Jump to ratings and reviews
Rate this book

Chader Pahar

Rate this book
পাকা খেলোয়াড়, নামজাদা বক্সার, ওস্তাদ সাঁতারু বাঙালির ছেলে শঙ্কর, এফ.এ. পাশ করে সুবোধ ছেলের মতো কাজকর্মের সন্ধান করল না, দেশান্তরের হাতছানি পেয়ে সে পাড়ি দিল সুদূর পূর্ব-আফ্রিকায়। ইউগাণ্ডা রেলওয়ের নতুন লাইন তৈরি হচ্ছিল; চাকরী পেয়ে গেল সেখানে।ডিয়েগো আলভারেজ নামে দুর্ধর্ষ এক পর্তুগীজ ভাগ্যান্বেষীর সঙ্গে হঠাৎ সেখানে তার দেখা। শঙ্কর এই দুঃসাহসী ভাগ্যান্বেষীর সঙ্গ ধরে মহাদুর্গম রিখটারস্‌ভেল্ড পর্বতে অজ্ঞাত এক হীরের খনির সন্ধানে চলে গেল। ডিঙ্গোনেক বা বুনিপ নামে অতিকায় এবং অতিক্রূর এক দানব-জন্তু সেই হীরের খনি আগলিয়ে থাকত।পর্যটকেরা যার নাম দিয়েছেন ‘চাঁদের পাহাড়’, সেই রিখটারস্ভেল্ড পর্বতে গিয়ে জীবনমৃত্যু নিয়ে শঙ্করকে যে রোমাঞ্চকর ছিনিমিনি খেলতে হল তার আশ্চর্য বিবরণ যে-কোনো বয়েসের কল্পনাকে উত্তেজিত করবে। গল্পের পাশাপাশি হুবহু আফ্রিকান পরিবেশের যে-সব নিপুণ ছবি আঁকা হয়েছে তা বাংলা বইয়ের জগতে আদর্শ স্থানীয়। তরুণদের জন্য বিভূতিভূষণের লেখা এ-বই ক্লাসিক হিসেবে পরিগণিত হবার যোগ্য।

176 pages, Hardcover

First published January 1, 1937

293 people are currently reading
4883 people want to read

About the author

Bibhutibhushan Bandyopadhyay

201 books1,084 followers
This author has secondary bangla profile-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.

Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.

The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
4,916 (66%)
4 stars
1,822 (24%)
3 stars
483 (6%)
2 stars
80 (1%)
1 star
54 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 607 reviews
Profile Image for Rizwan Khalil.
374 reviews597 followers
February 29, 2020
বাংলাসাহিত্যের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, তাও সেই রহস্যময় সুদূর আফ্রিকার পটভূমিতে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় যেকোন বাঙ্গালীর এই বইটা পড়া বাধ্যতামূলক আমার মতে, বিদেশী সাহিত্যের পিছনে দৌড়ানোর বহু-বহুকাল আগেই যে আমাদের বাংলা ভাষাতেও একসময়ে কী কালজয়ী অসাধারণ রোমহর্ষক মৌলিক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লেখা হয়েছে সেটা যে চাঁদের পাহাড় পড়েছে কেবল সেই অনুধাবন করতে পারবে। এ উপন্যাসের নায়ক তরুণ শঙ্কর এক বাঙালী নিম্ন মধ্যবিত্ত যুবক, রক্তে তার অ্যাডভেন্ঞ্চারের ডাক, পেটের দায়ে চাকরি নিয়ে ঘটনাচক্রে মোম্বাসা রেলওয়ের কর্মচারী হিসেবে আফ্রিকায় চলে যায়। সেখানে পরিচয় হয় এক ভবঘুরে প্রসপেক্টর দিয়েগো আলভারেজের সাথে, তার মুখে শোনে এক আশ্চর্য হীরার খনি আর সেই খনির পাহারাদার এক দানবের কথা, এক সাথে দু'জন বেরিয়ে পড়ে সেই রহস্যময় কিংবদন্তীর খনির খোঁজে। এরপর রুদ্ধশ্বাস অভিযান, রোমহর্ষক ঘটনাক্রম, কষ্ট, সাহস, বীরত্ব আর বন্ধুত্বের অবিস্মরণীয় এক কাহিনি।

আর সব কিছু বাদ দিলেও চাঁদের পাহাড়ের আবেদন বাঙ্গালীদের মনে চির অম্লান থাকবে একটা কারণেইঃ উঠতি বয়সের যেকোন অভিযানপ্রিয় মনের পাঠকই শঙ্করের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবে, কল্পনা করবে ইস আমিও যদি যেতে পারতাম শংকরের মত আফ্রিকার সেই রোমাঞ্চকর দূর্গম অভিযানে হীরের খনির সন্ধানে! আর বইটার আসল দিক কিন্তু এর কাহিনি নয়, এমন অ্যাডভেঞ্চারধর্মি কাহিনি তো পরবর্তিতেও বেশ কিছু লেখা হয়েছে বাংলাসাহিত্যে, না, চাঁদের পাহাড় বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের অতুলনীয় এক সম্পদ যে জন্য, সেটা হলো বিভূতিভূষণের অসাধারণ জীবন্ত বর্ণনা। মনে হবে শঙ্কর বা আলভারেজ না, পাঠক নিজেই রয়েছে সেই আফ্রিকার গভীরে, আফ্রিকা যেন পাঠকের চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, সে চলছে সাভানা আর নিঝুম অরণ্যের গোলকধাঁধার ভেতর দিয়ে। গহীন অন্ধকার আফ্রিকার নিখুঁত বর্ণনা বাঙ্গালীর সেই চিরন্তন অভিযানের তৃষ্ণাকে আরো শত-সহস্রগুণ বাড়িয়ে দেয়, আমরা যেন নিজেদের সকল ইন্দ্রিয় দিয়েই সেসব কিছু অনুভব করতে পারি। অথচ অবিশ্বাস্য কল্পনাতীত মনে হলেও সত্য, লেখক নিজেই নাকি তা দেখেননি, স্বশরীরে কখনো আফ্রিকা যাননি! কম্পিউটার-ইন্টারনেট-মোবাইলের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের বহু বছর আগে তিনি উপন্যাসটি লিখেছিলেন কেবলই মাত্র এভেইলেবল ম্যাপ আর বইপত্র পড়ে, যা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল হাতের কাছে কল্পনার চোখ দিয়ে তিনি যে আফ্রিকাকে দেখেছিলেন, এবং পাঠককে দেখিয়েছেন, বোধ করি বাস্তবের চোখ দিয়েও বেশিরভাগ মানুষের কখনো তা দেখা সম্ভব হয় না। এদিক থেকেই চাঁদের পাহাড় অন্য যেকোন বাংলা অ্যাডভেঞ্চার/কিশোর উপন্যাস থেকে এগিয়ে থাকবে চিরকাল, উরাধুরা প্লট মাথায় আসলেই সেটা লেখা যায়, কিন্তু চাইলেই বিভূতিভূষণের মত প্রকৃতির বর্ণনা আর গল্পের লেখনি দিয়ে পাঠকের সামনে সেটা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না, মনে আজীবনের জন্য দাগ কাটা যায় না।

কিশোর বয়সে চাঁদের পাহাড়-এর স্পর্শে প্রথম যে নিখাঁদ রোমাঞ্চ অনুভব করেছিলাম, সেটা আমার পাঠকজীবনে আজন্ম এক বিশেষ স্থান নিয়ে রেখেছে। ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ার সময় আবিষ্কার করেছিলাম বিভূতিভূষণের অবিস্মরণীয় সেই মাউন্টেইনস অফ দ্য মুনকে স্কুলের লাইব্রেরির তাকের কোণে, আগে থেকে কোন কিছু না জেনেই শঙ্কর আর আলভারেজের সাথে বেড়িয়ে পড়েছিলাম কিংবদন্তীর রহস্যময় হীরের খনির খোঁঁজে। পরবর্তিতে অসংখ্য বিদেশি সাহিত্য পড়া হয়েছে আফ্রিকার পটভূমিতে, বারে বারে রোমাঞ্চিত হয়েছি, তুমুল মজা পেয়েছি... কিন্তু আজও হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড বা এডগার রাইস বারোজ বা উইলবার স্মিথ - আমার কাছে এঁদের যেকোন ক্লাসিক আফ্রিকান অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসের চেয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়ের অমর এ আলেখ্য বহু-বহু গুণ বেশি প্রিয় ও বেশি এগিয়ে রাখার মতো। সবসময়ই তাই থাকবে।
Profile Image for Aishu Rehman.
1,094 reviews1,070 followers
June 26, 2021
এই বই পড়ে আমি এতটাই মুগ্ধ যে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না । এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত একটি উপন্যাস এটি। বাংলা সাহিত্যে এমন অসাধারণ নিখাদ অ্যাডভেঞ্চারের বই আর কয়টা আছে আমার জানা নেই। যে লেখক পথের পাঁচালী লিখেছেন তিনিই সুদূর আফ্রিকার পটভূমিতে এত সুন্দর নিঁখুত বর্ণনায় রোমাঞ্চকর এই কাহিনী তুলে ধরেছেন, বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার। বিভূতিভূষণের বর্ণনাশৈলী সত্যিই অতুলনীয়।

স্বপ্ন সবাই দেখে, কজনা’র সত্যি হয় কি করে বলি? আর সেই কজনা যদি হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের ছেলে, তবে তো স্বপ্ন দেখাটাই ঘোরতর অন্যায়, তাই না? কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে বলেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়। আর এরকম এক স্বপ্নাতুর যুবা’র গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত “চাঁদের পাহাড়”। ১৯৩৭ সালে লিখিত এই ভ্রমণ অভিযান আজও আমার মতো রোমাঞ্চপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রিয় পাঠকের মনে দোলা দিয়ে যায় সব সময়।
Profile Image for Tiyas.
446 reviews123 followers
May 3, 2023
সেই কোন ক্লাস টুয়ে পড়তে সর্বপ্রথম আফ্রিকা গমন। তারপরে আরও কত কত বার...

