Jump to ratings and reviews
Rate this book

হারেম

Rate this book
Book Written By SRiPANTHA

112 pages, Hardcover

First published February 1, 1967

17 people are currently reading
258 people want to read

About the author

Sreepantha

22 books62 followers
শ্রীপান্থের জন্ম ১৯৩২ সালে, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে | লেখাপড়া ময়মনসিংহ এবং কলকাতায় | শ্রীপান্থ তরুণ বয়স থেকেই পেশায় সাংবাদিক | আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের সঙ্গে যুক্ত | সাংবাদিকতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণামূলক রচনাদি লিখে যাচ্ছেন তিনি | তাঁর চর্চার বিষয় সামাজিক ইতিহাস | বিশেষত কলকাতার সমাজ ও সংকৃতি | তিনি সতীদাহ,দেবদাসী,ঠগী,হারেম-ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনিই কলকাতার পটভূমিতে লিখেছেন একাধিক রচনা | তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: আজব নগরী, শ্রীপান্থেরকলকতা, যখন ছাপাখানা এল, এলোকেশী মোহন্ত সম্বাদ, কেয়াবাৎ মেয়ে, মেটিয়াবুরুজের নবাব, দায় ইত্যাদি | বটতলা তাঁর সর্বশেষ বই | কলকাতার শিল্পী সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর বেশি কিছু প্রবন্ধ ইংরেজিতেও প্রকাশিত হয়েছে | বাংলা মুলুকে প্রথম ধাতব হরফে ছাপা বই হালেদের 'আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ'-এর দীর্ঘ ভূমিকা তার মধ্যে অন্যতম | পঞ্চাশের মন্বন্তরের দিনগুলোতে বাংলার শিল্পী সাহিত্যিক কবিদের মধ্যে নব সৃষ্টির যে অভুতপূর্ব বিস্ফোরণ ঘটে তা নিয়ে লেখা তাঁর 'দায়'বইটির ইংরেজিতে অনুবাদ প্রকাশিত হতে চলেছে |

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
32 (13%)
4 stars
106 (43%)
3 stars
87 (35%)
2 stars
18 (7%)
1 star
3 (1%)
Displaying 1 - 30 of 45 reviews
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
September 29, 2020
হারেম শব্দটি এসেছে আরবী হারাম শব্দ থেকে। বাংলায় একে রাজা বাদশাহদের অন্তঃপুর বলা যায়। মানুষ যখন ক্ষমতার চুড়ায় পৌছে যায় তখন সে মেতে ওঠে বিলাসে।হারেম সেই বিলাসিতার এক উদাহরণ সম্ভবত সবচেয়ে বড় উদাহরণ। মানুষ স্বভাবতই পলিগ্যামাস, সুযোগের অভাবে সৎ এর মতো সুযোগের অভাবে সে সাধারণত একগামী। রাজা বাদশাহ সুলতানদের সেই দায়বদ্ধতা নেই। তাই নানান দেশের সুন্দরী নারীদের নিয়ে তারা সাজাতো নিজের নিজের হারেম। তাদের কেউ হয়তো বৈধ স্ত্রী, কেউ উপপত্নী কেউবা স্রেফ দাসী বাদী। হারেমে খাবারের অভাব ছিল না, ছিল না অভাব পানীয়ের, বিলাস সামগ্রী কিংবা বিলাসী পোশাকের। তবু সেই জীবন শান্তির নয়। হারেমের নারীরা বন্দী, বন্দী সোনার খাঁচায়। যে সুলতান কিংবা বাদশাহ তাদের সংগ্রহ করেছেন তার সাথেও কিন্তু তাদের হয়তো সারা জীবনে একবারও ঘনিষ্ঠ হওয়া হতো না। অথচ অন্য পুরুষের সাথেও তাদের সম্পর্ক গড়ারও সুযোগ ছিল না। তবু সুযোগ খুঁজতো, সুযোগ করে নিত হারেমের বন্দীনীরা। তবে সবাই তা পারতো না, বিলাসের মধ্যে অসুখী জীবন যাপন করতো সেই সব হারেম সুন্দরীরা।

শুধু নারীরা নয়, হারেমের সদস্য ছিল প্রিয় দর্শন বালকেরা, রাজা বাদশাহদের যৌন জীবন অনেক পেয়ে ঠিক সরল পথে হাঁটতো না বলে তাদেরও দরকার ছিল। আর ছিল খোজা, যাদের কথা না বললেই নয়। প্রাচীন মিশরে পর্যন্ত খোজার অস্তিত্বের কথা শোনা যায়। খোজারা হলো হারেমের রক্ষী বাহিনী। তাদের জোর করে পুরুষত্ব কেড়ে নিয়ে হারেমের ভেতর হারেম সুন্দরীদের পাহারার কাজে লাগানো হতো। পুরুষত্ব নেই, তাই কামনা নেই, পরিবার নেই, সেই বিচারে তারা সকল সন্দেহের উর্ধ্বে ও তাদের আনুগত্য প্রশ্নাতীত সেই ভেবেই তাদের এই কাজে লাগানো হতো, কপাল পুড়তো অনেক দুর্ভাগা মানুষের। তাদের সম্পত্তির অধিকার ছিল না, ছিল না ভালোবাসার অধিকার। তবু খোজারা কি কাম, ভালোবাসার উর্ধ্বে যেতে পারতো? অনেকেই পারতো না, সম্ভব নয় আসলে তা । এই সব নিয়ে হারেম, স্বর্গের সুযোগ সুবিধা নিয়ে তৈরি অসুখী মানুষদের এক নরক।

শ্রীপান্থ মূলত তুর্কী সুলতান আর মুঘল বাদশাহদের হারেমের কাহিনী তুলে এনেছেন এই বইয়ে। মাঝেমাঝে এসেছে লক্ষ্ণৌ কিংবা অযোধ্যার নবাব অথবা বিজয়নগরের হিন্দু রাজা বা চৈনিক সম্রাটের হারেমের গল্পও। মূলত মধ্যযুগের হারেমের বর্ণনা তিনি তুলে ধরেছেন কারণ এই সময়ের প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায়। তবে হারেমের ইতিহাস আরও বহু প্রাচীন, সেটা পূর্বেও ছিল হয়তো ভিন্ন নামে কিংবা ভিন্নরূপে। আরব্য উপন্যাস, হিন্দু ও জৈন সাহিত্যে, বৌদ্ধ সম্রাটদের এমন রাজকীয় অন্তঃপুরের খবর মেলে। তবে হারেমের অধিপতির জীবন সুখের এমন ভাবার কারণ নেই। তার ক্ষমতা যদিও বিপুল তবু যেকোন সময় কোন ষড়যন্ত্র তাকে ঠেলে দিতে পারে মৃত্যু কিংবা পতনের পথে। তাই হারেমেও এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। তবু অঘটন ঘটতোই। আজ যে সুলতান কাল হয়তো তার স্থান কারাগারে কিংবা কবরে। তখন মসনদে বসেছেন নতুন সুলতান বা বাদশাহ। পুরোনো হারেমের সদস্যদের তিনি রাখবেন কি রাখবেন না সেটা তার ব্যক্তিগত অভিরুচি। হারেমের সদস্য ছিলেন সুলতান বা বাদশাহের বোন এবং মায়েরাও। অনেকসময় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রনও ছিল তাদের হাতে। আকবরের সময় থেকে মুঘল বাদশাহ বংশের কন্যাদের বিয়ে করার অধিকার ছিল না, মসনদের দাবিদার যাতে না বাড়ে এই ছিল তার কারণ। তবু ভালোবাসা হয়ে যেত, সেই ভালোবাসার স্বীকৃতি ছিল না, নির্মমভাবে হত্যা করা হতো বাদশাহজাদীদের ভালোবাসার মানুষদের।

সেই অন্ধকূপ হারেমের গল্প আমাদের জানিয়েছেন শ্রীপান্থ। হারেম কি আজ বিলুপ্ত? বোধহয় না। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধারী শেখদের অধীনে হারেম হয়তো এখনো আছে। হারেম হচ্ছে পুরুষতন্ত্রের এক ঐতিহ্য এক বিরাট দম্ভ ক্ষমতাবানদের। পৃথিবীর বুকে স্বর্গরূপী এই নরকে তবু শান্তি নেই। হারেম হলো বিলাসিতার চুড়ায় বসে থাকা কিছু অসুখী মানুষের উপাখ্যান।
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews65 followers
January 28, 2022
"এখানে সব কিছুই ছিল। আবার অনেক কিছুই ছিল না। সুখ ছিল। দুঃখ ও ছিল। আনন্দ ছিল। ছিল বেদনাও। কিন্তু ছিল না স্বাধীনতা। " হারেম নিয়ে লেখক বলেছেন উপরের পঙক্তিমালা।

হারেম একটা বেদনাময় স্বর্গ। নারীদের মর্ম যাতনার ইতিকথা হারেম। হারেম সুখের দিকে তুলনা করলে স্বর্গ সমান। কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত কষ্ট নরককে ও ছাড়িয়ে যাবে।

হারেমের কক্ষে কক্ষে যদি মৌন হাহাকার, হাহাকার তবে কক্ষের বাইরেও। সেই হাহাকার কিছু মানুষের। অবশ্য তারা সম্পূর্ণ মানুষ নয়, ' খোজা ' নামে এক আশ্চর্য, অদ্ভুত, বিকৃত অস্তিত্ব মাত্র। ইতিহাসবিদদেরা বলেন, "খোজা হচ্ছে মানুষের হাতে গড়া ক্লিব মানুষ "।

