ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় বিদ্যালয় 'যোজন' যেন একখণ্ড রাষ্ট্র। তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র বাংলাদেশেরই একটি আণবিক অনুলিপি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মধ্যম আয়ের স্বীকৃতির পাশাপাশি এলডিসি রাষ্ট্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চলেছে বাংলাদেশ, নানা কিসিমের মাইলফলক ছুঁয়ে বাংলাদেশ যেমন পৌঁছে যায় উন্নতির শিখরে– অন্তত কাগজে কলমে লেফাফাদুরস্ত, ঠিক তেমনই অতিমারীর আগে 'যোজন'ও এইচএসসি ফলাফল বিচারে সারাদেশে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের মাধ্যমে সমূহ সুনাম অর্জন করে। কিন্তু ঠিক এক বছর পরে যোজনে ঘটতে যাচ্ছে কোনও এক অপ্রত্যাশিত আখ্যান। তার জন্য দায়ী কী? অতিমারী? না কি জৌলুশের অন্তরালে যোজনের সামাজিক অনাচার!
যোজনের বৈষম্য-দুর্নীতি-অনাচারের স্টিমরোলারে পতিত উপন্যাসের রহস্যময় প্রটাগনিস্ট অরিত্র পাঁচ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলো তার দলিলের খসড়া, যোজনের ভূখণ্ডেই বাংলাদেশের প্রথম স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠনের কাঠামো এবং এর কার্যকারিতা।
কে এই অরিত্র, যার পরিবারের কোনও সদস্যকে কেউ কখনও দেখেনি! যে বয়সে তার সহপাঠীরা গেইম, পর্ন আর বান্ধবী নিয়ে ব্যস্ত, সে বয়সে অরিত্র আর বন্ধু জারিফ ব্যস্ত সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায়। অরিত্রের দিকে ‘মেয়েলি’, ‘হিজড়া’ ইত্যাদি শব্দগুলো অসম্মানজনকভাবে ছুড়ে দিয়ে তাকে বিপর্যস্ত করেছিলো অন্যেরা, তাদের উপরেই আবার অরিত্র ভোটে জিতে আগ্নেয়গিরির রূপ ধারণ করে, যেন সমাজে সাদা আর কালোর সমান্তরাল অস্তিত্বের সাক্ষী সে। অরিত্রর প্রস্তাবিত আদর্শ প্রতিষ্ঠানের মডেল যদিও প্লেটোর রিপাবলিকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, কিন্তু ক্ষমতা পেলে সে যদি পরিণত হয় ফাউস্টের রিফ্লেকশনে, যে ফাউস্ট ক্ষমতার অপব্যবহারে শয়তানের কাছে নিজের আত্মাকে ২৪ বছরের জন্য বিক্রি করেছিলো! না কি সে পরিমাণ নৈতিক অধঃপতনের আগেই এক ট্রাজিক নায়কের মতই অরিত্রর নিরুদ্দেশ প্রস্থানে রহস্য আরও ঘনীভূত হবে? পাঠক কি বুঝতে সক্ষম হবে অরিত্রকে? না কি এই উপন্যাসের আসল প্রটাগনিস্ট বন্ধু জারিফ? অরিত্রকে ক্ষমতার কৃষ্ণগহবরে পা বাড়াতে জারিফ নিষেধ করেছিলো। কেন? অরিত্রের এজেন্ডা আর জারিফের 'মডেস্ট প্রপোজাল'-এর মধ্যে পার্থক্যই বা কী! এসবের উত্তর পাঠক স্ব-স্ব স্বাধীনতায় তালাশ করবেন। কিন্তু নাটের গুরু হিসেবে 'ক্ষমতা'-কে এবং ক্ষমতার রক্ষাকবচ বলতে বাহ্যিক 'কেতাদুরস্ত' এক ছককে চিহ্নিত করেছেন ঔপন্যাসিক তানভির অনয় তার তৃতীয় উপন্যাস 'কেতাদুরস্ত'-তে।
তানভির অনয় একজন একাডেমিক, আর্কাইভিস্ট, অ্যাক্টিভিস্ট এবং লেখক। ১১ই ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় জন্ম তাঁর। ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেইটভিল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি ভাষা ও অনুবাদ নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এ সম্পাদকীয় সহকারী হিসেবে দেড় বছর কর্মরত ছিলেন। তানভির অনয় ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে উইমেন, জেন্ডার, অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি স্টাডিস বিষয়ে মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছেন এবং বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটায় ফেমিনিস্ট স্টাডিসে পিএচডি করছেন। লৈঙ্গিক বৈষম্যসহ আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে তিনি লেখালেখি এবং কাজ করেন। ইতোমধ্যে তিনি একাধিক প্রকাশনার সম্পাদনা করেছেন। কথাসাহিত্যের জগতে তাঁর আগ্রহ প্রবল, লিখেছেন বেশ কিছু ছোট গল্প।
প্রকাশিত বইসমূহ: পুণ্যাহ, দুরধ্যয়, কেতাদুরস্ত, মর্ত্যলোকচক্র, প্রণয়নামা।
Tanveer Anoy is an academic, archivist, activist, and writer, born in Dhaka on February 11. They hold an Honours degree in English Literature from East West University, Dhaka, and studied English Language and Translation at Fayetteville State University, USA.
They worked for one and a half years as an Editorial Assistant at the renowned publishing house University Press Limited (UPL). Tanveer Anoy later completed their Master’s in Women, Gender, and Sexuality Studies from Oregon State University and are currently pursuing a PhD in Feminist Studies at the University of Minnesota, USA.
Their work and writing focus on socio-economic issues and gender inequality, combining academic research with activism and storytelling. They have edited several publications and maintain a deep passion for fiction, having authored multiple short stories.
Published books: Punyah, Durdhyay, Ketadurasta, Martyalokchakra, and Pranayanama.
