কখনও ভেবে দেখেছেন কি, বইয়ের পাতায় যে গল্পগুলি পড়ে আপনি হো-হো করে হেসে উঠছেন, চুপি চুপি একটু কেঁদে নিচ্ছেন, মাঝে মাঝে একটু-আধটু ভয় পাচ্ছেন কিংবা হুটহাট মন খারাপ করে বসে আছেন; সেই গল্পগুলি কি শুধুই সাদা পাতায় কালো অক্ষরের কিছু লেখা, নাকি তারচেয়েও বেশি কিছু? দুই মলাটের মধ্যে এই যাত্রায় বন্দী হয়েছে মোট তেরোটি গল্প। নিতান্ত কাল্পনিক হলেও, নানা অনুভূতির এই গল্পরা পাঠককে কিছুক্ষণের হলেও ভাবাবে; গল্পগুলি কি জীবন থেকে নেয়া, নাকি জীবনের সমান্তরাল অন্য কোনও জীবনের গল্প। গল্পের এই ভুবনে হারিয়ে পাঠক নিজেই একসময় বলে উঠবেন, "না, এ তো নিছক গল্প নয়!"
আমি তাসনিয়া আহমেদ - পেশায় চিকিৎসক, নেশায় লেখক। এমবিবিএস পাস করেছি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। মেডিকেলে পড়ার সময়ই লেখক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করি ২০১৭ সালের বইমেলায় একটি গল্প সংকলনে গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘বয়স যখন ষোলোই সঠিক’। এরপর একে একে লিখে গেছি আরো বেশ কিছু গল্প আর উপন্যাস। বর্তমানে আমার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা চার এবং উপন্যাস সংখ্যা এক। এক সময় লেখক হবার কথা ভাবতে পারতাম না সত্যি, তবে এখন মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখি, আমার লেখা বইয়ের টাওয়ার আকাশ-সমান উঁচু হোক! আর তাই, চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করাই এখন আমার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়; সেই সাথে লিখে যেতে চাই - ভালোবাসার গল্প, মানুষের গল্প আর বেঁচে থাকার গল্প।
ছোটগল্পের শেষ আসলে শেষ না, কেমন যেন অদ্ভুত এক রেশ রয়ে যায় মনের মধ্যে। কথাটার যথার্থ প্রয়োগ করেছেন তাসনিয়া আহমেদ। ১৩টি ছোটগল্প নিয়ে সাজানো গল্পগ্রন্থ 'নিছক গল্প নয়' আসলেই নিছক এক গল্পগ্রন্থ না, তার চেয়ে বেশি কিছু। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে 'অক্সিজেন', 'আগুনের দিন', 'নিছক গল্প নয়'।
লেখকের বাকি গল্প সংকলন গুলোর মতই এই বইটির প্রতিটি গল্প আলাদা ধাঁচের। সমাজের একেকটা দিক, আবেগের একেকটা ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উঠে এসোছ পুরো বইতে। কয়েকটা গল্প বেশ ভাল লেগেছে।
[স্পয়লার থেকেও নেই। অর্থাৎ রিভিউয়ে সামান্য স্পয়লারের ঘ্রাণ পাওয়া গেলেও বই পড়ার সময় অসুবিধায় পড়তে হবে না, ইনশাআল্লাহ ]
পছন্দ এবং অপছন্দ মানুষের থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেটা হতে পারে একটা বইয়ের ক্ষেত্রেও।কারো কারো পছন্দ সামাজিক জনরা, করো হয়ত রোমান্টিক, হরর,থ্রিলার,সায়েন্স ফিকশন ইত্যাদি -এসব। বইয়ের ক্ষেত্রে জনরা ছাড়াও আরো কিছু পছন্দের বিষয় পাঠকদের থাকতে পারে, যার মধ্যে লক্ষ্যণীয় একটি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস এবং গল্পগ্রন্থ; অনেকের হয়ত পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস ভালো লাগে আবার অনেকর হয়ত গল্পগ্রন্থ। আমার কাছে অবশ্য দুটোই ভালো লাগে। তবে ভালো লাগার মাঝে কমবেশি করলে আমি গল্পগ্রন্থকেই এগিয়ে রাখব। কারণ এখানে বিভিন্ন ধরনের গল্প বিদ্যমান থাকে, প্রতিটি গল্প থেকে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ; বই পড়ার আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়। আজ আমি এমন একটি ভিন্ন স্বাদের গল্পগ্রন্থ নিয়ে কথা বলব, যেখানে রয়েছে প্রেম, সামাজিক কিংবা হরর-থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন এবং একটি রম্য গল্প।
☆ ব্যক কভার থেকেঃ ~~~~~~~~~~~~~~~ কখনও ভেবে দেখেছেন কি, বইয়ের পাতায় যে গল্পগুলি পড়ে আপনি হো-হো করে হেসে উঠেন, চুপি চুপি একটু কেঁদে নিচ্ছেন, মাঝে মাঝে একটু-আধটু ভয় পাচ্ছেন কিংবা হুটহাট মন খারাপ করে বসে আছেন; সেই গল্পগুলি কি শুধুই সাদা পাতায় কালো অক্ষরের কিছু লেখা, নাকি তার চেয়েও বেশী কিছু?
