সখীপুর গ্রামের মানুষজন একটা কথা খুব ভালো করেই জানে— যে ব্যক্তি নিজের জীবনটা ভালোবাসে সে কখনই জিন্দারকের চরে পা দিতে যাবে না। সেই রহস্যময় ভৌতিক জিন্দারকের চরে হুট করেই এসে আশ্রয় নেন এক অগোছালো চেহারার পাগলাটে ভদ্রলোক, যিনি নাকি পেশায় শিক্ষক। সখীপুরের জনগণের কাছে যার পরিচয় “পাগলা মাস্টার”। যার পেছন পেছন সখীপুরে এসে পা দেয় এক অপরিচিত যুবক। যুবককে এখানে ওখানে ছোঁক ছোঁক করতে, পাগলা মাস্টারের সুলুক সন্ধান করতে দেখা যায়। তারপর আসে সেই রহস্যময় রাতটা, যে রাতে অদ্ভুত ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে গোটা সখীপুর। আসলে কী ঘটছে সখীপুরে? কী রহস্য বুকে লুকিয়ে জিন্দারকের চরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন পাগলা মাস্টার? উনার পেছন পেছন ফেউয়ের মতো ছুটে আসা যুবকটাই বা কী চায়? এর সাথে আন্দামানের গহীনে থাকা এক প্রায়-নাস্তিক নৃগোষ্ঠীর-ই বা কী সম্পর্ক? অধ্যাপক পি. সুব্রামানিয়্যাম, ডা. সিলভার, পৃথিবীবাসীর অজ্ঞাত অশ্রুত অতীত সবকিছুই কি একসুতোয় গাঁথা? সব প্রশ্নের নাড়িনক্ষত্র লুকিয়ে আছে “নাড়িনক্ষত্র”-এর বুকে। পাঠক, মহাজাগতিক ভয়ের জগতে আপনাকে স্বাগতম!
মনুষ্যবর্জিত এক জায়গা হলো জিন্দারকের চর। সেখানে অজানা এক কারণে বসবাস করছেন এক "পাগলা মাস্টার"। মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে করা তার গবেষণার কারণে হয়তো হুমকির মুখেই পড়তে চলেছে গোটা মহাবিশ্ব।
ডক্টর এলিসের কন্সপাইরেসি থিওরিটা নিয়ে আমারও বেশ ইন্টারেস্ট আছে। সেটার সূত্র ধরেই দারুণ একটা প্লট সাজানো হয়েছে। স্বল্প পরিসরের কারণে গল্পের ফ্লো কোথাও বাধা পায়নি। বিভিন্ন ঘটনা বা জায়গার বর্ণনাভঙ্গী বেশ চমৎকার। গ্রামের পটভূমিতে গল্প অনেক পড়েছি, তারপরেও এখানে কোনো অংশ পড়তে একঘেয়ে লাগেনি। মোস্তফা চাচার বইয়ের দোকানের ছোট অংশটাও বেশ। তবে, তুষার আর শেফালীকে আরেকটু লিংকড ভেবেছিলাম। আর এক জায়গায় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে এক চরিত্রকে রাজি করিয়ে ফেলাটা একটু রাশড লেগেছে, অথচ শুরুতে তাদের দুই মেরুর মানুষ মনে হচ্ছিল। অবশ্য কৌতুহল সবারই থাকে, আর কৌতুহলে বিড়ালও মরে!
