ট জে.অ্যালান হবসন বলেন, স্বপ্ন দেখার সময় কোনো কিছু চিনে ফেলা হলো লুসিড ড্রিমিং এর প্রথম পর্যায়। কাউকে চিনে ফেললে dorosolateral prefrontal cortex - এ সাড়া জাগে যা কিনা রেম স্লিপ এর প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো খুলে দেয় এবং একে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে স্বপ্ন আমাদের মনে থাকে এবং এই কাজের সময় amygdala এবং parahippocampal cortex উদ্দীপ্ত হয় এবং ড্রিম হ্যালুসিনেশন শুরু হয়।
. ব্রাজিলে একটা পরীক্ষা চালানো হয় প্রায় ২৫০০ মানুষের উপর যার মধ্যে দেখা যায় প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ এই ড্রিমং অনুভূত করেছে।
. অবাক করা বিষয় হচ্ছে, চাইলেই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনিও ঘটাতে পারেন এই লুসিড ড্রিমিং। এর জন্য আপনার একবার ঘুমানোর ঠিক পাঁচ ঘন্টা পর জেগে উঠতে হবে। তারপর আবার ঘুমিয়ে পরতে হবে এর ফলে আপনি সরাসরি ঘুমের রেম পর্যায়ে চলে যাবেন এবং লুসিড ড্রিম দেখতে পারবেন। অন্য একটি পদ্ধতি হলো MILD (Mnemonic Induction of Lucid Dreams)। এটি এক ধরনের আবেশ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে মনে বার বার বলবেন “আমি আজ লুসিড ড্রিম দেখব"। আর একটি পদ্ধতি হচ্ছে নিজের দেখা স্বপ্নগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখা এবং প্রতিদিন একবার করে সেগুলো পড়া।
এসব পদ্ধতি অনুসরণের ফলে আপনার লুসিড ড্রিম দেখার সম্ভবনা অনেক বেশি ।
. তবে যারা মানসিক অসুস্থ তাদের জন্য লুসিড ড্রিমিং ক্ষতিকর। কারণ ঘুমের মূল উদ্দেশ্য বিশ্রাম দেওয়া,তবে লুসিড ড্রিম এর ফলে আপনি ঘুমের মাঝেও জেগে থাকবেন।
এটুকুই ছিল দেজা ভ্যু এবং লুসিড ড্রিম থিওরি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা। এবারে বইয়ের প্রতিক্রিয়ায় চলে যাওয়া যাক।
☆ আখ্যানঃ
সৈকত একজন নামকরা গায়ক। যার গানে ডুবে থাকে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু তার এই খ্যাতি অসুখের মতো মনে হয়। এই অনুভূতি তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। কিন্তু ছয়-সাত বছর আগে এই জীবনটাই চেয়েছিল সে। তবে আজ কেন এই জীবন অসহ্য লাগছে?
নিহাব এক যুগান্তকারী আইডিয়া নিয়ে হাজির হলো স্বপ্নঘরে। এই আবিষ্কার তার পরিচিত এনে দিলো বিশ্ব দরবারে। কিন্তু হঠাতই একমাত্র কাছের মানুষটি কীভাবে যেন বদলে যেতে শুরু করল। সে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে?
হুট করেই এক নিমিষে মিথ্যা হয়ে যায় সৈকত ও নিহাবের জীবন, হুট করেই ফিরে যায় নিজেদের অতীতে। যে অতীতে গিয়ে নিহাব কিছু মনে না করতে পারলেও সৈকত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কী ঘটে গেছে দুই ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে?
মরিয়া হয়ে অদ্ভুত এই পরিস্থিতির কারণ খুঁজতে যেয়ে লক্ষ করে তারা আটকে আছে এক মরীচিকায়; জীবনটাই যেন দেজা ভ্যু! এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই টিনা নামক এক মেয়ে তাদের শোনায় এক অবিশ্বাস্য গল্প! কী সেই গল্প? আসলে কী ঘটেছিল ওদের সাথে? দেজা ভ্যুর শেষ চলটা তাহলে কার ছিল?
☆ মূল রিভিউঃ
কিছুদিন আগে লেখক আমিনুল ইসলামের গডফাদার সিরিজটা পড়া হয়েছে আমার। সিরিজটা পড়ার পর তার বইয়ের প্রতি আমার আলাদা একটা টান চলে আসে। তার সকল বই চেখে দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগ্রত হয়ে যায়। এই ইচ্ছা থেকেই দেজা ভ্যু বইটাও খুব দ্রুতই পড়ে শেষ করে ফেললাম।
বইটির কনসেপ্ট মূলত দুইটি থিওরির উপর নির্মিত। এর একটি হচ্ছে ‘দেজা ভ্যু' এবং অপরটি হচ্ছে ‘লুসিড ড্রিম'। যা নিয়ে আমি শুরুতেই আলোচনা করে নিয়েছি।
বইয়ের প্লট নির্বাচনে লেখক আমিনুল ইসলাম ভাইকে আমি অন্যদের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে রাখব। কারণ, এ পর্যন্ত তার যে কয়েকটি বই পড়া হয়েছে প্রতিটি বইয়ের প্লট আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও তার একটা বিষয় অনেক ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে গল্পের গতিময়তা। আজাইরা কথা বলে তিনি সময় একদম অপচয় করেন না। যে জায়গায় যতটুকু বলার প্রয়োজন সেটুকুই বলেন। প্রয়োজনে একটু কম বলেন কিন্তু বেশি বলে পাঠককে একঘেয়ে করে তোলেন না।
তেমনি দেজা ভ্যুতেও গল্প ছুটতে শুরু করে প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই। শুরুটা বহির বিশ্বে হলেও বইয়ের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ দেশীয়। আদি থেকেই বইটি বেশ ভালোই উপভোগ করতে পেরেছি। লেখক খুবই দক্ষতার সাথে প্রথম থেকেই কয়েকটি টাইমলাইনে গল্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন শেষ অবধি ; যা ছিল অনুভব করার মতো।বেশ কয়েকটি টাইমলাইন থাকায় প্রথম দিকে একটু ঝমেলায় পরতে হয়েছিল ; তবে কিছুদূর যাওয়ার পর সব ক্লিয়ার হয়ে যায়।
বইটি পড়ার পর আমি অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে ভালোই অবগত হতে পেরেছি। দেজা ভ্যু এবং লুসিড ড্রিম সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই কম ছিল। বইটি পড়ার পর এই বিষয় দুটোর উপর একটু ঘাটাঘাটি করে অনেক তথ্যই জানতে পেরেছি।
বইটি ক্রাউন সাইজের ১২৬ পৃষ্ঠা ব্যাপি বেশ ছোটখাটো একটা বই। ক্রাউন সাইজের বই পড়তে আমার মোটামুটি ভালোই লাগে। তেমনি দেজা ভ্যুও। ছোট সাইজ হওয়ায় দ্রুত এবং আনন্দের সহিত পড়তে পেরেছি।
বইটার সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় পৃথিবীর বিখ্যাত এক ডিরেক্টরের বিখ্যাত এক মুভির সাথে। পৃথিবী ব্যাপি অনেক নাম রয়েছে মুভিটার। স্পয়লারের কারণে মুভির নামটা আমি বললাম না। পাঠক সেটা বই পড়েই বুঝে নিতে পারবে।
