সেরা গল্প আলমগীর তৈমূরের "ইয়াঘুত রত্ন ভান্ডার"; সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পুরান ঢাকা, কাঠ কল, ক্ষয়ে যাওয়া বনেদি পরিবার, ধ্বংসপ্রায় প্রাসাদ, প্রাগৈতিহাসিক কালের এক অতিপ্রাকৃতিক শক্তি আর অর্থের প্রতি মানুষের চিরায়ত লোভ ; সবমিলিয়ে দুর্দান্ত একটা গল্প।
দ্বিতীয় সেরা গল্প ওয়াসি আহমেদের " ক্যামেলিয়া হাতে এই সন্ধ্যায়" মুগ্ধ করেছে। পরিবারের মাঝেই থেকে যাওয়া অন্য কোনোখানের অন্ধকার শক্তির গল্প। লেখকের ভাষা আমার বরাবরই পছন্দের, এখানেও সেই মোহনীয় ভাষা পেলাম।
জাহিদ হোসেনের "আমার দাদা কাক বিক্রি করতেন" গল্পটাও দুর্দান্ত লেগেছে। কাক, স্বশিক্ষিত এক মানুষ, বিশ্বখ্যাত এক দার্শনিক আর বাইবেলের টাওয়ার অভ ব্যাবেল সবমিলিয়ে গল্পটায় বেশ চমক আর নতুনত্ব আছে।
এনামুল রেজার ভ্যাম্পায়ার ফিকশন "খেকো" বেশ ভালো। মাঝখানে প্রেম প্রেম ব্যাপার একটু কম হলে দুর্দান্ত হত। এদিক দিয়ে আবার শরীফুল হাসানের ভ্যাম্পায়ার ফিকশন "তৃষ্ণা" একদম যাচ্ছেতাই, ভ্যাম্পায়ার নিয়ে ফাতরামি।
নাজিম উদ্দিনের "শাহ আলী স্মৃতি পাঠাগার" রহস্য গল্প হিসেবে বেশ ভালো, এটাকে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত গল্পের কাতারে না ফেলাই উচিৎ বলে মনে হয়েছে। একই কথা বলা যায় ফারজানা রাইসার "তুলকা" আর যারিন তাসনিম প্রমির "মেমেন্ত মরি" নিয়ে। এই গল্পদুইটাও দুর্দান্ত, মানব মনের অবচেতন অন্ধকার দিকের গল্প, অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃতিক না।
নাবিল মুহতাসিম এর "পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন" গল্পটা অনেক ভালো শুরু করেও শেষমেশ হতাশ করলো।
অতিপ্রাকৃতিক গল্প লেখায় সিদ্ধহস্ত বাপ্পী খান আর তানজীম রহমান দুইজনই খুব হতাশ করেছেন। বাপ্পী খানের "অসমাপ্ত" গল্পটা একেবারেই চিরাচরিত মান্ধাতা টাইপের অলৌকিক গল্প, আর তানজিম রহমান তো কোনোরকম দায়সারা ভাবে দুই চারলাইনের ১৬ টা গুচ্ছগল্প লিখে দিয়েছেন বলে মনে হয়েছে।
সবচেয়ে বাজে গল্প সালমান হকের "১৩ নং আতিশখানা লেন"। আলিফ লায়লা আর ফ্যান্টাসির খিচুড়ি বানাতে গিয়ে একদম ল্যাজেগোবরে করে ফেলেছেন গল্পটা।
ওয়াসিফ নূরের " ল্যাম্পপোস্টের ভূত" গল্পটা মজাই লেগেছে, ল্যাম্পপোস্টের মত খুব চেনা প্রেক্ষাপটেও যে টানটান চমৎকার ভৌতিক গল্প লেখা যায় তার চমৎকার উদাহরণ এই গল্প।
নিয়াজ মেহেদির "রূপান্তর" গল্পটাও বাজে, একটা কাহিনি দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে করতে হুট করে একটা বাজে ফিনিশিং।
নিলয় নন্দীর "হাড়" পড়া শেষ করেছি অতৃপ্তি নিয়ে। দুর্যোগের রাত, প্রত্যন্ত রাতে গল্প কথকের সাথে কবিরাজ আর পুলিশ সহযাত্রী, বজ্রপাতে মৃত মানুষের গল্প, জনহীন গ্রাম্য বাজার সবমিলিয়ে এত সুন্দর পরিবেশ, প্রেক্ষাপট আর চরিত্র দাঁড় করিয়ে এরকম নিরীহ এন্ডিং মন থেকে মানতে পারিনি।
একই ব্যাপার দীপিকা মজুমদারের "শাহ-উদ-দৌলার ইঁদুর" গল্পটাতেও; নির্জন বাড়িতে রহস্যময় লাস্যময়ী রমনী, হাজার হাজার ইঁদুর এরকম দুর্দান্ত প্রেক্ষাপট তৈরি করেও চিরাচরিত অপরাধ আর পাপের জগতে গল্পটা পার্ক করে ফেললেন। হতাশ হয়েছি।
ইশরাক অর্নবের "সফরনামা অথবা মাঝে মাঝে তব" গল্পে অতিপ্রাকৃত এলিমেন্টের বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছি, আরেকটু রাশ টানতে পারলে বেশ ভালো হত।
বাকি গল্পগুলো সবই গড়পড়তা, তেমন একটা ভালো লাগেনি।
'অতীন্দ্রিয় : অতিপ্রাকৃত গল্প সংকলন'-এর ধারাবাহিকতায় আফসার ব্রাদার্স থেকে দিতীয়বার বেরোল 'অলৌকিক'। প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার এবং সালমান হকের সম্পাদনায় আরেকটা দারুণ গল্প সংকলন, এবং এবারেরটা ভালো লেগেছে আগেরবারের চাইতেও বেশি। প্রডাকশন কোয়ালিটি সন্তোষজনক, প্রচ্ছদ দারুণ। পুরো বইয়ে ৩৬টা গল্পের মাঝে উল্লেখযোগ্য ১৫টা গল্পের রিভিউ দিলাম সংক্ষেপে।
