‘...এরপর টানেলটা পেরিয়ে গেলেই টেপাগুড়ির জঙ্গল। 66 একবার ট্রেন জঙ্গলে ঢুকে গেলে বাই হবে বাক, ট্রেন যেন না থামে। আমার কথাটা বুঝঙ্গে? যাই দ্যাখো না কেন, যাই হোক না কেন, এই জঙ্গলে ট্রেন থামবে না। কোনোভাবেই না। বাজীদের জীবন-মরণ ব্যাপার কিন্তু। বুঝেছ?”
টোপাগুড়ির জঙ্গলে কেন বারবার ট্রেন থামাতে বারণ করতেন সেনবাবু? কী আছে সেই জঙ্গলে? আখিদা আসলে কী? কেন রাতের আঁধার নামলে তার নাম মুখে নিতেও ভয় পার মানুষ। কী হবে বসন এক শীতের রাতে কুয়াশামাখা জঙ্গলে থেমে যাবে কক্সলতিকা এক্সেেপ্র চাকা? কারা বেঁচে ফিরবে? কারাই বা হবে আখিদার শিকার?
আখিদার অতীত কী? কোন ভয়ংকর রহস্য লুকিয়ে আছে কুড়ুল-কন্যার অতীতে? আখিদার শেষ কি আদৌ সম্ভব? কিন্তু কীভাবে? কী হবে যখন শুরু হবে কুড়ুল-কন্যার অস্তিম অধ্যায়?
অভিশপ্ত জঙ্গল, পরিত্যক্ত অ্যাসাইলাম, রহস্যময় মৃত্যু, না-পুর হওয়া প্রতিশ্রুতি আর কিছু অলৌকিক শক্তি... সব মিলিয়ে দমবন্ধ করা, আতঙ্ক ও টান টান উত্তেজনায় মোড়া ব্রিজিং করের লেখা সম্পূর্ণ হরর-থ্রিলার উপন্যাস ‘আখিদা'।
খুব একটা কিছু আশা না করেই যে হতাশ হওয়া যায়, তার চরম নিদর্শন 'আখিদা'। ত্রিজিৎ করের লেখনীর সঙ্গে পরিচয় হয় ফেসবুকের ভূত ভূতুম গ্রুপে, তার লেখা উপন্যাস পড়ে দেখার ইচ্ছে ছিলো অনেকদিন। সাথে বইয়ের প্রচ্ছদখানা ভালো, পাল্পি গোছের। একখানা হালকা চালের ভয়ের গল্পের প্রতিশ্রুতিমান। তবে বইখানা যে এরকম হিলিয়াম বেলুনের ন্যায় ভারহীন হবে, সেটা আশা করি নি। নীটফল, আমার এই পুরোদস্তুর হতাশা।
গল্পের শুরুতে পাঠকের পরিচয় ঘটে আলিপুরদুয়ারগামী কল্পলতিকা এক্সপ্রেসের সাথে। এই ট্রেনের যাত্রাপথ উত্তরবঙ্গের টোপাগুড়ির জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। যে অরণ্যের গহীন গভীরে রাতের আঁধারে ট্রেন থামানো নিষেধ। কী এমন আছে এই জঙ্গলের মাঝে? কেই বা এই রহস্যময় চরিত্র আখিদা? কেনই বা রাতের বেলা নেওয়া যায় না তার নাম?
