Jump to ratings and reviews
Rate this book

ঢাবাকা

Rate this book
পরাবাস্তব এক নগরী, যেখানে অতীত আর বর্তমান হাত ধরাধরি করে চলে। বিচিত্র সব মানুষ আর বিচিত্র তাদের কাহিনি। ওদের গল্পগুলোও বিচ্ছিন্ন নয়, একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িয়ে থাকে, সময়ের পরিক্রমায় সেগুলো জট লেগে দলা পাকিয়ে যায়। ঘটনাচক্রে এক রাতে, হাজার বছরের পুরনো বিরাণ শ্মশানে সেই জট খুলতে শুরু করে। অতীতের গহ্বর থেকে উঠে আসতে থাকে অদ্ভুত সব গল্প, জিন্দা লাশের মতো ঘিরে ধরে জীবন্ত বর্তমানকে। সুরাহা না করে তারা যেন ফিরে যাবে না।

382 pages, Hardcover

First published February 1, 2023

20 people are currently reading
253 people want to read

About the author

Mohammad Nazim Uddin

65 books1,532 followers
MOHAMMAD NAZIM UDDIN (Bengali: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন) is a writer and Translator of more than 26 novels..His original works are NEMESIS, CONTRACT, NEXUS, CONFESSION,JAAL, 1952: nichok kono number noy, KARACHI, RABINDRANATH EKHANE KOKHONO KHETE ASENNI and KEU KEU KATHA RAKHE. These six Thriller novels are highly acclaimed by the readers.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
42 (17%)
4 stars
62 (25%)
3 stars
74 (30%)
2 stars
39 (16%)
1 star
24 (9%)
Displaying 1 - 30 of 53 reviews
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
November 14, 2023
কি চাইলাম! আর কি পাইলাম! (?)!
নতুনত্ব হিসেবে গ্রাফিক নভেলের একটা ভাইব দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু সেটাও ছিল বাজে রকমের অভিজ্ঞতা। স্কেচ গুলো গল্পটাকে আরো বেশি উপভোগ্য করার পরিবর্তে বিরক্তির উদ্রেক করছিলো। আর এই বিরক্তিকর স্কেচের জন্যই ২০০ পৃষ্ঠার গল্প ৪০০ তে দাড়িয়েছে প্রায়। তাও মেনে নিতাম যদি গল্পটা জুতসই হতো। আফসোস, কতগুলো পয়সা ট্যাঁক থেকে বেরিয়ে গেল গো।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
July 18, 2023
লেখকের অন্য যে কোনো লেখার মতোই "ঢাবাকা" বেশ গতিশীল তাই কোনোরকমে পড়া সম্ভব হোলো। কিন্তু একদম ভালো লাগেনি। মূল প্লট ছোট; সেটাকে টেনে লম্বা করা হয়েছে জোরপূর্বক। যেমন কাহিনির বিশাল একটা অংশ জুড়ে আছে কাওকাবুন্নেসার অতিমানবীয় কর্মকাণ্ডের বিবরণ অথচ মূল ঘটনায় তার কোনো ভূমিকাই নেই। একের পর এক অতি নাটকীয় ঘটনা ঘটতেই থাকে, ঘটতেই থাকে। পুরোপুরি বাংলা সিনেমা মনে হোলো। এটাকে নিরীক্ষাধর্মী কাজ বলারও কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম না।
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews305 followers
March 8, 2023
বইয়ের শুরুতেই নাজিম ভাই বলেই দিয়েছেন এটা অনেকটা নিরিক্ষামূলক লেখা। তার পরও বইয়ের উপরে উনার নাম থাকলে স্বভাবতই এক্সপেকটেশন বেড়ে যায়। সেই আশাটা ছুতে পারেনি এই বই। গ্রাফিক নভেল ঠিক বলবো না এটাকে তবে প্রচুর ছবি দেয়া হয়েছে যার মধ্যে অনেকগুলোকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। আর সত্যি বলতে কি স্কেচগুলোর ফিনিশিং টাচ আরেকটু ভালো হতে পারতো। পাঠক হিসেবে বইয়ের কাহিনী আমাকে খুব টেনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেরকম নয়। নিজ দায়িত্বে পড়া এগুতে হয়েছে। পাঠক একটু চোখকান খোলা রাখলে ঢাবাকার পরাবাস্তত জগতের সমাজচিত্র তার চারপাশেই অনুভব করতে পারবেন। যাহোক সব মিলিয়ে মন্দ না। ভালোই লেগেছে।
Profile Image for Noyon.
53 reviews8 followers
March 8, 2023
জগাখিচুরি।
আগামাথা নাই,হুদাই তেনা প্যাচাইয়া গল্প যেইভাবে মন চায় লিখছে।
একদম ফালতু একটা বই।
সময় নষ্ট
Profile Image for Zabir Rafy.
312 reviews10 followers
February 19, 2025
বই: ঢাবাকা
লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনী: বাতিঘর
জনরা: থ্রিলার

জীবনে যেই কয়টা থ্রিলার এক বসায় শেষ করছি, তার মধ্যে ঢাবাকা সেরা। এরকম রেসিং কার গতির থ্রিলার এর আগে পড়িনি। পড়তে শুরু করে ঘড়ির কাটা কখন ঘন্টা পেরিয়ে গেছে, এবং বইটাও কখন শেষ হয়েছে টেরই পাইনি। যদিও বইটা নিয়ে কন্ট্রোভার্সি রয়েছে।

বইটার শুরু ও শেষ একই তীর্থে। শ্মশানে। শ্মশানে একটার পর একটা চরিত্র হাজির হয় আর লেখক যান চরিত্রগুলোর ব্যাক স্টোরিতে।

বইটিতে কোনো মিশন নেই কেন্দ্রীয় চরিত্রের সামনে। কাউকে খুন করার ঝামেলা নেই, খুনী হয়ে পালিয়ে বাঁচার ফ্যাকড়া নেই, কাউকে উদ্ধার করার ঝক্কি নেই। জানা দরকার স্রেফ কিছু সত্য।

লেখক একের পর এক চরিত্র হাজির করেছেন। একটার পর একটা এলোমেলো অধ্যায় এসেছে। হাজির হয়েছে অনেক চরিত্র আর তাদের জীবনের গল্প।

এরকম একটা প্লটের থ্রিলার বিরক্তিকর হবার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাক স্টোরিগুলো যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং এবং থ্রিলিং ছিল।

লেখক এক পরাবস্তব নগরীর গল্প বলতে চেয়েছেন। যেই নগরীতে ভালো মানুষের থেকে খারাপ মানুষের দেখাই পেলাম বেশী। প্রত্যেকটা চরিত্র তাদের নিজের জায়গায় ঠিক এবং একই সাথে অপরাধী। তাদের গল্পগুলো থ্রিলারটির প্রধান উপজীব্য।

বইটাকে এলোমেলো লাগতে পারে শুরুতে। তবে বাকিসব ঢাউস বইগুলোর মতো লেখক গল্পের শেষে সবগুলো সুতো টেনে গিট্টু পাকিয়েছেন ঠিকঠাক।

আর হ্যাঁ, বইয়ের ভিতরে ছিল দারুণ সব ইলাস্ট্রেশন।

এরকম একটা বই হাইলি রেকমেন্ড করলাম।

রেটিং: ৫/৫
Profile Image for Mubtasim  Fuad.
316 reviews41 followers
March 7, 2025
- লঞ্চে করে চর ছাড়ার সময় প্রেমানন্দ বাউল জন্মভূমির দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ফকিরকে বলে, "মানব আর দানব শব্দ দুইটার মইদ্যে অনেক মিল। মানবের ভিতরেই বাস করে দানব। মানব থিকা-ই দানবের জন্ম হয়।" "দানবের বিনাশ না হলে নতুন ভোর আসে না।"

Mohammad Nazimuddin লেখা ঢাবাকা, এক পরবাস্তব নগরীর পরাবস্তব গল্প। আমার বড় বইয়ের প্রতি সবসময় একটা ভয় বা ফোবিয়া কাজ করতে থাকে, মনে হয়, শুরুতে করতে পারব কিন্তু শেষ নামাতে কি পারব! এত বড় বই, এত এত পৃষ্ঠা। অনেকটা এই দ্বিধা নিয়েই ঢাবাকা শুরু করেছিলাম পড়া।
ঢাবাকা মূলত ছিল নাজিম স্যারের একটি এক্সপেরিমেন্টাল বই। ওনার অনান্য গতানুগতিক স্টাইলের বাইর এটা ছিল গ্রাফিক্স নোভেল আকারে। প্রতিটা পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে ছবি। যা চলমান ঘটনাকে কল্পনার নজরে আরো স্পষ্ট করে তুলছিল।
বইটি শুরুতে আমার কাছে বেশ অগোছালো লাগছিল, মনে হচ্ছিল এলোপাতাড়ি কাহিনি আবর্তিত হচ্ছে। এর পূর্বে আমি নাজিম স্যারের "কেউ কেউ কথা রাখে" বইটা পড়েছিলাম। অসাধারণ ছিল বইটা, এজন্যই ওনার এই বইটার প্রতিও এক্সপেকটেশন ছিল অনেক বেশি। কিন্তু শুরুতে বেশ হতাশই হচ্ছিলাম বলা চলে। কিন্তু কিছুদূর এগোতে না এগোতে যেভাবে লাটাইয়ের টানে ঘুড়ি উড়াল দেয় আকাশে ঠিক তেমনি গল্পটা জাগ্রত হয়ে উঠে। একাধিক চরিত্রের উপস্থিতি, প্রত্যেকে যদি রয়েছে নিজস্ব নিজস্ব গল্প। আর প্রত্যেকের গল্পেই ভূমিকা রেখেছে বাকি চরিত্র গুলা। এখানে কেউ কারো থেকে কম নয়। সবাই স্বতন্ত্র।
ঢাবাকার কাহিনি শুরু হয় এক শ্মশান ঘাটে এবং কাহিনি শেষ ও হয় সেই একই শ্বশান ঘাটে। এর মাঝেই রয়েছে একাধিক ফ্লাশব্যাক এবং প্রতিটা ক্যারেক্টারের নিজস্ব ব্যাকস্টোরী। বুড্ডা, পরিমল, চন্ডাল, কাওকাবুন্নেসা, পান্ডব, সিরু মিয়া এরাই মূলত কাহিনীর প্রধান চরিত্র। সবার জীবনের উত্থান পতন নিয়েই গড়ে উঠেছে ঢাবাকা।
বইটা শেষ করে ভালই লাগছে। বইটায় বেশ কিছু ডার্ক জোকস ছিল যা পড়ে হাসছি খুব। এছাড়া প্রচুর গালিগালাজ কাহিনীর ডেভলপমেন্টে ইউজ করা হইছে। বইটার মাঝে কিছু গ্রাফিক্স নোভেল আছে যা বয়স্ক কেউ দেখলে পাক্কা গায়ের ছালচামড়া তুলে নিবে এজন্য অনেক লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া লাগছিল আমার। যাইহোক, It was a good journey in Dhabaka. Now, I can't wait to visit the 'Rabindranath Akhane Kokhono Aashen Nai' restaurant. Let's see how this journey goes.
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
March 3, 2023
ঢাবাকা আমার আশা অনুরূপ হয়নি। লেখক নাজিম উদ্দিন বলেই হয়তো বেশি কিছু আশা করেছিলাম৷ প্রথমত গ্রাফিক নভেল মোটেও মনে হয়নি। উল্টো ছবিগুলো পড়তে দিচ্ছিলোনা মনে হলো। তার উপর রাস্তাঘাটে বেশ বেগ পেয়েছি। তাও ভেবেছিলাম স্টোরিটা বেশ রগরগে হবে৷ কিন্তু খেই হারিয়ে ফেলছিলাম মাঝেমাঝেই।
Profile Image for মাহদী আহনাফ.
42 reviews1 follower
December 20, 2023
আছে নোবেলবিজয়ী একজনের নোবেল জয় করে পাওয়া স্বর্নমুদ্রা এক নারীর মাধ্যমে বিক্রি করে তার দেশে ফিরে যাওয়ার গল্প। আছে নারীদেহলোলুপ পুরুষদের শায়েস্তা করার কঠিন পদ্ধতি। আছে বাবা হারা এক ছেলের প্রতি অজানা অচেনা লোকের সীমাহীন ভালোবাসা। লোভ, সহিংসতা, বাকা পথে উন্নতির শিখরে উঠার চেষ্টা, হত্যা, রাহাজানি, বিশ্বাসঘাতকা ছাড়াও অকৃত্রিম প্রেম, ভালোবাসা, মায়া আর প্রতিশোধপরায়ণতার এক অমোঘ আখ্যান হলো এই "ঢাবাকা"। এই ঢাবাকা মায়ের মত কোলে ঠাই দিলেও মাতৃসম নয়। সৎমায়েরও অধম। ললাটে নিত্যদিন গালি আর গঞ্জনা নিয়ে বেচে থাকে। কেউ ভালোবাসে না। সবাই ফায়দা লোটে। নিজের ধান্দা আর আরেকজন এর ঘাড়ে পা রেখে কিভাবে উপরে উঠা যায় সেই ধান্দায় থাকে।