হররে ভয়ের অ্যাটমস্ফেয়ার আনাটা খুবই জরুরি। কসমিক হররের ক্ষেত্রে সেটা আনাটা বেশ কঠিন, যেহেতু এটা আমাদের পরিচিত জগতের সাথে মেলে না। কিন্তু সেই ভয়াল জগতকে কল্পনা থেকে বইয়ের পাতায় দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখক এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন, এসব নিয়ে বেশি গভীরভাবে ভাবতে গেলে পাঠকেরও দুঃস্বপ্ন দেখা বিচিত্র নয়।
লেখকের কাছ থেকে অন্যান্য জনরার পাশাপাশি এই জনরায় আরো লেখা পাওয়ার আশা করছি।
সখীপুর গ্রামের জিন্দারকর চরে কেউ যেতে চায় না। চর হলেও এখন সেটাকে ছোটখাটো দ্বীপ বলা চলে। কোনো এক রহস্যজনক কারণে চরে একের পর এক মানুষের লাশ পাওয়া গেলে গ্রামবাসীরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আর সেই নিষিদ্ধ জায়গায় কিনা বেশ কয়েকদিন ধরে আছে এক বৃদ্ধলোক, যে কিনা নিজেকে "শিক্ষক" হিসেবে দাবি করে। শহর থেকে আসা সাংবাদিক "দোহা"- কে জিন্দারকর চরের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়। এরমধ্যে একদিন হঠাৎ কেঁপে ওঠে সখীপুর। ভূমিকম্প নাকি প্রলয়? দোহা মরিয়া হয়ে ওঠে। শঙ্কা কি তাহলে সত্যি হতে চলেছে! রাতে বেশ কয়েকজন বিদঘুটে স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠে যেন কোনো মহাজাগতিক শক্তি হানা দিয়েছে পৃথিবীর বুকে...
ডঃ এলিস সিলভারকে কি চেনেন আর তাঁর চাঞ্চল্যকর মতবাদ? খোঁজ পেয়েছি ❝নাড়িনক্ষত্র❞ থেকে তারপর গুগলে সার্চ দিলাম। মতবাদের কথা কেন বলছি? কারণ বইয়ের প্লটই এই মতবাদের উপর বেজড। সংক্ষেপে মতবাদ নিয়ে বলতে গেলে, ❝মানুষ পৃথিবীর জীব নয়❞- মানে মানুষ স্বয়ং এলিয়েন! বিশাল বড়ো একটা কনসেপ্টকে লেখক ছোট পরিসরের একটা বইয়ে আঁটানো চেষ্টা করেছেন। তাই কাহিনী যেমন দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেছে তেমনি কিছু জায়গায় ডিটেলিং বাদ পড়েছে।
বেশ সহজভাবেই লাভক্রাফটের সাথে মতবাদকে মার্জ করা হয়েছে। ভৌতিক বর্ণনাগুলো বেশ ভালোভাবেই করা হয়েছে। বিশেষ করে স্বপ্ন আর শেষের অংশ। মূল দুটি চরিত্র দোহা ও মাস্টার মশাই। ঘটনাগুলো তাদের চারিপাশেই ঘুরতে থাকে। তবে কিছু জায়গায় কনফিউজিং লেগেছে। অতীত বর্ণনায় নেত্রামার অশ্রুসাপ বানরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এটার সাথে মানবজাতির সৃষ্টি আবার শেষে নেত্রামার অশ্রুসাপের জন্য হঠাৎ পরিবর্তন মাথার উপর দিয়ে গেছে! আর কেনইবা সুব্রামানিয়্যাম আত্মহত্যা করতে গেলেন? কী এমন দেখেছিলেন! নেত্রামার পুরো কনসেপ্টও স্পষ্ট না। আরও খোলাসা করলে ভালো হতো। ওভারঅল মৌলিক লাভক্রাফট হিসেবে মোটামুটি ভালোই হয়েছে বলা যায়। বইয়ের প্রচ্ছদটা সুন্দর। স্বপ্নের সাথে লাস্ট সিনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এই কদিন আগেও আমি জনরা দেখে বই পড়তাম না, সত্যি বলতে বেছে পড়ার বিলাসিতাটা ঠিক ছিলো না, যা যখন সামনে পেতাম সেটাই বুভুক্ষুর মতো গিলতাম আর ঠিক জানতামও না এতো এতো জনরার কথা।