মেমেন্ত মরি : যারিন তাসনিম প্রমি'র লেখা এই প্রথম পড়লাম, এবং আমি মুগ্ধ। আগাগোড়া একরকম টোন বজায় রেখে একটা সূক্ষ্ম রহস্যময় যাদুবাস্তব আবহ ধরে রেখেছিলেন লেখক। গল্পের পরিস্থিতি বা পারিপার্শ্ব নির্মাণ করা হয়েছে নিপুণভাবে। লেখিকার আরো লেখা পড়ব নিঃসন্দেহে। প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নোনা : আবারো কোনো লেখকের লেখা প্রথম পড়েই মুগ্ধ হলাম। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার, প্রান্তিক জীবনযাপন আর যাতায়াত ব্যবস্থার অবিকল ছবি নির্মাণ, আর নিতান্ত মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাকে উপজীব্য করে গায়ে কাঁটা দেওয়া গল্প লিখেছেন লেখক। অনবদ্য।
পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন : 'শ্বাপদ সনে'র প্রটাগনিস্টের চাইতে পার্শ্ব চরিত্র শিপলুর গল্পগুলোই বেশি দারুণ লেগেছিল আমার কাছে। ওই শিপলুই ফেরত এসেছে আবার নব্বই দশকের প্রেক্ষাপটে, এই গল্পটায়। শিপলুর আধিদৈবিক তদন্তগুলো যেমন অভিনব আইডিয়া নিয়ে আসে, তেমনি, লেখকের স্টোরিটেলিং-এর গুণে খুবই সুপাঠ্য হয়ে উঠেছে এই গল্পটা।
খেকো : এনামুল রেজা'র গল্প-ও আমার এই প্রথম পড়া। খুব গ্রাফিক কিছু ছিল না, কিন্তু আবহ দিয়ে গায়ে কাঁটা দিইয়েছেন লেখক, সাথে শূণ্য করে দেওয়া একটা অনুভূতি। দারুণ লেগেছে পড়তে।
ইয়াঘুত রত্ন ভান্ডার : আলমগীর তৈমুর একজন বস মানুষ, ওনার নামের মান রেখেছেন এই গল্পে। বুড়িগঙ্গার ওইপাড়ের জিঞ্জিরায় গল্পের প্রেক্ষাপট সাজিয়েছেন, বর্ণনা তুলে এনেছেন চোখে ভাসার মতো। সাথে মিশিয়েছেন মিথ, মধ্যপ্রাচ্যের বিস্মৃত দেবতাকে পুরান ঢাকার স্থানান্তরিত অভিজাত পরিবারের হাত ধরে ঢুকিয়েছেন গল্পে। 'স্টোরি'-টা এখানে দুর্বল, এইছাড়া বর্ণনা ভালোই লেগেছে।
১৬ নম্বর বাড়ি চেনার তেরটি উপায় : তানজীম রহমান যে ১৩টি দুয়েক লাইনের গল্প লিখেছেন, এই ধরণের গল্পকে বলে মাইক্রোফিকশন। এরা বাংলা অণুগল্পের মতো না। বরং জাপানি হাইকুর সাথে কিছু তুলনা দেওয়া যায় এদের। এই তেরোটা'র মাঝে একটা বুঝতে পারিনি, দুতিনটা বেশ ভালো লেগেছে। গল্পসংকলনে মাইক্রো ফিকশন যোগ করাটা বৈচিত্র এনেছে।
রাত্রি ঘনঘোর : The Dreamers সিনেমার প্রসঙ্গ টানলে খুব আকাশ-পাতাল হয়ে যাবে ব্যাপারটা, তবে সিনেমার সমাপ্তির মতো অনুভূতি হয়েছিল আমার, একটা দিশাহীন শূণ্য দুর্বোধ্য পদযাত্রা। 'ফিয়ার অব আননোন' কে এনেছেন লেখক। গতবছরের অতীন্দ্রীয়তে লেখকের একই জনরায় লেখা 'ঘাসভূমি' গল্পটা ভালো না লাগলেও, এবারেরটা অনুভব করতে পেরেছি। বেশ।
ছায়ার সওদা : অল্প বিস্তৃতিতে গল্প জমিয়ে দেওয়ার কাজ করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। যে আইডিয়া এনেছেন, সহজ এবং চমৎকার। জম্পেশ লাগবে সুনির্মিত এই গল্পটা পড়তে।
আমার দাদা কাক বিক্রি করতেন :এই বইয়ের সবচে দারুণ কাজগুলোর একটা। মিথলজি, ইতিহাস। ঈশ্বরের খোঁজ। আটকে রাখার মতো একটা স্টোরিটেলিং। আর সবচে সেরা তাঁর যবনিকাপাত। পাঠককে পুরো গল্পটা মনে করিয়ে দিয়ে, একটা পূর্ণতার স্বাদ দিয়ে যাবে।
প্রতিপদ : এই সংকলনে মাহমুদুর রহমানের লেখা দেখে অবাক হয়েছিলাম। ইতিহাসের বাইরে তাঁর কোনো লেখা এর আগে পড়িনি। এই অব্দি রঙ মিলান্তি আর রুসওয়া এসেছে ইতিহাসের বাইরে। লেখক গল্প বলিয়ে হিসেবে কতটা পাকাপোক্ত, তার নজির মিললো এই গল্প পড়ে। তামাম যত ক্লাসিক লেখক গ্রামের উঠোনে পাঠককে বসিয়ে বাঙালীর গ্রাম্য মনস্তত্ত্বের শেকড়ে টান দিয়েছেন, তাদের রেখে যাওয়া কাজের যোগ্য সম্মান, এই 'প্রতিপদ'।
উদক : পছন্দের গল্পের লিস্টে সবচেয়ে দুর্বল গল্প এটা। তাও যে জনরায় কাজ করেছেন, সুবিচার করেছেন সেটায়। শেষে অবাক করে দেওয়ার মতো ভালো।
