Jump to ratings and reviews
Rate this book

নৈর্ঋত

Rate this book
মহাখালী কলেজ গেট সংলগ্ন বস্তির খালে বস্তাবন্দী একটা লাশ পাওয়া যায়। খন্ডবিখন্ড লাশ। কেউ লাশের হাত-পা-মাথা সুন্দর করে কেটে ট্যাগ দিয়ে রেখেছে। হাতের সাথে হাত লেখা ট্যাগ, পায়ের সাথে পা আর মাথার সাথে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা মাথা। হাত-পা-মাথা সব একসাথে। পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো।

লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। মিথিলা ফারজানা। বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী। ক’দিন পরই যার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। টুকরা-টাকরা দেহাংশের সাথে পাওয়া যায় ২৯ টা লেজবিহীন টিকটিকি ও একটা ছোট্ট চিরকুট। চিরকুটে লেখা:

লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে

মিথিলা ফারজানার ঘাড়ের পিছনে লেজহীন টিকটিকির ট্যাটু এঁকে রাখা, তার পিঠে বড় করে অচেনা ভাষায় একটা শব্দ লেখা:

Πανδώρα

ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে মিথিলা ফারজানার দুই সহপাঠী লম্বু মুনীর শাফকাত ও ভোটকা অভিজিৎ কুন্ডু। জড়িয়ে পড়ে দুই বান্ধবী আজমিন-অরিন ও চারপেয়ে এক জন্তু। কুট্টুস। এই চারমূর্তি কি পারবে মিথিলা ফারজানা হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে? অন্ধকার টানেলে আলোর রেখা খুঁজে নিতে? নাকি নিকষ কালো আঁধার গ্রাস করে নিবে ওদের?

রহস্যময় এ খুনের দায়িত্ব পায় গুলশান থানার চৌকস অফিসার ফজলে নূর। তদন্তে বেরিয়ে পড়ে একই ধাঁচে খুন হয়েছে আগেও। খন্ড-বিখন্ড লাশ মিলেছে, চিরকুট মিলেছে। মিলেছে অচেনা ভাষার ঐ লেখাটাও:

Πανδώρα

কথাটার মানে কী? কী চায় এই খুনী? কেইবা এই লিজার্ড কিং?
তবে কি সহস্রাব্দ-প্রাচীন গ্রীক মিথ প্যান্ডোরার বাক্সেই সব উত্তর রয়ে গেছে?
বাক্স কি তবে খুলেই গেল?

524 pages, Hardcover

First published March 4, 2022

18 people are currently reading
410 people want to read

About the author

জাহিদ হোসেন

20 books476 followers
জাহিদ হোসেনের জন্ম সিলেটে, বেড়ে উঠা ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশায় ব্যাংকার হলেও বইপড়ার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক থেকেই লেখালেখিতে আগ্রহ। শুরু অনুবাদ দিয়ে। পরপর দু’টি অনুবাদ প্রকাশিত হয় তার - অ্যাম্বার রুম ও ম্যাক্সিমাম রাইডঃ দ্য অ্যাঞ্জেল এক্সপেরিমেন্ট। তারপর তিনি প্রবেশ করেন মৌলিক লেখালেখির জগতে। মৌলিক থ্রিলার হিসেবে তার প্রথম প্রয়াস ঈশ্বরের মুখোশ যা ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর একে একে বের হয় ফিনিক্স, কাদ্যুসেয়াস, একজোড়া চোখ খোঁজে আরেকজোড়া চোখকে, দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব, গিলগামেশ, নৈর্ঋত, পরশুরামের কঠোর কুঠার, ইথাকা ও স্বর্গরাজ্য। লেখালেখিতে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি আলাদা পরিচিতি লাভ করেছেন।

তার প্রকাশিত বই ওপার বাংলাতেও ব্যাপক সমাদৃত ও প্রশংসিত। কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স ও বুকিকার্ট থেকে ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বইয়ের ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
101 (42%)
4 stars
90 (38%)
3 stars
38 (16%)
2 stars
6 (2%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 30 of 79 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
April 25, 2022
৪.৫/৫
আশ্চর্যজনকভাবে ( এবং বেশ খানিকটা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে) প্রতিবারই আমি ঢাউস আকারের জমজমাট কোনো বই পড়া শুরু করি সপ্তাহের মাঝখানে। একটানা পড়ার সময় পাওয়া যায় না তখন।কাজের ফাঁকে, শত ব্যস্ততার মধ্যেও সেই বই পড়ার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে তখন। পাঁচ পৃষ্ঠা, দশ পৃষ্ঠা পড়তে না পড়তেই বই বন্ধ করে দিতে হয় আর আমার মাথায় গল্পটা ঘুরপাক খেতে থাকে।এরপর কী হবে? কী হতে যাচ্ছে? কাজে অমনোযোগিতা এসে পড়ে মাঝেমধ্যে।তারপর আবার সুযোগ পেলেই পাঁচ/দশ পাতা করে এগোনো। খাওয়া, কাজ, আড্ডা, ঘুমের মধ্যে সেই গল্পটা নিয়ে চলা-বিবর্ণ দিনগুলোয় কেমন অন্যরকম উদ্দীপনা চলে আসে। প্রথমদিকে উদ্বিগ্নতা থাকে কখন বই শেষ করতে পারবো তা নিয়ে। আর বইটা শেষ হয়ে আসতে থাকলে মনে হয়,"আহারে! এতো জলদি শেষ হয়ে যাচ্ছে?! ইচ্ছা করেই ধীরেসুস্থে পড়ি তখন। একসময় পড়া শেষ হয়েই যায়। আর বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরোয়।
"নৈর্ঋত " পড়তে যেয়ে ঠিক এইরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। পড়তে সময় লেগেছে আড়াই দিন।এই আড়াই দিন ছিলো নৈর্ঋতময়। আমার বিবেচনায় ভালো থ্রিলার হবে পেজ টার্নার,গল্পে থাকবে অভাবনীয় সব মোচড়, চরিত্রগুলোর সাথে আমরা একাত্ম হবো, শেষে থাকবে দুর্দান্ত ক্লাইম্যাক্স। জাহিদ হোসেন এই শর্তগুলো খুব দক্ষতার সাথে পূরণ করেছেন।
নেতিবাচক দিক বলতে- কাহিনিতে সশরীরে প্রায় অনুপস্থিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রের কার্যকলাপ ও তার যুক্তি। অন্য আর সবকিছুই আমার ভালো লেগেছে। থ্রিলারের পাশাপাশি "নৈর্ঋত " বেড়ে ওঠার চিরন্তন গল্পও বটে।বাবা মায়ের শাসন,অতিশাসন, নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আগ্রহ, নিজের একটা আলাদা জগৎ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টার সাথে নিজের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে সহজেই।লেখকের সূক্ষ্ম রসবোধের কারণেও পড়তে খুব আনন্দ পেয়েছি।

"গিলগামেশ " পড়ার পর থেকে অন্য অনেকের মতো জাহিদ হোসেনের প্রতি আমার প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। সেই প্রত্যাশা আরো বাড়িয়ে দিলো "নৈর্ঋত।" থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য বইটা অবশ্যপাঠ্য।

(সবাই বলে ফেলেছে,আবারও বলি,মাহাতাব রশীদের করা প্রচ্ছদটা একটু বেশিই সুন্দর।)
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
March 31, 2022
বিংশ শতাব্দীর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এক প্রভাবশালী কিংবদন্তি ছিলেন ব্রিটিশ গীতিকার-সংগীতশিল্পী ডেভিড বোয়ি।
"There's old wave,there's new wave,and there's David Bowie..."
পপ মিউজিকে তাঁর অনন্য অবদান প্রসঙ্গে এইরকম মতবাদই প্রচলিত। প্রবাদপ্রতিম এই পপ-তারকার Space Oddity গানটা শুনলে মনে হয় যেন মহাকাশচারী সত্ত্বা ভেসে আছে মহাশূন্যের অসীম শূন্যতার মাঝে। যে অনুভূতিকে এক কথায় সংজ্ঞায়িত করতে পারি, Nothingness অথবা Vast Emptiness হিসেবে।
দীর্ঘদিন অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার হাইড্রলিক প্রেসে চাপ খাবার পর ঘুমে চোখজ্বালা করা মাঝরাতে ওয়াকিন ফিনিক্সের 'Her(2013)' দেখার পর এই ভাস্ট এম্পটিনেস আমাকে ঘিরে ধরে। কিংবা নিস্তব্ধ ছমছমে কোনো রাতে আঁধারের বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া গাড়ির উইন্ডশিল্ডে বৃষ্টির ফোঁটারা ঝাঁপিয়ে পড়ে আর মাটির সোঁদা গন্ধমাখা হাওয়া আমার চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়, ঠিক সেই মুহূর্তের স্পর্শটাও এমন। মাঝেমাঝে কিছু বইয়ের মাঝেও এমন অনুভূতিতে জারিত করে আমাকে,আমি অনুভব করতে পারি শূন্যতার মাঝে বইতে থাকা অদৃশ্য অনুভূতির চোরাস্রোত। যেহেতু কৃষ্ণগহ্বরও কণাপ্রবাহ বিকিরণ করে,তাই এই শূন্যতাও নিছক শূন্যতা নয়। জাহিদ হোসেনের "নৈর্ঋত" শেষ করবার পর আমার অবস্থা এখন গ্রিক মিথোলজির পয়লা দেবতা ক্যাওসের মতোই...দুনিয়াটাকে শূন্য লাগে।

যে কোনো থ্রিলার পড়তে গেলে লেখক আর পাঠক এক অদৃশ্য শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকেন।
"পাঠক,আমি এমন কিছু জানি যা আপনি জানেন না,কিন্তু আমি সেটা আপনাকে জানাতে চাই।
আর এসব অতিগোপনীয় কথামালা লুকিয়ে আছে এই বইয়ের মাঝে সাজানো পাতাগুলোতে" — এই প্রতিজ্ঞায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকেন লেখক, আর সেই আখ্যান জানাতে,নিজের গল্পটা পাঠককে বলতে ধরে রাখতে হয় তার সবেধন নীলমণি মনোযোগকে। জাহিদ হোসেন এই কাজটা যে খুব ভালো মতো পারেন সেটা উনার যে কোনো পাঠক স্বীকার করে নেবেন। তার দারুণ সেন্স অব হিউমার,যে কোনো পরিস্থিতির সাথে পাঠককে রিলেট করানোর মতো কমিউনেকেটিভ ন্যারেশন আর যে কোনো দৃৃশ্যকে ফুটিয়ে তোলার মতো পোর্ট্রেইং ক্ষমতাই বলকে ব্যাটের অনুকূল পজিশনে এনে দেয়...আর তারপর বল চলে যায় সিধা সীমানার বাইরে। কিন্তু লেকিন পারান্তু.... দারুণ প্লটের একটা কাহিনীর সমাপ্তিতে গিয়ে দ্রুত যবনিকাপাত,অসংখ্য ক্যারেকটার, কাদ্যুসেয়াস ও কাদ্যুসেয়াস পরবর্তী বইগুলোতে সমাপ্তিতে গিয়ে আরবান ফ্যান্টাসির ছোঁয়ার জন্য অনেক পাঠক বেজায় নাখোশ। এইটার যৌক্তিক কারণ তাদের কাছে আছে। সেটা নিয়ে আমি কোনো অভিযোগ করবো না।
জাহিদ হোসেনের যেকোনো বই পড়তে গেলে আমি প্রথমে Ctrl+Delete চেপে আমার পাঠকসত্ত্বা থেকে যুক্তিবাদিতা,অনুমানপ্রবণতাকে বাদ দিয়ে দিই। গত কবছরে আমার বিস্মিত হবার ক্ষমতা কমতে কমতে টেন্ডস টু জিরোর কাছাকাছি। আমি আসলে শুরুতে বলা,'I know something you don't know' প্রতিজ্ঞার কারণেই বুঁদ হয়ে বই পড়ি। আর যেসব বই আমাকে সেভাবেই ভাবনার খোরাক দেয়,সেগুলোর লাইনের মাঝে লুকিয়ে থাকা রোলার কোস্টার রাইডে বসে লেখকের সাথে দীর্ঘ আলাপ করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

ভূমিকায় লেখক বলেছেন, নৈর্ঋত তার কৈশোরে ফেলে আসা মহাখালীর প্রতি নিবেদিত একটা কবিতা। আমি বলবো, নৈর্ঋত নব্বইয়ের দশকে বড় হওয়া মানুষদের কৈশোরের প্রতি লেখা প্রেমপত্র। এমন একটা প্রেমপত্র যার শব্দসংখ্যা লাখখানেকেরও বেশি। পুরোনো প্রেমিক-প্রেমিকার দেখা হলে তারা যেমন আগের স্মৃতি রোমন্থন করে একরকমের নস্টালজিক হ্যাংওভারে ভেঙে পড়ে,ফেলে আসা দিনগুলোর মোড়ে মোড়ে গিয়ে দেখা করে সুখ-দুঃখের সাথে, নৈর্ঋতের সাথে আমার আড্ডাটাও অনেকটা সেই স্মৃতিকাতরতার মতো। তিন
গোয়েন্দা,টিনটিন,ফেলুদা,ঘনাদা,টেনিদা,মিসির আলীময় কৈশোরের ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে কোল্ড প্লের গান,
Oh, Let's go back to the start...

ফ্ল্যাপ থেকে:
বইয়ের মূল প্রেক্ষাপট আমাদেরকে নিয়ে যায় ২০০৩ সালে। মহাখালী কলেজ গেট সংলগ্ন বস্তির খালে বস্তাবন্দী একটা লাশ পাওয়া যায়। খণ্ডবিখণ্ড লাশ। কেউ লাশের হাত-পা-মাথা সুন্দর করে কেটে ট্যাগ দিয়ে রেখেছে। হাতের সাথে হাত লেখা ট্যাগ, পায়ের সাথে পা আর মাথার সাথে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা মাথা৷ হাত-পা-মাথা সব একসাথে। পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো।

লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। মিথিলা ফারজানা। বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী। ক'দিন পরই যার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। টুকরা-টাকরা দেহাংশের সাথে পাওয়া যায় ২৯ টা লেজবিহীন টিকটিকি ও একটা ছোট্ট চিরকুট। চিরকুটে লেখা:

লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে

মিথিলা ফারজানার ঘাড়ের পিছনে লেজহীন টিকটিকির ট্যাটু এঁকে রাখা, তার পিঠে বড় করে অচেনা ভাষায় একটা শব্দ লেখা:

Πανδώρα

ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে মিথিলা ফারজানার দুই সহপাঠী লম্বু মুনীর শাফকাত ও ভোটকা অভিজিৎ কুন্ডু। জড়িয়ে পড়ে দুই বান্ধবী আজমিন-অরিন ও চারপেয়ে এক জন্তু। কুট্টুস। এই চারমূর্তি কি পারবে মিথিলা ফারজানা হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে? অন্ধকার টানেলে আলোর রেখা খুঁজে নিতে? নাকি নিকষ কালো আঁধার গ্রাস করে নিবে ওদের?

রহস্যময় এ খুনের দায়িত্ব পায় গুলশান থানার চৌকস অফিসার ফজলে নূর। তদন্তে বেরিয়ে পড়ে একই ধাঁচে খুন হয়েছে আগেও। খন্ড-বিখন্ড লাশ মিলেছে, চিরকুট মিলেছে। মিলেছে অচেনা ভাষার ঐ লেখাটাও:

Πανδώρα
কথাটার মানে কী? কী চায় এই খুনী? কেইবা এই লিজার্ড কিং? তবে কি সহস্রাব্দ-প্রাচীন গ্রীক মিথ প্যান্ডোরার বাক্সেই সব উত্তর রয়ে গেছে? বাক্স কি তবে খুলেই গেল? নৈর্ঋত মানে হচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিম কোণ। নৈর্ঋত কোণের অধিপতি,রাক্ষস।

বরাবরের মতোই বইয়ের সিনোপসিস আমাকে জানিয়ে দেয় যে, বরাবরের মতোই লেখক সিরিয়াল কিলিং,মিথোলজি,কাল্ট,অপদেবতার আখ্যানের সাথে এস্টার এগ আর পপ কালচারাল রেফারেন্স নিয়ে ফিরে এসেছেন তার কম্ফোর্ট জোনে। আলগোছে গুগল করে Πανδώρα এর মানেটাও জেনে নিই। Πανδώρα হলো গ্রিক অক্ষরে লেখা প্যান্ডোরা। গ্রিক মিথলজি অনুযায়ী, প্যান্ডোরা হলো দুনিয়ার প্রথম নারী। প্যান্ডোরাকে বানানো হয়েছিল মানবজাতিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। প্রত্যেক দেবতা তাকে বিশেষ বিশেষ গুণ গিফট দেন। এথেনা দেন কারুনৈপুণ্য,হার্মিস দেন ছলাকলা,আফ্রোদিতির কাছ থেকে প্যান্ডোরা পায়
সৌন্দর্য আর আবেগ। আর দেবতারাজ জিউস তাকে দেন কৌতূহল আর একটা রহস্যময় বাক্স।
মিথলজি বলে,বাক্সের ভেতর নাকি বন্দি থাকে দুঃখ, শোক, জরা,লোভ,আশা।
তবে অনেকেই বলে, বাক্সে বন্দি ছিল অপদেবতাদের রাজা লিজার্ড কিং। যার আরেক প্রচলিত নাম, ডেভিল বা শয়তান....

আমি এবার পড়ে থাকি লিজার্ড কিংকে নিয়ে। আমেরিকার বিখ্যাত রক ব্যান্ড দ্য ডোরসের লিড ভোকালিস্ট জিম মরিসনের 'I'm the Lizard King,I can do anything!' এর কবিতা থেকে কীভাবে নৈর্ঋতের জন্ম হয় আমি ভাবতে থাকি।
ক্রমে দিন গড়ায়। সূর্যের উত্তরায়ণ, দক্ষিণায়ণ হতে থাকে। নৈর্ঋত প্রকাশিতও হয়। কিন্তু মহামারী উত্তর বইমেলার দিনগুলোতে আমি অ্যাবডোমেন, মেটাবলিজম,রেসপাইরেটরি কার্ডের হাইড্রলিক প্রেসারে মাথা তুলে কোনোদিকে তাকাতে পারি না। অবশেষে একটু একটু করে আজ পড়ে শেষ করতে পারি ৫২০ পৃষ্ঠার এই সুবিশাল আখ্যান।

'নৈর্ঋত' এর ন্যারেটিভ নেস্টেড নন-লিনিয়ার। লেখকের পূর্ববর্তী বই গিলগামেশের মতোই নানাজনের আখ্যানে, ডায়েরির পাতায়,পুলিশের কেসফাইলে গল্পের ভিতর গল্প শুনি। জাহিদ হোসেনের বইগুলোতে অজস্র ক্যারেকটার থাকে গাই রিচির ফিল্মের মতো। তাদের কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত থাকে,কেউ কেউ মাঝপথে হারিয়ে যায়,কেউ বা হঠাৎই উধাও হয়ে আবারও দৃশ্যপটে আবির্ভাব হয়। 'নৈর্ঋত' ও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এই বইয়ে কোনো ক্যারেকটারই অপ্রয়োজনে আসে নি। প্রত্যেককেই শুরুতে না হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হিসেবে খুঁজে পাই। শুরুতে দেয়া ছোট ছোট ডিটেইলসও অদরকারি মনে হলেও, ফাইনাল আওয়ারে গিয়ে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হয়ে দাঁড়ায়।

বইয়ের মূল ক্যারেকটারে থাকা কিশোর-কিশোরী লম্বু মুনির,ভোটকা কুণ্ডু,অরিন-আজমিন আর কুকুর কুট্টুস আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় তিন গোয়েন্দার সাথে জিনা আর রাফিয়ানের কথা কিংবা এনিড ব্লাইটনের ফেমাস ফাইভ। হাল জমানার স্ট্রেঞ্জার থিংসের কথাও মনে আসবে অনেকের। জাহিদ হোসেন বইটা উৎসর্গই করেছেন তিন গোয়েন্দা আর তার স্রষ্টা রকিব হাসানকে। সেখানে এই কাহিনীর মূলে থাকা কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা যে তিন গোয়েন্দার প্রতি ট্রিবিউট সেটা বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না। তবে নৈর্ঋত তিন গোয়েন্দার মতো কোনো ইনোসেন্ট গল্প নয়। বেশ ডার্ক, ভায়োলেন্ট আর অ্যাডাল্ট আখ্যান।

লোকেশনকে দিয়ে গল্প বলানো খুবই দারুণ একটা ব্যাপার। লিজার্ড কিংয়ের ওল্ড কেস ফাইলগুলোতে আমরা বগুড়ার ঘটনা শিরোনামে যে কারমাইকেল কলেজের এক শিক্ষককে লিজার্ড কিংয়ের শিকার হিসেবে দেখানো হয়,আর মেঘমল্লার সাময়িকী পত্রিকার মূল রচনা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে কেন্দ্র করে লেখা প্রসঙ্গে এসব বলা হয়, এই বিষয়গুলো Interrelated.
বগুড়ায় নারুইল গ্রামের চেলোপাড়ায় উনার পৈতৃক নিবাস।খোয়াবনামার সেটাপ এই জায়গাকে ঘিরেই। শহরের জেলখানা রোডে বংশধরদের ট্রপিকাল ইলিয়াস টাওয়ার বলে একটা সম্পত্তি/বহুতল ভবন আছে। এটা প্রথম দেখে আমার খুব উত্তেজনা হয়েছিল। উনার বেড়ে ওঠাও এই শহরেই।

লেখক গ্রিক মিথোলজির দেব-দেবীদের ধরে এনেছেন কাহিনীতে। পাবেন এই শতকের শুরুর দিককার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ঘনঘটা। শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা কিংবা জিদানের প্রতি ভালোবাসার ছাপও। ঘিয়ালি আর ক্রিম রঙের প্রতি লেখকের অদ্ভুত অবসেশনের ছাপ পেয়েছি পুরো বই জুড়ে। বেশিরভাগ বিল্ডিংই দেখা যায় ঘিয়ালি বা ক্রিম কালারের,টেলিফোন সেটের রঙ ক্রিম, সালোয়ার-কামিজের রঙও এমন। বইটা পড়ার আগে আমি ভেবেছিলাম এটা বুঝি নাইন্টিজের সেটাপে লেখা, কিন্তু পরে বুঝতে পারি ২০০৩ সালের প্রেক্ষাপটে এই আখ্যানের নাড়িপোঁতা আছে। তাই নাইন্টিজে কি জিপিএ গ্রেডিং সিস্টেম ছিল, সেই সংক্রান্ত ধোঁয়াশা দূর হয়। বলে রাখা ভালো উপন্যাসের এক জায়গায়, গ্রিকস ইন বেঙ্গল নামে যে বইয়ের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে,সেটা সম্পূর্ণ লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত,
যেমন কাল্পনিক প্যান্ডোরার বাক্সে লিজার্ড কিংয়ের বন্দী থাকাটাও। কাদ্যুসেয়াসের "Ancient Order of the Sacred Mountain" নামের মতোই নৈর্ঋতের "The Lizard King Community".

এছাড়াও এই আখ্যানে কয়েক গ্লাস ব্যাড প্যারেন্টিং, এক ছটাক নব্বইয়ের দশকের ক্রিকেট-ফুটবল, কয়েক চা চামচ টিনএজারদের আবেগ-অনুভূতি,কুচি করে কাটা শার্ল বোদলেয়ারের কবিতা, কয়েক সের ডিকাডেন্ট মুভমেন্ট,নিষিদ্ধ আর্ট-কালচারের দেখা মেলে। আরও দেখা মিলে টিকটিকির ২৯ টা কাটা লেজের...