কসমিক হরর জনরা পড়া হলেও বুঝি নি ঐটা কসমিক হরর বা লাভক্র্যাফ্টিয়ান হরর ছিলো, মোটা দাগে হররের মধ্যেই ফেলে দিয়েছিলাম।
তাই আমার মত মানুষদের জন্য কসমিক হরর জনরাটা সম্পর্কে আগে একটু বলে নেই। এটা হরর এরই সাব জেনার। একে লাভক্র্যাফ্টিয়ান হররও বলা হয়। সাধারণত হরর বা ভৌতিক উপন্যাস এ ভয় এর সূত্র পাতটা হয় আধিভৌতিক কোনো সত্ত্বা থেকে, প্রধান ভয়টা থাকে ব্যক্তিমৃত্যুর। কসমিক হরর এর ক্ষেত্রে পুরো মানবজাতির বা তার অংশবিশেষ এর অস্তিত্ব সংকটই দেখা যায় পৃথিবীর সীমানার বাইরের কোনো মহাজাগতিক সত্তা থেকে। আর সামগ্রিক অস্তিত্ব সংকট এর থেকে ভয়ের আর কিই বা হতে পারে।
বইটার কলেবর খুবই ছোট, মাত্র ৯৪ পৃষ্ঠায় ই শেষ। কোনোপ্রকার বাহুল্য দোষে দুষ্ট নয়। সবথেকে ভালো যেটা লেগেছে সেটা হলো চরিত্র গুলোর সংলাপে প্রমিত আর আঞ্চলিক ভাষার স্বচ্ছন্দ মিশেল। সাধারণ অবস্থায় আমি হরর বিশেষ পড়ি না, বছরে হাতে গোণা দুতিনটে। আর এবার বইমেলা থেকে সংগ্রহ করে উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়েই পড়া শেষ। পাঠকের আগ্রহ জাগানোর মত করেই লিখা বইটা, শুরু করলে পরে কি হবে এই আগ্রহটা পুরো বইএই জারি ছিলো। আর হরর পড়ুয়া হলে বলবো বইটা পড়তে, বাংলা ভাষায় ভালো মৌলিক কসমিক হরর খুব কমই আছে। পাঠক হিসেবে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে হওয়ায় ই বোধহয় দুটা টাইপো নজরে পরে গেছে আশা করছি অনাকাঙ্ক্ষিত এ ভুল পরবর্তী সংস্করণে সংশোধিত হবে। আরেকটা কথা বইয়ের প্রচ্ছদ এতো সুন্দর। এমনকি ভূমিপ্রকাশের স্টলের বেশ কিছু প্রচ্ছদ একদম নজর কাড়া। কয়েকটা অনুবাদের তো ইংরেজী বই সংগ্রহে থাকা সত্ত্বেও মন চাচ্ছিলো আবার কিনে ফেলি (দ্য মিড নাইট লাইব্রেরী আর দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর) । অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে চলে আসছি। লেখকের আগের পলিটিক্যাল থ্রিলার ধ্বংসতত্ত্ব বা ইসরাফিলের শিঙা ও পড়ে ভালো লেগেছিলো।