বইটা প্রতিটা শেষ হতেই, মনে একটা ছাপ রেখে যাচ্ছিল। সেটা কষ্টের, বেদনার। হারেম পড়ার পরের অনুভূতি জানতে চেয়েছিলাম একজেনর কাছে,সে বলেছে, " রাজাহীন রাজরানী হবার চেয়ে একক ভিখারির সেবিকা হওয়া ভালো। হারেমের গল্পগুলো নির্মম,নিষ্টুর। গল্প বললে অবশ্য ভুল হবে। এগুলো অনেকটা ই সত্য ঘটনা।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
October 31, 2022
পৃথিবীতে অটোমানদের আবির্ভাব তেরো শতকের শেষ দিকে। তার আগে তুর্কিরা ছিল একটি উদ্দাম জাতি মাত্র। মোঙ্গলদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে সেলজুক আমীর আলা আল দীন তুর্কিদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। তুর্কিদের দলপতি তখন আরতুগ্রুল গাজী। তিনি সাহায্য করতে রাজি হলেন কিন্তু শর্ত দিলেন তুর্কিদের বসবাসের জন্য জমি দিতে হবে। শর্ত মেনে নিল সেলজুকরা এবং যুদ্ধে মোঙ্গলরা বিতাড়িত হল। তুর্কিদের মাত্র চারশ পরিবার বসবাস শুরু করলো আনাতোলিয়ার সমতলে। ১২৯৯ সালে আরতুগ্রুল গাজী মারা যাওয়ার পর দলপতি হলেন তাঁরই সন্তান উসমান গাজী। উসমান গাজীর নেতৃত্বে পত্তন হলো উসমানীয় সাম্রাজ্য তথা অটোমান সাম্রাজ্যের। উসমানীয় সাম্রাজ্যের ৫৯৬ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে সিংহাসনে বসেছেন ৩৬ জন সুলতান। উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথমাংশ গৌরবের থাকলেও একসময় পড়ন্ত বিকেলের মত গৌরব হারিয়ে যেতে শুরু করে। ষোল শতকের শেষ দিকে সুলতান সুলেমানের পর ক্ষমতায় আসেন সুলতান সেলিম। শুরু হলো অধঃপতন। তাঁর পরে এলেন আরো ২৭ জন সুলতান। তাঁরাও ক্রমেই যেন আরও অনুজ্জল, আরও অপদার্থ। কোনো কোনো ঐতিহাসিক এই অবনতির কারণ হিসেবে 'হারেম'-কে দেখিয়ে দিয়েছেন।

হারেম হলো রাজ্যের মধ্যে আরেকটি রাজ্য।যেখানে রাজা-বাদশাহদের স্ত্রী-উপস্ত্রী-দাসী-বাঁদিরা থাকতেন। আর তার একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন রাজা কিংবা সুলতান। শুধুমাত্র অটোমান বাদশাহ নয়, আমাদের ভারতবর্ষের হিন্দু রাজা, মুঘল কিংবা ইউরোপের রাজাদেরও অন্দরমহলে ছিল হাজার হাজার শয্যাসঙ্গিনী। তারাও জন্ম দিয়েছেন রাজার উত্তরাধিকারী। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়ত বন্দি হয়েছেন কিংবা মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। হারেম যে শুধু সুখের ছিল তেমনটা ভাবলে ভুল হবে। হারেমে দুঃখও ছিল তবে তা ছিল মৌন। হারেমের রাজনীতি সাম্রাজ্যের ক্ষমতাবদলেও বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ধর্মপত্নীর গর্ভের সন্তান যেমন সিংহাসনে বসেছেন, তেমনি সিংহাসনে বসেছেন কোনো এক দাসীর সন্তানও।

বইটি এমনিতে তথ্যবহুল তবে বিভিন্ন জায়গায় প্রত্যক্ষদর্শীর আনুমানিক বক্তব্য নিয়েছেন লেখক। তাছাড়া বর্ননা ভঙ্���িও তেমন একটা ভালো লাগেনি।তবে রাজা-বাদশাদের অন্দরমহল নিয়ে আগ্রহ থাকলে পড়তে পারেন। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,959 followers
February 20, 2023
হারেমে এক ছাদের তলায় হাজার রূপসীর মেলা। বাইরের পৃথিবীতে জীবনের রঙিন শোভাযাত্রা, ভেতরে রাজ্যভারে ক্লিষ্ট, বহু আমোদে ক্লান্ত একটি পুরুষের অস্থির পদধ্বনি।

হারেমে সব কিছুই আছে। আবার অনেক কিছুই নেই। সুখ আছে, দুঃখ আছে৷ কিন্তু নেই স্বাধীনতা। নিঃশর্ত স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু হারেমে কেবলই শর্ত। স্বাধীনতা এখানে নিষিদ্ধ স্বপ্নের মতন।

"হারেম" বইটায় শ্রীপান্থ মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের হারেমের পরিবেশ, আচার নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার বর্ণনায় উঠে এসেছে হারেমের বিভিন্ন রূপসীদের কথা, তাদের মধ্যকার কলহ, রাজনীতি, কূটকৌশল। পর্দার আড়াল থেকে কি করে গদির বিভিন্ন বিষয় তারা নিয়ন্ত্রণ করেন তা-ও আমরা জানতে পারি৷ উঠে এসেছে খোজাদের ইতিহাস। বিখ্যাত হারেম কন্যারা কিভাবে এই জগতে পা বাড়ালো তার ইতিহাস। হারেম কিভাবে পরিচালিত হয়, সেসবের বিশদ বর্ণনাও আছে।

কিন্তু একটাই অভিযোগ, তথ্যের ভারেই কিনা, বইটা ভীষণ অগোছালো। এক অধ্যায় থেকে বা এক কাহিনীর পর কখন অন্য অধ্যায়/কাহিনীর বর্ণনা শুরু হয়ে গেল, তা ঠাওর করা মুশকিল। ধৈর্য্য ধরে পড়তে হয়৷
Profile Image for Sneha.
56 reviews96 followers
November 29, 2022
'পুরানো পৃথিবীতে আলো তখন কম ছিল সত্য, সভ্যতার চেহারাও ছিল অনুজ্জ্বল, কিন্তু সে পৃথিবীতে হারেম ছিল না। হারেমের আদি- ঐশ্বর্য, বল, আর শান্তি । এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুতর শর্ত শান্তি । যতক্ষণ না স্থির হয়ে বসতে পারছেন যোদ্ধা, ততদিন জীবনে তার ভোগের অবসর নেই। শান্তির দিন যখন এলো, প্রতিষ্ঠিত হলো আপন প্রভুত্ব, তখনই শুরু হলো মনের কোণে রকমারি বাসনার আনাগোনা। এলো প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড অট্টালিকা, এলো হাজার রূপসী। এলো হারেম। '
হারেম। সেখানে রাশি রাশি ফুল, লঘু পাখায় গুঞ্জন করে ফিরছে একটি মাত্র ভ্রমর, নরক আর স্বর্গের মধ্যে ব্যবধান মাত্র একটি দেওয়াল। এখানে কান্না, ওখানে হাসি৷ এইখানে খুদা, ওখানে আহারে অরুচি।  এখানে প্রেতিনীর মেলা, ওখানে হুরীদের খেলা। বন্দীর দীর্ঘশ্বাস দেয়ালের ওপারে পৌঁছায় না, কিন্তু বাতাসে ভেসে আসে ওপারের খিল খিল হাসি, নুপুর নিক্কন, আতর গন্ধ।
হারেম সর্গ। সত্যিই সেখানে কোন সুখই নাগালের বাইরে নয়। হারেম স্বর্গ, সুখের স্বর্গ। দেশে দুর্ভিক্ষ হতো কিন্তু হারেমে খাবারের অভাব ঘটতো না কোনদিন। কেবল খাদ্য নয়, খাদ্য আর পানীয়ের মতোই পোষাক, গয়না, ভোগ বিলাসের জন্য কোনো কিছুর ই অভাব ছিল না কখনো। কমপক্ষে ৩০ টি হামাম(স্নানঘর) ছিল একসময় তুরস্কের সুলতানের অন্দরে, হারেমের এক অভিনব আয়োজন এই হামাম। মুঘল হারেমে সুন্দরীদের অবগাহন এজন্য যমুনার টলটলে নীল জল বয়ে আনা হতো অন্দরে।
'এখানে সবকিছুই ছিল। আবার অনেক কিছুই ছিল না। সুখ ছিল। দুঃখও ছিল। আনন্দ ছিল। ছিল বেদনাও। কিন্তু ছিল না স্বাধীনতা। নিঃশর্ত স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু হারেমে কেবলই শর্ত, স্বাধীনতা এখানে স্বপ্ন হিসাবেও নিষিদ্ধ যেন।'
হারেমে কিছুই নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত নয়। নিষ্ঠুরতার নানা কাহিনী ইতিহাসের পাতায় পাতায়। হারেম যেন কান্নার আর এক নাম।
হারেমের জের টেনে অবশেষে এল খোজা
হারেমে সর্বত্র ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে রাশি রাশি মানুষ। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ মানুষ নয়। খোজা নামে এক আশ্চর্য অদ্ভুত বিকৃত অস্তিত্ব মাত্র।  
পুরুষকে বিকলাঙ্গ করে শতকের পর শতক ধরে হারেমে হারেমে  অলংকার হিসেবে ছিল এই খোজার দল।
হারেমে যদি কান্নায় ইতিবৃত্ত হয়, তবে খোজারা সেখানে তীব্র আর্তনাদ। উত্থান কাহিনী এখানে অনেক। অবিশ্বাস্য সব কাহিনী ।
হারেমে আসল দুঃখী বোধ হয় এই নকল স্বর্গের অধিপতি নিজেই। অনেক ক্ষমতা তাদের, অফুরন্ত ধন দৌলত। বিশ্ব তোলপার করে সংগ্রহ করে এনেছিলেন অমূল্য রত্ন রাজি। হারেমে কোন অলংকারই বাদ ছিল না,
আয়োজনে কোন বাসনার কথাই ভুলেন নি ওরা। কিন্তু আশ্চর্য নিয়তি! রিক্ততায় হারেম যেন তবু এক ধূ ধূ মরুভূমি। সবই ছিল। কিন্তু হায়! তারপরও বোধ হয় গলা ছেড়ে বলা যাবে না, সুখী জীবনযাপন করে গেছেন এই পৃথিবীর সুলতান বাদশা, রাজা এবং রাজচক্রবর্তীরা।

