ভিন্নধর্মী ও চমৎকার উপস্থাপনা, টাইমিং সেন্স, দারুণ স্যাটায়ার, ডার্ক হিউমার সবই আছে এই বইতে। বইটি পড়ার সময় মানুষ অনেক জায়গায় দ্বিমত পোষণ করবে। যারা নিজের সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ তারা এই বই পড়ার সময় লেখককে গালি দিবে। যাদের 180 ডিগ্রি ভিন্নমত সহ্য করার ক্ষমতা আছে শুধু তারা এই বইটি পড়বেন।
বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ পোলাপান এই বইটা সহ্য করতে পারবে না। কতটুকু মারাত্নক একটা বই তা আমার রিভিউ পড়ে সামান্যও কেউ বুঝতে পারবে না। আমি শুধু আমার অনুভূতি প্রকাশ করছি। সমাজের শত শত কুসংস্কার, অনিয়ম, ভুল আপনি অনুধাবন করতে পারবেন বইটি পড়ে।
কিন্তু ভাই বইটা পড়ে রাগ কইরেন না সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি। আপনাদেরই তো যত কিছু খারাপ তার সমাধান করে ভালোতে তা রূপান্তর করতে হবে।
এইসব বই আমাদের অস্তিত্ব ও অস্তিত্ব-সংকটের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করে। ভেবে ভেবে আমরা দিশা পাই না। আমরা হারিয়ে যায় চিন্তার জগতে, চলে যায় যুক্তিতে। আমরা নিজের সাথে নিজে তর্ক করি, কেউ কেউ উত্তর পায় আবার কেউ পায় না।
এই বইয়ের কোনো লাইন আমি রিভিউতে তুলে ধরছি না। কারণ শত শত লাইন আমার ভালো লেগেছে। আমায় চিন্তিত করেছে। কাউকে সরাসরি আঘাত না করেও যে এত দুর্ধর্ষভাবে কোনোকিছু এত ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায় তা শিখেছি বইটি থেকে।
শুধু একটা কথা বলব, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজের সীমাবদ্ধবতা মেনে নিয়ে লেখার আঘাত লেখা দিয়ে, কথার আঘাত কথা দিয়ে দিতে হয়।
বেশিরভাগ সময় জনপ্রিয় বই পড়ে ঠকার কারণে এই বই নিয়েও দোলাচলে ছিলাম যে আসলেই ভালো কিনা। এটাতে লেখক খুব নতুন যে কথা বলেছেন তা না। চিন্তাশীল মানুষের কাছে খুব নতুন কিছু হয়তো মনে হবে না। মানা বা না মানা পরের ব্যাপার। তবে এরকম সাবলীলভাবে ভাবনাগুলো প্রকাশ করার দরকার ছিল। তবে জীবনানন্দের কবিতার লাইনটা বিকৃত করার বোধহয় দরকার ছিল না। এধরনের বিকৃতি লেখকের নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা সম্পর্কে এক ধরনের ধারণা প্রদান করে, হতে পারে ধারণাটা ভুল। নিজের পরিচয় দিলেই ভালো হয় আসলে। পরিচয়ের একটা প্রয়োজন রয়েছে। আজকাল অনেককেই দেখি পরিচয় লুকিয়ে বই লেখেন। নিরাপত্তার ভয়ে কি? নাকি পরিচয় দেয়ার মতো যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নন তাঁরা? কে জানে! কিছু কিছু প্রবন্ধ সত্যিই ভালো হয়েছে। একটু রিপিটেশন আছে যদিও।
অনেকদিন পর ফেসবুকে লিখছি। যে বইটি আমাকে লিখতে বাধ্য করলো, তার নাম ‘আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র’। প্রচ্ছদ দেখে হালকা রম্য'র গন্ধ পাওয়া গেলেও এর ভেতরের চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একে লিটারেরি ভ্যালু সম্পন্ন নন-ফিকশন বই বলা যেতে পারে। এখানে বর্ণিত বেশিরভাগ গরুই গ্রাজুয়েট, এখানে গরুরা স্লোগান দেয়, কোনো কোনো গরুর পিএইচডিও আছে। তবে সত্যিকারের গরু এবং বইয়ের গরুর ভেতর পার্থক্য শুধু পায়ের সংখ্যায় এবং লেজের অস্তিত্বে। চার পেয়ে গরুর বদলে দু'পেয়ে গরুদের নিয়ে লেখা এই বইটিকে আমি বলতে চাই অত্যন্ত ‘থটফুল’ এবং ‘আই-ওপেনার’।
বইয়ের প্রথম অংশে লেখক গরু সম্পর্কে যা বলেছেন তা পড়লে আপনারা হয়তো সামগ্রিক একটা ধারণা পেতে পারেন।
‘গরু একটি চতুষ্পদ প্রাণী, তার দুটি শিং ও একটি লেজ আছে— এরকম ধারণার সাথে আমি একমত নই। ক্ষমতাহীন সকল প্রাণীই গরু। তার পা চারটা থাকতে পারে, আবার দুটোও থাকতে পারে। এমনকি পা নাও থাকতে পারে। লেজ থাকাও জরুরি নয়। জরুরি হলো- অন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে তার পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে আক্রমণকারী প্রাণীর কাছে সে গরু।
আমরা যখন ‘গরু’ জবাই করি, তখন মূলত একটি ক্ষমতাহীন প্রাণীকে জবাই করি। যদি সে আমাদের চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর হতো, তাহলে আমরাই গরু হতাম। আমাদের মাংস খেয়ে বেড়ে উঠতো গরুর শরীর।......’
.
লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদকে চিনি ফেসবুকের কল্যাণে, মুনজেরিন শহীদের বই(সম্ভবত স্পোকেন ইংলিশ) নিয়ে একটি অ্যানালিটিকাল পোস্টের মাধ্যমে। ভেবেছিলাম এতটুকুই হয়তো। কিন্তু পরবর্তীতে যত দিন গেছে,লেখা পড়ে তত বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছি। তাঁর লেখা আবিস্কারের আনন্দ আমার কাছে পঁচা কাদার ভেতর মুক্তা খুঁজে পাওয়ার আনন্দের মতোই মনে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আপনারা যারা ভদ্রলোকের লেখার সাথে ইতিমধ্যে পরিচিত, তারাও একইরকম ভেবে থাকবেন।
১৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘সম্মান' শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদ তিনি শুরু করেছেন এভাবে— ‘সম্মান একটি সামাজিক রোগ। কোনো সমাজে ভালোবাসা কমে গেলে, এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। কোনো ব্যক্তি যখন দেখেন যে, তাকে ভালোবাসার কোনো কারণ মানুষের নেই, তখন তিনি সম্মান দাবি করেন। সম্মান হলো ভালোবাসার ঘাটতি পূরণের একটি কৌশলমাত্র।....’
বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে খুব সৌভাগ্যবান বোধ করেছি কারণ একজন অসম্ভব শক্তিশালী লেখকের আবির্ভাব হয়েছে বাংলায়। আপনারা কতজন তাঁকে পাঠ করেছেন কিংবা করবেন—সেটা বলতে পারছি না। তবে লেখক হিসেবে তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করবেন—এতটুকু নিঃসন্দেহে আশা করা যায়।
‘আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র’ বইটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য। এ বইয়ের হাত ধরে চিন্তার পরিবর্তন আসতে বাধ্য। বিশেষ করে,১৫-৩০ বছর বয়সীদের জন্য এ বইটি বিশেষভাবে রেকমেন্ড করতে চাই। কারণ এই বই দ্বারা মগজে গুঁতো খাওয়ার যে সমূহ সম্ভাবনা আছে, তা যত আগে ঘটবে—ততো দ্রুত নিজের এবং আশেপাশের মঙ্গল।
আহামরি বা 'চক্ষু খুলিয়া দেওয়া'র মতো বই বলে মনে হয় নি। আমাদের সমাজ,রাষ্ট্র, ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন সমস্যা, কূপমন্ডুকতা, গোঁড়ামি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখক কথা বলেছেন। তবে স্পর্শকাতর যেসব বিষয়ে আলোচনা এক্সপেক্ট করেছিলাম তার অনেক কিছুই পাই নি।লেখক সুকৌশলে বেশ কিছু সেন্সিটিভ টপিক ইগনোর করে গেছেন। বেশ কিছু গল্প/সমালোচনা বেশ ভালো। তবে সমাজ সংস্কার বিষয়ক বেশিরভাগ আইডিয়াই বাইরের পৃথিবী থেকে ধার করা। আমাদের সমাজের অবস্থা বুঝে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তার বিবরণ তেমন চোখে পড়ে নি। তবে আমাদের সমাজের আপামর জনগোষ্ঠীর জন্যে বইটা কাজে দিতে পারে। অন্তত হুজুগে বাঙালির আজাইরা ট্রেন্ড আর ইস্যু নিয়া নাচানাচিটা যদি একটু কমে আরকি।
উন্নতমানের স্যাটায়ার, ভালোই লাগলো। সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে লেখক ইনডাইরেক্ট কৃটিসাইজ করেছেন। উন্নত বিশ্ব থেকে ব���ংলাদেশ infrastructural দিক থেকে কমপক্ষে ২০০ বছর আর মেন্টালিটির দিক থেকে ( মেজরিটি বিবেচনায়: যাদের নিয়ে লেখক satire করেছেন) ৫০০ বছর পিছিয়ে আছে। এখন এই gap দুর করতে অবশ্যই বহির্বিশ্বের দিকে তাকাতে হবে কিন্তু ওদের এই আছে আমাদের এই নেই এইসব প্যাচাল পারলে আদতে লাভ হবে না । মোটকথা comparison এর parameter ঠিক লাগলো না। সমালোচনা করা সহজ কিন্তু চেঞ্জ আনাটা অনেক কঠিন। কারো হাতেই কোনো আলাদিনের চেরাগ নাই যে একটা ঘষা দিবে আর রাতারাতি সব বদলে যাবে। ভালো বই বলার আরেকটি কারণ লেখক যে সেক্টর গুলো নিয়ে লিখেছেন প্রতিটি সেক্টরেই প্রচুর কাজ হওয়া প্রয়োজন। পার্সোনালি বলতে গেলে ধর্মান্ধ গোঁড়া সম্প্রদায়ের সাইকোলজি নিয়ে যা মিন করেছেন সেসব দিক একদম খাপে খাপ মনে হয়েছে,আর কিছু ব্যাপার একটু এদিক সেদিক আছে। তবে বইয়ের একটা বিষয় লক্ষ্য করে খুবই অবাক হলাম একজন প্রকাশক বইয়ের প্রমোশনের জন্য " মগজে গুঁতো খাওয়ার ভয়" টাইপ মার্কামারা কথা বইয়ের শুরুতে কিভাবে লিখতে পারে!!! How ridiculous!!! এটুকু বাদে সবমিলিয়ে ভালো ই লাগলো।
প্রথাবিরোধী চিন্তা করতে পারেন মহিউদ্দিন মোহাম্মদ। অনেকদিন পর 'আউট অফ বক্স' একটা বই পড়লাম। প্রচলিত চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেছেন লেখক, মেতে উঠেছেন সেসব নিয়ে হাস্যপরিহাসে।
হুমায়ুন আজাদকে অনুকরণ করা সহজ। কিন্তু হুমায়ুন আজাদ হওয়া খুব কঠিন কাজ। পছন্দ করুন আর না-ই করুন, এটা স্বীকার করতে হবে যে হুমায়ুন আজাদ প্রতিদিন পয়দা হয় না।
মহিউদ্দিন মোহাম্মদ চেষ্টা করলে 'ভালো হুমায়ুন আজাদ' হয়ে উঠতে পারবেন।
বর্তমান সময়ের নানা ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে দারুণ স্যাটায়ারভিত্তিক লেখা। বইটা পড়তে গিয়ে বেশিরভাগ সময়েই বর্ণনার ভেতরকার সূক্ষ্ম রসবোধে চমৎকৃত হয়েছি। সমাজ কিংবা সংস্কৃতির নানা দিককে লেখক ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং আমার ক্ষেত্রে কিছু যায়গায় সফলও হয়েছেন বলা যায়। তাই প্রাপ্তমনস্ক বইপড়ুয়া, যাদের মেটাফরিক রম্য লেখা ভালো লাগে তাদের এই বইটিও ভালো লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদের জনপ্রিয় হয়ে ওঠা নন-ফিকশন ‘আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র’ পড়লাম। মনে হল কয়েকটা কথা লিখে রাখি। ঠিক রিভিউ বলব না। রিভিউ লেখার মত করে পড়া এখনো মনে হয় শিখিনি। শুধু পড়তে গিয়ে কী ভাবছিলাম সেসব কথার কিছু সংকেত রেখে যাওয়া।
