Jump to ratings and reviews
Rate this book

পটমঞ্জরী

Rate this book
তখন বাংলায় মাৎস্যান্যায়ের যুগ। চতুর্দিকে ঘোর অমানিশা। এক মহিষী ও তাঁর প্রধান গুরু তিব্বতের অবক্ষয়ী বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হয়ে ভয়ংকর অনাচারে লিপ্ত। আর্তনাদ-হাহাকার-দুর্ভিক্ষ

বাংলা জুড়ে। এই ক্রান্তিকালেই বাংলার বুকে ঘটল অভূতপূর্ব গণজাগরণ। জনসাধারণ, শৈব এবং সহজিয়া বৌদ্ধ সাধকবর্গের সম্মিলিত বিদ্রোহে পট-পরিবর্তন ঘটল এই দেশের ৷ নতুন অভ্যুত্থান ঘটল, অন্ধকারে আলো ফুটল। ইতিহাসে এই প্রথম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সিংহাসনে বসলেন বপ্যট-পুত্র, পালবংশের প্রথম রাজা গোপাল। কিন্তু কীভাবে ঘটল এই জাগরণ?

‘পটমঞ্জরী’ ইতিহাস নয়, ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে রচিত সুবিশাল এক উপন্যাস, যার পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে রোমাঞ্চ, রুদ্ধশ্বাস সংগ্রাম, হিংসা, কদর্য ষড়যন্ত্র, বীরত্ব এবং সর্বোপরি প্রেম ও মহত্ত্ব।

275 pages, Hardcover

First published November 1, 2022

14 people are currently reading
141 people want to read

About the author

Avik Sarkar

32 books166 followers
অভীক সরকারের জন্ম পয়লা জুন, উনিশশো উনআশি সালে। বেড়ে ওঠা প্রাচীন শহর হাওড়ার অলিগলিতে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন, মা স্কুল শিক্ষিকা। রয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পেশায় সেলসম্যান, কর্মসূত্রে ঘুরেছেন পূর্ব-ভারতের প্রায় সব শহর ও গ্রাম। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাসা বেঁধেছেন হায়দ্রাবাদ, পাটনা, মুম্বাই ইত্যাদি বিভিন্ন শহরে। শখের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশক। লেখালেখির শুরু আন্তর্জালে ও বিভিন্ন ব্লগে। প্রকাশিত বইগুলো হল মার্কেট ভিজিট, তিতিরপাখি ও প্রিন্সেস (সহলেখক অনুষ্টুপ শেঠ), এবং ইনকুইজিশন, খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ, চক্রসম্বরের পুঁথি, ইত্যাদি। বিবাহিত। কন্যা সন্তানের পিতা। ভালোবাসেন ইলিশ, ইস্টবেঙ্গল, ইয়ারবন্ধু এবং ইতিহাস।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
21 (43%)
4 stars
16 (33%)
3 stars
8 (16%)
2 stars
3 (6%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 12 of 12 reviews
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,864 followers
January 23, 2024
মাৎস্যন্যায়-এর আভিধানিক অর্থ হল জলাশয়ে মাছদের মধ্যে দুর্বলের উপর প্রবলের আক্রমণ ও অত্যাচার। তবে বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্কের মৃত্যু এবং পালবংশের শাসন প্রতিষ্ঠার মাঝের শতাধিক বছরের সময়কাল সামগ্রিক অরাজকতার জন্য ওই বিশেষণেই চিহ্নিত হয়। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু হল সেই সময়কালের অন্তিম কিছু ক্ষণ এবং গোপালদেবের উত্থান।
এই উপন্যাসের শুরু হয় বহু-বিভক্ত বাংলার প্রধানতম শক্তির রাজনৈতিক ক্ষমতা তৎকালীন বৈধ শাসকের বংশধারার হাত থেকে অন্যত্র হস্তান্তরিত হওয়া দিয়ে। ক্রমে এই ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত রূপ ও বীভৎস পরিণাম আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় কথায়, বর্ণনায়, ইঙ্গিতে। তারই সঙ্গে চলতে থাকে এই অরাজকতা ও কুশাসনের উচ্ছেদের লক্ষ্যে পরিকল্পনা। অন্তে আসে প্রবল সংঘাত এবং গণসমর্থনে নবীনের উত্থান।
ইতিহাসাশ্রয়ী এবং যথাসম্ভব গবেষণাসঞ্জাত হলেও এটি আদতে ফ্যান্টাসি উপন্যাস— যার মূল উপজীব্য হল লামা তারানাথের দ্বারা নথিবদ্ধ কয়েকটি কিংবদন্তি। তাদেরই নিপুণভাবে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে তিব্বতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনাক্রমের সঙ্গে যুক্ত করেছেন লেখক। তাতে মিশেছে পরবর্তী কয়েক শতাব্দীর পূর্বাভাস এবং বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে প্রবল আবেগ।
এই উপন্যাসের ভালো দিক কী-কী?
প্রথমত, ফ্যান্টাসিই হোক বা ঐতিহাসিক আখ্যান, সে লেখা একমাত্র তখনই সার্থক হয় যখন তা পড়ার সময় "কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়।" এই উপন্যাস সেই নিরিখে সম্পূর্ণ সফল। লেখনীর গুণে এতে উল্লিখিত তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণি, অরণ্য, নদী, সমুদ্র, কারাগার, রাজপ্রাসাদ, মন্দির— সবকিছু চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারই সঙ্গে দৃশ্যমান হয়েছে একের পর এক চরিত্র তাদের শক্তি, দুর্বলতা, ক্ষমতা ও অক্ষমতা নিয়ে। ফলে বইটি অলংকরণ-বিহীন হলেও লেখাটি হয়েছে গভীরভাবে চিত্ররূপময়।
দ্বিতীয়ত, বাংলার ইতিহাসের এই পর্যায়টি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার নিদারুণ অভাব দেখা যায়। অথচ অরাজকতার প্রতিবিধান-রূপে স্থানীয় শাসকদের দ্বারা একজনকেই গণনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা— আক্ষরিক অর্থেই এ ছিল এক ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনা। অনেকাংশে কাল্পনিক হলেও এই উপন্যাস সেই বিশেষ কালপর্যায় নিয়ে পাঠকদের আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
তৃতীয়ত, সত্যিকারের ভালো লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পাঠকের মনে অন্তত কয়েকটি চরিত্রের সম্বন্ধে দুর্বলতার জন্ম দেওয়া— যাতে সেই চরিত্রের ভালো-মন্দের সঙ্গে পাঠকের অস্তিত্ব জড়িয়ে যায়। মনে হয়, সংসার রসাতলে গেলেও যেন সেই চরিত্রদের কোনো ক্ষতি না হয়। এই উপন্যাসকে তেমন একগুচ্ছ চরিত্রের সমাহার বলা চলে। তাদের পরিণতি দেখার জন্যই এই উপন্যাস একবার শুরু করার পর শেষ অবধি ছুটে চলতেই হয়। শুধু তাই নয়, এমন কিছু হওয়া সম্ভব নয় জেনেও মন বলে ওঠে, আবার কি এঁরা ফিরে আসতে পারেন না আমাদের কাছে— অন্তত কাল্পনিক কোনো ঘটনা নিয়েই?
চতুর্থত এবং আসল কথা, লেখাটি আনপুটডাউনেবল। থ্রিলার বস্তুটির সম্বন্ধে যৎসামান্য ধারণা আছে বলেই জানি, রয়্যাল সাইজের পৌনে তিনশো পাতার একটি উপন্যাসকে ওই বিশেষত্বে মহিমান্বিত করা কতখানি কঠিন। কিন্তু রাত তিনটে অবধি টানার ফলে একচোখ জ্বালা থাকলেও উপন্যাসটা শেষ করতে বাধ্য হয়েছিলাম; একবুক শান্তিও পেয়েছিলাম।
এই উপন্যাসের খারাপ দিক কী-কী?
১) উপন্যাসের মুখ্য অ্যান্টাগনিস্টের মোটিভ হিসেবে বাংলার সর্বনাশের কথা বারবার বলা হলেও সেটির যথাযথ কারণ স্পষ্ট হয়নি। তাঁর সঙ্গিনীর সম্বন্ধে বারবার 'হিয়ার্সে' হিসেবে নানা কথা বলা হলেও শেষ অবধি তাঁর চরিত্র তথা চেহারাটিও বড়ো কৃত্রিম লেগেছে।
২) উপন্যাসটির নানা স্থানে লেখক সংলাপ ও অন্য বর্ণনাকে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ সরসতায় সিক্ত করেছেন বলে সেই অংশগুলো পরম উপভোগ্য হয়েছে। কিন্তু লেখাটির সামগ্রিক রূপ এমনই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে তাতে ওই সরসতা অনেকাংশে বিসদৃশও ঠেকেছে।
৩) এই উপন্যাসে তিনটি পর্ব আছে। তার 'আদিপর্ব'-টি মূলত ইতিহাসাশ্রিত। 'মধ্যপর্ব'-টিকে বঙ্কিমী ভাষায় 'সমিধ সংগ্রহ' বলা চলে— যার লক্ষ্য অন্তিম সংঘাতের পটভূমি নির্মাণ। এর 'অন্তপর্ব'-টিই হল ক্লাইম্যাক্স। 'তান্ত্রিক হরর' নামক অধুনা অতি-জনপ্রিয় ঘরানায় লেখক একজন পথিকৃৎ তথা মহাজন। মধ্য ও অন্ত পর্বদুটিতে লেখক সেই বিশেষ ধারার ভূরি-ভুরি প্রয়োগ করেছেন। এতে পাঠকদের একাংশের কাছে লেখাটির গ্রহণযোগ্যতা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে। লামা তারানাথের গালগল্পের সঙ্গে উপন্যাসটি অধিকতর সঙ্গতিপূর্ণও হবে। সমস্যা হল, এ-সবের ফলে এমন চমৎকার উপন্যাসটির বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্যের কাছাকাছি হয়ে গেছে।
কিন্তু শেষ বিচারে এই উপন্যাসটি নিয়ে কী বলতে হয়?
যদি বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে কিছুমাত্র আগ্রহ থাকে, এমনকি সেই নিয়ে গল্পও যদি পড়তে চান, তাহলে এটি পড়ুন। ইতিহাসমিশ্রিত ফ্যান্টাসি হলেও এতে এমন নানা কথা আর ব্যথা আছে, এমন অনেক অশ্রু ও আগুন আছে, যারা কখনও পুরোনো হয় না। তারা ধ্রুবতারা হয়ে আমাদের পথ দেখায়, আলেয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চায়।
লেখক ভবিষ্যতে এই বিশেষ স্থান-কালের বিন্দুতে আর ফিরবেন কি না, জানি না। তবে পদ্মসম্ভব-এর মতো এক লাস্ট অ্যাকশন হিরো-কে মাত্র একবার কাছে পেলে দামিনীর মতো করে বলতেই হয়, "সাধ মিটিল না।" লেখক অন্তত আর একবার তাঁকে ফিরিয়ে আনুন— এই দাবি রইল।
অলমিতি।
Profile Image for Soumyabrata Sarkar.
238 reviews40 followers
December 29, 2022
পটমঞ্জরী । অভীক সরকার । পত্রভারতী । ২০২২র ২০৮তম বই
.
শিরোনামটি উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে রচিত রাগিণীর নাম। রাগ দীপক-এর উপপাদ্য ছয় রাগিণীর অন্যতম আবেগপূর্ণ রাগিণী। রাগ হিন্দোল বা শ্রীরাগের রাগিণী হিসেবেও এর উল্লেখ আছে। আমাদের বাংলায় এই রাগ প্রাচীন বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের দ্বারা কৃত চর্যাপদগুলির সাথে সম্পর্কিত, যা পুর্বভারতীয় ভাষায় প্রথম প্রামাণ্য সাহিত্যকীর্তি।