"জীবন আসলে শাড়ী পরার মতনই সহজ, যারা জটিল ভাবে তাদের কাছে জটিল। মনে হইবো কুঁচিতে ভেজাল লাগে, আঁচলে ভেজাল লাগে। কিন্তু শাড়ীর মতো সহজ সুন্দর আর কিসসু নাই।" তবে এই শাড়ির কুচি ধরার সহজ বিধান জানতেই যেমন এক পুরুষ আজীবন ধুকে মরে তেমন না হলেও ঢাবাকার কাহিনীর কানাগলিতে আপনি নিজেকে হারাবেন এটা নিশ্চিত। তবে শেষ বয়সে এসে যেমন বৃদ্ধ স্বামী তার প্রাণপ্রিয়া স্ত্রীর শাড়ির কুচি সঠিক ভাবে ধরতে পেরে জীবনের শ্রেষ্টতম হাসি হাসে তেমনি ঢাবাকার সুরের শেষেও তৃপ্তির টান রয়েছে।

একেক সময় আমার মনে হয়েছে মোঘল আমলের কাল্পনিক শহর হয়তোবা আবার পরক্ষনেই মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অসহনীয় পালা বদলের বাকে ১৮০° বদলে যাওয়া লোকের জীবনগাথা। রাতের অন্ধকারে চিতার আগুন জ্বেলে যেভাবে "ঢাবাকা" শুরু হয় নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেই চিতার আগুনেই ভস্ম হয়েই শেষ ঘন্টি বাজে। অদরকারী কিছু স্থিরচিত্র বাদে ঢাবাকা বইটি পুরাই আগুনের লেলিহান শিখা আর ছাপ্পান্ন ছুরির রূপের মতোই ধারালো।

ঢাবাকার মানুষগুলোর বাহ্যিক ঘর আর মনের ঘর আমার কাছে লাগলো যেন বদ্ধ ঘরের মত। একটা জানালা আছে,এই একমাত্র জানালার ফাঁক দিয়ে হয়তো এক চিলতে রোদ আসে,রাতে জোৎস্না একটু আলো দেয়, আধার চিরে আলোয় আসার একটু চেষ্টা। আর গভীর ভাবে ভাবলে বুঝি আসলে সব মানুষের কাছেই সুখ ব্যাপারটা খানিকটা একই ধাচের, একটু খানি সুন্দর স্মৃতিগুলা দিয়া আজীবন বাঁচার আশা করি। আর এই সৌন্দর্য্য পাওয়ার আশায় যা খুশি তা করার সক্ষমতা আছে। এক দল কাজে লাগায় আরেক দল লাগায় না এই ই ফারাক। সে যাই হোক অনেক কথা বললাম,ঢাবাকা ভাল্লাগসে এটাই, বইটাকে কোন জনরায় ফেলবো বুঝতেছি না,বাট মাজা আয়া!!

-প্রসঙ্গে ঢাবাকা
Profile Image for Rehnuma.
444 reviews21 followers
Want to read
March 6, 2023
ঢাবাকার মুখ আমি দেখিয়াছি!

পরাবাস্তব এক নগরী ❛ঢাবাকা❜। এখানে বাস করে নানা ধরনের মানুষ। লোকে বলে ঢাবাকা জায়গাটা কঠিন জায়গা। আবার কেউবা বলে জায়গা ভালো হলেও, এখানকার মানুষগুলো সুবিধার না। সবাই আছে যার যার ধান্দায়। নতুন এসে এখানে খেই হারিয়ে ফেলতেই পারে কেউ। এখানে টিকে থাকতে হলে বুদ্ধি, শক্তি আর ধৈর্যের সাথে চলতে হবে।
এক কালি আন্ধেরি রাতের ঘটনা। ঢাবাকার শ্মশানে এক শবপো ড়া হয়। কার দেহ পো ড়ানো আর কেনই বা পো ড়ানো হলো? শ্মশানে পো ড়ানো শবের কপালে কহর কেন? ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। না-কি বলবো ঘটনার যবনিকাপাত শুরু এখান থেকেই?

কাওকাবুন্নেসা নামটা অদ্ভুত বটে। কেউ শুনলেই চোখ উল্টে বা মুখ উল্টে ফেলে। এমন নাম জীবনে শুনেনি। সাথে কাওকাবুন্নেসার মতো মেয়েও কেউ বাপের জন্মে দেখেনি। ষোড়শী কাওকা (শর্ট বললাম আরকি!) দেখতে প্রায় যুবতীদের মতো। বাড়ন্ত গড়ন, বলিষ্ঠ শরীরে তাকে মোটেই কিশোরী মনে হয় না। দইভাঙ্গা গ্রামের মেয়ে সে। তার দিকে চোখ পড়ে গ্রামের মেম্বরের ছেলের। কাওকার সাথে পাটক্ষেতে দুষ্টামি করতে গিয়ে নিজের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা বিসর্জন দিতে হয় তাকে। লজ্জায় মাথাকাঁ টা যায় তার পরিবারের।
গ্রামের চেয়ারম্যান ষাটোর্ধ্ব বুড়ার চোখও পড়ে কাওকার দিকে। ক্ষমতা আর টাকার জোরে বিবি করে ঘরে নিয়ে আসে সে কাওকাকে। বিয়ের রাতে স্বামীর হক জোর করে পেতে চড়াও হয়। মেম্বরের ছেলের যে হাল করে সেই একই হাল করে ষাটোর্ধ্ব বুড়ার। কিন্তু বুড়া জামাই সেই চাপ নিতে না পেরে ভবলীলা সাঙ্গ করে। সেই রাতেই পালিয়ে ঢাবাকায় পা রাখে সে। এরপর ক্রমে ঘটনার পরে ঘটনা শেষে পাণ্ডবদার কাছে নিজের ঠিকানা তৈরি করে। অন্য ধাতুতে গড়া মেয়ে কাওকাবুন্নেসার নতুন পরিচয় হয় ❛সুলক্ষণা❜।
ভুলুয়ার চরের হামিদ ফকির সর্বস্ব হারিয়ে পা রাখে ঢাবাকায়। রিক্সা চালকের কাজ থেকে শুরু করে শেষে থিতু হয়ে শ্মশানের লা শ পো ড়ানোর কাজে। হামিদ থেকে হয়ে যায় ❛হরিদাস চণ্ডাল❜।
যাত্রাপালার বেকার অভিনেতা পরিমল। বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী পরিমলের মনে নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ বাজে। দেখতে ছেলে হলেও মনের দিক থেকে নারীর মতো সে। জন্মই যেন তার আজন্ম পাপ।
একাত্তরের যু দ্ধে পুরো পরিবারের মধ্যে পিসি সরলা আর পাণ্ডব বেঁচে যাওয়া দুইজন মাত্র। পিতার বন্ধুর কাছে আশ্রয় নিয়ে কঠোর পরিশ্রমের জীবন শুরু করে পাণ্ডব। ক্রমেই ভরসার লোক হয়ে ওঠে সে। একসময় সেই আশ্রয়দাতার মৃ ত্যু হয়। অথৈ সাগরে পড়ে যায় সে। দৃশ্যপটে হাজির হয় সিরু মিয়া। তার সাথে কাজ করা শুরু করে পাণ্ডব। ভাগ্যের চাকা পাল্টে যায় তার। লোকে বলে পাথরখচিত মুখের গড়ন তার। মুখ দেখে মনের অভিব্যক্তি বোঝার সাধ্য নেই। দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা আর পরিশ্রমের ফলে জননী স্বর্ণালয়ের মালিক হয় সে। স্বর্ণের গয়নার অর্ডার নিয়ে গয়না বানানোই তার কাজ। একদম নিখুঁত গয়না বানায় সে!
মাইয়ার নাম মনাক্কা। বাবা চোলাই মদ বানিয়ে বিক্রি করে। কিন্তু কাজে মন নেই বিশেষ। তাই মদের দোকানের হাল ধরে মনাক্কা। মনাক্কার রূপের জন্যই না কি কে জানে ধীরে ধীরে মাতোয়ালার টেকের মদের দোকানের ব্যবসা হুহু করে বেড়ে ওঠে। কিন্তু ঢাবাকার জগতে সহজ কিছু নাই। বিপদ আসবেই, আর বিপদকে যে কভার ড্রাইভ দিয়ে সীমানার ঐপার নিতে পারবে সেই টিকে থাকবে। মনাক্কারও বিপদ আসে। তবে বুদ্ধিমতী মেয়ে সে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরে সাধারণ মদ বিক্রেতা থেকে হাকিম গ্রুপের উত্তরারিধীকারীর বিবি বনে যায়। হয়ে যায় ❛মনাক্কা বেগম❜।
লাট মিয়ার ছেলে বুড্ডা। পাণ্ডবের হয়ে লা শের সদগতি করে, সাথে লা শ বানায়ও। শৈশবে লাট মিয়ার পুত্র পরিচয়ে বড়ো হলেও শেষে লাট মিয়া তাকে সত্য কথা বলতে যাওয়ার আগেই পৃথিবী ত্যাগ করেন তিনি। বুড্ডার নিজের পরিচয় নিয়ে সত্য জানা হয়েছিল কি?
সিরু মিয়া দেখতে নিপাট ভদ্রলোক। তবে তারও আছে এক বিস্তর ইতিহাস। লোজিং মাস্টার থেকে একসময় হাকিম গ্রুপের ডান হাত বাম হাত হয়ে যায় সে। এর মাঝের ইতিহাস করুণ, কু টিল আর রহস্যে ঘেরা। ঢাবাকার সিরু মিয়ার আসল পরিচয় চমকে দেয়ার মতো।

ঘটনার সূত্রপাত বুড্ডাকে দেয়া এক গয়নার অর্ডার দিয়ে। ঢাবাকার জগতে পাণ্ডবের গয়না তৈরি মানে ❛দিলকি বাত্তি নিভাও❜। কিন্তু গয়নার নকশা দেখে হতচকিত হয়ে যায় বুড্ডা। এই নকশা তৈরি করা তার পক্ষে অসম্ভব। নকশা বদলের চক্করেই ঢাবাকার শ্মশানে হাজির সে সহ ঢাবাকার কুশীলবেরা। ঘটনার পর ঘটনা ঘটে আর এক একটা রহস্যের মোড়ক উম্মোচন হয়। অন্ধকারে সেই রহস্য আরো ঘনীভূত হয়। এতগুলো মানুষ যেন কোনো অদৃশ্য বন্ধনে এক ওপরের সাথে আবদ্ধ। সুতার একপ্রান্ত টান দিলে খুলছে অন্যপ্রান্তের রহস্য। তবে সকল রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু একজন। কে সে?
পরাবাস্তব নগরীর পরাবাস্তব জগতের রহস্যের সমাধান কি হবে রাতের অন্���কারের সেই শ্মশানে?