প্রথমে একটা বিষয় নিয়ে বলি। আজকাল অন্য আরো অনেকের লেখায় এমনটা আমরা পাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অতিথিসেবা অথবা বেমালুম নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি এড়াতে সামাজিক মাধ্যমে হয়ত প্রথম এই ট্রেন্ড চালু হয়। এখানে সরাসরি কোন একটি দেশের কথা না বলে আকারে ইঙ্গিতে বলা হয়। যেমন ‘আফ্রিকার একটি দেশ’ কিংবা ‘এশিয়ার কোন একটি দেশ’ এইরকম কিছু। সম্ভবত আজ থেকে অনেকদিন পর এই বই কিংবা এমন আরো কিছু বই পড়তে গিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম বিভ্রান্ত বোধ করবে। (ধরে নিচ্ছি সেই অনেকদিনের আগেই ‘আফ্রিকার সেই দেশ’ থেকে নিপীড়নমূলক আইন বিদায় নেবে।) মূলত সেই প্রজন্ম ভাববে, যেসময়টাতে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি বৃদ্ধ জাতির এক কৃতি সন্তানের হাতে পদক তুলে দেওয়ার সময়ে হুইল চেয়ারের পাদানিতে পা ঠিক মত নেই বলে নিজে হাতে পায়ে হাত দিয়ে পা ঠিক জায়গায় বসিয়ে দেন, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার চিন্তায় সরকারি ভবন ভরিয়ে তোলেন হাঁস-মুরগির-তিতিরে, আদর করে ডাকেন ‘আসো, আসো, আসো, খেয়ে যাও’ (যেহেতু এসব ভিডিও হয়তো তখনো অনলাইনে রয়ে যাবে), তেমন একটা সময়ে লেখকেরা হয়ত আসলেই দেশকে নিয়ে লেখার কিছু না পেয়ে আফ্রিকার কোন দেশ কিংবা কোন অজানা ডিস্টোপিয়াকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছেন।
‘আধুনিক গরু-রচনা সমগ্রে’ এরকম কিছু উদাহরণ দেখিঃ পোশাক আর তার ক্ষমতা নিয়ে বলতে গিয়ে ‘এশিয়ার একটি দেশের বিশেষ বাহিনীর’ প্রসঙ্গ আসে। জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমের আরেকটি দিক নিয়ে বলতে গিয়ে ‘ডিস্টোপিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের কথা ওঠে। তিনি জানানঃ ‘ডিস্টোপিয়ার কিছু ব্যক্তি তাদের কাংক্ষিত ইউটোপিয়া রিভেরিকায় স্বর্ণ পাচার করে ঘরবাড়ি করেছেন বলে জানা গেছে। ডিস্টোপিয়াকে নরক বানিয়ে তারা বাস করছেন রিভেরিকার স্বর্গে। স্বর্গের নাম রেখেছেন ‘রাণীপাড়া’।’
সময়ে সময়ে বিভিন্ন বইয়ে লেখকেরা কিছু কিছু বিশিষ্টজনের পরিচয় সরাসরি না দিয়ে আকারে ইঙ্গিতে এমনভাবে দিয়ে থাকেন মনে হতে থাকে তারা কি স্রেফ ফিকশনাল ক্যারেকটার। মহিউদ্দিন মোহাম্মদ যখন শিক্ষা মানুষকে কিভাবে ভীতু করে তোলে এবং শিক্ষিত লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অনেকেই যে সাহসী ভূমিকা দেখাতে পারেননি সে কথা বলতে বলতে আয়োজন করেন আরেক ধাঁধার আসরঃ - এক অধ্যাপক ও লেখক স্কটল্যান্ড থেকে সংবাদপত্রে যুদ্ধের খবর নিতেন এবং লেখক নিশ্চিত সে সময়ে দেশে আসার সুযোগ থাকলেও তিনি আসতেন না। - শিক্ষিত এক-এর কথা বলেন যিনি এখন মার্ক্সের ছাত্র সেজেছেন। - শিক্ষিত দুইয়ের কথা জানা যায় যিনি এমন এক ভক্ত রেখে গেছেন যাকে টিভিতে ক প্রশ্ন করলে তিনি খ এর জবাব দেন। - শিক্ষিত তিনকে তিনি বলেন মাঝারি মানের কবি… - শিক্ষিত চার যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন যদিও যুদ্ধ করেননি। - শিক্ষিত পাঁচ অসুখপাঠ্য কিছু প্রবন্ধ লিখে গেছেন। - শিক্ষিত ছয় মরহুম। কিন্তু মৃত্যুর আগে ভাষাকে প্রচুর মারধর করেছেন। - শিক্ষিত সাত আমাদেরকে খুব বইপত্র পড়ান। - শিক্ষিত আট হলেন শিক্ষিত তিনের চেয়ে কয়েক ইঞ্চি বড় কবি ছিলেন।
মোটাদাগে লেখকের যুক্তি বুঝে উঠলেও আমার মস্তিষ্ক ঐ ধাঁধার জবাব খুঁজতে ব্যস্ত রয়ে যায়। এরা কারা? দুয়েকজনকে তো চেনা চেনা লাগে। যদিও আমি জানি ধাঁধার উত্তর জানাটা মূল পয়েন্ট এখানে নয়। তবু মনে কিন্তু কিন্তু রয়ে যায়।
লেখকের লেখা সাবলীল এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কিছু কিছু বাক্য ও প্যারাগ্রাফ পড়তে পড়তে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছের স্বাদ মিলছিল। সামাজিক মাধ্যমে লেখকের অনেক লেখায় যেমন অনেক ক্ষেত্রে নেমড্রপিং করতে দেখেছি, তেমনটা খুব একটা চোখে পড়ে না। তিনি তাঁর কথা, তাঁর আর্গুমেন্টগুলো দারুণ প্রাঞ্জল করে উপস্থাপন করেছেন। পড়ে আনন্দ পেয়েছি। সম্পাদনার মান ভালো ছিল। এজন্য প্রকাশক ও লেখককে ধন্যবাদ জানাই।
ভদ্রলোকের এবারের টয়োটা করোলা বইটিও পড়ব সেই ইচ্ছা আছে।
''কোনো সমাজে মিথ্যুক ও দালালের সংখ্যা বেড়ে গেলে, ওই সমাজে সত্য উচ্চারণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। সত্য হয়ে ওঠে তখন এক অপরিচিত আগন্তুক। তাকে বরণ করতে হয় নিঃসঙ্গ কাকের ভাগ্য। সত্যের মিনমিনে গলা মিথ্যের হাসির দুর্গ ভেদদ করে এখন আর আমাদের কানে সহজে পৌঁছোয় না। চোখ ফোলা বধূর মতো তার গোঙানি মিইয়ে রয় বাতাসে। সত্যের মাজা দালালের এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে যে, সে আর কিছুতেই দাঁড়াতে পারছ��� না সোজা হয়ে। কিছুদিন আগে সত্যকে আমি কোদাল দিয়ে আঘাত করেছিলাম। ভেবেছিলাম বরাবরের মতোই এবারও আমার কোদলটিই ভেঙে যাবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ঘুণে খাওয়া কাঠের মতো সত্য নিজেই ভেঙে পড়লো মর্মর করে। সত্যের এমন ভঙ্গুর শরীর আমি আর দেখিনি।"
