পপ সায়েন্স লেভেলে না - একেবারে গণিত, সমীকরণ আর শত শত গ্রাফ দিয়ে ফিজিক্সের ইতিহাসে মতান্তরে সবচেয়ে জটিল তত্ত্বটাকে একেবারে অন্তরে গেঁথে দেওয়ার বই।
বইয়ের দুটা খন্ড। প্রথম খন্ডে আমরা স্পেশাল রিলেটিভিটি, স্পেসটাইম ডায়াগ্রাম, ভর শক্তির সম্পর্ক, টুইন প্যারাডক্স এসব খটমটে জিনিস শিখে ফেলে এরপর আস্তে আস্তে জেনারেল রিলেটিভিটিতে ঢুকবো। টেন্সর বুঝবো, মেট্রিক টেন্সর শিখবো, মহাকর্ষ বুঝবো, জিওডেসিক শিখবো - আর জেনে ফেলবো স্পেসটাইম আসলেই চাদরের মতো নাকি।
আর এই সবকিছু বোঝা শেষ হলে আমরা ঝাঁপ দেবো ব্ল্যাক হোলের অতল গহবরে। ব্ল্যাক হোল একটা জেলখানা - সেখান থেকে কেউ পালাতে পারে না। পালাতে না পারার কারণ মুক্তি বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি নয় - ঘটনাদিগন্তের ওপাশে স্পেসটাইম উলটে পালটে যায়, সেখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটে সাধারণ মানব মস্তিষ্ক যেগুলো কল্পনাও করতে পারে না। রূপকথার চেয়েও অবিশ্বাস্য সে জগতের স্বাদ যারা নিতে চাও, চলে আসো আমাদের সাথে।
দ্বিতীয় খন্ডে কী থাকবে সেটা আমি জানি, কিন্তু এখন বলব না। বইয়ের শেষে বলবো।
একটা জিনিসটা হারে হারে টের পেয়েছি এই বইটা সম্পাদনা করার সময়। সম্পাদনা বলতে পাঠক হিসেবে পড়ে ভুল-ত্রুটি ধরা আর ফিডব্যাক জানানো মাত্র। পপ সায়েন্স পড়ে পড়ে রিলেটিভিটি, বিশেষভাবে জেনারেল রিলেটিভিটি, ব্ল্যাক হোলের মতো জিনিসগুলোর ব্যাপারে পাওয়া জ্ঞান নিয়ে কনফিডেন্স লেভেল বেশ ভালোই ছিল। এই জ্ঞানের প্রয়োগ ছিল ইন্টারস্টেলার মুভি ব্যাখ্যা পর্যন্তই। তাই নিজেও সন্তুষ্ট ছিলাম না। পাঠক হয়তো আমার সাথে বেশ মিল খুঁজে পাচ্ছেন নিজের। স্পয়লার দিয়ে রাখি– আপনি যা যা জানেন এই ব্যাপারে তার প্রায় সব ভুল। হ্যাঁ প্রায় সব! প্রথম যখন নাঈম ভাই প্রশ্ন করেছিলেন, “ব্লাকহোল থেকে কেন কিছু বের হতে পারেনা? স্কেপ ভেলোসিটি আলোর বেগের চেয়ে বেশি বলে? তাতে কী, পৃথিবী থেকে তো রকেটগুলো বের হতে স্কেপ ভেলোসিটি অর্জন করতে হয় না!” তখনই কনফিডেন্স উইন্ডোজ–10 এর মতো ক্র্যাশ করেছিল। ডিরেক্ট Blue screen of death! আস্তে আস্তে যত পড়লাম তত বুঝলাম জিনিসগুলো আসলে কত জটিল, কত সুন্দর, কত বেশি কুল! কমপ্লেক্সিটির জন্য কনফিডেন্স লেভেল কমে গেলেও এখন খুশি যে অন্তত আসলে কী হচ্ছে তা বুঝি, আসলে কী হয় তা জানি। খোলা মাইন্ড নিয়ে বইটা পড়া শুরু করেন, লস নেই। মাইন্ডব্লোন হবার জন্য রেডি থাকেন।
জেনারেল রিলিটিভিটি বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোর একটা। মফিজ ব্ল্যাকহোলে পড়ে গেলে কী দেখবে?
পড়ার আগে গাড়ির ব্রেক কষলে দেখবে সূর্য মিনিটে মিনিটে উঠছে, ডুবছে। বাইরের এলাকাটা গাঢ় নীল বর্ণের হয়ে আছে!
মনে প্রশ্ন জাগে, কেন হচ্ছে এইসব?
মফিজ হয়তো ভাবার টাইম পায়নি৷
তবে আইন্সটাইন পেয়েছিলেন৷ তাই তিনি দিয়েছিলেন স্পেশাল আর জেনারেল রিলেটিভিটি। এই অসাধারণ থিওরির পেছনে খেটে গেছেন কার্ল শোয়ার্জচাইল্ড, অবদানে মিনকাওস্কি, রিম্যানের, আছে আরও অনেকের৷ সবার প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান রেখে শুরু হয়ে বইটি।
স্পেস-টাইম কীভাবে ছোটো হয়ে থাকতে পারে?
সময় কী?
স্পেস-টাইমের চাদর যেটাকে বলে, সেটা কি আসলেই আছে? আদৌ কি সেটা চাদর? পুরো বইটাতে সমীকরণ আর স্পেস-টাইম ডায়াগ্রামের সাহায্যে দেখানো হবে তথাকথিত চাদরটা আসলে কী! ব্ল্যাকহোল, ওয়ার্মহোল, এইসব কীভাবে এলো, দেখানো হবে!
তৃতীয় চ্যাপ্টারে রিলেটিভিটিতে প্রবেশের বেসিক কিছু বিষয় যেগুলো জানা লাগবে, তা নিয়ে লেখা।
ত্বরণ আর মাত্রা আছে, বেগ, ভেক্টর, সময় কীভাবে কী, স্থান কীভাবে কী, কেন – এইসব। অনেক ছোটো এই চ্যাপ্টারটা।
চতুর্থ চ্যাপ্টার থেকে সমীকরণকে প্রাধান্য দিয়ে বোঝানো হবে সমীকরণ আসলে কী বলে, সমীকরণে এইসব সিম্বলের একচুয়াল মিনিং কী, কেন এইগুলো ইউজ করা হয়! স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম থেকে দেখানো হবে পুরো ঘটনাকে। পুরো বইয়ে প্রত্যেকটা ঘটনা মিনকাওস্কি ডায়াগ্রাম বা স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম দিয়ে বুঝানো হবে।
লরেঞ্জ রুপান্তর, আপেক্ষিক বেগের সমীকরণ, এগুলোর প্রতিপাদন আর স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম বেশ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
চতুর্থ চ্যাপ্টারে আছে dτ কী, কীভাবে আসে, কেন– সেটা।
কেন dτ সত্যিকারের সময়, ফিল করানো হয়েছে বেশ ইন্টারেস্টিং ওয়েতে, ম্যাথ করিয়ে, সিম্বলের মানে খুটে খুটে বের করে দেখিয়ে। টুইন প্যারাডক্স, এর সমাধানও আছে, সমাধান কীভাবে কাজ করে সেটাও বোঝানো হবে মিনকাওস্কি ডায়াগ্রাম আর সমীকরণ হিসাব করে। ds কী জিনিস, দেখানো হবে ডায়াগ্রাম আর সমীকরণ প্রতিপাদন করে করে, এইগুলোর মানে বুঝিয়ে।
পুরো বইটাই সমীকরণ আর মিনকাওস্কি ডায়াগ্রাম দিয়ে সব বুঝানো আর অনেক সহজবোধ্যভাবে এই জটিল জিনিস বুঝানো হয়েছে।
কেন সময়কে মাত্রা ধরা হয় সেটাকে বুঝানো হয়েছে অঙ্ক দিয়ে। তৃতীয় চ্যাপ্টারে এই জিনিসটা কথায় বুঝানো হয়েছিল, এখনে সেটা গণিতে বুঝানো হয়েছে। এই চতুর্মাত্রিক বেগের উপাংশ থেকে আলোর বেগকে কেন ক্রস করা যায় না সেটার প্রমাণ দেখানো হবে!
আপেক্ষিক ভর পুরাতন নোটেশন। অনেকে রিলেটিভিটি পড়ে ভাবে যে নতুন নোটেশনে ভর চেঞ্জ হয় না। সেটা নিয়ে বিস্তারিত আছে বইটাতে। নতুন আর পুরাতন – দুই নোটেশনই দেখানো হয়েছে, দুইটার পার্থক্যও বলা হয়েছে। ভরবেগ, ভর, বল, শক্তি, E=mc² আগের মতো নেই ইত্যাদি – সব নিয়ে মারাত্মক সহজ করে এগুলোর প্রত্যেকটার একচুয়াল মিনিং, প্রতিপাদন করা, কীভাবে আসে এইগুলো দেখানো হয়েছে।
চতুর্থ চ্যাপ্টারের শেষ অংশ ‘সবাই বুড়ো হতে চায়’। এইটা অনেক মজার একটা চ্যাপ্টার। নিউটনের প্রথম সূত্র, কেন কাজ করে? নিজের বর্তমান অবস্থা একই রাখলে কীভাবে সবাই দ্রুত বুড়ো হয়, সেটাও দেখানো হয়েছে ডায়াগ্রাম আর অঙ্ক করিয়ে।
মহাকর্ষ আসলে কী?
নিউটন বললেন, মহাকর্ষ আসলে বল। সূত্র দিলেন, F = GMm/r² কিন্তু বলতে পারলেন না, বলটা একচুয়ালি কোত্থেকে কী! আইন্সটাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি দেখায়, মহাকর্ষ জাস্ট একপ্রকারের ত্বরণ! উলটা ত্বরণ, গাছ থেকে আপেল মাটিতে পড়ে না, পৃথিবীই এগিয়ে গিয়ে আপেলকে কোলে তুলে নেয়!
কীভাবে কী! সবই আসবে একটু পরের অংশে, সমীকরণ আনা হবে, বুঝানো হবে, আর ডায়াগ্রাম দেখা হবে!
মহাকর্ষ চ্যাপ্টারের আগের চ্যাপ্টারে টেন্সর বুঝানো হবে, মেট্রিক সমীকরণের মানে উদ্ধার করে পোলার কো-অর্ডিনেট সিস্টেম দেখে জেনারেল রিলেটিভিটির আসল ব্যাপারগুলোর দিকে রওনা দেওয়া হবে।
সাত নম্বর চ্যাপ্টারে এসে ব্ল্যাকহোলের এদিকওদিক দেখানো হবে৷ শোয়ার্জচাইল্ড ব্ল্যাকহোলের ঘটনা দিগন্তের বাইরে কার সাপেক্ষে কী কেন হয়, ইভেন্ট হরাইজনে কী হয়, কেন হয়, আর ব্ল্যাকহোলের ভেতরেইবা কীভাবে স্থান আর কাল উলটে যায়, সেটাও দেখানো হবে। উলটানো এই পথে যদি কেউ জিওডেসিকের টান ঠেকিয়ে চলে, সে সময়ের গাড়িতে চড়ে চলাচল করতে পারে, দেখতে পারে আমাদের একটু আগের থেকে অনেক আগের ব্ল্যাকহোলে পড়া আলো, এভাবে দেখতে পারে অতীত বা ভবিষৎ! এসব শেষে শেখানো হবে বিখ্যাত ক্রুস্কাল ডায়গ্রাম, ক্রুস্কাল মেট্রিক আর আরও অনেক কিছু! পেনরোজ ডায়াগ্রাম দিয়ে পুরো মহাবিশ্বকে একটা ঘরে ফেলে ঘুরে আসা হবে ওয়ার্মহোলের এপাশওপাশ। একটু পরে আসবে কার মেট্রিক, কার ব্ল্যাকহোলের কাহিনীগুলো দেখানো হবে। গণিতে গণিতে দেখা হবে CTC, কচি হরাইজন, ইত্যাদি। ব্ল্যাকহোলকে যদি টেক্সট লেভেলে না দেখা হয়, তাহলে আসলে ব্ল্যাকহোলের ভেতরে রহস্যের কিছুই যেন নেই মনে হবে! ব্ল্যাকহোলের সবগুলো জিনিস এতটা বিস্ময়কর, সেটা এমনি পপ লেভেলে পড়ে বোঝা যে যায় না, সেটা এই বইটা থেকে বোঝা যায়। এত্ত চমৎকার জিনিস রেখে মানুষ কেন হকিং রেডিয়েশন টাইপ জিনিস নিয়ে পড়ে থাকে?!
তো এই ছিল মোটের ওপর চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি – প্রথম খণ্ড এর রিভিউ।
আমি যা দেখলাম, সেটার সামারি: প্রত্যেকটা চ্যাপ্টার অসম্ভব সহজ করে বুঝানো হয়েছে। যদিও সমীকরণে আর ডায়াগ্রামে ভরা বই, কিন্তু প্রত্যেকটা জিনিসের পুরো মানে বুঝানো হয়েছে। ট্র্যাডিশনালি কীভাবে সমীকরণ ইউজ করব, সেটার ওপর প্রাধান্য না দিয়ে লেখক কী, কেন, কীভাবে কাজ করে, মানেটা কী, এইগুলোর ওপর বেশি ফোকাস করেছেন। এতে বইটা সহজবোধ্য হয়ে উঠেছে আর এমনিতেই, লেখার ভাষার কথা আর কী বলি; লেখক এত চমৎকারভাবে একটা জিনিস বুঝাতে পারেন, সেটা আমাকে সব সময় অভিভূত করে!
এই বইটার বেশিরভাগ অংশ বুঝতে হলে শুধু নাইন-টেনের ফি���িক্স-ম্যাথ আর হাল্কাপাতলা ক্যালকুলাস আর ভেক্টর পারলেই হবে! অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে৷ যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, বেশিরভাগের ক্ষেত্রে সত্যি নাও হতে পারে৷
এইটা একটা বই।কীভাবে চা কফি বানাতে হয় কিংবা কীভাবে খেতে হয় এ নিয়ে নয়।এটা জেনারেল রিলেটিভিটি শেখার বই।
আপনি এখন ভাবতে পারেন জেনারেল রিলেটিভিটি ত কঠিন জিনিস, হুট করেই এটা শিখব কীভাবে!? কোনো চিন্তা নেই,এই কথা ভেবেই লেখক বই শুরুই করেছে স্পেশাল রিলেটিভিটি দিয়ে।নাহ সরাসরি স্পেশালে ঝাপ দেয়নি,বেসিক কিছু কন্সেপ্ট আগে ক্লিয়ার করে তারপর স্পেশাল রিলেটিভিটি বুঝিয়েছে।এত সাবলিল ভাবে স্পেশাল রিলেটিভিটি বুঝানোর বাংলা বই হয়ত নেই,কিংবা আমার জানা নেই।
স্পেশাল রিলেটিভিটি ছিল বইয়ের বিশাল একটা অংশ জুড়ে।এখানকার মেইন ক্যারেক্টার ছিল ভেড়া আর বক্রিনা আপু।একজন ট্রেনে চড়ে আরেকজন বাহিরে বসে থাকে।লেখক টাইম ডায়ালেশন বুঝিয়েছেন এই ট্রেন ভ্রমণে। দৈর্ঘ্য সংকোচন কীভাবে হয় এসব বুঝিয়েছেন। লরেঞ্জ রূপান্তরও বুঝিয়েছেন।তবে লরেঞ্জ রূপান্তর ছাড়াও যে স্পেশাল রিলেটিভিটি শেখা সম্ভব সেটা এই বই না পড়লে জানতাম না।
লরেঞ্জ রূপান্তর এর পর ছিল আপেক্ষিক বেগ,ঠিক কী হবে যদি আপনি একটা টর্চ জ্বালিয়ে হাতে নিয়ে দৌড়ান?আলোর বেগের বেশি বেগে আলো ভ্রমণ করবে?!রিলেটিভিটি ভুল তাহলে!?নাহ বেগ যোগের সূত্র ভুল।সঠিক কোনটা!? আপেক্ষিক বেগ যোগের সূত্র,বিস্তারিত বইয়ে বুঝিয়েছেন লেখক।এরপর অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিক ছিল, স্পেসটাইম ডায়াগ্রাম,এটা না বুঝলে রিলেটিভিটি কিছুই বুঝা সম্ভব না।এখানে টুইন প্যারাডক্স এর ব্যাখ্যাও ছিল।ডায়াগ্রাম আঁকাআঁকির পর আসে সত্যিকারের দূরত্ব। এটা আমার স্পেশাল রিলেটিভিটিতে সবচেয়ে ফেভারিট একটা অংশ।সেখানে লেখক দেখান ঠিক কেন আলোর বেগের বেশি বেগে কেউ যেতে পারেনা।কেন এটিই সর্বোচ্চ বেগের লিমিট।
এসব শেষে সবকিছুর পর আসে বিখ্যাত সমীকরণ E=mc² এর সূত্র।ভরশক্তির এই চ্যাপ্টারটা আমার কাছে কত যে ভালো লাগছে বলে বুঝানো সম্ভব না।অনেককিছু শিখেছি এখান থেকে।সবশেষে সবাই যে বুড়ো হতে চায় সেটি বুঝিয়ে এই বইয়ের জন্য স্পেশাল রিলেটিভিটির ইতি টানা হয়।
মঞ্চে আসছে জেনারেল রিলেটিভিটি, নাহ এত জটিল জিনিস বুঝিয়ে আবার সাথে সাথেই জটিলে যাওয়া সম্ভব না,এজন্য রয়েছে চা পানের বিরতি।যাইহোক জেনারেল রিলেটিভিটি ছিল বইয়ের বাকি অর্ধেক জুড়ে,টেন্সর সিরিজে টেন্সর,মেট্রিক টেন্সর,স্পেস-টাইম এর বড় ছোট হওয়া এসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল।টেন্সর বুঝিয়ে মহাকর্ষ শুরু হয়।এটা আমার বইয়ের সবচেয়ে ফেভারিট দুইটা চ্যাপ্টার এর একটা। মহাকর্ষ অধ্যায়ে যে পরিমাণ চমকপ্রবদ জিনিস ছিল তা প্রথমে আপনি শুনলে বিশ্বাসই করতে চাইবেন না।আপেল নাকি কখনোই গাছ থেকে পরেনা,মহাকর্ষ নাকি কোনো বলই না।এই অধ্যায়ে ছিল জিওডেসিক এর মতন গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস।
আর শেষ অধ্যায়টি ছিল ব্ল্যাকহোল নিয়ে।বিশ্বাস করুন ব্ল্যাকহোল নিয়ে জানা আপনার বেশিরভাগ জিনিস এই অধ্যায় পড়ার পর ভুল প্রমাণিত হবে।
ব্ল্যাকহোল অধ্যায়টা এই বইয়ে আমার সবচেয়ে পছন্দের অধ্যায় ছিল।এখানে একজন অভিযানকারীকে আমার বেশি ভাল্লাগছে।তার নাম ছিল নিয়ান।ব্ল্যাকহোলের প্রতিটা অংশ একেকটা রূপকথার গল্পের মতন।ব্ল্যাকহোল থেকে মুক্তিবেগ এর জন্য আলো বের হতে পারেনা,এই জিনিসটা কেন ভুল সেটা এই বই না পড়লে বুঝতামই না কখনো।ঘটনা দিগন্তের এপাশে যত না রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে তার চেয়ে বেশি ঘটে ওপাশে।
একেকটা গল্প পড়ে একেবারে গা শিউরে ওঠে।শোয়ার্জচাইল্ড ব্ল্যাকহোল পড়ে ভাবছিলাম ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে ফেলসি।আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করলো কার ব্ল্যাকহোল।কার ব্ল্যাকহোলকে আমার রূপকথার দেশ মনে হয়েছে।বিশ্বাস করুন এই ব্ল্যাকহোলের বাস্তবতা অনেক সাইফাইকে হার মানাবে।এখানে নাকি আছে টাইম মেশিন,থাকতে পারে ওয়ার্মহোলও। এখানে নাকি স্পেস-টাইম নিজেই ঘোরা শুরু করে। হরাইজন বিহিন সিঙ্গুলারিটিও নাকি সম্ভব।আরো কত্ত যে অবাক করা জিনিস।আমার অনেএএএএএক পছন্দ হইছে এই অধ্যায়টা।
বই নিয়ে অনেক বকবক হলো এবার আসি নিজস্ব কিছু কথায়,ঠিক কেন এই বইটি পড়তে রেকমেন্ড করব?!কারণ আপনি যদি সত্যিই রিলেটিভিটি শিখতে চান, যদি সত্যিই এত এত সমীকরণ কী মিন করে এসব বুঝতে চান তাহলে এই বই আপনার জন্যই।এই সিরিজের প্রথম বই ছিল চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স। সেই বইয়ের তুলনায় এইটা ছিল বিশাল একটা বই।এইটায় যে পরিমাণ সমীকরণ ছিল ওইটায়ায় তার তিন ভাগের একভাগ ছিল কিনা সন্দেহ,তবে নিঃসন্দেহে এই দুইটা বই আমার এ পর্যন্ত পড়া শ্রেষ্ঠ দুটি বই।চা কফি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এ লেখক একটা জিনিসকে বুঝাতে অনেক গল্প কিংবা গল্পের সাথে মিলিয়ে উদাহরণ দিয়েছেন।তবে চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটিতে গল্পের পরিমাণ একেবারেই কম ছিল।তাই বলে কী চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি অনেক কঠিন!? এটা ভেবে থাকলে আপনি রিভিউর কিছুই বুঝেননি।এই বই পড়ে বুঝার জন্য একটা জিনিস লাগবে, ভাবতে জানা।
নাঈম্ভাই একবার বলেছিলেন,ভালো ছাত্র যে ভালো শিক্ষক হবে এমন কোনো কথা নেই।এই জিনিসটা বুঝেছি এই বই পড়ে।তিনি কীভাবে এত জটিলসব জিনিস এত সহজে বুঝিয়েছেন এটা আমি অনেক ভেবেও কূল কিনারা পাইনি।এমন সাবলীল ভাবে বুঝানো রিলেটিভিটির টেক্সট বুক বাংলায় ত নেইই বরং ইংরেজিতেও নেই হয়ত।
সবশেষে লেখককে অনেক ধন্যবাদ আমাদের জন্য এমন একটা বই লেখার জন্য।বইয়ের কৃতজ্ঞতা স্বীকার এর জায়গায় আমার নামটিও ছিল উৎসাহি পাঠক হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন লেখক।আসলেই আমি অনেক উৎসাহী ছিলাম বইটি নিয়ে,এবং বইটি পড়ার পর আমি বুঝেছি আমার উৎসাহ বৃথা হয়নি।আমি সবাইকে বলব এই বইটি পড়ার জন্য।ফিজিক্স যে আসলে শুধুমাত্র সূত্র শিখে অঙ্ক করাকে বুঝায়না সেটা এই বই হারে হারে দেখিয়েছে।অনেক সমীকরণ আর গ্রাফের ভিরে ফিজিক্যাল মিনিং হারিয়ে যায়নি,সেটাকে ধরে রেখে এমন বই লেখা নিঃসন্দেহে একটা বিশাল কাজ। লেখকের প্রতি মেসেজ:দ্বিতীয় খণ্ডের অপেক্ষায় আছি,জলদি লিখে ফেলান।
ভূমিকা বুয়েটে ঢোকার পর প্রথম বছরে আমাদেরকে “মডার্ন ফিজিক্স” বলে একটা বিষয় পড়া লেগেছিল। একটু দুঃখের সাথে তখন জেনেছিলাম, সেখানে “মডার্ন” বলে যা পড়ানো হচ্ছে, সেগুলি আসলে অন্তত ৬০-৭০ বছরের পুরানো। যতদূর জানি, এখন কলেজ পর্যায়েই সেগুলি পড়ানো হয়, যদিও সেই সৌভাগ্য আমাদের হয় নি। আরেকটু পরে বুঝেছিলাম, এই “মডার্ন” মানে সাম্প্রতিক না, অতি পুরানো, নিউটনের সময়ের ফিজিক্সের সাথে তুলনা করে সেটার নাম রাখা হয়েছিল মডার্ন ফিজিক্স।
মডার্ন ফিজিক্সের সবচাইতে ধাক্কা দেয়া বিষয়টা ছিল, গতিশীল কোন বস্তুর জন্য সময়ের হিসাব বদলে যায়, সেটার দৈর্ঘ কমে যায়। সেই গতি যদি আলোর গতির ১০% বা আরো বেশী হয়, তাহলে সেটা মাপাও সম্ভব। সায়েন্স ফিকশনের পাঁড় পাঠক হিসাবে কিছু টপিক ঝাপসা জানতাম, তার একটা তাত্বিক ভিত্তিও দিয়েছিল এই কোর্সটা।
এক লাফে ৩৪ বছর সামনে আসি। আমার সায়েন্স ফিকশন পড়া কমে নাই; তার সাথে শখ করে পড়ি বিজ্ঞানের, বিশেষ করে ফিজিক্সের বই, কিন্তু সেগুলি হালকা ঝালমুড়ি টাইপের—ইংলিশে “পপ সায়েন্স” বই।
এমন সময়ে আমার Nayeem Hossain Faruque এর সাথে পরিচয়। আমাদের ইউনিভার্সিটির ফেইসবুক গ্রুপে দেখি একজন কনশাসনেস থেকে কোয়ান্টাম ফিজিক্স, বায়োলজি থেকে বিবর্তন, হার্ডকোর সায়েন্স ফিকশন, সবই লিখছে, এবং চমৎকার লিখছে। এবং খেয়াল করলাম, যখন সে কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে লেখে, সেখানে একটা চোরাবালির মত ফাঁদ আছে। যেমন পড়া শুরু করলাম গুদাম থেকে আলু চুরি করার গল্প, হঠাত দেখি কীভাবে জানি সেই গল্পটা আলোর ‘কোয়ান্টা’র ব্যাখ্যা শিখিয়ে দিচ্ছে পাঠককে। (নাঈমের আগের একটা বই, “চা, কফি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স” এ এটা আছে, এই বইয়ে আছে সেই আলুর গুদামের মালিকের আলু বিক্রির টাকা সুইস ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার গল্প)।
এত বিশাল ভূমিকা দিলাম এটা বোঝানোর জন্য যে জেনারেল রিলেটিভিটির মত কঠিন সাবজেক্ট নিয়ে বাংলায় লেখার ক্ষমতা ও ধৈর্য নাঈমের আছে। তবে প্রথমেই বলে নেই, যারা শর্টকাটে, পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পাশ করার উপায় খোঁজে, এই বই তাদের জন্য না। এটা নোট বই না, এটা উচ্চ নাম্বারের সিড়ি না। আচ্ছা, এবার তাহলে বইটায় ঢোকা যাক।
বইয়ের রিভিউ: নাঈমের ভাষায়, এটা তার ডায়রি। যারা রিলেটিভিটিকে ভালবেসে বুঝতে চাইবে, এই বই তাদের জন্য। কিন্তু সেই ভালবাসা সহজ নয়। সুখবর হচ্ছে, এই বিষয়ে নাঈম অতি সিরিয়াস। সে হাতে ধরে, দরকার হলে গনিতের ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে তারপর শেখাবে। (গণিতের কলকব্জা নামে ওর আরেকটা বই আসছে)। আর যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আছে, তাদের জন্য এটা মাতৃভাষায় একটা চমৎকার বই হবে।
কিন্তু বইটা কাটখোট্টা রসকষহীন না। এখানে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের জীবনের ছোটখাট কিন্তু প্রাসঙ্গিক ঘটনার বিবরণ আছে। এই বইয়ে কিছু চরিত্রের নাম বক্কর ভাই, লক্কর আপা। এখানে মাহফুজুর রহমানের গানের পছন্দ অপছন্দ দিয়ে “আপেক্ষিকতা” কী, তা বোঝানো হয়।
প্রচুর ডায়াগ্রাম আছে লেখা বোঝানোর জন্য, সাথে আছে প্রচুর সমীকরণ। লেখক শুরুতেই বলেছে, যারা সমীকরণ বোঝে না, এই বই তাদের জন্য না। এখানে পপ-সায়েন্স পড়া পাঠক হিসাবে আমি একটু দ্বিমত করলাম। সমীকরণগুলি বাদ দিয়ে পড়লে বিষয়টা আদ্যোপান্ত বোঝা যাবে না, কিন্তু নাইমের লেখার ধরন এতই সাবলীল, চিত্তাকর্ষক যে তার পরেও কিন্তু বইটা পড়া যায় এবং সেটার কিছু অংশ থেকে শেখা যায়। তার মানে এটা কি পপ সায়েন্সের বই? একেবারেই না। আমি আসলে যেটা বলার চেষ্টা করছি, সেটা হচ্ছে, দাঁত ওঠার আগেই বাচ্চার হাতে মুরগির রান ধরিয়ে দেয়া যায়। দাঁত ছাড়াই সেটা থেকে একটা বাচ্চা পুষ্টি ও স্বাদ পেতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ন স্বাদ/পুষ্টি পায় না। এই বইটাও সেরকম। ভয় না পেয়ে হাতে নিলেই সেটা থেকে অত্যন্ত সুখপাঠ্য উপস্থাপনায় পাওয়া যাবে ফিজিক্সের খুব কঠিন একটা বিষয়ের সাথে পরিচিতি।
কীভাবে? সেটাই দেখা যাক...