পাঠ প্রতিক্রিয়া:
ম্যারাথন রেস শেষ করে অবশেষে ❛ঢাবাকা❜ প্রকাশিত হয়েছে এবং আমার পাঠও শেষ হলো। লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা আমার কাছে অনেক দ্রুত গতির মনে হয়। সেক্ষেত্রে বই শুরু করেই টাইম ট্রাভেল করে শেষে পৌঁছে যেতে সময় লাগে না। আমারও তাই। বই হাতে নিয়েই দিন শেষে দেখি ৩৮২ পৃষ্ঠায় এসে ইতি টেনে ফেলেছি।
❛ঢাবাকা❜ লেখকের গ্রাফিক্স নভেল। তবে প্রচলিত ধারার গ্রাফিক্স নভেল নয়। একে সুন্দর ভাষায় স্বচিত্র উপন্যাস বলা যায়। প্রায় প্রতি পাতায় স্কেচ আছে।
ভূমিকায় লেখক বলেছেন বইটি লেখকের নিরীক্ষাধর্মী লেখা। এক পরাবাস্তব নগরীর গল্প লিখেছেন। থ্রিলার গল্প হিসেবেই লেখক আখ্যা দিয়েছেন। তবে পড়তে গিয়ে আমি থ্রিল পেয়েছি খুবই কম। তাই বলে বই পড়তে যে বিস্বাদ লেগেছে এমনটা মোটেই না!
থ্রিলার থেকে বেশি স্বাদ দিয়েছে প্রতিটা মানুষের জীবনের গল্প। তাদের বর্তমান অবস্থার জন্য ফেলে আশা অতীত কীভাবে ইন্ধন দিয়েছে সে গল্প বলেছেন লেখক।
আমরা শুধু মানুষের বাইরেটাই দেখি। কঠিন বা কোমল পরতের ভেতরে যে উল্টোটাও থাকতে পারে এমনটা খুব কমই ভাবি। ❛ঢাবাকা❜ উপন্যাসে লেখক গল্পের ভেতরের সেই গল্পকে টেনে এনেছেন। প্রতিটা অধ্যায়ে কুশীলবদের জবানীতে তাদের নিজস্ব গল্প, চিন্তা আর কর্মকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পাঠকদের কাছে।
ঢাবাকায় নানা ধরনের মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা বলেছেন। একটু মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে ❛ঢাবাকা❜ অচেনা নাম হলেও গল্পগুলো অচেনা নয়। একটু আশপাশ তাকালেই বোঝা যায় গল্পগুলো আমাদেরই। এমনটাই তো আশেপাশে বা লোকচক্ষুর আড়ালে ঘটে আসছে। যার খবর আমরা পাই আবার কিছু একেবারে বিলীন হয়ে যায়। মনে রাখে শুধু তারাই, যারা ঘটনার শিকার।
❛ঢাবাকা❜ কোন মাম্মাস বয় কিংবা ড্যাডিস প্রিন্সেসের গল্প না। পুরোটাই সমাজের এমন স্তরের মানুষের কথা বলা হয়েছে যারা জীবনে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন পথ বেছে নিয়েছে, না হয় নিজে কঠিন হয়েছে। টিকে থাকার ল ড়াইয়ে নিজেকে বারংবার প্রমাণ করেছে কুশীলবেরা।
অনেকগুলো মানুষের জীবন ভিন্ন ধারায় বইতে বইতে এক সুতোয় গিয়ে মিলেছে লেখক সেটা দারুণভাবে লিখেছেন। প্লট হিসেবে আহামরি কিছু না। সমাজের ঘটে যাওয়া ঘটনা আর তার প্রতিক্রিয়া গুলোই স্যাটায়ারে মাধ্যমে লিখেছেন। তার প্রমাণ লেগেছে বইতে দেওয়া কিছু স্কেচে। যেমন: একটা স্কেচ ছিল পত্রিকা পড়া এক লোকের। পত্রিকার নাম এবং সেখানে ছাপা খবরগুলো একদম পরিচিত কিন্ত লেখকের হিউমারগুন সেটাকে অন্য রূপ দিয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সাপেক্ষে করা স্কেচগুলো নজরকাড়া। আর্টের পারদর্শী নই আমি। সেদিক থেকে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করতে পারছি না।
এছাড়াও বইতে লেখক চরিত্রগুলোর এবং এলাকার নামগুলো দিয়েছেন বেশ। কাওকাবুন্নেসা, মনাক্কা সহ বেশ কিছু অদ্ভুত নামের ব্যাবহার করেছেন। দারুণ লেগেছে এলাকা গুলোর নাম। যেমন: নদীর নাম ❛বৃদ্ধাগাঙনী❜, এলাকার নাম ❛তিন সতীনের বস্তি❜, ❛গলার কাঁ টা❜, ❛মগের মুল্লুক❜ ইত্যাদি।
নিজের তৈরি অনেক শব্দের পাশাপাশি নিজস্ব গা লিরও প্রয়োগ করেছেন মনে হয়। সবথেকে ইন্টারেস্টিং লেগেছে, ❛তরবালাইবারবিলানা❜। এর অর্থ জানা নেই। বাপের জন্মেও শুনিনি। উচ্চারণ করতে গেলে অন্য উচ্চারণ এসে যায় আরকি!

দ্রুতগামী লেখার গুণে বইটা অবশ্যই শেষ করা গেছে। তবে আমার কাছে বইটা নাজিম উদ্দিন স্ট্যান্ডার্ড মনে হয়নি। বইতে নাজিম উদ্দিন নাম থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই পাঠকের আশার পারদ একটু বেশি উপরে থাকে। সে হিসেবে ফলাফল পারদের সীমা অনুযায়ী পৌঁছতে পারেনি। নিরীক্ষাধর্মী লেখা হিসেবে অবশ্যই ভালো এবং উপভোগ্য বলতে হবে।
যেহেতু পরাবাস্তব নগরীর গল্প তাই বাস্তবতা খুঁজতে যাচ্ছি না। তবে ঘটনার ক্রম, একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্ক, আর কাজ হাসিলের অনেকগুলো ব্যাপার একটু বেশি কাকতাল লেগেছে।
উপন্যাসে আগত লঘুভাগ মেয়ে ষোড়শী এবং তাদের কাজকর্মের ব্যাপারটাও জুতসই লাগেনি।
এছাড়াও, বই প্রকাশ হবার পরেই সবথেকে বেশি যে সমালোচনাটা হয়েছে সেটা হলো বইয়ের কিছু ছবি আর কথার ব্যাবহার। আমার কাছেও এই ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। কিছু ছবির ব্যবহার না করলেও খুব একটা ক্ষতি হতো না। আর অতিরিক্ত স্ল্যাং এর ব্যাবহার বই পড়াকে আমার কাছে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করে। তবে লেখক সমাজের যে স্তরের কিংবা যে এলাকার বর্ণনা হিসেবে কথার ব্যবহার করেছেন তার বিচারে এর ব্যবহারকে মেনে নেয়া যায়। অকথ্য গালাগাল, অশ্লীলতা সমাজেরই অংশ। তবে লেখায় সেটার সহনীয় প্রয়োগ আমার মতে ভালো।
আমার মতে বইতে ১৮+ সতর্কতা দিয়ে দিতে পারতেন লেখক।


চরিত্রায়ন:
বইয়ের সবথেকে দারুণ অংশ লেগেছে লেখকের চরিত্রের ভিত্তি তৈরি এবং তাদের ব্যাবহার। প্রতিটা চরিত্রের একটা নিজস্ব গল্প ছিল। নিজের গল্পে সে নিজেই ছিল মূল। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রতিটা চরিত্রকে জায়গা করে দিয়েছেন লেখক।
তবে পড়তে পড়তে কাওকাবুন্নেসা আর বুড্ডা চরিত্র থেকে আরো কিছু আশা করেছিলাম।


প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন:
ঢাবাকার প্রচ্ছদ সাধারণের মাঝে অনেক সুন্দর। বিশেষ করে আর্টগুলো। নামলিপিটাও আমার দারুণ লেগেছে।
বাতিঘরের অন্যান্য বইয়ের তুলনায় ঢাবাকার প্রোডাকশন অনেক ভালো লেগেছে।

আচ্ছা ঢাবাকা কি আমাদের বাস্তব নগরীর সমান্তরাল কোনো পরাবাস্তব নগরী? কী মনে হয় আপনার?
Profile Image for Wasim Mahmud.
357 reviews29 followers
April 9, 2023
ঢাবাকা। বিকল্প এক শহর‌। মার্ভেল কমিক্সের 'ওয়াট ইফ' কিংবা ডিসির 'এলস‌ওয়ার্ল্ড' এর মতোই। প্রাচীন ঢাকা শহরের অল্টারনেটিভ যাপন, সহিংসতা, রাজনীতি, ঘটনাবহুল এক রূপ।

সেই ঢাবাকার এক পুরাতন শ্মশানে বিভিন্ন নৈরাজ্যকর ঘটনার চক্রে পড়ে ধীরে ধীরে হাজির হচ্ছেন এক একজন অদ্ভুত মানুষ। কোন বিচিত্র কারণে সবার জীবন আবার এক সূত্রে গাঁথা।

মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন খুব সম্ভবত তাঁর সম্পাদনায় প্রথম ত্রৈমাসিক 'পিদিম' থেকে এই উপন্যাস লিখার প্রেরণা পেয়েছেন। কারণ ঐ কাগজে নাজিম উদ্দিন পুরনো ঢাকার বর্ণময় ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ইতিহাসবিদ হাশেম সুফীর।

পুরো গল্প জুড়ে আছে অনেক চরিত্র। ঢাবাকায় দেশের বিভিন্ন কোনা থেকে বিভিন্ন উদ্দেশ্য এবং দুরভিসন্ধি নিয়ে আসা মানুষজনের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কথা আছে ঢাবাকায়। যেখানে বেশিরভাগ মানুষ-ই ক্রিমিনাল। সপ্তরিপুর তাড়নায় তাদের করা ক্রাইমের প্রায়শ্চিত্ত হয়তো ঐ শ্মশানেই সাধন হবে।

ব‌ইটি আকারে বড় হলেও এক বা কয়েক বসায় পড়ে শেষ করার মতো। তবে এই গ্রন্থে আছে অনেক চরিত্র। ধীরেসুস্থে পড়লে বরঞ্চ ভালো হয়। যদিও সকল চরিত্রের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট এক‌ইরকম ইন্টারেস্টিং হয় নি। এরকম হ‌ওয়া অবশ্য বাঞ্চনীয় নয় মনে হয়।

ঢাবাকা শুধুমাত্র খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক, 'যদ্যপি আমার গুরু' এর ক্যামিও পাঠের জন্য‌ও বেশ মজাদার আখ্যান হয়েছে। তাছাড়া এক্সপেরিমেন্টাল এই থ্রিলারে লেখকের একটু অন্যরকম এপ্রোচের জন্য‌ও ব‌ইটির মধ্য দিয়ে আপনি পুরান ঢাকায় ঘুরে আসতে পারেন।

আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সুলক্ষণার মারাত্মক ফাইট সিনে পাশের জানালায় এলেন গিন্সবার্গের উপস্থিতিটা‌। যেন ওল্ড ঢাকার বিকল্প নগরীর বিরিয়ানীর স্বাদ পেয়েছি ঐ অংশটা পড়তে গিয়ে।

এরকম আরো কিছু টানটান উত্তেজনার অংশ আছে। আছে ঢাবাকার স্ল্যাং‌। যদিও কিছু জায়গায় একটু রিপিটেটিভ এবং আরোপিত মনে হয়েছে এইসব স্ল্যাং। বেশি চরিত্র থাকার কারণে উপন্যাসের বেশ কিছু জায়গায় লেখক যখন 'শো' এর জায়গায় 'টেলিং' করেছেন তখন গ্রাফিক্স-থ্রিলারটির খানিকটা ছন্দপতন হয়েছে‌।

তবে ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য বেশ কাঙ্ক্ষিত এক গল্প এই ঢাবাকা।

উপন্যাসে গ্রাফিকের কাজগুলো ভালো লেগেছে। ১৯৭০-৮০ দশকের ঢাকাইয়া বাংলা সিনেমার একটা ইফেক্ট আছে ঢাবাকায়।

ব‌ইটিতে চিত্রশিল্পী তানিয়া সুলতানা ভালো গ্রাফিক্সের কাজ করেছেন। তবে 'ঢাবাকা নিয়ে কিছু কথা' এ লেখক যা লিখেছেন তা একটু কনফিউজিং‌ কথা বলেছেন‌। তাঁর গ্রাফিক নভেল করার কথা ছিলো এই 'ঢাবাকা' কিন্তু সময় স্বল্��তার কারণে কিন্তু হয়ে ওঠে নি, ঠিক আছে। '"তবে ঢাবাকা মোটেও ইউরোপ-আমেরিকা ঘরানার গ্রাফিক-নভেল নয়।" এই কথাটা দিয়ে তিনি কী বুঝিয়েছেন তা জানি না। কারণ ঢাবাকা তো কোন ঘরানার-ই গ্রাফিক নভেল নয়।

