এক কথায় বলব অসাধারণ বই। পুরোটা সময় জুড়ে উপভোগ করেছি বইটি। হরর গল্পের সার্থকতা তখন হয় যখন সেটা পড়লে মনে ভয় জাগবে। মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়া এই বইটির ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। আমার সবথেকে ভালো লেগেছে ভাইয়ার লেখনশৈলী এবং গল্পের গতিশীলতা।ভালো লেগেছে যেভাবে গল্পের প্রত্যেকটি চরিত্র একে অপরের সাথে সংযুক্ত। যাঁরা হরর গল্পের বই পড়তে পছন্দ করেন তাঁরা অবশ্যই বইটি পড়ে দেখবেন, আশা করি ভালো লাগবে। হ্যাপি রিডিং
তারা থাকে আঁধারে, থাকে রাত্রি শেষের গানে মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভয়— শুধু তাদের খবর জানে।।
কাদের খবর জানে? কারা থাকে আঁধারে?
★কাহিনী সংক্ষেপ— বেশ কিছুদিন ধরেই রূপন্তীর কিছু সমস্যা হচ্ছিল। হঠাৎ ভয় পাওয়া, অন্ধকারে কিছু দেখা, পচা গন্ধ পাওয়া এধরনের সমস্যা। ডাক্তারের পরামর্শে তাই রূপন্তীর স্বামী ফয়সাল তাকে নিয়ে কিছুদিন বেড়াতে চলে যায় রেমাক্রির সুউচ্চ পাহাড়ে। কিন্তু তাদের সাথে সাথে সমস্যাও সেখানে গিয়ে উপস্থিত... এদিকে ফয়সালের ভাগ্নে রূপম কোথেকে একটা বিড়াল নিয়ে এসেছে বাড়িতে। সেই বিড়াল আবার মাছের সাথে সাথে মাংসও খায়; কাঁচা মাংস। বাড়িতে বিড়াল আসার পর থেকেই শুরু হয় রূপমের অস্বাভাবিক আচরণ... ওদিকে সূর্যকান্দি ও আশেপাশের বাইশ গ্রামের লোকেদের কাছে জক্কু হাজি এক রহস্যময় মানুষ। সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে। এর প্রধান কারণ, হাজি কারো সাতেপাঁচে নেই। এই রহস্যময় পুরুষটিকে সবাই একটু সমীহও করে চলে। কারণ, তিনি জিন ছাড়ান। কেউ কেউ মনে করে হাজি জিন পালেনও...
★পাঠ প্রতিক্রিয়া— সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ নামটি শুনলেই বোঝা যায় এটি অতিপ্রাকৃত ঘরানায় লেখা। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভয়-ডর, রহস্য-রোমাঞ্চ সবই থাকবে এতে। ছিলও। সেই সাথে এত্তগুলা অতিপ্রাকৃত চরিত্র। সেইসাথে পুরো গল্প জুড়ে রয়েছে ভায়লেন্সের ছড়াছড়ি। গল্প শুরু হয় পাহাড়ি উপজাতি, ঘর-বাড়ি, বিল, জঙ্গলের বর্ণনা দিয়ে। এই বর্ণনাগুলো পড়তে ভালোই লাগছিলো। মন চাচ্ছিল পাহাড়ে চলে যাই। পাহাড়ের সাথে পাহাড়ি বিশ্বাস। এ বইটিতে যেসব অতিপ্রাকৃত চরিত্রগুলো দেখানো হয়েছে তার সবগুলোই পাহাড়ি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অপদেবতা। এসব অপদেবতাদের বিভিন্ন পূজাপাঠের মাধ্যমে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। অসন্তুষ্ট হলেই ক্ষতি। বইয়ের ভাষা সাবলীল। গল্পটাও বেশ গতিশীল। পড়তে কারোই সমস্যা হবে না। আমারও হয়নি। পড়েছি, উপভোগ করেছি, ভালো লেগেছে।
ভালো ভালো বললাম, এবার দু-চারটা মন্দ কথা বলি... লেখকের গল্প বর্ণনার স্টাইল ভালো, তবে এ বইতে কিছু জায়গায় বর্ণনা সাদামাটা মনে হয়েছে। কিছু জায়গায় কলেবর বাড়ানো হয়েছে, যেটা না হলেও গল্পে সমস্যা হতো না। গল্পের শেষটাও খানিকটা সিনেম্যাটিক লেগেছে। এছাড়া গল্পে ফয়সাল-রূপন্তী যুগলের কিছু রোম্যান্টিক সিন দেখানো হয়েছে, যেখানের সংলাপগুলো এযুগের ন্যাকামি টাইপ প্রেমের সংলাপের মত হয়ে গেছে। সেইসাথে গোসলরত রোকেয়ার বিস্তারিত বর্ণনা অংশটুকু একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল। পড়তে বিরক্তও লাগছিলো।
যাইহোক, ভালোমন্দ মিলেই যেকোনো কিছুর সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণও তাই। সবমিলিয়ে ভালো। তবে এক্সপেকটেশন আরো বেশি ছিল।
★প্রচ্ছদ→প্রোডাকশন→সম্পাদনা প্রচ্ছদ সম্পর্কে বেশি কিছু বলবো না। প্রদচ্ছটা আমার একদমই পছন্দ হয়নি, শুধু নামলিপিটুকু বাদে। সম্পাদনা ভালো হয়েছে। দু-এক জায়গায় সামান্য অসঙ্গতি, নাম অদল-বদল আর অল্প কিছু টাইপিং মিসটেক ছাড়া তেমন ভুলত্রুটি চোখে পড়েনি। নালন্দার বইয়ের প্রোডাকশন এমনিতে যতটা ভালো, এই বইটায় তারথেকে একটু কমই ভালো মনে হয়েছে। শুধু ডাস্ট জ্যাকেটটা একটু মোটা হয়েছে। এছাড়া আর তেমন উন্নতি চোখে পড়েনি। সেই হিসেবে বইয়ের দাম বেশির কাতারেই পড়ে।
বই—সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ লেখক—মনোয়ারুল ইসলাম প্রকাশনী—নালন্দা পৃষ্ঠা সংখ্যা—১৮৪ মুদ্রিত মূল্য—৪০০ টাকা
একটা পাহাড়ি ছিমছাম এলাকা,একটা দম্পতি থাকে,একটা অশরীরির উপস্থিতি থাকে,সেই দম্পতির কেউ একজন অজানা কিছু ভয়ে তটস্থ থাকে।এই হল মূল বইয়ের কাহিনী দুই কথায়।নাথিং নিউ,কত হরর বই যে পড়লাম এরকম কাহিনীর বলার বাইরে।নতুনত্ব কিছু খুঁজে পেলাম না,না পেলাম কোন থ্রিল,না পেলাম কোন সাসপেন্স আর পুরো বইয়ে বানান ভূল তো ছিলই।শেষের দিকে তো পুরো জিগাখিচুরি,কি বুঝাইতে চাইল কে জানে। হতাশ পুরোপুরি। এক্সপেক্টেশন আরো বেশি ছিল।