লুইপাদানাম্, কাহ্নুপাদানাম্, কৃষ্ণাচার্য্যপাদানাম্, বীণাপাদানাম্, কুক্কুরীপাদানাম্ ইত্যাদি সৃষ্ট পদ
১-৩৬র মধ্যে ১১টিপদ পটমঞ্জরী রাগে গীত, যা চর্যাগীতিতে বাকি রাগের থেকে বেশী ব্যাবহৃত। সহজিয়া সাধকদের দেখা উপন্যাসে পাবেন, পাবেন চর্যাও, আর পাবেন তার পেছনের কাহিনী। সন্ধান পেতে পারেন অন্ধকার এক যুগে - দীপ্ত কিছু চরিত্রের!
.
বৃহৎবঙ্গে "মাৎস্যন্যায়"-এর সময়কাল নিয়ে তেমন কোন বিশেষ উপন্যাস থাকলে আমি অবগত নই।

ভারত উপমহাদেশে মধ্যযুগবর্ণিত ইতিহাস পাঠ্যবইতে সব ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের পরেই পেয়েছি।
এর আগে শুধু একটি ১-লাইনের ঘটনাই ছিল -
খ্রিঃ-'৭০৮-১২' তে মুহম্মদ বিন কাসিম-এর সিন্ধু আক্রমণ।

এমুহূর্তে আন্তর্জালের সাহায্যে যদি ফিরে তাকাই, তাহলে -
আজকের ভৌগলিক উপমহাদেশ তখন বহুসংখ্যক রাজ্যে বিভক্ত। মগধ তখন ধুঁকছে। উত্তরে কাশ্মীর-কনৌজ ও দক্ষিণে বাদামি-মান্যক্ষেত-কাঞ্চি তখন মুখ্য রাজ্যগুলির রাজধানী।

দক্ষিণে - রাষ্ট্রকূট(দান্তিদুর্গা, কৃষ্ণ১) ও বাদামির চালুক্য রাজবংশগুলি(বিক্রমাদিত্য ২, কীর্তিবর্মণ ২,বিষ্ণুবর্ধন ৩) নিজেরা যুযুধান পক্ষ হলেও একসাথে আরবের উম্মদ গোষ্ঠীর গুজরাট-আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। আবার পল্লব(নরসিংহবর্মণ ২,পরমেশ্বরবর্মণ ২)দের বংশ গঙ্গারাজদের দ্বারা পতিত হলে সুদূর চম্পা(ভিয়েতনাম) থেকে নন্দীবর্মণ ২ কে নিয়ে আসা হয়। চোল ও পাণ্ড্যারা তখন এদের করদ রাজ্য।

উত��তরে - বর্মণ (কনৌজরাজ যশোবর্মণ)ও কর্কট(কাশ্মীর - ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়) দের বিস্তৃত সাম্রাজ্য থাকলেও - চন্দ্রবংশী মৈত্রক(রাজধানী - বল্লভী) ও গুর্জর-প্রতিহার(নাগভট্ট)-এর রাজ্যগুলিও নিজেদের ভিত্তি স্থাপনা করেছেন।

পাঠপ্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে এনাদের উল্লেখ করলাম, কারণ শুধুমাত্র এক কাশ্মীর রাজ্য ব্যাতিরেকে ভারতীয় বাকি রাজ্যের সমসাময়িক কোন উপাদান এই বঙ্গকাহিনীতে লেখক আনেন নি��
.
বাংলার এই অন্ধকারযুগের ব্যাপারে পূর্বরচিত তুলনামূলক সাহিত্য আমার হাতে খুবই কম এসেছে। স্বভাবত যেখানে ইতিহাসবীদরাই নিশ্চিত নন, সেখানে কাহিনীরচনায় তথ্যর উপর কিংবদন্তীর মোড়ক চড়বেই। এবং তা হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য, যার জন্যে হয়ত বেশিরভাগ সাহিত্যিকই এড়িয়ে গেছেন এই সময়কালের উপর নির্ভর করে কিছু বৃহৎনির্মাণে।
.
এযাবৎ পঠিত বইয়ের মধ্যে প্রথম কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করে মধুসূদন মজুমদার রচিত ও দেবসাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত 'অমর বীর কাহিনী' ও 'কাঁপালো কে সিংহাসন' - বইদুটি। ভারতবর্ষের উল্লেখ্য বহুল অজানা ও জনপ্রিয় চরিত্র নিয়ে সত্যিই এক অতুলনীয় আখ্যানমঞ্জরী এই প্রয়াস যা মাসিক শুকতারা এককালে বহুলপঠিত ও প্রশংসিত। কিশোরবয়সে - এতেই পাই গোপালবেনে থেকে গোপালদেব হয়ে ওঠার এক কাহিনী, যা নেহাতই শিশুসুলভ হলেও সম্রাট শশাঙ্কদেবের পর বঙ্গসাম্রাজ্যের প্রামাণ্য প্রথম ইট। উল্লেখ্য তাঁর উত্তরসুরীরাও স্থান পেয়েছিলেন এই সংকলনে - বিগ্রহপাল, ধর্মপাল, দেবপাল, রামপাল ইত্যাদি।
.
এছাড়া কয়েকটি ভাল প্রবন্ধ বইয়ে কিছু পাতা বা ১-২টি নিবন্ধ অবশ্যই আছে, আর আছে পাঠ্যবইয়ের ১-২ পংক্তি, লামা তারানাথের লিপিভুক্ত কিছু অলীক-প্রত্যাখ্যত তথ্য। এছাড়া বেশিরভাগ শুরু এরকম - 'গোপালদেব পালরাজ্য স্থাপনা করলেন', তারপর...... [cbse পাঠ্যক্রমে এরকমই ছিল। ]। কিছু বা 'খলিমপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যাচ্ছে...'। পরে শরদিন্দু ও সুনীলের "জয়াপীড়" এ কিছু আভাস পাওয়া যায় এই অন্ধকারযুগ নিয়ে, কিন্তু তাও যথেচ্ছ কুয়াশাবৃত।
.
এই সময়ের "হলেও হতে পারে"-কাহিনী হিসেবে - পটমঞ্জরী তাই ব্যাতিক্রম ও একমেবাদ্বিতীয়ম (স্বল্প অভিযোগ থাকা সত্বেও)। কারণ -
.
১.
উপন্যাসে এসেছেন অজস্র চরিত্র, একজন আরেকজনকে অতিক্রম করে গেলেও, কেউই এখানে গৌণ নন। সবাই নিজগুনে জ্বাজ্জল্যমান - পাঠের ধারায় তাঁদের চিন্তাধারা, লোভ, আকুতি, ক্রুরতা, হতাশা, হিংসা, প্রতিশোধস্পৃহা, আনুগত্য, অনুতাপ, বীভৎসতা, স্নেহ, দয়া, করুণা অবলোকনে লেখনির ধার স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারবেন। এর নেপথ্যে ধরা দিয়েছে অস্থির সময়ে সাধারণ ও অপাংতেয় প্রজাদের দুর্বিষহ যাপন, আপাত ধনীদের মাৎস্যন্যায়ের মুখে জীবনমরণে নিষ্পেষণ করার ও নিষ্পেষিত হওয়ার মুহুর্মুহু দিকবদল, কোথাও বা বিমুঢ়তা।

