সরযূ বহুদিন পরে ফিরেছে কলকাতায়। আর এসে দেখছে ওর রেখে যাওয়া শহর আর মানুষগুলো কেমন যেন পালটে গিয়েছে। তার ভালবাসার লাবণ্য আজ বিবাহিতা, জননী। একই বাড়িতে আছে লাবণ্যর তুতো বোন লাজনি, অতীত ও বর্তমানের নানান অন্ধকার ছাপিয়ে বেঁচে ওঠার চেষ্টা করছে। আছে নায়িকা হতে চাওয়া ইলাক্ষী। স্বপ্নপূরণের জন্য মানুষকে ব্যবহার করতে পিছ-পা হয় না, আবার নিজের অজান্তেই ব্যবহৃতও হয়ে চলে। আছে ইলাক্ষীর প্রেমিক নমন, তার নিরুপায় প্রেম ও আদর্শ নিয়ে। সমান্তরালে আছে রাজনীতির ঘোলাজলে সাঁতার কাটা রতিশ, যার বেপরোয়া যাপন ক্রমশ বিপদের মুখে ঠেলে দেয় তাকে। আর সেই আবর্তে না জেনেই জড়িয়ে যায় সরযূ, লাজনি, ইলাক্ষী ও নমন।
এই সবকিছুর বাইরে আছে এক বাবুই পাখি। নিজের বাসা বোনার কথকতা করতে করতে সে গল্প বলে এক মানুষী সমকালের। স্নেহ, হিংসা, ক্রোধ, ঘৃণা, ভয় ও প্রেমের সেই জটিল ঠাসবুনোটের ভিতরে ভিতরে চোরাপথে তবু ঠিক বয়ে চলে ভালবাসার সুতো। বাবুইপাখির বাসার গহিনে যে আরাম, মানুষী জটিলতার কেন্দ্রেও থাকে সেই আশ্রয়েরই খোঁজ, যার নাম ভালবাসা।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
সেই এক গতে বাঁধা লেখা, যেমনটা স্মরণজিৎ লেখেন সবসময়। গতবছরের শারদীয় দেশে প্রকাশিত লেখা, পড়ব না পড়ব না মনে করেও এতদিন পর এসে পড়লাম এবং আরও একবার হতাশ হলাম। মাঝে মধ্যে লেখককে সত্যিই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে এই একই প্যাটার্নের গল্প বারবার করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখতে ক্লান্তি আসে না? বিরক্ত লাগে না? এ যেন শুধু লিখতে হবে বলেই লেখা আর একই কাঠামোকে বারবার আলাদা ছাঁচে আলাদা রঙে গড়ে তোলা। একে রিভিউ কোনোভাবেই বলা যাবে না, বরং র্যান্ট বলা যেতে পারে, তবে এর চেয়ে ভালো অভিব্যক্তি এই মূহুর্তে মাথায় আসছে না। যাঁরা স্মরণজিতের বেশ কিছু লেখা পড়েছেন ইতিপূর্বে তাঁরা হয়তো বুঝবেন কিছুটা।
পড়লাম এইবারের দেশ পূজাবার্ষিকীতে স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর উপন্যাস বাবুই। আজকের এই অসময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে উপন্যাসটি পাতায় পাতায় আমাদের আশার আলো জাগায়। মানব চরিত্রগুলির মধ্যে সাদা-কালো-ধূসর সবকিছুর মিলমিশ রয়েছে। আমাদের আশপাশে দেখা খুবই সাধারণ হেরে যাওয়া মানুষগুলো যখন খড়কুটোর মত জীবনকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে তখনই ম্যাজিকের মত চাওয়া পাওয়াগুলো পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এই উপন্যাসে। আমার সেইসব উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে যার ছত্রে-ছত্রে গল্প থাকে। ঠিক আমাদের সামান্য মানবজীবনে যেমন প্রতি পর্বে ছোট ছোট গল্প থাকে, তেমনি উপন্যাসেও এই রকম নানা রকম গল্প পাতায় পাতায় দেখা যায়। স্মরণজিৎবাবু খুব সুন্দর ভাবে তা আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। এই চরম দুঃসময়ে রূপকথার মত পাঠকের ও লেখকের ভাবনা মিলেমিশে এক হয়ে গেল। আমরা সবাই কোথাও যেন একসাথে জিতে গেলাম। আমার রাগ হয়েছিল ইলাক্ষীর উপর। তবুও লেখক সুন্দর তাকে মূল জীবনে ফিরিয়ে আনলেন ডুবতে দিলেন না। এটাই সেই পজিটিভিটি যা আজ আমাদের সকলের খুব জরুরি। উঠতি গুন্ডা রতীশের চরম পরিণতি, বিজনের অকস্মাৎ এক্সিডেন্টে মৃত্যু সবগুলোই যেন সত্যের জয় এবং অসতের পরাজয় নিয়ে আমাদের দরবারে হাজির করল। হয়তো বাস্তবে এগুলি হয় না, তবু আমরা যখন ফিকশনধর্মী উপন্যাস পড়ি এটা আমাদের ভেবে নিতে অসুবিধা কোথায় যে সমস্তটাই হয়তো এমনও হতে পারত বা হলে ভালো হতো। স্মরণজিৎ আমাদের এই রকম আশাব্যঞ্জক উপন্যাস এবার পুজোয় উপহার দিলেন। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ। যারা দেশ পূজাবার্ষিকী কিনেছেন তাঁরা স্মরণজিৎবাবুর এই উপন্যাসটি পড়বেন - অবশ্যই ভালো লাগবে।
“...আমি আমাদের বাসা বুনছিলাম তাে ! নিজের অক্ষমতা, ব্যর্থতা আর মনখারাপ অতিক্রম করে আমি বাসা বুনছিলাম কুমু ! তােমার জন্য বুনছিলাম.... আমাদের বাসা !”
📄 আমার কথা : প্রতিটি বইয়েই কিছু না কিছু ‛স্পেশাল’ ব্যাপার থাকেই... সঠিক সময় বা আরও স্পেশিফিক্যালি বললে বলতে হয় ‛সঠিক পরিস্থিতি’তে কোনো বইয়ের স্পেশাল ব্যাপারটি আমরা উপলব্ধি করতে পারি ।
এই বইটির কথাই যদি বলি... গতবারের ‛শারদীয়া দেশ’এ প্রকাশিত এই উপন্যাসটি প্রথমবার পড়েই মনের মধ্যে আলাদাই ভালোলাগার অনুভূতি হয়েছিল, তবে সেই অনুভূতি ‛স্পেশাল’ কিছু না । যেহেতু স্মরণজিৎ চক্রবর্তী আমার প্রিয় লেখক, তাই ওনার নতুন কোনো উপন্যাস পড়লে যে ভালোলাগার অনুভূতি হয়... এই উপন্যাস প্রথমবার পড়ে সেইরকম অনুভূতিই হয়েছিল ।
এই কিছুদিন হল উপন্যাসটি বই হয়ে বেরিয়েছে । আজ বই থেকে দ্বিতীয়বার পড়লাম এই উপন্যাস... আর পড়তে পড়তে উপলব্ধি করলাম - ‛এই উপন্যাসটি স্পেশাল, ভীষণই স্পেশাল’। যারা স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর উপন্যাসকে একঘেয়ে বা গড়পড়তা বলে দাগিয়ে দেন তারা আদৌ উপন্যাসগুলি কখনো অনুভব করতে পেরেছন কিনা সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ হয় ।
▫️এই উপন্যাসের দুটো পাখির মধ্যে কথোপকথনের একটু অংশ আমি এখানে তুলে দিচ্ছি....