দ্রত গতির এই হরর বইয়ের প্লট পরিচিত হলেও যে জিনিস ওদের তাড়িয়ে যাচ্ছিল সেগুলো অনেক ইউনিক। দারুণ একটা বইয়ের সমাপ্তিটা আরো ভালো করা যেত। ভয় দেখাতে জানেন লেখক সেই ভয় মাঝে মাঝে লেগেছেও। তিনটা ঘটনা একই সূত্রে এনে সমাপ্তিতে আরো বড় কিছু হবে আশা করেছিলাম কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি।
আপনি যদি কমবেশি পাহাড়িদের নিয়ে পড়ে থাকেন কিংবা তাদেরকে কেন্দ্র করে বানানো ওয়েবসিরিজ দেখে থাকেন তাহলে তাদের পাহাড়ে পাহাড়ে নানান দেবতার ঘটনাবলী জানেন নিশ্চয়। আমি প্রথম এইসব জানতে পেরেছিলাম ভারতীয় কুল্লু-মানালির পাহাড়িদের নিয়ে একটা লেখা পড়ে। এই বইয়ের মূল ঘটনাও ঠিক এই পাহাড়ি দেবতাদের নিয়েই। তবে তা বান্দরবন এর পাহাড়ি এলাকার। এসব নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ থাকায় ভালোই এংগেজিং লেগেছে আমার কাছে পড়ার সময়। তবে শেষটা কেমনজানে মনপুত হয়নি। বিশেষকরে জক্কু হাজির অংশটা। আর অন্যদিকে মানুৎ কীভাবে অপদেবতাটাকে ধংস করেছে তা যদি একটু বর্ণনায় পাওয়া যেত বিষয়টা দারুণ হতো। শেষটা থ্রিলিং হতো। সবাই ঘরের ভেতর থাকা অবস্থায় বাহিরে যখন জেনেছি মানুৎ আর অপদেবতার লড়াই হচ্ছে, সেটা পড়ার তৃষ্ণাটা রয়েই গেল। আর বিশেষকরে বানান ভুল ছিল মোটামুটি চোখে পড়ার মতো। আমার কাছে যে বইটি আছে সেটা ২য় মুদ্রণের, তাও কিছু বানান ভুল থেকেই গেল। আর অনেক জায়গায় চরিত্রের নাম ভুল দেয়া ছিল, অর্থাৎ যে চরিত্রের নাম থাকা উচিত ছিল, তার পরিবর্তে অন্য চরিত্রের নাম ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোনো পৃষ্ঠা স্কিপ করে গেছি, কারণ ফয়সাল ঘটনাচক্রে তার স্ত্রীর সাথে বান্দরবনে, পরের পৃষ্ঠায় আবার বোনের সাথে ঢাকায়। পরে বুঝলাম মিস্টেক এটা।আশাকরি পরবর্তী মুদ্রণে সংশোধিত হবে।
আলো পেরিয়ে যখন অন্ধকার নেমে আসে, সাথে নেমে আসে কিছু অশুভ ছায়া। এই অশুভ ছায়ায় ভয় হয়। গা শিরশিরে অনুভূতি হয়। এই অশুভ শক্তির সাথে লড়াই করার সাধ্য কারও নেই। তবুও লড়াই চলে। অশুভ-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসে শুভ কিছু। এখানেই শুরু হয় অপার্থিব জগতের এক অদৃশ্য লড়াই...
• কাহিনি সংক্ষেপ :
রূপন্তীর সময়টা ভালো যাচ্ছে না। একটা ভয় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি সে এলো। এবার আর নিস্তার নেই। সব শেষ হয়ে যাবে। সবকিছু শেষ করে দিবে সেই অদৃশ্য শক্তি। কিন্তু কেন? কী ক্ষতি করেছে রূপন্তী? রূপন্তী কি সত্যিই এমন কিছু অনুভব করে? না-কি সব মনের ভুল? বাসার সবাই ভাবছে, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে রূপন্তী। আসলেই কি তাই? রূপন্তী কী ভাবে? রূপন্তীর স্বামী ফয়সালের ভাষ্য কী? ডাক্তারের পরামর্শ মতো রূপন্তীকে নিয়ে ফয়সাল চলে এলো বান্দরবন। কিছুটা হাওয়া বদলের চেষ্টা। রূপন্তী যদি একটু সুস্থ হয়, এই আর কি! কিন্তু এখানে এসেও বিপত্তি। রেমাক্রির বনে এমন কিছুর মুখোমুখি হয়েছিল দু'জন, যা ঠিকঠাক বর্ণনা করা যায় না। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝে যে দেয়াল থাকে, তা মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। যা ঘটেছে, তা কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য? না-কি মনের ভ্রম। কিন্তু চোখের সামনে যা ঘটছে, সেসব কী করে অবিশ্বাস করা যায়? কী ঘটেছিল সেদিন?
রূপম ছেলেটা ক্লাস থ্রি তে পড়ে। সবকিছু ঠিক থাকলেও পড়াশোনা ঠিকঠাক মনে রাখতে পারে না। নামিদামি স্কুলের পড়াশোনার চাপেই কি না, রূপমের বন্ধুবাধবও নেই তেমন একটা। এরই মাঝে বাগানে খুঁজে পেয়েছে একটি কালো বিড়াল। নোংরা, হিংস্র, দেখলেই ভয় লাগে - এমন বিড়ালটির জায়গা হয়েছে রূপমের ঘরে। রূপম নিজেই বিড়ালটির নাম রেখেছে কিটি। কিটিকে নিয়ে জমে উঠেছে ঘোর রহস্য। কোনো এক অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে সে। বিড়াল, অথচ কাচা মাংস চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। রক্তও বাদ যাচ্ছে না। ওদিকে দিন দিন শরীর খারাপ হচ্ছে রূপমের। ওজন হারিয়ে চেহারা এতটুকু হয়ে যাচ্ছে বাচ্চা ছেলেটার। চোখের নিচে কালি পড়ছে। কিন্তু কেন? কীসের ভয় তাড়া করে বেড়ায়? এর সাথে সেই বিড়ালের সম্পর্ক-ই বা কী? রূপমের ড্রয়ারে থাকে অদ্ভুত দেখতে মূর্তিটার পেছনে কী রহস্য খেলা করছে? জানতে ইচ্ছে করছে না?
জক্কু হাজি ব্যাক্তিটি রহস্যময়। গ্রামের মান্যগণ্য ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচয়। সবাই তাকে হুজুর বলেই ডাকে। জিন তাড়ানোতে তার জুড়ি নেই। দুপুরে পুকুর পাড়ে হুজুরকে একা কথা বলতে দেখা যায়। কার সাথে কথা বলে? তিনি যাদের সন্তান বলেন তারা-ই বা কারা? তাকে কেউ ঘাটায় না। অদ্ভুত ক্ষমতা সম্পন্ন জক্কু হাজির মোকাবেলা এবার হিরণের সাথে। হিরণ জানে না কার সাথে সে লাগতে এসেছে। তাই এবার তার শেষ আসন্ন। জক্কু হাজি মনে করেন তিনি পাপ করেছেন। কী সেটা? কখনো কি জানা যাবে? জহিরের ছেলেটাই বা কোথায় হারিয়ে গেল?
