Jump to ratings and reviews
Rate this book

ন হন্যতে : লা নুই বেঙ্গলী

Rate this book
ন হন্যতে মৈত্রেয়ী দেবী লিখিত ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। এটির জন্য লেখিকা ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। রোমানীয় দার্শনিক মিরচা এলিয়েড লিখিত তাদের সম্পর্ক ভিত্তিক উপন্যাস লা নুই বেঙ্গলীর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এই উপন্যাসে মৈত্রেয়ী দেবী নিজের বিবৃতি তুলে ধরেছেন।এটি ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেখা হয়।

১৯৩০ সালে কলকাতায় মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা, প্রফেসর সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তর কাছে পড়তে আসেন রোমানিয় মিরচা এলিয়েড। মৈত্রেয়ী দেবীর তখন ১৬ বছর বয়স। মেয়ের বুদ্ধিমত্তায় গর্বিত মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা ওনাকে সেই সময় অপেক্ষা সংস্কারমুক্ত শিক্ষার পরিবেশে বড় করেছিলেন। নিজের প্রিয় ছাত্র মিরচা এলিয়েডের সাথে মেয়েকে অধ্যয়ন করতেও উৎসাহিত করেন উনি। মৈত্রেয়ী দেবীর কথায় উনি এবং মিরচা এলিয়েড ছিলেন যেন ওনার বাবার যাদুঘরের দুই প্রিয় নমুনা। এরই মধ্যে মিরচা এবং মৈত্রেয়ী একে অন্যের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
--------------------

গল্পের পটভূমি এক কলকাতা যখন বিনয় বাদল দীনেশের আন্দোলন চারিদিকে উত্তান সামাজিক নানা রকম স্বাধীনতার এবং তখন ইন্ডিয়ান ওমেন কনফারেন্সে গঠিত হয়েছে এরকম অবস্থায় এক ইউরোপীয় যুবক আলেন কলকাতায় এলো একটি চাকরি মারফত, চাকরি স্থানেই গো মৈত্রী আমাদের গল্পের নায়িকা তার বাবা ঐ ছেলেটির যাবতীয় গুনে পছন্দ করে তাকে তাদের ঘরে দত্তক সন্তান হিসেবে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়, সে সাড়া দেয়। কিন্ত এসে সে সন্তান হিসেবে থাকতে পারলো না কারণ সে তার প্রেমে পড়ল । সে যে কি অকৃত্তিম ও বাঁধভাঙা প্রেম তার বর্ণনা আছে। কিন্তু সে প্রেমের সাথেই অবিশ্বাস, ঈর্শাও সমান ছিল , মৈত্রিকে আরো যারা তাকে ভালবাসতে চাই তাদের চিঠি সে পড়ে মনে মনে মৈত্রীর বিশ্বস্ততার প্রতি প্রশ্ন তুলতো। কিন্তু শেষে প্রাক্তন ভূমিকা ভোলার চেষ্টা করে এবং কিন্তু কিছুই হয় না আদৌ কিছু বলা হয় না এবং শেষে মৈত্রী বাড়ি থেকে চলে যায় এবং তাকে ফুলেলার সঙ্গে পালিয়ে গেছিল এরকম এরকম একটি কুৎসা রটে যায় এবং তাই এবং সে খুবই দুঃখ পেয়ে যায় এবং এখানে কাহিনী শেষ হয়ে যায়।

367 pages, Hardcover

Published January 1, 2022

19 people are currently reading
102 people want to read

About the author

Maitreyi Devi

14 books67 followers
Maitreyi Devi (bn: মৈত্রেয়ী দেবী) was a Bengali-born Indian poetess and novelist, the daughter of philosopher Surendranath Dasgupta and protegée of poet Rabindranath Tagore. She was the basis for the main character in Romanian-born writer Mircea Eliade's 1933 novel La Nuit Bengali (Bengal Nights). In her ন হন্যতে (It Does Not Die) novel, written as a response to Bengal Nights, Maitreyi Devi denied claims of a sexual affair between her and Eliade during the latter's sojourn in British India.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
25 (27%)
4 stars
39 (42%)
3 stars
26 (28%)
2 stars
0 (0%)
1 star
2 (2%)
Displaying 1 - 16 of 16 reviews
Profile Image for Farhana Lüba.
216 reviews16 followers
January 10, 2023
যেহেতু দু'টো বই-ই পড়লাম, তাই গড় করে রেটিং দিতে হলো। মৈত্রেয়ী দেবীর বইকে না হলে চার দিতাম, আর Mircea'র বইকে দিতাম আড়াই।
প্রথমে ন হন্যতে নিয়ে বলি। খুব ভালো লেগেছে। শেষটা মারাত্মক ছিলো। লেখার ধরণটাও বেশ সুন্দর। আর অমৃতার স্বামীকে এত ভালো লেগেছে! অবশ্য ও আমার জামাই হলে আমি ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যেতাম। কোনো জেলাসি নেই, কোনো ক্ষোভ নেই আমার প্রতি, এত ভালো মানুষের সাথে প্রেম করা যায়? আমি যে ভ্রমে ভরা! কিন্তু তারপরও তাকে ভালো লেগেছে। বুঝতে পারলাম না কেন।
লা নুই বেঙ্গলী পড়ে বেশ কিছু জায়গায় রাগ হয়েছে। মির্চা এত সেল্ফ-অবসেসড কেন? ধরেই নিয়েছে ওর সাথে অমৃতার বিয়ে দেয়ার জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে, ধরেই নিচ্ছে যে অমৃতা ওর প্রেমে পাগল...! আশ্চর্য তো! আমার এক ফ্রেন্ড আমার আরেক ফ্রেন্ডের জন্য এমন পাগলামি করছে ইদানীং–ওকে আমার যেমন সকাল-বিকাল চড় দিতে ইচ্ছে করে, মির্চাকেও তা-ই করতে ইচ্ছে হয়েছে। তার উপর তার ফিকশনাল আত্মজীবনী। আমি বুঝতে পারছি যে কবি-সাহিত্যিকরা একটু অন্যরকম, তাদের অনুভূতির তীব্রতা বেশি। তাই বলে বাবা তুমি একটা আসল মানুষের শরীরের কোন অংশ নিয়ে কী ভেবেছো, সেটা তো পুরো পৃথিবীকে বলার দরকার নেই! ছদ্মনাম ব্যবহার করলেও মানতাম! ওর আচরণে বিরক্ত হয়েছি।
দুই পক্ষেরই কথা পড়ে যা বুঝতে পারলাম, ছেলেরা সাধারণত উথাল-পাথাল প্রেম চায়, হোক তা ক্ষণস্থায়ী। আর মেয়েরা সাধারণত চায় একটা ধীর, চিরকালীন প্রেম। সাধারণত। সবাই একরকম না।
আমি নিজেকে অনেকবার এই প্রশ্নটা করেছি, বেশিরভাগ সময়ই মুরাকামির বই পড়ার সময়। আমি কী চাই? একটা তীব্র প্রেম, যেটা পূর্ণতা পাবে না, কিন্তু একেবারে ধ্বংস করে দিয়ে যাবে আমাকে? নাকি একটা সাধারণ প্রেম, যেখানে প্রতিটা দিন একইরকম, কিন্তু দিনশেষে আমার একজন সঙ্গী থাকবে?
হয়তো আর দশটা মেয়ের মত আমি সাধারণ প্রেমই চাই। যাকে বলবো, বাজার করে নিয়ে আসো। মরিচ আনতে ভুলে গেলে কেন?
কিন্তু...একটা উথাল-পাথাল প্রেম এসে যদি ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়ে যেতো আমাকে? কেমন লাগতো? সেই প্রেমটাই বা কেমন হতো?
পরখ করে দেখতে ইচ্ছে করে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
September 5, 2025
লা নুই বেঙ্গলী: ২/৫
ন হন্যতে: ৫/৫