বইটার মানানসই প্রচ্ছদ করেছেন প্রতিভাবান কমিকস আর্টিস্ট মাহতাব রশিদ, আর চমৎকার সব ইলাস্ট্রেশন করেছেন তরুণ তুর্কি ওয়াসিফ নূর।

আমার মতে,স্টোরিটেলিংয়ে নিজস্বতা আনতে পারলে,গল্পকে নিজস্ব একটা কণ্ঠ দিতে পারলে গল্পে প্রাণের সঞ্চার হয়,আর একজন দারুণ স্টোরিটেলারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমি জাহিদ হোসেনের লেখাগুলো পড়ার জন্য তাই বছরের পর বছর বসে থাকি। প্লটহোল, অসঙ্গতি আমাকে ভাবায় না। আমি শুধু অপেক্ষায় থাকি গল্পের। তাই প্রতিবার বই শেষ করার পর আমার মন খারাপ হয়ে যায়। এবারও নৈর্ঋত শেষ করবার পর বলতে ইচ্ছা করছে,
"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আমি মিলে একদিন ক্যারাভানে চেপে ইউরোপে ঘুরে বেড়াবো। তুমি গিটারে জিম মরিসনের স্প্যানিশ ক্যারাভান গাইবে,আমি শুনবো। বাইরে তখন তারাজ্বলা আকাশ। কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দিবে। তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না। মিটিমিটি হাসবে স্রেফ। আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন-পর্তুগাল-আন্দালুসিয়া।"
Profile Image for Rizwan Khalil.
374 reviews599 followers
April 6, 2025
"The sins of the fathers are to be laid upon the children."
- William Shakespeare, 'The Merchant of Venice'

প্রায় ছয়শ পৃষ্ঠার সুবিশাল উপন্যাসটি শেষ করে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকলাম। অম্লমধুর বিষাদমাখা সমাপ্তিটা পড়ে মন উদাস হয়ে গেছে। তিন-চারদিন ধরে ভেঙে ভেঙে পড়লাম বইটা, যদিও এতটাই টানটান মসৃণ লেখনির-কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনাক্রমের ছিল ছয়শ পৃষ্ঠার হবার পরেও চাইলেই একবসায় একদিনে নাওয়াখাওয়া ভুলে খতম দেয়া সম্ভব হতো। তবে হুড়মুড় করে না গিলে একটু একটু করে সমস্ত প্লট-সাবপ্লট-মিনিপ্লট-মাইক্রোপ্লট বুঝেশুনে আরাম করে পড়া-অনুধাবন করা আমার চিরকালের অভ্যাস (যেকারণে বলাইবাহুল্য রিডিং স্পিড বহুত কম), আর এমন একটা বিপুল কলেবরের মহাজটিল মহাকাব্যিক ক্রস-জনরার উপন্যাসের জন্য এটা অত্যাবশ্যক। সকালে পড়ে শেষ করার পরে সারাদিন ধরে মাথায় শুধু বইয়েরই অসংখ্য হাবিজাবি জিনিস ঘুরছে, দেখি চেষ্টা করে ���ই এলোমেলো চিন্তাগুলিকে একসূত্রে বাঁধা যায় কি না।

গল্পের প্রেক্ষাপট-পটভূমি ফেলে আসা ২০০৩-সালের ঢাকা শহর, আরো যথাযথভাবে বললে ঢাকার মহাখালী এলাকা। কেন্দ্রীয় চরিত্র মুখচোরা মুনীর শাফকাত মাত্রই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অনেকটা গৃহবন্দীসময় কাটাচ্ছে, অতিমাত্রায় রক্ষণশীল বাবার কঠিন শাসনে যখনতখন বাড়ির বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার বা ঘুরাঘুরি করারও উপায় নেই। প্রতি পদে বাবার দোতলার ফার্স্টগার্ল সাদিয়ার সাথে তুলনা, এসএসসির ছুটিতেও পড়তে বসা। মুনীরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভোজনরসিক অভিজিৎ কুণ্ডু শুভ্র ওরফে "ভোটকা"র অবস্থা তুলনায় অনেক বেটার, কক্সবাজার বেড়াতে গেছে দারুণ মৌজে আছে। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে অলসভাবে মুনীর একা একা ঘুরে বেড়ায় তার প্রাণপ্রিয় মহাখালী আবাসিক এলাকার অলিগলিতে। আর মাঝে মাঝেই মাথায় উঁকি দিয়ে যায় ক্লাসমেট মিথিলা ফারজানা, তিনমাস আগে তার খণ্ডবিখণ্ড লাশ পাওয়া গিয়েছিল বাড়ি থেকে অদূরে মহাখালী এলাকার খালে। মুনীর-কুণ্ডু তখন সেখানেই ছিল, খালপাড়ে সুস্বাদু ডালপুরি-সিঙাড়া-চা খাচ্ছিল। মিথিলার মতো নির্বিরোধী নিরীহ শান্তশিষ্ট এক কিশোরীকে কে খুন করতে পারে? তাও এমন বিভৎসভাবে? রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই হঠাৎ তার দেখা-পরিচয় হয়ে যায় আজমিনের সঙ্গে। আজমিন হায়দার চৌধুরী সম্প্রতি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি থেকে ঢাকার মহাখালী এসে বসতি গেড়েছে। বাবার আদরে আর মা'র শাসনে বড় হওয়া অল্পতেই মাথাগরম আজমিন একদম টমবয়, ছেলেদের সাথে সমানে ক্রিকেট খেলে, সার্বক্ষণিক বিশ্বস্ত সঙ্গী ল্যাব্রাডর রিট্রিভার কুকুর কুট্টুস। খোলামেলা কাজীর দেউড়ির পরে মহাখালীতে তার দমবন্ধ হয়ে আসে, মাঠে দুয়েকবার ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল এখানকার ছেলেগুলো সব খেলা বাদ দিয়ে হাঁ করে টিশার্ট-ট্রাউজার পরা আজমিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুনীরকে সে প্রথমে একেবারেই পাত্তা না দিলেও আর দুজনের মধ্যে বিরতিহীন ঠোকাঠুকি লেগে থাকলেও অল্পসময়েই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। আজমিনের ঘনিষ্ঠতম বান্ধবী বইয়ের পোকা অরিন, কথায় কথায় বইলব্ধ জ্ঞানের বাণী ঝাড়তে যার জুড়ি নেই। কক্সবাজার থেকে কুণ্ডু ফিরে আসে, ক্রমে ক্রমে চার মাথা একত্রিত হয় (কুট্টুসকে ধরলে পাঁচ)। আজমিনও মিথিলাকে চিনত, এক স্কুল না হলেও একই কোচিং-এ পড়ত। তিন গোয়েন্দা-টিনটিন-ফেলুদা-টেনিদা গুলে খাওয়া স্বঘোষিত 'চার মূর্তি' ঠিক করে মিথিলা-খুনের রহস্যভেদ করার চেষ্টা করবে। হেডকোয়ার্টার বানায় কাছের এক পরিত্যক্ত খালি প্লটকে, হলুদ গেটের কারণে তিন গোয়েন্দার 'সবুজ ফটক এক'-এর আদলে নাম দেয় 'হলুদ ফটক এক'। বইয়ের আরেক অন্যতম প্রধান চরিত্র মিথিলা-কেইসের দায়িত্বে থাকা গুলশান থানার এসআই ফজলে নূর। একদিকে নূরের অফিসিয়াল ইনভেস্টিগেশন, আরেকদিকে চার মূর্তির শখের গোয়েন্দাগিরি... সমান্তরালে এগুনো দু'পক্ষে প্রথম প্রথম রেষারেষি চললেও ধীরে ধীরে পারস্পারিক সহযোগিতার সেতু তৈরি হতে থাকে।

উপরের কাহিনিসংক্ষেপটা পুরো বইটির মাল্টিলেয়ারড কাহিনির তুলনায় কিছুই না, কেবল শুরুর ৭০-৮০ পৃষ্ঠার প্রস্তাবনা। রিভিউ লিখতে কাহিনি বর্ণনা করা আমার ধাতে নেই, আসন্ন আলোচনার জন্যে এইটুকু আইডিয়া দেয়ার প্রয়োজন ছিল। লেখক বইটিকে উৎসর্গ করেছেন সেবা প্রকাশনীর 'তিন গোয়েন্দা' ও স্রষ্টা রকিব হাসানকে, আর অন্তত উল্লিখিত কাহিনিসংক্ষেপ থেকে বোঝাই যায় কেন। নৈর্ঋত নাইন্টিজে বড় হওয়া আমার জেনারেশনের পাঠকদের জন্য এক নিরন্তর নস্টালজিয়া। আমি নিজে একই শহরে একই সময়ে বড় হয়েছিলাম ঠিক একইভাবে, পড়াশুনা নিয়ে সারাক্ষণ মা-বাবার কঠোর শাসনে দম আটকে আসা স্কুলজীবনে একমাত্র মুক্তি ছিল সেবা'র তিন গোয়েন্দা, ক্লাসিক-মুজাই'র কিশোরোপন্যাস-টেনিদা-ফেলুদা-ব্যোমকেশ-টিনটিনদের স্বপ্নের রঙিন অ্যাডভেঞ্চার জগৎ। সেইসময় রহস্য-রোমাঞ্চের কাল্পনিক দুনিয়ায় বিচরণ করা আমি যদি এমন একটা রহস্যময় খুনের মুখোমুখি হতাম তাহলে কী করতাম? ঠিক সেটাই উঠে এসেছে উপন্যাসে। তাই প্রতিটা পৃষ্ঠায় গল্প এগিয়েছে, আর আমি যেন নিজেই ফিরে গেছি সেই সময়ের সেই ঢাকায়, পড়ার বদলে নিজের চোখ দিয়ে দেখছিলাম অনুভব করছিলাম প্রতিটা ঘটনা।

এদিক থেকে 'নৈর্ঋত' ঠিক যতটা রহস্য-থ্রিলার, ঠিক ততটাই এক ক্লাসিক কামিং অফ এইজ স্টোরি। আমাদের দেশে প্রচুর কিশোরোপন্যাস লেখা হয়েছে - একটুখানি হাস্যরস, খানিকটা অ্যাডভেঞ্চার, অনেকটা রহস্যসমাধান, ব্যাস। কিন্তু কিশোরদের নিয়ে লেখা পুরোদস্তর পরিণতমনষ্কের প্রাপ্তবয়সোপযোগী উপন্যাস, তাও এহেন বিশাল আঙ্গিকে, কি আর লেখা হয়েছে? আমার তো মনে পড়ছে না। টেনিদা-তিন গোয়েন্দার ছায়া থাকলেও যতই এগিয়েছি আমি আপনা থেকেই প্যারালালিজম টেনেছি স্টিফেন কিং-এর মডার্ন হররক্লাসিক It-এর সঙ্গে। 'ইট'-এর সাথে কাহিনিগত কোনো মিল না থাকলেও সেটা যেমন একাধারে হরর-উপন্যাসের পাশাপাশি একটি পার্ফেক্ট কামিং অফ এইজ স্টোরি, 'নৈর্ঋত'ও ঠিক তাই। একদল কিশোর-কিশোরী তাদের ছোট্ট নিস্তরঙ্গ শহরে দ্বৈরথে জড়িয়ে পড়ে ভয়াল বিভীষিকা পেনিওয়াইজ দ্য ক্লাউনের সঙ্গে; এইটিজের স্টিফেন কিং থেকে অনুপ্রাণিত হালের 'স্ট্রেঞ্জার থিংস' টিভিসিরিজও অনেকটা তাই। এখানে মুনীর-কুণ্ডু-আজমিন-অরিন-কুট্টুসের বিপরীতে পেনিওয়াইজ বা ডেমোগরগনের বদলে পৌরাণিক দানব দ্য লিজার্ড কিং। আর সেই সংঘাতের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই যেন রাতারাতি তাদের চারপাশের সাজানো-পরিচিত পৃথিবীটা ভেঙেচুরে গল্পের বইয়ে ডুবে থাকা তদন্ত-তদন্ত খেলতে থাকা স্কুলের ছেলেমেয়ে থেকে পরিণতবয়সের মানুষ হয়ে ওঠা। [ধারণা করতে পারি লেখক নিজেও এই প্যারালালিজমে সচেতন, মুনীর-কুণ্ডুকে আজমিন-অরিন নিজেদের মধ্যে "লুজার" বলে ডাকে। 'ইট'-এর ছেলেমেয়েদের দলের নাম ছিল "দ্য লুজারস ক্লাব"।]

যদিও দলগঠনে মোটাদাগে তিন গোয়েন্দার ছায়া ইচ্ছাকৃত (সুচিন্তক মুনীর=কিশোর, ভোজনরসিক কুণ্ডু=মুসা, টমবয় আজমিন=জিনা, বইপোকা অরিন=রবিন, কুকুর কুট্টুস=রাফিয়ান), ক্যারেক্টার ডায়নামিক ও ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট পুরোপুরিই লেখকের নিজস্ব। মুনীর নিজেকে কিশোর পাশা ভাবতে পছন্দ করলেও ঠান্ডামাথার গোয়েন্দাগিরিতে বা প্রয়োজনে লীড দিতে বাকি তিনজনের কেউই তেমন একটা পিছিয়ে নেই। বইয়ের মাঝামাঝিতে একটা দুর্ঘটনায় মুনীর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যাকসিটে চলে গেলে ফ্রণ্টসিটে এগিয়ে আসে কুণ্ডু। কুণ্ডু হয়তো ভোজনরসিক, কিন্তু মুসার মতো ভূতের ভয়ে সে কাবু নয় দরকারে মাথা খেলাতেও পারদর্শী। আজমিন নিজেকে জিনা মনে করে, কার্যক্ষেত্রে সে রহস্যসমাধানে মিস কিশোর পাশা থেকে কোনো অংশে কম না। তেমনি ঠাণ্ডামাথার অরিন বহুবারই হুটহাট মাথাগরম আজমিনকে সামলে তদন্তের গতিবিধি পরিচালনা করেছে। চৌকস পুলিশ অফিসার ফজলে নূর বলতে গেলে রহস্যসমাধানের প্রকৃত ড্রাইভিংফোর্স, যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে একটু একটু করে প্যাঁচের উপর প্যাঁচে গিট্টু মেরে থাকা জটিলতার জাল ছিন্ন করে সঠিক পথ খুঁজে নিয়েছে। মুনীররা নিজেদের আমেরিকাবাসী তিন গোয়েন্দা মনে করতে পারে, তবে নূরের তদন্তরীতি একেবারে অকৃত্রিম বাংলাদেশি স্টাইলেই, পশ্চিমা মুভি-সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত কোনোপ্রকার কাল্পনিক টেকনোলজিক্যাল সহায়তা ছাড়া কেবল মাত্র মাথা খাঁটিয়ে সূত্র ধরে ধরে আর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে।

বাস্তবজীবনের শক্তিশালী রক্তমাংসের ত্রিমাত্রিক চরিত্রদের সমন্বয়ে অসাধারণ, আক্ষরিক অর্থেই ওয়ান অফ আ কাইন্ড কামিং অফ এইজ গল্পটির কমতি যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে তা কেন্দ্রীয় রহস্যের পেছনের উত্তরে। লেখক এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও আগাথা ক্রিস্টিয় পথে হাঁটার চেষ্টা করেছেন, অর্থাৎ রহস্যসমাধানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূত্র কাহিনির বিস্তারে/বর্ণনায় আপাতসরলতায় ছড়িয়ে দিয়েছেন, ফলে মনোযোগী পাঠক বই অর্ধেক যেতে যেতেই প্রকৃত কালপ্রিট কে আন্দাজ করে ফেলতে পারে। সেটা তেমন সমস্যা ছিল না, যেহেতু গৎবাঁধা খুনের কাহিনির পরিবর্তে অতিপ্রাকৃত-পৌরাণিক-ফ্যান্টাসি-সবচেয়ে বড় কথা চিরন্তন নারী-পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা মিলিয়ে রহস্যের বিস্তার আরো অনেক বৃহদাঙ্গিকে, প্রায় ত্রিশ বছরে ছড়িয়ে থেকে। কিন্তু মূল রহস���যের বাইরে আরেকটি সাইড-রহস্য যেটার সাথে বাকি ঘটনাবলীর কোনোই যোগাযোগ ছিল না সেটার সমাধানের টুইস্ট আর কয়েক অধ্যায় পরেই পর্দার আড়ালের হোতাকে চিহ্নিত করার প্রধান টুইস্ট এক হয়ে গেছে, ফলে উদ্ঘাটনটা (উত্তর জানা থাকার পরেও) যতটা ধাক্কা দিতে পারত তা অনেকটা জলো হয়ে গিয়েছিল। আরেকটা জিনিসে শেষমেষ মন ভরেনি, সেটা হলো স্বয়ং দ্য লিজার্ড কিং। ছয়শ পৃষ্ঠার বই জুড়ে যে পৌরাণিক দানব নিয়ে সবার থরহরিকম্প, সেই দুঃস্বপ্নের বিভীষিকাময় দানবের সাথে চার মূর্তি'র ক্লাইমেক্স অ্যাকশনটা একেবারেই জমলো না। লিজার্ড কিং প্রতিটা লাশের শরীরের একটা অংশ নিয়ে যায় সেগুলো দিয়ে নিজের দেহটা তৈরি করবে বলে (বা এমন কিছু একটা উল্লেখ ছিল বইতে পুরোপুরি মনে নেই), সেই অল পাওয়ারফুল সৃষ্টির আদিমতম স্বত্তা টিকটিকিশ্বর শেষপর্যন্ত কেবল একটা বিশাল সাইজের সাপ ছাড়া আর কিছুই না, যার শরীরে সাপের আকৃতির বাইরে ভিন্নরকম কিছুই দেখা গেল না, হাত পা বলেও কিছু নেই। তাহলে লাশের অংশগুলি দিয়ে কী করল? খুনের সময় ভিক্টিমের হাত-পা-মাথা সব টেনেটেনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করেছে, হাত ছাড়া টানলোই বা কী করে?? কেনই বা তাকে বলা হয়েছে "লিজার্ড" কিং, কেন "সার্পেন্ট" কিং নয়? লেজকাটা টিকটিকির সাথে সম্পর্কটাই তো ধরতে পারলাম না। তারচেয়ে প্রচ্ছদের হাত-পা-মাথা ওয়ালা টিকটিকিসদৃশ সরীসৃপের ভীতিকর চেহারাটা অনেক বেশি উপযুক্ত ছিল। টিকটিকিশ্বরের সাথে আজমিনদের ফাইনাল ফাইটের ঘটনা কেবল দুই পৃষ্ঠায়, সেটাও দূর থেকে মন্ত্র পড়া হলো, কিং সাহেবের খেল খতম। দীর্ঘ ছয়শ পৃষ্ঠা ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার পরে অতিপ্রাকৃতিক দানবটি যদি আধপৃষ্ঠাতেই পরাজয় মেনে নেয়, তাহলে তাতে আশাহত হতেই হয়। এখলাসউদ্দীন হুজুরের ব্যাপারটা একেবারেই কনফিউজিং - পরিষ্কার দেখানো হলো সে-ই ছদ্মবেশধারী লিজার্ড কিং মুনীরকে ধরে নিয়ে যাবার জন্যই এসেছিল, ঠিক ১২:২৯এ খোলস বদলানোর পর তাকে "হুজুর" বলে উল্লেখ করা হয়েছে গ্রীক ভাষায় কথাও বলেছে মুনীরের সঙ্গে, অথচ পরে বলা হলো প্রকৃত কালপ্রিট সবাইকে বোকা বানানোর জন্য মুনীরের পাশাপাশি হুজুরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আর কিছুই না, লিজার্ড কিং-এর মুনীরের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই! সেক্ষেত্রে খোলস বদলানো ব্যক্তিটিকে হুজুরের পরিবর্তে উক্ত কালপ্রিট হিসেবে উল্লেখ করলে কনফিউশনটা দূর হয়ে যেত না? সেও তো রূপান্তরিত হয়েছিলই (যদিও তার ঠিক ২৯ জুলাই ১২টা ২৯ মিনিটে খোলস বদলানোর কোনো কারণ নেই)। লিজার্ড কিংকে সাইজ করার সময় আজমিন মন্ত্র পড়তে নৈর্ঋত কোণে দাঁড়ায়, এখানে ঈশান কোণ হবে, ২৭ জুলাই রাতের টিকটিকি-বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার সময় তা-ই বলা হয়েছিল। এছাড়া মিথিলা মুনীরকে ছোটবেলায় কী ভয়ঙ্কর সিক্রেট বলেছিল সেটা নিয়ে যেমন ঢোল পেটানো হয়েছিল, উত্তরটা সেতুলনায় কিছুই না। যবণিকাপাতে কুণ্ডু'র পয়েন্ট-অফ-ভিউ থেকে একটা অধ্যায়ের খুব অভাব অনুভব করেছি... যাদের নিয়ে গল্পের শুরু, তাদের চারজনের দু'জনেরই কোনো হদিশ পেলাম না শেষে! লেখকের প্রাণপ্রিয় নস্টালজিক মহাখালী এলাকাও যেন রহস্যসমাধানের উপর্যুপুরি টুইস্টের পাহাড়ের নিচে পড়ে শেষে এসে বেমালুম হারিয়ে গেল। নূরের পিওভি অধ্যায়ের বদলে বা সেটার পরে চারমূর্তির পিওভি থেকে হলুদ ফটক এক-এর চাতালে বিদায়কালের একটা দৃশ্যের বড়ই প্রয়োজন ছিল।

যাইহোক, শেষাংশের ছোটখাট সমস্যাগুলো বাদ দিলে ওভার অল নৈর্ঋত জাহিদ হোসেনের লেখা আরেকটি মহাকাব্যিক মাস্টারপিস। গতানুগতিক রহস্য বা মিথ বা সুপারন্যাচারাল জিনিসপাতির চেয়েও জীবন থেকে নেয়া চরিত্র চিত্রায়ণ, চরিত্রের ক্রমবিকাশ ও পারস্পারিক চরিত্রগত সম্পর্কের জটিলতাকে নিখুঁতভাবে বইয়ের পাতায় উঠিয়ে নিয়ে আসা অনেক বেশি কঠিন কাজ, তিনি তা এমন সহজাত ভঙ্গিমার সাথেই লিখেছেন যেন এরচেয়ে সহজ কাজ আর হয় না। স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মিশেলে সহজসরল ভাষায় বয়োসন্ধিজীবনের খুব কঠিন-জটিল কথা অবলীলায় স্বচ্ছতার সাথে তুলে ধরেছেন - তৎকালীন মিডলক্লাস বাঙালী কিশোর-কিশোরীদের মেলামেশায় অপ্রতিভ আচরণ-অহংবোধ, কিশোরীদের প্রতিনিয়ত সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে টিনেজারদের পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে না চলতে পারা, বাবা-মা'র মাত্রাতিরিক্ত রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিমা, নিজের ছেলেমেয়েদের সর্বক্ষণ অন্যের ছেলেমেয়ের সাথে তুলনা করে হেয় করা ইত্যাদি ইত্যাদি। লেখকের লেখনি মসৃণ-চুম্বকীয়-গতিশীল, ছয়শ পৃষ্ঠা হোক আর একহাজার, একবার শুরু করলে ছাড়া যায় না, মন্ত্রমুগ্ধের মতো আটকে রাখে, আর মাঝে মাঝেই উদ্ভট হাস্যরসে হো হো করে হেসে উঠতে বাধ্য করে। কেবল এসব কারণেই আমি অনায়াসে নৈর্ঋত-কে পাঁচে পাঁচ তারা দিবো।

যেটা বলে শুরু করেছিলাম, বইটা শেষ করে অম্লমধুর বিষাদময় সমাপ্তিতে মনটা উদাস হয়ে গিয়েছিল। না, কেন্দ্রীয় চরিত্রদের কেউই অক্কা পায়নি, প্যান্ডোরার বাক্স-রহস্যে আর লিজার্ড কিং-এর সাথে টক্করেও শেষমেষ তাদের জয় ঠিকই হয়েছে। তবে সেটা অনেক উচ্চ মূল্যের বিনিময়ে। তাই শেষ ক'টা লাইন পড়ে আপনা থেকেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। জাহিদ হোসেনের বই আর আপাতত পড়ব না ভাবছি। তাঁর উপন্যাস যতটা কৌতূহলোদ্দীপক হয়, পড়তে যতটা মজা লাগে, বিবর্ণ সমাপ্তি ততটাই ইমোশনালি ড্রেইন করে দেয়, মন ভারী হয়ে যায়। ঈশ্বরের মুখোশ-এর মতো পিচ ব্ল্যাক এন্ডিং বা গিলগামেশ-এর মতো গ্রীক ট্র্যাজেডিয় এন্ডিং হয়তো এবার হয়নি, তারপরেও তো সেই ধুসর "জীবনের মানে গেবন"-মার্কা সমাপ্তি। আমি চাই চার মূর্তি-কে নিয়ে লেখা আরো নতুন নতুন জমজমাট রহস্য-অ্যাডভেঞ্চার, কুণ্ডুর হাস্যকৌতুক, অরিনের জ্ঞান ঝাড়া, মুনীর-আজমিনের নিত্য-ঠোকাঠুকি... গল্পশেষে এইরকম বিচ্ছেদের বিষন্ন সুর না, ড্যাম ইট!!
"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আর আমি মিলে একদিন ক্যারাভানে চেপে ইউরোপ ঘুরে বেড়াবো। তুমি গিটারে জিম মরিসনের স্প্যানিশ ক্যারাভান গাইবে, আমি শুনবো। বাইরে তারাজ্বলা আকাশ। কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দিবে। তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না। মিটিমিটি হাসবে স্রেফ। আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন-পর্তুগাল-আন্দালুসিয়া।"

বিঃদ্রঃ মাহাতাব রশীদের চোখধাঁধানো দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ বইটির ওয়ান অফ দ্য বিগেস্ট প্লাস পয়েন্ট। একদম পার্ফেক্ট। এই উপন্যাস এহেন দুর্ধর্ষ প্রচ্ছদই ডিজার্ভ করে। ওয়াসিফ নূরের ভেতরকার অলঙ্করণ চলনসই। স্কেচগুলো দেখতে সুন্দর হলেও অনেকসময় বইয়ের ঘটনার ডিটেইলসের সাথে ছবির ডিটেইলসের মিল নেই, আবার কিছু ক্ষেত্রে ডাইমেনশন-ডেপথ উলোটপালোট হয়ে গেছে, পার্সপেক্টিভ দৃশ্যে ফোরগ্রাউন্ড-ব্যাকগ্রাউন্ড একাকার হয়ে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। অবসর প্রকাশনার বাঁধাই-ছাপা-কাগজ দুর্দান্ত, মুদ্রণ প্রমাদ নেই বললেই চলে। শেষের দিকের ঘটনাক্রমে "২৫ জুলাই"-"২৬ জুলাই"-"২৭ জুলাই" টাইটেল দিলেও, ২৮ ও ২৯ জুলাইয়ের টাইটেল দেয়া হয়নি, দেয়া উচিত ছিল।

বিঃবিঃদ্রঃ লেখকের সম্ভবত "হয়তোবা" বলা/লেখাটা মুদ্রাদোষ, ছ'শ পৃষ্ঠা ধরে দুয়েক লাইন পর পর "হয়তোবা" পড়তে পড়তে হয়তোবা আমার মাথাই আউলায় যেত!
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
February 11, 2023
গিলগামেশের পর আরেকটা মহাকাব্যিক আখ্যান। মনে দাগ কেটে রাখবে নৈঋত। দুর্দান্ত একটা বই, সুবিশাল এই বইটা পড়তে গিয়ে একবারও ক্লান্তিবোধ হয়নি। বইটা সংগ্রহে ছিল দীর্ঘদিন, কিন্তু বইটা পড়ার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। অনেকটা ওয়াইন ফেলে রেখে পুরানো বানিয়ে নেশা বাড়ানোর ধান্দার মত। সঠিক সময় এসেছিল কিনা জানি না, তবে আমার উদ্দেশ্য সফল। পুরানো ওয়াইনের মতই নেশা হয়েছে বইটা পড়ে। পুরো বই জুড়েই ছিল থ্রিল, এডভেঞ্চার, সাসপেন্স, ভয়, রহস্য, ফ্যান্টাসির উপাদান। আর ছিল একঝাঁক নস্টালজিয়া। তিন গোয়েন্দা, জিম মরিসন, শচীন টেন্ডুলকার, জিনেদিন জিদান, লারা... সবার উদ্দ্যেশ্যেই যেন একটা ট্রিবিউট এই বই। শুরুটা যেমন দুর্দান্ত, শে���টাও ঠিক একই তৃপ্তিময়, বিষাদমাখা। কিছু জায়গায় ভয়ের এলিমেন্ট ছিল গা শিউরে ওঠার মত। শেষটা চমক জাগানিয়া। পুরো বইটাই যেন ছিল শচীনের স্কেল দিয়ে মাপা কোনো দৃষ্টিনন্দন স্ট্রেট ড্রাইভের মত।
Profile Image for Nazrul Islam.
Author 8 books228 followers
April 15, 2022
"নৈর্ঋত" বইটাকে একইসাথে পুলিশ প্রসিডিউরাল, মিথলজিক্যাল থ্রিলার, কামিং টু এইজ জনরায় অনায়াসে ফেলে দেয়া যায়। আমার মতে যতটা না থ্রিলার তার চেয়ে কামিং টু এইজ জনরার।
এতো এতো সাবপ্লট সবগুলো এত ডিপলি কানেক্টেড যে বিস্তারিত লেখাটা টাফ।