লেখক এমন কিছু বিষয় উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন যা সচরাচর বাঙালি লেখকরা এড়িয়ে যান বা লিখতে ভয় পান। শুরুটা বেশ ভালো ছিলো। কিন্তু লেখায় তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট। প্রচুর মেলোড্রামা এবং চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের অভাব পুরো কাহিনির গভীরতা ম্লান করে দিয়েছে। খুব ভালো একটা উপন্যাস হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো "কেতাদুরস্ত "এর মধ্যে।
কেতাদুরস্ত হল একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গল্প। গল্পটা কয়েকজন মানুষের, গল্পটা একজন এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিসে ভোগা ছেলের। এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজনীতি। সেটাকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে গিয়েছে গল্প। স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন, কাঁদা ছোড়াছুড়ি, নোংরামি, জেন্ডার ক্রাইসিস সবমিলিয়ে ধীরেসুস্থে গল্পটা রূপ নিয়েছে পলিটিক্যাল ফিকশনে। লেখক পলিটিক্যাল পরিস্থিতির ব্যাখ্যা ভালোভাবেই দিতে পেরেছেন। কল্পনায় ভেসে উঠেছে পরিস্থিতিগুলো। জেন্ডার, আইডেন্টি ও একসিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস নিয়েও ভালোই বলেছেন। তবে কয়েক জায়গায় বাক্যগঠন ও লেখার ধরন একটু খাপছাড়া লেগেছে। কিছু জায়গায় স্যাটায়ারধর্মী হলেও পুরোপুরি স্যাটায়ার বলা যায় কিনা জানি না আসলে। ফাউস্ট, জোনাথন সুইফট সহ বেশকিছু রেফারেন্স টেনেছেন লেখক, যেগুলো ভালো মানিয়ে গিয়েছে কাহিনীর সাথে। গল্পের শেষটা বিষাদ জাগায়। প্রথমবারের মত তানভীর অনয়ের লেখা পড়লাম। লেখক হতাশ করেননি।
পলিটিক্যাল স্যাটায়ার নিয়ে লেখা উপন্যাস বাংলায় আমার তেমন চোখে পড়েনি। এই বোধহয় প্রথম পড়া এমন কিছু।
আমি লেখক মানুষ হয়েও রিভিউটা তেমন গুছিয়ে লিখতে পারব না হয়তো। তাছাড়া মাঝেমধ্যে গুছিয়ে লিখতে ইচ্ছেও করে না। কোর এক্সপ্রেশনটা নষ্ট হয়ে যায় কিংবা একেবারে মৌলিক অনুভূতিটা কৃত্রিম খোলসে রুপ নেয়।
কেতাদুরস্ত শুরু করলে আদতে খুব সিম্পল হিউমারাস উপাখ্যান মনে হলেও যত গভীরে প্রবেশ করা হবে ততোই তা বাস্তবকে পেয়াজের খোসার মতো ছড়াতে থাকবে এবং শেষে বিলীন হয়ে গিয়ে আপনাকে ধাক্কা দেবারও অবকাশ রাখবে না।
আমার একটা অদ্ভুত আক্ষেপ ছিল। জীবনে প্রচুর বই পড়া সত্তেও আমি নিজের মতো কোনো চরিত্রকে তেমন একটা আবিষ্কার করিনি কিংবা করতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ এই প্রথম "কেতাদুরস্ত" এর মূল চরিত্র অরিত্রের মাঝে আমি নিজেকে খুজে পেলাম। আমাদের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলোরও চমৎকার মিল ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদিও আমাদের মধ্যে তফাৎ রয়েছে।
এই বই আমাদেরই সমাজের কথা বলে। আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির চরম পর্যায়কে তুলে ধরা হয়েছে। একটা স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের মতো সাধারণ সাবজেক্টও যে এত দ্রুত একটা রাজনৈতিক অবক্ষয়মূলত নীতি ধারণ করতে পারে তা এই বইটিতে খুবই সুন্দর ভাবে বিস্তৃত আছে।
আমি সাধারণত স্পয়লার দিতে একেবারেই অপছন্দ করি। তাই এত অল্প কথায় কাজ সেরেছি। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় এই উপন্যাস কি সমাজ বদলে দেবে?
উত্তর হলো না। সমাজ বদলানো কঠিন কর্ম। আমার চেয়ে ভালো সে কথা আর কে বোঝে? যে কঠিন পথ আমিও বেছে নিয়েছি সেই পথে বন্ধু-পরিজন হারিয়ে আজ আমি পুরোপুরি একা। যাইহোক নিজের কথা এইজন্যই বললাম কেননা উত্তরটার সাথে আমার একটা সংশ্লিষ্টতা আছে।
উত্তরটা হলো উপন্যাসটা আপনাকে খানিক সময়ের জন্য হলেও ভাবাবে যেমনটা আমাকে ভাবিয়েছে এবং হয়তো কোনো ভর সন্ধ্যায় যখন আপনি আপনার সন্তানকে গল্প শোনাবেন! আপনি তাকে বলবেন ভালো মানুষ হও! তোমার পথটা কঠিন হবে। ওরা তোমাকে শূলে চড়াতে চাইবে। কিন্তু মানুষের হয়ে তোমার লড়াই করতে হবে! সমাজ পরিবর্তনের ব্যর্থ প্রয়াস তোমাকেও করতে হবে!
আপনি কথাগুলো কেন বলবেন আপনি বুঝবেন না। কিন্তু হয়তো অনেকদিন অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা এই কেতাদুরস্ত বইটার মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হলেও প্রাণের সঞ্চার হবে। সে তার প্রবল একাকীত্বের মাঝে ফিসফিস করে বলবে, "সমাজটাকে বদলাতে হবে। হবেই।" যেমনটা আমিও বলব অন্য কোনো সময়, অন্য কোনোখানে!
ঢাকা শহরের সব থেকে বড় বিদ্যালয় 'যোজন' যেখানে বাংলাদেশের প্রথম স্কুল ও কলেজভিত্তিক 'স্টুডেন্ট কাউন্সিল' গঠিত হয়। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে গল্পের প্রধান চরিত্র অরিত্র এবং অরিত্রের বন্ধু রাফিদ। রাফিদ উশৃংখল ধরনের চরিত্র, ওর ধারনা মানুষ যোগ্যতা দেখে ভোট দেয় না, দেয় জৌলুস দেখে। অপরদিকে অরিত্র অংশগ্রহণ করে পরিবর্তনের জন্য, একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্যে। গল্পের অরিত্র চরিত্রটা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যায় একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করার। কিন্তু! একটা কিন্তু তো থেকেই যায়!