ছোটো ছোটো গল্পগুলো প্রতিটি একই সূত্রে বাঁধা। একটু একটু করে জট ছাড়িয়েছে। রহস্যগুলো ঘনীভূত হয়েছে। অপার্থিব জগতের খেলায় যে লড়াই শুরু হয়েছে, মানুষের সাধ্য আছে তার মুখোমুখি হওয়ার? তবে একসময় সব শেষ হয়। একফালি অন্ধকারে ঘাপটি মেরে থাকে শীতের কুয়াশারা। তারা থেকে যায় অন্ধকারে। কেউ দেখে না আবার হয়ত কেউ কেউ দেখে।
• পাঠ প্রতিক্রিয়া :
মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ের বইয়ের প্লটগুলো বিশাল কলেবরের হয় না কখনো। ছোটো ছোটো চিন্তায়, অল্প অল্প করে গল্প আগায়। এভাবেই শেষ হয় যায়। তবুও পড়তে আরাম লাগে। এক বসায় পড়ে ওঠা যায়। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বইটি এক বসে পড়ে শেষ করার মতো বই। যাতে বেশি চরিত্রের বহর নেই, গল্পের বিশালতা নেই; তবুও খুব সুন্দর করে সব কিছু সাজানো হয়েছে। যা পড়ে মুগ্ধ হতে হয়।
লেখকের সবগুলো বই পড়েছি বিধায় তার লেখার সাথে ভালোমতোই পরিচয় আছে। তাই খুব সহজেই বলতে পারি লেখকের লেখা এখন আরও পরিণত। আগে পরিণত ছিল না তেমনটা না, এখন আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্ণনাগুলো প্রানবন্ত, চরিত্র বিশ্লেষণে আরও দক্ষতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বইটা আমার ভালো লেগেছে। বেশি বড়ো কলেবরের না হওয়ার পরও পাঠককে টেনে রাখতে পারবে। "সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস" বলে একটা কথা আছে, এই বইটা অনেকটাই তেমনই।
• চরিত্র :
চরিত্র নিয়ে কথা বলতে হলে বলতে হয়, অনেক বইয়ে দেখা যায় চরিত্রের বহর বিশাল হওয়ার কারণে সবগুলো চরিত্রকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক বইয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু চরিত্র শুধু রাখার জন্য রাখা। কিন্তু এই বইটিতে সব চরিত্র সমান গুরুত্ব পেয়েছে। রূপন্তী, ফয়সাল, রূপম, শায়লা, স্বপন, রাবেয়া, জক্কু হাজি, মং প্রু, রোকেয়া, জহির, মন্টু মিয়া, মানুৎ সবাই যতক্ষণ ছিল গুরুত্বপূর্ন ছিল। চরিত্র বিন্যাসে যত্নের ছাপ বোঝা যাচ্ছিল। একে অপরের সাথে সম্পর্ক খুব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল।
• বানান, প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন :
বানানের ক্ষেত্রে বলতে হয়, বানান তেমন নেই বললেই চলে। কিছু ক্ষেত্রে মুদ্রণ প্রমাদ লক্ষ্য করা গিয়েছে। শুরুতে এ সমস্যা বেশি থাকলেও পরে তা শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। এছাড়া কয়েক জায়গায় চরিত্র বিভ্রাট লক্ষ্য করেছি। স্বপনের পরিবর্তে বেশ কিছু জায়গায় ফয়সাল লেখা ছিল। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক করে নেওয়া হয়ে।
প্রচ্ছদটা খুব ভালো লেগেছে। বইয়ের লেখার সাথে বেশ মানানসই। আর নালন্দার প্রোডাকশন নিয়ে তো বিশেষ কিছু বলার নেই। ওনারা সবসময় সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করে।
পরিশেষে, সব বইয়ে কিছু না শিক্ষার উপকরণ থাকে। এই বই থেকে আমার একটাই উপলব্ধি হয়েছে। হিংসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। হিংসাত্মক মনোভাবের ফল খুব ভয়াবহ হয়। হিংসার বশবর্তী হয়ে মানুষ এমন অনেক কাজ করে, যা পরবর্তীতে অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ ক্ষেত্রে এই ক্ষতিটা নিজের উপরেই এসে পড়ে। কেননা, প্রকৃতি কারও ঋণ রাখে না।
বই : সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ লেখক : মনোয়ারুল ইসলাম প্রচ্ছদ : সুরঞ্জিত তনু (রাহুল চন্দের আঁকা অবলম্বনে) প্রকাশনী : নালন্দা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৮৪ মুদ্রিত মূল্য : ৪০০ ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৫/৫
"সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ" নামটা প্রথমে শুনে মনে হয়েছিলো এই শিরোনাম কী একটা অতিপ্রাকৃত থ্রিলারের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে? অথবা উপন্যাসের সাথে কী আদৌ নামটা যাবে? উত্তর- হ্যাঁ। একদম ১০/১০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
পটভূমি - নববিবাহিতা স্বামী-স্ত্রী হাওয়া বদলের জন্য কংক্রিটের বেড়াজাল ছেড়ে প্রকৃতির বুকে পাহাড়ের আশ্রয়ে কিছুটা একান্ত সময় কাটাতে আসে। কিন্তু এখানেও তাদের তাড়া করে বেড়ায় এক অজানা ভয়। যেই ভয়ের সাথে শুরুতে গল্পের মুখ্য চরিত্র রূপন্তীর পরিচিতি থাকলেও ধীরে ধীরে তার স্বামী ফয়সালও সাক্ষী হতে শুরু করে একের পর এক নারকীয় সব অভিজ্ঞতার। ওরা কী পারবে? পাহাড়ের ঘেরা সত্য-ভ্রমের মায়াজাল থেকে বের হতে? নাকি সেই ভয় অভিশাপ হয়ে যাবে তাদের জন্য। ছোট বাচ্চা ছেলে রূপম। অদ্ভুত এক কথা বলে তার মা'কে। তার নাকি মাথায় যন্ত্রণা হয় আর মনে হয় খুলির ভেতরে ফা��কা যেন কিছুই নেই ও'তে। বাড়ির বাগানে একটা কুৎসিত দেখতে বিড়াল পায় সে। তার নাম রাখে কিটি। কিটি অন্যসব বিড়ালদের থেকে আলাদা। সে কাঁচা মাছ নয়, কাঁচা মাংস খেতে পছন্দ করে, তাও একসাথে দুইতিন কেজি। বিড়ালটা ঘরে আনার পর রূপমের মাঝে অদ্ভুত কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে যা ওর বাবা-মার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। একদিন