ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রকে যাঁরা প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন, তাঁদেরই উত্তরসূরী আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য। দেশজসম্পদ ও সংস্কৃতির প্রতি আন্তরিক মমত্ববোধ এবং প্রবল অনুসন্ধিৎসা নিয়ে তিনি বিশাল আয়ুর্বেদশাস্ত্রের মৌলধারায় প্রবেশ করতে ব্রতী হন; ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’ তাঁর সেই সুদীর্ঘ নিরলস অন্বেষারই ফলশ্রুতি। প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রের সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সমীকরণ এই গ্রন্থের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। শিবকালীবাবু দীর্ঘকাল ধরে এদেশের বনে, প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে চেনা-অচেনা মূল্যবান বনৌষধি সংগ্রহ করেছেন, পরীক্ষা করে দেখেছেন তাদের গুণাগুণ এবং বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এগুলির বিজ্ঞানসম্মত প্রয়োগ যে সম্ভব, তা তাঁর পরীক্ষায় বার বার ধরা পড়েছে। দেশের ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে জনসাধারণ যাতে এর দ্বারা উপকৃত হতে পারেন, তারই সহজ সরল নির্দেশক এই গ্রন্থ। তাঁর ভাষা সাহিত্যরসসম্পৃক্ত, সুললিত ও সহজবোধ্য। এক কথায়, বিজ্ঞানের সঙ্গে সাহিত্যরসের সার্থক যোজনা এই গ্রন্থের একটি বড় সম্পদ।
পণ্ডিত স্বৰ্গত চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের পুত্র শিবকালী ভট্টাচার্য জন্মেছেন ১৯০৮ সালে, অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলায়। মৃত্যু ১৯৯২। ছাত্রজীবনে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ঘটনাপ্রবাহে এসে পড়েন কলকাতায়; অগ্রজ স্বর্গত কবিরাজ বিজয়কালী ভট্টাচার্যের উৎসাহে তিনি আয়ুর্বেদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং প্রখ্যাত আয়ুর্বেদবিশেষজ্ঞ শচীন্দ্র বিদ্যাভূষণ, জ্যোতিষ সরস্বতী, হারাণ চক্রবর্তী, গণনাথ সেন, নলিনীরঞ্জন সেন প্রমুখের সান্নিধ্য লাভ করেন। পরবর্তীকালেও বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক ডঃ পি. কে. বসু, ডঃ অসীমা চ্যাটার্জী, ডঃ বিষ্ণুপদ মুখার্জি, ডঃ এ. কে. বড়ুয়া, ডঃ বি. সি. কুণ্ডু, ডঃ আর. এন. চক্রবর্তী প্রমুখ মনীষিবৃন্দের সৌহৃদ্য লাভ করেছেন তিনি। ১৯৩৬-৪০-এর মধ্যে আয়ুর্বেদ ভেষজের ৩টি প্রদর্শনীর পরিকল্পনা এবং পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি সফলকাম হন, আবার ১৯৬৪ সালে শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্ৰপীঠে আয়ুর্বেদ প্রদর্শনী শাখার ভারপ্রাপ্ত হয়ে সুষ্ঠু সম্পাদনার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৪২-৪৭ পর্যন্ত রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপনা এবং ১৯৬৭ থেকে ৫ বৎসর ভৈষজবিজ্ঞানেও অধ্যাপনা করেন। ওই সময় তিনি নিজেও উদ্ভিদবিজ্ঞানে জ্ঞানপিপাসু ছাত্র হয়ে প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিকদের সান্নিধ্যে আসেন। তাঁর নিষ্ঠিত জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৯ সালে স্টেট আয়ুর্বেদ ফ্যাকাল্টি বোর্ড আয়ুর্বেদাচার্য উপাধি দান করেন।