Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.
The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ৩৫ টি অতিপ্রাকৃত গল্প নিয়ে সাজানো এই অতিপ্রাকৃত সংকলন। বিভূতির হরর বলতে অনেকে জনপ্রিয় তারানাথ তান্ত্রিক বুঝলেও অন্যান্য গল্পগুলোও কিন্তু কম যায় না। গল্পগুলো অধিকাংশ-ই ১৯৩০-৪০ সালের দিকে লেখা। স্বভাবতই ট্র্যাডিশনাল হরর। কিন্তু বিভূতির মন্ত্রমুগ্ধকর বর্ণনায় প্রাণ পেয়েছে গল্পগুলো। প্রত্যেকটা গল্পের প্রেক্ষাপট-ই ব্রিটিশ ভারত। কয়েকটা গল্পে বাংলাদেশের কয়েকটা জেলারও দেখা পাবেন। বিশেষ করে দুই তিনটে গল্প সুন্দরবন নিয়ে। বিভূতির বর্ণনায় ব্রিটিশ ভারতবর্ষ ও অতিপ্রাকৃত উভয় দৃশ্য-ই চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। কয়েকটা গল্প সন্ধ্যা কিংবা মাঝরাতে পড়তে গিয়ে গা শিউরে ওঠেনি বললে ভুল হবে। গুণী শিল্পী ওয়াসিফ নূরের তুলিতে আঁকা ছবিগুলোতে আরও জীবন্ত লেগেছে গল্পগুলো। আগেই বললাম সব গল্পই দারুণ। তবুও কয়েকটা গল্প এগিয়ে থাকবে। নিঃসন্দেহ প্রথমে থাকবে তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প দুটো। এরপর থাকবে মেঘমল্লার, খুঁটি দেবতা, প্রত্নতত্ত্ব, রঙ্কিনিদেবীর খড়গ, ছায়াছবি, তিরোলের বালা, উপসর্গ, অভিশাপ গল্পগুলো। গল্পগুলো থেকে সম্ভবত সত্যজিৎ রায়ও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
প্রত্যেকটা বাঙালি হরর ও ছোটগল্পপ্রেমীর জন্য মাস্টরিড বই। ধন্যবাদ চিরকুট প্রকাশনীকে বইটি হাতে তুলে দেয়ার জন্য।
বই : অতিপ্রাকৃত গল্পসমগ্র লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
সহজ-সরল শব্দে প্রকৃতিনির্ভর সাবলীল সাহিত্য রচনা-ই সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের মূল শক্তি। এই অসামান্য গুণটির কারণেই সীমাহীন খ্যাতি তাঁকে ধরা দিয়েছে। তবে,তাঁর সাহিত্যজীবনের শক্তিশালী আরেকটি দিক হচ্ছে - তাঁর সৃষ্ট বৈচিত্র্যময় অতিপ্রাকৃত গল্প সমূহ। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এমনকি আন অব্দি এত সহজ-সাবলীল শব্দে, এত সাধারণ প্লটনির্ভর অসাধারণ ও বৈচিত্র্যময় অতিপ্রাকৃত গল্প কেউ লিখে উঠতে পারেননি। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় কর্তৃক রচিত এমনই পঁয়ত্রিশটি চমৎকার গল্প সংকলিত করা হয়েছে এই বইটিতে। উল্লেখ্য যে, প্রায় প্রতিটি গল্প-ই ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সাল অব্দি সময়ে অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিলো এবং গল্পগুলোর প্রেক্ষাপট ব্রিটিশ ভারত কেন্দ্রিক।কতিপয় গল্পে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের একটি অংশ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের সুন্দরবনের বর্ণনাও উঠে এসেছে।