অবশেষে ১৯০৯ সালে তুরস্কের নবীন বিদ্রোহী মুস্তফা কামাল তুরস্কে হারেম নিষিদ্ধ করে দেন। বেগমদের মুক্তি দেন। এ মুক্তি একজন ভাইয়ের উদ্যোগে একজন বোনের মুক্তি নয় সকলের মুক্তি শত শত বছরের প্রাচীন ব্যথার অবসান।
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
July 7, 2021
এমন ইতিহাস জানা ছিল না রাজা বাদশাহ দের অন্তঃপুরের। জানলাম।
November 16, 2022
এই প্রথম শ্রীপ্রান্থের কোন লেখা পড়লাম,ভালো লেগেছে।হারেম,পড়ে মনের মধ্যে ততকালীন শাসকদের উপর আক্ষেপ সৃষ্টি হয়ছে।মুঘল,তুর্কী সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম আর্কষণ ছিল,হারেম।এক সুলতান বা সম্রাট তার হাজার, হাজার রক্ষিতা যারা বাস করে এই হারেমে। সুন্দরী -ললনারা বিভিন্ন দেশ থেকে এই সকল হারেমে আসতো।তুর্কী হারেমে ইতালি,রাশিয়া, মিশর, পশ্চিমের দেশ গুলো থেকে সুন্দরী মেয়ে আনা হত তাদের একমাত্র কাজ সুলতানের মনরঞ্জন করা।
বেগম এবং হারেমের মেয়েদের মধ্যে খুব একটা অমিল নেই,তারা সবাই দিন পার করে এই চিন্তায় সুলতান আজ বুঝি তার গৃহে আসবেন কিন্তু সে দিন তাদের জীবনে খুব কমই আসে!!
কী ভয়ানক এক অবস্থা!! মেয়েদের কোন মূল্য ছিল না।সুলতানের বউ হওয়ার চাইতে ভিখারির বউ হওয়া শ্রেয়,আমার মতে। কারণ ভিখারির বউ হলে সেখানে অনন্ত সে অধিকার কিংবা সুখের সন্ধান পেতে পারে!!
খোজাদের জীবন সে তো আরও ভয়াবহ। হারেমের জেনানা বা মেয়েদের দেখা শুনার জন্য নিয়োজিত থাকতো খোজার দল।এই খোজারা কোন এক সময় পুরুষ ছিল যাদের নিষ্ঠুর এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে গিয়ে খোজা করা হয়।তারা নিয়োজিত হত হারেমের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে।কিন্তু অনেক সময় তারা তাদের পুরুষত্ব ফিরে পেত বা বিকৃত উপায়ে অনেক হারেমের নারীর সঙ্গী হত। তাদের নিয়মিত হাকিমের কাছে যেতে হত।সুলতানের সন্দেহ হলে এই খোজাদের পুনরায় খোজা করা হত, এতে অনেকের মৃত্যু হত।কী ভয়াবহ এক কাহিনি!!
যারা এর মধ্যদিয়ে গেছে তারা শুধু জানেন।
তুর্কী সাম্রাজ্যের আরেক অনন্য নিদর্শন হাম্মাম খানা যেখানে এক সাথে গরম আর ঠান্ডা পানির সরবরাহ থাকতো আর সেখানে সুলতানের বেগম এবং হারেমের জেনানারা গোসল করত। যার অন্য পাশে থাকতো সুলতানের হাম্মাম খানা যেখান থেকে তিনি চাইলে নারীদের গোসলের দৃশ্য অবলোকন করতে পারতেন।
একজন সুলতান বা সম্রাট কীভাবে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করতো তা এই হাম্মাম খানা ও হারেম গুলো দেখলে বুজতে পারা যায়।
কোন খারাপ জিনিস বেশিদিন টিকে থাকে না,এই হারেমগুলো এক সময় বিলুপ্ত হয়।১৯০৯ সালে তুর্কীতে হারেম নিষিদ্ধ করা হয়।এই হারেমগুলো তে সুখ,বেদনা সব ছিল কিন্তু স্বাধীনতা ছিল না।
#বইটি পড়ে অনেক কিছু জানা যায়,ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর হারেমগুলো সম্পর্কে জানতে হলে পরতে পারেন বইটি।হারেমে কত মেয়ে বন্দিনী ছিল তার ইয়াত্তা ছিলো না।মানুষের নির্মমতা কত দূর যায়, তার সাক্ষী ছিল খোজা���া,যারা জীবিত থেকে মৃত। 😔😔
Profile Image for Nawrin M. Chhoa.
6 reviews4 followers
February 28, 2022
ইতিহাস আমাকে টানে অনেক। সেই টান থেকেই হুট করে বইটা কেনা। হারেম শব্দটাই এই কেনার মূল কারণ।

ইতিহাসনির্ভর বইটিতে ফুটে উঠেছে বর্বরতা, যৌনতা,ক্ষমতার লোভ এবং পুরুষতান্ত্রিকতা। এছাড়াও পুর��ষতান্ত্রিকতার মাঝে থেকেও ইতিহাসে নাম আসে এমন কিছু হারেমের নারীর,যারা প্রকাশ্যে বা পর্দার পেছনে থেকে ঘুরিয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাজা-বাদশাকে।

তবে,বইটি পড়ার আগে একটু নিজে থেকে টুকটাক হারেম নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে বইটা পড়া সহজ যাবে।লেখক অনেক সাম্রাজ্যের কথা সহজে তুলতে গিয়ে কিছুটা এলোমেলো বানিয়ে ফেলেছে তবে লেখকের এই পরিশ্রম কোনোভাবেই বৃথা নয়।

বইটা পড়ার জন্য আমন্ত্রণ রইলো।
Profile Image for Akash Saha.
156 reviews25 followers
March 25, 2024
❝এখানে সব কিছুই ছিল। আবার অনেক কিছুই ছিল না। সুখ ছিল। দুঃখও ছিল। আনন্দ ছিল। ছিল বেদনাও। কিন্তু ছিল না স্বাধীনতা। নিঃশর্ত স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু হারেমে কেবলই শর্ত, স্বাধীনতা এখানে স্বপ্ন হিসাবেও নিষিদ্ধ যেন। যাঁরা নানা আঁকাবাঁকা পথে বেপরোয়া সংগ্রামের মাধ্যমে কিঞ্চিৎ স্বাধীনতা হাতে পেতেন, তাঁরাও সদাশঙ্কিত। তহবিলে রেশমী রুমাল যত বাড়ে, ততই বাড়ে উদ্বেগ। ❞