লেখক প্রচুর প্রচুর রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। যেগুলো কিনা আমাদের শৈশব কৈশোরের সাথে জড়িত।
তিন গোয়েন্দার সরাসরি রেফারেন্স আছে। ভূত থেকে ভূতে এবং মেরি চাচির আদলে একজনের নাম কিংবা প্রধান ফটক ১ দেখে নিঃসন্দেহে আমার মতো যারা তিন গোয়েন্দার পাড় ভক্তরা নস্টালজিয়াতে আক্রান্ত হতে বাধ্য। ভোটকা পেটুক কুণ্ডু(মুসা আমান),মুনীর(কিশোর পাশা), আজমিন(জিনা) সাথে জিনার কুকুরের মতো আজমিনের কুকুর কুট্টুসকে দেখে যে কেউ খুব সহজে মিলিয়ে নিতে পারেন তিন গোয়েন্দার সাথে। কিন্তু সবচেয়ে মজা হলো বইতে কারো এককের উপর নির্ভর করে নেই গল্পের ফ্লো। প্রতিটি ক্যারেক্টার দায়িত্ব নিতে পারে সময় মতো। আবার কাহিনীর মূল কেস অফিসার ফজলে নূরের একজন সাধারণ পুলিশ অফিসার হিসাবে খুটে খুটে কেস সলভ করার চেষ্টাকে আপনি ক্রেডিট দিতে বাধ্য হবেন।

যারা তিন গোয়েন্দা পড়ে বড় হয়েছে কিন্তু একটা সময় পরে আর ভালো লাগে না শিশুতোষ ভার্সনের কারণে তাদের জন্য এইটা দারুন একটা বই। বইতে তিন গোয়েন্দার ১০০ভাগ ফ্লেভার আছে কিন্তু সম্পূর্ণ ম্যাচিউর পাঠকের জন্য। প্রচুর এডাল্ট কন্টেন্ট এবং গানের রেফারেন্সের কথা নাইবা বললাম। কিছু কিছু জায়গায় জাহিদ ভাইয়ের সিগনেচার চুটকি তো আছেই।
একই সাথে কাহিনী খুবই ডার্ক এবং গ্রিপিং। কেউ যদি ফাস্ট পেইজড বই পড়বেন এরকম আশা নিয়ে বইটা হাতে নেন তাদের একটু আশাহত হতে হবে। কারন বইতে ডায়লগ এর চেয়ে কাহিনীর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে বেশি। তাই পড়তে হলে অবশ্যই ধীরে ধীরে গলাধকরণ করার মানসিকতা নিয়েই পড়তে হবে। এতো এতো সাব প্লট, সবগুলোকে কানেক্ট করতে হলে মনোযোগ অবশ্যক।

প্রচুর গানের রেফারেন্স থাকাটা তো জাহিদ ভাইয়ের সিগনেচার স্টাইল। আর সেগুলো কাহিনীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আর শেষের সমাপ্তি যে কারো মন খারাপ করে দিতে বাধ্য। মনটা হুহু করে উঠল শেষ করার পরে।

"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আর আমি মিলে একদিন ক্যারাভানে চেপে ইউরোপ ঘুরে বেড়াবো। তুমি গিটারে জিম মরিসনের স্প্যানিশ ক্যারাভান গাইবে, আমি শুনবো। বাইরে তখন তারাজ্বলা আকাশ। কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দিবে। তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না। মিটিমিটি হাসবে স্রেফ। আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন-পর্তুগাল-আন্দালুসিয়া।"
carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can
Trade winds find Galleons lost in the sea
I know where treasure is waiting for me
Silver and gold in the mountains of Spain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can

Rizwan khalil ভাইয়ের রিভিয়ের একটা অংশ হুবুহু নিচে কপি করে দিলাম। কারণ বইটার ক্ষেত্রে এটাই একদম পারফেক্টঃ
"গতানুগতিক রহস্য বা মিথ বা সুপারন্যাচারাল জিনিসপাতির চেয়েও জীবন থেকে নেয়া চরিত্র চিত্রায়ণ, চরিত্রের ক্রমবিকাশ ও পারস্পারিক চরিত্রগত সম্পর্কের জটিলতাকে নিখুঁতভাবে বইয়ের পাতায় উঠিয়ে নিয়ে আসা অনেক বেশি কঠিন কাজ, তিনি তা এমন সহজাত ভঙ্গিমার সাথেই লিখেছেন যেন এরচেয়ে সহজ কাজ আর হয় না। স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মিশেলে সহজসরল ভাষায় বয়োসন্ধিজীবনের খুব কঠিন-জটিল কথা অবলীলায় স্বচ্ছতার সাথে তুলে ধরেছেন - তৎকালীন মিডলক্লাস বাঙালী কিশোর-কিশোরীদের মেলামেশায় অপ্রতিভ আচরণ-অহংবোধ, কিশোরীদের প্রতিনিয়ত সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে টিনেজারদের পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে না চলতে পারা, বাবা-মা'র মাত্রাতিরিক্ত রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিমা, নিজের ছেলেমেয়েদের সর্বক্ষণ অন্যের ছেলেমেয়ের সাথে তুলনা করে হেয় করা ইত্যাদি ইত্যাদি। লেখকের লেখনি মসৃণ-চুম্বকীয়-গতিশীল, ছয়শ পৃষ্ঠা হোক আর একহাজার, একবার শুরু করলে ছাড়া যায় না, মন্ত্রমুগ্ধের মতো আটকে রাখে, আর মাঝে মাঝেই উদ্ভট হাস্যরসে হো হো করে হেসে উঠতে বাধ্য করে। কেবল এসব কারণেই আমি অনায়াসে নৈর্ঋত-কে পাঁচে পাঁচ তারা দিবো।"
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
October 24, 2022
(এতকিছু পড়তে মন না চাইলে সরাসরি ৪নং এ যান)

১। ইহা একটি ক্রাইম থ্রিলার বই যাতে আপনি পাবেন মিথ, হরর, কিশোর ইনভেস্টিগেশন। চারটা বাচ্চা পুলাপান এরা ইনভেস্টিগেশন শুরু করে, যাতে আপনি তিন গোয়েন্দা ভাইব পাবেন এবং তিন গোয়েন্দার পাগলা ভক্ত হলে অবশ্যই নস্টালজিক হবেন। উৎসর্গে লেখা "কৈশোর যাদের ছোঁয়ায় রঙিন হয়েছিল সেই প্রিয় তিন গোয়েন্দা ও এর স্রষ্টা রকিব হাসানকে।। আর এখানে যে হরর ইলিম্যান্ট " লিজার্ড কিং" ইনি এসেছে মিথ থেকে।।
মানে overall একটা প্যাকেজ একদম...
(আর হা, এখানে খুনগুলা খুব মর্মান্তিকভাবে করা হয় 😐
মানে ধড়, পা, হাত, এসব খুব সুন্দর কইরা আলাদা করা হয় 😐)

২। লেখকের গল্প সাজানো ছিল অসাধারণ! এত ঘটনা, ক্রাইম সিন এবং পারিবারিক সম্পর্ক, এসব যে কত সুনিপুণ হাতে উনি গেঁথেছেন!
বেশ কিছু অদ্ভুত/অলৌকিক ঘটনা ছিল যেগুলো অতটাও অলৌকিক মনে হয়নি, কারণ মিথ এবং হরর মিশ্রিত একটা গল্পে এসব বেশ স্বাভাবিক মনে হলো

৩। লাস্ট বাট নট লিস্ট, মাহাতাব রশীদ এর এই অসাধারণ প্রচ্ছদ! hats off to you brother!!
মাঝেমধ্যে তো বইটা রেখে শুধু বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম

৪। go fucking buy this masterclass triller!
It's totally worth buying!
অসাধারণ থ্রিল, এমন smoothly গল্প বলা, মিথ, আর কি লাগে! আমার তো মনে হয়, শুধু প্রচ্ছদের জন্য হলেও কিনে ফেলা উচিত ( প্রচ্ছদ একটু বেশি ভাল লাগছে বলে একটু বেশি বলে ফেললাম নাকি কোনো! 😐)

৫। এমন রোলারকোস্টার থ্রিলার বইটা শেষ করতেই এক মাস লাগায়া দিলাম! তাহলে বুঝেন অবস্থা আমার বই পড়ার! রিভিউ লেখার অবস্থাও একই দশা।
সুতরাং ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
Profile Image for Taznina Zaman.
251 reviews63 followers
May 30, 2023
"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আর আমি মিলে একদিন ক্যারাভান চেপে ইউরোপ ঘুরে বেড়াবো। তুমি গিটারে জিম মরিসনের স্প্যানিশ ক্যারাভান গাইবে, আমি শুনবো। বাইরে তখন তারাজ্বলা আকাশ। কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দেবে। তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না। মিটিমিটি হাসবে স্রেফ। আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন- পর্তুগাল - আন্দালুসিয়া।"


সময়টা ১৯৯৯/২০০০। ক্লাস থ্রিতে পড়ি বড়জোর। একদিন সাহস করে ভাইয়া আর আপির চোখ এড়িয়ে স্টিলের শেলফ থেকে নিলাম তিন গোয়েন্দার 'ঠকবাজি'। সেই আমার তিন গোয়েন্দাপ্রীতি শুরু। তারপর তো একের পর এক ভলিউম সাবাড় করা। নিজেকে কাল্পনিক কিশোর পাশা ভেবে ফ্যান্টাসিতে ভোগা। আরো কত কী!

আমার জন্ম কাটায় কাটায় ১৯৯০ সালে। তিন গোয়েন্দা, ইরাকে আমেরিকার হামলা, ২০০৩ বিশ্বকাপের সেই অলৌকিক ফাইনাল সব যেন একসাথে ফিরে পেলাম। মোটামুটি একটা টাইম ট্রাভেল হয়ে গেলো।

সময় বাড়ে। আমি বড় হই। তিন গোয়েন্দার বইয়ে ধুলো জমে। আর পড়া হয় না। সেই তিন গোয়েন্দাকে আবার ফিরে পেলাম নৈর্ঋতে।

নৈর্ঋত শুধু অসামান্য এক ফ্যান্টাসি থ্রিলার না। এটা একটা ইমোশন। একটা প্রজন্মের দিনলিপি। যে প্রজন্মের স্বাদ একমাত্র নাইন্টিজ কিডরাই জানে।

ভালো থাকুক, মুনীর- আজমিন, ভালো থাকুক অরিন, কুন্ডু আর ছোট্ট কুট্টুস। নৈর্ঋতের ঘোর থেকে বের হতে আমার নিশ্চিতভাবেই ক'দিন সময় লাগবে।

পুনশ্চঃ বই শেষ করার পর কখন দুই ফোঁটা চোখের পানি ঝরে পড়লো, বুঝিনি। নৈর্ঋত যদি হয় নাইন্টিজের মহাখালীর প্রতি ট্রিবিউট, তবে আমার চোখের জলও হচ্ছে নৈর্ঋতের প্রতি সামান্য ট্রিবিউট 🙂🙂
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
April 6, 2022
একজন স্কুল ছাত্রীর খন্ডবিখন্ড লাশ পাওয়া যায় এক বস্তীর খালে বস্তাবন্দি অবস্থায়। লাশের সাথে পাওয়া যায় ২৯টা লেজবিহীন টিকটিকি ও ছোট্ট একটা চিরকুটঃ লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে।

তাছাড়াও খুন হওয়া ছাত্রী মিথিলা ফারজানার ঘাড়ে আঁকা ছিল লেজবিহীন টিকটিকির ট্যাটু এবং একটি অচেনা ভাষা লিখা ছিল তার পিঠে।

Πανδώρα

এইটুকুই বইটা পড়ার জন্য যথেষ্ট আগ্রহ জাগায়। এই খুনকে কেন্দ্র করে তদন্তে নামে মিথিলা ফারজানার সহপাঠী মুনীর, কুন্ডু এবং আজমীন, অরিন ও আজমীনের কুকুর ছোট্ট কুট্টুস। একদম তিন গোয়েন্দা স্টাইলে তদন্ত শুরু হয়। হলুদ ফটক এক এবং ভূত থেকে ভূতে এসব ও আছে বইয়ে। অবশ্য লেখক নিজেও বইটা তিন গোয়েন্দা ও রকিব হাসানকে উৎসর্গ করেছেন।
জাহিদ ভাইয়ের বইয়ের এন্ডিং নিয়ে সবার একটা কমপ্লেন শুনা যায় যে বেশ তাড়াহুড়ো করে শেষ করে বই, কিন্তু এই বইটা সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক সময় নিয়ে বইটা শেষ করেছেন, বইটা ৫২০ পৃষ্ঠার হলেও খুবই পেজটার্নার এবং থ্রিলিং ছিল।
বিদেশি বই হলে এতোদিনে বেস্ট সেলার এর খেতাব পেয়ে যেতো।

মাহাতাব রশীদের করা সুন্দর প্রচ্ছদ টার কথা আলাদা করে বলতেই হয়।তাছাড়াও বইটার প্রোডাকশন কোয়ালিটি বেশ ভালো ছিল। আমার অরেঞ্জ কালার প্রচ্ছদটাই বেশি ভালো লাগসে।

"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আমি মিলে একদিন ক্যারাভানে চেপে ইউরোপে ঘুরে বেড়াবো। তুমি গিটারে জিম মরিসনের স্প্যানিশ ক্যারাভান গাইবে,আমি শুনবো। বাইরে তখন তারাজ্বলা আকাশ। কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দিবে। তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না। মিটিমিটি হাসবে স্রেফ। আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন-পর্তুগাল-আন্দালুসিয়া।"

Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can


Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
October 3, 2022
মারাত্মক লেভেলের মাথানষ্ট করা একটা বই। মাত্তর দেড় দিনেই শ্যাষ । তাই অন্যান্য কাজকামের একদম ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা । কাজকাম গুছানোর আগেই গরম গরম অনুভূতিটা লিখে ফেলি। ফ্লপের অংশটুকু নিজে পড়ে নিবেন।

সিরিয়াল কিলিং, মিথ, ফ্যান্টাসি, থ্রিল, টুইস্ট সবকিছু মিলায়ে যা হয়ছে তার স্বাদ বহুদিন মুখে লেগে থাকবে । আমরা অনেকেই আছি যারা, জাফর ইকবাল, তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, টেনিদা এসব পড়ে বড় হয়েছি। আমি মনে করি তারা চরম নস্টালজিয়ায় ভুগবে। কখনো রহস্য সমাধানে তিন গোয়েন্দা স্টাইল, কোথাও বা টেনিদার সেই চিরাচরিত কমিক ব্যাপারগুলো বা ফেলুদার সেই আবহ, মিথলজি নিয়ে দুর্দান্ত রহস্যের বুনট, সাথে গল্পে গল্পে বরাবরের মতোই গান সবকিছু অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে আপনাকে ।বইটি নস্টালজিয়ায় শুধু ভোগাবে না, এক রহস্যময় সত্তার সাথেও আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিবে। তাই বলি কি, কাজকামের শীতবস্ত্র দহন করে ঝটপট লেগে পড়ুন। নতুন কিছুর স্বাদ পাবেন।
Profile Image for Salman Sakib Jishan.
272 reviews158 followers
November 16, 2025
'নৈঋত' হলো একটা কোণের নাম। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ। অন্য অর্থে রাক্ষস। অর্থ বা জনরা যেটাই হোক বইটা আসলে একটা জেনারেশনের গল্প। মিলেনিয়াল প্রজন্মকে আমি সবচাইতে লাকি জেনারেশন বলি। শৈশব, কৈশোরে তাদের বেড়ে ওঠার জন্য মহাকাল সব পসরা সাজিয়ে বসে ছিল। তারা আশির দশকের ভিন্টেজ কালচারও পেয়েছে, ডিজিটাল কালচারও পেয়েছে। একদিকে পাশ্চাত্যের শার্লক-ক্রিস্টি, ভারতের ফেলুদা-ব্যোমকেশ, দেশের তিনগোয়েন্দা-মাসুদরানার আসল এসেন্স তারা পেয়েছে, পেয়েছে বিস্তর খেলাধুলা-ছোটাছুটির জায়গা। আবার ইন্টারনেট, প্রযুক্তি তখন দ্বারে এসে টোকা দিচ্ছে। পপ কালচারের সব গ্রেট মানুষদের কাজ, গ্রেট খেলোয়ার, গ্রেট সিনেমা, সব তাদের কাছে বর্তমান ছিল। গ্লোবালাইজেশন-এর সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী কিশোর কিশোরী যে তারাই ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

একদম শুরুর পাতা থেকে আমরা একটা দশকের নানান দৃশ্যপটে ঘুরে বেড়াই চার মূর্তির সাথে। এসএসসি দেবে এমন একটা বয়স, ২০০৩ সালের গল্প। আমার মনে আছে এই বয়সটায় আমিও গোয়েন্দা হতে চাইতাম। এলাকার কোনো বাসায় চুরি হলেও ছুটে গিয়ে বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়তাম, ভুলভাল সমাধান বাতলে দিতাম। আমারও একটা বাহিনী ছিল। হেন কোনো অ্যাডভেঞ্চারাস কাজ নেই আমরা করতাম না। যেকারণে প্রচুর মার খেয়েছি জীবনে।

স্বভাবতই কয়েক বন্ধু মিলে একটা ক্রাইমের পেছনে ছুটছে এমন গল্পকে আমরা 'তিন গোয়েন্দা'র সাথে তুলনা করে ফেলি। হালের 'স্ট্রেঞ্জার থিংস'-ও সেই তুলনা থেকে বের হতে পারেনি। লেখক জাহিদ হোসেন সেই চেষ্টাও করেননি। তিন গোয়েন্দাকে আদর্শ মেনে, নানান ট্রিবিউট দিয়ে হাত ঝেড়ে ফেলেছেন আগেই। চার বন্ধুকে তিনি একটা মিস্ট্রি দিয়েছেন। বেশ জটিল মিস্ট্রি। তাদের ক্লাসমেট মিথিলা ফারজানাকে হঠাৎ একদিন কেটে পিস পিস করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলাদা আলাদা ভাগ করে কেউ একজন রেখে গেলো। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এমন হত্যাকান্ড দেশে আগেও ঘটেছে। তারমানে সিরিয়াল কিলার কেস? এমন চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সমাধান করতে পুলিশ তো দ্যূলোক ভ্যূলোক ভেদ করে ফেলবেই। এক এলাকায় থাকা অতি কৌতুহলী চার বন্ধু-বান্ধবী কি তাতে ইনভলভ না হয়ে পারে?
মুনীর, কুন্ডু, আজমিন, অরিন আর তাদের কুকুর কুট্টুস- তাই জড়িয়ে পড়ে তদন্তে, যেই তদন্তে যুক্তিবাদী পুলিশবাহিনী কখনোই সফল হতে পারতোনা এরকম কিছু ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় থাকা স্কেপ্টিক্যাল টিনেজার ছাড়া।

আমি গল্পের বিশদে যাবোনা। এখানে নানা জটিল ঘটনা ঘটতে থাকে। যেন প্যান্ডোরার বাক্স ভেঙে বেড়িয়ে এসেছে টিকটিকি...আইমিন সাপ। টিকটিকির কথা চলে এলো কারণ এই গল্পে প্রচুর টিকটিকি। মূল ভিলেনের নামই লিজার্ড কিং। তাই টিকটিকি দেখে টিকটিকি রাজাকে খুঁজেফেরে চার টিকটিকি।

৫০০+ পৃষ্ঠাসং্খ্যার ঢাউস বই। পুরো দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে পড়া হল। বইটা লম্বাসময় সাথে থাকায় শূন্য লাগছে শেষ করে। এবং খুব আনন্দ পেয়েছি পড়ে। অনেকদিন এমন একটা জম্পেস থ্রিলার পড়িনি। বইয়ের ভালোদিক অনেক। সবচেয়ে ভালোদিক অবশ্যই নব্বই দশককে বাস্তবে তুলে আনার বিষয়টা। নাইন্টিজ এর কিশোর কিশোরীদের রঙিন জীবন, সিডির যুগ, মোবাইল আসি আসি এর যুগ, ল্যান্ডফোনের যুগ, বইয়ের যুগ, নীলক্ষেতের যুগ, অজাচিত অ্যাডভেঞ্চার, কিউরিওসিটি, লুকিয়ে লুকিয়ে গরম গরম চ্যানেল দেখা, নিষিদ্ধ চিকন বই পড়া, সিডি, রহস্য পত্রিকা ইত্যাদি দেশীয় পপ কালচার এর একটা দারুণ রিসোর্স এই বইটা। প্রচ���র সিনেমা আর সাহিত্যের রেফারেন্স। আরও ভালো দিক টিনেজারদের পুরোপুরি পড়তে পারা। ওই বয়সী ছেলেমেয়েরা কিভাবে ভাবে, কি করে- সেই মেজাজটা শতভাগ ধর‍তে পেরেছেন লেখক। বইয়ের সবচাইতে সৌন্দর্য আমি মনে করি, এখানকার পারিবারিক গল্পটা। ক্ষুদে গোয়েন্দাদের প্রত্যেকে সমান গুরুত্ব পেয়েছে। কেউ মেইন ক্যারেক্টার না, সবার পরিবার, সবার চরিত্র সুন্দরভাবে সময় নিয়ে বিল্ডাপ হয়েছে। কড়া শাসনে বেড়ে ওঠার যত গল্প আছে কিছু বাদ যায়নি।

তবে চারশো পৃষ্ঠার পর আমি একটু হতাশ হয়েছি। এতে লেখকের খুব একটা দোষ আমি দিতে পারিনা। তিনি গল্প কিভাবে কোন দিকে নেবেন এটা তার ব্যাপার। আমি ততক্ষণে কালপ্রিট কে ধরে ফেলেছি খুব সহজ সূত্র ধরে। আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি সে কিভাবে ধরা খায় সেটা দেখার। কিন্ত লেখক সমাধান দিলেন অন্যভাবে, যেটা আমি চাইনি। মনে প্রচুর কিন্তু কিন্তুর জন্ম হলো। গল্পে বারবার শুধু টিকটিকির কথা। সবাই কি খালি টিকটিকই দেখে? গল্পের একপর্যায়ে ভাবছিলাম ছোটদের কি আবেগ টাবেগ কি এত কম নাকি? কখনো মনে হচ্ছিলো গল্পটা এক জায়গাতেই ঘুরছে বারবার, তাই এই একশো পৃষ্ঠা আরও কমে আসতে পারতো বলে মনে হয়েছে আমার। ওভারঅল খুব জম্পেস জমজমাট থ্রিলার। শীতের দিনে লেপের তলে বসে যেমন বই পড়ার একটা স্মৃতি আমি মাথায় পুষে রাখি, সেরকম একটা বই এটি। নস্টালজিয়া আর জমাট থ্রিলারের এমন কম্বিনেশন তেমন নেই আমাদের।
থ্রিলার যারা পড়েন, তাদের আমি বইটি রেকোমেন্ড করবো।

Πανδώρα

৪.৫/৫★
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews85 followers
July 17, 2022
৪.৫/৫

জাহিদ হোসেনের লেখনশৈলীর বিশেষ ভক্ত আমি। জাহিদ হোসেন মানেই টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গল্প, সাথে কাচ্চির আলুর মতোই স্বাদু ডার্ক হিউমার ও পপ কালচার রেফারেন্স তো আছেই! সেই ' ঈশ্বরের মুখোশ' থেকে ' নৈর্ঋত ' পর্যন্ত তিনি নিজের একটা সিগনেচার স্টাইল ডেভেলপ করে ফেলেছেন। সেই হিসেবে ' নৈর্ঋত ' পিউর জাহিদীয় একখান ফিকশন তবে এবার যুক্ত হয়েছে শৈশবের নস্টালজিয়া আর বেশ কিছুটা বিষাদ।
Profile Image for সা কিব.
58 reviews11 followers
October 19, 2022
Trade winds find Galleons lost in the sea
I know where treasure is waiting for me.

স্প্যানিশ ক্যারাভান? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ধাপ করে বসে পরল ব্যাটা আমার সামনের টুলটায়। ছাদে বসে আছি আমরা। এতক্ষণ আমিই ছিলাম। হ্যামকে দোল খেতে খেতে স্প্যানিশ ক্যারাভান শুনছিলাম ইয়ারবাডে। তখনই ব্যাটা হাজির!