২.
নানা কিংবদন্তীতে মোড়া চরিত্ররা -
পদ্মসমভব ও মন্দর্ভা, শবরব্রজ ও মৎস্যেন্দ্রনাথের সাথে আছেন ইতিহাসে স্বল্পালোচিত - দয়িতবিষ্ণু, ব্যপটদেব, লুইপা, জয়ন্ত। অবশ্যই আছেন দেদ্দাদেবী, গোপালদেব ও কাশ্মীরনরেশ বিনয়াদিত্য জয়াপীড়।
এনারা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন ভারত তথা বিশ্বইতিহাসের। প্রায় প্রতিজনকে নিয়ে আলাদা কাহিনী বা spinoff রচনা করা যেতে পারে। বিপুল তথ্যরাশি কিংবা অপ্রতুল তিরোহিত উদ্ধৃতি থেকে এঁদের এক-একজন কে রক্তমাংসের চরিত্রে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে লেখক সক্ষম হয়েছেন।

৩.
কল্পিত রাণি ও একেশ্বর প১ওস্ম, এক্স্রকাশচন্দ্র, ও তাঁদের সন্নিবিষ্ট রাজপরিষদ এখানে কাগুজে প্রতিপক্ষ, বা বাঁধাধরা একমাত্রিক খলচরিত্র নন। এদের স্বল্প বা বর্ধিত ইতিহাসে পাওয়া যায় এদের তদক্ষনিক কার্যকারণের ইঙ্গিত। এদের মধ্যে মূল দুই চরিত্রের আপাত ইতিহাসে লেখক বুনেছেন ভারত-তিব্বত-মহাচীনের বৃহৎ ধর্ম-সমাজ-ভুগোল ও রাজনীতির এক অপূর্ব প্রেক্ষাপটে। মহাভারতের চূর্নাংশের সাথে মিশিয়েছেন সম্রাজ্ঞী য়ু-জেতিয়ানের দীর্ঘ দাপটের লড়াই। সেই সুত্রে উত্তরাবর্ত, গান্ধার, মূলস্থান ও জুড়ে গেছে কাহিনীতে। আর শুধু দক্ষিণ বা পশ্চিমভারতীয় কিছু উপাদান এলে সমগ্র ভারতবর্ষের আখ্যান-ই হয়ত বা হয়ে উঠত এ কাহিনী। কিন্তু মেদহীন এই গদ্যে সেই সংযোজন হয়ত অপ্রয়োজনীয়।

৪.
উপন্যাসের প্রথমার্ধে সপ্তশতীংঅর্গলা স্তোত্রম-এর জায়গাটি পড়তে গিয়ে goosebumps দিচ্ছিল। অবিস্মরণীয় অপার্থিব অনুভুতি এক! এছাড়া চর্যাপদের ব্যাবহার সুদৃশ্য লাগলেও সব বুঝতে পারিনি। সেই সময়ের ভাষাপ্রয়োগ এক আলাদা স্বাদ অবশ্যই এনেছে।

৫.
বইয়ের অতুলনীয় প্রচ্ছদ শিল্পী সুব্রত মাজির, ভেতরে অলঙ্করণ নেই। ২-৪টে রাখাই যেত, যেখানে মহাকব্যিক এই কাহিনীতে চিত্রায়িত করার মত ঘটনার কমতি নেই। সুবৃহৎ এই উপন্যাসের font মাঝারি, যার জন্য পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৭৫ এর মধ্যেই সীমিত। কিন্তু এই কাহিনীর বৃহৎব্যাপ্তি, নানান চরিত্র এবং অর্ধশতাব্দীর কালযাত্রকে সাহায্য করতে পরিশেষে মানচিত্র, শব্দার্থ সংকলন, চর্যাপদের কিছু পংতির অর্থ বা টীকা ও তথ্যসূত্র দেখতে পেলাম না, যা আশা করেছিলাম হয়ত থাকবে। এই বিচ্যুতিগুলি কিছুমাত্রায় হলেও এই অমুল্য সম্পদের মান কমিয়ে দিয়েছে।