দুই মলাটের মধ্যে এই যাত্রায় বন্দী হয়েছে মোট তেরোটি গল্প। নিতান্ত কাল্পনিক হলেও, নানা অনুভূতির এই গল্পরা পাঠককে কিছুক্ষণ হলেও ভাবাবে ; গল্পগুলি কী জীবন থেকে নেয়া, নাকি জীবনের সমান্তরাল অন্য কোনও জীবনের গল্প।গল্পের এই ভুবনে হারিয়ে পাঠক নিজেই একসময় বলে উঠবেন, ‘না, এ তো নিছক গল্প নয়!’
☆ ব্যক্তিগত অভিব্যক্তিঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~ ‘নিছক গল্প নয়' বইটির নাম যখন প্রথমবার শুনেছিলাম তখন ভেবেছিলাম বইটা মনে হয় একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। এর পর বইয়ের এবং লেখিকার উপর খোজখবর চালিয়ে বেশ ভালো কিছুই জানতে পারলাম। বইটার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছিল যখন জানতে পারলাম বইটা ভিন্ন ধর্মী বা স্বাদের বেশ কয়েকটি গল্পের সমন্বয়ে নির্মিত। যা জানার পর আমি আমাকে আর ধরে রাখতে পারিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই ক্রয় করে ফেলি এই ছোট্ট ক্রাউন সাইজের গল্পগ্রন্থটি। ১৫৬ পৃষ্ঠার এ বইটিতে রয়েছে ১৩ টি ভিন্ন ভিন্ন ঘরনার ছোট আকারের গল্প। ছোট গল্প হওয়ায় পড়ে ফেলা যায় খুব দ্রুতই। দ্রুত পড়ার ফলে মনের ভিতরে অস্থিরতা বা বিরক্তি জিনিসটা আর কাজ করে না। এছাড়াও গল্পগুলো পড়ার সময় আমার মনের মাঝে ঠাই পেয়েছিল ভিন্ন ধরনের কিছু অনুভূতি। কখনো ভয়,কখনো হাসি, মন খারাপ, আবার অনেক সময় চলে গিয়েছিলাম গভীর ভাবনার মাঝে। ◑ এবারে কথা বলব বইয়ের সেই ১৩ টি ভিন্ন ভিন্ন গল্প সম্পর্কে। যদিও প্রতিটা গল্প সম্পর্কে বেশী কিছু লিখব না, কারণ ছোট গল্প - একটু বলতে গেলেই পুরো স্পয়লার সামনে চলে আসবে। তাই আমার সাধ্যে যতটুকু বলা সম্ভব আমি ততটুকুই বলার চেষ্টা করব।
☆ খালাসঃ ~~~~~~~~ বইটির প্রথম গল্পের নাম ‘খালাস' । এখানে লেখিকা একজন ডাক্তারের চরিত্রে ফুটে উঠেছেন।এ গল্পের সারমর্ম হিসেবে এক বাক্যে বলব - ‘ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ তার সবচেয়ে আদরের ধনকেও বিসর্জন দিতে পারে।' সত্যি কথা বলতে গল্পটা পড়ার পর আমার চোখের কোটরে পানি চলে এসেছিল।
☆ ট্রফিঃ ~~~~~~ খালাসের পরবর্তী গল্প ‘ট্রফি'। সম্পূর্ণ বই জুড়ে এই গল্পটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী ভাবীত করেছিল। যা দুই বার পড়ার পর সম্পূর্ণ বিষয়টা ক্লিয়ার হতে পেরেছি। প্রথম থেকেই রোমান্টিক একটা ভাব ছিল গল্পে যা শেষে গিয়ে এমন আকার ধারণ করেছে, তা পড়ে আমি রীতিমতো অবাক বনে যাই। অসাধারণ টুইস্টের মাধ্যমে ইতি ঘটিছে এই গল্পটির।
☆ মোতালেব সাহেবের বাস ভ্রমনঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ এই গল্পের প্লটটা লেখিকা খুব সুন্দর সাজিয়েছেন। গল্পে ফুটে উঠেছে একজন নিকৃষ্ট মানুষের জীবনচরিত। এমন চরিত্রের মানুষ আজও খুজে পাওয়া যায় আমাদের এই সমাজে।এ গল্পের মূলভাব হিসেবে বলতে পারি - ‘নারীর প্রতি আকৃষ্টতা তার রক্তের সম্পর্কের মানুষটিকেও নিস্তার দেয় না।'
☆ আধাঁরলীনাঃ ~~~~~~~~~~~ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক গল্প এটি। সম্পর্কের মাধ্যমে স্বামী অর্জন। এবং কিছুদিন পর সেই স্বামী হারিয়ে দিসে হারা হয়ে শেষ পর্যন্ত করুণ পরিণতির সৃষ্টি হওয়া লেখিকা বেশ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
☆ ত্রিৎক্লাক এবং একটি নীলচে গোলাপঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ এ গল্পের সুন্দর স্টোরিলাইনের জন্য লেখিকাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই । অনেক চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। এখানে ভিন গ্রহের একটি প্রানী অর্থাৎ এলিয়েনের মাঝে পৃথিবী নামক গ্রহের মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের বিষয়টি উঠে এসেছে।