অতিপ্রাকৃত গল্পসমগ্র মূলত বিভূতভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের শক্তিশালী লেখনীতে উঠে আসা কতিপয় অতিপ্রাকৃত ঘটনার আখ্যান।প্রতিটি গল্পেই লেখক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নির্ভর নিতান্ত সাধারণ গ্রাম্য পরিবেশে গা ছমছমে ভূতুড়ে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মিশ্রণ ঘটাবার সুনিপুণ চেষ্টা করেছেন এবং আমার মতে,এই চেষ্টায় তিনি দারুণভাবে সফল হয়েছেন।আমি বরাবরই বিভূতির লিখনশৈলী এবং ভাষাশৈলীর একজন ভক্ত। তাই এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি! বিপুল আশা নিয়ে পড়তে শুরু করা বইটা শেষ করেছি আরো অনেক বেশি মুগ্ধতা নিয়ে। আরো একবার বিভূতিবাবুর অসামান্য লিখনশৈলীতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছি। তবে, সবচেয়ে বেশি নম্বর দেবো তারানাথ তান্ত্রিকের দুটো গল্প কে। পাশাপাশি এগিয়ে থাকবে, মেঘমল্লার,অভিশাপ,রহস্য,ছায়াছবি, রঙ্কিণীদেবীর খড়্গ। চমৎকার প্রচ্ছদ আর বইয়ের পাতায় পাতায় অসামান্য ভাষাশৈলীর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া চিত্রকর্ম বইটিকে অনন্য করে তুলেছে।
পরিশেষে বলতে চাই, মোটা মোটা বই পড়ে যখন হাঁপিয়ে উঠবেন তখন এই গল্পগুলো পড়ে শান্তি পাবেন কিংবা রিডার্স ব্লকে পড়ে গেলে এইসব চমৎকার ছোটগল্প আপনাকে রিডার্স ব্লক থেকে উঠে আসতে ভীষণভাবে সাহায্য করবে।
ভয়ে কাটা দিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকবেন এমন না গল্প গুলা, তবে বিভূতিভূষণীয় গ্রাম ও প্রকৃতির গা ছমছমে বর্ণনায় প্রায় প্রতিটা গল্পই হয়েছে অনন্য। পড়তে খুবই ভালো লাগলো।
চিরকুট প্রকাশনীর হার্ডকভার নয়; বরং বুকফার্ম থেকে প্রকাশিত "ভয় সমগ্র" সিরিজের বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-রচিত গল্পের সংকলনের রিভিউ এটি। বলা ভালো, বইয়ের বদলে তাতে সংকলিত চৌত্রিশটি গল্প নিয়ে আমার মুগ্ধতার প্রকাশই থাকবে এতে। হ্যাঁ, অপার মুগ্ধতা ছাড়া অন্য কোনো অনুভূতিই প্রকাশ করা চলে না এই গল্পগুলোকে নিয়ে। কেন? প্রথমত, অলৌকিক বা অতিলৌকিক কাহিনির শিকড় যে কতটা মানবিক হতে পারে, তা এদের না পড়লে বিশ্বাস হবে না। মানবিক বলতে আমি মনস্তাত্ত্বিক বা আধ্যাত্মিক কিছুর কথা বলছি না। হাসি আর কান্না, লোভ আর মহত্ব, ঘৃণা আর ভালোবাসা— এইসব দিয়ে ভরা থাকে আমাদের এই ক্ষুদ্র অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্ব যখন অন্তর বা বাহিরের চাপে ভেঙে পড়ে, তখন কীভাবে তার মধ্যে জন্ম নেয় অলৌকিক— সেটির এত সূক্ষ্ম অথচ শৈল্পিক রূপ আর কারও লেখায় পাওয়া যায় না। কোনো গল্পের আলাদাভাবে নাম নেওয়ার দরকার নেই। পাঠকমাত্রই তাদের চেনেন, জান্রন, পাতা ওল্টান, আর ভাবেন যে কীভাবে ওই নিতান্ত সহজ মানুষটি এমন করে আমাদের অনুভূতির সন্ধান পেলেন! দ্বিতীয়ত, লেখাগুলোর মধ্যে এক অদ্ভুত কুশলতা আছে। তারা নাগরিক বা গ্রাম্য নয়। অতীতচারণ বা ঘটমান বর্তমান দ্বারা তারা চিহ্নিত নয়। বরং প্রকৃতির অনন্ত রহস্যের মধ্যে কয়েকটির দিকে তারা ইশারা করে। মনে হয়, মুহূর্তের জন্য হলেও আমরা যেন পৌঁছে গেছি কাহিনির চরিত্র ও স্থান-কালের মধ্যেই। যা ঘটছে, তা যেন আমারই অনুভব! লেখজ নিজে অদৃশ্য হয়ে যান; থেকে যাই শুধু আমরা। এ যে কত বড়ো দক্ষতার পরিচায়ক, তা যাঁরা অল্পবিস্তর লেখালেখি করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই মানবেন। তৃতীয়ত, এই গল্পগুলোর মধ্যে