যেভাবে গল্পটা হয়ে উঠলো :"All that we see or seem is but a dream within a dream." ~ এডগার এলান পো'র উক্তি। যে লেখকরা আস্ত একেকটা জগত তৈরী করেন, স্বয়ংসম্পূর্ণ একেকটা নিজস্ব নিয়মাবদ্ধ জগত, তাঁদের নামে ছোট্ট শ্রদ্ধার্ঘ্য , গল্পটা। যে দুনিয়ায় বসে গল্পটা পড়ছেন সেটা আসল তো, নাকি গল্পের ভেতরের গল্প? এটাও সবথেকে সেরা গল্পগুলোর আরেকটা।
ক্যামেলিয়া হাতে এই সন্ধ্যায় : লেখকরা সবসময়েই নানান জায়গার মিথ, ইতিহাসকে বাংলাদেশে টেনে আনেন। কিন্তু ওয়াসি আহমেদ রাফি ভাইয়ের এই গল্পে জাপানি একটা মিথকে বাংলাদেশের বলে মনে হয়েছে। এত সুন্দর মুনশিয়ানা না পড়ে দেখলে চলে না।
স্মৃতিঝিঁঝিঁ : আমি এটা দেখে খুশি হয়েছিলাম যে প্রথম প্রকাশিত বই 'জাদুকর' লেখার পর থেকে লেখক অনেক পরিণত হয়েছেন লেখনী-তে। অনবদ্য একটা গল্প।
শাহ আলী স্মৃতি পাঠাগার : পড়ার সময় খুব দারুণ লেগেছিল। এক মাস পর এসে প্রায় সব ভুলে গেছি। কিন্তু পড়তে ভালো লেগেছে। গল্পটা এমনই।
রোগ : নিঃসন্দেহে, এই বইয়ের তাজমনি [বা ক্রাউন জুয়েল]। প্যান্ডেমিকের প্রেক্ষাপটে গল্প শুরু করেছিলেন লেখক, তাতে কলকাতার জীবনযাপনের ষোলআনা স্বাদ টাটকা বিদ্যমান, গল্পে অবাস্তব ঢুকলো, রহস্যজনক হয়ে উঠতে লাগলো, যখন কুকুরের মতো অনুভূতির গন্ধ পেতে লাগলেন মূল চুরিত্র। তাও শুধু অনুভূতি না, মৃত্যু এবং খুনের গন্ধও পেতে লাগলেন। গল্পের নির্মাণ অনবদ্য। খুব যত্নশীল গতিতে গল্প এগিয়েছে, পাঠকের আগ্রহ চড়িয়েছে, কমিয়েছে। এটা সেসব গল্পগুলোর একটা যার 'স্টোরি'-টা বেশ দারুণ লেগেছে। থ্রিলার পাঠক হোক আর ফ্যান্টাসি/হরর পাঠক, পড়ে আনন্দ পাবেন।
“I became insane, with long intervals of horrible sanity.”― Edgar Allan Poe - ❛অলৌকিক❜ - ❛অলৌকিক❜ বইটি মূলত একটি অতিপ্রাকৃত ধারার গল্প সংকলন। গতবছরের একই ধারার "অতীন্দ্রিয়" গল্প সংকলনটি প্রকাশের পরে এবারে ৩৬ জন লেখকের ছোট-বড় ৩৬টি গল্প এবং আর্টিকেল নিয়ে এই গল্পসংকলনটি "আফসার ব্রাদার্স" থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। - শাহ আলী স্মৃতি পাঠাগার– মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: শাহ আলী, একজন নিয়মিত বই ক্রয় করা মানুষ। অফিস থেকে ফেরার পথে প্রায় প্রতিদিনই বই কেনে সে। সেরকমই একদিন অফিস থেকে আসার পরে নতুন এক বই বিক্রেতার সন্ধান পান তিনি। তার সাথে দেখা হওয়ার পরে শাহ আলীর জীবনযাত্রা সম্পুর্ণ পাল্টে যায়। অনেকটা গথিক হরর ঘরানার গল্পটি সংকলনের প্রথম গল্প বেশ ভালোই লেগেছে। - তৃষ্ণা– শরীফুল হাসান: কুদ্দুস, পেশায় একজন দোকানদার, যদিও তার নেশা মাছ ধরা। কুদ্দুসের খালাতো ভাই খালেক কে নিয়ে প্রায়ই মাছ ধরতে বের হয় সে। একদিন মাছ ধরার জন্য খালেককে নেওয়ার জন্য তার বাসায় গেলে কুদ্দুস জানতে পারে যে কুদ্দুস সকালে বের হবার পরে আর ঘরে আসেনি। তাকে খোঁজার জন্য এক পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে যাওয়ার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে গল্পটি লেখা। কিছুটা প্রেডিক্টবল হলেও যে ঘরানার গল্প এটি সে হিসেবে খারাপ লাগলো না। - পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন– নাবিল মুহতাসিম: প্যারানরমাল ইনভেস্টিগটর শিপলুর কাছে আমিন নামে একজন আসে তার বন্ধুর অনেকগুলো চিঠি পেয়ে। সেই চিঠিগুলোর রহস্য উদঘাটনের জন্য তারা দুইজন রওনা দেয় দিগন্তজোড়া হাওড়ের পাশের এক বিরাট জমিদারবাড়ীতে। হরর গল্প হিসেবে সেটিং, ক্যারেক্টারাইজেশন থেকে অ্যাটমোস্ফিয়ার সবই পারফেক্ট এই গল্পের, শেষটাও দারুণ লাগলো। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত একটা গল্প, সংকলনের অন্যতম সেরা বলবো আমি। - স্মৃতিঝিঁঝিঁ– মুশফিক উস সালেহীন: এক কিশোরের কবরস্থানে যাওয়া এবং সেখানে মীর ররুজ নামের অদ্ভুত এক লোকের সাথে দেখা হওয়া নিয়ে গল্পটি লেখা হয়েছে। গল্পটির প্রিমাইজ প্রমিসিং লাগলেও যেভাবে লেখা হয়েছে তা ঠিক মনে ধরলো না। - আজ মৃত্যু হবে– আবরার আবীর: মনসুর এবং হাজারী নামের দুই লোকের কয়েকজন ভয়াবহ ব্যক্তির হাতে হাতে ধরা পড়া নিয়ে গল্প। খুবই বিলো অ্যাভারেজ লেগেছে গল্পটিকে। - ক্যামেলিয়া হাতে এই সন্ধ্যায়– ওয়াসি আহমেদ: স্মৃতি বিষয়ক বেশ কিছু জটিল রোগে ভোগা এই গল্পের ন্যারেটর জাপানে বসে তার ডাক্তারকে হঠাৎ মনে পড়া শৈশবের এক স্মৃতি শোনায় এবং সেটিই এই গল্পের মূল কাঠামো। বাংলাদেশের সাথে জাপানিজ মিথোলজির অদ্ভুত সংমিশ্রণে লেখা হয়েছে গল্পটিকে। গল্পের লেখনশৈলী বেশ ইউনিক, পপ কালচারের নানা ধরনের ব্যপারও উঠে এসেছে গল্পে, শেষটাও অতিপ্রাকৃত গল্প হিসেবে চমৎকার। সংকলনের আরেকটি খুবই ভালোমানের গল্প বলা যায় এটিকে। - তুলকা– ফারজানা রাইসা: এক কিশোরীর বিড়াল হেটার থেকে বিড়াল প্রেমী হয়ে উঠার গল্প। সেই বিড়ালটি মারা যাওয়ার পরে কিশোরীটি বিড়ালকে দেখতে থাকে এবং তা নিয়েই গল্প আগাতে থাকে। বিলো অ্যাভারেজ গল্প, বিলো অ্যাভারেজ রাইটিং। - যেভাবে গল্পটা হয়ে উঠলো– মাশুদুল হক: পুলিশ অফিসার সেলিম জোয়ার্দার এবং গল্পকার রশীদ প্রামাণিকের মধ্যকার কথোকথনের মধ্য দিয়ে গল্পটি এগিয়েছে। অনেকটা ম্যাজিক রিয়ালিজম ঘরানার গল্পটি বেশ ইউনিক হলেও কিছুটা দুর্বোধ্যও লেগেছে। - অসমাপ্ত– বাপ্পী খান: রাফাত, একজন সাবেক চলচ্চিত্রকার। তার স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণের জন্য একটি ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ভাগ্যচক্রে তার হাতে এসে পড়ে এক দারুণ পান্ডুলিপি। কিন্তু সেই ছবি বানাতে গিয়ে আসতে থাক একের পর এক বিপত্তি। দারুণ সেটিং এবং টানটান লেখনশৈলীর এই গল্পটি সব ধরনের পাঠকদের ভালো লাগার কথা। আমার নিজেরও খুবই ভালো লেগেছে পুরো গল্পটি, সংকলনের আরেকটি মানসম্পন্ন গল্প বলা যায় এটিকে। - নিঝুমপুরের নিঝুম রাত– তানজিরুল ইসলাম হিমালয়: শামসু, নিঝুমপুর নামের এক গ্রামের বাসিন্দা। এক রাতে দেরি করে গ্রামে ঢোকার পরে অদ্ভুত কিছু দেখে সে। খুবই ছোট এই গল্পটি শেষ করার পরে প্রত্যাশা পূরণ হলো না, মনে হয়েছে ভালোভাবে এন্ডিং না দিয়ে যেন হুট করেই শেষ হয়ে গেল গল্পটা। - চিৎকার– মুরাদুল ইসলাম: গোলাম নবী, অনেক বছর পরে পরিবারসহ আমেরিকা থেকে তাদের পৈত্রিক ভিটাতে বেড়াতে আসে। সেখানে তাদের বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণকারী জয়েনুদ্দিন তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গোলাম নবী সেখানে আরেকজনকে দেখে চমকে যায়। গল্পটি পড়ার পরে টিপিক্যাল হরর স্টোরি লাগলো, এক্সিকিউশানও টিপিক্যাল। নতুনত্বের কিছুই নেই। - অক্ষিবন্দী– তানিয়া সুলতানা: এই গল্পের ন্যারেটর এক রাতে তার বাসার ভেতরে ঢুকে পড়া একটি দাঁড়কাককে তার জীবনের কিছু গোপন কথা বলতে থাকেন। ধীরে ধীরে কাহিনি বেশ ডার্ক হতে থাকে। ছোট, প্রেডিক্টেবল স্টোরি কিন্তু একবার পড়ার মত লেগেছে গল্পটিকে। - ১৩ নং, আতিশখানা লেন– সালমান হক: রক্তিম, চাকরি ছেড়ে পরিপূর্ণভাবে লেখক হওয়ার চেস্টা করছে। এ সময়েই তার পরিচিত এক প্রকাশক তাকে ডেকে নিয়ে এক সত্য অলৌকিক ঘটনার সংকলনের দায়িত্ব দেয়। সেই সংকলনের জন্য আসা ১৩ নম্বর গল্পকে ঘিরেই বইয়ের মূল কাহিনি। এই গল্পটিকে "অতীন্দ্রিয়"তে লেখা "রয়েছি তোমার অপেক্ষায়, নেসহাত" এর সিক্যুয়েল বলা যায়। কিছুটা ফ্য���ন্টাসি হরর ধাঁচের এই গল্পটি মোটামুটি ভালোই লাগলো, বিশেষ করে জাজিরা নগর, সে নগরের জাতিগুলো এবং এর সাথে বর্তমান সময়ের পুরোনো ঢাকার কানেকশনের দিকটি। - রোগ– কৌশিক মজুমদার: হরবাবু, একটি সরকারী অফিসের ডিভিশন ক্লার্ক। বেশ মিতব্যয়ী এই মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত সহজ সরল। কিন্তু সেই জীবনযাপনে ব্যঘাত ঘটে যখন করোনা এসে থাবা দেয় তার জীবনে। গতানুগতিক হরর গল্পের চেয়ে বেশ অন্য ধরনের লাগলো এই গল্পটিকে, বিশেষ করে ঘ্রাণ বিষয়ক অংশটিকে। এই গল্পে দেখানো সমাজ ব্যবস্থা এবং হরবাবুর ক্যারেক্টার আর্কও ভালো লেগেছে। সবমিলিয়ে সংকলনের দারুণ গল্���গুলোর ভেতরে একটি