☆ (প্লান) ও (ফেরা) ~~~~~~~~~~~~~ এই দুটি গল্পই প্রায় একই ধাঁচে লেখা৷ তাই আলাদা ভাবে আর কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলাম না। ‘ভ্রম' বিষয়টা মানুষকে খুবই ঘায়েল করে ফেলে। প্লান এবং ফেরা গল্পদুটিতে ভ্রমের ইঙ্গিত পাওয়া যায় খুব সহজেই। এছাড়াও রয়েছে - রোমাঞ্চ, মার্ডার -মিস্ট্রি এবং ভরপুর টুইস্ট।
☆ ইউ ক্যন নট রিপ্লাই টু দিস কনভারসেশনঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ এখানে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজের কিছু তরুনের কথা যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে নিজের ফায়দা লুটে নেয় নিদারুণ কিছু পন্থায়। লেখিকা নিজে একজন নারী হয়ে পুরুষের মনের ভিতরের আকুতি মিনতি যেভাবে তুলে ধরেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।
☆ অক্সিজেনঃ ~~~~~~~~~~ প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেনের গুরুত্ব অপরিসীম। সামান্য অক্সিজেনের অভাবে মানুষের যে করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তা গল্পের মাধ্যমে উঠে এসেছে। এ গল্পটি প্যন্ডামিক টাইমে লেখা তা গল্পটি পড়লেই বুঝা যায়। প্যন্ডামিকে মানুষের সামান্য অক্সিজেনের জন্য যে লড়াই করতে হয়েছিল তা লেখিকা তার এই গল্পের মাধ্যমে সাজিয়েছেন খুব সুন্দর ভাবে ।
☆ অনুঃ ~~~~~~ লেখিকের রুমমেট এবং ক্লাসফ্রেন্ড অনুর নামে গল্পের নাম অনু রাখা হয়। গল্পে অনুর আজব সব কান্ড কারখানা আবাক করে দিয়েছিল আমাকে৷ সামান্য হররের মিশেলে খুব সুন্দর কিছু থ্রিল রেখেছেন এই গল্পটিতে। যা হয়ত গল্পটি পড়লেই দারুণ উপভোগ্য হবে।
☆ অজ্ঞাতসারেঃ ~~~~~~~~~~~~ একটা সময় কিছু না পাওয়ার ঘটনাই শেষ পর্যন্ত এনে দিতে ���ারে বিশাল কোনো প্রাপ্তি। গল্পটা ঠিক এ ধরনের। পাওয়া না-পাওয়ার এই ছোট্ট গল্পটি কেড়ে নিতে পেড়েছে আমার মনকে।
☆ আগুনের দিনেঃ ~~~~~~~~~~~~~ এই বইয়ের ১৩ টি গল্পের মধ্যে যে গল্পটা পড়ে আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগা কাজ করেছিল, সেটাই এই ‘আগুনের দিনে'। এ গল্প শেষ করার পর আমার ঘৃণা চলে আসে সমাজের কিছু মানুষের প্রতি। আজকাল সমাজের মানুষ শুধু নিজের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখে। পরের স্বার্থে তারা সামান্য টুকুও অগ্রসর হয় না। আজ শুধু পরিবারের লোক ছাড়া কোনো বিপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না। তারাই সবচেয়ে আপনজন। যে কোনো বিপদীয় পরিস্থিতিতে সমাজ এবং পরিবারের অবদান নিয়ে অসাধারণ একটি গল্পের মাধ্যমে খুবই দক্ষতার সহিত ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।
☆ নিছক গল্প নয়ঃ ~~~~~~~~~~~~~ বইয়ের শেষ গল্প এটি । এই গল্পের নামের সাথে বইয়ের নামলিপির পুরোপুরি মিল লক্ষ্যণীয়। গল্পটির মূলভাব হিসেবে বলব - ‘কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা শেষ করে ফেলতে পারে একটা তরতাজা জীবন।' গল্পটা লেখনী এবং গল্পের দিক দিয়ে আমার যেমন ভালো লেগেছে, অন্যদিকে কিছু নির্দয় প্রজাতের মানুষের করুন আচরণ আমার মন নিমিষেই খারাপ করে দিয়েছিল।
অনেকেই বলে থাকেন যে, গল্প গ্রন্থ মানেই কিছু গল্প খারাপ থাকবে আবার কিছু ভালো। হ্যা,আমি এই কথার সাথে একমত। তবে এটা সব বইয়ের ক্ষেত্রে নয়। যেমন এই বইটির কথাই যদি আমি বলি, ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কাছে সব গল্পই ভালো লেগেছে। শুধু একটু কম আর বেশী।
☆ নেগেটিভ দিকঃ ~~~~~~~~~~~~~ বইয়ের ক্ষেত্রে এমন একটা পরিস্থিতি দাড়িয়েছে যে, ভালো - খারাপ ছাড়া বই-ই পরিপূর্ণতা পায় না। এই বইয়েও কিছু নেগেটিভ অংশ লক্ষ্যণীয়। গল্প ভিন্ন হওয়ায় একেক গল্প একেক ভাবে উঠে এসেছে। এর কোনোটায় একটু বর্ণনার অভাব বোধ হয়েছে আবার দু-এক জায়গায় অতিরিক্ত বর্ণনার অভাস পাওয়া যায়। ‘ইউ ক্যান নট রিপ্লাই টু দিস কনভারসেশন' নামক গল্পটার কথা যদি বলি; এখানে ফেসবুক প্রোফাইল চেঞ্জ করার বিষয়টায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলোচনা করা হয়েছে। কখন কোন প্রোফাইল দিল, কেন দিল, কোন ক্যমেরা দিয়ে ছবি তুলেছিল, কোন কোন পজিশনে, কীভাবে, কেন ছবি তুলেছিল - এ অংশটা আমাকে বোর করে তোলার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে । এছাড়া ‘ট্রফি', ‘প্লান' এবং ‘অনু' এই গল্পগুলো প্রথম থেকে যেমনটা এগুচ্ছিল, শেষে গিয়ে তা মন মতো মিলেনি,একটু তাড়াহুড়োর ছাপ লক্ষ করা গেছে। আশা করি পরবর্তী মুদ্রনে লেখিকা এই বিষগুলোতে নজর রাখবেন। এছাড়া অভার অল আমার কাছে ভালোই লেগেছে।
