প্রধান চত্বরে থেমে যায় গাড়ি। হ্যান আর সায়ার গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে তাকায়। সামনে তামা রঙের বিশাল দুটি মূর্তি। অন্তত একশ ফুট উচু তো হবেই। এতো বিশাল মূর্তি আর কোথাও দেখা যায় না। মূর্তিদুটোর পরনে যোদ্ধার পোশাক। সামনের মূর্তিটা মহাবীর সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাসের আর ঠিক তার কাঁধের সাথে কাঁধ মিশিয়ে বাম দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মূর্তিকে দেখা যাচ্ছে। মূর্তির চুলগুলো দুপাশের চোখের উপর দিয়ে নেমে গেছে। এই বানানো মূর্তির মাঝেও তার চোখের ধারালো দৃষ্টি অনুভব করা যাচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মূর্তিও প্রাচীন সেই মহাবীরের প্রতি শ্রদ্ধা এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর নাম-ই আশিহা। মহান আশিহা; সহস্র বছর আগে যার কারণেই রক্ষা পেয়েছিল সমগ্র মানবজাতি। গল্পটা এক অন্ধকার দ্বীপের, সমুদ্র পেড়িয়ে যে দ্বীপের অবস্থান সমুদ্রের অন্ধকার অংশে। যে দ্বীপে আছে অসম্ভব শক্তিশালী এক পাথর। আর পাথরের পাহারায় আছে রুপকথার ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহার। তিন তিনবার যেখানে গিয়ে বিফল হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা। ফিরে এসেছে মাত্র একজন, মৃত্যুঞ্জয়; যে মানুষটা মরতে জানে না। আবারও যোদ্ধাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহরার রাজা। এবারের অভিযান কী সফল হবে? এদিকে মাজান রাজ্যের সেরা চোর এলিসার হাতে আসে অবিশ্বাস্য এক মিশন। যেটা করতে পারলে তার স্বপ্ন সত্যি হবে। বের করে নিয়ে আসতে হবে নেহরার রাজ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীকে। মাঝ সমুদ্রে হঠাৎ দ্বীপের অভিযানে শত্রু হিসেবে আবিভার্ব হয় সমুদ্রের ত্রাস জলদস্যু ডাওমিস। এরপরে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত আরেক সমস্যা যার সূত্রপাত সহস্র বছর আগের সেই যুদ্ধে যে যুদ্ধে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল শয়তানের অনুসারী দিদিয়ানদের।
আমিনুল ইসলামের থ্রিলার পড়ে যতটা আশাহত হয়েছিলাম তার ফ্যান্টাসি ততটাই চমৎকার ভাবে সারপ্রাইজ দিয়েছে। সাবলিল ভাষায় একটার পর একটা শব্দ গেথে ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এর কাজটা করে গেছেন দারুন ভাবে৷ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বই ছিল পুরাপুরি পেজ টার্নার। যদিও কাহিনীর এক প্রকার শেষ নামাতে লেখক প্রচন্ড তাড়াহুড়ো করেছেন তারপরও এত দারুন মৌলিক একটা ফ্যান্টাসির জন্য লেখক প্রশংসার দাবিদার।
দারুণ লেগেছে। লেখকের লেখার হাত অসম্ভব ভালো। পুরো উপন্যাসটা একদম মেদহীন । তবে শেষের অংশটা অতি দ্রুত ঘটে গেছে। আরেকটু ডিটেইলস হলে ব্যাপারটা আরো ভালো লাগতো। পরবর্তী অংশের জন্য অধীর আগ্রহে থাকব।
গল্পটা আর্কিসাস জগতের।সেখানে আছে অন্ধকার দ্বীপ।সেই দ্বীপে থাকা ভয়ংকর শক্তিশালী পাথর উদ্ধার করতে তিনবার এসেও ব্যর্থ হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা।মৃত্যুঞ্জয় নামের এক যোদ্ধা ব্যতীত আর কেউ জীবিত ফেরত যেতে পারে নি।চতুর্থবার সেখানে অভিযানে পাঠানো হয় একঝাঁক তরুণ যোদ্ধাকে।এদের অভিযান ও রক্তাক্ত অতীত ইতিহাস নিয়ে "যুদ্ধের সহস্র বছর পর।" যা ভালো লেগেছে- ১.পুরো বইটিই পেজ টার্নার।একবার পড়া শুরু করলে থামার উপায় নেই। ২. গল্পে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজনা ও টুইস্ট ছিলো।শেষ দুটো টুইস্ট দারুণ এবং খুবই অপ্রত্যাশিত।
যেটুকু অতৃপ্তি - ১.১৭০ পৃষ্ঠার পরে বিশাল এক কাহিনিকে মাত্র ৭৮ পৃষ্ঠায় আবদ্ধ করা হয়েছে।এ অংশটুকু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলে গল্পের প্রতি সুবিচার করা হতো। ২.আমিনুল ইসলামের ভালো একটি গুণ হচ্ছে গল্পে বাড়তি মেদ না থাকা অর্থাৎ পাঠক গল্প পড়ে কখনো বিরক্তিবোধ করবে না।তবে কিছুটা মেদ, স্থিতি বা অতিরিক্ত বর্ণনা বোধহয় থাকা দরকার।এতে হাই ফ্যান্টাসির জগতের সার্বিক চিত্র ফুটে উঠবে এবং চরিত্রগুলোর সাথে একাত্ম হতেও সাহায্য করবে।
কাহিনি যেখানে শেষ হয়েছে তাতে আশা করতেই পারি সিরিজের পরবর্তী বইগুলো টানটান উত্তেজনাপূর্ণ হবে। লেখকের জন্য শুভকামনা।
বই: যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখক: আমিনুল ইসলাম প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান প্রকাশনা: সতীর্থ প্রকাশনা জনরা: হাই ফ্যান্টাসি ও অ্যাডভেঞ্চার নির্ধারিত মলাট মূল্য: ২৮০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪৮
#ফ্ল্যাপ প্রধান চত্বরে থেমে যায় গাড়ি। হ্যান আর সায়ার গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে তাকায়। সামনে তামা রঙের বিশাল দুটি মূর্তি। অন্তত একশ ফুট উচু তো হবেই। এতো বিশাল মূর্তি আর কোথাও দেখা যায় না। মূর্তিদুটোর পরনে যোদ্ধার পোশাক। সামনের মূর্তিটা মহাবীর সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাসের আর ঠিক তার কাঁধের সাথে কাঁধ মিশিয়ে বাম দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মূর্তিকে দেখা যাচ্ছে। মূর্তির চুলগুলো দুপাশের চোখের উপর দিয়ে নেমে গেছে। এই বানানো মূর্তির মাঝেও তার চোখের ধারালো দৃষ্টি অনুভব করা যাচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মূর্তিও প্রাচীন সেই মহাবীরের প্রতি শ্রদ্ধা এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর নাম-ই আশিহা। মহান আশিহা; সহস্র বছর আগে যার কারণেই রক্ষা পেয়েছিল সমগ্র মানবজাতি। গল্পটা এক অন্ধকার দ্বীপের, সমুদ্র পেড়িয়ে যে দ্বীপের অবস্থান সমুদ্রের অন্ধকার অংশে। যে দ্বীপে আছে অসম্ভব শক্তিশালী এক পাথর। আর পাথরের পাহারায় আছে রুপকথার ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহার। তিন তিনবার যেখানে গিয়ে বিফল হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা। ফিরে এসেছে মাত্র একজন, মৃত্যুঞ্জয়; যে মানুষটা মরতে জানে না। আবারও যোদ্ধাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহরার রাজা। এবারের অভিযান কী সফল হবে? এদিকে মাজান রাজ্যের সেরা চোর এলিসার হাতে আসে অবিশ্বাস্য এক মিশন। যেটা করতে পারলে তার স্বপ্ন সত্যি হবে। বের করে নিয়ে আসতে হবে নেহরার রাজ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীকে। মাঝ সমুদ্রে হঠাৎ দ্বীপের অভিযানে শত্রু হিসেবে আবিভার্ব হয় সমুদ্রের ত্রাস জলদস্যু ডাওমিস। এরপরে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত আরেক সমস্যা যার সূত্রপাত সহস্র বছর আগের সেই যুদ্ধে যে যুদ্ধে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল শয়তানের অনুসারী দিদিয়ানদের।
#কাহিনী_সংক্ষেপ মানুষের সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাস রণক্ষেত্র ময়দানে হেঁটে যাচ্ছে। শেষ হওয়া যুদ্ধে তার বাহিনী জয় লাভ করে আর ধ্বংস হয়ে যায় পুরো একটি জাতি। মহাবীর আশিহা; যার জন্য সহস্র বছর আগে রক্ষা পেয়েছিল সম্পূর্ণ মানবজাতি। সে মহাবীরের সম্মানের নেহরার রাজ্যে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা 'আশিহা লড়াই'। এই লড়াইকে ঘিরেই একত্রিত হয়েছে হ্যান, সায়ার আর রাজকুমারী অহিত্রি। সবার একটাই লক্ষ্য আশিহা খেতাব। কে হবে আশিহা???? মাজান রাজ্যের কুখ্যাত চোর এলিসা। তার সহকারী হিত্রা আর তানি। তাদের চুরি করা নেহেরুর অর্ধেক ভাগ দিতে হয় মরবিসকে। এবার মরবিস তাদের দেয় বড় একটা কাজ। নেহরার রাজ্য থেকে একজন অপরাধীকে মুক্ত করতে হবে। বিনিময়ে পাবে দশ কোটি নেহেরু। কিন্তু কেউ জানে না কে সেই অপরাধী আর তাকে কোথায় রাখা হয়েছে। সময় হাতে আছে মাত্র ১৮ দিন। অজানা ঝুঁকি নিয়েই নেহারার জাহাজে চড়ে বসে এলিসার দল। তারা কি পারবে রাজ অপরাধীকে মুক্ত করতে? আর কে সে??? নিষিদ্ধ দ্বীপে আছে নিহার পাথর। যার দ্বায়িত্বে আছে নিন্নাহার প্রাণি। যাদেরকে যাদু দিয়ে হত্যা করা যায়না। নেহরার রাজা গোপনে দুইবার শত লোকের দল পাঠায়। ফিরে আসে শুধু মৃত্যুঞ্জয়। তাই এবার বড় দল না পাঠিয়ে হ্যান, সায়ার, অহিত্রি আর মৃত্যুঞ্জয় সহ আট জনের ছোট দল পাঠায়। নিহার পাথর অন্য কারো হাতে পরলে মানবজাতি হুমকির মুখে পরে যাবে। এবার তাদের সাথে আছে হাজার বছর ধরে লুকানো ঔষধ দিসা। তারা কি পারবে নিহার পাথর উদ্ধার করতে???? যুদ্ধের সহস্র বছর পর গল্পের পাতায় পাতায় উঠে আসে দিদিয়ান জাতি, সিনা জাতি, জলদস্যু, নিষিদ্ধ দ্বীপ আর হাজার বছর আগের আর পরের গল্প; মানুষ আর মিহার গল্প। কি সেই গল্প? লেখা আছে ' যুদ্ধের সহস্র বছর পর' এর পাতায় পাতায়।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া বইটি যুদ্ধ সিরিজের প্রথম বই হলেও স্ট্যান্ড এলোন হিসেবে আপনি কোনো অতৃপ্তি না রেখেই পড়ে ফেলতে পারবেন। শুধু শেষের দিকে টুইস্ট আর ক্লিফহ্যাঙ্গার আপনাকে পরের বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য করবে। অতিরঞ্জিত ফ্যান্টাসি বা অ্যাডভেঞ্চার কোনোটাই বইয়ে নেই। তবে পুরো বই জুড়ে ফ্যান্টাসি আর অ্যাডভেঞ্চার মিলেমিশে ছড়িয়ে আছে। পাঠক শুরু থেকেই গল্পে ঢুকে পরবে। একদম মেদহীন ঝরঝরে লেখা।বাক্য আর শব্দচয়ন ছিল সাবলীল। বইটা শুরু করলে শেষ না করে উঠতে ইচ্ছে করে না। গল্প বাঁকের মাধ্যমে গল্প ধীরে ধীরে অনেক বিস্তৃত হয়েছে। আবার এক যায়গায় এসে শেষ হয়েছে।গল্পে ফ্যান্টাসির বিভিন্ন দিক, জাদুর বর্ণনা আর প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন ফাইটিং এবং অ্যাডভেঞ্চার এর বর্ণনা ছিল নিখুঁত।
গল্পের প্রতিটি চরিত্র খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাম নির্বাচন এর কথা বলতে গেলে বলবো নামগুলো আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আশিহা, হ্যান, হিমিকা, সায়ার, আরিয়াস, মৃত্যুঞ্জয়, অহিত্রি, এলিসা সবগুলো চরিত্রকে সুন্দরভাবে চরিত্রায়ন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলোও ছিল নিখুঁত।তবে এলিসা চরিত্রটাকে নিয়ে আরেকটু কাজ করলে ভালো হতো।
যেহেতু প্রিভিউ তাই বানান, প্রোডাকশন নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। যেহেতু সতীর্থ থেকে আসছে তাই বইয়ের কোয়ালিটি আর প্রোডাকশন নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
ফ্যান্টাসি আমি কম পড়ি। বলতে গেলে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ফ্যান্টাসি পড়তে আমার অনীহা কাজ করে। তার পরেও এটা পড়ে ফেললাম। একটানা থ্রিলার পড়ে একঘেয়েমি চলে আসায় এটা পড়া এবং এটা আমাকে হতাশ করেনি। ফ্যান্টাসির ক্ষেত্রে আমার সমস্যা হয় নাম আর ওয়ার্ল্ডের জায়গায়। এটাতেও ছিলো সেম জিনিস। তাও ৩ টাইমলাইনে গল্প ধারাবাহিক ভাবে আগানোতে সমস্যা হয় না। ভালো লেগেছে বইটা। আশিহা, হ্যান, মৃত্যুঞ্জয় সহ আরো অনেক দুর্দান্ত চরিত্র ছিলো বইয়ে যা ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে। অ্যাকশন দৃশ্য গুলো ভালো লেগেছে। ফ্যান্টাসি হওয়ায় এখানে মাথা ঘুরানো টুইস্ট না থাকলেও যেগুলো আছে আপনাকে অবাক হতে বাধ্য করবে। শেষের সমাপ্তিও ভালো লেগেছে। একজায়গায় আবার একই গল্প দুইবার বলা হয়েছে যা অনেক দৃষ্টিকটু লেগেছে। আর বইয়ের বানান আর সম্পাদনার অবস্থা খুবই খারাপ। আর দুই জায়গায় আমি দুইটা জিনিসের মিল পেয়েছি নিচে উল্লেখ করা হলো :
Dragon ball এর Goku এর ট্রেনিং সেশন এর মিল পেলাম হ্যানের ট্রেনিং এ। Goku যেভাবে তার স্পিডের জন্য ভারী কাপড় বা বর্ম পড়ে ট্রেনিং নে এখানেও সেম হয়।
বইয়ে এক ধরণের শক্তি বাড়ানোর ওষুধ বা তরল থাকে যার নাম দিসা যেটা তামিল মুভু Iru Mugan এর মতো সেম।
যাদের ফ্যান্টাসি পচ্ছন্দ বা যারা ফ্যান্টাসি শুরু করতে চান তাদের জন্য অবশ্যই সুখপাঠ্য হবে বইটা। সিরিজের পরবর্তী বইয়ের জন্য শুভকামনা রইলো।
সবে মাত্র পড়ে শেষ করলাম। ফ্যান্টাসির দুইটা জিনিস আমার অপছন্দ। ১- নাম গুলা অদ্ভুত হয় , যা আমার মনে থাকেনা।
২- রাজ্য কয়েকটা থাকলে আমি মিক্স করে ফেলি।
এই দুইটাই এই বই এ ছিল।
তবে পড়তে প্রবলেম কম হইছে কারণ - শুরুতে টিকার মতন করে উল্লেখ করে দেওয়া হইছে কোন টা কি। এইটা আমার জন্য বড় একটা প্লাস পয়েন্ট!!