মুলত তুর্কী এবং মুঘল হারেমের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরেছেন লেখক। তথ্যবহুল বই।
Profile Image for Injamamul  Haque  Joy.
100 reviews115 followers
December 21, 2023
লাস্ট কয়েক মাস বইয়ে মন বসাতে না পারা আমি সন্ধ্যা থেকে এখন— এক বসায় শেষ করে ফেললাম বইটা। বেশ ইন্টারেস্টিং বই। হারেম, হারেম এর পোস্টমর্টেম, বহির্চাকচিক্যময় হারেমের ভেতরের বেদনা-হতাশার গল্প, মনুষ্যসৃষ্ট ক্লিবদের নিয়েই বইটা। ঠগীর পর আরও একবার বলতে হচ্ছে, শ্রীপান্থ আসলেই ভয়াবহ সুন্দর গল্প বলিয়ে।
Profile Image for Susmita Sarker (বাচ্চা ভূত).
193 reviews11 followers
December 11, 2022
প্রথম এমন ইতিহাস জানলাম! আসলেই প্রাচীন কালের রাজা -বাদশাহরা এমন ছিলেন! কিছু বিশ্বাস হয় কিছু হয় না কিন্তু অনেক ইন্টারেস্টিং বইটা>3
Profile Image for Shotabdi.
819 reviews194 followers
July 21, 2020
ইতিহাসের চমকপ্রদ দিকসমূহ নিয়ে গবেষণা করে তাকে সহজবোধ্য করে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করাটা সহজ কথা নয়। আর এই কঠিন কাজটিই প্রতিনিয়ত করে চলেছেন শ্রীপান্থ। দারূন কিছু ইতিহাস বিষয়ক নন-ফিকশন তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে। 'হারেম' তার মধ্যে অন্যতম।
হারেম! কারো কাছে স্বর্গপুরী, কারো কাছে নরকের দুয়ার। কারো কাছে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু, কারো কাছে অত্যাচারের শেষ সীমানা।
বেগম, বাঁদী, খোজা, সুলতান, বিকৃত যৌনাচার, সুরা, প্রেম, রাজ্য, সিংহাসন সব সবই জড়িয়ে আছে হারেমের সাথে। যেখানে নেই কোন ধর্মের ভেদাভেদ, নেই কোন উঁচু-নীচুর বৈষম্য। সুন্দরীমাত্রই হারেমে বসবাসের যোগ্য। কাকে কখন মনে ধরলো সুলতানের,তো তার ঠাঁই হলো হারেমে।
কেউ বাঁদী থেকে হচ্ছেন বেগম, তো কেউ মারা যাচ্ছেন নিজের ভালোবাসার জন্য।
তুর্কী হারেম, মুঘল হারেম মায় হিন্দু রাজাদের ও ছিল হারেম সদৃশ্য স্থান।
অটোমান সাম্রাজ্যের হারেমই মূলত এই বইয়ের আলোচ্য বিষয়, তবে হালকা ভাবে ছোঁওয়া হয়েছে সবই। সুন্দর, তথ্যসমৃদ্ধ ছোট্ট বই।
হামাম বা বিলাসী স্নানাগার, খোজাদের প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদিও বর্ণিত হয়েছে সাবলীলভাবে।
বইটি পড়ে বেশ জানা গেলো, সময়টাও সুন্দর কাটল।
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews137 followers
February 8, 2019
প্রচুর তথ্যের সন্নিবেশ করেছেন লেখক। হারেম সম্পর্কে অল্পের মধ্যে অনেক কিছু জানা যায়। শেষের রেফারেন্সগুলো বাড়তি পাওনা। তবে উপস্থাপনায় সামান্য খাপছাড়া ভাব আছে। তারপরেও যারা ইতিহাসের শাসকদের অন্তঃপুর সম্পর্কে জানতে চান তারা একটু হতাশ হবেন না।
Profile Image for Wazeeha.
365 reviews79 followers
November 22, 2024
বইটিতে তুর্কি ও মুঘল সাম্রাজ্যসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যের হারেমের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এতে হারেমের আচার-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন, রাজনীতি, ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতার চিত্র জীবন্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
Profile Image for Saiqat .
60 reviews1 follower
August 1, 2021
সাংঘাতিক ভয়ংকর বিকৃতকর!
Profile Image for Saumen.
256 reviews
October 4, 2023
ইতিহাস জিনিসটাও কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত। নইলে এক সুলতানের হাজার দশহাজার হারেম রমণী? পতিতাও বলা যাবে না তাদের। মানমর্যাদা কম নেই, ধন-দৌলত, বিলাসব্যাসনও চলছে। কিন্তু নারী এখানে পণ্য। তার স্বীকৃতি শুধু সে সুলতানের সম্পদ বা বাদশাহের অলংকার। তার অঙুলিহেলনে চলছে তাদের জীবন। ক্ষণে বাদীঁ, ক্ষণে রাণী। 


খোজারাই বরং নিজেদের সবচেয়ে দুর্ভাগা ভাবতে পারে। কামনা আছে, কাম্যবস্তুও আছে, হাত বাড়ানোর ক্ষমতা নেই। অথচ তাদের জীবনের অন্য কোন অর্থ দেবারও অধিকার নেই৷ তবে কিছু কিছু খোজা পুরুষত্ব ফিরে পেত নানা অস্বাভাবিক কারণে। আবার বাচ্চা হবার ভয় নেই জেনে হয়ত অনেক হারেম রমণী মিলিতও হতেন তাদের সাথে।


হারেম যেন এক আলাদা রাজ্য। শ্রেণী আছে, উচ্চনীচ আছে। সুলতান এখানে একাধিপতি। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, পুরুষের অধ:পতন, সবই চলছে। এটা খারাপ কি ভাল, সেটা একবিংশ শতকে বসে বিচার করা সহজ, কিন্তু যুগের ধর্ম, রীতিনীতি কালের সাথে পরিবর্তনশীল। তাই সেকালের আইনবিচারে সুলতানদের দোষী বলতে পারি না। 


জটিল ডাইনামিকস এই হারেমের। তবে এমন বল্গাহীন যৌনলিপ্সা কেন যেন সমর্থন করতে পারি না। যেভাবে চার বিয়েও আমি সমর্থন করি না। যতই সেটাকে বৈধতা দেবার চেষ্টা হোক না কেন। পুরুষ যে নিজের সব সুখ তার যৌনশান্তির উপরেই লিপ্ত করবে, এটা মেনে নিতে আপত্তি হয় আমার। অবশ্য আমি তো আর আমির-বাদশাহ নই!


ইতিহাস তাই ক্ষণে ক্ষণে অবাক করে। কালচক্রের নিয়ত ঘূর্ণায়মান চাকার শুধু দর্শক আমরা, চালকেরা রয়ে যান আইন বা সভ্য বুদ্ধির বাইরে।

শ্রীপান্থ ছাড়া কে পারেন এই জীবন্ত ইতিহাস লিখতে? কে পারেন ইতিহাসকে গল্প করে তুলতে! যদিও তথ্যের ভারে কিংবা গল্পের উত্তেজনায় তিনি নিজেই মাঝে মাঝে তাল হারিয়েছেন।
Profile Image for Sujan.
106 reviews42 followers
October 26, 2015
মধ্যযুগের সুলতান-বাদশাহদের যৌনবিকৃতির নিদর্শন হারেম সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেল বইখানা পড়ে। বেশ পড়াশুনা করেই শ্রীপান্থ বইখানা লিখেছেন বুঝা যায়, কিন্তু তার লেখার ধরণে পান্ডিত্য প্রদর্শন অপেক্ষা সহজতার ঔজ্বল্যই বেশি চোখে পড়ে। মাত্র একশো পৃষ্ঠার মধ্যে হারেমের নারীকূল, খোজা, এবং স্বয়ং বাদশাহদের মনস্তাত্ত্বিক গড়ন এবং আচরণ সম্পর্কে বেশ ভালো একটা ধারণা দিয়ে ফেলেছে��� তিনি। বোনাস হিশেবে পাওয়া গেল হারেম সম্পর্কিত প্রচুর চমকপ্রদ ঐতিহাসিক ঘটনা।
Profile Image for Susmita Basak.
93 reviews13 followers
December 13, 2023
ইতিহাস বরাবরই আমাকে ভীষণ টানে। যেখানেই ইতিহাসের গন্ধ পাই একদম লুফে নেওয়ার চেষ্টা করি। পাঠ্য বইতে আগে কয়েকবার 'হারেম' শব্দটির উল্ল���খ পেয়েছি। তখন শুধু জানতাম এটি নারীকেন্দ্রিক কিছু, তবে এর বেশি আর কিছুই জানতাম না। জন্মদিনে বইটি উপহার পাওয়ার পরে আর দেরি না করে পড়ে ফেলি। এবার আসি বিষয়বস্তুতে।

প্রকৃত অর্থে 'হারেম' কি? "তুর্কী সুলতানেরা তাঁদের অন্দরমহলের নাম দিয়েছিলেন হারেম। পারস্যে ওঁরা বলতেন অন্দরম। ভারতবর্ষে অন্তঃপুর। পরবর্তীকালে কেউ কেউ জেনানাও বলতেন। পারসিক 'জান' শব্দের অর্থ মহিলা। সেই থেকেই জেনানাখানা বা জেনানা।" হারেম বলতে সাধারণত বোঝায় নিষিদ্ধ এলাকা। যেখানে প্রাসাদের বেগম, বিবি, বাঁদীরা থাকতো। সুলতান - বাদশা ছাড়া অন্য কোনো সবল পুরুষের প্রবেশ সেখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র খোজারাই প্রবেশ করতে পারতো সেই নিষিদ্ধপুরীতে।

হারেমে অনেক মেয়েদের যেমন জোরপূর্বক আনা হতো, তেমনই অনেকে স্বেচ্ছায়ও চলে আসতো। আবার অনেক পিতা-মাতা অথবা স্বামীরা তাদের মেয়েদের বা স্ত্রীদের বেচে দিতো এই হারেমে। কিন্তু কেন বেচে দিতো তারা এইভাবে? কারণ হারেম ছিল সুখের স্বর্গ। দেশের অন্যত্র দুর্ভিক্ষ দেখা দিলেও হারেমে খাদ্যাভাব হতো না। সেখানে আমোদ - প্রমোদ, সর্বোপরি সুখের কোনো কমতি ছিল না।

হারেমে অফুরন্ত আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থা ছিল। মোঘল আমলে হারেমের মেয়েরা দাবা খেলা, তাস-পাশা খেলার পাশাপাশি পোলো অবধি খেলতো। এমনকি হারেমে বিদ্যাচর্চাও হতো। নির্দিষ্ট রীতি মেনে ছাত্রী জীবন কাটাতে হতো প্রতিটি নবাগত মেয়েকে।