☆ লেখন-শৈলী > বর্ণনাভঙ্গিঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ একটা বইয়ের যে অংশটাকে আমি সবচেয়ে বেশি নজর দেই সেটা হচ্ছে লেখন-শৈলী। আমার প্রিয় একজন লেখক হুমায়ুন আহমেদ স্যার- তার বইয়ের প্লট নয় বরং লেখন-শৈলী আমাকে তার বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। তার অনেক বইয়ের স্টোরি আমার কাছে ভালো না লাগলেও তার লেখনীর মাঝে হারিয়ে গিয়ে সেই লেখাটাও গো গ্রাসে গিলে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। যা হোক অন্য দিকে কিছু কথা বলার জন্য দুঃখীত। এখন আসি এই বইয়ের লেখন-শৈলীর কথায়। বইয়ের গল্পগুলো পড়েই বুঝা যায় লেখিকার লেখার ধরন বা মান সম্পর্কে - সুনিপুণ হাতে, নিদারুণ ভাবে লিখে গেছেন পুরো বইটি। তাই প্রতিটা গল্পই তরতরে পড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল খুব সহজ ভাবেই। বর্ণনা ভঙ্গির কৌশলও ছিল অনুভব করার মতো। সুন্দর এবং সাবলীল বর্ণনার কারনেই বোধহয় আমি নিজেও ঢুকতে পেরেছিলাম লেখিকার গল্পেগুলোর ভিতরে। এটাই লেখক-লেখিকাদের লেখনীর সার্থকতা।
☆ চরিত্রায়নঃ ~~~~~~~~~ বইয়ের স্টোরিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে চরিত্র গঠন বেশ ভালো একটা অবদান রাখে। এই বইয়ের চরিত্র গঠন পদ্ধতিটাও ছিল ঝকঝকে। যে গল্পে যতটা চরিত্রের প্রয়োজন হয়েছে, সে গল্পে ঠিক ততটা চরিত্রকেই রেখেছেন। অতিরিক্ত কোনো চরিত্রের আভাস মেলেনি কোনো গল্পে। এককথায় চরিত্র গঠনের দিক থেকে বইটা পারফেক্ট।
☆ মজার এবং ভালো লাগার মতো কিছু লাইনঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ ◑ মহান কিছু করতে গেলে লোকে টিটকারি দেবেই। টিটকারিতে কান দিলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেলে মহান কিছু হবে না। ◑ মেয়ে ধরে মুরগী বানিয়ে লাভ নেই। মেয়ে মানুষ হচ্ছে বিড়ালের মতো। ◑ লালনা হৃদয়ে ঝড় না টর্নেডো উঠবে ভাই। ◑ ফাইনাল প্রুফ দিতে কেউ ইনহেলার ছাড়া আসে নাকি? ◑ পাশ-ফেলের সিস্টেম যারা বানিয়েছে, তাদের মাথার বুদ্ধি এত কম ছিল কেন কে জানে!
☆ লেখিকা সম্পর্কেঃ ~~~~~~~~~~~~~~~ ‘ নিছক গল্প নয় ' এই গল্পগ্রন্থের লেখিকা তাসনিয়া আহমেদ আপু। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক, নেশায় লেখক। মেডিকেল পড়াকালীন সময় থেকে তার লেখালেখী শুরু হয় অনলাইনে। এখন পর্যন্ত তার বইয়ের সংখ্যা ৪ টি। বইসমূহঃ ১. বয়স যখন ষোলোই সঠিক (২০১৯) ২. শহরের উষ্ণতম দিনে (২০২০) ৩. দুইশো তেরোর গল্প (২০২১) ৪. নিছক গল্প নয় (২০২২) এর মধ্যে শুধু একটা বই-ই পড়া হলো আমার। তবে বাকী বইগুলোও আমার লিস্ট ভারী করে ধরে আছে,কোনো এক সময় লিস্ট হালকা করে ফেলব,ইনশাআল্লাহ। আপুর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা, দোয়া ও শুভকামনা। তিনি যেন সুস্থ থেকে লোখালেখী চালিয়ে যেতে পারেন। তার প্রকাশিত সব বইয়ের প্রতি রইল ভালোবাসা এবং আপ কামিং বইগুলোর জন্য অগ্রীম শুভকামনা।
☆ প্রচ্ছদ ও নামলিপিঃ ~~~~~~~~~~~~~~~ প্রচ্ছদ একদম চোখ এবং মন জুড়িয়ে দেয়ার মতো।পুরো প্রচ্ছদ জুড়ে ছড়িয়ে আছে বইয়ের নামলিপি-টুকু । একেকটি চারকোণা চতুর্ভূজে একেকটি অক্ষর আঁকা হয়েছে। যা দেখতে আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। প্রচ্ছদের নিচের দিকে সাদার মাঝে লাল অক্ষরে ফুটে উঠেছে লেখীকার নাম। প্রচ্ছদের কালার কম্বিনেশন এবং নামলিপির প্যাটার্ন এককথায় - চমৎকার। প্রচ্ছদ করেছেন সানজিদা স্বর্ণা আপু। সুন্দর একটি প্রচ্ছদ উপহার দেয়ার জন্য আপুকে ধন্যবাদ। সেই সাথে তার জন্য রইল শুভকামনা।