এছাড়াও উল্লেখ করার মত কিছু পেয়েছি -

পৃ৫৭ - নালন্দা মহাবিহারের এক দ্বারপ্রহরীর চরিত্র দর্শিত হয়েছে, যিনি আজকের যুগের মতই সাধরন গৃহস্থ, বেতনভুক এক কর্মচারী, পাঠ্যবই বা ইতিহাস উল্লেখিত নালন্দা দ্বারপণ্ডিত নন। এনার মেধাও মধ্যমানের দেখানো হয়েছে। লেখকের অবশ্যই ইতিহাস অনুসরন করার বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়াও নালন্দা মত মহাবিহারের সাধারন রক্ষীবাহিনিও হয়ত থাকার কথা। কিন্তু এই প্রেক্ষিতে, একজন দ্বারপণ্ডিতের চরিত্র থাকলে হয়ত পার্থক্য আরো ভাল ভাবে ফুটে উঠত।
.
আপেক্ষিক ইতিহাসের ধারা মানা হয়নি এমন আরো একটি উদাহরণ ধরা যেতে পারে - গোপালদেবের যুবক বয়স। গোপালদেব সিংহাসন আরোহণকালে প্রৌঢ় ছিলেন বলে জানা যায় - কিন্ত এখানে তাঁর বয়সকাল পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকটা ৫৪বয়সি অক্ষয়কুমার-এর ২৬বর্ষীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান চরিত্রায়ণের উলটপুরাণ বলা যেতে পারে।
এসত্ত্বেও কাহিনীতে গোপালদেবের চরিত্র মানানসই এবং পরিষ্ফুট ভাবে বাঁক নিয়েছে। কাহিনীতে তাঁর আবির্ভাব থেকে মহানতায় উত্থান উত্তেজক ভাবে অনুপ্রেরণীয়-বীরসাত্মক গাঁথা!
.
এছাড়াও কালনৌচিত্য দোষ দেখলাম - রিঞ্চেন সাংপোর ক্ষেত্রে। এই মহান অনুবাদক দুই শতাব্দী পরের মানুষ। খ্রিঃ ৯৫৮এ জন্মালেও, তাঁকে খ্রিঃ ৭০০-৭৫০ এর সময়ে নিয়ে আসা হয়েছে কাহিনীর একটি গুরুত্বপুর্ণ বাঁক বদলে।
.
পৃ৩২ - "ইশারা" শব্দবন্ধ ব্যাবহৃত হয়েছে। বর্তমান বাংলা ভাষায় বহুল প্রয়োগ হলেও, তদানন্তিন তৎসম ও প্রাকৃত শব্দের মাঝে এই আরবি মূলের শব্দটি চোখে লাগল। সম্পাদকমণ্ডলি আরও উপযোগী কিছু ব্যাবহার করতে পারেন আগামী মুদ্রণে।
.
পৃ৯৪ - "কুয়ো খোঁড়ার করার" - দুটি ক্রিয়াপদ পরপর এসেছে। খুব সম্ববত টাইপো। এই খণ্ডবাক্যর অন্য অর্থ হলে, আমি তা বুঝিনি।
.
পৃ১০৭ - "চারিদিন মুখরিত"। চারিদিক হবে সম্ভবত।
আরো কিছু মুদ্রণপ্রমাদ ও রয়েছে বইটিতে।
.
.
এবাদে যা কিছু আবছা ভাবে ধরা দিল মনের মুকুরে -
.
বলভট্ট ও তাঁর মাতুলের বার্তালাপও মনে করায় সমতুল্য পঞ্চম বেদের আরেক জুটিকে।
.
শবরবজ্রের পালিতা কন্যা খুব কম পরিসরে প্রকট হয়েছেন। শিবাদল-অগ্রণী, খড়্গধারিণী, পরমমমতাময়ী এই চরিত্র হতবাক ও কাঁপন ধরালেও, বরাভয়-ও দেন। অধুনা Arya Stark-এর সাথে এর crossover হলে দারুণ মানাবে।
.
কোথাও কি আবার দেখতে পাই অষ্টমভার্‍্যাবেষ্টিত কৃষ্ণর Gender-Opposite সালংকারা রাণিকে, নাকি তিনি আরব্য রজনীর কল্পিত সম্রাট - শাহরিয়ারের আরেক সমান্তরাল রূপ? বর্তমান রাজনীতির অন্তর্নিহিত দিকনির্দেশও সূক্ষ্মভাবে সংযুক্ত করেছেন লেখক।
.
প্রকাশচন্দ্রর সাথে মৎস্যেন্দ্রনাথ বা পদ্মসম্ভবের লড়াই এতটাই চাক্ষুষভাবে বর্ণিত ছিল যে, Avengers:Infinity War এ Titan-এর Thanosবেষ্টিত যুদ্ধ বা নিদেনপক্ষে Civil Warএর Siberian Hydra Base-এর ত্রিপাক্ষিক যুদ্ধের callback দেয়।
.
উপরে উল্লিখিত যুদ্ধের সমান্তরালে অন্তর্মহলে ��রেক চরিত্রের পতনেও Hogwarts Battleএর শেষের রেশ মিশ্রিত মনে হয়েছে।
.
আবার নিজের মারণভোমরা নানান অংশে বিভক্ত করার ব্যাপারটি বাংলার রূপকথার সাথে 8-part-Horcruxকেও কোথায় যেন একাকার করে দেয়।
.
অনেক লেখা হয়ে গেল।
এখানেই ইতি টানার আগে -এই বইয়ের সাথে জুড়ে থাকা সব কুশলীদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই বঙ্গভুমীর আড়ালে থাকা কিংবদন্তীকে সর্বাঙ্গীণ শাশ্বত এক রূপ দিতে। শুভেচ্ছা নেবেন🙏
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,762 reviews357 followers
January 9, 2023
“Someone needs to tell those tales. When the battles are fought and won and lost, when the pirates find their treasures and the dragons eat their foes for breakfast with a nice cup of Lapsang souchong, someone needs to tell their bits of overlapping narrative. There's magic in that. It's in the listener, and for each and every ear it will be different, and it will affect them in ways they can never predict. From the mundane to the profound. You may tell a tale that takes up residence in someone's soul, becomes their blood and self and purpose. That tale will move them and drive them and who knows what they might do because of it, because of your words. That is your role, your gift. Your sister may be able to see the future, but you yourself can shape it, boy. Do not forget that... there are many kinds of magic, after all.” [Erin Morgenstern, 'The Night Circus']

ইতিহাসভিত্তিক যেকোনো সাহিত্য পড়তে গেলে আমার মনে একটি স্বাভাবিক প্রশ্নের উদ্রেক হয় প্রত্যেকবার।

আচ্ছা, প্রকৃত অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা থাকলেই ঐতিহাসিক বা ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাসের রচয়িতা পক্ষপাতিত্ব বা bias-এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন? অনেকে একথা মানেন না। আদতে ইতিহাস রচনা একটা বুদ্ধিগত ব্যাপার।

যা ঘটেছিল, তার ফোটোগ্রাফিক বা নিখুঁত প্রতিক্ষেপণ ঐতিহাসিক করেন না, তাকে পুনর্নির্মাণ করেন। সমস্ত তথ্য কোনদিনই আমাদের হাতে আসে না। যেটুকু তথ্য সমসাময়িক সাক্ষীরা রেখে গেছেন তাও সব সময় টিকে থাকে না। সাক্ষীদের মধ্যেও সবাই সৎ ও নিরপেক্ষ হয় না। স্মৃতি সর্বদাই প্রতারণা করে। দলিল তাই বলে, যা দলিলের স্রষ্টা তাকে দিয়ে বলাতে চায়।

অর্থাৎ সত্যকে পূর্ণরূপে দেখা সম্ভব নয়, সত্য আংশিকরূপে প্রতিভাত হয়। তারপর ঐতিহাসিক বা ঔপন্যাসিক (বিশেষতঃ আধুনিক ঔপন্যাসিক) সব তথ্য ব্যবহারও করেন না, বাছাই করে নেন সেগুলি যা তাঁর চোখে তাৎপর্যবান ।

এই বাছাই করতে গিয়ে তিনি অজ্ঞাতসারে নানাভাবে পক্ষপাতিত্বের শিকার হন। দেশ, জাতি, ধর্ম, শ্রেণী, শিক্ষার তারতম্য সব সময়ই ঔপন্যাসিক তথা ঐতিহাসিকের বিচার বিশ্লেষণকে আপেক্ষিক করে রেখেছে। বর্তমান বিজ্ঞানীও নিজেকে যথেষ্ট নিরপেক্ষ মনে করেন না।

স্রষ্টার সত্তা দৃষ্টিকে আবিল করে, বিজ্ঞানীর ব্যক্তিত্ব প্রবেশ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতির মধ্যে। বিজ্ঞানীর যদি এই অবস্থা হয়, তবে ঔপন্যাসিক কিংবা ঐতিহাসিকদের আরো বিনয়ী হওয়া উচিত, তাই না?

এই উপন্যাসে অভীক সরকার ঈশ্বরের দৃষ্টি দিয়ে, প্রেমিক-কবির দৃষ্টি দিয়ে সত্য অবলোকন করছেন।

মানবিক বিজ্ঞানের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক, ঐতিহাসিক ঘটনার তাৎপর্য, বিষয়বস্তু ও ঘটনা নির্বাচনে প্রতিফলিত ঔপন্যাসিকের পক্ষপাত, তার পশ্চাতে ক্রিয়াশীল দেশ, শিক্ষা, শ্রেণী ও স্বার্থের লীলা, ইতিহাসে নৈতিক বিচারের স্থান, ইতিহাসে কার্যকারণের সম্পর্ক ও সিদ্ধান্তের আপেক্ষিকতা অভীকের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে উদ্ভাসিত।

এই উপন্যাসে গূঢ় কোনো তত্ত্ব অভীক আলোচনা করেন নি, করেছেন বিভিন্ন শ্রেণীর ভূমিকা উদ্ঘাটন ও ফলশ্রুতির মূল্যায়নে একটি বিশেষ যুগের বিভিন্ন, বিচিত্র একমুঠো চরিত্রের অনুসন্ধান। ঔপন্যাসিকের মানববাদী দৃষ্টিভঙ্গীতে মানুষ একই সঙ্গে বন্ধ ও মুক্ত -- বর্তমানের আশা আকাঙ্খা অতীত সম্বন্ধে তার ধারণা বদলায়, তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অন্তর্নিহিত মিল রয়েছে।

এই মিলের অন্তর্নিহিত ধারাটি ফুটে উঠেছে অভীকের গল্পকথনে।

৬৫০ খ্রীষ্টাব্দে মহাসামন্ত শশাঙ্ক পরমগতি প্রাপ্ত হলে ভারতের পূর্বদিকে নেমে আসে ভয়ানক অরাজকতা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূস্বামীরা নিজেরাই নিজেদের অঞ্চলে স্বাধীন শাসনকর্তা হয়ে বসেন। তখন বাণিজ্যিক দিক থেকেও পূর্বভূমির অবস্থা খুবই সঙ্গীণ।