ছেলেটা বলে- ওরা নাকি ও'কে নিয়ে যাবে। ওরা কারা? জক্কু হাজি এই গ্রামের মান্যগণ্য লোক। লোকে বলে অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার। গ্রামের কাউকে জ্বীনে আছড় করলে সে ঝাড়ায়। একদিন সেই জক্কু হাজিকে গ্রামের এক ঢোবায় নাকানিচুবানি খেতে দেখতে পাওয়া যায়। একসাথে তিনজন শয়তানের খপ্পরে পড়েছে হাজি। বিছানায় পড়ে যায় হাজি। জান নিয়ে টানাটানি তার। তার ওপর সকাল থেকে নাকি গ্রামের জহিরের ছেলেটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। জক্কু হাজি নাকি তার সাথে থাকা রোকেয়া নামের মেয়েটার বুকে হাত দেয় প্রতিদিন। জক্কু হাজি আসলে কী? রেমাক্রির জঙ্গলের অপদেবতা রূখমা নাকি ভর করেছে রূপন্তীর ওপর। রক্ষাকারী দেবতাকে তুষ্ট করতে হবে জানায় পাহাড়ি গ্রাম প্রধান সেইম প্রু। অন্যদিকে জক্কু হাজি ঘরের চালে ভাজা মাছ ফেলে ডাকে তাদের। বলে- আয় আমার সন্তানেরা, খেয়ে শেষ করে দে। রূপম এখন ছবি আঁকে। কখনো কালো অবয়ব আর কখনো রোমশ হাত আর আরেকটা জিনিসের ছবি, যেটা রূপমের মা শায়লা খুব ভালো করে চেনে। কী সেই ছবি? ক্রমেই উপরের ঘটনাগুলো একে ওপরের সাথে জোড়া লাগতে শুরু করে। আর বেরিয়ে আসে এমন কিছু যার আতঙ্কের রেশ কখনো শেষ হবার নয়। শুরু আদিম এক যজ্ঞ যা মানুষকে কেবল অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। ------------------------------------------/--------------------------------------- প্রতিটা চরিত্র খুব গুছিয়ে লেখা হয়েছে। চরিত্র বিন্যাসে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। পরিশেষে কিছু কথাঃ বইটা এক বসায় শেষ করি। বার বার মনে হচ্ছিলো আমি আমার মায়ের মুখে গল্প শুনছি। আমাকে সেই ছোট বেলার সময়ে ফিরিয়্ব নিয়ে গেছে এই উপন্যাস। এই উপন্যাস সবারই একবার হলেও পড়া উচিত। এতোকিছুর মাঝেও লেখক এক ভিন্নরকম বার্তা দিয়েছেন আমাদের।
রুপন্তি আর ফয়সালের ভালবাসার বিয়ে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরেই রুপন্তির সমস্যা শুরু হল। ওর মনে হয় অতিপ্রাকৃত কিছু ওর ক্ষতি করবে। ডাক্তারের পরামর্শে স্বামী-স্ত্রি বান্দরবন ঘুরতে গেল । কিন্তু সেখানে এমন ঘটনার মুখোমুখি হল যার জন্ন প্রস্তুত ছিল না কেউ।
শায়লা- স্বপনের একমাত্র সন্তান রুপম। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু একদিন বিড়ালের আগমনের পর ঘটতে থাকল অস্বাভাবিক ঘটনা। রুপম কেন হিংস্র হয়ে যাচ্ছে? এ কি কন অপদেবতার অভিশাপ?
সূর্যকান্দির সবচেয়ে নাম করা হুজুর জক্কু হাজি। যে কোনো জীন তিনি ছাড়াতে পারেন। আদতে কি তিনি একজন ভাল মানুষ? নাকি তার রয়েছে ভয়ঙ্কর কোন রুপ?
রুদ্ধশ্বাসে শেষ করলাম আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখকের ভয়ের আখ্যান। দারুন! বান্দরবনের নিখুঁত বর্ণনা, সাঁওতালদের জীবনপ্রথা,আচার অনুষ্ঠান সুনিপুণ ভাবে বর্ণিত। পাহাড়িদের দেব-দেবীদের বিশ্বাস সম্পর্কে ভাল ধারণা হয়েছে। সাথে মানব মনের হিংসা কি করুন পরিণতি আনতে পারে সেটাও ফুটে উঠেছে। আর ভয়ের বর্ণনাগুল গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য। মারাত্মক।
নালন্দার প্রডাকশন এক কথায় টপনচ। বানান ভুল সেরকম চোখে পড়েনি। প্রচ্ছদ এক কথায় মনোমুগ্ধকর।
৩.৮ তারকা। ৪ তারকা আর ৩ তারকার মধ্যে যুঝছিলাম,মনস্থির করতে পারছিনা,গুড্রিডসে ভগ্নাংশ সিস্টেম নাই। বইখানা নিঃসন্দেহে ভালো,পড়ার পুরোটা সময় বেশ উপভোগ করেছি,ছোট কলেবরের মধ্যে গল্পখানা বেশ এঁটে উঠেছে,দেবতা-অপদেবতা,তাবিজ-কবজ,জ্বীন এর ভালই মিশেল ছিল।অধ্যায়গুলো ও ছোট,ছোট,পড়ে আরাম পাওয়া যায়। লেখনশৈলী ও গতিময়। কাহিনী খুব সহজ,এতে তেমন কোনো চমক বা টুইস্ট যাকে বলে তা নেই। শায়লার করা কাজটির কথা পরের দিকে খোলাশা হলে বোধহয় ভালো হতো। তবে মাথা নষ্ট চমক না থাকলেও,কাহিনীর নানা জায়গার দৃশ্যায়নে শিউরে উঠেছি,চোখ-মুখ কুঁচকেছি। আর ও হ্যাঁ,গল্পের কয়েক জায়গায় স্বপন ফয়সাল হয়ে গেছে,আশা করি পরবর্তী এডিশন তা ঠিক হয়ে যাবে। আমার নিজের বিড়াল আছে,সে অবশ্য কিটির মতো নয়,তবে আমার শত্রুপক্ষের সাথে সে কিটির মতো আচরণ করলে আমি যারপরনাই খুশী-ই হবো। 😆
গল্পটা গতিশীল। গ্রাম বাংলার অনেক কাহিনী বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। জক্কু হাজি, হিরণ এগুলো খুব কমন বিষয় আমাদের দেশে। কিটি যতবারই এসেছে সামনে ভয় পেয়েছি মারাত্মক তবে মানুৎ একদম মনে গেথে গেছে। চোখ বুঝলেই কল্পনাতে চলে আসে। লেখকের সব বই পড়ে ফেলেছি এবার নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষা।
বইটা মাত্রই এক বসাতে পড়ে শেষ করলাম ৷ কাহিনী গতিশীল এবং ইন্টারেস্টিং হওয়ায় দ্রুত পড়ে ফেলা গেছে ৷ বইয়ের চরিত্রগুলো বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে সহজেই, গ্রাম আর পাহাড়ের যে চিত্রায়ণ করেছেন তা-ও প্রশংসনীয় ৷ তাই গল্পটা বেশ জমে উঠেছিল ৷ কিছুদিন আগেই পাহাড়ে বেরিয়ে আসায় একদফা স্মৃতি রোমন্থন করতে যাচ্ছিলাম, তার মাঝে ভয়ের যে এলিমেন্টগুলো দাড় করিয়েছেন, সেগুলো এসে বাঁধ সাধল ৷ সবমিলিয়ে বইটা পড়তে ভালই লেগেছে ৷ তবে কিটির জন্য খারাপ লাগল, যতই হোক বিড়ালপ্রেমী তো!