☆ প্রোডাকশনঃ ~~~~~~~~~~~ প্রোডাকশন একেবারেই টপনচ। এ নিয়ে আমার কোনোই আপত্তি নেই। আমি লাস্ট যে ৪,৫ টা বই পড়লাম সব গুলাই ছিল সতীর্থ প্রকাশনীর। সতীর্থের প্রোডাকশনের মান আগে থেকে দারুণ লাগে আমার কাছে । তেমনি এ বইটার ক্ষেত্রেও। মলাট ঠিকাঠাক, কোনো কমতি নেই। বাঁধাই এবং পৃষ্ঠার মান যতটা উন্নত করার দরকার, করেছেন। সবমিলিয়ে প্রোডাকশন ফুল মার্কস পেয়েছে।
☆ বানান ও সম্পাদনাঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~ এখন পর্যন্ত সতীর্থের যে কয়টি বই পড়া হইছে আমার, এর মধ্যে যে দিকটায় সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে সেটা হচ্ছে “বানান"। বানানের মান একদম নাজেহাল ছিল । কিন্তু ‘নিছক গল্প নয়' বইটা বানানের দিক থেকে একদম ঠিকঠাক পেয়েছি । যে সামান্য দু-এক জায়গায় ভুল রয়েছে এর জন্যে অবশ্যই লেখীকাকে দায়ী করব না । এটা টাইপিং মিস্টেকেরই ফল । তবে এই সামান্য ভুল বই পড়াতে কোনো বাধার মুখে ফেলে দিবে না, ইনশাআল্লাহ। এছাড়া বইয়ের সম্পাদনার মানও অনেক ভালো ছিল। তেমন কোনো কমতি আমার চোখে পড়েনি। বইটির বানান সংশোধন এবং সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাহমিদ রহমান ভাই। ভাইয়ের জন্য দোয়া, এবং শুভকামনা অবিরাম।
☆ পরিশিষ্টঃ ~~~~~~~~ বইটির সম্পূর্ণ রিভিউ পড়ে আপনারা কে কতটুকু বুঝেছেন বা এই বইটা সম্পর্কে কার কতটুকু ধারণা হয়েছে আমি জানিনা। তবে সকলকেই বলব বইটা একবার হলেও চেখে দেখতে। আপনি যে কোনো জনরা প্রেমীই হোন না কেন - ছোট এবং ভিন্ন জনরার গল্প হওয়ায় সব ধরনের পাঠকেরই ভালো লাগবে বলে আশা রাখি। একঘেয়েমি এবং মন মেজাজ ভালো রাখার জন্য এই ছোট ছোট গল্পগুলো আপনার কাছে বেশ ভালো উপভোগ্য হয়ে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ। হ্যাপি রিডিং…💙
তাসনিয়া আপুর লেখার সাথে আমার পরিচয় হয় "দুইশো তেরোর গল্প " বইটা দিয়ে যেটা পড়ে উনার লেখার প্রেমে পড়ে যাই ।তাই "নিছক গল্প নয় " অনেক আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম, প্রায় উতরে গেছে। এতে মোট ১৩ টি ছোটগল্প আছে। আমি গল���পসংকলন পড়ি না বললেই চলে। তবে এই বইটা পড়তে ভালো লেগেছে। লেখিকা এখানে বিভিন্ন জনরা নিয়ে লিখেছেন - সামাজিক, প্রেম, হরর থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, রম্য গল্প।
সামাজিক ও হরর থ্রিলারগুলো ভালো লেগেছে। সায়েন্স ফিকশনটা আমার কাছে তেমন জমেনি।আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে - ট্রফি, আধারলিনা,প্ল্যান, অক্সিজেন, আগুনের দিন।
তাসনিয়া আপুর কাছে একটা সম্পুর্ণ হরর থ্রিলার বইয়ের আবদার করছি😁। আর এই বইটা আমি টাঙ্গুয়ার হাওরে আমার সঙ্গী হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলাম। আপনারাও ঘুরতে গেলে বইটা পড়তে পারেন।
ছোট ছোট গল্প। পড়তে বেশ লাগে। সময়টাও ভালো কেটে যায়। পুরনো পাঠাভ্যাস ফেরাতে কিংবা ঘুরতে গেলে ব্যাগে করে নিয়ে যাবার জন্যে বেশ আদর্শ। সেটা গল্পের বিষয়বস্ত আর আকার দুটোর জন্যেই প্রযোজ্য। লেখকের জন্যে শুভকামনা।
১৩ টি ভিন্ন ভিন্ন জনরার গল্প নিয়ে সুলেখক তাসনিয়া আহমেদ এর এই বইটি তার আগের দুটো একক গল্প সংকলন এর মতই অনবদ্য। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে অবহেলিত এই শাখাতে লেখক যথেষ্ট মুন্সীয়ানার সাথে ছোট গল্প লিখে চলছেন। এই বইটি তে যেমন আছে সামাজিক গল্প 'খালাস ', 'আগুনের দিন', 'নিছক গল্প নয়', তেমন আছে রহস্য গল্প 'ট্রফি',' আঁধারলীনা', 'প্ল্যান'। এছাড়াও আছে রম্য এবং সায়েন্স ফিকশন। এক কথায় ছোটগল্প প্রেমী হিসেবে বইটি আমি খুব উপভোগ করেছি।
ছোটগল্পের বইয়ের ক্ষেত্রে পুরো বইকে একসাথে রিভিউয়ের আওতায় আনা বেশ মুশকিল। সে ঝামেলায় আমি যাচ্ছিও না। গল্প ধরে ধরেই বরং আলাপ করি।