এ বই সহস্রবার পড়লেও বোধহয় কোনোদিন পুরনো হবার নয়।

এই কদিনে অল্প অল্প করে ঘুরে এলাম আরেকবার। কঠিন সময়ে, যেকোনো সেল্ফ-হেল্প বইয়ের থেকে এই বই ঢের বেশি উপকারী। মাথার ওপর অস্থায়ী ছাঁদ, প্রতিকূলতার ঘন আবছায়া, অচেনা অজানা জগতের মাঝে বসে যখন মন বলে, না, এবারে অনেক হলো। আর নয়। মনে পড়ে জিম কার্টারের না পারার কাহিনী। যেখানে আত্তিলিও গাত্তির মতন তুখোড় স্পেনিয়ার্দ এবং দিয়েগো আলভারেজের মতো দুর্ধর্ষ এক পর্তুগিজ হেরে যায়। তখন সুদূর আফ্রিকার গহীন অরণ্যে একাকী এক বঙ্গসন্তানের বেচেঁ থাকার লড়াইটা পেটের নিচে জ্বালে কোনো বিস্ফোরক অগ্নিবলয়।

নিজের অজান্তেই তখন বলে যেতে হয়, "তোমরা সবাই মিলে শিখিয়েছ চিন দেশের সেই প্রাচীন ছড়াটি কত সত্য -

ছাদের আলসের চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় অবস্থায় সুখে-সচ্ছন্দে থাকার চেয়ে স্ফটিক পাথর হয়ে ভেঙে যাওয়া অনেক ভালো, অনেক ভালো, অনেক ভালো।"
Profile Image for Manzila.
166 reviews159 followers
April 18, 2016
কোন বই পড়ে শেষ হওয়ার সাথে সাথে রিভিউ লিখতে বসে যাওয়ার ঘটনা আমার জীবনে এই প্রথম । এক অসামাণ্য মুগ্ধতা নিয়ে শেষ করলাম বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা “চাঁদের পাহাড়” । আমার মত ‘স্লো রিডার’ও নিশ্বাস ফেলার কোন অবকাশ পায়নি বইটা পড়ার সময় । এই মুগ্ধতার আবেশ থাকতে থাকতেই তাই লিখতে বসে গেলাম ।

একটা অ্যাডভেঞ্চার গল্পের সবচেয়ে বড় সার্থকতা কি হতে পারে ? লেখকের বর্ণনা আর বইয়ের পাতায় ভর করে যখন পাঠকের মন আর চার দেয়ালে আটকে থাকে না- ছুটে চলে তেপান্তর থেকে তেপান্তরে, পাড়ি দেয় কত মরুভূমি, কত পর্বতমালা করে জয়, কত ভীষণ অরণ্যকে আনে নখদর্পণে- সেটাই একটা অ্যাডভেঞ্চার গল্পের সার্থকতা । ‘চাঁদের পাহাড়’ বইটি এদিক থেকে এক কথায় অনন্য । বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে রোমঞ্চকর এক চড়ায়-উতরায়ের যাত্রী হয়ে যেতে হ��় ।

‘চাঁদের পাহাড়’ শংকরের গল্প । বাইশ কি তেইশ বছর বয়স তার । ‘ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ…বোতাম - আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শ��়ান’- বলে কবিগুরু যে বাঙ্গালীদের পরিচয় দিয়েছিলেন, শংকর মোটেই সে দলে পড়েনা । অজ পাড়াগাঁয়ের এই ছেলেটি স্বপ্ন দেখে অ্যাডভেঞ্চারের, আফ্রিকা গমনের আর সুউচ্চ পর্বত জয়ের । মনের খুব গভীর থেকে কিছু কামনা করলে তা পাওয়া যায় - সে কথাটাই সত্যি প্রমাণ করে একদিন রেলের এক কর্মচারী হিসেবে শংকরের সুযোগ এল আফ্রিকা যাওয়ার ।

আফ্রিকা । শংকর যার বর্ণনা এতদিন মুগ্ধ বিস্ময়ে শুধু ভূগোল বইয়েই পড়ে এসেছিল । কিন্তু বইয়ে পড়া আর বাস্তবে বাস করা দুটো একদম আলাদা ব্যাপার । প্রতি মুহূর্তে আছে সিংহের ভয় । চোখের সামনে সে সিংহের শিকার হতে দেখছে তারই সহকর্মীদের । স্টেশন মাষ্টার হিসেবে এক দূর্গম এলাকায় যে ষ্টেশনে চাকুরী মিলল, তাকে বিষধর সাপের ডেরা বললেই বেশী মানানসই হয় । এসময় একদিন তার দেখা হয় ডিয়েগো আলভারেজের- এক ইউরোপীয়ান । আর এখান থেকেই শুরু অ্যাডভেঞ্চারের । আলভারেজের সাথে শংকর বেরিয়ে পড়ে হলদে হীরার খনির খোঁজে । আফ্রিকার গহীন জংগলে সেই শ্বাসরুদ্ধকর দুঃসাহসিক অভিযানের চমৎকার বর্ণনায় পাঠককে হয়ে যেতে হয় আলভারেজ আর শংকরেরই আরেক সংগী । সিংহ, বেবুন, হায়েনা সব কিছু তো আছেই…আরও আছে এক অজানা বিভীষিকা- বুনিপ নামের তিন আঙ্গুলে এক বিরাট হিংস্র জন্তু, আদিবাসীদের মতে এটিই সেই হীরার খনির পাহারাদার উপদেবতা । বৃষ্টি, অগ্ন্যুৎপাতকে উপেক্ষা করে, ক্ষুধা-তৃঞ্চাকে তুচ্ছজ্ঞান করে শুধু সামনে এগিয়ে চলে রোমাঞ্চপ্রিয় দুটি মানুষ । পাড়ি দেয় আকাশ চুম্বী পর্বতমালা- ‘রিখটারসভেল্ড রেঞ্জ’ । কখনওবা সেই বাঙ্গালীর ছেলে শংকর পাড়ি দেয় দূর্গম কালাহারি মরুভূমি । খাদ্য নেই, পানি নেই । কোন এক পাহাড়ি গুহায় দেখা মেলে তারই মত হীরার খনি খুঁজতে আশা কোন হতভাগ্য অভিযাত্রির ত্রিশ বছর পুরনো কংকালের । এবার শকুনি আর হায়েনারা আশু শিকারের আশায় তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে । হীরার খনির সন্ধানে এবার বুঝি তাকেও জীবনের মুল্য দিতে হয় !

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যপার হল, লেখক বিভূতিভূষণ এই উপন্যাসে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্যের যে বর্ননা দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই তিনি কয়েকজন বিখ্যাত ভ্রমণকারীর গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে লিখেছেন । বইটির পাতায় পাতায় টান টান উত্তেজনা আর রুদ্ধশ্বাস অ্যাডভেঞ্চারে টইটুম্বুর ।

মানুষই পারে অসম্ভব কে সম্ভব করতে । নৈরাশ্যের নিকষ আঁধারে আশার প্রদীপ জ্বালানো কেবল মানুষের পক্ষেই সম্ভব। জীবনকে বাজি রেখে এই ছুটে চলা কেবলই কি হীরা-জহরত আর রত্ন প্রাপ্তির আশায়? না, তা নয় । এ যাত্রা মানুষের অ্যাডভেঞ্চারের তৃঞ্চা মেটাবার, এ গল্প দুঃসাহসী অভিযাত্রিদের । হয়ত বইয়ের পাতায় লেখক কে এক সময় এ যাত্রার ইতি টানতে হয় কিন্তু সে সমাপ্তিও পাঠকের মনে আরেক রোমাঞ্চের তৃঞ্চা সঞ্চার করে যায়।
Profile Image for Akash.
442 reviews146 followers
February 25, 2023
দুর্গম অরণ্য, রিখটারসভেল্ট পর্বতমালা, ধু ধু মরুভূমি, আগ্নেয়গিরি, বুনিপ, আলভারেজ, আত্তিলিও গাত্তি, শংকর। তাদের নিয়েই চাঁদের পাহাড়।

যাদের সারা আকাশ ঘরের ছাদ, সমস্ত পৃথিবী পায়ে চলার পথ, অমনি সুখে-দুঃখে নিস্পৃহ, অমনি নির্ভীক, যারা অনিশ্চিত মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও তৃতীয় নয়ন দিয়ে প্রকৃতিকে এবং দুনিয়াকে দেখে মুগ্ধ হতে পারে, সুখী হতে পারে। দশ বছরের জীবন উপভোগ করতে পারে দেড় বছরে। যারা মনে করে মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুলের মাপকাঠি, আমার কাছে তারাই সত্যকারের সভ্য মানুষ, সুখী মানুষ।

সভ্য জগতের মানুষেরা পৃথিবীর আসল রূপ দেখা থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীর অপরূপ সৌন্দর্য কেবল শংকর, আলভারেজ, আত্তিলিও গাত্তিয়াই দেখতে পারে। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও শংকর যখন প্রকৃতির রূপ দেখে বিস্মিত হয়েছে, আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে, তখন আমি জীবনের অন্যরকম একটা সুখের দর্শন খুঁজে পেয়েছি।

আলভারেজ যার শখ বিপদের নেশায় পথে পথে ঘুরে বেড়ানো; রত্নের লোভে নয়। আত্তিলিও গাত্তি যার রক্তে পৃথিবী জয় করা পর্তুগিজদের জিন। শংকর যার শখ অ্যাডভেঞ্চার। প্রকৃতি যার ইচ্ছা প্রকৃতি পূজারীদের সুখ দেয়া। আর এ নিয়েই চাঁদের পাহাড়।