ওনার লেখা আগেও পড়েছি, এবার আগের থেকে আরো পরিণত লেগেছে ৷ কিছু জায়গায় স্বপন ফয়সাল হয়ে গেছে এবং একআধবার শায়লাও রূপন্তীও হয়ে গেছে, পরবর্তী মুদ্রণে সেটার দিকে নজর রাখা হোক ৷
ভৌতিক উপন্যাস। ভয় পাইছি। আর কি লাগে? এর থেকে বেশি কিছু বলার নাই। তবে মাঝে মাঝে চরিত্রদের নাম ঠিকঠাক না বসায় কিঞ্চিৎ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। আর তাকে সঙ্গ দিয়েছে প্রমিত আর আঞ্চলিকের দৃষ্টিকটু মিশ্রণ। জক্কু হাজি চরিত্রটা বেশ ভালোভাবেই গড়ে উঠেছে অন্যান্য চরিত্রদের তুলনায়। অন্য চরিত্রগুলো তেমনভাবে মনে দাগ না কাটলেও কাহিনী বোঝার জন্য যথেষ্ট। ভালো সমাপ্তি আজকাল পাওয়া দুষ্কর, আর তার ভিড়ে এই বইটি ব্যতিক্রমতায় ভাস্বর। শেষ পৃষ্ঠার জন্য একটা তারা বেশি দিলাম।কে জানে, জক্কু হাজি আবার প্রভাবিত করলো কিনা!
অতিপ্রাকৃত জনরার বইয়ে সবথ��কে বেশি যেটা জরুরি তা হলো পাঠককে একই সাথে ভয় দেখানো এবং বইয়ের প্রতি কৌতূহলী করা যা এই বইয়ে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। একেবারেই অল্প কয়েকটি চরিত্রের ওপর নির্মিত এই গল্পে লেখক গ্রামীন, শহুরে এবং পাহাড়ি তিন ধরনের জীবনের গল্প ফুটে তুলেছেন এই বইয়ে যা আমার সবথেকে ভালো লেগেছে। আমি যে কোন জনরার বইয়ে যেটা সবথেকে বেশি আশা করি তাহলো মূল জনরার বাইরেও যেন বইয়ে "জীবন দর্শন" নিয়ে আলোচনা হয়, য�� জীবন দর্শনের মাধ্যমে পাঠকরা কেবলমাত্র একটি গল্প নয় বরং নিজের জীবনের সাথে গল্পের সাদৃশ্যতা খুঁজে নিয়ে উপলব্ধি করতে শিখবে নিজের ভালো ও মন্দ যা দেখিয়ে দিবেন লেখক। সেই দিক থেকে যদি জনরার বাইরে গিয়ে চিন্তা করি তাহলে এই বইটি আমার মন মত হয়েছে। যেমনঃ জক্কু হাজির প্রতি গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং তার ফলাফল, পাহাড়িদের বিভিন্ন দেবতা ও অপদেবতার ওপর বিশ্বাস, অবিশ্বাস এবং তার ফলাফল এবং সর্বশেষ যৌথ পরিবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুখ, দুঃখের পাশাপাশি নির্বিকার ও ঘৃনিত কলহলের শেষ পরিণতি। এছাড়াও বইয়ের একটি দিক আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে তা হলো রপন্তী ও ফয়সালের রোমান্টিক মুহূর্ত গুলো যা শেখায় সকল ভয়ের মাঝেও প্রিয় মানুষকে ভালোবাসা যায়, পাশে থাকা যায় যেকোন মুহূর্তে, যা এই বই থেকে আরো একটি বড় উপলব্ধি।
বইয়ের কয়েকটি জায়গায় ক্যারেক্টারগুলোর নামের ভুল আছে আশা করি তা পরের মুদ্রনে সংশোধন হয়ে যাবে।
বইটা শেষ করে কিটির জন্য মায়া লাগছিল খুব। রাতে পড়েছি বলে ভয়ের ফিলটা ভালোই পেয়েছি। উপভোগ্য একটি হরর থ্রিলার সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।
জক্কু হাজির চরিত্রটা গ্রাম বাংলায় খুঁজলেই পাওয়া যায়, এই চরিত্রটাকে একদম নিখুত মনে হয়েছে। লেখকের সব বই পড়েছি বলে তার প্রতি প্রত্যাশার পারদটুকু উপরের দিকেই থাকে। এই বইটিও সেই প্রত্যাশার আকাঙখা ভালো ভাবে মিটিয়েছে। অনেক ফাস্ট পড়েছি বইটা, আসলে গল্পটাই এমন ছিল। তবে লেখকের অতঃপর কবি মঞ্চে উঠিলেন এখন পর্যন্ত বেস্ট মনে হলো।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বইটির এক দুই জায়গায় টাইপ মিস্টেক চোখে পড়েছে। এগুলো সামান্য ভুল। তবু বইয়ে থাকা উচিত না বলে মনে করি। পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।
বেশ কিছুদিন ধরেই রুপন্তীর মাঝে অনেক অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে ফয়সাল,সবসময় একটা অজানা ভয় বা আতঙ্ক যেনো রুপন্তীকে ঘিরে রেখেছে । প্রথম দিকে খুব একটা আমলে না নিলেও পরে সে বুঝতে পারে রুপন্তীর সমস্যা গুলো ক্রমশ বেড়েই চলছে । তাই ডাক্তারের পরামর্শে সে রুপন্তীকে নিয়ে চলে আসে রেমাক্রির ঘন অরণ্যের মায়াজালে, এই আশায়,পরিবেশের পরিবর্তনে তার স্ত্রীর মানুষিক অবস্থা যেনো কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হয় । তবে রেমাক্রির ঘন আদিম জঙ্গলে রুপন্তীর সমস্যা গুলো যেনো আরো পরিপূর্ণ রুপ ধারন করে,ধীরে ধীরে ফয়সালের বোধগম্য হয় রুপন্তীর সমস্যা গুলো শুধুমাত্র মানুষিক নয় বরং এর পিছনে লুকিয়ে আছে এক অপার্থিব রহস্যের অস্তিত্ব যার মুখোমুখি তারা এযাবৎকালে কখনো হয়নি । রেমাক্রির ঘন জঙ্গলে যখন ফয়সাল ও রুপন্তী তাদের বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝে পাহাড়ের আদিম নিয়মের কাছে বন্দী ঠিক তখনই অন্যদিকে তাদের ঢাকার বাসায় দেখা দেয় নতুন এক বিপত্তির । ফয়সালের বোন শায়লার একমাত্র ছেলে রুপম, অদ্ভুত এক কালো বিড়ালের নেশায় রীতিমত আসক্ত । রুপমের মাঝেও দেখা যায় যাচ্ছে বেশ কিছু পরিবর্তন, আগের মতো চঞ্চলতা নেই তার মাঝে বরং বেশ শুকিয়ে যাচ্ছে সে । অদ্ভুত অদ্ভুত ছবি আকার নেশা যেনো তাকে পেয়ে বসেছে । শায়লা ছেলের সেই ছবিগুলো দেখে রীতিমত বিস্মিত, ছবিগুলোর সাথে গতবছর তাদের পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার এক যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছে সে । তবুও কোনো কিছুই যেনো মেলানো যাচ্ছে না বরং রুপমের অদ্ভুত আচরণের মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে । সূর্যকান্দি গ্রামের এক রহস্যময় ব্যাক্তির নাম জক্কু হাজী, যার ভালো নাম জাকির মোল্লা। রহস্যময় এই মানুষটি গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের মাঝে একজন । গ্রামে তার তাকে নিয়ে যেমন সুনাম রয়েছে তেমন আছে কিছু গোপন দুর্নাম ও । তবুও সবাই তাকে বেশ সম্মানের চোখেই দেখে কারন তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী একজন মানুষ । গ্রামে যে কারো বিপদেই তিনি এগিয়ে আসেন, তার জাদুবিদ্যা ও অপার্থিব ক্ষমতা দিয়ে সবাইকেই সহায়তা করে থাকেন । সবাই তাকে মান্য করলেও একদিন তার পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় হিরণ নামের এক অজাগতিক সত্তা । সে প্রতিশোধ নিতে চায় জাকির মোল্লা খ্যাত জক্কু হাজীর উপরে। জক্কু হাজীও বুঝতে পারেন তার এতদিনের সব ক্ষমতা হিরণের কাছে কিছুই নয় । রুপন্তী, রুপম বা শায়লার মতো সেও খুঁজে বেড়াচ্ছে নতুন মুক্তির পথ ।