হারেমের বিশাল রসুইখানা ছিল। সেখানে সু-অভিজ্ঞ পাচক ছিল দেড়শো জন। তার অধীনে ছিল পঞ্চাশ জন সহকারী। আবার মিঠাই কারীগরদের সহকারী ছিল আরও তিরিশ জন। আর খাবার চেখে দেখার জন্য ছিল আরও একশো জন। প্রতিদিন দুশো গাড়ি জ্বালানি লাগতো হারেমের উনুনগুলোর জন্য। তুরস্কের হারেমের দৈনিক ফর্দ ছিল বেশ আকর্ষণীয়। ফর্দে ছিল:-
কচি ভেড়া— ২০০
ভেড়া— ১০০
বাছুর— ৪
রাজহাঁস— ৪ জোড়া
মোরগ— ১০০ জোড়া
মুরগী— ১০০ জোড়া
পায়রা— ১০০ জোড়া
এছাড়াও দৈনিক খাদ্যতালিকায় থাকতো পোলাও, মিঠাই, সরবত, বরফ ইত্যাদি। মুঘল হারেমে সোনার দন্ড স্থাপিত চীনে মাটির পাত্রে খাদ্য সরবরাহ করা হতো। বাদশাহের মতো বেগমরাও খেতেন সোনার পাত্রে।

হারেমের আর এক আকর্ষণীয় দিক ছিল হামাম অর্থাৎ স্নানঘর। মুঘল আমলে রূপসীরা যে স্বচ্ছ টলটলে নীল জলে ভাসতো তা বয়ে আনা হতো যমুনার থেকে। আবার তুর্কী সাম্রাজ্যের হামাম ছিল চারিদিকে ফোয়ারা আর জলাধার দ্বারা বেষ্টিত। জলের নলগুলো সব সোনা আর রূপোয় গড়া। পাত্রগুলিও সোনো - রূপোয় খচিত। কোনো কোনো পাত্রে একই সঙ্গে ঠান্ডা ও গরম জল আসতো।

হারেমের এই উজ্জ্বল রূপটির পেছনে কিন্তু অন্ধকার রূপও ছিল। হারেমে দেখাশোনা করার জন্য প্রয়োজন হতো খোজার। খোজা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব পুরুষ। লেখকের ভাষায় এরা ছিল লোভাতুর, উদ্বিগ্ন, অক্ষম রাজা বাদশাহদের মনোবিকারের ফল মাত্র। এই খোজাদের কোথা থেকে আনা হতো, তাদের কিভাবে খোজা বানানো হতো তার বিবরণ পাওয়া যায় এই বইটিতে।

"হারেম যদি কান্নার ইতিবৃত্ত হয়, তবে খোজা ছিল তার আর্তনাদ।" খোজা করার জন্য একবার তিরিশ হাজার পুরুষকে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, যার মধ্যে বেঁচে ছিল মাত্র তিন হাজার।

হারেমে ষড়যন্ত্রও কিন্তু কিছু কম হতো না। চতুর্থ মুরাদ আর ইব্রাহিমের মা কুসুম (বইতে লেখক সকলের সুবিধার্থে 'কুসুম' নাম ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তার আসল নাম ছিল 'কিউসেম'), যে একসময় তুর্কী সাম্রাজ্যের অধীশ্বরী ছিলেন, তাকে রাজদরবারে বিবস্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল ষড়যন্ত্রের কারণেই। এই ষড়যন্ত্রের কারণেই তুর্কী হারেমে একসঙ্গে তিনশো জীবন্ত মেয়েকে জলে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। এছাড়া কেউ কেউ সুলতানের প্রিয় হয়ে উঠলে তাকে কিভাবে কৌশলে হত্যা করা হতো তার বিবরণও পাওয়া যায় এই বইটিতে।

এই বইটিতে তুর্কী সুলতান, মুঘল সম্রাটদের পাশাপাশি লখনউ অথবা অযোধ্যার নবাব, মুর্শিদাবাদের নবাব, বিজয়নগরের হিন্দু রাজাদের কথাও উঠে এসেছে।

এছাড়া বইটিতে আরও অনেক তথ্য আছে। বইটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। হারেম সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল এই বই থেকে। এককথায় সমৃদ্ধ হলাম।
Profile Image for Mohammad Kamrul Hasan.
347 reviews15 followers
March 9, 2025
📚বই নিয়ে আলোচনা

‘হারাম’ মানে হচ্ছে নিষিদ্ধ। আরবি এই শব্দ থেকে ‘হারেম’ শব্দের উৎপত্তি। অনেক অনেক আগে রাজা বাদশাদের অন্তঃপুরীর নাম ছিলো এই ‘হারেম’। এখানে রাজ্যপ্রধানের ব্যক্তিগত নারীরা থাকতো। সে এক স্বর্গময় ঠিকানা। রাজার বিনোদনের স্থান ছিলো এটি।
তখন তো আর এতো নিয়মের বালাই ছিলো না, তাই রাজারা যে যত ইচ্ছা নারীদের বগলদাবা করে রাখতেন। এর সংখ্যা শত থেকে হাজার পর্যন্ত চলে যেতো। 
হারেমে বসবাসকারী নারীদের কি ছিলো না, সুখ আর সুখ। দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে তাতে কি, হারেমে খাদ্যশস্য বোঝাই একের পর এক গাড়ি ঢুকতো। এক এক সুন্দরীর জন্য আবার কয়েকজন করে দাস দাসী ছিলো। তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্বর্ণকার, দর্জী সহ অনেক লোক ছিল। তাদের একটাই কাজ ছিলো, তা হলো এই নারীদের সুন্দর রাখা। 
এই হারেম সব সময় সুগন্ধে সুরভিত থাকে। বাগানের ফুলের গন্ধে চারিদিক মম করতে থাকে। স্বর্গ বুঝিবা এমনই হয়! এজন্য এই স্থানে কেবল রাজা ব্যাতিত অন্যের প্রবেশ নিষেধ। এবং সেটা চরম ভাবে নিষিদ্ধ।

তাহলে বলতেই হচ্ছে এই হারেম অতি চমৎকার স্থান ছিল! 
সত্যি বলতে এই বর্ণনার পুরো উল্টো চিত্র ছিল হারেম। কি নিদারুণ কষ্টের জীবন। হ্যা তারা সব কিছু পেত এটা ঠিক, কিন্তু সেসব ঐ নির্দিষ্ট স্থানেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নারীদের জোর করে তুলে এনে রাজারা নিজের ভোগবিলাসের জন্য এখানে বন্দি করে রাখতো। কিসের বিয়ে কিসের কি? প্রতিদিন যাকে ইচ্ছে হতো তার সাথে রাত কাটাতো তারা। এ যেন নারীদের অপমানের চুরান্ত। তারা নারীদের বস্তু ব্যতীত আর কিছুই মনে করতো না। চিন্তা করা যায়, এই নারীদের তারা হাট বাজার থেকে গরু ছাগলের মত করে কিনে আনতো। আবার কোনো দেশে যুদ্ধ করার পর সেই দেশের নারী পছন্দ হলেই নিয়ে চলে আসতো। 

হারেমে থাকা কোনো কোনো নারী হয়তো তার সারাজীবনে কেবল একবারই রাজার দেখা পেতেন। অথচ তাকে বাকি জীবন প্রতিদিন সাজগোজ করে নিজেকে তৈরি রাখতে হয় রাজার ভোগের জন্য। তিনি যদি কখনো ডাকেন তাকে। কিন্তু না, তা আর হয় না। রাজারা প্রতিরাতে নতুন নারীর স্বাদ পেতে চান, যেন তিনি নানা রেস্তোরাঁর কাচ্চি চেখে দেখতে চান।
রাজারা অবশ্য এসব নারীদের পত্নী, উপপত্নী, দাসী শ্রেনীতে ভাগ করে থাকতেন। ভাগ যাই করুক কাজ ঐ একটাই, ভোগ। 

তারপরও এসব বন্দি নারীদের মধ্যে থেকে কিছু কিছু মহীয়সী নারী বন্দিত্বের শৃঙ্খল ভেঙে হয়ে উঠতেন নিজেই রাজ্য প্রধান। এমন কাহিনি আমরা তুর্কির রাজা, বা অটোমান রাজ্যের সুলতান সোলেমানের কাহিনি পড়লে জানতে পারি। তার স্ত্রী ছিলেন এমন মহীয়সী এক নারী। তারপর মোগল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের কথা। বা নবাব সিরাজ উদ দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেছার কথা। 

এই হারেম পরিচালনা করা হতো খোজা নামের এক শ্রেনীর পুরুষ দিয়ে। মানব ইতিহাসের অতি ঘৃণ্য এক অধ্যায়ের নাম এই খোজা। 
পুরুষদের ইচ্ছে করে পুরুষত্বহীন তৈরি করে তাদের হারেম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হতো। একজন খোজা তৈরি করতে অন্তত ৩০টা বাচ্চা ছেলের প্রাণ নষ্ট করা হতো। খোজা মূলত বাচ্চা থাকতেই তৈরি করা হতো। বাচ্চা থাকতেই তাদের হাতুড়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে পুরুষত্ব নষ্ট করে দেয়া হতো। অমি আর বলতে পারছি না, বই পড়ে আপনারা বাকিটা ��েনে নিয়েন। বিভৎস নির্মম এই কাহিনি।

