জীবনের ওপর হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো সীমান্ত, কিন্তু একটি ফোনকল ওকে ফিরিয়ে আনলো মৃত্যুর হাত থেকে। কৃতজ্ঞতাবশত রাজকন্যার সাথে দেখা করতে যেয়ে সীমান্ত জানতে পারলো এক অমোঘ সত্য।
শুরুর আগে সাবধান বাণী শুনিয়ে দেয়া ভালো- ধুমধাড়াক্কা মারপিট, গোলাগুলি পাচ্ছেন না কিন্তু এই বইতে। যা পাবেন তা হলো থমকে দেবার মতো কয়েকটা টুইস্ট আর শ্বাসরুদ্ধকর কিছু ইন্টার্যাকশন। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের একটা বৈশিষ্ট্য হলো গল্পের বিল্ড-আপ হতে বেশ সময় নেয়, যাতে করে পাঠকের ওপর মানসিক ধাক্কাটা প্রবলভাবে আঘাত হানতে পারে। এক্ষেত্রে ‘হু ইজ মড ডিক্সন’-ও ভিন্ন কিছু না। বইয়ের প্রায় অর্ধেকের পর থেকে শুরু হয় বুদ্ধির মারপ্যাঁচ। কিন্তু সে জন্য ধৈর্য্য ধরে পড়ে যেতে হবে, মিশে যেতে হবে ফ্লোরেন্সের মানসিক অবস্থা আর মড ডিক্সনের চরিত্রের সাথে। তবে অন্যান্য কিছু চরিত্র থাকলেও তা পুরোপুরি সফল ভাবে ব্যবহার করেননি লেখিকা। তবে এই ত্রুটিটুকু ছাপিয়ে মূল চরিত্রদ্বয়ের মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতের উত্তেজনা ঘিরে ধরবে পাঠককে ঠিকঠাক ভাবেই।
ডেব্যু উপন্যাস হলেও হ্যাচেট বুক গ্রুপের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানি থেকে ২০২১ সালে প্রকাশিত বইটিতে বেশ ভালোই চমক দিতে পেরেছেন আলেকজ্যান্ড্রা অ্যান্ড্রিউজ। এক্সোটিক কিছু লোকেশনেও ঘুরিয়ে এনেছেন পাঠককে। প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি ও স্থাপনার বর্ণনাগুলো মোটামুটি একটা ছবি তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে মনের পর্দায়। তবে কয়েকটা আপাতদৃষ্টিতে দৈব ঘটনাকে অন্যভাবে উপস্থাপন করলে আরেকটু বিশ্বাসযোগ্য হতো প্লটটা। বললে স্পয়লার হয়ে যাবে বিধায় এড়িয়ে গেলাম, কমেন্টে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে নব্য লেখিকাকে এতটুকু ছাড় দেয়া যায়ই। আফটার অল, লেখকের ত্রুটি ধরাটাও অনেকের কাছে না-পছন্দের কাজ। সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ্য একটা থ্রিলার ‘হু ইজ মড ডিক্সন।’ যারা ‘সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার’ শব্দযুগলের প্রতি আকর্ষণবোধ করেন, তারা নির্দ্বিধায় তুলে নিতে পারেন আমাদের দেশে সদ্য প্রকাশিত বইটি।
অনুবাদের মান অনুবাদক আহনাফ তাহমিদকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। প্রতিটি বইতেই নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সাবলীল, মনোমুগ্ধকর ও একই সাথে শব্দের দুর্দান্ত ব্যবহারকে নিয়ে গেছেন নতুন এক উচ্চতায়। পড়তে গিয়ে কোথাও এতটুকু আটকাতে হয়নি। যে বই পড়ে মনে হয় না অনুবাদ পড়ছি- সে বই-ই হলো সফল অনুবাদকের প্রমাণ। এই পরীক্ষায় হু ইজ মড ডিক্সনের অনুবাদক লেটার মার্কে পাশ।
❛কে কথা কয়ে যায় রে মন কেন নাচায়রে আমার প্রান যে মানে না কিছুই ভালো লাগে না।❜
জীবনের প্রতি প্রতি মায়া কমে গেছে বোধহয় সীমান্তের। হাতে ব্লে*ড নিয়ে বসে আছে। জীবন শেষ করে দিয়ে হয়তো মুক্তি পাবে যন্ত্রণা থেকে। জীবন হঠাৎ অর্থহীন হয়ে উঠেছে। কিন্তু কী মনে করে যেন বন্ধু সাব্বিরের খোঁজ দেয়া একটা হেল্প লাইন নাম্বারে ডায়াল করে সে।
করোনার সময় মানুষ ক্রমশ হতাশায় জর্জরিত হতে থাকে। কারো টানা ঘরে থেকে অশান্তি, একাকীত্ব, কেউবা চাকরি হারিয়ে হতাশ। এই সময়কালে গড়ে উঠেছে মানুষকে সাহায্য করার একটি প্রতিষ্ঠান "কে কথা কয়"। তারা মানুষকে মানসিক সহায়তা দিচ্ছে। অনেকের কাছে জীবনের হতাশার ভার ক্রমাগত বয়ে চলার ক্লান্তি দূর হয় কারো সাথে হয়তো প্রাণ খুলে নিজের কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নিতে পারলে কথা বলে। কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনে কে কার কথা শুনতে চায় আর!