কসমিক হরর জনরার সঙ্গে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীত পরিচয় এইচ পি লাভক্রাফট ও তার আদলে লেখা দুটো মৌলিক দিয়ে—কথুলুহু ও একজোড়া চোখ খোঁজে আরেকজোড়া চোখকে। লাভক্রাফটের দুনিয়ায় ডুব দিতে ভালো লাগলেও, কেন যেন পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারিনি৷ কারণ সম্ভবত ওই মিথোস সম্পর্কে অজ্ঞতা৷ যে জিনিস পড়ে লাভক্রাফট ভেজে খাওয়া মানুষ লাফিয়ে বসে হাতে কিল মারবে ইস্টার এগ পাওয়ার আনন্দে, আমার কাছে সেটা নিছক কয়েকটা শব্দ বই আর কিছু নয়। শুরুট���ই মন্দ দিক থেকে করতে হচ্ছে বলে দুঃখিত, তবে নাড়ীনক্ষত্রও তেমন একটা অনুভূতি দিয়েছে আমাকে। ওটার কোনো মিথোস নেই (কিংবা থাকলেও আমার জানা নেই)�� তাই পুরোপুরি ডুব দিতে পারিনি গল্পে। আমার কাছে মনে হয়—একেবারে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করলে তাতে আরও ডিটেলিং দিতে হয়৷ লাভক্রাফট নাহয় নেট ঘেঁটে বুঝলাম। নেত্রামা বোঝার সেই সুযোগ আছে কী? মন্দ দিকের পালাই নাহয় আগে শেষ করি—ছোট্ট বই, কিন্তু পরিধি বিশাল। স্বভাবতই, সূত্র জোড়া দিতে গিয়ে একটু তাড়াহুড়ো আছে মনে হয়েছে৷ এন্ডিংটাও ওপেন এন্ডেড, চাইলে সিক্যুয়েল লেখাই যায়। শেষ জায়গা—কিছু ব্যাকরণ ও বানানজনিত সমস্যা আছে বটে৷ কিন্তু খুব বেশি না। এবার ভালো দিক—লেখা খুবই স্মুথ৷ একবসায় পড়ে যাওয়ার মতো। নতুন লেখকদের কিছু সমস্যা থাকে বাক্যগঠনে বা উপস্থাপনে। এখানে তা নেই। গল্পের আবহে গা ছমছমে ভাবটা ছিল বেশ, বর্ণনা উপযোগী এবং সহজে আত্মস্থ করার মতো। চরিত্রায়নের বেশি সুযোগ ছিল না, তবে মূল চরিত্রগুলো অন্তত মিলে-মিশে এক হয়ে যায়নি। কনসেপ্টটা সলিড৷ আমার নজরে কোনো ছিদ্র ধরা পড়েনি। আশা করে নেই কোনো।
মানুষ কি পৃথিবীতে এলিয়েন? এই প্রশ্ন থেকে মজার একটা কসমিক হরর! ছোট্ট, মজার আর ভয়ংকর একটা গল্প। এক বসাতেই পুরোটা পড়ে ফেলছি। শুধু শেষে কিছু প্রশ্ন আর খটকা রয়ে গেছে মাথার ভিতর!
১. পরিণত লেখনী। একটাবারের জন্য লেখক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন, এটা মনে হয় নাই। প্লট নামক পাগলা ঘোড়াকে পোষ মানানো সহজ নয়। কাজটা ইফতি করতে পেরেছেন। লেখনী পরিণত, মসৃণ, প্রাঞ্জল। একটানে পড়ে ফেলার মতো। ২. বইয়ের কনসেপ্টটা আমার খুবই পছন্দের। ইউনিক হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু উপস্থাপনা যুতসই। চমকপ্রদ। ৩. কাহিনি বেশী ছোট হয়ে গেছে মনে হলো। সাসপেন্সেরও কমতি ছিল। এরপর কী হবে বা কী হতে যাচ্ছে, এই উত্তেজনাটা অনুপস্থিত। ৪. ডিটেইলিংয়ে খামতি দেখলাম। আমি আশা করেছিলাম ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং টাইপ কিছু পাবো, মিথোস পাবো। এটা পাইনি।
শেষটুকু দেখে মনে হলো লেখক সিক্যুয়েলের সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন। আশা করি, দ্বিতীয় বইটা দারুণ কিছুই হবে।