"বইটা পড়ছিলাম বুঝলা।", ভূড়ির উপর দোল খেতে থাকা বইটার দিকেই ইঙ্গিত করলাম। "উনার এন্ডিং গুলা কেমন যেন? কেমন যেন লাভ লস নাই জীবনটাই লস টাইপ।" চেয়ে আছি ব্যাটার এক্সপ্রেশন পাওয়ার আশায়। ব্যাটা রীতিমতো টক্সিক ফ্যান লেখকের। আমিও তক্কে তক্কে ছিলাম ব্যাটারে কুক্কুযাতায় ফেলার। সুযোগের অভাবে পারিনি অনেকদিন। মনের ভেতর আইজকা তোরে পাইছিরে গান বাজতেছে।

" হ্যা এন্ডিং গুলা ঠিক সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল টাইপ হয়না", সুন্দর বাউন্স করা বলটাকে গ্যালারির বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে ব্যাটটাকে ক্রিজে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল আয়েস করে। আর আমার অবস্থা! একেবারে জোঁকের মুখে বিড়ির আগুন।

"তবে হ্যা, বইটা বেশ উপভোগ্য! প্লট, এক্সিকিউশন, ক্যারেক্টর ডেভলপমেন্ট। সব বেশ লেগেছে আমার। স্পেশালি মনিরের সাথে আজমিন আর অ্যামব্রিনের পরিচয়। ", ছাদের দরজাটা ঠিকমতো আটকানো কিনা দেখে নিয়ে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালাম। সামনের জনের মুখে চিরচায়িত সেই বিরক্তিকর অভিব্যক্তি যদিও। কিন্তু এত্ত সুন্দর বই নিয়া আলোচনা সেইটা সিগারেট ছাড়া অসম্পূর্ণ লাগবে।

"আমার কাছে বই এতটাও ভালো লাগে নি সত্যি বলতে গেলে। কারণ? প্রথমেই ধরো গানের ব্যাপারটা। মানছি আমরা ঢাকায় বড় হইনি। ঐসময়ে ঢাকার পোলাপান স্প্যানিশ কারাভান শুনবে? সে সময় তো লিংকিন পার্কের নাম্ব, ইন দ্য এন্ডের জয় জয়াকার! অবশ্য এই গান বাদ্দিলে পুরা বইয়ের রূপরেখাই বোধহয় বদলে যেত। এর পর খুন গুলোর ব্যাপারে। লেখক কি পাঠকের উপর কিছু অংশই ছেড়ে দিলেন না ? আর মিথিলার সেই সিক্রেট ! সেটাও খোলাসা করে কিছু বললেন না!,’ ব্যাটার গলায় ক্ষোভ । অবশ্য যে জমা হইছে বুঝতে শার্লক হোমস হইতে হবে না! যদু মদুই কাফি। বিড়িও প্রায় শেষ দিকে। টানতে ভালো লাগছে না আর ফিক্কা মেরে ফেলে দিলাম।



“লেখকের একটা সময় কেটেছে কিন্তু সেই মহাখালিতে। তোমার মনে আছে কিনা জানিনা তবে বইয়ের প্রথমেই কিন্তু লেখক বলেছেন বইটা মহাখালির প্রতি তার উৎসর্গিত একটি কবিতা। কবিতায় যেমন প্লটহোল থাকে না। থাকলেও দেখা যায় একটা লাইন কিংবা একটা প্যারাই পুরো কবিতাকে আলাদা একটা জায়গায় নিয়ে বসায়। যেমন,

হাট্টিমাটিমটিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিমটিম।

এমন অনেক উদাহরণ আছে। বই কবিতা কোনোটাই পার্ফেক্ট হয় না। কিন্তু বইয়ের ভেতর ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে যখন নিজের সাথেই রিলেট করা যায় তার চাইতে বড় গুজবাম্প আর কি আছে? মনিরের বাপের মতো আমার বাপও কিন্তু কৈশোরের সেই সময়টায় তথাকথিত বাবার স্বরূপই ছিল। সেবার পেপার ব্যাক বইরে নেকেড বই বলা, স্পেশালি মাসুদ রানার জাপানী ফ্যানাটিকের প্রচ্ছদ নিয়া কত্ত কাহিনী, ফিলোসফার স্টোন বইটার সেই পরিণতি। এসব মোটা দাগেই দাগ কাটে। গল্পের গভীরতার চেয়েও আমার বেশী ভালো লাগে একটা বইয়ের চরিত্রের বন্ধন। বিনা প্রয়োজনে কোনো চরিত্র কিন্তু উঠে আসেনি বইতে। কেস ফাইল গুলোর ডিটেইল নিয়া প্রশ্ন তোলা যায়। কিছু অবাঞ্ছনীয়তা ছিল কিন্তু খারাপ লাগে নাই। স্পেশালি চিলেকোঠার সেপাই এর পার্ট টুকু। এসব গুসবাম্প হিসেবে কাম করে। তবে গান নিয়া তুমি যে প্রশ্ন তুলেছো সেইটা একেবারে ফেলে দেয়ার মত না। হইতে পারে আমরা ওদের কালচারের চাইতে পিছিয়েই ছিলাম। তুমিই বলো ০৩ এর দিকে টাংগাইলে কয়টা মেয়ে সাইকেল চালাইতো? টম বয়ের মতো ক্রিকেট ব্যাট দাবিয়ে বেড়াতো? ধরতে শুরু করলে অনেক ধরা যাবে। হাজার হোক বাঙালী আমরা সাদা কাগজে আগে এক ফোটা কালিই চোখে পরে। এত্ত কিছুকে দুই মলাটে এনে সুন্দর একটা প্রেজেন্টেশন করা চাট্টিখানি কথা? এটা উনার নিজস্বতা বলা যায়। গল্পকে শুধু কাগজএর মাঝে আবদ্ধ না রেখে প্রাণ দিতে পারেন। এমন আরেকজন আছেন। অনেকেই বলে বইতে মেদ থাকে। মানে একটু ডিটেইল বেশী থাকে। এ নিয়া আমি কখনই আপত্তি করিনি। না থাকলে উলটা লাগতো। এতটা ভালো লাগতোনা বই। আমরা বাঙালী গ্রীক না, কথার পরতে পরতে একটু করে উপমা জুড়ে দিতে না পারলে বাঙালীর বৈশিষ্ট্য থাকবে? থাকবে না!”, মনে হচ্ছে রীতিমতো লেকচার দিয়ে ফেললাম। সামনের বসা অমনোযোগী ছাত্রটা না থেকে ২৫/৩০ জনের সামনে এই লেকচার দিতে পারলে মনটা শান্তি পাইতো।

“ মাস্টারসাব, ইলাস্ট্রেশনের কথা কইলেন না?”, এতক্ষণ যে ভাষণ দিলাম তার টিপ্পনি কাটার সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করলো না ফাজিলটা। “তবে এন্ডিংটা বেশ ডিপ্রেসিং লাগল।
যেন পুরো গল্পটাই প্যান্ডোরার বাক্স, তাই না?”, প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আমার দিকে।
“ হ্যাঁ এই ব্যাপারটা আমার মাথায়ও এসেছে। কিন্তু শেষ টা কিন্তু দ্য ড্রিম আর লুসিফারের বিখ্যাত সেই ডুয়েলের মতো হয়েছে। হোপ। মজার ব্যাপার কি জানো অনেকেই কিন্তু বিশ্বাস করে প্যান্ডোরার বাক্সে দুঃখ, কষ্ট, শোক, জরা র সাথে একেবারে নিচে আশাকেও দিয়ে দিয়েছিলেন জিউস। কে জানে এই হোপই হয়তো একদিন আমরা মনির আর আনজিমকে ইউরোপে স্প্য��নিশ কারাভান ���াইতে দেখবো।

Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
April 9, 2022
❝Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can❞― Spanish Caravan, The Doors
-
❛নৈর্ঋত❜
-
মুনির শাফকাত, সদ্য এসএসসি পরীক্ষা শেষ করা এক কিশোর। বাবা, মা, ভাই, বোনের সাথে মহাখালীর এক কলোনীতে বসবাস করছে সে। সেই সময়ের অন্য অনেক কিশোরের মতোই মাত্র নতুন মিলেনিয়ামের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে তার গায়ে। কিন্তু এর মাঝেই তাদের এলাকায় ঘটে যায় ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ড; যে হত্যাকান্ডের সাথে চিরকুটে লেখা পাওয়া যায় "ফিরে এসেছে লিজার্ড কিং"। লাশ পাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে থাকায় না চাইতেও হত্যাকান্ডের কেসটির সাথে জড়িয়ে যায় মুনির।
-
অভিজিৎ কুন্ডু, মুনিরের সবথেকে কাছের বন্ধু বলা যায় তাকে। দেখতে স্বাস্থ্যবান হওয়ায় বন্ধুদের কাছে নানা উপাধি পাওয়া এই কিশোর যেকোন ঘটনা রং মাখিয়ে বলতে ওস্তাদ। তারপরেও সমবয়সী অনেক কিশোরের সাথেই তার দহরম-মহরম সম্পর্ক। ঘটনাক্রমে সেই বিভৎস লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের সময় সেখানে থাকায় মুনিরের সাথে সেও জড়িয়ে পড়ে এই কেসে।
-
আজমিন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়া এক কিশোরী মেয়ে, বর্তমানে ও-লেভেলের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে। বাবা-মায়ের সাথে ছোট বোন আমব্রিনও থাকে তাদের সাথে। এছাড়াও বাড়ির কেয়ারটেকার, তার ছেলে আকবর এবং দারোয়ান রয়েছে তাদের বাসায়। কিছুদিন থেকেই আজমিন বুঝতে পারে কয়েকজন লোক তার বাড়ির উপরে নজর রাখছে। তাই তার বান্ধবী অরিনকে নিয়ে এই ব্যপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার প্লান করে সে।
-
গুলশান থানার সাব ইন্সপেক্টর ফজলে নূর, তার হাতে এসে পড়ে অদ্ভুত এক কেস। নূরের থানার আন্ডারে থাকা মহাখালী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় এক বস্তাবন্দী লাশ। যে লাশের মাথা আলাদাভাবে কাটা, ধর আলাদাভাবে কাটা, হাত-পাও আলাদাভাবে কাটা। রক্তহীন ভয়াবহ সে লাশের ঘাড়ে লেজকাটা এক টিকটিকির ছবি ট্যাটু করে আঁকা। এদিকে লাশের সাথে আরো পাওয়া যায় বিজাতীয় ভাষার ট্যাটু, ২৯টি লেজকাটা টিকটিকি এবং একটি চিরকুট। যে চিরকুটে লেখা "লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে"। এই ঘটনা তদন্তে নূর যত গভীরে যেতে থাকে রহস্য ততই গাঢ় হতে থাকে, বাড়তে থাকে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সংখ্যা। এরই মাঝে নূরের কাধে এসে পড়ে আরেক হাই ভোল্টেজ কেস।
-
"পান্ডোরার বাক্স" গ্রিক মিথোলজির অন্যতম জনপ্রিয় এক মিথ। সে মিথ অনুসারে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর প্রথম নারী হচ্ছে পান্ডোরা, যার কাছে গচ্ছিত ছিলো মহামূল্যবান এক বাক্স। অতি উৎসাহের ফলে একদিন পান্ডোরা সেই বাক্স খোলার পরে পৃথিবীর বুকে নেমে আশে দুঃখ, লোভ, জড়া ইত্যাদি বস্তু। পান্ডোরা সেই বাক্সটি বন্ধ করার আগে বাক্সটিতে শুধু আশাই অবশিষ্ট থাকে। তবে এই মিথ নানা সময়ে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
-
এখন ফজলে নূরের হাতে এসে পড়া এই অদ্ভুত কেসের আসল রহস্য কী? এই কেস কীভাবে মুনির, কুন্ডু, আজমিন, অরিন এবং তাদের পরিবারের বাকি লোকদের জীবন পাল্টিয়ে দেয়? "লিজার্ড কিং" আসলে কী জিনিষ? এই সব কিছুর সাথে গ্রীক মিথলজির পান্ডোরার বাক্সের কী সম্পর্ক? এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পড়তে হবে লেখক জাহিদ হোসেন এর ৫০০+ পেইজের ডার্ক কিশোর থ্রিলার এবং আরবান ফ্যান্টাসি ঘরানার উপন্যাস ❛নৈর্ঋত❜ ।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইটা মূলত ৫০০+ পেইজের একটি বিশালাকার কিশোর থ্রিলার ঘরানার একটি উপন্যাস, যার কাহিনি সাধারণ কিশোর থ্রিলারের তুলনায় কিছুটা ডার্ক। এছাড়াও বইতে আরবান ফ্যান্টাসি এবং মিথোলজিক্যাল ফ্যান্টাসির টাচও রয়েছে বেশ কয়েক জায়গায়। বইটি প্রথমদিকে বেশ ধীর স্থিরভাবে কিশোর অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে শুরু হয়। কাহিনি যত আগাতে থাকে, ততই এর ততই ডার্ক টোন বাড়তে থাকে। শেষে গিয়ে সম্পূর্ণ ডার্ক আরবান ফ্যান্টাসি ঘরানায় রুপান্তরিত হয়ে যায় গল্পটি। যদিও শেষের ৫০ পেইজের ঘটনাপ্রবাহ হয়তো অন্যভাবেও লেখা যেতে পারতো, তারপরেও পুরো বইয়ের ঘটনা যেভাবে এগিয়েছে তা বেশ আনপুটডাউনেবল ধাঁচের। বইয়ের এন্ডিংটাও একেবারে মনকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো করেই লেখা হয়েছে, যা পড়ার পরে বেশ কিছু সময় স্থির হয়ে বসে ছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল যেন চারদিক থেকে শূন্যতা গ্রাস করছে আমাকে।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইয়ের মূল প্লটটি একটি ভয়াবহ কিলিংকে ঘিরে যার সাথে মুনির, কুন্ডু, আজমিন, অরিন, এসআই নূর সহ আরো অনেকেই জড়িয়ে পড়ে। এতটুক প্লট শুনে বইটা আর দশটা কিলিং বেজড থ্রিলার মনে হলেও যা বইটিকে অনন্য করেছে তা হলো এর সময়কাল এবং প্লটের সাথে গ্রিক মিথোলজিকে সংযুক্ত করা। কাহিনির প্রয়োজনে প্রচুর সাবপ্লট বইতে আসলেও শেষে গিয়ে প্রায় সব সাবপ্লট এক সুতোয় মিলে যায়। এর মাঝে বইয়ের মূল কাহিনির সাথে অসম্পর্কিত একটি সাবপ্লটই শুধু অপ্রয়োজনীয় লাগলো আমার কাছে।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইয়ের লেখকের লেখনশৈলী নিয়ে পাঠকভেদে নানা মতামত থাকলেও আমার কাছে উনার লেখনশৈলী বেশ ভালোই লাগে। সাধারণত প্রথম থেকেই উনার গল্পের সাথে নিজেকে কানেক্ট করতে পারলেও এই গল্প পড়ার সময় আমার কিছুটা সময় লেগেছে বইয়ের কাহিনির সাথে কানেক্ট হতে। অবশ্য একবার গল্পের কাহিনির সাথে সংযুক্ত হওয়ার পরে বইটি বেশ ভালো গতিতেই এগিয়েছে। বইতে প্রায় সব ছোট-বড় অধ্যায়ের শেষে ক্লিফহ্যাঙ্গার থাকার কারণে পরবর্তী অধ্যায় পড়ার আগ্রহ সবসময়ই সমানভাবে বজায় থেকেছে। বইয়ের ভাষাশৈলী, হিউমারের প্রয়োগ এবং সংলাপও লেখকের আগের বইগুলোর থেকে কিছুটা উন্নত মনে হয়েছে বলে হয়েছে। তাই সবমিলিয়ে আমার মনে হয় চমৎকার লেখনশৈলীর কারণেই ৫০০+ পেইজের এই মৌলিক থ্রিলার পড়তে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইয়ের চরিত্রায়ণ এর আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক। বইয়ের শুরুতেই লেখক বলে দিয়েছেন এটি তিন গোয়েন্দার প্রতি তার এক ধরনের ট্রিবিউট, বইটি উৎসর্গও করা হয়েছে তিন গোয়েন্দা এবং তার স্রষ্টা রকিব হাসানকে। কিশোর থ্রিলার ধাঁচের এই গল্পে তার প্রতিফলন ভালোভাবেই পাওয়া গিয়েছে। তিন গোয়েন্দার কিশোরের আদলে লেখা মুনির শাফকাতকে হয়তো অনেকেই রিলেট করতে পারবে ২০০০ সালের প্রথমদিকে ঢাকা শহরে বড় হওয়া যে কোন বালকের সাথে। তেমনি ভোজনরসিক এবং মজার ক্যারেক্টার কুন্ডুর সাথে মুসার মিল পাওয়া যায়। অরিনের বইপোকা কোয়ালিটি যে রবিনকে এবং টমবয় চরিত্র হিসেবে আজমিনের দ্বারা জিনার চরিত্রকে হোমেজ দেওয়া হয়েছে তা তিন গোয়েন্দা পাঠকেরা পড়ামাত্রই বুঝতে পারবেন। এদিক থেকে সাব ইন্সপেক্টর ফজলে নূরকে অনেকটাই আমাদের চেনাজানা যেকোন ডিটেকটিভ ফিকশনের তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা মনে হবে। এই বইতে নূরের চরিত্রায়ণে যে দিকটা আমার কাছে সবথেকে ভালো লেগেছে তা হলো তাকে প্রথমে পাঠকদের সাথে পরিচিত করার সময় যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে (তার পেটের পীড়ার ব্যাপার কিংবা কোন অভ্যাস দীর্ঘদিন বজায় রাখতে না পারা) পুরো বইজুড়েই সেই ব্যপারগুলো প্রতিফলিত হয়েছে। বইতে এ ছাড়াও প্রচুর চরিত্র এসেছে যা প্রথমে পড়ার সময় অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও শেষে গিয়ে সব চরিত্রগুলোরই গুরুত্ব বোঝা যায়। তার ভেতরে প্রায় সব চরিত্রই কাহিনির সাথে খাপে খাপ মিলে গিয়েছে, যার মধ্যে মুনীরের বাবার চরিত্র ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। তবে লিজার্ড কিং চরিত্রটিকে মনে হয়েছে আরেকটু ফোকাসে হয়তো রাখা যেতে পারতো বইটায়। এই ব্যপারটি বাদে ❛নৈর্ঋত❜ বইয়ের চরিত্রায়ন নিয��ে আমার আর কোন আক্ষেপ নেই।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইয়ের মূল পটভূমি মূলত ২০০৩ সালের ঢাকা শহর। তাই বইতে সে সময়ের নানা ঘটনা, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং প্রযুক্তিকে ঘিরে বইটির কাহিনি লেখা হয়েছে। বইতে তিন গোয়েন্দার হোমেজ স্পষ্ট থাকলেও এ ছাড়াও সে সময়ের কিশোর কিশোরীরা যে ধরনের দেশি-বিদেশী পপ কালচার নিয়ে মেতে থাকতো সেগুলোর এস্টার এগও প্রচুর এসেছে। তাইতো আজমিনের কুকুরের নাম হয়ে যায় টিনটিন থেকে নেওয়া ‘কুট্টুস’, তাদের হাক-ডাক চলে টেনিদার আদলে, সংলাপে পাওয়া যায় শার্লকের ‘এলিমেন্টারি’, তিন গোয়েন্দার ‘সবুজ ফটক এক’ এর মতো তাদের কার্যালয়ের নাম থাকে ‘হলুদ ফটক এক’, কোল্ডপ্লে কিংবা জিম মরিসনের গানের সুরও কাহিনির মাঝে এসে পড়ে, তখনকার কিশোর-কিশোরীদের মাঝে যে ক্রিকেট উন্মাদনা ছিলো, তার ছোঁয়াও পাওয়া যায়। মোটকথা সে সময়ে বড় হওয়া যে কোন কিশোরকেই নষ্টালজিক করে দেওয়ার মতোই পটভূমি রয়েছে বইতে। এছাড়াও পুলিশ ফাইলে বিভিন্ন সময়ে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার সেটাপেও সে সময়কার নানা এস্টার এগ ছড়িয়ে ছিলো, যা পড়ার সময় বুঝতে পেরে ভালোই লাগলো।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইতে ডার্ক কিশোর থ্রিলার/কামিং অফ এইজ টাইপের কাহিনির সাথে আরেকটি যে অ্যাঙ্গেল পরিস্ফুটিত করেছে তা হচ্ছে বইটির মিথিক্যাল অ্যাঙ্গেল। লিজার্ড কিং এবং তার কমিনিউটি, প্যান্ডোরা এবং তার বংশধর, ক্যাওস এবং এ জাতীয় গ্রীক মিথলজিকে যেভাবে লেখক মূল গল্পের সাথে ব্লেন্ড করেছে তা বেশ প্রশংসার যোগ্য। বইটা পড়ার সময় বইয়ের গ্রিক মিথলজি এবং লিজার্ড কিং সম্পর্কিত ইন্টারপ্রিটেশানগুলো খুবই উপভোগ করেছি। তাই শেষে গিয়ে মনে হয়েছে লিজার্ড কিং এর কার্যক্রম আরেকটু বিস্তারিতভাবে দেখানো গেলে আরো উপভোগ্য হতো বইটা।
-
❛নৈর্ঋত❜ বইয়ের প্রোডাকশনের দিকে তাকালে সবথেকে প্রথমেই আসবে প্রচ্ছদের কথা। একেবারে অরিজিনাল এই প্রচ্ছদটিতে বইয়ের কাহিনি দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, প্রচ্ছদটি দেখতেও খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। বইয়ের নামলিপি এবং ব্যাককভারেও সৃজনশীলতার ছাপ স্পষ্ট। বইতে বেশ কয়েকটি আর্টওয়ার্ক রয়েছে, যেগুলোও মোটামুটি মানানসই। তবে বইতে প্রচ্ছদশিল্পীর নাম থাকলেও অলঙ্করণকারীর নাম পেলাম না, যা বইতে থাকা উচিত ছিলো। বইয়ের বাঁধাই বেশ ভালো হয়েছে, যার কারণে ৫০০+ পেইজের বই পড়তে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি। বইয়ের সম্পাদনা এবং প্রুফ রিডিং মোটামুটি চলনসই ছিলো, বইয়ের সাইজের তুলনায় বানান ভুল বা টাইপিং মিস্টেক খুব কমই চোখে পড়েছে।
-
এক কথায়, কিশোর থ্রিলার এবং কিছুটা আরবান ফ্যান্টাসি ধাঁচের ❛নৈর্ঋত❜ বইটি পড়ে আমি খুবই উপভোগ করেছি। আমার এই বছরে পড়া বাংলা বইগুলোর ভেতরে এখন পর্যন্ত একেবারে টপ পজিশনে রয়েছে বইটি। লেখকের আগের বইগুলোর লেখনশৈলী/এন্ডিং পছন্দ না হলে সে ধরনের পাঠকেরা বইটা এড়িয়ে যেতে পারেন কিন্তু লেখকের কোন বই যারা পড়েননি তাদের জন্য ❛নৈর্ঋত❜ বইটা রিকমেন্ড করা থাকলো। বিশেষ করে যাদের লেখকের লেখনশৈলী ভালো লাগে/ তিন গোয়েন্দার ফ্যান কিংবা যারা বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বেড়ে ওঠা বিষয়ক নস্টালজিয়া পেতে চান তাদের জন্য ❛নৈর্ঋত❜ বইটি মাস্ট, মাস্ট রিড। লেখকের পরবর্তী বইয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
Profile Image for Bimugdha Sarker.
Author 15 books90 followers
March 12, 2022
লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে….

I am the lizard king…I can do anything…

পড়ে শেষ করলাম নৈর্ঋত। জানি অনেকের কাছে বিশ্বাস হবে না, অনেকে নাক সিটকাবে। অবশ্য খুব অস্বাভাবিক না সেটা। ৫২০ পেজের একটা বই একবসায় পড়ে ফেলা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।

কিন্তু লেখক যে জাহিদ হোসেন! ফিনিক্স বইটা যেদিন প্রথম হাতে তুলে নিয়েছিলাম, সেদিন থেকেই লেখককে একটা উঁচুস্থানে বসিয়ে রেখেছি। এক্সপেরিমেন্টধর্মী লেখার সাহস আজকালখুব লেখকের হয় না। জাহিদ হোসেনের এক্সপেরিমেন্টধর্মী লেখাগুলোর নাম মানুষের মুখে মুখে। ‘দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব’, ‘একজোড়া চোখ খোঁজে আরেকজোড়া চোখকে’ ইত্যাদি কাজগুলোর কথাই বলা যায়। আমি কিন্তু তার সর্বশেষ প্রকাশিত ‘গিলগামেশ’ বইটাকে ৫ তারা দিয়েছিলাম ওটার কাহিনীবিন্যাস, গল্পের ফ্লো, চরিত্রায়ন, মিথলজির মিশ্রণ, রহস্য উন্মোচন, ক্লাইম্যাক্স মোমেন্ট—ইত্যাদির কারনে। ধরে নিয়েছিলাম, গিলগামেশ বোধহয় লেখকের ম্যাগনাম ওপাস হতে যাচ্ছে। এরকম বই আর আসবে না।

লেখকের ‘নৈর্ঋত’ বইটা পড়ার পর মনে হচ্ছে, ‘গিলগামেশ’ বইটা লেখকের জন্য কেবল একটা স্টেপিং স্টোন ছিল। ওটাও ছিল তার এক্সপেরিমেন্টধর্মী লেখা। তা না হলে এই অসাধারণ লেখার জন্ম নিত না। গিলগামেশ দিয়ে তিনি হয়ত পিয়ানোর ফাইন টিউনিং করেছিলেন। নৈর্ঋত এর বেলায় পাকা হাতে মুনলাইট সোনাটার(Moonlight Sonata) জন্ম দিয়েছেন।

রিভিউর দিকে চলে যাই।

গল্পের সারসংক্ষেপটা আমি নাহয় বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখাটাই তুলে দিই। কেউ যদি বইটা ‘কী’ নিয়ে জানতে চান, গল্পের ভেতর কী রয়েছে জানতে চান— আমার ধারণা, ফ্ল্যাপটাই সব বলে দেবে।

মহাখালী কলেজ গেট সংলগ্ন বস্তির খালে বস্তাবন্দি একটা লাশ পাওয়া যায়। খণ্ডবিখণ্ড লাশ। কেউ লাশের হাত-পা-মাথা সুন্দর করে কেটে ট্যাগ করে রেখেছে। হাতের সাথে হাত লেখা ট্যাগ, পায়ের সাথে পা আর মাথার সাথে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা মাথা। হাত-পা-মাথা সব একসাথে। পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো।
লাশের পরিচয় পাওয়া যায়। মিথিলা ফারজানা। বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী। ক’দিন পরই যার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা।
টুকরা-টাকরা দেহাংশের সাথে পাওয়া যায় ২৯টা লেজবিহীন টিকটিকি ও একটা ছোট্ট চিরকুট। চিরকুটে লেখা:

লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে

মিথিলা ফারজানার ঘাড়ের পিছনে লেজহীন টিকটিকির ট্যাটু এঁকে রাখা, তার পিঠে বড় করে অচেনা ভাষায় একটা শব্দ লেখা:

Πανδώρα

ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে মিথিলা ফারজানার দুই সহপাঠী লম্বু মুনীর শাফকাত ও ভোটকা অভিজিৎ কুণ্ডু। জড়িয়ে পড়ে দুই বান্ধবী আজমিন-অরিন ও চারপেয়ে এক জন্তু। কুট্টুস।
এই চারমূর্তি কি পারবে মিথিলা ফারজানা হত্যা-রহস্য উদ্ঘাটন করতে? অন্ধকার টানেলে আলোর রেখা খুঁজে নিতে? নাকি নিকষ কালো আঁধার গ্রাস করে নিবে ওদের?

রহস্যময় এ খুনের দায়িত্ব পায় গুলশান থানার চৌকস অফিসার ফজলে নূর। তদন্তে বেরিয়ে পড়ে একই ধাঁচে খুন হয়েছে আগেও। খণ্ডবিখণ্ড লাশ মিলেছে, চিরকুট মিলেছে। মিলেছে অচেনা ভাষার ঐ লেখাটাও:

Πανδώρα
কথাটার মানে কী? কী চায় এই খুনি? কেইবা এই লিজার্ড কিং?

তবে কি সহস্রাব্দ-প্রাচীন গ্রিক মিথ প্যান্ডোরার বাক্সেই সব উত্তর রয়ে গেছে? বাক্স কি তবে খুলেই গেল?