লেখক খুব সহজ কিছু কথার মধ্য দিয়ে চিন্তাভাবনার অনেক খোরাক জোগালেন, প্রশ্ন করতে শেখালেন৷ এত চমৎকার এবং উপভোগ্য করে লেখা নন-ফিকশন স্যাটায়ার আগে কখনো পড়া হয়নি।
This book will always be on the list of my favourite books. The author recommended to take some time reading this book, not to read in one sitting. So that readers get some time to think and can realize what was meant to be said and understood. While reading this book, readers' minds and conscience will be pricked incessantly. Readers will get a whole new perspective about the existing situation mainly of our country and society. Reading this book will be an opportunity to remove the darkness from our view making us blind like slow poisoning. This is a must read book.
A quote from this book-" বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে অন্ধকারের বিরুদ্ধে কথা বললে টর্চলাইটেরা মিছিল বের করেন।"
একবার তো আমরা সূর্যকেও ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নাগাল পাইনি বলে করিনি।
প্রভু ভক্তিতে কুকুরদের একসময় খুব সুনাম থাকলেও, সম্প্রতি মানুষেরা তাদের এ সুনাম কেড়ে নিয়েছে।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এরকম কিছু বাক্য পড়ে পুলকিত হয়েছি। সবমিলিয়ে আধুনিক গরু-রচনাসমগ্র বেশ লেগেছে। মহির লিখনশৈলী ও উপস্থাপনা এনগেজিং। পড়তে আরাম লাগে। বিরক্তি আসে না।
সমাজের ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা একটি ব্যঙ্গধর্মী রচনা। বইয়ে সব লেখার মধ্যে লেখক যথেষ্ট পরিমাণে যুক্তি দিয়েছে , যা পড়ে লেখকের সাথে সম্মতি প্রকাশ না করলেও পাঠকের মধ্যে নতুন করে চিন্তা করার প্রবনতা জাগ্রত করবে।
স্যাটায়ার এবং ডার্ক হিউমারের সমন্বয়ে অসাধারণ সব প্রবন্ধের মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। বহু..বহুদিন পর কোনো লেখকের প্রবন্ধের ভাষা,স্যাটায়ারের ব্যবহার, সাহসী সব উচ্চারণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। ‘অসির চেয়ে মসি বড়’ এই প্রবাদটির বাস্তব রুপ আধুনিক গরু রচনাসমগ্রে দেখা যায়। লেখক তার ধারালো মসি দিয়ে ফালাফালা করেছেন সমাজ এবং দেশের অসঙ্গতিকে। একইসাথে ধাক্কার পর ধাক্কা দিয়েছেন পাঠকের চিন্তাশীল সত্তাকে। মহিউদ্দিন মোহাম্মদকে টুপি খোলা সম্মান,এমন একটা বইয়ের জন্য।
কিছু কিছু লেখা থাকে, যেগুলোর 'টাইমিং সেন্স' হয় মারাত্মক। 'কে লিখেছে, কিভাবে লিখেছে'র থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে 'কোন সময়ে লেখা হয়েছে এবং কেন লেখা হয়েছে' - এ বিষয়গুলো। এইসব লেখা আমাদের অস্তিত্ব ও অস্তিত্ব-সংকটের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবায়। আমরা ভাবি। ভেবে হয়তো কূলকিনারা পাই না, তবে পাবো একদিন নিশ্চয়ই; টিকে থাকার স্বার্থেই তা পেতে হবে।
প্রকাশকের কথাতে লেখা ছিলো বইটি সময় নিয়ে পড়তে, তাই আমি বইটি ২০ দিনের মতোই সময় নিয়ে পড়েছি। যাক, আমার কাছে মনে হলো প্রকাশক খুবই ভালো একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ধীরে ধীরে পড়তে, কারন এই বইয়ের স্যাটায়ারগুলো সময় নিয়ে পড়লেই ভালো, চিন্তা করতে বিশেষ সময় পাওয়া যায়। লেখকের নাম বিগত ১ বছর ধরে অনেকবারই শুনে এসেছি, ফেসবুকে তার কিছু লেখা পড়েছি এবং গুডরিডসে তার বইয়ের রিভিউগুলোও পড়েছি। বেশ অনেকদিন পর মনে হলো বাংলা ভাষায় এমন বিশ্লেষণধর্মী লেখা পড়লাম, এর আগে যদিও এমন সমাজ-দেশ-রাজনীতি-ধর্ম নিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য এবং স্যাটায়ার নয়তো কটুক্তি লেখা অনেক পড়েছিলাম তবে সম্প্রতি বের হওয়া বইতে এইসব নিয়ে লেখালেখি কমই পেয়েছি। সেই ব্রেকথ্রুটা মহিউদ্দিন মোহাম্মদ করে দিলো। যদিও ইতিমধ্যে উনার আরও অনেকগুলো বই বের হয়ে গিয়েছে এবং সেগুলোও খুব জলদি সংগ্রহ করে পড়ে নিবো। . বইটিতে যেই সংজ্ঞাবলীর পদাবলীগুলো রয়েছে এইগুলো বারবার পড়া যায়, লেখক লেখাগুলো লিখতে বেশ পরিশ্রম করেছেন বুঝা যায়। হয়তো এই পদাবলীগুলো পড়ে আপনিও হয়তো বিশেষ বিশেষ পদাবলী তৈরি করতে পারবেন। এই পদাবলীগুলো হয়তো আমি আরও অনেকবার পড়লেও বিরক্ত হবোনা। এছাড়াও আপনি মারাত্মক ধ্বাক্কা খেতে বাধ্য শুধুমাত্র "মানুষ এবং অন্ধকারের প্রশংসা" এবং "রাজনীতিক টুপি" লেখা দুটো পড়ে। হয়তো আপনার বিশ্ব এবং রাষ্ট্র নিয়ে মতাদর্শেও আসতে পারে বিশাল পরিবর্তন। হয়তো আপনি দেখবেন আপনার চারপাশের এতোদিনের সত্য নামক আয়না ভেঙ্গে পড়েছে। বইটিতে একটি লেখা আছে "ধর্ষণের সাথে পোশাকের সম্পর্ক" নামে, এই লেখাটা যখন পড়ছিলাম তখন বারবার মনে হচ্ছিলো লেখক আমারই বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা সুন্দর করে সাজিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন, আমি নিজেও অনেক জায়গায় এই পোশাক এবং ধর্ষণের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছিলাম ইতিপূর্বে, এবং অনেক চিন্তাও করেছি, আমারই সেই এলেমেলো চিন্তাগুলোকে এভাবে বইটিতে পাবো তা ভাবতে পারিনি। ভীষণ ভালো একটি বই, আশা করছি প্রতিবারই আপনার থেকে ভালো বই পেতে থাকবো।