পাঠ পর্যালোচনাঃ
সাধারণত হরর ফ্লিক গুলো যেভাবে লেখা হয় বা তৈরী করা হয় “ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ” থ্রিলারটিতে তার ব্যাতিক্রম করা হয় নি । গল্পের সেটিংস, আবহ আর প্রবাহ সবকিছুতেই ছিলো ভৌতিক রহস্যের ছোঁয়া । পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে রুপন্তী আর ফয়সালের পরিণতি , শায়লার গোপন অধ্যায় আর রুপমের অদ্ভুত বিড়াল নিয়ে মেতে উঠার সাথে জক্কু হাজীর জাদুবিদ্যা ও তার মুক্তির আশা, সব কিছুকে গাঁথা হয়েছে একটি অপার্থিব যোগসূত্রে । হরর বা যেকোনো থ্রিলারে ক্লিভ হ্যাংগার টার্ম টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ । সহজ ভাবে এটা কে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, এটা পাঠকের মাঝে পরবর্তী ইভেন্টের জন্যে একটা অস্থিরতা তৈরী করে সেটা কোনো চরিত্রের জন্যে হতে পারে বা কোনো স্পেসিফিক ঘটনার জন্যেও হতে পারে। “ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ” লেখাটিতে এটার ব্যবহার বেশ জোরালো ভাবেই ফুটে উঠেছে । পাঠক হিসেবে কখনো রুপন্তী কিংবা রুপম অথবা জক্কু হাজী কে নিয়ে নানান রহস্যের সম্মুখীন আপনি হবেন যার উত্তর বা ব্যাখ্যা পাওয়ার ইচ্ছে আপনাকে ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলবে । একটা হরর লেখনীতে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভয়ের সিকুয়েন্স তৈরী করা । সিনেমার পর্দায় এটা কে তুলে আনা সহজ হলেও এটাকে শব্দের ব্যবহারে পাঠ উপযোগী করে পাঠকের মাঝে ভয় তৈরি করা বেশ দূরহ ও কষ্টসাধ্য । আমি বলবো না এই বইটি পড়ে আপনি ভয়ে কম্পিত হবেন বা আপনার রাতের ঘুম হয়ে যাবে বিষয় টি এমন নয় । তবে অবশ্যই অবশ্যই একটা শিহরণ আসবেই আপনার মাঝে অন্তত অল্প কিছু সময়ের জন্যে হলেও । কারন লেখাটিতে যথেষ্ট পরিমাণে ফ্লো আছে এবং এমন ভাবে ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা লেখা হয়েছে আপনি বইয়ের মাঝেই নিমজ্জিত থাকতে বাধ্য হবেন।
কিছুটা আক্ষেপ ও আমার ব্যাক্তিগত মতামতঃ
“ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ” আমার পড়া মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ার প্রথম বই । প্রতি বছর বইমেলায় আমার একজন করে নতুন লেখকের বই কেনা হয় আমার । সেই হিসেবে এইবার ভাইয়ার বই নিয়েছিলাম অনেক টা আগ্রহ করেই এবং সেই আগ্রহ আমাকে হতাশ করেনি । তবে আমার কাছে মনে হয়েছে লেখাটি আর একটু বড় হলে মনে হয় ভালো হতো । ১৮৪ পৃষ্ঠা কম হয়ে গেছে শুধুমাত্র আমার মতে, বিশেষ করে শেষের দিকটায় আর একটু বড় করে আরো কিছু ভৌতিক আবহ যোগ করলে বেশ জমজমাট হতো লেখা টা । যদিও এতটুকুর মাঝেও লেখাটিতে কমতি আছে বলে ম��ে হয় নি । এক বসায় শেষ করার মতো একটা লেখাই বটে তবে এই বইগুলো জমিয়ে পড়তে বেশ লাগে আমার । তাই লেখাটা আর একটু বড় হলে আরো বেশিক্ষণ সময়ে বইটার সাথে থাকা যেতো। পাঠক হিসেবে এই আক্ষেপ টা আমি করতেই পারি ।
প্রকাশন ও প্রচ্ছদঃ
বইটির প্রকাশ করেছে নালন্দা প্রকাশন । তাদের বাঁধাই ও প্রোডাকশন কাজ ভালো লেগেছে । বানান ভুল খুব একটা ছিলো না বললেই চলে, গল্পের এতো সুন্দর ফ্লো সব কিছু কেই ছাপিয়ে গেছে । বইটির প্রচ্ছদে ছিলেন সুরঞ্জিত তনু এবং সেটা কেমন অর্থবহ হয়েছে তা বই পড়েই বুঝতে পারবেন । প্রচ্ছদকে হতে হবে লেখার প্রতিলিপি । অনেক লেখক কিংবা প্রকাশন এই ছোটো অংশ টি স্কিপ করে যান যেটা কোনো ভাবেই কাম্য নয় । প্রচ্ছদ কে আপনার লেখার প্রতিলিপি করতে পারলে সেই বইয়ের একটা আলাদা ভিত্তি দাঁড়ায় । বইটির প্রচ্ছদের কাজ টা সেই দিক থেকে অনবদ্য । সর্বোপরি “ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ “ থ্রিলার লেখণীর জন্যে আমি আবার মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ার নতুন যেকোনো লেখার জন্যে অপেক্ষায় থাকবো।
❛সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হিং সা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক❜
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানা রকমের মানুষ। এদের কারো সাথে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো, কারো সাথে ভালো নয়। আবার এক প্রকার স্বজন আছে, যারা উপরে ভালো ভাব দেখিয়ে ভেতরে আমাদের ঘৃণা করে। এই জাতীয় মানুষেরা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এদেরকে ভয়ও লাগে। লাগবেই না কেন? ভয় এক আদিম অনুভূতি।