গল্পে আমাদের সমাজ জীবনের একটা বাস্তবতা তুলে ধরেছেন লেখক। আমরা সমাজে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে থাকতে এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছি যে এখন অস্বাভাবিক কাজকর্ম গুলোই আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। কাউকে যদি সঠিক কাজ করতে দেখি, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করতে দেখি আমরা সেটা সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারি না। তাকে অপদস্ত না করা পর্যন্ত আমরা শান্তি পাই না।এখানে অনেক টা এরকম ই ঘটেছে। কলেজের স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে লেখক কলেজের যে সামাজিক রাজনৈতিক নীতিমালাগুলো তুলে ধরেছেন সেগুলো মূলত আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থার জন্যই প্রযোজ্য। পুরো বিষয়টাকে ছোট একটা ঘটনার মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যাকে বলে লেখক তাই করেছেন।
আমরা ক্ষমতা না থাকলে যেমন ভাবে সব সমস্যা সমাধান করার কল্পনা করি ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর সেই ভাবনা অনুযায়ী সমস্যা টা সমাধান করতে পারি না। কিংবা হয়তো করা যায় না। ক্ষমতা সব সময়ই একটা না একটা পর্যায়ে গিয়ে মানুষের মাথা নষ্ট করে দেয়। নিজের কাছে যা আছে তার সর্বস্ব দিয়ে আমরা অপরকে সাহায্য করতে চাইলেও চারপাশের পরিবেশের কারণে করতে পারি না কিংবা ক্ষমতার লোভ মাথায় চেপে বসার দরুন ইচ্ছাকৃত ভাবেই সাহায্য করি না। অরিত্রের ক্ষেত্রেও বিষয় টা অনেকটা এমন ই ছিল। সে চেষ্টা করেছিল পজিটিভি ছড়াতে,কিন্তু ওই যে আমাদের সমাজে "ন্যায় বা অন্যায় বলতে কিছুই নেই। ক্ষমতাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ ক্ষমতা গ্রহণ করে না, ক্ষমতা ব্যক্তি কে গ্রহণ করে। এই ক্ষমতা খুব রাক্ষুসে! তাকে খাইয়ে দাইয়ে, ফুটফরমাশ খেটে চাঙ্গা রাখতে হয়, খুশি রাখতে হয়। একটু উনিশ বিশ হলেই ক্ষমতা ক্রোধের সুনামিতে ব্যক্তিকে ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়। "
এই ছোট একটা বই, যেখানে আমাদের জন্য এতো এতো পজিটিভ ম্যাসেজ রয়েছে। কিন্তু আমরা আদোও সেই ম্যাসেজ গুলো গ্রহণ করতে পারব কিনা সেটা ভাবতে গেলে একটা প্রশ্নব���ধক চিহ্ন থেকে যায়। বইটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। ভীষণই ভালো লেগেছে। আর এই বই এর প্রচ্ছদ টা এতো চমৎকার এত্তো চমৎকার যে কি বলব, আমি নিজেও বুঝত�� পারছি না এই প্রচ্ছদ টা আমাকে কেন এতো আকৃষ্ট করল। এইটা আকৃষ্ট করার মতোই তাইনা!
লেখকের দাবী মেনে নিলে political satire ধাঁচের উপন্যাস এই "কেতাদুরস্ত"। এখানে masculinity, sex education, elitism, bullying, power struggle, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ topic এই আলোচনা করা হয়েছে। কাহিনীর মূলধারার পাশাপাশি অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনা বিবরণীতে controversial issues নিয়েও কথা বলতে দেখা যায় গল্পের চরিত্রদের। লেখকের উদ্দ্যেশ্য সৎ ছিল মেনে নিলেও কিছু কিছু জায়গায় আমার মনে হয়েছে topic গুলো ঠিক শেষ না করেই পরের দৃশ্যে jump করে গেছে। বিতর্কিত মন্তব্য করতে গিয়েও থেমে গেছে, অথবা backspace এ চাপ পরেছে তা যেনো স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিলো। যাই হোক, বাঁচতে হলে জানতে হবে, আবার বাঁচতে হলে এই জানা একটু লুকিয়ে ছাপিয়ে চলতে হবে, এই দেশে এমনটাই স্বাভাবিক। লেখকের এই ছোট্ট প্রচেষ্টায় বাহবা না দিয়ে পারছি না! এখন পাঠক হিসেবে আমাদের আরকি নিজে নিজে ভাবতে শিখতে হবে।
গতানুগতিক গল্পের বইয়ের স্বাদ নিতে চাইলে এই বই পড়ে একটু হতাশই হতে হবে। কারণ ভিন্নধারায় ও যে গল্প বলা যায়, এবং গল্পে চরিত্র মুখ্য না হয়ে, লেখক যে ধারণাগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে চায় সেটাই আসলে গল্প বলার মূল লক্ষ্য, এই বইয়ে তা স্পষ্ট বুঝা যায়।
'কেতাদুরস্ত' বইটা শেষ হলো বেশ শিগগিরই। যাতায়াতে একটা বড় সময় কাটে আমার, সেই সময়েই পড়ে ফেলা। তো কেতাদুরস্ত বইটি মূলত কি নিয়ে সেটা বলার আগে বলা দরকার আমার খুব কাছের বন্ধুর সাথে অরিত্রের চারিত্রিক সাদৃশ্য অনেক। আমরাও অরিত্রের মতো নানান গুরুগম্ভীর কিন্তু দরকারি চিন্তাভাবনা করে বড় হয়েছি, যদিও অরিত্রের মতো এত অল্প বয়সে এত কঠিনভাবে বুঝিনি এসব। বইটার অনেকাংশই যে আমি অনেক পার্সোনাল ব্যাপারে রিলেট করতে পেরেছি সেটা নিয়ে আর আলাদাভাবে বলতে চাচ্ছিনা।
লেখক তানভীর অনয় এখন পর্যন্ত যে তিনটি বই বের করলেন, সব কটাই কোনো না কোনো সামাজিক ট্যাবু, অন্যায়, অদ্ভুত ধ্যানধারণা, শোষণকে কেন্দ্র করেই লিখেছেন। সেকারণে লেখক বেশ পরিচিতিও বটে। এই বইয়ের গল্পটাতেও তেমনই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বেশ কিছু সমস্যাকে তুলে ধরে পলিটিকাল স্যাটায়ার ধাঁচের একটি গল্প বলেছেন। যেটি 'যোজন' নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। কেতাদুরস্তের শাব্দিক অর্থ, সুশৃঙ্খল, পরিপাটি, গোছানো ইতাদি। গল্পে দেখা যায় অরিত্র, রাফিদ, দিপীকা, জারিফ, শুভ্র নামের কিছু চরিত্র যারা 'যোজন'-এ স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে জড়িয়ে পড়ে। অরিত্রের মতো কম 'পুরুষালি' ব্যক্তি কিভাবে একটা সিস্টেম বদলানোর চেষ্টা করে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসে, শেষে ক্ষমতার দরুণ বাস্তবতা কি দাঁড়ায় সেরকম একটা গল্প এটা। প্লটটা দারুণ এটা বলতেই হয়। লেখকের সবচাইতে বড় ক্ষমতা আমি বলবো দৃষ্টির স্বচ্ছতা এবং স্পষ্টভাবে সেটাকে মার্ক করতে পারা। ভুলকে ভুল বলতে জানার চাইতে বড় জ্ঞান নাই। বইটার কোনো না কোনো পয়েন্ট অবশ্যই যে কেউ রিলেট করতে পারবেন।
