প্রতিবাস্তব কমিকস সংকলন ২০২২ এ আছে মোট ২২টি মৌলিক কমিকস, যার পেছনে কাজ করেছেন মোট ৩৪ জন লেখক এবং আঁকিয়ে। লেখক তালিকায় আছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব-সহ বাংলাদেশের বর্তমানের শক্তিশালী ও জনপ্রিয় বেশ কজন লেখক। আঁকিয়ের তালিকায় আছেন এক ঝাঁক তরুণ ও সম্ভাবনাময় কমিকস শিল্পী। পরাবাস্তব, হরর, সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার, স্লাইফ-অব-লাইফ, হিউমার, মেটাফিকশন, উইয়ার্ড ফিকশন ঘরানার কমিকস স্থান পেয়েছে এতে। কমিকসের পাশাপাশি বইটিতে আছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দুজন প্রখ্যাত কমিকস শিল্পী ডেভ গিবন্স ও শঙ্খ ব্যানার্জির সাক্ষাৎকার। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলা কমিকসের ইতিহাস নিয়ে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ। সংকলনটির সম্পাদনা করেছেন মেহেদী হক ও মাহাতাব রশীদ।
গোঁজামিল - ফারাহ মাসুদ / ফাহিম আনজুম রুম্মান
বাংলা কমিকস কিভাবে এলো -কৌশিক মজুমদার
নিঃসঙ্গতা - আহম্মেদ মুজিবর রহমান/আসিফুর রহমান
ছুট - মাহাতাব রশীদ / আরহাম হাবীব
বন্দি - সালমান সাকিব শাহরিয়ার
একা - সিদ্দিক আহমেদ / মুগ্ধ রায়
ফিশ হান্ট - সাঈফ মাহমুদ
সামার - ঐশিক জাওয়াদ
দেয়ালের মানুষ - আহসান হাবীব/সমীরণ বর্মন
অক্টোপাসের চোখ - মুহম্মদ জাফর ইকবাল/ শেখ জাহিন আবরার
প্রতিবাস্তব। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং আতংকের সময় পেরিয়ে আসাটা বেশিদিন আগের নয়। তারপর শুরু হয়ে গেল এক যুদ্ধ। বিপন্নতায় ভর্তি এই সময়ের প্রতিচ্ছবি যেন এই কমিক্স সংকলন। লেখক এবং আঁকিয়েরা দুর্দান্ত সব কাজ করেছেন। তবে প্রায় সবার কাজে সচেতন বা অবচেতনে চলে এসেছে একধরণের পোস্ট-এপোকিলিপ্টিক সময়ের বেশ কিছু আখ্যান।
ঢাকা কমিক্সের প্রতিবাস্তব সংকলনের প্রতিটি কাজ, ডিটেইলিং, লেটারিং, প্লট, গল্পকথন, অঙ্কন, ইলাস্ট্রেশন এবং সবমিলিয়ে সম্পাদনায় পাওয়া গেছে প্রতিভা, পরিশ্রম এবং যত্নের সুস্পষ্ট ছাপ। পৃথিবীজুড়ে কমিক্স এবং গ্রাফিক নভেলের প্রায় একধরণের রেঁনেসার এই যুগে বাংলাদেশের কমিক্স অঙ্গন যে কত ভালো করছে তা প্রতিবাস্তবের ভৌতিক, আধিভৌতিক এবং পরিকল্পিত বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে যাত্রা করলে বুঝতে পারা যায়।
বাংলাদেশের কিংবদন্তি কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের লিখা সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দেখে প্রথমেই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছে। ঢাকা কমিক্সের সম্পাদক এবং প্রকাশক মেহেদী হকের ভূমিকায় তরুনদের প্রতি জোড়ালো সমর্থন ভালো লেগেছে। এই সংকলনের সাথে যুক্ত সকলে এই প্রশংসার যোগ্য। কারণ এই সংকলনের এমন কোন কন্টেন্ট নেই যা আমার ভালো লাগেনি।
