পিতাকে হারানোর পর দিশেহারা শ্যামল আরও দিশেহারা হয়ে পড়ে নিখোঁজ হওয়া একমাত্র ছোটো ভাইয়ের খোঁজ পেয়ে। জানতে পারে, সে নাকি এক কাপালিক সাধুর শিষ্য হয়ে ভারতের পথে পথে ঘুরছে!
ভয়ংকর সেই কাপালিকের হাত থেকে ভাইকে ফিরিয়ে এনে বিধবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পথে নামল শ্যামল; সঙ্গী হলেন পিতার বন্ধুসম এক রহস্যময় চরিত্র ভবতোষ বাবু।
ভাইকে উদ্ধার করতে ভারতের পথে পথে ঘুরতে হয় শ্যামলকে, কিন্তু কাপালিকের নাগাল পাওয়া কি এতই সহজ!
মুহাম্মদ আলমগীর তৈমূরের 'বেতাল' কেবলমাত্র এক অতিপ্রাকৃত উপাখ্যান নয়—এ যেন ভারতীয় ঐতিহ্য, প্রাচীন মন্দির আর পূজার্চনার এক সুবিশাল আখ্যান।
আমার মতে বেতাল বইটায় হরর এলিমেন্ট কম৷ মানে গা ছমছমে ভাব বা ওই ধরণের ক্রিপিনেসটা নেই। তবে ভ্রমণের জায়গাগুলোর বর্ণনা দারুণ লেগেছে। সনাতন পুরাণের বেশ অনেক কিছু উঠে এসেছে গল্পের ছলে৷
গত কয়েকমাস ধরে মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের 'বেতাল' বইটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ১শ ৭৬ পাতার বইতে আজ হাতে পেয়ে একবসায় পড়ে ফেললাম। কিন্তু যত প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করেছি, ততটা পাইনি। সত্যি বলতে অনেকটাই নিষ্প্রভ লেখনী।
মুক্তিযুদ্ধ তখন শেষ। শ্যামলের স্কুল শিক্ষক বাবা বিজয়ের দিন মারা গেলেন। ছোটো ভাই সমু মুক্তিযুদ্ধের যাওয়ার নাম করে কলকাতায় কোনোএক কাপালিকের শিষ্য হয়েছে। ভাইকে ফিরিয়ে আনতে চায় শ্যামল। এমন সঙ্কটের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন পিতৃবন্ধু ভবতোষ বাবু। এই ভবতোষ বাবু রহস্যময় চরিত্র। দশবছর নিরুদ্দেশ ছিলেন। লোকে বলে, তিনি এতদিন সাধুদের সাথে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেন, করেছেন সাধনা। সেই ভবতোষ বাবু শ্যামলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অচেনা কাপালিকের কবল থেকে ভাইকে উদ্ধারের অভিযানে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন কুষ্টিয়া ও কলকাতার বর্ণনা এসেছে কাহিনির প্রয়োজনে। শ্যামল ও ভবতোষ বাবু কলকাতা, রাজস্থানের অম্বর দুর্গ এবং বেনারসে গিয়েছেন। এই দু'জনের সাথে পাঠক হিসেবে আমি সফরসঙ্গী হয়েছি, ভারতবর্ষ ভ্রমণের স্বাদ পেয়েছি। আবার জেনেছি দশমহাবিদ্যার অন্যতম ধূমাবতী সম্পর্কে। উপমহাদেশের প্রাচীন শহর বেনারসের ছবির মতো সুন্দর বয়ান পড়তে গিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বেনারস দেখার। আরও জানতে চাই দেবী ধূমাবতীকে নিয়ে।
অবশেষে কাপালিকের ডেরার সন্ধান এক ঝড়-জলের রাতে খুঁজে পেল শ্যামল। কাপালিক একা নন, অসামান্য রূপবতী এক তরুণী কাপালিকের আজ্ঞাবহ। সে কী পারবে কাপালিকের কবল থেকে তার ভাইকে মুক্ত করতে ফিরতে? জানতে হলে পড়ুন 'বেতাল'।
প্রত্যেক লেখকের নিজস্ব লেখনশৈলী থাকে। মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের নিজের লেখার ধাঁচ বরাবরই ইতিহাস ও মিথলজিকেন্দ্রিক। এই কেতাবের সূচনায় লেখক নিজের লেখায় ইতিহাস চলে আসা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং নিশ্চিয়তা দিয়েছেন 'বেতাল'-এ ইতিহাসের গলিতে তাল হারাননি। অর্থাৎ নিজের প্রথাগত লেখার ধরন ভাঙতে চেয়েছেন। তাতেই বিপত্তি ঘটেছে। ইতিহাস ও মিথলজি তৈমূর সাহেবের মননে। তা থেকে বের হয়ে খানিকটা সেফ সাইডে খেলতে গিয়ে ভ্রমণকাহিনি ফাঁদার চেষ্টা করেছেন যা আদতে সুখপাঠ্য নয়। কেমন প্রাণহীন লেখা মনে হচ্ছিল।
রাজস্থানে যাওয়ার সময় লেখক কথোপকথন বোঝাতে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেছেন। লেখকের এই প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেছে। আবার, বেনারসে গিয়ে হিন্দি বাতিল। কেন এমন উদ্ভট কাণ্ড সেই উত্তর একমাত্র ঔপন্যাসিক দিতে পারবেন।