তবে আমি দুঃখিত বইটার কিছু ব্যাপারে আমার কিছু মতামত দেয়ার আছে। বইটার প্রথম ৫০/৬০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে লেখাটা বেশ আনাড়ি হয়ে গেছে। সাথে দুর্বল সংলাপ, অতিনাটকীয়তা...আগের লেখার তুলনায় বেশ মনক্ষুন্ন হয়েছি। ব্যাপারটা হয়কি, এতসব সমস্যা সব খুঁটে খুঁটে অল্প জায়গায় তুলে ধরতে গেলে লেখাটা গুছিয়ে সাহিত্যমান বেরকরে আনা কষ্টকর হয়ে যায়। যেহেতু এটা ফিকশন, তাই সেই আশাটা থাকে একটা বই থেকে। তাছাড়া লেখক শুরুতেই বলেছেন এটা তিনি বেশ আগে থেকে লেখছেন, তাতে আমি ধরেই নিচ্ছি প্রথমাংশ প্রথমদিককার লেখা। কারণ মাঝামাঝি এসে লিখনশৈলীর পরিবর্তন চোখে পড়ে সহজেই। সেখান থেকে পড়তেও দারুণ লেগেছে। আর উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে, খোঁচা দিয়ে সমস্যা, আপত্তিকর শব্দ চিহ্নিত করার চাইতে, রিলেটেবল ঘটনার সাথে তুলে ধরাটা বেশি আকর্ষণীয় আমার কাছে। আরেকটু বড় পরিসরে হলে জমতো গল্পটা। কিছুটা এক ব্যক্তিকেন্দ্রিকই হয়ে গেছে সব শেষে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটনা এত দ্রুত এত বড় বড় মোড় নিলো, যেগুলো হজম করাটা কষ্টকর। তাছাড়া লেখক চেষ্টা করেছেন তিনটি বিখ্যাত রেফারেন্স টানতে, যেগুলোও একটা কারণ হতে পারে এতশত মোড় নেয়ার কারণ হিসেবে। লেখককে অবশ্যই সাধুবাদ ছোট একটা বইতে এতসব বিষয় তুলে আনবার জন্য। ছোটথেকেই যে অনাধিকারচর্চাটা হয়ে আসে, সেটার দিকে নজর রাখা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তব্য। এইদিকটা সবার আগে নজরে দেয়া উচিত, এই বইয়ের সব ম্যাসেজের মাঝে।
সবার শেষে লেখকের প্রতি আমার একটা অনুরোধ থাকবে, তিনি যেহেতু পড়াশোনা করেন লেখার পেছনে, দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ, চানও সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে লিখতে...সেক্ষেত্রে তিনি যেনো একবারে একটি কিংবা দুটির বেশি সমস্যাকে একবারে ফোকাস না করেন। সব একবারে বলতে চাইলে হয়তো বলা হয়, কিন্তু আসল ম্যাসেজ কোনোটাই ধরে রাখা যায়না।
আশা করি বইটি থেকে যে ম্যাসেজটা দিতে চেয়েছেন লেখক, সেটা যেনো পৌঁছোয় সবার তরে। হ্যাপি রিডিং!
কেতাদুরস্ত বইটা পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। যোজন স্কুলের অরিত্র আছে গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে। এটা অবশ্য পুরোপুরি ঠিক নয়, ক্ষমতাই এখানে মুখ্য হয়ে ওঠে।
আমি কখনো রাজনীতি নিয়ে তেমনভাবে পড়াশোনা করিনি। এমনকি কোনো বইয়ে খুব বেশি রাজনৈতিক ঘটনা স্থান পেলে পড়তে গিয়ে একটু হাঁপিয়ে উঠি। সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত ব্যর্থতা।
বইটা নিয়ে বলি। এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু চোখের আড়ালে থেকে যাওয়া টপিক এসেছে। নন-বাইনারি মানুষের সাথে নিত্য ঘটা অসম্মানজনক আচরণ। পোষাক নিয়ে মেয়েদের শুনতে হওয়া নানারকম কথা।
এক মিনিট চিন্তা করলেই অন্য একজন মানুষের জীবনযাপন নিয়ে আমাদের এই (verbal/non-verbal) হস্তক্ষেপকে অবান্তর মনে হয় না? না হলে কেন হয় না? হওয়া উচিত। শেষতক বিষয়টা দাঁড়ায় এরকম :
'পুতুলনাচের আসল কারিগর ক্ষমতা, কারিগরের প্রতিনিধি হলো কেতাদুরস্ত।'
যার কাছে যেটুক ক্ষমতা আছে, তা নিয়েই অন্যকে আঘাত করতে সে ব্যস্ত।
আমরা সাধারণত যে ধরনের টপিক বা কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়ে অভ্যস্ত, এই বইটি সেগুলো থেকে বেশ আলাদা। এটি একটি পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। ক্ষমতা যে কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, মানুষের জীবন তছনছ করে দিতে পারে, সেই বিষয়টির সাথে সাথে আমাদের সমাজের তথাকথিত স্টেরিওটাইপগুলোর বিরুদ্ধে অনেক কিছু এসেছে বইটিতে। কেউ একটু প্রচলিত নিয়মের বাইরে কথা বলতে গেল��ই সেটা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দেয়া বা কারোর আচরণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মত না হলেই তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করাটা যেন এখনকার ফ্যাশন। সবচেয়ে বড় বিষয় আমরা মানুষকে প্রচন্ডভাবে জাজ করতে পছন্দ করি। সেটা যে আসলে খুব একটা ভাল কিছু নয় তা মানুষ বুঝতে পারে না। অরিত্র চরিত্রটির মাধ্যমে লেখক সেইসব মানুষদের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন,যারা হয়তো একটু অন্যভাবে ভাবেন, কিছুটা আলাদা আচরণ করেন। লেখকের লেখার ধরন কিছুটা খাপছাড়া মনে হয়েছে। আরেকটু বিস্তৃত ভাবে গুছিয়ে লিখলে পাঠকের মনের শান্তি হতো। তবে এই বইটির বিষয়বস্তু মানুষকে অনেকখানি ভাবাতে সক্ষম হবে। লেখকের জন্য শুভকামনা।
প্রথমেই বাংলা সাহিত্যের ফিকশন ভবিষ্যত নিয়ে নিজের শঙ্কা ও কষ্ট নিয়ে লেখা শুরু করছি। একসময় বইমেলায় পাঠকদের লাইন ধরে ফিকশন কিনতে দেখা আমার মতো সাধারণ পাঠকদের জন্য এখনকার ক্রেতাশূন্য ফিকশন-স্টল দেখাটা খুবই দুঃখজনক ও মনঃকষ্টের কারণ। এই সময়েও যে ক'জন গুটিকয়েক লেখক মানসম্মত ফিকশন-চর্চা করছেন, তানভির অনয় তাদের মধ্যে অন্যতম। এবার বইমেলায় তার তৃতীয় গ্রন্থ "কেতাদুরস্ত" প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটিরই একটি বিশ্লেষণী মুড়িঘণ্ট (রিভিউ) উপস্থাপনের চেষ্টা করলখম।