গল্পের শুরু মুনীর শাফকাতকে দিয়ে। টিপিকাল নাইন্টিজ কিড। জীবনটা তার তিন গোয়েন্দা কেন্দ্রিক; প্রায়ই সে ফেলুদা, ঘনাদা, টেনিদা কিংবা টিনটিনের সাথে অভিযানে বেড়িয়ে পড়ে—অবশ্য তা কল্পনায়। ঘরে এখনো কম্পিউটার আসেনি, বন্ধুর বাসায় গিয়ে রোডরাশ খেলা, বাইরের আর্কেডে গেম খেলা, এলাকার গল্পের বই বিক্রেতার দোকানে গিয়ে লেটেস্ট সেবা প্রকাশনীর বই খুঁজেপেতে বের করা, বেঁধে দেয়া সময় (আধাঘন্টা/একঘন্টা) এর জন্য টিভি দেখা, পড়াশোনায় সবসময় তুলনার শিকার হওয়া (অমুকের ছেলে ৯০ পেল, তুই কেন ৭০ পেলি), পড়ার বইয়ের নিচে গল্পের বই রাখা, বন্ধুদের সাথে দলবেঁধে সন্ধ্যার আগপর্যন্ত খেলাধূলা করা, তাদের সাথে এডাল্ট কথাবার্তা বলে কান গরম করে ফেলা নব্বইয়ের দশকের ছেলেই সে। ব্যতিক্রম লাগতে পারে কেবল তার ‘খাড়ুস’ বাপকেই। ফোনে পাঁচমিনিটের বেশি কথা বলা যাবে না, বাসায় সন্ধ্যায় আযানের আগেই ঢুকে পড়তে হবে, বাবা বাসায় আসছে, এরকম মুহূর্তে টিভি তাড়াতাড়ি বন্ধ করে ছোটাছুটি করতে হবে ঘরের সকল সদস্যকে, দরজায় নক করার তিনসেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে না দিলেই রাগে গজরাতে থাকবেন তিনি, ডিসেম্বর মাসটায় যখন সকলে এক্সাম দিয়ে ছুটি কাটানোর কথা, তখনো ছেলেমেয়েকে বাধ্য করে পরের বছরের পড়া শুরু করার জন্য চাপ দেবে। রেজাল্ট খারাপ হলে কিংবা কোনো ইস্যু তৈরি হলেই নিজ হাতে ছেলেমেয়েদের গল্পের বইগুলো ছিড়ে ফেলার চমৎকার অভ্যাস আছে তার। মারধোর-চড়থাপ্পড় খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার তার আছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
বেশী স্ট্রিক্ট এরকম বাপের কথা আজকাল কল্পনাও করতে পারবে না অনেকে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে ঘরে ঘরে এসবই ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মুনীরের বাপ শাফকাত সাহেবের ভয়ে তটস্থ থাকা মুনীরের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে কাটে—বাপ কি টের পাবে? বাপ কি জানতে পারবে? বাপ কি রাগ করবে? বাপ জেনে ফেলবে না তো? এসব ভেবে ভেবে। তার পরিবারের একটা হালকা বিবরণ আমরা গল্পে গল্পে পাই—টিপিকাল রান্নাঘরে সময় কাটানো গৃহিণী মা, মানসিকভাবে অসুস্থ মেজ ভাই, মেহজাবিন নামের এক বোন আর শাফকাত সাহেব। এক বড়ভাইয়ের নাম হালকার ওপর ঝাপসা হিসেবে এসেই চলে গিয়েছে, বিস্তারিত বলা হয়নি।
মুনীরের স্বাধীনতার জায়গা কেবল তার বন্ধুবান্ধব। কুন্ডু, রিফাত, ফুয়াদ এরকম বন্ধুদের কারনেই সে এখনো বেঁচে আছে। নাহলে হয়ত সে কবেই ঘর থেকে পালিয়ে যেত।
মেট্রিক পরীক্ষা শেষে একদিন দুপুরে ঘরে বসে বিরক্ত হওয়ায় সে বেরিয়ে পড়ে মহাখালির অলিগলি ঘুরতে। প্রায় ভাগ্যের ফেরেই পরিচিত হয় আজমিন-আমব্রিন দুইবোনের সাথে। ঘটনাক্রমে তাদের ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ার হতে হয় তাকে। সবই ঠিকঠাক চলছিল, ফিরে আসার পথে আমব্রিন তাকে একটা কথা বলে, যা মুনীরের জগতটাকে ওলটপালট করে দেয়।
“তুমি কি মিথিলা ফারজানার ব্যাপারে গিলটি ফিল করছো?”

পাঠকের পাশাপাশি মুনীরও অকস্মাৎ অতীতে চলে যায়। মনে করার চেষ্টা করে তাদের সহপাঠী মিথিলা ফারজানার (যার লম্বা দুটো দাঁতের কারনে সবাই তাকে খরগোশ বলে ক্ষেপাত) লাশ উদ্ধারের দিনটার কথা। সেই বীভৎস লাশ উদ্ধার। ফ্ল্যাপে যেহেতু পড়ে এসেছেন, তাই আঁচ করতে পারছেন নিশ্চয়ই। তবে গ্রাফিক সেই বর্ণনা পড়ার সময় মনটা একটু অন্যরকম হবে।
ধীরে ধীরে গল্প এগোতে থাকে।
ফজলে নূর। এসআই। এ খুনের তদন্ত করছেন বেশ নিষ্ঠার সাথে। ডিভোর্সি হওয়ার কারণে অহেতুক পরিশ্রমে নেই তার কোনো বাঁধা। মাঝেমধ্যে তার বিশাল, ডীটেইলস পূর্ণ কেসফাইলগুলো পড়ার সুযোগ মেলে আমাদের, মানে পাঠকদের। ধীরে ধীরে গল্পের জট বাঁধতে শুরু করে। আস্তে আস্তে তিনগোয়েন্দা স্টাইলে মুনীর, কুন্ডু, আজমিন, অরিন (আজমিনের বান্ধবী) আর কুট্টুশ নামের কুকুর এ রহস্য উন্মোচন করতে শুরু করে।

পাঠক, মূল গল্প এটুকুই। স্বাভাবিকভাবেই এরপর ইঁদুর-বিড়াল খেলা, মাইক্রোবাসে কিডন্যাপিং, পুলিশ প্রসিডিউর, ইত্যাদি চলতেই থাকে। একটা করে চাপ্টার শেষ হয়, আর আপনার আগের চাপ্টারে যা জেনে এসেছেন তাতে সন্দেহ তৈরি হতে থাকে—আসলেই তা ঘটেছে?
লেখকের একটা অদ্ভূত গুন আছে। তিনি ব্রেডক্রাম্বের মতো তথ্য পুরো বই ছড়িয়ে রেখেছেন। আপনি যখন বইটা প্রায় শেষের দিকে চলে যাবেন, ব্রেডক্রাম্বের সবগুলো অংশ হাতে চলে আসবে। সবগুলো জোড়া দিলে সম্পূর্ণ তথ্যটা আপনার চোখে দৃশ্যমান হবে। অনেকে আছেন, যারা ব্রেডক্রাম্ব ছড়ান ঠিকই, কিন্তু প্রতিবার নতুন করে সব গড়গড় করে পাঠককে স্বরণ করিয়ে দেন—পাঠক এই তথ্যটা হচ্ছে অমুকের সাথে জড়িত, অমুক হচ্ছে তমুকের পমুক… সোজা ভাষায় সেসব লেখকরা ধরে নেন, পাঠকের স্মৃতিশক্তি একদম গোল্ডফিশের মত। দশপেজ আগে পড়ে আসা তথ্যটা তার মনে নেই (যেমন আমি)। জাহিদ হোসেন এর লেখা বইগুলোয় সেসবের ধাত নেই। উনি পাঠককে সম্মান করেন বলেই পাঠকরা একটা তৃপ্তি বোধ করে।

নূরা পাগলা ওরফে ফজলে নূরের পুলিশি তদন্ত লেখকের পূর্ববর্তী লেখা ‘গিলগামেশ’ এ বর্ণিত পুলিশি তদন্তকে হার মানিয়ে দিয়েছে। ডীটেইলিং একদম পার্ফেক্ট ভাবে দেয়া হয়েছে।

বইটা হচ্ছে নাইন্টিজ দশকে ঢাকার মহাখালিতে বড় হওয়া লেখকের একটা লাভচাইল্ড, ভালোবাসার ফসল। একটা মানুষ তার শৈশব, কৈশোরকাল সেখানে না কাটালে এরকম ভাবে অনুভূতি দিয়ে লেখা সম্ভব না। বর্ণনা পড়তে গিয়ে বোদ্ধা পাঠকের মতো মাথা নেড়ে ‘মেদহীন’ ‘ঝরঝরে’ ‘জ্যুসি’ বলার ধাত আমার নেই। আমার কাছে মনে হয় লেখকের স্বাধীনতা এটি। তিনগোয়েন্দাকে এ বইয়ে এমনভাবে ট্রিবিউট দেয়া হয়েছে যে, গল্পের তিনভাগের একভাগ পড়ার সময় আবিষ্কার করি, যদি কোনো থ্রিলার লেখক ম্যাচিউর, এডাল্ট কোনো রহস্যের সাথে তিনগোয়েন্দাকে পরিচয় করিয়ে দিত, যদি কিশোর-মুসা-রবিনের মধ্যে স্বাভাবিক কিশোরদের মতো নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি কৌতূহল, মেয়েদের প্রতি আলাদা আকর্ষণ পরিচয় করিয়ে দেয়া হত, যদি সত্যিকার অর্থেই প্যারানরমাল কোনো পরিস্থিতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হত, তবে বোধহয় এরকমই কিছু লেখা হয়।
লেখায় জাহিদ হাসানের সিগনেচার স্টাইল রয়েছে অনেক। গল্পের মধ্যে নিমিষে মিথলজি ঢুকিয়ে দেয়ার (পড়তে গিয়ে বিন্দুমাত্র মনে হবে না, ধুর জোর করে তথ্যের বন্যা বইয়েছেন লেখক) এরকম গুন খুব কম লেখকের মাঝেই দেখেছি। লিজার্ড কিং, প্যান্ডোরার বক্স/জার, বিভিন্ন কাল্ট সম্পর্কে লেখক গল্পচ্ছলে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
গল্পের শুরুটা মুনীরকে দিয়ে হলেও এ গল্পটা আসলে সবার। গল্পটায় কাউকে অবহেলা করা হয়নি, ডেভেলপ করা হয়েছে ধীরেসুস্থে। তবে আকবর ছেলেটার ডেভেলপমেন্ট আরেকটু পেলে ভাল্লাগত। ওর সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চেয়েছিলাম। মেরি চাচী ওরফে কইতরী বেগমের করা আমার প্রেডিকশানটা সত্য হতে দেখে ভালো লেগেছে।

মোদ্দা কথা, বইটা কী নিয়ে?
চমৎকার পুলিশি তদন্ত আছে? আছে।
কিশোর বয়সীদের রহস্য উন্মোচন/গোয়েন্দাগিরি আছে? আছে।
প্যারানরমাল আছে? আছে। ক্লাইম্যাক্স পড়ার পর ঘুম দিলে স্বপ্নে আপনি সেটাই দেখবেন গ্যারান্টি। গিলগামেশ পড়ে এটাই আফসোস লেগেছিল কেন প্যারানর্মাল স্টাফ দুই পেজে খতম? এখানে এসে লেখক পুষিয়ে দিয়েছেন।

বইটা মাস্টরিড? সেটার ভার আপনাদের ওপর।

চেয়েছিলাম তিনটে মানুষের অটোগ্রাফ-- Zahid Hussain for the story

Mahatab Rashid for the most amazing cover

Wasif Noor for the artwork

দুর্ভাগ্য পেলাম না কাউকেই। তিনটে মানুষেরই অবদান রয়েছে বইটাতে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞবোধ করছি এরকম অসাধারন বইটার পেছনে শামিল হওয়ার জন্য।
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
October 18, 2025
বিধ্বংসী ভালোবাসার মতো বিপদজনক বিভ্রম ভুবনে আর দ্বিতীয়টি নাই।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
June 7, 2022
যতটা আশা করেছিলাম ততটা পাইনি। ৫২০ পৃষ্ঠার বইটা অনায়াসে ৩২০ এই শেষ করা যেত। কিছু কিছু কথার পুনরাবৃত্তি বিরক্তিকর লেগেছে। এস আই নূরের কোন অভ্যাসই ধারাবাহিক না, এইসব৷ ফারজানার গল্পও শেষ হলো না। মূল কাহিনীটা মোটামুটি সুন্দরভাবে গুছিয়েই শেষ করা হয়েছে। তবে শেষটা আরেকটু ভালো হতে পারত। তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, শার্লক হোমস, টেনিদার ঘন ঘন রেফারেন্স কিংবা রেইনম্যান, বার্ডস ইত্যাদি নানা মুভির রেফারেন্স বা সিলেটী ভাষার মাঝে মাঝে ব্যবহার অযৌক্তিক লেগেছে।
একবার পড়ার মতো বই। অসাধারণ লাগেনি।

ভালো কথা, হার্ট এটাক কনফার্মেশনের জন্য সিটি স্ক্যান লাগে না। ওটা স্ট্রোকের জন্য সাধারণত করা হয়৷ হার্ট এটাক বা এম আই চিন্তা করলে আগে আমরা ইসিজি করি। পরে অন্যান্য টেস্টের মধ্যে ট্রপোনিন আই গুরুত্বপূর্ণ।
Profile Image for Farhan.
725 reviews12 followers
April 2, 2025
গত বছর দশেকের মাঝে বাংলাদেশের নতুন লেখকদের যতগুলো বই নিয়ে হাইপ উঠেছে, তার প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই পড়তে গিয়ে ধরা খেয়েছি। শুধু প্রত্যাশাভঙ্গ বললে ভুল হবে, প্রায় কোনটারই অর্ধেক পর্যন্তও যেতে পারিনি। পয়সা নষ্ট, সময় নষ্ট, এবং বেশ কিছুদিনের জন্য মেজাজও নষ্ট। সেদিক থেকে জাহিদ হোসেনের 'নৈঋত' মোটাদাগে বলতে গেলে হাইপের যোগ্য। প্লটে নতুনত্ব আছে, ফ্যান্টাসি-মিস্ট্রি-হরর মিলে যে জটিল এক গোলকধাঁধা গড়ে উঠেছে শুরু থেকে, শেষ পর্যন্ত সেটার সাসপেন্স ধরে রেখে শেষে তেমন কোন গোঁজামিল ছাড়াই সমাধান বের করা গেছে। শুধু ফ্যান্টাসি-রহস্য উপন্যাস হিসেবেই নয়, 'নৈঋত' একটা সময়কেও বেশ বিশ্বস্তভাবে তুলে এনেছে, যেটা আজকাল প্রায় দেখাই যায় না, এই ঘরানার লেখায় তো একেবারেই না। অতীত নিয়ে যে উপন্যাস লেখা হচ্ছে না তা না, তবে সেগুলো সবই দূর অতীতের ব্যাপার, ঐতিহাসিকদের বয়ান ছাড়া সেগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করা বা সেগুলোর সাথে পাঠক হিসেবে কানেক্ট করার কোন উপায় নেই; লেখক যা খাওয়াচ্ছেন তাই খেতে হয়। সেদিক থেকে 'নৈঋত' একেবারে নিকট অতীতের বিষয়, যার প্রেক্ষাপট, ব্যাকগ্রাউন্ড, স্থান, কালের সাথে পাঠকদের প্রায় সবাই কানেক্ট করতে পারবেন। এ ধরণের লেখার ঝুঁকিও আছে; লেখায় যে 'কাল' বা সময়টা উঠে এসেছে তার প্রতি নিবেদিত ও বিশ্বস্ত না থাকলে পাঠক সহজেই সেটা ধরে ফেলবেন। এদিক থেকে লেখক শতভাগ সফল; তাঁর আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার ছাপ দেখা গেছে পাতায় পাতায়। ডিটেইলিং প্রায় নিখুঁত, পাঠককে স্মৃতিকাতর করবেই, যদিও এত ডিটেইলিংয়ে যেতে গিয়ে মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে গল্প থেকে সরে গেছে, কাহিনী লম্বা হয়ে ঝুলেও গেছে খানিকটা। সেজন্যই কিনা এত দীর্ঘ বইটার শেষদিকে এসে বেশ খানিকটা তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে। যে পাঠক ৫২০ পৃষ্ঠা ধরে একটা বই পড়ে এসেছে, সে মনে হয় আরো ৩০-৪০ পৃষ্ঠা পড়তেই পারতো। তবে সবকিছু জড়িয়ে কোনমতে একটা গোঁজামিল দেয়া হয়নি, বরং শেষের বেশ কিছুটা আগে থেকেই পাঠককে কিছু হিন্টস দেয়া হচ্ছিল, শেষে গিয়ে সেটাই সমাধানে দাঁড়ায়।

এবার কিছু নন-পজিটিভ (নেগেটিভ নয়) পয়েন্টে আসি। প্রথমটা একেবারেই ব্যক্তিগত। লেখক ভূমিকায় বলেছেন, এবং অনেকে রিভিউতেও লিখেছেন যে, এই বইটা নাইনটিজ অথবা নব্বই দশকের দিকে একটা ট্রিবিউট। কিন্তু গল্পের পটভূমি ২০০৩ সাল, সেটা নাইনটিজের বেশ খানিকটা পরে। শুধু বছরের দিক থেকেই নয়, বরং ২০০০ সালের পরে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটা একটা ভূমিকম্পের মত, যার পেছনে বড় দু'টো কারণ হলো ইন্টারনেট-মোবাইল ফোন এবং টুইন টাওয়ারে হামলা। পরিবর্তনটা এতই বেশি যে ঐ সময়ের ৪-৫ বছর আগে-পরে জন্মানো দু'টো মানুষের মাঝে চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধের আকাশ-পাতাল ফারাক দেখা যায়। আমি নব্বই দশক বলতে যেটা বুঝি সেটা হলো ইন্টারনেট পূর্ববর্তী সময়, যেখানে পুরো যোগাযোগের ব্যাপারটাই ছিল ম্যানুয়াল বা অ্যানালগ। সেটা যে একেবারে উঠে আসেনি তা নয়, কিন্তু অনেকটাই স্মৃতি হিসেবে। আমরা যারা ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ছাড়া বড় হয়ে উঠেছি, তারা এই ফারাকটা সহজেই ধরতে পারবো। উদাহরণ হিসেবে, আজমীনের সাথে মুনীরের প্রথম পরিচয়ের যে অংশটা, যেখানে আজমীনদের গেটের বাইরে থেকে উঁকি দেয় মুনীর এবং একটা অপরিচিত ছেলেকে সাদরে ভেতরে ডেকে নেন আজমীন-আমব্রিনের বাবা, এটা আর যাই হোক নব্বই দশকের বাবা না, যত উদারই হোক। ঐ দশকের দুই কন্যার বাবা হলে ছোকরাকে পেঁদিয়ে বিষ ঝেড়ে দিতেন। নব্বই দশকে চার-পাঁচটা ছেলেমেয়ে মিলে মহাখালী এলাকায় আড্ডা দেয়া সম্ভব ছিল কিনা সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান (ধানমন্ডি-গুলশান হলে আলাদা কথা), তবে যে সময়টার কথা বলা হচ্ছে মানে ২০০৩, তখন সম্ভবত পরিস্থিতি বদলেছে। সেদিক থেকে আমি উপন্যাসটাকে নাইনটিজের প্রতি ট্রিবিউট না বলে ২০০০ পরবর্তী পরিবর্তনশীল সময়ের প্রতি আলোকপাত বলবো।

পরের পয়েন্টটা গল্প ও চরিত্র সংক্রান্ত। প্রথমত, এসআই ফজলে নূর। এই উপন্যাসে আমার কাছে একমাত্র 'লাইকেবল' চরিত্র, এবং সেজন্যই একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশ্বাস করেন ভাই, নব্বই দশক হোক, ফ্যাসিবাদী হাসিনার আমল হোক, আর এখনকার জেন যি হোক, পুলিশের এসআই এত মুক্তমনা আর ফ্রেন্ডলি হয় না, অন্তত বাংলাদেশের পুলিশ না। আর যা-ই হোক, সে নাইন-টেনে পড়া একগাদা ছেলেমেয়ের সাথে নিয়মিত তদন্তের অগ্রগতি আর ইনফরমেশন শেয়ার করবে না, নিজের ছেলেমেয়ে ভাগনে-ভাগনির সাথেও না(গল্প বাদ দিয়ে বাস্তবতা দেখলে, করা উচিতও না।)। তারচেয়েও অবিশ্বাস্য হলো, কোনরকম অলৌকিক ঘটনা ঘটতে না দেখেও, স্রেফ তদন্তে খেই পাচ্ছে না বলেই 'লিজার্ড কিং বাক্স থেকে বের হয়ে লোকজনকে কেটে টুকরো টুকরো করে কেটে যাচ্ছে' এমন উদ্ভট থিওরি বিশ্বাস করে কেউ গ্রীক মীথোলজি নিয়ে তদন্তে নামবে না। হাসিনার আমলে যদিও দেশে প্রচুর ইয়াবাখোর-হেরোইনখোর পুলিশে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু এরাও সম্ভবত এত বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ গাঁজা টানতো না। সবচেয়ে আনকনভেনশনাল পুলিশও কিছু সার্টেইন প্রসিডিউর ফলো করে, তার মাঝে পোলাপানের সাথে তদন্ত নিয়ে আড্ডা দেয়া এবং মীথোলজির দানব খুঁজে বেড়ানো পড়ে না।

চরিত্রের কথা যদি বলি, মূল প্রটাগনিস্টদের ভাল লাগেনি, কুণ্ডু ছাড়া। মনে হয়েছে চরিত্রগুলোকে সমান গুরুত্ব দিতে গিয়ে কারো দিকেই প্রয়োজনমত গুরুত্ব দেয়া হয়নি। একসাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তদন্ত করছে, এছাড়া চরিত্রগুলোর মাঝে কোন ধরণের কেমিস্ট্রি ডেভেলপ করেনি। মুনীরের চরিত্রটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং গল্পের সমাধানটা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যই একদম শেষ পর্যন্ত তার ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরিটা ঝুলিয়ে না রেখে আরো আগে এনে ডেভেলপ করা দরকার ছিল। একদম শেষে তাড়াহুড়ো করার কারণেই মুনীরের চরিত্রটার দিকে এমপ্যাথী ডেভেলপ করে না। একদম শেষে এসে একটা চিঠির মাধ্যমে মুনীরের দিকে আজমীনের একটা ভাল লাগা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেটা খুব বেশি আরোপিত লেগেছে আগে থেকে কোন ডেভেলপমেন্ট না থাকায়। চমক দেয়ার জন্যই সম্ভবত মূল ভিলেন নিয়ে বইয়ের শেষ ২০ পৃষ্ঠা বাদে প্রায় কোথাও কিছু ডেভেলপ করার চেষ্টা নেই, যেটা এই চমকটাকে পুরোপুরি আরোপিত মনে করিয়েছে। এমনকি তার এই অকাজ করার মোটিভগুলোও খুব জোরালো মনে হয়নি। একদিকে বলা হয়েছে সে অত্যন্ত দূরদর্শী, ইন্টেলিজেন্ট, কিন্তু এত সামান্য কিছু কারণেই সে লিজার্ড কিংকে বারবার ডেকেছে (এই বারবার ডাকার মাঝেও একটা অসঙ্গতি আছে গল্পের লিজেন্ডের ব্যাখ্যা মেনে নিতে গেলে, কিন্তু সেটা এখানে আলোচনা করতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে, পাঠক নিজেই বুঝে নেবেন), যেটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি।

তারপরেও, সব মিলিয়ে বইটাকে কত রেটিং দেব? ৩.৭৫। এবং অবশ্যই বইটা একটা মাইলস্টোন। এখনকার ছেলেমেয়েরা অবশ্য ওটিটি আর মাঙ্গার কল্যাণে যথেষ্ট ভায়োলেন্ট আর বীভৎস ব্যাপারস্যাপারের সাথে পরিচিত, তবে সত্যিকারের নব্বই দশকে এটাকে এসব কনটেন্টের কারণে সম্ভবত ২৫ প্লাস বয়সের জন্য রাখা হতো। আমি যেহেতু পুরোনো জমানার লোক, কিশোরদের এই বই না পড়তে দেয়ারই পক্ষপাতী। তবে এই ধারায় যত কাজ হচ্ছে, তার মাঝে সময়ের প্রেক্ষাপটটাকে কিভাবে তুলে আনতে ��য়, সেটা বোঝার জন্য পাঠক এবং লেখক, উভয়ের জন্যই এটা অবশ্যপাঠ্য বলে মনে করি।
Profile Image for Pranta Biswas.
122 reviews4 followers
December 7, 2023
থ্রিলার জনরার ক্ষেত্রে বইয়ের প্রথম ৫০ পেইজ আমার কাছে বীজগণিতের নিশ্চায়কের মতো। এর উপর নির্ভর করে বইটি শেষ করতে পারবো না কি মাঝপথে ড্রপ করে দিবো। কিন্তু এই বই হাতে নিয়ে প্রথম দফাতেই যখন ১৩০+ পেইজ পড়ে শেষ ফেলেছি তখনই বুঝেছি এটি একটা রিয়েল 'পেইজ টার্নার'।

ফার্স্ট থিং ফার্স্ট, নাইন্টিজের একটা ভাইব আছে পুরো কাহিনী জুড়ে। প্রথম ৩০/৪০ পেইজে তো মুনীরের সাথে সাথে আমি নিজেও এস.এস.সি. পরীক্ষা পরবর্তী অবসরে চলে গিয়েছিলাম। সেইম চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি বিরক্তিকর অখন্ড অবসর, সেইম নতুন গল্পের বইয়ের অভাবে পুরাতন গল্পের বইয়ের একের পর এক রিভিশন Good Old Days!!! 

লং স্টোরি শর্ট, গল্পের মূল চরিত্র পাঁচখানা। দুই কিশোর, মুনীর শাফকাত আর অভিজিৎ কুন্ডু; দুই কিশোরী, আজমিন ও অরিন; এবং পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর ফজলে নূর। এস.এস.সি. টেস্ট পরীক্ষার পরপর নৃশংসভাবে খুন হয় মুনীর ও কন্ডুর সহপাঠী মিথিলা ফারজানা। খন্ডিত লাশের পাশে পাওয়া যায় ২৯ টি টিকটিকি, পিঠে বিদেশি ভাষায় লেখা একটি শব্দ 'Πανδώρα' আর একটি চিরকুট, যাতে লেখা "লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে"। ফজলে নূর তদন্ত করে জানতে পারে একই প্রক্রিয়ায় প্রায় অর্ধ শতাব্দি ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরকম খুন হয়েছে আরো ৪/৫ জন। এদিকে লাশের পিঠে অচেনা ভাষা, ও টিকটিকির ব্যাপারে খোজখবর শুরু করে চার ক্ষুদে গোয়েন্দা। উঠে আসে গ্রীক মিথোলজির জানা-অজানা নানা তথ্য। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে 'প্যান্ডোরার বক্স' ও 'লিজার্ড কিং' বা 'দ্যা এনশিয়েন্ট ওয়ান' এর কাহিনী। গ্রীক মিথোলজি অনুসারে যদি নৈর্ঋত (দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ) দিকে মুখ করে একটি নির্দিষ্ট উপাচারের মাধ্যমে আহবান করা হয় লিজার্ড কিং কে তবে নাকি সে উপস্থিত হয়ে আহবায়কের একটি ইচ্ছা পূরণ করে, যার বিনিময়ে আহবায়ক কেও দিতে হয় এর কঠিন দাম...