শায়লা ওরকম-ই একজন। ভাইয়ের বউ রূপন্তীকে সে অপছন্দ করে। সুযোগে কথা শুনিয়ে দিতেও ছাড়ে না। কিন্তু রূপন্তী যথাসাধ্য চেষ্টা করে শায়লার সাথে ভালো থাকার। ইদানিং রূপন্তীর শরীর মন ভালো যাচ্ছে না। কী জানি দেখে সে ভয় পায়। কটু গন্ধ পায়। কে জানি তাকে সারাক্ষণ নজরে রাখছে। স্বামী ফয়সাল রূপন্তীর এই দশা দেখে মনোবিদের সাথে যোগাযোগ করে। তার পরামর্শে হাওয়া বদল করতে যায় রেমাক্রিতে। তবে ঝামেলা যেন পিছু ছাড়ে না। রেমাক্রিতে গিয়ে এই দম্পতি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে পরে যায়। এর থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই।
জক্কু হাজি এলাকার সম্মানী ব্যক্তি। মুশকিল আহসানে জক্কু হাজি অবিচ্ছেদ্য নাম। লোকে বলে বিশাল ক্ষমতা আছে তার। জিন তাড়াতে হাজির জুড়ি নেই। তাইতো মন্টুর মেয়ের আছর তাড়াতে ডাক পরে তার। কিন্তু মন্টুর মেয়েকে সারাতে গিয়ে নিজেই বিপদে পরে গেলেন। অন্ধকারে ডোবায় কেন চুবানী খাচ্ছিলেন তিনি, সে প্রশ্ন গ্রামবাসীর করার সাহস নেই। হুট করেই কেমন নেতিয়ে গেলেন হাজি। শক্তি হতে যা প্রয়োজন তা পাওয়া কঠিন। এদিকে গ্রামে জহিরের ছেলে রাসেল নিখোঁজ। সন্ধান পেতে তাই জক্কু হাজির শরণাপন্ন হয় জহির।
রূপম তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বাচ্চা ছেলেটা এমনিতেই শান্ত-নীরব গোছের। লেখাপড়া বাদে বাকী সব কিছু মনে রাখতে পারে। শান্ত রূপমের মাঝে ইদানিং বেশ অস্থিরভাব দেখা যাচ্ছে। মা শায়লাকে বলেছে তার মাথার ভেতরটা নাকি শুন্য লাগে। কারা জানি ওকে নিয়ে যাবে। শায়লা ভয় পায়। কোন বিপদ আসছে সামনে। বন্ধু-বান্ধবহীন রূপম একটা কু ৎসিত দর্শন বিড়ালের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে। বাড়ির কেউ পছন্দ না করলেও রূপমকে কিছু বলতে পারছে না। কিটি নামের বিড়ালটিও অদ্ভুত। কেমন খু নে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর কাঁচা মাংস খায়। রূপম বলে এই বিড়ালের মালিক অন্য কেউ। রূপমের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা ছোট্ট মূর্তির রহস্য কী?
মানুৎ, রুখমা, কুদরা বোংগা এরাই বা কারা?
এগিয়ে যাচ্ছে সময়, বাড়ছে আত ঙ্ক। দেবতা-অপদেবতার এই লড়াইয়ে জিত কার হবে? ভিন্ন ভিন্ন মানুষগুলোর গল্পের মূল যেন একদিকে মিশেছে। শেষটা কেমন হবে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া: ❛সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ❜ মনোয়ারুল ইসলামের অতিপ্রাকৃত ঘরনার বই। অতিপ্রাকৃত হরর গল্পে যেমন শুভ-অশুভ থাকে, ভয় থাকে, পরে কী হবে এমন উত্তেজনা থাকে এই বইতেও তাই ছিল। উপন্যাসের প্লট খুব বিশাল নয়। ১৮৪ পৃষ্ঠার বই সাঁই করে পড়ে ফেলা যায়। লেখকের লেখার গতি এবং সুন্দর শব্দচয়নের জন্য পড়ার গতি এমনিতেই বেড়ে যায়। তিনটি কাহিনি নিয়ে পুরো উপন্যাসের প্লট রচিত। প্রতিটি ঘটনা এগিয়েছে নিজস্ব গতিতে। শেষে এসে দেখা গেছে এরা সবাই একে অপরের সাথে কিছুটা হলেও সম্পর্কযুক্ত। আমার কাছে উপন্যাসটা মেদহীন বলেই মনে হয়েছে। কোথাও অতিরিক্ত বা অতিরঞ্জিত বর্ণনা নেই। যেখানে যেটুক বর্ণনা প্রয়োজন সেরকম-ই আছে। কোন উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে লেখকের গল্প বলার ধরন বা লেখার পটুতার উপর। সস বইতে লেখকের লেখার পটুতা ভালোভাবেই প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ী অঞ্চলের বর্ণনা এবং জীবনের যেটুক অংশ লেখায় স্থান পেয়েছে সেটা পড়তে খুব ভালো লেগেছে। ভয়ের আবহ তৈরি করেছেন সফলভাবে।
শেষটা মোটামুটি লেগেছে। শুরুতে পড়তে গিয়ে যে আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল সেজন্যেই বোধহয় শেষের আশা বেড়ে গেছিল। হতাশ হইনি, তবে পুরোপুরি তৃপ্তি আসেনি। রেমাক্রির ঘটনার সাথে রূপন্তীর ঢাকার অস্বাভাবিকতার যোগসূত্র কিছুটা এলোমেলো লেগেছে।
উপন্যাসের চরিত্রায়ন ভালো লেগেছে। উপন্যাসে আসা প্রতিটি চরিত্রকে লেখক যথেষ্ঠ জায়গা দিয়েছেন। তাদের ব্যবহার সময় অনুযায়ী ঠিকভাবে করেছেন।
মোটের উপর সস উপভোগ্য বই। পড়তে গেলে পাঠক নিরাশ হবেন না।
প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন: নালন্দার বইয়ের প্রোডাকশন আমার বরাবর-ই পছন্দ। শুধু সমস্যা বইয়ের সাথে ফিতা দেয়না। বইয়ের প্রচ্ছদ আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে। তবে নামলিপিটা অসাধারণ হয়েছে।
হিংসা মানুষের জীবনে ভালো কিছু বয়ে আনে না। হিংসার বশবর্তী হয়ে কিছু করলে সেটার পরিণাম হয়তো নিজেকেও ভুগতে হয়। ছোট্ট এই জীবনে যেটুক পারা যায় ভালোভাবে বেঁচে থাকা, সুখে থাকাটাই আসল। মানুষের অন্ধকার আর ভয়ানক দিকগুলো বাদ দিয়ে শুভ এবং আলোর পথে চললে ছোট্ট এই জীবন অনেক উপভোগ্য এবং সফল মনে হবে।
রুখমার নাম শুনেই বরফের মতো জমে গেল মং প্রু, ওর কপালে দেখা গেল চিন্তার ভাঁজ। রূপন্তীর শরীরটা দেখে সে থরথর করে কেঁপে উঠল অজানা ভয়ে। ফয়সাল বলল, 'এখন কী করব?' মং প্রু বলল, 'অবস্থা বেগতিক। বুঝতে পারছি না। আপনারা শহুরে মানুষ, পাহাড়ের নিয়মকানুন জানেন না। আমার এখনই গ্রামপ্রধানের সাথে দেখা করতে হবে।' 'কেন?' 'মনে হচ্ছে, মানুৎকে খুশি করতে হবে। এছাড়া আর উপায় নেই।' মং প্রু যখন গ্রাম প্রধানের বাড়িতে গেল তখন ভর সন্ধ্যা। সেই সন্ধ্যায় বান্দরবান থেকে অনেক দূরে সূর্যকান্দি গ্রামে বস্তাবন্দি রাসেলের লাশ চাপা দিয়ে দিল জকু হাজি। একটু আগে বাচ্চাটাকে মাছের মতো কেটে টুকরো টুকরো করেছে রোকেয়া- অনেকটা বাধ্য হয়েই কাজটা করতে হয়েছে। রাসেলের রক্ত জমিয়ে রাখা হয়েছে কাঁসার বাটিতে। এই শুদ্ধ রক্তই দেখাবে মুক্তির পথ। অপার্থিব জগতের খেলা শুরু হবে এখনই...