লেখকের ছোটগল্প আগেও পড়া হয়েছে। তাই লেখার সাথে পরিচিত। প্লটটা সুন্দর। আরো বড় করা যেত চাইলেই। শেষের দিকে একদম সাদামাটা হয়ে গিয়েছে কিন্তু কসমিক হরর হিসেবে সুন্দর একটা বই বলাই যায়।
বইটি লিখেছেন ফাইয়াজ ইফতি নামে এক তরুন লেখক। বইটির জনরা কসমিক হরর। যারা কসমিক হরর কী তা জানেন না তাদের বলে রাখি আমি নিজেও হররের এই সাব জনরা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখি না। তাই বইটি বিশুদ্ধ কসমিক হরর কি না বলতে পারছি না। যেটুকু জানি তা হলো কসমিক হররে থাকে অজানা কোনো কিছুর প্রতি একটা ছমছমে ভয় যা আমি এতে পাইনি। এমনকি হরর এলিমেন্টও কম।যদিও মোটামুটি রোমাঞ্চকর ছিল।
বইটির নামকরন ভালো লেগেছে। "নাড়িনক্ষত্র" নক্ষত্রের সাথে নাড়ির যোগসূত্র। দারুন।
৯৬ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটা বই। এক বসায় পড়ে ফেলেছি। লেখা খুবই ঝরঝরে এবং প্রাঞ্জল ছিল। কিছু কিছু লেখক থাকেন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন না। অযথাই কাহিনী প্যাঁচাতে থাকেন। কিন্তু ইফতি ভাই তা করেননি। একদম ক্লিয়ার কাট যতটা প্রয়োজন ততটা বলেছেন।
সহজ সরল প্লট। তবে তেমন চমকপ্রদ নয়, কিছুটা পরিচিত। প্রতিটা চরিত্রের বিকাশ আর বিস্তৃতি অনেক ভালো। লেখক চরিত্র নির্মাণে দক্ষ।
কিন্তু কাহিনীর শেষাংশ একটু খাপছাড়া মনে হলো। আরো ঘটনাবহুল আশা করেছিলাম।
মাস্ট রিড হিসেবে রেকমেন্ড করার মতো না হলেও অজানা নানা বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ জাগাতে পারে বইটি।
সুন্দর ছিমছাম একটা বই। প্রথম ভালো লাগা বইয়ের গ্রামীণ প্রেক্ষাপট। থ্রিলার-হরর জনরায় গ্রামীণ পরিবেশ আর গ্রামীণ চরিত্র দুর্লভ জিনিস৷ আর দুর্লভ জিনিস কার না ভালো লাগে..
লিখনশৈলী বেশ ভালো লেগেছে। বাক্যগঠন আর শব্দচয়নে দক্ষতার ছাপ স্পষ্ট। চরিত্রায়ন নভেলা হিসেবে চলনসই৷ ডিটেইলিং পর্যাপ্ত পরিমাণের।
বিজ্ঞানের কয়েকটা থিওরির উপর ভিত্তি করে বইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দাঁড় করানো হয়েছে। যেইটা আমার মতে সঠিক ছিল না৷ ব্রেইনের কতোটুকু ইউজ করতে পারি আমরা কিংবা সব প্রাণি প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিলেও আমরা কেন পারি না...আফ্রিকার সিংহ কখনোই মেরু অঞ্চলের নিম্ন তাপমাত্রায় টেকার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু মানুষ প্রায় সব পরিবেশেই মোটামুটি পর্যায়ে হলেও মানিয়ে নিতে পারে। তাছাড়া ২০ শতাংশ ব্রেইন ইউজের ধারণাটাও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বইয়ের ভিত্তি তৈরিতে এ দুটো পয়েন্টের বেশ ভালো রকমের গুরুত্ব ছিল। বিষয়টাকে প্লট তৈরির খাতিরে না হয় মেনে নিলাম।
