যশোধরা রায়চৌধুরী সাহিত্য জগতে এক ভাস্বর নাম। তাঁর একগুচ্ছ মৌলিক এবং অনুবাদ গল্পের অনবদ্য সংকলন অঙ্কিতের বুদ্বুদ। কবির চোখে কেমন করে ধরা পড়ে কল্পবিজ্ঞানের মানবিক মুখ? ছন্দের ছক ভেঙে কেমন করে তাঁর লেখনী খুঁজে পায় বিজ্ঞানের সামাজিক চেহারা? জানতে গেলে পড়তে হবে বইটি।
যশোধরা রায়চৌধুরীর জন্ম ১৯৬৫-তে, কলকাতায়। কল্পবিজ্ঞানলেখক দিলীপ রায়চৌধুরী ও শিল্পী অরুন্ধতীর কন্যা যশোধরা দর্শনের ছাত্রী। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারে কর্মরত। ১৯৯২ থেকে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ। জ্বরপরবর্তী, অমল ধবলে গরল লেগেছে ছাড়াও রচনা করেছেন বহু কাব্যগ্রন্থ, গল্পগ্রন্থ ও নিবন্ধগ্রন্থ। ফরাসি ভাষাচর্চা করেন। মূল ফরাসি ভাষা থেকে, তাঁর অনূদিত বই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (আনন্দ)। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার (১৯৯৮), বাংলা আকাদেমির অনিতা-সুনীলকুমার বসু পুরস্কার (২০০৬), বিনয় মজুমদার স্মৃতি সম্মান (২০১৬), সৃষ্টিসুখ সম্মান (২০১৯), ২০২৩ সালের দ্য টেলিগ্রাফ-এর ‘শি অ্যাওয়ার্ডস’। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্মান’-এ সম্মানিত (২০২৪)।
অগ্রজ সাহিত্যিক যশোধরা রায়চৌধুরী'র কল্পবিজ্ঞান-বিষয়ক একগুচ্ছ মৌলিক ও অনূদিত কাহিনি স্থান পেয়েছে এই সুমুদ্রিত বইটিতে। এদের মধ্যে বেশ কিছু গল্প কিশোরপাঠ্য, অন্যগুলো প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের জন্যই রচিত হয়েছিল। সবগুলোই একসঙ্গে না রেখে সম্পাদক এদের আলাদাভাবে বিন্যস্ত করলে পারতেন। মৌলিক রচনাগুলো হল~ ১) অংকিটের বুদ্বুদ (অনীশ দেবের সম্পাদনায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে প্রকাশিত 'সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান: সেকাল থেকে একাল' বইয়ে এটি স্থান পেয়েছে); ২) যন্ত্র-না; ৩) যন্ত্রণানিরোধক যন্ত্র; ৪) নৈয়ায়িক বটকৃষ্ট; ৫) টিট্টিভ; ৬) জানালা (মার্গারেট অ্যাটউডের ভাবনার প্রত্যক্ষ অনুসারী এই কাহিনিটি নিঃসন্দেহে এই বইয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা— কিন্তু সংলাপের প্রয়োগের বদলে এটি প্রায় পুরোমাত্রায় ন্যারেটিভ-নির্ভর বলে পড়াটা ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে); ৭) সূর্যশেখরের ধাঁধা; ৮) সবুজ মানুষ ইনকর্পোরেটেড (বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের চার কিংবদন্তির রচনা 'সবুজ মানুষ'-এর পরবর্তী অধ্যায়); ৯) হরিহরবাবু ও সেই রোবো; ১০) মাঠের আড্ডা; ১১) ওয়াই টু কে ফর্টি। এই গল্পগুলোর প্রায় সবক'টিই শীর্ষেন্দু ও লীলা মজুমদারের শিশুপাঠ্য কল্প-ফ্যান্টাসির ধারায় পাঠকমনে আনন্দ সঞ্চার করতে চেয়েছে। তবে তারও মধ্যে কোথাও হয়তো রয়েছে ন্যায়, যুক্তি, মানবিকতা এবং যান্ত্রিকতার ভেদরেখা নিয়ে এক নিজস্ব বিশ্লেষণের চেষ্টা। যে-সব অনূদিত কাহিনি এই বইয়ে স্থান পেয়েছে, তারা হল~ ১. কাঁঠালতলা; ২. কপালের ভাঁজে; ৩. জীব দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি; ৪. উজ্জ্বল বিভ্রম; ৫. শোকগাথা; ৬. মেরিলিন। এদের অনুবাদ মূলানুগ; তবে গল্পগুলো আমার মোটেই পোষায়নি। গল্পগুলোতে ছোটো-ছোটো হেডপিস থাকলে বইটা আরও নয়নসুখকর হত। অলমিতি।