—--

লেখক ‘শ্রী পান্থ’ অতি সুন্দর করে ‘হারেম’ বইটির বর্ণনা করলেও, বইটি পড়ে আমার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। মানুষের জীবনের যেন কোনো দাম ছিল না তখন। নারী যেন মানুষ না। মানুষ কেবল পুরুষই। 
লেখক শ্রীপান্থ তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য থেকে মোগল সহ বাংলার নবাবী আমলের হারামে কথা বর্ণনা করেছেন। কতো কিছুই জানার ইচ্ছা হয়। তাই বইটি পড়েছি। আমার ম��ো পাঠক থাকলে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। 

ধন্যবাদ
বই হোক আপনার, আর আপনি বইয়ের
Profile Image for অলকানন্দা .
109 reviews5 followers
August 8, 2022
"এখানে সব কিছুই ছিল। আবার অনেক কিছুই ছিল না। সুখ ছিল। দুঃখ ও ছিল। আনন্দ ছিল। ছিল বেদনাও। কিন্তু ছিল না স্বাধীনতা। "

"হারেম" শব্দটি আরবি "হারাম" শব্দ থেকে আগত, যার আক্ষরিক অর্থ "নিষিদ্ধ"। তিন অক্ষরবিশিষ্ট ছোট্ট এই শব্দের কাঠামোগত আকৃতি যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, এর ব্যবহারিক ব্যপ্তি কিংবা গুরুত্ব ইতিহাসের পাতায় যে কতটা বিশাল ও চাঞ্চল্যকর, তাই তুলে ধরেছেন শ্রীপান্থ তার "হারেম" নামক চমৎকার এই বইটিতে।

বইটির সিংহভাগ জুড়ে তুর্কী হারেমের চমকপ্রদ বর্ণনা থাকলেও মুঘল, চৈনিক, লক্ষ্ণৌ এমনকি হিন্দু ও জৈন হারেমের পৃথক পৃথক বর্ণনা দিতেও ভোলেননি লেখক। প্রতিটি হারেমই সেই সুনির্দিষ্ট সমাজব্যবস্থা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলোকে গড়ে উঠা ইতিহাসের স্বাক্ষরস্বরূপ। রাজ্যের ভেতরকার আরেকটি রাজ্য, কিংবা পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠা একটি কৃত্রিম বিলাসবহুল স্বর্গই যেন হারেম, যেখানে কোন সুখশান্তিরই অভাব ছিলো না শুধুমাত্র স্বাধীনতার সুখ ছাড়া।

হারেম- ঐতিহাসিকদের মতে, একটি বিশেষ সামাজিক সিস্টেম বা ব্যবস্থা হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এটি সেই সিস্টেমের আলোকে গড়ে উঠা একটি প্যারাডক্স। কারো কাছে হারেম স্বর্গ, তো কারো কাছে নরক। কারো কাছে সাফল্যের চাবিকাঠি, তো কারো কাছে ব্যর্থতারই নামান্তর; কেননা লেখক নিজেই বলেছেন, সাফল্য ও ব্যর্থতা এখানে পাশাপাশি চলে। হারেমে গাঁথা প্রতিটি ইটের পাঁজরে প্রতিধ্বনিত হয় কারো নিষ্ঠুরতা মাখা অট্টহাসি, তো অপরদিকে সেই হারেমেরই প্রতিটি কোণ সাক্ষী হয়ে আছে কারো কান্নাবিজড়িত আর্তনাদ আর মৌন হাহাকারের।

হারেমের অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাসের সাথে কি না জড়িয়ে আছে! প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, ক্ষমতার লোভ, বিকৃত রুচির চরিতার্থকরণ, মানবতার অবক্ষয়, প্রতিশোধস্পৃহা, বিদ্রোহ-- ইত্যাদি ইত্যাদি! এ সবই হয়ত তৎকালীন ক্ষমতাশালীদের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির দোলাচলে দুলতে থাকা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কিংবা তাদের নিছক খেয়ালীপনারই ফল!

শ্রীপান্থ শুধু হারেমের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশটুকুই তুলে ধরেননি, তুলে ধরেছেন রাজরাজড়াদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নারীদের ক্ষমতায়ণ, খোজাদের মনস্তত্ত্ব , হারেমের হামামের বিবরণ সহ ক্ষমতার উত্থান পতনের অবিমিশ্র এক অধ্যায়ও। এখানে যেমন রয়েছে সাধারণ বাঁদী থেকে "সুলতানা ভালিদ" হবার নজীর, তেমনি রয়েছে শুদ্ধতম ভালবাসার স্বীকৃতি না পাবার করুণ ইতিহাসও, যা বয়ান করে হারেমের গহ্বরে অনেক তাজা প্রাণের সাথে সাথে চাপা পড়ে যাওয়া অনেক স্বচ্ছ অনুভূতি আর উপলব্ধিরও।

সবশেষে এটুকুই বলতে পারি, ইতিহাসের পাতা থেকে ঘুরে আসার জন্য হারেম এক "রোমাঞ্চকর এবং সাবলীল" যাত্রা হতে পারে আমার মত ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকদের জন্য।

হারেম
শ্রীপান্থ
ধরনঃ নন ফিকশন, ঐতিহাসিক গ্রন্থ
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৬৭
প্রকাশনীঃ দে'জ পাবলিশিং
মোট পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ১১৪
Profile Image for Ferdous Ara.
2 reviews5 followers
March 21, 2025
হারেম - শ্রীপান্থ

"এখানে সব কিছুই ছিলো। আবার অনেক কিছুই ছিলো না। সুখ ছিলো। দুঃখও ছিলো। আনন্দ ছিলো। ছিলো বেদনাও। কিন্তু ছিলো না স্বাধীনতা। নিঃশর্ত স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও নেই৷ কিন্তু হারেমে কেবলই শর্ত, স্বাধীনতা এখানে স্বপ্ন হিসাবেও নিষিদ্ধ যেন।"

'হারেম' মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের হারেমের পরিবেশ, আচার- আচরণ নিয়ে আলোচনা৷ হারেম যেন এক রাজ্যের অন্তঃপুরে আরেক রাজ্য৷ এখানে এক ছাদের তলায় হাজারো রুপসী নারীর বসবাস। তাদের আচার, আচরণ, পোশাক- পরিচ্ছেদ,কূটকৌশল, অন্দর মহলে থেকে কিভাবে গদি নিয়ন্ত্রণ করতো সেই সব ব্যাপারে বই এ তুলে ধরা হয়েছে।
এসেছে খোজাদের ইতিহাস৷ এসেছে তাদের মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক বিষয়সমূহও।
সবমিলিয়ে হারেম কিভাবে পরিচালিত হয়, হারেমের প্রতি রাজা বাদশাহ এর দুর্বলতা, হারেম কন্যাদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। কিছুক্ষেত্রে লেখক প্রত্যক্ষদর্শীদের আনুমানিক বক্তব্য নিয়েছেন।
বইটি অনেক তথ্যবহুল। কিন্তু আমার কাছে বেশ অগোছালো লেগেছে।  এক অধ্যায় থেকে আরেক অধ্যায় এর শুরু কিভাবে হলো এটা বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। আর এই জন্য ধৈর্য নিয়ে পড়া লেগেছে৷
ইতিহাস এর প্রতি আগ্রহ থাকলে পড়তে পারেন।
হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for মুহতাসিম  ফুয়াদ.
34 reviews1 follower
November 14, 2022
এ বইটিকে নির্ভরযোগ্য কোন ইতিহাস গ্রন্থ বলব না, তবে এতে অনেক তথ্য সন্নিবেশিত যা পাঠকের জানার ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারে। লেখক মূলত অনেক বই আশ্রয় করে তথ্যগুলো প্রদান করেছেন। বইটিতে হারেম সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করেছেন যা বোঝা কঠিন নয়। লেখক মূলত তুর্কী এবং মুঘল হারেম এর দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছেন তাই লেখাগুলো একটু একপেশে মনে হতে পারে। এরপরেও লেখক সামান্য ভারতবর্ষীয় অন্তঃপূর এবং চৈনিক অন্তঃপূর সম্পর্কেও সামান্য আলোচনা করেছেন। হারেম এর মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলোও ভালোভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখায়। পাশাপাশি আলোকপাত করা হয়েছে সাম্রাজ্যের শাসকের মনস্তত্ত্বের সাথে হারেমের সম্পর্ক ।
স্বর্গ ও নরকের সম্মিলিত অবস্থাসম্পন্ন হারেমের জীবনযাপন সম্পর্কে কারও জানতে ইচ্ছে হলে বইটি সহায়ক।
Profile Image for Sumaiya.
37 reviews3 followers
June 10, 2022
হারেম
শ্রীপান্থ
দে'জ পাবলিশিং কলকাতা।
পৃষ্ঠাসংখ্যা ১১২

ঠগী ' র মাধ্যমে শ্রীপান্থের সাথে আমার পরিচয় হয় । শ্রীপান্থের লেখার ধরণ চমৎকার। আমি যখন বই কিনেছিলাম তখন আমার কোন ধারণা ছিলোনা "হারেম" কি ধরনের বই।বইটিতে অনেক তথ্য রয়েছে এতে একবিন্দু সন্দেহ নেই।

