দিল্লীর মসনদে হুমায়ুনকে বিতাড়িত করে যখন চেপে বসেছেন শের খান শূরি, ঈসা খাঁর পিতা সোলায়মান খানের মাথায় তখন একটাই চিন্তা৷ পুরো বঙ্গের সুলতান হবেন৷ আর সেজন্য প্রথমেই শের খানের বিরুদ্ধে করতে হবে বিদ্রোহ৷ কয়েক দফা যুদ্ধ হয়ে গেল দুই পক্ষে৷ মধুর ভাণ্ডে করে সোলায়মান খানের শিবিরে কী পৌঁছালো? কামানের আঘাতে মারা পড়ল শত শত যোদ্ধা৷ উন্মত্ত হাতি পিষে ফেলল পক্ষ-বিপক্ষের সবাইকে৷ এদিকে সোলায়মান খানের দুর্গে কী ষড়যন্ত্র বয়ে গেল? আততায়ীর ছায়া দ্বারে দ্বারে৷ তিনি কীভাবে মোকাবেলা করবেন সব? তার পুত্রদ্বয় ঈসা আর ইসমাইলের জীবন কোন স্রোতে প্রবাহিত হবে? বারো ভূঁইয়াদের মাঝে সবচেয়ে প্রতাপশালী এবং রহস্যময় চরিত্র ঈসা খান। ছোট্ট বালক থেকে সমগ্র বাংলার সালতানাতের ভীত কাঁপিয়ে দেওয়া প্রবল প্রতাপশালী ঈসা খান হয়ে ওঠার পেছনের এক মহাকাব্যিক যাত্রা উঠে এসেছে এই বইয়ে। মধ্যযুগের কূটনীতি ভরা রোমাঞ্চকর এক যাত্রায় স্বাগতম৷
বইটা বেশ ভালো লেগেছে। যদিও বইটাকে আমার কোনভাবেই থ্রিলার মনে হয়নি, হিস্টরিকাল উপন্যাস, কিন্তু ভালো এবং দুর্দান্ত একটা হিস্টরিকাল উপন্যাস মনে হয়েছে। বইটা আসলেই দুর্দান্ত। উপন্যাসের এন্ডিংটা আমার কেন যেন ভালো লাগেনি হয়তো এমন একটা জায়গায় শেষ করার জন্য, আর মরুভূমিতে জার্নিটা বোরিং লেগেছে অনেক, অপেক্ষায় ছিলাম কখন শেষ হবে। কিন্তু এসব দুই-একটা বিষয় ছাড়া আসলেই বইটা অনেক ভালো আর প্রকাশনীর জন্যও শুভকামনা। এরকম একটা বই দিয়ে প্রকাশনীর শুরু করতে পারাটা বিশেষ কিছু। আশা করি আরো ভালো ভালো বই পাব সামনে এবং এই বইটার পরের খন্ড এর জন্যও বেশিদিন অপেক্ষায় থাকতে হবেনা। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় পরবর্তী পর্বের জন্য। লেখকের বইগুলোর ক্ষেত্রে সবথেকে ভালো লাগে যেটা সেটা হল লেখক ইতিহাসের থেকে গল্পতে বেশি মনযোগ দেন এবং এই বইটাও তার ব্যতিক্রম নয়, এই কারনেই বইটা পড়তে বেশি ভালো লেগেছে। আশা করি বইয়ের পরবর্তী অংশটুকু আরো বেশি ভালো লাগবে।
❝ সম্মিলিত জনতা বুঝতেও পারল না একটা বন্য বাজপাখিকে হত্যা করা হলো, যে আসলে হতে চেয়েছিল মুক্ত। ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিল আকাশের এমাথা থেকে ওমাথা। জনতা দেখল অপরাধীর বিচার সম্পন্ন হলো। মুহূর্তের জন্য এক বিষাদময় নিরবতা নেমে এলো চরাচর ছাপিয়ে। অপরাধীর মাথাটা গড়িয়ে পড়ে যাওয়া দেখে পরমুহূর্তেই নীরবতা বিদীর্ণ করে করে উল্লাস ধ্বনি করে উঠলো সমবেত জনতা৷ মানুষের পৈশাচিক উল্লাসে চাপা পড়লো বন্য বাজের মুক্তির জয়গান। ❞
পুরো উপন্যাসে ইতিহাস যেন কবিতার থেকেও সুন্দর ভাবে যত্ন করে লিখেছেন লেখক। বিষন্নতা আর ইতিহাস এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন যেখানে অক্ষর ঝাপসা হয়ে ওঠে রূপ নেয় ছবিতে৷
ইংরেজির তুলনায় বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক উপন্যাসের সংখ্যা হাতে গোণা। যা-ও বা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগই ব্রিটিশ আগমনের পরবর্তী সময় নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে শরদিন্দু, নীহাররঞ্জন, বঙ্কিম কিছু লিখেছিলেন, কিন্তু সেগুলোও বৃহত্তর ভারতবর্ষ নিয়ে, এবং শরদিন্দু আর বঙ্কিমের সাম্প্রদায়িকতা রীতিমত দৃষ্টিকটু। পূর্ববঙ্গ সেভাবে আসেইনি বলতে গেলে, আর সেটাই স্বাভাবিক, যার গল্প তো তাকেই বলতে হবে। এর মাঝেও প্রাচীন বা মধ্যযুগের পূর্ববঙ্গ নিয়ে উপন্যাস চোখে পড়েই না বলতে গেলে (শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন বাদে, তবে যতদূর বুঝি সেটা ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়)। সেদিক থেকে বাংলার সুলতানী আমলের একটা সময় নিয়ে, বা বলা ভাল সোলায়মান খান আর ঈসা খানকে কেন্দ্র করে উপন্যাস লিখেই সিদ্দিক আহমেদ স্টার মার্কস পেয়ে গেছেন। সেজন্য আর তেমন কিছু প্রত্যাশা করিনি, কিন্তু এগজিকিউশনে লেখক ছক্কা হাঁকিয়েছেন। দুর্দান্ত গতিশীল; ইতিহাস থাকলেও ইতিহাসের কচকচি দিয়ে বিরক্তি উৎপাদনের চেষ্টা নেই। বাংলার মধ্যযুগ আর সুলতানদের সম্পর্কে কিছু নাম ছাড়া তেমন কিছু আমার জানা নেই, তাই ইতিহাসের সঠিকতা কতখানি রেখেছেন, সেটা ঐতিহাসিকরা বলতে পারবেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে একটা মহাকাব্যিক উপন্যাসের শুরুটা পড়ছি। লেখকের ভাষ্যমতে এই বইটা মাত্র প্রথম পর্ব, কাজেই এখানে ঈসা খানের পিতা সোলায়মান খান মূল চরিত্র। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, যুদ্ধের বর্ণনা, ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর উপস্থাপন, সবই জীবন্ত। টুকটাক কয়েক জায়গায় বর্তমানকালের কথোপকথনের টান এসে গেছে, সেটা একজন ভাল সম্পাদক থাকলেই এড়ানো যেত। ঈসা আর তার ভাই ইসমাইল এখনো বালক, কাজেই আশা করা যায় পরের পর্বে তাদের বেড়ে ওঠার দারুণ একটা যাত্রা দেখা যাবে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো। সবশেষে, এমন একটা পথ দেখানো এবং সফল প্রচেষ্টার জন্য লেখককে অভিনন্দন। ইতিহাস পছন্দ করুন বা এক বসায় শেষ করার মত টানটান গল্প, এ বই অবশ্যপাঠ্য।
অদ্ভুত সুন্দর ভাষায় লেখা বইটা। এত সুন্দর করে শব্দ আর বাক্যের বিন্যাস ইদানিংকালে আর পড়েছি বলে মনে হচ্ছে না। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম প্রতাপশালী ঈসা খানকে কেন্দ্র করে বইয়ের কাহিনী। যদিও গল্প আসলে সোলায়মান খানের বিদ্রোহ দিয়েই শুরু যখন ঈসা খান একেবারেই নাবালক ছিল। যুদ্ধের বর্ণনা, কৌশল, ছল-চাতুরী, পরিনতি সব কিছু একদম স্পষ্ট চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। বিদ্রোহী নেতা সোলায়মান খানের চরিত্রের সব দিক এত সুন্দর ধাপে ধাপে বর্ণনা করা, ক্ষণে ক্ষণে নিজেই মত পাল্টাচ্ছিলাম তার ব্যাপারে। তাজ খান, দরিয়া খান আরো দুজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর দক্ষতার অধিকারী চরিত্র। এরকম শত্রুর সাথে লড়াই করেও আনন্দ। গল্পের প্রতিটা মোড় ঘুরার সময় একই প্রশ্ন বারবার থাকছিল - বিশ্বাসঘাতকতা নাকি দক্ষতার কারণে বদলে যাচ্ছে ফলাফল? সবচেয়ে বড় ব্যাপার ঈসা খানের ব্যাপারে যাই টুকটাক জানতাম তাঁর শৈশব জীবনে যে এত টুইস্ট থাকতে পারে সেটা কল্পনায় ছিল না।
ঋদ্ধ প্রকাশের প্রোডাকশন অনেক ভালো লেগেছে। প্রচ্ছদ, বাঁধাই, প্রতিটা পাতার অলংকরণ, চ্যাপ্টার এর শুরুতে ইলাস্ট্রেশন সবই অনেক সুন্দর।
মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের পটভূমিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে ‘স্বর্ণবাজ’ উপন্যাসটি। জনরা হিসেব করলে বলতে হবে, এটা একটা ‘হিস্টোরিক্যাল ফিকশন’। তো হিস্টোরিক্যাল ফিকশন/থ্রিলার হলে বই হাতে নিয়ে আমি একটু নড়ে চড়ে বসি, বেশ পছন্দের জনরা কিনা এটা। আর এই হিস্টোরিক্যাল ফিকশন বা মধ্যযুগীয় পটভূমিকে বেস করে লেখা বইগাড়ির চালক হিসেবে যদি থাকেন এই জনরার সুলেখক ‘সিদ্দিক আহমেদ’ তাহলে তো প্রত্যাশার পারদ থাকে হাই। তো সে প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করলাম জার্নি। বইয়ের ব্লার্ব চাইলেই গ্রুপের পাঠকরা পেয়ে যাবেন গ্রুপেই, তাই সে জিনিস রিভিউতে লিখে পোস্ট ভারি করলাম না। তারচেয়ে বলি বই পড়ার পর পাঠক হিসেবে অনুভূতি কি।