বক্রিনা আপু ট্রেনে উঠেছেন তার মেইকআপ করার বাক্স সহ। কিন্তু বক্রিনা আপু শুধু সাজুগুজু করেন না, তার মেইকআপের আয়না দিয়ে লেজারকে প্রতিফলিত করে সেটার সময়ও মাপছেন। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন সমীকরণ দিয়ে কালের দীর্ঘায়ন, দৈর্ঘের সঙ্কোচন, এগুলো বোঝানো হয়েছে। সমীকরণ ছাড়া কি সেগুলো বোঝা যাবে? অর্থাৎ এই অংশগুলিকে কি পপ সায়েন্সের মত পড়া যাবে? আমার ধারনা, যাবে। তবে যেহেতু লেখকের উদ্দেশ্য সেটা ছিল না, তাই এই ব্যাপারে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকলে অসুবিধা হতে পারে।
খেয়াল করতে হবে, আমি উপরে বলেছি, “এই অংশগুলি”, অর্থাৎ সারা বইটা গণিত ছাড়া বোঝা যাবে না। যেমন ৪.৬—এখানে দাঁত ফোটাতে হলে গণিত লাগবেই। চ্যাপ্টার ৫ পুরোই গণিত, অথবা সঠিক করে বললে, গণিত শেখানোর চ্যাপ্টার। তবে সুখবর হচ্ছে, ক্লাস ৯-১০এর গণিত যারা মনোযোগ দিয়ে করেছে, বা এখনো ভাল মনে আছে, তাদের অসুবিধা হওয়ার কথা না।
চ্যাপ্টার ৬ (মহাকর্ষ) সম্পর্কেও একই কথা বলবো। চ্যাপ্টার ৭ (ব্ল্যাক হোল) আবার একটু কঠিন লাগবে সমীকরণ না বুঝলে।
আবারও বলছি, এটা পপ সায়েন্সের বই না। বইটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে আমার প্রায় ১৪ ঘন্টা সময় লেগেছে। কারন আমি লেখকের কথা অনুযায়ী বইটা “ফিল” করে, অনুধাবন করে করে পড়েছি। এই বই বোঝার মত গণিতের ব্যাকগ্রাউন্ড আমার আছে, তার পরেও।
কিন্তু পড়ার সময় খেয়াল করলাম, অনেক সময় আমি নিজের অজান্তেই মুচকি হাসছি, স্যার আশিকের ট্রেনে বসে দুটা মাছি মারার সময়ের তফাৎ দিয়ে কালের দীর্ঘায়ন বোঝানো, বা এই রকম অসংখ্য উদাহরণ পড়ে। অর্থাৎ পড়ার সময়টা শুধু সহজে কেটেছে তাই না, আমি রীতিমত উপভোগ করেছি বইটা।
গল্প, উপমা আর সহজবোধ্য উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর ব্যাপারে নাঈমের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে বিষয়টা যখন রিলেটিভিটি-র মত কঠিন সাবজেক্ট। কঠিন করে লিখতে যে কেউ পারে; সহজ করে লেখাটাই কঠিন। নাঈম সেই কাজটা অবলীলায় করেছে। তাই আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, রিলেটিভিটি (স্পেশাল বা জেনারেল) নিয়ে এত চমৎকার বই আমি আগে পড়ি নাই।
ফিজিক্স ভাল লাগলে এই বইটা আপনার পছন্দ হবেই। নিজে পড়ুন, পরিবারে ফিজিক্সে উৎসাহী কোন স্কুল পড়ুয়া থাকলে তাকে উপহার দিন।
চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি - নাঈম হোসেন ফারুকী মুদ্রিত পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৩৫৪ মলাটমূল্য: ৫৫০ টাকা রকমারি তে অগ্রিম অর্ডার করতে পারবেন। https://www.rokomari.com/book/223669/...
বুক রিভিউ! নামঃ চা,কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি(১ম খন্ড) ক্যাটাগরিঃথিওরেটিকাল ফিজিক্স(টেক্সট বুক) পয়েন্টঃ১০/১০ A:কিরে জানিস মহাকর্ষ বল কিভাবে কাজ করে? B:না। A:আরে অনেক সহজ!আইন্সটাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বলে যে,কোনো বস্তু তার ভরের ফলে স্পেস-টাইমের চাদর বাকিয়ে দেয়।অই বাকানো পথ দিয়ে আরেকটা বস্তু গড়িয়ে গড়িয়ে পরতে থাকে।এভাবেই সূর্যের চার দিকে পৃথিবী ঘুরে। B:তাই নাকি!!বাহ্ বাচ্চাদের ব্যাপার দেখি।তা স্পেস-টাইমের চাদরটা কোন কোম্পানি তৈরি করে?🤔এই চাদরের শেষই বা কোথায়?😑 A:আরে এইটা তো ভেবে দেখিনি।
বাংলা ভাষার তথাকথিত রিলেটিভিটির বই গুলো এইসবই শিখায়।স্পেস-টাইমের চাদরটা আসলে কী?আসলেই কি এর কোনো ভৌত অস্তিত্ব আছে?টাইম ডায়ালেশন কী?রিলেটিভিটি বিষয়টাই বা কী?সময় কেন মাত্রা?আপেল কেন সোজা পথে গাছ থেকে পরে?আরো অনেক প্রশ্ন। #আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাঃ ★"সবাই বুড়ো হতে যায়"কথাটা আজব শুনালেও আসলে এটাই সত্য।আপেল গাছ থেকে পরলে কেন সোজা পথে পরে?(আমাদের রেফারেন্স ফ্রেমে)কারণ এই পথে পড়লেই তার বয়স সবচেয়ে বেশি বাড়বে।আর এই পথকে বলে জিউসেডিক।সবাই এই পথ ফলো করেই চিলে। ★সারা জীবন রিলেটিভিটিতে টাইম ডায়ালেশন পড়ে আসলাম।গাধার মতো "লরেঞ্জ রুপান্তর" সূত্র ব্যাবহার করে আসলাম।কোত্থেকে আসল খুব কম মানুষই চিন্তা করে।অনেক কঠিক সমীকরণ শুধু মুখস্থই করে যায়।এগুলো আসলে কি বুঝায় তা আর বুঝলাম না!হায়রে!!! যেমন ধরি, চিরচেনা সেই ছবি।যেখানে দেখা যায় সূর্য তার চারপাশের স্পেস-টাইমকে বাকিয়ে দিয়েছে তাই পৃথিবী তার চারদিকে ঘুরছে।(অনেকে তো এটাকে সত্যি বলেই মনে করে)এটা দিয়ে যে আসলে বুঝায় সূর্যের চারদিকে স্পেসের বক্রতার এম্বিডিং ডায়াগ্রাম যা বলে স্পেস অন্য কোনো মাত্রায় বেঁকে গেছে।
এতো ক্ষণে বুঝেই গেছেন কি জানলেন রিলেটিভিটি নিয়ে।
#বইটি কেন কিনব? বইটি কিনবেন যদি জেনারেল রিলেটিভিটি কী তা ফিল করতে চান!!বিদঘুটে সমীকরণ গুলোর ভাবার্থ বুঝতে চান।জানতে চান এম্বিডিং ডায়াগ্রাম কী জিনিস?খায় না মাথার দেয়?স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম কী এগুলো জানতে চান।
#বাজারে এতো রিলেটিভিটির বই থাকতে এটাই কেন? =কারণ বই এ লেখকের সাবলীল ভাবে বুঝানোর ধরণ।জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝাতে গিয়ে যে মেট্রিক টেন্সর,স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম ইত্যাদি ধৈর্য ধরে বুঝিয়েছেন তার তুলনা নেই।আর কোনো বই এ পাবেন না।পাওয়া তো দূরের কথা প্রায় সব গুলো বই এ রিলেটিভিটি তো বুঝিয়ে ফেলে কিন্তু মেট্রিক টেন্সর,স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম কিছুই থাকে না।মানে ফাউন্ডেশন ছাড়া বাড়ি বানানো যাকে বলে আরকি!😐
বইএ লেখকের লেখনি আমাকে বারবার অবাক করেছে।আর টপিক ম্যাপিং(কোন টপিকের পরে কোন টপিক আসবে)এক কথায় মনোমুগ্ধকর। এই মনে হলো অবাক হওয়ার আর কিছু নেই কিন্তু পরের মূহুর্তে আরো অবাক হচ্ছি।একই ব্যক্তিকে নাকি একজন দেখবে বেগ=০ আরেকজন দেখবে আলোর বেগের সমান।বই এ "ব্ল্যাকহোল" নিয়ে ৭ম পরিচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা আছে।এই পরিচ্ছেদ আপনার গায়ে কাটা দিয়ে উঠবে বারবার।"ব্ল্যাকহোল","হোয়াইট হোল","আইন্সটাইন-রোজেন ব্রিজ)সবই আলোভনা করা আছে খুবই সুন্দর ভাবে।কিভাবে পুরো মহাবিশ্বের সব ঘটনা,সময় আপনি হাতের মুঠোয় এনে ফেলবেল "পেনরোজ ডায়াগ্রাম" ব্যাবহার করে তা আপনাকে অবাক হতে বাধ্য করবে।তাছাড়া মেট্রিক টেন্সর ব্যাবহার করে কমডে ব্ল্যাক হোল,বাক্সে ওয়ার্ম হোল,ড্রমিং রুমে ফুটবল মাঠ বানানো সবই আপনাকে অবাক করবে।এ যেন অবাক হওয়ারই রাজ্য।
বই : চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি প্রথম খন্ড লেখক :নাঈম হোসেন ফারুকী পৃষ্ঠা :৩৫২ রেটিং :(2c+18c)/2 গায়ের মূল্য : ৫৫০৳
চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি। আচ্ছা বই-এর নাম চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি হলো কেনো ? বইটা জেনারেল রিলেটিভিটির উপর তাই না হয় জেনারেল রিলেটিভিটি আছে কিন্তু চা কফি কেন ! আমার যা মনে হয়, আমরা পাড়ার মোরে যেমন কারোর সাথে চা-কফি খেতে খেতে আড্ডা দেই গল্প করি, তেমনি বইটা আপনার সাথে গল্প করতে করতে শিখিয়ে দিবে মতান্তরে ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল তত্ত্ব। তাই ব'লে এটা ভাববেন না এই বইটা নেহাত পপ সাইন্সের বই গল্প বলেই শেষ। যদি তাই মনে করেন তাহলে আপনি একদম ভুল। বই ভরে গিজ গিজ করছে গ্রাফ আর সমীকরণ। বই যেমন গল্প করবে তার সাথে অংক কষে কষে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে সমীকরণ-এর পিছনের রহস্যময় গল্পটাকে। যাই হোক শত শত গ্রাফ আর বই দেখে ভয় করার কিছু নেই। লেখক আপনাকে এমন ভাবে বুঝিয়ে দিবে যেন আপনার সাথে এসবের বহুদিনের পরিচয় আছে শুধু অল্প একটু ভাবতে হবে। না ভাবলে যে জীবন বৃথা!
বই এর শুরুতেই আছে রহস্যময় রাস্তার গল্প মফিজ গাড়ি নিয়ে প্রচন্ড গতিতে ছুটছে। তার পিছনে আঠার মতো লেগে আছে পুলিশ। হটাৎ এক বাস্তব বিবর্জিত ঘটনা ঘটে যায় মফিজের সাথে,এক অসম্ভব রোমাঞ্চকর ঘটনা। এই গল্প যতই বাস্তব বিবর্জিত মনে হ'ক যখন বই এর গভিরে ঢুকবেন তখন দেখবেন, না, এগুলো মোটেই অসম্ভব কিছু না। খুব সম্ভব জিনিস ।
এরপর লেখক আপনাকে হাত ধরে নিয়ে যাবে রিলেটিভিটির জনকদের দুয়ারে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। আর শোনাবেন তাদের কিছু ছোট্ট গল্প। এর পর একে একে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিবেন রিলেটিভিটির একাবারে মূলের জিনিস গুলো স্থান, বেগ, ভর, সময়, ত্বরণ বাদ যাবে না কিছুই। লেখক মোটেই নির্দয় নন যে যুদ্ধের প্রস্তুতি ছাড়ায় রণক্ষেত্রে ফেলে দিবেন। তাই জেনারেল রিলেটিভিটির খটমটে জিনিস শেখানোর আগে, শিখিয়ে দিবেন স্পেশাল রিলেটিভিটি!!! কারণ এটা ছাড়া জেনারেল রিলেটিভিটি শেখার কোন মানেই হয় না!!
যদি আপনে মনে করেন আমি তো স্পেশাল রিলেটিভিটি জানিই সেহেতু স্কিপ করে জেনারেল রিলেটিভিটি-তে পারি দেই তাহলে আবার ভুল করবেন। প্রচলিত লরেন্স রুপান্তর ছাড়াই যে শেখা যায় সেট কী জানতেন? সত্যিকারের দুরত্ব, সত্যিকারের সময়ের সমীকরণ বোঝাতে বোঝাতে এসবের গা শিউরে দেওয়া মানে বলতে বলতে একেবারে নিয়ে যাবেন স্পেশাল রিলেটিভিটি গভিরে খুটে বুঝিয়ে দিবেন যুদ্ধ করতে যা যা লাগবে সেই সব জিনিস, দৈর্ঘ সংকোচন, সময় প্রসারণ,ভর-শক্তির সমীকরণ ভেঙে দিবেন আলোর বেগে গেই শুধু ভর শক্তিতে রুপান্তরিত হয় এমন ফালতু ধারণ। অংক করে করে খুড়ে বের করবেন অসাধারণ সব ঘটনা।
তাই বলে কী লরেন্স রুপান্তর বাদ পড়ে যাবে? একদম না সেটাও আছে এই বইয়ে। টুইন প্যারাডক্স-এর কথা শুনেছেন না? সেই প্যারাডক্স এর সমাধান-ই বা কী? জানতে চান? তাহলে পড়ে ফেলুন চমৎকার বইটি। স্পেস-টাইমের ডায়াগ্রাম দেখাবেন, দেখাবেন স্পেস-টাইমে একই সময়ে ঘটা কোন দুইটি ঘটনা আমার সাথে এক সময়ে ঘটলেও আমার সাপেক্ষে প্রচন্ড বেগে ছুটে চলা ভেড়ার কাছে সেই দুইটি ঘটনা একই সাথে নাও ঘটতে পারে, অদ্ভুত না? LOS কি? কেন? আরো অনেক কিছুরই উত্তর দেওয়া আছে। এই মুহুর্তে, সবাই বুড় হতে চায় চমৎকার দুইটি পরিচ্ছেদে। সামনে আরো সব চমৎকার জিনিস একের পর এক আসবে।
স্পেশাল রিলেটিভিটি শেষ করে। লেখক এখন অংক শেখাবেন! জেনারেল রিলেটিভিটির অংক! মেট্রিক সমীকরণ কি? টেন্সর কী? স্পেস-টাইম কী আসলেই চাদর টাইপের জিনিস কী-না। স্পেস-টাইম কী আসলেই বাঁকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে লেখক শিখিয়ে দিবেন মেট্রিক টেন্সর। কী ভবাবে স্পেস বড় হয় সময় স্লো চলে এসব সমীকরণ দেখেই বুঝে ফেলবো। কী ভাবে গ্রাফ দেখে বুঝবো কোথায় আমার স্পেস বহুত ছোট হয়ে যাবে টাইম পনপন করে দ্রুত পার হয়ে যাবে আরো অনেক কিছু। পোলার কো-অরডিনেট সিস্টেম তার বড় ভাই স্ফেরিক্যার সিস্টেম এর সাথে পরিচিত হবো। এরপর বক্কর ভাই আর বক্রিনা আপুর আজব ঘর বাড়ি কেমন হবে তা বুঝতে বুঝতে ঝালাই করে নিবো এতক্ষন যা শিখলাম সব কিছু।
এরপর…… চলে আসবে মহামতি মহাকর্ষ। বহুত ক্যাচাল কেউ বলে বল কেউ বলে ফল ইয়ে মানে স্পেস-টাইম এর বক্রতা(এই বক্রতা কিন্তু সেই বক্রতা নয় কোন বক্রতা তা বই-এ ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া আছে) তবে যাই-হোক খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস। এই মহাকর্ষ দিয়ে কিন্তু জেনারেল রিলেটিভিটিতে ভালোভাবে পদার্পণ করবেন। প্রথমে লেখক আপনাকে নিউটনের জায়গায় বসিয়ে বোঝাবেন কী ভাবে নিউটনের মাথায় আপেল পড়ে আলু গাজলো আর সেই আলু খেয়ে নিউটন মহাকর্ষ-এর সুত্র পেলো আর কী কী খুদ ছিলো দেখিয়ে দিবেন। তার পর হবে আসল খেলা হে হে হে হে এতক্ষন মহাকর্ষ ছিলো বল হ্যান ত্যান এখন লেখক বোঝাবেন মহাকর্ষ কোন বল নয়। কেন নয় তা বুঝিয়ে দিবেন আনেক গ্রাফ আঁকাবেন। রকেট পকেট আনবেন অংক কষবনে আর পর প্রমাণ করে দেখাবেন মহাকর্ষ কোন বল নয়!!!! আরো দেখাবেন আপেল আসলে পড়ে না বরং পৃথিবী নিজে গিয়ে আপেল কে ধরে নেয়। ত্বরণ কিভাবে স্পেস কে টেনে বড় করে ব্লা ব্লা অনেক কিছু। শেষে আসবে জিওডেসিক মশায় এনার সম্পর্কে কিছু বলবো না খালি বলবো ইয়া বড় সমীকরণ আর কিছু অদ্ভুত মানে যদি জানতে চান তাহলে তো…. যদিও আমার জিওডেসিক এর সমীকরণ বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে।
মহাকর্ষ-এর অধ্যায়টা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে বইটা পড়ার পড় আপনার মনে হবে আপনি আসলে মহাকর্ষ সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না আগে!!!!!!!!
এখন এই বই এর সবথেকে চমকপ্রদ,শিহরণ জাগানো অধ্যায় এর পালা তার নাম ব্লাকহোল!!! এমন এক জেলখানা যেখান থেকে পালাতে পারবে না কেউ। সেই রহস্যময় জেলখানার রহস্যর অন্তনেই!! নিউটনের ব্লাকহোল ওরফে জেলখানা থেকে পালানো যায় হ্যাঁ নিউটন সাহেব ভালো করে বানাতে পারেনি এর পর আসেন মহান শোয়ার্জচাইল্ড তিনি বের করে ফেলেন এমন ব্লাকহোল যে ব্লাকহোল থেকে কেউ বেরুতে পারে না। সেই ব্লাকহোলের ইভেন্ট হোরাইজোন এ যেতে অসীম দুরত্ব! সসীম সময়ে কী ভাবে অসীম দুরত্ব পার করবেন!? ইভেন্ট হরাইজন যখন ছুই ছুই তখন বাহিরের সবাই দেখবে আপনি থেমে গেছেন সব কিছু থেমে গেছে আলোও থেমে গেছে!!! কিন্তু আপনি দেখবেন আপনি আলো বেগে ব্লাকহোলে পড়ছেন!! অদ্ভুত তাই না! ব্লাকহোলের ইভেন্ট হরাইজন পার করার পর আরো অদ্ভুত কিছু ঘটবে আপনার স্থান সময়ের মত আচরণ করবে আর সময় স্থান!!! আর কি কি হবে তা জানতে হলে আর কেন এসব হবে তা জানতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে আপনাকে। এতো রহস্যময় জিনিস কী জানতে ইচ্ছা করে না?