বাংলাদেশে গ্রাফিক নভেল হচ্ছে 'স্বাপদ সনে' 'সসেমিরা'। তাছাড়া গ্রাফিক নভেল আমেরিকান টার্ম। কমিক্স ডাইজেস্ট বা শুধুমাত্র কমিক বুক‌ও বলা হয় ঐ ফরম্যাটকে।

তাছাড়া কিছু জায়গায় গল্পে প্লটহোল আছে। বক্সিং এ কিক মারার মতোই। লিটারালি। আরেকটু সময় নিয়ে লিখলে ব‌ইটি কাল্ট ক্লাসিক হ‌ওয়ার জোর সম্ভাবনা রাখতো মনে হয়।

ওভার‌অল ঢাবাকা পুরানো ঢাকার বিকল্প শহরের অন্যরকম এক গল্প বলেছে। এরকম কাজ হয়তো বাংলা সাহিত্যে আগে হয় নি। সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগার মতো এক ব‌ই এটি।

ব‌ই রিভিউ

নাম : ঢাবাকা
লেখক : মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনা
প্রচ্ছদ : তানিয়া সুলতানা
অঙ্কন : তানিয়া সুলতানা ‌ও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
জনরা : গ্রাফিক্স-থ্রিলার
রিভিয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
Profile Image for Hasan.
Author 11 books88 followers
February 26, 2023
দানবের বিনাশ না হলে নতুন ভোর আসে না
Profile Image for Tuton Mallick.
100 reviews4 followers
March 17, 2023
নাম: ঢাবাকা
লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনা: বাতিঘর প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০২৩
পৃষ্ঠা: ৩৮০
মান: ৩.৫/৫.০
ধরন: থ্রিলার

গ্ৰাফিক নভেল? উত্তর - না। এটি কোনোভাবেই গ্ৰাফিক নভেল নয়। বইয়ের শুরুতে লেখকের বক্তব্য কিছুটা হাস্যকর লেগেছে। উনি বলেছেন এটি ইউরোপ - আমেরিকা ঘরানার গ্ৰাফিক নভেল। কিন্তু উনি এটা বলেন নাই ঢাবাকা কোন ঘরানার গ্ৰাফিক নভেল। অসম্পূর্ণ তথ্য। পাঠক বলতে পারেন বই রিভিউ দিতে এসে গ্ৰাফিক নভেলের ব্যবচ্ছেদ কেন শুরু করেছি? কারণ বইটি বিক্রির সময় অনলাইনে গ্ৰাফিক নভেল হিসেবে মার্কেটিং করা হয়েছিল।

ইলাস্ট্রেটেড নভেল? ১০০% । বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভিতরের গল্প উপযোগী চিত্রকর্ম গুলোর প্রশংসা না করলে পক্ষপাত দোষ নিজেকে অলংকৃত করা হবে। তানিয়া সুলতানা ও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন কে এজন্য বিশেষ ধন্যবাদ।

গল্পটির গঠন অনেকটা সিনেমার মতো। একটা ঘটনার চরিত্রগুলোর পিছনের আলাদা আলাদা গল্প দিয়ে একসময় সব চরিত্রকে সংযোগ করার মাধ্যমে গল্পের শুরুর ঘটনাটা ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এই ধরনের গল্পের সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হচ্ছে প্রতিটা চরিত্রের নিজ গল্পকে আকর্ষণীয় করে রাখা। আবার অনেক সময় ব্যাকট্রেক এতো কাহিনী পাঠকের কাছে মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগে বিশেষ করে আকর্ষণীয় কাহিনীর মধ্যে একটি কাহিনী যদি আকর্ষণ হারায়।

মূলত গল্পটি ভাড়াটে খুন নিয়ে আবর্তিত। কয়েকটি চরিত্র যেমন পান্ডব, চন্ডাল, সিরু, কাওকাবুন্নেসা ইত্যাদি আরো অনেক চরিত্র নিয়ে গল্পটির এগিয়ে চলে। চন্ডাল ও পান্ডব চরিত্রটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। চন্ডালের মধ্যে কেমন যেন একটা হার না মানা কুৎসিত ভিলেনের চরিত্র রয়েছে। তেমনি পান্ডবের মধ্যে বড় মাফিয়াদের মতো একটা ঠান্ডা বুদ্ধিমান আবহ পাওয়া যায়। আর সিরু চরিত্রটা গতানুগতিক ভিলেন। আর একটি অনবদ্য চরিত্র ছিল কাওকাবুন্নেসার চরিত্রটি। এই চরিত্রটির মধ্যে জেদি মারমুখো মেয়ের আবহ পাওয়া যেটা অনেক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

আমার কাছে মনে হয়েছে লেখক ঢাবাকা তে অনেকে পরীক্ষা করেছেন কারণ লেখকের পূর্ববর্তী থ্রিলার রবীন্দ্রনাথ সিরিজ ও ১৯৫২ সাথে তুলনা করতে গেলে এখানে সাসপেন্স এর পরিমাণ অনেক কম। বরং বলা যায় অ্যাকশন ড্রামা বেশি। আর এই গল্পে ফুটে উঠেছে পুরানো ঢাকার অন্ধকার জগতের বিভিন্ন চরিত্রের কথা যারা একজনের সাথে আরেকজন কোনো না কোনোভাবে জড়িত। বরাবরের মতোই লেখকের বর্ণনা ছিল অসাধারণ। তবে আমার মনে হয় লেখক যদি একটু সময় নিয়ে এটাকে গ্ৰাফিক নভেল হিসেবে পাবলিশ করতো তাহলে হয়তো এটি বাংলাদেশের একটা কালজয়ী গ্ৰাফিক নভেল হিসেবে থাকতো।
#ধূসরকল্পনা
Profile Image for Mehedi Hasan.
7 reviews1 follower
March 6, 2023
খুবই সাধারণ একটা গল্পকে লেখক খুবই খাপছাড়া ভাবে উপস্থাপন করেছেন। উনি সেটাই ভালো করেছেন, যেটা উনি সবচেয়ে ভালো পারেন। ২০০ পৃষ্ঠার গল্প, ৪০০ তে টেনেছেন। যা ছিল খুবই বিরক্তিকর এবং বার বার ছন্দ হারিয়ে যাচ্ছিল। আর উনার লিখায় রয়েছে অতিরিক্ত ডট মিলানোর অভ্যাস। পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গল্প না, রূপকথা মনে হয়। অতিরিক্ত গালাগালি আর ১৮+ কথাবার্তা লিখে উনি চেষ্টা করেছেন সমাজের একটা বাস্তব কদর্য রূপ তুলে ধরতে। কিন্তু কেনো যেন তার এই প্রচেষ্টা কে খুব বেশি মেকি মনে হয়েছে। উপন্যাসে character এর নাম এবং বিভিন্ন জায়গার নামগুলোও খুবই কাঁচা হাতের কাজ লেগেছে।

লেখক মানুষটা নাজিম উদ্দিন বলে ভালো প্রত্যাশা ছিল। তার কিছু অনুবাদ আর গল্প ভালো দেখে ঢাবাকা কিনেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে টাকা এবং সময় দুইটারই বড় অপচয় করে ফেললাম।
Profile Image for Nafisa Nawar.
74 reviews16 followers
June 24, 2023
লেখক প্রথমেই জানিয়েছেন যে এটা একটা নীরিক্ষামূলক বই। তাই খুব বেশি আশা রাখিনি। সে হিসেবে গল্পটা উপভোগ করেছি। একটা গল্পের সাথে আরেকটা গল্প জড়িয়ে সুন্দর একটা রুপ নিয়েছে। তবে কথায় কথায় এত শ্লোক বিরক্তিকর ছিলো যেহেতু ভাষাগত কোন সৌন্দর্য ছিলো না। গল্পটাই ঐ শ্রেণির মানুষদের ঘিরে। আর যেটা চরম বিরক্তিকর ছিলো সেটা হল কথায় কথায় সবার "বজ্রাহত" হওয়া!
Profile Image for Jonny Star.
11 reviews14 followers
March 5, 2023
দানবের বিনাশ শুধু গল্পের মধ্যেই হয়, এটা নির্মম সত্য
ঢাবাকা পড়তে গিয়ে অনেক কিছুই নতুন করে আবিষ্কার করলাম
মাকড়সার জালের মতোই সূক্ষ্ম ভাবে গল্পের বুনুনি, অনেক ডালপালায় বিস্তৃত এক রহস্যময় কাহিনী
প্রিয় লেখকের পরিপক্ব লেখনীতে পুরানো ঢাকার অনেক স্মৃতি আর ইতিহাস নির্ভর ঘটনা যেন অন্য আঙ্গিকে পেলাম
Profile Image for Nafisa Tarannum.
77 reviews24 followers
May 7, 2023
নাজিমুদ্দিন এর আরেক মাস্টারপিস! আমার আজীবন কৌতুহল ছিলো মাফিয়া চক্র আসলে কিভাবে কাজ করে। ঢাবাকা পড়ে কনসেপ্ট মোটামুটি ক্লিয়ার। সাথে সাথে প্রতিটি চরিত্রের বিল্ড আপ অনেক চমৎকার। সঠিক পরিমানে ম্যাজিকাল রিয়েলিজম এর ব্যবহার ও হয়েছে বইয়ে! নিঃসন্দেহে বছরের পড়া অন্যতম সেরা একটা বই।
Profile Image for শুভাগত দীপ.
274 reviews47 followers
March 25, 2025
পাণ্ডব কর্মকার স্বর্ণের ব্যবসা করেন। একটা তিনতলা বাড়িতে বৃদ্ধা মাসীকে নিয়ে থাকেন। তাঁর এই স্বর্ণের ব্যবসা আসলে একটা আইওয়াশ। এর আড়ালে তিনি ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেন। সেই কাজগুলোও করেন ফরম��য়েশি ঢঙে। 


বুড্ডা একজন ভাড়াটে খুনী। টাকার বিনিময়ে শিকারকে ওপরের টিকেট ধরিয়ে দেয়াই তার কাজ। সবকিছু ভালোই চলছিলো। হঠাৎ বুড্ডার কাছে এমন একটা কাজ আসে, যা রীতিমতো তাকে বিহ্বল করে দেয়। এই মানুষটাকে তো ও মারতে পারবে না! নিজের জান চলে গেলেও না। তাহলে এখন কি করবে বুড্ডা?


গ্রামের মেয়ে কাওকাবুন্নেসা শক্ত ধাতুতে গড়া। কিশোরীকাল থেকেই অনেকের লোলুপ দৃষ্টি তার দিকে। একাধিকবার ধর্ষকামী নরপশুদের লালসার শিকার হতে হতেও নিজের 'দুই হাতের জোরে' বেঁচে ফিরেছে সে। নানা ঘটনাচক্রে তার সাথে এবার দেখা হলো পাণ্ডব কর্মকারের সাথে। এবার কাওকাবুন্নেসার ভবিষ্যৎ কি?