এমন দু'টি আখ্যান আছে, যাদের রক্ষণশীল সাহিত্য-সমালোচকেরা কোনোমতেই চাপা দিতে পারেননি। তাঁদের দ্বারা উপেক্ষিত, কার্যত ঘৃণিত অথচ অত্যন্ত বাস্তবিক একটি ধারা নীরবে অপেক্ষা করেছিল অনুকূল সময়ের জন্য ওই দু'টি গল্পের মধ্যেই। আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি 'তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প' এবং 'তারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্প'-র কথা বলছি। নব্য বঙ্গীয় সাহিত্য যে ওই দু'টি কাহিনির দ্বারা কতখানি প্রভাবিত, তা কি আর বলতে হয়? এই গল্পগুলো অবিস্মরণীয় এবং অতুলনীয়। উন্নাসিক সাহিত্যবোদ্ধারা হয়তো বিভূতিভূষণকে 'পথের পাঁচালি'-তেই বেঁধে রাখতে চাইবেন। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ পাঠকের কাছে এই গল্পগুলোই থেকে যাবে আশাবরী, মালকোশ, বা মেঘমল্লার হয়ে।
এই বিশেষ সংস্করণটি পড়া না হলেও বিভূতিভূষণের এই গল্পগুলো পড়েনি এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। এদের নিয়ে আলাদা করে কিছু লেখা অর্থহীন, কারণ ক্লাসিক সাহিত্য নিজেই নিজের সম্বন্ধে যা বলার তা বলে দেয়। কটি তারা খসল, কারণ এই বিশেষ সংকলনে "মেঘমল্লার" নেই। শুধু বাংলা ভাষায় নয়, বিশ্বসাহিত্যের সম্পদ এই অলৌকিক গল্পটা এই সংকলনে না-রাখা একটা অপরাধ। আর হ্যাঁ, প্রচ্ছদটা এমন শিশুতোষ না করলেই হত।
বিভূতিভূষণ সবচেয়ে প্রিয় লেখক। সেই চাদের পাহাড় পড়ে লেখকের লেখনীর উপর বিমোহিত। এই কয়েকদিনে শেষ করলাম ভৌতিক ও অলৌকিক গল্প বইটা। হরর বলা যায় না অলৌকিক বলা ই শ্রেয়। প্রতিটি গল্পে আদী একটা স্বাদ ছিল। প্রায় প্রতিটা গল্পই বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়া প্রেক্ষাপটে লিখা। তাই বলা যায় বৃষ্টির রাতে বইটি সেরা একটা সঙ্গী। বইটিতে তারানাথ তান্ত্রিকের ২ টি গল্পসহ মোট ২৪ টি গল্প রয়েছে।
This book was a nice experience. সবগুলো গল্পেই বিভূতির সিগনেচার প্রকৃতির বর্ণনা আছে কমবেশি। বইয়ের প্রচ্ছদটা আমার খুবই পছন্দের। প্রিয় গল্পের মধ্যে থাকবে টান, খুঁটি দেবতা, মায়া। সবচেয়ে মন খারাপ করা গল্প ছিলো মেঘমল্লার। তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র আগেই পড়া ছিলো, তাই ওই দুটো গল্প হিসাব থেকে বাদ রাখলাম।
বিভূতভূষণ এর শক্তিশালী লেখনীতে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার আখ্যান।প্রতিটি গল্পেই ছিলো গ্রামের মাটির গন্ধ,অপরূপ প্রকৃতির বর্ননা সাথে গা ছমছমে ভুতুড়ে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মিশ্রণ। প্রতিটি গল্পের শুরুতেই লেখক যেভাবে গল্পটা ফেঁদেছেন তা অনেক ভালো লেগেছে । সব গুলো গল্পই ভালো ছিল এর মধ্যে সব চেয়ে পছন্দের গুলো হলো অভিশপ্ত,মেঘমল্লার,তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প ২টি,মেডেল,টান,কাশী কবিরাজের গল্প ,মায়া,তিরোলের বালা,বোমাইবুরুর জঙ্গলে,খোলা দরজার ইতিহাস,উপসর্গ। গল্প গুলো একটানা না পড়ে অন্য কোনো বই এর মাঝে ফাঁকে ফাঁকে পড়ালে বেশী ভালো লাগবে।প্রায় প্রতিটা গল্পের শুরুটা একই রকম হওয়ার কারণে পাঠকদের অনেক সময় হয়তোবা একগুঁয়েমি লেগে যেতে পারে।