আমি যেহেতু বর্তমানে একটি বিষয়ে পিএইচডি করছি, মহিউদ্দিন মোহাম্মদের লেখা 'আধুনিক গরু-রচনা সমগ্ৰ ‘ বইয়ের 'ছাগল ও তার পিএইচডি ডিগ্রি’ চ্যাপ্টারটা খুব ভালমতো রিলেট করতে পেরেছি। নিচে সেটার অংশবিশেষ তুলে ধরেছি। তার আগে সরল স্বীকারোক্তি দিচ্ছি- ছোটবেলা থেকে আমার নিজেরও ধারণা ছিল পিএইচডি করলে যেহেতু সম্মানিত ব্যক্তিদের তালিকায় ঢুকা যায়, কাজেই বড় হয়ে এই ডিগ্রি পেলে মন্দ হয় না। অথচ, অনার্স করতে করতেই টের পেয়ে গেলাম, যারা গবেষণাকে ভালবাসে না, ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চায় না, তাদের এই ডিগ্রির কোন প্রয়োজন তো দূরে থাক, এটা একরকম নিজের জীবন থেকে মূল্যবান কয়েকটা বছর নষ্ট করা।
——————
“পিএইচডির সাথে মানুষ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কেউ কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে পিএইচডি নিতে গিয়ে পরিণত হতে পারেন ছাগলে।”
“অপ্রয়োজনীয় পিএইচডি হলো সেগুলো, যেগুলো অর্জনের পেছনে কোনো একাডেমিক কারণ নেই। আছে সামাজিক কারণ। বাংলাদেশে অনেকেই পিএইচডিকে বিবেচনা করছেন সামাজিক মর্যাদা লাভের হাতিয়ার রূপে। কেউ হয়তো এমন একটি চাকরি করছেন, যেখানে পিএইচডির কোনো প্রয়োজনই নেই। কিন্তু তিনি উতলা হয়েছেন পিএইচডি নেওয়ার জন্যে। তার শখ হয়েছে, নামের আগে ‘ডক্টর’ লাগানোর। বাঙালির এমন মনোভাব তার চারিত্রিক হীনম্মন্যতার দিকেই ইঙ্গিত করে। সামাজিক মর্যাদার সাথে যে ‘ডক্টর’ শব্দটির কোনো সম্পর্ক নেই, এটি বুঝতে তারা নারাজ। উপরে ‘ডক্টর’ শব্দটির অর্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমি দেখিয়েছি যে, ডক্টরেট ডিগ্রি কোনো সামাজিক মুকুট নয়। এটি একটি প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডিগ্রি। কিন্তু ছাগলদের কাছে এটি এখন সামাজিক মুকুট! তাদের দাবি, ডিগ্রিটি না থাকলে নামটি একটু লম্বা করে বলা যায় না। এটি তাদের শিং! কিছু পরিস্থিতিতে এ শিং দিয়ে নিজেদেরকে তারা রক্ষা করে থাকে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এটিকে শিং হিশেবে গ্রহণ করেছে। কোনো বিষয়ে ‘শুধু আবুল’ এবং ‘ডক্টর আবুল’, এ দুইজন একই কথা বললে, ডক্টর আবুলের কথাকেই ছাগলসমাজ বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বাঙালির কোনো অনুষ্ঠানে, মোহাম্মদ জব্বার ও ডক্টর মোহাম্মদ জব্বারের গুরুত্ব এক নয়। ডক্টর মোহাম্মদ জব্বারের দিকে মানুষ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।”
“বাঙালি ধরে নিয়েছে, যার পিএচডি আছে তিনি মহাজ্ঞানী। আর যার পিএইচডি নেই, তিনি কিছুই জানেন না। ছাগলেরা এ সুযোগটিই নিয়েছে। তারা ভুয়া পিএইচডির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে অভিনয় করছে প্রকৃত পিএইচডিধারীর চরিত্রে। সমাজের মানুষ এ মনোভাব না পাল্টালে, পিএইচডির সামাজিক ‘মুকুট’ বেঁচে থাকবে, এবং ছাগলদের মাথায় এ মুকুট বিরাজ করবে চিরকাল। পিএইচডি নেবেন শুধু তারা, যাদের পিএইচডি দরকার। যারা গবেষণা করবেন, গবেষণা খাতে ক্যারিয়ার গড়বেন, অন্যদের গবেষণা শেখাবেন, বা যাদের আত্মবিশ্বাস আছে যে পিএইচডি থিসিসে উৎপাদন করতে পারবেন নতুন কোনো জ্ঞান, কেবল তারাই যেন পিএইচডি নেন। অন্যরা এ মুকুট-প্রতিযোগিতা থেকে অব্যাহতি নেবেন।”
—————— লেখাগুলো পড়তে পড়তে নিজের দিকে তাকাচ্ছিলাম। অনার্স লাইফের শেষের দিক থেকে আস্তে আস্তে গবেষণার প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো। একটুর জন্য মহিউদ্দিন মোহাম্মদের ছাগল হতে গিয়ে বেঁচে গিয়েছি বলে বিশ্বাস করি (বিশ্বাস ভুলও হতে পারে)! তবে বাংলাদেশে গবেষণার অবস্থা নিয়ে আমার নিজেরই কিছু কথা লিখতে ইচ্ছা করে। তাতে বাংলাদেশের অনেক গবেষক রাগ করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে গবেষণা শব্দের প্রতিশব্দ হলো খাবারের রেসিপি। এক রেসিপি ফলো করে দিনের পর দিন একই খাবার বানিয়ে কেউ কেউ বলেন- আজ একটা অন্যরকম কিছু করার এক্সপেরিমেন্ট করলাম!