খালাসঃ বইয়ের প্রথম গল্প। প্রেডিক্টেবল, কিন্তু এক্সিকিউশনটা বেশ চমৎকার। যাদের গল্প আমরা সচেতনভাবে এড়িয়ে যাই, তাদের কঠিন জীবন বাস্তবতার কথাই সহজ ভাষায় বলে ফেলা এই গল্পটা। রেটিংঃ ৪/৫
ট্রফিঃ প্রথমে মনে হতে পারে সাইকো-থ্রিলার, শেষের টুইস্টে একটু ধাক্কা খেতে পারেন। এমনিতে মনে হবে শেষের দিকে এসে সব তো প্রেডিক্টেবলই ছিল, কিন্তু একদম শেষ প্যারায় এসে বুঝবেন, যা যা ভাবছেন তা তা না! রেটিংঃ ৩.৮/৫
মোতালেব সাহেবের বাস ভ্রমণঃ গল্পটা আমি অবশ্য আগেও ফেসবুকে পড়েছিলাম। তাতে করে বইতে গল্পটার আবেদন আমার কাছে কমে যায়নি। সাদামাটা ধরনের গল্প, আমরা যেমনটা শুনি, যেমনটা দেখি। কিন্তু এগেইন- এক্সিকিউশনটা; তাসনিয়া আপুর বড় গুণ খুব সাধারণ গল্পগুলোকেও অসাধারণচাবে এক্সিকিউট করতে পারা। রেটিংঃ ৩.৮/৫
আঁধারলীনাঃ আবারও। শেষের দিকের টুইস্ট। জনরাটা বলে স্পয়লার দিলাম না। তবে এইখানে গল্পের চাইতেও আমাকে বেশি এট্রাক্ট করেছে সংলাপের স্টাইল। চমৎকার! রেটিংঃ ৪.২/৫
ত্রিৎক্লার্ক এবং একটি নীলচে গোলকঃ সাইন্স ফিকশন। কিন্তু তাতে বিজ্ঞানের বদলে মানবতার প্রতি করুণ এক ধরনের মমতার গল্পই এসেছে। এপারেন্টলি মনে হবে, কোনো পরিণতিই তো দেখলাম না; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এইই তো ছোটগল্প। শেষটায় আমরা নিজেরাও চরিত্রের মতো করেই অপেক্ষা করব! রেটিংঃ ৩.৮/৫
প্ল্যানঃ আবারও, টুইস্ট। প্রথমে এক জনরা ভেবে পড়া শুরু করে দেখি আসল কেইস তো তা না! রেটিংঃ ৪.২/৫
ফেরাঃ আমি বুঝি না লেখিকা আমাদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে এইভাবে ছিনিমিনি কেন খেলেন! মানে, এক জনরা ভেবে পড়া শুরু করি, শেষের দিকে, এক প্যারায় আমার পুরো ধারণা ভেঙে তছনছ! রেটিংঃ ৪/৫
ইউ ক্যান নট রিপ্লাই টু দিস কনভার্সেশনঃ কমেডি ধাচের। জোর করে কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা নেই। সহজ ভঙ্গিতে এমনভাবে রোজকার গেন-জি কারো গল্প, আপনি এমনিই হোহো করে হাসতে শুরু করবেন। লাভড ইট! রেটিংঃ ৪.৫/৫
অক্সিজেনঃ এই গল্পটাও ফেসবুকে পড়েছিলাম। কিছুটা মডিফাই করা হয়েছে বইয়ের জন্য। ভীষণ, ভীষণ হৃদয়ছোঁয়া একটা গল্প। শেষ প্যারায় এসে আপনারও চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে পারে, তাতে লজ্জার কিছু নেই! রেটিংঃ ৪.৮/৫
অনুঃ অতিপ্রাকৃত ঘরানার। গা শিরশির করা অনুভূতি আসবেই। কিন্তু এইটার এক্সিকিউশন বাকিগুলোর চাইতে স্লাইটলি দুর্বল লাগলো। রেটিংঃ ৩.৫/৫
অজ্ঞাতসারেঃ কৈশোরের বিটারসুইট দিনগুলো মনে পড়লে বুকের মধ্যে এখনো কোথাও একটু কাঁপন ধরে যায় না আপনাদের কারো? এক টুকরো স্মৃতি, মনে হয় চোখ বন্ধ করে হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব? আমরা বড় হই, ছেলেমানুষি ফেলে আসি। কিন্তু তারপরও, কিছু একটা থেকেই যায়। এই বড়বেলায় এসে তা ভাবতে হাস্যকর লাগে, আবার সেই সময়টার জন্য, সেই সময়ের নিজের জন্য, ছেলেমানুষটার জন্য ভীষণ মায়াও হয়। এই গল্পটা ঠিক সেই মায়ার। রেটিংঃ ৪.৫/৫
আগুনের দিনঃ এই গল্পটা গল্পই, শুধু শেষাংশটা; প্রথম অংশ আমাদের আশপাশেরই ঘটনা। কিন্তু আমি, আমরা সবাই খুব করে চাই, গল্পের শেষাংশ বাস্তব হয়ে উঠুক। স্যালুট! রেটিংঃ ৪.৮/৫
নিছক গল্প নয়ঃ বইয়ের নামগল্প। চমৎকার প্লট, চমৎকার স্টোরিটেলিং। শেষে এসে একটুখানি দীর্ঘশ্বাস- আহারে মানুষ! রেটিংঃ ৪.৫/৫
ওভারঅল, পুরো বইটা একটা রোলারকোস্টার। হাসি, কান্না, ভয়, নস্টালজিয়া, চেতনার তীব্রতা- সবই পাবেন। হাইলি রেকমেন্ডেড।
নিছক কোনো গল্প নয়, হ্যাঁ কিছু গল্প শুধু গল্পই হয় না। দুই মলাটের মধ্যে এই যাত্রায় বইটিতে বন্দী হয়েছে মোট তেরোটি গল্প। নিতান্ত কাল্পনিক হলেও, নানা অনুভূতির এই গল্প গুলো পাঠককে কিছুক্ষণ হলেও হাসাবে ,কাঁদাবে কিংবা আতকে দিবে। এই গল্পগুলি কি জীবন থেকে নেয়া, নাকি জীবনের সমান্তরাল অন্য কোনও জীবনের গল্প। গল্পের এই ভুবনে হারিয়ে পাঠক নিজেই একসময় বলে উঠবেন, 'না, এ তো নিছক গল্প নয়!