'গোঁজামিল' এ একজন লেখক এবং তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের মধ্যকার দন্দ্ব সুন্দর হয়েছে খুব।
'ছুট' এ দেখা যায় পার্কুর কল্যানে একজনের সবাইকে মাত করে ছুটে চলা। একটা প্যানেলে প্রায় আক্ষরিকভাবে মনে হয়েছে কমিক্স প্যানেল থেকে ছুটে বেরিয়ে আসছে কিছু।
'একা' গল্পটি পোস্ট-এপোকিলিপ্টিক এক সময়ের নিঃসঙ্গ ব্যক্তির গল্প বলে।
'সামার' একটু কমিক রিলিফ দেয় এত উত্তেজনার মাঝে।
'অক্টোপাসের চোখ' সায়েন্স ফিকশনের সাথে সমান্তরালে ফিলসফিক্যাল গল্প। মানুষজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভৃত্যে পরিণত হলে কি ফলাফল চলে আসে তা দারুনভাবে ফুটে উঠেছে। এই সংকলনে আমার অন্যতম ফেভারিট আখ্যান এটি।
'হারানো এবং পাওয়া' আবার সুন্দর কমিক রিলিফ দিল।
'কোয়ারেন্টিনড' গল্পের নামটা শুনেই বুঝা যায় কি নিয়ে প্লট। লকডাউন, মাস্ক, ভয়, আতংকের সময়ের এই বিষাদগ্রস্ত সময়ের স্টোরি এটি।
'ঘাবরাস না' পড়ে আমি ভালো ঘাবড়ে গেছি। খুব ডিস্টার্বিং গল্প।
'ছিল্ল্যা কাইট্টা লবণ লাগায় দিমু' আরেকটি গা শিউড়ানো গল্প।
'অমনিয়াস' বিভৎসতা এবং মায়ার এক সুন্দর ও বিরল সম্মিলন ঘটাতে পেরেছে।
'ডাইনী' সম্পর্কে কিছু বলবো না, শুধুমাত্র সুন্দর টুইস্টটির জন্য।
'ভগ্নমনস্কতা' এ লেখক টুইস্ট আগের থেকেই জানিয়ে দিচ্ছিলেন তবে বেশ ভয়ের।
'বাংলা কমিক্স কিভাবে এলো' তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কমিক্সের ইতিহাস জানতে পারলাম। বিশেষ করে চট্টগ্রামের মানুষজন বেশ কিছুটা খুশী হতে পারেন এই প্রবন্ধটি পড়লে। বাংলা ভাষায় কমিক্সের ভারত এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের দরকারি তথ্যে সমৃদ্ধ এটি। কমিক্সের অজানা কিছু তথ্য পেলাম।
'নিঃসঙ্গতা' এক অন্যরকমের নিঃসঙ্গতার গল্প। অবশ্য কিছু বিষয়ে সব নিঃসঙ্গতা প্রায় মনে হয় একইরকমের।
'বন্দী' এর গল্প এবং আর্ট সুন্দর।
'ফিশ হান্ট' এমন এক অ্যাডভেঞ্চার যার এন্ডিং যে এভাবে হবে সেটা কল্পনা করাটা পাঠকের জন্য প্রায় অসম্ভব। দারুন গল্প। আর্ট আরো দারুন।
'দেয়ালের মানুষ' আরেকটি চট করে ভয় লাগিয়ে দেয়ার গল্প।
'ফানজাই ল্যান্ড' সম্পর্কে বলতে চাই না। এন্ডিংটা স্পয়েল হয়ে যাবে। তবে আর্ট যথারীতি দারুন।
'ক্রাক্রা' পড়ে বহুদিন মনে থাকবে। অন্ধকারের মাঝেও কি সুন্দর আলোর গল্প!