মুভিটার সাথে গল্পের প্লটের মিল খুজে পাওয়া গেলেও, এখানে অনেক ভিন্নতাও রয়েছে।
☆ চরিত্রায়নঃ
চরিত্র গঠনে লেখকের পারফরম্যান্স খুবই ভালো। চরিত্রগুলোকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। প্রতিটি চরিত্রকে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়েছেন সুনিপুণভাবে। অতিরিক্ত কোনো চরিত্রের ব্যবহার হয়নি পুরো গল্প জুড়ে। যে কয়েকটি চরিত্রের প্রয়োজন, ঠিক সে কয়েকটি চরিত্রই রেখেছেন। সব চরিত্র নিয়েই আলাদা আলাদা ঘটনা বিল্ড আপ করে গেছেন লেখক। মোট কথা ছোট বই হিসেবে চরিত্র গঠন আমার কাছে পারফেক্ট লেগেছে।
☆ লেখন-শৈলী • বর্ণনাভঙ্গিঃ
লেখক আমিনুল ইসলামের লেখনশৈলী বরাবরের মতই মেদহীন। বই পড়তে বসলে খুব দ্রুত ঝরঝরে পড়ে ফেলা সম্ভব। তার লেখা বইগুলোর শব্দ এবং বাক্যের ব্যবহার একদম সাদামাটা। কোনো কঠিন শব্দ বা বাক্যের ব্যবহার নেই। তাই পড়ার সময় ভালোই উপভোগ করা যায়।
বর্ণনাভঙ্গির কথা বলতে গেলে, ছোট বই হিসেবে যতটুকু বর্ণনার প্রয়োজন সেটুকু তিনি করে গেছেন। তবে দু এক জায়গায় বর্ণনার অভাব বোধ হয়েছে আমার। গল্পে শেষের দিকে সাফিনের ঘটনা বলে দেয়ার বিষয়টায় বর্ণনা খুবই কম লেগেছে। লেখক চাইলেই আর একটু ডিটেইলে লিখে গল্পটাকে আরো জাঁকজমক করতে পারত। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে লেখক বিষয়গুলো আমলে নেয়ার চেষ্টা করবেন। এছাড়া বইটি সম্পূর্ণ বেশ ভালোই উপভোগ্য ছিল।
☆ বানান ও সম্পাদনাঃ
বইটিতে বানানে ভুল চোখে পরেছে বেশ কয়েক জায়গায়। অনেক জায়গায় শব্দের ভিতর থেকে কিছু অক্ষর হারিয়ে গেছে। এসব টাইপিং মিস্টেকও বলা যেতে পারে। সামান্য টাইপিং মিস্টেক বা বানানে ভুলের কারণে বইটি পড়তে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না বলে আশা রাখি।
বইটির সম্পাদনাও ভালো মানের ছিল। বইটা সম্পাদনা করেছেন তাহমিদ রহমান ভাই। প্রতিবারের মতো ভালো সম্পাদনা করেছেন এই বইটিতেও। তবে আর একটু জোরদার করলে আরো ভালো হতো।
☆ প্রচ্ছদ ও অন্যান্যঃ
প্রচ্ছদ পছন্দসই। ভালো লাগার মতো একটি প্রচ্ছদ উপহার দিয়েছেন প্রচ্ছদশিল্পী আদনান আহমেদ রিজন ভাই। নামলিপির প্যাটার্ন এবং নামলিপির কালারও ভালো লেগেছে অনেক।
বইয়ের মলাট, পৃষ্ঠা, বাঁধই খুবই ভালো এবং শক্তপোক্ত ছিল। বাহ্যিক প্রোডাকশন কোয়ালিটিও চমৎকার। আরাম করেই পড়তে পরেছি বইখানা।
☆ পরিশিষ্টঃ
বইয়ের কাহিনী রচিত হয়েছে স্বপ্নের জগত নিয়ে । সাধারণত এমন কনসেপ্টের বই দেশীয় প্রেক্ষাপটে খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। দেশীয় লেখকের কাছে বিদেশি লেখকদের লেখনীর মতো স্বাধ পেলাম এই বইটি পড়ার মধ্যে দিয়ে। যা আমার ভালো লাগার মাত্রাকে অনেংশেই বাড়িয়ে দিয়েছে।
যারা খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে ভিন্ন স্বাধের অসাধারণ একটি বই পড়তে চান, অথবা যারা সাই ফাই, থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন। তাদের আমি এই বইটা ট্রাই করে দেখতে বলব। আশা করি বইটি পড়ে অনেক ভালো সময় কাটবে । হ্যাপ্পি রিডিং।
🔰 একনজরে –
⊕ বইয়ের নামঃ দেজা ভ্যু ( এক মলাটে দুই বই) ⊕ লেখকঃ আমিনুল ইসলাম ⊕ জনরাঃ সাইফাই থ্রিলার ⊕ প্রকাশনীঃ সতীর্থ প্রকাশনা ⊕ প্রকাশকালঃ ২০২১ ⊕ প্রচ্ছদঃ আদনান আহমেদ রিজন ⊕ সম্পাদকঃ তাহমিদ রহমান ⊕ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১২৮ ⊕ নির্ধারিত মূল্যঃ ২৮০৳
কষ্ট করে সম্পূর্ণ রিভিউটুকু পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।বইটির বিষয়ে যেকোনো মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইল।
স্বপ্ন অদ্ভুত একটা বিষয়। স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে কতশত বই-ই না লেখা হয়েছে। স্বপ্নের মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মাঝেমাঝে খুব বাস্তব মনে হয় কিন্তু ঘুম ভাঙলেই সব আবছা হয়ে যায়! আবার কোন ঘটনা ঘটছে সে সময় মনে হয়, আরে এইটা তো আগেও ঘটেছে মনে পরছে। একদম একইরকম! এ জাতীয় অবস্থায়কে আমরা বলি ❛দেজা ভ্যু❜।
এইতো সপ্তাহ দুয়েক আগেই কেনাকাটা করছিলাম। একটা ঘড়ি হাতে নিয়ে দেখছি ঠিক সে সময় গ্রুপ থেকে একটা কাজের মেসেজ আসলো। আমার মনে হলো কী মেসেজ এসেছে আমি জানি। আরে! এই দৃশ্যটাতো খুব পরিচিত আমার। দেখেছি আগে! কিন্তু পুরো ব্যাপারটা-ই একটা ❛দেজা ভ্যু❜।
সৈকত আর নিহাব। তাদের নিজস্ব জীবনে সফল দুই মানুষ। সৈকতের কন্ঠের জাদুতে ডুবে থাকে লাখো দর্শক। কিন্তু এই সফলতা, খ্যাতি তার কাছে ভালো লাগে না। অথচ কয়েক বছর আগে এটাই তো চেয়েছিল সে। খ্যাতির আসনে বসে এখন তার সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। হতাশায় ডুবে আছে সে।
নিহাব বুয়েট থেকে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তার জীবনের অর্ধেক সময়ের চেষ্টায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে। যা তাকে বিখ্যাত করে তুললো বিশ্ব দরবারে। স্বপ্ন পূরণের সুখের মাঝে হঠাৎ-ই লক্ষ্য করে তার ভালোবাসার মানুষটি তার কাছে অন্যরকম ঠেকছে। ভুল হলো কিছু?
কেমন আচমকাই সৈকত নিজেকে আবিষ্কার করে বাসে। তার অতীত জীবনে। অর্থাৎ এতো যশ আর হতাশা পুরোটাই স্বপ্ন ছিল! তবে এতো বাস্তব স্বপ্ন হয়? কিন্তু পরবর্তী সব ঘটনাগুলো কী করে সে মনে করতে পারছে, কোন ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। পা গল হয়ে যাচ্ছে না-কি?
একই ঘটনা নিহাবেরও। নিজেকে আবিষ্কার করে অতীতে। বলা ভালো বর্তমানে। কিছু একটা ঠিক নেই অনুভূতি হলেও নির্বিঘ্নেই জীবন চলতে থাকে তার।
সৈকতের স্বপ্নে গাওয়া গান একদিন বাস্তবে সে শুনতে পায়। জানতে পারে গানের স্রষ্টা অন্য কেউ। কিন্তু কীভাবে সম্ভব সেটা। কেউ কি তার স্বপ্নে গিয়ে গান চুরি করছে?