এই তেরোটি গল্পের যাত্রায় আমার খুব বেশি কাছ থেকে অনুভব হয়েছে মোতালেব সাহেবের বাস ভ্রমণ গল্পটি। আসলে আমাদের সমাজে ভুরি ভুরি মোতালেব সাহেবের সাথে দেখা হয় আমাদের। মোতালেব সাহেবেরা আমাদের মনে যে ছাপ রেখে যায় তা আমরা জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটি ত্যাগ করবার আগ অবধি ভুলতে পারি না। কিন্তু, গল্পটা কেমন হয় যখন একই অনুভূতি মোতালেব সাহেবের গা গুলিয়ে দেয়!
ফুটবল বলুন কিংবা ক্রিকেট! যেকোনো খেলার সর্বোত্তম পুরুষ্কার হলো ট্রফি। তবে লেখক তাসনিয়া আহমেদ এ কোন ট্রফির গল্প আমাদের শোনালেন, যা আপনাকে কিছুটা হলেও আতকে দিবে।
মানুষের জীবন কি মানুষের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত নাকি অন্য কোনো মাধ্যম তার উপর প্রভাব বিস্তার করে! ত্রিৎক্লাক শুধু একটি গল্প না, মহাবিশ্বের প্রতিটি মহামারী যখন আমাদের থামিয়ে দেয় তখন বলাই যায় মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ কি অন্য কোনো মাধ্যম করতে পারে?
অল্প অল্প করে কল্পগল্পের পসরা সাজিয়েছেন লেখক এই বইটি���ে।নিঃসন্দেহে এক দিনে পড়ে ফেলবার মতো বই। ছোট গল্পে অল্প বাক্যে অনেক গুলো অনুভূতির সঞ্চার ঘটানো যে কতটা উপভোগ্য হয়, নিছক কোনো গল্প নয় বইটির তার প্রমাণ।
পাঠক হিসাবে বেশ সময় কাটবে বইটির সাথে!
বই- নিছক কোনো গল্প নয় লেখক- তাসনিয়া আহমেদ ধরণ- গল্পগ্রন্থ পৃষ্ঠা- ১৫৬ প্রকাশনী- সতীর্থ প্রকাশনী
এই তিনটা গল্প এই বইয়ের বেস্ট আকর্ষণ। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
⬛এভারেজ রেটিং অফ দিস বুক ইজ: ৬.৯২/১০ রেটিং কম মনে হলেও রেটিং কিন্তু কম না।
১৩টা গল্পের মধ্যে ২টি গল্প অনেক কম রেটিং পেয়েছে। এজন্য রেটিং কমে গেছে। (প্ল্যান:৩/১০ ফেরা:৪/১০)
এই গল্প দুটি বাদ দিয়ে চিন্তা করলে ১১ টি গল্পের জন্য বইয়ের এভারেজ রেটিং আসে ৭.৬/১০ অথবা ৩.৮/৫। এটা একটা ইন্ডিভিজুয়াল ভাবে রেটিং দেওয়া গল্পগ্রন্থের জন্য অনেক হাই রেটিং🔥
⬛ লেখিকা বর্তমান লেখিকা/লেখকদের ভিতরে এই ধরনের গল্প বর্ণনায় অনেক উচ্চতায় থাকবেন। আলোচনাভঙ্গি বর্ণনাভঙ্গি অনেক ভালো। লেখিকা যে অনেক যত্ন করে তার লেখাগুলো লেখেন তা বোঝা যায়। লেখিকাকে উৎসাহ দিচ্ছি তিনি যেন লিখতে থাকেন❤️।
ছোট ছোট গল্প নিয়ে নির্মিত “নিছক গল্প নয় ”। একই সাথে ভীষণ মিশ্রিত ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি অনুভব করতে সহায়ক এই বইটি। আমার কাছে ভালো লেগেছে এবং ক্রাউন সাইজের হওয়াতে বেশ উপভোগ করেই পড়তে সুবিধা হয়। চমৎকার একটি বই পাঠকদের হতাশ করবে না কখনো এই বইটি।
বইটার সবচে বড় নেগেটিভ ফিচার হলো, প্রায় প্রত্যেকটা গল্পই সম্পূর্ণ ইলজিক্যাল ও আনরিয়েলিস্টিক প্রশ্নের সামনে দাড় করিয়ে শেষ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া যেকোন কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা, গল্পগ্রন্থের নাম গল্প.. এমনকি সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকটাও থাকে সবচে এক্সক্লুসিভ। কিন্তু এখানে "নিছক গল্প নয়" শিরোনামের গল্পটায় হুবহু আবরার হত্যাকাণ্ডের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে যা আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর লেগেছে। আমি এই বইকে কোন রেটিং ই দিতাম না, কিন্তু আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে "অজ্ঞাতসারে" এবং "ত্রিৎক্লাক এবং একটি নীলচে গোলক" এই দুটি গল্প। বিশেষ করে 'অজ্ঞাতসারে' গল্পটার কথা বলতেই হয়! গল্পটার শুরু, বিন্যাস, বর্ণনা এবং সমাপ্তি সবই ছিলো পারফেক্ট। এখানে যেমন সুচারুভাবে উঠে এসেছে এক টিনেজ মনের ভাবনা ও আবেগ, সেভাবেই ফুটে উঠেছে পরিনত বয়সের ম্যাচুরিটি। আমার কাছে এই গল্পের রেটিং ১০ এ ১০ কিংবা তারো বেশী। 