এখন গ্রিক মিথোলজির প্যান্ডোরার বক্স আর লিজার্ড কিং কিভাবে এলো বঙ্গদেশে আর মিথিলা ফারজানা খুনের সাথেই বা গ্রিক মিথোলজির কি সম্পর্ক সেইটা জানতে হলে পড়ে ফেলতে হবে জাহিদ হোসেনের এই অসাধারন বইটি।
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
April 27, 2022
▌স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ⚊ ❛নৈর্ঋত❜ [৪.৮/৫]

বি.দ্র. আপনি যদি তিন গোয়েন্দার পাঁড় ভক্ত হয়ে থাকেন তবে বেশি কিছু না ভেবে, বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন। এই বই শুধু নস্টালজিয়ায় ভোগাবে না, ভালো একটি কাহিনির পাশাপাশি রহস্যময় এক সত্তার সাথে পরিচিত করাবে আপনাকে। নাম তার—লিজার্ড কিং অ্যান্ড হি কেন ডু অ্যানিথিং...

কৎচবীলকাড়কৃতাদিলঙচীলাধীঅপৃৎবিকঠৃৎগৃহীবকড়ৎতী...????

জেম ডগলাস মরিসন। সংক্ষিপ্ত বা জনপ্রিয় নাম জিম মরিসন। দ্য লিজার্ড কিং। প্রিয় শহর প্যারিসের রাস্তায় যখন রক গানের সুর ভেসে বেড়ায়, সেই সুরে যে কয়েকটি নাম মিশে থাকে; তাদের একজন জিম মরিসন। ছোটোবেলায় যাঁর বেশির ভাগ সময় কাটত লাইব্রেরিতে। সেখানে তিনি ব্যস্ত থাকতেন ফ্রেডরিখ নিৎসে, অ্যালেন গিন্সবার্গ, ফ্রাঞ্জ কাফকাদের নিয়ে। দ্রোহের আগুনে জ্বলা শুরু ঠিক তখন থেকে। কবিতার মধ্যে খুঁজে পেতেন নিজের উদ্দামতাকে। প্রশ্রয় দিতেন নিজের আগ্রহ ও নেশাকে। মনমালিন্য হতো পিতার সাথে। এইভাবে চলছিল মরিসনের জীবন।

রক গানের আদিমতায় মত্ত থাকা মরিসন ১৯৬৫ সালের গ্রীষ্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু রে মানজারকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ডদল ‘দ্য ডোরস’। জগদ্বিখ্যাত এই ব্যান্ডদলের নাম শুনেনি, এমন সংগীত প্রেমী খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। পরপর দুটো অ্যালবাম শ্রোতা সমাদৃত ও কয়েকটি গান বিলবোর্ড টপ চার্টে উঠে আসায় ব্যান্ডদলটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৮ সালে দ্য ডোরস-এর তৃতীয় অ্যালবাম ‘ওয়েটিং ফর দ্য সান’ মুক্তি পায়। সেই অ্যালবামের স্লিভে (Sleve) জিম মরিসন একটি কবিতা প্রকাশিত হয়; যা তিনি বহু আগে লিখে রেখেছিলেন। ‘দ্য সেলিব্রেশন অব লিজার্ড কিং’ নাম দিয়ে। সেখানে একটি লাইন ছিল— ‘I am the Lizard king, I can do anything.

লিজার্ড কিং মূলত মিথিক্যাল ক্রিয়েচার। ❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসে এর প্রভাব বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখানো হয়। নৈর্ঋত শব্দের বিশেষ্য হচ্ছে—দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের মধ্যবর্তী কোণ। রাক্ষসবিশেষ। জিম মরিসনকে ট্রিবিউট দিতে লেখক এমন কিছুর সৃষ্টি করেছেন। এই ট্রিবিউট এখানেই সীমাবদ্ধ না। ❛নৈর্ঋত❜ আরবান ফ্যান্টাসি ঘরনায় লেখা হলেও, মিথলজির ছাপ স্পষ্ট। আমাদের প্রিয় গ্রিক মিথলজির খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ উক্ত বইয়ের কাহিনির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্যায়োসের মাধ্যমে গ্রিক মিথের যে শুরু তারও পূর্বের কাহিনি এই উপন্যাসে রয়েছে। সাথে আছে প্রমিথিউসকে শাস্তি হিসেবে জিউসের দেওয়া প্যান্ডোরার বাক্স। যে বাক্সে মানব জীবনের সকল সুখ, শান্তি, দুঃখ, কষ্ট, হাসি, কান্না, জরা, ব্যাধি, কৌতূহল ও আশা রয়েছে। সত্যি কি প্যান্ডোরার বাক্সে বা জারে এমন সব উপাদান রয়েছে না-কি অন্য কিছু দিয়ে প্যান্ডোরার হাতে এই বাক্স তুলে দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে?

মিথলজি পাশে রেখে একটু আরবান ফ্যান্টাসি নিয়ে আলোকপাত বলি। যেন বইটি পড়ার পর কোনোকিছু অতিরঞ্জিত না লাগে। যদিও ফ্যান্টাসি পুরোটাই কল্পনা বা কাল্পনিক। তা অতিরঞ্জিত লাগাটাও স্বাভাবিক। তবে আপনি যদি স্টিফেন কিংয়ের ‘ইট’ এবং নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেগুলো থোড়াই কেয়ার। ❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে রহস্য, থ্রিল থাকলেও পুরোটা আরবান ফ্যান্টাসির মোড়কে মোড়ানো। সাধারণত শহরের প্রেক্ষাপটে লেখা গল্প বা কাহিনিকে আরবান ফ্যান্টাসি বলে। যেখানে গোপন প্যাসেজওয়ে, ঘরবাড়ি বা আস্তানা থেকে থাকে। জাদুকরি ক্ষমতা, আধুনিক প্রযুক্তি অধিকন্তু অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারও এখানে ঘটে। পুলিশি তদন্তের দেখা মিলে, যা ❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসেও রয়েছে। যেখানে খুন হয়, খুনিকে ধরার যত ক্রিয়া সবই সম্পাদন করতে দেখা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন ফোর্সের কার্যকলাপের দেখা মিলে। এই ফ্যান্টাসিতে ম্যাজিক থাকে লুকানো; অর্থাৎ একেবারে দেখা যায় না বললেই চলে। যা শুধু বলা বা হিন্টস দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অনুমান ও অনুধাবন অবশ্য করা যায়। এই উপন্যাসেও এই রকম ম্যাজিক বা গাট ফিলিং-এর দেখা মিলেছে। গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আরবান ফ্যান্টাসির আকর্ষণের কারণ তা হচ্ছে পপ কালচার রেফারেন্স প্রচুর থাকে।

❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসে প্রচুর পপ কালচারের দেখা মিলে। মরিসনের লিজার্ড কিংয়ের রেফারেন্স নিয়ে তো ইতোমধ্যে ধারণা দিলাম। বাকি যা-ই কিছু থাকে তার পুরোটা নব্বই দশক থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। কারণ গল্পের প্রেক্ষাপট ২০০৩ সালের ঢাকার মহাখালীর। সেই সময়ের তিন গোয়েন্দা, ঘনাদা, টেনিদা, ফেলুদা, টিনটিন, মোস্তফা গেম, ক্রিকেট খেলা নিয়ে উন্মাদনা, শচীন-লারার দৌরাত্ম্য, জর্জ বুশ-লাদেন নিয়ে রাজনীতির খবরাখবর, গ্রামীনফোন-একটেল সিম, সাইবার ক্যাফে-সহ এমন কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা—বোধহয় বাদ রাখেননি লেখক। যা নস্টালজিয়ায় ডুবে যেতে একপ্রকার বাধ্য করে। সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছে তিন গোয়েন্দার রেফারেন্স এবং ফ্লেভার। ইস্টার এগ-ও কমতি ছিল না উপন্যাসে। যা সত্যিকার অর্থে লেখকের লিখনপদ্ধতিতে উঠে এসেছে। এমন অ��ুভূতি তখনই উৎপীড়ন করে যখন কেউ কঠিন অসুখে পড়ে। আমার মনে হয়, লেখন সে-রকম এক অসুখে পড়েছেন আর সেটা আমাদের মতো পাঠকদের মধ্যে সংক্রমিত করেছেন। ব্রাভো। এমন অসুখে বারবার পড়তে ইচ্ছা করে।

লেখক যে মাদকতা ❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসের মধ্যে ছড়িয়েছেন, তার আরেকটি কারণ হলো সংগীতের ব্যবহার। ওনার ‘গিলগামেশ’ বইতেও এমন কিছু ছিল, যা খারাপ লাগা অনেক কিছুকে ভালো লাগাতে বাধ্য করেছিল। ❛নৈর্ঋত❜ এর চেয়ে কয়েক গুণ সরেস। আবারও সেই জিম মরিসন, আমাদের লিজার্ড কিং। সেই তৃতীয় অ্যালবাম এবং অ্যালবামের ‘স্প্যানিশ কারাভান’ গান... যার লাইনগুলো অন্য এক ঘোরে নিয়ে যায়। যেখানে শুধু শূন্যতার বিচরণ। যে অনুভূতিকে বলে ভাস্ট এম্পটিনেস অথবা নাথিংনেস... লেখক হয়তো এই শূন্যতাকে পূর্ণ করতে চেয়েছেন। আমিও সেটা স্বীকার করি এবং বলি—ইয়েস, আই নো ইউ ক্যান।

Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can

◆ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—

❛নৈর্ঋত❜ ডার্ক টোনে সেট করা একটি কিশোর থ্রিলার উপন্যাস। যেখানে সুষ্ঠু ও সুবোধ বালক-বালিকার মুখোশ যেমন থাকে না, তেমনই থাকে না তাদের ক্রিয়াকলাপ। একজন টিনএজ ছেলেমেয়ে ঠিক যেমনটা আচরণ করে, কথাবার্তা বলে, নিষিদ্ধ জিনিস নিয়ে আগ্রহ থাকে—সবকিছু এই উপন্যাসে খুবই সাবলীল এবং যৌক্তিক উপায়ে দেখানো হয়েছে। আরবান ফ্যান্টাসির মিশ্রণ থাকাতে এই কাহিনিকে শুধু গোয়েন্দা উপন্যাস বলে চালিয়ে দিতে পারি না। কিশোর গোয়েন্দা ও পুলিশি তদন্তের যে কম্বিনেশন লক সেট করেছেন লেখক—তা সত্যি দুর্দান্ত। প্রতিটি বাঁকে যে থ্রিল, সাসপেন্স ও ভয়ের আবহ লেখক সংযুক্ত করেছেন—তা আকর্ষণীয় একইসাথে উপভোগ্য।

কাহিনির শুরুটা উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শুরু হলেও শেষটা নিয়ে সংকীর্ণ থাকাটা যথোপযুক্ত। তার ওপর জনরায় অনুযায়ী এমন ভয় থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সত্যি বলতে লেখকের ‘গিলগামেশ’ যে হতাশায় ঢেকে দিয়েছিল, তার পরে এমন বইয়ের শেষটা নিয়ে দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে থাকাটা বাঞ্ছনীয়। তবে লেখক ❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসে এমন একটা সমাপ্তি দিয়েছেন, যা মনকে শান্ত আর আবেগী করে তোলে। যদিও কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া সম্বব নয়। লেখক হয়তো, আবারও বলছি হয়তো আরও ভিন্ন কোনো সমাপ্তি দিতে পারতেন; কিন্তু যতটুকু আর যে-ভাবে তিনি দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। সবশেষে যে জার্নিটা আমি করেছি তা উপভোগ্য কি-না; এটাই মূল বিষয়। সব জার্নি যে শতভাগ সুখকর হবে তেমনটাও না। জীবনটা অংকের যোগ-বিয়োগের মতো, যেখানে খারাপ লাগা যুক্ত হলে ভালোটা দিয়ে বিয়োগ করতে হবে। কারণ, বেশি ভালো লাগা—খারাপও লাগার কারণও বটে।

লেখকের লিখনপদ্ধতি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। ছোটো ছোটো বাক্য দিয়ে পুরো উপন্যাসটি সাজানো। এক বসাতে যা অনেক দূর টেনে নিয়ে যেতে বাধ্য। এমন ধরনের লিখনপদ্ধতি পার্সোনালি আমার পছন্দের। সেই সাথে শব্দের যে খেলা তা যেন উপরি পাওনা। যে-কোনো চিত্রকে চিত্রায়ণ করতে লেখক দারুণ সিদ্ধহস্ত। সব যেন খুব স্পষ্ট হয়ে চোখের সামনে নাচানাচি করে।

❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসে সাবপ্লটের ছড়াছড়ি। মূল কাহিনির সাথে প্রত্যকটি সাবপ্লটের সামঞ্জস্য রয়েছে। তবে দুয়েকটি বাদ দিয়ে দিলে তেমন কোনো ক্ষতি হতো না। চারটি সাবপ্লটের মধ্যে দুটো অকার্যকর মনে হলো। লেখক হয়তো গল্প বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলেই এমন কিছু রাখা। মূল কাহিনির মেদ হিসেবে সাবপ্লট দায়ী থাকলেও পড়তে খারাপ লাগেনি। কানেকশনের দিক দিয়ে চিন্তা করলে মাত্রাতিরিক্ত মনে হবে। অর্থাৎ জোর করে ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার মতন।

কিছু তথ্যের রিপিটেড বিষয়টি যদিও একটু বিরক্ত লেগেছে। ‘গোল্ডেন অ্যাজ’ বা পিওর ডিটেকটিভ ফিকশনে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বা একই কথা বারবার চরিত্রদের সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরার অর্থ আলাদা করে ধৈর্য শক্তির পরীক্ষা দেওয়ার মতোই। লেখক সসম্ভব তেমন কোনো ভাইব কাহিনিতে রাখতে চেয়েছেন।

সাবপ্লটগুলো ভালো লাগার পেছনে কারণ হলো পপ কালচার রেফারেন্স। সত্তর, আশি দশকের দিকে যে বিষয়গুলো জনপ্রিয় ছিল সেগুলো লেখক সাবপ্লটের মাধ্যমে উপন্যাসে যুক্ত করেছেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা ঘটনা রাখা যেত বলে মনে করছি। যাহোক, আমার পড়তে ভালোই লেগেছে।

চরিত্রায়ন এই গল্পে দারুণ শক্তিশালী। ছোটো থেকে বড়ো প্রত্যকটি চরিত্রের যে ডেপথ তা লক্ষণীয়। লেখক বেশ কিছু চরিত্রের জন্ম দিলেও তাদের অনেকে মাঝপথে হারিয়ে যায়, কিছু চরিত্র নতুন করে উদয় হয়। বর্তমানে মূল খুনের কাহিনির সাথে আরও একটি কাহিনির চালিয়ে যাওয়া কিছুটা অযৌক্তিক মনে হলো। বিশেষ করে আত্মহত্যার তদন্তটি। কেঁচো খুঁড়তে এমন সাপ না বের হলে বরং ভালো। এসব উটকো ঝামেলা।

আরবান ফ্যান্টাসি পছন্দের জনরা, তিন গোয়েন্দার ডাই হার্ড ফ্যান, সংগীত নিয়ে অবসেশন এবং লেখকের লেখা আর চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হলে তবেই ❛নৈর্ঋত❜ পড়তে বসুন। এই জার্নিটা পুরোই এপিক; অন্তত আমার মতে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব রসিয়ে উপভোগ করেছি। যে আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসা তার পুরোটা উসুল হলো। এমন বই বারবার পড়ার সুযোগ হয় না, কালেভদ্রে হয়তো হয়।

● গল্পের শুরু এবং কিছু প্রশ্ন—

মহাখালী এলাকায় বসবাস করা মুনীর শাফাকাত—সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করা এক ডানপিটে কিশোর। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরও হাতে যে অফুরন্ত সময়; তা কোনোভাবে উপভোগ করতে পারছে না সে। সে-জন্য একমাত্র দায়ী তার ‘খাড়ুস’ বাপ। বাবা-মা, বোন ও ভাইকে নিয়ে তার বসবাস। কড়া নিয়মে বাধা মুনীরের দৈনন্দিন রুটিন। বাবার মাত্রাতিরিক্ত শাসনে অতিষ্ঠ সে। লুকিয়ে-চুরিয়ে বাইরে যাওয়া-আসা; আপাতত এই কাজ। ওদিকে তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, টেনিনা, ঘনাদা যে পড়বে সেই উপায়ও নেই। সব কাহিনি মুনীরের জানা, কয়েকবার করে পড়ে শেষ করা। নতুন কিছু নেই যে পড়বে। একদিন পুরানো বইয়ের স্তুপ ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে ‘হৈমন্তী’ নামের স্বাক্ষর করা কিছু উপন্যাস আর ইংরেজি কবিতার বই খুঁজে পায় সে। তাদের পরিবারে হৈমন্তী বলে তো কেউ নেই, তবে বইগুলো কার?

অন্য দিকে তার প্রাণের বন্ধু অভিজিৎ কুণ্ডু শুভ্রের ব্যাপার-স্যাপার আলাদা। নেই কোনো কড়া শাসন, আরামের জীবন। দিব্যি ঘুরে-ফিরে, হেসে-খেলে ছুটিটা উপভোগ করছে সে। কোনো খাওয়ারে অরুচি নেই। ভোজন রসিক এক কথায়। চাপার জোর যে-কারও চেয়ে বেশি। তিলকে তাল বানাতে ওস্তাদ। তেমনই একটা ঘটনা মুনীরকে শোনাতে ব্যস্ত সে। কিন্তু একটা ঘটনায় এসে থমকে যায় তাদের আলোচনা! যা আজও রহস্য।

***বাকিটা আখ্যানপত্র থেকে পড়ে ফেলুন।

────────────────

উপন্যাসের শুরুতে বস্তাবন্দি লাশের বিবরণ। এর পরে লেখক সরাসরি চলে যায় ক্যারেক্টর বিল্ডাপে। শুরুটা হয় মুনীরকে দিয়ে। তার দৈনন্দিন জীবন, ভালো লাগা-খারাপ লাগা ইত্যাদি নিয়ে। উঠে আসে তার পরিবারের আদ্যোপান্ত। গল্পের মোড় এর পরে একে একে ঘুরতে থাকে কুণ্ডু, আজমিন-অরিনদের ঘিরে। কীভাবে তারা সবাই এক জোট হলো সেই কাহিনি সুন্দর করে সাজানো। চৌকস অফিসার ফজলে নূরের তদন্ত নিয়ে অগ্রগতি এবং করণীয় কাজের সাথে নিজের জীবনের টানাপোড়েনের যে অবস্থা তাও তুলে ধরা হলো। এর পরে কীভাবে চার মূর্তি আর ফজলে নূর একই সরলরেখায় মিলিত হয়ে তদন্ত পরিচালনা করতে থাকে—সেই কাহিনি বেশ রোমাঞ্চকরভাবে উপস্থাপন করা হয়।

● গল্প বুনট » লিখনপদ্ধতি » বর্ণনা শৈলী—

লেখকের গল্প বুননের কৌশল দারুণ। অতীত-বর্তমান নিয়ে দারুণ খেলা করতে পারেন। ওনার সাবপ্লটগুলো হচ্ছে মূল অস্ত্র। বর্তমান কাহিনির উত্তর খুঁজতে সাবপ্লটে চোখ রাখাটা বাঞ্ছনীয়। খুবই ধীরে ধীরে কাহিনি এগিয়ে নিলেও, পড়তে কিন্তু ততটা সময় ব্যয় হয় না। তরতর করে পড়ে নেওয়া যায়। প্রতি অধ্যায় বা পর্ব শেষে, পরের পর্ব নিয়ে যে রহস্য লেখক রেখে দেন—তার জন্য নিজেকে থামিয়ে রাখা কষ্টকর। গল্প বলাতে লেখক অতুলনীয়।

লিখনপদ্ধতিতে লেখকের নিজস্ব একটা প্যাটার্ন ফলো করেন। সেখানে সাবলীলভাব আছে, স্বকীয়তা আছে। সবকিছুর মিশ্রণ থাকলে, কোনটা ডাল আর কোনটা চাল; তা বেছে বেছে আলাদা করা যায়। পপ কালচার রেফারেন্স, ইস্টার এগ, মূল কাহিনি, অতীতের কাহিনি, সংলাপ, চরিত্র বিল্ডাপ সব যেন তুড়ি দিয়ে যথাস্থানে বসিয়ে দেন তিনি। প্রত্যকটি বিষয়, ঘটনা উপলব্দি করার মতো শব্দ চয়ন ও বাক্য গঠনে লেখক অপ্রতিরোধ্য। এমন লেখার প্রশংসা না করে পারা যায় না। যদি এই উপন্যাসে পিওর সাহিত্য শব্দ আর বাক্যের সংমিলিত প্রয়োগ ঘটত, নিশ্চিত বলতে পারি ৮০০+ পৃষ্ঠা অনায়াসে অতিক্রম করত। বিস্তারিত যে একেবারে ছিল না তেমনও না, কিন্তু লেখক খুব যত্নে কাটছাঁট করে প্রতিটা শব্দ আর বাক্য বাছাই করে লিখেছেন।

প্রত্যকটি ঘটনা যখন মস্তিষ্কের কোষ ঘুরে কল্পনার ঘরে জমা হচ্ছে, তা উপলব্ধি করার আনন্দ অন্য রকম। যে হিউমার লেখক সংলাপের মাধ্যমে দিচ্ছেন, যে ঘটনা উল্লেখ করছেন—সবকিছুর সাথে খুব সহজে নিজেকে কানেক্ট করে নিতে পেরেছি। যেন আমিও ওই উপন্যাসের চার মূর্তির একজন। আমি সেখানে ছিলাম, দেখেছি তাদের কথা বলা, উদ্‌বিগ্নতায় ডুবে থাকা। যে দৃশ্যায়ন বা স্থানের বিবরণ লেখক দিয়েছেন, নিমেষে যেন সেখানে নিজেকে হারিয়ে বসে আছি। এমন সবকিছু সম্ভব হয়েছে লেখকের মাপা বর্ণনা শৈলীর জন্য। যে-কেউ, অর্থাৎ যে-কোনো বয়সের পাঠক এই উপন্যাসের সাথে একাত্মতা জুড়ে দিতে সক্ষম।

টিনএজ বয়সের যে আবেগ, ভয়, উদ্দীপনা, কড়া শাসন; প্রতিটি অনুভূতি নতুন করে আবারও আবিষ্কার করেছি। সেই সময়, সেই শৈশব, সেই কৈশোর। পুরাই নস্টালজিয়া।

● যেমন ছিল গল্পের চরিত্ররা—

এই চরিত্র নিয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে, ছোটো একটা গল্প লেখা লাগে। এমন দারুণ আর রিয়েলিস্টিক সব চরিত্রের মেলা। বিশেষ করে মুনীর, কুণ্ডু, আজমিন, অরিন তো আছেই। সাথে আমব্রিন, অর্ঘ্য আর কুট্টুসের কথা আলাদা করে বলতে হয়। তিন গোয়েন্দার যে স্বাদ লেখক দিতে চেয়েছেন তা এই চরিত্রগুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত। জিনার সাথে আজমিনের মিল, মুসার সাথে কুণ্ডু, রবিনের সাথে অরিন আর কিশোরের সাথে মুনীর। এমনকি আজমিনের বোন আমব্রিনের সাথে মুসার খালাতো বোন ফারিহার মিল পাওয়া। রাফিয়ানের মতো কুট্টুসের আচরণ, বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণ; দারুণ লেগেছে। যদিও এখানে নির্দিষ্টভাবে চরিত্রগুলোর স্বভাব গঠন করা হয়নি, তবে ফ্লেভার একই ছিল।

যেমন মুনীরের মধ্যে কিশোরের ছাপ আবার আজমিনের মধ্যেও ওই একই ছাপ লক্ষণীয়। অরিনের মধ্যেও একই স্বভাবের কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। ব্যতিক্রম ধরতে গেলে কুণ্ডু। স্বকীয়তা আছে। যাহোক, আমার চরিত্রগুলো এক কথায় দারুণ লেগেছে। পুরোনো কিশোর-মুসা-রবিনকে যেন ❛নৈর্ঋত❜-এর মধ্যে দিয়ে ফিরে পেলাম।

বাদবাকি চরিত্রদের মধ্যে অফিসার ফজলে নূরকে দারুণ পছন্দ হয়েছে। ভেবেছি তিনি ফগর‍্যাম্পারকট-এর মতো তেমন কিছু হবেন; কিন্তু না! এই অফিসারের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা খুবই বাস্তবিক লেগেছে। এ-ছাড়া মুনীরের পরিবার এই গল্পের দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছে। আজমিনের পরিবারও রয়েছে। বাদবাকিদের অ্যাপিয়ারেন্স গল্পের প্রয়োজনে যথেষ্ট ছিল।

মুনীর-কুণ্ডুর আরও কিছু বন্ধু রয়েছে, যাদের মধ্যে পিয়াল-কে দারুণ পছন্দ হয়েছে। নিজের নামের সাথে মিল দেখে এমনটা মনে হতেও পারে। অনেকটা নিজেকে যেন খুঁজে পেলাম। যদিও কিছু অভ্যাস পুরোপুরি উলটো। সব মিলিয়ে পার্শ্বচরিত্রগুলো ভালো লাগার মতো।

প্রভাবশালী বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে, যা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলেও চালিয়ে নেওয়ার মতো। উপন্যাসের গল্পটা পারিবারিক কেন্দ্রিক বেশি মনে হয়েছে।

● শেষের গল্প বলা প্রয়োজন—

গল্পের শেষ পৃষ্ঠায় এমন একটা চিঠি আছে যা পড়ে ভেতর থেকে দলা পাকানো মিশ্র এক অনুভূতি উঠে আসে। খুব চেপেচুপে তা সহ্য করতে হয়। স্প্যানিশ কারাভানর সাথে আজমিনের লেখা চিঠিটার এত যোগসাজশ যা মন্ত্রমুগ্ধের পাশাপাশি আবেগী করে তোলে। এই চিঠির মাহাত্ম্য উপন্যাস শেষ করার পর শুধু অনুধাবন করা সম্ভব।

শেষটা নিয়ে ‘গিমগামেশ’-এর মতো একগাদা সমালোচনা করব না। বলার মতো খুব বেশি কিছু না থাকলেও, নাটকীয়তা আছে। তবে সবই পূর্ব নির্ধারিত। অর্থাৎ পরবর্তী অধ্যায়ের নাট্যমঞ্চ কেমন হবে তার স্ক্রিপ্ট লেখক পূর্বের অধ্যায়গুলোতে বিভিন্ন ক্লু দিয়ে বলে দিয়েছেন। হুটহাট করে কিছু হয়নি। সবকিছু পূর্বপরিকল্পিত। খারাপ লাগা যদিও নেই, তবে সাবপ্লটের দুটো ঘটনার প্রয়োজনীয়তা আছে কি নেই তা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি।

ত্রাস সৃষ্টি করা চরিত্র নিয়ে যে ভয় আর আলোচনা, তার উপস্থিতি এত সীমিত দেখে নিছক মন খারাপ হয়েছে বটে। আরেকটু, মানে আরেকটু বেশি টাইম দিলে কী হতো? খুব লাইটলি যেন ঘটানাটির সমাপ্তি টানা হয়েছে; সেটা অস্বীকার না করে পারলাম না। যেমন ক্লাইম্যাক্স আশা করেছি, তা মনঃপূত হয়নি। হয়তো পূর্বের ঘটনা, স্বপ্নের মাধ্যমে বিভ্রম ঘটানো ইত্যাদি মিলিয়ে এমন সমাপ্তি বেছে নেওয়া হয়েছে। তারপরেও ব্যাপ্তিটা বড্ড কম হয়ে গেল।

শুরুর মতো শেষটাও অবশ্য আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম। আরবান ফ্যান্টাসির যে স্বাদ তা পুরোপুরি পেলাম। তবে, অনেক পাঠক কিছু বিষয়ের ব্যাখা খুঁজতে চাইবেন! পূর্বেও বলেছি, এসব গল্পে ব্যাখা হলো কল্পনাতীত। পুরোটা উপভোগ করার মতো। যদিও পুলিশি কিছু তদন্তের বিষয় আছে। ফরেনসিক কাগজ-পত্র থাকে। তবুও তাদের বলতে চাই, সব তদন্তের কি সমাধান আসলে হয়? যেগুলোর হয় না, সেই রসহ্যের কূলকিনারা ঠিক কেন হয় না? উত্তর আছে কি? সব তদন্তে কি রাজনীতির নোংরা খেলা থাকে? অতিপ্রাকৃত বলতে কিছু থাকে না?