হারেম (আরবি: حريم‎‎ ḥarīm, "মহিলাদের জন্য নির্ধারিত পবিত্র স্থান যেখানে অন্য পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ।"), আভিধানিক অর্থ 'নিষিদ্ধ'। দক্ষিণ এশিয়ায় জেনানা নামে পরিচিত।
হারেম বলতে সাধারণত বোঝায় নিষিদ্ধ এলাকা। যেখানে প্রাসাদের বেগম, বিবি, বাঁদীরা থাকতো। সুলতান – বাদশা ছাড়া অন্য কোনো সবল পুরুষের প্রবেশ সেখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র খোজারাই প্রবেশ করতে পারতো সেই নিষিদ্ধপুরীতে। আমরা জানি আগেকার দিনের রাজ রাজারা অনেক বিলাসবহুল ছিল। তারা তাদের সঙ্গে রানী থাকার পরেও তারা আনন্দ বিলাসে মত্ত হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে এসে হারেমে রাখতো। অনেক‌কে হয়তো কিনে আনা হতো, অনেককে জোরপূর্বক তুলে আনা হতো, আবার অনেকে স্বেচ্ছায় হারেমের জীবন উপভোগ করার জন্য চলে আসতো। রাজ রাজারা এ সকল পত্নীদের সাথে কেমন ব্যবহার করত, তাদেরকে বসবাস করার জন্য কেমন পরিবেশ প্রদান করত, তাদের দেখভালের জন্য কারা নিযুক্ত ছিল এসব‌ই বইতে উঠে এসেছে। হারেমে যেসকল মেয়ে থাকতো তাদের অবস্থা কেমন ছিল তাও উঠে এসেছে এই বইটিতে।
হারেমে যে সকল লোক নিযুক্ত ছিল তারা ছিল খোঁজা। খোজা ব্যক্তিদের নিযুক্ত করা হতো কারণ খোঁজারা অনেক জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন এবং বিশ্বস্ত।

"এখানে সব কিছুই ছিল। আবার অনেক কিছুই ছিল না। সুখ ছিল। দুঃখ ও ছিল। আনন্দ ছিল। ছিল বেদনাও। কিন্তু ছিল না স্বাধীনতা। "
হারেমে সব ছিলো, সুখ ছিলো কিন্তু ছিলো না স্বাধীনতা। এছাড়া বইটিতে আরও অনেক তথ্য আছে। বইটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

⭐️⭐️⭐️⭐️
Profile Image for Anik Newaz.
51 reviews7 followers
January 26, 2022
ইতিহাসের মহান (!) অধিপতীদের বিকৃত যৌনলালসার শিকার হারেমের অধিবাসীদের বন্দিনী জীবনযাপন, আর হারেমকে ঘিরে যাবতীয় রাজনীতি ও নিষ্ঠুরতা এই বইতে লেখক সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছেন। তবে লেখকের ইতিহাস-বিবরণধারা এই ছোট বইটিতেও ক্ষণে-ক্ষণে একঘেয়েমি এনে দিয়েছে।
Profile Image for Mehera Binte Mizan.
53 reviews23 followers
October 15, 2021
বইটা পড়ে মনে হচ্ছিলো,মাথা,মন,শরীর সবখানে যেন হারেমের বিষ ঢুকে গেছে! আমি বই এ বেশি ঢুকি বা বইটা আমাকে হারেমের কলুষিত সময়ের সত্যিকার চিত্র ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যেটাই হোক- কৃতিত্ব লেখকের।
কিন্তু এই যে মোঘল,তুর্কি হিন্দু হ্যানত্যান সম্রাট,বাদশাহ,রাজা,সুলতানের মধ্যকরার আকস্মিক দৌড়াদৌড়ি ছিলো ভীষণ বিরক্তিকর আর কনফিউজিং!
হারেম পড়ে আসলেই এতোটা অসুস্থ বোধ করেছি সেই বাজে সময়ের কথা ভেবে।
আসলে আগে আমার এসময় গুলো অর্থাৎ সুলতান,রাজা,বাদশাহ দের সময়টার প্রতি আকর্ষণ ছিলো প্রবল!বার কয়েক ভেবেও ফেলতাম,ইশ!অই সময় জন্মালে কতো অদ্ভুত জিনিস দেখতে পেতাম! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বেচে গেছি বেশ! হারেম,খোজা সাধারণ দাসী,বাদি কিংবা সম্রাটের বেগমদের কথা ভেবে, পড়ে এতো দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম এই কয়দিনে!😑
Profile Image for Hasib  Ul Islam.
11 reviews8 followers
April 17, 2022
হারেম যুগপৎ নিষিদ্ধ ও পবিত্র এলাকা। হারেম মূলত একটা সংগ্রশালা, জাদুঘর, প্রার্থনার স্থান; হারেম মূলত একটা লাইব্রেরি — অনাঘ্রাতা ফুলেদের লাইব্রেরি। "সেখানে রাশি রাশি ফুল, লঘু পাখায় গুঞ্জন করে [ফেরে] একটিমাত্র ভ্রমর। অবশ্যই এই ভ্রমর কোন সম্রাজ্যের সুলতান বা সম্রাট। এখানে নরক ও স্বর্গের মধ্যে ব্যবধান মাত্র একটি দেওয়াল।"হারেম এক আশ্চর্য স্বর্গলোক। এখানে অফুরন্ত বিলাস, অনন্ত সুযোগ।" হারেম আবার ভয়ঙ্কর এক নরকও: হত্যা, ষড়যন্ত্র, যন্ত্রণা, শারীরিক ও মানসিক বিকৃতির পূতিগন্ধময় স্থান।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থের অনবদ্য রচনা 'হারেম '। 'ঠগী ' র মাধ্যমে শ্রীপান্থের সাথে আমার পরিচয় হলেও তাঁর 'জিপসির পায়ে পায়ে ' হয়ে 'হারেম ' এ মজে গেলাম। মূলত তুর্কী সুলতানদের হারেমের কাহিনী বলতে গিয়ে শ্রীপান্থ মোঘল হারেম থেকে শুরু করে হিন্দু, এমনকি জৈন নৃপতিদের হারেমের তুলনামূলক বয়ান তুলে এনেছেন।

হারেমে কারা থাকে? হারেমে মূলত সুলতানদের বেগম এবং সুনতানদের মনোরঞ্জনের জন্য শত থেকে শুরু করে সহস্রাধিক রূপসীরা থাকে। তারা কেউ হয়তো সুলতানকে একবার হলেও কাছে পায়, কেউ কখনো পায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এইসব ফুলেদের তুলে আনা হত। যুদ্ধে, অর্থে ক্রয় করে, অথবা গায়ের জোরেই। কেউ কেউ আবার আসতো স্বেচ্ছায়। তাদের সেবার জন্য ছিল অগণিত দাসদাসী। হারেমের আলো -অন্ধকার জগতে কেউ হতো ক্ষমতাবান, কেউ কেউ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিতো; আর অধিকাংশই হারিয়ে যেতো অজানায়।

হারেমের আরেকটা প্রায়ই অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ ছিল খোঁজারা। খোঁজাদের প্রসঙ্গ আসলেই আমার উইলবার স্থিথের 'রিভার গড ' উপন্যাসের কথক টাইটার কথা মনে পড়ে; আর জর্জ আর আর মার্টিনের 'গেইম অভ থ্রোনস ' এর লর্ড ভ্যারিস। ইতিহাসে হারেমের খোঁজাদের এইসব চরিত্রের মতো বিচিত্ররূপেই পাওয়া যায়। তাদের জীবন, যন্ত্রণা, বিকৃতি বা ঐশ্বর্যের দেখা মেলে শ্রীপান্থের লেখায়।

হারেম তৈরি হতো ঐশ্বর্য, বলে, আর শান্তিতে। সুলতানের সম্রাজ্যে শান্তি বিরাজ করলে, একটু স্থির হয়ে তিনি বসতে পারলেই শুরু হয়ে যেত হারেম বিলাস। বিভিন্ন পুস্তকে স্বর্গের যে বিবরণ পাওয়া যায়, হারেম যেন তা -ই। অনেক ক্ষে‌ত্রে স্বর্গের বিবরণও হারেমের অনন্ত সুখ-সামগ্রীর কাছে নিষ্প্রভ মনে হয়।

শ্রীপান্থের ইতিহাসের পাঠের গভীরতা বিস্ময় জাগানিয়া। হারেম নিয়ে এতো বিশদ, স্বাদু ও সুখপাঠ্য পুস্তক আগে কখনো পড়িনি। আর লেখকের গদ্যের কোন তুলনা হয় না। "হারেম" পাঠ দারুণ এক অভিজ্ঞতা: ইতিহাসের পাতায় পাতায় ভর করে সম্রাটদের অন্দরমহলে দেওয়া লোভাতুর দৃষ্টি — এই দৃষ্টিতে স্বর্গ ও নরক যুগপৎ দৃশ্যমান।
Profile Image for Nazmul Hasan .
10 reviews4 followers
August 30, 2021
ইদানীং সাধারণত নন-ফিকশন তেমন একটা পড়া হয় না। তারপরও অনেক আগ্রহ নিয়ে শ্রীপান্তের "হারেম" বইটা পড়ে ফেললাম। বইটা যদিও একশো পেইজের ছোট একটা বই, কিন্তু লেখক বাদশাহী আমলের হারেম" - সম্পর্কে বিস্তারিত ইতিহাস এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন যে লেখকের দারুন মুন্সিয়ানার প্রশংসা করতেই হয়।