মনের ভেতর আমার শংকরের বাস। একদিন আমি সত্যিকারের শংকর হব। সংসার জীবনে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবে তো দূরের কথা, আমার কল্পনাতে নাই। তাই আমার শংকর হতে মানা নাই। শুধু সাহস সঞ্চয় করা লাগবে। আরেকটু বয়স হোক। আমি আসছি শংকর তোমাদের অভিযানের অভিযাত্রী হব।।
Profile Image for HR Habibur Rahman.
283 reviews55 followers
March 10, 2023


তাঁবুর বাইরে রাত্রি ঘুটঘুটে অন্ধকার! দু'জনেই টর্চ ফেলে দেখলে বন্যজন্তুর দল গাছপালা ভেঙে ঊর্ধ্বশ্বাসে উন্মত্তের মতো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পশ্চিমের সেই ভীষণ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে, পুব দিকে পাহাড়টার দিকে চলেছে। হায়েনা, বেবুন, বুনো মহিষ। দুটো চিতাবাঘ তো ওদের গা ঘেঁষে ছুটে পালাল। আরো আসছে...দলে দলে আসছে...ধাড়ী ও মাদী কলোবাস্ বাঁদর দলে দলে ছানাপোনা নিয়ে ছুটেছে। সবাই যেন কোনো আকস্মিক বিপদের মুখ থেকে প্রাণের ভয়ে ছুটেছে!... আর সঙ্গে সঙ্গে দূরে কোথায় একটা অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে-চাপা, গম্ভীর, মেঘ গর্জনের মতো শব্দটা কিংবা দূরে কোথাও হাজারটা জয়ঢাক যেন একসঙ্গে বাজছে!!

ব্যাপার কী!
Profile Image for Khulud Binte Harun.
20 reviews23 followers
October 10, 2020
ছোটবেলায় বিভূতিভূষণের লেখা পড়িনি। কিন্তু কুড়িতে এসে লেখকের লেখা পড়েও বিস্মিত হচ্ছি বারেবারে। লেখকের কল্পনাশক্তি প্রখর। আফ্রিকাতে নিজে না গেলেও ধু ধু মরুভূমির এতো নিখুঁত বর্ণনা, কাহিনি, প্লট, এককথায় অসাধারণ !
মধ্যরাতে জ্যোৎস্নার আলোতে লেখকের অ্যাডভেঞ্চার গল্পে নিজেকেও আফ্রিকার পাহাড়, গুহা,মরুভূমিতে হারিয়ে গা শিহরিত হচ্ছিলো।
বাঙালি ছেলে শঙ্কর। অভাব অনটনের জন্য পারিবারের হাল ধরতে আফ্রিকা যাওয়ার সুযোগ পায় কাকতালীয়ভাবে। চাঁদের পাহাড়ের প্রতি তার আকর্ষণ আগেই ছিলো, আর রেলের চাকরি তার সে আশাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। ভয়ানক মরুভূমি, ঝিঝি পোকারও ডাক নেই।সিংহ, বাঘ,শকুন,বন্যপ্রাণীর উৎপাতে প্রতিটি রাতই কাটে বাঁচার লড়াইয়ে। রত্নের সন্ধিৎসু বাষট্টি বছরের অ্যালভারেজকে সেবা শুশ্রূষা করে ভালো করে তুললে দুজনে বেরিয়ে পড়ে রত্নের খোঁজে। চারপাশে বালির সমুদ্র। সিংহকে পরাজিত করার সামর্থ থাকলেও তৃষ্ণা রাক্ষসী ভেতরটা পুড়িয়ে ফেলে। শঙ্করের সাহস, নির্বিকতা থাকলেও অ্যালভাজারের কাছে ছিলো জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা । এক পর্যায়ে শঙ্করকে একাই এগোতে হয়। অ্যালভাজেরের শিষ্য সে, সহজে হার মানতে নারাজ। অ্যালভাচারের অনুপস্থিতি শঙ্কর চরিত্রকে নতুনভাবে চেনায়। স্নায়ুকে ঠান্ডা রেখে, ধীর পদক্ষেপ, ক্ষুধার্ত, নিশ্চল দেহ নিয়ে এগোতে থাকে । যতক্ষণ প্রাণ আছে এগিয়ে তাকে যেতেই হবে, পাড়ি দিতে হবে অজানার পথে। আত্তলিও গাত্তির সাথে শঙ্করের পরিচিতি নতুন মোড় নেয়।
শঙ্কর , অ্যালভারেজ,আত্তেলিও গাত্তি, জিম সব যেনো একই সূত্রে গাঁথা। অ্যালভারেজ নিয়ে লেখক লিখেছিলেন," ওর মতো মানুষ রত্নের কাঙাল নয়, বিপদের নেশায় পথে পথে ঘুরে বেড়ানোই জীবনের আনন্দ।"
জীবনটা অদ্ভুত সুন্দর। গোদবাধা সাধার��� জীবন কাটানোর চেয়ে সাহসি পদক্ষেপ নিয়ে গন্তব্যে পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্যে দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার মাঝে কি তৃপ্তি নেই? ঠিক যেমনটা আমাদের রঙিন স্বপ্নগুলোর ক্ষেত্রে ।
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews122 followers
November 8, 2020
" ছাদের আলসের দিব্যি চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় ��বস্থায় সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেয়ে স্ফটিক প্রস্তর হয়ে ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো "
গল্পের একদম শেষ দিকে এসে শঙ্কের মুখ থেকে শোনা প্রাচীন চীনের একটা ছড়া মনে দাগ কেটে গেলো।
"চাঁদের পাহাড়" কিশোর উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও এটা কিশোর বয়সে পড়ার মত ভাগ্য আমার হয়নি। এখন এত এত অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস পড়ার পর ও হঠাৎ এটা পড়ে খুব রোমাঞ্চকর একটা অনুভূতি হচ্ছে৷ কিশোর বয়সে এটা পড়লে যে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হতো সে বিষয়ে কোন সন্দেহ রাখে না।
আর এই বইয়ের প্রচ্ছদের ডিজাইনটা সেরা। সত্যজিৎ রায়ের করা কাজ কি আর যা তা হতে পারে!
Profile Image for Saumen.
256 reviews
May 6, 2024
কেবল বই ঘেঁটে, আর ম্যাপ দেখে, জীবনে বাংলার বাইরে পা না ফেলেও, এমন অভিযান কাহিনী লেখা যায়? এমন দৃশ্য বর্ণনা করা যায়! কি ভয়ংকর প্রতিভা মাইরি!

চাঁদের পাহাড় বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারণ আর অবিশ্বাস্য সম্পদ। বিভূতিবাবু ছাড়া আর কেই বা এমন লিখতে পারবেন!এমন মৌলিক অভিযান সাহিত্য বাংলায় কমই আছে। ভাবী সাহিত্যিকদের কাছে এই বইটা এই জনরার একটা পথিকৃৎ হয়ে রইবে।

তবে কল্পনা আর তথ্যে কিছু ভুল আছে। রিখটারভেল্ট পর্বতে যেভাবে ঘন ঘন বৃষ্টির কথা বিভূতিভূষণ লিখে গেছেন, আসলে অমন হয় না। জলের বড্ড কষ্ট ওখানে। তবে আফ্রিকান প্রেক্ষাপটে বাংলা মায়ের সন্তান হিসাবে তার কল্পনা খুবই ইউনিক।

বইটা পড়িনি, শুনেছি। সানডে সাসপেন্স এর অনবদ্য উপস্থাপনা, সব্যসাচীর অভিনয়( আলভারেজ), সাউন্ড এফেক্ট, পুরো জমিয়ে ক্ষীর করে দিয়েছে। আর সাথে বিভূতির দেবদুর্লভ প্রাকৃতিক বর্ণণা! দেবভোগ্য জিনিস।

ডিয়েগো আলভারেজ এর প্রতি আভূমিনত শ্রদ্ধা।

এখন বাইরে বৃষ্টি, একটা বাসে অন্তহীন পথের আরেকটা সাথী বাড়ল। অসাধারণ!!  

বি.দ্র: সিনেমাটা আশা করি বহুল পরিচিত। আমিও ছোটবেলায় দেখেছিলাম, শংকর হিসাবে দেব ভালই অভিনয় করেছিল। 
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 36 books1,855 followers
May 20, 2015
The best adventure novel ever written in Bengali literature. Period. The author's prowess becomes even more incredible if you keep it in mind that he had almost never gone anywhere other than his native place, the forests of old Singhbhum district, and to Calcutta city! And here we have an adventure encompassing the forests & mountains of Rhodesia (erstwhile Zimbabwe) come alive with all their thrill & dangers, as Shankar leaves his mouldering home behind and ventures in these utterly strange lands, thousands of miles away, seeking thrill & riches. For non-Bengali readers, it would be impossible to comprehend the magic that this novel has weaved on bengali minds since its first publication 74 years ago! But if you get an English translation, and if you can rid your mind of ideas about encountering another poorer cousin of "King Solomon's Mines", then read this book and enjoy the power of the pen wielded by this great Bengali author. I had read the book on my birthday,and the day had become special after this reading, that's all that I can say.
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews64 followers
August 3, 2023
বইটি পড়তে পড়তে একটা এমন বোধের জন্ম নিলো, জানার আছে আরো অনেককিছু। অনেক স্থান, অনেক পাহাড়-পর্বত, অনেক প্রাণী এবং আরো অনেককিছু নিয়ে জ্ঞান রাখার প্রয়োজন আছে। বেশ থ্রিলিং আর উপভোগ্য এক উপন্যাস! আমি মাঝেমধ্যে ভাবছি সেই সময়ে এমন একটা উপন্যাস লিখে ফেললেন বিভূতি বাবু!
পড়ে মনে হচ্ছিল না এটি একটা ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস। আমি যেন শঙ্কর আর আলভারেজের সাথে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি ফিরেছি। নিজেকে বারবার শঙ্করের জায়গায় দেখছিলাম। আমার মতে যারা বইটা পড়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিজেকে শঙ্করের জায়গায় কল্পনা করেছে।