'বংশালের বনলতা' লিখে হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন ড. তৈমূর। এরপর বেশকিছু অসাধারণ গল্প লিখেছেন। 'বজ্রযোগীর প্রত্যাবর্তন'-এর সমাপ্তি মনমতো হয়নি। ভেবেছিলাম 'বেতাল'এ ফিরে পাব মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরকে। কিন্তু কামব্যাক একদম আশানুরূপ হলো না। 'বেতাল' এ তৈমূর সাহেবের নিজের কলম-ই বেতাল হয়ে গেছে।
প্রত্যাশা না রেখে পড়বেন। তাহলে হয়তো উপভোগ করতে পারবেন মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর সাহেবের সদ্যপ্রকাশিত গ্রন্থ 'বেতাল'।
দুর্ধর্ষ কাহিনি আর বর্ণনা। চোখের সামনে যেন সবকিছু জীবন্ত হয়ে ওঠে। কিংবদন্তির জীবন্মৃত পিশাচ সাধনার অনবদ্য আখ্যান। সাথে ইলাস্ট্রেশনগুলোও দুর্দান্ত। খালি মাঝখানে কিছু হিন্দি আলাপ বুঝিনি বলে এক তারা কম।
মুহম্মদ আলমগীর তৈমুরের নতুন উপন্যাস বেতাল। কাহিনীর প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধের পরপর। এক ছেলে মুক্তিক্যাম্পে নাম লেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে নাম না লিখিয়ে সাধুসঙ্গে পড়ে। যুদ্ধ শেষের পরও ফিরে আসে না। যুদ্ধ থামলে তাকে খুঁজতে যায় তার বড়ভাই ও এক কাকা। খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় কলকাতা, বেনারস ছাড়িয়ে দূরে। তাকে কি খুঁজে পাবে? কি ঘটেছে ছেলেটার সাথে?
বইয়ের প্লটটা সাধারণ। এবার কোনো ইতিহাসের কপচাও নেই। তবে শুরু থেকেই রোমাঞ্চকর। একজনকে খোঁজার জন্য একের পর এক সূত্র, অনিশ্চয়তা। মধ্যখানে একটু গতি হারিয়েছিল। ছিল শুধু মন্দির, তীর্থস্থানের বর্ণনা। তবে বর্ণনাভঙ্গির জন্য বর্ণনাগুলো ভালোই লেগেছে। পুরো বইয়ে রহস্যময়তা থাকলেও ভয়টা ছিল না। তবে শেষাংশ আসলেই দুর্দান্ত। বিশেষ করে রহস্যময় পোড়া বাড়ি, শশ্মান, উদ্ভট পূজা, এসব দিকগুলো। কিছু বিষয় বেশ ক্রিপি। ওই পর্যায়ে একটু ভয় ভয় লেগেছে। তবে সবথেকে বেশি আফসোস লেগেছে এক চরিত্রের করুণ পরিণতি দেখে, যা ভেবেছিলাম পুরোই বিপরীত। মাঝেমধ্যে বেশি বোঝার পরিণাম খুবই ভয়াবহ হয়, এটাই দেখানো হয়েছে। এন্ডিংটা দক্ষ হাতে টেনেছেন লেখক। একটানা পড়ে গিয়েছি প্রিয় লেখকের বইটা।
তৈমুর সাহেবের লেখার হাত যে অসামান্য , তা পাঠকমাত্রই স্বীকার করবেন যারা বংশালের বনলতা কিংবা কালো পাথর এর মতো অনবদ্য সব গল্পের সাক্ষী আছেন। প্লট হোক যেমন-তেমন, ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনায় তার যে মুন্সিয়ানা, বুঁদ হয়ে শুধু পাতার পর পাতায় উল্টে যেতে হয়। তো, ইতোমধ্যে তৈমুর সাহেবের সমস্ত লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি। অধিকাংশই পছন্দের তালিকায়।তাই এই বইটির প্রতি চাওয়ার পরিমাণটা একটু বেশি ছিল। বিশেষ করে বইখানার নাম আর ফ্লপ পড়ার পর একদম তর সইছিল না।
এবার বলি কেমন লাগলো।সত্যি বলতে আমি খানিকটা হতাশ। আমি অবাক হচ্ছিলাম এই ভেবে যে এটাকে ভ্রমনকাহিনী বলব না অতিপ্রাকৃত। যদি অতিপ্রাকৃত ধরি তাইলে এটা আমার কাছে তিন তাঁরার উপযুক্ত না। অথচ নামখানা আর ফ্লপখানা পড়ে ওটাই আশা করেছিলাম ।
সে যাইহোক, বেশি আশা বাদ দিয়ে (লেখক যেমন ধারার বই লেখেন, ওটা আশা করবেন না ) পড়তে বসেন। সময়টা খুব খারাপ যাবে না।
আলমগীর তৈমূরের অসাধারণ গদ্যের কারণেই তার যেকোনো গল্প পড়ে ফেলা যায়। 'বেতাল' এও সেই চমৎকার গদ্যের দেখা পাওয়া গেলো। সাথে ভারতের মন্দিরে মন্দিরে ভ্রমণের স্বাদ ও পাওয়া গেলো। বরাবরের মতই উপভোগ্য। দারুণ সময় কেটেছে।
❝Enlightenment, and the death which comes before it, is the primary business of Varanasi.