বইয়ের প্লটকে ছোট্ট করে লিখলে বলা যায়, এটা বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খা’র ওপরে ভিত্তি করে লেখা। তবে এই বইতে ঈসা খা একদমই কম সময়ের জন্য এসেছেন। যাও এসেছেন তা তার ছোটবেলার বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ। তার পরিবর্তে লেখক এখানে ঈসা খা’র উৎপত্তি, ছোটবেলার কিছু ঘটনা, তার পিতা সুলাইমান খানের বিষয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। ‘স্বর্ণবাজ’ উপন্যাসটি ৩ ভাগে ভাগ করা। ভারত উপমহাদেশে যখন মোঘলদের হটিয়ে দিল্লীর মসনদে শের শাহ বসেন তখনকার সময় থেকে উপন্যাসের ১ম ভাগ শুরু। সুলাইমান খান তখন বাংলা তথা তৎকালীন গৌড়ের একজন দেওয়ান ছিলেন, তবে দেওয়ানীতে তার মনের আশা পূরণ হচ্ছিলো না। তিনি প্ল্যান করতে থাকেন কি করে তিনি গৌড়ের সুলতান হওয়া যায়। শেরশাহ তখন দিল্লির সিংহাসনে বসলেও বাংলার প্রতি তার ছিলো অগাধ ভালোবাসার (এই বাংলা জয় করা দিয়েই দিল্লির মসনদে বসার শুরুটা হয় তার)। দিল্লিতে থাকলে যেমন পুরো ভারতবর্ষ শাসনের লাগাম ধরে রাখা সহজ হবে, আবার এই দিল্লিতে থাকার কারণেই তিনি হারাতে পারেন ভালোবাসার ভূমি বাংলা। তাই বাংলা তথা গৌড়ের দায়িত্ব দেন তার ছেলে জালাল খানকে। জালাল খান বেশ চৌকস একজন শাসক ছিলেন। তার অধীনে থেকে তার দূর্ভেদ্য দূর্গ আক্রমণ করে সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না, এটা সুলাইমান খান খুব সহজেই বুঝতে পারছিলেন। আর সে কারণেই তিনি একটা সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন। আর সেই সুযোগ এসে ধরা দেয়, যখন জরুরী একটা কাজে দিল্লীর উদ্দেশ্যে বাংলা ছাড়েন জালাল খান। সুলাইমান খান প্ল্যান মোতাবেক আক্রমণ করেন জালাল খানের দূর্গকে। এই আক্রমণের ফলাফল দিয়েই শেষ হয় বইয়ের ১ম ভাগ। বইয়ের ২য় ভাগ আর ৩য় ভাগ কি নিয়ে সেটা বলছি না (স্পয়লার হয়ে যাবার ভয়ে)।
তবে ১ম ভাগে ভাগে উত্তেজনা যতটুকু ছিলো পরের ভাগগুলোতে তা আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে আমার যেটা মনে হয়েছে, ইতিহাসের একঘেয়ে বর্ণনা। আমি কিন্তু বলছি না, সিদ্দিক আহমেদের লিখনশৈলী খারাপ হয়েছে কিংবা পরের অংশগুলোতে লিখনশৈলী খানিকটা দূর্বল হয়ে গিয়েছে। না, সমস্যাটা হচ্ছে একই জিনিস ভালো হলেও বারবার নেয়া যায় না। আর সে হিসেবে এই বইটা যতটা না থ্রিলার বা ফিকশন হয়েছে তার চেয়ে বেশি হয়েছে খুব সুন্দর বর্ণনায় ঐতিহাসিক ঘটনার উপস্থাপন। আর এই ঐতিহাসিন ঘটনার উপস্থাপন জিনিসটা রীতিমত বিরক্তিকর হয়ে গিয়েছে ৩য় ভাগে এসে। ঈসা খা এবং তার ভাই ইসমাইল খানের জার্নির বর্ণনাটা এতোটা ডিটেইলড এসেছে যে পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে কখন এই জিনিস শেষ হবে আর ফাইনালি এই বইয়ের শেষটা কেমন হবে। অবশেষে বইয়ের শেষটা যেভাবে হয়েছে তাতে আসলে হতাশ হয়েছি৷ যদিও এই বইটি সিরিজের ১ম বই যেখানে কেবল এই সিরিজের মূল গল্প শুরু করার আগে ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরীটা দিয়ে বিল্ড আপ করাটা মূল উদ্দেশ্য, কিন্তু তবুও একটি উপন্যাস হিসেবে এটাকে আমার ব্যর্থ মনে হয়েছে। কেন ব্যর্থ মনে হয়েছে? কারণ একটা উপন্যাস পড়তে আমি কি চাই? দারুণ একটা গল্প যে গল্পের শুরু আছে, উত্থান-পতন আছে, ক্লাইম্যাক্স আছে আর দারুণ একটা এন্ডিং আছে। এ উপন্যাসে খুবই শক্তিশালী একটা শুরু থাকলেও আর বাকি কিছুই নেই। বইয়ের শেষ পাতা অব্দি এই শুরুই আছে (এটাকে 'সিরিজের ১ম উপন্যাস' বলে ডিফেন্ড করাটা ঠিক হবে না, সিরিজ এর ১ম উপন্যাস হলেও সে উপন্যাসে ট্রাডিশনাল এন্ডিং না হলেও একটা এন্ডিং থাকা উচিত)। স্রেফ এই একটা জিনিস এর জন্যই বইটা আমাকে হতাশ করেছে। বরাবরের মত সিদ্দিক আহমেদের লা জওয়াব লিখনশৈলী, বর্ণনাভঙ্গি, শব্দচয়ন, মধ্যযুগীয় আবহ সৃষ্টি সবকিছুই আমাকে আগের মতই মুগ্ধ করেছে। এই বইয়ের আরেকটা জিনিসটা আমার কাছে ভালো লেগেছে তা হলো, বেশ কিছু ছোট ছোট ইনফরমেশন বইতে সুন্দরভাবে ব্লেন্ড করে দেয়া হয়েছে যেটা ইনফরমেশন জানার দিক থেকে হলেও আমার ভালো লেগেছে। যেমন : আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি শেরশাহ ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন। এই ডাকের ব্যাপারটা আসলে কিভাবে কিভাবে গড়ে উঠেছে তার ডিটেইল বর্ণনা এই বইতে এসেছে যা আমি আগে জানতাম না। আবার অধিক খুশি প্রকাশ করতে আমরা যে 'কেল্লাফতে' শব্দটা ব্যবহার করি তার উৎপত্তি আর বুৎপত্তিগত বর্ণনাও জানতে পেরে আমার ভালো লেগেছে। এই রকম টুকটাক জিনিস উপন্যাসকে অলংকৃত করেছে।
বইয়ের প্রডাকশন নিয়ে বললে বলতে হয়, ঋদ্ধ প্রকাশ এই বইটি দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করলেও এই বইতে 'প্রকাশনীর ১ম বই' টাইপ কোন ভুল কিংবা এক্সপেরিয়েন্সের ল্যাকিংস আমার চোখে পড়েনি। অনেকে বাঁধাই টাইট বললেও আমার কাছে যে কপিটি ছিলো তাতে আমি এমন কোন সমস্যার মুখোমুখি হইনি। তবে প্রচ্ছদটা আরেকটু ব্রাইট হলে আমার ভালো লাগতো (একান্তই নিজের মত)। এছাড়া প্রতিটা পৃষ্ঠায় অলংকরণ এবং প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে একটা কনটেন্ট দিয়ে সে অধ্যায়কে এক ছবিতে সামারাইজ করার চেষ্টাকে খুব বেশি প্রয়োজনীয় মনে না হলেও খারাপ লাগেনি। ক্রীম কালারের পেপার আর শক্তপোক্ত বাইন্ডিং দিয়ে বইয়ের দাম যা নির্ধারণ করা হয়েছে তাও ঠিকঠাক মনে হয়েছে। মোদ্দা কথা, তারা প্রকাশনী হিসেবে নতুন হলেও কাজে কর্মে তাদেরকে একদমই প্রফেশনাল মনে হয়েছে।
তো এই ছিলো স্বর্ণবাজ নিয়ে আমার অনুভূতি। সিদ্দিক আহমেদ অনেক পছন্দের লেখক বলে তার ওপর এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি ছিলো। তবে বলতে দ্বিধা নেই, সে এক্সপেক্টেশন এই বইতে পূরণ হয়নি এবং উপন্যাস হিসেবেও স্বর্ণবাজকে আমার স্বার্থক মনে হয়নি। তবে আমি সিদ্দিক আহমেদকে নিয়ে খুবই আশাবাদী যে, আমার এই অনুভূতি সিরিজের ২য় এবং পরবর্তী বইগুলোতে কেটে যাবে এবং এই সিরিজ বাংলা সাহিত্যে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
দিল্লীতে হুমায়ূনকে হটিয়ে মসনদে বসছে শের শাহ শুরী। আর বাংলায় তারই বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে গৌড়ের দেওয়ান সোলায়মান খান।
সোলায়মান খানের দুই দফা বিদ্রোহ আর মৃত্যুদন্ডের পরে পুত্রদ্বয় ইসমাইল খান আর ঈসা খান দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে গেলেন পারস্যে। ভবিষ্যত বারোভূঁইয়ার একজন সেই ঈসা খানের প্রারম্ভিক জীবনের গল্পই স্বর্ণবাজ।
সিদ্দিক খানের লেখা এই প্রথম পড়লাম। ফেসবুকের থ্রিলার পাঠকদের আসর গ্রুপে বইমেলায় তার নতুন বই স্বর্ণবাজ নিয়ে বেশ হাইপ দেখে কিনে ফেলি। একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হুকড ছিলাম। কবে যে দ্বিতীয় পর্ব আসবে!