নিহাবের সায়েন্স প্রজেক্টের আইডিয়া এবং নাম পুরোপুরি কপি করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়ে গেছে ভিন্ন একটা কোম্পানি। এটা তো অসম্ভব। যে কাজ কোন সেই কাল থেকে নিহাব অল্প করে করছে এবং এখনো শেষ করতে পারেনি সেটা আবিষ্কার হয়ে গেলো। কিছু একটা ঠিক নেই।
সৈকত এবং নিহাবের জীবনে কী ঘটে গিয়েছে কোন ধারনাই নেই তাদের। তবে সম্ভাব্য কারণ জানে টিনা নামের এক মেয়ে। সে তাদের শোনায় অবিশ্বাস্য এক গল্প। তাদের জীবনটাই কি তবে স্বপ্ন? পুরোটাই কি তবে দেজা ভ্যু তে মোড়ানো?
সবকিছুতে ঘুরে ঘুরে একোটাই নাম আসছে সাফিন আহমেদ। কে সে? স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে লড়াই আর দেজা ভ্যু এর এই খেলায় কিস্তিমাত করবে কে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
সাইকোলজিক্যাল কল্পকাহিনি বই ❝দেজা ভ্যু❞। দেজা ভ্যু, লুসিড ড্রিমিং এসকল বিষয়ে আমরা কমবেশি সবাই জানি। খুব মজার এবং বিস্ময়কর এক বিষয় এটা। তাই এই জনরায় লেখা পড়তে খুব ভালো লাগে। ❝দেজা ভ্যু❞ দারুণ একটা প্লটের উপন্যাসিকা। পুরো গল্পটাই লেখক দক্ষতার সাথে লিখেছেন। ঘটনার পরে ঘটনা, তারপরের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া টুইস্ট সবকিছু খুব সুন্দর ছিল। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যে অবাক করা পর্দা টেনেছেন যেখানে কোনটা কী সেটা যাচাই করতেই দ্বিধায় ভুগতে হয়েছে। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে বাস্তবতা এতো বেশি ছিল, পড়ার সময় নিজেই ভাবছিলাম স্বপ্ন কোনটা আর বাস্তব কোনটা। কাহিনি খুব দ্রুত এগিয়েছে। ১২০ পেইজের উপন্যাসিকায় বৈজ্ঞানিক আর সাইকোলজির এতো সন্নিবেশ ছিল তাল মেলানো কঠিন ঠেকছিল। এক দৃশ্য থেকে আরেক দৃশ্যের গতি চোখের পলকে পালটেছে। অনেক জটিল বিষয় নিয়ে লেখক আলোকপাত করেছেন। তার সিংহভাগ ছিল লুসিড ড্রিমিং আর দেজা ভ্যু নিয়ে। বৈজ্ঞানিক তথ্য ছিল। তবে লেখক কিঞ্চিৎ ভুল করেছেন একটা তথ্যে। মানবদেহের সেল বলেছেন তিনটি। তথ্যটা ভুল। র ক্তের সেল তবে তিনটি। আশা করি পরের এডিশনে শুধরে নিবেন। সৈকত আর নিহাব দুজন গল্পের দুইপ্রান্তের মানুষ হলেও পরিস্থিতি তাদের কীভাবে এক সুতোয় নিয়ে আসে তার সুন্দর উপস্থাপন করেছেন লেখক। গল্পের মূল তারা দুজন ছিল তাই এই দুটো চরিত্র-ই আলো ছড়িয়েছে বেশি। টিনা চরিত্রটা গল্পে যতক্ষণ ছিল তার সরব উপস্থিতি ছিল। দ্বিধায় ফেলে দেয়া একটা চরিত্র হিসেবে মনে হয়েছে আমার।
উপন্যাসের শেষটা সুন্দর ছিল। সৈকত আর নিহাবের ঘুমের সুযোগ নিয়ে কত ঘটনা ঘটে যাবে তার খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।
বইয়ের শেষ পাতায় লেখক যেটা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলেছেন তার সাথে মিল থাকলেও দেশীয় প্লটে লেখা এই উপন্যাসিকা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
তবে ঐযে, বিরিয়ানীতে এলাচ থাকবেই। এখানেও এমন কিছু বিষয় ছিল যার জন্য পড়ার সময় কিছুটা বিরক্তি ধরেছে।
** আমিনুল ইসলামের লেখা ❝ইতি আপনাদের প্রিয় গোস্ট খু নি❞ পড়েছিলাম আগে। প্লটটা দারুণ হলেও আমার মনে হয়েছে এক্সিকিউশনের অভাবে উপন্যাসটা জমেনি। মাত্রাতিরিক্ত পিরিত ছিল। আবেগ ভরা সংলাপ আর প্রেমের কচকচানির ফলে মূল কাহিনি মনে দাগ ফেলতে পারেনি। ❝দেজা ভ্যু❞ এর দারুণ প্লট কিন্তু ঐ প্রেম পিরিতির কারণে পড়তে গিয়ে আমার মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগছিল। নিজের অস্তিত্বের সংকটের মাঝেও লা লা লা ফিলিং নিয়ে প্রেম করা অযৌক্তিক লেগেছে। ** এরপর টিনার একমাস গায়েব হয়ে যাওয়া। যে কারণে সে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিল কারণটা পোক্ত লাগেনি। ** নিহাব টিউশনি করে কত টাকা জমিয়েছে আমার প্রশ্ন। জমানো টাকা দিয়ে যে খরচ করেছে তার মিল পেলাম না। এমনকি সৈকতকে কয়দিনের পরিচয়ে নিজের টাকা দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া দেখে খুব অবাক লেগেছে। ** উপন্যাস বা গল্পে মাত্রাতিরিক্ত ইংরেজী শব্দের প্রয়োগ আমি পছন্দ করি না। যে শব্দের প্রচলিত বাংলা আছে সেখানে ইংরেজীর ব্যবহার দৃষ্টিকটু লাগে।
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ:
প্রচুর, এরপর আসে মাত্রাতিরিক্ত এরপর আসে ❝দেজা ভ্যু❞ এর সম্পাদনার অভাব। শব্দ ভেঙ্গে যাওয়া, মুদ্রণপ্রমাদ, ভুল বানানের আধিক্য ছিল অনেক বেশি। সন্দেহাতীতভাবেই সেটা পড়ায় ব্যাঘাত ঘটিয��েছে। পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক করে নেয়ার আশা করি।
দেজা ভ্যু শব্দটি একটি চমক এই বইয়ের।এটি একটি সাই ফাই থ্রিলার নভেলা।বইটিকে ম্যাজিক রিয়েলিজম জনরাতেও ফেলা যায়। কেননা,বইয়ের প্লট বার বার এমন সব সময় ও বাস্তবতায় ঘুরপাক খেয়েছে যা অবাস্তব। তবে লেখক এতে, এই অবাস্তব বিষয়গুলোকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন যা বাস্তব বলে মনে হয়েছে।এই নভেলার শেষ না পড়ে আপনি বুঝতেই পারবেন না আসলে ঘটনাটি কি ঘটলো।
অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিন সময়ে পাঠক ভ্রমণ করবে। কিন্তু,আসলে ঠিক কোন সময়টিতে পাঠক রয়েছে সেটি জানতেই এই নভেলার শেষ টুইস্ট এর অপেক্ষায় থাকতে হবে। সৈকত,নাবিল,সাফিন,টিনা আমাজন জঙ্গল থেকে আপনাদের এমন ভাবে ঘুরিয়ে নিবে যা পুরোটাই অবিশ্বাস্য! চরিত্র গুলোর আবেগ, অনুভূতি ভালো ভাবেই ফুটে উঠেছে।
কল্পনার জগতকে লেখক যতবারই সাজিয়েছেন নিখুঁত ভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন, যা পড়ে পাঠকের কাছে খারাপ বোধ হবে না।
২.বই-তোমার দেওয়া আমার কোনো নাম ছিল না
শহরের একদিন একটি লাশ পাওয়া যায়।পলিথিন থেকে একটি নারীর কাটা নগ্ন পা দেখা যাচ্ছে। পুরো শহরবাসীর মাঝে একটা আলোড়ন তৈরি হলো। কারণ সচরাচর এমন ঘটনা খুবই কম ঘটে থাকে মফস্বল শহরগুলোতে। তাই উৎসুক জনতার অভাব হলো না। ফের গুঞ্জন উঠে সিক্স মান্থ সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনাটির। এমনি কিছু পূর্বকথায় শুরু হয় কাহিনী।