বলা যায় এটিকে। - এই বিদায়– আদনান মুকিত: এই গল্পের ন্যারেটর তার চাচার লাশকে নিয়ে গ্রামে যান কবর দিতে। কিন্ত ঝড়ের কারণে সরাসরি কবরস্থানে আসা লাগে লাশকে নিয়ে এবং সেখানে ঘটতে থাকে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা। সংকলনের আরেকটি অ্যাভারেজ হরর গল্প। - কাল রাতে কালো রাত– আবুল ফাতাহ: জোভান, ইভান, নাভিদ, নায়লা আর জেরিন- এই পাঁচজন কিশোর-কিশোরী এক পোড়াবাড়িতে যায় অ্যাডভেঞ্চারের জন্য। কিন্তু সেখানে ঘটে যায় এক অঘটন, যার উপর ভিত্তি করে গল্পটি লেখা। গল্পটা পড়ার পরে ক্লাসিক "পোড়াবাড়ির ভূত" টাইপ গল্প মনে হয়েছে, তাই খুব একটা আকর্ষণীয় লাগেনি আমার কাছে। - উদক– বিমুগ্ধ সরকার রক্তিম: নীলিমা নামের এক মহিলা একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার ফ্লাটের নিচে সবকিছুই পানিতে ডুবে গেছে; যার কারণ নিয়েই গল্পটি লেখা। এই গল্পের স্টার্টিংটা ভালোই ছিলো। তবে মনে হয়েছে শেষদিকে জোর করে লাভক্রফটিয়ান হররে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। - শাহ-উদ-দৌলার ইঁদুর– দীপিকা মজুমদার: আসগর আলী নামের এক জুয়েলারি শপের মালিকের মুজিবা নামের এক মেয়েকে তার দোকানের জুয়েলারি দিয়ে আসা নিয়ে গল্পটি লেখা হয়েছে। এই গল্পের কোন কিছুই ভালোমতো ফুটে উঠেনি। সংকলনের অন্যতম বিলো অ্যাভারেজ এবং দুর্বল গল্প। - প্রতিপদ– মাহমুদুর রহমান: আফজাল নামের এক পাগলের জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে লেখা। সরল একটি গল্পকে খুবই জটিল করে লেখা হয়েছে। এন্ডিংটাও প্রথম থেকেই বোঝা যায়। সবমিলিয়ে তেমন একটা ভালো লাগেনি এই গল্প। - আমার দাদা কাক বিক্রি করতেন– জাহিদ হোসেন: এই গল্পের ন্যারেটর তার এক বান্ধবীকে জানায় যে তার দাদার এক অদ্ভুতুড়ে শখ ছিলো পাখি বিক্রি করার। সেখান থেকে জানা যায় বিখ্যাত ব্যক্তি আসের ইয়াসিনের সাথে তার বন্ধুত্বের কথা। তারা খোঁজ করছিলো হারিয়ে যাওয়া এক জিনিসের। এখন কী সেই দুর্লভ জিনিস তা নিয়েই গল্পটি লেখা হয়েছে। প্রথমদিকে সাধারণ ধাঁচের গল্প লাগলেও ন্যারেটরের দাদার স্টোরি পড়ার সময় ইন্টারেস্টিং লেগেছে। যেভাবে গল্পটি লেখা হয়েছে তাও ভালোই লাগলো। সবমিলিয়ে সংকলনের এক দারুণ সংযোজন বলা যায় এই গল্পটিকে। - ছায়ার সওদা– সিদ্দিক আহমেদ: এই গল্পের ন্যারেটর একজন লেখক। এক রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখা যায় এক ব্যক্তি তার ঘরে বসে আছে। সে তাকে একটি ছায়া বিক্রি করার অদ্ভুত প্রস্তাব দেয়। এই গল্পের এন্ডিং ধারণা করা গেলেও সেটা ভালোই লাগলো। গল্পের লেখনশৈলীও বেশ স্মুথ, তাই পড়তে তেমন সমস্যা হয়নি। - ষোলো নম্বর বাড়ি চেনার তেরোটি উপায়– তানজীম রহমান: অনেকটা ক্রিপ্টিক ওয়েতে ১৩ টি মাইক্রোফিকশন লেখা হয়েছে এই টাইটেলের আন্ডারে। আলাদাভাবে পড়া গেলেও মনে হয়েছে সবগুলোর ভেতরে একটি কোড রাখা হয়েছে যা দিয়ে কানেক্ট করা যাবে সবগুলো মাইক্রোফিকশনকে। ঠিকভাবে বোঝার জন্য হয়তোবা আরো কয়েকবার পড়া লাগবে মাইক্রোফিকশনগুলো। - সফরনামা অথবা মাঝে মাঝে তব– ইশরাক অর্ণব: এই গল্পে একজন অকাল্টিস্টের জবানবন্দীতে জানা যায় কয়েকজন বন্ধুর দুঃস্বপ্নের মতো এক সিলেট ট্রিপের কথা। এই গল্পের প্লট, অতিপ্রাকৃত ঘটনা, শেষের টুইস্ট অ্যান্ড টার্ণ ইত্যাদি ভালো লাগলেও লেখনশৈলী আরেকটু ভালো হলে সংকলনের সেরা গল্পগুলোর কাতারে ফেলা যেতে পারতো, কিছু জায়গায় মনে হয়েছে অযথাই ড্রাগ করা হয়েছে গল্পটা। - ল্যাম্পপোস্টের ভূত– ওয়াসিফ নূর: অনেকটা আরবান লেজেন্ড টাইপের গল্প, ফেসবুকের ল্যাম্পপোস্টের ভূত নামক এক গল্প পড়ার মাধ্যমে ন্যারেটরের মাথায় এ বিষয়ক চিন্তা গেঁথে যায়। কিছুটা মজার ছলে শুরু হওয়া এই গল্প শেষদিকে ভয়াবহ দিকে টার্ণ নেয়। এই গল্পের সাথে সংযুক্ত ছবিটাও ভালো লাগলো। প্রতিটি গল্পের সাথে এরকম এক-দুইটা ছবি থাকলে সংকলনটি