ভাস্কর্যের সাথে হয়তো আপনাদের দেখা হয়ে যাবে কোনো ছায়া ঘেরা বইয়ের দোকানে, জাদুঘরে কিংবা কোন কনফারেন্স সেমিনারে। তখন তার মধ্যে আমার ভাস্কর্যকে খুঁজতে যাবেন না কিন্তু। কারণ আপনাদের কাছে তাকে নিতান্তই সাধারণ বরং বেশ খানিকটা মনমরা উদাসীন মনে হবে, কিছুটা খিটখিটেও লাগতে পারে। বুঝতে পারবেন না এই খ্যাপাটে মনভুলো মানুষটার জন্য আমার এত আদিখ্যেতা কেন। স্বাভাবিক! আপনারা তো দাঁড়াননি তার আকাশ জোড়া চোখের নিচে। কোলাহল মুখরিত কবিতায়। সে অভূতপূর্ব সৌন্দর্য। আমার পত্রহীন পত্রমিতালী; ভাস্কর্য।
চিঠি-উপন্যাসিকা। বেশ আগ্রহ ছিল বইটা নিয়ে কারণ সাধারণত এরকম বই সচরাচর পড়া হয়না। শেষ করে এটুক বলব, মোটামুটি লেগেছে। লেখাগুলো আমার কাছে বেশ কঠিন লেগেছে তাই বেশি টানেনি। অন্যদের কাছে হয়তো ভাল লাগবে। হাতে গোনা অল্প কয়েকটা চিঠিই ভাল লেগেছে। ভিন্নধর্মী বই হিসেবে এই বইটা সংগ্রহে রাখতে দোষ নেই!
বইটা মূলত চিঠি-উপন্যাসিকা। পুরো বই জুড়ে উপন্যাসের মাঝে মাঝে মোট চব্বিশটি চিঠি রয়েছে। এখানে চিঠির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চিঠি লেখিকার ভাস্কর্যের জন্য অনুভূতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন অনুভূতি। সেখানে মিশে আছে ভালোবাসা, আশা, হতাশা। বইটা কিছুটা স্লো বার্ণ হলেও অনুভূতি প্রকাশের শব্দচয়ন ভালোভাবেই পত্র লেখকের মনের অনুভূতি গুলো তুলে এনেছে পাঠকের সামনে।
"আমি যদি লেখক হতাম পৃথিবীর সব কাগজ-কালি শেষ হয়ে যেত তুমিতেই,আমার সব লেখা উৎসর্গিত থাকত তোমাকে,আমার প্রিয় শব্দ হতে তুমি।"
"আর যদি হতাম চিত্রশিল্পী তাহলে শহরের প্রতিটি গ্যালারিতে বিরামহীন চলত আমার আঁকা তুমি সিরিজের এক্সিবিশন। "
|| কোলাহল মুখরিত কবিতায়। সে অভূতপূর্ব সৌন্দর্য্য। আমার পত্রহীন পত্রমিতালী; ভাস্কর্য ||
ভাস্কর্য-কে বইটি একটি চিঠি সমগ্র।বলা যায় চিঠি--উপন্যাসিকা। এই বইয়ের চিঠিগুলো আপনার সকালে এনে দিতে পারে প্রশান্তির ছোঁয়া আবার নিমিষেই দূর করে দিতে পারে বিকালের ক্লান্তি । সুন্দর শব্দচয়ন এবং অনুভূতি গুলোর স্পষ্টতা এনে দিবে এক ভাবগাম্ভীর্যের সমাহার। খুব সুন্দর সাইজ বইটিকে নিমিষেই ঠাঁই দিবে আপনার রোজকার বহন করার থলেটিতে। চিঠিগুলো এতোই সুন্দর যে একবার নয়, দুইবার নয়, বারবার পড়া যায় এমন একটি বই ভাস্কর্য-কে।
ভাস্কর্যের সাথে হয়তো পাঠকের দেখা হয়ে যাবে কোনো ছায়া ঘেরা বইয়ের দোকানে,জাদুঘরে কিংবা কোনো কনফারেন্সে সেমিনারে। আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনে ভাস্কর্য নামক এই অনুভূতির দরকার রয়েছে,ব্যাক্তিকে না পেলেও অনুভূতি গুলো প্রয়োজন। প্রয়োজন এই সকল অভিজ্ঞতার। যেন মনে হবে, কোথা থেকে একজন মানুষ পাঁজা মেঘের মতো এক গাঁদা তীব্র অনুভূতি এনে আমাদের ক্ষয়িষ্ণু বোধগুলোকে আবার তীক্ষ্ণ করে দিয়ে গেল।
যাদের মাঝে নির্জন একাকীত্ব বোধের জাগরণ ঘটেছে তারা যেন বলতে পারে, সত্য হচ্ছে আমি এস.ডি. বর্মণের ' তুমি আর নেই সে তুমি', আর তুমি Guns N' Roses-এর 'I Used to love her'। আমাদের মধ্যে পার্থক্য বিশদ। যা Solitude-loneliness-এর মতো।
বইটির অনেকগুলো অংশ আমার বেশ পছন্দের।সেখান থেকে কিছু কোট করছি-
❝আর তুমি, সাক্ষাৎ জলন্ত আগ্নেয়গিরির পাহাড়। আমি সেই পাহাড়ের ঠিক কিনারায়,ঝুঁকে ঝুঁকে দেখছি জলন্ত চরম বিস্ময়ে। কখন যে পা ফসকে গেল! তলিয়ে গেলাম সানন্দে। পুড়ে যাচ্ছি, আমি তো আর স্বর্ণ পিন্ড নই যে পুড়ে খাঁটি হবো। ছারখার হয়ে যাব জানি। তবু তোমার জলন্ত আগ্নেয়গিরিতে এ আমার স্বেচ্ছার অগ্নি-অবগাহন। ❞
❝ আমার দীর্ঘশ্বাসের কালো পেঁজা মেঘ ঝুলে আছে তোমার মাথার উপর। একটা টোকা দিলেই বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে উঠবে তোমার নিথর সভা।❞
বইটি যেকোনো পাঠকে উপহার দেয়ার মতো একটি বই,নিজে বারবার পড়বার মতো একটি বই বলে আমার মনে হয়েছে। যারা কবিতা পড়েন, তারাও কবিতা পাঠের জন্য বইটি পাঠ করতে পারবেন। সুন্দর বাক্যগঠন, গঠনশৈলী, আবেগ ও কল্পনার দৃশ্যপট অসম্ভব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চিঠিগুলোতে।রোমান্টিসিজমেও বেশ গভীর ভাব প্রকাশ পেয়েছে চিঠি গুলোয়। একজন প্রেমিকার কাছে তার প্রেমিক কেমন হবে তার নিদারুণ কল্পনা অসম্ভব সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। পাঠকের জন্য একটি সুখ পাঠ্য ও ভালো বই।