( বই-এর মেট্রিক টেন্সর এর অধ্যায়ে তিনটা সমীকরণ দেওয়া ছিলো। ভালো করে বুঝলে তিনটা সমীকরণ কী মিন করে তা ভালো করে বুঝা যায়। প্রথমটা আর শেষেরটা দেখেই বুঝেছিলাম কি মিন করে ২ নাম্বারটা একটু জটিল মনে হয়েছিলো তাই সাহস করে খাতা কলম নিয়ে বসলাম বের করাত চেষ্টা করলাম কী কী হতে পারে অনেক অদ্ভুত জিনিস বেড়োলে। তার পর চলে এলাম শোয়ার্জচাইন্ড এর ইভেন্ট হোরাইজোন ইকুয়েশন-এ সেটা কী মিন করে তা দেখে শিহরিত হলাম অনেক আগে আমি যা যা অনুমান করেছিলাম ঠিক তাই হচ্ছে সেই অনুভুতিটা অসাধারণ! মনে হলো এতেও আমার কিছু অ্যাচিভমেন্ট আছে! জিনিসটা আমার হলো)
ওহ! কার ব্লাকহোলের কথা ভুলেই গেছিলাম। এ খুব মারাত্মক জিনিস নিজের চারপাশে সব কিছুকে নাকে দড়ি দিয়ে বন বন করে ঘোরায় চার-পাশের স্থান-কাল-ও বাদ যায় না সেটাও ফ্যানের মত ঘোরে।আপনার বাবার অনেক টাকা? মামার অনেক জোড়? ওতে কিছু যায় আসে না ঘুরতে আপনাকে হবেই। এই মারাত্মক জিনিসের মাঝেই আছে আরো সব মারাত্মক জিনিস। এখানে সিঙ্গুলারিটি রিং এর মত সেই রিংগুলারিটি পাশ কাটালে পেয়ে যাবে হোয়াইট হোল ওপাশের অদ্ভুত দুনিয়ার দুয়ার। তার যদি তা না চান তাহলে রিংগুলারেটির CTC তে চলে যান!!!! এই CTC -ই হলো বাস্তব জিবনের টাইম মেশিন যাতে চেপে চলে যেতে পারবেন অ তি তে!!!! বিশ্বাস হয় না!? মনে মনে বলছেন কেমন করে কী? এত দোমনা বাদ দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন বইয়ের উপর সব রহস্যের ঝট খুলতে।।।।।
আরেকটা জিনিস আছে আইন্সটাইন-রেজন ব্রিজ ওরফে ওয়ার্মহোল। কত্ত সুন্দর জিনিস। আর আপনারা কলম দিয়ে ঘুতিয়ে স্পেস-টাইম কাগজ পত্র সব ফুটো করে ফেলেন!!!!!
(ব্লাকহোল এর অধ্যায়ে প্রচুর সমীকরণ আছে প্রচুর ভাবা লাগে এই অধ্যায়টা যেমন প্রচুর সুন্দর তেমন জটিল লেগেছে আমার কাছে। সব যে জটিল ছিলো এমন না কিছু কিছু জায়গায় একটু জটিল ছিলো)
লেখক বোঝানোর জন্য অনেক চরিত্রের আগমন ঘটিয়েছন এর মধ্যে প্রধান চরিত্র হলো বক্রিনা আপু আর তার সঙ্গি হলো ভেড়া সেও যে সে ভেড়া নয় আধুনিক ভেড়া হাতে ঘড়ি পরে সময় মাপে। এই বইয়ে হুট হাট ড্রয়িং রুম এর উদয় হবে আমরা মাপা মাপি করবো আবার এট আজব ট্রেন চলবে যার কোন স্টেশন নাই মানে হুদাই চলে কোথাও থামেনা। এসব উদাহরণ আর মাঝে সাঝে গল্প দিয়ে এমন ভাবে খটমটে একটা জিনিস যে সাবলিল ভাবে বোঝানো যায় তা এই বই না পড়লে বোঝবেন না। আমার প্রচন্ড প্রিয় একটা বই যদিও মাঝে সাঝে সমীকরণ টমিকরণ দেখে মাথা ফিউজ হয়ে গেছে। কিন্তু বাঁচতে হলে যে ভাবতে হবে এই মন্ত্র কাজে লাগিয়েছি। আসলে ফিজিক্স শুধু সমীকরণ ফেলে উত্তর মেলানোর জিনিস না এটা অনুভব করার জিনিস লেখক এই জায়গাটা খুব ভালো ভাবে টাচ করতে পেরেছে। অসাধারণ বই নিয়ে যতই বলি না কেন কম হবে যাই হোক "বই পড়ার পর মনে হবে এতো দিন পপ সাইন্স পড়ে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে যা জানতাম সেগুলার বেশিরভাগই ভুল, ভুলে সাগরে ছিলাম যাই হোক জার্নি কেবল শুরু আগে দ্বিতীয় খন্ড আসবে আরো ভুল ভাঙ্গবে আরো রহস্যে গা শিউরে উঠবে! " অনেক হুদাই পক পক করলাম এখন বিদাই নেই!
Gravity Isn't any force at all. Gravity is the most abstract thing that I've ever known - the curvature of spacetime.
বইঃ চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি(প্রথম খন্ড), লেখকঃ নাঈম হোসেন ফারুকী।
ডোরেমনের পেটে থাকা সেই ছোট্ট পকেটটির কথা মনে আছে? যেখানে ডোরেমন ছোট-বড় হাজার হাজার গ্যাজেট লুকিয়ে রাখত। আমার মনে আছে, সেই গ্যাজেটগুলোর মধ্যে একটি টেলিপোর্টেশন দরজা ছিল, যার চৌকাট পার হলে মূহুর্তের মধ্যেই পৃৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে যাওয়া যেত। আমার শিশুমনে প্রশ্ন জাগত, ডোরেমন কিভাবে এত ছোট একটা পকেটে এইরকম বিশাল আকারের একটি দরজা ঢুকাতে পারত? শুধু এই দরজাই নয়, এরকম অসংখ্য গ্যাজেট ডোরেমনের সেই পকেটে থাকত। আমি ভাবতাম, ওগুলো সেখানে আটত কিভাবে? মাকে প্রশ্ন করে করে বিরক্ত করে ফেলতাম। মা জবাব দিত, "বাবা, ওগুলো কাল্পনিক জিনিস। বাস্তবে সম্ভব না। এগুলো জাস্ট টিভিতে দেখানোর জন্য বানানো হয়েছে।" কিন্তু আমার কৌতুহলী মন কি বাস্তব আর কল্পনা মানে! নিজেকে প্রশ্ন করতাম, কিভাবে নবিতার টেবিলের ডয়ারের ভিতরে থাকা টাইম মেশিনটি তাদেরকে অতীত আর ভবিষ্যতে নিয়ে যেত? বড় হওয়ার সাথে সাথে নতুন অনেক কিছু শিখলাম এবং একটা সময় শিশুকালের সেই ফ্যান্টাসিগুলোকে ভুলে যেতে শুরু করলাম। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই ঘটনার প্রায় ১০ বছর পরে পদার্থবিজ্ঞানের একটি থিওরি নিয়ে একটু পড়াশোনা গিয়ে আমি হঠাৎ উপলব্ধি করতে পারলাম যে ডোরেমনে দেখানো এই ঘটনাগুলো বাস্তবেও সম্ভব এবং আমার শিশুকালের সেই প্রশ্নগুলোরও অনেক সুন্দর ব্যাখ্যা আছে প্রকৃৃতির কাছে। আর যে থিওরিটি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর সক্ষম তার নাম হলোঃ জেনারেল রিলেটিভিটি।
চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি (প্রথম খন্ড) হলো জিআরের জটিল এবং কাঠখোট্টা গণিতকে মনের গভীরে অনুভব করানোর বই। ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন মহাকর্ষ তত্ত্বের একটি জেনারেলাইজড ভার্সন আবিষ্কার করেন যা মহাকর্ষের প্রকৃৃতিকে খুবই নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করে। আর সেই তত্ত্বের নাম হলো জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিকতা। কিন্তু সাধারণ আপেক্ষিকতা বোঝা মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। টেন্সর ক্যালকুলাস থেকে শুরু করে রিম্যানিয়ান জিওমেট্রির মতো গণিতের জটিলতম সব অংশ একীভূত হয়ে আছে এই একটি থিওরিতে। তাই জেনারেল রিলেটিভিটির ট্রাডিশনাল টেক্সট বইগুলোতে লাইনের পর লাইন পার্শিয়াল ডেরিভেটিভ থেকে শুরু করে অসংখ্য ডায়াগ্রাম এবং কাঠখোট্টা মিনিংলেস গাণিতিক ইকুয়েশন হয়তো খুঁজে পাবেন আপনি। সেদিক থেকে চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটির প্রথম খন্ড সম্পূর্ণ আলাদা একটি বই। এটিও টেক্সটবুক, কিন্তু তার সামনে আরেকটা ওয়ার্ড বসবে- ইন্টুইটিভ টেক্সট। পুরো বই জুড়ে প্রায় ৯০০’র বেশি সমীকরণ রয়েছে। তবে শুধুমাত্র সমীকরণ লিখেই বসে থাকেননি লেখক। প্রতিটি সমীকরণ আসলে কি বোঝায় এবং কোথা থেকেই বা এই সমীকরণটি আসলো তার সবকিছু ব্যাখ্যা করা হয়েছে এখানে।
কখনো টেক্সট বইয়ে সাই-ফাই গল্প থাকে শুনেছেন? হয়তো না। চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি শুরুই করা হয়েছে একটি সায়েন্স ফিকশন গল্প দিয়ে যার নামঃ রাস্তা। গল্পটা দারুণ ছিল। তবে সেই গল্পটির কাহিনীর মধ্যেই বইয়ের সবচেয়ে বড় টুইস্ট লুকিয়ে ছিল- ব্ল্যাকহোল। এরপরে আসে এপিটাফ। জেনারেল রিলেটিভিটি আবিষ্কারের পিছনে যাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাদের প্রত্যেককেই এই অংশে স্বরণ করা হয়েছে। তারপরের চ্যাপ্টারে লেখক ফিজিক্সের বেসিক টার্মগুলো যেমন স্থান, সময়, বেগ, মাত্রা ইত্যাদি অনেক সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে। হুট করেই স্পেশাল রিলেটিভিটির মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বইটি অনেকটা সিড়ির মতো, ধাপে ধাপে পাঠককে প্রতিটি জিনিসের একেবারে গভীরে নিয়ে গিয়েছেন লেখক। স্পেশাল রিলেটিভিটি চ্যাপ্টারের মধ্যে ছিল সত্যিকারের সময়, দৈর্ঘ্য সংকোচন, স্পেসটাইম ডায়াগ্রাম এবং ভরশক্তি সম্পর্কসহ আরও অনেক কিছু। আমার মতে, এই চ্যাপ্টারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম। কেননা পরবর্তীতে জেনারেল রিলেটিভিটি বোঝাতে এই ডায়াগ্রামকে বেশ ইফেক্টিভলি ব্যবহার করেছেন লেখক। ভরশক্তির সমতুল্যতার খুবই সুন্দর একটু ব্যাখ্যা রয়েছে এই বইয়ে। আপেক্ষিক ভরের পুরাতন নোটেশন এবং নতুন নোটেশনকে খুবই সিম্পলভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর আগে এই জিনিসটি নিয়ে আমার মাঝে অনেক কনফিউশন ছিল। বই পড়ার পর ক্লিয়ার হয়েছে।
এরপরের টপিক মেট্রিক সমীকরণ।এই লেখার শুরুতে ডোরেমনের পেটে থাকা পকেটের কথা বলেছিলাম না, যেখানে ছোট-বড় অসংখ্য গাজেট লুকিয়ে রাখা যায়। আসলে এই ঘটন��� বাস্তবেও ঘটতে পারে, এর জন্য বেশি কিছু করতে হবে না,জাস্ট স্থানকালকে টেনে একটু বড় করতে হবে যাতে করে স্কেল ছোট হয়ে যায়। আর এই ঘটনাকে বইতে যেভাবে ইন্টুইটিভলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা আমি জিআরের কোনো টেক্সট বইয়ে পাই নি। মেট্রিক ইকুয়েশনের মানে বোঝার পর আমি শিহরিত হয়েছিলাম। আমি এখানে ডোরেমনের পকেটের উদাহরণ দিয়ে যেটা বোঝাতে চাচ্ছি, এই বইয়ে লেখক একই কাজ করেছেন জাস্ট হ্যারি পটারের কা���িনী টেনে। তারপর বক্রিনা আপু আর একটি ভেড়ার মাধ্যমে মেট্রিক ইকুয়েশনের সত্যিকার অর্থ বোঝানো হয়। বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার ছিল পাঁচজনঃ আক্কাস আলী,বক্রিনা আপু, বক্কর ভাই, গণিতে পারদর্শী একটা ভেঁড়া আর নিয়ান।
পরের ধাপঃ মহাকর্ষ-জেনারেল রিলেটিভিটির প্রাণকেন্দ্র। এই চ্যাপ্টারে মহাকর্ষের পুরো জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে। নিউটনিয়ান গ্র্যাভিটি থেকে সমতুল্যতার নীতি সবকিছু এই চ্যাপ্টারে স্থান পেয়েছে। বইয়ের সমতুল্যতার নীতির অ্যাপ্রোচটি একেবারে ইউনিক ছিল। মহাকর্ষ আর ত্বরণ যে একই জিনিস এই সম্পূর্ণ বিষয়টি স্পেসটাইম ডায়াগ্রাম দিয়ে বুঝিয়েছেন লেখক। আসলে স্পেসটাইমে কার্ভেচার তৈরি হওয়ার সাথে মহাকর্ষের কি সম্পর্ক তা অনেক টেক্সট বইয়ে ভালোভাবে বলাই থাকে না। এদিকে চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি’র প্রথম খন্ডে এই ব্যাপারটির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতক্ষণ চা কফির ইউনিকনেস নিয়ে অনেক কথা বললাম কিন্তু যেই একটা জিনিস এই বইটিকে ইউনিক করার জন্য যথেষ্ট তা হলো জিওডেসিক। জেনারেল রিলেটিভিটির প্রায় সব টেক্সটবুকগুলো জিওডেসিক ইকুয়েশনের ডেরিভেশন করতে গিয়ে ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান মেকানিক্সসহ ভ্যারিয়েশনাল ক্যালকুলাস টানে সেখানে চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটিতে মাত্র কয়েকটা সিম্পল ডায়াগ্রাম এবং সহজ কিছু ডিফেরেন্সিয়েশন দিয়ে জিওডেসিক ইকুয়েশনের ডেরিভেশন করা হয়-যেটি আসলেই মাইন্ড ব্লোয়িং ছিল।
এখন যে চ্যাপ্টারটি নিয়ে কথা বলব, সেটি এই বইয়ের লাস্ট এবং আমার সবচেয়ে ফেভারিট চ্যাপ্টার- ব্ল্যাকহোল। এই বইয়ের যে দুইটি জিনিস আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হলোঃ এর ভূমিকা এবং এই চ্যাপ্টারের শুরুতে থাকা একটি সাইফাই গল্প- মেইজ। নিউটনিয়ান ব্ল্যাকহোল, মুক্তিবেগ, শোয়ার্জচাইল্ড মেট্রিক, ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজন, ইভেন্ট হরাইজনের বাইরে এবং ভিতরে, স্থান আর সময়ের চিহ্ন অদল-বদল হওয়া, রিন্ডলার স্পেস, ক্রুস্কাল মেট্রিক,ওয়ার্মহোল,কার মেট্রিক, ঘূর্ণায়মান স্থানকাল, কার ব্ল্যাকহোলের আর্গোস্ফেয়ার থেকে শুরু করে একেবারে রিঙ্গুলারিটি পর্যন্ত কি নেই এই চ্যাপ্টারে! এই বইয়ের সবথেকে মজাদার এবং টুইস্ট সমৃৃদ্ধ চ্যাপ্টার ছিল এটি। ব্ল্যাকহোলের ভিতরে ঘটতে থাকা প্রতিটি ঘটনা যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।বইয়ে উপরের প্রতিটি টার্ম পড়তে গিয়ে আমার মনে হচ্ছিল যে আমি এগুলোকে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারছিলাম। এই চ্যাপ্টারের একেবারে শেষে ছিল বইয়ের সবচেয়ে বড় বিস্ময়- সত্যিকারের টাইম মেশিন।( সিক্রেট ম্যাসেজঃ কার ব্ল্যাকহোলের নিষিদ্ধ অঞ্চলে যদি সত্যি সত্যি কার মেট্রিক কাজ করে তবে আমরা পেয়ে যাবো সত্যিকারের জেনারেল রিলেটিভিস্টিক টাইম মেশিন। যা দিয়ে আমরা ইচ্ছামতো অতীত আর ভবিষ্যতে ঘুরে বেড়াতে পারব। কিন্তু...কিন্তু...কিন্তু এই টাইম মেশিন আছে কার ব্ল্যাকহোলের রিঙ্গুলারিটির ভিতরে, আর এই ব্ল্যাকহোলের আর্গোস্ফেয়ার আর দুইটি ইভেন্ট হরাইজন পার হয়ে কারো পক্ষে রিঙ্গুলারিটি পর্যন্ত জীবিত অবস্থায় পৌঁছনো অসম্ভব! তাছাড়াও কার মেট্রিক সব জায়গায় কাজ নাও করতে পারে) এই বই পড়তে গিয়ে লেখকের সেন্স অব হিউমার খুব ভালোভাবেই টের পেয়েছি। এত চমৎকারভাবে জেনারেল রিলেটিভিটির মতো বিষয়কেও যে ফিল করা যায় তা আমার আগে জানা ছিল না।
যাই হোক, রিভিউ এখানেই শেষ করছি। বইটি নিয়ে আরও অনেক কিছু শেয়ার করার ইচ্ছা ছিল, তবে লেখা ইতিমধ্যেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। খেয়াল করবেন, আমি কিন্তু এই বইটির কোনো রেটিং দেয়নি। কারণ আমি মনে করি রেটিং দিয়ে কখনোই একটা বইকে জাজ করা যায় না যতক্ষণ না আপনি পুরো বইটি পড়বেন। চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটির একেবারে লাস্ট পেইজে রেফারেন্সে দেওয়া বইগুলোও পড়েছি আমি। তবে এত সুন্দর উপায়ে প্রতিটি গাণিতিক টার্মের মিনিং বোঝানো বাকি টেক্সট বইগুলোতে পাইনি। এককথায় এই বইটি অসাধারণ। বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে আমি যেন কোনো অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নিতে আছি। চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি প্রথম খন্ড নিয়ে একটি বুক রিভিউ টাইপ ভিডিও বানানোর প্ল্যান আছে। তখন আরও অনেক বিষয় শেয়ার করা যাবে। এখানেই ইতি টানছি। পুরো লেখাটি পড়ে থাকলে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বই: চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি - প্রথম খণ্ড লেখক: নাঈম হোসেন ফারুকী
১. ইন্টার পাশ করে বাড়িতে এখন বসে। তাই একটু আদটু ফেবুক চালাই। বলতে গেলে ফেবুকই আমাকে চালায়। 😅 ইন্টার পাস করেছি তাই একটু একটু ত আধুনিক বিজ্ঞান, বইয়ে এবং ক্লাসে ত পড়েইছি। তাই মাঝে মধ্যে ফেবুকে ছোটখাটু একটা দুটা বিজ্ঞান সংবলিত পোস্ট করতাম। সেইরকমই একটা পোস্ট করছিলাম একদিন। পোস্টটা মোটামুটি নিজের কাছে ভালোই লেগেছিল, পাঠকরাও পোস্টটাকে ভালোই বলছিল। বাট পরে জানতে পারলাম আমি যেটা নিয়ে পোস্ট লিখেছি সেই তথ্যটা পুরোপুরি সঠিক নয়। পরবর্তীতে পোস্টটা ডিলিট করলাম। কারণ পোস্টে যদি ভুল তথ্যই থাকে তাহলে সাধারণ মানুষকে তা কেন জানাব। যাই হোক পরবর্তীতে কি ভুল হয়েছে কি ভুল হয়েছে খুজতে খুজতে সাজেস্ট পেলাম চা-কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি বইটির। হ্যাঁ! এখন যে লেখাটি পড়ছেন এই লেখাটি এই বই সম্পর্কেই লেখা হয়েছে। 🙂 ২. আমার এখন একটা বিষয় জেনে অনেক কষ্ট লাগে যে আমাদেরকে ছোট থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের নামে যে বিজ্ঞান পড়ানো হয়েছে তা আসলে আধুনিক বিজ্ঞান নয়। আমাদের ক্লাসে আমাদের প্রিয় স্যাররা নিউটনের মহাকর্ষ সমীকরণ দিয়ে ব্লাক হোলের প্রমাণ দেন। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে সেই প্রমাণটি মোটামুটি যুক্তিযুক্তই ছিল। তাই আমরা সেটাকেই সত্য হিসেবে জেনে এসেছি। বাট কি লাভ যদি স্কুল-কলেজে শিখা কোনো বিদ্যা বাইরের কারো সামনে বুকে সাহস করে বলতেই না পারি? আমি ত লাভ খুজে পায় না, শুধু লস আর লস। এখন যদি আমি বলি আসলেই যে ব্লাক হোল আছে তা নিউটনের সূত্রকেই সমর্থন করে। তাহলে আপনারা যারা জানেন তারা কি আমাকে ছেড়ে কথা বলবেন? অবশ্যই নয়। এমন ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিল। তাই এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে কেমন লাগে তা আমি মোটামুটি জানি। কিন্তু হাল ছারিনি। কীভাবে আসল তথ্য জানতে পারব তা নিয়ে প্রশ্ন করেছি। আবারও সামনে আসল চ-কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি। তাই শুরু করে দিলাম বইটি পড়া। দেখি কি কি জানতে পারলাম বই থেকে। ৩. ব্লাক হোল কি? কীভাবে কাজ করে? এ সম্পর্কে লেখক অনেক বিস্তারিতভাবে বইটিতে লিখেছেন। আমাদের নাঈম ভাই কানে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন কীভাবে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র দিয়ে আসল ব্লাক হোলের প্রমাণ করা যায় না। আর গল্পের গল্পে বুঝিয়েছেন কীভাবে নিউটনের কালো বস্তুর টান থেকে বের হয়ে আসা যায়। এখানেই বুম করে উড়াল দিল নিউটনের সূত্র ব্যবহার করে ব্লাক হোল খুজার মতামত। তারপর শুরু হয়ে গেল বড় একটা মিশন। না এটা কোনো যুদ্ধের মিশন নয়। এটা হলো ব্লাক হোলে ঝাপ দেওয়ার মিশন। মিশনের ��্রধান কি ছিলেন আমাদের নাঈম ভাই? না। মিশনের প্রধান ছিলেন আমাদের হিরো নিয়ান। তারপরও ধরা চলে নাঈম ভাই-ই হলেন মিশন হেড। কারণ তিনি নিয়ানকে পর্যবেক্ষণ করে আমাদেরকে বুঝিয়েছেন ব্লাক হোলের কোথায় কি হয়। কীভাবে অসীম দূরত্বকে পার করা যায়। কি! অবাক হলেন নাকি? অসীম বলেছি কিন্তু। মারাত্মক একটা বিষয়। কোনো ছেলেখানি কথা নয় এটা। তারপর তিনি সময় আর স্থানকে উল্টা করে দেখিয়েছেন। আচ্ছা আপনারা নুডলস বানাতে পারেন? না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। নাঈম ভাই আপনাকে শিখিয়ে দিবেন কীভাবে আপনি নুডলস বানাবেন মানে নুডলস হয়ে যাবেন 😅। এখন ঐ নুডলস খাবেন নাকি মাথায় দিবেন তা আপনি জানেন। আমি কিন্তু ঐ নুডলসগুলো বানানো শিখে গিয়েছি এবং সেগুলো বাজারে বিক্রয় করে কিছু টাকা পেয়েছি। ঐ টাকাগুলো কি করলাম তা আমি শেষের দিকে বলব। লাইট কোণ কি? লাইট কোণের বড় ছোট হবার অনেক মজাদার আলোচনা আছে। ৪. বেগ, সময়, ত্বরণ, দূরত্ব সবই কি আপেক্ষিক? রাতের আধারে বাস ড্রাইভারের সাথে চুক্তি করে রাস্তার একটা লাম্প-পোস্টের নিচে বল হাতে আমাদের নাঈম ভাই এই পরীক্ষাটি করে বুঝিয়ে দিয়েছেন আসলেই কি এটা আপেক্ষিক, নাকি না। ৫. চ-কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি পড়লাম আর বক্কর-বক্রিনা আপুর ভাই-বোনের কাহিনীর কথা বলব না তা কি আর হয়? আমাদের বক্কর ভাই অনেক কষ্টে আছে এখন। কারণ বক্রিনা আপু মনে হয় ভেড়ার রাখালের সাথে লক্কর-চক্কর চালাচ্ছে। আমাদের বক্কর ভাই কিন্তু অনেক খিটখিটে লোক। তাই বক্রিনা আপু রাগে একবার ভাইয়ের থেকে দূরে যাই আর একবার ভাইয়ের ভালোবাসার টানে কাছে আসে। এর কারণে বক্কর ভাইয়ের অবস্থা ত কাহিল। কীভাবে? ৬. অনেক পক-পক হয়েছে। কোনো বিজ্ঞানী কি এতও পক-পক করে নাকি 😁? হুম আমিও বিজ্ঞানী হতে চাই। আমি এখন আপনাদেরকে দেখাব কীভাবে রিলেটিভিটি ভুল প্রমাণিত হলো। কিন্তু হতাসাজনক ঘটনা হলো আমি অনেক দেরি কর ফেলেছি। তার আগেই আমাদের দুজন মারাত্মক 😅 বিজ্ঞানী এর প্রমাণ করে ফেলেছে। এখন সময় হয়েছে নোবেল কোম্পানির নোবেল দেওয়ার। কিন্তু একই বিষয়ে দুজনকে কীভাবে দুটা নোবেল দিবেন তারা? নোবেল ত একটা। এরও উপায় খুজে পেলেন তারা। একটা পরীক্ষা করা হোক। পরীক্ষা শুরু হলো। শুরু হয়ে গেল স্যার আশিক স্যার আর ড. মুহিবের মধ্যে পরীক্ষার ঝড়। ঝড় হলো। পরীক্ষা ফলাফল থেকে জানা গেল দুইজনই সমান ফলাফল পেয়েছেন। তাই নোবেল কোম্পানি তাদেরকে একটা নোবেল ই ভাগ করে দিলেন। এতে দুজনই খুশি। মোট ২০,০০০ টাকার বিনিময়ে পেয়ে গেলেন একটা নোবেল। [বলা যায় <নোবেল> পেয়েছে!] এতে উনারা খুশি হবে না ত. আমরা খুশি হব? কিন্তু সবার পেটে এই খুশি হজম হলো না। ইব্রাহিম খাঁ আর আক্কাস আলীর মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল ঝড়। না এটা কোনো পরীক্ষার ঝড় নয়৷ এটা হলো বিদ্রোহীর ঝর। কেন ঝড় শুরু হলো তাদের মধ্যে? শুরু করে দিন চ-কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি। যাই হোক নোবেলে জন্য তাদের মধ্যে ভালো খারাপ যেমনই ঝড় হোক না কেন এই ঝড়ের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেকটাই উপকার হয়েছে। ৭. কি গোসল করতে গিয়ে কাদা ছুরাছুরি না করলে গোসলের মজা আসে না নাকি? আমাদের লেখকেরও একটু-আদটু কাদা নিয়ে ছুরাছুরি করতে মন চায়। কিন্তু তিনি পুকুরে কাদা ছুরাছুরি করেন না। তিনি ছুরাছুরি করেন আস্ত একটা ট্রেনের মধ্যে। কিন্তু কেন? ৮. পড়তে পড়তে যখন চা-কফি খাবেন তখন আপনাকে আস্তে আস্তে গল্পের মাধ্যমে বুঝাবেন, ছায়া কি? খায় না মাথায় দেয়। 