দুটো বইই পড়লাম। কিন্তু মৈত্রেয়ী দেবী যেনো অনেক অনেক অনেকটা ছড়িয়ে গেলেন মিরচাকে। সেটা লেখার ভাষায় হোক কিংবা প্রেমের গভীরতা হোক অথবা প্রেমের মহিমায় হোক। মিরচার বর্ণনায় গল্প ছিলো, শরীর ছিলো, প্রেম ছিলো। মৈত্রেয়ীর বর্ণনা এসব কিছু ছাড়িয়ে শ্বাশ্বত কিছুর মাঝে যেনো নিয়ে গেলো আমাকে। প্রেমের অনেক বইই তো পড়লাম, কিন্তু ন হন্যতে প্রেমকে মৈত্রেয়ী দেবী যেভাবে দেখিয়েছেন অনুভব করিয়েছেন, কোনো বইতো এভাবে দেখাতে পারেনি, অনুভব করাতে পারেনি। কত সহজেই যেনো মৈত্রেয়ী দেবী তার বুকের ভেতরের সমুদ্রের ঢেউ, গর্জন আর নীবিড় প্রশান্ত শীতল পানিতে আমাকে ডুবিয়ে ভাসিয়ে জীবনের এক অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতা দিয়ে দিলেন। এক জীবনে এমন একখানা বই কজনই বা লিখতে পারে, একজীবনে এমন একখানা বই কজনই বা পড়তে পারে?
Profile Image for Prottorthy Zaman Diya.
19 reviews12 followers
January 2, 2025
এ ধরনের আত্মজীবনোপন্যাস রেইট করা কিছুটা কঠিন, তবে আলাদা ভাবে দেখতে হলে,
ন হন্যতে- ৩/৫
লা নুই বেঙ্গলী- ২/৫
সময় বিবেচনায় লা নুই বেঙ্গলী আগে লেখা। ১৯৩০ সালে কোলকাতায় রোমানিয়ান মির্চা এলিয়াদ ও ভারতীয় মৈত্রেয়ী দেবীর মাঝে ঘটে যাওয়া এক কালজয়ী ঘটনার আখ্যান নিয়ে রচিত বই দুটি।
লা নুই বেঙ্গলীতে ঘটনার গভীরতার সাথে বাংলা অনুবাদ সুবিচার করতে পারেনি বলেই আমার মনে হয়েছে। বইয়ে এলিয়াদ মৈত্রেয়ীর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন ভারতবর্ষের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে। কর্মসূত্রে মৈত্রেয়ীদের বাড়ি থাকাকালীন তাদের মাঝে ঘটে এ ঘটনা। মৈত্রেয়ীর বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় তাদের শেষ পরিণতি প্রসন্ন হয় না। ফলে মৈত্রেয়ী এবং মির্চা দুজনকেই যেতে হয় অভাবনীয় হৃদয়যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে।
লা নুই বেঙ্গলী সম্পূর্ণই এক সবেমাত্র হৃদয়-ভগ্ন তরুণ প্রেমিক মনের অপরিশোধিত অনুভূতির বহিপ্রকাশ। অপরদিকে মৈত্রেয়ীর ৪০ বছর পর লেখা ন হন্যতে-তে ফুটে উঠেছে ঘটনার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা। এত বছরের চুলচেরা বিশ্লেষনের পর মৈত্রেয়ীর দৃষ্টিভঙ্গি ও মির্চার তৎক্ষনাৎ মনের ভার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লেখা অপরিপক্ব ডায়েরি-লেখনীকে তাই কোনোভাবেই এক মানদণ্ডে বিচার করা যায় না। বরং মির্চার বইটাকে মৈত্রেয়ীর বইয়ের ব্যাকস্টোরির প্রয়োজনীয় উপজীব্য হিসেবেই মনে হয়।
ন হন্যতে পড়তে পড়তে হঠাৎ এমনটা প্রশ্ন জাগা হয়তো অস্বাভাবিক নয় যে, এই ঘটনা অপ্রাসঙ্গিক নয় কি? পাঠক যদি শুধু লা নুই বেঙ্গলীর একটি কাউন্টার উপন্যাস পড়ার আশায় ন হন্যতে হাতে নিয়ে থাকেন, তাহলে মৈত্রেয়ীর বিবাহত্তোর জীবনের ঘটনা পরিক্রমা পড়তে পড়তে ধৈর্যহারা হবেন নিশ্চয়ই। তার সাথে আরোও বিরক্তির কারণ হয়ে উঠবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি মৈত্রেয়ীর কিশোরী বয়সের উথাল পাথাল করা প্রেমানুভূতির বর্ণনা পড়তে পড়তে। যদিও বইয়ে মৈত্রেয়ী এটিকে গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবাৎসল্য হিসেবেই দেখিয়েছেন, তবুও অতিরঞ্জিত কিছু ঘটনা কিছুমাত্র হলেও মনে সন্দেহ আর ভ্রূতে কুঞ্চন সৃষ্টি করতে বাধ্য।
লা নুই বেঙ্গলীতে এলিয়াদের অনেক ঘটনার দৃষ্টিভঙ্গিকেই মৈত্রেয়ী নস্যাৎ করে দিয়েছেন নিজের বইয়ে। তবে যে ঘটনা সবচেয়ে বড় বিভাজনের উপদ্রব ঘটায় বা বলা যায় যে ঘটনা সম্পর্কে মির্চার আপাত মিথ্যা মক্তব্য মৈত্রেয়ীকে পীড়া দেয় ন হন্যতে লিখতে তা এই যে, মির্চা লা নুই বেঙ্গলীতে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায়ই তার আর মৈত্রেয়ীর মাঝে ঘটা শারীরিক সম্পর্কের বর্ণনা লিখেছেন। কিন্তু মৈত্রেয়ী তা অকপটে অস্বীকার করে যান। অথচ মির্চার বর্ণনায় তাদের এ সম্পর্কের অস্তিত্ব আমার কাছে কোনোভাবেই অবিশ্বাস করার মতো মনে হয়নি, বরং মৈত্রেয়ীর অস্বীকার করাটাকেই নিজের সম্ভ্রম বাঁচানোর প্রয়াস বলে মনে হয়েছে। নয়তো, যে ঘটনা কাউকে এত বেশি যন্ত্রণা দেয় যে তার অসারতা প্রমাণের জন্য একটা গোটা বই লিখতে উদ্যত হতে হয়, সেই ঘটনা লেখক কেন লিখেছিলেন সে সম্পর্কে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি বারও তাকে প্রশ্ন করার প্রয়োজন বোধ কেন হবে না? কে জানে, সত্যিই তাদের মাঝে কী ঘটেছিল, সেটি কোনোদিন জানা সম্ভব নয় বলেই বোধ হয় উপন্যাস দুটি কালজয়ী। কিন্তু এই একটি কারণেই বইয়ের সমাপ্তি আমার মনে দাগ কাটতে পারেনি। শেষে এসে দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের খামখেয়ালি আচরণ পুরো বইয়ের গাম্ভীর্যটাকেই যেন খর্ব করে।
বইয়ের গল্প মৈত্রেয়ী আর মির্চাকে ঘিরেই আবর্তিত হলেও বই দুটিতে আমার পছন্দের চরিত্র মৈত্রেয়ীর মা এবং মৈত্রেয়ীর স্বামী। সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থায় থেকেও আধুনিক ধ্যানধারনা পোষনকারী অনন্য চরিত্র মৈত্রেয়ীর মা, যিনি নিজের সারাটা জীবন নিজের সংসারের কল্যাণ ও অন্যের মঙ্গলের জন্য প্রাণপাত করে গেছেন। আর মৈত্রেয়ীর স্বামী, অসাধারণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ হওয়া স্বত্ত্বেও সম্পূর্ণ বৈবাহিক জীবনে মৈত্রেয়ীর দ্বারা অজান্তে ঠকেই এসেছেন!


