মানুষ কি নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ? নাকি অন্য মানুষের স্পর্শে সে পূর্ণ হয়ে ওঠে? কার জন্য অপেক্ষা করে সে? আর কে সরে গেলে তার মনে হয় এই বেঁচে থাকা অনর্থক। প্রেম, সেকি মানুষের শুশ্রূষা? নাকি সকল যন্ত্রণার কারণ?
‘চুয়ান্ন' উপন্যাসে পুঁটি ও সাবুর জীবনের চুয়ান্ন দিনের গল্প বলা হয়েছে। এনা ছেড়ে চলে গিয়েছে পুঁটিকে। এনাকে ছাড়া বেঁচে থাকার প্রতিটা দিনের হিসেব রাখে পুঁটি। মনখারাপের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে কোনওরকমে টিকে থাকে ও। নিজেদের ব্যাবসার কাজে ডুবে থাকতে চায়। কিন্তু সেটাও ভাল করে পারে না। ক্রমে ওর মনে হয় এ জীবন অনর্থক এক যাপন মাত্র! অন্যদিকে সাবুর পছন্দ পুঁটিকে। কিন্তু সে কথা ও জানাতে পারে না। নিজের এন.জি.ও.-র কাজ, বাড়িতে মা, দিদি, দিদির হবু স্বামী সবাই কোনও না কোনওভাবে বিব্রত করে ওকে। শুধু মনের অবলম্বন বলতে ওর বাবা আর লামাদাদু! দিন কাটতে থাকে আর তার সঙ্গে পুঁটির জীবনও ক্রমশ জটিল হতে থাকে। ক্রমশ প্রেম আর প্রেমের বাইরের বৃহত্তর এক পৃথিবী যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে ওর কাছে। ভালবাসার মানুষকে ছাড়া এই বেঁচে থাকা যেন এক নতুন শিক্ষা হয়ে নেমে আসে ওর জীবনে। সাবুও নিজের মতো করে খুঁজতে থাকে স্বস্তি, ভালবাসা। আর পুঁটির পাশে থেকে যেতে চায় সেই অব্যক্ত ভালবাসা নিয়েই। আর তারপর ঠিক চুয়ান্ন দিনের মাথায় পুঁটি ফোন পায় একটা। কে করেছে সেই ফোন? কী চায় সে? পুঁটিই বা কী করবে? আর সাবু? সাবুরই বা কী হবে এবার?
‘চুয়ান্ন' আসলে মানুষের চিরকালীন এক ভালবাসার গল্প। জীবনের কাছে তার ফিরে আসার গল্প।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
কিছু বই হয় ডকুমেন্টারি সিনেমা আর কিছু কিছু বই হয় কমার্শিয়াল সিনেমা। এনার লেখা দ্বিতীয় ভাগেই পড়ে। গল্প যদি আপনি বিরাট দর্শন বা জ্ঞানের জন্য পড়েন, তাহলে এ উপন্যাস আপনার জন্য নয়। এমনকি আপনি যদি মানসিকভাবে বয়স্ক হয়ে যান, তাহলেও এই বই আপনার জন্য না। এটা আসলে একটা Young-Adult genre র বই। স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখার মধ্যে কিছু কমন জিনিস থাকে- ভাসা ভাসা কথা, প্রেম সম্বন্ধে জ্ঞান একটা পাখি, অনেক চরিত্র আর তাদের মধ্যে connection, শেষে *** বাদে সব কিছু কাল্পনিক আর চরিত্রগুলোর মধ্যে মিল। নাহ,আরেকটা ব্যাপার থাকে সেটা হল, সুন্দর সুন্দর আর uncommon সব নাম। গল্পের নায়ক বা নায়িকা দূরে যেতে যেতেও শেষ পর্যন্ত যায় না। তবুও এত একঘেয়ে প্লট থাকা সত্ত্বেও ওনার সব লেখা পড়ি, মিলও পাই। এজন্যই লেখকের সাধুবাদ প্রাপ্য।কয়েকদিন আগেই শেষ হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা এই ধারাবাহিক উপন্যাস, তাই মনে বেশী ভালোবাসা জাগলে বইটা পড়াই যায়...🌜 রেটিং- 🌚🌚(3/5)