বইটি পড়তে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে, আরে এই দৃষ্টিকোণ থেকে তো ভাবি নি বিষয়টা। লেখকের উপস্থাপনাও চমৎকার, যেন কোন উকিল তার সকল তথ্য উপাত্ত গুছিয়ে পেশ করছেন। উনার লেখনীতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের চিন্তার খোরাক আছে। অবশ্যই পাঠ্য একটি বই। আর লেখকের কাছ থেকে আরও অনেক দারুণ দারুণ বই আশা করি। গরুর শিং এর গুতো না খেলে এই কুম্ভকর্ণ জাতির ঘুম ভাংবে না।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখক যে খেলাটা খেলছে সেটা নিয়ে যত বলব তত কম হবে। এত কিছু বলতে গেলে স্পয়লায় হয়ে যাবে। তবে একটা কথা বলতে বাধ্য, লেখকের মাথা পুরাটাই একটা অস্ত্র।
স্যাটায়ারের ছলে লেখক সমাজের নানা অসঙ্গতির কথা বেশ সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। একটার পর একটা প্রবন্ধ পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি। লেখকের লেখনির সাথে যদি পাঠকের মনোভাব মিলে যায় তাহলে লেখা গুলো হয়ে উঠে আরো জীবন্ত, প্রাণবন্ত, এই বইয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়েছে। প্রবন্ধ, গল্প বা স্যাটায়ার যাই বলেন না কেন যেন একেকটা প্রবন্ধ একেকটা সত্যিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। মাস্টরিড একটা বই, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা এখনো সেই পুরনো যুগে বাস করে, ভুল বা অন্যায়কে সত্যি ভাবে, এখনো কুসংস্কার আগলে বাঁচে কিংবা ধর্ষণকে পোশাক দিয়ে জাস্টিফাই করে। এমন একটা বই লেখার জন্য লেখক সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। পাঁচে পাঁচ।
প্রথাবিরোধী / প্রতিষ্ঠানবিরোধী কোন লেখা আজকাল দেখতে পেলে অনেক সচেতন পাঠক সরু চোখে তাঁকান। এই বিরোধীতার পিছনের মূল চেহাড়াটা কিরকম? লেখক নিজেকে কোন কৌশলে আড়াল করছেন?
আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র নামটি শুনলেই ফিরে যেতে হয় সুদূর শৈশবে। যখন বেশিরভাগ বাঙালী খুব সম্ভবত প্রথম যে রচনা মুখস্থ করেছিলেন সেটি ছিল গরুর উপর। আমরা এই রচনা লিখার সময় একটি তথ্য বাদ দিলে নম্বর একটু কম দেয়া হত।
"গরুর লেজের গোড়ায় একগুচ্ছ চুল আছে। যা দিয়ে গরু মশা-মাছি তাড়ায়।"
এই লাইনটি ছিল রচনাটির এক্স ফ্যাক্টর।
আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র বইটিতে কিন্তু এক্স ফ্যাক্টর একটি নয়। অনেক বিষয় এবং সেসবের এক্স ফ্যাক্টরের কথা উক্ত গ্রন্থে চলে এসেছে। বাঙালির দৈনন্দিন জীবন, গ্রাম বাংলার কৃষিযোগ্য এবং অযোগ্য ভূমি এবং মনন থেকে শুরু করে শহরের ইটকাঠের অট্টালিকার করুন আখ্যান এখানে স্বতস্ফূর্তভাবে চলে এসেছে। বইটি বাঙালি জীবনের অসার প্রথা এবং প্রতিষ্ঠান নিয়ে সূচারুভাবে কথা বলেছে পাঠকের সাথে। একই সাথে প্রচন্ডভাবে আঘাত করেছে এসব অকার্যকর এবং অমানবিক প্রথা ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে।
এই ধরণের বই প্রথম পড়ছি না। বই পড়ার অভ্যাস থাকার কারণে প্রথাবিরোধী বইয়ের মধ্য দিয়ে অল্প বয়সে অস্বস্তি এবং একটু পরিণত বয়সে একধরণের স্বস্তি নিয়ে মধ্য দিয়ে ছুটে গেছি। আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র যেসব কারণে ভাল লেগেছে সেসবের মধ্যে অন্যতম হল বইটি যথেষ্ট ফাস্ট রিড। অন্তত আমার জন্যে। ছুটে যেতে সমস্যা হয়নি। লেখক নন-ফিকশন লিখেছেন বেশ কিছু জায়গায় গল্পকারের মত। শক্তিশালী লেখনীর কারণে এই বই পড়ার সময় মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়নি।
মানুষের চিন্তাভাবনা অস্বচ্ছ হওয়ার কারণে সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকা রাখে "কনফার্মেশন বায়াস"। অর্থাৎ কেউ যদি মনে করে সে যা জানে সেটিই শেষ কথা এবং সবচেয়ে সঠিক তখন সৃষ্টি হয় সকল বায়াস বা পক্ষপাতের মা এই কনফার্মেশন বায়াস। যা মানুষের চিন্তাভাবনাকে অভাবনীয় উপায়ে এমন কলুষিত করে ফেলে যে বেশিরভাগ মানুষজন আর ক্লিয়ার অথবা ক্রিটিকাল থিঙ্কার হওয়ার ধারেকাছে দিয়েও যেতে পারেন না।
এই বইয়ে লেখক কগনিটিভ সায়েন্সের বিভিন্ন বায়াস নিয়ে আলোচনা করেননি। বরঞ্চ বারবার তাঁর বিভিন্ন লেখায় মানুষের কনফার্মেশন বায়াস ভাঙার প্রচেষ্টা চালিয়�� গেছেন। তাঁর এই গ্রন্থ অনেকের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মানুষের চিন্তায় স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করতে পারে।
বই পড়েই বুঝা যায় যে সমাজ-রাষ্ট্রের বিভিন্ন ভুল সূত্র এবং অমানবিক নির্মাণের বিরুদ্ধে কলম বা কী-বোর্ড ধরেছেন মহিউদ্দিন মোহাম্মদ। বিভিন্ন বিষয়ে লেখকের ডেপথ অফ নলেজ এবং নতুন নতুন তথ্য দেখে বুঝা যায় যে তিনি মারমার-কাটকাট লেখাপড়া করে থাকেন।