পুলিশি তদন্তের বিষয়গুলো বাদ দিলে, মূল ঘটনার সূত্রপাত নতুন করে ভাবনার জন্ম দেয়। যদিও মিথলজি অনুযায়ী এমন সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। শেষ ৭০-৮০ পৃষ্ঠা আরেকটু দীর্ঘায়িত করা গেলে মন্দ হতো না।

● খুচরা আলাপ—

❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসে উপলব্ধি করার মতো যে বিষয়টি আছে তা খুবই কমন। পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব, লোভ, পরকীয়া ইত্যাদি। অনেকটা সেভেন ডেডলি সিন্স বা ষড়্‌রিপু’র আদলে গড়া। কোনো অতিপ্রাকৃত সত্তার উপস্থিতি এই দুনিয়ার বেহুদা হয় না। নিশ্চয় কোনো যৌক্তিক কারণ অথবা কোনো গূঢ় রহস্যও থাকে। কোনো মানুষ দায়ী থাকে সকল অনর্থ বা অনিষ্টের মূলে। যা খুঁজে বের করা সময়সাপেক্ষ হলেও অসম্ভব নয়। কারণ, সত্য কখনও চাপা থাকে না।

কালো জাদু, ব্ল্যাক ম্যাজিক, মন্ত্র-তন্ত্র, ভুডু যেমন জনপ্রিয় তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় এখন বিভিন্ন সংঘ, কাল্ট ও কমিউনিটি। যাদের কাজ থাকে অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া। ধর্মের নামে করা এসব মানুষগুলো যে আসলেই ধর্মবিরোধী; এই সত্যতা কেউ যাচাই করে না। আমরা নাস্তিকদের ঘৃণা করি, তাদের মানুষ বলে গণ্য করি না। কিন্তু এক পরিবারে থেকে যখন কোনো মানুষ এমন কিছু করে তখন সে-যে নাস্তিক থেকেও নিকৃষ্ট হতে পারে; ওইটুকু উপলব্ধি আর করা হয় না আমাদের।

❝আমার মনে হয়, ধার্মিক হওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ হওয়া। একজন ভালো মানুষ হওয়া।❞

❛নৈর্ঋত❜ উপন্যাসে একটি কাল্টের কার্যক্রম আছে। যা লেখক জিম মরিসনের সাথে কানেক্ট করেছেন। কাহিনিতে ডার্ক হিউমার, গালাগালি, যৌন বিষয়ক কথাবার্তা রয়েছে যা গল্পের সাথে যা সামঞ্জস্য। এসব ছাড়া আজমিন-অরিন, মুনীর আর কুণ্ডুকে ‘লুজার’ বলে সম্বোধন করা যা ‘ইট’ উপন্যাসের ‘দ্য লুজারস ক্লাব’-কে ট্রিবিউট দেওয়ার মতো অনেক ইস্টার এগের ছড়াছড়ি উক্ত উপন্যাসে রয়েছে; যা উপভোগ করার মতো।

◆ লেখক নিয়ে কিছু কথা—

লেখকের দ্বিতীয় কোনো বই পড়া। গত বছর থেকে এই বইটির জন্য অপেক্ষা। বইমেলার আকাঙ্ক্ষিত বইয়ের একটি। অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও আশা কিন্তু নিরাশায় পরিণত হয়নি। রূদ্ধশ্বাসে পুরো বইটি শেষ করেছি। শেষ করার পর যে শূন্যতা অনুভব করেছি তা প্রকাশ করার অনুভূতি আপাতত জানা নেই। যদিও বিশাল এক লেখা লিখে ফেলেছি। তারপরেও... জানা নেই।

লেখকের রিভেঞ্জ থ্রিলার সিরিজ এবং ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার আলোচিত-সমালোচিত ‘দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দিব’ যদিও এখনও পড়া হয়নি; তবে শীঘ্রই পড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে। পূর্বের পড়া ‘গিলগামেশ’ থেকে ❛নৈর্ঋত❜ বেশ কিছু জায়গায় এগিয়ে থাকবে। অন্তত আমি রাখব। লেখক সেই হিসাবনিকাশ করে যেন কাহিনিটির নীল নকশা এঁকেছেন। ভূমিকায় তিনি এ-ও বলেছেন, জীবনের ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ একটি সময় উপন্যাসটি লিখেছেন। পাক্কা দু’বছরের শ্রমের বিনিময় আজকের ❛নৈর্ঋত❜। লেখকের উত্থান-পতনের ছাপও যেন এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় সাঁটানো।

● বানান ও সম্পাদনা—

বানান ভুল ছিল সামান্য, গিলগামেশের মতো বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা যে এই বইতে ঘটেনি; তার জন্য আমি দারুণ খুশি। টুকটাক যা-ই কিছু রয়েছে, তা এড়িয়ে যাওয়ার মতো।

সম্পাদনায় অনেক ভুল লক্ষ করেছি। কিছু ভুলবশত করা ভুল। যা এত বড়ো উপন্যাসের তুলনায় সামান্য। এই যেমন চা খেতে খেতে কফি হয়ে যাওয়া, বুকডনে ৬৯+২১ = ১০০ হওয়া, ঈশান কোণের বদলে নৈর্ঋত কোণে তাকিয়ে কোনো একটা কাজ সম্পূর্ণ করা; এমন আরও টুকটাক সম্পাদনার অভাব লক্ষণীয়।

কাহিনির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আর রিপিটেড সংলাপ আরেকটু কাটছাঁট করা যেত বলে মনে করছি। অসামান্য ভুল নিয়ে বলতে গেলে কিছুটা ‘স্পয়লার ডিসকাশন’ করতে হয়। তাই সেটা একেবারে শেষের জন্য তোলা রাখলাম।

● প্রচ্ছদ » নামলিপি » অলংকরণ—

বছরের অন্যতম সেরা পছন্দের প্রচ্ছদ এখন ❛নৈর্ঋত❜। মাহাতাব রশীদ এমন দুর্দান্ত কাজ উপহার দিয়েছেন যে প্রশংসা যত বেশি করব তত কম করা হবে। নামলিপি যদিও আরেকটু বড়ো করে দেখালে ভালো হতো। দুটো প্রচ্ছদের মধ্যে কমলাটা সুন্দর। সাদাটাও কোনো অংশে কম না।

অন্য দিকে বইয়ের ভেতরে বেশকিছু ইলাস্ট্রেশন রয়েছে যা এঁকেছেন ওয়াসিফ ভাই। ভালোই লেগেছে সেগুলো।

≣∣≣ বই : নৈর্ঋত • জাহিদ হোসেন
≣∣≣ জনরা : আরবান ফ্যান্টাসি
≣∣≣ প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০২২
≣∣≣ দ্বিতীয় মুদ্রণ : এপ্রিল ২০২২
≣∣≣ নামলিপি • প্রচ্ছদ : মাহাতাব রশীদ
≣∣≣ অলংকরণ : ওয়াসিফ নূর
≣∣≣ প্রকাশনা : প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা
≣∣≣ মুদ্রিত মূল্য : ৭০০ টাকা মাত্র
≣∣≣ পৃষ্ঠা : ৫২০

❎ স্পয়লর ডিসকাশন:

১. লিজার্ড কিংয়ের দৈহিক গঠনের সাথে, খুনগুলোর কোনো সামঞ্জস্য খুঁজে পেলাম না। সাপের অবয়বে লিজার্ড কিং! মানে কোথায় টিকটিকি আর কোথায় সাপ! লিজার্ড কিং কেন সার্পেন্ট কিং? আবার সার্পেন্ট কিং কেন লিজার্ড হিসেবে পরিচিত? এই বিষয়টি ঠিক বোধগম্য হলো না।

২. সার্পেন্টের সাথে লিজার্ড কিং তত্ত্ব ঠিক কোথায় যেন খাপ খেল না বলে মনে হলো।

৩. ২৯টি খণ্ড লিজার্ড কিং কি লেজ দিয়ে করে না কীভাবে করে তা নিয়ে খোলাসা করা হয়নি।

৪. আফরোজা সুলতানা যে কারণে লিজার্ড কিংয়ের শরণাপন্ন হোন, সেই কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি কারণ কৌতুকে মনে হয়েছে। তার ওপর তিন বার লিজার্ড কিংকে ডেকে এনে ছয়টি খুনের বলি দেওয়াটা ঠিক হজম হলো। বিশেষ করে কিটলু আর আবিদের বিষয়টি।

এমন আরও কিছু প্রশ্ন উপন্যাস শেষ করার পরও থেকে গেল। যার উত্তর আমারও অজানা। তারপরেও ❛নৈর্ঋত❜ শৈশবকে রাঙানো এক মহাকাব্য।
Profile Image for Samiur Rashid Abir.
217 reviews44 followers
March 21, 2022
আমার মতে লেখকের বেস্ট লেখা এইটা।
প্রথম ৪০০ পৃষ্ঠা এক কথায় অসাধারণ ও পেজ টার্নার ঘরানার। কিন্তু শেষে এসে মনে হল একটু বেশি বেশিই হয়ে গেল না?
অবশ্য সাহিত্যের কল্পলোকে সবই সম্ভব। এত বিশাল একটা কাহিনীর প্লট সাবপ্লট টুইস্ট ম্যানেজ করা খুবই জটিল কাজ। লেখক এই কাজ খুবই ভালভাবে করছেন। স্লো অথবা খাপছাড়া পুরো বই জুড়ে কখনোই লাগে নাই। কিন্তু অভিযোগ সেই শেষ পার্টটুকু নিয়েই।
আমাদের ছেলেবেলার নস্টালজিয়ার পার্টগুলো আনায় বইটা আরোও সুখপাঠ্য হইছে। গানের ব্যবহার গুলাও ঠিকঠাক ছিল একদম। স্পেশালি যবনিকাপাতে ব্যবহার টা ভাল লাগছে বেশ।
Profile Image for Ratika Khandoker.
300 reviews33 followers
September 6, 2022
নস্টালজিয়া,নস্টালজিয়া,পিওর নস্টালজিয়া! আহা!

লেখকের সাথে পরিচয় দুধ চা দিয়ে,এবং এরপর গুলি করতেই ইচ্ছা করে।নিজেকেই।
অর্থাৎ সেই বইটি was not my cup of tea. :3
কিন্তু ভাইরে ভাই,নৈর্ঋত?
This was definitely my cup of tea(ktitiki) 😛
কাহিনী যেমন জমজমাট,তেমনি টুইস্টি,তেমনি থ্রিলিং!
সবকিছু ছাপিয়ে যে রেফারেন্সগুলো উনি বারেবার এনেছেন,আর একটু পর পর যে নস্টালজিয়ায় ডুবিয়েছেন,তার কোনো তুলনা হয় না।অনেক অনেক দিন পর কোনো বই একটানে শেষ করলাম।চোখের ইনফেকশন এ ভুগতেসি,এই অবস্থাতেও যদি একটা বই পড়া থেকে বিরতি দিতে না পারি,তবে অবশ্যই বইটি চমৎকার।
তবে একটু জিজ্ঞাসা (spoiler ahead)
.
প্যান্ডোরার বক্স যদি না-ই থাকে কারো কাছে,তবে চিটাগং এর ওই ক্লাব এ যেয়ে মানুষ করতো কি?রিচুয়াল করলেও তো কোনো লাভ হইতো না।
কেউ বুঝে থাকলে জানাবেন।

লেখককে ধন্যবাদ বইটির জন্য।
দুধ চার সব অভিযোগ তুলে নিলাম।

PS: শুধু মাত্র কিশোর পাছা pun টির জন্যেও বইটিকে ৫ তারকা দেয়া যায়। 😆😆😆
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
June 17, 2022
Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again
Take me, Spanish caravan
Yes, I know you can

নৈর্ঝতকে কোন জনরায় ফেলবো জানি না। তবে বইটা শেষ করে পরেই শান্তি পাচ্ছি। এর আগে শেষ করার জন্য একটা অস্বস্তিতে ভুগেছি, হাতের সব কাজ ফেলে বইটি কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য যে টান বোধ করেছি সেই টান থেকেই রিভিউটা। বলতে পারেন তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। শেষ কবে একটা বই শেষ করার জন্য চাতকের মতো অপেক্ষা করেছি নিজেও জানি না। ঘুমের মধ্যেও এসে হানা দিয়েছে লিজার্ড কিং।


Πανδώρα

একটা লাশ পাওয়া গেলে, যে লাশটাকে কেটে সুনিপুণ ভাবে কেটে হাত, পা, মাথা আলাদা আলাদা করে তারপর সেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সাথে আবার ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাতের স্থানে হাত লেখা, পায়ের স্থানে পা, আর মাথার সাথে ট্যাগ দেওয়া মাথা। লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছে ২৯ টা লেজবিহীন টিকটিকি। সাথে একটা চিরকুট "লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে" আরও পায়া গেলো লাশে ঘাড়ে অজানা ভাষায় লেখা "Πανδώρα" শব্দটি। তদন্তে জড়িয়ে পড়ে এসআই ফজলে নূর। অফিসিয়ালি এই তদন্তে জড়িয়ে পড়ে ফজলে নূরের তথৈবচ অবস্থায়।
এরমাঝে হাজির হয় চারমূর্তি। মুনীর, কুন্ডু, আজমিন, অরিন। আর আজমিনের কুকুর কুট্টুস। খুন হওয়া লাশটির সূত্র ধরেই তাদের আগমন। সবার তীর নিবদ্ধ লিজার্ড কিংয়ের দিকে। অন্ধকারের দেবতা। যাকে আলোয় আনতে চায় কেউ। আলোয়। মরণপণ খেলায় মেতেছে কেউ একজন। সেই খেলার মাঠে অনাহুত আগন্তুকের মতোই নতুন নতুন অথিতিকে দেখা যাচ্ছে। কেউ কারো নিয়��ি নিয়ে খেলছে আর সেই খেলটাই হলো নৈর্ঝত কোণের অধিকারীর উপজীব্য।

নৈর্ঝতের প্রকাশের কথা শুনেছি ২০২১ সালের প্রথম দিকে। এরপর থেকে লেখকের লেখার প্রতিক্ষায় ছিলাম বলা যায়। নৈর্ঝত নিয়ে বলতে হলে বলবো এই উপন্যাসটা সুদীর্ঘ একটা উপন্যাস। আমার একটি উপন্যাসে চরিত্রগুলোর বিল্ডাআপ, কাহিনীর বিস্তৃতি বেশ ভালো লাগে। নৈর্ঝতে প্রতিটি চরিত্রকে লেখক যেভাবে সময় দিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন নিঃসন্দেহে অনেক বিরাট একটি ব্যাপার। এই জিনিসটা লেখক খুব সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করেছেন। প্রতি ঘটনা, প্রতিটি দৃশ্য লেখক বিস্তারিত ভাবে এনেছেন উপন্যাসে। তবে তাই বলে যদি উপন্যাস ঝুলে যায় মতো মনে হয়, তাহলে সেটা ভুল। বইটা ঘটনাগুলোর গতি আছে, সবকিছু সচল। পুলিশ প্রসিডিওর আছে, যেখানে একটি তদন্তকে অফিসিয়াল নিয়মে সামলাতে দেখা যায়। আছে, চারমূর্তি। যারা ৯০ এর দশকের মানুষদের স্মৃতিকে চাঙ্গা করে দিতে আসবে। সেই সময় তিন গোয়েন্দার নিয়ে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত পাঠকদের জন্যেও বইটি অনন্য। অরিন, আজমিন, কুন্ডু এবং মুনীর যেন তিন গোয়েন্দার কথা মনে করিয়ে দিবে পাঠককে। আর আছে গ্রিক মিথ। আমি মিথ ভালোবাসি। মিথলজির প্রতি আলাদা টান কাজ করে। সেই হিসাবে মিথ থ্রিলারে আমার প্রচুর আগ্রহ। এই বইয়ে গ্রিক মিথের বিভিন্ন দেবতার আসা যাওয়া আছে। মিথ থেকে উঠে আসা পৌরাণিক চরিত্রগুলো হাতছানি দিয়ে ডাক দিবে আঁধার থেকে। একটা গা শিরশির করা ভাব পাঠককে বইটা আঁকড়ে ধরে পড়তে সাহায্য করবে।

4.5/5
Profile Image for A. Rahman Bishal.
267 reviews12 followers
November 2, 2022
জাহিদ ভাই আমাকে আবারও বিশাল ধাঁধাঁয় ফেললেন। গিলগামেশ আর নৈর্ঋতের গল্পের গাথুনি একই রকম। কিন্তু গিলগামেশ শেষ করে 'অতটা ভালো লাগেনি' সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলেও, নৈর্ঋত নিয়ে কোন চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারছি না।

গল্পের প্রথম ১০০ পেজে তেমন কোন হ্যাপেনিং নেই। ভুল করে সিনোপসিস পড়ে ফেললে তো একেবারেই নেই। শুধু চরিত্রদের কাজ কারবার। গল্পের খাতিরে দরকার হোক বা না হোক—মেদ বলে ঝেড়ে ফেলে দেয়া যায় না। আর ওসব কিভাবে গেলাতে হয় সেটা ভালোই জানেন লেখক। গল্পের প্রগ্রেস ছাড়াও দিব্যি পাতা উল্টিয়ে যাওয়া যায়। তার স্টাইলে পরিণত হয়েছে জিনিসটা।
লেখকের আরেকটা ট্রেইট হচ্ছে অতীতের কার্ড খেলে আপাত সম্পর্কহীন চরিত্রগুলার মধ্যে জটিল সব যোগাযোগ স্থাপন করা। একটু গুলিয়ে গেলেও, ভালোই লাগে ব্যাপারটা।

পুরো বইয়ে সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল রেফারেন্সগুলো। ২০০৩ এ আমি টিনেজার ছিলাম না, মহাখালীতেও বাস করতাম না। তাই স্থান-কালের প্রতি নস্টালজিয়া কাজ করেনি। কিন্তু বই-গান-খেলা নিয়ে লাইনগুলো মগজে টোকা দিয়েছে বেশ। সেজন্য বড়সর ধন্যবাদ পাওনা লেখকের।

বইয়ের গল্প ঠিকঠাক। চরিত্রায়ন বেশ। গতি শুরুতে মন্থর, শেষে দারুণ। লিখনশৈলী সুন্দর।
তবে, দুনিয়ার সবকিছু মিশিয়ে ঘুটা মারার ব্যাপারটাকে কীভাবে নিব ঠিক বুঝতে পারছি না। অপছন্দ না ঠিক, আবার পছন্দও না।

নানা জায়গায় কিছু প্রশ্ন আছে। কিছু জিনিস ধোঁয়াশায় মোড়া। সেটার কারণ আমার অমনযোগিতা কিনা নিশ্চিত নই। হয়তো কিছু মিস করে গেছি। তবে কিছু খানাখন্দ তো আছে বটে।


তানভীরের 'সুইসাইড নাকি খুন'এর কেসটার দরকার ছিল খুব?
মুনিরকে বলা মিথিলার সিক্রেটটা কী ছিল?
শিউলি কি প্রথম দুইবার লিজার্ড কিং-কে ডাকার পর তার পাওয়া পূরণ করে নাই? যদি করে থাকে তো—
লিজার্ড কিং-এর তো খুনখারাবি শুরু করা উচিত শিউলির তৃতীয় ইচ্ছা পূরণ (শাফকাতের সাথে বিয়ে) হবার পর। সেটা কি প্রথম খুনের আগেই হইসিল? ঘটনাক্রম একটু ধোঁয়াটে।
লিজার্ড কিং ব্রুটালি মারবে ভালো কথা, টিকটিকি রেখে যাবে, চিহ্ন এঁকে যাবে। কিন্তু বাংলায় ট্যাগ মেরে রাখে কেন বা পিঠে প্যান্ডোরা লিখে দেয় কেন ভাই?

হয়তো অবান্তর। আর পড়ার সময় আরও কী কী যেন ভেবেছিলাম মনে নাই এখন।

শান্তির ব্যাপার হলো ভুলচুক খুব কম পেয়েছি। বানান, কিংবা ছাপার ভুল হাতে গোনা একদম। তরতর করে পড়ে যেতে সমস্যা হয় না একদম।
মাহাতাব ভাইয়ের প্রচ্ছদ ফার্স্ট ক্লাস। সাথে দারুণ কাগজ-ছাপা-বাঁধাই।

সব মিলায়ে—জিনিসটা অন্তত আমার জন্য উপভোগ্য ছিল। তবে দুম করে রেকমেন্ড করে ফেলতেসি না কাউকে।
Profile Image for Mohammed Minhazz.
279 reviews13 followers
July 9, 2024
“নৈর্ঋত”

লেখক: জাহিদ হোসেন
প্রকাশকাল : মার্চ,২০২২
পৃষ্ঠা : ৫২০
______________________

অনেক ঝামেলার মাঝেও অবশেষে ৪ দিনে শেষ করলাম ‘নৈর্ঋত'। ব‌ই আসবে আসবে করেও আসছিলো না পুরো ১ বছর অপেক্ষায় ছিলাম, যা সার্থক হয়েছে। জাহিদ হোসেন আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন লেখক। “দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব” পড়ার পর উনার উদ্ভুত সেন্স অব হিউমারের সাথে পরিচিত হ‌ই । তার পর একে একে সবগুলো ব‌ই পড়লাম এবং প্রতিটা ব‌ই'ই প্রচুর ভালো লেগেছে। লেখক সিলেটি হ‌ওয়ায় অনেক চরিত্রের মুখ দিয়ে সিলেটি বুলি বের করান তিনি, যা আমি খুব উপভোগ করি কারণ আমার বুলিও সিলেটি।

পেটমোটা ব‌ইগুলোতে দেখা যায় অনেক সময় অযথা চুইংগামের মতো কাহিনী টেনে লম্বা করা হচ্ছে বা অপ্রয়োজনীয় চরিত্রের আনাগোনা, যা অনেক বিরক্তিকর। নৈর্ঋতেও অনেক চরিত্রের দেখা মেলে তবে তারা মোটেও অপ্রয়োজনীয় নয় প্রত্যেকে‌ই নিজের রোল ভালোভাবে প্লে করেছে। প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বর্ণনা কাহিনী বিল্ডাপ আর বেস তৈরি করতে সময় নেন লেখক, পুরোটা সময় বাতাসে যেনো একটা টেনশন ঝুলেছিল। শেষভাগে কিছুটা ধীরেসুস্থে কাহিনীর প্যাঁচ খুলেন তারাহুরোর ছাপ চোখে পড়েনি, যেটা গিলগামেশে প্রকটভাবে দেখা দেয়। ব্যাক কভার পড়ে সিরিয়াল কিলিং থ্রিলার মনে হলেও মিথলজি,কাল্ট,সিক্রেট সোসাইটি এবং হররের এক দারুণ মেলবন্ধন “নৈর্ঋত”।

“নৈর্ঋত” মানে দক্ষিন-পশ্চিম কোণ,রাক্ষস।


Carry me, caravan, take me away

Take me to Portugal, take me to spain...........
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
August 3, 2023
"লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে!"
কে এই লিজার্ড কিং? কেনই বা এসেছে?
থ্রিলার জুড়ে তো প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। রহস্যের অলি-গলি ঘুরতে আনন্দ পাব আমরা। "নৈর্ঋত" সেসব চাওয়া পাওয়া পুরণের পাশাপাশি আমাদের ঘুরিয়ে এনেছে অন্যরকম দুটি দুনিয়াতে। একটি হচ্ছে এ শতকের শুরুর ঢাকা। শতকের শুরুতে ঘটতে থাকা নিত্যকার বিষয়াবলী উঠে এসেছে অবলীলায়। আপনি তখনকার কেউ হলে নস্টালজিক হবার দুর্দান্ত সুযোগ থাকছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে গ্রিক মিথের জার্নি। পুরো গল্পজুড়ে বহু জায়গায় রেফারেন্স এসেছে প্যান্ডোরার বক্স কিংবা লিজার্ড কিং এর সুবাদে। এই জার্নি টাও উপভোগ্য লেগেছে আমার কাছে। সব মিলিয়ে নৈর্ঋত এর জার্নিটা শুধু একটা থ্রিলারে সমাপ্ত থাকেনি।