'শ্যাল' এক মায়ের সন্তানহারার গল্প। আসলে কি হারিয়েছেন? সুন্দর এন্ডিং। দুর্দান্ত আর্টওয়ার্ক।
"সুপারহিরো আমাদের আধুনিক সময়ের মিথোলজি"
সর্বকালের সেরা গ্রাফিক নভেলের মধ্যে অন্যতম 'ওয়াচম্যান' এর শিল্পী ডেভ গিবনসের ঢাকা কমিক্সের কয়েকজনের দ্বারা সাক্ষাৎকার গ্রহনটি বেশ উপভোগ্য এবং ইনসাইটফুল। স্বয়ং তাঁর দেশেও যে 'কমিক্স ছোটদের বিষয়' মিথটি চালু আছে জেনে খানিকটা চমকে গেছি। কমিক্স, গ্রাফিক নভেল, তাঁর সহকর্মীদের কথা এবং বর্তমান কমিক্স বিশ্বের বাস্তবতা প্রাঞ্জল ভাষায় বলেছেন এই লিজেন্ড।
'কা' একটি ভয়ের এবং মন খারাপ করিয়ে দেয়ার গল্প। উৎকন্ঠার আখ্যান এটি।
"নতুন চোখে পুরাণ ছবি" শঙ্খ ব্যানার্জির দৃশ্যকল্প,
এই সাক্ষাৎকারে ভারতীয় এই আইকনিক গ্রাফিক নভেল শিল্পীর সাথে সোজাসোজি আলাপে কমিক্সের শিল্পী এবং পাঠকদের লিখার আছে অনেক কিছুই। খুব ভালো লেগেছে এই ইন্টারভিউটি।
'কিসসা' এই সংকলনে আমার আরেকটি অন্যতম ফেভারিট গল্প। মরুর বুকে ভয়, অনিশ্চয়তার মাঝে একধরণের দার্শনিক নির্লিপ্ততা মনটা ছুয়ে গেছে।
'অসম্ভব চুর' দিয়ে ঢাকা কমিক্স শেষে এসে বাজিমাত করেছে। একইসাথে কমিক রিলিফ এবং সঠিক উপায়ে ফোর্থ ওয়াল ভাঙাটা চমৎকার লেগেছে।
একটি বিষয় খেয়াল করেছেন কি? আমি ইচ্ছে করে লেখক / শিল্পীদের নাম দেই নি। সূচিপত্র অনেকে দেখে ফেলেছেন। বিখ্যাত এবং সমসাময়িক প্রতিভাবান লেখক / শিল্পীরা কাজ করেছেন এই সংকলনে। প্রতিটি গল্প এতই ভালো লেগেছে যে ফেভারিট বের করাটা কঠিন মনে হয়েছে। প্রচ্ছদ ব্রিলিয়ান্ট হয়েছে। প্রি-অর্ডারের গিফ্ট হিসেবে একটি অপার্থিব দেখতে পোস্টার, বেশ কিছু দারুন স্টিকার এবং একটি সুন্দর বুকমার্ক পেয়েছি। ঢাকা কমিক্সের প্রতি আন্তরিক শুভকামনা রইল। বছরের সেরা কমিক্স সংকলন সৃজন করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। নতুন পাঠক থেকে ঝানু কমিক বুক রিডার, সবারই খুব ভালো লাগতে পারে এই সংকলন।
বিপন্নতা, ভয়, উৎকন্ঠা, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভৃত্যে পরিণত হওয়ায় নেতিবাচক ফলাফল এবং সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতার মাঝে এক বিষাদময় ভিন্ন বাস্তবতায় চলে যায় প্রায় সবাই। প্রতিবাস্তব মনে হয় সেই ভিন্ন মাত্রাটিই।
এক কথায় মাস্টারপিস। অনেক কিছু মিস করবেন না পড়লে। আশা করি নতুন আর্টিস্ট দের নিয়ে বড় বড় গ্রাফিক নভেল পাবো সামনে। আমার বিশ্বাস বড় গ্রাফিক নভেল বাংলায় নতুন ধারা তৈরী করবে এই ধরনের নবীন আর্টিস্ট দের সুযোগ দেওয়া হলে। ধন্যবাদ মেহেদী ভাইকে অনেক নবীন আর্টিস্ট দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
এই বইটা ভেবেছিলাম অনেকদিন ধরে অল্প অল্প করে পড়বো। যখনই কোন বইয়ের ক্ষেত্রে এমন ভাবি, উল্টো সেইটা একটানে পড়া হয়ে যায়। প্রতিবাস্তবেও সেটাই হয়ছে। বাতিঘর থেকে এনেই পড়া শুরু করেছি। মাত্র দুদিনে শেষ করে ফেলেছি। আর পরের দিনে প্রতিটা কমিক্স আবার খুঁটে খুঁটে পড়েছি। আমি আর্টিস্ট না, তারপরও পাঠকের দৃষ্টিতে আর্টওয়ার্ক এর ডিটেলিং দেখে মুগ্ধ হয়েছি। (আবার পড়লে আমি নিশ্চিত আরো কিছু পাবো)
সবচেয়ে ভালো যেটা হয়েছে সেটা হল জনরার সংমিশ্রণ। এতগুলো জনরা এত সুন্দরভাবে ব্রেন্ড করেছে। শুনলাম প্রথমে এইটাই ডার্ক জনরার কমিক্স এত বেশি হওয়াতে, কিছু স্লাইফ-অব-লাইফ, হিউমার ধরণের কমিক্স যোগ করা হয়েছে। এইটা শুনে মনে হয়েছিল কি দরকার ছিল, পুরাটাই ডার্ক জনরার বই এ হত। কিন্তু মজার ব্যাপার হল সেইগুলো এতই চমৎকার হয়েছে, এখন মনে হচ্ছে আরো কিছু দরকার ছিল। ছুট, সামার, হারানো এবং পাওয়া, ক্রাক্রা, ডাইনী এই কমিক্সগুলো মাঝে মাঝে না থাকলে আসলেই মাথা ধরে যেত ডার্ক কমিক্সগুলো পড়তে পড়তে।