তবে ছোট্ট একটা ত্রুটি যা চোখে পড়লো তা হলো, উনি সময় নিয়ে বেশ জাম্প করে করে যাচ্ছিলেন, লাইক "এতদিন এভাবে কাটানোর পর...." বা "এত মাস এভাবে চলার পর...."। এমন একটি বই পড়ার সময়, এমন একটা বাস্তবিক আবহে ডুকে যাওয়ার পর, আমার খুব করে জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল এই কিছুদিন তাদের কেমন কাটলো, কি করলো ওরা। (আমি জানি বইটি অনেকের খুব পছন্দের। আমারও খুবই ভাল লেগেছে। তবে এই বিষয়টা আমাকে বারবার ডিস্টার্ব করছিল। বিষয়টা না বললে নিজেকে হয়তো অপরাধী মনে হতো। আমাকে মাফ করবেন এর জন্য 😐)
Profile Image for Bookadmirer.
368 reviews240 followers
September 8, 2020


বইমেলা থেকে এইবছর বইটি কেনা। চমৎকার বইটি। অনেক ভালো লেগেছে।

(I bought this book from book fair this year. It's such a bewildering book.Totally enjoyed it.)
Profile Image for Daina Chakma.
436 reviews768 followers
May 30, 2018
বছর দুই আগে পড়েছিলাম। কেন যেন রিড সেলফে এড করা হয়নি। আহামরি টাইপ ভাল লাগেনি বললে লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসবে।

বরং কোথাও লুকিয়ে পড়া নিরাপদ।
Profile Image for Tarinee.
92 reviews
March 24, 2017
তারপর যাত্রা শুরু হারিয়ে যাওয়া সেই হীরের খনির সন্ধানে...চাঁদের পাহাড়ে... পদে পদে বিপদ্... তৃষ্ণা মেটাবার জল নেই, কখনো বা খাবার নেই, বাচার তাগিদে বাতে চোখেঁ ঘুম নেই... মৃত্যুর হাতছানি, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, রোমাঞ্চ সব কিছু মিলে এ এক ...

A favorite from childhood .I have read this book in Bengali , Odia and English ...multiple times ...

I remember purchasing this book from News paper Radiwala (scavenger) as a small boy . Though I was given a free hand at purchasing story books in my childhood , I was adamant at paying for my own books (mostly:P) .I used to love the sense of absolute ownership on my books and had a Puppy house toy for saving my prize money / pocket money /money from selling old newspapers for this very purpose .In this toy a dog comes every time you press a coin at the door , to take the coin and store it inside the house :)

So I remember while selling old newspaper to the Radiwala , I saw this book with a beautiful cover , only to purchase it from him with my puppy house savings .Little did I know ,at that time, it was a famous book by a famous Bengali author whose another work Pather panchali: the song of the road and it's sequel were adapted into a film trilogy directed by 'Satyajit Roy' , the creator of my another favorite sleuth from books 'Feluda'. At that time , while reading the book , the only feeling was that of finding a treasure . And a treasure it truly was :)

About the book (from blurb ) :

It is the story of a young Bengali man’s adventures in Africa in the years 1909-1910. Shankar, the protagonist, is a 20 year old man, recently graduated from college and about to take up a job in a jute mill, a prospect he absolutely loathes.

He yearns for adventure, wild lands, forests and animals. He wants to follow the footsteps of famous explorers like Livingstone, Mungo Park, Marco Polo, all of whom he has read about and idolizes. By a stroke of luck, he secures a job as a clerk in Uganda Railways through a fellow villager already working there and goes to Africa without a second thought.

After a few months laying rail tracks, he encounters the first of many dangers in pre-World War I Africa: a man-eating lion. Later, he takes up a job as station-master in a desolate station amidst the Veldts, where he to narrowly escapes a deadly black mamba. While at this post, Shankar encounters, rescues and nurses Diego Alvarez, a middle-age Portuguese explorer and gold/diamond prospector. Alvarez's arrival becomes a turning point in Shankar's life.

What followed was an epic adventure and the way Bibhutibhushan Bandyopadhyay describes it in his book , I vividly remember the chill I felt while reading this book as a child under a mango tree , as a teen hidden inside my text book and as a grown up man while returning from work in a heavy Delhi traffic :)

while randomly searching for books, few days ago, in Amazon I chanced upon a graphic novel based on this book
I wouldn't say the art work was great . but I really enjoyed reading this book in another form ,for one more time

P.S. 1-This book was adapted into a decent Bengali Movie in 2013 .
2-The writer had never been to Africa , yet described so clearly it's wilderness in the story .
Profile Image for Abhinav.
272 reviews260 followers
March 1, 2014
Before I start to write a review, I'd like to take the opportunity to pat my own back. For there was a time when I really thought I'd never get around to reading Bengali literature - but here I am, having accomplished what I set out to do.

Shankar Choudhuri is the protagonist of "Chander Pahar" (Mountain of the Moon) by Bibhutibhushan Bandopadhyay, the novelist famous for penning the novels on which Satyajit Ray's Apu trilogy is based. Shankar is your brilliant youngster in every respect - a good student with decent grades, an excellent athlete & a thirst for knowledge & adventure in his life. However, the year is 1909 & what awaits him at the end of his schooling is an ordinary clerical job at a jute factory. So when an acquaintance offers him the opportunity to work abroad, Shankar grabs it with both hands & lands in the middle of Africa, working for the Ugandan Railway Company.

Living in the vast grasslands of Africa with Europeans & locals alike as they go laying tracks for trains is not bereft of danger, for man-eating predators roam freely & a moment of indiscretion or complacency can often result in one's death. While on stationmaster duty at a remote station in Kenya, he happens to meet the Portuguese traveller Diego Alvarez, famished & on the verge of death. He nurses him back to health & Alvarez, in gratitude towards the young lad, decides to take him under his wing. Together, they set off on a great adventure in search of a legendary treasure that lies in an unknown cave, hidden somewhere in the forests of the Richtersveldt Mountain Range. But in a place where civilization has never set foot before, mere survival is often the biggest challenge. Will Shankar survive the ordeal of rainforests, high-terrain climbs, deserts, seemingly mythical beasts & live the life he had always craved for?

Despite the fact that the book falls under the category of children's literature, it bears the hallmark of Bibhutibhushan's work. The novelist is one of the major exponents of literary fiction in Bengali literature & so the prose is a notch higher than what I've encountered in Satyajit Ray's short novellas featuring the sleuth Feluda or in Anandamela, the Bengali literary magazine for children. So I can count myself lucky for having someone in the house who was willing to entertain my questions on vocabulary (thank you Maa!) every other time I was reading this.

The only point of criticism on my part is that the story could've been a bit shorter. I mean, it's an adventure tale & if something starts to feel a tad repetitive, you're killing the magic of it. To quote my mother's take on this - "Golpo kam, sahitya beshi" (Less of fiction & more of literature).

All in all, "Chander Pahar" is arguably one of the finest adventure novels I've had the pleasure of reading & even if you cannot read Bengali, there's always the English translation you can check out. Highly recommended.
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews116 followers
August 4, 2021
ছাদের আলসের দিব্যি চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় অবস্থায় সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেয়ে স্ফটিক প্রস্তর হয়ে ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো।

শঙ্করের সঙ্গী হয়ে অসাধারণ চিরসতেজ যাত্রা আবারো করবো, আবারো করবো, আবারো করবো....বিভূতিভূষণের কোনো তুলনা নেই। একজন বিশুদ্ধ প্রকৃতিপ্রেমী লেখকের কলম বোধহয় এমনই হয়। এডভ্যাঞ্চারের মধ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশকে যেভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন, বারবার আরণ্যকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। ধন্যবাদ প্রিয় লেখক, আপনি অনন্য।
Profile Image for Tasnim Dewan  Orin.
159 reviews81 followers
October 15, 2020
"তুমি সেই দলের মানুষ, সারা আকাশ যাদের ঘরের ছাদ, সারা পৃথিবী যাদের পায়ে চলার পথ। আশীর্বাদ কোরো তোমার মহারণ্যের নির্জন সমাধি থেকে, যেন তোমার মতো হতে পারি জীবনে, অমনি সুখ-দুঃখে নিস্পৃহ, অমনি নির্ভীক। বিদায়! বন্ধু আত্তিলিও গাত্তি! অনেক জন্মের বন্ধু ছিলে তুমি। তোমরা সবাই মিলে শিখিয়েছ চীন দেশের সেই প্রাচীন ছড়াটি কত সত্য— ছাদের আলসের দিব্যি চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় অবস্থায় সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেয়ে স্ফটিক প্রস্তর হয়ে ভেঙে যাওয়া অনেক ভালো, অনেক ভালো, অনেক ভালো। "



বাঙালী অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে শঙ্কর পাড়ি দিল সুদুর পূর্ব-আফ্রিকায় । ইউগান্ডা রেলওয়ের নতুন লাইন তৈরী হচ্ছিল সেখানে চাকরী পেয়ে গেল । ডিয়েগো আলভারেজ নামে দুর্ধর্ষ এক পর্তুগীজ অভিচারীর জীবন সে সেবা করে বাচিয়ে তোলে। শঙ্কর তার সাথে মহাদুর্গম রিখটারস্ভেল্ড পর্বতে অজ্ঞাত এক হীরের খনির সন্ধানে যায়।

আফ্রিকার জংগলের গা ছমছমে বর্ণনা। কখনো সিংহ কখনো বা ব্লাক মামবা, আছে অজগর সাপ বা কখনো বা অজানা বুনিপের ভয়। পর্যটকেরা যারা নাম দিয়েছিলেন চাঁদের পাহাড় সেই রিখটারস্ভেল্ড পর্বতে কি শঙ্কর আর আলভারেজ হীরের খনি পেয়েছিল নাকি শুধুই মরিচিকা? বুনিপের সাথে কি
শঙ্করের দেখা হয়েছিল নাকি আফ্রিকান অঞ্চলের লোককথার কোন পশু কেবল তা?