চুয়ান্ন হল জেননের অ্যাটমিক নাম্বার। চুয়ান্ন ডিগ্রির ‘সাইন’-এর মান হল গোল্ডেন রেশিয়োর অর্ধেক। গলফে সাধারণ ভাবে বলা হয় যে, চুয়ান্ন হল পারফেক্ট রাউন্ড। রুবিক্স কিউবে চুয়ান্নটা ছোট ছোট চতুষ্কোণ থাকে। ‘প্লাস চুয়ান্ন’ হল লিয়োনেল মেসির দেশের ইন্টারন্যাশনাল টেলিফোন কোড। চুয়ান্ন নামে একটা ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন সালমা হায়েক। তাসের প্যাকে দুটো জোকার নিয়ে চুয়ান্নটা কার্ড থাকে। আফ্রিকা মহাদেশে মোট দেশের সংখ্যা চুয়ান্ন। ‘এ’ কে এক, ‘বি’ কে দুই ধরে, যদি কেউ ইংরেজি LOVE শব্দটির প্রতিটি অক্ষরকে যোগ করে, তা হলে দেখা যাবে তাদের যোগফল হল চুয়ান্ন! চুয়ান্ন উপন্যাসটি মূলত লোহিতাশ্ব মুখোপাধ্যায় (পুঁটি) আর সর্বোত্তমা মিত্র (সাবু) এই দুটি ছেলে মেয়ের জীবনের চুয়ান্ন দিনের গল্প। পুঁটি বর্তমান সময়ে ও জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকে , লেকপ্লেসে তাদের চারতলা বাড়ি। জেঠু , বাবা, কাকাদের তৈরী বিজনেসে সে সদ্য জয়েন করেছে। কিন্তু বর্তমানে পুঁটির কলেজ জীবনের প্রেমিকা এনা হটাৎই তাদের সম্পর্ক অজানা কারনে ব্রেক আপ করায় পুঁটি মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করছে। প্রেম হারানো পুঁটির জীবনযাপনে ও মানসিক হতাশার প্রভাব দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে পুঁটির স্কুল জীবনের বন্ধু সাবু ফিজিক্সে মাস্টার্স করার পর বর্তমানে ফুড ব্যান্ডিট নামের একটি এন.জি.ও তে কাজ করছে। এন.জি.ও টির প্রধান কাজ হলো কলকাতা শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত খাবার সংগ্রহ করে কলকাতার রাস্তায় জীবন কাটানো মানুষদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া। সাবু এই ধরনের সমাজ কল্যাণকর কাজ করা নিয়ে সাবুর পরিবারে মা ও দিদি সাবুর উপর বিরক্ত , এই নিয়ে প্রতিদিন তারা সাবু কে কথা শোনায়। এক মাত্র বাবার সাপোর্ট সে পায়।
পুঁটির জীবনে এনার প্রবেশের বহু পূর্বে স্কুল জীবনে পুঁটি সাবু কে প্রেমের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু সাবু তার বান্ধবী দের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেকে "Cool" প্রমাণ করতে গিয়ে সেই প্রস্তাব অস্বীকার করে। কিন্তু ঘটনাচক্রে সে পরবর্তী তে পুঁটির প্রতি আকৃষ্ট হয় ও তাকে ফিরে পেতে চায়, ততদিনে পুঁটির জীবনে এনার প্রবেশ ঘটেছে। শেষ অব্দি সাবু কি ফিরে পাবে পুঁটিকে? পুঁটি কি পারবে এনার দেওয়া দুঃখ ভুলে গিয়ে পুনরায় সাবুর কাছে ফিরে আসতে? এই দুটি মানুষের জীবনে কাটানো ৫৪ দিনের মানসিক উপলব্ধির গল্প উঠে এসেছে উপন্যাসের পাতায়।