আরো প্রিমিয়াম হয়ে উঠতো হয়তো। - নোনা– আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য: রাশেদুল ইসলাম, তার এনজিওর একটি ব্রাঞ্চ দেখার জন্য এক অজপাড়াগাঁতে যান। সেখানে মোসলেম মিয়া নামে একজন তাকে দাওয়াত দিয়ে বসে। সেই দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়ে সে এক মহাবিপদে পড়ে। বেশ জীবন ঘনিষ্ঠ ধারার এই গল্পের লেখনশৈলী বেশ ভালো লেগেছে, সেই সাথে অধঃনস্তদের প্রতি রাশেদুল ইসলামের মনোভাব এবং সুপারন্যাচারাল এলিমেন্টটাও। সবমিলিয়ে সংকলনের আরেকটি ভালো গল্প বলা যায় এটিকে। - রাত্রি ঘনঘোর– কৌশিক জামান: এই গল্পের ন্যারেটরের হাসপাতালে থাকাকালীন এক রাতকে ঘিরেই মূলত গল্পটি লেখা। গল্পটি পড়ার পরে মনে হলো মাঝখান থেকে শুরু হয়ে প্রপার এন্ডিং এ আসার আগেই শেষ হয়ে গেল, তাই মোটামুটি হতাশ হয়েছি গল্পটি পড়ে। - হাড়– নিলয় নন্দী: শেয়ালদীঘি স্টেশনে আটকা পড়া তিন ব্যক্তি, স্টেশন মাস্টার এবং তাদের আরেক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া টেম্পু চালককে নিয়ে এই গল্পের কাহিনি। গল্পের পটভূমি, লেখনশৈলী, অতিপ্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা সবকিছুই টপ নচ লাগলো। এটাকেও এই সংকলনের অন্যতম সেরা গল্পের ভেতরে রাখবো আমি। - তমস– মেহেদী হক: মোদাচ্ছের নামের এক অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর নতুন চাকরি এবং যাতায়াতের সুবাদে পরিচিত এক আন্ডারপাসের রহস্য নিয়ে লেখা। এই গল্পে মনে হয়েছে আসল ঘটনা বর্ণনার চেয়ে অতিরিক্ত বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে বেশি আর শেষে গিয়ে গল্পটি খেই হারিয়ে ফেলেছে। - তেলাপোকা– উচ্ছ্বাস তৌসিফ: শাহেদ নামের এক কিশোর তার হোস্টেল থেকে বাসায় আসার পরে প্রচুর তেলাপোকা দেখতে থাকে। সেই কারণে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সাইকোলজিস্ট শাহানা পারভীনের কাছে। কিন্তু দিনে দিনে তার সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। একেবারে কমন টেম্পলেটে লেখা হলেও গল্পটি পড়তে খারাপ লাগেনি আমার। সংকলনের হিসেবে এভোব অ্যাভারেজ বলা যায় গল্পটিকে। - মথ– মাহরীন ফেরদৌস: জেরিন নামের এক মেয়ে অনেকদিন পরে দেখা হওয়া বান্ধবীকে নিয়ে একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানেই মূল গল্পটি শুরু হয়। অনেকটা সামাজিক টোনে লেখা গল্পটি একেবারে শেষদিকে অতিপ্রাকৃত এর দিকে মোড় নিলেও ওভারঅল ভালো লাগলো না মোটেও। - ছায়া ছায়া কায়া– তাওসিফ আহমেদ: সংকলনের আরেকটি ফ্যান্টাসি হরর ধাঁচের গল্প। এই গল্পটি এক পরিবারের বাসায় থাকা একটি প্রাচীন দরজা এবং সে সম্পর্কিত জগত নিয়ে লেখা হয়েছে। সংকলনের অন্যান্য ফ্যান্টাসি হরর ধাঁচের গল্পগুলো থেকে কিছুটা দুর্বল লেগেছে এই গল্পটিকে। - ইয়াঘুত রত্ন ভান্ডার– মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর: এই গল্পের ন্যারেটরের হানা হাশেমি নামের এক উচ্চবংশের মহিলার সাথে দেখা হওয়ার পরে ভালোভাবে অর্থপ্রাপ্তি শুরু হতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যপারটা কীভাবে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় তা নিয়েই গল্পটি লেখা হয়েছে। লেখকের গুণমুগ্ধ পাঠক হিসেবে বরাবরের মতোই গল্পের লেখনশৈলী এবং হিস্টোরিক্যাল পার্টটি ভালো লেগেছে। তবে অতিপ্রাকৃত এর পার্টটা একটু রিপিটেটিভ লাগলো লেখকের অন্যান্য অনেক গল্প পড়ার কারণে। তারপরেও সংকলনের বেশিরভাগ গল্পের চেয়ে অনেক বেশি সুখপাঠ্য ছিলো গল্পটা। - খেকো– এনামুল রেজা: শিপন, বেশ সুখি জীবনযাপন করা এক ব্যক্তি। কিন্তু হঠাৎই রাতের বেলায় এক অদ্ভুতূড়ে আওয়াজ শোনা শুরু করতে থাকে সে। তার বান্ধবী ত্রপাকে এ ব্যাপারে জানালে প্রথমদিকে তার কাছ থেকে প্রথমদিকে কোনরকম সাহায্য পাওয়া না গেলেও পরে জানতে পারে এক ভয়াবহ তথ্য। এই গল্পে ক্রিপিনেসটা