বাংলাদেশি থ্রিলার/ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস গুলা এই কয়বছরেই এত উন্নতি করসে তা বলার মত না ❤️
— স্বর্ণবাজ — সিদ্দিক আহমেদ; — প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারী ২০২২; ঋদ্ধ প্রকাশ — — সাড়ে তিন তারা —
ঐতিহাসিক উপন্যাস (অথবা থ্রিলার) জনরায় লেখক সিদ্দিক আহমেদ রীতিমতো পাকা খেলোয়াড়। মিথ, ইতিহাস, রোমাঞ্চ আর বর্তমান সময়ের মিশেলে রচিত 'দশগ্রীব' অথবা ইতিহাসের সময়কালে রচিত 'ধনুর্ধর' — দুটো উপন্যাসেই লেখকের ইতিহাস আশ্রিত রচনায় শক্তপোক্ত লেখনীর পরিচয় মেলে৷ কালিকলম ছেড়ে বোধহয় তলোয়ার দিয়ে কোপ মারেন, অ্যাঁ! তাই, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ঈসা খাঁর জীবনের আলোকে রচিত 'স্বর্ণবাজ' হাতে নিলে সন্দেহতীতভাবে ভালো কিছুর বাজি ধরা যায়।
প্রেক্ষাপটঃ মুঘল সম্রাট বারব পানিপথের যুদ্ধে আফগান সম্রাট ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীর মসনদ হাঁকিয়েছিলেন৷ কিন্তু তার পুত্র সম্রাট হুমায়ূনের খামখেয়ালি মনোভাব এবং আপন ভাইদের চক্রান্তে আরেক আফগান শের শাহ শুরী সেই মসনদে শেকড় গড়েছে৷ পরাজিত হুমায়ূন তখন পালিয়ে পারস্য সম্রাট শাহ তামাস্পের নিকট আশ্রয় নেন। অন্যদিকে, বঙ্গের আসনেও থাবা বসিয়েছে আফগানরা৷ ঈসা খানের পিতা সোলায়মান খান তখন বাংলার দেওয়ান পদে অসীন ছিলেন৷ কিন্তু সোলায়মান খানের আকাঙ্খা ছিল কারো অনুগত না থেকে স্বাধীন বঙ্গের সুলতান হয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করা৷ তাই, আফগানদের বঙ্গ ছাড়া করবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়েই শুরু করেন বিদ্রোহ।
|| পজিটিভ সাইড ||
★ঈসাখাঁ'র জীবনের আলোকে রচিত হলেও গল্পের সময়কাল শুরু হয়েছে যখন শূরদের বঙ্গ ছাড়া করার প্রতিজ্ঞায় শূর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন ঈসা খাঁর পিতা সোলায়মান খান৷ ঈসার বয়স তখন আট বা নয় বছর হবে। এখানে গল্পের উপযুক্ত সময়কাল নির্বাচনে লেখক মোক্ষম দাঁও মেরেছেন। সোলায়মান খানের শাসনামলে বঙ্গের অস্থির পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে গল্পের কাঠামো একটা সলিড বেস পাবে৷ পাশাপাশি তখনকার রাজনৈতিক হালহকিকত সম্পর্কে পাঠকের সম্���ক ধারণার ফলে ঈসাখাঁর উত্থান এবং জীবনকালের অন্যান্য ঘটনাবলীর তাৎপর্য সহজেই বোধগম্য হবে।
★বইয়ের ১ম ভাগে (বিদ্রোহী সুলতান) মধ্যযুগের ধুলোমাখা পথে গল্পের ঘোড়া প্রথম থেকেই ছুটেছে তীব্র গতিতে৷ চারদিকে যুদ্ধের মাদল বাজছে। সেই অনিবার্য যুদ্ধের পূর্ব মূহুর্তের উত্তেজনা এবং যুদ্ধকালীন অস্থিরতা বিদগ্ধ লেখার ফোঁকরে তলোয়ারের ঝংকার-রূপে বিরাজমান৷ সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি, শৃঙ্খলা ��� রণকৌশল উপস্থাপনে লেখকের দারুণ মুন্সিয়ানার নজির মেলে৷ ২য় ভাগে (রঞ্জিত ঘোড়া) এসেও গল্পের ঘোড়ার সমান তেজ নিয়েই এগিয়ে গেছে। এই ভাগের ক্লাইমেক্স পার্টটা গল্পের অন্যতম বিশেষ দিক। এক্সিকিউটেড পারফেক্টলি।
★বইয়ের প্রথম দুইভাগ জুড়ে সোলায়মান খান ছিলেন গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে৷ এই দুই ভাগে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোলায়মান খানের রাগ, ক্ষোভ, ভালোবাসা, মমতা ও অন্যান্য চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য সার্থকরূপেই ফুটে উঠেছে৷
★সিদ্দিক আহমেদের লিখনশৈলীর নৈপুণ্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। লেখকের 'ধনুর্ধর' পাঠ-অভিজ্ঞতা ধার করে বলব, গল্পের মঞ্চসজ্জা এবং সিকোয়েন্সের সাবলীল বর্ণনায় অতি সহজেই দৃশ্যগুলো ভিজুয়ালাইজ করা যায়৷ এমনকি একশন সিকোয়েন্স সব বুঝতেও খুব ঝামেলা পোহাতে হয়না৷ সিদ্দিক আহমেদের লেখা থেকে এটা বাড়তি পাওনা, যা পাঠ-অভিজ্ঞতাকে দারুণ কম্ফোর্ট দেয়৷
নেগেটিভ সাইড বললে বাড়িয়ে বলা হবে হয়ত, তাই বলা যায় যে দুয়েকটা দিক নিয়ে মন খচখচানি ছিলঃ
★গল্পের মূল ঘটনাপ্রবাহ সোলায়মান খানের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকেই পাঠকের দরবারে পেশ হয়৷ তাই, প্রতিপক্ষ শিবিরের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি, রণকৌশল অথবা সমর-সজ্জার বিষয়াদি আঁধারে বিলীন হয়ে গেছে৷ দুইপক্ষের পারস্পেক্টিভ আলোতে নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো উপভোগ্য হত। তাছাড়া প্রতিপক্ষের দক্ষ রণকুশলী ও চতুর সেনাপতি দরিয়া খানকে গল্পের বিশেষ চরিত্র বলা যায়৷ সোলায়মান খানের দৃঢ় চরিত্রায়নের পাশাপাশি দরিয়া খানের মত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটা ঠিকঠাক পোট্রে করা দরকার ছিল৷
★প্রথম দুই ভাগ দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে ৩য় ভাগের (পারস্যের শেকল) অভিযানে নিরাশ হলাম। একভাবে ভাবতে গেলে মরুভূমিতে রোমাঞ্চকর অভিযান, কিন্তু একইসাথে যাত্রার খুঁটিনাটি সব একঘেয়ে বৃত্তান্ত বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়৷ হয়তবা সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিতে ঈসাখাঁর জীবনে এই ভ্রমণকাল একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, (মূলত এই ৩য় ভাগ থেকেই ঈসার চরিত্র বিকশিত হয়), তবুও যাত্রাপথের বিবরণ কিছুটা কমিয়ে গল্পের সমাপ্তি আরো চমকপ্রদ করা যেত।
সবমিলিয়ে স্বর্ণবাজ আমার জন্য স্যাটিসফাইড রিড৷ যারা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস/থ্রিলার পছন্দ করেন, ভালো লাগবে অবশ্যই৷
বইটা এক বসাতে শেষ করলাম। লেখা বরাবরের মতন ই গতিশীল। লেখকের প্রতি আমি খুব সম্ভবত বায়াসড তাই উনার সব লেখাই আমার কেন জানি অনেক বেশি ভাল লাগে। স্বর্ণবাজ বইটাও অনেক ভাল লেগেছে। ইতিহাসের যে অংশটুকু আমরা জানি তার ভেতরের অনেক অজানা কাহিনীই কল্পনা আর তথ্যের সাহায্যে ফুটে তোলার যে কাজটি তিনি করেছেন এক কথায় অনবদ্য। হুমায়ুন আহমেদ এর "বাদশাহ নামদার" আমার অতীব প্রিয় একটি বই। এই বইয়ের দরুন ই মোঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কে জানার একটা ইচ্ছা জাগ্রত হয়। কিন্তু সম্রাট হুমায়ুন কে দিল্লীর মসনদ থেকে বিতাড়িত করার মূল হোতা শের খানের বঙ্গ বিজয়ের যে অংশটুকু সেটা হয়ত অনেকের ই অজানা। সে অংশটুকু এই বইয়ে খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। যদিও বইয়ের কাহিনী শেষ হয়নি। পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
❝Who wishes to fight must first count the cost.❞ ―Sun Tzu, The Art of War - ❛স্বর্ণবাজ❜ - সুলতান সোলায়মান খান, মুঘল আমলের টালমাটাল সময়ের এক বিদ্রোহী সুলতান। গৌড় অঞ্চলের একসময়ের অধিপতির জামাতা হওয়ায় সেই অঞ্চল শুরি শাসনমুক্ত করার চিন্তা করেন তিনি। তাই এই বিদ্রোহী সুলতানকে হটানোর জন্য শের শাহ শুরি তার দুই বিশ্বস্ত সেনাপতি তাজ খান এবং দরিয়া খানকে নিযুক্ত করেন। - গৌড় অঞ্চলের শাসনকার্যের ব্যাপারে দুই পক্ষ থেকে নানাভাবে আলোচনার চেষ্টা করা হলেও ঐকমতে পৌছানো সম্ভব হয় না। ফলে এই অঞ্চলে শুরু হয় ছল-বল-কৌশলের এক যুদ্ধ। এখন এই যুদ্ধের ফলে সোলায়মান খান এবং তার দুই ছেলে ইসমাইল আর ঈসার পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য পড়তে হবে লেখক সিদ্দিক আহমেদের ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস ❛স্বর্ণবাজ❜। - ❛স্বর্ণবাজ❜ বইটিকে বলা যায় হিস্টোরিক্যাল ফিকশন এবং হিস্টোরিক্যাল থ্রিলারের এক মিশ্রণ। যদিও আমার কাছে বইতে ‘থ্রিলার’ অংশের চেয়ে ‘হিস্টোরিক্যাল’ অংশটি বেশি ফোকাস পেয়েছে বলে মনে হয়েছে। অনেক সময় এ ধরণের ঐতিহাসিক ধারার বইগুলোতে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ম্যাড়ম্যাড়ে ইতিহাস কপচানো হতে থাকে, তবে এই বইতে এরকম জায়গা খুব কমই পেয়েছি। বইয়ের মূল ঘটনাপ্রবাহ ‘বিদ্রোহী সুলতান’, ‘রঞ্জিত ঘোড়া’ এবং ‘পারস্যের শেকল’- এই তিন খন্ডে বিভক্ত যার ভেতরে প্রথম খন্ডটি আমার কাছে সবথেকে ভালো লাগলো। - ❛স্বর্ণবাজ❜ বইটি যে সময়কাল এবং পটভূমির উপরে লেখা হয়েছে সে সময়কালকে বইয়ের লেখনশৈলী পুরোপুরিভাবে ন্যায্যতা প্রদান করেছে। বইয়ের কিছু ঘটনা, যুদ্ধ এবং সংলাপ এত চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে মনে হয়েছে চোখের সামনেই সেগুলো ঘটতে দেখছি। পুরো বইতে সেরকম থ্রিলার ফ্যাক্টর তেমন একটা না থাকলেও চমৎকার ভাষাশৈলী সেই অভাব অনেকটাই পূরণ করে দিয়েছে। - ❛স্বর্ণবাজ❜ বইয়ের চরিত্রগুলোর ভেতরে ‘সোলায়মান খান’ চরিত্রটিকে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এছাড়া ‘ইসমাইল খান’, ‘তাজ খান’, ‘দরিয়া খান’ চরিত্রগুলোর ভেতরেও বেশ স্বকীয়তা বজায় ছিলো। তবে পুরো বইতে ‘ঈসা খান’ বেশিরভাগ সময়েই কোন না কোন চরিত্র দ্বারা ম্লান হয়ে ছিলো বলে মনে হলো। যেহেতু এই বইতে মূলত ঈসার ছোটবেলাকে ফোকাস করা হয়েছে এবং সামনে এই সিরিজের আরো কয়েকটি খন্ড আসবে তাই আশা করছি সেগুলোতে ঈসার চরিত্র আরো ভালোভাবে পরিস্ফুট হবে। - ❛স্বর্ণবাজ❜ বইটি ‘ঋদ্ধ প্রকাশ’ এর প্রকাশিত প্রথম বই। সে হিসেবে বইয়ের দামের তুলনায় বাহ্যিকভাবে প্রোডাকশন খুবই ভালো হয়েছে বলা যায়। মানানসই প্রচ্ছদ, নামলিপি, ডাস্ট কভার এবং প্রতি খন্ডের শুরুতে ইলাস্ট্রেশন ভালোই লাগলো। এছাড়া কাগজের মান, পেইজ সেটাপে নতুনত্ব ইত্যাদিও বেশ সন্তোষজনক। বইয়ের বাধাঁই মাঝের দিকে কিছুটা শক্ত ছিলো, সেটা পড়ায় তেমন বিঘ্ন ঘটায়নি। তবে বইতে আলাদা করে সম্পাদক এবং প্রুফ রিডিং টিম থাকার পরেও টাইপো এবং প্রিন্টিং মিস্টেক বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়েছে, যা আমার কাছে ঠিক গ্রহণযোগ্য মনে হলো না। নতুন এক প্রকাশনীর প্রথম বই হওয়ায় আশা করছি এই ব্যপারগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রকাশনীর পক্ষ থেকে পরবর্তী সংস্করণে টাইপো এবং প্রিন্টিং মিস্টেকগুলো শুধরানো হবে। - এক কথায়, বাংলার এক নির্দিষ্ট সময়ের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে একটি চমৎকার সিরিজের সূচনা পর্ব বলা যায় ❛স্বর্ণবাজ❜ বইটিকে। পাতায় পাতায় থ্রিল খোঁজার বদলে ফিকশনের আদলে ইতিহাসের নানা বাঁক জানতে যারা পছন্দ করেন তাদের কাছে ❛স্বর্ণবাজ❜ বইটি হাইলি রিকমেন্ড করা থাকলো। লেখক এবং প্রকাশনীর জন্য সিরিজের পরবর্তী খন্ডগুলোর ব্যপারে শুভকামনা রইলো।
সংক্ষিপ্ত পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ খুব আয়েশ করে পড়ার মতোই স্বর্ণবাজ একটা হিস্ট্রি বেসড বই। বইয়ের শুরুর পাতা থেকে শেষ শব্দ পর���যন্ত ছিল টানটান উত্তেজনা। প্রতি মুহুর্তে একেকটি চরিত্রের প্রতি সুনিপুন দক্ষ কারিগরের ন্যায় লেখক মায়া জন্মিয়েছেন।
বইয়ের দ্বিতীয় কিস্তির শেষাংশে পৌছে মনে হচ্ছিল বুঝি কলিজাটা কেউ ভুল করে ছিড়ে নিয়ে গেছে। প্রকৃতি কেন এতো অসহায়? কেন তাদের প্রিয়জনকে ছেড়ে যেতে হয়? বারবার প্রতিটা মোড়ে মোড়ে লেখক তার লেখনীর মুগ্ধতায় বুঁদ করে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
এক কথায়, অসাধারণ হয়েছে। পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায়...