অন্য দিকে চুয়ান্ন উপন্যাসটিকে বর্তমান সময়ের বেশ কিছু ভিন্ন চিন্তা ভাবনা করা মানুষের জীবনের কিছু ঘটনার কোলাজ ও বলা যায়। লেখকের বেশী ভাগ উপন্যাসের মতো এখানে ও রিজু আর লেবুদার চরিত্র দুটির মধ্যে দিয়ে কাহিনির বিভিন্ন অংশে পাঠকদের জন্য কিছুটা কমিক অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে।
⭕️ উপন্যাসে আমার পছন্দের উক্তি/কথোপকথন ⤵️
প্রথম প্রথম সব ঠিক থাকে। আর যেই এক জন বেশি ভালবাসতে শুরু করে, অমনি অন্য জন তাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড নিতে থাকে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তো লোভী, হ্যাংলা আর পেছনে পিনিক দেওয়ার লোকেরা আছেই। তারা, তোর পছন্দের মানুষের আপলোড করা ছবি, কবিতা, গানে নানা গ্যাস খাইয়ে কমেন্ট করে, লাইক দিয়ে তার ইগো বাড়িয়ে দেবে। মিথ্যে প্রশংসা করে মাথা ঘেঁটে দেবে! ম্যাক্সিমাম মানুষই ইম্পর্ট্যান্স পেতে এত ভালবাসে যে, কেউ ভাল বললে সেটা সত্যি না মিথ্যে, সেটা যাচাই না করেই গলে জলে হয়ে যায়! হাতের কাছে ট্রুথফুল যে মানুষটা আছে, তাকে লাথি মারে! মানুষ মিথ্যে চাকচিক্যটাই পছন্দ করে।
এনাকে ছাড়া চুয়ান্নতম দিনটিতে পুটির মনে হলো না এবার সে এনাকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। তাই উপন্যাসের নাম চুয়ান্ন। আর পুটি এ গল্পের প্রটাগনিস্ট!
এনার প্রতি যাবতীয় ভালোবাসা, ক্ষোভ কাটিয়ে ওঠার সাথে সাথে পুটি বুঝতে পারে সে সাবুকে অর্থাৎ সর্বোত্তম আ কে ভালোবাসে! সাবু যাকে স্কুলে থাকতে সে চুমু খেয়েছিল, প্রপোজ করেছিল কিন্তু সাবু কুল সাজার জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিল সে প্রস্তাব। সময় গেলে সাধন হয়না । সুতরাং মোক্ষম সময় পার হয়ে যাওয়ার পর সাবু বুঝতে পারে সে পুটিকে ভালোবাসে। কিন্তু ততদিনে পুটি এনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এনা একটা আপস্টার্ট মেয়ে, পুটি কে সে সবসময় ব্যাবহার করে, ইচ্ছে হলেই ছেড়ে দেয়,আবার ফিরে আসে। এবারে সে পুরোপুরি ছেড়ে দেয় রণজিত এর জন্য।