সেই শহরের কিছু মানুষের জীবন ও তাদের প্রতিদিনকার কিছু আলাপচারিতার সাথে পাঠককে পরিচয় করাতে শুরু করবে লেখক।অর্থাৎ, চরিত্রগুলোর সাথে সাক্ষাৎ হবার পালা। দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তিন জন শিক্ষার্থীকে। ফারহান,নীলা,প্রদীপ। তারা একেকজন জীবনের একেক সমস্যা নিয়ে জড়জড়িত। তারই মাঝে দেখা যায়,নীলা এক সময় খুব নেশা করতো। কারণ,তারা বাবা তার মাকে মারধর করতো।ফারহান এর বাবা মা নেই বাবা নিখোঁজ প্রায় অনেক বছর।নীলা ও ফারহানের মাঝে প্রণয়ের একটি সম্পর্ক তৈরি হয় একসময়।তবে প্রদীপ তাদের ভালো বন্ধু, যে তাদের সমস্যা গুলো সমাধান করে দিত। সেই প্রদীপের হাত ধরেই তাদের দেখা হয় এক রহস্যময়ী দূতের সাথে।এই দূত তাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দিত। তিনি বললেন,নীলার সমস্যারও সমাধান হবে। এক রাতের ব্যবধানের মাঝেই রহস্যময়ী ভাবেই নীলার বাবা আত্নহত্যা করেন। আত্নহত্যা নাকি খুন! ভয় পেয়ে তারা তিন বন্ধু দূতের কাছ থেকে সরে এলে,দূত তাদের উপর রেগে যায়। একদিন পর আবার একটি লাশ পাওয়া যায়।তাও একটি নারীর। কেস চলে যায় আজমল হোসেন ও রকিবের হাতে। কিন্ত,কেস প্রতিনিয়ত জটিল হলে এক পর্যায়ে তাদের সাথে স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে যুক্ত হয় অর্ক।
সবচেয়ে বড় টুইস্ট হিসেবে চলে আসে ফারহানের নিখোঁজ বাবা ইরফান খন্দকার হঠাৎ ফিরে আসে।কারণ,তিনি একটি বই লিখেছিলেন এবং সেই বইয়ের ঘটনাপ্রবাহ অনুসারেই শহরের ভিক্টিম এর নাম,ইতিহাস ও লাশ পাওয়ার স্থানগুলো হুবুহু মিলে যাচ্ছিল।তাহলে খুনি কি বইয়ের কাহিনীর প্যাটার্ন অনুসরণ করছে? নাকি সিক্স মান্থ সিরিয়াল কিলিং যার শিকার শুধু নারীরাই আর এই মফস্বল শহরটিতে পাওয়া লাশ গুলোর মাঝে কোনো যোগসূত্র আছে। যদি থাকে তাহলে কে সেই খুনি! সন্দেহের সুচ কখনো ইরফান খন্দকার তো কখনো নীলা, আবার কখনো দূত তো কখনো ফারহান এর উপড় ঘুরছিল।
কিন্তু, এই উপন্যাসের শেষ অংশ দুই দুইটি টুইস্ট নিয়ে আসে,যা পুরো ঘটনাকে ঘুরিয়ে দেয়।অল্প পরিসরে লেখক সুন্দর করেই গুছিয়েছেন ক্রাইম থ্রিলারের এই প্লটটিকে।এক বসায় পড়ে ফেলার মতো বই।পাঠক পড়ে বেশ আরাম পাবে।সেই সাথে থ্রিল ও টুইস্ট এর কমতি নেই!
আচ্ছা কেমন হবে যদি একটা বই পড়তে নিয়ে দেখলেন সেই বইয়ের প্রধান চরিত্রের নাম থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ বইটার একটা বিশাল অংশ আপনার জীবনের একটা সিগনিফিক্যান্ট পার্ট ধারণ করে লেখা? যেখানে লেখক কিংবা প্রকাশক কিছুই জানে না আপনার ব্যাপারে৷ কাকতালীয়? এটাকে কি কাকতালীয় বলা যায়?
সৈকত, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক। টুকটাক বইপত্র পড়ে। নিজের প্যাশন আর স্বপ্নের জায়গাটা ছেড়ে পড়তে এসেছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। একাডেমিক লাইফের যা তা অবস্থা। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করছে সে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় সবকিছু ছেড়েছুড়ে বহুদূরে চলে যেতে। নিজের সবচেয়ে প্রিয় ভালোবাসার মানুষটা, যার উপর তার সর্বোচ্চ ভরসা, বিশ্বাস আর সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি সেই মানুষটাও এই সময়টাতে হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করলো। সৈকতকে ছেড়েছুড়ে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। সৈকত এখনো সেই অগোছালোই রয়ে গেল।
সতীর্থ প্রকাশনা থেকে সদ্য প্রকাশিত এক মলাটে দুই বইয়ের একটি ডেজা ভ্যু। সাইফাই থ্রিলার জনরার মধ্যে এই কনসেপ্টটা আমার কাছে সবচেয়ে ইউনিক মনে হয়। ডেজা ভ্যু, ফ্রেঞ্চ শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। শুধু শব্দ না, এই অনুভূতির সাথেও আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। আমার অনেকেরই কোনো অচেনা জায়গায় গিয়েও মনে হয় এই জায়গা আমার কত চেনা। কিংবা কোনো ঘটনা হওয়ার মূহুর্তেই আমরা বুঝতে পেরে যায় যে পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে। এটাই ডেজা ভ্যু। বইয়ের নামকরণের স্বার্থকতা শতভাগ। আমরা সাধারণ চার ধরণের ডেজা ভ্যু নিয়ে জানি। বাকি তিনটার কথা বলে গল্প বড় করতে চাই না। ডুয়েল প্রসেসিং ডেজা ভ্যু এই বইয়ের একটা বড় অংশ ধারণ করে।
বইটা নেওয়ার পর নিজের নামে প্রধান চরিত্র দেখে পড়তে শুরু করেছিলাম। কিছুদূর আগাতেই দেখি আমি ভয়ংকর এক বেড়াজালে বন্দী। ঠিক বই পড়বার সময়টাতে আমার যে অনুভূতি হচ্ছিলো সেটাই সম্ভবত ডেজা ভ্যু। মনে হচ্ছে এই সৈকতের জীবনটা আমি দেখছি। অনুভব করছি। চোখের সামনে দেখছি আমার অতীত, বর্তমান আর কিছুদূর বইটা পড়লেই দেখতে পাব আমার ভবিষ্যৎ। মনে হচ্ছিলো বললে ভুল বলা হবে। আসলে সবটাই আমার জীবনের সাথে সম্পর্কিত। পরবর্তী পৃষ্ঠা পড়ার আগেই দেখতে পাচ্ছিলাম কী হতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল সবকিছু কই যেন দেখেছি। নাহ। ডেজা ভ্যু না এটা। এটাই সৈকতের গল্প। আমার সাথে ঠিক এমনটাই হয়েছে এই বই পড়ার সময়। নিজের অজান্তেই নিজের গল্প পড়ছিলাম। চরিত্রের নাম, একাডেমিক লাইফ,পারসোনাল লাইফ সবকিছু কীভাবে মিলে যায়? কো ইন্সিডেন্স কোনোভাবেই এটাকে বলা যায় না। এমনকি প্রিয় মানুষটার নামও?
"সেদিন তার চোখে এক ফোঁটা ভালোবাসা কিংবা প্রিয়তমকে ছেড়ে যাবার দুঃখ দেখতে পাইনি আমি। পেয়েছিলাম শুধু বিরক্তির চাপ। খুব অবাক হই, এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্নে আসে সে। চুপিচুপি বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসিনি সৈকত, আমি তোমাকে ভালোবাসিনি"- এমনকি এই বাক্যগুলোও কি কো ইন্সিডেন্স?