প্রশ্ন অনেক। এবং যে কোনো পোড় খাওয়া পাঠকের কাছেই এ জিনিস ভীষণ চেনা। খুবই গড়পড়তা হরর গল্পের সেট-আপ। অভিশপ্ত জঙ্গল, বিকল রেলগাড়ি, জনা পনেরো (হরির লুটের বাতাসা ন্যায়) যাত্রী। সঙ্গে উপস্থিত সেই কুড়ুল কন্যা। বাংলা হরর সাহিত্যে শেষ কবে কোনো অলৌকিক স্ল্যাশার পেয়েছিলাম মনে পড়ে না। সেই নিরিখে, আখিদার রুপায়ন বেশ অভিনব। ভালোই বোঝা যায়, এই ভয়াল চরিত্রের বৈশিষ্ট্যে মজে রয়েছিলেন লেখক। যেখানে একটা ভালো গল্প বলার চেয়ে, আখিদাকে দিয়ে নৃশংস হত্যালীলা চালানোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। কোথায় গিয়ে যেন আখিদাকে মাইকেল মায়ার্স বা ফ্রেডি ক্রুগার জাতীয় একটি হরর ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করায় বেশি উদগ্রীবতা দৃশ্যমান। আধুনিক বাংলা হররে যা একটা চেনা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রথম গল্প, 'আখিদা : দুঃস্বপ্নের রাত', নিখাদ সারভাইভাল হরর। অনেক চরিত্র, প্রচুর মৃত্যু। বেশীরভাগ চরিত্রই কাগজসদৃশ, এবং ভীষণ একমাত্রিক। কোনো মৃত্যুই তাই মনকে সেই অর্থে নাড়িয়ে যায় না। চোখে লাগে কিছু ভীষণ দুর্বল সংলাপও। দ্বিতীয় গল্প, 'আখিদা : কুড়ুল কন্যার অন্তিম অধ্যায়'-এ লেখক খতিয়ে দেখেন আখিদার ব্যাকস্টোরি। নতুনত্বের অভাব, যৌনতার সংমিশ্রণ, আরো একগুচ্ছ নতুন চরিত্র। সব মিলিয়ে, দ্বিতীয় অধ্যায় আরো দুর্বল, এবং কিছুটা হলেও বিরক্তিকর। প্রতি চ্যাপ্টারের শুরুতে একটি করে বাংলা-ইংরেজি উদ্ভৃতি একটি পর্যায়ের পরে হাস্যকর হয়ে দাড়ায়। বেশ কিছু পর্বের শেষটুকু ভীষণ অতিনাটকীয়, চমকপ্রদ ক্লিফহ্যাঙ্গারের প্রচেষ্টায় লেখকের বারংবার ellipsis এর ভুল প্রয়োগ এবং বিস্ময়বোধক চিহ্নের অপপ্রয়োগ। মনে হয় যেন ফেসবুকে কোনো একটি পর্বের ইতি টানছেন। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু।
লেখক ভূমিকায় বলছেন বইটি তিনি প্লিজিং হরর ঘরানায় লিখেছেন। বইজুড়ে নৃশংস ভয়াল রস, সে কথাই বলে। তবে দুঃখের বিষয়, প্লিজড্ হওয়া দূরের কথা, আখিদার সংস্পর্শে এসে আমি যাকে বলে, "কোয়ায়েট ডিসপ্লিজড্!" পোড় খাওয়াদের বাদ দিলে, নতুন কোনো পাঠক এ বই থেকে কিছু খুজে পেলেও পেতে পারে। যদি চান, তবে কোনো লঘু বিদেশি হরর ছবি দেখবার মত করে একবার পড়ে ফেলতেই পারেন। না পড়লেও ক্ষতি নেই। আমার আবার 'ঝুমনি'টা কেনা রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে লেখককে আর একটা সুযোগ না দিলেই নয়।।
মেয়ের ডায়লগটা এখনো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।সত্যি বলতে গল্পের প্লট কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর। দারুন পছন্দ হয়েছে । লেখক তার সাবলীল ভাষায় সুনিপুন ভাবে একের পর এক দৃশ্যর বর্ণনা দিয়ে গেছেন। যা আপনাকে বইটি রেখে উঠতে দেবে না কিছুতেই । কিছু দৃশ্য আছে যা পড়লে রীতিমত গায়ে কাঁটাও দেবে। মোটের উপর সন্তুষ্ট।
এবার আসি গল্পে। কল্পলোতিকা এক্সপ্রেস- শিয়ালদা থেকে আলিপুরদুয়ারগামী একমাত্র ট্রেন । পথেই আছে একটি টানেল, যার অন্ধকার শরীর ফুড়ে বেরোলেই দেখা যাবে কুয়াশা মাখা গায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অভিশপ্ত টোপাগুড়ির জঙ্গল। ওই অভিশপ্ত জঙ্গলেই বাস এক অমানবিক সিরিয়াল কিলার কুড়ুল কন্যা 'আখিদা'-র। রাতের অন্ধকারে কেউ এই নাম নিলেই সেটা হয় তার শেষরাত। তার মৃত্যু হয় ওই জঙ্গলেই।
ব্যাস, এরপর যথারীতি ঘটনার ঘনঘটা। তবে কিছু প্রশ্ন মাথার মধ্যে বারবার ঘুরেফিরে আসবেই। কে এই আখিদা? কি তার অতীত? কি তার লক্ষ্য? কেন নৃশংসভাবে সে মানুষগুলোকে হত্যা করে?