উপন্যাসের ছোট একটা অংশে আছে দীপ্য আর সাবুর দিদি মলি। দীপ্য মলিকে বাদ দিয়ে মলির ই ছোটবোন সাবুর প্রেমে পড়ে যায় কারণ মলি ক্যারিয়ারিস্ট লেখকের মতে স্বার্থপর। মলি অনেক কান্নাকাটি করে ও দীপ্যকে পায়না। সাবু যখন দীপ্যকে রিজেক্ট করে তখনই দীপ্য ফিরে যায় মলির কাছে। দীপ্য স্বার্থপর আর মিথ্যাবাদী এক চরিত্র। কিন্তু সাবুর মত মানবতাবাদী এক চরিত্র ঠিক কি কারণে গল্পের কিছুটা সময় এই দীপ্যকে প্রশ্রয় দেয় তা বোধগম্য নয়।
এবার আসি এনার প্রসঙ্���ে। গল্পে যদি এন্টাগনিস্ট কেউ থাকে তবে সেটা এনাই। অথছ এনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ লেখক দেননি। বরং শেষ মুহুর্তে এনা যখন ফিরতে চায় পুটির কাছে তখন পুটি যায় সাবুর কাছে। আর সাবু যে ক্লাস ইলেভেনের পর থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত নিরবে ভালোবেসে গেল পুটি কে কিন্তু পুটি তার কোন দাম দিলনা, এমনকি রীতিমত দুর্ব্যবহার করলো তার কাছে সমর্পণ করলো। এনাকে ডিচ করে আর সাবুর "অনেক সাধনার পর পেলাম তোমার মন" জাতীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে লেখক তার মেল শভেনিজমকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন বলেই মনে হলো। অথচ একনিষ্ঠ প্রেমিকা মলি ক্যারিয়ারিসট হওয়ায় যেন দীপ্য তার সাথে বিশ্বস্ত থাকতে পারলোনা।
যাই হোক এত এত নেগেটিভ কথার পর ও গল্পটা যেখানে সার্থক সেটা হলো লেখকের আকর্ষণী লেখনী আর আস্তে আস্তে ঘটনার আবরণ উন্মোচন, একটু একটু করে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাওয়া। এক বসায় পড়ে ফেলার মত একটা উপন্যাস। শুধু ভালোবাসা নয়, পেশাদারী ঝুট ঝামেলা, সাবুর "ফুড ব্যান্ডিট" এর মাধ্যমে বেঁচে যাওয়া খাবার ডিস্ট্রিবিউট করে গরীবের কাছে পৌঁছানো, পুটির যৌথ পারিবারিক সৌন্দর্য সবকিছু উপন্যাসটিকে মানবীয় মাধুর্য দিয়েছে। তাছাড়া ক্রিসক্রসের মত নিসন্দেহে এটা একটা সিনেমাটিক প্লট বটে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
💫" ‛চুয়ান্ন’ হল জেননের অ্যাটমিক নাম্বার । ‛চুয়ান্ন’ ডিগ্রির 'সাইন' এর মান হল গোল্ডেন রেশিয়োর অর্ধেক । গলফে সাধারণ ভাবে বলা হয় যে ‛চুয়ান্ন’ হল পারফেক্ট রাউন্ড । রুবিক্স কিউবে ‛চুয়ান্ন’টা ছোট ছোট চতুষ্কোণ থাকে । 'প্লাস চুয়ান্ন’ হল লিওনেল মেসির দেশের ইন্টারন্যাশনাল টেলিফোন কোড । ‛চুয়ান্ন’ নামে একটা ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন সালমা হায়েক । তাসের প্যাকে দুটো জোকার নিয়ে ‛চুয়ান্ন’টা কার্ড থাকে । আফ্রিকা মহাদেশের মোট দেশের সংখ্যা ‛চুয়ান্ন’। ‛A’ কে এক, 'B' কে দুই ধরে, যদি কেউ ইংরেজি ‛LOVE’ শব্দটির প্রতিটি অক্ষরকে যোগ করে... তাহলে দেখা যাবে তাদের যোগফল হবে ‛চুয়ান্ন’।"💫