❞ —Tahir Shah, Sorcerer's Apprentice - ❛বেতাল❜ - শ্যামল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিনেই দুর্ভাগ্যবশত তার বাবা মারা যায়। এদিকে তার ছোট ভাই সমীর যুদ্ধে যাওয়ার নাম করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ভারতে। বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পরে সে জানতে পারে যে তার ভাই ভারতের এক সাধুর আশ্রয়ে রয়েছে। - ভবতোষ বাবু, শ্যামলের বাবার একজন কাছের মানুষ। শ্যামলের সাথে সেও সমীরের খোঁজ করার ব্যপারে যোগ দেয়। তাদের সেই খোঁজ চলতে থাকে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারতের বারাসাত, জয়পুর হয়ে বেনারসের নানা পথঘাট জুড়ে। এখন শেষ পর্যন্ত শ্যামল কী তার ভাইয়ের খোঁজ পায় আর তাদের শেষ পর্যন্ত কী পরিণতি হয় তা জানতে হলে পড়তে হবে লেখক মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর এর হিস্টোরিক্যাল হরর ঘরানার উপন্যাস ❛বেতাল❜। - ❛বেতাল❜ বইয়ের পটভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঠিক পরবর্তী সময়ে। তাই সে সময়ের পরিবেশ-পরিস্থিতি গল্পকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। বইতে সাস্পেন্স এবং সুপারন্যাচারাল পার্ট থাকলেও সবচেয়ে ভালো লেগেছে এর ভ্রমণের অংশ। ভারতের নানা অঞ্চলের পুরোনো রাজবাড়ি, তীর্থস্থল থেকে খাবারের বর্ণনা অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে তোলা হয়েছে গল্পে। বইটি পড়ার সময় এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো সাস্পেন্স হররের বদলে যেন কোন চমৎকার ভ্রমণ কাহিনি পড়ছি। গল্পের কাহিনির দিক বলা যায় মাঝের কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদে মোটামুটি ইন্টারেস্টিংই ছিলো মূল প্লটটি। এই গল্পে ইতিহাসের অংশ লেখকের অন্যান্য গল্পের থেকে কম পরিমাণে থাকলেও হিন্দু পুরাণ সম্পর্কিত নানা আচার-উপাচারের বর্ণণা ভালোই ছিলো। - ❛বেতাল❜ বইয়ের চরিত্রগুলোর দিকে তাকালে মূল চরিত্র শ্যামলকে গল্পে যতটুক প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই লেখা হয়েছে। অন্যান্য চরিত্রগুলোর ভেতরে ভবতোষ বাবুর চরিত্রটি আরেকটু এক্সপ্লোর করা যেতে পারতো মনে হয়। লেখকের সহজ সাবলীল লেখনশৈলী আমার বরাবরই ভালো লাগে, এবারেও সেই টোনে গল্প চলতে থাকলেও ওভারঅল গল্পটিকে "বংশালের বনলতা", "প্রাচীন মুদ্রা" কিংবা "কান্তজিউয়ের পিশাচ" এর মতো দুর্দান্ত লাগলো না আমার কাছে। বইয়ের সংলাপেও লেখকের সিগনেচার টোন ছিলো, এক পর্যায়ে গল্পের খাতিরে হিন্দি ভাষায় কথোপকথন শুরু হলেও মোটামুটি বুঝতে পেরেছি সেই অংশটুকু। তবে ভারতের এক জায়গায় কথোপকথন হিন্দিতে হলে সেখানে সংলাপ হিন্দিতে আবার আরেক জায়গায় হিন্দিতে কথোপকথন হলে সেটা বাংলায় লেখার ব্যপারটা বুঝতে পারলাম না। এই গল্পের নামকরণের রহস্য একেবারে শেষে গিয়ে বোঝা যায়, যদিও শেষটা খুব একটা সারপ্রাইজিং লাগেনি আমার কাছে। - ❛বেতাল❜ বইটির প্রোডাকশনের দিক থেকে দেখলে বইয়ের বাঁধাই, কাগজের মান ইত্যাদি ভালোই ছিল। বইয়ের প্রচ্ছদটি মোটামুটি লাগলো, তবে বইয়ের কাহিনীর সাথে মানানসই কিছু আর্টওয়ার্ক বেশ দারুণ লেগেছে। বইতে এর প্রচ্ছদশিল্পীর নাম থাকলেও অলঙ্করণকারীর নাম কোথাও পেলাম না। "বজ্রযোগীর প্রত্যাবর্তন: দ্য হিউম্যান কাইমেরা" বইটির মতো এই বইয়ের পেইজ সেটাপও ভালো লাগেনি, বইয়ের চারপাশে পাশের মার্জিনের পরিমাণ এবারেও খুবই বেশি লেগেছে যা বেশ বিরক্তির এক ব্যপার। বইয়ের সম্পাদনা অবশ্যই খারাপ হয়নি। এক জায়গায় "ই" এবং "য়" সম্পর্কিত ভুল বাদে তেমন কোন বানান ভুল চোখে পড়েনি। - এক কথায়, ফিকশনাল ভ্রমণ কাহিনি এবং অতিপ্রাকৃতবাদের মিশ্রণে ❛বেতাল❜ বইটি লেখা হয়েছে। বইতে লেখকের সিগনেচার টোন থাকলেও অতিপ্রাকৃত গল্প হিসেবে যতটুকু প্রত্যাশা ছিলো তার পুরোটা অবশ্য পূরণ হয়নি। তবে যাদের লেখকের আগের বিভিন্ন ধরনের গল্প পড়ে ভালো লেগেছে তারা ❛বেতাল❜ বইটিও পড়ে দেখতে পারেন।
উপন্যাসিকার সময়কালটা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরপরের কাহিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের আর ঠিক পরের সময়টা এত চমৎকারভাবে লেখক তুলে ধরেছেন যে মনেই হবে না সেসময় লেখকের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। মনে হবে যুবকের চোখেই সেসময়টা ধারণ করেছেন।