কলেজ কেন্দ্রিক কিছু চরিত্র ও কলেজ পলিটিক্স এর ওপরই মূলত বেড়ে উঠেছে উপন্যাসের প্লটগুলো। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে "অরিত্র"কে নির্দিষ্ট করি যায়। তেরোটি পরিচ্ছদে উপন্যাসটি শেষ হয়েছে। কলেজের ছাত্র সংগঠন "যোজন" এর ছাত্র নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই মূলত উপন্যাসটির কাহিনি। যার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে জাতীয় সামাজিক, রাজনৈতিক রীতিনীতির অসাড়তা। কাহিনি বর্ণনার বিস্তারন আর না করাই ভালো হবে। তবে উপন্যাসেরই একটি অংশের মাধ্যমে কাহিনির উপজীব্য খুঁজে পাওয়া যায়: "এই কাহিনির সবাই কেতাদুরস্ত কোন না কোন আঙ্গিকে। অরিত্রকে কেন্দ্র করে সবকিছু ঘটলেও; প্রত্যেকটি কেতাদুরস্ত ক্ষমতার ইশারায় নেচেছে, লাফিয়েছে। "
উপন্যাসটিতে ভালো লাগার মতো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। একটি জিনিস যা উল্লেখ না করলেই নয়: আশেপাশের সকল বাধাকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার লড়াইয়ের দিকটি খুব সুন্দর করে ফুটে উঠেছে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র "অরিত্রের" মধ্য দিয়ে। অন্যরকম বলেই যে নিজেকে গুটিয়ে রাখাই জীবনের একমাত্র উপলক্ষ্য, এই সামাজিক ধারা ও ধারণার বিপরীতে কথা বলেছে "কেতাদুরস্ত"। পরিচ্ছেদগুলোর নামকরণও বেশ যথাযথ ও যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। উপন্যাসের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখানে আমাদের দ্বারা পিছিয়ে পরে থাকা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তোলার বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে। দেশীয় দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধিতে এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি আমরা সবসময়ই অবহেলা করে এসেছি। যে বিষয়টি আমাদের দেশীয় বুদ্ধিজীবীরা চিরকালই এড়িয়ে এসেছেন, সেই বিষয়টি লেখক উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, এব্যাপারে কথা বলতে চেয়েছেন।
তবে, কিছু বিষয়ের সংযোজন হলে পাঠটি আরও সুপাঠ্য হয়ে উঠতো বলে এই ক্ষুদ্র পাঠকের ধারণা। প্লট ও চরিত্রগুলোর আরও একটু বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে পারতো। তাহলে হয়তো উপন্যাসটি দীর্ঘ হতো, কিন্তু পাঠকের মন তৃপ্ত হতো, পাঠটি আরামপাঠ্য হতো।
সর্বোপরি, "কেতাদুরস্ত" পুরোদস্তুর উপভোগ করে পড়ার মতো একটি বই। যেই কথাগুলো কেউ বলে না, বলতে চায় না; কিন্তু বলা খুবই জরুরি, বইটিতে সে বিষয়গুলো বলা হয়েছে। লেখকের এধরনের লেখা সামনে আরও আসবে এবং আমাদের বাংলা সাহিত্যকে বৈচিত্র্যময় করে তুলবে সেই কামনা রইলো।
বইটি পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তায় খুব যে আগ্রহ আমার তা না। তবে বাসায় আব্বুর কল্যাণে দেশের হালচাল নিয়ে কথা হয় ( অন্তত শুনি, সবসময় না বললেও :3)। তবে গদিতে বসা, বসতে না পারা এবং জোর করে বসে থাকা বিষয়ক কথাবার্তায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনা। এরকম আলাপ পাশ কাটিয়ে চলতে পারলে বাঁচি এমন ভাব। এর সঠিক কারণ আমার জানা নেই। অশান্ত একটা বিষয় এমন মনে হওয়াটাই মূখ্য এবং যেকারণে এই অনীহা। সে যাই হোক, কেতাদুরস্ত যখন শুরু করি তখন আহামরি কিছু মনে হয়নি। নিছক সাধারণ বই। কিন্তু দেশের স্বনামধন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন, একটা নাটকীয় দিকে মোড় নেয়া এবং নতুন ক্ষমতার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে লেখক একটি পুরো দেশের সত্যিকার চিত্র তুলে ধরেছেন চমৎকার ভাবেই। একটু খেয়াল করলেই দৃশ্যগুলো পরিচিত মনে হবে। একটা পর্যায়ে আসল ক্ষমতা মুঠোয় আগলে রাখা কেতাদুরস্ততের কথা মাথায় আসতেই পারে। ক্ষমতা কতই না আরাধ্য বস্তু। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষেরাও যে কথার বুলি আর বাহ্যিক চাকচিক্যে মজে থাকি তাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। :)
চেনা পরিচিত বাস্তব চিত্রের সাথে বইয়ের টুকরো টুকরো ঘটনা মেলানোর চেষ্টা করতে ভালো লাগছিল। তবে আমার মনে হয় শুরুর দিকের লেখা আরেকটু শক্তিশালী হতে পারত। এবং শেষের অংশ আরেকটু বিস্তারিত হলে বইটা আরও অনেক প্রভাব বিস্তার করতে পারত আমার উপর।
ন্যায় বা অন্যায় বলতে কিছুই নেই।ক্ষমতা সব নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ ক্ষমতা গ্রহণ করে না,ক্ষমতা ব্যক্তিকে গ্রহণ করে। এই ক্ষমতা খুব রাক্ষুসে! তাকে খাইয়ে দাইয়ে, ফুটফরমাশ খেটে চাঙা রাখতে হয়। একটু উনিশ-বিশ হলেই ক্ষমতা ক্রোধের সুনামিতে ব্যক্তিকে ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়।
"পুতুলনাচের আসল কারিগর ক্ষমতা, কারিগরের প্রতিনিধি হলো কেতাদুরস্ত "
খুব কঠিন বিষয় বস্তু নিয়ে লিখা বইটি। পলিটিক্যাল স্যাটেয়ার নিয়ে লিখা। রাজনীতির মার প্যাচ ও আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। তবু যা বুঝি তা হচ্ছে ক্ষমতার জোর। এই বইটির দ্বারা সমাজের রটে যাওয়া কিছু বাস্তব গল্প, আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ফুটে উঠেছে। গল্পের প্রোটাগনিস্ট অরিত্র। যে কিনা সমাজের বৈষম্য-অনাচার-দুরর্নীতি এসব নিয়েই চিন্তিত। সে বদলাতে চায় এ অরাজকতা সমাজের নিয়ম। কিন্তু এ কাজ কি এতই সহজ?শহরের নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যোজন নামক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর নির্বাচনই বইয়ের মূল পলট। স্টুডেন্ট কাউন্সিলারের মধ্যে দিয়েই অরিত্র পরিবর্তন আনতে চায়। কিন্তু নির্বাচনের মোড় ঘুরে যায়। এটি যেন বিদ্যালয়ের সাধারণ কোন স্টুডেন্ট নির্বাচন নয়,বর্তমান রাষ্ট্ররের এক প্রতিফলন। ক্ষমতা পেলে মানুষ তার সর্বচ্চো পেতে চায়। ক্ষমতায় আসার পর অরিত্রের প্রস্তাব গুলো সত্যিই যেনো ভাবিয়ে তুলে। তার পদক্ষেপ গুলো সাধারণ মানুষকে নাড়া দেয়। যে সমাজের সহজ পথটাই মানুষকে হাপিয়ে তুলে, তার বিপরীতে হাটা যায় কি?