এই গল্প লোহিতাশ্ব এবং সর্বোত্তমা-র...উহু বড্ড জটিল হয়ে যাচ্ছে তাই না!🤔 আচ্ছা বেশ...এই পুঁটি ( ওরফে লোহিতাশ্ব) ও সাবুর ( ওরফে সর্বোত্তমা)....তাদের জীবনের অতিবাহিত চুয়ান্নটা দিনের গল্প...তাদের জীবনের ওঠা-পড়া,চাওয়া-পাওয়া,ভালোবাসা ও টানাপোড়েনের গল্প 'চুয়ান্ন'।💘
পুঁটি ভালোবাসে এনাকে,কিন্তু এনা পুঁটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছে আর ঠিক এই কারণেই মনে মেঘ জমেছে পুঁটির...সে চাই সব ছেড়ে জীবনের সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে একপ্রকার বিসর্জন দিয়ে সম্পূর্ণ কাজে ডুবে বেঁচে থাকতে...আর অন্যদিকে রয়েছে সাবু ,সে ভালোবাসে পুঁটিকে,কিন্ত কখনো প্রকাশ করতে পারে না এবং একই সাথে তার পরিবারকে ঘিড়ে নানান জটিলতার সৃষ্টি হয় তার জীবনে...আর একটা সময় এইসব সহ্য করতে না পেরে এবং পুঁটিকে তার ভালোবাসার কথা জানাতে না পেরে তার এন.জিও-র কাজ নিয়ে সে দূরে চলে যেতে যায়...সত্যিই কি দূরে চলে গেলে ভালোবাসাকে ভুলে থাকা যায়!?💕🌼
তবে এই গল্প শুধুই পুঁটি বা সাবুর দিনযাপনের ইতিবৃত্ত কিংবা তাদের মনকেমনের গল্প নয়...এই গল্পে আছে রিজু ও ইলোরা,রিজুর মজাদার কথার ঝুড়ি...পুঁটির বাবা, মা,কাকা, জ্যাঠা, বোন তিতি...আর আছে অমিতাভ বচ্চনের ফ্যান লেবুদা...লামাদাদু আর তাঁর ছাদে আসা পাখিদের আনাগোনা...টুলুর মতো মিষ্টি বাচ্ছা যাদের জন্য সাবু খাবার গুছিয়ে নিয়ে আসে...সবকিছুই ভারী সুন্দর, ম্যাজিকের মতো💫💫💫
"আসলে এ জীবন ভালোবাসায়,ভরসায় আর বিশ্বাসে,প্রিয় মানুষের পাশে থেকে, তার সঙ্গে কাটানোর মতো এক উপহার! এ জীবন যুক্তিহীনভাবে অদ্ভুত! রূপকথার মতো অবিশ্বাস্য! এ জীবন টুলুর দেওয়া গুলমোহর আর বকুলফুল!"🌸💫
পরীক্ষা শেষ সাথে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরা ...এই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দিব্যি পড়ে ফেলা যায়...মনকেমন মেশা এক সুন্দর অনুভূতি💫🌸☁️
মাথা ঝনঝন রহস্য খুন সামাজিক ঝঞ্ঝাট ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় পড়ে পড়ে হাপিয়ে উঠলে তখন শুরু করতে হয় এরকম প্রেমের উপন্যাস। আমার বেশ প্রিয় এই লেখক প্রেম কাহিনীগুলোর জন্য। এটা আমার বান্ধবীর রেকমেন্ড করা। বেশ মনটা হাল্কা হয়ে গেলো পড়ে। আবার কিছু জটিল লেখায় এবার মন বসবে।
সাহিত্যপ্রমী, উপন্যাসপ্রেমী মানুষদের জন্য অতুলনীয় একটি বই। পড়ে দেখতে পারেন, খুব ভালো লাগবে অবশ্যই। আধুনিকতা ও আন্তরিকতার এক সংমিশ্রণ হলো এই চুয়ান্ন। One of the best book that I've read.