নিজে থেকে যখন কথা বলতে শুরু করে বই আপনার সাথে তখন ৫ স্টার ছাড়া দেবার কোন উপায় নেই। বাহুল্য কিছুটা যে নেই তা নয় তবে সেটাও উপভোগ্য করে তুলেছেন লেখক তার লেখনীর ভংগিমায়। সাধুবাদ, পরের পর্বের অপেক্ষায়।
উপন্যাসের পটভূমি মধ্যযুগের বাংলা। মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে পরাজিত করে দিল্লীর দখল নিয়েছে শের শাহ শুরী। তার বিরুদ্ধে বাংলায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে গৌড়ের দেওয়ান সোলায়মান খান। প্রতিপক্ষের দুই দক্ষ সেনানায়ক তাজ খান এবং দরিয়া খানের সাথে প্রতিনিয়তই তার যুদ্ধ চলছে। হয় স্নায়ুযুদ্ধ, নতুবা অস্ত্র হাতে সম্মুখ সমরে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে বেড়ে উঠছে তাঁর দুই পুত্র - ইসমাইল এবং ঈসা। সেই ঈসা যে পরবর্তীতে বারো ভূইয়াদের মাধ্যমে বাংলার সালতানাতের ভিত কাঁপিয়ে দিবে৷
ঈসা খানের আখ্যান নিয়ে লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস সিরিজের প্রথম কিস্তি 'স্বর্ণবাজ'। মূলত ঈসা খানকে নিয়ে সিরিজ হলেও প্রথম বইতে ঈসা খানের পিতার সময়কাল বর্ণনার মাধ্যমে তার ছোটবেলাকে চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক, পরবর্তী খন্ডগুলোর জন্য একদম দারূণ ভিত্তি গড়েছেন। সোলায়মান খানের ছায়ায় বড় হওয়া ছোট্ট শিশু থেকে কত ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে প্রতাপশালী শাসক হয়ে ওঠার যাত্রার বাকিটুকু পড়তে আর তর সইছে না।
লেখকের আগের বইগুলো পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আগের লেখনীকে ছাপিয়ে গেছেন তিনি স্বর্ণবাজের মাধ্যমে। থ্রিলার উপন্যাসে মুহূর্তে মুহুর্তে টুইস্ট, কাহিনীর অপ্রত্যাশিত বাঁকের থেকেও বেশি উপভোগ করেছি লেখা। এত দারূন শব্দের গাঁথুনি আর কাব্যিক লেখনী অনেকদিন মনে থাকবে।
বিলাশবহুল রাজদরবার, কুটনীতির চাল, অ্যাকশন-প্যাকড যুদ্ধক্ষেত্র, দৃঢ় চরিত্র, মনে রাখার মতো কিছু উক্তি, আনন্দ-বিষাদে মাখা আখ্যান সব মিলে আমার স্বর্ণবাজ পড়ার অভিজ্ঞতা ছিলো অতি চমৎকার। আগের লাইনটা পড়ে গেম অফ থ্রোনসের কথা মনে হচ্ছে? মধ্যযুগের বাংলা সম্ভবত ফিকশনের থেকে কোনো অংশে কম ছিলো না আর সেই গল্পই চমৎকার করে আমাদের সামনে তুলে এনেছেন লেখক। নিজের অজ্ঞানতার কারণে হিস্টেরিকাল এক্যুরেসি নিয়ে কিছু বলার নেই তবে ইতিহাস আশ্রিত ফিকশন হিসাবে লা-জবাব! সবাই বেশি করে বই পড়ুন যাতে লেখককে চাপ দিন পরবর্তী খন্ড দ্রুত প্রকাশের জন্য।
ইতিহাস রিলেটেড বই আমার খুব যে পছন্দের তা নয়। অনেক সময় অযাচিত তথ্যের সমাহার থাকায় আমার পার্সোনালি বিরক্ত লাগে। তাই স্বর্ণবাজ বইটা আসলে এঞ্জয় করব কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। তবে আসলেই, আমার মতন হিস্টোরিতে অনাসক্ত ব্যক্তিকেও আকর্ষণ করতে পেরেছে বইটা। বইয়ে গল্পের ছলে শুরুতে সোলায়মান খান আর শূরদের ইতিহাস দারুনভাবে অল্প পাতায় উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সত্যি অবাক করেছিল। কাহিনী ধীরে ধীরে উৎকর্ষতা লাভ করে, আর একদম বইয়ের দুই-তৃতীয়াংশে চরমে পৌঁছায়। আমি কাহিনীর চেয়ে বেশি এঞ্জয় করেছি চরিত্রগুলোকে, তাদের সংলাপ আর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়নকে। সোলায়মান খানকে কখনো ভালো লেগেছিল, কখনো তার উপর জন্মাছিল রাগ। এই চরিত্রটা লেখক দারুনভাবে লিখেছেন। বর্ণনাগুলো পড়েই মনে হবে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো নিজ চোখে দেখছেন আপনি। জানি না এর কতটুকু বাস্তব, কতটুকু ফিকশন, তবে এটা বলতে পারি কাহিনীটা আপনাকে বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলবে, উপভোগ করবেন প্রতিটা মুহূর্ত। এই পার্ট বলা চলে ট্রেইলার ছিল, আলোচনা ছিল ঈসা খান এর শৈশব আর সোলায়মান খানকে নিয়ে , পরের বইয়ের কাহিনী আরও জমজমাট হবে মনে হচ্ছে। পরের পার্টের অপেক্ষায় রইলাম, সবাইকে সাজেস্ট করব বইটা।
ঈসা খা কে জানতে গিয়ে শুরু হলো উনার পিতা সোলায়মান খান এর অসাধারণ এক গল্প। পদে পদে মুগ্ধ হয়েছি বইটা পড়ে। সিদ্দিক আহমেদের কলমে অসাধারণ ভাবে ফুটে উঠেছে প্রতিটি চরিত্র। হাইলি রেকোমেন্ডেড
এই কাহিনী ঈসা খানের। কিন্তু এ মাত্র প্রথম কিস্তি। তাই একদম গোঁড়া থেকেই শুরু করেছেন লেখক। গোঁড়া বলতে যখন মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে সরিয়ে দিল্লির সিংহাসনে শের শাহ শুরী। মূলত ঈসার পিতা সোলাইমান খান বাংলায় তার বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ করেন,তা নিয়েই কাহিনী এগুতে থাকে। ইতিহাস আশ্রিত এই উপন্যাস যে আমাকে থ্রিলারের ফিল দেবে বুঝতে পারিনি। বইয়ে সোলাইমান খানকে বিদ্রোহী, যোদ্ধা, পিতা, মানুষ প্রত্যেক রূপে দেখানো হয়েছে। আবার ঈসার ছোটবেলাটাও চমৎকার ভাবে দেখানো হয়েছে।
সোলাইমান খানের মৃত্যুর পরবর্তী অংশ পড়ে মনে হচ্ছিলো আমি আরব্য রজনীর কোনো অংশ পড়ছি।
গল্প লেখার ধরণটা শুরু তে ভালো না লাগলেও পরবর্তীতে বেশ জমে ওঠে। ৩টি অংশের মধ্যে প্রথম দুটি কিস্তি খুবই ভালো লেগেছে। যে জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, শুধু মাত্র মূল চরিত্র হিসেবে দেখানো হচ্ছে তাই তাকে (সোলাইমানকে) সাফল্যের আলো দেখাতেই হবে এমনটা লেখক করেননি৷ হঠাৎ করে গল্পের এমন আকর্ষিক মোড় টাও বেশ ভালো লেগেছে।
তৃতীয় কিস্তি তে সব জায়গাই যে টানটান উত্তেজনা তেমন নয়। কিছু যায়গা ভালো লেগেছে, আবার কিছু জায়গা রীতিমত বিরক্তিকরও লেগেছে।
কিন্তু শেষটা খুবই ভালো লেগেছে। এবং পরবর্তী বই টা পড়ার জন্য যারপরনাই উদগ্রীব হয়ে আছি।
"বাবা বলতেন - নসিব আর ওয়াক্ত আসলে বড়ই অদ্ভুত, কখন যে বদলে যায় তা কেউ বলতে পারে না।"
দিল্লীর সিংহাসন বেদখল হয়ে গেছে। শের শাহ শূরির কাছে যুদ্ধে হেরে পারস্যে পালিয়ে গেছেন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন। শূর বংশের শাসন শুরু হয়েছে পাকাপাকিভাবে। ঠিক এরকম একটা অস্থির সময়েই বাঙ্গাল মুলুকের দেওয়ান সোলায়মান খান বিদ্রোহ করে বসলেন। দিল্লীর করায়ত্ব থাকতে চাইলেন না তিনি। নিজেকে বাঙ্গাল মুলুকের স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করলেন সোলামান খান। সম্রাট শের শাহ শূরির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করলেন তিনি।
এদিকে সম্রাট শের শাহ শূরি দিল্লীর তখতে বসে থাকলেও বাঙ্গাল মুলুক সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছেন নিজের সুযোগ্য পুত্র জালাল খানকে। পালিয়ে যাওয়া মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের কাছ থেকে যুদ্ধে জিতে নেয়া সুবিশাল গৌড় অঞ্চল বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি জালাল খানকে। আর জালাল খানও তাঁর পোড় খাওয়া দুই সেনাপতি তাজ খান আর দরিয়া খানকে সাথে নিয়ে বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খানকে দমন করার সবরকম চালই চেলে চলেছেন।
বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খানের এখন একটাই লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যটা হলো গৌড়ের দুর্গ শূরদের কাছ থেকে দখল নেয়া। সেই উদ্দেশ্যে একের পর এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে লাগলেন তিনি। সার্বক্ষণিক ভাবে তাঁর ছায়া হয়ে রয়েছেন সুদক্ষ তিন সেনাপতি আবু জাফর, বায়োজিদ খান ও 'বুড়ো বাঘ' খ্যাত ইব্রাহীম খান। সুলতানের দুই ছেলে ইসমাইল খান আর ঈসা খানও আছেন তাঁর যুদ্ধশিবিরে। কিন্তু তাঁদের বয়স নেহাতই অনেক কম।
শক্তিশালী ও কুশলী শূরদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে স্বাধীন হতে চাওয়া বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খান কি জয়লাভ করতে পারবেন? মুক্ত আকাশে স্বাধীন বাজপাখি হয়ে উড়তে চাওয়া এই অকুতোভয় নৃপতির ভাগ্য কি তাঁকে সঙ্গ দেবে? আর তাঁর প্রাণপ্রিয় দুই পুত্র ইসমাইল আর ঈসার ভাগ্যেই বা কি লিখেছেন বিধাতা? প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আছে 'স্বর্ণবাজ'-এ।
অনেকদিন পর মধ্যযুগের ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা কোন ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়লাম। লেখক ও নির্মাতা সিদ্দিক আহমেদের 'স্বর্ণবাজ'-এর কাহিনি এগিয়ে গেছে শূর শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খানের যুদ্ধযাত্রার ঘটনা গুলোকে আঁকড়ে ধরে। তিনটা ভাগে বিভক্ত এই ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রথম দুটো ভাগের পুরোটা জুড়েই ছিলো সোলায়মান খান, দিল্লীর তৎকালীন শাসক সম্রাট শের শাহ শূরি ও তাঁর পুত্র জালাল খান (পরবর্তীতে ইসলাম শাহ)-এর মধ্যকার কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব আর যুদ্ধ সম্পর্কিত ঘটানাবলী। যেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে দিল্লীর প্রভাবমুক্ত হয়ে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন হতে চাওয়া এক সুলতানের রোমাঞ্চকর যুদ্ধযাত্রা। মধ্যযুগীয় রাজনীতি আর কূটনীতি বেশ চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সিদ্দিক আহমেদ। 'স্বর্ণবাজ'-এর তৃতীয় ভাগের ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না, কারণ স্পয়লার দিয়ে ফেলার ভয় আছে।
বইটা সম্পর্কে যখন প্রথম শুনেছিলাম, তখন জেনেছিলাম এটা বারো ভুঁইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ঈসা খাঁ'র জীবন ভিত্তিক উপন্যাস। 'স্বর্ণবাজ'-এর শুরুতেই সিদ্দিক আহমেদ উল্লেখ করেছেন ঈসা খাঁ'র বর্ণিল জীবনের তিন খণ্ডের প্রথম খণ্ডকে তিনি এই উপন্যাসে তুলে এনেছেন। যদিও এই উপন্যাসে ঈসা খাঁ'র পিতা বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খানের ওপরেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ইসমাইল ও ঈসার শৈশব উঠে এসেছে 'স্বর্ণবাজ'-এ। নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় উপন্যাসটা যখন শেষ হলো, তখন এর দ্বিতীয় খণ্ডের জন্য আগ্রহটা প্রচণ্ড পরিমাণে বেড়ে গেলো। সিদ্দিক আহমেদের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে লেখা এই উপন্যাসের পরবর্তী দুই খণ্ড কবে প্রকাশিত হবে জানা নেই। তবে আমি সেগুলো শীঘ্রই পড়তে চাইবো।
'দশগ্রীব', 'ধনুর্ধর' আর 'নটরাজ' খ্যাত লেখক ও নির্মাতা সিদ্দিক আহমেদের লেখার সাথে যারা পরিচিত, তারা জানেন তিনি কতোটা ডিটেইলে গল্প বলেন। ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে 'স্বর্ণবাজ'-এও প্রচুর ডিটেইলিং ছিলো৷ ধীর-স্থিরভাবে লেখক মধ্যযুগের একটা অস্থির সময়কে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। চিত্তাকর্ষক ঢংয়ে বলে গেছেন গল্পটা। তবে ডিটেইলিংটা একটা সময় একঘেয়ে লাগা শুরু করেছিলো আধিক্যের কারণে। কিছু জায়গায় মনে হচ্ছিলো রিপিটেটিভলি একই জিনিস ঘটে চলেছে। 'স্বর্ণবাজ' উপন্যাসের তিন ভাগের ভেতরে একমাত্র দ্বিতীয় ভাগটাই গতিশীল ছিলো। প্রথম আর তৃতীয় ভাগের অনেক জায়গাতেই বোরড ফিল করেছি। পড়তে গিয়ে কিছুটা স্লো হয়ে গেলেও শেষ করতে পেরেছি।
'স্বর্ণবাজ'-এর সমাপ্তি আমার কাছে খাপছাড়া লেগেছে। সিদ্দিক আহমেদ এই বইয়ের আরো দুটো খণ্ড লিখবেন, জানি। কিন্তু প্রথম খণ্ডের সমাপ্তি হিসেবে 'স্বর্ণবাজ-এর সমাপ্তিটা ঠিক জমেনি। বইটার অন্যান্য আর দশটা অধ্যায়ের মতোই যেন শেষ অধ্যায়টা হঠাৎ থেমে গেছে। আরেকটু ট্রাডিশনাল ওয়েতে এটাকে শেষ করা যেতো বলে মনে হয়েছে আমার। আসলে আগে জানলে আমি ট্রিলোজি কমপ্লিট হওয়ার পরেই পড়া শুরু করতাম। যাই হোক, দ্রুত কমপ্লিট হোক এটাই চাই। এটা ঋদ্ধ প্রকাশ প্রকাশিত প্রথম বই। প্রথম বই হিসেবে প্রোডাকশন ছিলো টপ নচ। বিশেষ করে বইয়ের ভেতরের অলঙ্করণ আর পৃষ্ঠাসজ্জা বেশ ভালো লেগেছে আমার। ফরিদুর রহমান রাজীবের করা প্রচ্ছদটাও বেশ দৃষ্টিনন্দন লেগেছে।
বইয়ের লেখক অনেক পছন্দের উনার সকল বই আমার পড়া আর এর জন্য বইটা কেনা হয়েছিলো। বইটা তিনটা কিস্তিতে লেখা- প্রথম কিস্তি: বিদ্রহী সুলতান দ্বিতীয় কিস্তি: রঞ্জিত ঘোড়া তৃতীয় কিস্তি: পারস্যের শেকল এইটা একটা সিরিজ বই এইটা সিরিজের প্রথম বই পরের বই লেখক লিখবেন কি না জানি না। বইটা ঈসা খাঁ কে নিয়ে ঐতিহাসিক একটা উপনাস্য প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি মূলত ঈসা খাঁর পিতা কে নিয়ে তৃতীয় ঈসা খাঁ ও তার ভাইয়ের দাস হিসাবে বিক্রি হবার কাহিনী। প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি ভালো ছিলো কিন্তু আমার কাছে খুব বিরক্ত লেগেছে তৃতীয় কিস্তি কোন কিছুই টানে নাই আমাকে মনে হয়েছে লেখক হয়েতুক পেজ বাড়ানোর জন্য লিখেছে। এত বর্নানা দেওয়ার কোন দরকার ছিলো বলে আমার মনে হয় না। দেখা যাক লেখক যদি সিরিজের ২য় বই লেখেন তাহলে হত ঈসা খাঁর বড় সময়ের কাহিনী জানা যাবে।
এখনি পরের বইটা পড়ার জন্য আর তর সইছে না। কিন্তু কবে যে আসবে...! উপভোগ্য একটা বই পড়লাম। ঈসা খাঁ - কে কেন্দ্র করে লেখা হিস্টোরিক্যাল ফিকশন৷ জমিয়ে দিয়েছে লেখক। ঈসা খাঁ- এর ছোটোবেলা থেকেই শুরু করেছে একদম। এখন পরের বইটা পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বরাবরের মতোই ভালো, গতিশীল, হিস্ট্রিক্যাল ফিকশান। ভাষা আরেকটু ভালো হতে পারত। যদিও লেখক স্বীকার করেছেন লেখাটা অনেক বছর আগে থেকে শুরু করা বলে অপরিপক্বতা দেখা যেতে পারে, গিয়েছেও। সাম্প্রতিক কালের অন্যান্য লেখায় বর্ণনাভঙ্গী ও কথোপকথন আরও শক্তিশালী। বইটার প্রকাশকদের নিজেদেরই সম্পাদনা সংস্থা আছে, তা সত্ত্বেও বইয়ের সম্পাদনায় ত্রুটি চোখে পড়েছে। ��েমন দুয়েক জায়গায় 'র' হয়ে গেছে 'ও'; বিজয়ের এই সমস্যাগুলো এখানে দেখতে পাব আশা করিনি। বীক্ষণ প্রুফ রিডিংয়ে আরও যত্নশীল হবে বলে আশা করেছিলাম। উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়ের তুলনায় বাকীগুলোতে গতি একটু স্তিমিত হয়ে গেছে। তাও ভালো লেগেছে। হয়তো পরের পর্বগুলোতে আরও ঝরঝরে, গতিশীল লেখা পাব। তবে যে বিষয়টার প্রশংসা না করলেই নয়, তা হলো লেখকের গবেষণা ও কল্পনার ভারসাম্য। ফ্যাক্ট-ফিকশান দারুণভাবে মিলেমিশে গেছে। ওভারঅল, বিলো এক্সপেক্টেশন হলেও নিঃসন্দেহে সুখপাঠ্য ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস।
"বাবা বলতেন, নসিব আর ওয়াক্ত আসলে বড়ই অদ্ভুত, কখন যে বদলে যায় তা কেউ বলতে পারে না!"
