দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার অ্যাট স্টাইলস উপন্যাসে প্রথম আবির্ভাবেই এরকুল পোয়ারো সাড়া ফেলেছিলেন। এরপর ডেম আগাথা ক্রিস্টি তাঁকে নিয়ে লিখেছিলেন বেশ কয়েকটি ছোটগল্প। তারপর আবার ফিরে এলেন উপন্যাসে। এই কাহিনিতে ধনকুবের পল র্যেনো খুন হলেন এক গলফ মাঠে। প্রেম, রহস্য, রোমাঞ্চের এক নিঁখুত মিশ্রণ, রহস্য গল্পের রানির সৃষ্টি— আরেকটি বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য মার্ডার অন দ্য লিঙ্কস’।
লোভ, লালসা মানুষকে একদম শেষ করে দেয়। লোভের বশে মানুষ জঘন্যতম কাজ করতেও পিছপা হয় না। কিন্তু কথায় আছে "অতি লোভে তাঁতি নষ্ট", অর্থাৎ লোভ করলে তোমার খারাপ ছাড়া কখনও ভালো হবে না।
গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারোর কাছে ধনকুবের পল র্যেনো একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে সে জানায়, সে বর্তমানে মৃত্যুভয়ে কাটাচ্ছে, সে নিশ্চিত সামনে তার মারাত্মক বিপদ আসছে। তাই সে পোয়ারোর কাছে সাহায্য চায় তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য। চিঠিটি পড়ার পর পোয়ারো এবং তার বন্ধু ক্যাপ্টেন আর্থার হেস্টিংস ফ্রান্সের মের্লানভিলে র্যেনোর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
এরকুল পোয়ারো এবং হেস্টিংস পল র্যেনোর বাড়িতে পৌঁছে জানতে পারে যে সেইদিন সকালেই সে খুন হয়েছে গল্ফ খেলার মাঠে। বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকারা কাউকে বাড়ির ভেতরে আসতে বা যেতে দেখেনি। তাহলে তাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে গিয়ে গল্ফ খেলার মাঠে খুন করলো কে এবং কীভাবে? খুনের মোটিভ কী?
পোয়ারো তার বন্ধু হেস্টিংসকে সাথে নিয়ে তদন্তে নেমে পড়ে। এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করে সেখানকার পুলিশ কর্তারা। তবে এই খুনের তদন্ত করতে সেখানে হাজির হয় আরও এক গোয়েন্দা মঁসিয়ে জ্যিরোঁ। পোয়ারোকে আবার তার অপছন্দ। সে তার নিজের মতো করে তদন্ত করতে থাকে। বরং পোয়ারোর থেকে তদন্তে অনেকটা এগিয়েই সে। তাহলে বরাবরের মতো পোয়ারো কি এবার তদন্তে সফল হবে না? জ্যিরোঁ কি তাকে বাজিমাত করে দেবে? কে সত্যকে সামনে রাখতে পারবে শেষ পর্যন্ত?
আগাথা ক্রিস্টিকে 'রহস্যের সম্রাজ্ঞী' এমনিই বলা হয় না। তাঁর লেখনী এতো ক্ষুরধার ও টানটান উত্তেজনাময় যে পাঠককে পুরো বেঁধে রাখে। একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠার উপায় নেই। রহস্যের উপন্যাস পড়ার সময় আমরা পাঠকেরাও মনে মনে সেই রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করি, ভাবি এরপর হয়তো এটা হবে, অনেকক্ষেত্রে মিলেও যায়। কিন্তু না, এই বই তো সেই বই নয়। যতবার ভেবেছি, এরপর হয়তো এটাই হবে, ঠিক ততবার কাহিনী আমায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অন্য পথে ঘুরে গেছে। সমাধানের পথে যখন মনে হয়েছে এই খুনী, তখনই সামনে আরেক তথ্য হাজির, যা আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে।
এই বই নিয়ে আমার আগাথা ক্রিস্টির তিনটে লেখা পড়া হলো। প্রত্যেকটাই একে অপরের জায়গায় সেরা। প্রথমে রহস্যের জাল বোনা, তারপর ধীরে ধীরে সেই জাল খুলে আসল সত্য প্রকাশ পাওয়া, এককথায় অসাধারণ। ভবিষ্যতে লেখিকার অন্যান্য বইগুলিও পড়ার ইচ্ছে রইল।
আরেকটি কথা যেটা না বললেই নয়, তা হলো বইয়ের অনুবাদ। সায়ক দত্ত অনুবাদিত আগাথা ক্রিস্টির বই আগেও পড়েছি, তাই চোখ বুজে এই বই নিয়েছিলাম। সত্যি বলতে পড়তে গিয়ে মনে হয়নি কখনও আমি অনুবাদ পড়ছি। এছাড়া দু-এক জায়গা ব্যতীত বানান ভুলও চোখে পড়েনি। সবমিলিয়ে বইটি খুব ভালো লেগেছে।
রহস্য উপন্যাস যাদের ভালো লাগে তাদের অবশ্যই এই বই পড়তে বলবো। আশা করি ভালো লাগবে। পাঠে থাকুন।
এটি আমার পড়া প্রথম আগাথা ক্রিস্টি রচিত রহস্য উপন্যাস। Love at first sight-এর মতোন আমিও আগাথা ক্রিস্টির এক চিরকালীন ভক্ত হয়ে গেলাম আজ থেকে। তাঁর জন্য "রহস্যের রানি" খেতাবটা অত্যুক্তি নয়!
এটি এরকুল পোয়েরোকে নিয়ে লেখা দ্বিতীয় রহস্য উপন্যাস। পোয়েরো এখন অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত। তিনি এবং তাঁর সঙ্গী ক্যাপ্টেন হেস্টিংস বিত্তবান মঁসিয়ে র্যেঁনোর কাছ থেকে এক প্রাণরক্ষার অনুরোধের চিঠি পেয়ে গিয়ে অকুস্থলে গিয়ে পৌঁছানোর আগেই মঁসিয়ে র্যেঁনো খুন হয়ে বসে। গুপ্ত অতীত, একাধিক প্রেম, জটিল সম্পর্কের জটিলতর সমীকরণ, মুখোশে ঢাকা মুখ নিয়ে এই উপন্যাস বারে বারে অনেক চরিত্রকেই দোষী সাব্যস্ত করেও আবার তা নাকচ করে অন্য ভিক্টিমকে ধাওয়া করে। তুরুপের তাসের মতোন শেষ টুইস্টটা পড়তে গিয়ে মুখ হাঁ হবেই।
জটিল রহস্যকাহিনি লিখতে গিয়ে অনেক লেখক/লেখিকাই একটুআধটু অসংগতি এনে ফেলেন প্লটে। কিন্তু এখানেই আগাথা ক্রিস্টি সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। কাহিনিতে সামান্য কোন অস্পষ্টতা এলেও পরে তা ঠিক ২+২ = ৪ হয়ে যায়।
অনুবাদক সায়ক দত্ত চৌধুরীও প্রশংসার দাবি রাখেন। অত্যন্ত সাবলীল অনুবাদ। কিছু সংলাপের শব্দগত অনুবাদের বদলে বাংলার চলতি কথা বসিয়ে বঙ্গীকরণ করার সিদ্ধান্ত বইটি পড়ার গতিকে আরো মসৃণ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁর অনুবাদে আরো ক্রিস্টি কাহিনি পড়ার বাসনা রইল।