বইয়ে একদম নতুন কিছু লিখেছেন লেখক সেটা বলছিনা। তবে অনেক পাঠকের জন্যে এসব বিষয় নতুন এবং আকর্ষনীয় মনে হতে পারে। অনেক পাঠক আবার আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। শক্তিশালি গদ্যলেখক হওয়ার কারণে মহিউদ্দিন মোহাম্মদের এই বই অনেক সচেতন পাঠকের ভালো লাগতে পারে।
গ্রন্থটি ইঙ্গিত, ইশারা, সংকেত এবং কিছু জায়গায় ক্লিশে সমৃদ্ধ। অনেকে এসবকে পরিত্যাজ্য মনে করেন। আমার মতে ইঙ্গিত, সংকেত বা ক্লিশে ভাষার শক্তি। যখন লেখক জানেন তিনি কি করছেন বা কি লিখছেন তখন এসব ক্লিশে আরো শক্তিশালি হয়ে ওঠে। তবে বইটি পড়ে বেশিরভাগের মনে হতে পারে যে ডিস্টোপিয়ায় বসে যেন এক ইউটোপিয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন লেখক। তবে এসব ইউটোপিয়া তো ইউটোপিয়া নয়। অনেক দেশে এসব বাস্তব। তাই একসময় আমাদের এই ভূ-খন্ডেও হয়তো বাস্তবে রূপ নিতে পারে এসব সুন্দর উদাহরণ।
সেই হিসেবে এই বই ভবিষ্যতের জন্য।
মহিউদ্দিন মোহাম্মদ সম্পর্কে বেশি কিছু জানিনা। খুব সম্ভবত তিনি প্রবাসে অধ্যয়নরত আছেন। তবে লেখক সম্পর্কে পরিচয়ের ফ্ল্যাপে তিনি যা লিখেছেন তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আরো ভালো লেগেছে লেখকের বই উৎসর্গ করার বিষয়টি।
"আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র " এটা বইয়ের নাম। ছোটবেলায় পড়া সেই গরুর রচনাকে আধুনিক ধাঁচে ফেলে নতুন করে লেখা গরু বিষয়ক কোন রচনা নয়। তবে এখানে সেই গরু( বিষয়) নিয়ে লেখা যা আমরা দেখছি, শুনছি, বুঝছি তবুও চোখে দেখে না দেখার ভান করে থাকছি। এর মধ্যে কিছু বিষয় আছে যে গুলো ব্যক্তি নিজের চেষ্টায় সুন্দর করতে পারে কিছু দায়িত্ব সমাজের ও রাষ্ট্রের। সমাজ বা রাষ্ট্র বললেও সেই ব্যক্তি বিশেষই চলে আসে কারন এগুলো নিজে চলে না চালনা করেন কিছু ব্যক্তি।
সূচি দিয়ে বেশ কয়েকটা বিষয়ের উপর লেখক বইটা লিখেছেন। কিছু চিরাচরিত ভুল ধারনা, মানুষের মানসিকতা, দেশের আইন, আইনের কলে পিষ্ট হয়ে বয়ে চলা একই ভাবে, সমাজ, সেই সমাজে বসবাস করা ক্ষমতাধর কিছু মানুষ, একই সাথে ক্ষমতাহীন মানুষের জীবন, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের দায়িয়ত্বহীনতা, সঠিক পর্যবেক্ষণনের অভাব, দূর্নীতি, ইশকুল, উচ্চ শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা ব্যবস্থার নড়বড়ে অবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন । এসবের সাথে সুন্দর সব পর্যবেক্ষণ ও উদাহরণ বিষয়ের সাথে।
কিছু বিষয় আছে যেখানে সব সময়ই দ্বিমত থাকে এবং কিছু মানুষ তার অবস্থান ও মানসিকতার ভিত্তিতে সেই বিষয়ে নিজের মতামত দেন, এমন অনেক বিষয় বইটাতে আছে। এসব বিষয়ের উপর লেখক আলোচনা করেছেন, জরিপ করে ফলাফল দেখিয়েছেন, নিজের বিচক্ষণ পর্যালোচনা ও সঠিক ব্যখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি অন্য দেশের সুন্দর ব্যবস্থা ও সেই দেশের আঙ্গিকে বিষয়টার তুলনামূলক আলোচনা।
কিছু চেনা জানা দেখা বিষয়। প্রতিদিন আমরা দেখছি, শুনছি অথচ বলছি না, বলার জায়গা ও হয়তো পাচ্ছি না। সেই সব চেনা জানা জিনিসগুলো লেখকের লেখায় যেন নতুন করে নিজেদের খারাপ অবস্থা নতুন করে দেখা, আফসোস ও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা। এগুলোর প্রতিকার কোথায় জানা। লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ ফেসবুকে তাঁর টাইমলাইনে এমন নানা বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত লিখে থাকেন, তেমন কিছু বিষয় নিয়েই "আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র "। চমৎকার এই বইটা পড়া দরকার, অনেকেই হয়তো অনেক বিষয়ে একমত হবেন না, গায়ে লাগবে তবে প্রতিটা বিষয়েরই নিজের মতামতের পরেন ঠিক বা ভুল বলে তো দুইটা দিক থাকে।
সামসময়িক সময়ের খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ একটা বই। ডার্ক হিউমার দিয়ে লিখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ সমাজের বিভিন্ন যায়গার যুগ যুধ ধরে চলে আসা কুসংস্কার গুলোকে আঘাত করেছেন। লিখার স্টাইলটাও বেশ; পরিবর্তি বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
"আধুনিক গরুর রচনা সমগ্র" বইটি ২০২৪ সালে শুরু করেছিলাম ২০২৫ এ শেষ করলাম। বইটা পড়ার সময় কতবার যে হুহু করে হেসেছি তার হিশেব নাই। পড়ার সময় একটি অনুভূতি হয়েছিল যে এটি শুধু একটি বই নয়, বরং সমাজের আয়না, যেখানে আমরা নিজেদের এবং আমাদের চারপাশের পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখতে পাই।