প্রথমেই বলে রাখি স্মরণজিৎ আমার কাছে নেশা, আর এই নেশা করতেই বার বার ওর বই পড়ি। যারা স্মরণজিৎ এর নেশা করে আমার মতো তারা জানে ওর লেখার ধরণ, তারা জানে একটা উপন্যাস এ মেলা চরিত্রের মেলবন্ধন, তারা জানে রাসবিহারী মোড়ের জ্যাম, গড়িয়াহাট এর ফুটপাথ, সাউথ কলকাতার অলিগলি, ও কিছু সুন্দর চরিত্রের নাম।
যাই হোক এবার পড়লাম ম্যাজিসিয়ান এর আরএকটি উপন্যাস চুয়ান্ন।
চুয়ান্ন আমাদের এক মিষ্টি প্রেমের গল্প বলে, যারা কলেজে পড়ে বা সদ্য কলেজ পাসআউট তাদের তো দারুণ লাগবে। আমার ও বেশ ভালো লেগেছে। এই গল্প শুরু হয় পুঁটি এর ব্রেকআপ এর দিন থেকে। পুঁটি ওরফে লোহিতাশ্ব এর ব্রেকআপ হয়েছে এনা এর সাথে, আর সেই কারণেই কিনা পুঁটি একদম মদ ছাড়া দেবদাস হয়ে গেছে। এনা চলে যাওয়ার পর প্রতিটা দিনের হিসাব রাখে সে। সব মোহ মায়া ত্যাগ করে ফ্যামিলি ব্যবসা তে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফোন, গাড়ি কিছুই সে ব্যবহার করছে না। কেমন যেন জীবনের সব সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে একপ্রকার বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে। তার এই গল্পের অন্যদিকে আছে সাবু, ওরফে সর্বোত্তমা। সে পুঁটির স্কুল জীবনের বন্ধু। সে ভালোবাসে পুঁটিকে,কিন্ত কখনো প্রকাশ করতে পারে না । একটি সমাজসেবী সংস্থায় কাজ করে। সে পুঁটির এই চুয়ান্ন দিনের টানাপোড়েন এ জড়িয়ে পড়ে, নিজের ভালোবাসা প্রকাশ না করতে পেরে পালাতে চায় পুঁটির থেকে। ঠিক চুয়ান্ন দিন পরে কী হয়? কে ফোন করে পুঁটি কে? পুঁটি কী এনা এর কাছে ফিরে যায়? না সাবু তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে? সেসব জানতে হলে পড়তে হবে এই চুয়ান্ন দিনের গল্প।
তবে এই গল্প শুধু পুঁটি বা সাবু এর জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এই গল্পে আছে লামাদাদু, অমিতাভ ফ্যান লেবুদা(আমার দারুণ লেগেছে একে), রিজু, তিতি(পুঁটির বোন হলেও হাবভাব এ দিদি), আছে বিপাশা দি, আছে টুলুর মতো মিষ্টি একটা মেয়ে কিনা বড় হয়ে সাবুর মতো হতে চায়।
স্মরণজিৎ তার সব গল্পে নিজের কিছু কথা বলে যায় অথচ শেষে বলে এটা ওটা ছাড়া বাকি সব কাল্পনিক। এই গল্প ও তার ব্যতিক্রম নয়। স্মরণজিৎ যে শীর্ষেন্দু বাবুর কত বড় ফ্যান তা নিজেই এই উপন্যাস এর একটি অধ্যায় এ ব্যক্ত করেছেন পুঁটি এর মধ্যে দিয়ে। এই সব ছোঁয়া ওনার প্রতিটি লেখাতেই পাই।
মন খারাপ থাকলে চুয়ান্ন পড়ুন মন ভালো হয়ে যাবে। মন খারাপের ওষুধ স্মরণজিৎ। ধন্যবাদ এই ধরেনের লেখা উপহার দেওয়ার জন্য। সবশেষে একটা উক্তি বলব এই উপন্যাস থেকেই - "আসলে এ জীবন ভালোবাসায়, ভরসায় আর বিশ্বাসে, প্রিয় মানুষের পাশে থেকে, তার সঙ্গে কাটানোর মতো এক উপহার! এ জীবন যুক্তিহীনভাবে অদ্ভুত! রূপকথার মতো অবিশ্বাস্য! এ জীবন টুলুর দেওয়া গুলমোহর আর বকুলফুল।