এবার আসি বইটির কমতি নিয়ে। গল্পে প্রচুর চরিত্রের দেখা পাওয়া গেলেও তাদেরকে লেখক আরেকটু ডেভেলপমেন্ট করতে পারতেন। এতো এতো চরিত্রের মৃত্যু , কিংবা গল্পের প্রধান দুটি চরিত্রের মৃত্যুও আমাকে প্রভাবিত করতে পারে নি।
তো যারা গতিময় হরর থ্রিলার পছন্দ করেন তারা চোখ বুঁজে হাতে নিতে পারেন। হতাশ করবে না আশা করি।
আমি ত্রিজিৎ করের লেখনীর ভক্ত। গ্রামীণ আবহ ফুটিয়ে তোলার দক্ষতায় হোক বা তন্ত্রধর্মী লেখার খুঁটিনাটি বিবরণের নৈপুণ্যে, তাঁর লেখার মধ্যে একটা গভীরতা পাওয়া যায়, যা সবার লেখায় থাকে না। কিন্তু এটা তিনি কী লিখেছেন?!? এই বইয়ে দুটো লেখা আছে। তারা হল~ ১) আখিদা: দুঃস্বপ্নের রাত; ২) আখিদা: কুড়ুল-কন্যার অন্তিম অধ্যায়। দুটো লেখাই অকারণ বীভৎসতার বিবরণে ঠাসা। একই কথার পুনরুক্তিতে সেগুলো পড়াই ক্লান্তিকর। সর্বোপরি যুক্তিবুদ্ধি একেবারে বিসর্জন দেওয়ার ফলে বিভিন্ন ঘটনা, দৃশ্য, আর চরিত্র মোটেই বাস্তবানুগ হয়ে উঠতে পারেনি। না; এ-লেখা আমার একেবারেই ভালো লাগল না।
বইটিতে মোট দুটি গল্প আছে - ১) আখিদা : দুঃস্বপ্নের রাত ২) আখিদা : কুড়ুল কন্যার অন্তিম অধ্যায় আখিদা - টোপাগুড়ির জঙ্গলে রাতের বেলা যার নাম নিতে নাই। নাম নিলেই সেটাই হয় তার শেষ রাত,আখিদা তাকে মেরে ফেলে।
গল্প দুটো পড়তে ভালোই লাগছিল। হ্যা ভয়ও পেয়েছি বেশ। তবে আমার কিছু খারাপ লাগাও আছে, এই যেমন - 👉🏼একই কথার পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যেটা বড্ড বিরক্তির কারণ। ওই যে " কু.... ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক.../ কাহা যা রহে থে?স্টেশন তো আ গায়া।" 👉🏼 পরপর একইরকম ভাবে আসছে, আর মানুষগুলোকে কুপিয়ে মেরে যাচ্ছে।মেরেই যাচ্ছে, মেরেই যাচ্ছে....উফফ্। 👉🏼 বন্দুক দেখিয়ে একে অপরকে জোর পূর্বক আখিদার নাম বলার খেলা চালু - এই ব্যাপারটাও একঘেয়েমির।
বইয়ের প্রচ্ছদ দেখেই বিষয় অনেকটা আন্দাজ করে নিয়েছিলাম।তবে এতকিছুর পরেও বলবো, পাঠক একবার বইটা শুরু করলে, শেষ না করে ছাড়তে পারবে না।
প্রথম অংশ "আখিদা : দুঃস্বপ্নের রাত" বেশ ভালো, ঝড় বৃষ্টির রাতে অন্ধকার জঙ্গলে রাতের ট্রেনের থেমে যাওয়া, পিশাচ আখিদার আবির্ভাব ইন্টারেস্টিং। তবে দ্বিতীয় অংশ "আখিদা : কুড়ুল-কন্যার অন্তিম অধ্যায়" একদম যাচ্ছেতাই রকমের বাজে, মনে হয় জোড়াতালি দিয়ে জগাখিচুড়ি করে লেখা। ভালো একটা কাহিনির এর চেয়ে বাজে এন্ডিং দেওয়া মনে হয় সম্ভব হত না।