😁 আবার আপনি আপনার নতুন বিয়ে করা বউয়ের লাল সারিকে কীভাবে নীল দেখবেন। আরও অনেক কিছু। ৯. বিয়াটা ত করেই ফেললেন!😁 এখন একটা সুন্দর ঘর লাগবে। তাহলে আর দেরি কেন? ঘর তৈরির কাজ দিয়ে দিন আমাদের চেনা পরিচিত বক্কর-বক্রিনার BNB ডিজাইন কোম্পানিতে। আপনার ঘরের ডিজাইনটা একটু দেখে আসা যাক। ড্রয়িং রুমকে বানাতে চান ফুটবল মাঠ! টয়লেটের কমোডের স্থানে থাকবে ব্লাক হোল! আর বউ যখন ঝাটা নিয়ে তারা ধরবে তখন পালাবার জন্য আপনার কি ওয়ার্মহোল দরকার? আমার বর্তমানে দরকার নেই। কারণটা গোপনই থাক 😁। এরকম ঘর কীভাবে বানানো হয় তা লেখক অনেক সুন্দর করে বুঝিয়েছেন। ১০. এতক্ষণ ত বললাম বইয়ের বিষয়ে এখন একটু আমার মতামতটা বলি। বলতে গেলে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে এটা আমার প্রথম পড়া এমন একটা বই যা আমাকে রহস্যের রসাল স্বাদ দিয়েছে তার সাথে দিয়েছে রহস্যময় সমীকরণে ভরা একটা থালা। যা লেখক একে একে খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছেন। যা থেকে অবশ্যই অনেক কিছুই শিখার আছে। আর তার পাশে ত গ্রাফে ভরা পানির গ্লাস রয়েছেই। পানি যেমন খেতে, তেমন কোনো সমস্যা হয় না। ঠিক তেমনি ccgr এর গ্রাফগুলো প্রায় সবগুলোই গিলতে তেমন সমস্যা হয় না। কারণ হলো লেখকের জাদু। ১১. বলতে গেলে এমন বই আমি এখন পর্যন্ত বাংলায় দুটা খুজে পায়নি। যেখানে আপনাকে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রায় সকল চাহিদাই পূরণ করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে বাঙালিদের মধ্যে আসল বিজ্ঞান নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আছে নাকি? তারা এখন পড়ে আছে এটা ঠিক ঐইটা ঠিক। আমি চিন্তা করি আমাকে যদি ঐদিন ভুল না ধরিয়ে দিত তাহলে আজ আমিও আসল রহস্য থেকে অবহেলায় পড়ে থাকতাম।
বলতে থাকলে আরও অনেক অনেক বলা যাবে। কিন্তু আর এগোব না।
১২. যে যা মনে করে করুক না কেন। কিন্তু আমি বাঙালি হিসেবে নাঈম ভাইয়ের মতো একজন বাঙালী পেয়ে গর্বিত। তিনি যা আমাদেরকে দিয়ে যাচ্ছেন তা অনেক অনেক মূল্যবান। আমরা যদি এগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে হয়ত একদিন আমাদের এই রং-মার্কা বাঙালি মানুষদেরকে সঠিক রহস্যের দিকে ধাবিত করাতে পারব।
বই সম্পর্কে তেমন ভালো লিখতে পারি না। তাও চেষ্টা করেছি। ভুল হলে অবশ্য ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং তা বুঝিয়ে দিলে আরও খুশি হব। 🙂
১৩. মনে আছে ঐ নুডলসের কথা! ঐ নুডলস বিক্রয় করা টাকা দিয়ে একটি ট্রেনের টিকি বুক করেছি। যে ট্রেনের ড্রাইভার আমাকে নিয়ে যাবেন এক রহস্যময় রাজ্যে, দেখাবেন অপরুপ এক সুন্দরীকে। যার মাধ্যে আমরা অনেক অনেক রহস্যের মুখস খুলতে চলেছি। যদি আপনারাও যেতে চান তাহলে আজকেই একটি টিকি বুক করে ফেলুন। বর্তমানে আর তলোয়ারের যুদ্ধ হয় না। এখন যুদ্ধ হয় প্রেমের। তাই শান্তি আর শান্তি। 😁 ধন্যবাদ। 🙂
বই- চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি(১ম খন্ড) লেখক- নাঈম হোসেন ফারুকী রেটিং - ৩.১৪/π
ট্রেনে করে জুরিখ যাচ্ছি। জুরিখে এক তান্ত্রিক আছেন যিনি নাকি যে কারো মনের ইচ্ছা পূরন করতে পারেন। চাইলেই পাঠিয়ে দিতে পারেন অতীতে কিংবা অনেক পরের কোন ভবিষ্যতে।আমার দেখা করার উদ্দেশ্যে আমি এখন বলব না।
ট্রেনের ভিতরে খুব হট্টগোল হচ্ছে। ট্রেনের দুই মাথায় বসে সমান দূরত্ব থেকে দুইজন নাকি একটা বাটন প্রেস করেছেন। কে আগে আর কে পরে করেছেন এটা নিয়েই চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। দুইজন একই সময়ে প্রেস করেছেন এটা আমি নিজে দেখেছি,আমার পাশে বসা সবাই দেখেছে অথচ প্লাটফর্ম থেকে একজন ফোন দিয়ে বলল তিনি দেখেছেন পিছনে বসা ব্যাক্তি আগে বাটন প্রেস করেছেন। ঘটনা এখানেই শেষ না একটু আগে আরেকজন ফোন দিয়ে বলল তিনি নাকি সামনের জনকে আগে বাটন প্রেস করতে দেখেছেন। যেই দুজন ফোন দিছিল এদের আমি খুব ভালো করেই চিনি। এরা আর যাই হোক কখনো মিথ্যা বলে না। মাথাটা ঘুরছে, সবার অংক মেলে আমারটা কেন মেলে না!! নিজের চোখে কি ভুল দেখলাম??জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই একটা বিশাল সাইনবোর্ড চোখে পড়ল।সাইনবোর্ডে তান্ত্রিকের ছবি দেখা যাচ্ছে। বিশাল আলখেল্লা পড়ে হাসোজ্জল ভাবে তাকিয়ে আছেন। দেখতে কিছুটা ফারুকী ভাইয়ের মত লাগে যদিও। পোষ্টারের নিচে লেখা Welcome to the house of Relativity where fantasy meets reality.......
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত তান্ত্রিকের দেখা মিলল। বিশাল হলরুম যদিও বাইরে থেকে একদমই বুঝা যায় না যে ভিতরে এত বিশাল জায়গা। রহস্যময় হলরুমের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অদ্ভুত সব ডায়াগ্রাম আর বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের ছবি। একটা দেয়ালে দেখলাম বিদঘুটে কিছু সমীকরণ লিখা। তান্ত্রিক সাহেব পরিচয় করিয়ে দিলেন " এগুলো মেট্রিক ইকুয়েশন। এই ইকুয়েশন ব্যাবহার করেই এই জায়গাটা বানানো হয়েছে।" এইখানে এইসব ইকুয়েশন আর বিজ্ঞানীদের কাজ কি মাথায় ধরল না। আমি আমার সমস্যার কথা বলতে যাবো তখনি তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন "সমস্যা পরে শোনা যাবে আগে এই জায়গাটা ঘুরে দেখো।" আমি বললাম আমার হাতে সময় নেই। হাসিমুখে তিনি রিপ্লাই দিলেন "সময় নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।" এই বলে আমাকে একা রেখে তিনি চলে গেলেন। আমি হাবিজাবি ইকুয়েশান আর ডায়াগ্রাম দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলাম। কিছু সময় পরে বিরক্ত লাগা শুরু হল।আমি কত কষ্ট করে আসলাম যে উনি জাদুবিদ্যা দিয়ে আমাকে অতীতে পাঠাবেন। এখন তো উনাকে ভন্ড মনে হচ্ছে। ঠিক এমন সময় পেছন থেকে জাদুকরের গলা শোনা গেল " Don't be so tensed my boy, Science is more mysterious than magic.. Now follow me,there are still so many things to know..
জাদুকরের পিছনে পিছনে দুইটা লম্বা করিডোর পেরিয়ে আরেকটা বড় হলরুমে এসে পৌছালাম। এইখানে প্রায় শ খানেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তান্ত্রিককে দেখা মাত্রই সবাই তাকে নত হয়ে কুর্নিশ করল। বুজতে পারলাম এরা তার অনুসারী। মনে হয় তাদেরকে তিনি জাদুবিদ্যা শিখাচ্ছেন। আমাকে একটা জায়গা দেখিয়ে সেখানে দাড়াতে বলে নিজে চলে গেলেন তার জন্য বরাদ্ধ করা মণিমুক্তা খচিত সিংহাসন টাইপ চেয়ারটাতে।পেছনে বিশাল এক হোয়াইট বোর্ড আর তার আশেপাশে কিছু যন্ত্রপাতি চোখে পড়ল।আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই জায়গার রহস্য নিয়ে ভাবতে লাগলাম। বাইরে থেকে যেটাকে একটা নরমাল সাদা-মাটা বাড়ি মনে হয় ভিতরে পুরো ছোটখাটো একটা এলাকা। কিভাবে সম্ভব?? আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল আর সেই সাথে বিশাল এক শক খেলাম জাদুকরের প্রথম কথাটা শুনে-"তোমরা কি জানো? জাদুবিদ্যার আসলে কোন অস্তিত্ব নেই।এই পৃথিবীতে অলৌকিক কিছুই হয় না।"
জাদুকর সাহেব তার গল্প বলে যাচ্ছেন।মাঝে মাঝে বোর্ডে সমীকরণ আর ডায়াগ্রাম একে বুজাচ্ছেন। কিভাবে সময় একটি মাত্রা আর ঠিক কেন অনেক গতিতে গেলে টাইম ডায়ালেশন হয়। গতিশীল বস্তু আর স্থির বস্তুর ওয়াল্ড লাইন একে তাদের মধ্যকার সত্যিকার প্রার্থক্য আর চতুমার্তিক দুরত্ব বুঝালেন। বললেন আমরা সবাই নাকি আলোর গতিতে ছুটে চলেছি সবসময়। সাইন্সের ছাত্র হওয়াতে ব্যাপারগুলা ধরতে খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না। নাইন-টেনের স্টুডেন্টরাও খুব সহজে ধরতে পারবে জিনিসগুলা। আমি শুনতে লাগলাম আর বিষ্ময়ে হা করে জাদুকরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি একের পর এক বলে চললেন। কিভাবে টাইম ডায়ালেশন আর লেংথ কনট্রাকশন হয়। বললেন মহাবিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল জিনিসের কথা। মারাত্মক তার বেগ,যাকে ক্রস করা কারো পক্ষেই সম্ভব না। কেউ যদি ক্রস করার চেষ্টা করে কাছাকাছি লেভেলে যায় তখন বাইরের মানুষের সাপেক্ষে কি অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা হয় তার। আমার ট্রেনের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। আমি বুজে গেলাম কি সমস্যা হয়েছিল আসলে। জাদুকরকে এখন অনেক ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। অদ্ভুত ভাবে জায়গাটা আমার ভালো লাগতে শুরু করেছে।
কেন একটা আপেল মাটিতে পড়ে, ঠিক কি হয় যে আপেলকে মাটিতেই আসতে হয়। মুক্তিবেগ আসলে কি? আমার জানা অনেক ধারণা ভেঙে দিলেন জাদুকর সাহেব।
এক পর্যায়ে তিনি স্পেস- টাইম ডায়াগ্রাম নিয়ে কথা বললেন। স্পষ্ট ধারণা দিলেন ভেক্টর আর টেনসর নিয়ে। কোনো জায়গার স্পেসের বক্রতা আসলে কি মিন করে।বললেন মেট্রিক ইকুয়েশানের কথা। এই বাড়ির পিছনের রহস্য পুরোটা ক্লিয়ার করলেন। কেন বাইরে থেকে দেখতে ছোটখাটো একটা বাড়ি কিভাবে ভিতরে এত বড় দেখা যায়। বাইরের দুনিয়া নাকি আমাদেরকে এখন লিলিপুট সাইজের দেখতেছে। আমি অবাক হলাম। আশে-পাশে সবার দিকে তাকালাম। হাত দিয়ে নিজের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরখ করে দেখলাম।অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ল না।
এরপর শুরু করলেন ব্লাকহোলের জন্ম নিয়ে। ব্যাপারগুলা সবে বুজতে শুরু করেছি। কিভাবে একটা ব্লাকহোলের জন্ম হয়। সিংগুলারিটি আসলেই কি একটি বিন্দু??ইভেন্ট হরাইজেনের কাছাকাছিতে কিভাবে সময় আর দুরত্বের ধারণা পাল্টে যায়। অসীম দুরত্ব কিভাবে অতিক্রম করা যায় সসীম সময়ে। ব্লাকহোল নিয়ে অদ্ভুত সব ব্যাপার জানালেন। যেই জায়গা থেকে কেউ কখনো পালাতে পারে না। ঠিক কেন পালাতে পারে না তারও ব্যাখা দিলেন। আমি আগে জানতাম যে মুক্তিবেগ বেশি হওয়ার কারণে কেউ পালাতে পারে না। আমার সব ধারণা ভেঙে দিয়ে জাদুকর বললেন স্পেস আর সময়ের অক্ষ পরিবর্তন হয়ে যায় ইভেন্ট হরাইজেন ক্রস করার পর।
অনেকক্ষণ পর গল্প শেষ হল। আমার ঘোর এখনো কাটে নি। এই মনে হচ্ছে সেমাইয়ের মত ব্লাক হোলে পড়ে যাচ্ছি। আবার মনে হচ্ছে শক্তিশালী স্পেসশিপে করে ইভেন্ট হরাইজেনের চারপাশে চক্কর কাটছি। এসেছিলাম টাইম ট্রাভেল করে অতীতে যাব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা যত সোজা ভেবেছিলাম মোটেও তা না। আর ইনিও কোন জাদুকর নন। টাইম ট্রাভেল সংক্রান্ত সব ধারণা ভেঙে যখন ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিকের মত বিরস বদনে বসে আছি তখন জাদুকর সাহেব আসলেন। " সো মাই বয়, নাউ টেল মি হোয়াই আর ইউ হিয়ার???????
#bookreview বই : চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি লেখক : নাঈম হোসেন ফারুকী প্রচ্ছদ মূল্য : ৫৫০.০০ রেটিং : ১০/১০
সেই একবছর আগের কথা ফেসবুকের টাইমলাইনে একটা আর্টিকেল পোস্ট করেছিলাম। আর্টিকেলটি ছিল, ঠিক কি কারণে আলো ভারী বস্তুর কাছে এসে বেঁকে যায়? সেখানে ইতিহাস আর সাহিত্য মিলিয়ে সুন্দর একটা বিষয় ফুটিয়েছিলাম। একটু পর নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়া কমেন্ট করলো পপ পড়া বাদ দাও আর টেক্সট পড়া শুরু করো। তারপর উনাকে নক করেছিলাম এবং জানতে পারলাম উনি নাকি সামনে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে একটি বই বের করবেন। দিব্যি করে বলছি তারপর থেকে বইটার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলাম। ঢাবির ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে আমার এক কাজিন পড়ে তো তার কাছ থেকে জেনারেল রিলেটিভিটির ধারণা চেয়েছিলাম। সে আমাকে বলেছিলো, জেনারেল রিলেটিভিটি কাটখোট্টা একটা টপিক এটা নিয়ে পড়াশোনা করার বয়স তোমার এখনো হয়নি। আর আমি নিজেই যখন জেনারেল রিলেটিভিটি পড়ি তখন মাথার চুলগুলো আলতো আলতো করে আওরাতে থাকি!
আমার কাজিনের কথা শুনে থমকে যাবেন না কিন্তু! আপনি যদি ক্লাস নাইন টেনের ম্যাথ ফিজিক্সের বেসিক ক্লিয়ার রাখেন আর হালকা পাতলা ভেক্টর, ক্যালকুলাস পারেন তাহলে বইটা আপনার জন্য। কিন্তু এই বই পড়তে হলো অবশ্যই আপনাকে চিন্তা করাকে ভালোবাসতে হবে।
প্রথম অধ্যায়টা শুরু হয়েছে রাস্তা নাকম পরিচ্ছেদ দিয়ে। আমার মতে, এই পরিচ্ছেদটি পড়ে যে কেউ জেনারেল রিলেটিভিটিতে আগ্রহ প্রদর্শন করবে। তারপরের অধ্যায়টা আরেকটু অবাক করে তুলার মতো, এপিটাফে দেখনো হবে, জেনারেল রিলেটিভিটিতে অবদান রাখা কতিপয় বিজ্ঞানীদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায় ঘটে যাওয়া পুরো জীবন। তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে, জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝতে হলে যা কিছু দরকার তার সুন্দর একটা আবিষ্কার। আপেক্ষিকতা, স্থান, কাল, বেগ, মাত্রা, ত্বরণ ও ভেক্টর কি জিনিস? একেবার��� গভীরভাবে জানা যাবে। আচ্ছা আমরা তো থ্রি ডির কথা শুনেছি যেখানে দৈঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা থাকে। এগুলোর সাথে ওঠাপড়া করে সময় ও নিজেকে মাত্রা হিসেবে দাবি করে কি বিষ্ময়কর না? সময় কেন মাত্রা, সত্যিকারের সময় কি জিনিস? এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সাথে থাকছেন বক্রিনা আপু আর ভেড়া। এত সুন্দর ভাবে সত্যিকারের সময় ফিল করানো যায় তা হয়তো এই বই না পড়ে কখনোই জানতে পারতাম না। স্পেশাল রিলেটিভিটি না পড়ে কি জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝা যায়? তাই লেখক এই বইয়ের খানিকটা অংশই স্পেশাল রিলেটিভিটিতে ব্যায় করেন।
রংপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব তিনশো কিলোমিটার। এর চেয়ে কম হওয়া কি সম্ভব? অবশ্যই না কিন্তু স্পেশাল রিলেটিভিটি বলে সম্ভব তো কিভাবে? আচ্ছা ধরুন আপনি একটি ট্রেনে বসে আছেন ট্রেনের বেগ 0.8 c। তো এবার আপনি আর বসে নেই 0.8 cc বেগে ছুটছেন। তারমানে আপনি 1.6 c বেগে ছুটছেন! কিন্তু বাস্তবে তা হয় না কেনো হয় না? ভর কি জিনিস? ভরবেগ কি জিনিস? শক্তি কি জিনিস? সত্যিকারের দূরত্ব কি জিনিস, গ্রাফে এর অক্ষগুলোর স্থান কোনদিকে? টুইন প্যারাডক্স কেনো প্যারাডক্স? এই সকল প্রশ্নের উত্তর ম্যাথমেটিক্যালি খুঁটিয়ে খুটিয়ে বুঝানো হবে বইয়ের স্পেশাল রিলেটিভিটির অংশে। তারপর শুরু হবে জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝানো।
(স্পেশাল রিলেটিভিটি বুঝানোর জন্য যেমন গ্রাফ আকা হতো তেমনি জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝানোর জন্য বরাবরই ড্রয়িং রুম ব্যাবহার করা হয়েছে।)
এই অংশে, প্রথমে মেট্রিক শিখানো হবে তারপর স্পেশ টাইমের বক্রতা ঠিক কি মিন করে তা দেখানো হবে। তারপর টেন্সর শিখিয়ে পোলার কো অর্ডিনেট সিস্টেম বুঝানো হবে।
অনেক গুলো জাত বেজাতের মেট্রিক সমীকরণ দেখানো হবে সেগুলো কি মিন করে তা বুঝানো হবে। এত সব মাথা ঘুরানো বিষয় বুঝানোর পর এই বইয়ে মহাকর্ষকে টানা হয়। মহাকর্ষ কি বল? মহাকর্ষ কেনো বল নয়? মহাকর্ষকে চুড়ান্ত ভাবে বুঝানোর জন্য আরেকটি পরিচ্ছেদ রয়েছে জিওডেসিক। তো এই অধ্যায়টিতে প্রচুর পরিমাণে ডায়াগ্রাম ব্যাবহার করা হয়। এর ফলে মাথায় জট পাকাতে শুরু করবে কিন্তু তার জন্য রয়েছে চা কফির বিরতি! চা পানের বিরতি দিয়ে আইনস্টাইন রিং দেখানো হবে। অতঃপর শুরু হবে বইয়ের সর্বশেষ এবং অদ্ভুত একটি অধ্যায় এই অধ্যায় পড়র সময় আমার ঘায়ের পশম গুলো নাড়া চড়া দিয়ে উঠেছিল। ব্ল্যাক হোল কি জিনিস? কিভাবে ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়? মুক্তিবেগ কি জিনিস? এসকল ফেনোম্যানাল প্রশ্নের বিবরণ থকবে, সরাসরি শোয়ার্জচাইল্ড মেট্রিক সমীকরনের খুটিনাটি বুঝানো হবে। তারপর ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজনের এপাশের আচরণ বুঝানো হবে, কি ভয়ংকর আচরণ। কেমন লাগবে একথা শুনে যে আপনি নিজেই একটা ব্ল্যাক হোলের ফ্যাক্টরি অসংখ্য ব্ল্যাক হোল সাথে নিয়ে চলছেন! ইভেন্ট হরাইজনের ওপাশে নাকি স্পেশ এবং টাইম পুরোপুরি পাল্টে যায়! কার ব্ল্যাক হোল, শোয়ার্জচাইল্ড ব্ল্যাক হোল, আইনস্টাইন রোজেন ব্রিজ ইত্যাদির ম্যাথমেটিক্যাল বুঝাপড়া শেষে দেখানো হবে টাইমমেশিন, একেবারে সত্যিকারের টাইমমেশিন!