একদম সবদিকে দুর্দান্ত বা নিখুত না হলেও নৈর্ঋতকে চমৎকার বলতেই হচ্ছে। বিশাল সাইজের এই বইয়ের শেষ অব্দি লেখায় উত্তেজনা ধরে রেখে গেছেন লেখক।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
November 22, 2022
যে আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম সে তুলনায় খানিকটা আশাহত। কেন যেন ঠিক জমেনি। যেকোনো বই পড়ার সময় আমার মাথার ভেতর ��কটা সিনেমা চলে। ভিজুয়ালাইজ করতে পারি। কিন্তু এই বইয়ে সেটা হচ্ছিল না। কানেক্ট করতে পারছিলাম না। লেখক নাকি আমার সমস্যা কে জানে।
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
January 21, 2024
মোটা বই আজকাল কম পড়া হয়। কারণ একটাই, ব্যস্ততা। বই পড়ার সময় পাই মূলত অফিস থেকে বাসায় যাবার পর আর বাসা থেকে অফিসে আসার আগে (আমি আবার বেশ সকালে উঠে পড়ি)। বাসায় ফিরে হ্যান ত্যান কাজ করতে গিয়ে মোটের ওপর বই পড়ার সময় পাই ৫০-৬০ মিনিটের মত, আর সকালে ঐ ওরকমই। স্লো রিডার হবার কারণে ৫০০+ পৃষ্ঠার একটা বই পড়তে আমার সময় লাগে ৬-৭ দিন, তাও আবার টানা প্রতিদিন পড়লে। এর মাঝে টানা ২-৩ দিন না পড়তে পারলে ঐ বইটা আর ধরা হয় না। অর্ধ-পড়া বইটা পড়েই থাকে। মূলত এ কারণেই গত ১ বছরে আমি কোন মোটা সাইজের বই পড়িনি বললেই চলে।

তবে বইটা যখন হয় জাহিদ হোসেনের লেখা তখন এই রিস্কটা নেয়াই যায়। কারণ আমি মনে করি, বর্তমান সময়ে যে কজন তরুণ লেখক আছেন তার মাঝে জাহিদ হোসেনের লিখনশৈলী সবচাইতে ভালো। অনেকটা হুমায়ূন আহমেদের লিখনশৈলীর মত। যাই লেখেন তরতরিয়ে পড়ে ফেলা যায়। আর সেখান থেকেই হাত দিলাম ‘নৈর্ঋত’ এ।

কিছু কিছু বই থাকে না যে, পড়ার পর মনে হয় কেন এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল? ৫২০ পৃষ্ঠার সুবিশাল এই বইটার ক্ষেত্রেও আমার এরকম মনে হয়েছে। আমি জানি বইটা আমি অফিসে পড়তে পারবো না, তবুও এই কয়দিন বইটা আমার ব্যাগে থেকেছে। জাহিদ হোসেন আমার কাছে আরেকবার প্রমাণ করেছেন, কেন তাকে সেরা লিখনশৈলীর লেখক বলা যায়। বইটাতে উঠে এসেছে ‘আমরাই বোধহয় শেষ জেনারেশন’ এর সময়কালের গল্প। নস্টালজিক করে দেয়া ভিডিও গেমের দোকানে খেলা মোস্তফা গেম আছে, পাড়ার ‘লাইব্রেরী’ নামক স্টেশনারী সামগ্রী বিক্রি করা দোকানে তিন গোয়েন্দার ভলিউম কেনা আছে, বিকেলে মাঠে ক্রিকেট খেলা আছে, দুনিয়া এসপার ওসপার হয়ে গেলে সন্ধ্যায় বাসায় ঢোকার কড়া নির্দেশ আছে, আছে ফেলুদা, ঘনাদা, টেনিদা, টিনটিন এর রেফারেন্স সহ অনেক কিছু। সেই সাথে মূল যে জিনিসটা আছে সেটা হচ্ছে দারুণ একটা গল্প। গল্পটা একই সাথে একটা ক্রাইম থ্রিলার, একটা অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার যেটাতে খানিকটা পৌরাণিক ফ্যান্টাসির এলিমেন্টও মিক্স আছে আবার সেই সাথে কামিং অফ এইজ এর খানিকটা মিশ্রণও আছে। জনরার দিক দিয়ে বইটাকে জগাখিচুড়ি জনরা বললেও, লেখা হিসেবে খুবই সুস্বাদু একটা ডিশ। জাহিদ হোসেন তার সুনিপুন লিখনশৈলীতে আস্তে আস্তে করে স্টোরিটা বিল্ডআপ করেছেন এবং শেষে এসে অলমোস্ট সব সুতো মিলিয়েছেন। বইটাতে অনেক রেফারেন্স এলেও আমার কাছে মনে হয়েছে লেখক তিন গোয়েন্দাকে একটা ট্রিবিউট দিতে চেয়েছেন। তাইতো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা মুনীর আমার চোখে ধরা দিয়েছে কিশোর পাশা হিসেবে, অরিনকে মনে হয়েছে বইপোকা রবিন, ভোজনরসিক ভোটকা কুন্ডু মুসার রুপক, আজমিন হয়ে গিয়েছে জরজিনা পার্কার আর কুট্টুস তো অবভিয়াসলি রাফিয়ান। তবে তিন গোয়েন্দাদের চরিত্রের সাথে মিল থাকলেও এরা প্রত্যেকেই স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল। দূর্দান্ত একটা গল্পে যত্ন করে গড়া চরিত্র আর চমৎকার লিখনশৈলীর এই উপন্যাসটাকে আমি ৫ স্টার রেটিং দিতে গিয়েও দিতে পারিনি কয়েকটা প্রশ্ন আর কিছু জিনিস ওভারলুক করে যাওয়ার জন্য। নিচে সেগুলা লিখলাম, তবে আপনি যদি বইটা না পড়ে থাকেন তবে আপনার অবশ্যই উচিত হবে এইটুকু এড়িয়ে যাওয়া। সুবিধার্থে স্পয়লার অ্যালার্টও দিয়ে দিলাম।



এরকম কয়েকটা বিষয় ছাড়া আর কোন অসঙ্গতি আমার চোখে পড়েনি। গুণ তো আগেই বলেছি তবে লেখকের একটা স্পেশাল গুণ না লিখলেই নয়। সেটা হলো, অহরহ ঘিয়ালি বা ক্রিম রঙ এর ব্যবহার। বইতে বেশিরভাগ বিল্ডিংই ক্রিম কালারের, টেলিফোন সেটও ঘিয়ালি কালারের, জামা কাপড়েও এই রঙ এর ব্যবহার দেখা যায়। এই জিনিসটাকে আমার চোখে স্পেশাল কারণ আপনি যখন এই কালারটা মাথায় রেখে মনে মনে সেটিংটা বানাবেন, দেখবেন আপনার মনের অজান্তেই একটা ভিনটেজ সেপিয়া টোনের দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে। এই জিনিসটা আমার কাছে ব্রিলিয়ান্ট লেগেছে। আমি জানিনা, এই বইয়ের সম্পাদক কতটুকু কাজ করেছেন, কিন্তু এত বিশাল বইয়ের ক্ষেত্রে বলা যায়, তার কাজটা সুন্দর হয়েছে। তবে কিছু কিছু ব্যাকাংশ ২০০৩ এর সময়কালের সাথে মেলেনি বলে মনে হয়েছে। আবার দিক/কোণ নিয়ে শেষের ক্লাইম্যাক্সে একটা মেজর ভুল আছে তবে এই ভুলটা আমার ধারণা টাইপো টাইপের কিছু। এটুকু ইগনোর করা যায় আমার দৃষ্টিতে।

সব মিলিয়ে ‘নৈর্ঋত’ এর সাথে আমার সময় খুব দারুণ কেটেছে। এই বই ৫২০ পৃষ্ঠা না, ১৫২০ পৃষ্ঠা হলেও পড়া যায়। কেউ তো মনে হয় পড়া বাকি নেই। বাকি থাকলে চোখ বন্ধ করে তুলে নিন বইটা।
Profile Image for Mrinmoy Bhattacharya.
225 reviews35 followers
April 6, 2022
Carry me, caravan, take me away
Take me to Portugal, take me to Spain
Andalucia with fields full of grain
I have to see you again and again...

ইস্ ! কি সব বকছি !
বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখতে বসে হঠাৎ জিম মরিসনের ’Spanish Caravan’ এর লিরিক্স লিখছি কেন !!
কারণ, জাহিদ হোসেনের "নৈর্ঋত" উপন্যাস । প্রায় সাড়ে পাঁচশো পৃষ্ঠার সুবৃহৎ এই উপন্যাস টি পড়া শেষ করার পর থেকেই মোহাবিষ্টের মতো অবস্থা । মাথার মধ্যে ’লিজার্ড কিং’ একনাগাড়ে ‘Spanish Caravan’ গেয়ে চলেছেন । কি পড়লাম এটা !!

📚 বিষয়-সংক্ষেপ (ফ্ল্যাপ থেকে) : মহাখালী কলেজ গেট সংলগ্ন বস্তির খালে বস্তাবন্দি একটা লাশ পাওয়া যায় । খণ্ডবিখণ্ড লাশ । কেউ লাশের হাত-পা-মাথা সুন্দর করে কেটে ট্যাগ করে রেখেছে । হাতের সাথে 'হাত' লেখা ট্যাগ, পায়ের সাথে 'পা' আর মাথার সাথে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা 'মাথা' । হাত-পা-মাথা সব একসাথে । পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো ।

লাশের পরিচয় পাওয়া যায় । মিথিলা ফারজানা । বনানী বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী । ক’দিন পরই যার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ।

টুকরা-টাকরা দেহাংশের সাথে পাওয়া যায় ২৯টা লেজবিহীন টিকটিকি ও একটা ছোট্ট চিরকুট । চিরকুটে লেখা : লিজার্ড কিং ফিরে এসেছে ।

মিথিলা ফারজানার ঘাড়ের পিছনে লেজহীন টিকটিকির ট্যাটু এঁকে রাখা, তার প���ঠে বড় করে অচেনা ভাষায় একটা শব্দ লেখা :
Πανδώρα

ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে মিথিলা ফারজানার দুই সহপাঠী মুনীর শাফকাত ও অভিজিৎ কুণ্ডু । জড়িয়ে পড়ে দুই বান্ধবী আজমিন-অরিন ও চারপেয়ে এক জন্তু । কুট্টুস ।

এই চারমূর্তি কি পারবে মিথিলা ফারজানা হত্যা-রহস্য উদ্ঘাটন করতে ? অন্ধকার টানেলে আলোর রেখা খুঁজে নিতে ? নাকি নিকষ কালো আঁধার গ্রাস করে নিবে ওদের ?

রহস্যময় এ খুনের দায়িত্ব পায় গুলশান থানার চৌকস অফিসার ফজলে নূর । তদন্তে বেরিয়ে পড়ে একই ধাঁচে খুন হয়েছে আগেও । খণ্ডবিখণ্ড লাশ মিলেছে, চিরকুট মিলেছে । মিলেছে অচেনা ভাষার ঐ লেখাটাও :
Πανδώρα

অজানা ভাষায় লেখা এই কথাটার মানে কী ? কী চায় এই খুনি ? কেইবা এই লিজার্ড কিং ?
তবে কি সহস্রাব্দ-প্রাচীন গ্রিক মিথ প্যান্ডোরার বাক্সেই সব উত্তর রয়ে গেছে ? বাক্স কি তবে খুলেই গেল ?


📚 পাঠ-প্রতিক্রিয়া : আচ্ছা, এই উপন্যাসটির জঁনরা কি ? ফ্ল্যাপের বিষয়বস্তু পড়ে তো ক্রাইম থ্রিলার বলেই মনে হল । কিন্তু ‘প্যান্ডোরার বক্স’এর উল্লেখ পেলাম যে ! তবে কি মিথোলজিক‍্যাল থ্রিলার ? হত্যার বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে ‘প্যারানর্মাল’ ব্যাপার-স্যাপার আছে, তাহলে কি ‘হরর থ্রিলার’? কিন্তু ঐ যে চার কিশোর-কিশোরী আর তাদের পোষ্য কুট্টুস যে রহস্য সমাধানে নেমেছে, ওদের সাথে এস.আই. ফজলে নূরও আছেন... তবে কি কিশোরদের জন্য লেখা ডিটেকটিভ উপন্যাস !

▫️আর ভাবতে হবে না, আমি বলছি । "নৈর্ঋত" উপন্যাসটি একটি ’মিথলজিক্যাল-হরর ফ্যান্টাসি থ্রিলার’... যার মধ্যে একইসাথে পুলিশ প্রসিডিউরাল, হাস্যরস, অ্যাডভেঞ্চার, অতিপ্রাকৃত, মিথ, ফ্যান্টাসি - সবকিছুই আছে । তবে এই উপন্যাসটিকে থ্রিলারের চেয়ে 'কামিং-অফ্-এজ' জনরার উপন্যাস বললে বেশী পারফেক্ট হবে ।

📝 জাহিদ হোসেনের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় 'একজোড়া চোখ খোঁজে আরেক জোড়া চোখকে' নামের একটি 'লাভক্রাফ্টিয়ান হরর' থ্রিলারের মাধ্যমে । তারপরেই পড়ি সুবৃহৎ মাইথোলজিক্যাল-ফ্যান্টাসি থ্রিলার 'গিলগামেশ', প্রায় চারশো পাতার সেই উপন্যাসে লেখকের গল্প বলার ধরণ আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছিল । আমার মনে হয় যে কোনো ভালো থ্রিলার গল্পেই লেখকের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে পাঠকের মনযোগ আকর্ষন করে রাখা, আর এই কাজটা 'জাহিদ হোসেন' যে খুব ভালো মতোই পারেন তা বলাই বাহুল্য । গল্পের পরিস্থিতির সাথে পাঠককে রিলেট করানোই হোক, অথবা যে কোনো দৃৃশ্যকে পাঠকের চোখে ফুটিয়ে তোলার মতো ক্ষমতা... সবকিছুই তিনি করেন সুনিপুণ ভাবে । 'গিলগামেশ' পড়ে যদি আপনি মুগ্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি "নৈর্ঋত' উইল ব্লো ইওর মাইন্ড"।

▫️লেখক ভূমিকায় বলেছেন "নৈঋত আমার বেড়ে ওঠার সময়কার এক চিত্র"। ঠিক এই কারণেই আমিও আরও বিশেষ ভাবে জড়িয়ে পড়েছি এই উপন্যাসের সাথে । '৯০ দশকের মাঝামাঝি জন্মালেও আমার কিশোর বেলার ছবি খুঁজে পেয়েছি এই উপন্যাসটির প্রথমদিকের অধ্যায়গুলি জুড়ে । এক প্রত্যন্ত গ্রামের অধিবাসী হওয়ার কারণে ছোটবেলায় 'তিন গোয়েন্দা' পড়ার সুযোগ হয়নি কখনো, কিন্তু স্কুলে পড়ার সময় থেকেই 'ফেলুদা-টেনিদা-টিনটিন' যা পেয়েছি গোগ্রাসে গিলেছি । বাবা-মায়ের কড়া শাসন, অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে তুলনা দেওয়া, গল্পের বইয়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা... এসব পড়তে পড়তে বারবার ফিরে যাচ্ছিলাম নিজের স্কুলজীবনের দিনগুলিতে । ঠিক এই কারণেই এই উপন্যাসের প্রথম দিকের অধ্যায়গুলি পড়েছি ভীষন ধীরেসুস্থে, পুরোমাত্রায় উপভোগ করেছি 'কিশোর বেলার নস্টালজিয়া'।

📝 'নৈর্ঋত' লেখা হয়েছে নন-লিনিয়ার ন্যারেটিভে । কাহিনী এগিয়েছে আলাদা আলাদা ব্যক্তির আখ্যানে, কখনো ডায়েরির পাতা থেকে, আবার কখনো পুলিশের কেস ফাইল থেকে । প্লট-সাবপ্লট, গল্পের মধ্যে গল্প । লেখক জাহিদ হোসেনের গল্পে যেমন অনেক 'পপ-কালচার রেফারেন্স' থাকে, তেমনই থাকে প্রচুর চরিত্রের আনাগোনা । প্রয়োজন অনুযায়ী লেখক চরিত্রগুলিকে ছড়িয়ে রাখেন পুরো উপন্যাস জুড়ে । সেইরকমই এই বইয়েও চরিত্রের সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু প্রতিটি চরিত্রেরই গল্পে অপরিহার্য ভূমিকা আছে ।

📝 এই উপন্যাসের গল্প আবর্তিত হয়েছে চার কিশোর-কিশোরী, মুনির-অভিজিৎ-আজমিন-অরিণ এবং আজমিনের পোষ্য 'কুট্টুস'কে কেন্দ্র করে । এই পাঁচজনের প্রত্যেকের ভূমিকাই কাহিনীতে সমান গুরুত্বপূর্ণ, গল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেকেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করে কাহিনীতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে । এছাড়া আছেন চৌকস পুলিশ অফিসার ফজলে নূর, যিনি এই কাহিনীর অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি । যথার্থ বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সাথে নিখুঁত পুলিশ প্রসিডিওরাল ফলো করে তিনি রহস্য সমাধানের সঠিক পথ খুঁজে নিয়েছেন ।

▫️এতগুলি কিশোর চরিত্র থাকা সত্ত্বেও এই কাহিনী কিন্তু সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের জন্য । গল্পের সাথে জড়ানো প্রচুর নস্টালজিয়া এবং হাস্যরস যেমন আছে... তেমনই আবার কাহিনীও ভীষণ 'ডার্ক'। আসলে এটি কিশোরদের নিয়ে লেখা 'প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাস'। থ্রিলার উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও গল্প কিন্তু খুব গতিময় নয়, কিন্তু কেউ যদি কাহিনীর সাথে 'রিলেট' করতে পারেন তাহলে লেখকের মসৃণ-চুম্বকীয় লেখনী আপনাকে টেনে নিয়ে যাবেই, তখন ছয়শো পাতার উপন্যাসও একদিনে পড়ে ফেলা অসম্ভব মনে হবে না । 'গিলগামেশ' পড়ার পর থেকেই জাহিদ হোসেনের গল্প বলার ধরণ আমার ভীষন পছন্দের । একটি উপন্যাসের মধ্যে এতগুলি বিষয়বস্তু নিয়ে এত নিখুঁত গল্পের-বুনন আমি আর পড়িনি । 'নৈর্ঋত' পড়ার পর আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি লেখক জাহিদ হোসেনের এইরকম একটি 'গল্প শোনার' জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করাই যায় ।

✏️ প্রচ্ছদ : মাহাতাব রশীদের করা 'নৈর্ঋত' এর প্রচ্ছদটি আমার দেখা অন্যতম সেরা প্রচ্ছদ । প্রতিবার বইটি হাতে নিলেই বেশ কিছুক্ষণ করে শুধু প্রচ্ছদটির দিকেই তাকিয়ে থেকেছি এতটাই 'দৃষ্টিনন্দন'।

📝 এই উপন্যাসের পরিসমাপ্তি খুব 'বিষাদময়', শেষ করার পর থেকেই মনটা ভারী হয়ে আছে । তবুও... শেষ পরিচ্ছেদটি পড়ার সময় অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে । কে জানে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এই চারমূর্তি এবং তাদের প্রিয় 'কুট্টুস'কে নিয়ে লেখা নতুন কোনো উপন্যাস পড়ার সৌভাগ্য হতেই পারে । আসুন শেষ অংশটুকু সবাই একসাথেই পড়ি...

"আমার খুব ইচ্ছা তুমি আর আমি মিলে একদিন ক্যারাভানে চেপে ইউরোপ ঘুরে বেড়াবো । তুমি গিটারে জিম মরিসনের 'স্প্যানিশ ক্যারাভান' গাইবে, আমি শুনবো । বাইরে তখন তারাজ্বলা আকাশ । কুট্টুস হয়তোবা ভেউ ভেউ জুড়ে দিবে । তুমি ওকে কিচ্ছুটি বলবে না । মিটিমিটি হাসবে স্রেফ । আর গিটারের সুরে মাতোয়ারা করে তুলবে স্পেন-পর্তুগাল-আন্দালুসিয়া ।"
Profile Image for Mrittika.
36 reviews20 followers
November 30, 2022
এত চমৎকার একটা গল্প! একটা পেইজও বোরিং লাগে নাই। সাধারনত মটকু বইগুলোতে মাঝখানে এসে সুতো কেটে যায় কিন্তু এরবেলা তা হয়নি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো। প্রচ্ছদ দারুণ ছিলো। গল্পের সাথে পুরোপুরি খাপে খাপ মিলে গেছে।
নৈর্ঋত খুব খুউউব প্রসংশদার দাবিদার!
Profile Image for শোয়েব হোসেন.
193 reviews13 followers
September 2, 2022
ড্যান ব্রাউনঃ
* প্রতিটা বইয়ের প্রতিটা লাইন, প্রতিটা বাক্যের একটা উদ্দেশ্য থাকতে হয়। যেমনঃ
হয় সেটা চরিত্র ‘এক্স’ কে পয়েন্ট ‘এ’ থেকে পয়েন্ট ‘বি’-তে নিয়ে যাবে, নয়তো
কোন ইনফরমেশন বা মেসেজ চরিত্র ‘এক্স’ এর কাছ থেকে ‘ওয়াই’ এর নিকট কনভে করবে।
* একটা সফল থ্রিলারে তিনটা 'সি’ থাকা বাধ্যতামূলক - কন্ট্রাক্ট, ক্রুসিবল, ক্লক। কন্ট্রাক্ট হচ্ছে পাঠকের সাথে লেখকের চুক্তি যে আমি এমন কিছু জানি যা আপনি জানেন না, বইটা পড়লে আপনি সেটা জানতে পারবেন। এবং পাঠককে আটকে রাখতে হবে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে, আপনি তাকে বলবেন এই পাতা ওল্টালেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারবেন। ক্রুসিবল হলো সেই জিনিসগুলো যা প্রটাগনিস্টকে হারাতে হবে অ্যান্টাগনিস্টের ছুড়ে দেয়া বাধা অতিক্রম করতে না পারলে। আর ক্লক হলো টিকিং ক্লক, যে সময়ের মধ্যে সেই বাধা অতিক্রম করতে হবে।
ডেভিড বালডাচিঃ
* হতে পারে আপনার মাথায় দুর্দান্ত একটা আইডিয়া এসেছে, কিন্তু সেটা আপনি বর্তমানে যে বইটা লিখছেন তার সাথে যায় না। সেটা আপনার বইয়ের প্লটকে এগিয়ে নিয়ে যায় না, এমনকি ক্যারেকটার গ্রোথ বা ডেভলপমেন্টের জন্য সাব-প্লট হিসেবেও জোর করে ব্যবহার করতে পারছেন না। তারপরও কি আপনি সেটা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করবেন? না, আপনি সেটা আপনার আইডিয়া খাতায় টুকে রাখবেন। যেন পরবর্তী বই লেখার সময় আইডিয়া ঘাটতি না হয়। আমি একবার হোয়াইট হাউসে ঘুরতে গিয়ে চমৎকার একটা আইডিয়া পেয়ে যাই, সেই আইডিয়াটা আমি ব্যবহার করি পাঁচ বছর পরে দ্য টার্গেট বইয়ে।
জেমস প্যাটারসনঃ
* বইয়ের লেখার ক্ষেত্রে আউটলাইন জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আউটলাইন এমনভাবে করতে হয় যেন চাইলে সেটাই প্রকাশকের কাছে বিক্রি করে দেয়া যায়, অন্য যেকোন লেখক যেন সেটা দেখেই বইটা লিখে ফেলতে পারে।
* ভালো লিখনশৈলীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো একই শব্দ রিপিটেটিভ ব্যবহার না করা (সর্বনাম বা ক্রিয়াপদ ব্যতিরেকে)।
আপনি ভাবতেই পারেন ধান ভানতে শিবের গীত কেন গাইছি। এতো দূর যেহেতু পড়েই ফেলেছেন, দয়া করে ধৈর্য্য ধরুন।
লেখকের আগের বইটা পড়ে প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলাম আমি। কারণ ছিল - অপ্রয়োজনীয় সাব-প্লট, বর্ননা, ক্রুসিবল পেতে বইয়ের তিন-চতুর্থাংশ পার করে দেয়া, আরোপিত টুইস্ট, একই শব্দের রিপিটেটিভ ব্যবহার ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাপ্তি ছিল একটাই - লেখকের শক্তিশালী লেখা ডেলিভার করার ক্ষমতা আছে এতোটুকু বুঝতে পারা।
এই বইয়ের মুখবন্ধে যখন পড়লাম বইয়ের কোন আউটলাইন ছিল না, লিখতে লিখতে লেখক প্রায়ই ভুলে যেতেন কি লিখতে চেয়েছিলেন তখন ভেবেছি গেছে আরেকটা।
বইয়ের প্রচারণার সময় বলা হয়েছিল নাইন্টটিজ কিডদের এটা নস্টালজিক করে দেবে, কিন্তু কিছুদূর যেতেই বুঝতে পারলাম এটা আমাদের দশকের জন্য না, আমাদের পরের দশকে বেড়ে ওঠা ছেলে-মেয়েদের জন্য তখন আরেকদফা ভাবলাম গেছে আরেকটা।
কিন্তু মাই গড! লেখক কি দারুণভাবেই না আমাকে ভুল প্রমান করলেন। এই বইয়েও প্রচুর চরিত্র আর 'আপাতদৃষ্টিতে’ অপ্রয়োজনীয় সাব-প্লট ছিল। প্রকৃতপক্ষে সেসবই ছিল অদৃশ্য সুতোয় গাথা। গল্প যত এগুতে থাকে সুতো তত দৃশ্যমান হতে থাকে। পাঠকের দিকে একের পর এক ছুটে আসতে থাকে প্রশ্ন, আর পাঠকও জবাবের আশায় উলটে যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। এই পৃষ্ঠা ওলটানো কি স্বার্থক ছিল? সেই জবাবেই আসছি।
লেখক যেন প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন সব সমালোচনা/প্রশ্নের জবাব লিখেই দেবেন, ভিডিয়ো বানিয়ে বা আড়াই মাইল লম্বা পোস্ট দিয়ে নয়। তিনি চরিত্রগুলো তৈরি করেছেন খুব যত্ন নিয়ে, তাদের মধ্যকার মিথষ্ক্রিয়া কখোনই ওভার দ্য টপ মনেহয়নি। আর ক্লাইমেক্স? এতো সময় নিয়ে এতো যত্ন করেও ক্লাইমেক্স লেখা যায়!
বইটা কি হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফুলপ্রুফ? না, দুয়েক জায়গায় কন্টিনিউটি এরর ছিল, সম্পাদনা জনিত ত্রুটি ছিল। কিছু কিছু জায়গায় সিন ব্যাকট্র্যাকের ক্ষেত্রে অতীতের ঘটনাগুলো বর্তমান কালে বিবৃত করা হয়েছে। প্রথমে বলা হলো লিজার্ড কিং-কে দুর্বল করার জন্য নৈর্ঋত কোনের বিপরীত মুখী হয়ে নামটা উল্টো করে বলতে হবে। কিন্তু শেষে নৈর্ঋত কোনে মুখ করেই বলা হয়েছে। তারপরও ...
আগের প্রশ্নে ফেরত আসি, পৃষ্ঠা ওলটানো কি স্বার্থক ছিল? হেল ইয়াহ!
Displaying 1 - 30 of 79 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.