বইটি আমি অনেক আশা নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম এবং পড়া শেষ করার পড় খুব আশাহত হলাম। একজন ভূত, অতৃপ্ত আত্মা যাই বলুন একটা নেগেটিভ এনটিটি হিসাবে আখিদা চরিত্রটাকে একেবারেই দাঁড় করাতে পারেননি লেখক। সিরিয়াল কিলার প্লাস অতৃপ্ত আত্মা দুটো একসাথে দেখাতে গিয়ে পুরো ঘেঁটে গেছে সব। আরো অনেক জিনিস আছে, যেগুলি এই বইটিকে অনেক দূর্বল বানিয়ে দিয়েছে। যেমন-
১| থ্রিলার বা ট্যুইস্ট এর নামে যাকে যখন খুশি খারাপ দেখিয়ে দেওয়া। ২| ট্রেনে প্রায় সবাই, লাইন দিয়ে বন্দুক হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার যে যাকে পারছে বন্দুক দেখিয়ে নাম বলাচ্ছে। ৩| আর বারবার ঐ একটা ডায়লগ এতবার বলা হয়েছে, "কাহা যা রাহে থে..." । এতবার রিপিটেশন হয়েছে, খুব বিরক্তিকর লেগেছে।
ঘটনাগুলোর পেছনে, যে কারণগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো খুবই দূর্বল। লেখকের থেকে ভালো লেখা আশা করেছিলাম।
অনেকদিন পর বেশ দারুন একটা ভূতের গল্প। যদিও কিছু কিছু দৃশ্য আজকাল সিনেমায় দেখার দৌলতে অনেকটা চেনা, কিন্তু রাতের বেলায় লেপ মুড়ি দিয়ে এরকম একটা গল্প জম্পেশ।।।।
🍁 এইমাত্র পড়া শেষ করলাম সুলেখক ত্রিজিৎ করের লেখা অসাধারণ একটি উপন্যাস "আখিদা"। এটিই লেখকের লেখা, আমার পড়া প্রথম উপন্যাস। এবং প্রথম উপন্যাস পড়ার পরেই ওঁনার লেখনীর দুর্ভেদ্য মায়াজালে আমি দিশাহীনভাবে জড়িয়ে পড়েছি। এ মায়াজাল থেকে নিস্তারের কোনো পথ আমার জানা নেই, আর জানা থাকলেও আমি কখনো এই মায়াবী জাল ছিন্ন করে আর বাইরে বার হতে চাই না। আমি বইটার সম্বন্ধে অনেক শুনেছি, কয়েকটা রিভিউ পড়েছি ফেসবুকে। কিন্তু এটা আমি ভাবিনি যে কি আশ্চর্যভাবে বইটা আমাকে নিজ বশে নিয়ে চলে আসবে। উপন্যাস টা পড়া শেষ করেও এক সুদৃঢ় আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে আছে আমার সমগ্র শরীর-মন। উপন্যাসের বিষয়বস্তুটা আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে, প্রতিটি রন্ধ্রে যেন মিশে গেছে অদ্ভুতভাবে। জানি এ ঘোর বহুদিন যাবত আমার কাটবেনা।
🍂কি অসাধারণ একটা উপন্যাস পড়লাম!! বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় মিশে আছে ভয়, দুঃখ, আনন্দ, ভালোবাসা আরও এমন কত নাম না জানা অনুভূতিরা। একবার পড়া শুরু করলে বইটা শেষ না করা পর্যন্ত পাঠকের নিস্তার নেই। এক অদৃশ্য আকর্ষণ যেন এক বৈঠকে বইটা শেষ করার জন্য একপ্রকার বাধ্য করবে।