বইটি আমাকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করেছে। বইয়ের আরেকটি পাট হচ্ছে লিঙ্গবৈচিত্র্যের মানুষ (হিজড়া) । যারা সমাজের একটা হাসির পাত্র, এখন তো এ শব্দটা মানুষ গালাগাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাদের কথা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। লেখক তানভির অনয় তার দ্বিতীয় উপন্যাস "দুরধ্যয়" বইটিতেও খুব সুন্দর একটা করে গল্প লিখেছেন লিঙ্গবৈচিত্র্যের। বইটিতে আপনি খুঁজে পাবেন আপনার চিরচেনা সমাজ ব্যবস্থা।
"পুতুলনাচের আসল কারিগর ক্ষমতা, কারিগরের প্রতিনিধি হলো কেতাদুরস্ত।"
রিভিউ লিখতে পারিনা যা মাঝেসাঝে লিখি তা হলো আমার ছোটখাটো বই নিয়ে ভাবনা। তাই অনেকসময় এই ধরনের 'রিভিউ' দিয়ে জানাতে হয় যে আমি শুধু বই কিনিনা পড়িও। তো আজকে আমার রিভিউয়ের ভিক্টিম হলো কেতাদুরস্ত। কোন ভারি ভারি শব্দ ব্যবহার করবোনা কারণ আমার আসেওনা।
প্রথমেই আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি। বইয়ের কভার মারাত্মক সুন্দর। এসব বই পড়ার পর সাজায়ে রাখতে হয়। বাহির থেকে কেউ আসলে তখন আমাকে এস্থিটিক সফিস্টিকেটেড ভাবতে তাদের সুবিধা হবে।
এবার রিভিউতে আসা যাক। বইটা শুরু হয় যোজন নামক এক সাধারণ বিদ্যালয় থেকে। এখানে সাধারণ বিদ্যালয় কীভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয় তা অবশ্যই অবাক করার মতন। অরিত্র হচ্ছে প্রধান চরিত্র। পড়ার আগে শুনেছিলাম এটা নাকি পলিটিকাল স্যাটায়ার কিন্তু প্রথমদিকে পড়ার টাইমে মনে হচ্ছিলো সাধারণ ঘটনাই পড়ছি। স্পষ্টতভাবে বইটার পাতার সংখ্যা একটু একটু বাড়ার পর তা আমাকে ভুল প্রমাণ করে দেয়।
একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অরিত্র মোটামুটি তার চারপাশটা নিয়ে ভালোই বিরক্ত। অরিত্র খুবই রহস্যময় চরিত্র এই বইটিতে। যে বয়সে তার সহপাঠীরা গেইম, পর্ন আর বান্ধবী নিয়ে ব্যস্ত, সে বয়সে সে আর তার বন্ধু জারিফ ব্যস্ত বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায়। এই দুইটা চরিত্রকে মাথায় রাখা দরকার। তাদের পারষ্পরিক মিলবন্ধনটা এতোটা স্পষ্ট করে না দেখানো হলেও আমার কাছে মনে হয়েছে তাদের ভিতরকার মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কটা অন্যরকম। একেকজনের কাছে এক-এক রকম লাগবে এটাতেই মনেহয় ভালো লেখার মজা। এখন আর এতো ব্যাখা দিতে পারবোনা পড়ে বুঝিয়েন। তো এই যোজন নামক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে স্টুডেন্ট কাউন্সিলর নির্বাচনকেই বইয়ের মূল প্লট বলা যেতে পারে। একটা সাধারণ বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন নিয়ে এতো হৈচৈ কেনো হতে যাবে। অবশ্যই অবাস্তব শুনাচ্ছে। এখানে সচেতন পাঠককে ধরে নিতে হবে এটি বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মাঝে হওয়া কোন সাধারণ নির্বাচন নয় এটি যেন বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রের স্পষ্ট প্রতিফলন। ক্ষমতা শব্দটা ছোট শুনালেও এর জন্য লোভ, এর সংক্রমণ যে কতটা ভয়ানক তার স্পষ্টরূপ যোজনের নির্বাচন এবং পরবর্তী ঘটনায় দেখা যায়। বিদ্যালয়কে পরিবর্তন করার লক্ষ্য নিয়ে অরিত্রের চিন্তাভাবনা কীভাবে রক্ষণশীল বিদ্যালয়ের মানসিকতার প্রাঙ্গণ পেরিয়ে প্রগ্রেসিভ এলিটজমের দিকে অগ্রসর হয় তাও ভাবার মতন।
বইটির শেষের দিকে একটু বেশিই আকর্ষণীয়। ক্ষমতা পাওয়ার পর অরিত্রের কার্জক্রমগুলো সত্যিই ভাবনার খোরাক যোগায়। লিঙ্গবৈচিত্রতার উল্লেখও খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু সবকিছুকে ছাড়িয়ে অরিত্রের বন্ধু জারিফের "মডেস্ট প্রপোর্জাল" বিষয়টা খুবই চিন্তার জিনিস। এই পার্টটা মনেহয় ভালোকরে সবার পড়া দরকার। জারিফের হঠাৎ মৃত্যুই বা কেনো হলো। অরিত্রের মূল পরিচয়টাও বা কী। এগুলো জানার জন্য হলেও বইটা পড়া দরকার। স্কুল বুল্যিং, ট্রমা এবং নানানধরণের ট্রিগারিং ব্যাপারতো আছেই। বর্তমানে উপন্যাসের সাথে মেন্টাল হেলথের ব্যপারগুলা জড়ানো অবশ্যই একটা পজিটিভ দিক তার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। আমার কাছে ভালো লেগেছে এখন আপনারা চাইলে পড়তে পারেন নাইলে নাই।
"কেন সে মামাকে চুপ থাকতে না বলে ভুল কথাগুলোর সমুচিত জবাব দিয়ে দিলো না? নিজের উপরই রাগ লাগছে তার।কেন বললো না কিছু?কেন? কেন?কেন?"-আমাদের সারাটা জীবন যায় এমন কিছু কেন-এর জবাব নিজের কাছে চাইতে চাইতে।