মনাক্কা বেগম অতি ধুরন্ধর মহিলা। কিভাবে মকিম গ্রুপের সর্বেসর্বা হয়ে উঠলো সে? ক্ষমতা আর টাকার লোভে ঠিক কতোটা নিচে নামতে পারে এই মহিলা, সেটা হয়তো সে নিজেও জানে না। একান্ত বিশ্বস্ত নায়েব সিরু মিয়াকে দিয়ে নিজের পথের কাঁটা সরাতেই ব্যস্ত যেন সে। 


ঢাবাকা। এক পরাবাস্তব নগরী। এই নগরীর শ্মশানটা অনেক ঘটনারই সাক্ষী। পরস্পরকে চুম্বন করতে থাকা দুটো নরকঙ্কালের মাথার সাথে এতো কি কথা বলে চণ্ডাল হরিদাস? বহুকাল আগে বাউল প্রেমানন্দ কিসের পাঠ পড়িয়েছিলো তাকে? ওদিকে যাত্রাপালার প্রতি আসক্ত পরিমল কেন যেন সিঁটিয়ে থাকে নিজের মধ্যেই। 'ভালো ছেলে' হিসেবে সবার কাছে পরিচিত আহাদের ওপর পড়লো বিপদের কালো ছায়া। ঢাবাকার এই শ্মশান পরিণত হলো এক অদ্ভুত নাট্যমঞ্চে। যেখানে বুড্ডা, চণ্ডাল, কাওকাবুন্নেসা, পাণ্ডব কর্মকার সহ অনেকেই হয়ে উঠলো সেই নাটকের কুশীলব। পরাবাস্তব ঢাবাকার গল্প হয়ে উঠলো আরো খানিকটা পরাবাস্তব।


অনেকদিন পর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কোন বই পড়লাম। বাংলা থ্রিলার ঘরানায় আমার অন্যতম প্রিয় লেখক তিনি৷ 'ঢাবাকা'-কে তিনি পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন গ্রাফিক নভেল হিসেবে। সেই চেষ্টাটা আংশিক সফল হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। এই বইয়ের প্লটটা লাগামছাড়া। অর্থাৎ, লেখকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হয়তো প্লটের ওপর শুরু থেকেই ছিলো না। আর এই কারণেই কি-না জানি না, কাহিনিটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিয়েছে আমার কাছে। বইয়ের সাথে একদম সেঁটে ছিলো আমার চোখ পুরোটা সময়। 


এমন ঢাউস একটা উপন্যাস আমি সকালে শুরু করে কেবল শেষ করলাম। এক দিনে আমি এতো পৃষ্ঠা দীর্ঘদিন পড়তে পারিনি। 'ঢাবাকা' আবার আমাকে সেই স্বাদটা দিলো। যদিও এক্ষেত্রে আমাকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে গেছে বইয়ের ভেতরের স্কেচগুলো। আংশিক একটা গ্রাফিক নভেল হিসেবেই যদি আমি এটাকে ধরি, তাও প্রচুর স্কেচ আছে বইটার ভেতরে। স্কেচগুলো চমৎকার। এগুলো এঁকেছেন তানিয়া সুলতানা ও লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন নিজেই। পুরো সেটাপটাই আমার কাছে ভালো লেগেছে। লেখকের কাছে এমন কাজ আরো চাই। 


'ঢাবাকা'-এর গল্প সিম্পল। কিন্তু সেটার এক্সিকিউশন বেশ আর্টিস্টিক। প্রচুর গালাগালি আছে। গল্পের প্রয়োজনে এসেছে। কিছু জায়গায় কাকতালের মাত্রা কিছুটা অতিরিক্ত মনে হলেও শেষটা আমাকে স্যাটিসফায়েড করতে পেরেছে। তানিয়া সুলতানা বরাবরই চমৎকার আঁকেন। সেটার প্রমাণ আবারও পেলাম 'ঢাবাকা'-এর প্রচ্ছদে ও ভেতরের স্কেচে। আগ্রহীরা পড়ে ফেলতে পারেন।


একটা কথা, প্রচ্ছদ ও স্কেচে চণ্ডালকে দেখে একমাত্র আমারই কি অভিনেতা নাসির উদ্দিন খানের কথা মনে হয়েছে নাকি আপনাদেরও কারো এমন মনে হয়েছে?


ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪/৫


বইঃ ঢাবাকা

লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী 

প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ঘরানাঃ ক্রাইম থ্রিলার গ্রাফিক নভেল 

প্রচ্ছদঃ তানিয়া সুলতানা 

পৃষ্ঠাঃ ৩৮২

মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০ টাকা

ফরম্যাটঃ হার্ডকভার 


(২৫ মার্চ, ২০২৫; নাটোর)
Profile Image for Rounak Basak.
1 review
April 22, 2023
পড়ে ফেললাম মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নবতম থ্রিলার গ্রন্থ "ঢাবাকা"। নাজিম স্যারের প্রতিটি প্রকাশিতব্য বইয়ের জন্যই অপেক্ষা করে থাকি। উনার বইয়ের লেখনী এবং কাহিনীর ব্যাপারে যদিও আলাদা করে কিছু বলতে হয় না। উনার বইয়ের পাঠক মাত্রই তা জানেন। তবুও বলি , উনার লেখনীর মধ্যে একটা অদ্ভুত ঘোর আছে। বই একেবারে শেষ না করা অবধি চাইলেও সেটা কাটিয়ে ওঠা যায়না। আর এই ধরনের লেখনীর সবচেয়ে ভালো দিক টা হলো কাহিনী যাই হোক না কেন, শুধুমাত্র লেখনীর জন্যই বইটা একাধিকবার পড়া যায়। "ঢাবাকা"-ও এর ব্যতিক্রম নয়। কাহিনী সংক্ষেপে বলতে গেলে, ঢাবাকা হলো একটি কাল্পনিক শহরের নাম। একরাতে সেখানকার এক শ্মশানে নিয়তির ফেরে দেখা হয় কিছু মানুষের। কাহিনী যত এগোতে থাকে ততই বোঝা যায় তাদের জীবনের অতীত এবং বর্তমান ঘটনাগুলি একে অপরের সাথে জড়িত। শেষমেষ তাদের পরিণতি কি হয় তা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে "ঢাবাকা"। পুরো বইটাই ছোটখাটো টুইস্ট এ ভর্তি এবং শেষ অধ্যায়ে আছে মোক্ষম টুইস্ট। ব্যস.....এর বেশি আর কিছু বলছি না। শুধু এটুকুই বলবো যে এখনও না পড়া থাকলে আজই সংগ্রহ করে পরে ফেলুন "ঢাবাকা"।

Original Rating : 4.6/5
Profile Image for Bhomika Islam.
16 reviews3 followers
February 24, 2024
নেশা-নারী-তাশ
তিলে তিলে সর্বনাশ।

বইটা আহামরি তেমন কিছু না বাট খুব অল্পদিনেই শেষ করে ফেলেছি। আর এটা আমার রিডিং ব্লক কাটিয়ে দিয়েছে তাই আপাতত এখন আমার ভালো লাগছে। শেষের দিককার কথাটা খুব ভালো লেগেছে-
"মানুষ আকাশ দখল করবার পারে না, বাতাস দখল করবার পারে না, শূন্যের তো নাগালই পায় না!…পারে শুধু মাটি দখল করতে। অথচ মানুষ নিজেই মাটি!"
Profile Image for Ashraful Islam Saeem.
53 reviews4 followers
July 25, 2024
একটি নতুন চেষ্টা করতে গিয়ে নাজিম উদ্দিন হয়তো নিজেকে হারিয়ে ফেললেন। গ্রাফিক নভেল বানাতে গিয়ে যেন তার শক্তি, গল্পকেই হারিয়ে ফেললেন। ঢাউস সাইজের এই বইয়ে আমার মনের মতো গল্প ছাড়া সবই ছিলো।
Profile Image for Khan Abid .
1 review
March 31, 2023
মোটামুটি বলা চলে ।
এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি ছিল ,কিন্তু বই পড়ার পর আশাহত হয়েছি । আর এটি মোটেও গ্রাফিক্স নভেল নয়।
Profile Image for ANIT.
86 reviews2 followers
March 31, 2023
'দানবের বিনাশ না হলে নতুন ভোর আসে না।' দ্যাট'স ইট!! ❤️
11 reviews
March 27, 2023
অবশ্যই নাজিম সাহেবের level এ না। অকারণে গ্রাফিকস দিয়ে আকারে বড় করা হয়েছে। টান টান উত্তেজনা নেই। চমকে উঠা নেই। তবে অবশ্যই একটানে পড়া যায়।

তবে ৪ স্টার দিলাম। মূল কারন- ২৪২ পেজ।

খোদা না থাকলে, খোদা পয়দা করে নিতে হয়।
Profile Image for Sakib A. Jami.
334 reviews36 followers
March 8, 2023
"দানবের বিনাশ না হলে নতুন ভোর আসে না"

একটি র��ত। চারিপাশে ছেয়ে থাকা অন্ধকার। গভীর অন্ধকারের মানব মনের উপর প্রভাব বিস্তার করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। আর সে কারণেই নিকষ কালো আঁধারে প্রচন্ড সাহসী মানুষেরও গা শিউরে ওঠে। যতসব অনৈতিক, অন্যায় কাজগুলো এ রাতের আঁধারে সংগঠিত হয়। আজকের এই রাতটাও তেমন। অন্ধকার, কোথাও কোনো শব্দ নেই। নীরব নিস্তব্ধ এ রাতে শহরের এক শ্মশানে দপ করে জ্বলে উঠলো আগুনের শিখা। সদ্য মৃত কারো দেহ পুড়ছে তীব্র দহনে। যার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক চণ্ডাল। আর সেই ব্যক্তি, যে নিয়ে এসেছিল মৃতদেহটি। গল্পের শুরু এখানেই। শুরু, না কি শেষ? এই রাতের অন্ধকারে শ্মশানের ঠিক মাঝখানে চিত্রায়িত হচ্ছে এমন কিছু নাটকের, যেখানে আছে অনেকের না বলা গল্প। গল্পেরও সমাপ্তি থাকে। সেই সমাপ্তি টেনে নাটকও এক সময় শেষ হয়। সেই শেষ দৃশ্যে দানব নিকেশ হয়। শুরু হয় নতুন দিন। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই হয়তো জীবন পেয়ে যায় নতুন কোনো গল্প। আজ সে সব গল্প বলা যাক...

ঢাবাকা! বৃদ্ধাগাঙনীর পাড়ে বেড়ে ওঠা এক শহর। যেই শহরে টিকে থাকতে হয় বুদ্ধি দিয়ে, শক্তি দিয়ে। ধৈর্যের সাথে বিচার করতে হয় সবকিছু। একসময় সুযোগ আসে। সেই সুযোগ দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে নিতে হয়। যে যেখান থেকেই লাথি খেয়ে হোক, অপমানিত হয়ে হোক, কিংবা সব হারিয়ে হোক... ঢাবাকাতে ঠিক ঠাঁই হয়ে যায়। এখানে যে যার ধান্দায় ব্যস্ত। ঢাবাকা এমন এক জায়গা, যেখানে প্রতিটি ���ানুষ অনেক বেশি ধূর্ত হয়ে ওঠে। শহরটা কি সত্যিই এমন? না কি এর ভেতরে থাকা মানুষগুলো শহরটাকে এমন বানিয়েছে? কে জানে?

কত কিছু বিলীন হয়ে যায়। হারিয়ে যায় অতলে। শুধু রেখে যায় স্মৃতি। ভুলুয়ার চরে আছড়ে পড়ছে একের পড় এক ঢেউ। সেই ঢেউয়ে নদী ভাঙছে। মাটির জমি বিলীন হচ্ছে নদীর অতলে। হামিদ ফকির নিরব নিস্তব্ধ হয়ে দেখল, তার সর্বস্ব হারিয়ে যাচ্ছে। সর্বস্ব হারিয়ে ফেলা ফকির কী করবে? প্রেমানন্দ বাউলের পরামর্শে যাত্রা করল ঢাবাকার দিকে। এরপর নতুন জীবন। রিকশা চালানো থেকে শুরু। নানান পথ ঘুরে শ্মশানে জায়গা হয় তার। হামিদ ফকির থেকে হরিদাস চণ্ডাল! জীবন বোধহয় এভাবেই বদলে যায়।

এমন মেয়ে কেউ দেখেনি আগে... কাওকাবুন্নেসা! অদ্ভুত ভারিক্কি এ নাম শুনলে যে কেউ দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করে। এমন নামও তো কেউ শোনেনি কোনোদিন। গ্রামের মেয়ে কাওকাবুন্নেসা। যেখানে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া অলিখিত বিধান। কিন্তু কাওকাবুন্নেসা মেয়েটা অন্যরকম। বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেলেও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। বয়স কেবল ষোলো। বয়সের তুলনায় শারীরিক গঠন অনেক পরিণত। সে কারণেই গ্রামের লম্পটদের নজর তার উপর। কেউ পথরোধ করে। কেউ বিয়ে করতে চায়। বুড়ো বয়সে কচি স্ত্রীর সানিধ্য পেতে চায়। কিন্তু কেউ কিছু পারে না। সবার জীবনের বাতি কিংবা বংশের বাতি নিভিয়ে দেওয়ার উপায় জানা আছে মেয়েটার। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কোথাও থিতু হতে পারে না। পালিয়ে বেড়াতে হয় তার। এভাবেই একদিন পালিয়ে চলে আসে সবার আশ্রয়স্থল ঢাবাকায়। এখানেও যেন সেই পুরোনো ঘটনার প্রতিফলন। তারপর আবার পালিয়ে বেড়ানো। সবশেষে পাণ্ডবের আশ্রয়ে জায়গা করে নেওয়া। শুরু হলো গ্রাম পালানো বুদ্ধিমতী সাহসী কাওকাবুন্নেসার জীবনের নতুন অধ্যায়।