'ত্রিৎক্লাক এবং একটি নীলচে গোলক' একটি সাইফাই গল্প। যেটি অনায়াসেই হতে একটি উপন্যাস। লেখিকার কাছ থেকে এমন লেখা আশা করি ভবিষ্যতে।
নিশ্চই বুঝতে পারছেন এটি একটি গল্পগ্রন্থ। মোট ১৩ টি গল্প আছে বইটিতে। আমার কাছে ঐ দুইটা গল্প বাদে বাকীগুলো এভারেজ বা বিলো এভারেজ লেগেছে। সেখানের কোন গল্প হয়তো আপনাদের কাছে খুবই ভালো লাগতেই পারে... সেই বিচার আপনাদের হাতেই রইলো।।। হ্যাপি রিডিং।
মোট ১৩টা গল্প আছে এই সংকলনে। বিভিন্ন স্বাদের গল্পগুলো: রোমান্টিক, থ্রিলার, সামাজিক, সায়েন্স ফিকশন। প্রতিটি গল্পের আলাদা করে রিভিউ লিখছিনা। থ্রিলার গল্পগুলোর ক্ষেত্রে টুইস্টগুলো তেমন আকর্ষণীয় লাগেনি। আরেকটু ভালো আশা করেছিলাম। আর কিছু কিছু থ্রিলারে খানিকটা জোর করে অতিপ্রাকৃত উপাদান ঢোকানো হয়েছে মনে হচ্ছিল। রোমান্টিক গল্পগুলো খারাপ ছিল না। সামাজিক গল্পগুলো সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে। সংকলনের সবশেষ গল্প "নিছক গল্প নয়"-এ আমার ক্যাম্পাসে আমারই ব্যাচের সাথে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা প্রতিফলিত হয়েছে।
তাসনিয়া আপুর সাথে পরিচয় উনার "শহরের উষ্ণতম দিনে" গল্পগ্রন্থের মাধ্যমে। তবে ওই সংকলনে থাকা থ্রিলার গল্পগুলো তুলনামূলক বেশি ভালো লেগেছিলো।
অনেক ভাল লেগেছে। লেখিকার লেখার হাত যে বেশ ভাল এটা ওনার বই পড়লেই বুঝা যায়। খুব সাধারন ভাবে উনি লেখেন, আর আমার কাছে সহজ সাধারনভাবে লেখাই বেশি ভাল লাগে পড়তে। এই বইটায় ভিন্ন ভিন্ন জনরার গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছেঃ হরর-থ্রিলার, প্রেম, সায়েন্স ফিকশন, সামাজিক। এত জনরার মিশ্রণের বইটা পড়ে বেশ ভাল লাগলো।
যেই গল্পগুলো সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছেঃ
- ট্রফি - ফেরা - ইউ ক্যান নট রিপ্লাই টু দিস কনভারসেশন - অক্সিজেন - আগুনের দিন - নিছক গল্প নয় (বেস্ট। পড়ার সময় গায়ে বার বার কাঁটা দিয়েছে শুনলে কি বিশ্বাস করবেন? গল্পটা আসলে কাকে নিয়ে লেখা সেটা আপনারা পড়লেই বুঝবেন। পড়ার পর বুকের মধ্যে নিঃশ্বাসটা ভারি হয়ে গিয়েছে আমার)।
সংকলন হিসাবে মোটামুটি ভালোই। তবে সব গল্প ভাল লাগেনি। তাছাড়া অধিকাংশ গল্পের সমাপ্তি আগে থেকে অনুমান যোগ্য। তবে পড়তে খারাপ লাগে না। নির্যাতনের ব্যাপারটা বেশ কিছু গল্পের প্রধান প্লট পয়েন্ট, বিশেষ করে নারীর উপর পুরুষের নির্যাতন। এ নিছক গল্প হতে পারে, তবে আমার মনে হয়েছে আজকাল সমাজে মূল ধারণাটা এভাবেই গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ, সব আঙ্গিকে পুরুষই দোষী হবার সম্ভাবনা বেশি এবং অপরাধগুলো তারাই করে। সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গির সরলায়নের চেষ্টায় মর্মাহত হয়েছি। আর বিশেষ কিছু বলার নেই।
লেখনী ঠিকঠাক আছে। লেখিকার দুইশ তেরর গল্প পড়ে ভাল লেগেছিল। আগামী উপন্যাস পড়ব আশাকরি।