সবগুলো কমিক্স নিয়ে এক-দুই লাইন লিখতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। এখন ডিটেইল এ কিছু বলতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে।
"নিঃসঙ্গতা", "একা", "ফিশ হান্ট" এইগুলোর কনসেপ্ট এবং ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং খুবই ভালো ছিল। আমার মনে হয়েছে এইগুলো আলাদা আলাদা কমিক্স বই হবার মত কাহিনী ছিল।
"দেয়ালের মানুষ", "অক্টোপাসের চোখ", "ছিল্ল্যা কাইট্টা লবণ লাগায় দিমু ", "শ্যাল", "হারানো এবং পাওয়া", "ঘাবড়াস না", "বন্দি" ভালো লেগেছে। এইগুলো নিয়ে পরে কিছু বলার থাকলে এডিট করে বলবো।
"ছুট", "সামার", "ক্রাক্রা", " ডাইনী" এইগুলো বারবার পড়ার মত। একদম মন ভালো করে দিয়েছে। অনেকদিন পর নির্মল বিনোদন পেয়েছি। সামার এবং ক্রাক্রা এর কমিক্স সামনে আরো চাই।
"অমনিয়াস" গল্পটি বর্তমান সময়ের জন্য অনেক দরকারি। রোমেল ভাই সরাসরি কিছু না বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীতে, সর্যি শুধু পৃথিবী না এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জিনিস ক্ষমতা নয়, ভালোবাসা। অমনিয়াস তো এইটা বুঝেছে। এখন পৃথিবীর মানুষেরা বুঝলেই হয়।
"গোঁজামিল" এত ভালো কাহিনী ছিল। আরো বড় হওয়া দরকার ছিল। কি হবে সেইটা আগেই বুঝতে পারছিলাম। আর একটু বড় হলে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত হতাম।
"ফানজাই ল্যান্ড" হতাশ করেছে। শুরু হতে হতেই শেষ হয়ে গেল। এই কয়েকটি পেইজেও অনিক সরকার ভাই এর আঁকা দেখার মত ছিল।
"ভগ্নমনষ্কতা", "কা", "কোয়ারেনটিনড" এই সংকলনের অন্যতম সেরা কমিক্স।
"কোয়ারেনটিনড" এ খুবই কম সংলাপ, কিন্তু করোনা লকডাউনের সময়কাল নিয়ে কি ডিটেলিং এবং দুর্দান্তভাবে সব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আর্ট দিয়ে। এইটা শেষ করে কি ভয়াবহ শুন্যতা ভর করেছিল নিজের ভিতর। আমরা কি ভয়ংকর সময় পার করে এসেছি সেইটা আবার মনে পড়লো।
"কা" কমিক্সটি একদম পারফেক্ট হরর স্টোরি। তার সাথে দেশীয় নানা মিথ যোগ করা হয়েছে। পুরো কাহিনীতে যেভাবে টেনশন ধরে রেখেছে। আর একটা পজিটিভ পয়েন্ট হল হরর গল্পের ভিতরেও হিউম্যান ইমোশনগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। আর্টওয়ার্ক নিয়ে বলাই বাহুল্য সেরা হয়েছে।
"ভগ্নমনষ্কতা" এইটা নিয়ে কিছু বলে স্পয়েল করবো না কাহিনী। কিছু কিছু সাইকোলজিকাল থ্রিলার সিনেমা আছে যেগুলোর সাইকোপ্যাথ আপনার ভিতর আসলেই ভীতি তৈরি করে। এইটা সেইরকম একটা কাহিনী। আর আপনি আমার মত ডার্ক ফিকশন এর ভক্ত হলে তো কথায় নাই। কোন বড় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এই গল্প পেলে লুফে নিবে।
এই বইয়ের লাস্ট ট্রাম কার্ড হিসেবে ছিল মাহাতাব রশীদ এর "কিসসা"। এইটা কোন জনরার গল্প আমি জানি না। এইরকম স্টোরিটেলিং এবং এই টাইপের গল্প শেষ পড়েছি শিবব্রত বর্মণ এর "বানিয়ালুলু" আর "সুরাইয়া" তে। আমি তুলনাতে যাচ্ছি না। এর যে সহজ করে এই গল্পের জনরা বোঝাতে পারছি না। আমার মনে হয়েছি ঐ ধরণের একটা গল্পের গ্রাফিক ভার্সন পড়ছি। একটা ঘোরের ভিতরে নিয়ে গেছে এই গল্পটা। শুধুমাত্র এইরকম কিসসা পড়ার জন্যও "প্রতিবাস্তব" কেনা যায়। এইটার পর, মাহতাব রশীদ এক্সপেক্টেশন অনেক বাড়িয়ে দিল "অতলান্ত ২" এর জন্য।
পরিশেষে বই সমাপ্তি করবে অসম্ভব এক চুর। যে চুর ফ্রেমের বাইরে থেকে চুরি করে, তাকে ঠেকাবে কে?