#কাহিনী_সংক্ষেপ:
"তারা থাকে আঁধারে, থাকে রাত্রি শেষের গানে মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভয়– শুধু তাদের খবর জানে…!!
অপদ��বতার রোষানলে পরে ভয়ের জগতে নিয়ে যাওয়া এই বই এ আছে রুখমার মতো ভয়ানক অপদেবতা। তার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আছে দেবতা মানুৎ। আছে কালো জাদুকর জক্কু হাজি। এছাড়াও আছে অপদেবতা কালুজাদুর রোষানলে পরা ভিকটিম রুপন্তী। আছে আরো একটা অপদেবতা যিনি বাচ্চাদের ক্ষতি করে সংসার সমৃদ্ধ করে।
বইটার শুরুটা হয় রুপন্তী আর ফয়সাল এর পাহাড় ঘুরতে যাওয়া ঘটনা দিয়ে। সমস্যার শুরু হয় ওরা ঘুরতে যাবার আগে থেকেই। রুপন্তীর অস্বাভাবিক ব্যবহারের জন্য তারা ঘুরতে যায় পাহাড়ে। কিন্ত পাহাড়ে গিয়ে সমস্যার তো কোনো সুরাহা হয় ই না আরো নতুন করে সৃষ্টি হয় নানা সমস্যার। সাথে করে নিয়ে আসে নানা তিক্ত স্মৃতি আর অপদেবতার ক্রোধ।
অন্যদিকে ঘরে থাকা সদস্যদের মধ্যে আছে ক্লাস থ্রি তে পড়া ক্ষুদে সদস্য রূপম। ফয়সাল আর রুপন্তী বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে ঘরের মধ্যে শুরু করে নতুন সমস্যার সূচনা। রূপম কোথায় থেকে একটা কালো বিড়াল তুলে নিয়ে আসে। তারপর থেকেই ছেলেটা কেমন হয়ে যায়। আচরণ ব্যবহার কথাবার্তা সবই বদলে যেতে থাকে দিন দিন।
এদের বাইরেও আছে অনেক দূরের একজন রহস্যময় চরিত্রের কালো জাদুকর বা কবিরাজ জক্কু হাজী। সে যেমন মানুষের ভালো করে তেমনি মানুষের খারাপ ও করে। হিসেব করলে দেখা যায় ভালোর চেয়ে খারাপ করার পরিমাণ ই বেশি। সে যেমন অন্যের ভালো করতে পারে, ঠিক তেমন ই তার নিজের ভালোর জন্য অন্যের ক্ষতি এমনকি মেরে ফেলতে অবধি বিবেকে বাঁধে না।
এই তিনটা কাহিনী কোথাও গিয়ে একটা জায়গায় গিয়ে মিশেছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা মিলেই তিনটে পথ কোথাও একটা গিয়ে একই পথে রূপ নিয়ে সমস্যার জট খুলে গিয়েছে। কি ছিলো এতো অপার্থিব ঘটনার পিছনের কারণ যা বিজ্ঞান স্বীকার করে না। কি ঘটেছিলো রুপন্তী, রূপম এর সাথে। কোথায় তারা সবাই এক সুতোয় গেঁথে আছে জানতে পড়তে হবে অপার্থিব ঘটনার গরম গরম জমজমাট এই বই।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া:
মনোয়ারুল ইসলাম ভাই হরর জনরা অনেক অনেক বেটার লিখেন। লেখকের পছন্দের জনরা কিনা : ) প্রতিটা চরিত্র খুব গুছিয়ে লেখা হয়েছে। প্রতিটা ঘটনা, চরিত্র বিন্যাসে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। তবে জক্কু হাজী চরিত্রটা আরেকটু বর্ননা করলে ভালো হতো। মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ের লেখা কয়েকটা বই পড়েছি। বইয়ের প্লটগুলো অনেক বড় কলেবরের হয় না। এই বইটায় ছোটো ছোটো ঘটনায়, একটু একটু করে গল্পটাকে সামনে এগিয়ে নিয়েছেন। বাড়তি কোনো কিছু বলা হয় নি। গল্পের কাহিনীই পাঠককে টেবিলে ধরে রাখে যার কারণে এক বসায়ই পড়ে ওঠা যায়। ❝সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ❞ এই বইটাও এক বসায় পড়ে শেষ করার মতো বই। যাতে অধিক চরিত্রের বহর নেই, গল্পের বিশালতা নেই, অযাচিত টেনে বইটা বড় করা হয় নি। যা পড়ে পাঠককে মুগ্ধ হতে হয়। সমসাময়িক লেখকের মধ্যে Top 5 এ থাকার মতো লেখনশৈলী🌸
এক নিমিষে পড়ে ফেলার মতো বই। গল্পে সাঁওতালদের দেবতা, অপদেবতা এবং এর সাথে বাণ মারাকে কেন্দ্র করে কিছু অংশে জ্বীনও চলে এসেছে। যদিও গল্পে রুখমা, কুদরা বোংগা এবং মানুৎকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কুদরা বোংগার নাম শুনে কৌতূহল হয়, গুগল করতেই সামনে যে স্থিরচিত্রটা দেখতে পেয়েছি সেটা দেখে কিছুটা ভয় পেয়েছি। যাই হোক গল্পের কয়েকটা জায়গায় নামের বিভ্রাট দেখা গিয়েছে, যেমন কিছু জায়গায় স্বপন, ফয়সাল হয়ে গিয়েছে- এটি বিরক্তির উদ্রেকের কারণ ছিল। সম্পাদনার দিকে আরেকটু মনোযোগী হলে, এ ত্রুটিটা এড়ানো যেতো। শেষটায় আরো কিছু চেয়েছিলাম যদিও, তবে লেখকের লেখা খুব সাবলীল, নাম বিভ্রাট আর সামান্য কিছু বিষয় ছাড়া বইটা উপভোগ্য ছিল।
personal rating : ৩.৫ বইটা ২ বছর আগে কিছুটুক পড়ে রেখে দিয়েছিলাম। তখন খুব একটা ভালো লাগছিলো না। কাল হুট করে সামনে আসায়, সময় মিলিয়ে পড়ে নিলাম। এবার পড়ে যথেষ্টই ভালো লাগলো। মনে আফসোস হলো, আগে কেনো রেখে দিয়েছিলাম! কেনো খারাপ লাগলো!