যুদ্ধের সময়। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী পাণ্ডব। ছোটোবেলার সে স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। কপাল গুণে সেদিন বেঁচে গিয়েছিল ছোট্ট পাণ্ডব। সরলা মাসীর সাথে ছুটে চলেছে শহরের অলিগলি, রাজপথ। জীবনকে বুঝতে শিখেছে। মানুষ চিনতে শিখেছে। পাণ্ডব জানে, এই শহরে টিকে থাকতে হলে জীবনকে বদলে দিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করে আজ নিজেকে উপরে তোলে সে। ভাগ্যের চাকার ঘুর্ণনে আজ জননী স্বর্ণালয়ের মালিক। একজন ব্যবসায়ী। এই ব্যবসার আড়ালে চলে অন্যকিছু। গয়নার এ ব্যবসায় লাভের পাল্লা ভারী। পাথরখচিত মুখের গড়নে ঢাকা পড়ে যায় সব অভিব্যক্তি। সবার চেয়ে আলাদা হয়ে তাই রাজ করে পাণ্ডব।

নাম তার মনাক্কা। বাবা চোলাই মদের ব্যবসা করে। কিন্তু সেই ব্যবসায় লাভ হয় খুবই সামান্য। বাড়তি লাভের আশায় সেই দোকানের হাল ধরে মনাক্কা। তরলের ঝাঁজেই হোক বা মনাক্কার রূপের জন্য, ব্যবসা বেড়ে ওঠে প্রতিনিয়ত। সে সাথে ব্যবসায়ীদের লোক ঠকানো বিষয় তো আছে। এভাবেই একদিন মনাক্কা পেয়ে যায় সোনার খনি। বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখার অদ্ভুত গুণ তাকে মদের ব্যবসায়ী থেকে করে তোলে রাজরানী। শহরের গণ্যমান্য হাকিম গ্রুপের উত্তরাধিকারী হয়ে যেন সমস্ত ক্ষমতা হাতে পেয়ে যায়। ক্ষমতা খুব খারাপ জিনিস। একবার হাতে চলে এলে এর ব্যবহার হয়ে ওঠে অপরিমিত। নিজের লোভ সংবরণ করে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারবে মনাক্কা বেগম?

সিরু মিয়ার অতীত জীবনের গল্প আছে। এই গল্পের কারণেই হয়তো বদলে গিয়েছেন তিনি। টিউশনি মাস্টার থেকে হাকিম গ্রুপের ডান হাত! জীবন তাকে দেখিয়েছে কীভাবে নিজেকে বদলে ফেলা যায়, ভাগ্যকে এগিয়ে নেওয়া যায়। চমকে যাওয়া আর রহস্যে ঘেরা জীবন নিয়ে তার এগিয়ে চলা। মাঝে মাঝেই পাণ্ডবের সাহায্য নিতে হয়। কীসের জন্য এ সাহায্য? এই শহরে রাজ করার জন্য এর চেয়ে বড়ো আর কিছু হতে পারে না।

পরিমলের জীবনের গল্প আছে। অজানা সে অতীতের গল্প যেন স্তব্ধ করে দেয় সবাইকে। অতীত আছে বুড্ডা নামের ছেলেটিরও। পাণ্ডবের হয়ে কাজ করে সে। অতীতগুলো সব টেনে নিয়ে এসেছে বর্তমানের ঘোর লাগা অন্ধকার। শ্মশানের এই নিশ্চুপ পরিবেশে একে একে খোলা হচ্ছে অতীতের হালখাতা। স্তব্ধতা ঘিরে ধরে। বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। সব জটপাকানো জীবনের সুতো একটু একটু করে খুলে। এরপর? শেষ মেলায় মুখোশ উন্মোচন হয় এক দানবের। যার বিনাশেই সূচনা হবে নতুনের। অন্ধকার কেটে আলোকিত হবে সময়। কেননা,

"দানবের বিনাশ না হলে নতুন ভোর আসে না"

▪️বই পর্যালোচনা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া :

আলোচনা-সমালোচনায় ঘেরা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নতুন বই "ঢাবাকা" এক বিস্ময়। লেখকের নিরীক্ষাধর্মী কাজ কতটুকু সফলতা পেল? আমার মনে হয়, ব্যতিক্রমী কাজ হিসেবে পুরো পাশ মার্ক লেখকের। তবে নাজিম ভাই হিসেবে ঠিক যেন মন ভরেনি। তারপরও উপভোগ্য ছিল বেশ।

এই যে আমাদের জীবন, যার কত গল্প থাকে! গল্প থাকে আমাদের আশেপাশের মানুষদের। আমরা সেসব জানতে চাই না। বর্তমান পরিস্থিতির উপর বিচার করেই নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে দিই, কিংবা গুরুত্বহীন। আজকের মানুষের বদলে যাওয়ার পেছনে অতীতের রং বদলানো কত ভূমিকা পালন, সেই হিসেব রাখা হয় না। রাখতে গেলে হয়তো উপন্যাসের পাতা ভারী হয়ে যেত। প্রতিটি জীবনের গল্প নিয়ে লেখা হতো সেসব উপন্যাস।

সবার জীবনের গল্প নিয়ে লেখার প্রয়োজন নেই। বর্তমান গল্প, উপন্যাসে উচ্চবিত্ত জীবনের আনাগোনা বেশি। গরীব, অসহায় মানুষেরা সবসময় অবহেলিত। "ঢাবাকা" এমন কিছু মানুষের জীবন নিয়ে রচিত, যারা ওই দালান, অট্টালিকায় বেড়ে ওঠেনি। ছোটো থেকে বড়ো, কষ্টের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। এই স্তরের মানুষদের সমাজে টিকে থাকার জন্য অনেক কিছু করতে হয়। সহজ পথ যেখানে সহজ হয় না, সেখানে কঠিন পথে এগিয়ে যেতে হয়। এই এগিয়ে যাওয়া নিজেকেও কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলে। কিন্তু কাঠিন্যের আড়ালেও কোমল অবয়ব থাকতে পারে, তার গল্প আমরা জানি না। কিংবা হয়তো জানতে চাই না।

"ঢাবাকা" উপন্যাসের লেখকের গল্প বলার ধরন ভিন্ন ধরনের। দৃশ্যপটে এক একজন করে আসছে। আর স্পষ্ট হচ্ছে জীবনের একাংশ। কিংবা পুরোটাই। এভাবেই এক একজন মানুষ উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ নিজে বলছে নিজের যাত্রাপথের কাহিনি, কেউ বা শুনে যাচ্ছে। দুই পক্ষেই বিস্ময় যেন হতবাক করে দেয়। এভাবেই একসময় সমাপ্তি আস���। জোড়া লাগে গল্পগুলো। তারপর শেষ পরিণতি।

আমার বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে এভাবে গল্প বলার ধরন। একই সাথে কাহিনির চিত্রায়ণ, চরিত্র গঠন সবকিছুই বেশ লেগেছে। লেখকের লেখার গতি দ্রুততর হলেই গল্পের গতি কোথায় দ্রুত এগিয়েছে, কোথাও শ্লথ হয়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় মনে হয়েছে বাহুল্য। তবে উপন্যাস যেই ধারায় এগিয়েছে, এই বাহুল্য গল্পের প্রয়োজনে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

উপন্যাসে সবচেয়ে মজাদার ছিল বেশকিছু চরিত্রের নাম ও এলাকার নাম। "তিন সতীনের বস্তি" নামটা বেশ লেগেছে। মানুষের মুখে মুখে একটি এলাকার নামকরণ এভাবেই বদলে যায়। আবার "ফকিন্নির বাজার", "মগের মুল্লুক", "গলার কাঁটা" বা "বেইমান আলী", "কোণঠাসা" নামগুলোর মাধ্যমে সমাজের অলিতে গলিতে থাকা অন্ধকার পর্যায় উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।

একইভাবে বেশ কিছু ছবিতেও লেখক সেই চেষ্টা করেছেন। কিছু স্যাটায়ার জাতীয় ছবি বর্তমান সমাজের উপর তীব্র আক্রোশ মিটিয়েছে। তবে দুয়েকটা অশালীন ছবি ছিল, যেগুলো না থাকলে খুব একটা ক্ষতি হতো না। বইতে প্রচুর গালিগালাজের উপস্থিতি ভালোই প্যারা দিয়েছে। লেখক যে সমাজের বর্ণনা করেছেন, তাতে এরূপ গালিগালাজ অমূলক নয়। তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সহনীয় পর্যায়ে থাকলে আরো একটু উপভোগ্য হয়ে উঠত। বারবার থমকে যেতে হতো না।

▪️চরিত্রায়ন :

চরিত্র গঠনে লেখক বাজিমাত করেছেন। বিশাল কলেবরের বই হলেও চরিত্র ছিল সীমিত। সীমিত সংখ্যা হলেও সবগুলো চরিত্র যেন সমানভাবে মূল্যবান হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি চরিত্র গঠনে লেখক দারুণ কাজ দেখিয়েছেন। মূলত চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়েই "ঢাবাকা" (শহর অথবা উপন্যাস) এগিয়ে চলেছে।

পাণ্ডব, বুড্ডা, পরিমল, সিরু মিয়ারা সমাজের ভিন্ন ভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। সরলা মাসী বা মনাক্কা বেগমরা ছিলেন অরেক অংশের সাক্ষী হয়ে। অন্যদিকে কাওকাবুন্নেসা। এই চরিত্রকে লেখক খুব শক্তিশালী করে তৈরি করেছেন। ষোড়শী এক মেয়ের তেজ, শক্তি সামর্থ ঠিক যেন বাস্তব সম্মত লাগেনি। হয়তো পরাবাস্তব সমাজ বলেই হয়তো এমন মেয়ে থাকলেও থাকতে পারে।

ছোটো কিছু চরিত্র বইতে এলে সেগুলোও যেন মূল্যবান ছিল। যতক্ষণ তাদের উপস্থিতি ছিল, তারাই ছিল বইটির প্রাণ। চরিত্রায়নের দিক দিয়ে খুব তৃপ্তি দিয়েছে বইটি।

▪️সম্পাদনা, প্রচ্ছদ ও প্রোডাকশন :

বাতিঘরের অন্যান্য বইয়ের মতো নয় "ঢাবাকা"। প্রোডাকশন কোয়ালিটি অন্যান্য বইয়ের চেয়ে সেরা হয়েছে। বানান ভুলের আধিক্য নেই। সম্পাদনা ঠিকঠাক। তবে কিছু ছবি যে যায়গায় থাকলে ভালো হতো, সেখানে ছিল না। আগে পরে ছিল। এক্ষেত্রে বইয়ের গতি কিছু জায়গায় থমকে গিয়েছে।

প্রচ্ছদ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও আমার বেশ লেগেছে। পরাবাস্তব এক নগরীর সকল কুশীলবরা যেন নিজেদের জানান দিচ্ছে শুরুতেই।

▪️পরিশেষে, এক পরাবাস্তব নগরী। যেই নগরীর সমস্ত অংশ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে মিল আছে, কী নেই। তবুও কোথায় যেন মিলে যায়। হয়তো সমান্তরালে একে অন্যকে সাথে নিয়ে ছুটে চলে। তারপর, মিলেমিশে এক হয়ে যায়!