এই বইয়ে তিনটি প্রবন্ধ আছে। কমিক্স ইন্ডাস্ট্রির অনেক কিছু জানলাম। আঁকাআঁকি, কিভাবে ক্যারেক্টার তৈরি, কিভাবে কমিক্স এর দুনিয়া তৈরি হয় এইগুলো নিয়ে অনেক কিছুই আছে। সাথে আমেরিকান ও ব্রিটিশ কমিক্স এর শুরুর কাহিনীও বলেছে ডেভ গিবন্স।
বইয়ের ক্ষেত্রে একটাই নেতিবাচক দিক বইয়ের দামটা। আমি অনেককে এইটা নেয়ার জন্য সাজেস্ট করেছি। দামের জন্য নিচ্ছে না। ৫০০ এর ভিতর হলে অনেকেই সংগ্রহ করতো কমিক্সটা।
আমার নিজেরও একটু অস্বস্তি হচ্ছিল এত দামে কমিক্সটা কিনতে। তবে পড়ার পর, আমার কাছে এত দামে কেনাটা "Worth It" মনে হয়েছে। এইটা এমন না একবার পড়ে ফেলে রাখার মত। কমিক্সগুলো বারবার পড়ার মত। আর যারা বই সংগ্রহ করেন তাদের জন্য তো সেরা একটা কালেকশন।
মেহেদী হক ভাইয়ের মত বলতে চাই "জয়তু প্রতিবাস্তব"।
'প্রতিবাস্তব' আমাকে এক অদ্ভুত সুন্দর বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আজ থেকে আট দশ বছর আগেও কল্পনা করা কঠিন ছিল আমাদের দেশে একটা পাকা পোক্ত কমিক্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। কিন্তু 'ঢাকা কমিক্স' এই কল্পনাকে বাস্তব করেছে। অচিরেই 'ঢাকা কমিক্স' 'ডিসি' - 'মারভেল' বা ইউরোপের 'ইউরোপ কমিক্স' এর মতো এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে, এই আশা আমরা করতেই পারি।
'প্রতিবাস্তব' সম্পর্কে যদি এক কথায় বলতে হয় তবে বলব - অবাক করার মত চমৎকার। ২৮০ পৃষ্ঠার এই কমিকস সংকলনে স্থান পেয়েছে সব মিলিয়ে ২২ টি চমৎকার কমিক্স(কমিক্স হিসেবে অনেক গল্প! ) , ২টি সাক্ষাৎকার আর বাংলা কমিকস এর ইতিহাস নিয়ে একটি লেখা। অধিকাংশ গ্রাফিক গল্পগুলোই সাদা কালো, তবে কয়েকটা গল্পে (৩টা তে) পরীক্ষামূলক ভাবে রং এর প্রয়োগ করা হয়েছে।
এইবার আসা যাক গল্পগুলো কেমন হলো? ২২টা গল্পের মধ্যে ২২টা-ই অসাধারণ হয়েছে এ আমি বলব না। তবে অধিকাংশ গল্পই ভালোর দিকে। তবে আঁকার দিক থেকে প্রত্যেকটা গল্পের আঁকা টপ নচ! দেখেই মনে হবে আন্তর্জাতিক মানের শিল্পীর কাজ।
আর গল্পগুলোর মধ্যে 'ছুট' গল্পের মোশন আর সিনেমেটিক এংগেল, 'একা' এর পোস্ট এপোক্যালিপ্ট আবহাওয়া, 'সামার' এর মেঙ্গা স্টাইল, 'অক্টোপাসের চোখ' এর সাইফাই এলিমেন্ট, 'ভগ্নমনস্কতা' এর হরর আর্টওয়ার্ক, 'নিঃসঙ্গতা' তে চমৎকার রংয়ের ব্যবহার, 'বন্দী' তে ক্রিপি হিউমেন ফেস, 'ফিশ হান্ট' এর "মান্না কুত্তার বাচ্চা!" :-D, 'ফানজাই ল্যান্ড' এর ফানজাই ল্যান্ড, 'শ্যাল' এর শেষ টুইস্ট আর 'অসম্ভব চুর' এর ফোর্থ ওয়াল ব্রেক স্টোরি ট্যালিং