যাইহোক কাজের কথায় আসি।
বই এর যদি থিম নিয়ে কথা বলি :
মানবজাতি পুরো পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ।
এইটাই এই বই এর থিম মনে হল আমার কাছে।
আমাদের মানুষের কল্যাণে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে অসংখ্য প্রজাতি। নিজেদের রক্ষা করার নামে আমরা ভয়াবহ সব বিধ্বংসী অস্ত্র বানিয়েই চলেছি , যার ফলাফল ত আমরা হিরোশিমা তে দেখতেই পেয়েছি।
ফ্যান্টাসি আর সাই-ফাই আমার অপছন্দের জনরা।Bushra আপার কল্যানে এই বই এর ভাল রিভিউ পেয়েছিলেম।তাই নিয়ে ফেলেছিলাম।বই টা তে আপার নাম ও আছে দেখলাম 😎
I must say this is one of the best basic/orginal (মৌলিক) fantasy in our book industry. Heck of journey it was 🔥
পড়ে ভাল লাগবে অনেক। বেশ গতিশীল গল্প।
ভাল লাগেনি যে বিষয় টি :
১- শেষ দিকে এসে গল্পের খেয় হারিয়ে গিয়েছে। কমপ্লেক্স লাগতেছিলো একেবারে শেষ যুদ্ধে এসে।কেন যেন ক্যারেক্টর গুলো গুলাই ফেলতেছিলাম। এন্ডিং টা কেন যেন মনমতন হয়নি।
এই অংশে স্পয়লার খাবেন: (নাও খেতে পারেন যেহেতু নাম উল্লেখ করবোনা)
তামিল/তেলেগু নায়ক ভিকরাম এর একটা মুভিতে এমন একটা ঔষুধের প্রয়োগ আছে। যখন ই প্রথম ঔষুধ টার কাজ সামনে আসে তখন ই মুভিটার কথা মাথায় চলে আসে।।
ফ্যান্টাসি লাভার দের জন্য একটা মাস্ট রিড বুক ig. নি:স্বন্দেহে পড়তে পারেন। ভাল লাগবেই।
শেষাংশের জন্য রেটিং একটু কমাই দিব।
রেটিং : 8.5/10
আর বই এর কিছু কপি এখনো অবিক্রীত আছে। কেও কালেক্ট করতে চাইলে Aminul ভাই কে নক করতে পারেন।।
লেখকের এখন পর্যন্ত সেরা লেখা হল : গডফাদার। ওইটা রে বিট করবে ভাবছিলাম যুদ্ধ টা। কিন্তু পারেনাই 😎
সহস্র বছর আগে মহাযুদ্ধ ঘটেছিলো মানবজাতি এবং জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী দিদিয়ান ও সিনা জাতির মধ্যে। সেই যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছিলো দিদিয়ান জাতি। সিনা জাতি এবল মানবজাতির মাঝে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে সেই মহাযুদ্ধের। আজ সহস্র বছর পর আবারো যুদ্ধের সুর ভাসছে বাতাসে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই। একদল যোদ্ধা যাচ্ছে দুর্গম দ্বীপে কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর সন্ধানে, একদল চোরের কাঁধে দায়িত্ব পড়েছে এক ভয়ংকর ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার। উভয়পক্ষকে বাঁধা দিতে প্রতিপক্ষ দলও প্রস্তুত।
সিরিজের প্রথম বই হিসাবে দারূন। প্লট বেশ ভালোলাগার মতো। শুরু থেকেই কাহিনী এগিয়ে যাচ্ছিলো বেশ দ্রুত। মোটামুটি ১০০ পৃষ্ঠার পর কাহিনীর মোড় ঘুরে যায়, একের পর এক টুইস্ট আসতে থাকে, অপ্রত্যাশিত ঘটনাবলি গল্পকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। ছোট ছোট অনেকগুলো ঘটনা এক সুতোয় আটকা পড়ে। এতকিছুর মধ্যেও লেখক যথেষ্ট গুছিয়ে সবকিছু উপস্থাপন করেছেন। ফ্যান্টাসী হিসাবে সেকেন্ডারী ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং করেছেন, ম্যাপ দিয়ে পুরো দুনিয়াটা উপস্থাপন করেছেন। সেই দুনিয়ার মিথ, সংস্কৃতি নিয়েও কাজ করেছেন কিছুটা। কয়েক ধরণের ম্যাজিক সিস্টেম তৈরী করেছেন, পাশাপাশি আরো কিছু ম্যাজিকাল এলিমেন্টও যোগ করেছেন। ভালোলাগার মতো আরেকটি দিক ছিলো চরিত্রগুলো।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো গল্পে একাধিক ছোটবড় চরিত্রের সমাগম থাকলে মূল কয়েকজনকে জনকে ছাপিয়ে বাকিদের উপস্তিতি তেমন লক্ষ্য করা যায় না। তবে লেখক এখানে কোনো চরিত্রকেই সেভাবে হারিয়ে যেতে দেননি।
এবার আসি ভালো না লাগার বিষয়গুলোতে। এই বই সম্পর্কে শুধুমাত্র একটা অভিযোগ থাকলে তা হবে লেখনী। নবীন লেখকের লেখনীতে এখনো উন্নতির জায়গা রয়েছে। বেশ কিছু সংলাপ বেশ দুর্বল মনে হয়েছে, কিছু জায়গায় ন্যারেশন আরেকটু গোছানো, আরেকটু স্পষ্ট হতে পারতো। আশা করি লেখক পরবর্তীতে এসব বিষয়ে যত্নশীল হয়ে আরো চমৎকার কাজ উপহার দিতে পারবেন৷
শেষকথা হলো আপনি যদি দ্রুতগতির থ্রিলার পছন্দ করেন, মুহূর্তে মুহূর্তে কাহিনীর মোড় ঘুরে যাওয়া পছন্দ করেন, সেই সাথে ফ্যান্টাসী পছন্দ করেন তাহলে নিঃসন্দেহে বইটা উপভোগ করবেন। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ বইটা উপহার দেওয়ার জন্য।
বইটি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। বাংলা থ্রিলার ব্যাপকভাবে পাওয়া গেলেও, বাংলা ফ্যান্টাসি সম্পর্কে একই কথা বলা যায় না। বাংলা ফ্যান্টাসি বই বেশ বিরল, সেই বিবেচনায় লেখক যথেষ্ট ভালো একটি বই লিখেছেন।
প্রথমত, বইয়ের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং ছিল দুর্দান্ত । লেখক ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ের কাজ করেছেন অসাধারণ ভাবে। সাথে একটা মাপও অ্যাড করেছেন, ফ্যান্টাসি নভেল গুলায় ম্যাপ থাকা কমন হলেও এই জিনিষটা বেশ আকর্ষনীয় লাগে আমার কাছে। যদি বইয়ের ম্যাপটা বেশ সিম্পল।
চরিত্রগুলো ছিল দারুণ। হান, মৃত্যুঞ্জয়, সায়ারের মতো চরিত্রগুলো ছিল বেশ আকর্ষণীয়। প্রায় প্রতিটি চরিত্রেরই সুগঠিত ব্যাকস্টোরি এবং ভালো একটা সমাপ্তি ছিল। কোনো চরিত্রই খুব একটা অদ্ভুত লাগেনি আমার আকছে। চরিত্রগুলোর প্রপার ডেপথ ও মিনিং ছিল। বই পড়ার সময় জানতে চাচ্ছিলাম পরবর্তীতে কী ঘটবে, তারা কী করবে এবং সামনে কী রয়েছে।
আগেই বলেছি, বইয়ের গল্প বলার ধরন ভালো। সহজবোধ্য ও সাবলীল ভাবে লেখা হয়েছে। থ্রিলার না হওয়া সত্ত্বেও, এই বইটিতে সাসপেন্স যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। গল্পটা জমজমাট ছিল। যদিও শুরুটা একটু বেশি লম্বা মনে হয়েছে আবার শেষটা বেশি দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। শেষটা যে খারাপ ছিল তা নয়, তবে এন্ডিং ছোট মনে হয়েছে।
বইটির কিছু কিছু অংশ প্রেডিক্টেবল ছিল। এখানেও ক্লাসিক ফ্যান্টাসি উপন্যাসের নানা cliché ছিল। ব্যাকস্টরির ব্যাপারটা ভালো লেগেছে, লেখক বেশ ভালোভাবেই করেছেন সেটা। গল্পটা ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো পড়ার সময় ভালো সময় কেটেছে আমার। বইটি শুরু করতে সময় লেগেছে আমার, আসলে বইটি কিনেছিলাম প্রায় এক বছর আগে, মাঝখানে অনেকবার পড়ার জন্যে হাতে নিলেও পড়া হয় নাই, শেষ মেষ এইবার শুরু করে শেষ করেই ফেলেছি। বইটা শেষ করে ভালোই লাগলো। এই স্যাচুরেটেড মিডিয়াতে থ্রিলারের পরিবর্তে, আদর্শের বাইরে গিয়ে, ফ্যান্টাসি বই লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
এত ভালো বলার পর একটু নিট পিকিং করা যাক, বইয়ের কিছু কিছু সমস্যা আছে। প্রথমত, অনেক বানান ভুল, এক জায়গায় একজনের নাম এক ভাবে লেখা তো আরেক জায়গায় অন্যভাবে লেখা, এমন অনেক এক্সাম্পল আছে এই বইয়ে, এখন এটি পরের মুদ্রণ গুলোতে ঠিক হয়েছে কিনা বলতে পারলাম না। আবার বইয়ে একটি অংশ ছিল পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল। একই সিকোয়েন্স কপি পেস্ট করা হয়েছে, যা দেখতে খুবই দৃষ্টকটু হয়েছে। যদিও এই কথা আগেই বলেছি, বইয়ের বিল্ড আপ বেশি বড় হয়েগেছে, তার তুলনায় এন্ডিং একটু উইক লেগেছে।
বইটি ক্লিফহ্যাঞ্জারে শেষ হয় যা পরবর্তী বইয়ের সেট আপ, কিন্তু পরবর্তী বইটি চোখে পড়লো না, গুডরিডসেও সিরিজের দ্বিতীয় বইটি পেলাম না, আদেও পরের বই আসবে কি না বলতে পারলাম না। যদি এসে থাকে আমাকে জানাবেন ধন্যবাদ।
আপনি যদি ফ্যান্টাসি বই পছন্দ করেন তবে এই বইটি সাজেস্ট করবো।
৮/১০
Juddher Sohosro Boshor Por By Aminul Islam
This book was surprisingly better than what I had expected. While Bangla thrillers are widely available, the same can not be said about fantasy books. Bangla fantasy books are quite rare. This isn't extraordinary, but it is quite good and engaging.
First of all, the world building was great. I believe the writer did a great job with the world building. It was done neatly. The storytelling was engaging thanks to that.
The characters were also great. The characters like Han, Mrittunjoy, and Sayar were interesting. Each character had a proper story and ending. None of the characters felt odd. Characters had depth and meaning. It felt nice reading the book. I really wanted to know what will happen next, what they will do, and what lays ahead.
As mentioned before, the storytelling is good. It is written in an easy to understand manner. Despite not being a thriller, this book had plenty of that in the form of suspense. The story was gripping. That being said, the beginning felt a bit too long while the ending felt rushed. It's not that the ending was bad, but it just felt too short. The whole buildup to the big thing ended too quickly.
Some parts of the book were predictable. There were classic fantasy novel clichés in here, too. The backstory was well thought out. The book felt lively. The story felt good. Most importantly, I had a pleasant time reading it. The beginning took some time, as I dropped it quite a few times before actually reading it. After finishing the book, it felt good. Kudos to the writer for going out the norm and writing fantasy books instead of thrillers in this saturated media.
There are some issues with this book. Firstly, there are many spelling mistakes. There was a part which was repeated. It felt odd, basically copying and pasting the same text.
The book ends in a cliffhanger that sets up the next book, but I haven't seen the next book, and goodreads shows nothing from the series, so I don't know if the story will continue or not. Will suggest this book if you like fantasy books.
প্লট- গল্পের প্রারম্ভ এক যুদ্ধ ময়দানে, যেখানে অপদেবতা আম্বিহার অনুসারী দিদিয়ান ও মানব জাতির মধ্যে এক বিরাট যুদ্ধ হয়। চারিদিকে লাশ পড়ে আছে, মাথার উপর শত শত শকুন উড়ে বেড়াচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বজ্র চমকাচ্ছে।যুদ্ধে সমস্ত দিদিয়ান জাতি মারা গিয়েছে। এরপর গল্পটা শুরু হয় সহস্র বছর পর থেকে যেখান সেই যুদ্ধের মৃত এক যোদ্ধাকে মহান বীর হিসেবে দেখা হয়। তার নাম ছিল আশিহা। নেহরার রাজ্যে প্রতি চার বছর পর পর একটা লড়াই প্রতিযোগিতা হয়, যেটায় জয়ীকে সেই আশিহা খেতাবে সম্মানিত কর হয়। গল্পের নায়ক হ্যান সেই আশিহা খেতাব জয় করতেই যায়। সেখানে আরও থাকে, নায়িকা অহিত্রি। এরপরে লড়াই শেষ হবার পর নেহরার রাজ্য কত্যৃক একটা দল পাঠানো হয় অন্ধকার দ্বীপে। মহাশক্তিশালী নিহার পাথর আনার জন্য। একই সাথে চোর এলিসা মাজান রাজ্য থেকে নেহরার রাজ্যে পা রাখে। কোনো এক ভয়ঙ্কর অপরাধীকে মুক্ত করার চুক্তি নিয়ে। এরপরে গল্পে এগিয়ে যায়। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না আপাতত, স্পয়লার সমস্যা।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ- একটা পারফেক্ট স্টোরিতে কী কী দরকার থাকে? একজন শক্তিশালী চরিত্রের হিরো, সুদর্শনা নায়িকা, দারুণ প্লট টুইস্ট আর বই যদি ফ্যান্টাসি থ্রিলার হয় তাহলে ভরপুর যাদু মন্তর আর ফাটাফাটি রকমের অ্যাকশন। ভালো ওয়াল্ড বিল্ডিং তো থাকতেই হবে। ফ্যান্টাসি ব্যাপারে ধারণা খুবই কম। তবে এগুলোকে উল্লেখ্য বলে মনে হলো। "যুদ্ধের সহস্র বছর পর" বইটাতে ব্যাপার গুলো আছে। গল্পটা দারুন আর সাথে আছে ভালো রকমের একশন। তবে লেখক সাহেব শুধু এগুলোতে আটকে থাকেননি৷ বেশ চতুরতার সাথে কাহিনিতে যোগ করেছেন বেশ শক্তিশালী চরিত্রের এক খলনায়ক। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, গল্পটা দারুন একটা অ্যাডভেঞ্চার গল্পের মতো আগাচ্ছিল। সেভাবে-ই বিল্ড করা। সাথে অ্যাডভেঞ্চার গল্পে যে সমস্যা গুলো থাকে, পথে বাঁধ-বিপত্তি, বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু গল্পটা হুট করেই এমন একটা দিকে মোড় নেয় যা কি-না ধারণা-ই বাইরে ছিল। স্পয়লার দিচ্ছি না।
খলনায়ক নিয়ে খুচরা আলাপ করি। বেশ কিছুদিন হলো, বই পড়া কম হচ্ছে, এনিমে দেখা বেশি হচ্ছে। টুকটাক মাংগাও পড়ছি। সেগুলোতে লক্ষ্য করেছি কাহিনিতে বেশির ভাগ ভিলেনের ব্যাকস্টোরি খুব ভালোভাবে বর্ণনা করা থাকে। এই ব্যাপারটা আমিনুল ভাই বেশ ভালো ভাবেই এক্সিকিউট করেছেন তার বইতে। আমার ব্যাক্তিগত মত হলো, যখন ভিলেনের চরিত্র আপনাকে ভিলেনের মত ভাবতে বাধ্য করবে তখন গিয়ে ভিলেনের চরিত্রায়নের সার্থকতা। বইটা পড়ার সময় এক পর্যায়ে মনে হয়েছে, আচ্ছা হিরোই কী তাইলে ভিলেন? আর ভিলেনই শেষমেশ হিরো হয়ে যাবে? আবার মনে হয়েছে, না না। তা কী করে হয়। হিরো তো হিরোই। নাহ, শেষ না করে বুঝতে পারা যাচ্ছে না। যুদ্ধের সহস্র বছর পর বইতে কাহিনি শুরু হয় একটি ফ্যান্টাসি জগতে। বইয়ের শুরুতে যে ম্যাপটা দেয়া আছে তাতে করে বেশ স্পষ্ট ধারণা হয়ে যায় কোন জায়গার অবস্থান কোথায়। গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র হ্যান। নায়ক হিসেবে যেটুকুন দরকার সেটুকুই আছে তার ক্ষমতা। অতিরঞ্জন করা হয়নি। গল্প বেশ সাবলীল ভাবে এগিয়েছে। বাকে বাকে মোড় নিয়েছে বেশ কিছু। তবে লেখকের আগের বই গুলো থেকে এই বইটাকে আমি এগিয়ে রাখবো তার অপ্রত্যাশিত টুইস্ট অ্যান্ড টার্নের জন্যে। উপন্যাসের চরিত্র গুলো নিয়ে বেশি আলাপ করলাম না কারণ, বেশি বললেই স্পয়লার হবে। আর স্পয়লা��� আমার মোটেও পছন্দ না। হ্যাঁ, ওই যে বললাম, কাকে নায়ক ঠাওরাবেন সেটা আপনার উপর এসে পড়বে। এতক্ষণ তো নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললাম। এখন আসি কিছু ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দিকে। উপন্যাসের চরিত্র গুলোকে বেশ যত্নের সাথেই সৃষ্টি করেছেন লেখক আমিনুল ইসলাম। গল্পের যে চরিত্রগুলোকে প্রধান ফোকাস দেওয়া হয়েছে তা বেশ চমৎকার কিন্তু কয়েকটা চরিত্র নিয়ে আবার আর একটু বেশি আশা করে ফেলেছিলাম, যেমনঃ এলিসা। গল্পের প্লটটাও ছিল একদম ভিন্ন ধারার। গল্পটা শুরু থেকেই পাঠককে আটকে রাখতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। তবে একটা ব্যাপার আফসোস থেকে যায়, ওয়াল্ড বিল্ডিং খুব বড় পরিসরে নেই। কিছুক্ষেত্রে মনে হয়েছে আরেকটু যদি বিস্তর বর্ণনা থাকতো তাহলে আরো ভালো হত। যদিও গল্পটায় এই বর্ণনাতেই মানিয়ে গেছে। কিন্তু পুরো আর্কিসাস জগত নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পারলে ভালো হতো। খুব সম্ভবত এই কাজটা পরের বইতে করবেন লেখক। কারণ পড়ে আমার সেরকম-ই মনে হচ্ছে যে গল্প আরও বড় দিকে আগাবে।
সব শেষে বলবো, আমিনুল ইসলামের নতুন ফ্যান্টাসি ঘরনার উপন্যাস একজন ফ্যান্টাসি-থ্রিলার পাঠককে মহিত করে রাখবে সারাটা সময়। যারা ফ্যান্টাসি শুরু করবেন বলে শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু কোনটা দিয়ে শুরু করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ ফ্যান্টাসি বইগুলো বৃহৎ। এই বইটা শুরু করার জন্য ভালো অপশন।
শুরতেই বলি এই গল্প আসলেই যুদ্ধের সহস্র বছর পরের গল্প। তাহলে কী যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কোনো গল্প নেই বলার? আছে, তবে সামগ্রিক বিষয়াবলী মঞ্চে উঠে উপস্থাপিত হতে শুরু করেছে যুদ্ধের সহস্র বছর পরে আবারও। এখানে বলে রাখা দরকার যে যুদ্ধের কথা বলছি সেই যুদ্ধ সাধারণ কোনো যুদ্ধ ছিলো না। ছিলো এক মহাযুদ্ধ।
এই দুনিয়াকে সমগ্র চরাচর আর্কিসাস নামে চিনে। এই আর্কিসাসের বুকে জন্ম নিয়েছে এক অদম্য যুবক যার নাম হ্যান মিহিত্রা। সদ্য আশিহা খেতাব যে জিতে নিয়েছেন। কিন্তু কী এই আশিহা এবং কে? মৃত্যুঞ্জয় কিসের মোহে অন্ধকার দ্বীপে বারবার ছুটে চলছে? নিষিদ্ধ দ্বীপে আছে জাদু জানা গোষ্ঠী যাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো অনেক আগেই। কিন্তু তারাই বা এগিয়ে আসছে কোন টানে? এভাবে নানান ঘাত প্রতিঘাতের প্রশ্নের মধ্য দিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় ছুটতে হয়েছে কখনো হ্যানের পিছু নয়তো কখনো মৃত্যুঞ্জয়ের পিছু পিছু। সব কিছু একটি কেন্দ্রের দিকেই ধাবমান অবস্থায়। আর তা হলো অন্ত। গল্পে লেখক অনেক প্রশ্ন রেখে দিয়েছেন যার উত্তর হয়তো পরবর্তী অংশে মিলবে। আর্কিসাস নামে যে যে সাম্রাজ্যের উল্লেখ লেখক করেছেন তার মধ্যে বিভিন্ন রাজ্য, বিভিন্ন জাতির একটা সংমিশ্রণ ঘটেছে। যাতে লৌকিক এবং অলৌকিক দুটি দিকই রয়েছে। ফ্যান্টাসির ক্ষেত্রে যে আলাদা একটি বিশ্ব তৈরি করা হয় সেই বিশ্ব তৈরি করার কাজটাকে আমার খুব কঠিন একটা কাজ মনে হয়। এতে লেখকের কল্পনার সংমিশ্রণ থাকে সাথে থাকে যুক্তির ছৌঁয়া এর ফলে তৈরি হয় একটা অন্য কল্পবিশ্ব। যেখানে আমাদের বিচরণ করতে লেখক আহ্বান জানায় তার লেখার মধ্য দিয়ে।
যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখক আমিনুল ইসলামের লেখা প্রথম হাই ফ্যান্টাসি বই। যদিও আমি ফ্যান্টাসি কম পড়ি তবুও মাঝে মাঝে কয়েকটা তো পড়া হয়ই। এটাও তার ব্যাতিক্রম নয়। ফ্যান্টাসির জনরার ব্যাবচ্ছেদে আমি তাই অপটুও বটে। এই বইটি ভালো লেগেছে। আর প্রচ্ছদটিও খুব সুন্দর হয়েছে। লেখক নিজে যে একজন ফ্যান্টাসি প্রিয় সেটা এই লেখা পড়লেই বোঝা যায়। যতটুকু জানি উনি ফ্যান্টাসি নিয়ে আরো কাজ করবেন। তার জন্য আরো শুভ কামনা। লেখক সুন্দর ঢঙে গল্প বলেছেন। আশা করি এর চেয়েও আরো ভালো কাজ লেখক থেকে পাবো। 'যুদ্ধের সহস্র বছর পর' এট মতো মৌলিক ফ্যান্টাসি সৃষ্টি নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ। যেখানে আমাদের দেশে সবে ফ্যান্টাসি সহিত্যের শাখা ছড়াতে শুরু করেছে। পাঠকরাও উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে ফ্যান্টাসিতে। এই বইয়ের পাতায় পাতায় রচিত কল্পনাময় নগরী দ্বারে দ্বারে, দ্বীপে দ্বীপে আর নয়তো সমস্ত আর্কিসাসের বুকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক সুন্দর গল্প। যা নিত্তনৈমিত্তিক জীবন থেকে দূরের এক কল্পনাময় এক সময়ের দিকে নিয়ে যাবে আপনাকে।
আসলে ৩.৫ তারা৷ সিরিজের প্রথম বই হিসেবে ভালোই লেগেছে। প্রথম ১০০ পাতা অসাধারণ ছিলো, কিন্তু মাঝখানে এসে কাহিনি কিছুটা ঝুলে গিয়েছে৷ বিশেষ করে লেখক কিছু সম্ভাবনাময় চরিত্রদের উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারেন নি, যেমন জলদস্যু ডিওমিস। তার কাহিনী শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেলো। তবে আশিহা আর হ্যানের চরিত্র ভালো লেগেছে৷ শেষের টুইস্টটা অসাধারণ ছিলো। কিন্তু একেবারের শেষের যুদ্ধটা বেশ তাড়াহুড়ো লেগেছে। অরিত্রিকে হয়ত পরের বইগুলিতে আরো দেখা যাবে। দিসার ব্যবহার অনেকটা মিস্টবর্ন সিরিজের আলোমেন্সির কথা ম মনে করিয়ে দেয়, আর মারহান চরিত্রটা স্টর্মলাইট সিরিজের হয়েডের কথা। ওয়ার্ল্ডবিল্ডিংয়ে কিছুটা ঘাটতি লেগেছে- পুরোপুরি চোখের সামনে পুরো রূপ নিয়ে ফুটে উঠতে পারে নি আর্কিসাস। আরো খানিকটা বর্ণনা দিলে কল্পনা করতে সুবিধা হত৷ ম্যাজিক সিস্টেম হার্ড ম্যাজিক সিস্টেম হলেও বেশ ধোয়াশা রয়ে গিয়েছে। অবশ্য এটা লেখকের ইচ্ছাকৃত হতে পারে। পরের বইগুলিতে চমক দেখানোর জন্য। কয়েকটা জায়গায় সংলাপে কিছু দূর্বলতা ছিলো। সেই সাথে যুদ্ধের দৃশ্যগুলিও, বিশেষ করে নিন্নাহারের সাথে যুদ্ধ আর ক্ল্যাইম্যাক্সের লড়াইটা খানিকটা দূর্বল লেগেছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড এবং প্লটকে স্টাবলিশ করার জন্য সিরিজের প্রথম বই হিসেবে দারুন বলতেই হয়। তবে স্ট্যান্ডআলোন হিসেবেও পড়া যেতে পারে ২০০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। এর পরের অংশগুলিতে পরবর্তী বইগুলির জন্য তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে দেয়। আশা করি শীঘ্রই আবার আর্কিসাসে আরেকটা নতুন অভিযানের অংশ হতে পারবো।
Finally finished reading a domestic original fantasy book for the first time. First of all, i have to talk about the author that gives his best as the first original fantasy. That's it.