সিদ্দিক আহমেদের লেখা সেরা বইটি পড়ে ফেললাম কি? কি অদ্ভুত সুন্দর ভাষাশৈলী আর মনোমুগ্ধকর বর্ণনা! সিদ্দিক আহমেদ যে ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন এতে আর কোনো সন্দেহ নেই। কি ছিলো না বইটিতে?? শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা, যুদ্ধের দামামা, তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, ভূ-রাজনীতি, কূটকৌশল...মনে হচ্ছিলো সবকিছু জীবন্ত দেখতে পাচ্ছি। ঋদ্ধ প্রকাশকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম অসাধারণ প্রোডাকশনের জন্যে। প্রতিটা পেইজ আর চ্যাপ্টারের গর্জিয়াস ইলাস্ট্রেশন, চমৎকার বাঁধাই আর প্রচ্ছদ দিয়ে এই অত্যাধিক সুন্দর বইটিকে আরো জমকালোভাবে উপস্থাপন করার জন্যে। সিরিজের পরবর্তী বইগুলো পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট হুমায়ুনকে পরাজিত করে মসনদে বসেছেন শের শাহ শূরী, তার বিরুদ্ধেই বাঙাল মুলুকে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন বিখ্যাত বারভূঁইয়ার ঈসা খাঁ'র পিতা দেওয়ান সোলায়মান খান, তখন ঈসা খাঁ অনেক ছোটো। বাঙাল মুলুক থেকে সোলায়মান খানের বিদ্রোহকে রুখে দিতে শের শাহ শূরী তথা তার পুত্র জালাল খানের দুর্দর্শ দুই সেনাপতি দরিয়া খান এবং তাজ খান যুদ্ধে লিপ্ত হোন সোলায়মান খানের বিরুদ্ধে ।
সবকিছু মিলিয়ে এ এক চমৎকার অ্যাখান যা স্বপ্ন, লক্ষ্য আর বিশ্বাসের মিশেলে শৌর্যবীর্যে গৌরবময় বীরত্বগাঁথা, রণবিগ্রহের অ্যাখান।
বইটি তিনটা ধাপে গল্প বর্ণনা করা হয়েছে যার প্রথম দুই পর্যায়ে সোলায়মান খানের বিদ্রোহ এবং বিদ্রোহের পরিণতি উঠে এসেছে এই দুটো ধাপের প্রথম ধাপের গল্প বর্ণনায় কিছুটা অপরিপক্ক লেগেছিলো বিশেষ করে গল্পে মধ্যযুগীয় রাজদরবারে ব্যবহৃত ভাষারীতি খুব বেশি প্রকটভাবে ছিলো না, তবে তা আস্তে আস্তে প্রকট হয় যা গল্প ভালোলাগায় এক অন্যমাত্রা যোগ করেছিলো।
বইয়ের প্রথম দুই ধাপের পুরোটা জুরেই ফোকাসে ছিলেন সোলায়মান খান এবং তার নানান কর্মকাণ্ড। এবং শেষ ধাপে এসে বর্ণিত হয়েছে সোলায়মান খানের দুই পুত্র ইসমাইল খান ও ঈসা খানকে নিয়ে।
সামগ্রিক ভাবে বলতে গেলে এ বছর পড়া চমৎকার বইগুলোর মধ্যে 'স্বর্ণবাজ' বইটিও থাকবে, লেখক সহজ ভাষায়, ধীরেসুস্থে কোনোরূপ তাড়াহুড়ো ছাড়া যে গল্পে বলে গিয়েছেন, তাতে বইটি যতক্ষণ পড়েছি ততক্ষণই ঘোরের মধ্যে ছিলাম এবং কি কোথাও গল্পের ছন্দ পতন হয়েছে এমনও মনে হয়নি। না, বইয়ে কোনো থ্রিল বা টুইস্ট পাবেন না, গল্পের মূল বিশেষত্ব হলো এর বর্ণনা এবং ইতিহাস, তাতে বইটিকে হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার নয়, হিস্টোরিক্যাল উপন্যাসই বলতে হয়, সেই হিসেবে পড়লেই বেশি তৃপ্তি পাবেন।
সাধারণত কোনো বইয়ের প্রথম প্রকাশেই অনেক পরিমান বানান ভুল, টাইপিং মিস্টেক থাকে সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই বইয়ে তেমন ভুল চোখে পরেনি, একজায়গায় কেবল ইসমাইলকে ইব্রাহিম বলা হয়েছে । বরং লেখকের বদলতে অনেকগুলো নতুন বাংলা শব্দের সাথে পরিচয় ঘটেছে। শব্দ গুলোর অধিকাংশই শেষে নির্ঘন্ট হিসেবে অর্থ বলে দেওয়া হয়েছে, তবে তা ফুটনোট আকারে দিলেই বেশ ভালো হতো।
নতুন প্রকাশনী হিসেবে 'ঋদ্ধ প্রকাশ' স্বর্ণবাজ বই এবং এর চমৎকার প্রডাকশন নিয়ে যেভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে তাতে আশাকরি ভবিষ্যতে আরো ভালো ভালো কাজ পাঠকদের উপহার দিবেন। তবে বইটির প্রচ্ছদের 'স্বর্ণবাজ' নামটির নামলিপিটা আমার ভালো লাগেনি, প্রথম দেখায় আমি মনে করেছিলাম বইয়ের নাম 'স্বর্ণরাজ বা স্বর্ণব্রাজ'।
বইটা এমন একটা পর্যায়ে এসে শেষ করা হয়েছে যে পরবর্তী বইটি হাতে পাওয়ার জন্য অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে মনের মধ্যে, লেখকের প্রতি অনুরোধ থাকবে পরের বইটি দ্রুত পাঠকের হাতে তোলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে।
পরিশিষ্ট, আপনি যদি হিস্টোরিক্যাল উপন্যাস ( থ্রিলার নয়) পড়তে পছন্দ করেন তাও আবার এই বাঙাল মুলুকের, তাহলে বইটি আশাকরি চমৎকার একটা চয়েস হবে আপনার জন্য।
"নসিব আর ওয়াক্ত আসলে বড়ই অদ্ভুত, কখন যে বদলে যায় তা কেউ বলতে পারে না!"
আজ আমি রাজা কাল হয়তো আমার শিরশ্ছেদ রাজ্যের ফটকে ঝুলছে "
যুগ থেকে যুগ রূপান্তরিত হয়ে আজকের এই আধুনিক বাংলা। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ,আধুনিক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কৌতুহলের সময় হলো মধ্যযুগ।তখন প্রযুক্তির ছোঁয়া সবে লেগেছে দুনিয়ার হালে।মানুষ আধুনিকতার দ্বারে,তবে বন্যতা তখনও ছেড়ে যায় নি তাদের।এ সময়কে ঘিরে রয়েছে শত ইতিহাস, ক্ষমতার লড়াই, সাথে ছিল বঙ্গকে ঘিরে থাকা, সাম্রাজ্যের মসনদে বসা কয়েকজন বাজপাখির গল্প। মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা বাবরের পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে কম ইতিহাস হয় নি। হুমায়ূন ছিলেন নরম মনের অধিকারী, যে বার বার শত্রুর কুটিলতাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন।
কিন্তু যে বইটার কথা বলছি সেখানে হুমায়ূন একজন বিতাড়িত সম্রাট বয় আর কিছু নয়। এই কাহিনী বাংলার বারো ভূইয়ার সবচেয়ে প্রতাপশালী চরিত্র বাংলার °মসনদ–ই–আলা° ঈশা খাঁ কে নিয়ে। লেখক সিদ্দিক আহমেদ, ঈশা ট্রিলজির প্রথম ভাগে ঈশার বাবা সোলায়মান খান আর ঈশার ছোটবেলার যে জর্জরিত কাহিনী সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন।
🛑সিংহাসনের জন্য রাজা বাদশাহদের লড়াই তো আমরা অনেক শুনেছি, দেখেছি।তার বেশিরভাগই ছিলো ক্ষমতার উচ্চ মঞ্চে বসে অধীনে থাকা প্রজাকে শোষণ করা। কিন্তু নিজে স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য, শাসন করতে নয় শুধু অন্য দলের মানুষের উপর নির্ভরশীল না হওয়ার জন্য লড়াই করতে কজনকে দেখেছি। কিছু জিনিস না চাইতেও আপনাকে শিহরিত করবে, মধ্যযুগের ধূলিময় পথের সাম্রাজ্য জয়ের কাহিনী এমনই। লেখক সিদ্দিক আহমেদ কয়েকটা পর্বে ভাগ করে বঙ্গের বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান খানের গৌড় হাসিল করার লড়াই ও ঈশা খাঁ এর যে একটা নির্যাতিত শৈশব আছে সে কথা রচিত করেছেন।
বইটি শেষ করার পর একটা কথা মনে হলো ছোটবেলা থেকে শুনে আসা বারো ভূইয়া আর বঙ্গজয়ের গল্পের মধ্যে এরকম নিষ্ঠুর একটা অধ্যায় থাকতে পারে তা কল্পনা করি নি, হয়তো সেটা আমার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে।
কাহিনী সংক্ষেপ:
সময়টা দিল্লির সম্রাট হুমায়ূন পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরের। তখন দিল্লি শাসন করছে শের খান শূরী। শূর শাসন তখন বাংলার মসনদে ঝাঁকিয়ে বসলেও বাংলার সুলতান সোলায়মান খান শূর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। শের খানের ছেলে জালাল খানের সাথে সোলায়মান খানের বাংলার গৌড় দূর্গ দখলের খেলা চলে তাও পরোক্ষভাবে। সোলায়মান খান নিজের শক্তি আর শাণিত তলোয়ারের মতো বুদ্ধি দিয়ে বঙ্গের গৌড় দখল করলেও শেষ মূহুর্তে পাশার দান পাল্টে যায়। সোলায়মান খান কি পরিণতি হয়েছিল? ঈশা খাঁ এর বা কি হয়েছিল? এই কাহিনি বিজয় আর বিপর্যয় এর মিশানো অবিস্মরণীয় ইতিহাস...