কসমিক হরর জনরায় মানবমনের অসহায়ত্ব, ভয়-ভীতি ফুটিয়ে তোলা অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ। বইয়ের ৫ ভাগের ৪ ভাগে সে বিষয়ে খুব কম বর্ণনাই এসেছে। লেখক হয়তো গল্পের আবহ তৈরি করছিলেন। এদিক থেকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি।
বইয়ের এন্ডিংটা অসাধারণ লেগেছে৷ একেবারে গায়ে কাঁটা দেওয়া এন্ডিং। এন্ডিংটা কেমন হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। কসমিক হররে পার্ফেক্ট এন্ডিং দেওয়াটা কঠিন কাজই বটে। লেখক সেটা ভালোভাবেই করেছেন।
রেটিংঃ ★★★★(৩.৭৫/৫)
প্রচ্ছদ অসাধারণ ছিল। প্রোডাকশন ভালোই। হ্যাপি রিডিং।
সখীপুরের জিন্দারকের চর। সখীপুরের মানুষের মতে এ এমন জায়গা যেখানে নিজের জীবনের প্রতি মায়া আছে সে কখনও পা দিতে যাবে না এই রহস্যময় ভৌতিক জিন্দারকরে চরে। এমনি এক জায়গায় হুট করে আশ্রয় নিলো এক অগোছালো পাগলাটে আগন্তুক। যে আসার পরপরই সখীপুরে শুরু হলো একের পর এক ভূমিকম্প, সখীপুরের মানুষ দেখতে শুরু করলো অদ্ভুত এক স্বপ্ন। তাকে খুঁজতে সখীপুরে পা দিলো এক সাংবাদিক যুবক, একটাই উদ্দেশ্য তার বাঁধা দিতে হবে তাকে, না হলে পৃথিবীর অস্তিত্ব পড়বে সংকটে।
অধ্যাপক সুব্রামানিয়াম আন্দামান দ্বীপে গবেষণার কাজে গিয়েই আবিষ্কার করলেন অদ্ভুত এক নাস্তিক নৃগোষ্ঠী। অথচ ফিরে এসেই করলেন আত্মহত্যা, এদিকে বিখ্যাত আরেক গবেষক ডা. সিলভার হন্য হয়ে উঠেছে তারই শেষ গবেষণাপত্রের জন্য, যা তিনি লিখেছেন আন্দামান থেকে ফিরে এসেই । যেখানে এমন কিছু আছে যা বদলে দিতে পারে পৃথিবীর মানবজাতির সূচনালগ্নের ইতিহাস। ডেকে আনতে পারে ধ্বংস, এবং কি কেড়ে নিতে পারে জীবনও।
বইটা যখন পড়ছিলাম তখন বইয়ের গল্পটা কসমিক হরর জনরার হলেও গল্পের কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে সায়েন্স ফিকশনের উপদানের স্বাদ পাচ্ছি। এছাড়াও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখকের গল্প বর্ণনাটা ছিলো খুবই পরিপক্ব। অল্প চরিত্রে লেখক চমৎকার একটা গল্প তুলে এনেছেন। যেখানে দোহা, শমীক দাশগুপ্ত, মোস্তফা চাচা এসব চরি���্রগুলো নিয়ে লেখক যেভাবে অল্প চরিত্রে অল্প পৃষ্ঠাতে এতো পরিপূর্ণ গল্পকে তুলেছেন যে, পড়ে খুব ভালো লেগেছে। তবে শেষের দিকে এসে মনে হয়েছে কিছু বিষয় নিয়ে আরো ব্যাকস্টোরি থাকলে ভালো হতো। এই যেমন জিন্দারকের চর, এবং শেষটাতে আরো কিছু বর্ণনা থাকলে বিষয়টা আরো উপভোগ্য হতো৷ তাছাড়া দোহা চরিত্রটাকে প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে শেষটাতে এসে চরিত্রটা ম্লান হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে।