কাহিনির পাশাপাশি যে বিষয়টা এখানে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে সেটা হলো, ভারত ভ্রমণ। ভাইকে খুঁজতে যে-ই শ্যামল ট্রেনে ওঠে তারপর থেকে শুরু হয় এক চমৎকার ভ্রমণকাহিনি। আর চলতে চলতে পথে দেখা হওয়া পথ-জাদুকরের জাদু সাধারণ যে-কারও পক্ষে কল্পনা করা মুশকিলই বটে।
হিউম্যান কাইমেরার মতো এখানেও খাবারের লোভনীয় বর্ণনা আছে। রাজস্থানের রাস্তার খাবারের যে দারুণ বর্ণনাটা পড়েছিলাম, পড়ার সময়ই আমার জিহ্বা হাঁটুতে নেমে এসেছিল, আর ঠিক করেছি ভারতে গেলে এই খাবার কোনোভাবেই মিস দেবো না।
এছাড়াও ভাইয়ের খোঁজে খোঁজে মন্দিরগুলো দর্শনের সময়ের বর্ণনা আর ঐতিহাসিক ব্যাপারগুলো জেনে অনেক পুলকিত হয়েছি। কত রহস্য আর ইতিহাসই না রয়েছে এসবের খাঁজে খাঁজে। সেই সাথে ধূমাবতী সমন্ধে রহস্যময় তথ্যগুলো বরাবরের মতোই যে-কারও জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে।
বইটা কারও ভালো লাগবে, কারও খারাপ—যেমনটাই লাগুক না কেন, বই পড়ার শুরুতে এবং শেষে লেখকের ভূমিকাটা অবশ্যই পড়বেন।
একেক লেখকের দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গি, দৃষ্টিকোণ—বাকি প্রত্যেক মানুষের মতোই আলাদা। স্যারের লেখার একটি নিজস্ব সিগনেচার স্টাইল আছে। বই আপনার খারাপ লাগতেই পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু দয়া করে লেখককে আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির কাঠগড়ায় তুলবেন না। তাহলে তার স্বকীয়তা হারিয়ে যাবে। আর হারিয়ে গেলে বাকি সবার সাথে তার পার্থক্য থাকবে না।
একটাই গল্প। মানে ছোটগল্প। কিন্তু সেটুকু গল্পের জন্য উপন্যাস-সমান প্রেক্ষাপট রচনা। সেই লম্বা যাত্রাও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো না। লেখকের দক্ষতায়, সময়-পরিস্থিতি-মনস্তত্ত্ব আর দৃশ্যপটের বেশ দেখার মতো একটা চিত্র তৈরী হয়েছে। কিন্তু খামতিটা ওই এক জায়গাতেই, মূল গল্পটুকু কেবল শেষের কয়েক পাতায়। বাকিটুকুর অবতারণা বাদ দিলেও, গল্প একই থাকতো। সে লম্বা যাত্রায়, সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া কুষ্টিয়ার চিত্র দেখা গিয়েছে। চমৎকার। আছে পরিবারের এক সদস্যের খোঁজে ভারতে পাড়ি দেওয়ার কাহিনী। সেখানেও কাশী'র (বারানসী) বিস্তৃত বর্ণনা অভিভূত করার মতো। একেকটা মন্দির, একেকটা ঘাটের বর্ণনা, মানুষজন, সব মিলিয়ে সুন্দর ছবি আঁকা হয়েছে। পড়ে যেতেই ভালো লাগে। আর সবশেষে, হরর উপন্যাসের হরর গল্পটুকু ঘটে। সেটুকু বেশ ভালো। আলমগীর তৈমুর স্যারের আর সব হরর গল্পের মতোই আবেশ জড়ানো।
কিন্তু ওইটুকু গল্প বলার জন্য, চরিত্রকে কুষ্টিয়ায় যাত্রা করিয়ে কাশী অব্দি ভ্রমণ না করালেও, অথবা কাশীর কয়েকটা দিন অতিবাহিত না করালেও, গল্পের কোনো হেরফের হতো না। অভিযোগটা সেই জায়গাতেই। লেখক যেখানে মূল গল্পটাকে রেখেছেন, বাকিটুকুতে তার জন্য কোনো স্টোরি বিল্ডআপ করেননি, চরিত্রকে ড���ভেলপ করেননি। এবং তারচেয়েও বেখাপ্পা লেগেছে, শেষ কয়েক পাতার মূল গল্প চলেছে নিজের গতিতে, যেটার সাথে বাকি উপন্যাসের লয় একেবারেই বেমানান।
এইতো। মুহম্মদ আলমগীর তৈমুরের মতো প্রাজ্ঞ লেখক যখন স্রেফ 'বই গছান', আক্ষেপই লাগে।
মনোপুত হইলোনাহ। ভবতোষ কাকাকে যেভাবে রহস্যময় ভাবে প্রেজেন্ট করা হলো সে তুলনায় একেবারেই কিছু হলোনা। বলতে গেলে এই ক্যারেক্টরটা ক্লিয়া��� না যার জন্য শেষটা ফিকে হয়ে গিয়েছে।
মুহম্মদ আলমগীর তৈমুর স্যার এর বই হিসেবে অনেক আশা নিয়ে পড়তে বসেছিলাম,একরাশ হতাশা নিয়ে শেষ করছি,দ্যা হিউম্যান কাইমেরা পড়ার পর স্যারের উপর এক্সপেকটেশন অনেক বেশি ছিল,তাই প্রি অর্ডার করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম।পড়তে বসে খানিকটা বাধ্য হয়েই শেষ পর্যন্ত এসেছি,ইতিহাস,অ্যাডভেঞ্চার আর থ্রিল এই তিন উপাদান পরিমাণ মতো করে দিয়ে যে বাবুর্চি দ্যা হিউম্যান কাইমেরা তৈরি করেছিলেন তার এবার হয়তো রন্ধন উপাদানের হিসেবে অনেক বেশি গড়মিল হয়ে গিয়েছে।
বেশ একটা অতিপ্রাকৃত গল্প হতে পারতো এইটা। লেখকের আর যে কোন উপভোগ্য গল্পগুলোর প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু হলোটা কী?