বইটার ভালো দিক গুলোর ভিতর প্রথমে রাখা যায় চরিত্রের ব্যাখ্যার পাতাটা যেটা শুরুতে দেওয়া। যার কারণে চরিত্র সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে অসুবিধা হয় নি। এরপর বলা যায় মেদহীন, ঝরঝরে, চমৎকার লেখনী এবং পেজ টার্নারের ব্যাপারটা।
"যেকোনো মাছ ধরতেই টোপ ফেলা যায়। শুধু জানতে হবে কোন টোপটা লাগবে৷"
◑নাম: যুদ্ধের সহস্র বছর পর ◑লেখক: আমিনুল ইসলাম ◑জনরা: ফ্যান্টাসি ◑প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান ◑প্রকাশনী: সতীর্থ ◑প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২২ ◑পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪৮ ◑মুদ্রিত মূল্য: ২৮০/-
অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকার ইচ্ছে তো অনেকেরই। সহস্র বছরও বা কম কী... কিন্তু যদি সহস্র বছর ধরে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় সীমাহীন কষ্ট-যন্ত্রনা তাহলে? আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?
● আখ্যান —
বীরদের সম্মান তো চিরকালই। এমনই একজন বীর ছিলেন মহাবীর আশিহা। জীবন দিয়ে যিনি রক্ষা করেছিলে�� মানবজাতিকে শয়তানের উপাসকদের হাত থেকে। আশিহা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় বীরদের, সর্বোচ্চ সম্মান। কিন্তু এনিয়ে হ্যানের কোনো আগ্রহ নেই কিন্তু মায়ের শেষ ইচ্ছে রক্ষার্থে যুদ্ধ ময়দানে নেমে পড়ে। এক যুদ্ধ কিন্তু একসূত্রে গাঁথা হয়ে যায় অনেকের ভাগ্য! পরাক্রমশালী নিহার পাথর সন্ধানে আট জনের একটা দলকে অন্ধকার দ্বীপে পাঠানো হয়। দু-দুবার শত সৈনিকও যা করতে পারে নায় এবার এমন আর কী হবে? প্রতিবার বেঁচে আসে একজন সৈনিক! কীভাবে? মৃত্যুঞ্জয়কে তাড়া করে ফেরে অতীত স্মৃতি। এখনও যে অজানা বহুকিছু! রহস্যময় এক উদ্ধার অভিযানে বেড়িয়ে পড়ে দল নিয়ে এলিসা। রহস্যময় কারণ কাকে উদ্ধার করতে হবে, কোথায় আছে কিছুই জানা নেই! নিষিদ্ধ দ্বীপ, মানবজাতির পদক্ষেপ যেখানে নিষিদ্ধ তারপর উধাও হয় যায় এক শক্তিশালী সিনা। যাদের জাদুর কাছে মানুষ নিছক খেলনা। কীভাবে সম্ভব? সমুদ্রের ত্রাস ডাওমিস। জলদস্যু জাহাজ নিয়ে দলবলে নির্মমভাবে হত্যা করে চলেছে সৈন্যদের। অতীতের দগদগে ক্ষত যে শুকোয়নি!
মহা আশিহা যে যুদ্ধের সমাপ্তি করেছিলেন সহস্র বছর আগে আবার শুরু হতে চলেছে! কী হয়েছিল সহস্র বছর আগে? দিদিয়ানদের সমাপ্তি কি আসলেই ঘটেছিল?
● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —
শুধু ফ্যান্টাসি বললে আসলে বইটার প্রতি অবিচারই হয়ে যায়। ফ্যান্টাসি, মিস্ট্রি, এডভেঞ্চার, থ্রিলার, অ্যাকশন, রোমান্টিজমের কম্বাইন্ডপ্যাক ❝যুদ্ধের সহস্র বছর পর❞। বেশকিছু টাইমলাইনের ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে বইয়ের কাহিনী।
শুরু হয় আশিহা প্রতিযোগিতা নিয়ে তারপর ঘটে যায় একের পর এক ঘটনা সাথে আবির্ভাব ঘটে বিভিন্ন চরিত্রের। চরিত্রের বিশ্লেষণ হয়েছে সুন্দরভাবে। প্রতিটি চরিত্রের দৃষ্টিকোণ দিয়েই বর্ণনা করা হয়েছে পরিস্থিতি। টুইস্টের পরিমাণ যথার্থই। কিছু প্রেডিক্টেবল তো কিছু আনপ্রেডিক্টেবল। নিহার পাথরের সন্ধানে লাস্টের টুইস্ট জাস্ট অদ্ভুত! ফাইট-অস্ত্রসস্ত্রের অংশ বেশ উপভোগ্য। ১২২ ও ১৯২ পেজে মিফতা-মিলয়ের কাহিনী দাড়িকমা এমনকি করা প্রশ্নও হুবহু সেম। একবার যেহেতু বলা হয়েছে দ্বিতীয়বার কাহিনীর রিপিটেশন অপ্রয়োজনীয়।
কিছু বিষয়ে খটকা আছে। অহিত্রির সাথে ওর বাবার কী কথা হয়েছিল তা ইরাইল কীভাবে জানলেন? নিষিদ্ধ দ্বীপের প্রাণী নিন্নাহারদের বারবার রূপকথার প্রাণী বলা হয়েছে এটা ঠিক যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। রূপকথা মানেই তো কাল্পনিক কিন্তু যে জিনিসের অস্তিত্ব আছে তা কাল্পনিক হয় কী করে? ডাওমিসের কাহিনী অতিঅল্প। ঝাপসা থেকে গেছে চরিত্রটি। হিমিকা যেহেতু চোখের পলকে জীবন নিতে পারে তাহলে সে এতবছর বন্দী কেন ছিল? পাথরের দেওয়ালের ভিতরের ছিল বলে? নিহার পাথর জাদুর ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় কিন্তু অন্ধকার দ্বীপে এত সহজেই হ্যান হেরে গেল! বন্দী উদ্ধারের সময়কাল আঠারো দিন। এত অল্প সময়ে এলিসার দল অভিযান শেষ করে ফেললো বেসিক কোনো ইনফরমেশন ছাড়া! এনিয়ে আরও আলোচনার দরকার ছিল। শেষের ঘটনাগুলো অনেক দ্রুত হয়েছে। আর একটু ধীরে, বর্ণনা করে লিখলে ভালো হতো আমার মতে। চমৎকার গোছানো সমাপ্তি কিন্তু কিছু প্রশ্ন ও কিন্তু কিন্তু ভাব থেকে গেছে। পরবর্তী বইয়ে জবাব মিলে কীনা দেখা যাক।
● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —
যথার্থ বর্ণনা না পাওয়া গেলে কল্পনায় ভাঁটা পড়ে। তেমনিই এই নীতি লেখনশৈলীর জন্যও প্রযোজ্য। লেখক সেক্ষেত্রে সফল বলায় যায়। সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন যুদ্ধ, অনুভূতি, পরিবেশ। তবে কিছু জায়গায় বর্ণনা পর্যাপ্ত মনে হয়নি। কিছু ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। প্লট ও কাহিনীর ধারাবাহিকতা সাথে আনএক্সপেক্টেড টুইস্ট জাস্ট অস্থির!
● চরিত্রায়ন —
সাধারণত দেখা যায় মূখ্য চরিত্রের সংখ্যা বইয়ে অল্পই থাকে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ❝যুদ্ধের সহস্র বছর পর❞। যখনই কোনো চরিত্রের উল্লেখ হয়েছে তখনই তা মূখ্য হিসেবেই ধরা দিয়েছে। শুরুতে যদিওবা হ্যানকেই প্রধান চরিত্র মনে হয়েছে কিন্তু সমাপ্তি ধারণা ভেঙে দেয়। কিছু চরিত্রের সময়কাল বইয়ে দীর্ঘ ছিল তো কারও অল্পই। তবে চরিত্রগুলোর কাহিনী বলা হয়েছে। কিন্তু দুজন বাদে হ্যান ও মানিহার। মানিহার নিয়ে আসলেই কিছুই বলা হয়নি। সম্ভবত পরের বইয়ে চরিত্রটা নিয়ে খোলসা করা হবে। এত এত চরিত্রের মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়ার মতো চরিত্র, আশিহা আর মৃত্যুঞ্জয়।
সতীর্থ নিয়ে একটা হতাশার জায়গা হলো প্রুফ রিডিং আর সম্পাদনা। বানান ভুল নেহায়েত কম নয়। কিছু লাইনে শব্দ পরপর এমনভাবে বসেছে যে মিনিং বুঝতেই কয়েকবার পড়া লেগেছে। সম্পাদনার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।
সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো ভুল হলো ❝া❞ এর জায়গায় ❝ে❞ আবার অপ্রয়োজনীয়ভাবে ❝ে❞ এর ব্যবহার। বিরামচিহ্নের ব্যবহারেও ত্রুটি আছে, যেখানে দরকার সেখানে নেই আবার যেখানে দরকার নেই সেখানে দেওয়া। বাক্যে একই শব্দের পুনরাবৃত্তি রয়েছে কয়েকবার।
● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —
ছিমছাম সুন্দর একটা প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদের যোদ্ধা তো প্রথমে ভাবনায় ফেলে দিয়েছিলো। কে হতে পারে? আশিহা, সায়ার নাকি হ্যান! কাহিনীর শেষে মিলে জবাব। নামলিপির স্টাইলটা বেশ সুন্দর। প্রচ্ছদের সাথে নামলিপির কালার কম্বিনেশনটা দারুণ।
এককথায় যদি বই নিয়ে অনুভূতি বলতে বলা হয় তো বলবো একইসাথে বিভিন্ন জনরার মিশ্রণে অসাধারণ একটা বই।
❝যুদ্ধের সহস্র বছর পর❞ নিয়ে কথা শুরুর আগে ফ্যান্টাসি নিয়ে কিছু অজানা কথা বলা যাক।
Fantasy (ফ্যান্টাসি) শব্দটি ইউনানী শব্দ Fantasia (ফ্যান্টাসিয়া) থেকে এসেছে। প্রাচীন ইউনানী ভাষ্য অনুযায়ী Fantasy কে স্বপ্ন ও চিত্রমূলক সাহিত্য বলা হয়েছে। যেহেতু অসম্ভব সম্ভবনাকে সাহিত্যের মাধ্যমে বাস্তব রূপ দেয়া হয়েছে । Fantasy এর অর্থ - মানুষের এক বিশেষ ধরনের কাল্পনিক ক্ষমতা যা দিয়ে সম্ভবনাময় স্বপ্নের জগৎ তৈরি করা হয়। এটি এমন একটি কাল্পনিক জগৎ যা সচারাচর আমাদের কল্পনাতেও আসে না।
ফ্যান্টাসি একটি জনরা হলেও এর কয়েকটি উপজনরাও রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত / উল্লেখযোগ্য দুটি উপজনরা হলোঃ ১. হাই ফ্যান্টাসি, এবং ২. এপিক ফ্যান্টাসি।
হাই ফ্যান্টাসি বলতে এমন একটি ওয়ার্ল্ড কে বুঝায় যেখানে জাদুর ব্যবহার হয় প্রচুর পরিমানে। আর এপিক ফ্যান্টাসিতে অনেক কাহিনির সংমিশ্রণ থাকে। এতে রয়েছে মরা-মারি, কাটা- কাটি, দ্বন্দ্ব, খু/ন, সামান্য জাদুর ব্যবহার, ষড়/যন্ত্র সহ আরো বেশ কিছু কাহিনি।
❝যুদ্ধের সহস্র বছর পর❞ বইটির মূল জনরা ফ্যান্টাসি হলেও এতে হাই এবং এপিক ফ্যান্টাসির ব্যবহার লক্ষনীয়। তাই এই বইটাকে মিশ্র ফ্যান্টাসি বললেও ভূল হবেনা।
⚈ আখ্যানঃ ══════
সহস্র বছর আগে যুদ্ধ হয়েছিল দেবতা সাওস ও দেবতা আম্বিহার মাঝে। সাওস হচ্ছে মানুষের দেবতা এবং আম্বিহা জাদু যানা জাতি সিনা ও নিন্নাহারদের দেবতা। এই মহাযুদ্ধে জয়ী হয়েছিল দেবতা সাওস অর্থাৎ মানবজাতি। যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সহস্র বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মানবজাতির মনে ভয় ধরে যায়। তারা ভাবে নিন্নাহার ও সিনা জাতি তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবে। এই ভাবনা থেকেই আবারও শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। সেনাধ���যক্ষ ডিওডেরাসের নেতৃত্বে এবং মহাযোদ্ধা আশিহার অসম্ভব লড়াইয়ের কারণে এবারেও জয়ী হয় মানুষ। এর পর থেকে আশিহাকে মানুষরা দেবতার থেকেও বেশী মর্যাদা দিতে শুরু করে। তার নামে নেহরার রাজ্যে এখনো অর্থাৎ সেই যুদ্ধের সহস্র বছর পরেও আয়োজন করা হয় “আশিহা লড়াই" নামক এক জীবন-মরণ প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রতিবছর অংশ নেয় আর্কিসাস ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাজ্যের মহান মহান যোদ্ধারা।
. গল্পটা আর্কিসাসের এক অন্ধকার দ্বীপের। সমুদ্র পারি দিয়ে যেতে হয় সেই দ্বীপটায়। যে দ্বীপে রয়েছে এক শক্তিশালী পাথর। যার পাহারাদার রূপকথার ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহার। তিন তিনবার যেখানে গিয়ে বিফল হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা। ফিরে এসেছিল একজন, মৃত্যুঞ্জয়, যে মানুষটা মরতে জানে না। চর্তুথবার আবারও যোদ্ধাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহরার রাজা। যেখানে প্রতিবার পাঠানো হতো ১০০ জন যোদ্ধাকে, সেখানে এবার পাঠানো হয় মাত্র ৮ জনকে। এবারের অভিযান হয়ে ওঠে আরো চ্যালেঞ্জিং। পারবে কী তারা এই অভিযান সফল করতে?
. আর্কিসাসের অপর একটি দ্বীপরাজ্য মাজান। যে রাজ্যে বাস করত এসিলা নামক এক চোর। তিনি একজন ভলো যোদ্ধাও বটে। মানিহার নামক এক লোকের হয়ে কাজ করত এলিসা। হঠাৎ একদিন এলিসার মালিক তার উপর চাপিয়ে দেয় এক অবিশ্বাস্য দায়িত্ব। যে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারলে তার জীবনের সব চাওয়া পাওয়া পূরণ হবে। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় নেহরার রাজ্যের এক অপরাধীকে ধরার। যে অপরাধীর খোজ জানে না কেউ। বাকী জীবন সুখে কাটিয়ে দেয়ার আশায় সবাইকে চমকে দিয়ে এলিসা রাজি হয়ে যায় সেই মিশনে যেতে। শেষ পর্যন্ত পারবে কী সেই মিশন শেষ করতে?