ভাবতে বেশ অবাক লাগে যে কোন রকম বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বন না করে আফ্রিকার এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার গল্প কিভাবে লিখেছেন লেখক?

কিশোরদের জন্য লিখা লেখকের প্রথম বই এইটি। প্রিয় লেখকের এই বইয়ের রিভিউ লিখার যোগ্যতা বা ইচ্ছা কোনটায় নেই। বাংলা সাহিত্যে এর থেকে ভাল কোন এডভেঞ্চার উপন্যাস আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে?

বইটি না পড়ে থাকলে আজই পড়ে ফেলুন পচতাবেন না।

৫ তারা কারন এর বেশি দেওয়া যায় না।
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
May 31, 2019
শঙ্করের দুর্গম জীবন । কখনো হিসহিসিয়ে ওঠে পাইথন, ফনা তোলে কালগোখরা বা নড়েচড়ে ওঠে অন্ধকারের অতিকায় জন্তুরা । যে পর্তুগিজ পরিব্রাজকের সাথে দীর্ঘ এ্যামাজানে অভিযান সে এক পর্যায়ে শ্বাপদ আক্রমনে মারা যায় । শঙ্কর তবু যেতে থাকে যেখানে সাজানো আছে প্রাকৃতিক গুপ্তধন । হাতে আছে অচেনা জঙ্গলের ম্যাপ । একটা পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পথ হারিয়ে ঘুরতে থাকে । একদিন, দু'দিন করে দিন যায় । খাবার ও পানিহীন হাতড়াতে থাকে অন্ধকূপের স্যাঁতস্যাতে বন্ধগুহার দেয়াল । বুদ্ধি করে পাথরের দেয়ালে চিহ্ন এঁকে চলতে থাকে । এক পর্যায়ে খুঁজে পায় একটা জলাধার আর জ্বলজ্বলে অসংখ্য হীরে-মনি-মুক্তা । আঁজলা ভরে পানি খেয়ে প্রাণ ফিরে পায় শঙ্কর । যার জন্য আসা সেই গুপ্তধন তুলে না নিয়েই ওপারের সুড়ঙ্গ দিয়ে সপ্তাহান্তে দিনের আলোয় বের হয়ে নেয় বুক ভরা বাতাস ।
Profile Image for Pranta Dastider.
Author 18 books328 followers
March 4, 2016
বাঙালী যুবক শঙ্কর। পড়ালেখায় কিঞ্চিৎ পিছিয়ে গেলেও দুর্দান্ত অ্যাথলিট। সাঁতার, দৌড়, ফুটবল কিংবা বক্সিং সবেতেই নম্বার ওয়ান। আর সেই ওকেই কিনা হতে হলো সংসারের পাক চক্রের মুখোমুখি? করতে হবে ছা-পোষা কর্মচারীর চাকরি, দৈনিক অফিস বাসার হ্যাপা পোহাতে হবে? এও কি সহ্য হয়? তাহলে তো বছর ধরে জঙ্গলের সব দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চারের লোভে নিজেকে গড়ে তুলে কী লাভ হলো, রোমাঞ্চের স্বপ্ন দেখে কী ফয়দা হলো? সব ভেস্তে যাবার পথে, বাবা অসুস্থ, সংসারে টাকা চাই, এখন উপায়?

উপায় একটা হলো বটে। সোজা আফ্রিকার জঙ্গলের ভয়ংকের মুখোমুখি গিয়ে উপস্থিত হল শঙ্কর। কাজও পেল অর্থের যোগান দেবার মত। কিন্তু হিংস্রা যে নিত্য ওৎ পেতে থাকে জীবননাশের তাগিদে। কখন সিংহ এসে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সহকারী কাউকে, আবার কখনও ভয়ংকর সাপ ফনা তুলে ছোবল মারছে ছপাৎ করে। আর এরা ছেঁড়ে দিলে মাথার উপর আচ্ছে গোঁত্তা খাওয়া শকুন, যারা সহজেই বুঝে নেয় শিকারের অন্তিম সময়। রাতের বেলায় হানা দেয় কায়োট আর শেয়ালের পাল, আছে নেকড়ে, হায়নার হাসি। আর সবকিছু ছাপিয়ে আছে দুর্ধর্ষ জঙ্গল, জলহীন প্রান্তর, মৃত্যুর হাতছানি।

সোনার আর হীরে উদ্ধারে মরিয়া শঙ্কর কি শেষমেশ পারল জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরতে? চাঁদের পাহাড় গল্পের উপজীব্য বিষয় সেটাই। ভয়ংকের মুখোমুখি এক বাঙালী যুবকের বেঁচে থাকার লড়াই, হার না মানা মাসের পর মাস ভ্রমণ। সঙ্গীহারা হয়েও মনোবল জিইয়ে রাখার অন্তিম সংগ্রাম। এক মারাত্মক অভিযান!

আজ সকালেই শেষ করলাম বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিংবদন্তী অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, 'চাঁদের পাহাড়'; সত্যি বলতে বইটা সম্পর্কে প্রথম জেনেছি বছর কয়েক আগে। আজন্ম অ্যাডভেঞ্চার গল্প প্রেমী হিসাবে নিজেকে দাবি করার পরেও এই বই না পড়া এক একরকম পাপের পর্যায়ে পড়ে, পাঠক বন্ধুরা তেমনটাই বলেছে, এবং আজ থেকে আমি তাদের সাথে একমত।

বিভূতিভূষণের এই উপন্যাস যখন রচিত হয়েছিল তখন আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই দৌরাত্ব ছিল না, ছিল না গুগলের মত সচেতন বান্ধব। আর লেখক কখনও সশরীরে আফ্রিকাতেও যাননি। তাতে এত নিখুঁত ডিটেলিং-এর বর্ণনা, এত বাস্তবিক প্রকৃতির ব্যাখ্যা, এত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি তিনি কী করে করলেন? উত্তর একটাই, বই পড়ে জেনে, বুঝে, শিখে। এবং ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, এই বক্তব্যের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত তার অনবদ্য সাহিত্যকর্ম, "চাঁদের পাহাড়" স্বয়ং।

বই পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, শঙ্কর নয়, আলভারেজ নয়, বরং আমিই রয়েছি সেই আফ্রিকার গহীনে, ছুটে চলেছি ওদের সাথে। কখনও সিংহের ভয়ে কুঁকড়ে গেছি, কখনও অজানা লতার বিষক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়েছি, কখনও কিংবদন্তী জন্তু বুনিপের আতঙ্কে সিঁটিয়ে গেছি তাবুর কোণায়, আবার পথ হারিয়েছি নিকষ গুহার কানাগলিতে। তেষ্টায় বুক ফেটে গেছে আমারও।

খাবার অভাব, পানির অভাব, আর একগাদা জন্তুর ভয়, সেখানে শঙ্করের যায��গায় আমি হলে হয়তো ভয়েই মরে যেতাম। যদিও শঙ্করের কোনও অতিমানবীয় গুণ নেই। গল্পের বিভিন্ন যায়গায় সেও আক্রান্ত এবং পরাস্ত হয়েছে, কিন্তু ভাগ্যের জোরে কিংবা বন্ধুর সহযোগিতায় বেঁচেও গেছে।

সত্যি বলতে সকাল সকাল এতো দুর্দান্ত একটা গল্প পড়ে মনে হচ্ছে দিনটাই ভাল হয়ে গেছে। বিভূতিভূষণের গল্প সত্যিই কালজয়ী। এখনও আফ্রিকার সেই গহীন জঙ্গলে গেলে বাওবাব গাছের দেখা মিলবে, পাওয়া যাবে সেই সব বিষাক্ত লতা পাতা, কিংবা লোভনীয় সোনার খোঁজ। এখনও আদিম আতঙ্ক পিছু হটিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত। এখনও ওৎ পেতে শিকারের অপেক্ষা করছে মানুষখেকো জন্তুর দল। সেই সাথে যোগ হয়েছে প্রকৃতির দুর্দান্ত বর্ণনা, অগ্লুতপাতের দুর্দান্ত বর্ণনা। পাহাড়ের খাঁজে দাঁড়িয়ে যে সৌন্দর্য শঙ্কর অনুভব করেছে, তা আমিও অনায়াসে চোখ বন্ধ করে টের পেয়েছি। মাঝরাতের আকাশে তারাদের ঝকমকে সৌন্দর্য কেবল শঙ্করকেই না, আমাকেও মুগ্ধ করেছে। প্রকৃতির বুকে খসে পড়া জোছনার রূপ, বাতাসের গুঞ্জন, তুষারঢাকা পর্বতচূড়া! আহা, যেন আমিই ছিলাম সেই অভিযানে, ওদের সাথে, ওদেরই একজন হয়ে।

নাহ, বলতে থাকলে আর শেষ হবে না। জানি চাঁদের পাহাড় এর মধ্যে অনেকেই পড়ে ফেলেছেন। তবুও যদি না পড়ে থাকেন, তাহলে পড়ুন অবশই! এক জীবনে চাঁদের পাহাড় না পড়লেন, তো কী করলেন?!
Profile Image for Sukanta Bhattacharjee .
52 reviews11 followers
April 17, 2024
*বরাররের মতোই নিজের জন্য আবার কিছু অনুভূতি সংরক্ষণ করার প্রয়াস*
কবছর পর আবার পড়লাম বইটা? ৬-৭ বছর তো হবেই। পড়ে ভুলে যাওয়ার মতো একটা আশীর্বাদের মতো রোগ আমার কবছর ধরে রয়েছে। যার জন্যে থ্রিলার বইও বারবার উপভোগ্য আমার কাছে। কিন্তু এই বইতো থ্রিলার নয়। আমি জানি, আমার মনে আছে, এই গল্পের ভিলেন কে? আমি চিনি এই গল্পের রত্নভান্ডারের দিশা।