ছিল অনবদ্য। তবে আমার মতে সবচেয়ে সেরা গল্প হলো মাহতাব রশীদের 'কিসসা'। গল্প কিংবা আঁকায় সব দিক দিয়ে এই কমিকস সবগুলো গল্পকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এতো সুন্দর পরিণত কাজ সত্যি প্রশংসার দাবিদার। এই এক গল্পই আস্ত এক গ্রাফিক নোভেল বই হবার মর্যাদা রাখে। প্রায় সব গল্পই বড়দের এর মধ্যে 'ছুট', 'সামার', 'হারানো এবং পাওয়া', 'ক্রাক্রা' শিশুবান্ধব। তাই এই কমিকস সংকলনকে হালকা ভাবে না নেওয়ার অনুরোধ রইলো।
কোনো বই একবারে ত্রুটি মুক্ত হয় না। এই বইও সেই সত্যকে উপেক্ষা করে নি। বইয়ের প্রথম গল্প 'গোঁজামিল' বেশিই খাপছাড়া(বইয়ের ফার্স্ট ইম্প্রেশনকে থিতু করে), 'বাংলা কমিকস কিভাবে এলো' এর অগোছালো ফরমেটিং, 'কা' এর বানানের ভুল আর প্রায় সব গল্পে একই টাইপের অক্ষর ফরমেট চোখের জন্য সুখকর ছিল না।
সবশেষে বলব এই কমিকস সংকলন 'ঢাকা কমিক্স' তথা বাংলাদেশের কমিক্স এর জন্য এক মাইল ফলক। 'পঞ্চ রোমাঞ্চ' এর যোগ্য উত্তরসূরী 'প্রতিবাস্তব '। এই কমিক্সটি সবার ঘরে থাকুক(যদিও দাম একটু বেশি! ) আর সবার মধ্যে এই কমিক্স নিয়ে চর্চা হোক এই আমার প্রত্যাশা। বাংলাদেশের কমিক্স দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগত।
I don't read comics quite that much. To be frank, I never would've known about this book if it wasn't for dhakacomics's email about the release and its preorder system. A collection of 22 comics by dhakacomics is the new hype in the market. The book is huge at 280 pages and includes 2 interviews with famous comic artists. I skipped the interview partly because I didn't feel the need to read them.
I liked the art and sketches along with some storylines. I won't tell you all of the comics are splendid. Some are wholly dull and would've fit better in a 4 slide Instagram post than being published in a book like this. It was lame and a pity. These artists weren't even trying to make an effort in their stories.
Although I enjoyed more comics here than I hated, some are decent and quite good with a strong and excellent story. Their drawing is also quite exquisite, not to mention the detailing.
This book is a mix of both bad and good stories to me. I guess it didn't meet the expectations I had. Not worth the hype for me. Sorry, not sorry.