জীবন নিয়ে হতাশ সীমান্তও তেমনি আজ সাহায্য নিতে চায় এই কে কথা কয় প্রতিষ্ঠানটির। সীমান্ত ডায়াল করার পর ওপাশ থেকে মেয়েলি মিষ্টি একটা কন্ঠ শুনতে পায় সে। রাজকন্যা মেয়েটির নাম। সীমান্ত একটু অবাক হয়। সচরাচর এমন নাম শোনা যায় না। তবুও দুজনের গল্প আলাপচারিতায় এক সময় সীমান্ত নিজের ভুল বুঝতে পারে। কারণ এই পৃথিবীতে তার থেকেও বহু মানুষ দুঃখের সাগরে ভেসে আছে তবুও তারা বেঁচে আছে। সীমান্তের খুব পছন্দ হয় রাজকন্যা মেয়েটির কথাবার্তা। কিন্তু কে কথা কয় প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গিয়ে সীমান্ত মুখোমুখি হলো চরম এক সত্যির। যেটা হয়তো রাজকন্যার সাথে দেখা করার ইচ্ছা না হলে সে জানতো না।
🫘পাঠ প্রতিক্রিয়া:
❝কে কথা কয়❞ আহনাফ তাহমিদের লেখা ছোট একটি ইবুক যেটা প্রকাশিত হয়েছে বইঘর থেকে। ইবুক পড়ার অভ্যাস ইদানিং বাড়ছে আমার বেশ। সেই ধারাবাহিকতায় পড়ে ফেললাম এই ইবুকটি। আহনাফ তাহমিদের অনুবাদের কাজ যেমন ভালো হয় তেমনি মৌলিকের ক্ষেত্রেও তিনি খারাপ লেখেন না। আমি ওনার প্রথম মৌলিক "অদ্ভুত" পড়েই সেটা ধারণা পেয়েছিলাম যে ওনার মধ্যে চেষ্টা রয়েছে।
গল্প বলার ক্ষেত্রে চেষ্টা রাখেন বরাবরই সহজ সাবলীল ভাষায় লিখতে। এই গল্পটায় যে প্লটটা তিনি এনেছেন সেটা আমাদের সেই করোনার সময়কালের দিনগুলো মনে করিয়ে দেয়। লক ডাউনের সময়ে এমন ঘরবন্দি জীবনে অনেকেই মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমন হেল্প লাইন সেন্টার কিন্তু তখন অনেককেই মানসিক সহায়তা দিয়েছে।
গল্পটিকে আমি হরর বলবো আপাদমস্তক। কিছু বিষয় হয়তো লেখক পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন ভাবনার জন্য। আবার ছোট গল্প বলে কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলে না। তবে সব মিলিয়ে বইটি আমার কাছে ভালো লেগেছে এটা ঠিক।
🫘বইয়ের নাম: "কে কথা কয়" 🫘লেখক: আহনাফ তাহমিদ 🫘ইবুক: বইঘর
আসলে ৩.৫ স্টার। ফ্ল্যাপের লেখাটা বেশ ক্যাচি। খুব ইন্টারেস্টিং একটা প্লট ভেবে বইটা হাতে নেওয়া। তবে দেড়শো পেইজের মতো এগিয়ে গেলেও তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই প্রথমেই বলতে হয় যে এটা স্লো বার্ন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। পাতায় পাতায় সাসপেন্স এখানে পাওয়া যাবে না। তবে গল্পটা একদম ঝুলেও যায় নি। দেড়শো পেইজের পর থেকে ধীরে ধীরে সাসপেন্স বাড়তে থাকে। থ্রিলার পাঠকগণ যেই উপকরণের অপেক্ষায় থাকে তা ধীরে ধীরে পাওয়া শুরু হয়। হত্যা, রহস্য, প্রতারণা, লুকোছুপি, আর দৌড়ঝাপের মিশেলে লেখিকা জ্বলবার ইচ্ছে থাকা সত্বেও একটি জীবনের বারংবার ভেঙে পড়া, আর নিয়তির ফাঁদে পড়া আরেকটি সফল জীবনের ভেঙে পড়ার গল্পই হয়তো লেখিকা এই ক্যানভাসে আঁকার চেষ্টা চালিয়েছে। অনুবাদ নিয়ে আমার কখনোই তেমন মাথাব্যথা না থাকলেও এবার একটু বলি। কিছু জায়গায় কেমন ওলট-পালট একটা ভাব এসে পড়েছে। এক শব্দে বললে আরকি কাটখোট্টা একটা ভাব। নিজ থেকে নিজের মতো করে উপস্থাপন করার ব্যাপারে তাহমিদ ভাইয়ার আরো যত্ন নিতে হবে। আশাকরি সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো কাজ পাব।