"সৈকত নামকরা একজন গায়ক। যার গানে ডুবে থাকে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু তার খ্যাতি অসুখের মতো মনে হয়৷ এই অনুভূতি তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। কিন্তু ছয় সাত বছর আগে এই জীবনটাই চেয়েছিল সে। তবে আজ কেন এই জীবন অসহ্য লাগছে?"
এই গল্পের এক অংশ হতাশায় নিমজ্জিত এক যুবকের। রিটেক নিতে নিতে বিপর্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি নিতে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সৈকত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে। বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাবা মা। নিজের স্বপ্নের জায়গাটা ধরে এগিয়ে যায় সে। একসময় দেশসেরা গায়কে পরিণত হয়। তার লেখা গানগুলি সমাদৃত হতে থাকে দেশব্যাপী। হঠাৎ সবকিছু উলোটপালোট হয়ে যায় তার। তার স্বপ্নে গাওয়া গান অন্যের নামে চলছে দেশব্যাপী। কিন্তু এই কথা বিশ্বাস করবে কে?
নিহাব বহুদিন যাবত কাজ করছে নিজের ব্যক্তিগত প্রজেক্ট সেইভার সেল নিয়ে। কৃত্রিমভাবে আবিষ্কৃত এই সেল মানবদেহে প্রবেশ করানো হলে মানুষের রোগ প্রতিরোধে নতুন মাত্রা সূচিত হবে। নিহাবের বহুবছরের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখল। স্বপ্নঘর ফাউন্ডেশন তার প্রজেক্টের জন্য ফান্ড দিতে প্রস্তুত। ফারিয়ার সাথে স্বপ্নের সুন্দর সংসার গড়ে তোলে সে। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু বদলে যায়। "হুট করেই এক নিমিষে মিথ্যে হয়ে যায় সৈকত ও নিহাবের জীবন। হুট করেই ফিরে যায় নিজেদের অতীতে। যে অতীতে গিয়ে নিহাব কিছু মনে করতে না পারলেও সৈকত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কী ঘটে গেছে দুই ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে?"
লুসিড ড্রিমিং। কেউ যদি স্বপ্ন দেখার সময় বুঝতে পারে সে স্বপ্ন দেখছে সে স্বপ্নটাই লুসিড ড্রিমিং। আমাজনের এক গোত্রের মাধ্যমে লুসিড ড্রিমিং কন্ট্রোল করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা পায় সাফিন। সবদিক থেকে স্বপ্নের দুনিয়াকে নিখুঁত করে তোলে। লুসিডি ড্রিমিং কন্ট্রোল করে সব সফল মানুষের আইডিয়া এবং সৃষ্টিশীল কাজ নিজের নামে পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে দেয় সে। সৈকতের স্বপ্নে পাওয়া গান কিংবা নিহাবের প্রজেক্ট সেইভার সেল। পুরো পৃথিবীব্যাপি সাফিনের গোপন চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে দিনদিন। ঘটনাচক্রে মিলিত হয় সৈকত আর নিহাব। সবকিছুই যখন উলোটপালোট হওয়া শুরু করে তখনি সাফিনের একসময়ের বন্ধু টিনার সাথে পরিচিত হয় নিহাব আর সৈকতের। সাফিনকে লক্ষ্য করে তারা পৌঁছে যায় বার্সেলোনা শহরে। সেখানে গিয়ে অদ্ভুত এক ঘটনার সাক্ষী হয় তারা৷ সারা পৃথিবীব্যাপি ফুটবলের রাজত্ব করছে সাফিন। একের পর এক তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে অবিশ্বাস্য এক ঘটনার সাক্ষী হয় তারা। শেষে গিয়ে যা জানতে পারে তা তাদের কল্পনাতীত।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইয়ের অনেকটা অংশ স্বপ্ন এবং বাস্তব জীবন সমন্বয়ের সাথে এগিয়েছে। প্লট টা দারুণ, সেইসাথে লুসিড ড্রিমিং কনসেপ্টটা। অনেকেই হয়তোবা ইনসেপশন মুভির সাথে মিল খুঁজে পাবেন কিছুটা। এত্ত অল্প শব্দে এমন বিশাল প্লটে সামঞ্জস্য রাখাটা মুশকিল হলেও পুরো বইয়ের প্রতিটা চরিত্রের সাথে ঘটনা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। লেখকের অন্যান্য বইয়ের মতো এই বইয়েই গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখার ক্ষমতা বজায় ছিল। এই বইয়ের শুরুটা যেমন পাঠককে পরবর্তীতে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে তেমনি শেষটাও প্রত্যাশা পূরণ করবে। লেখকের যে কয়টা নোভেলা আমি পড়েছি সম্ভবত এটাই এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সেরা নোভেলা।
প্রডাকশনঃ সতীর্থ প্রকাশনার বইয়ের প্রডাকশন সবসময়ই ভালো লেগেছা আমার। বিশেষ করে ক্রাউন সাইজের বইগুলো। এক মলাটে দুই বইয়ের ব্যাপারটা ভালোই লেগেছে। যারা ডেজা ভ্যু নিয়ে সামান্য ঘাটাঘাটি করেছেন প্রচ্ছদটার সাথে সবাই পরিচিত মোটামুটি। বইয়ের বেশকিছু অংশে বানান ভুল। আর কিছু কিছু জায়গায় চরিত্রের উপরিপাতন হয়ে গেছে৷ যেমন সাফিনের জায়গায় নিহাব। আবার কিছু জায়গায় ফারিয়ার জায়গায় ফারিহা।
**আমি অনেকক্ষণ শকড ছিলাম এই বইটা পড়ার সময়। একটা বইয়ের সাথে জীবনের অনেকটা অংশ কীভাবে মিলে যায়? ইদানীং বেশ দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করেছি৷ কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা বাস্তব মেলাতে হিমসিম খাচ্ছি৷ বইটা পড়ার সময়টাও কি আমার দুঃস্বপ্ন ছিল? নাকি সমগ্র জীবনটাই দুঃস্বপ্ন আর বই পড়ার সময়টুকুই শুধুই আমার বাস্তব জীবন? "Dreams feel real while we're in them. Its only when we wake up that we realize something was actually strange " -Inception
সুলেখক আমিনুল ইসলামের এক মলাটে দুই বইয়ের অন্যতম হচ্ছে সাই-ফাই নভেলা দেজা ভ্যু। বইটা আমাকে লেখক পড়তে দিয়েছিলেন প্রকাশিত হওয়ার আগেই। কিন্তু তখন সময়ের অভাবে আলোচনার সুযোগ হয়নি। আজকে আবার পড়লাম। এবং এখনো গোলকধাঁধায় আছি যে, বইটা কি আসলেই শেষ হয়েছে, নাকি আমিই বারবার একের পর এক ঘটনার চক্করে আটকে পড়ে আছি! এরপর হঠাৎ করেই মনে হলো, একবার বইয়ের ভেতর ঢুকে নিহাবের মত ভিন্ন ভিন্ন দুনিয়াদারি দেখে আসাটা মন্দ হবেনা। প্রথমে ভেবেছিলাম টাইম ট্রাভেলে বেরুচ্ছি, কিন্তু বই কিছুদুর এগুতেই সেই আশায় গুড়েবালি। এরপর ভাবলাম "ইনসেপশন" টাইপ কিছু একটা দেখতে যাচ্ছি, কিন্তু তাও হলোনা! শেষমেশ যা হলো, তা হচ্ছে, গল্পটা মাইন্ডব্লোয়িং! খুবই সাধারণ প্লটকে কিভাবে অসাধারণ একটা স্টোরিতে রুপ দেয়া যায় তা আমিনুল ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছেন "দেজা ভ্যু" তে। চিরাচরিত সাই-ফাই থ্রিলারের ধাঁচে পড়বেনা এই নভেলাটা। এবং আমিনুল ইসলামের এই নিরীক্ষাধর্মী গল্পটা যারা পড়বেন তারা অবশ্যই নিজেদের চিন্তার জগৎ নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবেন। হাইলি রেকমেন্ডেড!