অতিপ্রাকৃত গল্প নিয়ে লেখা অবশ্যপাঠ্য একটা বই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই বলে কথা। কোনো কথা হবে না, বইটা পড়তে হবে।
বই থেকেঃ
''জীবনে অনেক জিনিস ঘটে, যাহার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় না — তাহাকে আমরা অতিপ্রাকিত বলিয়াই অভিহিত করি। জানি না, হয়তো খুঁজিতে জানিলে তাহাদের সহজ ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কারণ বাহির করা যায়।
মানুষের বিচার বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতালব্ধ কারণগুলি ছাড়া অন্য কারণ হয়তো তাহাদের থাকিতে পারে। ইহা লইয়া তর্ক উঠাইব না, শুধু এইটুকু বলিব, সেরূপ কারণ যদিও থাকে, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দ্বারা তাহার আবিষ্কার হওয়া সম্ভব নয় বলিয়াই তাহাদিগকে অতিপ্রাকৃত বলা হয়।''
নতুন বইপোকাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য-সহজপাঠ্য বই। রাতে পড়লে মজা লাগবে বেশি।
এক কথায় বললে ভালো লেগেছে। ভৌতিক গল্প হলেও গল্পগুলো পড়ে ভয় পাইনি। প্রায় সবগুলো গল্পই দারুণ ছিলো অভিশপ্ত,প্রত্নতত্ত্ব,,মেডেল, গঙ্গাধরের বিপদ, তারানাথ তান্ত্রিককে নিয়ে দুইটা গল্প,আরক এগুলো বেশি ভালো লেগেছে। মশলা- ভূত এবং পথিকের বন্ধু গল্প দুটো ভালোই হাসির ছিলো। বইতে কাশী কবিরাজের গল্প ও কবিরাজের বিপদের পুরোপুরি এক শুধু চরিত্রের নাম ভিন্ন। আবার দুটোরই প্রকাশকাল আশ্বিন ১৩৫৮। লেখক হয়তো ভুলবশত একই প্লটে দুটো গল্প লিখেছিলেন। আর শেষে গুডরিডসে ৩২০ পৃষ্ঠা উল্লেখ থাকলেও বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৩৬। বইটা যিনি এড করেছেন এটা আশা করি এটা ঠিক করা গেলে সংশোধন করে দিবেন।
অসাধারন অনবদ্য। একেতো শীতকাল তার ওপরে লেখকের বর্ননার মুন্সীয়ানাতে মাঝেমধ্যেই রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছিল লেপের নীচে থাকা সত্বেও। বিশেষ করে বউ-চন্ডীর মাঠের কথাটা বলবো। বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ এই দুয়ের স্বরুপ এমনভাবে তুলে এনেছেন লেখক সেটা বুকের ভেতরে ঘা মারে। আর তারানাথ তান্ত্রিককে নিয়ে লেখা গল্পদুটো বোধকরি বইয়ের শেষে থাকলেই মানাতো। ওগুলোই পরের গল্পগুলোকে ফিকে করে দিয়েছে। অধিকাংশ গল্পই অবশ্য অতিলৌকিকতার চেয়ে মনুষ্যত্বকেই প্রাধান্য দিয়েছে। পড়ে ভয়ও লেগেছে আবার আহারে বলে দীর্ঘশ্বাসও ছেড়েছি। এবার একটা গল্প বলি কেমন। আমার একজন ফেইরি গডমাদার আছে সম্ভবত। আমার খুব মধ্যাহ্ন পড়তে ইচ্ছে করছিল। আবার তখন সম্ভবত তিনতালার কনস্ট্রাকশন চলার কারনে আম্মুর হাতে ওরকম টাকাপয়সাও ছিলোনা। ইচ্ছা করলেই পিডিএফ নামাতে পারতাম কিন্তু পাইরেসি করবোনা এ আমার ধনুর্ভংগ পণ। আবার আম্মুকেও বলতে পারছিনা। বন্ধুবান্ধবরে বলার প্রশ্নই আসেনা। এরই ভিতরে ৬ সেপ্টেম্বর কল আসলো আমার নামে রকমারি থেকে প্রিপেইড পার্সেল এসেছে। আমি যেন নিয়ে যাই। এখানে বলে রাখি মফঃস্বলে বাড়িতে পৌছায়না, অফিসে যেয়ে আনতে হয় অ���লাইন শপের ডেলিভারি। গেলাম আনতে। দেখি সুন্দর করে