১৯১০ সালে আফ্রিকার যে জঙ্গলে শংকর রত্নখনি খুঁজতে গেছিল, বিংশ শতাব্দীতে সাদা পাতার কালো অক্ষরের প্রতিটা খাঁজ খুঁজে খুঁজে আমিও চলতে থাকি। ইউগান্ডার তাঁবুতে হিংস্র সিংহের গর্জন আমি রেডিওর মতো শুনতে পাই, আমার দশ হাত দূর থেকেই যে লোককে মুখে করে নিয়ে যায়, শুনতে পাই তাঁর আর্তচিৎকারও। গল্পের নায়ক নিরুপায় যেখানে, আমি সমাধান না খুঁজে মুভ ফরোয়ার্ডে মনোযোগ দিই।

দিয়েগো আলভারেজ। দিয়েগো আলভারেজ! তুমি কি আসলেই ছিলে? তোমার মতো এত শক্ত মানুষ আমি কখনো পড়িনি। তোমার কি শ্রান্তি নেই? এই আকাশ তোমার ছাদ, পৃথিবী তোমার পথ। তোমার যাযাবর জীবনের
কলস এত রোমাঞ্চ দিয়ে লেখক ভরে দিয়েছেন, এমন জীবন পেতে হিংসে হয়।

জিম কার্টার, আর...
আর, আত্তিলিও গাত্তি।

রিখটারসভেল্ট পর্বতমালা। যেখান থেকে কোন এক রাতে শংকর আর আলভারেজ দেখেছিল, প্রাচীন এক আগ্নেয়গিরির পুনরুত্থান। যে দৃশ্যের কাছে শত রত্নখনিও তুচ্ছ। তাদের সাথে বইয়ের পাতায় পাতায় আমিও ছিলাম। আমিও ছিলাম। আগ্নেয়গিরির ছাই জমছিল চারপাশে। গাছের শেকড়ে দুইটা আদ্যাক্ষর বারবার চোখে পড়ছিল। শংকরকে বললাম, আমরা ডেথ সার্কেলে পড়েছি।

এ যেন, কখনো আমি জিম কার্টার, কখনো আলভারেজ, কখনো আত্তিলিও গাত্তি। নির্ভার আকাশের তারা গুনতে গুনতে কখনো কমলালেবুর সুবাস পাই, কখনোবা শুনতে পাই ফ্লোরেন্সের গীর্জার মিষ্টি ঘন্টা ধ্বনি। মরে গিয়েও শংকরের উপকারে আসতে পারলে বর্তে যাই। আবার আমি শংকর, পথ হারিয়ে, বন্ধু হারিয়ে মৃতপ্রায় আমি জেগে উঠি, বারবার বেঁচে যাই, প্রতিবার জানি আমি অদম্য। আফ্রিকার অন্ধকার আমাকে হারাতে পারে না। দুর্গম, কিন্তু অজেয় নয়। বিপদসংকুল কিন্তু এডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ। আকাঙ্ক্ষার ভান্ডার, কিন্তু লোভশুন্য সেই সুন্দর, বন্য চাঁদের পাহাড়।
Profile Image for Tamoghna Biswas.
361 reviews147 followers
December 15, 2020
বাংলায় রিভিউ লিখতে যখন বসেইছি, তখন জীবনে প্রথম পড়া বই দিয়ে শুরু করাই শ্রেয়। এ হেন বই এর প্রশংসা করতেও একটু বাধে আজকাল, যেমন English এ classics এর প্রশংসা করলে লোকে পরে বলবে এ তো জানা কথাই, নতুনত্য কিছুই নেই। তাই বলে নিন্দা ও তো আর করা যাবে না, যখন এটা ধ্রুব সত্য যে বিশেষত এই বইটিই আমার বই পড়ার প্রতি যে আগ্রহ, তার জন্মদাতা।

জানিনা, কি লিখব এখানে। শুধু এটাই বলব যে আমার জীবনে পর শ্রেষ্ঠ বই গুলির মধ্যে এটি অন্যতম; বিশেষত যদি এই genre এর কথা বলি। এর পর একই রকমের বই বহু পড়েছি বাংলায়, এমনকি English বা Spanish এও টুকিটাকি, (হিসেব মত ভাবলে দেখা যাবে Ernest Hemingway এর The Snows Of Kilimanjaro ও একই প্রকারের লেখনী, Tim Butcher বা James Rollins এর মত আরও বহু লেখকের একই বিষয়বস্তুর উপর বহু versatile নিদর্শন আছে)কিন্তু আজও আফ্রিকার ব্যাপারে কিছু পড়লেই প্রথমে মনে পরে শঙ্কর এর কথা। মনে হয়, চিরকালই পড়বে।

কারণ আমি ঠিক করে বলতে পারবো না, হয়তো। বুদ্ধদেব গুহ নিজে আফ্রিকা বহুবার ভ্রমণ করে এসে বহু উপন্যাস লিখেছেন, ওখান কার বহু উপজাতি কে নিয়ে research ও করেছেন । তারপর ও তাঁর গল্পেই একজনকে বলতে শোনা যায় : “বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো একবারও না এসেই ‘চাঁদের পাহাড়’ লিখেছিলেন। তুমি কি পঞ্চাশবার এখানে এসেও একটি ঐ রকম বই লিখতে পারবে?”

গল্পের বিষয়টি ও সকলের কাছে অতি পরিচিত, অনেকটা El Dorado এর সন্ধানে ভবঘুরে prospector-দের মতন, তফাতটা এখানে শঙ্কর একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালী যুবক, যার ঘাড়ের উপর একটি পরিবার সামলানোর ও দায় এসে পরে বাবা অসুস্থ হওয়ার পর। চাকরির সন্ধানে, এবং একই সাথে স্বপ্ন পূরণ করতে সে Africa এ যায় মজুর হিসেবে কাজ করতে, যেখানে ঘটনাচক্রে তার ডিয়েগো আলভারেজ নামের এক Portuguese prospector এর সাথে দেখা হয়, এবং সে বেরিয়ে পরে Rwenzori Mountain Range এ হীরের সন্ধানে; একবারও না ভেবে যে সে একেবারেই এরকম কাজ-এ পারদর্শী নয়। এরপর কিভাবে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে ছিনিমিনি খেলে শঙ্কর ঐ দুর্গম অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে, মূলত সেটা নিয়েই এই গল্পটি তবে গল্পের সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হলো ঘটনাগুলি কতটা বাস্তবসম্মত, বস্তুত: মাঝেমাঝে Yossi Ghinsberg এর আত্মজীবনী মনে পড়তে বাধ্য। Richtersveld এর সেই হাড়-হিম করা একাকিত্ত, এই বয়সে এসে প্রায় প্রত্যেকটি শব্দ মুখস্ত হয়ে গেছে বইটার, তো আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। উপরন্তু, বিভুতিভূষণের লেখনী, এবং যাকে বলে Factual Information-এর সঠিক প্রয়োগ, এক বাঙ্গালিয়ানার ধাঁচে সম্পূর্ণ লা-জবাব।

Recommend করার কথা ঠিক ওঠেনা, কারণ যে কোন বাঙালী বইপ্রেমীর কাছে এটি একটি ঘরোয়া বই। তাও, অনেকের যাদের এর ব্যাপারে মূলত কোন Idea-ই নেই হয়তো Adaptation টি দেখে, অনুগ্রহ করে Cinema টি দেখে বইটির ব্যাপারে কিছু ভাবতে যাবেন না। বইটি এমন ভাবেই লেখা যে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেরই বোধগম্য হবে, সুতরাং, না পড়ে থাকলে, একবার পড়ে দেখুন।
Profile Image for Shariful Sadaf.
195 reviews108 followers
June 19, 2022
বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ “চাঁদের পাহাড়”। মনের সকল অনুভূতিকে বইয়ের পাতায় স্থির করে যখন পড়ছিলাম তখন খুব অল্পক্ষণেই নিঃশেষ করে ফেললাম ৮৮ টি মহামূল্যবান পৃষ্ঠা।

বই পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল নিজেই বোধহয় আফ্রিকায় হারিয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছিল আফ্রিকার গহীন বনজঙ্গল, উঁচু পাহাড় এই সবটাই লেখকের বেশ ভালো মতন চেনা। এমন নিখুঁত বর্ণনা!