পাঠপ্রতিক্রিয়া:
ইতিহাস রচিত গল্পে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হলো বাস্তবে ঘটে ঘটনার সাথে সুনিপুণ ব্যাখ্যা। কয়জন সফলভাবে ইতিহাস পাতায় তুলে ধরতে পারে। কিন্তু সিদ্দিক আহমেদ ভয়ংকর সুন্দর ভাবে মধ্যযুগের একগুচ্ছ চিত্র এঁকেছেন। কোন বই হয়তো শতভাগ পরিপূর্ণ হয় না। কিন্তু স্বর্ণবাজ ৯৫ শতাংশ সফল, জানি না লেখক ইতিহাসকে কতটুকু অবিকৃত রেখেছেন। কিন্তু হুমায়ূন পরাজিত হয়ে শূর শাসনের সময় ঈশা খাঁ র জন্ম এবং যুদ্ধে বাংলায় অস্থিতিশীল অবস্থায় বেড়ে উঠা দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে।
★বইটাকে তিনটা পর্বে ভাগ হয়েছে। প্রথম ভাগে বিদ্রোহী সুলতানের ভূমিকায় ছিল সুলতান সোলায়মান খান। একজন আত্মসম্মান সমৃদ্ধ ব্যক্তি যে চেয়েছে স্বাধীনভাবে বাঁচতে, বাংলা অন্য কারোর অধীনে দিতে বিমুখ সে। শূর সাম্রাজ্যের দুই সেনাপতি তাজ খান ও দরিয়া খানের সাথে সোলায়মানে যুদ্ধে ব্যাখাটা লেখক দারুণ ভাবে ব্যাখা করেছেন। সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে সোলায়মান খানের ব্যক্তিত্ব। আহা এমন মানুষ যে মৃত্যুর শেষ নিশ্বাস অবধি নিজেকে স্বাধীন সুলতান ভেবেছেন। যুদ্ধে যাওয়ার আগেই যে যুদ্ধ জয় করতে হয়, সেটা সোলায়মান দেখিয়ে দিয়েছেন। সোলায়মান একজন প্রকৃতি সুলতান সে দেখিয়ে দিয়েছে। হয়তো শেষটা সবসময় সুন্দর হয় না,কখনো বিষাদময় হয়। সোলায়মান চেয়েছিল শ্বশুর সুলতান মাহমুদ এবং খিজির খা এর পরিণতির প্রতিশোধ নিতে। রণক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বুদ্ধির প্রমাণ সোলায়মান কৌশলেই বুঝা যায়।
★দ্বিতীয় পর্বের রঞ্জিত ঘোড়া, এখানে যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়ার ব্যাপকতা এবং শূর শাসন আর বাংলার সুলতানের লড়াই উজ্জীবিত হয়েছে।গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো বিচারালয়ে বিদ্রোহী সুলতান সোলায়মান এর বিচার পর্ব। আমি নিশ্চিত পাঠক এইখানে শিহরিত হবেই এবং তার সাথে মনে গেঁথে নিবে সোলায়মানকে। এই অংশ আমার সবচেয়ে পছন্দের এবং সোলায়মান খানকেও মনে রাখব বহুদিন। মুমূর্ষু একটি মনিবভক্ত ঘোড়া মালিকের বিপদে রাজ্য জয়ী আতর্নাদ করে পুরো রাজ্যকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে সেটা অনুভব করে শিহরিত হয়েছি। জাত ঘোড়া যুদ্ধে ক্ষেত্রে জয়লাভে অন্যতম অস্ত্র।
★তৃতীয় পর্ব পারস্যের শেকল, বড় করুণাময় একটি অংশ। বাবা সোলায়মান খান এর নির্মম পরিণতির পর ঈশা আর তার ভাই ইসমাইল খানের দাসত্বের যাত্রা। ইতিহাস বীরদের যে এতো নিষ্ঠুর শৈশব থাকতে পারে সেটা এই বই পড়ে বুঝে গেলাম। বাবার মৃত্যুর পর অভিভাবক হারা দুই কিশোরের দাস হয়ে বঙ্গ থেকে খোরসানে যাত্রা অনেক এডভেঞ্চার থ্রিলারের মতো। ছোট ভাইয়ের প্রতি বই ভাই ইসমাইলের যে স্নেহ, কোমলতা সেটা চমৎকার ভাবে দেখানো হয়েছে। কাফেলা যাত্রায় একের পর এক নতুন জায়গা আর বিপদে সম্মুখীন হওয়া ছোট্টো ঈশার অবুঝ অনুভূতি আপনাকে ভেতর থেকো নাড়া দিবেই। ইসমাইল যে খুব ভালোভাবে বুঝে ছিল °দাস মানে তাদের মতো দাসরাই শুধু তাদের বন্ধু, বাকি সবজন তাদের মালিক°। ইসমাইল,ঈশা দুই ভাই উপলব্ধি করেছিল নসীব আর ওয়াক্ত যেকোনো সময় পাল্টে যায়, এর উপর কারোর হাত নেই। কিছুদিন আগেই তারা সুলতানের প্রাসাদে লালিত আদরের পুত্র ছিল, আজ স্রেফ গোলাম বাদে কিছুই না। লেখক তৎকালীন দাসপ্রথা আর তাদের প্রতি ব্যবহার খুব নিখুঁত আকারে সাজিয়েছেন।
সিদ্দিক আহমেদ এর লেখা আগেও পড়েছি এবং জানি তিনি কতটা গুণী লেখক। এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে যে তিনি সময় নিয়েছেন এবং ইতিহাসের পাতায় যে বিচরন করতে হয়েছে সেটা লেখাতেই বুঝা যায়। বইয়ের শেষটা ঈশা খাঁ এর ভবিষ্যত নিয়ে ঈঙ্গিত। ঈশা এখানে একজন বালক দাস ছাড়া আর কিছু নয়। লেখক মধ্যযুগের গাম্ভীর্যের যে একটা পরিবেশ আছে সেটা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
বইয়ের প্রোডাকশন ও অন্যান্য:
ঋদ্ধ প্রকাশনীর প্রথম বই হিসেবে দারুণ কাজ দেখিয়েছে। প্রচ্ছদ টা দেখলেই বোঝা যায় ভেতরে তলোয়ারের বিদ্ধ কাহিনী রচিত আছে। পেজে হালকা নকশা দিয়ে আকর্ষণীয় করেছে। তাছাড়া বইয়ে বানান ভুল খুব একটা চোখে পড়েনি, বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা দারুণ কাজ করেছে।
বইটি কেন পড়ব:
ইতিহাসের প্রতি কার না আগ্রহ আছে। সেই সেকালের সংস্কৃতি, বিভিন্ন প্রচলন সম্পর্কে জানাটা ভালো ছাড়া মন্দ না। যদি বাস্তব চরিত্রকে ফিকশন আকারে পাওয়া যায় তাহলে মজাই অন্যরকম। আপনি স্বর্ণবাজ পড়ছেন এবং কল্পনা করছেন এটা এক সময় বাংলায় ঘটেছিল। পড়ার সময় মনে হবে মধ্যযুগে গিয়ে আমি বাংলার অতীত চোখের সামনে দেখছি। বইটার প্রতি পদে আপনি ষড়যন্ত্রে এবং ক্ষমতা পাওয়ার ব্যাকুলতা দেখতে পাবেন। একজন বাবার লড়াই, একজন ভাইয়ের প্রতিশ্রুতি যেন ভয়ংকর সুন্দর ভাবে রচিত হয়েছে।
বাংলার ইতিহাসের এত সুন্দর ও নিখুঁত বর্ণনা আগে কোন বইয়ে এভাবে পড়িছি বলে মনে পড়ে না। ইতিহাস শুনলেই যেমন কাঠখোট্টা বিষয় মনে হয়, সেই ধারণাকে পুরোপুরি পালটে দিয়েছেন লেখক। বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়ে রচিত এই বইয়ে বার ভুইয়াদের অন্যতম ঈসাখাঁ এর বাল্যকাল ও পিতা সোলায়মান খানের কাছে বড় হয়ে ওঠার ঘটনাবলী উঠে এসেছে। সেই সাথে রাজ্যের কুটনৈতিক অস্থিতিশীলতা একের পর এক শাসকের উথান পতনের বর্ণনা আর সোলায়মান খানের মত ব্যাক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রতিটি যুদ্ধের দৃশ্য এত নিখুঁত করে বর্ণনা করেছেন লেখক যেন মনে হচ্ছে কোন হলিউড সিনেমা বা মেগাসিরিজ দেখছি! বইয়ের সেরা উক্তিঃ নিয়তি ও ওয়াক্ত কখন যে কার বদলে যায় তা কেউ বলতে পারে না। আসলে এই একটি উক্তি দিয়েই পুরো বইয়ের সারমর্ম করা যায়, মুহুর্তের মধ্যে মানুষের বিচক্ষণতা ও ভাগ্যের খেলায় ঘটনার পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, আজ যে রাজা কাল তার ফকির হয়ে যাওয়া এ সব ই কি নিয়তি নয়? ঈসাখাঁর বাল্যকাল এমন সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক যে তা পরবর্তী বইয়ের জন্য একটা ভালো রকম ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। আশাকরি খুব শীঘ্রই ২য় পর্ব হাতে পাবো!