8.5/10 প্রথমত, বইটার প্রচ্ছদটা সুন্দর। দ্বিতীয়ত, বাইন্ডিং, কাগজ আর সাইজ সুন্দর। কথায় আছে, আগে দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারী! প্রথম অংশে তো পাশ। তাহলে পরের অংশে? গুণের বিচারে? তাহলে বলি, তৃতীয়ত, কনসেপ্টটা ভীষণ ভীষণ সুন্দর৷ আমি মুভি ফ্রিক না। খুব কমই মুভি দেখি। ইনসেপশন আমার দেখা হয়নি। তাই জানি না কোথাও মিল আছে কিনা। হয়ত মিল টিল খুঁজতে যাইনি বলেই ভীষণ ভালো লেগেছে। একদম অন্যরকম স্বাদের একটা সায়েন্স ফিকশন। দুইটা যায়গায় নামের গোলমাল আছে। কয়েকটা শব্দ মিসিং। এইটুকু বাদ দিলে পড়তে খুবই আরাম লেগেছে। লেংথ আরেকটু বড় হলে হয়ত পড়তে আরো মজা লাগতো। কিংবা কে জানে, বড় হলে হয়তো সৌন্দর্য নষ্ট হতো! বইয়ের মত বই পড়ার পর অনুভূতিটাও কনফিউজিং! তবে আরেকটু বড় হলে হয়ত রেটিং 8.5 এর জায়গায় 9 হয়ে যেত!
ধরুণ আপনি কোথাও গিয়েছেন যেখানে আপনি এই প্রথমবার যাচ্ছেন কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক বলছে এই রাস্তা,দুপাশের গাছ-গাছালি,নির্জন দুপুর,ঠিক এই মুহুর্ত টাকে আপনি চেনেন,কিংবা এই রাস্তাটাকে আপনি চেনেন। . আরো সহজ করে বললে,আমার মাঝেমাঝে এমন হয়,কোনো ঘটনা ঘটলো আমার সামনে যেটা একেবারে নতুন,এই ঘটনা আগে ঘটার কোনো প্রশ্ন ই আসে না,কিন্তু তাও মনেহয় ঠিক এই ঘটনাটা আমি আগেও এক্সপেরিয়েন্স করেছি।ছোটবেলায় ভাবতাম তার মানে এটা আমার পূর্বজন্মের কোনো ঘটনা(তখনকার বাংলা সিনেমা দেখার প্রভাবে এসব ধারণা আসতো😁) . মনে দ্বিধা থাকলেও এই বিষয় নিয়ে কাউকে কখনো প্রশ্ন করিনি,দেখা গেলো পাগল ভেবে বসলো কিন্তু এরকম বিষয় যে আসলেই এক্সিস্ট করে সেটা এই বইটা পড়ে বুঝলাম।এই ব্যাপারটাই হলো 'দে জা ভ্যু' এটা একটা ফ্রেঞ্চ শব্দ যার ইংরেজি হলো ' already seen'. অর্থাৎ ইতোপূর্বে দেখা। . দে জা ভ্যু বইটা পড়ার পর টুকটাক গুগল করে দেখলাম,দে জা ভ্যু'র একজ্যাক্ট কারণ নিয়ে কেউ ই একমতে আসেনি তবে ধারণা করা হয়,আমরা সবাই ই কমবেশি স্বপ্ন দেখি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা ভুলে যাই কিন্তু আমাদের সাবকনশিয়াস মাইন্ডে তার একটা প্রভাব থেকে যায় তাই হয়তো ওই ঘটনা আমি বহু আগে স্বপ্নে দেখেছিলাম কিন্তু মনেনেই বলে এখন বাস্তবে দেখে পরিচিত পরিচিত মনেহয়। .
"দে জা ভ্যু" তেমনি এক স্বপ্নযাত্রা।কনসেপ্ট সুন্দর এবং আমার এতোদিনের একটা পূরনো সমস্যার সমাধান এই বই পড়ে পেয়েছি বলে প্রত্যেকটা লাইনেই রিলেট করতে পেরেছি। . আমি ইংরেজি মুভি কম দেখি, হাতে-গোনা কয়েকটা দেখেছি হয়তো,লেখকের কথা অংশে লেখক উল্লেক করেছেন "ইনসেপশন" মুভির নাম, এই মুভিতেও নাকি দে জা ভ্যু ব্যাপারটা আছে।যাইহোক,সে মুভি আমি দেখিনি,যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই আরো ভালো রিলেট করতে পারবেন।আপনাদের কখনো দে জা ভ্যু হয়েছে?
দেজা ভ্যু ব্যাপারটা নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। ইন্টারনেটের কল্যাণে মোটামুটি জানা শোনাও হয়েছিলো। আগ্রহের বিষয়ের উপর লেখা সাইন্স ফিকশনটা দেখে আর লোভ সংবরণ করতে পারিনি। বেশ কিছু দিন বই পড়া থেকে বিরত থাকার পর এই বইটি দিয়ে যাত্রা শুরু ভালোই ছিলো। লুসিড ড্রিমস বিষয়টি লেখক বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন কাহিনিটিতে। স্বপ্নের ঘনঘটায় কোনটা বাস্তব আর কোনটা স্বপ্ন এটা নিয়ে পাঠকদের বেশ চিন্তায় ডুবিয়ে রেখেছিলো। সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য।
‘দেজা ভ্যু’— এই শব্দটার সাথে মোটামুটি আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু কি এই দেজা ভ্যু? কি বুঝায় এই দুটি শব্দ দ্বারা? সোজা বাংলায় বললে, স্বপ্ন ও বাস্তবের পার্থক্য বুঝতে না পারা। চোখের সামনে একটা ঘটনা ঘটলো, কিন্তু মনে হওয়া এমন কোনো ঘটনা পূর্বেও ঘটেছে। আদৌও ঘটেছে তো? নাকি পুরোটাই অবচেতন মনের কল্পনা? এই যে একটা সংশয়, দ্বিধা, এটাই মূলত দেজা ভ্যুর ব্যাখা প্রদান করে। তাহলে লুসিড ড্রিম? সেটা আবার কি? লুসিড ড্রিম হলো এমন একধরনের স্বপ্ন যে স্বপ্নের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক সচল থাকে। আমরা বুঝতে পারি যে আমরা স্বপ্ন দেখছি এবং স্বপ্নের ঘটনাপ্রবাহও নিজেদের মর্জিমাফিক পরিবর্তন করতে পারি। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে স্বপ্ন আমাদেরকে একদম বাস্তব জীবনের অনুভূতি দেয়।
জেনে নিলাম দেজা ভ্যু এবং লুসিড ড্রিমের ব্যাখ্যা। এবার গল্পে ফেরা যাক। গল্পটা আসলে কার? সৈকত, নিহাবের? নাকি টিনা ও সাফিনের? নাকি এই গল্পের মূল কারিগরই স্বপ্ন? আমার দিক থেকে স্বপ্নটাকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলো। যে স্বপ্নের প্রভাবে কল্পনা ও বাস্তবতার মিশেলে এক অদ্ভুত দোলাচলের সৃষ্টি হয়।
আমাদের সবারই কোনো না কোনো সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই প্রতিভা জীবনভর সুপ্তই থাকে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই প্রতিভা প্রকাশ পায় খুবই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। নিহাব ও সৈকতের জীবনেও অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলেছে একটা স্বপ্ন, খুবই দীর্ঘ একটা স্বপ্ন। যে স্বপ্নের স্থায়িত্ব বাস্তব জীবনে কয়েক মিনিট হলেও কল্পনার জগতে কয়েক মাস থেকে বছর অব্দি গড়িয়েছে। যেখানে নিহাব প্রজেক্ট সেইভার সেল আবিষ্কার করে নোবেল বিজয়ী একজন বিজ্ঞানী এবং সৈকত একজন নামকরা গায়ক। কিন্তু বাস্তব জীবনে নিহাব তখনো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গন্ডিটা অব্দি পেরোয় নি। আর সৈকত? সে তো সাহস করে নিজের গায়ক হবার শখ বাবা-মায়ের সামনে তুলে ধরতেই পারছে না।
অবাক করা বিষয় হলো, নিহাব ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া অবস্থায় যেই সেইভার সেল প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে একটু একটু করে, বাস্তবজীবনে সেই একই প্রজেক্ট কেউ একজন পুরো বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে আলোচনার তুঙ্গে। এমনকি নামটিও নিহাবের দেওয়া প্রজেক্টের নামানুসারেই। প্রজেক্ট সেইভার সেল! অন্যদিকে, সৈকত স্বপ্নে যে গানগুলো গেয়ে জনপ্রিয় গায়কে পরিণত হয়েছে, বাস্তবেও কেউ একজন সেই একই গান গেয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। যেন কেউ তারই স্বপ্নে প্রবেশ তার নিজের লেখা গানগুলো চুরি করে বাস্তবে ফিরে এসে সেই গানগুলোকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু এ তো একপ্রকার অসম্ভবই বলা চলে। এ-ও সম্ভব নাকি?