গভীর রাত সবাই ঘুমের অতল গহব্বরে ডুবে আছে আমি বসে আছি ব্ল্যাক হোল নামক অধ্যায়টি নিয়ে। এই অধ্যায়টি পড়ার সময় আমার মাথা একদমই খারাপ হয়ে গেছে, কেমনে কি? এ যেনো রুপকথার জগৎকেও হার মানায়!
আমার মতে এই বইটি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের চেয়েও বেশি কিছু যেই প্রদীপে বন্দী আছে রুপকথার চেয়ে বেশি বিষ্ময়কর একটি জগৎ।
এই বইটিই হয়তো এমন একটি বই যে-ই বইয়ে সত্যি সত্যিই জেনারেল রিলেটিভিটি শেখানো হয়। এই বইটির মতো দ্বিতীয় আরেকটি বই এই পৃথিবীতে হয়তো নেই আর কেউ কিয়ামত পর্যন্ত ও এমন সুন্দর ভাবে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে বই লিখতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে এমনকি কারো সাহস- ই হবে না জেনারেল রিলেটিভিটির মতো কাটখোট্টা বিষয়কে সহজভাবে তুলে ধরার। নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি বই লেখার জন্য। এই বইটি না লিখলে হয়তো কোনোদিনই জেনারেল রিলেটিভিটিকে বুঝতে পারতাম না! গতবছর লেখকের চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইটি পড়েছিলাম। কতিপয় ম্যামালদের বোঝাপড়া আর আমার ধারণা ছিল এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিষ্ময়কর জিনিস হচ্ছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স। কিন্তু যখন চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি পড়ি তখন এই ধারণা নিমিষেই পাল্টে যায়। এই বই পড়ে যে-ই সব আনন্দ আমি পেয়েছি অন্য শত শত বই পড়েও এরকম আনন্দ কখনোই পায়নি। এই বইয়ের যেকোনো একটি অধ্যায় কাউকে অবাক করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পরিশেষে বলতে চাই চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটির দ্বিতীয় খন্ড যেনো তাড়াতাড়িই চলে আসে। আরেকটি কথা আমি লেখকের এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের আশায় মেতে আছি।
বুক রিভিউ : চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি (প্রথম খণ্ড) লেখক: নাঈম হোসেন ফারুকী পেজ সংখ্যা : ৩৫২ পার্সোনাল রেটিং : ৯/১০ প্রকাশনী : প্রান্ত প্রকাশনী
আইনস্টাইনের জেনারেল থিউরি অফ রিলেটিভিটি, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যখন প্রথম বিজ্ঞানের সাথে আমার পরিচয়। মনে হতো এটা সত্যিই অসাধারণ কিছু, কাঠখোট্টা নামের পিছনে কী এমন আছে যার জন্য আইনস্টাইনকে শ্রেষ্ঠ ফিজিসিস্ট বলা হয় ! যেটা কিনা প্রায় দু'শ বছরের প্রচলিত সব ধারণা বাতলে দেয়! ক্লাস ৬ এ যখন উঠলাম তখন থেকে বই পড়া, আর্টিকেল পড়া শুরু রিলেটিভিটি নিয়ে। পপ লেভেলে জানতাম শুধু, এটা দিয়ে নাকি বুধগ্রহের আবর্তন, গ্র্যাভেটিশনাল ল্যান্সিং, ব্লাকহোলের আচরণ, স্পেস টাইম বাঁকিয়ে ওয়ার্মহোল ক্রিয়েট করার মতো ইত্যাদি জিনিস জানা যায়। কিন্তু কিভাবে কী বুঝায় সেটা জানার মতো কোনোকিছু পাইনি। আইনস্টাইনের মনোজগৎ বোঝার একটা অতৃপ্ত পিপাসা থেকে গিয়েছিল।
চা কফি জেনারেল রিলেটিভিটি আমার জানার সেই পিপাসাকে তৃপ্ত করেছে। এত সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাষায় লেখক বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন যে আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে, এত সহজে আসলেই কি কাঠখোট্টা ম্যাথটিকাল ইকুয়েশন ফিল করাও সম্ভব!!
অনেক বইয়ে এই ইকুয়েশনগুলো দেখতাম ds^2=dx^2+dy^2+dz^2-dt^2, কিন্তু তেমন একটা বোধগম্য করতো না। জাস্ট জানিয়ে ছেড়ে দিতো। সত্যিই সমীকরণগুলো তাৎপর্য কী, কী মিন করে তা শিখাতো না। চা কফি বইটার মাধ্যমে ফিল করতে পারি সমীকরণটার মিনিং।
বইয়ে রয়েছে প্রচুর গ্রাফ আর সমীকরণ। এটা পপ লেভেলের কোনো বই না৷ টেক্সট বুক বলা চলে কিন্তু মোটেও জটিল বইয়ের ভাষার মতো না। প্রতিটা চাপ্টার গল্পাকারে সাজিয়ে রিলেটিভিটির স্বাদ আস্বাদন করাবেন লেখক। কখন যে একটা জটিল বিষয় বুঝে ফেলবেন টেরই পাবেন না৷ মনে হবে যে, আপনি নিজেই যেন ব্লাকহোলের ঘটনা দিগন্তের পাশে বসে আছে, হরাইজনের ভিতর প্রবেশ করে ভিন্ন এক জগতে সম্মুখীন হচ্ছেন। যেখানে কিনা সময় স্পেসের মতো আর স্পেস সময়ের মতো আচরণ করে। আপনি চাইলে দেখতে পারবেন বাহিরের জগতের সব ভবিষ্যৎ, সব অতীত। কার ব্লাকহোলের রিঙ্গুলারিটির ভিতর CTC তে পাবেন সত্যিকারের টাইম মেশিনে স্বাদ। সেখানে নাকি, চাইলে নিজের অতীতকে ধরা ছুঁয়াও যায়।
বইটা শুরুর দিক থেকে যদি বলি, বইটার ৭ টা চাপ্টার রয়েছে৷ প্রতিটাতে রয়েছে বিভিন্ন টপিক দিয়ে ধাপে ধাপে সাজানো৷ সময়, ভেক্টর, স্থান, আপেক্ষিকতা, বেগ ইত্যাদি সাবলীল কন্সেপ্ট ক্লিয়ার করা হয় শুরুর চাপ্টারগুলোতে৷ সেখানে কঠিন কিছু নাই। আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে স্পেশাল রিলেটিভিটিতে। আলোর বেগের কাছাকাছি যাওয়ার কারণে সেখানে সময় ধীর হ���য়া, দৈর্ঘ সংকোচন, আপেক্ষিক বেগ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ধন্যবাদ লেখককে স্পেস-ডায়াগ্রাম প্র্যাকটিস টপিকটা রাখার জন্য৷ এটার জন্য উপকৃত হয়েছি সহজে স্পেশাল রিলেটিভিটির ঘটনাগুলো আরও ক্লিয়ার হতে। বক্কর ভাইকে ছেড়ে আলোর ৮০% বেগে বক্রিনা আপু যদি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, কয়েক বছর পর পুনরায় ফিরে আসে তাহলে দেখবে বক্কর ভাইয়ের বয়স বেড়ে গেছে আর বক্রিনা আপুর অল্পই বেড়েছে, আমার কাছে যে জিনিসটা শকিং লেগেছে তা হলো,পৃথিবী ছাড়ার সময় বক্রিনা আপুর সাপেক্ষে বক্কর ভাইও আলোর ৮০% বেগে পিছন দিকে চলছে তাহলে তো বক্কর ভাইরেও সময় স্লো হওয়ার কথা কিন্তু হলো না কেন?আরও অবাক হই যখন পড়ি, আলো নাকি অসীম ত্বরণে চলছে একই সাথে সমবেগে !! এপ্রশ্নের উত্তর জানতে বইটা পড়ুন।
তারপর আসে মেট্রিক ইকুয়েশন। যেটা ছাড়া জেনারেল রিলেটিভিটি বোঝা অসম্ভব। লেখক সহজে, বোধগম্য করে ইকুয়েশনের প্রতিটা মিনিং শিখিয়েছেন৷ ভয় পাওয়ার কারণ নেই, সেই সাথে রয়েছে সেগুলোর জন্য প্রতিটা গ্রাফ!! এই সমীকরণগুলো দিয়ে আমরা ব্যাখ্যা করতে পারবো মহাকর্ষ তরঙ্গের আচরণ, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, ব্লাকহোলের ইভেন্ট হরাইজনে আসলে কী ঘটে ইত্যাদি৷
৬ নম্বর চাপ্টারে লেখা হয়েছে মহাকর্ষ নিয়ে। মহাকর্ষ বলতে আসলো কী কিছু আছে? এটা জেনারেল রিলেটিভিটিতে কী মিন করে? আপেল গাছ থেকে পড়ে নাকি পৃথিবী উপরে উঠে এসে আপেলকে ধরে? ইকুভ্যালেন্স প্রিন্সিপল কী? ত্বরণ দিয়ে কীভাবে স্পেস টাইম টেনে মহাকর্ষের ফিলিংস পাওয়া সম্ভব? এসবের ব্যাখ্যা রয়েছে৷
সর্বশেষ ৭ নম্বর চাপ্টারে রয়েছে, অতি প্রতীক্ষিত চাপ্টার-- ব্লাকহোল। আপনি যদি মনে করেন স্কেপ ভ্যালোসিটি আলোর গতির চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে আলো ব্লাকহোল থেকে বের হতে পারে না তাহলে আপনি বড্ড ভুল ভাবছেন। এর কারণ অন্যকিছু,বলবো না ৷ এই চাপ্টারটায় শোয়ার্জচাইল্ড ম্যাট্রিকের মাধ্যমে অঘূর্ণায়মান ব্লাকহোলের আচরণ মোলায়েমভাবে শেখানো হয়েছে। ঘটনা দিগন্তের ওপাশে কী হয়, সময় কেন থেমে যায়, সেমাইয়ের মতো প্যাচিয়ে কেন কেউ ব্লাকহোলে পড়ে যাকে বলে স্প্যাগিটিফিকেশন, আর জানেন কী একটা বিশাল সুপারম্যাসিভ ব্লাকহোল আপনি দিব্যি ঢুকে যেতে পারবেন কোনো রকম ক্ষত বিক্ষত হওয়া ছাড়াই? ভাবছেন এসব কীভাবে ঘটে ? জানতে বইটা পড়তে হবে৷
সকল ধরনের ব্লাকহোলই ঘূর্ণায়মান। কার্ল ব্লাকহোল এরা৷ এদেরকে শোয়ার্জচাইল্ড মেট্রিক দিয়ে সমাধান করা যায় না, এরজন্য প্রয়োজন কার্ল ইকুয়েশন। লম্বা ইকুয়েশন ভেঙে ভেঙে বুঝানো হয়েছে, খুব জটিল একটা জিনিস। আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ ব্যবহার করে ওয়ার্মহোল ক্রিয়েট করা, স্পেস-টাইমের ফ্যানের মতো ঘুরা তথা ফ্রেম ড্রেগিং, কার্ল ব্লাকহোলের ভিতর ইকুয়েশন অনুযায়ী আসলে কি কি ঘটে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই শেষ চাপ্টারে৷
মতামত: বইটা অনবদ্য। প্রতিটা বিজ্ঞানপ্রেমীদের সংগ্রহে রাখার মতো। বাংলাদেশে এসব টপিক নিয়ে এর আগে কেউ লিখেনি জানা মতে। বইটা পড়ার জন্য ইকুয়েশনের ভয় কাঁটাতে হবে আর ssc ব্যাসিক স্ট্রং থাকতে হবে। আমি মনে করি ইন্টারের স্টুডেন্টদের জন্য বেশি পার্ফেক্ট হবে৷ আর বইটা টানা পড়ে যাওয়া ভালো হবে। এর বিশেষ কারণ হলো, ব্যস্ততার কারণে আমি যখন টুকটাক বন্ধ পেয়েছি তখন পড়েছি এর ফলে সামনে অধ্যায় পড়তে গেলে পিছনের কিছু টপিক ভুলে যাই, আবার পড়ে নিতে হয়। জটিল বিষয়গুলো তখন ভাবতে সময় লাগে। এজন্য একটানা পড়াটা প্রেফার করবো। ধন্যবাদ রিভিউটা পড়ার জন্য। ওয়েটিং ফর দ্য সেকেন্ড পার্ট 🥰🥰।
বইঃ চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি (প্রথম খন্ড) লেখকঃ নাঈম হোসেন ফারুকী প্রকাশনীঃ প্রান্ত প্রকাশনী ব্যাক্তিগত রেটিং- ৮/১০
...আচ্ছা যদি একজন মানুষ কোন এক ব্ল্যাক হোলের দিকে মোহে আকৃষ্ট হয়ে অগ্রসর হতে থাকে তাহলে সে কি দেখবে? তার চারপাশের দুনিয়াটাই বা কেমন হবে? সে কিই বা ফিল করবে? সে কি আদও এই মোহের টান ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পারবে? নাকি সেই ব্লাকহোলের জগতে হারিয়ে যাবে?...
বইয়ের প্রথম অধ্যায়টা পড়লে মোটামুটি এইসব অদ্ভুত প্রশ্নের উদয় হবে। এটাই স্বাভাবিক। কেননা অধ্যায়টা শুরু হয়েছে রাস্তা নামে একটা হরর সাইফাই দিয়ে। যেখানে গল্পের মূল নায়ক ভুলবসত ব্ল্যাক হোলের দিকে গাড়ি নিয়ে অগ্রসর হয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হয়।(?) আর তার জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে পাঠকের মনে যে প্রশ্ন, খটকা জন্মায় তা রিলেটিভিটির মতো কাঠখোট্টা মার্কা টপিকের প্রতি পাঠকের আগ্রহ জন্মাতে সাহায্য করে।
আর এরপর এর পরের অধ্যায়টায় রয়েছে সেই সব মহারথীদের কথা যাদের কারণে জেনারেল রিলেটিভিটির মতো টপিকে সাথে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি। যাদের কারণে আজ আমরা এত আরাম করে জীবনযাপন করতে পারছি। সিরিয়াসলি জোক করছি না।
যাইহোক এবার এরপরের চ্যাপ্টার নিয়ে অলোচনা করা যাক। ভাইরে ভাই এর আগের চ্যাপ্টারগুলো তো কিছুই না। শুরু তো এখান থেকেই। এই চ্যাপ্টার থেকে শুরু হয়েছে আপনার যাত্রা। এই চ্যাপ্টারটা নাম 'ফাউন্ডেশন'। আশা করি নাম দেখেই বুঝতে পারছেন চ্যাপ্টারটা কি নিয়ে? যদি না বুঝে থাকেন তাহলে বলি এই রিলেটিভিটি নামের যে দৈত্যের সাথে আপনি লড়াই করতে যাচ্ছেন, যার পেটের কথা জানতে চাচ্ছেন তার সম্পর্কে কিছুই না জেনে তার সাথে লড়তে যাবেন? একবার তার সম্পর্কে জেনে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন না? মূলত এই চ্যাপ্টারটা এই সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়েই। যা ছাড়া আপনি সেই দৈত্যের সাথে লড়তে পারবেন না। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে মাত্রা, ভেক্টর, ত্বরণ, বেগ, সময়, স্থান এসব নিয়ে আরকি। মূলত এগুলো কি, কিভাবে কাজ করে। এসব নিয়ে জাস্ট বেসিক ধারণা দেয় আরকি।
তো যে দৈত্যকে নিয়ে আলোচনা করছি তার সম্পর্কে না হয় মোটামুটি জানলাম। এবার তো গভীরে ঢুকতে হবে তাই না? যা নিয়েই মূলত এর পরের চ্যাপ্টারটা।
আচ্ছা বইয়ের নাম তো চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভি। আর মানে কি এখানে শুধু জেনারেল রিলেটিভি নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে? উত্তর হলো না। শুরুতেই জেনারেল রিলেটিভি নিয়ে আলোচনা না করে আলোচনা করে স্পেশাল রিলেটিভিটি নিয়ে। কেননা তিনি যদি তা না করতেন তাহলে সামনে গেলে মানে জেনারেল রিলেটিভিটির দিকে সোজাসুজি অগ্রসর হলে অনেক প্যারা খেতে হবে। পরে তেমন কিছু বুঝব না। তাই তিনি আগে স্পেশাল রিলেটিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। মোটকথা জেনারেল রিলেটিভিটির ভিত্তি গড়তে যা যা প্রয়োজন তার সবই আলোচনা করেছেন।
যাইহোক এর পরের চ্যাপ্টার থেকে শুরু হয়েছে জেনারেল রিলেটিভিটি। যা বুঝতে হলেই প্রথমেই জানতে হবে স্পেস বড় হওয়া ছোট হওয়া বলতে আসলে কী বুঝায়, স্পেস টাইমের চাদর বলতেই বা কি বুঝায়? পাশাপাশি বুঝতে হবে টেন্সর, মেট্রিক সমীকরণ, পোলার কো-অর্ডিনেট সিস্টেম। এখানে মূলত টেন্সর শিখিয়ে পোলার কো অর্ডিনেট সিস্টেম বুঝানো হবে।
আর এরপরের চ্যাপ্টারটা হলো আমাদের অতি পরিচিত মহাকর্ষকে নিয়ে। এখানে মূলত এই মহাকর্ষের অ্যানাটমি করা হয়েছে। মহাকর্ষ আসলে কী? কেউ বলে বল (নিউটন) কেউ বলে এটা বল নয় অন্য কিছু (আইনস্টাইন)। কে ঠিক? আরেহ ভাই এই অংশটা পড়ে আবার আমাকে মারতে আসিয়েন না।
এই চ্যাপ্টারে লেখক আমাদের সোজাসুজি নিউটনের মাথার মধ্যে নিয়ে যান। যেই মুহূর্তে নিউটনের মাথায় তাল (ইয়ে মানে আপেল আরকি) পড়ে তখন তিনি কিভাবে মহাক���্ষকে আবিস্কার করেন তার কথা বলেন। এনিয়ে বলতে গিয়ে তিনি শুধু নিউটনকেই না কেপলারকে টেনে আনেন। শুধু মহাকর্ষ কী এটা বুঝানোর জন্য। যখন সবকিছু বুঝানো শেষ করে প্রমাণ করলেন যে মহাকর্ষ আসলে বল। ঠিক তখনই তিনি আইনস্টাইনকে টেনে এনে প্রমাণ করেন মহাকর্ষ কোন বল নয়। কেমনে? প্রচুর প্রশ্ন জাগছে না? এই প্রশ্নের উত্তর না হয় নাই দেই। কিছু কিছু জিনিসের উত্তর না জানাই ভালো🙄
এরপরের চ্যাপ্টার হলো বইয়ের লাস্ট চ্যাপ্টার এবং সবচেয়ে অদ্ভুত আর ইন্টারেস্টিং চ্যাপ্টার। 'ব্ল্যাকহোল'। যেটা নিয়ে একেবারে শুরুতেই আলোচনা করেছিলাম। চ্যাপ্টারের নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে এই চ্যাপ্টারের বিষয়বস্তু কি নিয়ে। এই চ্যাপ্টারেও এর আগের চ্যাপ্টারের মতো মহাকর্ষের জায়গায় ব্ল্যাকহোলের অ্যানাটমি করা হয়েছে। এখানে আলোচনা করা হয়েছে ব্ল্যাক হোল কি জিনিস? এটা খায় না মাথায় দেয়? কিভাবে ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়? ব্ল্যাকহোল দেখতে কেমন? এর মধ্যে আছেটা কি? কেউ যদি ব্ল্যাকহোলে অগ্রসর হয় তাহলে সে কি দেখবে? ব্ল্যাকহোলের সাথে টাইম মেশিনের সম্পর্ক কি? এসব আরকি পাশাপাশি ওই যে একেবারে শুরুর দিকে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে সে সব কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে এই চ্যাপ্টারে।
এতকিছু পড়ে যদি মনে করেন যে আপনার রিলেটিভিটি নিয়ে সবকিছু জানা হয়ে গেছে তাহলে বলব খামুন। এখনো অনেক কিছু বাকি আছে লেখক আলোচনা করার। এজন্য তিনি পুরা বইটাকে দুই খন্ডে রুপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এসব নিয়েই এই বইটার প্রথম খন্ড।
তো জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখনই বইটা সংগ্রহ করতে পারেন। রকমারিসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন বইটা। হ্যাপি রিডিং 🥰🥰🥰
চা কফি তো সবাই পান করতে পারে। কিন্তু জেনারেল রিলেটিভিটি কয়জন খেতে পারে? চা-পাতা কিংবা কফি পাউডার পাওয়া যায় বাসার পাশের মুদি দোকানটাতেই, কিন্তু সেই দোকানে পাওয়া যায় না জেনারেল রিলেটিভিটি। ইউটিউবে চা-কফি বানানোর টিউটোরিয়ালের অভাব নেই, নানা ধরণের রেসিপির বইয়ের অভাব নেই, কিন্তু একদম ফিল করা পর্যায়ে জেনারেল রিলেটিভিটি বোঝাতে পারে এমন ভিডিও কিংবা বই কয়টা আছে? আর সেই রিসোর্স বাংলা ভাষায় খুঁজতে যাওয়াটা তো রীতিমতো বিলাসিতা! সম্ভবত আমাদের সেই বিলাসী জীবনটা দেওয়ার জন্যই নাঈম হোসেন ফারুকী স্যারের এই অব্যর্থ প্রয়াস, ‘চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি’।
হ্যারি পটারে মাগলদের জগত থেকে যাদুর জগতে যেতে হলে পৌনে দশ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে হতো। আর পদার্থবিজ্ঞানের অপরিসীম সুন্দর জগতে পা রাখতে চাইলে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটির মধ্যে। এটা সেই জগত, যেখানে সময়ও স্থানের তিনটা মাত্রার মতো একটা মাত্রা। এটা সেই জগত, যেখানে ব্ল্যাকহোলোর খুব কাছাকাছি গিয়ে এক সেকেন্ড কাটিয়ে আসলে পৃথিবীতে পার হয়ে যাবে হাজার হাজার বছর। এটা সেই জগত, যেখানে স্থান বা জায়গা একটা ফিজিক্যাল বস্তু, যেটাকে আবার ছোটবড়ও করা যায়। এই জগতে এমন সব ঘটনা ঘটে, যা সাধারণ মানব মস্তিষ্ক কল্পনাও করতে পারে না। এইসব ঘটনা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
ক্লাস ৩-৪ থেকেই আমি বিভিন্ন কারণে ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকি, যদিও তখন তেমন কিছুই বুঝতাম না। আস্তে আস্তে সময় যেতে থাকে, আমার এই আগ্রহ কমার বদলে উল্টো আরও বাড়তে থাকে। খুব সম্ভবত ক্লাস ৮ এ এসে প্রথমবার স্পেশাল রিলেটিভিটির সাথে পরিচিত হই। মোটামুটি বেশ কয়েকটা ভিডিও দেখে + লেখা পড়ে জিনিসটা ভালোমতো ফিলও করতে পারি। তারপর আস্তে আস্তে শুরু হয় রিলেটিভিস্টিক পড়াশোনা। এক পর্যায়ে এসে যখন দেখলাম জেনারেল রিলেটিভিটি মানেই জটিল সব সমীকরণ, গ্রাফ আর অদ্ভুত কিছু চিহ্নের খেলা, তখনই আস্তে আস্তে আবার আমার আগ্রহে ভাটা পড়তে থাকে। হয়তো এগুলো আমার জন্য না।তারপরই একদিন বিসিবির অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে প্রথমবারের মতো ‘চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি’র নাম দেখলাম। প্রথমে তেমন গুরুত্ব না দিলেও আস্তে আস্তে এই বইয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন রিভিউ ইত্যাদি দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, যে আমার এই বই-ই লাগবে (উল্লেখ্য, বইটা কেনার সময় আমার সরাসারি লেখকের বাসায় যাওয়ার ও উনার সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিলো)। আর এটাই হয়তো আমার জীবনের অন্যতম একটা সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো। এতদিন ভাবতাম আমি বোধ হয় স্পেশাল রিলেটিভিটির সবকিছু বুঝি, কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আগে ভাবতাম E=mc² শুধু ভর ও শক্তির একটা সম্পর্ক নির্দেশ করে। কিন্তু এই ছোট্ট একটা সমীকরণ নিয়েও যে জানার মতো এত কিছু থাকতে পারে, এই বইটা না পড়লে হয়তো বুঝতামই না। একটা সময় ভাবতাম আলোর বেগ 299792458 m/s, ধ্রুব বেগ। কিন্তু আলোর বেগ যে এর চেয়েও বেশি হতে পারে, সেটাও জেনেছি এই বইয়ের সাহায্যে জেনারেল রিলেটিভিটিতে পদার্পণের পরেই। এত বেসিক নলেজ নিয়ে এত সহজভাবেও যে জেনারেল রিলেটিভিটি ফিল করা যায়, তার এক প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই ‘চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি’। বাংলা ভাষায় এইরকম বই আর দ্বিতীয়টা নেই। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই যুগান্তকারী জিনিস উপহার দেওয়ার জন্য। আর ধন্যবাদ বক্কর ভাই, লক্কর ভাই, বক্রিনা আপু আর সেই বিজ্ঞানী ভেড়াকে, যারা পুরো বই জুড়ে এই রোমাঞ্চকর জার্নিতে আমাদের পাশে ছিলো।
কী বললেন? আপনি বইটা শুরু করার কথা ভাবছেন? মানে এখনও ‘ভাবছেন’? ব্যাপার না, আমিও এই ভুল করেছিলাম। বইটা হাতে পাওয়ার পর রিগ্রেট করেছি যে কেন আরও আগে এই বইটা কিনিনি।
কী? আপনি মাত্র ক্লাস নাইনে পড়েন? হায় হায়, এত জটিল জটিল সব জিনিস, জটিল জটিল সব সমীকরণ তো তাহলে আপনার মাথার উপর দিয়ে যাবে। তাহলে এখন উপায়? দাঁড়ান, এই বই আপনার জন্যই লেখা হয়েছে। এটা পড়ার জন্য আপনার রকেট সায়েন্স জানা লাগবে না, নাইন-টেনের বেসিক ফিজিক্স-ম্যাথ আর হালকাপাতলা ক্যালকুলাস জানলেই যথেষ্ট।
কী? আপনি এখনও ফিজিক্স বই ধরেনওনি? চিন্তা নেই, এই বই আপনারই জন্য। এই বইয়ের সমীকরণগুলো বোঝার জন্য যতটুকু ফিজিক্স বা ম্যাথ জানা প্রয়োজন, সেটাও লেখক বইয়ের শুরুতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর কী লাগে! শুরু করে দিন আপনার জীবনের অন্যতম এক যাত্রা, যে যাত্রার শেষ না দেখে আপনি ফিরতে পারবেন না কিছুতেই - জেনারেল রিলেটিভিটি আপনাকে ব্ল্যাকহোলের মতো টেনে ধরে রাখবে। স্বাগতম!