সতুদা বলেছিল, “তুই আমার কাছ থেকে সিমপ্যাথি চাইছিস ? সিমপ্যাথি আশা করলে ভুলে যা । শোন বাবুই, ওরা যখন কুমুদিনীকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে, তখন তুই মন দিয়ে নিজের কাজটা কর । জানবি সৎ থাকলে, একাগ্র থাকলে সাফল্য আসেই । হয়তো দেরি হয়, তবু আসেই । অধ্যবসায়ের বিকল্প কোনওদিন কিছু ছিল না, কোনওদিন কিছু হবে না । তুই চেষ্টা কর আবার । হবে ।”
📄 শেষটুকু : যে মানুষটির কলম বছরের পর বছর একঘেয়ে প্রেমের গল্প লিখেও সারিয়ে চলেছে মানুষের মনের গভীর থেকে গভীরতম ক্ষত, সেই 'আধুনিক রূপকথার জাদুকর'-কে আমার প্রণাম । আজকের এই মূল্যবােধহীন, মহামারী-আক্রান্ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখনদারী-সর্বস্ব পৃথিবীতে দাড়িয়েও মানুষটা বছরের পর বছর শুনিয়ে চলেছে আজীবন বয়ে চলা নিখাদ ভালোবাসার গল্প ।
বাবুই পাখির বাসা খুব সুন্দর দেখতে, ছেলে পাখি তার ঠোঁট দিয়ে নিপুণ শিল্প কলায় এক আশ্চর্য জিনিস তৈরি করে, বাসা তৈরি হলে মেয়ে পাখি সেই বাসায় আসে ও বাসার বাঁধন আরও মজবুত করে, ভিতরের সাজসজ্জা সম্পূর্ণ করে । ছেলে পাখির এই বাসা তৈরির প্রয়াস দেখে মেয়ে পাখি তার সাথে ঘর বাঁধতে আসে । এই বাসার ভিতরে যে আরাম সেরম মানুষের জীবনের নানা জটিলতার কেন্দ্রে থাকে সেই আশ্রয় এর খোঁজ যার নাম ভালোবাসা ।
গল্প শুরু হয় যখন সাজু বছর পনেরো পর কলকাতায় ফেরে । তার আশেপাশে জড়িয়ে থাকে নানা চরিত্র- লাবণ্য তার এক্স, যে আজ বিবাহিত ও জননী । আছে লাবণ্য এর বোন টুপু। আছে নায়িকা হতে চাওয়া ইলাক্ষী, তার চাহনেওয়ালা নমন, আছে নমন এর ফুটবল প্রেমী বন্ধু বাবু ও তার বোন মিনু ও নানান চরিত্ররা । এই চরিত্র গুলো জীবনের নানা ধাপে চেষ্টা করতে করতে হয়েতো হেরে গেছে, এক ঝড় এসে জীবনের খড়কুটো সব উড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু বাবুই পাখির মতো আবার চেষ্টা করেছে ঘর বাঁধার ।
স্মরণজিৎ এর যে কোন গল্পেই আশার আলো থাকে, উনি নিজের জীবনের না পাওয়া গুলো তুলির টানে উপন্যাস এর মধ্যে একদম নিখুঁত ছবি আঁকেন কোনও রকম ডার্ক স্পট ছাড়া । বাবুই ও সেরকম একটা গল্প । এই নামকরণ টাই কতটা গভীর সেটা এই গল্প না পড়লে বোঝা যাবে না । উপন্যাস এর শেষে পাঠকের গাল চওড়া হয়ে যাবে আনন্দে অত সুন্দর ভাবে সব মিলিয়েছেন। উনি কাউকে দুঃখ দিতে চান না তাই এত সুন্দর করে জীবনের গল্প বলেন|
জীবনে যখন সব তালগোল পাকিয়ে যাবে, বার বার চেষ্টা করেও যখন কিছু হবে না তখন আপনি বাবুই পড়ুন, নতুন ভাবে শুরু করার এক উদ্যম পাবেন ।
স্মরণজিৎ এর গল্পে কিছু জিনিস খুব কমন, অনেক গল্পেই তা পাওয়া যায়, যেমন একটি ছেলে যে একটা চাকা ওয়ালা কাঠের প্লাটফর্ম এ বসে রাস্তা পার হয় । এই ছেলেটাকে আমি দেখেছি আমার স্কুল লাইফ এ রাসবিহারী মোড় এ। এই ধরেনের জিনিস গুলো স্মরণজিৎ ব্যবহার করে নানা গল্পে। লোকে বলে সেই তো একই প্লট , কিন্তু আমি বলব সবকটি উপন্যাস ই স্পেশাল , উপলব্ধি টাই আসল । শেষে একটাই কথা বলব যে মানুষটা বছরের পর বছর এক ধাঁচের গল্প লিখে মানুষের মনের গভীরে যদি আশার আলো জ্বালতে পারে তাঁকে প্রণাম ।