▪️বই : ঢাবাকা
▪️লেখক : মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
▪️প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী
▪️প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩৮২
▪️মুদ্রিত মূল্য : ৭০০ টাকা
▪️ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.২/৫
Profile Image for Easir Al Saief.
78 reviews6 followers
August 19, 2024
#Book_Insights 31

ঢাবাকার মতো শহর নেই এ দেশে। বৃদ্ধা গঙ্গোত্রীর তীরে অবস্থিত পরাবাস্তব এ নগর। নানান মানুষের বসবাস, নানান মানুষের আনাগোনা। তাদের জীবন বিচ্ছিন্ন হলেও গল্পগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, বরং জড়িয়ে আছে একে অপরের সাথে। এ গল্পটা তেমন কিছুই, একটা শ্মশান ঘাটের লাশ পোড়ানো থেকে শুরু এবং সেখানেই একে একে সব চরিত্রগুলোর এক গল্পে বাধা পড়ে যাওয়া।

• ঢাবাকার নাম ও বর্ণনায় ইতোমধ্যে নিশ্চই বুঝে গেছেন, আমাদের দেশের ঠিক কোন শহরের সাথে এর এতো মিল আছে। শুধু নাম কিংবা পরিবেশগত মিল নয়, বরং উপন্যাসটা পড়তে শুরু করলে বুঝবেন এর পরিস্থিতি, জনসমাজ, ব্যবস্থাপনা অনেক কিছুই মিলে যায় আমাদের প্রাণের শহরের সাথে। লেখক খুব চতুরতার সাথে এসবের বুনন ঘটিয়েছেন।
বলতে পারেন, একটা প্যারালাল জগৎ এটা। আর উপন্যাসে একটা বাস্তব জগতের প্যারালাল জগৎ তৈরি করতে আপনাকে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। যাতে করে একদিকে আপনি বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্ক খুঁজে পান, আর অপরদিকে সেসব বিষয় ভিন্ন কিছুও মনে হয়। দুটি কাজ একসাথে ফুটিয়ে তুলতে আর উপভোগ্য করতে যে প্ল্যানিং দরকার তা লেখক বেশ শক্তিশালীভাবে করেছেন। তবে বলে দেই, এর সময়কাল আবার বর্তমান সময় নয়, ৮০-৯০ এর দশকের।

• 'চরিত্র' ঠাসা আছে এ গল্পে। যদিও একটা গল্প নয়, বরং প্রত্যেকটা চরিত্রদের আলাদা আলাদা গল্প। এর মাঝে কয়েকটা নারী চরিত্র আবার বেশ ইন্টারেস্টিং, সাহসী, চতুর। কাওকাবুন্নেসা তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ চরিত্র সম্পর্কে সকলের একটাই অভিমত, 'বাপের জনমে কেউ এমন মেয়ে দেখেনি!' সত্যিই চরিত্রটা তেমনই। কোনো আপোষ নেই, ভয় নেই। আমার মতে, সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্রায়ন তারই। 'পাণ্ডবদা'র চরিত্রটাও ভালো লেগেছে। ঠাণ্ডা মাথার খুনি যাকে বলে, যা করে ভেবে চিন্তে করে। 'চন্ডাল' নামে একটা চরিত্র আছে, যার হাসি আর তুচ্ছ কৌতুকযুক্ত সংলাপ অংশ পড়লে কেমন গা গুলিয়ে আসে। চরিত্রটা লেখাই হয়েছে তেমনভাবে।
• এখানে আপনি কাউকে পার্শ্বচরিত্র ধরতে পারবেন না, কারণ গল্পে সবারই একটা অবদান আছে। সবার একটা করে ব্যাক স্টোরি আছে। আর সবার গল্প গিয়ে ঠিক কোথাও না কোথাও মিলে যাবে।
• এখানে, কোনো চরিত্রই পুরোপুরি ভালো নয়, সবার মাঝেই ভুল ত্রুটি আছে। অর্থাৎ কেউ খারাপ, তো কেউ বেশি খারাপ। তাই কে নায়ক আর কে খলনায়ক, সেসব প্রসঙ্গে কিছু বলবো না। বললে গল্পের মজা কমে যাবে। তবে খল চরিত্রের উন্মোচন যখন হবে তখনই একেকটা ঘটনার সুতো বেঁধে দেয়া হবে। আর পাঠকও অবাক হবে এই ভেবে, বিচ্ছিন্ন সব ঘটনা কী করে এক জালে আটকে গেলো।

গ্রাফিক নভেল হিসেবে কেমন?
ঢাবাকা একটা গ্রাফিক নভেল, আর এদিক থেকে আমার মতে গল্পের সাথে মানানসই একটা কাজ। চিত্রগুলো একেকটা চরিত্রের কাঠামো ও কিছু দৃশ্যায়ন ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। যদিও সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ এই যে, কিছু চিত্র দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে, অথবা পাবলিক প্লেসে পড়তে গেলে আপনাকে দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারে। সহজ ভাষায়, শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।


• ব্যাক্তিগত রেটিং: ৪/৫

(মোটাসোটা বই হিসেবে বাইন্ডিং বেশ ভালো। কাগজও ভালো মানের। প্রচ্ছদটা আরেকটু ভালো করা যেতো, এখানে যদিও কিছু চরিত্রের প্রতিকৃতি একসাথে আঁকা হয়েছে।)

এক নজরে,
• বই: ঢাবাকা
• লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
• ধরণ: থ্রিলার উপন্যাস, গ্রাফিক নভেল
• প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী
• প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
• প্রচ্ছদ: তানিয়া সুলতানা
• অঙ্কন: তানিয়া সুলতানা ও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
• পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৮২
• মুদ্রিত মূল্য: ৭০০ টাকা



~ ইয়াসির আল সাইফ
Profile Image for অতি অল্প হইল .
4 reviews1 follower
March 13, 2023
কয়েকটি চরিত্র৷ বিচিত্র তাদের জীবনের গল্প৷ একটা দিক থেকে তারা সবাই সমান, সবাই এই শহরের এমন একটা অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে মানব জীবনের অন্ধকারচ্ছন্ন আর কদর্য রূপ প্রকটভাবে উপস্থিত৷ কে নায়ক, কে ই বা খলনায়ক তা নির্ধারণ করা কঠিন৷ সকল চরিত্র তাদের নিজস্ব বৈচিত্রতায় স্বমহিম৷ ঘটনাক্রমে কোনো এক রাতে তারা সবাই মিলিত হয় এক শশ্মানে৷ সেখানেই সুতোর মত জট পাকানো জীবনের গল্পগুলো একে একে আলাদা রূপ পেতে থাকে৷
লেখক ভূমিকায় লিখেছেন, এটি একটি নিরীক্ষাধর্মী লেখা৷ আমিও তার সাথে একমত৷ কারণ, প্রথমত, প্রথাগত উপন্যাসের মত একে ছকে ফেলা যায় না৷ দ্বিতীয়ত, চরিত্র গুলোর মুখের ভাষা আঞ্চলিক, তারা কথা বলতে একটা বাক্যে তিনটা অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে, যা ভদ্র সমাজ পড়তে গেলেও জিহবায় কামড় দেবে৷ তারা রেগে গেলে যেমন মুখ থেকে গালির তুবড়ি ছোটে, তেমনি তাদের ভালোবাসার প্রকাশটাও হয় একদম কৃত্রিমতা বর্জিত৷ মোট কথা, সমাজের সবচেয়ে কদর্য দিকটি লেখক চোখের সামনে মেলে ধরা হয়েছে৷ তাই যারা গল্পের মাঝে অশ্লীল শব্দ/গালি-গালাজ পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তারা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের 'ঢাবাকা' এড়িয়ে যেতে পারেন৷

নাম: ঢাবাকা
প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী
জনরা: সামাজিক/থ্রিলার
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৮৩
গায়ের মূল্য: ৭০০/-
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫
Profile Image for Abdullah All Noman.
49 reviews3 followers
September 19, 2023
বলিউড অভিনেতা সালমান খানের Jai Ho মুভিতে অভিনেত্রী টাবুকে একটা কথা বলতে শোনা যায়, “দুনিয়া ছোটি হি নেহি, গোল ভি হ্য”। ঢাবাকা শহরটার ক্ষেত্রেও সেইম কথা বলাই যায়, শুধু দুনিয়া না ঢাবাকাও অনেক ছোট।
এখানেই এসে সব জট-প্যাচ লেগেছে। যদিও কাহিনীর শেষে এসে জটগুলো খুলেছে কিন্তু সেগুলো আবার আমার মাথায় প্যাচ লাগিয়ে দিয়েছে। মানে টুইস্টের উপর টুইস্ট ,তাঁর উপর টুইস্ট, তাঁর উপর আবার টুইস্ট। হ্যা ঠিক এভাবেই বইটা শেষ করার পর গতকাল রাতে এক বন্ধুর কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলাম। গল্পের প্লটিং, স্টোরিটেলিং আসলেই জোস। তাঁরউপর সবগুলো ক্যারেক্টারের ব্যাকগ্রাউন্ড টেলিংটা কাহিনীটাকে অনন্য মাত্রা দান করেছে।
বাংলা সাহিত্যের বর্তমান সময়ে থ্রিলার জনরার জনপ্রিয়তায় নাজিমউদ্দিন ভাইয়ের জনপ্রিয়তা কোনো অংশেই কম না। সেই অংশীদারীত্ব আরও বাড়াতে ঢাবাকা যেনো আরেকটি মজবুত পিলার।
তবে হ্যা গ্রাফিক্স নভেল জিনিসটা যে আমার সাথে যায় না সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। কারণ পড়ার মাঝে ইলাস্ট্রেশনগুলো আসাতে ভালোই বিরক্ত লাগছিলো। তবে গল্পের দ্বারা এতোটাই ইনফ্লুয়েন্সড ছিলাম যে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে নি। এককথায় একদম টপক্লাস.....
Profile Image for Md Abdul Kayem.
177 reviews3 followers
May 13, 2023
"যার কোথাও যাওয়ার নাই সে যাইবে ঢাবাকায়, সেই ঢাবাকায়, যে সবার আশ্রয়দাত্রী, জননীর মতো কোলে ঠাঁই দেয়, তারপরও মাতৃসম নহে।"

ঢাবাকার শ্মশানে জমে উঠেছে গল্প, যে গল্প জন্ম নিয়েছিলো গৃহস্থালিতে, পথেঘাটে। দালানকোঠার মতোই গল্পগুলো একটার সাথে আরেকটা জড়িয়ে আছে । সেখানে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর মতোই গল্পগুলো ঢাবাকার বাইরের গল্পের সাথেও আছে লেপ্টে। এখন মানুষগুলো অপেক্ষায় আছে কিছু গল্পের জট খোলার।

বাকি ছিলো শূণ্য গোয়াল ঘরটা, ভোরের দিকে সেটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় হামিদ ফকিরের। ভুলুয়ার চরের গ্রামটা নদীগর্ভে বিলীন হবার পর, প্রতিবেশি প্রেমানন্দ বাউলকে নিয়ে পেটকাটা খাল হয়ে এক গ্রাম হেঁটে লঞ্চে উঠে বসে সে, সেই লঞ্চ তাদেরকে পৌঁছে দেয় মঞ্জিলে মকসুদে, ঢাবাকায়।

কাওকাবুন্নেসা, দইভাঙ্গা গ্রামের লোকজনও বাপের জনমে এমন মেয়ে দেখেনি। সেই ভয়ডরহীন মেয়েটাও মেম্বারের ছেলে এজাবরকে মে'রে, মেম্বারের ভয়ে বসতে হলো বুড়ো চেয়ারম্যানের চার নম্বর বিয়েতে । আর প্রথম রাতেই চেয়ারম্যানের আয়ু ফুরিয়ে দিয়ে পালিয়ে আসে ঢাবাকায়। স্থান হয় জামদানী নগরের জননী স্বর্ণালয়ের বয়স্ক  পান্ডবদার তিনতলা বাড়িটাতে  পরিমলের ঘরে। অভিনয় পাগল পরিমল তখন এক যাত্রাদলের সঙ্গে কোথায় যে চলে গেছে, কেউ জানে না।

পান্ডবদা রহস্যময় এক চরিত্র, যে একাত্তরের রেশনশপের চাকর থেকে হয়ে উঠেছে স্বর্ণকার।  যার সাথে যোগসূত্র আছে মকিম গ্রুপের নায়েব সিরু মিয়ার। সিরু মিয়া রহস্যের চাদরে মোড়ানো ঢাবাকার এক চরিত্র,  যে চরিত্রে পরতে পরতে আছে রোমাঞ্চ, অন্ধকার অতীত। সেই মকিম গ্রুপের সর্বেসর্বা আবার মনাক্কা বেগম, এক চোলাই বিক্রেতার মেয়ে, তারও আছে একটা গল্প।