বইটি আমাদের সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা, সংস্কার, এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন । এটি লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ এর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ এবং গভীর চিন্তার ফসল, যেখানে স্যাটায়ার, ডার্ক হিউমার, এবং বাস্তবতার নির্মম রূপ একত্রিত হয়েছে। এই বইটি শুধু পাঠ করার জন্য নয়, বরং ভাবনার জগতে আলোড়ন তোলার জন্য সৃষ্টি।
বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে একধরনের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। কারণ, এটি সমাজের সেই দিকগুলোকে সামনে আনে, যা আমরা হয়তো চুপচাপ এড়িয়ে চলি বা স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেই। তবে লেখক সেগুলোকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, পাঠককে সেগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হতে হয়। বইটি কখনো হাসায়, কখনো তিক্ত সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়, আবার কখনো পাঠককে নিজের সীমাবদ্ধতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করতে শেখায়।
যারা ভিন্নমত গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত, তাদের কাছে এটি কঠিন বা অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে যারা নিজেদের মানসিক গণ্ডি প্রসারিত করতে চান এবং সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে চিন্তা করার সাহস রাখেন, তারা বইটির গভীরতা উপভোগ করবেন।
বইটি কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান দেয় না। বরং এটি পাঠককে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি এমন একটি মানসিক জগৎ তৈরি করে, যেখানে পাঠক যুক্তি এবং আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে বাধ্য হন।
"আধুনিক গরুর রচনা সমগ্র" এমন একটি কাজ, যা সরাসরি কাউকে আক্রমণ না করেও শক্তিশালী বার্তা দিতে সক্ষম। এর প্রতিটি লাইন পাঠকের মনের গভীরে গিয়ে তাকে নতুন দৃষ্টিতে সমাজকে দেখার সুযোগ দেয়।
এই বই পড়ার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, এটি সমাজের ভুলগুলো শুধুই সমালোচনা করার জন্য নয়, বরং সেগুলো ঠিক করার জন্য একটি অনুপ্রেরণা। লেখক আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, পরিবর্তন শুরু হয় নিজেকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে।
শেষ কথা যারা সৃজনশীল, মননশীল, এবং তীক্ষ্ণ চিন্তার জগতে প্রবেশ করতে চান, তাদের জন্য এই বইটি একটি অবশ্যপাঠ্য। যদিও আমি নিজেও এই বইয়ের কিছু বাক্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করি তারপরও বইটি অবশ্যইপাঠ্যের ���ালিকা��়।
মহিউদ্দিন মোহাম্মদের লেখার সাথে আমার পরিচয় বেশ অনেকদিনের, ফেসবুকে যুক্ত থাকার সুবাদে তার লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। বইটি কিনে রাখা হয়েছিল বেশ অনেকদিন আগে, অল্প একটু পড়ে তখন শেষ করার সুযোগ হয়নি। এবার রোজায় অপ্রত্যাশিতভাবে একটু লম্বা ছুটি পেয়ে পড়া হলো, একেবারে পাঠ্যবইয়ের মতো হাইলাইটার হাতে নিয়ে।
লেখকের সব মতামতে কি আমি একমত হই? হই না অবশ্যই। কিন্তু আমি জানি যে যা-ই তিনি লিখুন না কেন, পড়াশোনা করেই লিখছেন, কাজেই মতামতকে সম্মান করা বেশ সহজ হয় আমার জন্য। ফেসবুকে তার গুণমুগ্ধ ও তিতিবিরক্ত পাঠকের অভাব নেই। পড়াশোনা করেন জানি বলেই এই দুই দলের কোনো দলে না পড়েও আমার তার লেখা পড়ার আগ্রহ বজায় থাকে।
বইটি নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু নেই। প্রত্যেকটি প্রবন্ধ বেশ ধারালো, এবং সবচেয়ে বড়ো কথা প্রায় প্রতিটি বিষয়কে দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে সচরাচর কম প্রচলিত দৃষ্টিকোণ। প্রবন্ধের বইও যে এত সুখপাঠ্য হতে পারে, তা জানার জন্য হলেও বইটি প্রত্যেকের পড়া উচিত। সেই সাথে এও জানিয়ে রাখা প্রয়োজন মনে করি, বইটি পড়তে হবে উদার মনোভাব নিয়ে। সবকিছুর সাথে একমত হতে হবে এমন কথা নেই, কিন্তু পড়তে বসে তালগাছটি আমার জাতীয় মনোভাব ধরে রাখলে বইটির সম্পূর্ণ ভাবটা অনুধাবন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
ভালো বই চিন্তার খোরাক জোগায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অবশ্যই আমার পড়া খুব খুব ভালো বইসমূহের মধ্যে একটি। ১০/১০ রিকমেন্ডেড, পরিণত পাঠকদের জন্য।