Profile Image for Sohaana Kakoly.
2 reviews
May 23, 2023
“যদি তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে নাও হয়, আমি তোমায় তিনবার দেখতে চাই। একবার তুমি মা হবার পর, একবার যখন তুমি খুব বৃদ্ধা আর একবার তোমার মৃত্যুশয্যায়।”
সেই তেইশ বছরের যুবকের ইচ্ছে কি আদৌও পূরণ হয় নাকি কালের স্রোতে হারিয়ে যায় শত আকাঙ্ক্ষা, প্রতীক্ষা ?

রোমানিয়ার যুবক মির্চা ইউক্লিড ও ভারতের মৈত্রেয়ী দেবীর অপূর্ণ প্রেমগাঁথার উপাখ্যানই ‘ন হন্যতে’ যা ইংরেজীতে- It Does Not Die...
মৈত্রেয়ী দেবীর বাবার ছাত্র ছিলেন, মির্চা ইউক্লিড। সেই সূত্র ধরে অন্তঃপুরে ঠাঁই পায় মির্চা। সাল ১৯৩০– মির্চার বয়স তখন তেইশ, মৈত্রেয়ীর ষোলো। সেই সময় তারা সম্পর্কে জড়ায় এবং বছর গড়াতেই দৈবাৎ বিচ্ছেদ ঘটে।

বইটা পড়ার সময় আমি বারবার থেমেছি। কেননা বইটা আত্মজৈবনিক। কল্পনায় যে ভাববো মনকে সান্ত্বনা দিব সেই উপায় ও পাইনি। কান্নার বাঁধ ভেঙেছে সময়-অসময়। আমি যেন সাক্ষী হচ্ছিলাম সেই ১৯৩০ সালের তাদের জীবনের ভয়াল প্রতিদিনকার।

একই মলাটে দুটো বই। একটি ‘ন হন্যতে’, অপরটি ‘লা নুই বেঙ্গলী’। আপ্লুত হয়েছিলাম বটে এই বইদুটো লেখার উদ্দেশ্য শুনে। প্রথমে মির্চা এলিয়াদ ভগ্নহৃদয়ে লা নুই বেঙ্গলী লিখেন। লেখিকা প্রায় চল্লিশ বছর পর জানতে পারেন এবং ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে, না হলে ভালোবাসা যাবে না লেখিকা সেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেন ‘ন হন্যতে’ লিখে। কৈশোর-বৃদ্ধা বয়সেও ভালোবেসে একজনকে অন্তরে ঠাঁই দিয়ে রাখা যায় মৈত্রেয়ী দেবী সেটা অনুধাবন করিয়েছেন।

‘লা নুই বেঙ্গলী’ পড়ে মির্চার প্রতি অভিযোগ, অভিমান, রাগ এসেছিল। অতঃপর অনেক চিন্তা করে মনে হলো লেখিকা যখন ন হন্যতে লেখেন তাঁর বয়স তখন আটান্ন বছর, আর মির্চার কতোই পঁচিশের এফোঁড়ওফোঁড়। তাই বই দুটির রেটিং কমপেয়ার করা নিতান্তই কঠিন বটে।

পছন্দের কিছু লাইন-
১. কোনো কোনো শুক্লপক্ষের সন্ধ্যায় চাঁদের আলোয় আমি বনের পথে বেরিয়ে পড়তাম, হয়তো একটা টিলার ওপর উঠে দূরে কোনো অঝোরে নেমে আসা ঝর্ণার শুভ্র নির্ঝর দেখে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠতাম–“মৈত্রেয়ী মৈত্রেয়ী” যতক্ষণ না আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি– আমি আমারই শব্দের প্রতিধ্বনি পাহাড়ে পাহাড়ে ধ্বনিত হতে শুনতে পেতাম। যেন এক স্বপ্নের পথ ধরে, অবর্ণনীয় সুখ আর প্রশান্তি বুকে নিয়ে বাংলোয় ফিরে আসতাম; মনে হতো, মৈত্রেয়ী নিশ্চয়ই আমার ডাক শুনতে পেরেছে, ঐ আকাশের মধ্য দিয়ে বাতাস ও ঝর্ণার ধারায় ভেসে ভেসে আমার প্রাণের আর্তি নিশ্চয়ই তার কানে গিয়ে পৌঁছেছে৷

২. এই উনিশ’শ বাহাত্তর সালে যখন আমি আবার উনিশ’শ ত্রিশ সালে প্রবেশ করলাম, তখন আমার ঠিক সেই আঠারই সেপ্টেম্বরের অবস্থা হল! আবার আমার হাড় গুঁড়িয়ে গেল, বুকে মোচড় দিতে লাগল–কী আশ্চর্য আমি জানতামই না তেতাল্লিশ বছর ধরে আমার সত্তার একটা অংশ উনিশ’শ ত্রিশ সালেই স্থির দাঁড়িয়ে আছে।
অজঃ নিত্য শাশ্বতোহয়ং পুরনো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে’–আজ সে শরীর নেই কিন্তু সে আছে, সেই আছে, সে অমৃতা।
Profile Image for Rafkat.
4 reviews
February 11, 2023
বইয়ের নাম: লা নুই বেঙ্গলী
লেখক: মির্চা এলিয়াদ

একজন তেইশ বছর বয়সী ইউরোপিয়ান যুবকের কলকাতায় থাকাকালীন ট্র‍্যাজিক প্রেমকাহিনীর লিখা যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমনটাই হয়েছে। গল্পের সালটা উনিশ'শ তিরিশ বলে একটু অবাক লেগেছে বৈকি, মনে হচ্ছিলো লেখক এইতো সেদিনের কাহিনী বর্ণনা করছেন। গল্প বলছি কারণ সত্যের সাথে কল্পনা মিশানো হয়েছে বিস্তর। বিশেষ করে দৈহিক সম্পর্কের বর্ণনা নিয়ে তো জল কম ঘোলা হয় নাই। এই জায়গাটায় ফ্যান্টাসির আশ্রয় না নিলেই যে ভালো হতো তা নিয়ে বাঙালি পাঠকরা যে মতৈক্য- তা সবারই জানা। যেটা ভালো লেগেছে তা হচ্ছে-লেখক যা বলতে চেয়েছেন তা সোজাসাপ্টা বলে গিয়েছেন, ত্যানা প্যাচান নাই। প্রাঞ্জল অনুবাদের জন্য অনুবাদকবৃন্দও একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য।