যুদ্ধ আবেগহীন, মায়াহীন। যুদ্ধে বন্ধু বলতে কিছু থাকেনা। ইতিহাস প্রেমী আমার কাছে বরাবরই প্লট হিসেবে যুদ্ধ বেশ লোভনীয় । বিশেষ করে মধ্যযুগীয় যুদ্ধ,তীর- তলোয়ারের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ গুলো বেশ ইন্টারেস্টিং। যুদ্ধের ধরন, যুদ্ধের ট্যাটিকস, যুদ্ধে উভয় পক্ষের এটিটিউড, দূর্গ অবরোধ মানে সবকিছু।
যাই হোক সিদ্দিক আহমেদের লিখা হিস্টোরিকাল ফিকশন স্বর্নবাজ।হিস্টোরিকাল ফিকশনের একটা ব্যাপার আছে। কাহিনী শতভাগ সত্য না হলেও ক্যারাক্টারগুলো জীবন্ত এবং পড়ার সময় এই সত্য-কল্পনাতীত কাহিনীর মিশেল আপনার মনস্তত্বে গভীর প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
যাই হোক কাহিনীটি ১৬০০ সালের পূর্বে। বঙ্গে মোঘলদের অনুগত গৌড়ের অধিপতি মামুদ শাহ কে কৌশলে পরাজিত করে শের শুরী দিল্লির মসনদ হাতানোর পায়তঁরা করেন। নানা ষড়যন্ত্রে দিল্লির সুলতান হুমায়ুনকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে গোটা হিন্দুস্তানের শাহ বনে যান শের শূরি। এদিকে মাহমুদ শাহের জামাতা সোলায়মান খান বঙ্গে বিদ্রোহ করে বঙ্গ সহ গোটা ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর। তাকে ঘিরেই মূলত কাহিনীর শুরু। এই সোলায়মান খান মূলত বিখ্যাত বারো ভূঁইয়ার নেতা ঈসা খাঁর পিতা।
লেখকদের হাতে বোধহয় একটা অদ্ভূত যাদু থাকে। কোনো ক্যারাক্টারের প্রতি এমন অদ্ভূত মায়া জন্মিয়ে দেয় যে একসময়ে এসে আপনি বলতে বাধ্য আপনার প্রিয় হয়ে উঠা ক্যারাক্টার টি চরম অপরাধ করছে অথচ আপনি কোনোভাবেই তার দূরবস্থা কামনা করতে পারবেন না।
যাই হোক, বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। একটা সুন্দর উত্তেজনাময় গতি নিয়ে বইয়ে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম। শেষে দিয়ে ঈসা খাঁ আর তার ভাই ইসমাইলের জন্য বেশ খারাপ লেগেছে। একটানা পড়ে গিয়েছি। লেখককে ধন্যবাদ। পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা.... rating:3.45
এক কথায় মাখন। দারুণ লেগেছে। প্রি অর্ডারের অটোগ্রাফে লেখক বানান ভূল করেছেন আর বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠা মিসিং ছিলো। সময় পেলে একটা রিভিউ লেখার চেষ্টা করবো।
"নসিব আর ওয়াক্ত কখন যে বদলে যায়, তা কেউই বলতে পারে না ।" - সোলায়মান খান
স্বর্ণবাজ || সিদ্দিক আহমেদ
দিল্লীর মসনদে হুমায়ুনকে বিতাড়িত করে যখন চেপে বসেছেন শের খান শূরি, ঈসা খাঁর পিতা সোলায়মান খানের মাথায় তখন একটাই চিন্তা - পুরো বঙ্গের সুলতান হবেন৷ আর সেজন্য প্রথমেই শের খানের বিরুদ্ধে করতে হবে বিদ্রোহ৷
কয়েক দফা যুদ্ধ হয়ে গেল দুই পক্ষে৷ মধুর ভাণ্ডে করে সোলায়মান খানের শিবিরে কী পৌঁছালো? কামানের আঘাতে মারা পড়ল শত শত যোদ্ধা৷ উন্মত্ত হাতি পিষে ফেলল পক্ষ-বিপক্ষের সবাইকে৷
এদিকে সোলায়মান খানের দুর্গে কী ষড়যন্ত্র বয়ে গেল? আততায়ীর ছায়া দ্বারে দ্বারে৷ তিনি কীভাবে মোকাবেলা করবেন সব? তার পুত্রদ্বয় ঈসা আর ইসমাইলের জীবন কোন স্রোতে প্রবাহিত হবে? বারো ভূঁইয়াদের মাঝে সবচেয়ে প্রতাপশালী এবং রহস্যময় চরিত্র ঈসা খান। ছোট্ট বালক থেকে সমগ্র বাংলার সালতানাতের ভীত কাঁপিয়ে দেওয়া প্রবল প্রতাপশালী ঈসা খান হয়ে ওঠার পেছনের এক মহাকাব্যিক যাত্রা উঠে এসেছে এই বইয়ে। মধ্যযুগের কূটনীতি ভরা রোমাঞ্চকর এক যাত্রায় স্বাগতম৷
পাঠ প্রতিক্রিয়া ----------------------------- আমার পছন্দের তিনজন লেখকের মধ্যে সিদ্দিক আহমেদের স্থান দ্বিতীয়তে । তার লেখার ভক্ত হয়ে উঠি দশগ্রীব ও ধনুর্ধর পড়ার মাধ্যমে । সেই সূত্র ধরেই যখন শুনলাম লেখক নতুন আরেকটি হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার লিখেছেন তখন আর দেরি না করে জলদি প্রি অর্ডার করে ফেলি বইটা । কিন্তু আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি বইটা আমার ভালো লাগেনি । হয়তো প্রিয় লেখককে নিয়ে অনেক বেশি উচ্চাশা ছিল তাই ই এমনটা হয়েছে । যাহোক ভালো না লাগার কারণগুলো একে একে নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করবো । প্রথমের ভালোর পাল্লাটা শেষ করা যাক । তারপর খারাপে আসা যাবে । এই বইয়ে ভালো লাগার মধ্যে লেখকের বর্ণনাভঙ্গির অবশ্যই তুলে ধরতে হবে । বরাবরের মত এই বইতেও লেখকের ডিটেইলিং ছিল বেশ ভালো । ঘটনাগুলো চোখের সামনে ফুটে ওঠার মত । এছাড়া ভাষাশৈলী ও পটভূমি বর্ণনাও বেশ ভালো লেগেছে ।
এবার মন্দের দিকে আসা যাক । এই বইটাকে আমি থ্রিলার ট্যাগ দিতে পারলাম নাহ অন্তত ।আমি কিন্তু মোটেই পাতায় পাতায় থ্রিল ও সাসপেন্স চাচ্ছি না কিন্তু । আমি বলতে চেয়েছি থ্রিলারের ন্যূনতম যে কন্ডিশন - পরের পাতায় কী হল সেটা জানার আগ্রহ লেখক আমার মধ্যে তৈরি করতে পারেননি । উল্টো আমার কাছে বইটা আগাগোড়া গতবাঁধা ইতিহাসের বই মনে হয়েছে । গল্পের থেকে ইতিহাসে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন লেখক । ফলাফলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা আমি শুধু ইতিহাস ই পেয়েছি । না ছিল কোনো টার্ন, না কোনো কৌতূহলোদ্দীপক পয়েন্ট । আমরা ধনুর্ধরে যেমনটা দেখেছি কোশলের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলীর সমান্তরালে পাঞ্চালের প্রসেনজিতের কূট বুদ্ধির গল্পের মাধ্যমে বইটিকে বিল্ডাপ দেওয়া হয়েছে । সাধারণত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলারে এভাবে সমান্তরালে গল্প এগোলে পাঠকের আগ্রহ বজায় থাকে । কিন্তু স্বর্ণবাজ বইটিতে গতবাঁধা ইতিহাস বইয়ের মত একইভাবে বই এগিয়েছে । (আমি মোটেই একটা বই দিয়ে অন্যকে জাজ করছিনা । স্রেফ মতামত জানালাম ।) এক কথায় বলতে গেলে স্বর্ণবাজের লেখনশৈলী ভালো হলেও এক্সিকিউশনের বড্ড অভাব ছিল পুরো বইজুড়েই । অথচ প্রথম পর্বটা চাইলেই সোলায়মান খানের সমান্তরালে আরেকটা অধ্যায়ে শত্রুপক্ষের মনস্তত্ত্ব তুলে ধরা যেত । এতে বইতে পাঠকের আগ্রহ বজায় থাকতো । যাহোক এইতো গেল প্রথম কিস্তির কথা । দ্বিতীয় কিস্তি আমার কাছে নিতান্ত ধীরগতির লেগেছে এবং তৃতীয় কিস্তিতে রীতিমত একটানা জার্নির বিবরণে বিরক্ত হয়েছি । প্রথম দুই কিস্তি চলনসই হলেও তৃতীয় কিস্তি আমার একদম ই পছন্দ হয়নি । ঈসা-ইসমাইলের মধ্যে বন্ডিং ডেভেলপ করতে এতটা পৃষ্ঠা খরচ না করলেও চলত । এবারে এন্ডিং - বইয়ের সবথেকে দুর্বল পয়েন্ট । আল্টিমেটলি স্বর্ণবাজ বইটির goal কী ছিল আমি বুঝলাম না । মানলাম এটা একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে যার পরের আরো পর্ব আসবে । কিন্তু তাই বলে এমনভাবে বইয়ের এন্ডিং টানা হয়েছে যেটা এন্ডিং এর দাবিদার ই নয় । স্বর্ণবাজ স্রেফ একটা গল্পের শুরু আমি জানি । কিন্তু তাই বলে সেই শুরুরও একটা পরোক্ষ এন্ডিং তো থাকা চাই! স্বর্ণবাজ এখানে পুরোপুরি ব্যর্থ ।
আমি শুরুতেই বলেছি সিদ্দিক আহমেদ আমার প্রিয় লেখকদের একজন । হয়তো তার কাছে এক্সপেক্টেশনের পারদটাও থাকে অন্য উচ্চতায় তাই ই হয়তো বইটা আমার ভালো লাগেনি । আর বইয়ের প্রোডাকশন বেশ ভালো । পৃষ্ঠার মান, বাঁধাই, প্রচ্ছদ চমৎকার । তবে সম্পাদনা ও মুদ্রনজনিত অনেক ভুল চোখে পড়েছে । আশা করি সেগুলো পরের এডিশনে ঠিক হয়ে যাবে ।
এই ছিল স্বর্ণবাজ নিয়ে আমার আলোচনা ।
এক নজরে, বই: স্বর্ণবাজ জনরা : ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখক: সিদ্দিক আহমেদ প্রকাশনী: ঋদ্ধ প্রকাশ প্রচ্ছদ: ফরিদুর রহমান রাজীব পৃষ্ঠা: ২৮৬ মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা
বাদশাহ হুমায়ূন দিল্লীর সিংহাসন থেকে শের শাহ শূরীর তাড়া খেয়ে পারস্যে পলাতক, অন্যদিকে বঙ্গে তখন শের শাহের পুত্র জালাল খানের রাজত্ব। শের শাহের মৃত্যুর পর জালাল খান দিল্লীর মসনদে বসলে বঙ্গে থেকে যান জালাল খানের সেনাপতি তাজ খান ও দরিয়া খান। বঙ্গের প্রাক্তন সুলতান মাহমুদ শাহ (শের শাহের কাছে পরাজিত) এর মেয়ে জামাই সুলতান সোলায়মান খান শূর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বঙ্গের অধিপতি হওয়ার বাসনায় বিভোর। মোটাদাগে এই হলো কাহিনি পরম্পরা।
শেষের দিকের ইসমাইল আর ঈসার ���পহরণে��� বর্ণনাটা একঘেয়ে। এছাড়া বাদবাকি অংশটা চমৎকার।
স্বর্ণবাজের কাহিনি অসমাপ্ত। পরের অংশ পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
ঋদ্ধপ্রকাশের প্রডাকশন নিয়ে আমি প্রচণ্ড হতাশ। প্রতিটা পৃষ্ঠা দুই হাতে চেপে ধরে পড়া লেগেছে। প্রচুর বানান ভুল। এমনকি এক চরিত্রের জায়গায় অন্য চরিত্রের নামও চলে আসছে!