সরযূ বহুদিন পরে ফিরেছে কলকাতায়। আর এসে দেখছে ওর রেখে যাওয়া শহর আর মানুষগুলো কেমন যেন পালটে গিয়েছে। তার ভালবাসার লাবণ্য আজ বিবাহিতা, জননী। একই বাড়িতে আছে লাবণ্যর তুতো বোন লাজনি, অতীত ও বর্তমানের নানান অন্ধকার ছাপিয়ে বেঁচে ওঠার চেষ্টা করছে। আছে নায়িকা হতে চাওয়া ইলাক্ষী। স্বপ্নপূরণের জন্য মানুষকে ব্যবহার করতে পিছ-পা হয় না, আবার নিজের অজান্তেই ব্যবহৃতও হয়ে চলে। আছে ইলাক্ষীর প্রেমিক নমন, তার নিরুপায় প্রেম ও আদর্শ নিয়ে। সমান্তরালে আছে রাজনীতির ঘোলাজলে সাঁতার কাটা রতিশ, যার বেপরোয়া যাপন ক্রমশ বিপদের মুখে ঠেলে দেয় তাকে। আর সেই আবর্তে না জেনেই জড়িয়ে যায় সরযূ, লাজনি, ইলাক্ষী ও নমন।
এই গেলো লেখকের কথা এবার আসা যাক আমার উপন্যাসটা পড়ে কেমন লাগলো, আমার মনে হয়েছে পুরো উপন্যাস ঠিক গতিতে চলতে থাকলেও শেষটায় বড্ড তাড়াহুরো করে ফেলেছেন লেখক। এটা ছাড়া ভালই বলতে গেলে।
....আমি আমাদের বাসা বুনছিলাম তাে ! নিজের অক্ষমতা, ব্যর্থতা আর মনখারাপ অতিক্রম করে আমি বাসা বুনছিলাম কুমু ! তােমার জন্য বুনছিলাম.... আমাদের বাসা !
যার কলম বছরের পর বছর একঘেয়ে প্রেমের গল্প লিখেও সারিয়ে চলেছে মানুষের মনের গভীর থেকে গভীরতম ক্ষত, সেই 'আধুনিক রূপকথার জাদুকর'-কে আমার প্রণাম । আজকের এই মূল্যবােধহীন, মহামারী-আক্রান্ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখনদারী-সর্বস্ব পৃথিবীতে দাড়িয়ে... মানুষটা বছরের পর বছর শুনিয়ে চলেছে আজীবন বয়ে চলা নিখাদ ভালোবাসার গল্প ।
এই উপন্যাস রচিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চরিত্রকে ঘিরে। প্রধান চরিত্রদের মধ্যে বাবুই পাখি, সরযু, ইলা, টুপু, নমন, বিনি অন্যতম।
গল্পের শুরুতে দেখা যায় একটি বাবুই পাখি খুব মন দিয়ে বাসা বানাতে ব্যস্ত। সে মনে মনে ভাবছে যে বাসা বানাতে না পারলে বান্ধবী কুমুদিনী তাকে পাত্তা দেবে না।
দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে বিদেশে কাটিয়ে সরযূ দেশে ফিরেছে কিছু দরকারী কাজ সেরে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। এসে তার প্রিয় মেমদিদার বাড়ি গিয়ে তাজা হয়ে ওঠে তার অতীতের স্মৃতি। সে কি অতীতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবে?
টুপু লড়াই করছে পারিবারিক ও আর্থিক টানাপোড়োনের সাথে, বেরিয়ে আসতে চাইছে একটা খারাপ সম্পর্ক থেকে। কিন্তু সবকিছু যেন খুব জটিল! কিন্তু সে যতটা জটিল মনে করছে, আসলেই কি এতটিই জটিল তার জীবন?
ইলা নায়িকা হতে চায়। সিনেমায় লিড রোল পেতে সে অনেকদুর যেতে পারে, যা খুশি করতে পারে। কিন্তু আসলেই সে যা খুশি বা নীতিবিরুদ্ধ কাজ করতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
নমন প্রবল আর্থিক কষ্টে ভুগতে ভুগতে ভাবছে, কলকাতায় নাকি টাকা ওড়ে? কোথায় টাকা? সে কি পারবে জীবনটা গুছিয়ে নিতে?