নাব্যতার অভাবে বিখ্যাত সব নগর বন্দর বন্ধ হওয়ার মুখে। তাছাড়া পূর্ব রোমক সাম্রাজ্য পতনের পরন সেখানে সমুদ্র বাণিজ্যের পথ প্রায় রুদ্ধ। সেই বাণিজ্যপথে মাথা তুলছে এক নবীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, ইসলাম।

ফলে শাসকেরা কর বসাতে লাগলেন ভূমির ওপর। অসহনীয় করভারে নিষ্পেষিত হতে লাগল সাধারণ কৃষক এবং দরিদ্র মানুষের দল।

সেই সময় বঙ্গদেশ শাসন করতেন খড়্গবংশের নৃপতি রাজভট। তাঁদের রাজধানী ছিল কর্মান্তবাসকে। প্রজানুরঞ্জক রাজার স্ত্রী ছিলেন তিব্বতবংশীয়া। রাজ্ঞীর ভাই, সম্রাট রাজভটের শ্যালক চারুদত্ত ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে রাজদ্রোহে শামিল হন। তাঁকে সাহায্য করতে থাকেন তিব্বতীয় রাজসভার ভারতবিরোধী সামন্তগোষ্ঠী। আর তাঁর সহায়ক হয়ে দাঁড়ান খড়্গসাম্রাজ্যের সামন্ত চন্দ্রবংশীয় এক অদ্ভুতকর্মা কূটবুদ্ধি ঐন্দ্রজালিক, প্রকাশচন্দ্র।

চারুদত্ত মাদক প্রভাবে তাঁর ভাগিনেয়, সম্রাট রাজভটের পুত্র বলভটকে সম্পূর্ণভাবে নিজের কুক্ষিগত করেন। তারপর সম্রাট রাজভটকে হত্যা করে ভাগিনেয় বলভটকে পুতুল সম্রাট বানিয়ে শাসনক্ষমতা অধিগত করেন। আর তাঁকে সহায়তা করেন প্রকাশচন্দ্র।

কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশচন্দ্র'র আসল রূপ প্রকাশ পায়। তিনি সম্রাট বলভটকে গুপ্তহত্যা করান। সহযোগী চারুদত্তকে সুদূর পূর্বসমুদ্রের ধারে এক অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে নির্বাসনদণ্ড দেন। তারপর তাঁর সঙ্গিনী এক নারীকে বঙ্গদেশের সিংহাসনে বসিয়ে রাজত্ব করতে থাকেন। আর তাঁদের ঘিরে থাকেন সাত জন অনুগত রাজন্য।

ক্রমে ক্রমে সমগ্র বঙ্গভূমি অরাজক কুশাসনের করালগ্রাসে পতিত হয়। শোষণ আর নির্যাতন চরমে ওঠে। প্রকাশচন্দ্র আর রাণীর নিষ্করুণ কঠোর শাসনের কশায় জর্জরিত হতে থাকে সমগ্র বঙ্গভূমি।

এগোতে থাকে গল্প।

লিখিত ইতিহাস কখনওই নিরপেক্ষ নয়। তা ছাড়া তার মধ্যে ইতিহাসের গমনশীলতাও থাকে না। উত্তর-সাম্রাজ্যবাদী পৃথিবীতে ইতিহাসের ছাত্রের কাছে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এটিই যে, নিজস্ব এথিক্‌স সিস্টেমে ফেলে লভ্য ইতিহাসের কোন অংশটি সে সত্য বলে বেছে নেবে। যুক্তি এবং বিবেকের ভূমিকা এখানে অনেকটাই। এই প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণ এই যে, আধুনিক বাঙালি পাঠকের মননে প্রাচীন বঙ্গের ইতিহাস অনেকটাই ধূসর।

অভীকের এই উপন্যাস এক বিস্মৃত ইতিহাসের ধূসর পাতাগুলির থেকে ধুলো ঝেড়ে তাকে সজীব করার চেষ্টা করেছে।

অভীক স্বমুখে বলছেন, 'স্পষ্ট করে বলে দেওয়া ভালো যে ইতিহাসাশ্রয়ী হলেও এটি আদতে একটি উপন্যাস। পাঠকদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, একে ইতিহাসের বই হিসেবে না পড়ে উপন্যাস হিসেবেই পড়বেন।' তবুও এ স্পষ্ট যে গল্পের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রাজনীতি। কিন্তু নিছক ঘটনার বিবৃতি নয়, ঘটনার ভেতর দিয়ে তিনি ধরতে চান রাজনীতির অন্তর্নিহিত শ্লেষ আর নিতান্ত নিঃসম্বল অসহায় মানুষের নিজস্ব প্রতিবাদ।

এখানেই এই উপন্যাসের কালজয়ী হয়ে ওঠার সমস্ত উপাদান রয়েছে।

বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা করা কঠিন। যারা স্বাধীনতার অথবা সমাজবিপ্লবের আদর্শে একদিন উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রাণপাত করেছিল, অথবা যারা ন্যায়, সততা, সৌজন্য এবং সংযমের ভিত্তিতে পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনযাত্রা এক সময়ে গড়ে তুলেছিল, সেই দেশপ্রেমী, বিপ্লবী কিংবা ভদ্রলোকেরা এখন বস্তুত স্মৃতিতে পর্যবসিত।

বর্তমানে যেভাবে নিরুঙ্কুশ ভোগস্পৃহা, বিবর্ধমান লোভ, নির্বিবেক স্বার্থবুদ্ধি, সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্বহীনতা শিক্ষিত উচ্চবর্গের বাঙালি তরুণতরুণীদের মধ্যে প্রসারলাভ করছে, তার গতিরোধ না করতে পারলে বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ নিতান্তই অন্ধকার। সেই গতিরোধ যাঁরা করবেন, প্রকৃষ্টতর জীবনের আদর্শের প্রতি তরুণসমাজকে যাঁরা আকৃষ্ট করবেন, সমাজ রূপান্তরের উদ্যোগে তাদের সংযুক্ত করবেন, সেই নেতা-শিক্ষক-সংগঠকদের জন্য দেশ অপেক্ষা করছে।

অভীক বর্ণিত বাংলার ইতিহাসের সেই ক্রান্তিকালে যে অভূতপূর্ব গণজাগরণ হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিভিন্ন শৈব এবং সহজিয়া বৌদ্ধ সাধকবর্গ এবং কয়েকজন স্বপ্নদ্রষ্টা বিদ্রোহী নায়ক, যে ভাবনার গতি���থ বেয়ে এলেন বপ্যট এবং মহাযোগী মৎস্যেন্দ্রনাথ, গোপালদেবের সঙ্গে একত্রে দাঁড়ালেন বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের এক অলোকসামান্য মহাপুরুষ পদ্মসম্ভব, এলেন শান্তরক্ষিত, মন্দর্ভা, ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়ের পৌত্র জয়াপীড়, দেদ্দদেবী, শবরবজ্র, সেই ভাবনা হয়ে ওঠে উপলব্ধির প্রাগ্রসরতার, যুগচেতনা শনাক্তের আলম্বন।

নিয়তির অপ্রতিরোধ্যতা, পদ্মসম্ভব ও অন্যান্য চরিত্র মারফত, অভীকের এই উপন্যাস আমাদের জীবনকে কোন দিকে প্রণোদিত করবে কে জানে! মনে পড়ে মুরাকামির সেই উক্তি -- “Unfortunately, the clock is ticking, the hours are going by. The past increases, the future recedes. Possibilities decreasing, regrets mounting.”
Profile Image for Arindam  Chatterjee.
39 reviews1 follower
May 28, 2023
সে এক অদ্ভুত সময় বাংলাতে বুঝলেন। সময়কাল 700-750 CE, বাঙালির বড় দুর্দিন চলছে, মৎস্য মারিব খাইব সুখের সময় সে নয় , বরং মাছখোর বাঙালি ডুবে আছে মাৎস্যন্যায়ে। বড় বড় মাছ অর্থাৎ কিনা সামন্ত ভূস্বামীরা গিলে খাচ্ছে ছোট ছোট মাছ অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে। কিন্তু এদেরও ওপরে আছে হাঙ্গর। এক নয় এক জোড়া ......