বইয়ের নাম: ন হন্যতে
লেখক: মৈত্রেয়ী দেবী

'লা নুই বেঙ্গলী'র প্রতিউত্তর হিসাবে এই বই লিখা। সাহিত্য একাদেমি পুরস্কারজয়ী এ বইয়ে যে লেখক-লেখিকার যৌবনের প্রেমের ঘটনার সত্য নির্যাসটুকুই এসেছে- এ ব্যাপারে নি:সন্দেহ। বইয়ের শুরুটা বড্ড বেশি ম্যাড়ম্যাড়ে। ফাস্ট রিডার হওয়া সত্ত্বেও পড়তে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। একটু পরপর সংস্কৃত শ্লোক, কবিগুরুর গান-কবিতার কোটেশন লেখার ধারাবাহিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। পড়তে গিয়ে দুইবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আস্তে আস্তে যত পৃষ্ঠা আগাচ্ছিলো, আগ্রহ ততো বাড়ছিলো। এবং শেষের দিকে লেখনী একদম দুর্দান্ত। থ্রিলার পড়ার ফিল হচ্ছিলো। যদিও একদম শেষ ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দিহান।স্বামী-সন্তান-নাতি-নাতনী সমৃদ্ধ সংসারে পৌঢ় বয়সে এমন লেখা লিখতে কি পরিমান সাহস লাগে- অকল্পনীয়! এই সৎসাহসটুকুর জন্য আলাদা একটা ধন্যবাদ মৈত্রেয়ী দেবী প্রাপ্য।
Profile Image for Rejwana Haque Pial.
90 reviews13 followers
June 11, 2023
I watched the movie that was based on this book and it was not given credit it its writer, "hum dil de chuke sanam". I must say I was mesmerized by the love story of them. How in a fear-driven world,they tried to make their place. It's very contradictory picture they both portray though. In case of Maitreyi,it's more toward an emotional and spiritual love while for Eliade, it has a great sexual chemistry was shown without any hesitancy. They both did indeed meet in real life when Maitreyi was a grandmother and Eliade was also old. Wonderful story.
3 reviews
Read
May 8, 2024
মনের ভেতর অসম্ভব ঝড় তোলা, একই সাথে শান্ত করা বই!
Profile Image for Muna.
47 reviews
May 29, 2025
#বইরিভিউ
বই: লা নুই বেঙ্গলী (স্পয়লার যুক্ত)

লেখক: মির্চা এলিয়াদ

লা নুই বেঙ্গলী যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় 'বাংলার রাত'

এটা লেখকের একটা আত্মজৈবনিক উপন্যাস। লেখকের জীবনের একটা সময় চাকরিসূত্রে ইন্ডিয়াতে কাটান ।১৯২৮-৩২ সালের দিকে nuel and nuel কোম্পানির প্রতিনিধি হয়ে ২৫০ টাকা বেতনে ভারতে চাকরি করতে আসেন রোমানিয়ান মির্চা এলিয়াদ। ঘটনাক্রমে মি. সেনের বাড়িতে গেস্ট হয়ে থাকার সুযোগ হয় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় খ্রিস্টান মির্চা এলিয়াদের । (মি. সেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও তৎকালীন এলিট শ্রেণীর সদস্য এবং সংস্কৃতিমনা ছিলেন বলে জাত-কুল নিয়ে সমস্যা ছিলো না )। মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা মি.সেন এবং মিসেস সেন খুব স্নেহ করতেন মির্চা এলিয়াদকে। তাঁদের নিজেদের ছেলে সন্তান না থাকায় একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল সেন দম্পতির যে তাঁরা একটা সময় অ্যালেন(বইয়ে মির্চা এলিয়াদের চরিত্রের নাম)কে দত্তক নিবেন এবং মৈত্রেয়ী দেবীর সঙ্গে অ্যালেনের মেলামেশা ও সহোদরের মতোই নিতেন সবাই।

মির্চা এলিয়াদের ওপর দায়িত্ব পড়ে মি.সেনের বড় মেয়ে মৈত্রেয়ী দেবীকে ফারসি ভাষা শেখানোর এবং পাশাপাশি মৈত্রেয়ী দেবী তাকে শেখাবেন বাংলা ভাষা। এই ভাষা শেখানোর অবাদ মেলা মেশার মাধ্যমে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠতে বেশি সময় লাগেনি। খুব শীঘ্রই এটা টেরও পেয়ে যান বাড়ির কর্তা এবং মির্চাকে ত্যাগ করতে হয় মি.সেনের বাড়ি। এবং কখনোই মৈত্রেয়ী দেবীর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়ে একটা চিঠি লিখে দেন মি.সেন মির্চাকে।মৈত্রেয়ী দেবীর প্রেমে মির্চা এলিয়াদ এতই ব্যাকুল ছিলেন যে মৈত্রেয়ী দেবীকে ছাড়া নিজ জীবনটাকে তার অসহ্য লাগতে শুরু করে।বেশ কিছুদিন যাযাবর থাকেন আর ঠিকানা বিহীন কিছু চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন তারই এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বন্ধু হ্যারেল্ডকে ,একটা চিহ্ন স্বরুপ যে তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

বাংলা উপন্যাস জগতে বইটাকে একটা অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাস হিসেবেই ধরা হয়।যদিও শেষটায় আপনি থমকে যেতে বাধ্য হবেন।

উপন্যাসের একটা অংশে দেখা যায় মির্চা এলিয়াদ মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়ি ছাড়ার পর তাঁর বই প্রকাশিত হয় । এ���ং বইটায় মৈত্রেয়ী দেবীর শেষ কথা "আমার ভালোবাসাকে, আমার ভালোবাসাকে — মৈত্রেয়ী" এবং শেষ পাতায় লেখা ছিল 'চির বিদায় প্রিয়তম '

বইটা যে শুধুমাত্র রোমান্টিক একটা উপন্যাস তা নয় বরং এর মাধ্যমে তৎকালীন ভারতবর্ষের সামাজিক অবস্থানও বোঝা যায়। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের দোহাই দিয়ে মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবীর বিচ্ছেদ এরই উদাহরণ।

#বইরিভিউ
বই : ন হন্যতে
লেখক: মৈত্রেয়ী দেবী

'ন হন্যতে' ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। উপন্যাসে কিছু চরিত্রের নামে একটু পরিবর্তন থাকলেও মূল ঘটনাপ্রবাহ সত্য, এবং তা লেখিকার বাস্তবজীবন থেকে নেয়া।
শুধুমাত্র রোমান্টিক ক্যাটাগরির উপন্যাস বললে ভুল হবে। উপন্যাসের পটভূমি এরকম, মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা ছিলেন সুপন্ডিত, তারই রোমানিয়ান ছাত্র মির্চা এলিয়াদ।বইতে নাম মির্চা ইউক্লিড। মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িতে যার অবস্থান ছিলো অনেকটা সময়। সেই সময়েই তাদের প্রণয় ঘটে। একটা সময় তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে মির্চা এলিয়াদ ১৯৩৩ সালে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে 'লা নুই বেঙ্গলী ' উপন্যাস লিখেন। যেখানে লেখক তাঁদের সম্পর্কটাকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরেছেন ‌।