বাবা-মা ছাড়া বুড্ডা বাবুল, মানুষ হয়েছে লাট মিয়ার কাছে যে মানুষটা পেশা হিসেবে নিয়েছিলো মানুষ খু'ন করাকে। যে কথাটা জানে কেবল পান্ডবদা। তবে এবার এমন একজনকে সরাতে বলা হয়েছে যাকে সে পছন্দ করে, প্রচন্ড পছন্দ করে। আর সেই পছন্দই ঢাবাকার গল্পের সুতোয় ঢান পড়ে, যে গল্প ঢাবাকার বাইরেও লেপ্টে আছে।

এমনি অনেক চরিত্র একত্রিত হয়েছে, ঢাবাকায় তাদের নিজস্ব গল্প গুলো নিয়ে, অপেক্ষা রহস্যের জট খোলার।

প্রতিটি গল্পেরই একাধিক দিক থাকে, প্রতিটি মানুষেরই থাকে এক একটা গল্প। জীবনের গল্প, যে গল্প কখনও উত্থানের, কখনও বা পতনের। যেখানে ছন্দে ফিরতেও যেমন দেরি হয় না, ছন্দ পতন হয়ে জীবনাশ কিংবা জীবনের গতিপথ বদলে যেতেও সময় লাগে না।

ঢাবাকা, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের তেমনি এক গল্প। যে গল্প বিস্তৃত  হয়েছে ঢাবাকা নামক এক পরাবাস্তব এক নগরীকে ঘিরে যেখানে অতীত আর বর্তমান চলছে হাত ধরাধরি করে। যেখানের প্রতিটি চরিত্রের গল্পগুলো বিচ্ছিন্ন মনে হলেও, আসলে বিচ্ছিন্ন নয়, একটার সাথে একটা যা জড়িয়ে জট লেগে গেছে,  সময়ের পরিক্রমায় সেই জট কখনও কখনও খুলেও যেতে পারে।  ঢাবাকা বইটিতে তেমনই এক জট খুলতে শুরু করেছিলো। যার বিস্তৃত ঢাবাকার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত, ছড়িয়ে গেছে প্রমত্তার চর থেকে দইভাঙ্গা গ্রামকেও ছাড়িয়ে।

বইটা যখন প্রকাশিত হয়েছিলো, গ্রাফিক নভেলা করার কথা বলেও লেখক না করায় কেবল কয়েকটা আর্টওয়ার্ক সাঁটিয়ে দেওয়াতে অনেকেই হতাশ হয়েছিলো দেখেছিলাম। বইটা পড়ার পর আমার মনে হয়েছে গ্রাফিক নভেলা পুরোপুরি না করাটাই খুব ভালো হয়েছে।  করলে এতোটা উপভোগ করতে পারতাম না, নগরীর নিম্নশ্রেণীর মানুষগুলোর ভাষায় আঞ্চলিকতাটা পুরোপুরি ভাবেও উপভোগ্য হতো না। সেই সাথে গল্পের পরিপূর্ণ আবহটাও ঠিক ফুটে উঠতো কি না সন্দেহ। আবার কিছু আর্টওয়ার্ক নিয়ে বললে সবগুলোই চমৎকার, ডিটেলিং তারপরও কিছু আর্টওয়ার্ক ১৮+ না করলেও চলতো, বিষয়টা অতিরিক্ত লেগেছে। অবশ্য আর্টওয়ার্ক গুলো না থাকলেও গল্প উপভোগে কোনো প্রভাবই পড়তো না।

বইটাতে গালিগালাজ, গ্রামাঞ্চলের ভালো কিংবা অশ্লীল শ্লোকে ভর্তি, যার অধিকাংশেরই মোকাবিলা করি আমরা নিত্যদিন আমাদেরই জীবনযাপনে। কিন্তু সেই শ্লোক, কথাগুলো যখন বইয়ের পাতায় চোখে পড়লো অনেক অস্বস্তি হয়েছে, তবুও উপভোগও কম করিনি। তারপরও মনে হয়েছে বিষয়টা আরেকটু শালীনতার মধ্যে আনা যেতো।

গল্পটির প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রাজনীতি, কূটনীতিতে ভরপুর। যা কখনো বা ক্ষমতার জন্য,  নিজেকে জাহির করার জন্য কিংবা দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য। গল্পের প্রতিটি চরিত্রই মুগ্ধ করেছে। তারপরও গল্প জুড়ে  মনে হয়েছে বুড্ডা বাবুল, কাওকাবুন্নেসা চরিত্রদুটো লেখক যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা শেষ পর্যন্ত বজায় ছিলো না, শেষদিকে এসে কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। ঢাবাকার সবথেকে  ভালো লাগার চরিত্র হলো প্রেমানন্দ বাউল।

সবমি���িয়ে গল্পটা দারুণ,  গল্পের পাতায় পাতায় থ্রিল না থাকলেও গল্প বর্ণনা, চরিত্রগুলোর নিজস্ব গল্প আবার সেই গল্প একই সুতোয় মিলিত হওয়ার ব্যাপারটা দারুণ উপভোগ করেছি। চরিত্রগুলোর কোনো কোনো গল্প রোমাঞ্চকর তো কোনো কোনো গল্প ইন্টারেস্টিং। তবে দিনশেষে এটাকে একটা সাধারণ জীবনের গল্পই বলতে হয়।  আর জীবন তো উত্থান, পতন, রোমাঞ্চ -রহস্যে ভরপুর আবার বিরক্তিকরও কম না।
Profile Image for Naimul Arefin.
3 reviews1 follower
August 14, 2023
#Book review
ঢাবাকা - মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

গল্পটা একটা শহরের । যে শহরের নাম ঢাবাকা। গল্পটা এক রাতের । গল্পটার শুরু এবং শেষ একটা শ্মশানে। গল্পটা একজন সিরিয়াল কিলারের যে টাকার জন্য মানুষ খুন করে কিন্তু তার ও একটা গল্প আছে ; কেন সে এই লাইনে আসে? গল্পটা এক লোকের যে টাকার জন্য মানুষ খুন করার সুপারী নেয় ; আবার তার ও একটা গল্প আছে ।‌গল্পটা একজন নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ধারণ করা মানুষের যে ঢাবাকায় জীবিকার সন্ধানে আসে ; আবার তার ও একটা গল্প‌ আছে । গল্পটা একজন চন্ডালের যে ভূমিহীন হয়ে , নিরুপায় হয়ে এই ঢাবাকায় এসে নাম পরিবর্তন করে হিন্দু হয়ে শ্মশানে দাহ করে ; আবার এই চন্ডালের ও একটা গল্প‌ আছে । গল্পটা পাশাপাশি চুম্বনরত অবস্থায় অনেকদিন ধরে পড়ে থাকা দুইটা কংকালের , এদের ও আলাদা গল্প আছে । গল্পটা এক সাহসী নারীর যে নিজেকে আত্মরক্ষা করার জন্য টেনে ছিঁড়ে ফেলে পুরুষের অন্ডকোষ ; আবার তার ও আলাদা গল্প আছে । গল্পটা একটা ছেলের ; যে কিনা আলাদা রকম হয়ে জন্ম গ্রহণ করে । গল্পটা এক নারীর যে জিরো থেকে হয়ে যায় বিশাল সম্পত্তির মালিক ; তার ও আলাদা রকমের গল্প আছে । অবশেষে গল্পটা একটা এতিম ছেলের যার জন্য এত কিছু , যে অনেকদিন পর জানতে পারে তার আসল বাবা কে ?? আবার সবার সব গল্পগুলো ঢাবাকা নামক শহরের ঘুরতে ঘুরতে চলে আছে বৃত্তের একদম মধ্যবিন্দুতে , যেখানে সব গল্প‌ হয়ে যায় একটা গল্প । সব রহস্যের জট খুলতে থাকে ‌।‌

ঢাবাকা নাজিম উদ্দিন প্রথম গ্রাফিক্স থ্রিলার ,যেখানে প্রত্যেক পৃষ্ঠাতে থাকে আর্ট করা ছবি ‌ । যা দেখলে মনে হবে বই না হয়তো কোন মুভি বা সিরিজ দেখতেছি। বইটা একটু বড় । ৩৮২ পৃষ্ঠার । শুরুতে একটু বোরিং আর অগোছালো লাগতে পারে । কিন্তু যখন সব ক্যারেক্টার আর স্টোরি বিল্ড আপ হবে তখন একের পর এক টুইস্ট আর বিচিত্র রকম তথ্যে আপনার মাথা ঘুরে যাবে ।‌তাই যদি পড়তে চান তাহলে একটু সময় আর ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে হবে ।নাজিম উদ্দিন হতাশ করেনি ❤️

#happy learning
#spread learning
Profile Image for Muzahidul Islam.
9 reviews
July 13, 2024
#বইরিভিউ
#ঢাবাকা

ঢাবাকা বাংলার থ্রিলার জগতের পথিকৃৎ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের থ্রিলার গল্প। যদিও বইটিকে 'গ্রাফিক নভেল' হিসেবে প্রচারণা করা হয়েছে কিন্তু বইটি পড়ার সময় একটুও মনে হয়নি গ্রাফিক নভেল। এনিয়ে বই প্রকাশের পরপরই বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়।

নাজিম উদ্দিনের একজন গুণমুগ্ধ পাঠক হিসেবে আমি শুরু থেকেই ঢাবাকা নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলাম। এর আগে পড়া নাজিম উদ্দিনের সকল থ্রিলার কিংবা অনুবাদ বই আমাকে সন্তুষ্ট করেছে এবং 'নাজিম উদ্দিন মানেই দারুণ কোনো থ্রিলার' এমন মনোভাব তৈরি করেছে।
তবে ঢাবাকা পড়তে গিয়ে বেশ আহত হয়েছি...

ঢাবাকা বইটির গল্প 'ঢাবাকা' নামক একটি পরাবাস্তব নগরীর বিভিন্ন চরিত্রকে নিয়ে। সবগুলো চরিত্রের শুরু ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় হলেও সবার গল্প শেষ হয়েছে ঢাবাকার এক শ্মশানে এক শব পোড়ানোকে কেন্দ্র করে।

শব পোড়ানোর সময় চন্ডাল খেয়াল করে শব হিন্দু নয় বরং মুসলিম, সেখান থেকেই শুরু হয় ঘটনা। লেখক একে একে বর্ণনা করতে থাকেন বিভিন্ন চরিত্রের অতীত ইতিহাস। বইটিতে বলা গল্প যতটা সময় বর্তমান টাইমলাইনে চলেছে তার চেয়ে ঢের বেশি চলেছে অতীত বর্ণনা করতে। তাই একসময় বিরক্তি চলে আসতে পারে কিংবা ভুলতে শুরু করতে বিভিন্ন চরিত্রের উৎপত্তির কাহিনী।
এভাবেই একসময় আপনার সামনে উঠে আসবে পান্ডব, কাওকাবুন্নেসা, ফকির ওরফে চন্ডাল, সিরু মিয়া, হাকিম কিংবা এমন আরো বেশ কিছু চরিত্রের অতীত ইতিহাস।

বইটি যে একদমই সুখপাঠ্য ছিলনা তা পূর্বেই বলেছি। এছাড়াও পড়ার সময় গালির অতিরঞ্জিত ব্যবহার খুবই দৃষ্টিকটু ছিল। পাঠকের কল্পনায় সাহায্য করার জন্য দেয়া ছবিগুলো বরং পাঠকের স্বতন্ত্র কল্পনা করার অন্তরায়।

ঢাবাকার প্রতি আগ্রহ দেখে বইটি আমাকে গিফট করেছে Sumaiya Islam । থ্যাংকস এ লট সুমাইয়া🥹

পার্সোনাল রেটিংসঃ ৩/৫

বইয়ের নামঃ ঢাবাকা
লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
প্রকাশঃ বইমেলা, ২০২৩
মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০
অঙ্কনঃ তানিয়া সুলতানা এবং মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
Displaying 1 - 30 of 53 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.