কেতাদুরস্ত -এর মূল চরিত্রে হলো অরিত্র। কলেজে পড়া অরিত্র সবার মতোন না, সমাজের বৈষম্য-দুর্নীতি-অনাচারের কথা তাকে এখন থেকে ভাবিয়ে তুলে৷ সে শুধু ভাবে তা না,সেটার প্রতিকারের পথও উন্মোচনের নেশায় থাকে। আমি যোজনকে আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থার/ দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে পড়েছি। খুব বেশি যে অমিল তা না। দূর্বলের উপরে সবল ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে,প্রতিবাদ করতে গেলে মার খাচ্ছে বা দ্বিগুনভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। লেখক লিখেছেন ন্যায় অন্যায় বলতে কিছুই নেই।ক্ষমতাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখো,এটাই সত্য। উপন্যাসের প্রতিটা বিষয়ের সাথে কোনো না কোনোভাবে রিলেট করা যায়। কিন্তু সাহিত্য বিবেচনায় মাঝেমধ্যে একটু খাপছাড়া আর নাটকীয় লেগেছে। নাটকীয়ও না,মনে হয়েছে এই জায়গাতে আরেকটু পেছনের গল্প দেয়ার দরকার ছিলো।এই যেমন অরিত্রের বিষয়ে বন্ধুরা বেশি কিছু জানে না, কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া। ওরা যেমন জানেনা,আমরাও জানিনা,ফলে ওকে বুঝতে কষ্ট হয়েছে। ওর চিন্তা-চেতনার উৎস কিছুটা বলা হয়েছে,কিন্তু আরেকটু গভীরভাবে জানতে পারলে অরিত্রের সাথে আরো ভালোভাবে পরিচিত হওয়া যেতো।
এই বইয়ে লেখকের সার্থকতা হলো স্কুলের সামান্য কাউন্সিল নির্বাচনের মাধ্যমে কীভাবে তিনি পুরো সমাজব্যবস্থা, রাজনৈতিক ক্ষমতার সুফল কুফল সামান্য হলেও তুলে ধরেছেন। আবার আমরা যারা নিউ জেনেরেশন বলে থাকি,তাদের বর্ণনা ঠিকঠাক করেছেন। সুপাঠ্য,তবে পড়ার পরও তৃপ্ত হয়নি। আরেকটু বিস্তারিত হলে আরো উপভোগ্য হতো। হিজরা বলে লিঙ্গবৈচিত্র্যের মানুষ না বুঝিয়ে যে অফেন্সিভ খোটা হিসেবে অনেকে ব্যবহার করে,বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বুঝে হোক,না বুঝে হোক না বুঝে হোক, এটা মজা বা অন্যকে নিচু বুঝাতে প্রায় ব্যবহার করে। এটা লেখক খুব সুন্দর করে পোট্রে করেছেন। এমন সব বিষয়ে ভবিষ্যতে আরো লেখা পাবো আশা করি। অনয় ভাইয়াকে ধন্যবাদ, লেখার জন্য এতো রিলেটেবল একটা বিষয় বেছে নেয়ার জন্য।
একটা সামাজিক সমস্যাকে ধরে নিই একটা বিষাক্ত গাছ। আমরা যারা অনেকেই সাজেশন দেই গাছটাকে ধ্বংস করার, ওই পরামর্শ গুলো না কেমন যেন শুধু ওপরের পাতাগুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করে। কেউ গাছের বিষাক্ত শেকড়টা ধরে টান দেয় না। এই টানটা দিয়েছে অরিত্র। অরিত্র এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র৷ অরিত্র স্রোতের বিপরীতে হেটে কাজ করতে চেয়েছে। বিপরীত মানেই যে একটা নেগেটিভ অর্থ বহন করে, তা কিন্তু না। বরং অরিত্র কোনো কনভেনশনাল হালুয়া চটকায়নি। প্রায় প্রতিটা ভিক্টিমাইজড সেক্টরের পক্ষ হয়ে প্রতিবাদী গলা তুলেছে অরিত্র। মাইনরিটি থেকে বিলং করা লোকজন, একটু ভিন্ন মতধারা পোষন করা মানুষজন এই সমাজে প্রতিটা পদক্ষেপে কি পরিমান বাধার সম্মুখীন হয়, সেটাই দেখা যাবে এই বইটিতে। দেশের ৮০-৯০% মানুষের যখন ওই এক রগরগে কনভেনশনাল চিন্তাধারা, সেখানে মুক্তচিন্তার অধিকারী অরিত্র একা হাতে কি পারবে একটু সমতা আনতে? স্রোতের বিপরীতে হাটতে চাইলেও ঠিক কতটুকুই বা হাটা যায়, এই উত্তরটা পাওয়ার জন্য এই বইটা পড়ে শেষ করার অনুরোধ থাকবে।
বইঃ কেতাদুরস্ত লেখকঃ তানভীর অনয় পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮ প্রকাশনীঃ পেণ্ডলাম এই লেখকের পড়া এটাই আমার প্রথম বই। কেতাদুরস্ত তানভীর অনয়ের লেখা একটি ভিন্নধারার উপন্যাস। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রে রেখে রাজনীতি, ক্ষমতার লড়াই, ছাত্রদের চিন্তাধারা এবং মানসিক দ্বন্দ্ব, এবং আত্মসংকট , এসব কেন্দ্র করে কাহিনী সাজানো হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এক তরুণ- অরিত্র, যে একজিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসে ভুগছে। তার ব্যক্তিগত কিছু মূল্যবোধ বা বলা ভাল আদর্শ আছে, সে মনে করে একটা সমাজে থাকা সবাইকে ইক্যুয়াল এবং ফেয়ার ট্রিটমেন্ট দেয়া উচিৎ এবং সেটা দিতে হলে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। সে অনেক ইস্যু নিয়ে চিন্তিত এবং মোটামুটি অনেক ইস্যুতেই তার কিছু মতামত আছে যা যার সমসাময়িক পিয়ার গ্রুপের বেশিরভা��� লোকজনের তুলনায় আলাদা। সে তার আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তার কলেজকে একটা গ্রান্ড হিসেবে চিন্তা করে এবং সে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায় নিজের