মৈত্রেয়ী দেবী এই বই সম্পর্কে অনেকবার শুনলেও কখনো পড়ার আগ্রহবোধ করেননি। কিন্তু ঘটনার প্রায় চার দশক পর, মৈত্রেয়ী দেবী 'ন হন্যতে' লিখেন।
'ন হন্যতে' নামটা গীতার একটা শ্লোক থেকে নেয়া " ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে" অর্থাৎ শরীর নশ্বর, এর শেষ থাকলেও প্রেমের বিনাশ নেই।

গভীর জীবনদর্শন ও অনুভূতি নিয়ে লেখা একটি বই হলো 'ন হন্যতে' এর মাধ্যমে লেখিকা বলতে চেয়েছেন শরীর নষ্ট হয়ে গেছে , যৌবন চলে গেছে, পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে ,দেশ-কালের সীমারেখা আমাদের আলাদা করে ফেলেছে কিন্তু এই যে প্রেম, প্রেমের উপলব্ধি এটা চিরন্তন, অবিনশ্বর।
লেখিকা বারবার বলেছেন, প্রেম হলো আলোর মতোন ।যা সকলকে উদ্দীপ্ত করে, জাগিয়ে তোলে।এটা এমন কোন বস্তু নয় যা একজন থেকে কেড়ে নিয়ে অন্যজনকে দিয়ে দেয়া যায়। লেখিকা বলেছেন ষোড়শী মৈত্রেয়ীর সাথে মির্চার ভালোবাসা যেমন সত্য ঠিক তেমনি তার স্বামী তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসাও সত্য। সেখানেও কোন খাদ নেই।

সাধারণত রোমান্টিক উপন্যাসে হয় কি ঘটনাগুলো একটা সিকোয়েন্সের মেনে সামনে এগোয় এই উপন্যাসে তা নেই। লেখিকা সময় নিয়ে খেলা করেছেন। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের মধ্যে একটা অনাবিল যাতায়াত। টাইম ট্রাভেল যাকে বলে। উপন্যাস লিখতে গিয়ে লেখিকা বারবার বলেছেন তাঁর শরীর ১৯৭২ এ থাকলেও মনটা সেই ১৯৩০ সালে ফিরে যাচ্ছে বারবার।
'ন হন্যতে' নিয়ে বলতে গেলে বলে শেষ করা যাবে না। ভেবেছিলাম স্পয়লার দিব না তাও অনেক কিছু লিখে ফেলসি।
মৈত্রেয়ী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক বড় ভক্ত। লেখিকার জীবনের বিভিন্ন সংশয়, দ্বিধা ও সংকটে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি লিখেতেন সাহায্য চাইতেন।এই উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছেন।
লেখিকা যখন বইটা লিখছেন ১৯৭২ এ দাঁড়িয়ে তখন তিনি সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত, নিজস্ব ভাবমূর্তি রয়েছে তাঁর। তারপরও তিনি তার ভালোবাসার যে অকপট স্বীকারোক্তি লিখেছেন কোনরকম রাখঢাক ছাড়া সেটা প্রশংসনীয়।

মৈত্রেয়ী দেবীর স্বামীর ভূমিকাও অত্যন্ত প্রশংসনীয়।তিনি লেখিকাকে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বইটা লেখার জন্য মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন । উপন্যাসের শেষে যে সুন্দর অনুভূতি পাবেন পাঠক সেটাও সম্ভব হয়েছে এই ভদ্রলোকের জন্য।
যদিও বিচ্ছেদের উপন্যাস তারপরও পড়ে আপনি যন্ত্রণায় কাতর হবেন না। বরং মনে হবে এরচে সুন্দর কোন বিচ্ছেদের গল্প আপনি কখনো পড়েননি। বিচ্ছেদও কি এত সুন্দর হয় কখনো।
'ন হন্যতে' এর রেশ অনেক দিন মনে রয়ে যাবে।ছোট বড় সবাই পড়তে পারেন এই উপন্যাস।

রেটিং: ৫/৫
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Tausif Farhan.
21 reviews1 follower
May 18, 2024
'লা নুই বেঙ্গলি' পড়া শেষ করলাম যখন, তখন রাতের শেষ প্রহর দরজায় দাঁড়িয়ে। ঘড়িতে দুটো বেজে বিয়াল্লিশ মিনিট৷ আর আমার ভেতরে প্রচন্ড হাহাকার। এমনিতেই এসব নিদ্রাহীন তৃতীয় বা চতুর্থ প্রহর ছোয়াঁ রাত কখনোই মনে সুখসঞ্চার করেছে বলে স্মৃতিতে নেই। এরপর পড়েছি বিচ্ছেদের গল্প। বুঝতে পারছিলাম কেন এই বইটি সেই উনিশশো তেত্রিশ সালে প্রকাশমাত্র রোমানিয়াতে এতোখানি বিখ্যাত হয়েছিল। ভারতপ্রেমে মগ্ন মির্চা এলিয়াদ, ভারতপ্রেম কিংবা ভারতীয় এক তরুনীর প্রতি প্রেম, সে যাই হোক তরুনী থেকে সংস্কৃতি কিংবা তার উল্টোটা, বইটিতে চিত্রিত এর সবকিছু। এবং তার সাথে আবেগ, মোহ, প্রেম, বিচ্ছেদ এবং অন্যান্য।


বইটি লেখার বছর পাঁচের আগে, রোমানিয়ান যুবক মির্চা এলিয়াদ ভারতে আসেন তৎকালীন বাংলার অন্যতম শিক্ষাবিদ, গবেষক অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের অধীনে দর্শনশাস্ত্রে গবেষণার উদ্দেশ্যে। মির্চার সুযোগ হয় তাঁর বাড়িতেই থাকার এবং অধ্যাপকের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার এবং তাঁর কন্যা মৈত্রেয়ী দেবীর সাথে বন্ধুত্বের। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, যে প্রেম মির্চার বাংলাকে ভালোবাসার মতোই দৃঢ় হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু ভারতীয় রক্ষণশীল পরিবারে যতোই যুক্তিবাদী দর্শনচর্চা চলুক, দিনশেষে নিজস্ব সংস্কৃতি আর সেই রক্ষণশীলতাই এখানে মূখ্য। 


মির্চা ফিরে যান রোমানিয়ায়, এবং মৈত্রেয়ীর প্রতি প্রেমের নিরুপায় প্রকাশ হিসেবে লিখেন রোমানীয় ভাষায় 'মৈত্রেয়ী' যা পরে ফরাসি ভাষায় 'লা নুই বেঙ্গলি' নামে অনূদিত হয়। যেখানে উঠে এসেছে মৈত্রেয়ীকে নিয়ে তার অনুভূতির বিস্তারিত বর্ণনা। যা শুধু মনোপ্রেম না, প্রকাশ করেছে মনের সাথে সাথে দৈহিক প্রেমেরও অনেক কথা। এবং তাদের বিচ্ছেদের করুণ বর্ণনা৷ 