মূল চরিত্র বাবাকে হারিয়ে ছোট ভাইকে খুজতে বেরিয়েছে, ঘরে মা আর ছোটবোন একা। অথচ তার ভ্রমণে স্থানগুলোর বর্ণনা ফেলুদার তোপসের মত অক্লেশ হতে চায়, রসনাও খুব জীবন্ত, আচরণে দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেস কোন কিছুই ফুটে ওঠে না। দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা খটখটে লেগেছে কারণ কাহিনীর সাথে ব্লেন্ড হতে পারে নাই মনে হয়। এমনকি ক্লাইম্যাক্সে এক নারী চরিত্রকে বর্ণনা করার ধরণও এমন চটুল যে পরিবেশের গুরুগাম্ভির্য্য কিছুই আর থাকেনা ওতে।
আলমগীর মুহম্মদ তৈমূরের গল্প আমার ভালো লাগে, তার পুরনো অনেক লেখা এখনও হয়ত পড়বো। কিন্তু একটা ছোট গল্পকে টেনে একশ সত্তর পাতার নভেলা বানানোর চেষ্টাটা একেবারেই ভাল লাগল না।
Sir Muhammad Alamgir Toimur means a lot of information and historical packed. And it's not exceptional. The story was not horrifying but the description was very beautiful.
শেষ টা কেমন যেনো হুট করে..এছাড়া বাকি সব ঠিকঠাক..তারানাথ তান্ত্রিক এর ফিল পেলাম বহুদিন পর.. লেখকের বাকি গল্প গুলোর প্রশংসা শুনেছি..সেগুলোও পড়ে ফেলতে হবে।
ভালো না লাগার বেশ কিছু কারন আছে, তার মাঝে বিশেষ করে হচ্ছে বইয়ে বাংলাতে হিন্দি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কিছু জায়গায় যার কিছুই বুঝি নাই, কাহিনিতে না গিয়ে অনে বর্ননা। বইটার চারদিকের মার্জিন বেশি দিয়ে পেজ সংখ্যা বাড়ানো হইছে যেটা প্রকাশকের চালাকি দাম বাড়ানোর জন্য।
“আমার বাবা মারা গেলেন ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সকাল দশটায় প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে। থ্রি নট থ্রি’র টাস-টাস, সাবমেশিন গানের ঢি-ঢি, এসএলআর-এর গুড়ুম-গুড়ুম, আর এমএমজি’র ধা-ধা আওয়াজে কানের পর্দা ফাটে ফাটে অবস্থা! নাহ্, পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ না। ওটা মুক্তিবাহিনীর বিজয়োল্লাস!”
বাপ মরে গেলো এই ভাবে। এই দিকে ছোট ভাইও নিখোঁজ। সেই ৭ই মার্চের ভাষণ শুনতে ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে ঢাকায় গিয়ে আর ফিরে আসেনি। দিশেহারা হয়ে পরলো সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরের এক পরিবার।
মৃত বাবার কলিগ ভবতোষ বাবু'র সহায়তায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ছোট ভাইয়ের খোঁজে নামলো শ্যামল। এলাকার একজনের কাছ থেকে খোঁজ পাওয়া গেলো ওকে না কি দেখা গেছে বারাসাতরে আমাডাঙা কালী মন্দিরে, এক কাপালিক সাধুর শিষ্য হিসেবে, এপ্রিল মাসের দিকে। সেই সূত্র ধরেই বিধবা মায়ের কথা ভেবে ভাইকে খুঁজতে বেরিয়ে পরলো শ্যামল। সঙ্গি হলেন ভবতোষ বাবু।
এই ভবতোষ বাবু লোকটা বেশ রহস্যময়। প্রায় দশ বছর উনি দেশে ছিলেন না। শ্মশানে-মশানে, দেউলে-মন্দিরে কোথায় কোথায় সব ঘুরেছেন। শোনা যায় সাধনা-ফাধনাও না কি করতেন। তো, কাপালিক সাধুর খপ্পার থেকে শ্যামলের ছোট ভাইকে উদ্ধার করে আনার যোগ্য লোকই বটে!