ভালো পরিমাণে থাকলেও রোমান্টিক অ্যাঙ্গেলটা ভালো লাগেনি যা গল্পের ফ্লো নষ্ট করে দিয়েছে বলা যায়। শেষে গিয়ে অবশ্য গল্পের ফ্লো আবার ঠিক হয়। অভারঅল চলনসই এক গল্প। - রূপান্ত��– নিয়াজ মেহেদি: মাকড়া ডাকাত, বর্তমানে একটি ঘাটে টাকা-পয়সা তোলে। এক অন্ধকার রাতে সেই ঘাটে এসে হাজির হয় এক আগুন্তক এবং তা নিয়েই মূল গল্পটি লেখা। মোটের উপরে টিপিক্যাল এক গল্প বলা যায়, নাম দেখেই বোঝা যায় শেষপর্যন্ত কোনদিকে মোড় নিবে গল্পটি। - মেমেন্ত মরি– যারিন তাসনিম প্রমি: এলা, তার এলাকায় এক ফটো স্টুডিও চালায়। সাধারণ ছবি তোলা বাদেও মৃতদেহেরও ছবি তোলে সে স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য। এক সময়ে তার কাজে হেল্প করার জন্য ঋতি নামের এক মেয়েও যোগ দেয়। এক রাতে ছবি তোলার কাজের জন্য একটি মৃতদেহ রাখার পরে তাদের বাসায় ঘটে যায় এক ভয়াবহ কান্ড। সংকলনের সবথেকে ইউনিক গল্পগুলোর ভেতরে একটি বলা যায় এটিকে। অতিপ্রাকৃত এর চেয়ে এলার টানাপোড়েনই বেশি ফোকাসে এসেছে গল্পটিতে যে ব্যপারটা কতটা কী ভালো লাগবে তা পাঠকভেদে ভ্যারি করবে। - সাইরেন হেড– লুৎফুল কায়সার: এটি আসলে ইন্টারনেটের জনপ্রিয় আরবান লেজেন্ড "সাইরেন হেড" সম্পর্কিত একটি ইনফরমেটিভ আর্টিকেল। সাথে বোনাস হিসেবে এ সম্পর্কিত একটি ক্রিপিপাস্তাও ছিলো। বলা যায় সাইরেন হেড সম্পর্কিত বেশ তথ্যবহুল আর্টিকেল এটি, যারা সাইরেন হেড সম্পর্কে আগে জানতেন না তারা মোটামুটি আইডিয়া পেয়ে যাবেন আর্টিকেলটি পড়ার পরে। - ❛অলৌকিক❜ সংকলনটি প্রোডাকশনগত দিক থেকে বাহ্যিকভাবে এর আগের সংকলন "অতীন্দ্রিয়" এর মতোই বেশ প্রিমিয়াম দেখতে। বইয়ের প্রচ্ছদ এবং নামলিপির ব্যপারে এর আগের সংকলনটিকেই অবশ্য আমি এগিয়ে রাখবো। এবারেও হরর বা অতিপ্রাকৃত জনরার এতগুলো ভ্যারিয়েশন নিয়ে গল্প বাছাই করার জন্য সংকলকদের ধন্যবাদ জানাই। তবে সম্পাদনার ক্ষেত্রে কিছু ভুল রয়ে গিয়েছে, আরেকটু ভালোভাবে সম্পাদনা করলে হয়তো ভুলগুলোর বেশিরভাগই বইতে থাকতো না। এই বইয়ের প্রোডাকশন জনিত সবচেয়ে নেগেটিভ দিক হচ্ছে এর বাঁধাই। এত আটসাট ভাবে বইটা বাঁধাই করা হয়েছে যে অর্ধেকের পরে বইটা খুলে পড়াই যাচ্ছিলো না, শেষের দিকে তো রীতিমতো যুদ্ধ করে পড়া লেগেছে। পুরো বই জুড়ে এ ধরনের বাঁধাই পড়ার সময় খুবই বিরক্তি সৃষ্টি করেছে। সংকলনের এতো ভালো ভালো গল্প এ ধরনের বাঁধাই এর জন্য যদি পড়াই না যায় তাহলে তো ব্যপারটা খুবই দুঃখজনক। আশা করি সামনের সংস্করণে বইয়ের সম্পাদকমণ্ডলী এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই ব্যপারগুলোর দিকে ভালোভাবে নজর দিবেন। - এক কথায়, বাংলা ভাষায় শুধুমাত্র অতিপ্রাকৃত জনরার উপর ভিত্তি করে গতবছরের "অতীন্দ্রিয়" এর পরে এবারের ❛অলৌকিক❜ গল্পসংকলনটিও বেশ ভালোমানের হয়েছে। যারা বাংলা মৌলিক হরর কিংবা অতিপ্রাকৃত গল্প সংকলন পড়তে চান, বাঁধাই এর ব্যপারটা ইগনোর করতে পারলে তারা ❛অলৌকিক❜ গল্পসংকলনটি পড়ে দেখতে পারেন।
অলৌকিক শব্দের অর্থঃ- বিণ. মনুষ্যলোকে অসম্ভব, মানুষের পক্ষে অসম্ভব; পৃথিবীতে ঘটে না এমন; লোকাতীত!
কিন্তু লৌকিকতা ব্যাতিত কি ভিন্ন কিছু ঘটে? সেসবের প্রেক্ষিতেই এই সময়কার ৩৬ লেখকের দূর্দান্ত অলৌকিকতার গল্পের একটি পরিপূর্ণ বই বলা চলে! তবে সব গল্পই সমান নয় শুরু দিককার গল্প গুলো ছিলো নানান রহস্যময় বিস্তৃত কিন্তু মাঝের গল্পগুলো কেমন জানি, শুরুর গল্পগুলোর সাথে মিল যাচ্ছে না এমন কিন্তু শেষ দিককার প্রতিটি গল্পই দূর্দান্ত! গল্পের সূচিঃ-
শাহ আলী স্মৃতি পাঠাগার • মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 🌟🌟🌟🌟
এবারের সংকলনের সম্পাদনা করেছেন @salman_reads এবং প্রান্ত ঘোষ দস্তিদার। বইটি এসেছে @afsarbrothers থেকে। প্রচ্ছদ নিয়ে না বললেই নয়, প্রচ্ছদ বলা যেতে পারে এক কথায় মারাত্মক। প্রচ্ছদই যেনো ভৌতিকতা রেশ সৃষ্টি করে। বেশ সুখপাঠ্য!!