মির্চার এই বই যখন রোমানিয়ায় খুব জনপ্রিয়, তখনো পর্যন্ত এর পুরোটাই অজানা ছিলো মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে। অবশেষে একদিন জানলেন মৈত্রেয়ী, তখন তিনি জীবনের মধ্যবয়সে। জানলেন বইয়ে লেখা তাদের প্রেমের বিশদ বর্ণনা, যাকে মির্চা সত্য কাহিনী হিসেবেই লিখেছে, লিখেছে তার আত্নজীবনীমূলক উপন্যাস হিসেবে। কিন্তু ইউরোপের দেশ রোমানিয়ার প্রেক্ষিতে এমন দৈহিক প্রেমের কাহিনী বেশ সহজ ও স্বাভাবিক হলেও একজন বাঙালীর জন্য তা নেতিবাচক প্রভাব ছাড়া আর কিছু বয়ে আনতে পারেনা৷ মৈত্রেয়ী দেবী উপন্যাসে লেখা সেসব শারীরিক প্রেমের মুহুর্তকে মিথ্যে বলে নাকচ করেন। 


দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর পর আবারো মৈত্রেয়ীর সুযোগ আসে মির্চার সাথে দেখা করার, শিকাগোতে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে। মির্চা এলিয়াদ তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মির্চার কথা মৈত্রেয়ী তার স্বামীকে জানিয়েছিলেন, এবং স্বামীর সমর্থন নিয়েই লোকলজ্জার ভয় এড়িয়ে তিনি দেখা করেন পুরোনো প্রেমিকের সাথে। তাকে জিজ্ঞাসা করেন কেন বইতে এইসব মিথ্যা লিখেছে মির্চা। 


শিকাগো থেকে ভারতে ফিরে এসে মৈত্রেয়ী দেবী লিখেন তাঁর নন্দিত উপন্যাস 'ন হন্যতে'। মূলত লা নুই বেঙ্গলিতে যতটুকু মিথ্যে বলেছে মির্চা, তার প্রতিবাদ হিসেবে এবং সত্যিটুকু সামনে আনতেই মৈত্রেয়ী লিখেছিলেন 'ন হন্যতে' যা ১৯৭৪ সালে প্রকাশ পায়। আবারো সেই শুরু থেকে, মির্চার ভারতে আগমন, যেখান থেকে মির্চা লিখেছেন লা নুই বেঙ্গলি ঠিক সেখান থেকেই মৈত্রেয়ী লিখেছেন ন হন্যতে। তার কিশোরী বয়সের প্রেম, যে প্রেম এক শেতাঙ্গ বিদেশীর প্রতি, তার পরিপূর্ণ বর্ণনা থেকে জীবনের শেষাংশে আবারো মির্চার সাথে শিকাগোতে দেখা হওয়া, সবকিছু নিয়ে মৈত্রেয়ী দেবী লিখেছেন উপন্যাসটি। যেটি বাংলা সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে ক্ল্যাসিক উপন্যাসের জায়গা।


 'ন হন্যতে' যার অর্থ ক্ষয় নেই বা মৃত্যু নেই। যে দিনগুলোর মৃত্যু নেই, যে স্মৃতির মৃত্যু নেই, যে প্রেমের মৃত্যু নেই৷ 'ন হন্যতে' শুধু লা নুই বেঙ্গলির প্রতিবাদই নয়, তা একইসাথে মির্চার প্রতি মৈত্রেয়ীর শ্রদ্ধা আর অমর ভালোবাসাও। 


আমি 'ন হন্যতে' পড়েছিলাম ২০২০ সালে। প্রায় চারবছর পর এসে পড়লাম 'লা নুই বেঙ্গলি'। 'লা নুই বেঙ্গলি'কে পড়তে গিয়েছিলাম মির্চার সেইসব মিথ্যে জেনেশুনেই, কিন্তু এরপরেও আত্নজীবনীর প্রসঙ্গ বাদ দিলে এই উপন্যাসটি আমাকে ছুঁয়েছে, খুব সম্ভবত যেভাবে ১৯৩৩ এর পর রোমানিয়ার মানুষদেরকেও ছুঁয়ে গিয়েছিলো।
Profile Image for Israt Sharmin.
276 reviews1 follower
November 15, 2025
ইতিহাসে এমন কিছু প্রেম আছে, যেগুলোর কোন শেষ নেই। সময়ের পরতে পরতে তাদের নিঃশব্দ প্রতিধ্বনি থেকে যায়। মৈত্রেয়ী দেবী ও রোমানিয়ান দার্শনিক মির্চা এলিয়াদের কাহিনী তেমনই এক অনন্ত প্রেমের মিথ।

কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল যখন প্রায় এক শতাব্দী আগে, ১৯২৮ সালে, ২১ বছর বয়সী শেতাঙ্গ তরুণ মির্চা এলিয়াদ কলকাতায় আসেন ভারতীয় দর্শনের গবেষণায়। তাঁর গুরু ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত দার্শনিক সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত, যার বাড়িতে থাকতেন মির্চা। ভবানীপুরের সেই গৃহেই প্রথম দেখা হয় তাঁর সঙ্গে দাসগুপ্তের কিশোরী কন্যা মৈত্রেয়ী দেবীর সাথে।

চৌদ্দ বছরের বুদ্ধিমতী, মাটির মূর্তির মতো সুন্দরী এক বাঙালি মেয়ে মৈত্রেয়ী। যে রবীন্দ্রনাথের ভক্ত, সংস্কৃত ও সাহিত্যে পারদর্শী আর ছিল বয়সের তুলনায় আশ্চর্য পরিণত।

প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর ভাষা শেখার অজুহাতে প্রতিদিনের দেখা। ধীরে ধীরে মির্চার চোখে বাংলা মানেই হয়ে উঠেছিল মৈত্রেয়ী আর মৈত্রেয়ীর কাছে প্রেম মানেই ছিল সেই বিদেশি গবেষক।

রঙ, ধর্ম, সংস্কৃতি, জাত সব বাধা উপেক্ষা করে তারা একে অপরের দিকে এগোতে থাকেন। কিন্তু সমাজের দেয়াল তো প্রেমের চেয়ে অনেক শক্ত তাই না? একদিন ছোট বোনের চোখে ধরা পড়ে তাদের সম্পর্ক, আর সেখানেই সামাপ্তি ঘটে তাদের সম্পর্কের। মির্চাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত। বিদায়ের মুহূর্তে মির্চা নত হয়ে প্রণাম করেন আর মৈত্রেয়ী? মৈত্রেয়ীর চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল এক জীবনের সমস্ত ভালোবাসারা।

এরপর দুজনের জীবনে দীর্ঘ বিচ্ছেদের সূচনা হয়। মৈত্রেয়ী ফিরে যান লেখাপড়ায়, যুক্ত হন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। পরে বিয়ে করেন বিজ্ঞানী মনমোহন সেনকে। আর মির্চা চলে যান রোমানিয়ায়, হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম দার্শনিক ও লেখক।

তবু প্রেম কি শেষ হয়?
কলকাতা ছাড়ার তিন বছর পর মির্চা তাঁর ভেতরের ঝড়কে কলমে পরিণত করেন। লেখেন উপন্যাস “La Nuit Bengali” (বাংলার রাত্রি)। সেখানে তিনি মৈত্রেয়ীর সঙ্গে তাঁর প্রেমকে ফুটিয়ে তুলেন ধরেন পশ্চিমা দৃষ্টির আলোকে শরীর, অনুভূতি আর আবেগের মিশ্রণে সাজান তাদের প্রণয়োপাখ্যান। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই রোমানিয়ায় আলোড়ন সৃস্টি হয়ে যায়। আর এদিকে মৈত্রেয়ী তখন কিছুই জানতেন না।