চলুন এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। আলোচনার শুরুতেই আগে "হারেম" শব্দটি নিয়ে বলে নেই। আরবী শব্দ "হারাম" এর জাত শব্দই হচ্ছে হারেম। যার অর্থ নিষিদ্ধ এলাকা । ব্যবহারিক অর্থে রাজা বাদশাহদের অন্তঃপুর হিসেবে "হারেম" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। তাছাড়াও হারেম অনেক রাজা বাদশাহর কাছে অন্যান্য নামে পরিচিত ছিল। যেমন "অন্তরম" "জানানখানা" "জেনানা" " হারেমলিক" ইত্যাদি।
সাধারণত তুর্কী সুলতানরাই তাদের অন্তঃপুরকে হারেম বলতেন।

আর লেখক এই বইয়ে মূলত তুর্কী সুলতানদের হারেমের কাহিনিই বলেছেন। পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশে- মুঘল, লক্ষ্ণৌ, অযোধ্যা, বিজয়নগরের নবাব, বাদশাহ দের হারেমের সাদৃশ্যপূর্ণ কাহিনিগুলোও তুলে ধরেছেন।

হারেম যদি হয় প্রবল ঐশ্বর্য, সুখ, ক্ষমতা, বিলাসিতার নিয়ামক -কেন্দ্রবিন্দু, তহলে কান্না, নিষ্ঠোরতা, ষড়যন্ত্র, বিকৃত যৌনতা ও মৌন হাহাকারেরও প্রাত্যহিক সাক্ষী হয়ে থাকবে।
দৈনিক কামনা, বিলাসিতার নিদর্শন হিসেবে গড়া বাদশাহ দের হারেমে বাদশাহ রা আসলে ঠিক কতটুকু সুখী ছিলেন বা নিরাপদ ছিলেন?
আদোও কি ছিলেন?
একজন বাদশাহর কামনা কে চরিতার্থ করার জন্য কত শত সুন্দরী রমনী, হারেমরক্ষী- খোজা বাহিনী নিরবে অশ্রুপাত করেছে, মাতৃত্ব- পিতৃত্বের বঞ্চনায় ঠোকরে ঠোকরে হৃদয়বিদারক কাহিনি রচনা করেছে এবং খোদ একজন বাদশাহর আসনে অধিষ্ঠ হওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রে কত যে শাহজাদাদের প্রাণ দিতে হয়েছে, আবার কেউ শাহজাদা হয়ে জন্মগ্রহণ করেও বড় হয়েছে প্রাসাদের বাহিরে বেওয়ারিশ পরিচয়ে -- তাদেরই কাহিনি শ্রীপান্তের বইয়ে পুরোনো ইতিহাসকে আবার নতুন করে ভাবাবে।

অবশেষে ব্যক্তিগত মতামতে এইটুকু বলে রাখি - যদিও ইতিহাসের বই অনেকের কাছে বিরক্তিকর ঠেকে। কিন্তু আগ্রহ নিয়ে পড়লে "হারেম" বইটি প্রত্যেক পাঠকের কাছে একটা সুপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। তাছাড়া লেখকের সাবলীল গল্প বলার ঢং ও পাঠক কে শেষ পৃষ্ঠা অব্দি ধরে রাখবে।

রেটিং:৪/৫
Profile Image for Munem Shahriar Borno.
202 reviews11 followers
April 23, 2025
'হারেম' শব্দটার সাথে আগে থেকে কিছুটা পরিচিতি আছে। এখানে সেই হারেম নিয়েই বিস্তর আলোচনা। শুধু হারেম নিয়েই এতো তথ্য এখানে উপস্থিত যে, লেখককে না জানি কত গবেষণা করতে হয়েছে এর জন্য!

হারেম বলতে আগে বুঝতাম রাজা-বাদশাহদের বিলাস করার জায়গা। হারেম এর অভিবাসীদের জন্য একই সাথে স্বর্গ, একই সাথে নরক। ইতিহাসের অধিকাংশ অংশেই মসনদ যে এই মহলের নির্দেশেই নড়েছে তা আজ জানতে পারলাম এই বই থেকে। শুধু মুসলিম নয় হিন্দু রাজ-রাজারাও এইসব 'হারেম' এর প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মহান বাদশাহগণ তাদের মনের সব কুবাসনা উগলে দিতেন এই হারেম এ এসে। আজ থেকে ১০০ বছর আগেও নারীরা পুরুষের পণ্য বৈ যে আর কিছুই ছিলোনা তার প্রমাণ এইসব সুসজ্জিত-সুবিধাবিশিষ্ট হারেম গুলো।

এর আগে শ্রীপান্থ এর 'ঠগী' বইটা পড়েছিলাম। সেখানেও ঠগীদের নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছিলো। গল্পাকারে ইতিহাস বলার ধরন ভালোই লেগেছিলো। কিন্তু এই 'হারেম' এর ইতিহাস টা আলাদা, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখানে অটোম্যান আছে, মোগল আছে, সুলতান-সম্রাট-উজির অনেকেই আছে।'ঠগী' তে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষার সেরকম কোন প্রয়োজনীয়তা ছিলো না যেহেতু জবানবন্দি আকারে লেখা। কিন্তু এখানে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষার ব্যাপারটা আপনা আপনি চলে আসে। আর শ্রীপান্থ এর এই বই তে সেটার অনুপস্থিতি পীড়াদায়ক ছিলো আমার মত একজন নাদান ইতিহাস পাঠকের জন্য।

তারপরেও বলবো বইটা যথার্থ তথ্যবহুল। যাদের ইতিহাসে আগ্রহ আছে তাদের জন্য এটা অবশ্যপাঠ্য।

Profile Image for Ashraful Islam Saeem.
53 reviews2 followers
March 9, 2022
আমি যখন শ্রীপান্থের বইগুলো কিনেছিলাম তখন নূন্যতম কোন ধারণা ছিলোনা আমার, তার লেখা সম্পর্কে। এবং আমি জানতাম ও না, হারেম কি ধরনের বই।

হারেম মূলত ইতিহাস ঘরানার নন-ফিকশন বই। লেখক মোঘল সম্রাটদের সামাজ্যের রহস্যঘেরা স্থান হারেম নিয়েই জানিয়ে গিয়েছেন, অনেক অজানা তথ্য।

হারেম হলো তুর্কি ও মোঘল সাম্রাজ্যের কালো ইতিহাস। নিষিদ্ধ স্থান। গুটিকতক মানুষের চেনা এ স্থান, বাকিদের জন্য সবচেয়ে কৌতুহলী বিষয়, অজানার সম্ভার। দয়াবান বড় বড় সম্রাটদের উলঙ্গ ইতিহাস বার বার প্রশ্রয় পেয়ে গিয়েছে যেখানে।

আয়েশী জীবনের, নারী নামক নেশায় বুদ হয়ে কাটিয়েছে কতো সময়। অদ্ভুত সব ইচ্ছা আর শক্তির জোরে অবলীলায় ঘটেছে কতো অন্যায়, সৃষ্টি হয়েছে কতো ক্ষত, তার গল্পই অসাধারণভাবে বলে গেছেন শ্রীপান্থ।

শ্রীপান্থের লেখার ধরণ চমৎকার। ইতিহাসের মধ্যে তিনি যে উপন্যাসরস প্রদান করেছেন, ইতিহাসলোভী যে কারো জন্য তা মদিরা হিসেবে কাজ করবে।

অফটপিকঃ শ্রীপান্থের লেখা 'কলকাতা' পড়তে বসে দেখলাম, এখানেও সেই চমৎকার লেখার ধারের সাথে বন্ধুত্ব করেছে ইতিহাস।
Profile Image for Wadia  Tinia.
27 reviews
August 4, 2024
হারেম আরবি শব্দ নিষিদ্ধ। তুর্কি সুলতানেরা তাদের অন্দরের নাম দিয়েছিলেন হারেম। এই গল্পে প্রধানত তুর্কি সুলতানদের হারেমের কাহিনী বলা হয়েছে। হারেম নিয়ে আছে অনেক উত্থান কাহিনীও। কত বাঁদীর প্রাণ গিয়েছিল সুলতান জননীর হাতে। সাফল্য আর ব্যর্থতার কাহিনীও জুড়ে ছিল এই হারেম। বাঁদী থেকে বেগম, সাধারণ নর্তকী থেকে সুলতান - হারেমে এমন ঘটনা অজ্ঞাত নয়।
এই বইটিতে তুর্কির হারেম সম্পর্কে লিখলেও, লেখক ভারতের হারেম নিয়ে অনেক কাহিনীও যুক্ত করেছেন। এই বই নিয়ে খুব বিস্তারিত কিছু লেখার নাই, যারা অটোমান রাজ্যের হারেম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা এই বইটি পড়তে পারেন।
আমার একটা জিনিস ভালো লাগে নাই এই বইয়ের ব্যাপারে, সেটা হচ্ছে আমার কাছে বেশ অগোছালো লেখা মনে হয়েছে।আপনি মূলত তুর্কির হারেম নিয়ে পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই চলে যাবেন ভারতের কোন এক হারেমের কাহিনীতে। শ্রীপান্থের ঠগী পড়েই আমি তার এই বইটি পড়তে আগ্রহী হই তবে ঠগীর মত অত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন নি লেখক, এটা একান্তই আমার মতামত তবে বইটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখার মত। হারেমের ভেতরেও যে কত রক্তপাত, প্রতিহিংসার ঘটনাও ছিল তা এই বই থেকেই জানা সম্ভব।
Displaying 1 - 30 of 45 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.