সম্পূর্ণ গল্পটা দারুণ। বইটা যখন নিয়েছিলাম এতোটা পরিপক্ব লেখা পাবো আশা করিনি। লেখকের বাক্যগঠন, লেখনশৈলী মুগ্ধ করার মতো। লেখাও এগিয়েছে একদম সাবলীল ভাবে, বর্ণনা মেদহীন। তাছাড়া বইটার প্রচ্ছদটাও একেবারে প্রাসঙ্গিক, যেখানে গল্পের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা মুহূর্তকে দৃশ্যমান করা হয়েছে। এবং তাতে প্রচ্ছদকারক সফল বলতে হয়। আশাকরি বইটা যারা পড়বেন, তাদের ভালো লাগবে।
বই : নাড়িনক্ষত্র লেখক : ফাইয়াজ ইফতি প্রকাশক : ভূমিপ্রকাশ বইমেলা স্টল নং : ৩৭১
ঘটনার শুরু সখীপুর নামের ছোট্ট একটা গ্রামে দোহা নামের একজন সাংবাদিকের আগমনকে কেন্দ্র করে। সে এসেছে শমীক দাশগুপ্ত বলে একজনের খোঁজে। যে মানুষটা জিন্দারকের চরে বসে মানুষের অস্তিত্বের শুরু কোথায়, এই প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। অথচ গ্রামের কেউ সেই চরের পথ মারানোর কথা চিন্তাও করতে পারেন না। কি আছে সেই চরে? শমীক দাশগুপ্তকেই বা খুঁজছে কেন দোহা? কিভাবে শমীকের সাথে দোহার পরিচয়? শমীক দাশগুপ্তেরই বা আসল উদ্দেশ্য কি? সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেতে আপনাকে পড়তে হবে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। একটা সাধারণ গ্রামের মানুষজনের চিন্তাধারা, তাদের ভয় এবং বিশ্বাসের সুন্দর বর্ণনা আছে বইটিতে। বইয়ের মাঝামাঝি লেখক এলিয়েন সম্পর্কিত একটা তত্ত্ব উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। সেটা পড়লে অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে।পৃথিবীর সকল প্রাণীদের সাথে মানুষের এতো বৈসাদৃশ্য! তাহলে কি দাবি করা যায় যে মানুষই এই পৃথিবীতে এলিয়েন!?
কসমিক হরর জনরার কনসেপ্ট বাংলাদেশে এখনো নতুন। নাড়িনক্ষত্র বইটা লেখকের দ্বিতীয় বই। কিন্তু পড়ার সময় আপনি সেটা বুঝতেই পারবেন না। পুরো বই পরিপক্ব হাতে লেখা হয়েছে, যত্ন করে বাক্য গুলো সাজানো হয়েছে। প্রথম বইয়ে (ধ্বংসতত্ত্ব) সংলাপ গঠনের কিছুটা দুর্বলতা চোখে পড়েছিল। এই বইয়ে তেমন কিছু চোখে পড়েনি। হরর বই লেখার সময় প্রচুর কল্পনাশক্তির প্রয়োজন হয়। কথাগুলো এমনভাবে সাজাতে হয় যাতে পাঠকরাও লেখকের কল্পনার জগতে ঢুকে পড়তে পারেন। নাড়িনক্ষত্র এক্ষেত্রে সফল একটা বই। আমার অনুরোধ, গভীর রাতে অল্প আলোয় কল্পনা করে করে বইটা পড়বেন, তাহলে অবশ্যই ভালো লাগবে। আমি আশা করেছিলাম বইটা দেড়শ পৃষ্ঠার মতো হবে। শেফালী চরিত্রকে আরো কিছুক্ষণ গল্পে দেখলে মনে হয় আরো বেশি সুন্দর হতো।