☠️"আখিদা" একটি হরর-থ্রিলার। লেখক গল্পটিকে এমন ভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন যে পড়তে পড়তে যেমন ভয়ে হাড় হিম হয়ে আসবে তেমনই মারাত্মক সাসপেন্স প্রতিমুহূর্তে অসম্ভব চমকের মাধ্যমে উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য এবং সমস্ত রহস্য উদঘাটনের জন্য প্ররোচিত করতে থাকবে। আমার মতে এটি একটি সার্থক হরর-থ্রিলার।
🍂লেখক এমন সুনিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন যে উপন্যাসটা পড়ার সময় সমস্ত দৃশ্যগুলো আমার চোখের সামনে ঠিক সিনেমার মত চলছিল। প্রকৃতি,আবহাওয়া,সূক্ষাতিসুক্ষ অনুভূতি, আসন্ন বিপদ তাঁর কলমের নৈপুণ্যে তিনি এমন সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে পড়াকালীন দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো। পাশাপাশি কিছু মিষ্টি সম্পর্ক যেমন মনে সুখানুভূতির সঞ্চার করেছে তেমনই নৃশংসতা, বর্বরতা, পাশবিকতার অসহ্য বর্ণনায় ভয়ে হাড় হিম হয়েগেছে রীতিমতো। উপন্যাসটা পড়ার সময় ঠিক কোনো হলিউড হরর-মিস্ট্রি সিনেমা দেখার মতো অনুভূতি হচ্ছিলো। ত্রিজিৎবাবুর লিখনশৈলী সত্যিই অসাধারনত্বের দাবি রাখে।
🖤 চরিত্র চিত্রন খুব সুন্দর। উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্রকে খুব সুন্দরভাবে বুনন করেছেন লেখক।পড়ার সময় তাই প্রতিটা চরিত্রের সাথেই একাত্ম হতে পেরেছি এবং আমিও সঙ্গী হতে পেরেছি তাদের এই যাত্রার।
🍁লেখক মাঝে মাঝে প্রতিটা অনুচ্ছেদের শুরুতে বেশ কয়েকজন মহান ব্যাক্তির কিছু উক্তি উল্লেখ করেছেন যেগুলো ওই অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ বিষয়টা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
🍁 এটা যেহেতু বিভা পাবলিকেশনের বই তাই পেজ কোয়ালিটি, বাইন্ডিং, প্রুফ কারেকশন, প্রচ্ছদ এগুলো একদম টপ-নচ। বিশেষ করে বইয়ের প্রচ্ছদটি বেশ আকর্ষণীয় এবং উপন্যাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কিত। আমার দারুণ লেগেছে।
🍁 এবার উপন্যাসের বিষয়বস্তুর উপর একটু আলোকপাত করা যাক।আসলে এটি একটি উপন্যাস হলেও দুটি ভাগে বিভক্ত এবং দুটি অংশ মিলেই সম্পূর্ণ উপন্যাস। 🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
"কুউউউউ ঝিক ঝিক....ঝিক ঝিক.... কুউউউউ "