বিবেক - কিন্তু ভাই টেকনিক্যালি একটা তো হাঙ্গর নয় বরং ......
আমি - আচ্ছা আচ্ছা থামো তো বাপু, সেসব বলব।

তো সেই মাৎস্যন্যায়ে বাঙালির ভরসা এক মছলিবাবা। আরে থামুন তো মশাই, সবসময় রায় বাবুকে টানবেন না। ইনি হচ্ছেন মৎস্যেন্দ্রনাথ, যিনি কোনো ১০৮ বাবা ছিলেন না, তিনি লোকেশ্বর, মহাযোগী, পরম শৈব।
আর কে আছে জানেন ? পদ্মসম্ভব, আচার্য শান্তরক্ষিত, গোরক্ষনাথ, জালন্ধরী পা, কাহ্ন পা, জয়াপীড় এমন কি ভাঁড়ুদত্তও। একেবারে বঙ্গ-অন্ড!

বিবেক - বঙ্গান্ড ? উয়া কি বটেক ?
আমি - (ইংরেজিতে) ডাহা!!! বঙ্গ প্লাস ব্রহ্মাণ্ড। বঙ্গ-অন্ড। নাকি বঙ্গভার্স বলব ?
বিবেক - বাংলাভার্স ই বলো ভায়া।

ঠিক বাংলাভার্স। মানে বাঙালির মধ্যযুগে যা যা নাম আপনার মনে পড়বে, তারা সবাই, শর্ত একটাই পালবংশের প্রতিষ্ঠার আগে হতে হবে। এখন আপনি বলতে পারেন যে Gorakhnāth and the Kānphata Yogīs এ যেন এনাকে একাদশ শতাব্দীর বলা হয়েছে, তাহলে তাঁর গুরু অষ্টম শতাব্দীতে কি করে? দেখুন আমরা ইতিহাস বিস্মৃত জাতি, গোরক্ষনাথের গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথ যে অষ্টম শতাব্দীর ও হতে পারে তা নিয়ে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর জোরালো বক্তব্য আছে। আর সোজা কথা এটা ফিকশন এবং প্রথম বাংলাভার্স, অত খুঁত ধরার কিছু নেই।

তো গল্পের বিস্তৃতি বিশাল, সেই কলকেতা রানাঘাট তিব্বতের মতন। মানে তিব্বত, বঙ্গ, চীন মগধ প্রাগ্জ্যোতিষপুর , বিশাল ব্যাপার।
গল্পের শুরু তিব্বতে, এক স্পাই কেসে। তিব্বত রাজসভাতে ঝামেলা চলছে পোন ধর্মের অনুসারী অমাত্যদের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী তিব্বত সম্রাটের। পোনরা সাপোর্ট পাচ্ছে চীন থেকে , সম্রাটের ভরসা ভারতীয় বৌদ্ধরা। সেই সংঘাত নেমে এলো বাংলাতে। নানা ঝামেলার পরে রাজত্বের ভার এক রানীর হাতে। তবে আসল ক্ষমতা সচিব প্রকাশচন্দ্রের হাতে, যার আছে নানা অলৌকিক ক্ষমতা, যা সে পেয়েছে চীনের রানী যে আবার কিনা বিশাল তন্ত্র সাধিকা। আর বাংলার রানী ?? সে এক বিশাল ব্যাপার। সে মানুষ না। নাগিনী। কিন্তু তার মধ্যে আছে বাংলা এবং চীন, দুই রক্তধারাই।
কি করে ? কাট টু মহাভারত সময়কাল, পরীক্ষিত মারা গেছেন নাগদংশনে অর্থাৎ কিনা নাগবংশীয়দের আক্রমণে। জনমেজয় নাগ বংশীয়দের রাজধানী তক্ষশীলা আক্রমণ করে নাগদের প্রায় নির্বংশ করেছেন, আস্তিকের দৌলতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হলোনা তারা। তবে ব্যথিত হৃদয় আস্তিক চলে গেলেন চীনে। তাকে চিনে নিলো চীনারা। এই বঙ্গরানীর জন্মধারা সেই আস্তিকের। তার দেহে বইছে আস্তিকের রক্তধারা।

বিবেক - কিন্তু ব্রো, তুমি এত রক্ত রক্ত কেন করছ? বঙ্গনাগিনীর দেহে তো রক্ত ছিল না।
আমি - (বিরক্ত হয়ে) এটাই তোর মাথায় এলো? আস্তিকের এই এক্সাইলে তো বাংলার কোনো হাত ছিল না, তাহলে তার বংশ এসে বাংলাতে বাশঁ কেন দিলো ?? হুঁ ?
বিবেক - কেন্দ্রের চক্কান্ত বলছ ?
আমি - অরে এটাকে নিয়ে তো পারা যায় না। কেন্দ্র কোথায় দেখলি ?

তো ফিরে আসি বাংলাতে, সিমসিম করছে রাত, নালন্দা মহাবিহারের এক কক্ষে এসে জমেছেন শান্তরক্ষিত, মৎস্যেন্দ্রনাথ, গোরক্ষনাথ, পদ্মসম্ভব , জালন্ধরপা, কাহ্নপা , ভিক্ষুনী মন্দর্ভ। মানে ভেবে দেখুন। বৌদ্ধ, শৈব এবং সহজিয়া , সব্বাই মিলেছেন একসঙ্গে। আর আছেন বপ্যট, ইনিই হচ্চেন গোপালদেবের পিতা।
এরপর ঘটে নানা ব্যাপার- গোপালদেব বঙ্গে প্রথম উচ্চারণ এবং পুজো করলেন দেবী দুর্গার। দেবী চন্ডী বাংলাভার্সে এলেন দুর্গা হয়ে। আলোচনার শেষে মৎস্যেন্দ্রনাথ বেরিয়ে পড়লেন পেপ টক দিতে যাতে বাংলার অন্য সামন্তরা যেন আসন্ন বিপ্লবের বিরোধিতা না করে। আজ্ঞে হ্যাঁ , বাঙালির বিপ্লববোধের সূচনাও এই বাংলাভার্সেই হয়। বাকিরা নেমে পড়লেন প্রকাশচন্দ্র, রানী এবং তাদের ছয় প্রধান সহযোগীদের নিকেশ করতে।

বিবেক - (ফিসফিস করে) আচ্ছা তখন বাংলাতে খড়গ বংশের কেন্দ্রীয় শাসন, আছে অনেক সামন্তও, তাহলে টেকনিক্যালি মাৎস্যন্যায় কি করে চলছে ? মানে আমআদমির ওপরে অত্যাচার তো সবাই করে।
আমি - করতে পারে , কিন্তু তা বলে প্রতি পনেরো দিন অন্তর রাণী একটা সা জোয়ান পুরুষকে ছিবড়ে করে দেবে ? থামো। ছিবড়েটা আমি দৈহিক নিষ্পেষণ এবং শেষে নিষ্কাশনের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি। আমি জানি শেষে রানী তাদের দংশন করতো। এটা কি ঠিক ?
বিবেক - কিন্তু ভেবে দেখো, ওই মাঝের পনেরো দিনে ওই অনিন্দ্যসুন্দরী রানী কিন্তু একেবারে নির্বিষ। সেটা তো .....
আমি - কি সেটা ? সেটা কি?
বিবেক - মুচকি হেসে - থাকগে ! তারপর কি হলো ?

তারপর অনেক কিছু হলো রে ভাই। প্রকাশচন্দ্রকে ক্ষমতাতে বসানো চারুদত্তকে দক্ষিণের এক অস্বাস্থ্যকর স্থানের কুটিরে বন্দি রাখা হয়েছিলাম কাহ্নপা ইত্যাদিরা গিয়ে তার পেট থেকে কথা উদ্ধার করে নিয়ে এলেন। কিন্তু এরপরে দরকার আছে রানীর মৃত্যু কি করে হবে সেটা জানা, সে আরেক রোমাঞ্চকর অভিযান, করলেন পদ্মসম্ভব , যিনি তখনো রিনপোচে হন নি তাই নানা দুষ্ট কার্য করতে বড়ই উৎসাহ পান। .... এটাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রানীই বঙ্গ, বঙ্গই রানী .... তার পদচটিকাতে। ....

বিবেক - ওয়ান মিনিট , ওয়ান মিনিট। তারমানে কি চারুদত্ত আদি গঙ্গার পাশের ওই খানে বন্দি ছিল? কুটির বললে, তারপর বঙ্গই রানী বলছ ?
আমি ( ব্যাকুল হয়ে ) - ওরে চুপ কর রে হতচ্ছাড়া, কে শুনে ফেলে চপ করে কেটে দেবে !!!