⚈ পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ ══════════
ফ্যান্টাসি জনরা নিয়ে লেখা পূর্ণাঙ্গ দেশীয় বা বিদেশি বই এর আগে কখনো পড়া হয়নি। এ বইটির মাধ্যমেই আমার পূর্ণাঙ্গ ফ্যান্টাসির জগতে প্রবেশ করা হলো। তবে ফ্যান্টাসি বেজড বেশ কিছু মুভি,সিরিজ দেখা হয়েছিলো এর আগে।
কিছুদিন পূর্বেই আমিনুল ইসলাম ভাইয়ের চারটি বই পড়া হয়েছে আমার। সে বইগুলো পড়েই তার বাকী বইগুলো নেড়ে দেখার ইচ্ছে পোষণ হয়। আর এর পরেই সংগ্রহ করে পড়ে ফেললাম তার এই বইটি। বইটি পড়ে আমার মুখ থেকে শুধু একটি বুলিই বের হয়েছিলো “অসাধারণ"। আসলে এই বইটিকে শুধু ফ্যান্টাসির ক্যাটাগরিতে ফেললে ভূল হবে। কারণ এখানে রয়েছে - অ্যাকশন, থ্রিল, এডভেঞ্চার, রোমান্টিকতা, মিস্ট্রি ইত্যাদি। তবে অভারঅল হিসেবে ধরলে বইটি অধিকাংশই ফ্যান্টাসির দিকে ঝুকে যায়।
শুরু থেকেই বইটি টান টান উত্তেজনার সাথে এগিয়ে যেতে থাকে। ৩ টি টাইমলাইনে গল্প এগিয়ে গেছে শেষ অবধি। লেখকের টাইমলাইনের ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে তুলেছে। এর ১ম টাইমলাইনে দেখানো হয়েছে, দুই হাজার বছর পূর্বের দেবদেবীদেরকে। ২য় টি এক হাজার বছর আগের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। মহাবীর আশিহাকে নিয়ে এই কাহিনি। আর শেষেরটিতে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের ঘটনা। গল্প যতই সামনের দিকে আগাতে থাকে টাইমলাইন গুলোও ধীরে ধীরে মিলে যেতে থাকে নিদারুন ভাবে। এক টাইমলাইনের সাথে অন্য টাইমলাইনের মেলবন্ধন গুলো নিপুন হাতের ছোঁয়ায় সাজিয়েছেন লেখক।
কাহিনির শুরুতেই এক রাজ্যে আশিহা প্রতিযোগিতার বর্ণনা দেয়া হয়। যেখানে দেখানো হয় আশিহা খেতাব অর্জনের লক্ষে বিভিন্ন রাজ্যের বড় বড় যোদ্ধাদের জল্পনা-কল্পনা সম্পর্কে। এ সময়টাতে বেশ কিছু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে। চরিত্রগুলোকে গল্পে প্রবেশ করানোর ভঙ্গিমা ছিল দূর্দান্ত। ধীরে ধীরে গল্প এগিয়ে চলে সামনের দিকে,দেখা মেলে বিভিন্ন রাজ্যের, বিভিন্ন জাতির এবং আরো অসংখ্য ক্যরেক্টারের। একের পর এক কাহিনির বর্ণনা ছিল দেখার মতো। গল্পে কিছু ম্যাজিকের ব্যবহার রয়েছে। ম্যাজিক সিস্টেম গুলো সহজ হওয়ায় বুঝতে কোনো অসুবিধা বোধ হয়নি।
বইটিতে একটা পাওয়ারফুল পাথরের কথা বলা হয়েছে। বলা চলে, এই পাথরটিকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি নির্মিত। মূল্যবান এই পাথরটিকে একদল প্রাণী করতে চায় রক্ষা এবং অন্য কিছু প্রাণীর দল উদ্ধার করতে ব্যস্ত হয়ে পরে এই পাথরটিকে। হাজার হাজার সৈন্য, যোদ্ধা,সিনা, নিন্নাহাররা প্রাণ হারায় এই পাথরের পিছনে। কী কারণে এই পাথরের পিছনে সকলের এত ছোটাছুটি? শেষ পর্যন্ত কার দখলে থাকলো এই পাথর? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না হয় পাঠকরাই বের করে নেবেন।
বইয়ের টুইস্ট গুলো জাস্ট মারাত্মক ছিলো। নিহার নামক সেই পাথরটি উদ্ধারের পর যতগুলো টুইস্টের মুখোমুখি হয়েছি সব গুলাই আমাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। গল্পের শেষের টুইস্টটা সবচেয়ে বেশি অসাধারণ ছিলো। যে টুইস্টা জানান দেয় যুদ্ধ সিরিজের পরবর্তী বই সম্পর্কে।
⚈ সমালোচনাঃ ════════
যদিও বইটির ৮০ ভাগই আমার কাছে ভালো লেগেছে। তবুও বইটির নেগেটিভ দিক সম্পর্কে কয়েকটি কথা না বললেই নয়।
◑ প্রথমেই বলব সময়ের কথা - বইয়ে লক্ষ্য করা গেছে লেখক অনেক সময় তার তৈরিকৃত চরিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ের কথা বলাচ্ছেন। যেমন- এখন সকাল ছয়টা বাজে/ এখন বিকাল চারটা বাজে। যেখানে বইটির সময়কাল হাজার বছর আগের সেখানে এভাবে সময় বলাটা আমার কাছে খাপছাড়া মনে হয়েছে। যদিও ফ্যান্টাসি বইয়ে সময়ের ব্যবহার রয়েছে তবুও এ জায়গা গুলোয় বিকাল,দুপুর, সকাল- এসব ব্যবহার করলে আরো মানানসই লাগতো।
◑ বইয়ে নিন্নাহার নামক এক জন্তুর বর্ণনা দেয়া হইছে। এখানে নিন্নাহারদের তুলে ধরা হয়েছে রূপকথার প্রাণী হিসেবে। আর লেখক এখানে এই নিন্নাহার জন্তু গুলোকে রূপকথার প্রাণী বললেও, প্রাণীগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছে বাস্তবিক রূপে। তবে এটার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা হিসেবে দেবতা সাওসের সৃষ্টি করা বলা হয়েছে পরবর্তীতে। কারণ একজন শক্তিশালী দেবতা অনেক কিছুই সৃষ্টির ক্ষমতা রাখেন।
◑ বইয়ে মিহিতা সাগর পারি দেয়ার বিষয়টায় এখনও খটকা লেগেই আছে। সাধারণত একটি নদী পারি দিতে একদিন বা একরাত চলে যাওয়ার কথা সেখানে এলিসা,তানিয়া নামক চরিত্ররা এক রাতেই একটা সমুদ্র পারি দিচ্ছে। এখানে সমুদ্র পারি দেয়ার সময়সীমা আরো বাড়ানো উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।
◑ ডাওমিসের মতো পাওয়ারফুল একটা ক্যারেক্টরের সময়সীমা ও পরিণতি এমন হবে ভাবতেও পারিনি। এই চরিত্রটির পিছনে আর একটু সময় বেশী দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেছি।
◑ বইয়ের শেষের দিকের বর্ণনা গুলো অতি দ্রুত গতিতে এগিয়েছে । শেষের দিকে আরো কিছুটা ধীরগতিতে বর্ণনা করলে খারাপ হতো না।
⚈ চরিত্রায়নঃ ═══════
চরিত্র গঠনে লেখকের দক্ষতা ছিল দেখার মতো। অসংখ্য চরিত্রের আনাগোনা রেখেছেন তিনি এই বইটিতে। সব চরিত্র বিল্ড আপের পদ্ধতিও ছিল সাবলীল এবং সুন্দর।
শুরুর দিক থেকেই হ্যান মিহিত্রাকে মূখ্য চরিত্র মনে হলেও, গল্পে মৃত্যুঞ্জয় এবং সায়ারের আগমন ঘটলে সেই ধারণাটা ডুবে যায়। মূখ্য চরিত্রের বর্ণনা যথার্থই পেয়েছি। তবে এলিসা, ডিওডেরাস,অহিত্রি, মাওয়াস- গল্পের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে চরিত্রগুলো সম্পর্কে খুব কমই ধারণা পেয়েছি। এই চরিত্রগুলোকে আরো জোড়দাঁড় করা উচিত ছিল বলে মনে হয়েছে।
গল্পে মানিহার চরিত্রটার সম্পর্কে তেমন কোনো কিছুই বলা হয়নি। তবে গল্প শেষ করেই বলে দেয়া যায় যুদ্ধ সিরিজের পরবর্তী বইয়ে এই চরিত্রের বর্ণনা পাওয়া যাবে।
⚈ লেখন-শৈলীঃ ═════════
লেখন-শৈলী অভারঅল ভালোই লেগেছে। আহামরি কোনো কমতি লক্ষ্য করা যায়নি। গল্পে যুদ্ধের বর্ণনা এবং টুইস্টগুলো লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে কিছু কিছু জায়গায় বর্ণনার সামান্য কমতি লক্ষ করা গেছে । সম্পূর্ণ বইয়ের লেখনশৈলীর কথা বললে ঐ সামান্য অংশটুকু তেমন চোখে আসে না। লেখক তার পরবর্তী বইগুলোতে লেখার প্রতি আরো যত্নবান হোক,উন্নতি করুক এই কামনাই করি।
⚈ বানান ও সম্পাদনাঃ ════════════
একটা বইয়ের বানান এবং সম্পাদনার গুরুত্ব যে কতটুকু তা এই বইটির মাধ্যমেই বুঝতে পারলাম। বই পড়ার মুড নষ্ট করে দেয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। দারুণ এই বইটিতে বানান ও সম্পাদনার মান এমনটা আশা করিনি। অসংখ্য বানান ভূল। আনুমানিক ৩৫+ তো হবেই। প্রতি ২-৩ পৃষ্ঠা পর পর ভূল। সম্পাদনাও তেমন ভালো লাগেনি আমার কাছে। আরো মনোযোগ দেয়া উচিত ছিল। সতীর্থের অনেক আগের প্রকাশিত বই এটি। তাদের আগের বইগুলোতে বানানের দিকটায় অনেক দূর্বল ছিল। তবে ইদানীং বইগুলোতে তারা আরো মনোযোগ বাড়িয়েছেন ; বানান এবং সম্পাদনার প্রতি। যা বর্তমান সময়ের প্রকাশিত বই এবং নতুন মুদ্রনের বইগুলোতে দেখা যাচ্ছে। সতীর্থ আমার পছন্দের প্রকাশনীর একটি। আশা করি সামনে তারা আরো অনেক ভালো করবে। সতীর্থ টিমের জন্য দোয়া এবং শুভকামনা নিরন্তর।
⚈ প্রচ্ছদ ও নামলিপিঃ ════════════
বলতে গেলে প্রচ্ছদ আমার নজর এবং মন দুটোই কেড়ে নিতে পেরেছে। এ বছর আমার পড়া সেরা প্রচ্ছদ নির্মিত বই এটিই। প্রচ্ছদে কমলা রঙের তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা যোদ্ধার ডিজাইন প্রচ্ছদটা ভালো লাগার মূল কেন্দ্র বিন্দু। এছাড়াও প্রচ্ছদের কালার কম্বিনেশন, নামলিপি প্যাটার্ন,যোদ্ধার পিছনের আবছা পরিবেশ সব মিলিয়ে প্রচ্ছদে একটা চমৎকার ভাব নিয়ে এসেছে। প্রচ্ছদ শিল্পী জুলিয়ান ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই - সুন্দর এই প্রচ্ছদ উপহার দেয়ার জন্য।
⚈ প্রোডাকশনঃ ════════
সতীর্থ প্রকাশনী আমার পছন্দের প্রকাশনীর তালিকায় থাকার প্রধান কারণই হচ্ছে এর প্রোডাকশন কোয়ালিটি। এ পর্যন্ত সতীর্থের যত বই পড়েছি, বইয়ের প্রোডাকশন কখনো নার্ভাস পাইনি। তেমনি এ বইটার ক্ষেত্রেও, বইয়ের পৃষ্ঠা, মলাট,বাইন্ডিং ছিল একদম ঝকঝকে। এর ফলে বইটা পড়াও গেছে আরামচে। অভারঅল প্রোডাকশন খুবই চমৎকার।
⚈ খুচরা আলাপঃ ═════════
প্রথম বার পূর্ণাঙ্গ ফ্যান্টাসি বই হিসেবে ভালোই উপভোগ করতে পেরেছি। এ বইটি এমন একটি বই যাতে রয়েছে বিভিন্ন জনরার ছোঁয়া। একসাথে বিভিন্ন জনরার অনুভূতি থাকায় আশা করি বইটা পড়ে সকল পাঠকের কাছেই ভালো লাগবে। অ্যাডভেঞ্চার,অ্যাকশন,রোমাঞ্চ, যুদ্ধ - এসব বিষয়ে পড়তে যাদের ভালোলাগে, বিশেষ করে তাদের জন্য বইটি আরো সুখপাঠ্য হয়ে উঠবে।
⚈ পার্সোনাল রেটিংঃ ═══════════
৭.৫/১০ ( বানান এবং সম্পাদনা মনমতো হলে ৮.৫/১০ দিতাম)।
আর্কিসাসের জগত। সহস্র বছর আগে এক ভয়াল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিণতিতে মানুষ হারিয়ে দেয় দিদিয়ানদের। দিদিয়ান, যাদের জাদুকরি শ*তান হিসেবে জানতো মানুষ। তৎকালীন সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাস এবং মহাবীর আশিহার কৃতিত্বে সেই বেলা রক্ষা পায় মনুষ্য জাতি।
সেই যুদ্ধে অজস্র লাশের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে যায় কিছু কঠিন সত্য।
প্রতি বছর নেহরার রাজ্যে এক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ীকে দেয়া হয় আশিহা খেতাব। কিন্তু এবারের কম্পিটিশনে হ্যান মিহিত্রার মত সাধারণ একজন, অহিকা রাজ্যের রাজকুমারি অহিত্রি কেন যোগ দিয়েছেন? নেহরার রাজ্যের সেনাধ্যক্ষ ইরাইল কেন এত আগ্রহী এই প্রতিযোগিতার ফলাফল নিয়ে?
এলিসা। মাজান রাজ্যের চৌর্যবৃত্তিক কর্মকান্ডে সেরা এই অল্পবয়সি মেয়েকে একটি শেষ চুরি করতে হবে। সেটি হল নেহরার রাজ্যে বন্দি এক রহস্যময় অপরাধিকে মুক্ত করে আনা। এই কাজে এলিসার দরকার পড়বে মানুষের নকল সেজে মিমিক্রি করতে পারা যাত্রাপালার নাহিসকে। এই কাজটি করতে পারলে বাকি জীবন তাদের কেটে যাবে প্রাচুর্যে।
মৃত্যুঞ্জয়। অমর এই ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রতিবার বেঁচে ফিরেন অন্ধকার দ্বীপ থেকে। তাঁর সাথে যাওয়া শত শত সৈনিক মৃত্যুবরণ করেন প্রতিবার। তাদের অভিযানের একটিই লক্ষ্য। মহাক্ষমতাধর এক পাথর। নিহার নামক এই জাদুকরি পাথরের মালিক যে বা যারা-ই হতে পারবে তাঁরা পরিণত হবে ভয়ানক ক্ষমতাশালী একটি গ্রুপে। মানুষ ছাড়াও এই আখ্যানে আছেন সিনা নামক জাদু জানা এক জাতি। আর্কিসাসের জগতের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বিভিন্ন জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে মানুষ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষমতাধর কিছু জাতি।
শত শত মানব সন্তান গিয়ে যে অভিযানে ব্যর্থ হয় সেই একই অভিযানে নেহরার রাজ্য থেকে এইবার মৃত্যুঞ্জয় সহ মাত্র আটজনই বা কেন পাঠানো হয়েছে? কি এমন শক্তি আছে এইবার মনুষ্য জাতির হাতে? যেখানে রূপকথার ভয়াল প্রাণী নিন্নাহার ঐ পাথরের পাহারায় আছে? মিহিতা সাগরের জলদস্যু প্রধান ডাওমিসের কি প্রয়োজন পড়েছে মাঝ সাগরে এই গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ার? এত ক্যাওসের মাঝে প্রকৃত সত্য লুকিয়ে আছে সহস্র বছর আগে।
আমিনুল ইসলামের লিখা পঞ্চম বইয়ে ফ্যান্টাসির দুর্দান্ত এক জগত ভ্রমণ করে আসা হল। আমার মতে, এই পর্যন্ত এটি লেখকের সেরা কাজ। ফ্যান্টাসি জগতের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং, বিভিন্ন দ্বন্দ্ব, ভূরাজনৈতিক সংকট, প্রাচীনতম রহস্য, বিভিন্ন চরিত্রের রূপায়ন, কোন নির্দিষ্ট কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে হস্তগত করার ত্রিমুখি, চতুর্মুখি লড়াই, সন্ধি, আবার যুদ্ধ সব মিলিয়ে মিনিমালিস্ট এপ্রোচে চমৎকার এক উপন্যাস লিখেছেন আমিনুল। গল্পকথন কোথাও যথাযথ মান হারায়নি বা ঝুলে পড়েনি। ওয়ান অন ওয়ান একশন এবং যুদ্ধের যে চিত্রায়ন আমিনুলের লেখনীর মাধ্যমে চলে এসেছে তা প্রশংসনীয়। ফ্যান্টাসি জগতের পাশাপাশি এমন কিছু চমক তিনি দিয়েছেন যে থ্রিলার পাঠের অনুভূতিও কাজ করতে পারে সচেতন পাঠকের মনে।
এটি খুব সম্ভবত আমিনুল ইসলামের 'যুদ্ধ' সিরিজের প্রথম গ্রন্থ। এই বই পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে লেখকের জন্মই হয়েছে যেন ফ্যান্টাসি ঘরানার আখ্যান লিখার জন্যে।
যুদ্ধের সহস্র বছর পর কাহিনী শুরু হয়েছে। মানব ইতিহাসে বিজয়ীরাই সব সময় ইতিহাস লিখেন। কিন্তু আসল সত্য উন্মোচন করতে হলে সবাইকে ফিরে যেতে হবে সহস্র বছর আগে। অথবা কাউকে ফিরে আসতে হবে সেই সময় থেকে।
বই: যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখক: আমিনুল ইসলাম প্রচ্ছদশিল্পী: লর্ড জুলিয়ান প্রকাশনী: সতীর্থ প্রকাশনী জনরা: হাই ফ্যান্টাসি ও অ্যাডভেঞ্চার মুদ্রিত মূল্য: ২৮০ টাকা (ফিক্সড) পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪৮
◑ কাহিনী সংক্ষেপ:
বর্তমান সময় থেকে সহস্র বছর পূর্বে আর্কিসাস ওয়ার্ল্ডে হয়েছিল এক যুদ্ধ। ইতিহাসে যা "মহাযুদ্ধ" নামে পরিচিত। যুদ্ধ হয়েছিল আর্ক���সাসের সকল রাজ্যের মানুষ আর জাদু জানা সহস্রবছর আয়ুষ্কাল সম্পন্ন দিদিয়ান জাতির মধ্যে, মানুষদের কাছে যারা শয়তানের পূজারী হিসেবে পরিচিত। তবে এই যুদ্ধের বীজ রোপিত হয়েছিল তারও পাঁচ সহস্র বছর পূর্বে সংঘটিত আদি যুদ্ধে। যে যুদ্ধ হয়েছিল আর্কিসাসের সকল জাদু জানা জাতি আর মানবজাতির মধ্যে। মানুষদের হয়ে যুদ্ধ করেছিল স্বয়ং দেবতা সাওস আর জাদু জানা জাতিদের পক্ষে ছিল দেবতা আম্বিয়া। দেবতা সাওসের কারণে সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল মানব জাতি। তারই পরিণতিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আম্বিহা জাতি আর নির্বাসিত হয় দিদিয়ান ও সিনা জাতি। এরপরে পাঁচ সহস্র বছর পরে আবার বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। আর্কিসাসে মানুষদের সকল রাজ্যের সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাস এর নেতৃত্বে সেই যুদ্ধে পরাজিত হয় দিদিয়ানরা। সেই যুদ্ধে সবথেকে বেশি অবদান ছিল আশিহা নামক এক যোদ্ধার। মহান আশিহা; সহস্র বছর আগে যার কারণেই রক্ষা পেয়েছিল সমগ্র মানবজাতি। সে মহাবীরের সম্মানের নেহরার রাজ্যে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা 'আশিহা লড়াই'। সেই লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়া যোদ্ধাদের আশিহা খেতাব প্রদান করা হয়। এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য একত্রিত হয় নেহার রাজ্যের এক সাধারণ যুবক হ্যান মিহিত্রা, অহিকা রাজ্যের রাজকুমারি অহিত্রি সহ আরো অনেকে।
অন্যদিকে আর্কিসাস ওয়ার্ল্ডেরই আরেক রাজ্য মাজান। মিহিতা সাগর পাড়ি দিয়ে মাজান রাজ্য অবস্থিত। এই রাজ্যেরই কুখ্যাত এক চোর এলিসা। তার দলে আছে হিত্রা ও তানি। তারা মরবিস নামক একজনের হয়ে কাজ করে। মরবিস তাদের এবার এমন একটি প্রস্তাব দেয় যার ফলে এই কাজটির মাধ্যমেই তারা এতো ধনী হয়ে যেতে পারবে যে পরিমাণ সম্পদের কথা তারা কখনো চিন্তাও করেনি। নেহরার রাজ্য থেকে একজন অপরাধীকে মুক্ত করতে হবে তাদের। বের করে নিয়ে আসতে হবে নেহরার রাজ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীকে। তবে কে সেই অপরাধী আর কোথায় তার অবস্থান তা কেউ জানে না। যেহেতু এর জন্য এতো সম্পদ দেওয়া হবে নিশ্চয়ই সে কোনো সাধারণ কেউ না, তাই একে মুক্ত করা এতোটাও সহজ না। তবুও ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এলিসা মরবিসের প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং পাড়ি জমায় নেহরার রাজ্যে।
আবার এই ওয়ার্ল্ডেই রয়েছে এক অন্ধকার দ্বীপ, সমুদ্র পেড়িয়ে যে দ্বীপের অবস্থান সমুদ্রের অন্ধকার অংশে। যে দ্বীপে আছে অসম্ভব শক্তিশালী এক পাথর। আর পাথরের পাহারায় আছে রুপকথার ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহার। তিন তিনবার যেখানে গিয়ে বিফল হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা। ফিরে এসেছে মাত্র একজন, মৃত্যুঞ্জয়; যে মানুষটা মরতে জানে না। আবারও যোদ্ধাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহরার রাজা। এবারের অভিযান কী সফল হবে?