শংকর একেবারে অজপাড়াগায়েঁর ছেলে।হঠ‍াৎ করেই পিতার অসুস্থতার জন‍্য চাকুরী জীবনে যোগদান করতে হয়। তাও আবার সুদূর আফ্রিকার মোম্বাসায়। সেখানেই ঘটনাক্রমে ইউরোপীয়ান এক ভদ্রলোক ডিয়েগো আলভারেজ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ।তাঁর কাছেই রোমাঞ্চকর এক হীরার খনির খবর পায় সে।
এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় চাকুরী ছেড়ে তার নতুন বন্ধু পিতৃতুল্য আলভারেজ কে সঙ্গে নিয়ে সেই হীরার খনির সন্ধান করবে।
ব‍্যস! শুরু হ��়ে গেল এক চমকপ্রদ জার্নি।
অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে যার সমাপ্তি।

দুর্গম,ভয়ংকর এবং একই সাথে শ্বাস্রুদ্ধকর সৌন্দর্য্যের আফ্রিকাতে শংকর আর ডিয়েগো আল্ভারেজের অভিযানের কাহিনী আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। বই পড়ার পরে আরো একধাপ অবাক হবেন যখন জানতে পারবেন বিভূতি কখনো আফ্রিকায় যাওয়া ছাড়াই এ বই লিখে ফেলেছেন।

আমার মতে, সাহিত্যের সার্থকতা হল গল্পের চরিত্রের মাঝে পাঠককে ���্রবেশ করানো। এদিক দিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শতভাগ সফল। যিনি কখনো আফ্রিকায় যান নি, কেবলমাত্র বই পত্র পরে আর ম্যাপ ঘেঁটে অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে এক অসাধারণ লেখনির মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে যাবে আফ্রিকার গভীরে, সাভানা আর নিঝুম অরণ্যের গোলক ধাঁধার ভেতর দিয়ে। মাঝ রাতের আকাশে তারাদের ঝকমকে সৌন্দর্য কেবল শঙ্করকে না, আপনাকেও মুগ্ধ করবে!
Profile Image for Uttam Pal.
30 reviews41 followers
April 1, 2010
Travelogue is usually not a favorite genre of mine. But I must say that I really liked this novel. Unlike আরণ্যক, another famous novel and the only other novel by Bibhutibhushan that I've read, it has a consistent and gripping storyline. The thrills would keep your adrenalin level high throughout. The author had never been to Africa, even though his vivid description of wilderness exploration amazed me.
...আফ্রিকায় পৌছে প্রথমে সিংহের উত্পাত...সেখান থেকে একেবারে black mamba-র খপ্পরে... I think that was the best scene in the novel when our protagonist শঙ্কর woke up in the middle of a night to discover a black mamba rearing its head about two and a half feet above the ground in a biting distance...
...সেখানে দৈবাত্ দেখা এক পর্তুগীজ wilderness explorer এর সঙ্গে, who in his youth almost discovered a diamond mine somewhere in the foothills of the Mountain of Moon. তারপর যাত্রা শুরু হারিয়ে যাওয়া সেই হীরের খনির সন্ধানে...চাঁদের পাহাড়ে... পদে পদে বিপদ্... তৃষ্ণা মেটাবার জল নেই, কখনো বা খাবার নেই, বাচার তাগিদে বাতে চোখেঁ ঘুম নেই... মৃত্যুর হাতছানি, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, রোমাঞ্চ সব কিছু মিলে এ এক amazing novel.
Profile Image for Sumaiya Akhter  Lisa.
83 reviews
October 12, 2022
ছোটবেলা থেকেই অ্যাডভেঞ্চার মুভি দেখে আসছি। কিভাবে পাহাড়-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে, শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে গুপ্তধনের সন্ধানে কিছু সাহসী অভিযানে নামে মানুষ ! কিন্তু সেই সব গল্পের প্রধান চরিত্র গুলো ছিল ভিনদেশী। ওরা বলতে গেলে প্রায় সব কাজেই দক্ষ। এই বইটাই আমার পড়া প্রথম বাংলা অ্যাডভেঞ্চার বই৷ অন্য কোন ভাষা থেকে অনুবাদকৃত না, একদম বাঙালী লেখকের হাতে তৈরি একজন বাঙালির অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। 
গল্পের প্রধান চরিত্র শঙ্কর। বাকি দশটা সাধারণ ছেলে থেকে আলাদা গোছের। সে পাকা খেলোয়াড়, নামজাদা বক্সার, ওস্তাদ সাঁতারু। এফএ পাশ করে ভাগ্য ক্রমে আফ্রিকা আসে চাকরির জন্য। আর সেখান থেকেই শুরু তার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার। 
লেখক শঙ্করের চোখ দিয়ে আফ্রিকার যে ছবি তুলে ধরেছেন তা অকল্পনীয়। 
৯-১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সীর জন্য বইটি সুখপাঠ্য। 
Profile Image for Amanna Nawshin.
191 reviews55 followers
February 22, 2020
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

বাংলা সাহিত্যে এতো সুন্দর একটা মৌলিক অ্যাডভেন্চার গল্প, তাও আবার বিভূতিবাবুর লেখা! এই দুইয়ে মিলে ব্যাপারটা আমার কাছে একটা হুলস্থুল ব্যাপার! প্রথমত বিভূতিভূষণের লেখা আমার পছন্দ, উনার লেখা যা ই পড়ি তাই আমার মনে দাগ কাটে! দ্বিতীয়ত বই পড়ে ঠিক বই এর বিষয়বস্তু অনুযায়ী মনের ভাব হওয়ায় যে একটা ব্যাপার আছে, উনার লেখা পড়ে আমারও সেই ভাবটা হয়। যে কোন লেখকের লেখা ভালো লাগার জন্য তো মনে হয় এ ই যথেষ্ট!

আফ্রিকার গহীন অরণ্যের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য আর বিচিত্র জন্তু জানোয়ারের যেকোনো সময় আগমনের আতঙ্ক বুকে নিয়ে শঙ্কর আর দিয়েগো আলভারেজের হীরা অনুসন্ধান অভিযানের গল্প টা যে এভাবে মনে দাগ কাটবে তা পড়ার আগেও বুঝতে পারিনি। ইহা একটি অবশ্য পাঠ্য বই!
Profile Image for Adham Alif.
327 reviews78 followers
April 13, 2023
4.5/5
"মানুষের আয়ু মানুষের ভুল মাপকাঠি
দশ বছরের জীবন উপভোগ করেছে সে এই দেড় বছরে"

এই দু'লাইনের মাধ্যমেই পুরো গল্পের সারসংক্ষেপ টানা যায়। শংকরের গল্পটা আফ্রিকার, এডভেঞ্চারের। বিভূতি কখনো আফ্রিকায় যাননি। পুরো প্লট সাজিয়েছেন কল্পনার আশ্রয় নিয়ে। পড়তে গিয়ে আমার শুধু মনে হয়েছে কল্পনার উপর ভিত্তি করেও এতো দারুণ লিখা যায়? এতোদিন পরে এসেও সেই এডভেঞ্চার ছোটবেলার মতোই রোমাঞ্চ জোগায়। শংকরের চোখে এখনো নিজেকে দেখি! আর আলভারেজকে নিয়ে শেষে উক্তিটা তো মনে গেথে আছে একদম।

"বিপদের নেশায় পথে পথে ঘুরে বেড়ানোই তাদের জীবনের পরম আনন্দ। কুবেরের ভান্ডারও তাকে এক জায়গায় চিরকাল আটকে রাখতে পারত না।"
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
July 2, 2023
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার প্রিয় লেখক। পথের পাঁচালীর মাধ্যমে লেখকের সাথে পরিচিত হই এবং একে একে প্রায় সব লেখাই পড়া হয়েছে। 'চাঁদের পাহাড়' আমার অন্যতম প্রিয় একটি লেখা। গ্রাম-বাংলার এক যুবকের আফ্রিকায় এডভেঞ্চারের গল্প।

১৯০৯ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে তখনো ৫ বছর বাকি। অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে শঙ্কর সবেমাত্র এফ. এ. (বর্তমান সময়ের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সমতুল্য) পাস করে গ্রামে এসেছে। হাতে কোনো কাজ নেই। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মাছ ধরা, দুপুরে ভাতঘুম দিয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল। শঙ্কর পড়ালেখায় খুব ভালো না হলেও বিভিন্ন খেলাধুলায় খুব নাম করেছিল। তবে তার সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় ছিল নতুন কিছু জানা। পৃথিবীর কোথায় কী আছে, মহাকাশের কোন নক্ষত্র কখন কোথায় অবস্থান করে এসব শঙ্করের নখদর্পনে। এডভেঞ্চারের বই পড়ে নিজেকে মার্কো পোলো কিংবা রবিনসন ক্রুশো মনে হয় শঙ্করের।

শঙ্করের বাবা অসুস্থ তাই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে চলে আসে। কিন্তু চাকরি পাওয়া ত সহজ নয়। আর শঙ্কর ছোটখাটো চাকরি করতে ইচ্ছুক নয়। শঙ্করের মা গ্রামের এক আত্মীয়কে বলে পাটের কলে শঙ্করের কাজের কথা বলেছিলেন। সে শেষমেশ কিনা পাটের কলের বাবু হয়ে সকাল বিকাল দৌড়াদৌড়ি করবে! তবে শঙ্করের জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি ঘটনা ঘটে যায়। গ্রাম সম্পর্কের দিদি ননীবালার স্বামী দুইবছর যাবত নিখোঁজ ছিল। এতদিন পর তিনি পূর্ব আফ্রিকার মোম্বাসা শহর থেকে চিঠি পাঠান। সেই ঠিকানাতেই শঙ্কর চিঠি দিয়ে বসে। যদি সে কোনোভাবে ওখানে যেতে পারে! চিঠির উত্তর নিয়ে শঙ্কর যখন হতাশ হয়ে পড়ে তখনই উত্তর আসে এবং শঙ্করের চাকরি জুটিয়ে দেওয়ার ভার নেন তিনি।

শঙ্করের চাকরি হয় উগান্ডা রেলওয়ে কন্সট্রাকশন ক্যাম্পের কেরানী ও সরকারি স্টোরকিপার হিসেবে। বাড়িঘর তখনো তৈরি না হওয়াতে সকলকেই তাঁবুতে থাকতে হয়। দিনের বেলা ঠিকঠাক কাজ চললেও, সিংহের উপদ্রবে রাতে ঘুমানো খুব অসুবিধা। কয়েকজন কুলিকে সিংহ ধরে নিয়ে গেলে বাকি কুলিরা কাজে যোগদানে অস্বীকৃতি জানায়। তবুও তাদের বুঝিয়ে এবং অস্ত্র হাতে পাহারা দিয়ে তাদের কাজ চলমান রাখতে হয়। কিছুদিন পর শঙ্করকে কিসমু থেকে ত্রিশ মাইল দূরের এক রেলস্টেশনে স্টেশন মাস্টার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন পদ পেয়ে খুশি শঙ্কর। দিনে মাত্র দুইটি ট্রেন এই লাইনে চলে, তাই শঙ্করের অখণ্ড অবসর। রেলস্টেশনে দ্বিতীয় কোনো কর্মচারী নেই বিধায় সবসময় নিজের মনেই বিভিন্ন কাজ করে সময় কাটায় শঙ্কর।

সত্যিকার এডভেঞ্চার বলতে যা হয়, সেটা শঙ্করের জীবনে আসে ডিয়াগো আলভারেজের সাথে পরিচয় হওয়ার পর। একদিন সকালে শঙ্কর মাছ ধরার সময় দূরে মৃদু আর্তচিৎকার শুনতে পায় এবং কাছে গিয়ে মরণাপন্ন এক ব্যক্তিকে আবিষ্কার করে। ইউরোপিয়ান লোকটির পরনে তালি দেওয়া ছিন্ন জামাকাপড়। শঙ্কর দেখেই বুঝতে পারে লোকটি দীর্ঘদিন আফ্রিকার মনুষ্যবিহীন অঞ্চলে পথ হারিয়ে ঘুরেছে। শঙ্কর সেবা করে আলভারেজকে সুস্থ করে তোলে। অসুস্থ থাকার সময় আলভারেজ শঙ্করকে এক অদ্ভুত গল্প বলে। সেই গল্পের টানেই শঙ্কর আলভারেজের সাথে বেরিয়ে পড়ে এডভেঞ্চারের নেশায়। শঙ্কর ও আলভারেজ কি পারবে তাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তুর সন্ধান পেতে?