এর পাঠক, শ্যামল আর ভবতোষ বাবুর সাথে আপনিও বেরিয়ে পরবেন ভাইকে উদ্ধারের একটা দারুন এ্যাডভেঞ্জারে। খুলনা লোকাল ধরে প্রথমে যাবেন দর্শনা বর্ডারে। বর্ডার পার হয়ে গেদে, সেখান থেকে শিয়ালদাহ এক্সপ্রেস ধরে রাণাঘাট; এরপর ট্রেন বদলে বনঘগাঁও জংশন হয়ে হাবড়া; হাবড়া থেকে বারাসাত!
পথের বর্ণনা, স্টেশনের বর্ণনা, মানুষের বর্ণনা, খাবার-দাবারের বর্ণনা। বনগাঁও স্টেশনে দারুন একটা স্ট্রিট ম্যাজিক পারর্ফমেন্সের বর্ণনাও আছে। পাঠক, নিশ্চিত ভাবে দারুন এনজয় করবেন এই জায়গাটা। এছাড়াও পুরোনো মন্দিরের বর্ণনা, এর সাথে মিলিয়ে মন্দিরের ইতিহাস, পূজার্চনার বিবরণ, এবং দেব-দেবীদের ইতিহাসও পাবেন পাতার পর পাতা জুঁড়ে।
বারাসাতের আমাডাঙা কালী মন্দির থেকে ফেরার পথে ওরা একটা হোটেলে রাতের খাবার খায়। এই খাবারের বর্ণনাটা অসাধারণ। তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। শ্যামলের মুখেই শুনুন না হয়:
"সুখাদ্য হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম আমরা। আলুভর্তা, ইলিশ মাছ ভাজি আর অড়হরের ডাল। সেই সাথে সেদ্ধ বাসমতী চালের ভাত অর্ডার করলেন কাকা। সেদ্ধ ডিম, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ কুচি দিয়ে আলু ভর্তার স্বাদই আলাদা। এরপর এলো নরম করে ইলিশ মাছ ভাজি। সম্ভবত লেবু, লবন, হলুদ দিয়ে জারিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রথমে আলুভর্তা দিয়ে এক থালা, এরপর ইলিশ মাছ ভাজি দিয়ে প্রায় আধা প্লেট খেয়ে ফেললাম। সবশেষে এলো ঘি দিয়ে রান্না অড়হরের ডাল। এই ডালের কোন জবাব নেই। সাক্ষাৎ অমৃত। লেবু চিপে নিয়ে ডাল মেখে খেতে গিয়ে মনে হলো আরও দু প্লেট ভাত খাওয়অ যাবে। ধপধপে সাদা বাসমতী চাল এমনিতেই খুব সরু আর হালকা। খেয়ে অসামান্য তৃপ্তি পেলাম।"
বহুদিন পর কোন বইয়ে এত চমৎকার একটা খাবারের বিবরণ পড়লাম। পাঠক, এই বর্ণনা পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো, আহ্, যদি সত্যি সত্যিই সুখাদ্য হোটেল ও রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে পারতাম। কি দারুনটাই না হতো। আর বর্ণনা পড়ে স্বীকার করতেই হলো হোটেলের নাম সার্থক।
এখন কথা হচ্ছে মজার মজার খেলেই তো হবে না। ছোট ভাইকে তো উদ্ধার করতে হবে। পারবে কি সেটা শ্যামল আর ভবতোষ বাবু?
পাঠক, পারলো কি পরলো না, জানতে হলে পড়তে হবে মুহম্মদ আলমগীর তৈমূরের নোভেল "বেতাল"। প্রকাশ করেছে বিবলিওফাইল। চমৎকার প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছেন লর্ড জুলিয়ান। সাথে আছে দারুন অনেকগুলো ইলাস্ট্রেশন।
"বেতাল" ২০২২ এর পড়া প্রথম বই। মন্দির এবং তীর্থস্থানগুলোর ডিটেইলস বর্ণনা এবং সাথে প্রসঙ্গিক ইতিহাস পড়তে ভালোই লেগেছে। যদিও, এক জায়গায় একটু বোরিং ছিলো। বইটাতে হ���র এলিমেন্ট আছে, তবে তুলনামূলক ভাবে কম।
শুরুর দিকে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পরপরের কিছু বর্ণনা আছে, কুষ্টিয়া শহরকে কেন্দ্র করে; এছাড়াও শ্যামল আর ভববোষ বাবু যখন দর্শনা বর্ডার ক্রস করে, তখন কলকাতা থেকে বাংলাদেশের লোকজন তখন ফিরছিলো, সেই সব টুকরো টুকরো বর্ণনা বেশ চমৎকার ছিলো।
১৬ই ডিসেম্বরে শ্যামলের বাবা মৃত্যুটা বেশ কমিক ছিলো। এই ভদ্রলোক অসুস্থ্য হন মূলত পাঁচ ডিসেম্বরে কুষ্টিয়া শহরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বম্বিং এর সময়। এই বম্বিং এর দারুন কমিক বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। এরপর ১৫ তারিখ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। কিন্তু ১৬ তারিখের বিজয়োল্লাসের ডামাডোলে আর টিকলেন না!