মাঝ সমুদ্রে হঠাৎ দ্বীপের অভিযানে শত্রু হিসেবে আবিভার্ব হয় সমুদ্রের ত্রাস জলদস্যু ডিওমিস। এরপরে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত আরেক সমস্যা যার সূত্রপাত সহস্র বছর আগের সেই যুদ্ধে যে যুদ্ধে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল শয়তানের অনুসারী দিদিয়ানদের।
◑ পাঠ প্রতিক্রিয়া:
পড়ে শেষ করলাম লেখক আমিনুল ইসলামের হাই ফ্যান্টাসি বই "যুদ্ধের সহস্র বছর পর"। বইয়ের শুরুটাই বেশ আগ্রহ জাগানিয়া। তাই বইটা একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যাবে না। শুরু থেকেই বেশ দ্রুত ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে গিয়েছে। মূলত আশিহা খেতাব প্রদানের জন্য আয়োজিত প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করেই গল্প এগিয়ে যায়। পাশাপাশি বইয়ে বিভিন্ন জাতির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে। তাই বিভিন্ন চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে কাহিনী এগিয়ে যাওয়ার কারণে প্রথমে কিছু জিনিস বোধগম্য হচ্ছিল না। পরবর্তীতে চারদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ঘটনাগুলো যখন একটু একটু করে খোলাসা হতে শুরু করে তখন বোঝা যায় যে এগুলো আসলে একই সুতোয় বাঁধা।
হাই ফ্যান্টাসি জনরার বই হলেও পরিমিত পরিমাণ অ্যাডভেঞ্চারের মিশেলে লেখক দারুণ এক গল্প সাজিয়েছেন। বইটায় লেখক ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এর জন্য তেমন সময় নেননি, দ্রুতই মূল কাহিনীতে প্রবেশ করেছেন তবে যেহেতু সিরিজের প্রথম বই, তাই ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এ আরো সময় নিলে হয়তো সবকিছু ভিজুয়ালাইজ করতে আরেকটু সুবিধা হতো। পাশাপাশি বইয়ে বিভিন্ন জাতিদের জাদু শক্তি রয়েছে। খুব সহজ কিছু ম্যাজিক সিস্টেম রয়েছে বইয়ে, তাই বুঝতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। আবার শুধু যে জাদু শক্তির ব্যবহারই রয়েছে তেমনও না, পাশাপাশি সাধারণ যুদ্ধের বর্ণনাও রয়েছে। যেহেতু ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড তাই এখানে নির্দিষ্ট করে কোনো সময়কাল উল্লেখ করা নেই। তবে ম্যাজিক সিস্টেম থাকলেও এরা সভ্যতার দিক দিয়ে বেশ উন্নত কেননা তরবারির পাশাপাশি যুদ্ধে বন্দুকের ব্যবহারও করে এই ওয়ার্ল্ডের মানুষেরা।
আর আশিহা খেতাব প্রদানের জন্য আয়োজিত প্রতিযোগিতার ফাইটিং সিনগুলো লেখক দক্ষতার সাথেই তুলে ধরেছেন। তাই সিনগুলো অনেকটাই প্রানবন্ত লেগেছে। পাশাপাশি বইয়ে মোটামুটি অনেকগুলোই টুইস্ট আছে। সব টুইস্ট যে আনপ্রেডিক্টেবল ছিল তা বলব না, অন্তত আমি কিছু টুইস্ট আগে থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম, বিশেষ করে বইটার সবথেকে বড় টুইস্টের আগের টুইস্টটা। তবে লাস্টের যে টুইস্টা ছিল, জাস্ট অসাধারণ। আর আগেই বলেছি কাহিনীপ্রবাহ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল, কিছুক্ষণ পরপর কাহিনী নতুন দিকে মোড় নিচ্ছিল। লেখা একবারে মেদহীন, ঝরঝরে হলেও শেষের দিকে বিশেষ করে লাস্টের ক্ল্যাইম্যাক্সে লেখক একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন বলে মনে করি আমি।
দিনশেষে বইটা, লেখক আমিনুল ইসলামের লেখা প্রথম হাই ফ্যান্টাসি বই এবং যুদ্ধ সিরিজের প্রথম বই। সব মিলিয়ে এই বইয়ের সাথে যাত্রাটা দারুণ উপভোগ করেছি। লেখক এই বইয়ের কাহিনী এখানেই শেষ করে দিয়েছেন, তাই সিরিজের বই হলেও স্ট্যান্ডআলোন হিসেবে পড়া যাবে। তবে পরবর্তী বইয়ের জন্য শেষে ছোটখাটো ক্লিফ হ্যাঙ্গার রেখে দিয়েছেন লেখক, যার কারণে আবারো হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে আর্কিসাস ওয়ার্ল্ডে।
◑ চরিত্রায়ণ:
কাহিনীর প্রয়োজনে লেখক বইয়ে অসংখ্য চরিত্রের অবতারণা করেছেন। হ্যান মিহিত্রা, অহিত্রি, আশিহা, মৃতুঞ্জয়, এলিসা, ইরাইলসহ মোটামুটি সকল চরিত্রের বিভিন্ন আচার-আচরণ, বৈশিষ্ট্য, পোশাক -পরিচ্ছেদ সহ খুঁটিনাটি সবকিছুই লেখক দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে সায়ার চরিত্রটাকে ভালো লাগছে। এর বাইরে জলদস্যু ডিওমিসকে নিয়ে চাইলে আরো কাজ করতে পারতেন লেখক। খুব দ্রুতই এই চরিত্রটার ইতি টেনেছেন লেখক, যদিও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল। তবে এটা ইচ্ছাকৃত হতে পারে। তাছাড়া সবগুলো চরিত্রই ছিল বেশ নিখুঁত।
◑ লেখনশৈলী:
যেহেতু লেখকের শুরুর দিকের বই বাটারফ্লাই ইফেক্ট এবং এই বছর প্রকাশিত গডফাদার বইটা আমি পড়েছি, তাই লেখকের লেখার উন্নতি বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়েছে আমার। এই বইয়ে লেখকের বাক্যগঠন, শব্দচয়ন, গল্পের বুনোট ভালো ছিল। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে লেখক বোধহয় খেই হারিয়ে ফেলছেন। কেননা কিছু কিছু যায়গায় সংলাপের দুর্বলতা বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে। তবে ওভারল মোটামুটি ভালো বলা যায়। আশা করি লেখকের প্রকাশিতব্য "এল ডোরাডো ট্রিলজি" তে লেখক আরো ভালো কিছু পাঠকদের উপহার দিবেন।
◑ বানান ও সম্পাদনা:
রিভিউর এই পর্যায়ে এসে আসলে কী বলব বুঝতে পারতেছি না। একটা বইয়ে এতো ভুল কেমনে থাকে ভাই! প্রুফ রিডিং থেকে শুরু করে সম্পাদনা সবকিছুর অবস্থা ভয়াবহ। যত ধরনের ভুল থাকা সম্ভব অলমোস্ট সবই আছে এই বইয়ে। লাইন স্পেসিং এর অবস্থাও ভালো না। পড়তে গিয়ে বারবার থেমে যেতে হচ্ছিল, ভুল দেখে বিরক্তির উদ্রেক ঘটছিল। প্লট ভালো ছিল, ��েনে নিয়ে যাওয়ার মতো লেখা দেখেই হয়তো শেষ করতে পেরেছি। এর জন্য লেখককে দায়ী করা যায় না। আমি মনে করি সতীর্থের উচিৎ প্রোডাকশনের পাশাপাশি সম্পাদনায় আরো জোরালোভাবে নজর দেওয়া।
◑ প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন এবং অন্যান্য:
সতীর্থ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় প্রচ্ছদশিল্পী, লেখক রিয়াজুল ইসলাম জুলিয়ান। প্রচ্ছদ উন্মুক্ত করার পর ভালো না লাগলেও ছাপায় প্রচ্ছদটা বেশ ভালো এসেছেন। আমার ভালো লেগেছে, তবে প্রচ্ছদের ফ্রন্ট কভারে থাকা যোদ্ধাকে অন্যভাবে কল্পনা করেছিলাম বইটা পড়ে, তার সামনে এই যোদ্ধাকে দুধের শিশু লাগে...
এবার আসি প্রোডাকশনের বিষয়ে। ৮০ গ্রাম ক্রিম কালারের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে বইয়ে, ছাপাও যথেষ্ট স্পষ্ট। ডাস্ট কভার, জেল কভার মোটামুটি ভালোই। পাশাপাশি বইয়ের বাইন্ডিং ও স্মুথ, পেইজ খুলে আসে না আবার আরামসে পড়া যায়। ২৮০ টাকা হিসেবে বইয়ের মূল্যও খুব বেশি মনে হয়নি। তবে কস্ট কাটিং এর জন্যই মনে হয়ে ওয়ার্ড, লাইন স্পেসিং এর এই যা তা অবস্থা।
বইঃ যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখকঃ আমিনুল ইসলাম প্রকাশনীঃ সতীর্থ প্রকাশনী প্রচ্ছদঃ লর্ড জুলিয়ান মুদ্রিত মূল্যঃ ২৮০/- ধরণঃ ফ্যান্টাসি-থ্রিলার
ফ্ল্যাপ থেকেঃ প্রধান চত্তরে থেমে যায় গাড়ি। হ্যান আর সায়ার গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ো সামনে তাকায়। সামনে তামা রঙের বিশাল দুটি মূর্তি। অন্তত একশ ফুট উঁচু তো হবেই। এতো বিশাল মূর্তি আর কোথাও দেখা যায় না। মূর্তিদুটোর পরনে যোদ্ধার পোশাক। সামনের মুর্তিটা মহাবীর সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাসের আর ঠিক তার কাঁধের সাথে কাঁধ মিশিয়ে বাম দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য একটা মূর্তি দেখা যাচ্ছে; চুলগুলো দুপাশের চোখের উপর দিয়ে নেমে গেছে। এই মূর্তির মাঝেও তার চোখের ধারালো দৃষ্টি অনুভব করা যাচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এই মূর্তিও প্রাচীন সেই মহাবীরের প্রতি শ্রদ্ধা এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর নামই আশিহা। মহান আশিহা; সহস্র বছর আগে যার কারণেই রক্ষা পেয়েছিল সমগ্র মানবজাতি। গল্পটা এক অন্ধকার দ্বীপের, সমুদ্র পেরিয়ে অন্ধকার অংশে যে দ্বীপের অবস্থান। যে দ্বীপে আছে অসম্ভব শক্তিশালী এক পাথর আর পাথরের পাহারায় আছে রূপকথার ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহার। তিন তিনবার যেখানে গিয়ে বিফল হয়েছে নেহরার রাজ্যের যোদ্ধারা। ফিরে এসেছে মাত্র একজন, মৃত্যুঞ্জয়, যে মানুষটা মরতে জানে না। আবারও যোদ্ধাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহরার রাজা। এবারের অভিযান কি সফল হবে? মাজান রাজ্যের সেরা চোর এলিসার কাঁধে এসে পড়ে অবিশ্বাস্য এক দায়িত্ব। যেটা করতে পারলে তার স্বপ্ন সত্যি হবে। বের করে নিয়ে আসতে হবে নেহরার রাজ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীকে। মাঝ সমুদ্রে হঠাৎ দ্বীপের অভিযানে শত্রু হিসেবে আবির্ভার হয় সমুদ্রের ত্রাস জলদস্যু ডামিস। এরপরে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত আরেক সমস্যা। যার সূত্রপাত সহস্র বছর আগের সেই যুদ্ধে; যে যুদ্ধে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল শয়তানের অনুসারী দিদিয়ানদের।
কাহিনী সংক্ষেপঃ সহস্র বছর আগে আর্কিসাসের বুকে ঘটে যাওয়া এক যুদ্ধে শহীদ মহান যোদ্ধা আশিহার সম্মানে প্রতি বছর চার রাজ্য থেকে একজনকে আশিহা খেতাবে ভূষিত করা হয়। তবে এর জন্য অংশ নিতে হয় এক প্রতিযোগিতায়, যেখানে পরাজয়ের সাথে মৃত্যুও ওত পেতে থাকে। অসুস্থ মায়ের ইচ্ছা পূরণে হ্যান মিহিত্রাও অংশ নেয় সেই প্রতিযোগিতায়। ময়দানে দেখা হয় তার গুরুকূলের দুই বন্ধুর সাথে,যার একজন রাজকুমারি অহিত্রা। এই আশিহা খেতাবের সাথে জুড়ে রয়েছে রাজকুমারির ভাগ্য। এদিকে নেহার রাজ্যের রাজা নিহার পাথরের সন্ধানে চারবার শতজন করে লোক পাঠায় অন্ধকার দ্বীপে, যেই দ্বীপে বাস করে নিহার পাথরের পাহারাদার ভয়ংকর নিন্নাহারের দল আর দেবতা সাওস যাকে ঢেকে দিয়েছেন অন্ধকারে। কিন্তু রাজার পাঠানো সেনাদল থেকে 'অমর মৃত্যুঞ্জয়' বাদে কেউ এখনো ফিরে আসতে পারেনি। এমনকি সাবেক আশিহা মাওয়াসও টিকতে পারেনি সেই অন্ধকার দ্বীপে। বারবার ব্যর্থ হওয়া সত্বেও আবারো লোক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেহার রাজা। গঠন করে হ্যান, অহিত্রা, অমর মৃত্যুঞ্জয়, মাওয়াসের ছেলে আরিয়াস আর তিনজন বিখ্যাত যোদ্ধাকে নিয়ে এক বিশেষ দল। সবাইকে পাড়ি দিতে হবে মিহিতা সাগর, যেই সাগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে কুখ্যাত জলদস্যু ডামিস, পৌঁছাতে হবে 'না ফিরার রাজত্ব' অন্ধকার দ্বীপে। অন্যদিকে মাজান রাজ্যের বিখ্যাত চোর এলিসা আর তার দুই বোনকে দেয়া হয় এক অজ্ঞাত বন্দীকে উদ্ধারের দ্বায়িত্ব, যেই বন্দী কোথায় আছে, তা-ও কেউ সঠিক জানে না। তবে শোনা যায়, বহু বছর ধরে বেশ গোপনীয়তার সাথে সেই বন্দীকে রাখা হয়েছে এবন্দ বলা হয় সেই বন্দী রাজ্যের সবচেয়ে ভয়ংকর বন্দী। তাদের এই কাজে সফল হতে পারলে এলিসার বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। দুর্গম অন্ধকার দ্বীপে যাত্রা শুরু করে হ্যান আর তার দল। একইসাথে উদ্ধারে নামে এলিসা আর তার দল। কিন্তু পারবে কি সবাই নিজ নিজে অভিযানে সফল হতে?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
ভালো লাগা দিকঃ লেখকের লিখা প্রথম ফ্যান্টাসি জনরার লিখা হলেও বেশ সুন্দর লিখেছেন। গল্পে অনেক গতিময়তা ছিল যার কারণে পাতার পর পাতা উলটে যেতে বিরক্ত লাগেনি। পুরো বইকে অনেকগুলো অধ্যায়ে ভাগ করেছেন আর প্রতিটা অধ্যায় এমনভাবে শেষ হয়েছে যার কারণে পরে কি হয়েছে জানার আগ্রহ বেড়ে গেছে। ভাষার সাবলীলতার কারণে পড়তেও ক্লান্তি লাগেনি। প্রতিটা চরিত্রকে বেশ গুরুত্বের সাথে সামাল দিয়েছেন। যার কারণে কোনো চরিত্রকে অতিরঞ্জিত বা অহেতুক মনে হয়নি। অনেকদিন পর এমন মেদহীন একটা বই পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। যেখানেই মনে হয়েছে রহস্য শেষ সেখানেই লেখক চমকে দিয়েছেন। টুইস্টে ভরপুর একটা বই হওয়া সত্ত্বেও লেখক বেশ দক্ষতার সাথে সামাল দিয়েছেন, যেটা প্রায়ই নতুন লেখার ক্ষেত্রে লেখকরা পারেননা। বইয়ের বাঁধাই, প্রচ্ছদ, ছাপা ও কাগজের মান সব বেশ ভালো ছিল। মূলত বইয়ের জনরা থেকেও বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে বইয়ের প্রচ্ছদটা। বইয়ের মূল কাহিনীর সাথে সুন্দর মিলে গেছে।
ভালো না লাগা দিকঃ লেখক ভাষার যদি আরেকটু সুন্দর প্রয়োগ করতেন তাহলে আরো বেশি মজা পাওয়া যেত। শেষদিকে বইয়ে মনে হয়েছে লেখায় একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন। তাছাড়া বইয়ে সম্পাদনা জনিত বেশ কিছু ত্রুটি চোখে পরেছে। যেমন, বিরামচিহ্ন ও স্বরচিহ্ন প্রয়োগে বেশ কিছু ভুল ছিল। এছাড়া বানান ভুলও অনেক চোখে পড়েছে। যেমন- ৭৬ পৃষ্ঠায় 'কথা' এর পরিবর্তে 'করা', ৭৭ পৃষ্ঠায় 'চারদিকে'র বদলে 'চারিকে', ৯৩ পৃষ্ঠায় 'প্রাচীন' এর বদলে 'প্রাচীর', ৯২ পৃষ্ঠায় 'আদ্রর্তা'কে 'আদ্রতা' লিখা, ৯৫ পৃষ্ঠায় ' ডাওমিসের' বদলে 'ডাওমাসের' লিখা, ১১১ পৃষ্ঠায় ' অস্তিত্ব' কে 'অস্বিত্ব' লিখা, ১১৯ পৃষ্ঠায় 'ক্যাপ্টেনের' পরিবর্তে 'ক্যাপ্টেনেরর' লিখা, ১৩৩ পৃষ্ঠায় 'প্রথম' কে পরথম লিখা, ১৩৯ পৃষ্ঠায় 'অর্থেই' এর বদলে 'অক্ষেই' লিখা, ১৭৩ পৃষ্ঠায় 'অবুঝ' কে অবুজ লিখা, ১৭৫ পৃষ্ঠায় 'নিঃশেষ' হবার পরিবর্তে 'নিঃশ্বাস' দেয়া, ২০৭ পৃষ্ঠায় 'উনার' লিখার বদলে 'উনাদের' দেয়া, ২২৫ পৃষ্ঠায় 'অধিনয়ক' এর জায়গায় 'অধিনায়' দেয়া, ২৩০ পৃষ্ঠায় 'সমাপ্তি' কে 'সনাপ্ত' দেয়া,২৩৭ পৃষ্ঠায় 'চেয়েছিলাম' এর বদলে 'চেয়েছিলপন'২৪০ পৃষ্ঠায় 'হ্যানের' জায়গায় 'হ্যনের' দেয়া,২৪৪ পৃষ্ঠায় 'দুইজন' এর জায়গায় 'দুইজনজ', 'বেড়ে' এর বদলে 'ভেড়ে' দেয়া,২৪৫ পৃষ্ঠায় 'এগুতে' লিখার বদলে 'এগুনে' দেয়া,২৪৬ পৃষ্ঠায় ' পারে' এর পরিবর্তে 'আরে' লিখা। এছাড়া কিছু জায়গায় শব্দ বাদ ও অতিরিক্ত শব্দ যোগ করা হয়েছে।