আদর্শ এডভেঞ্চার গল্প বলতে যা বুঝি, 'চাঁদের পাহাড়' তেমন একটি বই। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সৃজনশীল চিন্তাশক্তি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কখনো আফ্রিকায় যান নি, অথচ বইটি পড়লে মনে হবে লেখক যেন নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শঙ্করকে চালিত করেছেন আফ্রিকার প্রান্তরে। বইটি পড়তে পড়তে পাঠক নিজেকে কখন যেন শঙ্করের জায়গায় আবিষ্কার করবেন টেরও পাবেন না। অদম্য সাহসী চরিত্র শঙ্কর যেন অনুপ্রেরণার প্রতীক। অধিকাংশ পাঠকই বইটি পড়েছেন; তবে যারা এখনো পড়েন নি, অসাধারণ এক এডভেঞ্চারের সহযাত্রী হতে বইটি পড়ুন। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Raisa Chowdhury.
25 reviews6 followers
August 15, 2023
কি রোমাঞ্চকর!
মানুষের আয়ু মানুষের জীবনের ভুল মাপকাঠি। দশ বছরের জীবন উপভোগ করেছে সে এই দেড় বছরে।"
আমারও একসময় এমনটাই লাগত। ঘরের মধ্যে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকাটাই কি জীবন? জীবনের উদ্দেশ্যেই বা কী? পড়াশোনা করে একটা চাকরি জুটিয়ে বিয়ে করে সংসার করাটাই কি জীবন? আমার মন এতে সায় দিত না। মনে হতো কোথাও একটা বেড়িয়ে পড়ি, দূরে_বহু দূরে কোথাও। আফ্রিকার অ্যাডভেঞ্চারের গল্প পড়তে পড়তে আফ্রিকায় যাওয়ার কি যে এক প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা অনুভব করতাম! আফ্রিকাকে যেন আমি একপ্রকার ভালোবেসে ফেলেছিলাম। মনে হতো ঘরের ভেতর বসে থেকে দশ বছরের জীবন না কাটিয়ে শঙ্করের মতো দেড়টা বছর কাটাই। কিন্তু সে সুযোগ কি আর আছে?
ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
     পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নীচে
     শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি
মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অলস দেহ ক্লিষ্টগতি—
     গৃহের প্রতি টান।
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু
     নিদ্রারসে ভরা,
মাথায় ছোটো বহরে বড়ো
     বাঙালি সন্তান।
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তাই তৈল ঢালা নিদ্রা রসে ভরা স্নিগ্ধ তনু নিয়ে আমি আরামসে অলস জীবন কাটাই। সে যতই আপনি "ছাদের আলসের দিব্যি চৌরস একখানা টালি হয়ে অনড় অবস্থায় সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকার চেয়ে স্ফটিক প্রস্তর হয়ে ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো, ভেঙে যাওয়াও ভালো।" বলেন না কেন, আমি অনড় অবস্থায় সুখে স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকব। তবুও আজ চাঁদের পাহাড় পড়তে পড়তে আবারো স্ফটিক প্রস্তর হয়ে ভেঙে পড়ার ইচ্ছাটা মাথাছাড়া দিয়ে উঠল।
সেদিন একজনকে বলতে দেখলাম বিভূতির উপন্যাসের কাহিনীতে সংগতি নেই। কিন্তু তাঁর উপন্যাসের কাহিনীবিন্যাসে আপাত অসঙ্গতিই তাঁর লেখাকে সার্থক করে তুলেছে।

"সাহিত্যের শিল্পরূপ বিচারে বিভূতিভূষণের উপন্যাসে নির্দিষ্ট আঙ্গিক-প্রাধান্য এবং কাহিনী-বিন্যাসে দৃঢ় সংহতি খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি তাঁর সাহিত্যের দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও বাস্তবে তা সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্দিষ্ট আঙ্গিক নেই, কিন্তু বিভূতিভূষণের রচনাই এখন হয়ে উঠেছে স্বতন্ত্র আঙ্গিক। জীবন যেহেতু বিচিত্র, জীবনের প্রকাশও তাই বিচিত্র আঙ্গিকের হতে বাধ্য। আর কাহিনী-বিন্যাসের সংহতি না-থাকার বিষয়টাও জীবনের পাঠ থেকে নেওয়া। জীবনের ঘটনা যেমন কোনও নিয়ম মেনে চলে না, বিভূতির বর্ণনাও তাই ইতস্তত, আপাত-শিথিল। কিন্তু বৃহৎ ক্যানভাসে বিচার করলে, তা-ই জীবনের প্রকৃতস্বরূপ। বিভূতিভূষণ এখানে বিশ্বস্ত ও বাস্তবানুগ।"
-তপন বাগচী
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট
(বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত চাঁদের পাহাড়ের ভূমিকা থেকে)


বিভূতিভূষণ কেবল ভ্রমণকাহিনী, ম্যাগাজিন আর বইপত্র পড়ে এমন চমৎকার উপন্যাস কীভাবে লিখলেন ভাবতেও অবাক লাগে। এ ব্যাপারে লীলা মজুমদারের মন্তব্য:

"শুনেছি শ্রেষ্ঠ ভ্রমণকারীরা নিজেদের দেখা জায়গা তাঁদের লেখার মধ্য দিয়ে অপরকে দেখাতে পারেন । বিভূতিভূষণ আরো এককাটি বাড়া। না-দেখা জায়গাও তিনি অপরের সামনে জীবন্ত ছবির মতো তুলে ধরেছেন।"


এ উপন্যাসের একমাত্র সমস্যা এটা খুবই ছোট। বড্ড তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
April 19, 2021
কিছু বই আজ রোদে দিয়েছিলাম। সাথে এই বইটাও ছিল। বইদের সাথে রোদ পোহাতে বসে কী মনে করে এই বইটা হাতে তুলে নিলাম, কয়েকটা পাতায় আবার চোখ বুলিয়ে নিতে ক্ষতি নেই। তারপর দুটো ঘন্টা কোনদিক দিয়ে যে চলে গেল টেরই পেলাম না।

ছোটোবেলায় পড়ে যেমন রোমাঞ্চকর মনে হয়েছিল, এই আধবুড়ো বয়সেও একইরকম শিহরণ কাজ করেছে পড়তে নিয়ে। চোখজোড়া এই সাদাকালো বইয়ের পৃষ্ঠায় লেগে থাকলেও মাথার ভেতর যেন সবকিছু রঙিন হয়ে ফুটে উঠছিল। শঙ্করের সাথে সাথে যেন আমিও ঘুরছি, স্টেশনে বসে মাম্বার মুখোমুখি স্থবির হাতে টর্চ জ্বালিয়ে আছি, আলভারেজের উপর বিরক্ত হয়েও হেটে যাচ্ছি সেই রিখটারসভেল্ডের অরণ্যের মাঝে, দেখতে পাচ্ছি সেই দানব বুনিপের তিননখা পায়ের ছাপ, মরুর বুকে এসে উদ্ধার করছি ত্রিশ বছর আগে মারা যাওয়া আত্তিলিও গাত্তির কঙ্কাল, রাতের আধারে বসে আছি চিতা-হায়েনা-কোয়োটের পাহাড়ায়! সবকিছু এতকাল পরেও কত জীবন্ত, কত উদ্দীপনাময়!

এরপর কপালে থাকলে হয়তো বুড়োবয়সে যেয়ে আরেক দফা পড়ার একটা উদ্যোগ নেবো। দেখা যাক, বুড়ো হাড্ডিতে তখন আবার আজকের মতো শিহরণ ধরাতে পারে কিনা! তবে আমার বিশ্বাস আছে, পারবে।
Profile Image for Ibnul Shah.
60 reviews23 followers
February 10, 2021
'চাঁদের পাহাড়' যে কেন আগে পড়লাম না! বাংলা সাহিত্যে এমন অসাধারণ নিখাদ অ্যাডভেঞ্চারের বই আর কয়টা আছে আমার জানা নেই। যে লেখক পথের পাঁচালী লিখেছেন তিনিই সুদূর আফ্রিকার পটভূমিতে এত সুন্দর নিঁখুত বর্ণনায় রোমাঞ্চকর এই কাহিনী তুলে ধরেছেন—বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার। বিভূতিভূষণের বর্ণনাশৈলী সত্যিই অতুলনীয়। আমার মতো ধীরগতির পাঠককেও চুম্বকের মতো ধরে রেখেছে বইটা। চাঁদের পাহাড় প্রত্যেক কিশোরের জন্য অবশ্যপাঠ্য!
আর কিছু বলার নেই। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। :')
Displaying 1 - 30 of 607 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.