একটা গল্প সংকলনের কয়টা গল্প ভালো হলে সেটাকে সেরা একটা গল্প সংকলন বলা হয়? মোট গল্পের অর্ধেক? বা অর্ধেকের বেশি?কিন্তু ৩৬ টা গল্পের মধ্যে ১৮ টা তো দূর ১২ টাও ভালো গল্প পেলাম না।হাতে গোণা ৯-১০ টা ভালো গল্প। ৩৬ টা গল্পের মধ্যে সবচেয়ে ফেভারিট অবশ্যই "পূর্ব অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন " গল্পটা।সালমান ভাই,ইশরাক অর্ণবের গল্প টাও জোস ছিল।কিন্তু ওভারল খুব ই বিলো এভারেজ একটা সংকলন।
দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায় না। শতাব্দী থেকে শতাব্দী এই অতিপ্রাকৃত বিষয়ই মানুষের মনে আলোড়ন ফেলেছে।
যারা এসব বিষয়ে বিশ্বাসী রাতে তারা ঘরের বাইরে থাকতে চায় না, আর যারা অবিশ্বাসী তারা গভীর রাতে বাইরে থাকে উপলব্ধী করতে। অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে বর্তমান সময়ের ৩৬ জন লেখকের ৩৬টি গল্প নিয়ে এই 'অলৌকিক' বই। ৪৬৪ পৃষ্ঠার এই বইয়ে রয়েছে, লোভ, ক্রোধ, ভয়, প্রতিশোধ, দুঃখ, বীভৎসতা ও প্রতিরক্ষা। বইটির মধ্যে থেকে আমার সবচেয়ে ভালো লাগা ৫টি গল্প নিচে বর্ণনা করলাম:
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন•নাবিল মুহতাসিম।
শ্বাপদ সনের পর শিপলুর একটি প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটের কেস এই বইয়ে স্থান পেয়েছে।আমিন নামে এক ব্যাক্তি শিপলুর কাছে আসে। ওর বন্ধু বাবলু আর্কিটেকচার। সে সুবাদে একটি জমিদার বাড়িতে ডাক পড়ে বাবলুর । প্রথম দিকে ভালো গেলেও কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে তার সাথে। সে সকল ঘটনা আমিনকে চিঠিতে লিখে পাঠায়। কী সেই ঘটনা যার জন্য জন্য আমিন শিপলুর কাছে আসে?
অসমাপ্ত • বাপ্পী খান
রাফাত খান নামের এক পরিচালক স্ত্রীর শেষ স্বপ্ন পুরণ করার জন্য ওয়েব সিরিজ বানাতে নামেন। কিন্তু সঠিক গল্প পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ একদিন রাতে রাস্তায় বইয়ের স্তুপ থেকে ১টি পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান যার শেষ ২ পৃষ্টা নেই। রাফাত খান নিজের মতো করে পান্ডুলিপির শেষ ২ পৃষ্টা লিখেছেন । শুটিং করা শুরু করার পর সেটে ঘটতে থাকে একের পর এবং অশুভ ঘটনা। কার ছিল এই পাণ্ডুলিপি এবং কে আছে এই অশুভ ঘটনার পিছনে?
এই বিদায় • আদনান মুকিত
শহর থেকে এক দল লোক আসে গ্রামে তাদের চাকাকে করব দিতে। কিন্তু করব দিতে গিয়ে দেখেন সেখানে আরেক টি লাশ রাখা। নতুন এই কবরে কার লাশ সেটা ?
কাল রাতে কালো রাত • আবুল ফাতাহ শহর থেকে দাদার বাড়িতে বেড়াতে আসে নাভিদ, জোভান, ইভান, নায়লা ও তার বান্ধবী জেরিন। পুরোদিনই ভালো গেলেও গভীর রাতে এক চিৎকারে সবাই ঘুম থেকে উঠে। গিয়ে দেখে ওদের মধ্যে এক জনের লাশ উপুড় হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু লাশের মাথা বিপরীত দিকে উল্টে তাকিয়ে আছে সিলিং ফ্যানের দিকে। কার লাশ ছিল সেটা? আর ওদের দাদী কী লুকাচ্ছেন এই বাড়িকে নিয়ে?
সফরনামা অথবা মাঝে মাঝে তব • ইসারাক অর্ণব
নাম না জানা এক অকালটিস্টের কাছে আসে ১টি কেস। ৪ জন বন্ধুর বন্ধু সিলেটে ট্যুরে যায়। সিলেটের জাফলং এ ঘুরতে গিয়ে আসার সময় প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে যায় ওরা। নেমে আসে অভিশাপ তাদের উপর। কী সেই অভিশাপ?
আরো যেগুলো ভালো লেগেছে (বর্ণনা লিখলে পুরো গল্প বলা হয়ে যাবে ):
সম্পাদনার কাজ আরো নিখুঁত হতে পারত। কিছু কিছু ভুল রয়ে গেছে, যেগুলো খুব দৃষ্টিকটু লেগেছে। চার পাঁচটা গল্প পড়ে মনে হয়েছে লেখক খুব তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন। তবে কয়েকটা গল্প সেরাদের সেরা। পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন, রোগ, নোনা, তেলাপোকা, ১৩ নং আতিশখানা লেন, কাল রাতে কালো রাতে, তৃষ্ণা, ইয়াঘুত রত্ন ভান্ডার এগুলো মারাত্মক ছিল ❤️
মোট ৩৬টা গল্প আছে, নতুন-পুরাতন ৩৬ জন লেখকের লেখা এক মলাটে পড়তে পারলাম, অনেকের লেখাই জীবনে প্রথমবার পড়লাম। কিছু কিছু গল্পের প্লট ভালো, রচনাশৈলী অধিকাংশই ভালো না। এই অতিপ্রাকৃত জনরায় বাংলা সাহিত্য কিছুটা পিছিয়েই আছে, নতুনদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করছেন কিন্তু ঐ রচনাশৈলীতে গিয়ে পেরে উঠছেন না।
সম্পাদনা করা অনেক সোজা মনে হলেও তা আসলে কঠিন। বেশ কিছু ভুল ছিল। সেগুলো খুব বিরক্তি লেগেছে। কয়েকটা গল্প পড়ে মনে হলো লেখক অনেক জলদি শেষ করে দিয়েছেন। তবে কিছু গল্প ভালো ছিল।