এসব ভুলত্রুটি বাদ দিলে বইটা আসলেই বেশ উপভোগ্য ছিল। বইটা শেষ হবার পর মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছে,আশা করা যায় সিরিজের পরের বইগুলোতে এর উত্তর পাওয়া যাবে।
❝ফ্যান্টাসি জনরাটা এমন এক জনরা যেখানে কল্পনায় আপনি সেই সব জিনিস দেখতে পাবেন যা আপনি কোনোদিন কল্পনাও করেননি।❞
পাঠক বলছিলাম লেখক আমিনুল ইসলাম রচিত বই যুদ্ধের সহস্র বছর পরে নিয়ে। বইটি আমাকে বেশ মুগ্ধই করেছে বলা চলে। ফ্যান্টাসি জনরায় পা দেওয়া শুরু হয় ২০১৪ সালের দিকে লটর দেখে। এরপর এ জনরায় বেশ পদচারনা করলেও বাংলা লেখার তেমন কোনো বইতে করা হয়নি। হ্যারি পটারও ইংরেজিতেই পড়া হয়েছিল। বলতে গেলে বাংলায় আমার এটাই প্রথম কম্পলিটেড ফ্যান্টাসি জনরার বই পড়া। সে হিসেবে বেশ উপভোগ করেছি বইটা। বইতে উপভোগ করার বেশ কিছু বিষয় ছিল নিঃসন্দেহে। সবকিছু আলোচনা করবো তার আগে চলুন ঘুরে আসি আখ্যান থেকে।
★ আখ্যান:
সহস্র বছর আগে ঘটেছিল এক যুদ্ধ। মানব জাতি এবং শক্তিধর দিদিয়ান জাতির মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল সে যুদ্ধ। দৈববলে সে যুদ্ধে জয়ী হয় মানুষ। কিন্তু দেবতারা সেই দিদিয়ান জাতিদের ধ্বংস করে দেয় না। কিছু শর্ত দিয়ে সেই দিদিয়ান জাতিদের আঁটকে রাখে আর্কিসাস ওয়ার্ল্ডের এক রাজ্যে। তারপর পেরিয়ে যায় সহস্র বছর। কিন্তু মানব জাতি ভুগতে থাকে এক মহা চিন্তায়। তাদের মনে বাসা বাঁধে যে হয়তো প্রতিশোধ নিতে যে কোনো সময় দিদিয়ানরা তাদের উপর হামলা করবে। সেই অনুযায়ী তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু জাদু যানা দিদিয়ান জাতিদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই সহস্র বছর পেরিয়ে যাওয়া মানব জাতিদের। তারা একজন মানুষ পাঠায় সেই দিদিয়ানদের রাজ্যে। সেই মানুষ এনে দেয় কিছু খবর। কিন্তু সেই মানুষটি সেই রাজ্যে ঢোকার কারণে দেবতাদের দেওয়া একটা শর্ত ভেঙে যায়। দিদিয়ানরা প্রতিশোধ নিতে হামলা চালায় মানব জাতির ওপর। মানব জাতিও ততক্ষণে পেয়ে যায় এক ঔষধের সন্ধান। তারাও নেমে পড়ে যুদ্ধে। আবার যুদ্ধ লাগে। সহস্র বছর পরের সেই যুদ্ধে মানুষ এবং দিদিয়ানদের হতাহত হতে দেখে ঘাবড়ে যায় সেই মানুষ। সে তৎক্ষনাৎ প্রতীজ্ঞা করে আবার সব ফিরিয়ে আনার, সব আগের মতো ঠিক করে দেওয়ার। তারপর পেরিয়ে যায় আরও সহস্র বছর৷ সেই প্রতীজ্ঞাকারী ব্যক্তি কি পেরেছিল তার প্রতীজ্ঞা রাখতে না কি ব্যর্থ হয়েছিল? যদি পেরে থাকে তবে সহস্র বছরের ইতিহাস কী করে মুছে দিল? এই সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে ২৪৮ পেজের বইটিতে৷
★ মূল রিভিউ:
বইয়ের প্লট ছিল কয়েকটা টাইমলাইনকে কেন্দ্র করে। মূলত সহস্র বছরের তফাতে গল্পের ফ্লো এগিয়ে গিয়েছে। বর্তমানের কাহিনির সাথে হাজার বছরের ইতিহাসের নিগূঢ় মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন লেখক।
উপন্যাসটি শুরুই হয় টানটান উত্তেজনা দিয়ে। যেখানে এক রাজ্যের সবাই একটা প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করে। তাদের কাছে সেই স্বপ্নই হয়ে পড়ে সব কিছু। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জনপ্রিয় অ্যানিমি ব্লাক ক্লোভারের আঁচ পেয়েছিলাম যদিও।
একটি পাথরকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে উপন্যাসটি। যে পাথরের বর্ণনা আখ্যানে দিয়েছিলাম সেই পাথরটিই। অর্থাৎ আর্কিসাস ওয়ার্ল্ডের একটা রাজ্যে একটা পাথর রাখা আছে সেই পাথর দিদিয়ান জাতিদের হাতে গেলে তারা হয়ে যাবে সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি, আবার মানব জাতির কাছে গেলে তারা থাকবে সুরক্ষিত, অন্যদিকে সিনা জাতির কাছে গেলে তারা মর্যাদার দিক দিয়ে হয়ে যাবে দিদিয়ানদের সমান। অন্যদিকে এই পাথরটি পাহারা দেয় দেবতা সাওসের তৈরি করা নিন্নাহার নামক জন্তু। সেই পাথর উদ্ধার করতে নেমে পড়ে মানব জাতি কারণ আগেই বলেছিলাম বইতে মানব জাতি খুবই চিন্তিত থাকে কারণ তাদের ধারণা দিদিয়ানদের কাছে সেই পাথর চলে গেলে তাদের ওপর হামলা আসবে। মানব জাতি সেই পাথর উদ্ধারে মরিয়া হয়ে পড়ে। অপরদিকে সিনা জাতি ক্ষমতা পাওয়ার লোভে নেমে পড়ে সেই পাথর সংগ্রহ করতে।
কে পায় পাথরটি এই বিষয় যখন উন্মুক্ত হতে শুরু করে তখনই আসে দুর্দান্ত এক টুইস্ট। আর সেই টুইস্ট হজম করার আগে আসে আরেক টুইস্ট। সেটাও বুঝি হজম করা যেত কিছুটা প্রেডিক্টেবল ধরে কিন্তু পরের টুইস্টটা মাথা গুলিয়ে দেয়৷ এরপরে আর বলার কিছুই রাখে না। একের পর এক টুইস্টে চোয়াল ঝুলতে শুরু করে। উঠে আসে সেই সহস্র বছর আগের করা প্রতীজ্ঞার বিষয়। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে শুরু হয় এক যুদ্ধ। তুমুল যুদ্ধে চলতে থাকে টুইস্টের পালা।
দারুণ এক ক্লিফ হ্যাংগিং এন্ডিং দিয়ে শেষ হয় উপাখ্যান। যার মধ্যে খুঁজে পাই বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বস্ততা আরও অজস্র কিছু।
★ পাঠ প্রতিক্রিয়া:
ম্যাজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট এবং যুদ্ধভিত্তিক বইয়ে আমার হাইপ থাকে দ্বিগুণ। প্রথমত এই বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে ভেবেছিলাম কোনো তরবারির যুদ্ধ নিয়ে রচিত গল্প হবে হয়তো। ফ্ল্যাপ পড়ে জাদুর প্রয়োগের কিছু পাইনি তাই সেদিকে কল্পনাও করিনি। কিন্তু বইয়ের রহস্য উন্মোচিত হওয়া শুরু করলে টের পাই জাদুর প্রয়োগ কতখানি প্রখর এই বইতে।
বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাব লক্ষ করেছিলাম। যেমন সিনা জাতিদের ক্ষেত্রে আমার কাছে কেন যেন মার্ভেলের ইটারনালস কমিকসের ক্যারেক্টারের মতো লেগেছে। তারপর দিদিয়ানদেরকে মার্ভেলেরই কিছু ক্যারেক্টার যেমন ওয়ান্ডা বা ড.স্ট্রেঞ্জের ইউনিভার্সের সাথে কানেক্টেড হয়ে যাচ্ছিল। অবশ্য আমার সেসবে বেশি আগ্রহ ছিল দেখে হয়তো কল্পনায় সেসব ক্যাচ করেছিল। তবে উপভোগ করেছি বলতে হবে। টুইস্টগুলো যতটুকু প্রেডিক্ট করেছিলাম তার বাইরে গিয়ে টুইস্ট রেখেছেন লেখক তাই দেখে অবাকই হয়েছিলাম।
★ সমালোচনা:
বলা বাহুল্য একটা ফ্যান্টাসি বইতে খটকা থাকবেই। তার ওপর ২৪৮ পেজের বইয়ে হালকা পাতলা খটকা তুলে ধরলেও তা বেশ বড়োই হয়ে পড়ে।
প্রথমেই যে বিষয়টা বলবো তা হলো টেলিং মেথড এবং শোয়িং মেথডের মিশ্রণ ছিল বেশ কিছু জায়গায়। টেলিং মেথড বা শোয়িং মেথড দুটো আলাদা বিষয়কে একত্রে করলে যে কারোরই ভ্রুকুঞ্চন হয়ে যাবে। আমারও হয়েছিল।
বইয়ের উল্লিখিত একটা মিশনে প্রতিবার একশো জনকে পাঠানো হয়। কিন্তু হ্যান অর্থাৎ গল্পের নায়কের সময় তার সাথে সেই মিশনে পাঠানো হয় আটজন। বইতে একটা ঔষধের নাম বলা হয় যেটা খেলে দশগুণ শক্তি পাওয়া সম্ভব। সেই ঔষধই তাদের একশো জনের শক্তি যোগাবে বলে জানানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে সেই দিসা নামক ঔষধ দিয়ে কেন একশো জনেরই একটা টিম বানানো হলো না? নিন্নাহারদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হতে পারতো। হ্যাঁ মানছি সেনাধ্যক্ষ একটা কারণে (স্পয়লারের জন্য এড়িয়ে গেলাম) বড়ো টিম পাঠাননি কিন্তু এবার তো দিসার সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়টা ক্লিয়ার করা উচিত ছিল। দিসার কার্যক্ষমতা কতক্ষণ থাকবে তারও বর্ণনা দরকার ছিল৷ বলা হয়েছে দিসা ব্যবহারের ছয় ঘণ্টার মধ্যে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে কিন্তু কত ঘণ্টা সবল থাকবে তার ব্যাপারে বলা হয় নাই। সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হয় ছয় ঘণ্টাই এর কার্যক্ষমতা থাকবে। কিন্তু প্রথম অন্ধকার দ্বীপে ঢোকার পরে মাত্র চল্লিশ মিনিটের মাথায় দিসার ক্ষমতা লোপ পেয���ে দুর্বল হয়ে পড়াটাও কেমন বেখাপ্পা ঠেকেছে।
এছাড়াও মিহিতা সাগরটাকে একদিনে পাড় করিয়ে দেওয়াটা বেমানান ঠেকেছে। এলিসা, তানিরা এক রাতেই মিহিতা সাগর পাড়ি দিয়ে দিল! যেখানে সামান্য নদী দিয়ে এক জায়গা হতে আরেক জায়গায় এক রাত লাগে যেতে সেখানে সমুদ্রের মতো জায়গায় এক রাতে পাড়ি দেওয়া বড্ড হাল্কা করে দেখা হয় সাগরকে। অন্যদিকে যেখানে হ্যানদের অন্ধকার দ্বীপে যাওয়ার সময় দুই রাতের বেশি থাকতে হয়েছে সেখানে প্রায় সমান দূরত্বে থেকে এলিসাদের এক রাতেই নেহার রাজ্যে পাড় করিয়ে দেওয়াও কেমন যেন দৃষ্টিকটু! এরপরে উপন্যাসের শেষের দিকেও হ্যানদের সাহায্য করতে এত দ্রুত কী করে জাহাজটি গেল যেখানে হ্যানদের যেতেই দুইদিন লেগেছিল তার বর্ণনা পাইনি।
অযথা কিছু অধ্যায় বাড়ানো হয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। অর্থাৎ একই টাইমলাইনের বিষয়বস্তুতে আলাদা অধ্যায়ের দরকার পড়ে না। এক অধ্যায়ের মধ্যেই টানা যায়। বইয়ের কিছু কিছু অধ্যায় মনে হয় দুশো শব্দেরও ছিল না! বলা বাহুল্য সেই অধ্যায়গুলো তার আগের অধ্যায়ের সাথেই কানেক্টেড ছিল। অর্থাৎ একই চরিত্রের ভূমিকা।
১৩২ পৃষ্ঠায় রুমানের পয়েন্ট অব ভিউ না দিলেও হতো। অর্থাৎ একই সাথে দুইজন রহস্য কেন্দ্রিক চরিত্রের পয়েন্ট অব ভিউ তুলে ধরলে রহস্যে কিছুটা ভাঁটা পড়ে!
নির্দিষ্ট সময় বর্ণনা করাটা অযৌক্তিক। ফ্যান্টাসি বইতে একটা নির্দিষ্ট টাইম যেমন সকাল নয়টা, বেলা চারটা, দুপুর একটা এসব বলাটা স্ববিরোধী মনে হয়। এটা ব্যবহার করা যায় যদি তা ভবিষ্যতের কোনো প্লট হয় তবে। কিন্তু যেখানে তরবারি দিয়ে যুদ্ধ হয় সেখানে এক্সাক্ট টাইমটা জানার ওয়ে থাকা উচিত না। অর্থাৎ এখন বারোটা বাজে ইত্যাদি। যদি দিতেই হয় তবে বইয়ের কোনো এক জায়গায় কোনো এক চরিত্র দিয়ে ঘড়ির বিষয়টা উল্লেখ করিয়ে দিলে যৌক্তিক মনে হয়। নয়তো সকাল, বিকাল, রাত, গভীর রাত, ভোর ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
গল্পের মূল টুইস্টের আগে একটা টুইস্ট রয়েছে। না টুইস্টটা একদমই প্রেডিক্টেবল ছিল না। কথা হচ্ছে সেই টুইস্টের সময় আরিয়াসের উদ্দেশ্যটা মৃত্যুঞ্জয়ের বোঝা উচিত ছিল। কারণ আরিয়াস মাওয়াসের পুত্র সুতরাং মৃত্যুঞ্জয়ের তখনই বোঝা উচিত ছিল আরিয়াসের মোটিভ কী। কারণ এর আগে মৃত্যুঞ্জয়ের মনে যেহেতু লেখক প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন সেহেতু সেই উত্তরগুলো তখন পাওয়ার কথা ছিল। অথচ তা না পেয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে আরিয়াসকে এক টিমেই রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়টাও কেমন যেন প্রশ্ন যুক্ত হয়ে পড়ে! এছাড়াও অল্প কিছু জায়গায় ওভার ড্রামাটিক কিছু বিষয় ছিল।
কিছু জটলা থেকে গিয়েছিল পড়ার সময় আশা করি লেখক বুঝবেন। ১. হ্যানের ক্ষমতার বিষয়টা সে ঢেকেছিল কীভাবে? বা আশিহা? অর্থাৎ শক্তি প্রদান করলে তাদের চোখে কি সেই রঙ পাল্টাতো না? না পাল্টালে সে বিষয়টা উল্লেখ করা উচিত ছিল।
২. হিমিকা যেহেতু হাত জাগালেই সবাই মারা যেত অথবা তার ক্ষমতা ছিল মেরে ফেলার তবে জেলের ভেতর কেন মারতে পারলো না? কারণ এলিসা বা তানিরা যখন কারাগারের দরজা খুলেছিল তখন হিমিকা কিন্তু কোনো কিছু দিয়ে বাঁধা ছিল না! হতে পারে মানুষদেরকে না দেখতে পারলে তার স্পেল কাজ করতো না। কিন্তু সেক্ষেত্রে ইরাইল বা অন্যান্য সৈনিকদের মারার সময় এলিসারা কীভাবে বেঁচে গেল? অর্থাৎ নির্দিষ্ট করে সে টার্গেট ফিক্সড করতে পারতো কি না তা উল্লেখ থাকা দরকার ছিল।
৩. ম্যাজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট জড়িত ফ্যান্টাসিতে কার ক্ষমতার আয়ত্ত কতটুকু বা বাধ্যবাধকতা কতটুকু তার বিবরণ স্পষ্ট ছিল না। নিহার পাথর কীভাবে কাজ করে তারও বিবরণ অস্পষ্ট ছিল। শুধু আলো ছড়ালেই কাজ করতো এরকম বর্ণনাও ছিল না।
৪. বলা আছে প্রত্যেকটা দিদিয়ানদের সামনে নিহার পাথর থাকলে সে অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আশিহার উপর কেন সেই প্রয়োগ হলো না? প্রতিফলিত বলে? স্পষ্ট ছিল না।
৫. সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাস বলেছিল দিদিয়ায় তারা আশিহার আগেও মানুষ পাঠিয়েছিল কিন্তু হিমিকা বা মাশুরা বলবালি করছিল হাজার বছর ধরে কোনো মানুষ সেখানে আসেনি। খটকা ছিল এটাও।
বানান বা সম্পাদনা সম্পর্কে বলবো সতীর্থ প্রকাশনী যেন আরেকটু সতর্ক হয়ে বানানগুলো নজর দেয়। প্রোডাকশন ভালো ছিল।
★ লেখনশৈলী:
লেখনশৈলী দারুণ ছিল তা বলবো না তবে খারাপ ছিল তাও বলা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রেই লেখনশৈলী চমৎকার ছিল। বিশেষ করে যুদ্ধের বর্ণনাগুলো তো দারুণ ছিল বলা যায়। লেখক আনপ্রেডিক্টেবল টুইস্ট, যুদ্ধ বা ভয়াবহতার বর্ণনা ভালোই দেন বোঝা গেল।
তবে ঐ যে বললাম কিছু কিছু জায়গায় খানিকটা খেই হারিয়ে টেলিং থেকে শোয়িং মেথডে কনভার্ট হয়ে গিয়েছিল। এতটুকু তো ইগনোর করাই যায়। অর্থাৎ আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আহামরি কিছু না এটা। কারণ এসব বিষয় মূলত সম্পাদকের হাতে থাকে।
★ উপসংহার:
একটা উপন্যাসে সব দিকই থাকবে। ভালো খারাপ সব দিকই এতে বিদ্যমান থাকে এটা সবাই জানি। এই বইটায় খারাপ তেমন গুরুতর না। বরঞ্চ বলা যায় বইয়ের আশিভাগই উপভোগ্য। বাকি বিশভাগের পনেরো ভাগ যদি আপনি আমলে না নেন তবে কোনো সমস্যা করবে না। আর পাঁচ ভাগ? সে তো একটা বইয়ে না থাকলে বরঞ্চ অবাক হবো।
বইটি আমি এক বসায় শেষ করতে সক্ষম হয়েছি একমাত্র টুইস্টগুলোর কারণে। যদিও টুইস্ট আসার আগ পর্যন্ত পড়তে পড়তে কিছুটা চোখ লেগে এসেছিল কিন্তু টুইস্টের পরে আর চোখ লাগার সময় পায়নি।
বই: যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখক: আমিনুল ইসলাম প্রকাশনী: সতীর্থ প্রকাশনী প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২২ প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান প্রচ্ছদ মূল্য: ২৮০ টাকা (নির্ধারিত)
This entire review has been hidden because of spoilers.