ওপরের গানের পঙক্তিটা আমার সবচেয়ে পছন্দের সাইফাই এনিমে, স্টাইনস গেইট জিরো থেকে নেয়া। সিরিজটার মূলে হল টাইম মেশিন এবং টাইম ট্রাভেল।
আসলেই কী অতীত ভ্রমণ সম্ভব? সম্ভব হলে সেটা কীভাবে? আলোর গতির বেশিতে গেলে? স্পয়লার দিয়ে দিচ্ছি, এই বইয়ের শেষ চ্যাপ্টারে সত্যি সত্যি একটা টাইম মেশিনের সম্ভাবনার কথা ব্যাখা করা হয়েছে।
ওপরের গানের কথায় ফিরে যাই আবার৷ টাইম কী? স্পেস কী? এগুলোর অস্তিত্ব আমরা কীভাবে ব্যাখা করি? স্পেস কী আসলেই একটা বিশাল বড় স্টেজ যেখানে "ঘটনা" ঘটে? লেখক খুবই ধীরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন।
শুরু করেছেন "রাস্তা" নামের ভয়ানক গল্প দিয়ে। লেখনীর কারণেই বরং আরো বেশি গা ছমছমে লেগেছে। যাইহোক, গল্পটা মূলত একটা আগ্রহ তৈরীর জায়গা, যেখানে ব্ল্যাক হোলের দিকে সোজা গাড়ি চালিয়ে যেতে থাকলে কী কী অদ্ভুত বিষয় ঘটে তার হালকা ধারণা এবং মননে হাজারটা প্রশ্নের জন্ম দেয়াতে বাকি বইটা পড়তে সেই আগ্রহটা বজায় থাকে।
এরপর "এপিটাফ" চ্যাপ্টারটা আমার অনেক প্রিয়। জেনারেল রিলেটিভিটি যাদের গবেষণা ও সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সেইসব মহারথীদের হালকা ট্রিবিউট দেয়াটা বেশ পছন্দ করেছি।
"ফাউন্ডেশন" চ্যাপ্টারে উনি নিউটনিয়ান ফিজিক্স বা আরো স্পেসিফিকভাবে বলতে গেলে ক্লাসিকাল মেকানিক্স নিয়ে আলোচনা করার পর উনি দেখিয়েছেন কীভাবে সেগুলো ত্রিমাত্রিক এবং চতুর্মাত্রিকেও এপ্লাই করা যায়। মূলত৷ এখান থেকে হালকা আইডিয়া দেয়া শুরু।
এরপরেই শুরু হয় "স্পেশাল রিলেটিভিটি" অংশ। সময় কেন মাত্রা চ্যাপ্টারে অল্প একটু অংশে সময়ে মাত্রা হওয়ার পক্ষে কিছু কথা বলে স্পেশাল রিলেটিভিটিতে কীভাবে একের সাপেক্ষে অন্যের সময়ে পরিবর্তন আসে সেটা ব্যাখা করেছেন। রিলেটিভ সময় আর সত্যিকারের সময়ের মাঝে পার্থক্য কী সেটা বুঝেছি।
এখানে সম্ভবত সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিল এটা বোঝা যে আসলে সবাই বুড়ো হতে চায়। আপনি, আমি, আলো, সবাই। এই বুড়ো হতে চাওয়ার কারণ জানতে চ্যাপ্টারটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
"মেট্রিক সমীকরণ" চ্যাপ্টারটা কঠিন লেগেছে আমার কাছে তবে সেটার দায়ভার আমারই। অংক থেকে বহু বছর দূরে থাকার কুফল এটা৷ মূলত এখানে ব্যাখা করা কখন স্পেস ছোট হয়, সেটার সাপেক্ষে অবজার্ভার কী দেখেন, সেগুলো সম্পর্কিত বিশাল সমীকরণের মেলা।। মেট্রিক টেনসর মাথা আউলাঝাউলা করে দিয়েছিল। চাদরের মত বাকা স্পেসের যে ডায়াগ্রামটা আমরা সচরাচর দেখে থাকি তার ব্যাখা জানবেন এই চ্যাপ্টারে৷
উল্লেখ্য, বক্কর ভাই আর বক্রিনা আপুর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফার্মটা জোস লেগেছে। আপনি এই চ্যাপ্টার বুঝে থাকেন তাহলে তাদের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফার্মে আপনার বাড়ির ভেতরের কোথায় কী চান তার ডিটেইলস সহজেই বোঝাতে পারবেন।
"মহাকর্ষ" চ্যাপ্টারটা ছোট। কেন মহাকর্ষ কোনো বল নয়, কেনই বা আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷ এখানেও অনেক সমীকরণ ছিল তবে এগুলো সহজে বুঝতে পারা গেছে।
শেষ অধ্যায় "ব্ল্যাকহোল"। এখানে "মেইজ" নামে একটা গল্প আছে। গল্পটা খুব সুন্দর করে লেখা। মূলত, গল্পের মেইজের ভেতরে যত যাওয়া হয় মেইজ আর ফুরোয় না, চলতেই থাকে। এটার সাথে ব্ল্যাকহোলের সম্পর্ক কী? ব্ল্যাকহোলগুলো তৈরী কীভাবে হয়? ইভেন্ট হরাইজনে কী হয়? সেটা পার করলে কী হয়? ব্ল্যাকহোলের ভেতরের কর্ম, জ্ঞান, মুক্তি, নগ্নতা আর অনুশোচনা নামের পাচটা জায়গার নাম এমন কেন?
পুরো বইটাতে অসংখ্যা সমীকরণ আর গ্রাফ রয়েছে তা তো আগেই বলেছি। তাই বইটাকে সাধারণ পপ হিসেবে পড়তে গেলে বিপাকে পড়তে হবে৷ বইটা আমি পড়েছি দুসপ্তাহ লাগিয়ে৷ একটা একাডেমিক বই যেমন একবসায় পড়ে উঠলে কোনো লাভ হয় না,- বরং, একটু পড়ে একটু অনুশীলন গুলো খাতায় করে, একটু কনসেপচুয়াল প্রশ্ন সলভ করে আবার পরের সেকশনে যেতে হয়, এই বইটাও তাই। একবসায় পড়ে উঠে যাওয়ার সাজেশন দেবো না আমি। বরং দু'মাস লাগিয়ে পড়া যেতে পারে৷
লেখক নিজেও বইয়ে খানিক পর পর কিছু কুইজ ছুড়ে দিয়েছেন, কিছু ইকুয়েশন ছুড়ে দিয়েছেন সলভ করার জন্য। সেগুলো প্র্যাকটিস করে এগিয়ে যাওয়াটাই উচিত বলে আমি মনে করি।
বইটা আমি পুরোপুরি সমীকরণ সহ বুঝিনি। আবার সমীকরণ ছাড়া স্রেফ টেক্সট পড়ে গেলে আরো কিছু বোঝা যাবে না। আমার ভালোমতো না বোঝার কারণ আমি যথেষ্ট সময় দিইনি বইটায়। তবে হ্যা৷ যারা ইন্টারে বা ক্লাস ১১-১২ তে, কীংবা ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্স পড়ছে, তাদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি রেফারেন্স বই হিসেবে এই বইটা চমৎকার। বাংলা ভাষায় আক্ষরিক অর্থেই অদ্বিতীয়।
বইঃ চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি প্রথম খন্ড লেখকঃ Nayeem Hossain Faruque প্রকাশনীঃ প্রান্ত প্রকাশন প্রচ্ছদঃ Mehrab Siddique Sabit
বাংলা ভাষায় স্পেশাল রিলেটিভিটির টেক্সট বা সেমি টেক্সট বই আছে হাতেগোনা কয়েকটি।আর সেখানে জেনারেল রিলেটিভিটির বই (টেক্সট অর সেমি টেক্সট) থাকার চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব ছিলো যেহেতু এটার জন্য ম্যাথমেটিকাল নলেজ,ইন্টুইশনের প্রয়োজন স্বাভাবিক অর্থেই বেশি লাগবে।এরকম জটিল একটা বিষয় ক্লাস টেন বা ইন্টারের ছাত্রদের (ডিফারেন্সিয়াল অর ইন্ট্রিগাল ক্যালকুলাসের কিছু সূত্র ছাড়া ক্লাস নাইন টেনের স্টুডেন্টদের জন্য পড়া খুব কঠিন হবেনা)হাতের নাগালে আনার সাহস দেখিয়েছেন লেখক ফারুকী।আমার মতে সে কাজে অনেকখানি সফল।একদম শুরুতে "রাস্তা " নামক পরিচ্ছেদের মাধ্যমেই সে জাগিয়ে তুলেছে জেনারেল রিলেটিভিটির সমাধানের অত্যাশ্চর্য কিছু জিনিস যা কমন সেন্স পরিপন্থী একদম(নির্ভর করছে কমন সেন্সকে আপনি কিরূপ সঙ্গায়িত করছেন তার উপর)।এই লেখাটি পড়লেই ভিতরে এইসবের ব্যাখা জানার জন্য আপনি পড়তে প্রায় বাধ্যই হবেন একরকম। তবে হুট করে জেনারেল রিলেটিভিটিতে গেলে সেটা সবার জন্য বোধগম্য হবেনা সেটাই স্বাভাবিক। তাই আপেক্ষিকতা, স্থান, বেগ ত্বরণের মতো কিছু বিষয় দিয়ে সাজিয়েছেন তার "ফাউন্ডেশন"। আপনি জানেন এইসব বিধায় এগুলো এড়িয়ে যাওয়াটা বোকামি হবে।কারণ ইন্টারের বা মাধ্যমিক বইয়ে ত্বরণ,সত্যিকার ত্বরণ,আপেক্ষিক বেগ সম্পর্কে অনেক জিনিসই ক্লিয়ার করা নেই যা রিলেটিভিটি ফিল করার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করবে।এরপর লেখক গিয়েছেন স্পেশাল রিলেটিভিটি তে।সেখানে জানবেন সত্যিকার সময় (যে সময় সবার সাপেক্ষেই এক থাকে,বাকি বিস্তারিত জানতে বই পড়তে হবে)সত্যিকার দূরত্ব, লরেঞ্জ রূপান্তর, সময়কে কেন মাত্রা হিসেবে গন্য করি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।সবচেয়ে মজার জিনিস হলো ইন্টারে লরেঞ্জ রূপান্তর দিয়ে দৈর্ঘ্য সংকোচন, সময় সংকোচন পড়লেও লেখক এখানে লরেঞ্জ রূপান্তর ছাড়াও আরো ইন্টুইটিভ ভাবে এসব রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন লরেঞ্জ প্রদত্ত সমীকরণ ছাড়াই। কণাগুলোর ভর কোথা থেকে পায়,গতিশক্তির ভরে রূপান্তর, বস্তুদের গতিপথ সেদিকেই যায় যেদিকে তার বয়স সবচেয়ে বেশি বাড়ে এমন অনেক সুন্দর আর আপাতদৃষ্টিতে অস্বাভাবিক জিনিস নিয়ে স্পেশাল রিলেটিভিটিতে আলোচনা করা হয়েছে।ওহ আসল কথাই বলতে ভুলে গেছি এ বইয়ে টুইন প্যারাডক্সের ব্যাখা খুব স্পষ্ট ভাবে পেয়েছি।বলতে দ্বিধা নেই কিছু কিছু জিনিস আগে জানতাম না বলে এই প্যারাডক্সের রিয়েল ব্যাখা বোঝা সম্ভব হয়নি তখন।এরপরে লেখক জেনারেল রিলেটিভিটিতে সবে পাড়া দিয়েছেন।সেখানে মেট্রিক সমীকরণ শিখিয়েছেন প্রথমে।এরপর স্পেস টাইম চাদর নিয়ে কথা বলেছেন।একটা জিনিস আগে অনেকেই আমরা ভুল জানি।স্পেস আসলে বাঁকে না।আসলে সেটা বড় হয়।বাঁকা জাস্ট সুবিধার জন্য ধরা হয়।এরপরে মেট্রিক টেন্সর,পোলার কো অর্ডিনেট সিস্টেম শিখিয়েছেন যা জেনারেল রিলেটিভিটির জন্য অত্যাবশ্যক। এরপরে আলোচনা করেছেন মহাকর্ষ নিয়ে।প্রথমে নিউটনিয়ান মহাকর্ষ আর প��ে রিলে���িভিস্টিক মহাকর্ষ নিয়ে আলোচনা করেছেন।বুঝিয়েছেন মহাকর্ষ সবাইকেই সমান ত্বরণ দেয় আর যে এই কাজ করে সে কখনো কোন বল হতে পারে না।এরপর জিওডেসিক পথ (যে পথে বস্তু অন্য বস্তুর দিকে আকর্ষিত হয়)নিয়ে আলোচনা রয়েছে।আর এদের শোভা বহুগুণে বেড়ে যায় যখন পপ পড়ার পরিবর্তে আপনি সমীকরণ সহ এদের বুঝেন।তখন বোঝা যায় এক্সাক্টলি কিভাবে জিনিসটা হয়,কিসের কিসের উপর তা নির্ভর করে আর নির্দিষ্ট বস্তুর ক্ষেত্রে তার আচরণই বা কিরূপ। এরপর ব্ল্যাকহোলে ঝাঁপ দিয়েছেন।শুরুটাই মজার কারণ নিউটনের ব্ল্যাকহোল থেকে যে আপনি পালাতে পারবেন!!মুক্তিবেগ আলোর চেয়ে ওখানে বেশি হলেও জেটপ্যাক লাগিয়ে অনবরত ত্বরণ দিয়ে বের হওয়া ব্যাপারই না।এখানেই জেনারেল রিলেটিভিটির প্রয়োজনীয়তা আসে!!যাই হোক ব্ল্যাকহোলের জন্ম থেকে শুরু করে শোয়ার্জচাইল্ড মেট্রিক, ঘটনা দিগন্তের আদ্যোপান্ত, কারের ঘুর্নায়মান ব্ল্যাকহোল সহ অনেক বিষয়ে গনিত সমৃদ্ধ উচ্চতর ব্যাখা দেয়া হয়েছে(এগুলো নিয়েও বিস্তারিত লিখতে পারতাম কিন্তু মনে হচ্ছে একটু বেশি স্পয়লার দিয়ে ফেলছি তাই বাকিটা জানতে হলে বইটাতে চোখ বুলাতে হবে)।পরিশেষে বলতে চাই বইটা পড়ার জন্য ম্যাথমেটিকাল নলেজ যা লাগবে তার চেয়ে বহুগুণ লাগবে চিন্তা করার ক্ষমতা। সবকিছু না বুঝে সামনে এগুলো আপনার কাছে দেখবেন পরস্পরবিরোধী লাগছে কিছু জিনিস।আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল কিন্তু পরে প্রোপারভাবে বুঝে আবার এগিয়েছি তাতে আর সমস্যা হয় নি।আর একটা জিনিস কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বইয়ের মতো এই বইয়ে বানান ভুলের সমস্যা গুরুতর হয়নি।আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বইয়ে গল্পের ছলে ব্যাখা করতে যেয়ে অনেক জায়গায়ই ব্যাখা তুলনামূলক কঠিন মনে হয়েছিল আমার কাছে।যেটা এবার নগন্য। বইটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখার মতো।তবে চা আর কফি খেতে খেতে বইটি পড়তে যাবেন না।আপনার চা ঠান্ডা হয়ে বরফ হয়ে যেতে পারে।
চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি লেখকঃ নাঈম হোসেন ফারুকী রেটিংঃ ৯/১০
শুরুতেই বলি, অনেক প্যাঁচানো ও কাটখোট্টা গণিতসহ রিলেটিভিটি পড়তেই ভয় লাগে।আবার সহজ করে বুঝানো লেখা পেলেতো জানার লোভ হবেই।লেখক এমন এমন গল্প দিয়ে বইয়ে ধরে রাখার প্রবণতা তৈরি করেছেন যে সহজে বিরক্তি আসবে না।লেখকের কল্পনার জগতে থাকা বিশিষ্ট বক্রিনা আপুর কথা না বললে নয়।তাছাড়া আক্কাস আলী,জসিম,স্যার আশিক স্যার,সায়েন্টিফিক মাইন্ডেড ভেড়া তো আছেই।
প্রকৃতঅর্থে চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ে লেখককে ভালোবেসে ফেলেছি।লেখার ধরনে অদ্ভুত মাদকতা আছে, যেমন কিছু গান আমার কাছে কখনো পুরনো হয় না। আমি যে লেভেলের ছাত্র তাতে বইটি একবার পড়ে সব রপ্ত করে ফেলেছি বা সব মনে রাখতে পারি এমন নয়।একসময় পরীক্ষা পাশের জন্য রিলেটিভিটি পড়ছিলাম। কিন্তু ফিল করার ক্ষেত্রে গিয়ে চরম হতাশ ছিলাম।বিশেষ করে দুটি কোর্সের কথা বলতেই হবে ১. কোয়ান্টাম মেকানিক্স ২.থিওরি অব রিলেটিভিটি। বড় বড় ইংরেজি বই পড়তে আমি অভ্যস্ত নই।খুব বিস্বাদ লাগে।আমার হতাশার লেভেল কিছুটা কমেছে এই দুটি বই পেয়ে। বাংলা ভাষায় যে কয়টা একাডেমিক ও পপুলার সায়েন্স এর বই পড়েছি তার মধ্যে বুঝে বুঝে বা চিন্তা করে পড়েছি নাঈম হোসেন ফারুকীর বই দুটি।এমনকি বই দুটি বুক সেল্ফ এ না থেকে সবসময় টেবিলে থাকে কারন আমি বেশি মনে রাখতে পারি না।আর এই দুটি বিষয় আমার খুব কঠিন লাগে।
এবার বইটির ধারাবাহিকতা নিয়ে বলবো।ধানমন্ডি এলাকার পুরনো বাড়িতে বসে ক্লাস টেন এর ছাত্র মডার্ন ফিজিক্সের বই পড়ছে আর কল্পনার জগতে ডুব দিয়েছে। এখান থেকে স্পেশাল রিলেটিভিটি শুরু যার জন্য দূরত্ব, সময়,বেগ ত্বরন যোগান দেওয়া হলো।তারপর খুব সুন্দর করে সত্যিকারের দূরত্ব ও সময় যা হজম করানোর জন্য স্পেস - টাইম ডায়াগ্রাম দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা প্রশংসনীয়।
মজার উদাহরণঃ আমরা যত দ্রুত চলি বেগের খরচ সময় অক্ষ থেকে সরে গিয়ে স্হানের দিকে হতে থাকে। সামনের রাস্তা ছোট হতে হতে '0' এর দিকে যায়।সময় বাঁচতে থাকে। একসময় আলোর বেগে চললে আমাদের কাছে দূরত্ব একেবারে '0' হয়ে যায়,সময় স্হির হয়ে যায়।আমরা হয়ে যাই চিরযৌবনা।
স্পেশাল রিলেটিভিটি শেষ করে জেনারেল রিলেটিভিটি শুরু করার জ্বালানি টেন্সর দিয়ে বইয়ের সূচনা করেছেন।সত্যি কথা বলতে ম্যাথমেথিক্যাল ফিজিক্স নামে একটি কোর্স পড়তে হয়েছিল ছাত্র অবস্থায়। এতে কমপ্লেক্স নাম্বার,বেসেল ফাংশন, লেজেন্ডারি ফাংশন, ফুরিয়ার সিরিজ, টেন্সর এর কিছু চ্যাপ্টার ছিল।এখানে টেন্সরের কথায় আসি - এটি কি খায় নাকি মাথায় দেয় এইটাইপের চিন্তা আসতো।শিক্ষক বাবাজিরা অংক করে দিয়ে খালাস।এর বাইরে যাবার তেমন সুযোগ ছিলনা।কিন্তু কিভাবে অংক প্র্যাকটিস করতে করতে পাশ করেছিলাম জানি না।টেন্সর আসলে এক প্রকার এ্যারে আর এর প্রতিটি সংখ্যা উপাংশ বুঝায়।আর রান্ক ১ টেন্সর, রান্ক ২ টেন্সর বা স্ট্রেস টেন্সর ভালোই ফিল করেছি।বিভিন্ন ডায়াগ্রাম, ম্যাপ আর ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে টেন্সর নিয়ে খেলা আসলেই খুব মজার।এই কথাটি মনে থাকবেই "মেট্রিক টেন্সর না জানলে পাপ হবে"।
আগের জানা চাঁদরের ধারণা পাল্টে গেছে ফারুকীর বইয়ের চাঁদরে ঢাকা পড়ে।
এবার আসি মহাকর্ষ বল নিয়ে।নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন ইলেকট্রিক বলের সাথে তুলনা করে।মহাকর্ষ ধ্রুবককে something else দিয়ে বুঝানো আর বিপরীত বর্গীয় নিয়ম বুঝাতে গিয়ে গোলকের চিত্র দিয়েছেন যা এককথায় অসাধারণ। আরো মজার হলো জিওডেসিক যা আপেল পড়েনা, পৃথিবী গিয়ে আপেলকে ধরে যা আমার কাছে একেবারে নতুন ছিল। যাক শেষের দিকে বড় বড় গাণিতিক সমীকরণ দেখে পালিয়ে গিয়েছি কয়েকবার বই ছেড়ে। আবার শুরু করেছি। আসলে গণিত ছাড়া রিলেটিভিটি বুঝানো সম্ভব কিনা জানিনা। নিজের অজ্ঞতাটা জানি যে গণিতকে গণিতের মতো বুঝিনা। বইটি যারা নবম দশম শ্রেণির স্টুডেন্ট তাদের জন্য বেশি একটা বুঝার লেভেলের হবে মনে হয় না।তারপরও তাদের উদ্দেশ্যে বলি বইটি বার বার পড়ো,কনফিউশান হলে আবার পড়ো আর নিজের গাণিতিক লেভেলটি শুধু সমস্যা সমাধানে পড়ে না থেকে ফিল করা লেভেলে নিয়ে যাও।কথাগুলো যে জন্য বলছি ছোটরা বইটি পড়লে বুঝবে কিনা আমার কাছে জানতে চেয়েছো।
বাংলা ভাষায় এই ধরনের লেখক সংখ্যা ও বই আরো বেশি হওয়া উচিত।আসলে নিজের ভাষায় পড়তে পারার মধ্যে একপ্রকার শান্তি আছে। অন্যের ভাষায় পড়া মানে একপ্রকার যুদ্ধ করা।
যেভাবে ধারাবাহিকতা নিয়ে আর গণিত ও ডায়াগ্রামের সমন্বয়ে বইটিকে পাঠক আকৃষ্ট করেছেন এবং অক্লান্ত যে পরিশ্রম দিয়ে বইটি লিখেছেন তার জন্য লেখককে লাল সালাম ও ভালোবাসা।
বুক রিভিউ বই: চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি (প্রথম খণ্ড) লেখক: নাঈম হোসেন ফারুকী রেটিং:১০/১০
আপেক্ষিকতা শব্দটির সাথে আমার পরিচয় হয় ক্লাস নাইনে থাকতে। যদিওবা তখন বুঝতামনা এটি আসলে কি মিন করে। সবাই বলতো সব কিছুই আপেক্ষিক। কোনো কিছুই পরম না। এইভাবে ধীরে ধীরে কলেজে ওঠার পর আশেপাশের বদৌলতে আরও কিছু উদ্ভট জিনিস কণ্ঠস্থ করে ফেললাম। যেমন আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে গেলে ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। স্পেস টাইমের চাদর নামে একটা জিনিস টানানো আছে। সেই চাদর ��ারণে অকারণে বেকে যায় ব্লা ব্লা। মোটকথা আপেক্ষিকতা সঠিকভাবে জানার ও বোঝার কোনো উপায়ই ছিলোনা। সাথে নিজেরও অনেক দোষ ছিলো। যাইহোক এবার বইয়ের কথায় আসি।
আমি সাধারণত কোনো মোটিভেশনাল স্পিচ শুনি না বা পড়ি না। কারণ আমি মনে করি কারো দেওয়া মোটিভেশন কোনো কাজেই লাগে না যতক্ষণ না নিজে থেকেই মোটিভেট হওয়া যায়। যাইহোক এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বইয়ের ভূমিকা পড়ার সময় আমার সাথে যেটা ঘটেছিল সেটা হচ্ছে প্রতিটা লাইনে লাইনে আমি না চাইতেও ভীষণভাবে মোটিভেট হচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা একটা মানুষের স্বপ্নের নগরী যেনো কিছুসময় পরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। নিজের স্বপ্নের বীজগুলো মাটিচাপা দিয়ে এক সমুদ্র না পাওয়ার বেদনায় দিন যেতে থাকে তার। তারপর কোনো একদিন ধীরে ধীরে সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে সপ্নের চারাগাছগুলো মাথা তুলে তাকে ডাকতে থাকে। ফিরিয়ে নেয় তার রাজ্যে। তার অনেক কিছু না পাওয়ার বেদনা যেনো কিছুটা সময়ের জন্য ভুলিয়ে দেয় তারা। তার গল্প শুনে ভীষন ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি আর কেউ না,,,আমাদের প্রিয় নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়া।