পাঠপ্রতিক্রিয়া— সাইফাই জনরার বই কখনো পড়া হয়নি। তাই এই জনরায় মানিয়ে নিতে খানিকটা কষ্টই হয়েছে। সেই সাথে স্বপ্ন, বাস্তবতার দোলাচলে দিশেহারাও হয়ে পড়ছিলাম বারবার। তবে লেখকের সহজ, সাবলীল লিখনের ফলে বেশিক্ষণ আড়ষ্টভাবটা থাকেনি। সহসাই স্বাভাবিক হয়ে গেছি এবং গল্পেও মিশে গেছিলাম। তবুও কোথাও একটা কিন্তু থেকে গেছে যেন। যতটা আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম ততটা পাইনি। আবার ভাববেন না এক্সপেকটেশন হাই ছিল। এক্সপেকটেশন ছিলই না বলতে গেলে। অনেকদিন পর বই পড়ছি। মূলত জড়তা ভাবটা কাটানোর জন্যই সহজ, সাবলীল কোনো বই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু লেখক যেহেতু আমিনুল ইসলাম, তাই আশা ছিল কিছু একটা হবে। হয়েছে অনেককিছুই, তবে কোথাও একটা ‘কিন্তু’ যেন রয়েই গেলো। শেষের টুইস্টগুলোতেও আমার ‘এটাই হওয়ার ছিল’ টাইপ মনোভাব ছিল। টুইস্টগুলো আমাকে ঠিক নাড়া দিতে পারেনি।
মূল প্লটটা আকর্ষণীয়। তবে আমার মনে হয়েছে লেখক আরেকটু সময় নিলে, অপেক্ষা করলে এই প্লটে আরো দারুণ কিছু হতে পারতো। বেশ কয়েক জায়গায় খাপছাড়া লেগেছে আমার। যেমন সৈকত প্রথমবার সাফিনের অফিসে যাওয়ার পর সাফিনের তাদের সাথে দেখা না করা (আমার মনে হয়েছে যতটা জটিল দেখানো হয়েছে, এরচেয়ে সহজভাবে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করা যেতো), মেয়েটির অকারণেই অদ্ভুত ভঙ্গিমায় হাসা, টিনার আমেরিকা যাওয়ার পর হঠাৎই গায়েব হয়ে যাওয়া, কোনো কারণ ছাড়াই নিহাবের শেষদিকে এগ্রেসিভ হয়ে যাওয়া। খুঁজতে গেলে এমন আরো অনেককিছু খুঁজে পাবো।
আরেকটা ব্যাপার হলো, এতসব তো অবশ্যই একটা উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং যারা বইটা পড়েছেন তারা উদ্দেশ্যটা সম্পর্কেও অবগত। তো আমার প্রশ্ন হলো, উদ্দেশ্য যদি এটাই হয় তবে একজনের আবিষ্কার অন্যকেউ কেন ব্যবহার করছিল যদি তা সুপ্তাবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসাই মেইন ড্রিমারের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে? যার আবিষ্কার তাকে দিয়েই কি প্রকাশ করা যেতো না? স্বপ্ন হোক বা বাস্তবে? নাকি আমিই বেশি ভাবছি?
যাইহোক, সবকথার শেষ কথা হলো, এই জনরায় নতুন কেউ হলে লেখকের সাবলীল লেখন ও ঘটনার সোজাসাপ্টা বর্ণনা সহজেই পাঠককে আকর্ষিত করবে। আপনি এই জনরায় নতুন হলে অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন।
স্বপ্ন দেখি আমরা ঘুমিয়ে। স্বপ্ন আসে কারণে অকারণে। কারণ স্বপ্নের উপর তো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু ধরুন আপনার দেখা স্বপ্নটাই কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে, কিংবা আপনি স্বপ্নে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছেন। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত তাই না! আসলেই তো এটা কীভাবে সম্ভব?
জ্বি "লুসিড ড্রিম" এই শব্দটি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে অসম্ভব এই কাজটির সাথে। এবং স্বপ্নের প্রতি আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আজব ব্যাপার লাগছে? আচ্ছা একটা গল্প বলি তাহলে।
জীবনের অনেক কিছু অপূর্ণ থেকে যায়। চাইলেও মানুষ তা পায় না। যেমন ধরুন হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার হয়েছি অন্য পেশার মানুষ। এরকম আরো বিষয়, অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা থাকে।
বাবা-মায়ের চাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সৈকত নামের ছেলেটি। গানের ভুবনে নাম লেখানোর যে ইচ্ছা ছিল, স্বপ্ন ছিল বড় গায়ক হবার পড়াশোনায় মন দিতে হবে স্বপ্নকে পিষে ফেলে।কিন্তু কতটুকু সফল হবে সৈকত? স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা কী সম্ভব? নিজের বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে, নাকি নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাবে ছেলেটি?
নিহাব বড্ড জেদি ছেলে। সে এমন কিছুর আবিষ্কার করবে যা মা���ুষকে তাঁর রোগ সম্পর্কে আগেই সচেতন করবে। এমন জিনিস থাকলে মানুষ রোগ সম্পর্কে আগেই ধারণা পেয়ে চিকিৎসা নিতে পারবে। মায়ের মৃত্যু ছেলেটাকে এখনো কষ্ট দেয়। স্ত্রীকে পাশে পেয়েছে সবসময়। তবুও সে নার্ভাস, উদ্যোক্তাদের ঠিকঠাক বোঝাতে পারবে তো?
"স্বপ্নঘর" এমন এক প্রতিষ্ঠান যাঁরা মানুষের স্বপ্নের কথা শোনে। তাঁরা সাহায্য করে বিজনেস আইডিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে। বোঝাতে হবে নিজের কর্ম প্রচেষ্টা তাঁদের। সেখানে গিয়েছিল কিন্তু নিহাব এবং সৈকত দুজনেই। সৈকতের স্বপ্ন অবশ্য নিহাবের থেকে আলাদা। তবুও তো এটা স্বপ্ন তাই না!