ভাইরে ভাই! কি পড়লাম এইটা? এই নিয়ে আমিনুল ইসলাম ভাইয়ের ৩টা বই পড়লাম... ৩টাই পড়ার পর সেইম রিএকশন আমার। মানে অন্য লেভেলে ভাই... বইটার নাম "যুদ্ধের সহস্র বছর পর"... গত তিনদিন আগে বইটা শুরু করার পর অন্যদিকে ধ্যানই যায় নাই। বইটা একটা ফ্যান্টাসি জনরার বই। জাদু জানা ও না জানা জাতিদের নিয়ে গড়ে তুলা এই প্লটকে পূর্ণতা দেয়া হয়েছে অসম্ভব বিস্ময়করভাবে। আমি সাধারণত একটা বই শেষ করার পর দুই একদিন সময় নিয়ে পরে রিভিউ লিখি। কিন্তু এই বইটা মাথায় পুরো আগুন ধরাই দিলো। তাই এভাবে খাপছাড়া ভাবে লিখা।
বইয়ের নামঃ যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখকঃ আমিনুল ইসলাম প্রকাশকঃ মো. তাহমিদুর রহমান; সতীর্থ প্রকাশনা প্রচ্ছদঃ লর্ড জুলিয়ান প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০২২ জনরাঃ ফ্যান্টাসি পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৪৮ মুদ্রিত মূল্যঃ ২৮০ টাকা মাত্র (নির্ধারিত)
❝Betrayal is never easy to handle and there is no right way to accept it.❞—Christine Feehan
বইটা মোটাদাগে এডভেঞ্চার ফ্যান্টাসী৷ আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। ফ্যান্টাসীর সাথে এডভেঞ্চার ব্লেন্ড করে চমৎকার একটা কাহিনী তুলে ধরেছেন লেখক। প্রথম ভাগে অবশ্য ফ্যান্টাসীর কিছুটা ঘাটতি মনে হয়েছে। কিন্তু বইয়ের দ্বিতীয় ভাগটা ছিল অসাধারণ। সব আক্ষেপ মিটিয়ে দিয়েছে একেবারে।
ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ের জন্যে লেখক আলাদা সময় নেননি। কাজেই গল্পও কোথাও ঝুলে পড়েনি। বরং কাহিনীর সাথে সাথেই জগতটার পরিচয় আর সমাজব্যবস্থা ফুটে উঠবে। একেবারে পার্ফেক্ট পেসে এগিয়েছে কাহিনী।
বইটা শুরুই হয়েছে এমনভাবে যে রাখার জো নেই। বাধ্য হয়ে যদি রাখতেও হয় কাহিনী মন থেকে মুছবে না। বইয়ের প্রথমের প্রতিযোগিতা বেশ উপভোগ করেছি। প্রতিযেগিতাটি ছিল লড়াইয়ের। প্রতিযোগিতাসহ বইয়ে যতগুলো ফাইটিং সিকোয়েন্স এসেছে সবগুলোই দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। বর্ণনা ছিল চোখের সামনে ফুটে ওঠার মতো।
বইয়ের চরিত্র প্রচুর। প্রথম ভাগে চরিত্রগুলোকে খাপছাড়া মনে হলেও দ্বিতীয় ভাগে সবগুলো চরিত্রের কার্যকলাপ বেশ অর্থবহ মনে হয়েছে। পরের বইয়ে চরিত্রগুলোর সাথে খুব সহজেই মিশে যাওয়া যাবে। বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে আশিহা, সায়ার, মৃত্যুঞ্জয়, হ্যান, হিমিকা, অহিত্রির চরিত্রায়ন বেশি ভালো ছিল। প্রিয় চরিত্রের কথা বললে সায়ারকে সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
ভাইয়ার লেখা আমার খুব পছন্দের। সাবলীল, ঝরঝরে, টানা পড়ার মতো। মাত্রাতিরিক্ত ডিটেইলিং ছিল না। ম্যাজিক সিস্টেম বলতে গল্পে আলাদা আলাদা জাতির কাছেই আছে ক্ষমতাটা। সর্বজনীন না। সেই হিসেবে জটিল কোনো ম্যাজিক সিস্টেম ছিল না। কাহিনীর সাথে মানানসই। তবে চাইলে এদিকটায় আরেকটু ডিপ কিছু করা যেত।
বইয়ের সমাপ্তিটা ছিল মনে রাখার মতো। অসাধারণ কয়েকটা টুইস্ট আছে। শেষদিকে গল্প খুব দ্রুত টার্ন করছিল। দ্বিতীয়ভাগে এসে একবার মনে হচ্ছিল কাহিনীতে নতুন কিছু ঘটবে কি না। কিন্তু শেষে এমন কিছু হলো যে একেবারে মন ছুঁয়ে গেছে। এই বইটা সিরিজের প্রথম বই তবে সম্পূর্ণ স্ট্যান্ড এলোন। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর মিলবে। আর একেবারে শেষে যে ক্লিফ হ্যাঙ্গারটা রাখা হয়েছে পরের বইয়ের জন্যে সেটা চমকে দিয়েছে খুব।
সবমিলিয়ে, বইটা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। স্পয়লার হয়ে যাবে বিধায় অনেক কিছুই আলোচনা করতে পারলাম না। এবছর বেশ কয়েকটা ফ্যান্টাসী আসতে যাচ্ছে। সেগুলোর সাথে সাথে এইটাও সংগ্রহ করতে পারেন। এড়িয়ে গেলে ভালো কিছু মিস করবেন।
বই: যুদ্ধের সহস্র বছর পর লেখক: আমিনুল ইসলাম প্রচ্ছদ: লর্ড জুলিয়ান জনরা: হাই ফ্যান্টাসি ও অ্যাডভেঞ্চার নির্ধারিত মলাট মূল্য/ফিক্সড প্রাইজ: ২৮০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৪৮
নেহারার রাজ্যে জড়ো হয়েছে নানান রাজ্য থেকে আসা বীর যুদ্ধারা, উদ্দেশ্য বীর আশিহা খেতাবের জন্য লড়াই। নেহার রাজ্যের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মহান আশিহার বীরত্বের গল্পগাথাঁ, আছে মহাবীর সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাসের গল্পও, যাদের কারণে সহস্র বছর আগে রক্ষা পেয়েছিলো সমগ্র মানবজাতি।
গল্পটা অন্ধকার দ্বীপের, যেখানে অন্ধকার জড়িয়ে আছে শীতের কুয়াশার চাদরের মতো, যেখানে আছে নীল আলো ছড়ানো এক দেবতাদের পাথর। যার শক্তি ডেকে আনতে পারে মানবজাতির ধ্বংস। আর পাথরের পাহারায় আছে রূপকথার ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহার। তিন তিনবার সেই পাথরের জন্য গিয়ে বিফল হয়েছে নেহারার রাজ্যের শত শত বীর যুদ্ধরা। ফিরেছে কেবল একজনই, মৃত্যুঞ্জয়। তবে এবার আর বিফল হবে না অভিযান। এদিকে মাজান রাজ্যের সেরা চোর এলিসার কাঁধে এসে পড়েছে অবিশ্বাস্য এক দায়িত্ব। যেটা করতে পারলে স্বপ্ন সত্যি হবে তার। নেহারার রাজ্যের সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীকে বের করে আনতে হবে তাকে।
এইসব কিছুর সূত্রপাত সহস্র বছর সেই যুদ্ধে, যে যুদ্ধে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো শয়তানের অনুসারী দিদিয়ানদের।
আবারও আসছে যুদ্ধ, আর যুদ্ধ সবার থেকেই কিছু না কিছু ঠিকই কেড়ে নেয়।
সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ক্রিয়েট করে লেখক যুদ্ধের সহস্র বছর পর বইয়ে চমৎকার একটা গল্প উপস্থাপন করেছেন যেখানে গল্প প্রতিটা মূহুর্তে মোড় নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। সম্পূর্ণ গল্পটাতেই টুইস্ট, অ্যাডভেঞ্জার, পলিটিক্স, ম্যাজিক্যাল এলিম্যান্ট ইত্যাদি বিষয়াদিতে পরিপূর্ণ ছিলো, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে শেষ পর্যন্ত। গল্প কখনও এগিয়েছে রোলার কোস্টার গতিতে, আবার কখনও ব্যাকস্টোরিতে গল্প এগিয়েছে কিছুটা ধীরে। তবে গল্পের কোথাও বর্ণনাতে বিরক্তি লাগবে না। বরং প্রতিটি মূহুর্তে শেষটা জানার জন্য উদগ্রীব করে তুলবে।
বইটির প্রতিটি চরিত্রই দারুণ ভাবে উপভোগ করেছি। লেখক চরিত্রগুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে প্রতিটি চরিত্রের তাদের কৃতকর্মের জন্য রয়েছে নিজস্ব যুক্তি, এবং কি চিন্তা তাদের দিক দিয়ে চিন্তা করলে তাদেরকে অপরাধী হিসেবেও ভাবাটা দুষ্কর হয়। যার ফলে কে যে হিরো আর কে যে ভিলেন তা পরিমাপ করাটা দুষ্কর বলা যায়, অবশ্য গল্পের প্রতিটি মোড়ে চরিত্রের প্রতি মনোভাব বদলেছে প্রতিবার।
এতো চমৎকার গল্প, বর্ণনা হওয়ার শর্তেও গল্পের অধিকাংশ জায়গায় সবথেকে বেশি অনুভব করেছি বিস্তারিত বর্ণনার, যুদ্ধ বলেন কিংবা পারিপার্শ্বিক অবস্থা লেখক আরেকটু স্থির গতির, বিস্তারিত উপস্থাপন করলে গল্পটা আরো উপভোগ্য হতো। সেই সাথে বাক্যগঠনের মাঝে মাঝে অপরিপক্কতার চাপ ছিলো চোখে লাগার মতো, বিশেষ করে গল্পের প্রথম দুই-তৃতীয়াংশে, শেষের দিকে এসে এমনটা আর লাগেনি। অবশ্য যারা লেখকের সাম্প্রতি প্রকাশ হওয়া রাজকহন পড়েছেন, তারা ভালোই বুঝতে পারবেন লেখকের এই লেখার চেয়ে বর্তমান লেখাগুলো আরো চমৎকার, পরিপক্ব।
পরিশিষ্ট যারা ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন, কিংবা গল্পের পারতে পারতে থ্রিলের স্বাদ পাওয়ার মতো বই পড়তে চান, তারা লেখক আমিনুল ইসলামের এই যুদ্ধের সহস্র বছর পর বইটি পড়তে পারেন, আশাকরি ভালো লাগবে।
There's not much good fantasy written in Bangla but this book is an exception. Although the book size is small and the writer tried to weave a cohesive narrative within such a short scope which is to be commended. The characters are likable. The story has some unexpected twists. Any fan of Martin or Sanderson will love it. Highly recommended.
বরাবরই আমি ফ্যান্টাসি জনরার বই পড়তে ভালোবাসি আর অনেক বই পড়েছিও।কিন্তু এই বই আমি রীতিমতো চমকে গিয়েছি।কোনো দ্বিধা না রেখেই বলা চলে যে ফ্যান্টাসি জনরার দারুণ এডভেঞ্চারপূর্ণ একটা বই।এক বসায় পড়ে ফেলার মতো।তবে লেখক কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করেনি যেগুলো উত্তর পরের পার্টে পাওয়ার আশা করছি।
🟥পূর্বকথাঃ প্রায় দুই হাজার বছর আগে আর্কিসাসে মানুষের পাশাপাশি বাস করতো জাদু জানা দিদিয়ান জাতি,সিনা জাতি। দেবতা সাওস স্বর্গে থাকতেন আর আম্বিহা জাতি তার হয়ে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের হিংসা ও লোভের ভয়ে অন্য জাতিরা তাদের দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে শুরু করে মহাযুদ্ধ। দিদিয়ান,আম্বিহা,সিনা জাতির ভয় ছিল মানুষেরা একদিন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং তাদের ধ্বংস করতে আসবে। মানুষ একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত হতে শুরু করে, কারন তারা যাদুতে পারদর্শী জাতিদের তুলনায় অনেক দুর্বল। দেবতা সাওস সব জাতির মধ্যে শান্তিচুক্তি করার জন্য এগিয়ে আসেন কিন্তু কেউ রাজি হয় না।দেবতা সাওস জাদুবিদ্যায় পরাক্রমশালী জাতিদের এই অহংকার ও দাম্ভিকতায় প্রচন্ড রকম ক্ষিপ্ত হন। তিনি মানুষের দলনেতাকে ডেকে একটি গাছের চারা দেন এবং এটার পাতা থেকে বানানো ওষুধ ব্যবহার করে যুদ্ধ করতে বলেন। নতুন শক্তিতে নতুন উদ্যমে মানুষ যুদ্ধে জিততে শুরু করে। আর কোনো উপায় না দেখে দেবতা আম্বিহা যুদ্ধে একটি নিষিদ্ধ বস্তুর ব্যবহার শুরু করেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে স্বয়ং দেবতা সাওস যুদ্ধে নেমে যান। যাদুশক্তিতে বলবান জাতিগুলার সাথে দেবতা সাওসের নেতৃত্বে মানুষদের বিরাট এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আম্বিহা জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, সব জাতি কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেঁচে থাকে অল্প কিছু দিদিয়ান ও সিনা। যুদ্ধ পরবর্তী শর্তে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয় আর তারা দূর দূরান্তে পাড়ি জমায়। মহাশক্তিশালী ঔষধ আর নিষিদ্ধ বস্তু লুকিয়ে ফেলা হয় আর্কিসাসের সুরক্ষিত, দুর্গম ও অজানা জায়গায়। 🔰তথ্যসূত্রঃ তরবারির নৃত্য 🟥কাহিনি সংক্ষেপঃ "ইতিহাস,বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কোনো সময়কালই কোনো বীরকে, আত্মত্যাগকারীকে ভুলে যায় না।….নক্ষত্রের মত চিরজীবন আলো ছড়িয়ে থাকে।" সহস্রবছর পূর্বে জীবন দিয়ে আর্কিসাসকে রক্ষা করেছিল এক মহাবীর আশিহা। আশিহা ভবনের গেট দিয়ে প্রবেশ করেই দেখা মিলবে বিশ ফুট উঁচু রূপার তৈরী এই মহাবীরের মূর্তি। মূর্তিটা দেখে মনে হবে প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করার জন্য সে অনুতপ্ত। মহাবীরের সম্মানে নেহরার রাজ্যে প্রতি চার বছরে আয়োজন করা হয় আশিহা প্রতিযোগিতার। একদিকে মায়ের জন্য আশিহা খেতাব জিততে বদ্ধপরিকর তরুণ হ্যান মিহিত্রা, অন্যদিকে নিজের সম্মান ও উপযুক্ত মর্যাদা পেতে এই লড়াই জিততেই হবে রাজকুমারী অহিত্রীকে। ভবঘুরে আরেক প্রতিযোগী সায়ারের এসবে বিশেষ কোন আগ্রহ নেই,সে তার নিজের ধান্দায় মগ্ন । এই বিশেষ প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য অন্ধকার দ্বীপে অভিজ্ঞ ও সবচেয়ে দক্ষ যোদ্ধাদের দিয়ে এক নিষিদ্ধ বস্তুর খোঁজে অভিযান চালানো। কিন্তু ভয়ংকর সব জন্তু জানোয়ারের অস্তিত্ব রয়েছে ঔ দ্বীপে। এখন পর্যন্ত মৃত্যঞ্জয় ছাড়া কেউ বেঁচে ফিরতে পারেনি। এই নিষিদ্ধ বস্তুর খোঁজে শুরু হলো পুরো আর্কিসাস জুড়ে ক্ষমতার টানাপোড়েন। কিন্তু সবাই কি তাদের প্রতিজ্ঞা রাখবে? নাকি হাজার বছর পর ক্ষমতার লোভ আর খ্যাতির নেশায় আবারো শুরু হবে আরেক মহাযুদ্ধ ? 🟥পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ ★বইয়ের প্রচ্ছদ আর কাহিনির শুরুতে হ্যানের বর্ণনা শুনে আমার বার বার মনে হয়েছে স্টেরোটাইপ কাহিনির মত কোন দূর্বল চরিত্র আসবে আর বিজ্ঞ গুরুর সান্নিধ্যে একসময় বড় যোদ্ধা হয়ে উঠবে। কিন্তু উপন্যাসের কাহিনির জট খোলার পর সে আশায় গুড়ে বালি। ★ উপন্যাসের কাহিনি মূলত ৩টি টাইমলাইনে বিভক্ত। প্রথমটি দুইহাজার বছর আগে দেবতাদের নিয়ে, দ্বিতীয়টি হাজার বছর আগে মহাবীর আশিহা ও দিদিয়ানদের নিয়ে অজানা কাহিনি। আর তৃতীয়টি হাজার বছর পর বর্তমানে চলমান। ★কাহিনির প্রথমাংশে বর্ণিত হয়েছে আশিহা খেতাব বিজয়ের জন্য বিভিন্ন যোদ্ধাদের লড়াই ও প্রতিযোগিতার পিছনে নেহরার রাজ্যের সেনাপ্রধানের মূল উদ্দেশ্য। উপন্যাসের মধ্যাংশে উঠে এসেছে ভয়ংকর প্রাণী নিন্নাহারের বাসস্থান নিষিদ্ধ দ্বীপে নিহার নামক যাদুর পাথরের সন্ধানে অভিযান।এখানে প্রথমবারের মত নিষিদ্ধ ঔষধ দিসার ব্যবহার দেখা যায়। ★সিনাজাতির সুসংগঠিত সেনাবাহিনী ও তাদের প্রশিক্ষণের সাথে তাদের রাণী ভ্রিকা ইহানের কূটনীতিক চিন্তাভাবনা বেশ পরিণত ও ভারী আবহের সৃষ্টি করেছে। এর সাথে XX ক্রোমোজমের বিষয়টি অসাধারণ ছিল। ★ লেখকের অন্যান্য বইয়ের তুলনায় তার সাবলীল লেখনশৈলী চোখে পড়ার মত।বইয়ের কাহিনিতে ঢুকে গেলে লেখকের সহজাত ফ্যান্টাসি লেখার মুনশিয়ানা নজরে আসবে । এত বিশাল প্লটের বই পড়ে কোথাও বিরক্ত বা খিচুড়ি পাকানো হয়েছে মনে হয়নি। তবে বইয়ের কথোপকথন সব জায়গায় পছন্দ হয়নি। সংলাপ কয়েক জায়গায় একটু দূর্বল লেগেছে। ★ বইটির সবচেয়ে শক্তদিক ছিল অ্যাডভেঞ্চারের সাথে গতিময় কাহিনি। আর এ্যাকশন সেটপিস গুলা এক কথায় দুর্দান্ত হয়েছে। রাজ্যগুলোর মাঝে যাতায়াতের সময়, দূরত্ব বর্ণনায় কমতি ছিল। নিহার পাথরের ব্যবহারের সাথে দিসার কার্যক্ষমতার সময় স্পষ্টভাবে বলা ছিল না। তবে এগুলার রহস্য লেখক পরবর্তী বইয়ের জন্য ও রাখতে পারেন। ★উপন্যাসের শেষাংশের কিছু বর্ণনা ছিল রকেট গতির। কেন্দ্রীয় চরিত্রের আলোকে রচিত এই অংশটুকু দীর্ঘ করা যেত, তাতে কাহিনির বুনট আরো শক্তপোক্ত হতো। ★বইটিতে সরাসরি সময়ের ব্যবহার ছিল। এটা অনেকের কাছে একটু দৃষ্টিকটূ লাগতে পারে। তবে ফ্যান্টাসিতে সরাসরি সময়ের অহরহ ব্যবহার রয়েছে। ★অ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি হওয়ায় শেষে বড় কোনো টুইস্টের প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু বইয়ের টুইস্টগুলা আনপ্রেডিক্টেবল ছিল। আর শেষাংশ তো পুরাই বারুদ। পরবর্তী বইয়ের টিজার ছিল স্পষ্ট। ★লেখক উপন্যাসে যুদ্ধ বিবাদ, জাতিগত বিভেদের আড়ালে মানুষের ক্ষমতার রাজনীতি তুলে এনেছেন। "আমি ইতিহাসের পাতায় সেই মানুষ হিসেবে থাকতে চাই, যে কি-না দিদিয়ান জাতিকে ধ্বংস করেছে।