প্রায় ৪০ বছর পর…

সত্তরের দশকে, যখন মৈত্রেয়ী জানতে পারেন এই বইয়ে তাঁর নাম ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রকাশ্যে এসেছে, তখন যেন তাঁর জীবনে আবার ফিরে আসে কৈশোরের সেই অসমাপ্ত প্রেম।

এরপর ঘটে ইতিহাসের এক অবিশ্বাস্য অধ্যায়….
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতার আমন্ত্রণে আমেরিকা গিয়ে ৪০ বছর পর মুখোমুখি মির্জা আর মৈত্রেয়ী দুজনে। এক সময়কার উদ্যাম প্রেমিক যুগল মির্চা ও মৈত্রেয়ী এখন হয়তো পরিণত, সফল কিন্তু ভেতরে এখনও কিশোরী মৈত্রী আর তরুণ মির্চা বেঁচে আছে।
তাদের সেই দেখা শুধু পুনর্মিলনই ছিল না নিঃশব্দ ক্ষমা আর আত্মার সংযোগও ঘটে ছিল তখন।

ভারতে ফিরে মৈত্রেয়ী মির্চার বইয়ের জবাবে লেখেন ‘ন হন্যতে’, অর্থাৎ “যার মৃত্যু নেই” , নিজের ভালোবাসার সত্য উচ্চারণে। এরপর সমাজে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক কিন্তু মৈত্রেয়ী থামেননি। কারণ তিনি জানতেন প্রেম যদি সত্য হয়, তবে সে হয় ন হন্যতে।

এই উপন্যাসই পরে তাঁকে এনে দেয় সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার।

শেষ জীবনে মির্চা মৈত্রেয়ীকে একটাই কথা বলেছিলেন….

“আমি কল্পনা না লিখলে পাগল হয়ে যেতাম।”

মৈত্রেয়ী হেসে উত্তর দিয়েছিলেন

“তুমি লিখেছিলে মিথ্যে আর আমি লিখলাম সত্য।”

দুজনের মৃত্যুর পর, ১৯৯৪ সালে, ‘La Nuit Bengali’ ও ‘Na Hanyate’ একসাথে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। দুই হৃদয়ের অবশেষে এক হয়ে যাওয়া হয় বইয়ের পাতায় হলেও।
Profile Image for Anika Tasnim.
45 reviews3 followers
April 22, 2024
লা নুই বেংগলী এবং ন হন্যতে, এ বই দুটো আমার বাড়িতে আমি দেখে আসছি ছোট বেলা থেকে। ছোটবেলা মানে একেবারে ছোট্টবেলা। ছোটবেলাকার যেই সময় পর্যন্ত স্মৃতি মানুষের মনে থাকে সেই সময়ের কথা। তখন থেকেই এ দুটোকে আমি আমার বাড়িতে দেখেছি। জানতাম বড়দের বই। একটু বড়, বেশি না ক্লাস ৫ অথবা ৬ এ উঠে একবার পড়ার চেষ্টা করেছিলাম এবং কিছুই বুঝতে না পেরে উরি বাবা বলে রেখে দিয়েছিলাম এবং এ বইয়ের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে ইউটিউবে একটা ভিডিও সামনে এলো। শুনলাম হুগ গ্রান্ট আর সুপ্রিয়া পাঠক যাকে চিনতান খিচড়ি এর হানসা হিসেবে, তাদের জুটিবদ্ধ হয়ে করা একটি সিনেমা রয়েছে যেটা মির্চা এলিয়াদ এর লেখা বই এর এডাপশন। তখনই মনে পড়লো, আরে এই বইতো আমার কাছে আছে। পড়া শুরু করলাম। দুটো বই তিনদিনে।
লা নুই বেংগলী লিখেছেন রোমানিয়ান লেখক মির্চা এলিয়াদ। রোমানিয়া থেকে কলকাতায় চাকরি করতে এসে প্রেমে পড়েছিলেন মৈত্রেয়ীর।এ বইটি তার অসম্পূর্ণ প্রেমের উপাখ্যান।
এ বইয়ে লেখা কিছু বিষয় প্রকাশের প্রায় ৪০ বছর পর জানতে পারেন মৈত্রেয়ী দেবী। তার মনে ঝড় ওঠে, তিনি বুঝতে পারেন যে মির্চা আসলে তাকে তার মত করে বোঝেনি। মির্চার বইটির পাতায় আমরা পাবো এক ভাগ্যহত তরুণকে। কিন্তু মৈত্রেয়ী দেবীর লেখায় ফুটে উঠেছে পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন সংসার ও প্রাপ্তিতে পূর্ণ একজন বিদুষী মহিলার তার জীবনের ক্ষতটিকে তার নিজস্ব দৃষ্টিতে পুনঃনিরীক্ষণ। এই দুইজনের জীবনেই ছিল আমাদের এক অতিপরিচিত মানুষের ছায়া। সে হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার প্রতি মির্চা ছিলেন ঈর্ষা কাতর অন্যদিকে মৈত্রেয়ী তাকে মানতেন গুরু, একান্ত আপনজন, কখনো কখনো তার পরিবার থেকেও আপন। এ বইয়ে আমার সবচেয়ে অপছন্দের চরিত্র হলো মৈত্রেয়ীর বাবা এবং খোকা। আর একজনের কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন মৈত্রেয়ী দেবীর স্বামী, যিনি এমন অসাধারণ না হলে হয়তো লেখিকা দাবি করতে পারতেন না যে তার জীবনে পূর্ণতা পেয়েছেন তিনি
Profile Image for Al Amin.
9 reviews
March 15, 2023
বইটা আমি পড়া শুরু করি জানুয়ারির ১ তারিখে।
দীর্ঘ আড়াইমাস ইকটু ইকটু করে পড়া শেষ করি। যদিও আমার শেষ করতে ইচ্ছা করছিলো না। মনে হচ্ছে উপ্যনাস দুটির প্রতিটি ঘটনা, প্রত্যেকটি লাইন আমি আমার মনের পর্দায় প্রত্যক্ষ করেছি। "ন হন্যতে" লেখিকার প্রতিটি শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, বর্ননাভঙ্গি আমাকে প্রচন্ড মুগ্ধ করেছে।
Profile Image for Shirin Chowdhury.
2 reviews2 followers
January 9, 2024
দুইটা বই একসাথে পড়া হইছে। আমি লেখার ধরনের জন্য মৈত্রী দেবীর বইটিকে এগিয়ে রাখবো। আলাদাভাবে রেটিং করতে হলে মৈত্রেয়ী দেবীর বইটিকে তিনতারা আর মির্চা এলিয়াদের বইটাকে দুইতারা দিব। আর যা যা বলতে চেয়েছিলাম তা হয়তো পরে কোনদিন বলবো।
Profile Image for Debashis Bhattacharjee.
41 reviews2 followers
October 10, 2025
এই বইটি মূলত দুটি মানুষের ভালোবাসার উপাখ্যান।
“ন হন্যতে” এমন এক বই, যা পাঠককে প্রেম, বেদনা, আত্মসম্মান ও আধ্যাত্মিকতার অদ্ভুত সংমিশ্রণে নিয়ে যায়। এটি কোনো নিছক প্রেমকাহিনি নয়—এ এক আত্মার গল্প, যা মৃত্যুকেও অতিক্রম করে টিকে থাকে।