বইয়ের কাহিনী শুরু হয়েছে রাস্তা নামের গল্পটা দিয়ে। রিলেটিভিটির ছোটখাটো একটা ঝলক দেওয়া হয়েছে এখানে। এরপর আছে এপিটাফ (RIP)। আছে মিলিয়ন ডলার চ্যালেঞ্জ। প্রমাণ করো,,, ডলার জিত। কখনো কি ভেবে দেখেছেন স্পেস আসলে কি? সময় কি এবং এটা কিভাবেই বা চতুর্মাত্রিক? সত্যিই কি সব আপেক্ষিক? নাকি পরম বলেও কিছু আছে? আপেল মাটিতে পড়ে নাকি মাটি উঠে এসে আপেল ধরে? আলোর চেয়ে বেশি বেগ কি পসিবল? সত্যিকরের সময় আর দূরত্ব কি? ds আর dτ ই বা কি মিন করে? কেনো এগুলা সবার জন্য সমান? এর সব ব্যাখ্যা পাবেন এই বইয়ে। বেগ বৃদ্ধি পেলে কিভাবে সময় ধীরে চলে, স্পেস ছোটো হয়ে যায় একেবারে ধরে ধরে বোঝানো হয়েছে এখানে। বেগ যোগের ক্লাসিক্যাল সূত্র কিভাবে ফেল মারে, নতুন সূত্রই বা কি সব A টু Z দেখানো হয়েছে। এরপর আছে স্পেস টাইম ডায়াগ্রাম পার্ট। এখানে পুরোটাই গ্রাফের ছড়াছড়ি। যখন যেটা লাগে লেখক তার সর্বোচ্চ দিয়ে গেছেন এইসব জিনিস তৈরি করতে। অনার্সের টেক্সট বই পড়াকালীন সময়ে ওয়ার্ল্ড লাইন, LOS এইগুলো মাথার উপর দিয়ে যেত। কিন্তু এই বইয়ের বদৌলতে এখন অনেক ক্লিয়ার হয়ে গেছে। স্পেস আসলে চাদরের মতো বাকে না। ছোট বড় হয়। এরপর বইয়ে কিছু বেসিক জিনিস আছে যেগুলো জেনারেল রিলেটিভিটি এর বেস হিসাবে কাজ করেছে। যেমন টেনসর, মেট্রিক টেনসর, টেনসরের প্র্যাক্টিস, পোলার কো অরডিনেট সিস্টেম ইত্যাদি। এর পরের টপিক মহাকর্ষ নিয়ে। প্রথমে বোঝানো হয়েছে ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স অনুযায়ী মহাকর্ষ কেনো বল। তারপর দেখানো হয়েছে বল ধরলে আসলে কি সমস্যা হয়। কেনো এটি বল না? পৃথিবীর দুই পাশ থেকে একসাথে আপেল পড়লে পৃথিবীকে সমত্বরণে ফুলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু কি হয়? ব্যাখ্যা পেতে আপনাকে বইটি পড়তে হবে। কেনো সবাই বুড়ো হতে চায়? জিওডেসিক কি কেনো খুব সুন্দরভাবে বোঝানো হয়েছে এখানে। আমরা রিলেটিভিটি পারি আর নাই পারি তবে একটা জিনিস নিয়ে প্রচুর আগ্রহ সবার। আর সেই জিনিসটা হলো ব্ল্যাক হোল। ইউটিউব দেখে দেখে এটা সম্মন্ধে অনেকেরই অনেক পপ ধারণা আছে। ব্ল্যাকহোলের মধ্যে কি ঘটে? এর ভিতর পরে গেলে কি অতীত দেখতে পাবো? ইভেন্ট হরাইজনের এপাশে ওপাশে কি ঘটে? ব্লাকহোলে পড়লে কি মারা যাবো? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যদি বাস্তবিক অর্থেই এগুলা ফিল করতে চান তবে আমি বলবো চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি বইটা আপনার জন্যেই (যদিনা আপনার ম্যাথ, ইকুয়েশনে অ্যালার্জি না থাকে)। এছাড়াও নিজের জ্ঞানকে ঝালাই করার জন্য বইয়ে আছে অনেক প্রশ্ন আর কুইজ। লেখকের এই শেখানোর চেষ্টাকে আমার লাল সালাম।
আরও অনেক কিছু বলা যেতো এই বই সম্পর্কে। তবে যাই বলি না কেনো সেটাও অনেক কম হয়ে যাবে। আমি বইটা কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া সকল ছেলে মেয়েদের জন্য রেকমেন্ড করবো। বাংলায় এমন একটা বই পাওয়া আসলেই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। মেবি জেনারেল রিলেটিভিটির উপর বাংলায় লেখা এটিই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বই। সামনে আশা করবো লেখক আমাদেরকে তার আরো ভালো ভালো ডায়েরি পড়ার সুযোগ করে দিবেন। ভালো থাকুক লেখক। ভালো থাকুক পাঠকগণ।
বুক রিভিউ। বইয়ের নামঃচা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি। লেখকঃনাঈম হোসেন ফারুকি। রেটিং পয়েন্টঃ৪.৪৪। ক্যাটাগরিঃপদার্থবিজ্ঞান। আমাদের ইন্টারমিডিয়েট এর পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান নামে একটা অধ্যায় আছে।যেখানে আপেক্ষিক তত্ত্ব,গ্যালিলিয়ান রুপান্তর,লরেন্টজ রুপান্তর,আপেক্ষিক তত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়া আলোচনা করা আছে।এখন, আমি বলবো না যে, আমাদের পাঠ্য বই গুলো খারাপ।এগুলা ও ভালো,তবে এসব বই পড়ে শুধু গাণিতিক সমস্যা গুলো সমাধান করা যায় ঠিক তবে বিষয় গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করা যায় না মন।থেকে উপলব্ধি করা যায় না,কোন জিনিসটা দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে, সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায় না ।সেক্ষেত্র চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি বই পরে আমি অনেকটাই জিনিসগুলার আসল অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়েছি।এগুলা দ্বারা কি বুঝানো হয় সেটা বুঝতে পেরেছি। সমীকরণ গুলো অর্থ,কোন সমীকরন কি মিন করে এসব বিষয়। প্রথমত এটাই আমার ভালো লাগার কারন বই টি। যাক এবার আসা যাক বইয়ের কথায়। বইটিতে আপনি পাবেন একদম বেসিক থেকে শুরু করে জটিল জটিল সমস্যা গুলো পর্যন্ত একদম ই সুন্দর এবং গল্পের মাধ্যমে চমৎকার উপস্থাপনা।সেখানে আপনি গল্পের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপেক্ষিকতা,স্থান,সময়,বেগ,ত্বরণ, ভেক্টর মাত্রা সম্পর্কিত যত সব কিউট কিউট ধারনা। আর ও আছে কিউট কিউট কিছু সমীকরন।তাছাড়া ও আপনি গল্পের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারবেন সত্যিকার এর সময়,দৈর্ঘ্য সংকোচন, আপেক্ষিক বেগ,স্পেস টাইম দূরত্ব,ভর,ভর- বেগ আর শক্তি সম্পর্কিত ধারনা।এখানে সবচেয়ে মজার একটা ব্যাপার হলো যে,সবাই কি বুড়ো হতে চায়!এই ব্যাপারটা।(ব্যাপারটি জানতে হলে পড়ে আসুন এই বই টি😎) এই তো গেলো স্পেশাল রিলেটিভিটি এর ব্যাপার,, এসব বিষয় ক্লিয়ার করার আপনি ঢুকে যাবেন কোন এক অচেনা রাজ্যে,হয়তো এটাই আপনার প্রথম বিচরণ সেখানে বা আগেও বিচরণ করেছেন তবে তেমন ভালোভাবে ফিল করতে পারেন নাই ব্যাপার গুলো।তবে এটা পড়ার মাধ্যমে আপনি ফিল করতে পারবেন ব্যাপার গুলা। আপনাকে স্বাগতম নতুন দুনিয়ায়। এখানে আপনি পাবেন স্পেস-টাইম চাদর(যেটা আমরা শুনে থাকি বাট বুঝি না হয়তো বুঝি ও বাট ফিল করা হয় না।)টেনসর,,মেট্রিক টেনসর,, পোলার কো-অর্ডিনেট সিস্টেম,(এই পোলা ছেলে না,,জানতে হলে পড়ে আসুন চা কফি জেনারেল রিলেটিভিটি)। অহ, হ্যা, এখানেও আপনি পাবেন অনেকগুলো ডাবল কিউট সমীকরণ ,,,, তারপরর আপনি চলে যাবেন মহাবিশ্ব এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা ধারনা মহাকর্ষে।সেখানে পাবেন মহাকর্ষ সম্পর্কিত নানান ধারনা ও সমীকরণ সমূহ।এভাবে আপনি আগতে থাকবে অচেনা জগতে।আর উপভোগ করতে থাকবে অচেনা জগতের নতুন রোমাঞ্চকর পরিবেশ। ,,, তারপর আপনাকে পালকিতে কিরে নিয়ে যাওয়া হবে ব্লাকহোলে।ভাবছে সেখানে নিয়ে আপনাকে ফেলে দেওয়া হবে!না, এমনটা মোটেও না। আপনাকে দেওয়া হবে ব্লাকহোল সম্পর্কিত ধারনা,,নীতি,,প্রয়োজনীয় সমীকরণ। তাছাড়া ও আপনি জানবেন সেখানে ব্লাকহোলের জন্ম,, শোয়ার্জচাইল্ড মেট্রিক,ঘটনা দিগন্তের এপাশে,আইনস্টাইন এর -রোজেন ব্রিজ থেকে ও ঘুরে আসবেন. এক কথায় বই টি তে আপনি পাবেন এক অসাধারণ ত��প্তি।😊😊আপনি সত্যিই উপভোগ করবেন বই টি।তো আর দেরি কিসের এখনি অর্ডার করে ফেলুন বই টি। অর্ডার এর লিংকঃCha Coffee Ar General Relativity By : Nayeem Hossain Faruque Sell Price: 550Tk. Discount: 25 % Link: https://www.rokomari.com/book/223669 (বিঃদ্রঃরিভিউ লিখার অভিজ্ঞতা নাই বললেই চলে,,আগে একবার সায়েনভেঞ্চার নিয়া লিখেছিলাম, আর এই একবার,,যদিও পারি নি ভালো ভাবে,,তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।কোন ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমাপ্রার্থী।😊😊)
This entire review has been hidden because of spoilers.
বই: চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি(১ম খন্ড) লেখক: নাঈম হোসেন ফারুকী। মূল্য:৫৫০৳ রেটিং:৯.৭/১০ মন্তব্য: অসম্ভব সুন্দর একটা বই।
আপেক্ষিকতা নিয়ে আমার তেমন কোনো জানাশোনা ছিল না। তাই আগ্রহ টাও ছিল তুঙ্গে। আমার বিশ্বাস, এই বইটি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া হয় তাহলে আপেক্ষিকতা নিয়ে আপনার কনসেপ্ট ভালোভাবেই ক্লিয়ার হয়ে যাবে। বইটি দেখে কেউ পপ সায়েন্স ভাবলে চরম ভুল করবেন। বইটির ১ম কিস্তিতে একেবারে বেসিক লেভেল থেকে প্রো লেভেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লেখকের মতে, ৯-১০ এর পদার্থ বিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত পারলেই বইটির ৮০% বোঝা সম্ভব। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, বইটি এমনভাবে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে যে ৯-১০ এর জ্ঞান দিয়ে ৯০% বোঝা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন চেষ্টা আর মনোযোগ। তবে ভেক্টর, ক্যালকুলাস জানা থাকলে সোনায় সোহাগা। বইটির অর্ধেক পৃষ্ঠা জুড়ে শুধু স্পেশাল রিলেটিভিটির আলোচনা করা হয়েছে। তারপরে আস্তে আস্তে জেনারেল রিলেটিভিটির ভেতর ডুব দেওয়া হয়েছে। জেনারেল রিলেটিভিটির শুরুতেই মেট্রিক টেন্সর আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনার আগে এই টপিক পড়া থাকে আমি বলব আবার পড়ুন। সম্পূর্ন টপিকটি নতুন করে ফিল করতে পারবেন। আর যাদের টেন্সর নিয়ে জানাশোনা নেই তাদের জন্য আরো ভালো। টেনসর এর বেসিকটা পুরো ক্লিয়ার করা আছে। আর, বইটির প্রত্যেক গ্রাফ ভালো করে দেখে, বুঝে পড়বেন। এই গ্রাফ গুলো ধরতে পারলে আপনি ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠতে বাধ্য হবেন। বইটি এত সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেন, চোখের সামনে সবকিছু দেখতে পারবেন। বইটির সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশ হল গ্রাফ। প্রতিটি গ্রাফ যেন একেকটা রহস্য ঘেরা অ্যাডভেঞ্চার। আমার কাছে গ্রফগুলো অসাধারণ লেগেছে। এখন আসি বইয়ের কিছু ত্রুটির কথায়। বইটিতে আহামরি খুব বেশি ভুল নেই। বানান, একই শব্দ দুবার- এরকম কিছু ক্ষুদ্র ত্রুটি আছে।তবে কিছু জায়গায় এমন ভূল আছে সেটা যদি পাঠক ধরতে পারে তবে বুঝতে পারবেন , আপনি আসলেই রিলেটিভিটি বুঝতে পারছেন। এজন্য এই ভুল গুলোকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আর অমনোযোগী পাঠক সেটা এড়িয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। পাঠকদের প্রতি বইটির ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার আমন্ত্রণ রইল।
সবশেষে বলব, বাংলা ভাষায় লেখা এরকম বই আপনি সম্ভবত আর কখনোই পাবেন না। যেখানে রিলেটিভিটির মত জিনিসকে গল্প দিয়ে ডাল ভাতের মত সোজা করে বোঝানো হয়েছে। বইটি ৯-১০ শ্রেণীর পাঠকদের জন্য অবশ্যই উপযোগী। এটা পড়লে আপনার একাডেমিক পড়াশোনায়ও অনেক খানি কাজে লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। বইটি পড়ার পরে দেখবেন, এতদিন ধরে আপনার জানা অনেক কিছুই আসলে ভুল ছিল। মহাকর্ষ নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে শিখবেন। বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য অসম্ভব রকমের সুন্দর বই। বইয়ের ২য় খন্ডে অপেক্ষা করছে আরো আরো সব চমকপ্রদ বিষয়। লেখকের প্রতি দুটি কথা, যখন বইটি পড়েছি হয়ত একবার পড়েই কোন টপিক বুঝিনি। কিন্তু যখনই বুঝতে পারতাম, এত্ত আনন্দ লাগত বলে বোঝানো অসম্ভব। এত এত জটিল বিষয় গুলোকে সহজে গ্রাফ দিয়ে বোঝানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ । ২য় কিস্তির জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে আপনার একজন অধম পাঠক।
বইয়ের নাম: চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি লেখক : নাঈম হোসেন ফারুকী পার্সোনাল রেটিং:lim (x^2 - 5^2)/x-5 x→5
‘মানুষ মাত্রই মিথ্যাবাদী।বেশিরভাগ মানুষ খোদ নিজের সাথেই সৎ থাকতে পারে না।’ আপনাকে প্রতিনিয়ত মিথ্যে বলা হচ্ছে।আপনিও আপনার আশেপাশের মানুষকে মিথ্যে বলছেন।টেবিলের উপর পড়ে থাকা আপনার ধুলোবালি জমা ফিজিক্স বইয়ের মহাকর্ষের অধ্যায়টা আপনাকে মিথ্যে বলছে।আপনার প্রিয় পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীকে মিথ্যে বলছেন।আপনার শখের বুক শেলফে সাজিয়ে রাখা রিলেটিভিটির জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বইগুলো আপনাকে মিথ্যে বলছে।এভাবে আর কতদিন ঠকবেন?সত্যটা আপনাকে জানতেই হবে। আপনাকে হাতে নিতে হবে নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়ার লেখা ‘চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি খণ্ড ১'।মাকড়শার জালে তার প্রিয় শিকার যেমনভাবে আটকে যায় মিথ্যের জালে আপনিও সেভাবে আটকে গেছেন। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন মহাকর্ষ একটা বল। মহাকর্ষকে বল হিসেবে মেনে নিয়ে পরীক্ষার খাতায় অঙ্ক কষে এসেছেন। ফলাফল ঠিক হয়েছে। নম্বরও পেয়েছেন।কিন্তু যখন জনপ্রিয় বিজ্ঞানের কোনো বই হাতে নিলেন তখন জানতে পারলেন মহাকর্ষ কোনো বল নয়; এটা হচ্ছে স্থানকালের বক্রতা।একবার ভেবে দেখুন তো মহাকর্ষ যদি বল না হয় তাহলে সেটা কী? স্থানকালের চাঁদরের মতো বেঁকে যাওয়া,ভারি নক্ষত্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আলোর বেঁকে যাওয়া,এইসব বিমূর্ত কথা আসলে ঠিক কী বোঝায়?মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে টুকটাক পড়ে আপনার রক্তে শিহরণ জেগেছে। কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার সাপেক্ষে সত্যিকারের কোনো ব্ল্যাকহোল আছে?আপনি কি আসলেই শিওর যে আলোর বেগ কখনো কারো সাপেক্ষে কমে না বাড়ে না?আপনি আপনার মোটাসোটা ভালো মানুষ বন্ধুটাকে অলস,গতিহীন মনে করেন?কিন্তু আপনি কি জানেন যে সেও আপনার মতোই আলোর বেগে চলছে? সবাই আপনাকে মিথ্যে বলছে!আমি আপনাকে সব সত্যি জানাতে পারবো না।মানুষ হওয়ার কারণে আমিও মিথ্যেবাদী!মহাপাপী!জেনারেল রিলেটিভিটির সত্যের সাধণার শুরু করতে হলে আপনাকে এই বইটা হাতে নিতেই হবে।এটা কি পপ সায়েন্সের বই? না।এখানে গ্রাফ আছে,ডায়াগ্রাম আছে,সমীকরণ আছে,সমীকরণের প্রতিপাদন আছে,ব্যাখ্যা আছে প্রত্যেকটা টপিকের।তাই বলে এটা কি নিরস টেক্সটবুক?না!এই বইটা একবার ধরলে আপনি হাড়ে হাড়ে টের পাবেন বশীকরণ কাকে বলে। লেখকের লেখার ধরণ এতটাই সম্মোহনী যে বইটা ছেড়ে উঠতে পারবেন না।আপনি আপনার রেফারেন্স ফ্রেমে বসে বইটা পড়তে থাকবেন।আপনার বন্ধু তখন তার রেফারেন্স ফ্রেমে বসে বিয়ের প্ল্যান করবে,কেউ কেউ নাচবে,গাইবে।আপনার এসব দেখার দরকার নেই। আপনি বশীভূত হতে ইচ্ছুক হন। একজন সত্যান্বেষী তপস্বীর হাতে বশীভূত হওয়ার মাঝে আনন্দ আছে।মনে রাখবেন এই লোকটাই অন্যরকম।তিনি আপনাকে বশীভূত করবেন।কিন্তু আপনার চিন্তাশক্তি কেড়ে নেবেন না মোটেও।চিন্তা করাকে ভালোবাসেন? নাইন টেনের ম্যাথ ফিজিক্স ক্লিয়ার আছে? হালকা পাতলা ক্যালকুলাস জানেন?( না জানলেও তেমন ক্ষতি নেই।) বইটা হাতে নিন।নিজেকে ঠকানো বন্ধ করুন।ভালো থাকুন।
Book : CCGR1 Writer : Nayeem Hossain Faruque Personal Rating: 9/10
স্টিফেন হকিংয়ের 'ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম' বইটা পড়ার পর থেকেই আর দশটা বাচ্চার মত আমারও কোয়ান্টাম মেকানিক্স আ��� জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছা ছিল হকিং, আইনস্টাইন যেখানে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেখানে সফল হব আমি। ইচ্ছা ছিল ফিজিক্স নিয়ে পড়ে এই জঘন্য দুনিয়া ছেড়ে, একটা মাল্টিভার্সে যাব , যেখানে কেউ চেনে না আমাকে। কল্পনা আর বাস্তবতার চাপে একটা ইচ্ছাও পূরণ হয় নাই। নিজের ভেতরের সেই আগের প্যাশনটাও মারা গিয়েছে। ব্রেনও আর আগের মত শার্প নাই। যাইহোক বুড়া মানুষদের মতো এক কথা বলতে যে আরেক কথা বলে যাচ্ছি। আমার ব্রেনটাও বুড়া হয়ে গেছে যদিও বয়সের দিক দিয়ে আমি এখনো বাচ্চাই আছি 😅।
পপ সাইন্স থেকে জন্ম নেওয়া ফিজিক্সের প্যাশনের জন্য হার্টলের Gravity এর বইটার pdf নামাইসিলাম। হেহে বাকিটা ইতিহাস।
অন্য টেক্সটবুক লেভেলের জিনিসের সাথে CCGR1 এর সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল এটার রাইটিং স্টাইল আর টোন। বইটার কমিকবুক ইনফ্লুয়েন্সড কভার দেখলেই জিনিসটা আন্দাজ করতে পারবেন। আনলাইক রেগুলার টেক্সটবুক, এটার টোন থেকে শুরু করে কোনটাই আনওয়েলকামিং না। হার্টলের বইটার পেজ উল্টানোর পরই যেমন ডিলিট করতে মন চাইসিল, এই বইয়ে সেটা একদমই মনে হয়নাই। উল্টা মনে হয়েছিল আমি পারবো আমাকে দিয়ে হবে। GR অন্য দুনিয়ার কিছু না এই দুনিয়ারই জিনিস।
আর লেখকের লেখার স্টাইল দেখে মনে হয়েছিল লেখক এক রকম বলতে চাচ্ছেন যে, "তুমি যেই হও না কেন, তোমার মাথায় যত গোবরই থাকুক না, তুমি যত বড় অপদার্থই হওনা কেন, একটু সময় দিলে তোমাকে আমি এটা বোঝায়েই ছাড়বো"। ইভেন সিম্পল বিষয় বোঝানোর জন্যও উনি যেই পরিমাণ গল্প, ডায়াগ্রাম আর এক্সাম্পল ইউজ করেছেন its just beyond human. লেখক বইয়ের ভেতরে যেই মানুষটা হতে চেয়েছিলেন, বইয়ের বাইরেও সেম মানুষটাই হয়ে দেখিয়েছেন। ইভেন কোন কিছু না বুঝলে ওনাকে নক দিয়ে আমি অলমোস্ট ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাই পেয়েছি। CCGR1 বেসিকালি আমার মত মানুষদের জন্যই লেখা, যারা মানুষ হিসেবে তুচ্ছ হবার পরও মাল্টিভার্স ছোঁয়ার সপ্ন দেখে। ইভেন লেখক নিজেও নন-ফিজিক্স ব্যাকগ্রাউন্দের হবার পরও , একটা ফুলটাইম জব করার পরও GR এর মত কম্প্লিকেটেড জিনিসকে স্পর্শ করে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে আনার চেষ্টা করেছেন। ইভেন আমার মত অপদার্থও বইটার ফার্স্ট রিডিংয়ে SR পুরাটা আর GR অংশের কনসেপ্টুয়াল জায়গার অনেকটাই বুঝতে পেরেছে।
কিছু জায়গায় মনে হয়েছে এত গল্প দিয়ে এক্সপ্লেইন না করলে হয়ত ভালো হত। কিছু জোক আমার কাছে ফানি লাগে নাই। বইটার প্রুফরিডিং যথেষ্ট ভালো হয়েছে। লেখক যেহেতু টেক্সবুক লেভেলে বইটা আনতে চেয়েছেন। কিছু ম্যাথ প্রবলেম ইনক্লুড করলে ভালো হত।
ওভারল আমি বলব, লেখক যে জায়গা নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে উনি সফল। অসাধারণ একটা বই।
আর নয় হতাশা, আর নয় ব্যার্থতা! আপনি কি রিলেটিভিটি পড়তে পড়তে ক্লান্ত? মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব হারামি টাইপ ইকুয়েশন আর গ্রাফ। কি সব হাবিজাবি ম্যাট্রিক ইকুয়েশন? স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম? আগা বুঝলে গোড়া বোঝা যায় না। গোড়া বুঝলে আগা। অথবা আপনি রিলেটিভিটি আগে পড়েননি কিন্তু এখন পড়তে চাচ্ছেন। বই খুজে পাচ্ছেন না। তাহলে বইটি আপনার জন্য। চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি-১। নামটা শুনেই শিহরণ জাগছে?