আমাদের নাঁড়ি কোথায়? যেই এলিয়েনদের খোঁজে আমরা, সেই এলিয়েন কী পৃথিবীতেই আছে এখন? সেই সম্ভাবনা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না, তাই না? সর্ষের মধ্যে ভূত হাহ্? তাওহীদ দোহার সাথে গিয়ে সখীপুরের জিন্দারকের চরে থাকা পাগলা লোকটাকে খুঁজে আনা প্রয়োজন। এতো জায়গা থাকতে ভয়ঙ্কর জিন্দারকেই কেনো আসন গেঁড়ে বসলো? সব প্রশ্নের উত্তর পেতে, নাঁড়ির খোঁজ পেতে, সহস্র বছরপূর্বে মরে যাওয়া নক্ষত্রের আলোর নিচে বসে অদ্ভূত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে পড়তে হবে এই এয়ারপোর্ট নভেলাটি।
মতামত: প্রচ্ছদটা একদম খাপে খাপ। ভৌতিক ঘরানার পড়ুয়া না হওয়ায় হয়তো লাইন ধরে ভালো খারাপ বলতে পারবো না, তবে লেখকের লেখা অত্যন্ত পরিণত হয়েছে আগের বই থেকে। আগের বই "ধ্বংসতত্ত্ব অথবা ইসরাফিলের শিঙা"-তে আমার অপ্রাপ্তি ছিলো লেখকের সংলাপ গঠনে। এই বইয়ে এতো উন্নতি সত্যিই অসাধারণ ছিলো। অস্থির একটা প্লটের সাথে অসাধারণ বর্ণনা নভেলা হিসেবে আঁটসাঁট লেখায় পুরোটাই উপভোগ্য ছিলো। আগের বইতে যেমন পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিলো কাঁচা হাতের লেখা, এই বইয়ে এটা একদমই পাইনি।
তবে আমি আশা করেছিলাম বইতে যে এলিয়েন তত্ত্ব আনা হইসে সেটার শেষদিকে আরেকটু স্পষ্টভাবে পাবো। এটা ছাড়া বইটা আমার মনে হয় আসলেই চিন্তা জাগায় এই তত্ত্বটার ওপর।
নাড়িনক্ষত্র বইটি লভক্রাপটিয়ান হরর থ্রিলার জনরার বই। এই জনরার আমার পড়া প্রথম বই নাড়িনক্ষত্র। এই জনরার বই আগে যেহেতু পড়িনি, এক্সপেকটেশন খুব একটা বেশি ছিলো না। আমি ধরেই নিয়েছি বইটা খুব একটা ভালো হবে না যেহেতু এই জনরায় লেখকের এইটাই প্রথম বই। এর আগেও লেখক আরেকটা থ্রিলার বই লিখেছেন ❝ধ্বংসতত্ত্ব অথবা ঈসরাফিলের শিঙা❞ নাড়িনক্ষত্র বইটা আমি যতটুকু আশা নিয়ে পড়েছিলাম তারচেয়ে বেশিই পেয়েছি। দোহা আর শমীক স্যারের সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই বইয়ের সকল রহস্য।
বেশ সুন্দর একটা কসমিক হরর। বড়গল্প বা উপন্যাসিকা বলা যায়। লেখকের হাত বেশ পাকা। কাহিনি বলে যাওয়ার বেশ দক্ষতা আছে। কসমিক হররের মূল জায়গা আবহ তৈরি করতে পারায়। বেশ ভালোভাবেই সেটা তুলে ধরা হয়েছে। লাভক্রাফটিয়ানে যেটা দেখা যায় যে কাহিনী আগায় কিন্তু ইলিমেন্ট ইন্ট্রোডিউস করতে করতে গোজামিল লেগে যায়। ফলে শেষে কাহিনি মেলাতে পারেন না লেখক। এক্ষেত্রে এটা হয়নি। গল্পটা কনক্লুসিভ।
এই বইটা কিনে যে কি ধরা খাইসি।অবশ্য এই বইটা পড়ার পর বুঝেছি যে কসমিক হরর জনরা পড়ার সাধ্য আমার নাই।লাস্টের এন্ডিং টা পুরাই মাথার উপর দিয়ে গেসে আমার।প্রথমে একটু ভালো লাগলেও শেষ টা পুরাই ঘোলায় জগাখিচুড়ি হয়ে গেসে🙃