চন্দ্রলেখা সেন হারিয়ে গিয়েছে হঠাৎ করেই! যার কয়েকমাস পরেই বিয়ে সে হঠাৎ গেল কোথায়? দল ছেড়ে দেওয়ার জন্যেই কি পুরনো সহযোগী মাওবাদীরাই তাকে সরিয়ে দিল? নাকি সম্পত্তির লোভে সৎমাই সরিয়ে দিলেন? তদন্তে নেমে বেসরকারি গোয়েন্দা জানতে পারল হারানোর আগেও একবার নয় দু বার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কোনরকমে নিষ্কৃতি পেয়েছিল চন্দ্রলেখা! পুরনো কলকাতা, বনেদি কলকাতা, পুরুলিয়া, ইছামতী নদী পেরিয়ে যে সত্যে উপনীত হলেন বেসরকারি গোয়েন্দা তা যেন তার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য!
সুন্দরী ও বিদুষী চন্দ্রলেখা সীমান্তবর্তী গ্রামের স্কুলে পড়াতে গেছিল আদর্শের তাগিদে। সেখান থেকে সে হারিয়ে গেল। কী হয়েছে তার? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তার একদা-প্রবাসী প্রেমিক নিয়োগ করল আদিত্য মজুমদারকে। তারপর কী হল? সলিড গল্প। অনেকটা বোঝা যায় আগে থেকেই। কিন্তু ওয়ার্ল্ড-বিল্ডিং আর চরিত্রদের মোহে শেষ করে তবেই ছাড়তে হয়। বেশ ভালো লাগল।
এই বইটা মোটামুটি ভাল। আদিত্য মজুমদারের একজন সহপাঠিনী, অতীতে নকশাল করতো, সে হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এটা নিয়ে আদিত্য সিরিজের পাঁচটা গল্প পড়লাম, এটা হলো চতুর্থ বই যেখানে অপরাধীরা অপারেট করছে বাংলাদেশ বর্ডার পেরিয়ে। বিজেপিপন্থী লোকজন এমন একটা ন্যারেটিভ অনেকদিন ধরেই খাওয়ানোর চেষ্টা করছে যে, ইন্ডিয়ার সকল অপরাধই ঘটে বাংলাদেশ সীমান্তে। সম্ভবত পাকিস্তান ন্যারেটিভ লোকজন আর খাচ্ছে না বলেই (সে ব্যাটাদের নিজেদেরই হাঁড়ির হাল, বোধহয় সেজন্যই) এখন বাংলাদেশকে টার্গেট করা। এখানেও শেষমেশ তা-ই হলো। এলেবেলে লেখক হলে ভাড়াটে দালাল বলে দুইটা গালি দিতাম, কিন্তু লেখার হাত ভাল এবং বিদ্বান লোকজন যখন দুর্জন হয়, তখন দুঃখ পাওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। কাহিনীর জন্য ৩ দিতাম, কিন্তু এমন প্রেজুডিসড লোককে মাইনাস ৩ দিলেও বেশি হয়ে যায়। এই বাটপারের বই পড়ার এখানেই সমাপ্তি।
অনেককিছু বলার আছে । এতটা বাংলা কিবোর্ড এ টাইপ করতে পারব কিনা জানি না তাও যতটা পারি ...
প্রথমত, ৩.৫ স্টার আমার রেটিং ।
একমাত্র কারণ গল্প তৈরি করার স্টাইল টা খুব সুন্দর। গল্প বানানো এবং গল্পটা যাতে ঘুম পাড়িয়ে না দেই সেই দিকটা খুবই ভালো ভাবে লক্ষ্য করা হয়েছে। তাই বইটা ইজিলি ৩ স্টার এর বেশি স্কোর করে ফেলে।
এরপর আসি, গল্পের টোটাল রিভিউ তে । এটা এই সিরিজের 2nd বই। এই নিয়ে তিনটে গল্প পড়লাম । তিনটে গল্পই রীতিমতো গোয়েন্দা কে ক্রিমিনালরা ইউজ করেছে । একটা গল্প মানা যায় , দুটো ? ঠিক আছে , হতেই পারে। পর পর তিনটে ? বই এর শুরুতেই আমি মজা করেছিলাম যে এরম যেন না হয় । ঠিক তাই হলো। পরের গল্প গুলোতেও যদি তাই হয় তাহলে পড়ার কোনো মানে থাকে না ।
তারপর আসি গোয়েন্দা আদিত্য সরকার এর চরিত্র তে। বা ধরে নি যে চরিত্র টা লেখক এর দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বিশ্লেষণ করে। আদিত্য একজন বেসরকারি গোয়েন্দা কিন্তু সে কাজটাকে খুব নিচু চোখে দেখে । (হয়তো লেখক তাই মনে করেন যে গোয়েন্দা জিনিসটা খুবই বাজে কাজ) । এবার সবাই বলতেই পারে এটা তার ইন্সিকিউরি কিন্তু সেটা বার বার glorify করা হয় তাহলে জিনিসটা ইন্সিকিউরিটি থেকে পয়েন্ট অফ ভিউ তে পরিণত হয়। কিছু লাইন "জিন এন্ড টনিক" "খুব ব্রিটিশ চয়েস" "তোর ক্লাস আছে" এই কথাগুলো এমন একটা পয়েন্ট অফ ভিউ থেকেই আসে যে যা কিছু ব্রিটিশ তাই একটা উচ্চমান ক্লাস ।
ঠিক যেরকম immature teenager ভাবে স্ল্যাং ইউজ করাটা কুল , সেইরকম লেখক ভাবেন অন্ধের মত ব্রিটিশ কালচার ফলো করাটা কুল । Like if you order watermelon martini , you don't have class. এটা একটা উদাহরণ দিলাম। বই এর পাতায় পাতায় একটা অহেতুক দম্ভের ছাপ আরো আছে । প্রেসিডেন্সি কলেজের অতিরিক্ত ব্যবহার, মফঃস্বল মানুষদের একটা নির্দিষ্ট ছাঁচ লেখনীতে রকাশ পায়। যেটা আদিত্য মজুমদার এর কন্ঠে ফেলা হলেও , লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি কেই ব্যাখ্যা করে।
আর কানেকশন এর কথা তো ছেড়েই দিলাম। দুনিয়া শুদ্ধু সবাই একই কলেজে পড়েছে আর সবাই আদিত্য নইলে ওর বাবাকে চেনে। যা খুশি ।
যাই হোক , এই এত কিছু বাদ দিয়েই গল্প তৈরি করার স্টাইল টা পছন্দ হয়েছে বলেই আরও একটা বই পড়ব। আশাকরি একটু বেটার কিছু দেখব । শেষে, কেয়া বাগচী কে ভালই লেগেছিল আমার কল্পনায়, মন্দ হত না একটু এগোলে, আমার মতে দেরি হয়ে গেছে বলে কিছু হয় না , বেঁচে যখন আছেন চেষ্টা করতে ক্ষতি কি ।
সব কিছু অটোমেটিক হয়ে গেলে গোয়েন্দার আর কি দরকার। সব ঘটনাই ছকে ফেলা আছে শুধুমাত্র নামসাক্ষী গোয়েন্দা একজন আছেন যার দৌড় লালবাজার থেকে বাংলাদেশ বর্ডার পর্যন্ত। কেউ না কেউ তার পরিচিত এবং তারা হেল্প করার জন্য বসে আছেন।