সে যাইহোক , প্রথম বিপ্লব ঘটলো মন্দিরে, এক পুজোতে এসেছে প্রকাশচন্দ্র থেকে রানী সবাই , মন্দির চত্বরে ভিড়। সেই ভিড় থেকে হঠাৎ কে উচ্চস্বরে গালি দিল শাসকদের, তারপর আরেকজন, তারপর আরেক জন, আস্তে আস্তে সব জনতা যেন খেপে উঠলো, ক্যা ক্যা ছি ছি রবে চাদ্দিক ভরে উঠলো, আর মন্দিরে দুম করে ফাটল পলিতা বোম-কন্দুক। সেই প্রথম বাংলাতে বোমা পড়া।

বিবেক - তার মানে তোমরা বেঙ্গলিরা বরাবরই ভুষুন্ডি টাইপের। পালবংশের প্রতিষ্ঠার সময়েই বোমা পড়ে যা চীনের থেকে আনা, অথচ কতগুলো পাল প্রজন্ম পরে তিব্বত আগত বিনয়ভদ্রের কাছে এই কন্দুক দেখে আশ্চর্য্য হয়ে গেছিলেন রাজপুত্র ও আচার্য অতীশ দীপঙ্কর ।

আমি - বিপ্লবীরা তখন কি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতো জানিস? কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল। চঞ্চল চীএ পইঠো কাল॥
বিবেকের ছোট ছোট খুঁচি খুঁচি চোখ গোল গোল হয়ে উঠলো।

কিন্তু আসল সমর হলো লালিম্বন পাহাড়ের নিচে শালিবন বিহারে। সেখানে মৎস্যেন্দ্রনাথ শালিধানের অন্নগ্রহন করছিলেন হয়তো ভর্জিত মৌরলা মাছ দিয়ে, কিন্তু খেতে দিলে না গা। প্রকাশচন্দ্র আক্রমণ করলেন। মৎস্যেন্দ্রনাথ, পদ্মসম্ভব, দেদ্দীদেবী, মন্দর্ভা, বপ্যট, এমনকি জয়াপীড় প্রবল রণে মত্ত হলেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুকরাও পিছিয়ে রইলেন না, শৈব ত্রিশুল তুলে তারাও নেমে পড়লেন ফ্রন্টে। গোপালদেব তখন রাজপ্রাসাদে, রানীর মহড়া নিচ্ছেন, চীনাংশুকে আবৃত আলোছায়া ভর্তি ঘরে। মানে যুদ্ধ দুই ফ্রন্টে।

এখন আপনি ভাববেন, মৎস্যেন্দ্রনাথ এবং প্রকাশচন্দ্র, দুজনেই তন্ত্রে এত ক্ষমতাধারী, যুদ্ধে কি না কি হলো, এদের যৌগিক ক্ষমতার টক্করে অন্যরা হয়তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। নাঃ। সে গুড়ে বালি। দুজনেই -
"রে রে পাষণ্ড দুরাচার
আজ বধিব তোরে
দিলি না খাইতে কুলের আচার "
- এই বলে হাতাহাতি তে মত্ত হলেন, এক পর্য্যায়ে প্রকাশচন্দ্র তো মৎস্যেন্দ্রনাথের চুলের মুঠি ধরে দিলেন আচ্ছা করে ঝাঁকিয়ে।

ওদিকে রাজপ্রসাদে গোপালদেব আচ্ছন্নতা থেকে জেগে উঠলেন, পাশে রানী হা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে। আর উঠেই কিনা গোপালদেব বিকেলের দুধ চা না খেয়ে দিলেন গুলি করে।
ব্যাস। ওটাই ছিল প্রকাশচন্দ্রের লাস্ট হরক্রাক্স। আর লড়তে না পের��� ষাঁড়ের পিঠে চড়ে তিনি পগারপার।

তারপর আর কি ! আমার কথাটি ফুরোলো।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন হরক্রাক্স বিদ্যা আমাদের ভেতর থেকেই পশ্চিমে যায়, কেন পড়েননি মাছের পেটে রাক্ষসের প্রাণ ? এখন ভোল্ডেমর্টই প্রকাশচন্দ্র কিনা আমি বলতে পারি না। আর হ্যাঁ , আরো কয়েক শতাব্দী পরে ভারতের দক্ষিণে রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের রাজ্যে বলরাম কর্মকার যে তার স্পেশাল বিদ্যা নিয়ে গেছিলো তা এই গোপালদেবের থেকেই পাওয়া।

বিবেক - রানী তাহলে মরে গেলো ?
আমি - হ্যাঁ।

বিবেক- রানীর মুখে একটা তিল ছিল আর নাকটা একটু মিষ্টি মতন চাপা ছিল গো। কেন জানি মনে হলো এ কথাটা সবাইকে জানানো দরকার।

আমি - হতচ্ছাড়া। এই একটা গোটা উপন্যাস পড়ে তোর মনে শুধু এটুকুই লেগে থাকলো ?

কিন্তু ততক্ষনে ভোঁ করে বিবেক কোথায় যে চলে গেছে ।
Profile Image for Raktim Sarkar.
28 reviews4 followers
January 10, 2023
*প্লট* - মোট তিনটে পার্ট আছে। প্রথম পার্ট এ কেউ বা কারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস খুঁজছে। দ্বিতীয় পার্ট এ আমরা দেখছি, বাংলায় অরাজকতা চলছে। বাংলার প্রশাসন ভেঙে পড়েছে এবং এর বিরুদ্ধে একটা শক্তি লড়াই সংগঠিত করছে। শেষ পার্ট আমরা দেখবো, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হলো এবং প্রথমে যা খোঁজা চলছিল, সেটা কি করে কাজে লাগলো। *ভালো দিক* - ১. বাঙ্গালীর বীর গাঁথা নিয়ে চর্চা খুবভালো। কারন, বাংলা সাহিত্যে, বীর রস মূলত, মারাঠা বা রাজপুতদের নিয়ে। সেক্ষেত্রে এটা বেশ একান্ত নিজেদের মনে হয়। ২. নন লিনিয়ার স্টোরি টেলিং এর জন্য গল্পের গতি বেশ ভালো। ৩. অনেক চরিত্র আছে এবং গল্পটা বেশ মহাকাব্যিক ধাঁচের। *খারাপ দিক* - ১. মূল কনফ্লিক্ট রাজনৈতিক। সেটাকে আরো বেশি করে দেখানো উচিত ছিল। ২. সাব কনফ্লিক্ট তন্ত্রকে অযথা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৩. একটা চরিত্রের দ্বিচারিতা ভালো লাগেনি। সে মানুষ না অন্য কিছু। সেটাতে মনে হচ্ছে লেখক, ডিসাইড করতে পারেন নি ইতিহাস না তন্ত্র কাকে বেশী গুরুত্ব দেবেন।
Profile Image for Shreyashi Bhattacharjee Dutta.
81 reviews9 followers
May 18, 2025
এই কাহিনীর সময়কাল ৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দ। বঙ্গদেশে তখন ঘনিয়ে এসেছে ঘোর অমানিশা ও নৈতিক অবক্ষয়। সেই সময়ে তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের সাথে মিশে যাচ্ছিল তন্ত্র ও নানান আচার, যার কিছু ক্রিয়াকলাপ ছিল সাধারণ মানুষের বিচারধারার দিক থেকে অনৈতিক। ক্রমে সেই প্রভাব এসে পড়ে বাংলায়। অনেক চক্রান্ত ও কূটনৈতিক চালের ফলে বাংলার রাজসিংহাসনের অধিকারী হোন এক তিব্বতী রমণী এবং তিব্বতে তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধ এক বাঙালি পুরুষ হোন তাঁর প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের একের পর এক অনাচারে ভরপুর ক্রিয়াকলাপের দ্বারা কলুষিত হতে থাকে বাংলার সাম্রাজ্য সহ সমস্ত প্রজার জীবন।

এমন অবস্থায় বাংলাকে এই বিভীষিকা থেকে উদ্ধার করতে একত্রিত হোন কিছু সৎ মানুষ। কাহিনীতে দেখা যায় গুরু পদ্মসম্ভব ও ভিক্ষুনি মন্দর্ভার মত কিছু আসল চরিত্র। কিভাবে এরা সকলে মিলে সেই পাপমতি রাণীকে সরিয়ে রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলেন সেই হচ্ছে কাহিনী।

আমি গত দুই বছরে দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণ করেছি। সেখানকার বৌদ্ধ মন্দিরে প্রথমবার দেখেছি বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবের মূর্তি, কখনও তাঁর পাশে ছিলেন মন্দর্ভা এবং আরো কয়েকজন শিষ্যা। তারপর আমি ওনার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই এবং ইনারনেটে বিভিন্ন লেখা ও ভিডিও দেখে যতটুকু বুঝতে পারি, তার সাথে এই উপন্যাসের চরিত্রটির মিল খুঁজে পাইনি।