শ্রদ্ধেয় নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়ার সবচেয়ে সফল বই হয়তো এই বইটা। আপনাকে টেনে হিঁচড়ে আপেক্ষিক বেগ থেকে নিয়ে যাওয়া হবে ব্ল্যাক হোল পর্যন্ত। মাঝখানে খেলা হবে মারাত্মক সব ইকুয়েশন আর গ্রাফ নিয়ে। বারে বারে গেলানো হবে ম্যাট্রিক ইকুয়েশন। পাশে থাকবে শ্রদ্ধেয় বক্কর ভাই, বক্রিনা আপু আর হাতে ঘড়িওয়ালা ভেড়া। ব্ল্যাক হোলে ঝাপ দেয়ার সময় আসবে নতুন সঙ্গী নিয়ান। প্রথমে ক্লিয়ার করা হবে স্পেশাল রিলেটিভিটি। সেখানে থাকবে স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম, দৈর্ঘ্য সংকোচন, সময় প্রসারন, লরেন্টঞ্জ রুপান্তর। আপনি অবাক হয়ে আবিষ্কার করবেন আপনি সহ তাবৎ পৃথিবীর সবার বেগ(চতুর্মাত্রিক) আলোর বেগের সমান! আপনাকে দিয়ে ঘাড় ধরে করানো হবে স্পেস-টাইম ডায়াগ্রাম প্রেক্টিস। তারপর আপনার চিরচেনা ভর আর শক্তিকএ ধরা হবে। যাদেরকে আপনি ভাবতেন পরস্পর আলাদা জিনিস, তারা মিলেমিশে হবে একাকার। ভর আর শক্তি আলাদা কিছু না, দুইটা একই জিনিস। ম্যাট্রিক টেন্সরের সাথে পরিচয় করানো হবে খুব আদরের সহিত। হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে ইকুয়েশন। আপনাকে ওই বিচিত্র ইকুয়েশানের পাঠ উদ্ধার করতে হবে। আপনি যদি এমন জেনে থাকেন যে আলোর বেগ সবজায়গায় ৩×১০^৮ মি/সে.। আপনি ভুল। আলোর বেগকে এই মানের ১০০ গুন বেশি হতে দেখবেন আপনি। আপনার মাথায় বাঁশ পড়বে যখন জানবেন গ্র্যাভিটি আসলে বল না, গ্র্যাভিটি ত্বরন। গ্র্যাভিটি জানার পরে আপনাকে প্রস্তুত করা হবে ব্ল্যাকহোলে ঝাপ দেওয়ানোর জন্য। ভয় পাওয়ার দরকার নেই, ঝাপ দেবে নিয়ান। পাশে থাকবে সেই হাত ঘড়িওয়ালা ভেড়া। আপনার ধারনা চুরমার হতে দেখবেন। দেখবেন নিয়ানের বেগ আলোর বেগের সমান!
তারপরেও কিছু কথা মনে রাখা উচিত। রিলেটিভিটির মতো এতো জটিল বিষয় একবার পড়েই জেনে যাবেন এমন আশা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে আপনাকে বইটা হাতে নিতে হবে। পড়া শুরু করলে আর রাখা যাবেনা। পড়তে হবে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। তার পাশাপাশি করতে হবে প্রচুর চিন্তা।
লেখকের বলেছেন ২০২৪ এর বই মেলায় ২য় খন্ড পাবো। যদিও সহ-লেখকের মতে লেখক অনেক অলস। ২য় খন্ডের আশায় আছি। শুভকামনা লেখক আর তার পিচ্চি সঙ্গীর জন্য।
কেন এই বই পড়বেন? বলুন তো, অবজার্ভেবল ইউনিভার্সে কতগুলো জেনারেল রিলেটিভিটির পপ বই আছে? আর টেক্সটবুক কত আছে? শত শত নিশ্চয়ই। কিন্তু পপ আর টেক্সটের পারফেক্ট কম্বো আছে ক’টা? সংখ্যাটা যদি 0 না হয়, তবুও মুষ্টিমেয়। সেই রেয়ার বইগুলোরই একটা হচ্ছে এই চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি। বইটা রিলেটিভিটির নানান সমীকরণে ভরতি। তাই বলে কি ভয় পেলে হবে? সমীকরণের চেয়েও ভেতরের ফিজিক্সে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে যে! আছে, কার ব্ল্যাক হোলের ভেতরে ঢুকলে আপনি অতীত আর ভবিষ্যৎ দেখতে পাবেন (⚠️ স্পয়লার অ্যালার্ট: বাস্তবের টাইম মেশিন যদি থেকে থাকে, তাহলে এখানেই পাওয়া যেতে পারে!)? ইভেন্ট হরাইজন পার করলে নাকি স্পেস আর টাইম কোঅর্ডিনেট উলটে যায়। এর মানেটা কী? সেটা এখানে বলব না, বইয়ে পড়ে নিন। কথা দিতে পারি, গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যাবেই।
অথচ এই জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে গুজবের শেষ নেই। একবার শুনেছিলাম একজন নাকি প্রশ্ন করেছেন, গ্র্যাভিটির কারণ স্পেসটাইমের বক্রতা হলে, পৃথিবীর জল কেন গিয়ে বক্রতায় পড়ছে না? ব্যাপারটা কী হলো? কাউকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখুন, স্পেসটাইমের বক্রতা কী জিনিস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো উত্তর পাবেন যে স্পেসটাইম একটা চাদরের মতো। এর মধ্যে ভর এসে চাদর টেনে বক্রতা সৃষ্টি করে। আসলে কি তাই? না, স্পেসটাইম কোনো চাদর নয় যেমনটা লোকে ভাবে। এই বইও এসব চাদর টানাটানির মধ্যে নেই। একদম শুদ্ধ বিজ্ঞান দিয়ে লেখক ব্যাখ্যা করবেন স্পেসটাইমের কার্ভেচার। বিশ্বাস করুন, বোরিং চাদরের চেয়ে বহুগুণ ইনটারেস্টিং সেসব ব্যাখ্যা।
কিন্তু অজুহাত: আমি ফিজিক্সে মাস্টার্স করছি না। এই বই আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু এই বইয়ের একজন সম্পাদকই যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী! লেখ��� যেভাবে গল্পে গল্পে বিষয়গুলো বুঝিয়েছেন, বুঝতে আপনাকে মেধাবী, ইনটেলিজেন্ট, প্রো হওয়া লাগবে না। দ্বিতীয় যে জিনিসটা দরকার, সেটা হচ্ছে ক্লাস টেনের ফিজিক্স-ম্যাথের বেসিক। ভেক্টর, ক্যালকুলাস, হাইপারবোলিক ত্রিকোণমিতি অপশনাল। আর প্রথম দরকার চিন্তা করতে ভালোবাসা।
বইয়ের চরিত্র বক্কর ভাই, আক্কাস আলী চেপে বসেছেন গ্যালাক্টিক ট্রেনে। বক্রিনা আপু বসে ড্রয়িং রুমে, স্পেসটাইম যেখানে আমাদের পরিচিত জগতের সাথে মেলে না। দূর থেকে সব শুধু দেখে যায় নিষ্ঠুর ভেড়ার দল। আর নিয়ান? ওই তো, ব্ল্যাক হোলে ঝাঁপ দেবার জন্য এগিয়ে চলেছে তার রকেট। তাদের সাহায্যে আমরা একটু একটু করে ডিকোড করে নেব মহাবিশ্বের সিন্দুকে লুকোনো গোপন সংকেত।
This entire review has been hidden because of spoilers.
ছোটবেলার থেকেই বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়বস্তু আমার খুবই ভালো লাগত। বিভিন্ন ভাবে বিজ্ঞানের রহস্য গুলো জানার চেষ্টা করতাম। প্রায়ই টিভিতে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আইন্সটাইনের থিউরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে আলোচনা করা হতো। বলাই বাহুল্য এত পিচ্চি বয়সে সেসবের কিছুই বুঝতাম না। সেসকল প্রফেসরেরা বলতো আলোর বেগ নাকি অনেক বেশি। সেই বেগে নাকি কেও কখনো চলতে পারে না। আবার আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে গেলে নাকি স্থান সংকুচিত হয়! আবার শুনি ব্ল্যাক হোল থেকে নাকি কিছুই বের হয় না! হ্যান ত্যান। এসব কথা শুনে মনের অজান্তেই ছোট্ট একটা শব্দ চলে আসত, "কেন?" কেন মানুষ আলোর বেগে ছুটতে পারে না? কেন আলোর বেগে চললে স্থান সংকুচিত হবে? কেন ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বের হতে পারে না? এই এতশত কেন এর অত্যাচার আমার মা-বাবা থেকে শুরু করে আমার টিচাররা পর্যন্ত বিরক্ত হয়েছে। কিন্তু আপনি যদি আপনার থিউরি অব রিলেটিভিটি'র সকল "কেন"-র উত্তর পেতে চান তবে এই বইটি আপনার জন্য। আপেক্ষিকতা কি, কিরকম, কিভাবে এসব কাজ করে প্রায় সব কিছুই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। থিউওরি অব রিলেটিভিটি জানার জন্য এই বইটা যথেষ্ট ভালো। অনেক পাঠক বইটাকে সেরা বলেছেন তবে আমি এমনটা বলতে পারছি না। কারণ রিলেটিভিটি বিষয়ে এই বইটাই আমার একমাত্র পড়া বই। আমি রিলেটিভিটি নিয়ে আর কোন বই পড়িনি। তবে এটুকু বলতে পারি, আপনার ধৈর্য আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে বইটা আপনার খুব উপকারে আসবে। আপনি যে কিছু শিখতে পারবেন তা নিশ্চিত।
বইটার ভিতরের অংশের সম্পর্কে সামান্য কিছু বলি, রিলেটিভিটি বুঝার জন্য প্রাথমিক কিছু জ্ঞানের দরকার পড়বে৷ সাধারণ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সেই প্রাথমিক জ্ঞান থাকে। তাও একবার ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য লেখন ফাউন্ডেশন অধ্যায়ে স্থান, সময়, আপেক্ষিকতা, বেগ ত্বরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর স্পেশাল রিলেটিভিটিতে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে রোলার কোস্টার রাইডের মধ্য দিয়ে আমাদের রিলেটিভিটি ফিল করাতে চেষ্টা করেছেন।
বইয়ে প্রচুর পরিমাণে সমীকরণ আছে৷ কিছু কিছু স্থানে ক্যালকুলাস ইউজ করা হয়েছে৷ বইটা পড়তে গেলে প্রচুর ভাবতে হবে। ক্যাল্কুলাসের বিষয়টা উপেক্ষা করলে আপনি বইয়ের ৭০-৮০% খুব ভালো মতো বুঝবেন।
লেখকের লেখার স্টাইল আমায় বরাবরই ভালো লাগে, এখানেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। মূলত দুটো বিষয় নিয়ে বলব। এক, লেখকের আগের চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স বইতে আমার একটা অভিযোগ ছিল যে ওখানে অঙ্কের ক্যালকুলেশান অনেক কম ছিল। বেশিরভাগই গল্প ছিল।ফলে কোনোও জিনিস কি করে এল, কেন এল সেটা বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। এই বইতে সেটা পুষিয়ে গেছে। অনেক গ্রাফ, সমীকরন, অঙ্ক আর ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে বিস্তারিত এক্সপ্লেন করে বিষয়টা অনেক সহজে সুন্দর করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের মেট্রিক সমীকরনকে আসলে সেগুলো কি বোঝায় তা খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
দুই, যে কোনোও রিলেটিভিটির বই পড়তে গেলে প্রথমেই যে বিরক্তিকর জায়গাটা আসে সেটা হল ডিফারেন্সিয়াল জিওমেট্রি আর টেন্সর। প্রায় কোনোও বই তেই টেন্সরের ফিসিকাল মিনিং সেইভাবে ব্যাখ্যা করে দেওয়া থাকে না। টেন্সর সম্পর্কে বেশিরভাগ বইতেই লেখক ধরেই নেন যে পাঠক অলরেডি অনেক কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড জানে। ফলে প্রায় ওপর ওপর দিয়ে বলে ছেড়ে দেয়। এই বইতে লেখক ভেক্টর ও টেন্সরের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট গুলো আসলে কি বোঝায় তার মানে কি সেগুলো খুব ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে রিলেটিভিটিতে এনার্জি মোমেন্টাম টেন্সরের বিভিন্ন কম্পোনেন্টগুলো আসলে কি বোঝায় তা বললেও তার কারন তিনি বলেন নি। খ্রিস্টোফেল সিম্বোল, কার্ভেচার এগুলোর ব্যাপারে লেখক খুব বেশি গভীরে যান নি। আশা করব সেগুলো দ্বিতীয় খন্ডে পাওয়া যাবে।
বাকি, লেখকের লেখার স্টাইল সম্পর্কে কোনোও কথা হবে না। বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলো লেখক যেভাবে গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন তা সত্যিই প্রশংসার। এই বইতেও মেট্রিক থেকে শুরু করে জিওডেসিক, ব্ল্যাক হোলের সমীকরন ইত্যাদির অসাধারন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেটুকু খিদে রয়ে গেল আশা করছি সেটা দ্বিতীয় খন্ডে পুষিয়ে যাবে। এটা ছিল রিলেটিভিটির ওপর ইন্ট্রোডাক্টারি লেভেলের বই(পপ সাইন্স নয়)। যাদের এই বিষয়ে আগ্রহ আছে কিংবা যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় নিয়ে লেখাপড়া চালু করেছে তাদেরকে আমি অবশ্যই বইটি রেকমেন্ড করব।
বই:চা কফি এবং জেনারেল রিলেটিভিটি প্রথম খন্ড লেখক:নাঈম হোসেন ফারুকী প্রকাশনী:প্রান্ত প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্য:৫৫০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা:৩৫০
"Yesterday is history.Tomorrow is a mystery.But today is a gift... That's why they call it present" --M.Oogway
বইয়ের শুরু হলো প্রচ্ছদ।লেখক বই শুরু করেছেন প্রচ্ছদের পেছনের কাহিনী দিয়ে।তারপর লেখক বই শুরু করেছেন ছোট্ট একটি মজার কবিতা দিয়ে।এক যে ছিল স্পেস-টাইম তার ছিল এক চাদর তার ওপরে বক্কর ভাই রাখলেন একটা পাথর!
টানটান হলো স্পেস টাইম গর্তে ঢুকল পাথর, চারপাশে তার নুড়ি সম্ভার শুরু করে দিল চক্কর!
লেখক এক লাফে জেনারেলরিলেটিভিটি তে চলে যাননি। জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝতে যা যা জানা প্রয়োজন তিনি তা সবই মোটামুটি বুঝিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের জন্য তিনি আপেক্ষিকতা,স্থান,সময়,বেগ,ত্বরণ,ভেক্টর ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন।এর ফলে আমার মতো মানুষরা যারা জেনারেল রিলেটিভিটি সম্পর্কে ধারনা খুব কম রাখে তাঁরাও বিষয় গুলো ফিল করতে পেরেছে।বুঝেছে। ফিজিক্স যে কত মজার হতে পারে তা জেনেছে।এই বইয়ে আমার মতে থ্রিলার বইয়ের থেকেও বেশি থ্রিল ছিল। এই বইয়ের কল্যানে মনে হয়েছে এই বিশাল ফিজিক্সের দুনিয়ার একদম অল্প হলেও কিছু জানতে পেরেছি।আচ্ছা আবার বই এর কথায় আশা যাক।লেখক তারপর আমাদের বুঝিয়েছেন স্পেশাল রিলেটিভিটি।লেখক পুরো বইয়েই গল্পাকারে একদম সহজ করে বুঝিয়েছেন।ইশ এত সুন্দর করে যদি পাঠ্যবই গুলো লিখা থাকতো।স্পেশাল রিলেটিভিটিতে সময় কেন মাত্রা, লরেঞ্জ রুপান্তর, আপেক্ষিক বেগ ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর মিলবে।লেখক প্রতি অধ্যায় শেষেই আমাদের চিন্তা করতে বলেছেন।কারন "বাঁচতে হলে ভাবতে হবে"। এভাবেই আস্তে আস্তে গল্পাকারে আমাদের চিন্তা ক���ার সুযোগ দিয়ে লেখক বই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। রেটিং:১০/১০
বইয়ের নামঃ চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি লেখকঃ নাঈম হোসেন ফারুকী প্রকাশনঃ প্রান্ত প্রকাশন
জেনারেল রিলেটিভিটি অতি কঠিন একটা বিষয়। কিন্তু , লেখক যথেষ্ট চমৎকার করে উপস্থাপন করেছেন পাঠকের সুবিধার জন্য। টেক্সট বই হলেও বইটি পড়তে গিয়ে অত্যন্ত ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ বই অত্যন্ত আকর্ষনীয় ভাবে গ্রাফ, সমীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।
রাস্তা নামের যে অংশ দিয়ে গল্প শুরু হয়েছে, তা থেকে শুরু করে পুরো বই পড়তে পাঠক হিসেবে আমি অভিভূত। ব্ল্যাকহোল, ওয়ার্মহোল এই রহস্যের জগতের হাতছানি পেতে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বইটি পড়েছি। এপিটাফ এর অংশে অনেক অজানা তথ্য জেনেছি। ফাউন্ডেশন অধ্যায়ে আপেক্ষিকতা , স্থান , সময় , বেগ , ত্বরণ, ভেক্টর , মাত্রা উদাহরণ দিয়ে গ্রাফের সাহায্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চা কফির বিরতি - ১ এর পরে স্পেশাল রিলেটিভিটি তে সময় কেন মাত্রা, সত্যিকারের সময় সহ লরেঞ্জ রূপান্তর , স্পেস টাইম ডায়াগ্রাম প্র্যাক্টিস সহ আরও কিছু বিষয় আলোচনার পরে চা কফির বিরতি - ২। মেট্রিক সমীকরণ এ স্পেস - টাইমের চাদর , টেনসর, মেট্রিক টেনসর , পোলার কো - অর্ডিনেট সিস্টেম সহ আরও কিছু বিষয় চিত্র, গ্রাফ ও সমীকরণের মধ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চা কফির বিরতি - ৩ এর পরে মহাকর্ষ এবং চা কফির বিরতির পরে ব্ল্যাকহোল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সহজ থেকে কঠিন , জানা থেকে অজানা এভাবে পাঠক কে রিলেটিভিটির মতো একটা জটিল বিষয় বাংলা ভাষায় বই হিসেবে লিখে উপহার দেওয়ার জন্য লেখকের নিকট কৃতজ্ঞতা। চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি দ্বিতীয় খন্ডের অপেক্ষায় রইলাম।
Without giving any spoiler or minute details, I can say, it is a very good book for learning general relativity (GR). I am not inclined to say that it is a 'beginner level' book, neither one need to know a lot of physics to understand the concepts explained in this book. To me, someone with high school level knowledge of physics and some knowledge of calculus would be able to understand this book. This book is definitely not a 'pop-science' book but I would not say it is a reference/textbook as well. The storytelling elements of the book can captivate the readers but those also deviated it from being a typical textbook. So, to me, this books fits the best for the readers like me- who want to understand the concept of GR, and want to see the mathematical side of it. The equations are well formed, apart from some notation conflicts and customization. The diagrams could have been a bit better. Some of the concepts were really well explained in layman's terms, some were more suitable for advanced readers. But, the latter might be an effect of the difficulty of a topic itself- maybe it can be perceived but cannot be explained that well. I took my time finishing the book, and thoroughly enjoyed doing all the calculations by myself. I RECOMMEND all Bengali physics enthusiast to read the book, as it is one of the, if not only the best book on general relativity written in Bangla. I am eagerly waiting for the second part- CCGR2
বই: চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি লেখক:নাঈম হোসেন ফারুকী পৃষ্ঠা সংখ্যা:৩৫০ (সতর্ক বার্তা এই বইটিবাপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। আমার নিজেই বই শেষ না হওয়া পর্যন্ত শুধু এই বইএর কথাই মাথায় ঘোরত। এখন দ্বিতীয় অংশের অপেক্ষায় আছি।) যারা নাঈম ভাইকে চিনেন না তারা প্রচ্ছদ দেখে ভাবতে পারেন এটা কোন সাইন্সফিকসান তবে আপনার এ ধারনা সম্পুর্ন ভুল। বই এর ভেতরে যাই থাক অন্তত এত সুন্দর প্রচ্ছদ টার জন্য এই বইটা কেনা উচিৎ। যাদের বিজ্ঞান এর প্রতি আগ্রহ আছে বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান তাদের জন্য এই বইটি পড়া ফরজ। এত সুন্দর করে জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি বোঝানো হয়েছে তা আপনার ধারনার বাইরে। এত কোঠিন বিষয় বোঝার জন্য আপনার বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই, শুধু ক্লাস ৯/১০ এর বেসিক ক্লিয়ার থাকতে হবে।আমি নিজেই তেমন একজন ভাল ছাত্র ছিলাম না। তবুই এই বইটিবপড়তে তেমন অসুবিধা হয়নি। আপনার যদি ব্ল্যাকহোল নিয়া ফ্যাসিনেশন থাকে তাহলে আপনাকে এই বই কিনতেই হবে। এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে আসল টাইম মেশিন।
বইটি পড়ার পরে যা মনে হয়েছে লেখকের পরিশ্রম অনুযায়ী এই বইটির মূল্য অত্যন্ত কম হয়ে গিয়েছে।