নিতান্তই ব্যক্তিগত মতামত হলো, শেষটা আমার ভালো লাগে নাই। যে পরিমান টেনশন তৈরি হয়েছিলো কাপালিকের ক্ষমতাকে ঘিরে, সেই পরিমানে দ্বন্দ বা একশন হয় নাই। শেষটায় একটা জমজমাট একশন ডির্জাভ করে। তারপরেও এই বইটা পড়ার সময়টা ভালোই এনজয় করেছি।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকের প্রেক্ষাপটে লেখক রচনা করেছেন 'বেতাল' উপন্যাসিকাটি, যা কাকা ভবতোষ আর শ্যামলকে নিয়েই এগিয়েছে শ্যামলের জবানে। যেখানে যুদ্ধ শেষ হতেই কাকা ভবতোষকে নিয়ে শ্যামল বেরিয়ে পড়ে ভাই সমুকে খুঁজতে, এক প্রতিবেশীর কাছে ভাইয়ের এক সাধুর সাথে ভারতের পথে প্রান্তরে ঘুরার খবর পেয়েই। তারপর শুরু হয় ভবতোষ কাকা, শ্যামল আর আমার এক চমৎকার যাত্রা।
লেখক এই যাত্রার বর্ণনা এমনই সহজ সাবলীল ভাবে দিয়েছেন যে, পড়ার সময় মনে হয়েছে সব কিছুই চোখের সামনে ঘটছে। তীর্থস্থান, ইতিহাস - ঐতিহ্য, খাবারের চমৎকার বর্ণনা, পারিপার্শ্বিক অবস্থাটা লেখক যেভাবে তুলে ধরেছেন তা খুবই উপভোগ করেছি।
বইটির দুই তৃতীয়াংশ জুড়েই বলা যায় ভ্রমণ কাহিনি উঠে এসেছে যা ছিলো খুব বিশদ, আর অতিপ্রাকৃত উপাদান খুব কমই রয়েছে বইয়ে। মাঝখানের দিকে গিয়ে কাহিনি অনেকটা স্লো হয়ে গিয়েছিলো। বিশেষ করে ঘাটের বর্ণনায় এসে বিরক্ত বোধ করেছিলাম, তবে তারপরই গল্প আবারও গতি ফিরে পায়। শেষের দিকে এসে ভবতোষ কাকার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন দেখে অনেকটা অবাক হয়েছিলাম, তবে এন্ডিংয়ে এসে লেখক ভালোই চমকে দিয়েছেন, সাথে পারিপার্শ্বিক যে আবহা তৈরি করেছিলেন তা সত্যি চমৎকার ছিলো। বইটির নামকরণের হেতু বুঝতে পারবেন একেবারেই শেষে গিয়ে।
বইটির প্রোডাকশন, প্রচ্ছদ, ভিতরে থাকে অনেকগুলো চিত্রকর্ম সবই চমৎকার হয়েছে।
মুহম্মদ আলমগীর তৈমুরের লেখা গল্প এর আগে অডিওবুক হিসেবে সানডে সাসপেন্সে শুনেছিলাম। সত্যি বলতে কি,লেখকের লিখনশৈলী ও গল্প বলার ধরন আমার ভীষন ভালো লেগেছিল। কোন বিষয়ে বিস্তর পড়াশুনা করেই যে উনি লিখতে বসেন তা তার গল্পগুলো পড়লেই বোঝা যায়। 'বেতাল' আমার পড়া লেখকের প্রথম বই। যদি বলি বইটা পড়ে কেমন লেগেছে তাহলে বলব— ভালো লেগেছে বইটা,তবে আরো ভালো হতে পারতো। শ্যামল ও ভবতোষ কাকার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমনের বর্ণনা খুব উপভোগ করেছি। তার ফাকে ফাকে ভবতোষ কাকার অভিজ্ঞতার গল্পও কাহিনীতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। লিখনশৈলী নির্মেদ,কোন অপ্রয়োজনীয় বর্ননা নেই। একবসায় পড়ে শেষ করে ফেলা যায় বইটা। তবে আক্ষেপ রয়ে গেল ক্ল্যাইম্যাক্সে,পাঠক হিসেবে আমার কাছে ক্লাইম্যাক্সটা বেশ গুরুত্বপূর্ন। কারণ ক্লাইম্যাক্স ভালো না হলে যত ভালো গল্পই হোক না কেন তার আবেদন অনেকটাই হারিয়ে যায়। এত সুন্দরভাবে শুরু হওয়া কাহিনীটার শেষটা বড্ড অগোছালো ও তাড়াহুড়ো করে লেখা হয়েছে বলে মনে হলো। লেখক চাইলেই শেষটা আরেকটু গুছিয়ে লিখতে পারতেন। তাতে আমার আক্ষেপটুকু অন্তত ঘুচে যেত।
সব মিলিয়ে, মুহম্মদ আলমগীর তৈমুরের লেখা 'বেতাল' বইটা আমার মোটামুটি ভালো লেগেছে।
তৈমূর স্যারের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড একটা বই হচ্ছে "বেতাল"। রকমারি, গুডরিডস সহ সব জায়গাতেই এটার রেটিং আশ্চর্যজনক ভাবে খুবই কম। অনেকেরই বইটি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখেছি আবার অনেকের কাছে ভালো লাগেনি। কিন্তু আমার কাছে এই বইটিও বেশ ভালোই লেগেছে। জানিনা স্যারের লেখার ভক্ত বলে হয়ত উনার সব লেখাই আমাকে টানে!!🫠