❛আপনি কি জীবনে হতাশ? কিছু ভালো লাগে না? একা লাগে? জীবনের কোনো মানে নেই? তবে আমরা আছি আপনার পাশে। ফোন করুন আর সব হতাশা দুঃখ ঝেড়ে ফেলুন। কারা আমরা? আমরা হলাম, কে কথা কয়?❜
জীবনটা শেষ করার পূর্ব মুহূর্তে সীমান্ত একটা নাম্বারে ডায়াল করলো। গভীর রাতে ফোন তুললো রিনিঝিনি কণ্ঠের মালকিন রাজকন্যা। সীমান্ত ক্রমশ আবিষ্কার করলো যে তুচ্ছ কারণে সে ত��র জীবনটা সাঙ্গ করতে যাচ্ছিল সেটা ভুল। রাজকন্যার বদৌলতে পিতৃ প্রদত্ত প্রাণটা দুনিয়ার আলো বাতাস দেখবে হয়তো আরো অনেক। কে এই রাজকন্যা? দেখা করতে হবে।
করোনার সময় মানুষ ক্রমশ হতাশায় জর্জরিত হতে থাকে। কারো টানা ঘরে থেকে অশান্তি, একাকীত্ব, কেউবা চাকরি হারিয়ে হতাশ। এমন নানা প্রকার সমস্যার সমাধান হিসেবে আসলো - কে কথা কয়। ফোন করে কথা বলে তারা সমস্যার সমাধান দেয়। দেয় নতুন করে বাঁচার ইচ্ছা।
এখানেই দেখা করতে আসে সীমান্ত রাজকন্যার সাথে। তবে এসে সে এক অবাক করা সত্য আবিষ্কার করলো। সত্য সবসময়ই অবাক করে দেয়।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
❝কে কথা কয়❞ আহনাফ তাহমিদের ছোটোগল্প।
করোনার করাল গ্রাসে যখন পৃথিবী অবরুদ্ধ তখন বিপাকে ছিল মানুষেরাও। প্রথমে ছুটির এই আমেজ, এরপর সময় কাটানো, নানা কিছু করে নতুনত্ব তৈরি আর অঢেল এই সময়কে পার করেও যখন সময় ফুরাচ্ছিল না তখন হতাশা, একাকীত্ব, ক্রোধ দানা বাঁধে। অনেকে শেষ করে দিতে চায় নিজেকে।
এই বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য কে কথা কয় নিয়ে আসে দারুণ এক সার্ভিস। দিনে দিনে তাদের পরিধি চাহিদা বাড়ে। সার্ভিস বন্ধ হয়না। এই সার্ভিসটাই একদিন নিয়েছিল সীমান্ত। জীবন যুদ্ধে নিজেকে পরাজিত ভেবে শেষ করতে চেয়েছিল নিজেকে। তখনই রাজকন্যার কন্ঠ তাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
ছোট্ট একটা গল্প। পড়তে দশ মিনিটও লাগে না। লেখকের লেখা আমার ভালো লাগে। এই গল্পটিও সুন্দর। শেষটা বিষন্ন। কিন্তু ভালো লাগে। মনে হচ্ছিলো গল্পটা আরেকটু বড়ো হলে মন্দ হতো না।
তবে রিভিউ পোস্ট করতে গিয়ে Goodreads এ দেখলাম এটা ❛হু ইজ মড ডিক্সন❜ এর অনুবাদ। গল্পটা অনুপ্রাণিত হতে পারে। বুঝতে পারিনি ঠিক।
❛হতাশার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও মানুষ আলোর দিশা পায়। কেউ আলোর পথে যায়। কেউ অন্ধকারে পতিত হয়। চয়েজটা একান্ত নিজের।❜