বই���ির মূল প্রেক্ষাপট মৈত্রেয়ী দেবীর নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, যা তাঁর আর এক বিদেশি দার্শনিক-চিন্তক মির্চার সম্পর্ক থেকে জন্ম নেয়।
তাঁদের সম্পর্ক সমাজের চোখে অসম্ভব, কিন্তু আত্মার দিক থেকে অনন্ত ও অবিনশ্বর—যেমন বইটির নামই বলে, “ন হন্যতে”, অর্থাৎ “এ ধ্বংস হয় না।”

লেখিকার ভাষা সহজ, তবু গভীর—প্রত্যেকটি বাক্য যেন মৃদু ব্যথায় ভরা কবিতা। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রেম কেবল দেহের নয়, আত্মারও হতে পারে, আর সময়, সমাজ, ধর্ম কোনো কিছুরই ক্ষমতা নেই সেটিকে নষ্ট করার।

🌸 এক বাক্যে:
“ন হন্যতে” প্রেম, ত্যাগ ও আত্মোপলব্ধির এক অনন্য সৃষ্টি—যা একবার পড়লে পাঠকের ভেতর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে।
Profile Image for Asma ul Husna.
14 reviews1 follower
February 3, 2023
কিশোরী বয়সে পড়া এই বই বেশ কিছুদিন আমাকে ঘোরের মধ্যে রেখেছিল। এখন আবার পড়তে ইচ্ছে হলেও ভয় হয় যদি সেই পাঠকের মৃত্যু হয়ে থাকে!
Profile Image for Tasmin Nisha.
163 reviews9 followers
December 4, 2023
‌একই মলাটে লা নুই বেঙ্গলী ও ন হন্যতে বই দুটি হলো আত্মজীবনীমূলক প্রেমের উপন্যাস কিংবা একজনের বিপরীতে অপরজনের পাল্টা সত্যাপন ব্যক্ত করা। বইয়ে লা নুই বেঙ্গলি পরে থাকলেও গল্পের শুরু এই বইটি দিয়ে। তাই প্রথমে লা নুই বেঙ্গলী নিয়েই আলোচনা করা যাক।


স্থান: কলকাতা ভবানীপুর, সাল ১৯২৯, চারিদিকে চলছে সাদা চামড়াদের রাজত্ব। মৈত্রেয়ীকে প্রথম অ্যালেন দেখে বইয়ের দোকানে, সেই থেকে বাঙালি মেয়েটির প্রতি কিঞ্চিত কৌতুহল বোধ করতে শুরু করে সে। ইউরোপ থেকে ভারতে ছুটে আসে অ্যালেন চাকরীর উদ্দেশ্য, ভারতের অনেক কিছুই তার আছে অজানা। অন্যদিকে মৈত্রেয়ী ছিল সম্ভ্রান্ত ভারতীয় পরিবারের মেয়ে , তার বাবা নরেন্দ্র সেন ছিলেন অ্যালেনের সহকর্মী। সে সুবাদে দ্বিতীয়বারের মতো মৈত্রেয়ীদের বাড়িতে দেখা হলো দুজনের। মৈত্রেয়ীকে নিয়ে তার আগ্রহ বেড়েই চলছিলো। এক সময়ে নরেন্দ্র সেন নিজে প্রস্তাব দেয় অ্যালেনকে তার বাড়িতে থেকে কাজ করার। দু'জনের একে অপরকে বাংলা ও ফরাসি ভাষা শেখানোর মাধ্যমে সম্পর্কটা বন্ধুত্বে রূপ নেয় তবে অ্যালেন অনুভব করতে পারে মৈত্রেয়ীর প্রতি তার কেবল আকর্ষণ ছাড়া তেমন কোনো প্রখর অনুভূতি বিরাজ করে না, মৈত্রেয়ীকে নিয়ে চরম দ্বিধায় ভোগে সে। একবার তার মনে হয় যে এই মেয়েকে সে ভালোবাসে এবং মৈত্রেয়ীকে বিয়ে করে সে সুখী হবে আবার অন্যদিকে তার অহংকার বোধ তাকে আটকায়, কেননা যত শিক্ষিত অ্যালেন হোক না কেন দিনশেষে ভারতীয়রা তার জাতির নজরে "নিগার" যাদের তারা নিচু চোখে দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যত দ্বিধায় পড়ুক না কেন সে , সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক যে বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছুতে পরিণত হচ্ছে তা দু'জনই উপলব্ধি করতে পারে। অ্যালেন ভালোবাসতে লাগলো ভারতবর্ষের লোকদের, হিন্দু ধর্ম তাকে আকৃষ্ট করছিলো কিন্তু এটা কি কেবল মৈত্রেয়ীকে ভালোবাসার পরিপ্রেক্ষিতে নাকি সে নিজেই এই ভিন্ন জাতিকে তার জীবনের একটি অংশ মনে করতে শুরু করে তা নিয়ে অ্যালেন সন্দিহান ছিল। নিজ ধর্মত্যাগ করে মৈত্রেয়ীকে বিয়ে করার জন্য সে রাজি হলেও মৈত্রেয়ীর বাবা এই সম্পর্কের চরম বিরোধিতা করে এবং চিরতরে তার বাড়ি ও জীবন থেকে অ্যালেনকে বহিষ্কার করে দেয়। মৈত্রেয়ী ও অ্যালেনের পথচলা এইটুকু পর্যন্তই ছিল যা লেখক পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ করে। লেখককে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার পর খারাপ লাগলেও একপ্রকার মিশ্র অনুভূতি কাজ করছিলো পুরো গল্পটি নিয়ে এবং একটা প্রশ্ন থেকেই যায় সে কি পারতো না মৈত্রেয়ীকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে কিংবা মৈত্রেয়ীর বাবার কাছে গিয়ে শেষ চেষ্টাটুকু করতে?


লা নুই বেঙ্গলী বই প্রকাশ‌ হওয়ার বিয়াল্লিশ বছর পর লেখককের পরিচিত একজনের মারফত লেখিকা উপন্যাসটি সম্পর্কে জানতে পারে যা লেখিকার মতে অনেকটা মিথ্যার আশ্রয়ে বাঁধা‌। বইটির আদলে লেখিকাকে পিছনে ফিরে যেতে হয়েছে , লিখেছেন অসাধারণ আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস "ন হন্যতে" যেখানে ফুটে উঠেছে তখনকার তার পরিবারের জীবনযাত্রা, রবিঠাকুরের সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ ও তার কবি হয়ে ওঠা, মির্জার অর্থাৎ লেখককের সাথে তার ভাবের ও বিরহের গাথা এবং তার বিবাহ পরবর্তী জীবন, পরিপাটি সংসার ও স্বামী সম্পর্কে নানা আখ্যান। কলকাতার কোলাহল থেকে অরণ্য- পাহাড়ে , উনিশশো বাহাত্তরে এসে উনিশশো ত্রিশ সালে বিচরণ করে লেখিকা তার জীবনকথা অত্যাধিক সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন যা তার প্রতি একরাশ মুগ্ধতা তৈরি করতে পেরেছে বলেও কম মনে হবে। চিরাচরিত টিপিক্যাল সমাজে এমন একটি বই প্রকাশ করার মতো সাহস করতে পারা থেকে বোঝা যায় মানুষ হিসেবে তিনি কতটা অসাধারণ ছিলেন।
Displaying 1 - 16 of 16 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.