র্যাপ করা। ওমা বাসায় এসে খুলে দেখি মধ্যাহ্ন অখন্ড। এবার আসি গতবছরের কথাতে। রকমারীতে কি এক উপলক্ষে ছাড় ছিল। সেই সুযোগে আমি বেশ বড় একটা bookhaul করেছিলাম। তো তার ভিতরে তারাদাস ব্যানার্জীর লেখা তারানাথ তান্ত্রিকের সব গল্প ও উপন্যাস ছিল। প্রথম দুইটা বাদে। সেদুটো তারাদাস বাবুর পিতার লেখা। কিন্তু কন্টিনিউয়িটি মেইনটেইন করা। এইবারও সেম অবস্থা। আমার টিউশনি নেই। তার উপরে ক্রিপ্টোকারেন্সী মাইনারদের জন্য হিউজ দামে জিপিউ কিনে আম্মুও খালি। ফ্রেন্ডরা কুষ্টিয়া তবুও আড্ডা দিতেও যাচ্ছিনা। হঠাত ফোন এসে যেন নিয়ে যাই। ওমা এসে দেখি এই বইটা। অথচ আমি অনলাইন অফলাইন কাউকেই বলিনি।
বিভূতিভূষণের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য- সাবলীল, প্রাঞ্জল, বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ড কে ভিজ্যুয়াল করে তোলা। এই বইয়েও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। কিছুক্ষেত্রে বর্ণনার কারণেই মূলত গল্পের আবহ তৈরি হয়েছে।
মোট ১৬টি গল্পের সংকলন। গঙ্গাধরের বিপদ, পৈতৃক ভিটা, অভিশপ্ত, মায়া, ছায়াছবি, কবিরাজের বিপদ, ছেলে-ধরা, নুটি মন্তর- গল্পগুলো বেশ ভালো লেগেছে।
বিভূতিভূষণ এর লেখার মান সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। উনার লেখাগুলোতে গ্রাম্য সমাজ,গ্রাম্য প্রকৃতি কিংবা পাহাড় অঞ্চলের বর্ণনাগুলো এত সুন্দর করে ফুটে উঠে যে পড়ার সময় মনে হয় ঠিক সেখানেই ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি। যেকোনো একটা প্লট তুলে সেটা পাঠকের চোখের সামনে প্রদর্শন করার ব্যাপারে উনার চেয়ে নিখুঁত খুব কম লেখকের হাতই দেখেছি আমি। সেটা সামান্য গ্রামাঞ্চলের ঘরবাড়ি হোক কিংবা মন্দির কিংবা পাহাড়ের উপরে কোনো উঁচু এলাকা। বিশেষ করে ভয়ের দৃশ্যগুলো বর্ণনা করার ক্ষেত্রে উনার অনবদ্য বর্ণনাগুলো খুবই চমৎকার লাগে পড়তে। আরেকটা ব্যাপারে বলতেই হয়, ছোট ছোট গল্পগুলোতেও উনি প্লট আস্তে আস্তে তৈরি করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অতিপ্রাকৃত গল্পগুলোতে লেখকরা হুটহাট করে ভয় দৃশ্যগুলোতে নিয়ে যান, পাঠকরা কিছু বোঝার আগে আবার সেই গল্পগুলো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বিভূতিভূষণে লেখার মানের কারণে গল্পগুলোর শেষ হলেও পাঠকের মধ্যে সেই গল্পের একটা হালকা আমেজ থেকে যায়। প্রায় ১০-১৫ দিন আগে পড়া এই বইটার আজকে পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখার সময় বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় দেখলাম প্রায় সবগুলো গল্পই আমার মনে আছে। যারা সাধারণত রহস্য গল্প, অতিপ্রাকৃত গল্প কিংবা ভয়ের গল্প পড়তে চান কিংবা পড়তে পছন্দ করেন,তাদের জন্য এটা একটা আদর্শ বই হবে। আমি বইটা আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরির জন্য কিনেছি। ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার জন্য এটা একটা আদর্শ বই। যে কোনো সময় আপনি এই বইটা বের করে পড়তে বসলেও ভালো লাগবে। আমি চিরকুট প্রকাশনীর এই বইয়ের প্রজেক্ট এর সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এত সুন্দর একটা প্রোডাকশন বের করার জন্য।