খানে বাবুই পাখির কনসেপ্ট কিন্তু অভিনব। গল্পটি পড়লে বুঝতে পারবেন, এখানে এই বাবুই পাখিটি যা বলছে, সেগুলো মানুষের জীবনরই কথা। মানুষের চাওয়া পাওয়া, দুঃখ, স্বপ্ন- বাস্তবকে তুলে ধরতে লেখক বাবুই পাখিকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছেন। হয়ত এইজন্যই উপন্যাসের নাম ‘বাবুই’। এই উপন্যাসে এই বাবুই পাখি হল সবচেয়ে মিষ্টি চরিত্র, সেই এবারে হিরো।
অনেকদিন পর একটা চেনা জনারের উপন্যাস পড়লাম। হ্যাঁ, কিছু অংশ সেই রিপিটেটিভ মনে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেকটা অংশে আবার সেরকম অনন্যও বলা যায়। গল্প শুরু একটা বাবুই পাখির বাসা বাঁধার ব্যর্থ চেষ্টাকে কেন্দ্র করে, বারবার সে অনেক কষ্টে খড়কুটো জোগাড় করে নিয়ে আসে কিন্তু বাসাটা ঠিক যেন তৈরি হয়-ই-না কিছুতেই। তাই দেখে দূরে বসে হয়তো মস্করা করে তারই কলোনির অন্যান্যরা, কিন্তু তার চেষ্টার দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বসে থাকে আরো একজন। সত্যিই কি? কি জানি... সেই প্রেক্ষাপটেই আগমন গল্পের মূল দুই চরিত্র, সরযূ ও লাবন্যর। আসলে, বাবুই পাখির বাসা বানানোর ছোট ছোট অংশগুলো এক-একটা রূপক, অথচ প্রত্যেকটিই নিজগুণে কিছু বলিষ্ঠ অর্থবহন করে। সেই বাবুই পাখি নিজের বাসা বানানোর গল্প বলতে বলতে বলে চলে তারই প্রতিবেশী, অর্থাৎ মানুষের সমকালের। গল্প পড়তে পড়তে কোথাও গিয়ে বাবুই-এর জীবনে কুমুদিনীকে না পাওয়ার অভিমান মিশে যায় টুপুর জীবনের সঙ্গে, অথবা ঠোঁটের উপরের একাকী কৃষ্ণ তিল টার মধ্যে, শেষে শুধু এটুকুই বলে যায়, কখনো হাল ছাড়তে নেই, আর বাবুইপাখির বাসার গৃহকোণে যে আরাম, মানুষী জটিলতার কেন্দ্রেও থাকে সেই আশ্রয়ের ই খোঁজ, যার নাম ভালোবাসা! অন্যান্য গল্প গুলোর মত এবারেও লেখকের দ্বারা উপন্যাসের চরিত্রগুলোর নাম সঞ্চয়ন একেবারে ইউনিক ও দুর্দান্ত, যেমন ইলাক্ষী, ও লাজনি।
লেখকের রচিত অন্যান্য অনেক উপন্যাসের শেষেই মনে হয় যেন প্রত্যেকটা চরিত্র হয়তো সঠিক বিচার অথবা ভাগ্যের আনুকূল্য পেল না, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই উপন্যাসটি ব্যতিক্রমী। গল্পের শেষে আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে, বাবুই এর পরবর্তী কোনো খন্ড বেরোলেও বেরোতে পারে, অন্তত শেষ পর্বের কথোপকথনের সুরটা কিছুটা সেরকমই মনে হল। পতাঝরার মরশুমে, পাল্টা হাওয়া, কম্পাস বা সেফটিপিন এর মতন অতোটা ইম্প্যাক্টফুল না মনে হলেও, যাঁরা স্মরণজিৎ-প্রেমী বা একটা হালকা প্রেমের উপন্যাস পড়বেন বলে ভাবছেন, এ উপন্যাস তাদের জন্য।