স্নাতক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মোহাম্মদ মিরাজ মিয়ার জন্ম চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নন্দীখোলা গ্রামে। পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্ক করতে ভালোবাসেন। তুলনামূলক রাজনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক দর্শন, আমেরিকান পলিটিক্স ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা তার আগ্রহের বিষয়। লেখক বিশ্ব রাজনীতির সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করেন। "দি এ্যানাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স" লেখকের প্রথম বই।
এটা মূলত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী অংশের জন্য লেখা বই। তাই বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য স্পর্শকাতর, কূটনীতির জন্য বিব্রতকর কিছু বিষয় লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন। এমন বইতে সেটাই যুক্তিযুক্ত।
UN, BRICS, WB group, IMF, EU, রাশিয়া আরেকটু গুরুত্বের সাথে আসতে পারতো।
অনেক বিষয়বস্তু রিপিট হয়েছে। রিপিটিশন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ভালো। সাধারণ পাঠকের জন্য বোরিং।
যদি এমনিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য পড়া হয় তাহলে রেটিং 3.5/5. মোটামুটি ভালো। যদি পরীক্ষায় পাস করার জন্য পড়া হয় তাহলে রেটিং 4.5/5. খুব ভালো।
শুরুটা হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্ক নিয়ে প্রাথমিক ধারণা থেকে বর্তমান সময়ে সেইসবের বিভিন্ন বিবর্তিত পরিভাষা থেকে। পরবর্তীতে আলোচনায় এসেছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্বরূপ, বিভিন্ন রাজনৈতিক তত্ত্ব , পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি বিষয়ক ভারী তত্ত্ব। রাজনীতির সাথে অর্থনীতির ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে।তাই পরবর্তীতে আলোচনায় এসেছে রাজতন্ত্র,সামন্তবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধনতন্ত্র ... এরপরেই এসেছে উপনিবেশবাদের একাল-সেকাল। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি , বিভিন্ন কৌশলী পদক্ষেপ, যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান , পরাশক্তি হয়ে ওঠা। ইসরাইল-প্যালেস্টাইন দ্বন্ধের ভিতরের কথা ,মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত ও ভূরাজনীতি, আফ্রিকার রাজনীতি, এশিয়ার ভূরাজনীতি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের গতিপ্রকৃতি, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নয়া স্নায়ুযুদ্ধ ,আগামীর বিশ্বে চীনের আধিপত্য, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, বাংলাদেশের অবস্থান, বিভিন্ন সংগঠন আবির্ভাবের পিছনের গল্প । নয়া বিশ্বে চীন ও আমেরিকার নয়া স্নায়ুযুদ্ধ । এছাড়াও আছে জলবায়ুগত সমস্যা মোকাবেলায় করণীয়, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের করণীয়।
দীর্ঘ আলোচনা ও তত্ত্বের ভারী বই । চাকরি পরীক্ষার্থী ও রাজনীতি বিষয়ে আগ্রহী যে কারো জন্য সুখকর একটা বই। ননফিকশন হওয়ায় বিস্তারিত রিভিউ দেওয়া হলো।বইটা শেষ করতে ৪-৫ মাস লেগে গেল। শেষদিকে যদি glossary থাকতো আরো ভালো লাগতো।
বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান গতি প্রকৃতি নিয়েই মূলত এই বই। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, ভূ-রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বইটির মূল আলোচ্য বিষয়। এছাড়াও শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অশান্তির যে দামামা বাজিয়ে এসেছে সেটাও বই এ উল্লেখ রয়েছে। যেমন শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীদের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলা হয়েছে- গত দুই দশক ধরে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে ল্যাটিন আমিরাকাতে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে আফগানিস্তানে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে সিরিয়া-ইয়েমেন-লিবিয়াতে। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠার বাকি আছে শুধু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে! এ বিষয় ছাড়াও ইরান সংকট, ইসরাঈল-প্যালেস্টাইন সংঘাত, সৌদী রাজনীতি ও তাদের সাথে ইরান ও হুতি বিদ্রোহীদের সংঘাত, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ, চীন-তাইওয়ান সংকট সহ বাংলাদেশের ব্যাপারও বই এ উঠে এসেছে। এ ধারার বই পড়তে গেলে বিরক্ত চলে আসার প্রবণতা থাকে, কিন্তু এক্ষেত্রে বইটির সাবলীল লেখা এবং সহজ ভাষার দরুন লেখক, পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সফল হয়েছেন। বইটির “উপনিবেশবাদের একাল সেকাল” অধ্যায়টি নিয়ে আলাদা করে বলতে হয়, এ বই এর সবচেয়ে দুর্দান্ত অধ্যায় ছিল এটি।