তবে গল্পে শুধু "শ্যামল ও ভবতোষ কাকার" রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার বর্ননাই প্রায় বইয়ের ১১০+ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ;এজন্য অনেকের কাছে ব্যাপারটা বোরিং লেগেছে কিনা জানিনা! তবে শেষের দিকের ৫০-৬০ পৃষ্ঠার বর্ণনা এবং গল্প শেষের পরিণতি পড়ার পর সত্যি বলতে আমার একটুও আফসোস হয়নি বরং মনে এক অদ্ভূত ঘোরলাগা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।
শেষে দারুণ টুইস্ট ছিল,সরাসরি কোনো উপসংহার লেখক টানেননি বরং বরাবরের মতোই পাঠকদের চিন্তা-ভাবনার খোরাক জোগানোর চেষ্টা করেছেন। তবে গল্প শেষের পরিণতি সহজেই অনুমেয় ছিল।
বেশ কিছু দিন আগে "বেতাল" বইটা পড়ার মাধ্যমে ফাইনালি স্যারের সব বই পড়া শেষ হলো,এখন নতুন বই "নজ্জুমি কিতাব" এর অপেক্ষায়।✅
P.R: 1.75/5 DISAPPOINTED :( "বেতাল" বইটির সারসংক্ষেপ ও জনরা দেখে বেশ উৎসাহ নিয়েই শুরু করেছিলাম পড়া। কিন্তু সে উৎসাহে গুড়ে বালি। There's toooo much details & description. পড়তে পড়তে আক্ষরিক অর্থেই আমার মনে হয়েছে যে হয় ইতিহাস পড়ছি নতুবা ভ্রমণ বই। আমি রীতিমত কিছু পৃষ্ঠা স্কিপ করে গিয়েছি ভ্রমন বৃত্তান্ত এড়ানোর জন্য যা আমি সাধারণত করিই না বলতে গেলে। বিবরণগুলো অবশ্যই সুন্দর তবে ইতিহাস, পুরাণ, মিথ, রোমাঞ্চ, ফ্যান্টাসির যুগলবন্দীটা ঠিক হয়ে উঠে নি। বলা যায় সঠিক ব্যাল্যান্সটা ছিল না।
ইতিহাসের উপর লেখকের বিস্তর জ্ঞ্যান, রিসার্চ, অনিন্দ্যসুন্দর বর্ণনা ও ভ্রমণ বৃত্তান্ত, পুরাণের অন্তনিবেশ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। বর্ণনা পড়ে সবকিছু যেন একদম চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। Unfortunately, these were not enough.
ওহ, বলতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। বিবলিওফাইলের প্রোডাকশন কোয়ালিটি টপ নচ হয়েছে। Loved it.
বাবাকে হারানোর পর দিশেহারা শ্যামল বেরিয়ে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছোটো ভাইয়ের সন্ধানে, সঙ্গী হলেন বাবার বন্ধু ভবতোষ বাবু। ভাই নাকি সাধক মহাবলের শিষ্য হয়ে গেছে, কিন্তু সেই সাধক কোথায়? ভাইকে উদ্ধার করতে কতদূর পাড়ি দিতে হবে তাকে? পারবে কি সে তার ভাইকে ফিরিয়ে আনতে?
গল্পটি বিশেষতই একটি ভ্রমণকাহিনী ধাঁচের। নামের সাথে এটিকে একটি অতিপ্রাকৃত উপন্যাস হিসেবে ভেবে ফেলা ঠিক হবেনা, যা লেখক নিজেও বলেছেন। সময় নিয়ে লেখক গল্পের প্লট তৈরি ��রেছেন, তবে গল্পের শেষটায় হতাশ হয়েছি। হরর এলিমেন্ট এর অভাব বোধ হয়েছে ভালোই। লেখকের অন্যান্য গল্পের তুলনায় এটি জমেনি সেভাবে। ভ্রমণকাহিনী হিসেবে দেখলে ভালো লাগবে। তবে শেষটা কি সত্যিই বেতাল হয়ে গেল?.... তা নির্ভর করবে পাঠকের ওপর।
স্যারের বই আমি পড়া শুরু করি হররের নেশায়। বেতাল বইটিতে হরর এলিমেন্ট ছিল না। বেতাল আমাকে একটা সুন্দর ভ্রমণযাত্রার আবেশে নিয়ে গেছে। প্রতিটি জায়গার বর্ণনা এত সুন্দর করে তৈমুর স্যার লিখে গেছেন, মনে হয়েছে নিজের চোখে সব দেখছি। শেষে বলব প্রধান গল্পটি আরো একটু প্রসারিত হলে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগতো।
ধর্মীয় ইতিহাসের চাদরে মোড়া অতিপ্রাকৃত এক অভিযাত্রা। উপন্যাসের পাতায় পাতায় উপভোগ্য উপাদানের অভাব নেই। খুব ধীরে ধীরে মূল ঘটনার সত্রপাত করেছেন। তাই পাতায় পাতায় গা ছমছম করা ভাব না থাকলেও সইয়ে সইয়ে এক অসাধারণ অলৌকিক অনুভূতি জড়ো হতে থাকে।