বই এর সেরা কাজ মাহাতাব রশীদের কিসসা। যেমন আঁকা, তেমন কিসসা। মনের মতন মানিকজোড়। তানজীম রহমানের কনসেপ্ট ও লেখায় আর অরিন্দম কুন্ডু অয়নের আঁকায় 'অসম্ভব চুর' আনন্দ দিয়েছে। কমবেশি সব কমিকস এরই আঁকা ভালো কিন্তু গল্পে ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে ঢাকা কমিকস এর অন্যান্য প্রকাশনা গুলোর মতনই। মনে রাখার মত গল্প পাওয়া যাচ্ছেনা। ভালো লেগেছে কমিকস নিয়ে প্রবন্ধ গুলো পেয়ে। বিশেষ করে ডেভ গিবনস এর ইন্টারভিউটা। অবাক লেগেছে কার্টুনিস্টত্রয়ের সাথে ডেভ গিবনসের কোন ছবি পেলাম না দেখে। এমন কাল্ট ক্লাসিক লেখকের সাথে কোন ছবি তোলা হয়নি? মোবাইল যুগের আগের ইন্টারভিউ হবে হয়তো। রাকিব রাজ্জাকের পরিচ্ছন্ন আঁকায় 'ক্রা ক্রা' ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে বাংলা এনিমেশন কার্টুন এ এমন আঁকা পেলে মন্দ হয়না। বই এর প্রোডাকশনের কাজ চমৎকার। শক্ত বাইন্ডিং, আর দারুণ হার্ডকভার প্রিন্ট। খুব যত্নের সাথে করা হয়েছে। সংগ্রহে রাখার মতই।
অস্থির। আমাদের কৈশোরে উচ্ছ্বাস প্রকাশে এই "অস্থির" টার্মটার বেশ চল ছিল। এখনকার ছেলেপুলেদের এইসব টার্মিনোলজি আমার জানা নেই, তবে নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি এই সংকলনটা ছেলে-বুড়ো, কমিকস প্রেমী-অপ্রেমী সবারই ভাল লাগবে। বইটিতে স্থান পাওয়া প্রতিটি লেখা নিয়েই বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আমি শুধু বিশেষভাবে দুইটা গল্পের কথা উল্লেখ করব - মাহতাব রশীদের "কিসসা" এবং কাজী মারুফুর রহমানের "কা"। ভাল আঁকিয়ের পাশাপাশি মাহতাব যে তুখোড় একজন গল্পকার তা "অতলান্ত" কমিকসেই বুঝেছিলাম। পরাবাস্তবতা আর মায়ার দারুণ এক মিশেল কিসসা। "কা" হচ্ছে হার্ডকোর হরর। এক শব্দে বলতে গেলে অস্থির।
This was an excellent comic collection. Some of the art style and writing really threw me off my chair. Only a few ones were complete dud, because of too many unnecessary dialogs. Though some of them had a strong start, but they didn't know how they wanted to end it. So, it kinda dragged on for a bit too long. But I would say the positive part of this collection outweighs the duds. My personal favorite was the purse snatcher one with no dialog with an amazing ending. Eagerly waiting for their next release.
A Bengali comics compilation from Dhaka Comics. There are a few interviews on comic artists as well. I won't say all the comics in this compilation were great, but I enjoyed pretty much 80% of the comics. It introduces us with up and coming comic artists in Bangladesh, and I'm pretty hopeful for the next generation of comics artists here in our country. I would suggest any comics enthusiast to collect this compilation to enrich their collection.
from point view of art, there is lots of variety in depicting a scenery. However, from stories perspective, it is flat and dull most of the time. Another major factor, the hardcover book unnecessarily long in width and edge which can be easily done in paperbook size.
So the final rating is * only. not recommended to buy.
পরাবাস্তবতার এক দুনিয়ায় ঘুরে এলাম বলা যায়। সঙ্গী ছিলো দারুন ভিজুয়ালাইজেশন। মোট ২৩টি কমিক্স ছিলো সংকলনটিতে। এর মধ্যে অমনিয়াস, ভগ্নমনস্কতা, কা এবং কিসসা বেশি ভালো লেগেছে। সবমিলিয়ে ভালো একটা সময় কেটেছে সংকলনটির সাথে।
নিঃসন্দেহে ঢাকা কমিক্স এর জন্য ''প্রতিবাস্তব কমিকস সংকলন ২০২২'' একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে এ সংকলনটা দারুণ উপভোগ করেছি। আলাদাভাবে নজর কেড়েছে 'ছুট', 'ছিল্ল্যা কাইট্যা লবণ লাগাইয়া দিমু', 'ভগ্নমনস্কতা', 'শ্যাল', 'দেয়ালের মানুষ', 'কা', 'কিসসা' প্রভৃতি । এছাড়া বাংলা কমিক্সের গোড়াপত্তন নিয়ে লেখা প্রবন্ধ আর খ্যাতনামা শিল্পী দুজনের সাক্ষাৎকার দুটিও ভালো লেগেছে।