আমি জেনেছি যে গুরু পদ্মসম্ভব ছিলেন উদিয়ানের রাজপুত্র, এবং সেই জায়গাটা এখনকার পাকিস্তানের কোনো একটু অংশে ছিল। কিন্তু এই উপন্যাসে দেখছি যে উদিয়ান জায়গাটি কামরূপে। আমি যতদূর জানি কামরূপ উত্তরপূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের প্রাচীন নাম। অবশ্যই লেখক আরো অনেক বেশি পড়াশোনা করে এই উপন্যাস লিখেছেন, আমার মূল খটকা এখানে থেকে গেল যে পাকিস্তান ও আসাম তো একেবারে আলাদা দিকে দুটি জায়গা, এই জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয় গুরু পদ্মসম্ভব তাহলে আসলে কোন জায়গার মানুষ ছিলেন। ভিক্ষুণী মন্দর্ভার ক্ষেত্রেও এরকম কিছু কথা মিলল না। সেটা আর বলছি না। হতেই পারে যে এই বৌদ্ধ গুরু ও তাঁর শিষ্যদের নিয়ে বিভিন্ন থিওরি প্রচলিত আছে এবং তার একটির ওপর নির্ভর করেই রচিত এই কাহিনী।

লেখক নিজেই বলেছেন এই উপন্যাস ইতিহাস হিসেবে না পড়ে শুধুমাত্র উপন্যাস হিসেবে পড়তে হবে। তাই পড়লাম। কাহিনী সম্পর্কে এটাই বলবো যে কিছুটা লৌকিক ও অলৌকিক ঘটনাবলীর মিশ্রণে রচিত এই উপন্যাসের গল্প। যারা অলৌকিক কাহিনী ভালবাসেন তাঁদের ভালো লাগবে, তবে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে পড়লে সবকিছু বাস্তবসম্মত বলে মনে হবে না।

আমার এই উপন্যাসটি মোটামুটি লেগেছে।
Profile Image for Yajnaseni Roy.
30 reviews
January 14, 2025
Six stars if possible. Exceptionally researched and extremely well written, especially the war scenes at the end of the book.
Profile Image for Lameya Labiba.
221 reviews74 followers
April 27, 2025
অভীক সরকারের লেখার সবচেয়ে বড় গুণ হল বই পড়ার সময় দৃশ্যগুলো সব ছবির মত কল্পনায় ভেসে ওঠে। তাই বই শেষ করে মনে হচ্ছে বেশ একটা অ্যাকশান মুভি শেষ করে উঠলাম।
Profile Image for Journal  Of A Bookworm .
134 reviews9 followers
January 8, 2025
#পাঠপ্রতিক্রিয়া - ৩১/২০২৪

পটমঞ্জরী
লেখক - অভীক সরকার
প্রকাশক - পত্রভারতী
মূল্য - ৩৯৯ টাকা।

বছরের ৩১ নম্বর বই ইতিহাস আশ্রয়ী এক ফ্যান্টাসি ঘরানার উপন্যাস "পটমঞ্জরী"। ২০২৩ সালে সায়ন দার কথায় বইটি আমি সংগ্রহ করেছিলাম। এই বছর পড়লাম আর অবাক হলাম যে বাংলায় এই ধরনের লেখা আছে?
"গেম অফ থ্রোনস" বা "বাহুবলী" এর মত গল্প কেনো যে বাংলায় হয় না বা এদের মত বীর কেনো যে বাংলায় জন্মায় না বা কেনো এরকম অসাধারণ ইতিহাস আশ্রয়ী লেখা হয় না, যার পরতে পরতে থাকবে রোমাঞ্চ, অসাধারণ কিছু যুদ্ধ দৃশ্য, রাজনীতি, কূটনীতি, হিংসা, ষড়যন্ত্র এবং এক সুমহান প্রেম ও মহত্বের বাণী?? সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হল। পড়ে দেখুন "পটমঞ্জরী"।

🔸🔸পটভূমি -

মাৎস্যন্যায় শব্দটির অর্থ জলাশয়ে মাছদের মধ্যে দুর্বলের উপর প্রবলদের আক্রমণ ও অত্যাচার। বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্কের মৃত্যু ও পাল বংশের প্রতিষ্ঠার মাঝের শতাধিক বছরের সময়কাল সামগ্রিক অরাজকতার জন্য ওই বিশেষণেই চিহ্নিত হয়। শশাঙ্কের রাজ্যের পতনের(���২৫ খ্রিস্টাব্দ) পর বঙ্গদেশে এক অরাজক অবস্থার সূচনা হয়। মূলত খড়গ বংশের রাজভট্টের মৃত্যুর পর বাংলায় কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব ছিল না, এবং ক্ষুদ্র সামন্তদের মধ্যে ক্রমাগত লড়াই চলছিল। এই অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে বপ্যট পুত্র গোপালদেব প্রথম পাল রাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। খালিমপুর তাম্রফলক থেকে জানা যায় যে এই অঞ্চলের সাধারণ নিপীড়িত জনগণ তাকে রাজা বানিয়েছিল। প্রায় ৮০০ বছর পর লেখা লামা তারানাথের বয়ান থেকে উঠে আসে আরেক ভয়ানক কাহিনী। পূর্বতন কোনো এক রাজার মহিষী নাগিনীর রূপ ধরে হত্যা করছেন একের পর এক নির্বাচিত রাজাকে। গোপালদেব এই মনুষ্যরুপী নাগিনীকে হত্যা করতে সমর্থ হন। মূলতঃ এই ঘটনাকে অবলম্বন করে লেখক এই সুবিশাল উপন্যাস লিখেছেন, যেখানে ঐতিহাসিক ঘটনার পাশাপাশি এসেছে কিছু কাল্পনিক চরিত্র এবং এসেছে কিছু অতিলৌকিক ঘটনাবলী। এই উপন্যাসের তিনটি পর্ব আছে, আদিপর্ব টি মূলত ইতিহাস আশ্রিত, মধ্যপর্ব টি হলো সংঘাতের পটভূমি নির্মাণ, আর অন্তপর্ব টি হল ক্লাইম্যাক্স, প্রবল সংঘাত ও গণসমর্থনে নবীনের উত্থান। ইতিহাস আশ্রয়ী ও গবেষণাসঞ্জাত উপন্যাসটির মূল উপজীব্য হলো লামা তারানাথের নথিবদ্ধ কয়েকটি কিংবদন্তি, এদের সাথেই লেখক নিপুণভাবে তিব্বতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনাক্রম যুক্ত করেছেন।

🔸🔸পাঠপ্রতিক্রিয়া -

গল্পের ক্যারেকটার বিল্ডআপ অসাধারণ, প্রত্যেকটি মুখ্য চরিত্রের সঙ্গে ভীষণ ভাবে কানেক্ট করতে পারছিলাম। তবে আমার ফেভারিট সেই পদ্মসম্ভব। ওরকম বীর এক যোদ্ধার মুখে লেখক যে সংলাপ গুলো দিয়েছেন সেগুলো কোনো হিট সিনেমার হিরোর সংলাপের থেকে কম যায় না। লেখকের লেখনীর এখানেই ভুয়সী প্রশংসা করতে হয় যে তিনি এমন কিছু চরিত্র তৈরি করেছেন যা পাঠকের মনে অত্যন্ত গভীর প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
লেখকের গবেষণা কে কুর্নিশ। বাংলার এক বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায়কে যে চুড়ান্ত অধ্যাবসায় নিয়ে তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তার পেছনে যে কতটা পড়াশোনা
আছে বইটি না পড়লে বুঝবেন না।
উপন্যাসটির আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লেখনীর মাধ্যমে চিত্রায়ন। পাঠক হিসেবে চোখের সামনে একের পর এক ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা মনে হবে যেন ছবির মত ফুটে উঠছে।। ২৭৫ পাতার ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস পড়ে মনেই হবে না শুকনো ইতিহাস পড়ছেন, বরঞ্চ এই বই প্রকৃত অর্থে "পেজ টার্নার"। অসম্ভব রিসার্চ এবং বলিষ্ঠ লেখনী ছাড়া এই জিনিস অসম্ভব। উপন্যাসটি এক কথায় "আনপুটডাউনেবল"।।
বাংলার অতীত গৌরব জানতে অভীক সরকার যে অসাধারণ ঐতিহাসিক উপাখ্যান আমাদের দিয়েছেন, সেটি কেউ দয়া করে মিস করবেন না। মাস্ট মাস্ট মাস্ট রিড।
Displaying 1 - 12 of 12 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.