আগে থেকেই কোনো ঘটনার মিল খুঁজে পেলে আমাদের মনে হয় ঘটনাটা পুরনো নয়, এইতো সেদিনই যেন ঘটে গেল। কিংবা কোনো জায়গায় যে আপনার মনে হতে পারে এটা তো আপনার চেনা। এই ঘটনার একটা আভিধানিক নাম আছে "দেজা ভ্যু"।
এই দেজা ভ্যু এসে দেখা দিয়েছে সৈকতের জীবনে। যে গান গেয়েছিল সৈকত সেই গান তাঁর আগে কে গেয়ে দিলো? সে কীভাবে জানলো এই গানের কথা? আবার যে ফর্মুলা দিয়ে নিহাব চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতি করতে চেয়েছিল সেই ফর্মুলা কেউ আগেই জেনে নিয়ে সে রীতিমতো সবখানে ফেমাস হয়ে গেছে! কাজগুলো সাফিন আহমেদের।
কে এই সাফিন আহমেদ? কী চায় সে? শুধু কী সৈকত আর নিহাবের সাথে তাঁর শত্রুতা? কিন্তু সেটা কী নিয়ে? মানুষের মস্তিষ্কের উপর নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন কী এই সাফিন আহমেদ? নাহলে আগে থেকে সব জানা সম্ভব নয়।
টিনা মেয়েটি অনেক দূর দেশ থেকে এসেছে সৈকত এবং নিহাবকে সাহায্য করতে। সাফিন আহমেদকে সে নাকি চেনে! কিন্তু কীভাবে চেনে সে? টিনা কীভাবে সাহায্য করবে এই দুইজনকে? যেখানে সাফিন আহমেদকে ধরাই মুশকিল!
🔦পাঠ প্রতিক্রিয়া :
“দেজা ভ্যু” আমিনুল ইসলামের পড়া আমার প্রথম বই। এবং আমার কাছে এই উপন্যাসিকাটি বেশ খানিকটা অন্যরকম কারণ এই বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে আমি তেমন পরিচিত নই। সাইকোলজিক্যাল ব্যাপারের সাথে কিছুটা কল্পকাহিনী, বিভিন্ন ধরনের ব্যাখার সংমিশ্রণ আলাদা একটা অভিজ্ঞতা দিয়েছে আমাকে।
লুসিড ড্রিম সম্পর্কে বেশ ভালো রকমের তথ্য রয়েছে এই বইয়ে। স্বপ্নের জগত সেই সাথে স্বপ্নের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া সম্ভব কী না, স্বপ্নের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কেও বেশ আলোচনা ছিলো আমিও নতুন কিছু জানলাম।
আহামরি টুইস্ট পাওয়া যায়নি তবে খারাপ লাগলো না পড়তে। লেখকের লেখনী সাবলীল। পড়তে তেমন অসুবিধা হয়নি তবে কিছু জায়গায় আরেকটু বোধহয় অন্যভাবে উপস্থাপন করা যেত। তবে টিনার চরিত্রের মাঝে বৈচিত্র্য আছে। শেষের সমাপ্তিতে টিনার ভূমিকা বোধহয় একটু অবাকই করলো আমাকে।
তবে লেখক শেষের সমাপ্তি দিয়েছেন গুছিয়ে। সত্যি বলতে বিজ্ঞানের কিছু আলোচনায় আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো কারন আমি বিবিএর ছাত্রী। কিন্তু বইটা উপভোগ করেছি। লেখকের লেখা পড়া হয়েছে এটা দিয়েই। আশা করছি ওনার বাকি বইগুলোও পড়ার সুযোগ হবে ইনশাআল্লাহ।
🔦 বইয়ের নাম : "দেজা ভ্যু" 🔦লেখক : আমিনুল ইসলাম 🔦ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৪/৫
#বই_রিভিউ বইয়ের নামঃ দেজা ভ্যু লেখকঃ আমিনুল ইসলাম জনরাঃ সাইফাই থ্রিলার প্রকাশনীঃ সতীর্থ প্রকাশনা পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১২৮
'দেভাজ্যু ' ফরাসি শব্দ। আক্ষরিক অর্থ already seen বা ইতিমধ্যে দেখা। কখনো কোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে যদি মনে হয় এই ঘটনা আগেও হয়েছে কিন্তু বাস্তবে আসলে এমন কিছুই হয়নি। আর ব্যক্তি যখন বুঝতে পারে সে স্বপ্ন দেখছে আবার বাইরের জগতের সম্পর্কে প্রতি ও সজাগ এই পর্যায়ই হলো লুসিড ড্রিমিং। গল্পটি নিহাব ও সৈকত নামের দুজন ব্যর্থ মানুষকে নিয়ে, যাদের জীবনের গল্প ব্যর্থ দিয়ে শুরু হলেও তারা ধীরে ধীরে যার যার ক্ষেত্রে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়।কিন্তু এত সাফল্য পাওয়ার পরও সবকিছুর মধ্যে ফাঁকি মনে হয়। সৈকত মা বাবার চাপে ইন্জিনিয়ারিং পড়তে আসলেও মনে মনে চাইতো একজন গায়ক হতে। তাইতো বাড়ি থেকে বের হয়ে অডিশন দিতে থাকে নানা জায়গায়। অবশেষে এক বড় গায়ক হয় সৈকত যার কন্ঠের জাদুতে অবাক হয়ে থাকতো লখো মানুষ। তবুও তার মনে চেপে রাখা হতাশার জন্য আত্মহত্যা করে। সৈকতের গল্প এখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজেকে হঠাৎ আবিষ্কার করে বাসের একটা সিটে। এটা কি স্বপ্ন ছিল নাকি পিছিয়ে গেছে অনেক বছর? আশ্চর্যের বিষয় যে স্বপ্নে তার লেখা গান কেউ নিজের দাবি করছে।
মাকে হারানোর পর বাকিদের প্রিয়জন যেন হারাতেনা হয় তার জন্য নিহাব আবিষ্কার করে ' সেইভার সেল ' নামে একটা প্রজেক্ট। যার মাধ্যমে সারাবিশ্বে হইচই সৃষ্টি হয়।হঠাৎ নিহাবের ঘুম ভেঙে যায়। অবাক করার বিষয় হলো একদিন দেখতে পায় তার প্রজেক্টটি অন্য কেউ আবিস্কার করছে?
দুটি ব্যাপার খুজতে গিয়ে তারা খুজে পায় সাফিন নামের এক রহস্যময় লোককে।যে কিনা তাদের আবিষ্কারগুলো নিজের বলে সারা পৃথিবীতে বলে বেড়াচ্ছে। মরিয়া হয়ে অদ্ভুত এই পরিস্থিতির কারণ খুঁজতে যেয়ে লক্ষ করে তারা আটকে আছে এক মরীচিকায়; জীবনটাই যেন দেজা ভ্যু! এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই টিনা নামক এক মেয়ে তাদের শোনায় এক অবিশ্বাস্য গল্প! কী সেই গল্প? আসলে কী ঘটেছিল ওদের সাথে? দেজা ভ্যুর শেষ চলটা তাহলে কার ছিল?
📌 চরিত্রায়ন: চরিত্র গঠনে লেখকের পারফরম্যান্স খুবই ভালো। চরিত্রগুলোকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। প্রতিটি চরিত্রকে বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়েছেন সুনিপুণভাবে। অতিরিক্ত কোনো চরিত্রের ব্যবহার হয়নি পুরো গল্প জুড়ে। যে কয়েকটি চরিত্রের প্রয়োজন, ঠিক সে কয়েকটি চরিত্রই রেখেছেন। সব চরিত্র নিয়েই আলাদা আলাদা ঘটনা বিল্ড আপ করে গেছেন লেখক। মোট কথা ছোট বই হিসেবে চরিত্র গঠন আমার কাছে পারফেক্ট লেগেছে।
📌পাঠ প্রতিক্রিয়া : আমিনুল ইসলামের তোমার দেওয়া আমার কোনো নাম ছিল না বইটি পড়া শেষ করলে লেখকের বাকি বই গুলো পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়।লেখকের লেখনীতে পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করেন সব সহজেই। তাইতো কয়েক ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় বইটি যারা খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে ভিন্ন স্বাধের অসাধারণ একটি বই পড়তে চান, অথবা যারা সাই ফাই, থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন। তাদের আমি এই বইটা ট্রাই করে দেখতে বলব। আশা করি বইটি পড়ে অনেক ভালো সময় কাটবে । হ্যাপ্পি রিডিং।