……ভবিষ্যতের আর্কিসাসের বুকের সমস্ত রাজ্যের সমস্ত সেনাধ্যক্ষের কাছে আমি দেবতার থেকেও বড় হবো। 🟥ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংঃ ফ্যান্টাসি সাহিত্যের সবচেয়ে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এর নিজস্ব ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং অর্থাৎ লেখকের নিজের তৈরী জগৎ। টোলকিন তার বিখ্যাত উপন্যাস লর্ড অফ দ্য রিংয়ের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিংয়ে এই কাল্পনিক দুনিয়াকে সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড হিসেবে অভিহিত করে এর নাম দিয়েছিলেন মিডল আর্থ। এই দুনিয়ার ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থা সবই আলাদাভাবে গড়ে উঠে। যুদ্ধের সহস্র বছর পরের সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড বিল্ডআপে নেহরার রাজ্যের আলাদাভাবে বর্ণনা দিয়ে কাহিনি টানা হয়নি।যদিও সবচেয়ে আলোচিত রাজ্যটির পূর্ব ইতিহাস,আয়তন ও অন্যান্য রাজ্য থেকে দূরত্বের অল্প বিস্তর বর্ণনার প্রয়োজন ছিল। তবে অ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসির আদলে লেখায় পর্যায়ক্রমে কাহিনির সুতার জট ধীরে ধীরে খুলে আশিহার মূর্তি ও লড়াইয়ের মাঠ, নেহরার প্রাসাদ, দেবতা সাওয়ের মন্দির, নিষিদ্ধ দ্বীপ, মাজান বন্দর, জলদস্যু ডাওমিস, মাইনার, নেহরার বন্দর ,অন্ধকার দ্বীপ, দিদিয়ান রাজ্য, দিদিশান রাজপ্রাসাদের বর্ণনা দিয়ে পুরো আর্কিসাসের দুনিয়াকে ধাপে ধাপে তুলে এনেছেন লেখক। ঢালাওভাবে ওয়ার্ল্ড বিল্ডআপ করলে পুরো বইয়ের কাহিনির মূল মজাটা নষ্ট হতো। সেই হিসেবে লেখকের আর্কিসাস দুনিয়া সৃষ্টি সার্থক বলতে হবে। নেহরার সমাজব্যবস্থার সাথে সিনা বা দিদিয়ানদের অনেক পার্থক্য দেখানো হয়েছে। দিদিয়ান সমাজে রাজা ও অধিনায়কের ভূমিকা দেখানোটা দারুণ ছিল৷ এসব সূক্ষ্ম বিষয় গুলো ফ্যান্টাসির মূল উদ্দেশ্য আমাদের কল্পনার জগৎকে আরো সমৃদ্ধ করে। 🟥ম্যাজিক সিস্টেমঃ ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডে ম্যাজিক সিস্টেম খুব বড় একটা ভূমিকা রাখে। ম্যাজিকগুলা কিভাবে কাজ করে এবং কারা এই ম্যাজিকগুলা করতে সক্ষম? এমন অনেক বিষয়ের উপর সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ডের কাহিনির বিস্তার ও টুইস্ট নির্ভর করে। দিদিয়ান বা সিনাদের নিজস্ব ম্যাজিকাল পাওয়ার রয়েছে। বড় প্রতিরক্ষা বলয়, বিস্তৃত এলাকার আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা,তড়িৎ দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল করা, আঘাত ক্ষত সারানো সহ শতশত মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ করে দেয়াও তাদের বা হাতের খেল। নিষিদ্ধ নিহার পাথরের প্রভাবে তাদের ম্যাজিকাল ক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যায়। নিহারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ মৃত কারোর প্রাণ ফিরিয়ে আনা এমনকি হাড্ডিতে রক্ত মাংস সৃষ্টি করে পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনার মত সক্ষমতা রয়েছে তাদের। অন্যদিকে সিনারা ম্যাজিকে দূর্বল হলেও পশু পাখি বা নিজের প্রতিবিম্ব তৈরী ছাড��াও নিজস্ব প্রতিরক্ষা বলয় তৈরী করতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে আরো শক্তিশালী সিনারা ভবিষ্যৎ আঁচ করা কিংবা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। এগুলা ছাড়া আর্কিসাস ওয়ার্ল্ডের আলাদা কোনো ম্যাজিক সিস্টেম নজরে আসেনি। তবে অ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসিতে ম্যাজিক সিস্টেম খুব ভাল মত থাকতেই হবে এমন বাধ্যকতা নেই। যেমন:জন ফ্লানাগানের রেঞ্জারস অ্যাপ্রেন্টিস সিরিজে যাদুর টিকিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। 🟥বিশেষ জাতি/প্রাণী/বস্তুঃ উপন্যাসে জাদু জানা বিশেষ জাতি দিদিয়ান ও সিনাদের অস্তিত্ব রয়েছে। দীর্ঘ জীবনের জন্য দিদিয়ানরা একটা সময়ে গিয়ে লোভ বা ক্ষমতায় উদাসীন হয়ে পড়ে, কিন্তু তাদের মধ্যে গাঢ় অনুভূতি আছে আর নিজের জীবন থেকে প্রতিজ্ঞা মূল্যায়ন করে বেশি। জীবিত মমি রূপে শত শত বছর খাবার বা বাতাস ছাড়াও থাকতে পারে দিদিয়ানরা। সিনারা সংঘবদ্ধ ও সচেতন জাতি। সচারাচর কারণ ছাড়া তারা কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনা। এছাড়া নিন্নাহার নামক রূপকথার ভয়ংকর প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে অন্ধকার দ্বীপে। রূপকথার প্রাণীর বাস্তবে(সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ডে) কোনো অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। এখানে সম্ভবত দেবতা সাওস নতুন করে এই প্রাণী গুলা সৃষ্টি করায় এমন বলা হয়েছে। এখানে আরো আছে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী যাদুর পাথর নিহার এবং ভয়ংকর নিষিদ্ধ ঔষধ দিসা। 🟥চরিত্রকথনঃ ★উপন্যাসে দক্ষ হাতে তৈরী চরিত্র গুলোর মাঝে অব্যশই সায়ার,হ্যান,মৃতুঞ্জয়ের নাম উল্লেখ করতে হয়। পুরো কাহিনি কে মানব দেহের সাথে তুলনা করলে সায়ার চরিত্রটি তার মেরুদণ্ড, হ্যান সেই দেহে প্রবাহিত রক্ত আর মৃতুঞ্জয় হলো সংবেদী স্নায়ু। সায়ারের অংশটুকু পুরো কাহিনির সবচেয়ে দুর্দান্ত ও অকল্পনীয় অংশ। হ্যান কাহিনির যাত্রাপথে চালকের আসনে ভালোই ভূমিকা রেখেছে। আর নেহরার রাজ্যের জীবন্ত কিংবদন্তি মৃতুঞ্জয়ের মাধ্যমে উপন্যাসে অদ্ভুত কিছু রহস্যের সৃষ্টি করে সাসপেন্স বজায় রেখেছেন লেখক। ★অহিত্রি, মাওয়াস, এলিসা,ডিওডেরাস ও হিমিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও তাদের চরিত্রের বিকাশ তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে। অহিত্রির যথার্থ ভূমিকা পুরো উপন্যাসে খুঁজে ব্যর্থ হয়েছি। মাইনার ও ভ্রিকা ইহানের চরিত্রায়নের ব্যাপ্তি খুব কম থাকলেও একদম যথাযথ ও অর্থপূর্ণ ছিল৷ এই দুই জনের চরিত্রায়নে নাটকীয়তা ও ভাবগাম্ভীর্য সত্যিই দেখার মত। জলদস্যু ডাওমিসের আগমন যতটা চমৎকার ভাবে হয়েছে, পরিণতি ততটাই হতাশার ছিল। এত সুন্দরভাবে তৈরী চরিত্রের শেষটা ভাল লাগেনি। 🟥সম্পাদনা ও প্রোডাকশন কোয়ালিটিঃ প্রচ্ছদে আশিহার যুদ্ধাস্ত পরিহিত ছবি, কমলা রংয়ের আলোকছটা বিচ্ছুরিত তরবারি, নিহার পাথর আর পিছনের আবছা পরিবেশ পুরো উপন্যাসের কাহিনির সাথে মানানসই ছিল। তবে এত রক্তাক্ত কাহিনির সাথে লাল রংয়ের বর্ডার দিতে পারতেন প্রচ্ছদকার। পুরো বইয়ের কোনো সম্পাদনাই করা হয়নি, কয়েকবার কাহিনির রেপিটিশন ছিল। অন্তত ৩০+ বানান ভুল চোখে পড়েছে। একটা ভালো বইয়ের এমন করুণ দশা সতীর্থ প্রকাশনী থেকে আশা করিনি। 🟥রেটিংঃ ৭/১০ ( সম্পাদনা ও অজস্র বানান ভুল না থাকলে অনেক ভাল রেটিং পাওয়ার যোগ্য) 🟥উপসংহারঃ যুদ্ধের সহস্র বছর পর উপন্যাসে ফুটে উঠেছে অন্তর্গত স্রোতের মত আর্কিসাসের হাজার বছরের সভ্যতার এক করুণ ইতিহাস যা মানুষেরই তৈরি করা- মহাযুদ্ধ,গণহত্যা,অব্যক্ত ভালবাসা আমিনুল ইসলামের লেখায় অবলোকনের দর্শন হয়। সহস্র বছর ধরে জাতিভেদ ও ক্ষমতার রেষারেষি সৃষ্টির দ্বারা আর্কিসাস কলুষিত হয়েছে। লেখক এই কদর্যতা দূরীভূকরণের মাধ্যমে সমগ্র জাতির সম্প্রীতির উপর ভিত্তি করে পরিশুদ্ধ এক আর্কিসাস দুনিয়া সৃষ্টির প্রয়াস দেখিয়েছেন। এই মানবিক চেতনাবোধ যখন হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকা সীমাহীন দুঃখ কষ্ট বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ানো মানুষকে পরিচালিত করে তখন অনেক দেরিতে হলেও একজন ব্যক্তি সত্যিকার মানুষরূপে পূনর্জন্মলাভ করে। উপন্যাসে মহাবীর আশিহার আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানবতার জয়গানের নতুন সূর্যোদয়ের বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন আমিনুল ইসলাম। বাংলা মৌলিক ফ্যান্টাসির পড়া প্রথম বইটাই মনে দাগ কেটে গেলো।
যুদ্ধের সহস্র বছর পর বইয়ের জগৎ টার নাম হলো আর্কিসাস। আর্কিসাসের সবচেয়ে বড় রাজ্য নেহরার, যেখানে প্রতি চার বছর পর পর তরবারির লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য প্রতিযোগী সেখানে অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে সম্মানসূচক 'আশিহা' খেতাবে ভূষিত করা হয়। এটি রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান। 'আশিহা' খেতাবটি দিয়ে মহাবীর আশিহাকে বুঝানো হয়। প্রায় এক সহস্র বছর পূর্বে দিদিয়ার শয়তান বাহিনীর সাথে সম্মিলিত বাহিনীর বিশাল এক যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে সকল রাজ্যের সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাধ্যক্ষ ডিওডেরাস। তারই দলে সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা ছিলো আশিহা। আশিহার বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মানবজাতি সেদিন যাদু জানা দিদিয়ান জাতিদের পরাজিত করেছিলো।
সহস্র বছর আগে দিদিয়ান জাতিদের ধ্বংস করা হলেও যাদু জানা সিনা জাতিরা এখনো আর্কিসাসের বুকে রয়ে গেছে। যদিও প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সিনা জাতিরা তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা অর্থাৎ নিষিদ্ধ দ্বীপের বাইরে পা রাখেনা, কিন্তু সম্প্রতি কোনো এক ঘটনায় নেহরার সেনাধ্যক্ষ ইরাইল বেশ চিন্তিত। সমগ্র মানবজাতির জন্য আসন্ন বিপদের কোনো সম্ভাবনাই ফেলে রাখা যাবেনা। তাই এবারের আশিহা লড়াইয়ে অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রতিযোগী( হ্যান, অহিত্রি, সায়ার), মহান মৃত্যুঞ্জয় আর রাজ্যের কিছু সেনা মিলে নিহার পাথর আনতে অন্ধকার দ্বীপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্ধকার দ্বীপে আছে রুপকথার ভয়ঙ্কর প্রাণী নিন্নাহার, নিহার পাথরকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য দেবতা সাওস নিন্নাহারের সৃষ্টি করে ৷ নেহরার রাজ্য থেকে এর আগেও সৈনিকদের কয়েকটি দল অন্ধকার দ্বীপে যাওয়ার অভিযানে গিয়েছিলো, প্রতিবারই মৃত্যুঞ্জয় ছাড়া আর কেউ সেই দ্বীপ থেকে ফিরে যেতে পারেনি। কিন্তু এবার দক্ষ সৈনিকদের সাথে রয়েছে বিশেষ অস্ত্র এবং সুনির্দিষ্ট এক পরিকল্পনা। কী হতে চলেছে অন্ধকার দ্বীপে?
এদিকে মাজান রাজ্যের কুখ্যাত চোর এলিসার কাছে এক গোপন মিশনের প্রস্তাব এসেছে । টাকাপয়সা কিংবা কোনো দামী জিনিসপত্র না, চুরি করতে হবে নেহরার রাজ্যের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধীকে। যদিও কাজটা ভীষণ বিপদজনক, কিন্তু শেষ করতে পারলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবেনা তাকে। তাই জীবনের ঝুকি নিয়েই সঙ্গীদের নিয়ে নেহরার বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে এলিসা।
মিহিতা সাগরের ত্রাস জলদস্যু ডাওমিস, যার আক্রমণের কারণে নান রাজ্যের বন্দরে কিংবা বন্দরের আশেপাশে কোনো জাহাজ ভিড়তে পারেনা। সেই কুখ্যাত জলদস্যুর সাথে দেখা করতে এসেছে নিষিদ্ধ দ্বীপের সেনাধ্যক্ষ সিসুরা। হঠাৎ কী এমন প্রয়োজন পড়লো, নিষিদ্ধ দ্বীপের সেনাধ্যক্ষ স্বয়ং দেখা করতে এসেছেন ডাওমিসের সাথে?
নেহরার পাঠানো সৈনিকরা অন্ধকার দ্বীপে পা রাখার পর আস্তে আস্তে গল্পের মোড় ঘুরতে থাকে। বইয়ের অনেকগুলো অনেক চরিত্রের রহস্যজনক কর্মকাণ্ডের পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল সত্য একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো আসল কাহিনি তো শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পৃষ্ঠা তখনও বেশি অর্ধেক বাকি! তাহলে এরপর কী আছে? তখনকার টুইস্ট টাই এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অংশের পর থেকেই মূ��ত বইটা বেশি ভালো লেগেছে। এটুক অংশ পড়লেই জানা যাবে সহস্র বছর পূর্বের ইতিহাস, কেনো ধ্বংস করা হয়েছিলো দিদিয়ানদের? সেদিন ঠিক কি হয়েছিলো সেই যুদ্ধের ময়দানে? সমগ্র মানবজাতি মিলে দিদিয়ানদের উপর ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলো? কি হয়েছিলো সহস্র বছর আগে?
লেখালেখির জগতে আমিনুল ইসলামের নামটা বলতে গেলে প্রায় নতুনই, তিনি লেখালেখি শুরু করেছেন একবছরের কিছু বেশি সময় হয়েছে। অল্প সময় হলেও, এ পর্যন্ত মোট ছয়টা বই প্রকাশিত হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে উনার সবগুলো বই পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার, আর সবগুলোর মধ্যে 'যুদ্ধের সহস্র বছর পর' আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে । এর আগে প্রকাশিত বইগুলো ক্রাইম থ্রিলার, সাইফাই আর লাইট ফ্যান্টাসি জনরার। 'যুদ্ধ' সিরিজই উনার প্রথম হাই ফ্যান্টাসি সিরিজ, সিরিজের প্রথম বই হলো 'যুদ্ধের সহস্র বছর পর'। তবে শেষ দিকের অল্প অংশ বাদ দিলে এটা স্ট্যান্ড এলোন হিসেবেও পড়া যায়। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে বইয়ের শুরুতেই আর্কিসাসের ম্যাপ আঁকানো রয়েছে, তার সাথে রাজ্য, দ্বীপ আর চরিত্রগুলোর বর্ণনা দেওয়া। গল্পের প্রধান চরিত্র ছাড়াও ছোটবড় যে চরিত্রগুলো রয়েছে সবাই সবার জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ । বইয়ের অতিরিক্ত কোনো বর্ণনা নেই, এজন্য একদম শুরু থেকেই একদম গল্পের ভেতর ঢুকে পড়েছিলাম। যেহেতু ফ্যান্টাসি বই আমার অনেক কম পড়া হয়েছে, তাই ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং নিয়ে কোনো মন্তব্য করার নেই। আর্কিসাসের ধারণা নেওয়ার জন্য শুরুতে দেওয়া ম্যাপ আর বর্ণনা গুলোই আমার কাছে যথেষ্ট । বইয়ের এডভেঞ্চার, ফাইটিং সিন আর বিশেষ করে যাদুর অংশগুলোও বেশ উপভোগ্য। প্রচ্ছদটা বেশ পছন্দ হয়েছে আমার, তবে বইয়ের বাধাইয়ের দিকে আরেকটু নজর দেওয়া উচিত। এই বইয়ের সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বইয়ের প্লট, এদেশের মৌলিক ফ্যান্টাসি হিসেবে এই বইটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। যারা নতুন ফ্যান্টাসি পড়া শুরু করেছেন, কিংবা শুরু করতে চাইছেন তাদের জন্য চোখ বন্ধ করে পড়ে ফেলার মতো একটা বই। এই বইটা একদম হাইলি রেকমেন্ডেড।
ফ্যান্টাসী বইয়ের ক্ষেত্রে একটা জিনিস খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ, পাঠক যেন সেকেন্ডারী ওয়ার্ল্ড ভালোভাবে ভিজুয়ালাইজ করতে পারে।আমিনুল ইসলাম এই জায়গায় বেশ ভালোভাবেই উতরে গেছেন। দুইটি দলের ভিন্ন দুটি অভিযান নিয়ে এগিয়ে গেছে বইটি।একদল এক অন্ধকার শ্বাপদসংকুল দ্বীপে এক রহস্যময় পাথরে খোঁজে বেরোয়,আরেকদল এক ভয়ংকর অপরাধীকে মুক্ত করার জন্য অলঙ্ঘনীয় সুরক্ষায় সম্মুখীন হয়ে চায়।শেষে অবশ্য দুইদলের মধ্যে কী সম্পর্ক এইটাই কাহিনির প্রতিপাদ্য। লেখকের লেখা সুখপাঠ্য, পাঠককে ধরে রাখতে জানেন। লেখকের পড়া এটির প্রথম বই,বাকিগুলোই শীঘ্রই পড়ে ফেলবো।