মত করে সিস্টেমকে গোছানোর জন্য। মূলত এই নির্বাচন এবং নির্বাচনের আগে পরের বিভিন্ন ঘটনার আড়ালে লেখক স্টুডেন্ট পলিটিক্স, জেন্ডার ইস্যু, বুলিং, মাসকুলিনিটির প্রশ্ন—সব মিলিয়ে একটা সাহসী ও চিন্তাশীল প্লট গোছানোর চেষ্টা করেছেন। লেখক উল্লিখিত কিছু অস্বস্তিকর (?) / সাহসী বিষয়ে কলম ধরেছেন—যেসব বিষয়ে আমাদের দেশি লেখকরা তাদের সৃষ্টিকর্মে সহজে উল্লেখ করেন না। গল্পে অনেক ছোট ছোট ঘটনা ও চরিত্র এসেছে, যারা সমাজের বিতর্কিত ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলেছে। তবে চরিত্রগুলো গল্পের মূল চালিকা শক্তি নয়; বরং লেখকের তোলা প্রশ্ন, দর্শন এবং মেসেজ আসল বিষয়। তবে একসাথে বেশি কিছু বিষয় তুলে ধরার ফলে কোনোটা পুরোপুরি এড্রেস করা হয়নি, একটা অসম্পূর্ণ ভাব রয়ে গেছে। ফাউস্ট, সুইফটসহ নানা সাহিত্যিক রেফারেন্স গল্পে যুক্ত করে কাহিনীকে ভারী করেছেন, যদিও কখনো কখনো সংলাপ ও লেখার ধরণ একটু দুর্বল লেগেছে।কিছু প্রসঙ্গ যেন ঠিকমতো শেষ না করেই অন্য প্রসঙ্গে চলে গেছে। এছাড়া এটি কলেজ কেন্দ্রিক না হয়ে যদি বিষ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হত তবে ম্যাচুরড আলোচনা এবং চরিত্রের সংলাপগুলো আরো বিশ্বাসযোগ্য হত। সব মিলিয়ে, “কেতাদুরস্ত”সহজ কোনো গল্প নয়। এটা ভাবায়, প্রশ্ন তোলে। যারা গতানুগতিক উপন্যাসে অভ্যস্ত, তাদের কাছে বইটা একটু কঠিন লাগতে পারে। তবে নতুন কিছু পড়তে চাইলে, অন্যভাবে সমাজকে দেখতে চাইলে, বইটি একবার পড়া উচিত। লেখকের প্রচেষ্টা এবং সাহসী চিন্তার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, সেসাথে মোটা দাগে বলতে চাই- ভবিষ্যতে লেখক যদি একটু কম বিষয় নিয়ে আরও গভীরে যান, তবে তিনি নিঃসন্দেহে আমাদের মননে আরেকটু ভালভাবে রেখা ফেলতে সক্ষম হবেন। পড়ার জন্য রেকমেন্ডেড। রেটিংঃ ৩/৫
বইটা বেশ সময় নিয়ে পড়েছি। পড়তে গিয়ে 'অ্যানিমেল ফার্ম' আর 'গাভী বিত্তান্ত'-ও রিভিউ করলাম। কারণ 'কেতাদুরস্ত' এর ভূমিকায় লেখক বলেছেন, এ গল্পের প্লট ও দু'টো বই থেকে ধার করা হয়েছে বলে নাকি কথা উঠেছিলো। মিল-অমিল নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছি না, একই প্লট হাজারও মানুষের মাথায় চলে আসতেই পারে।
যাই হোক। স্যাটায়ার হিসেবে এটি কেমন সে তর্কে যাবো না, তবে নন-বাইনারি মানুষদের পারস্পেক্টিভ থেকে লেখার বিষয়টি বেশ সাহসের। অনয় সেদিক থেকে বেশ চমৎকারভাবে সমন্বয় করেছেন। বাংলাদেশের নেট দুনিয়ায় বর্তমানে আলোচিত বিষয়ের সাথে এ বইটি বেশ যায়! নন-বাইনারি মানুষদের এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস বোঝার জন্য এই বই বেশ সুপাঠ্য। লেখক এখানে জোনাথান সুইফট, ফস্ট প্রমুখের রেফারেন্স টেনেছেন, বোঝা গেলো লেখক বেশ পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা করে লেখালেখির জগতে আসার ব্যাপারটা এখন আমার কাছে খুব সেনসেশনাল লাগে, বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায়।
তবে উপন্যাসটি আরেকটু ধীর গতিতে আগালে একে মাস্টারপিস বলা যেতো, বড্ড তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন। আর চরিত্রগুলোর ভূমিকায় নাটুকেপনা আরেকটু কম হয়ে গভীরতা বেশি হতে পারতো।
আমি ২০২৩ এর বইমেলায় অনয়ের বেশ আরও কিছু বই কিনেছিলাম। নতুন লেখক, লেখা কেমন হয় তা নিয়ে আমি খানিক দ্বন্দ্বে ভুগেছিলাম শুরুতে। ওনার লেখা বেশ সাবলীল, পড়তে মজা৷ লেখক হিসেবে পোটেনশিয়াল আছে যথেষ্ট, মানুষ হিসেবেও ইন্টেরেস্টিং। বাকি বইগুলোও পড়ে ফেলবো শীঘ্রই। অনয়কে শুভ কামনা! ❤️
A small-scale interpretation of the real-life socio-political scenario with easter eggs from the real incidents. The execution could have been a lot better but given the very young age of the novelist, it was quite a mature thinking only if anyone tried to look deeper into the texts and read between the lines.
Anoy is trying to break the barrier and that is one of the reasons I respect his thoughts. As a young scholar, he not only has the theoretical knowledge of the phenomena he tried to portray in his novels but also has a deep understanding of several socio-political and gender-related issues. It is amazing to see a youngster trying to educate and provoke the thinking mind of a reader through his simple, spontaneous, and sparkling penmanship.