☠️আখিদা: দুঃস্বপ্নের রাত :- উপন্যাসটি শুরু হয় রাতের বেলার একটি রেল স্টেশনে। সেখানে আমরা দেখতে পাই দুজন ট্রেনের চালক একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে। কথোপকথন থেকে বোঝা যায় মধ্য বয়স্ক সেনবাবু নতুন জয়েন হওয়া সৃঞ্জয় নামের নবীন চালকটিকে বিভিন্ন বিষয়ে সাবধান করছেন । কারণ আজ প্রথম রাতের বেলা সে ট্রেন চালাবে এবং তার গন্তব্যস্থলের পথে পরবে একটি জঙ্গল... টোপাগুড়ির জঙ্গল। তিনি বারবার তাকে সাবধান করছেন যাই হয়ে যাক না কেন কোনোমতেই যেন ওই জঙ্গলে ট্রেন না থামানো হয়। আরও বলেন যে কোনভাবেই রাতের বেলা যেন জোরে জোরে "তার" নাম উচ্চারণ না করে। তাহলে নির্ঘাত মৃত্যু। এখন নিশ্চই বুঝতে পারছেন পাঠ প্রতিক্রিয়ার একদম উপরে আমি যে ইংরেজি বাক্যটি লিখেছি সেটি আসলে একটি সতর্কবাণী। সৃঞ্জয় অনেক জোর করায় সেনবাবু তার নাম উচ্চারণ করতে অসমর্থ হওয়ায় বাধ্য হয়ে একটি ডাইরিতে নামটি লিখে দেন। হাজার বারণ করা সত্ত্বেও সৃঞ্জয় উচ্চারণ করে ফেলে....."আখিদা"। কে এই আখিদা? কেন রাতের বেলা তার নাম নিতে নেই? টোপাগুড়ির জঙ্গলেই বা কি রহস্য লুকিয়ে আছে? কোনো কারনে ট্রেন গিয়ে থামে সেই অভিশপ্ত টোপাগুড়ির জঙ্গলে। ট্রেনের মধ্যে থাকা যাত্রীরা নিজের জীবন বাঁচাতে মেতে ওঠে এক পাশবিক মৃত্যুর খেলায়। কি হবে সেই খেলার শেষ পরিণতি ? তারা কি আদৌ বেঁচে ফিরতে পারবে?
☠️আখিদা : কুড়ুল-কন্যার অন্তিম অধ্যায় :- আগের অংশে আমরা জানতে পারি যে ৪ জন বাদে ট্রেনের সকল যাত্রীরা মারা গেছেন এবং অবশিষ্টরা নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে কোনোমতে পালিয়ে আসতে পেরেছে। এরপর এই অভিশপ্ত জঙ্গল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে। যারা বেঁচে ফিরে আসে তারা প্রতিজ্ঞা করে এই রহস্যের শেষ দেখে ছাড়বে ।এই পর্বে আমরা জ��নতে পারি "আখিদা" আসলে কে? কেন আঁধার নামলে তার নাম মুখে নিতে নেই? জানতে পারি তার মর্মান্তিক ইতিহাস সম্পর্কে । শেষ অবধি কি সমস্ত রহস্যের জাল উন্মোচন হবে? এই মৃত্যু লীলার আসল রহস্য কি? উপন্যাসে আমরা একটা অ্যাসাইলেমের কথা জানতে পারি। কি রহস্য লুকিয়ে আছে সেই অ্যাসাইলেমে? উপন্যাসের শেষে মারাত্মক একটি টুইস্ট আছে যা রীতিমতো পাঠককে বাকরুদ্ধ করে দেবে। লেখক উপন্যাসটি এমন একটি প্রশ্ন রেখে শেষ করেছেন যে আমরা নিশ্চিত এর দ্বিতীয় পার্ট খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে।।
যাই হোক গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা একটা উপন্যাস পড়লাম। সকলে অবশ্যই পড়ে দেখুন। ভয় পেতে বাধ্য আপনারা। লেখকের কলমের দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালো থাকবেন লেখক।