দ্য এনাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স বইটি লেখা হয়েছে একুশ শতকের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে। যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে সচেতন, আগ্রহী এবং উৎসুক তাদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য। এই বইটা লেখা হয়েছে যারা কেবল আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে পড়া শুরু করেছেন বা করবেন বলে ভাবছেন তাদের জন্য। দ্য এনাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স বইটার সেরা দিকটি হলো এর সাবলীলতা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির মত এত জটিল বিষয়কে সহজবোধ্য করে তোলার কাজটি মিরাজ মিয়া অসাধারন নিপূণতায় সম্পাদন করেছেন।
বইটির যে দিকটি বাকি সব দিক থেকে স্বতন্ত্র্য করে তুলেছে তা হলো প্রতিটি টপিকের সাথে বাংলাদেশ কীভাবে সম্পর্কিত, কীভাবে লাভবান হচ্ছে এবং কীভাবে বাংলাদেশ কূটনৈতিক অঙ্গনে আরও ভালো করতে পারে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা। বাংলাদেশ কীভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করে বিশ্বের পরাশক্তিকে আপন স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে তা নিয়ে বিষদ বিবরন দিয়েছেন লেখক।
সব শেষে বলব, আপনি যদি নন ফিকশন পড়তে আগ্রহী হন এবং বিশ্ব রাজনীতি আপনাকে কৌতুহলী করে তোলে, বই আপনারই জন্য।
দি এনাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স বইটির লেখক মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া। বইটি প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকেই মুলত লেখককে ফেসবুকে ফলো করি, সেই সুবাদে লেখকের সমসাময়িক রাজনীতি -ভূরাজনৈতিক লেখা গুলো নিয়মিত পড়া হতো। তারপর যখন এই বইটি আসল ২২ সালের দিকে তখনই বইটি পড়ার আগ্রহ ছিল। কিন্তু কেন যেন শুরু করা হয়ে ওঠেনি। সেই সাথে বইটির ভালোই হাইপ ছিল ত ২৫ এ শুরু করলাম পড়া। বইটি সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন এক কথায় এটি আসলে বিসিএস বা চাকরি প্রত্যাশীদের সমসাময়িক বিশ্বরাজনীতি বুঝতে বেশি ফোকাস করা হয়েছে, কিন্তু একজন সাধারণ জিওপলিটক্স ও বিশ্ব ব্যবস্হা নিয়ে জানতে আগ্রহী পাঠক হিসেবে বইটি আমাকে কিছুটা আশাহত করেছে। মূলত আমার এক্সপেকটেশন বেশি ছিল। কিন্তু বইয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন টার্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে, যেটা একটা ভালো দিক,এবং উপনিবেশও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে অধ্যায়টাও ভালো ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও ভূরাজনীতি নিয়ে আরো বিস্তারিত খোলাসা করার উচিত ছিল, তাছাড়া বিভিন্ন দেশিয় চুক্তি ও নীতি নিয়ে লেখক তেমন ব্যাখ্যা করেনি, হয়ত তৎকালীন পরিস্থিতিতে নিজের নিরাপত্তা জনিত কারণে। ত এসব বিষয় একপাশ রেখে বৈশ্বিক পলিটিক্স ও বিশ্ব ব্যবস্হা নিয়ে জানতে আগ্রহী নতুন পাঠক হলে বইটি একবার পড়তে পারেন। 3 out of 5
বইটি আমার এক সহপাঠী আমাকে পড়তে বলেছিল রাজনীতির বিষয়ে আমার কিঞ্চিৎ আগ্রহ দেখে। বইটি খুবই তথ্যনির্ভর। আমিও হয়তো এখন কারো রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখলে সাজেস্ট করবো। ৪০০+ বইটিতে লেখক ৩০ টি অধ্যায় করে গোটা বিশ্ব রাজনীতির একটা সম্ভবপর বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। ছোটখাটো কিছু অংশ দিরুক্ত হয়েছে বলে হয়েছিল বলে মনে হতে পারে, তবে সেটা চোখে পড়ার মত না। ( বিদ্র: আমার বইয়ের কতগুলো টপিকের সাথে পূর্ব পরিচিতি থাকায় ৩ তারকা দেয়া।)
"The West won the world not by the superiority of its ideas or values or religion but rather by its superiority in applying organized violence. Westerners often forget this fact; non-Westerners never do." — Samule P. Huntington
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাটা আসলে ঠিক কীরকম, কীভাবে কে কার স্বার্থে সম্পর্কে জড়াচ্ছে, কে হতে চাচ্ছে আগামীর পরাশক্তি, কাদের হাতে লেগে আছে ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ব্যবহার করা রক্তাক্ত সম্পদ— এই সব এবং আরো অনেক কিছুই আছে এই বইয়ে।
মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি, ল্যাটিন আমেরিকা- আফ্রিকার রাজনীতি—সবই প্রাঞ্জলভাবে পেয়েছি। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এখনই শেষ না হোক; আরো কিছু জানি, আরো কিছু পড়ি!