বিভূতিবাবুর যেসব লেখা সবচেয়ে আশ্চর্যান্বিত করেছে, তার প্রথম কাতারে থাকবে অতিপ্রাকৃত ছোটগল্প গুলো। গল্পগুলোর মধ্যে কনটেম্পোরারি সোশ্যাল কন্টেক্সট তুলে ধরায় অন্য রকম মাত্রা পেয়েছে।
কিছু কিছু গল্প মজার ছিলো, কিছু গল্প ক্রিপি টাইপের ছিল। অনেক দিন ধরে জমিয়ে জমিয়ে পড়েছি। তিরোলের বালা গল্পটা গা শির শির করার মতো ছিল এছাড়া টান গল্পটা ইমোশনাল ছিল। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম বিভূতি বাবুর অতিপ্রাকৃত গল্পগুলো গলধকরণ করবো। একদিন হসপিটালে বসে বসে শুরু করা আর এখন ঘরে ভরদুপুরে বসে শেষ করা। এক মলাটের ভেতর বিভূতি-ভূষণ এর লেখা সব "ভূত" এর গল্পের সমাহার এই বইটি কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু আউট অফ প্রিন্ট রকমারিতে ইবুক হিসেবে কেনা সংগ্রহে রাখার মত বই ভয় সমগ্রতেও এত গল্প নেই যতটা না ভয়ের তারচেয়ে গল্পের আদলে morality তুলে ধরেছেন লেখক। কিছু গল্পে লোভের শেষ অঙ্ক ফুটিয়ে তুলেছেন কিছু গল্পে স্নেহের টানে পরলোক এ পদার্পণ করেও ফিরে আসার গল্প করেছেন তিনি। সাথে আছে বিভূতির অতি যত্ন,পরম আদরের সাথে লেখা গ্রাম বাংলার বর্ণনা। সেই বাংলার চিত্র এখন ২০২৪ এ এসে সচরাচর চোখে না পড়লেও চিরস্থায়ী হয়ে আছে লেখকের বর্ণনায়। যেমন তার লেখা গল্পগুলো তে জমিদারদের বাড়ি কয়েক শতাব্দী ধরে টিকে থেকে জরাজীর্ণ অবস্থায় এসেও ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয় তেমনি তার লেখাও সাক্ষ্য দেয় গ্রাম বাংলার প্রাচীন সুন্দর মনোরম চিত্র কে
বইটিতে ৩৫টি অতিপ্রাকৃত গল্প আছে, তার ভিতরে মেঘমল্লার, খুঁটি দেবতা, তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প, তারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্প, রহস্য, নুটি মন্তর, তিরোলের পালঙ্ক গল্প গুলো আমার থেকে বেশি ভালো লেগেছে, তার ভিতর তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প গুলো তো দারুন ছিলো।
সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে লেখকের গল্প ফাঁদার পদ্ধতিটা, এমন ভাবে গল্পের ভিতর প্রবেশ করে যেনো সত্যিই এমন ঘটেছিলো। তাছাড়া গল্প গুলো ছিলো একটি আরেকটা থেকে ভিন্ন, রচনাভঙ্গিটাও অতিপ্রাকৃত একটা ভাব এনে দেয়। তবে দুটো গল্প 'কাশী কবিরাজের গল্প' এবং 'কবিরাজের বিপদ' প্রায় একই ছিলো।
চিরকুটের প্রোডাকশন আর ওয়াসিফ নূরের অলংকরণ বইটিতে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
বইটি পড়ার সময় মনে হবে যে এর ভেতর যেই ৩৫টি গল্প আছে তার বেশিরভাগের সাথে বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া অতিপ্রাকৃত ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া রয়েছে। ভূতের উপর লেখা বই পড়ে অযথা ভয় পাওয়ার থেকে অতিপ্রাকৃত গল্প পড়ে আনন্দ পাওয়াটা বেশ ভালো। এবং যৌক্তিকও বটে।
মোট ১৬ টি গল্প রয়েছে বইটিতে। তার মধ্যে "পৈতৃক ভিটা", "অভিশপ্ত", "মায়া", "টান", "নুটি মন্তর" উল্লেখযোগ্য। এগুলো ছাড়া বাকি কোন গল্পই মনে রাখার মত মনে হয়নি।