Jump to ratings and reviews
Rate this book

জলতরঙ্গ

Rate this book
পল্টন মোড়ে বিক্ষুব্ধ জনতার মঞ্চ, বাইতুল মোকাররমে ইত্তেহাদুল উম্মাহ, গুম-হত্যার কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া কত সাধারণ মানুষ আর বিরোধী দলের নানা রকম পরিকল্পনা-সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা? তৃতীয় কোন পক্ষ? পৃথিবীর নানা জায়গায় চলমান অস্থিতিশীলতার সাথে ঢাকার সম্পর্ক কী?

ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ক্রমাগত ভুলের মাশুল আর একের পর এক প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে ঘিরে বিস্তৃতি পেয়েছে যে রোমাঞ্চকর যাত্রা, সে যাত্রা নিয়েই গল্প। নিছক গল্প! হয়ত না।

320 pages, Hardcover

Published February 1, 2023

2 people are currently reading
62 people want to read

About the author

Hasan Enam

11 books88 followers
Hasan Enam, a university student, first started writing in a magazine. But gradually his writing changed and he turned his attention to publishing his own books. 'Dhakay Fagun', a dense fiction about the history of Dhaka, makes Hasan Enam a new acquaintance among the readers. However, he came out of these people the next year and wrote the novel 'Jaltaranga'.

The tendency to introspect is evident in his writings. Hasan Enam will throw himself into more debauchery in upcoming projects.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
17 (28%)
4 stars
25 (41%)
3 stars
15 (25%)
2 stars
2 (3%)
1 star
1 (1%)
Displaying 1 - 27 of 27 reviews
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
July 8, 2023
বিশ্বাস করেন ভাই, এই বই পড়তে গিয়ে পাঁচবার পাঁচরকম অনুভূতি আমারে ঘিরে ধরছে। কতকগুলো পৃষ্ঠা পড়ছি আর এক এক রকম চিন্তা ভাবনা করছি। প্রথম শ খানেক পৃষ্ঠা পড়ার পর চিন্তা করলাম, আচ্ছা এই বই আমি ক্যান পড়তেছি ? এমন কোন এলিমেন্ট এখনো খুঁজে পাই নি যা আমাকে সামনের আরো ২২০ পৃষ্ঠা পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে। প্রচন্ড খাপ ছাড়া লাগছিল।

তারপর কি মনে করে চলে আসলাম গুডরিডসে। এভারেজ রেটিং খানিকটা দ্বিধায় ফেলে দিল (কেননা ইদানিং গুডরিডসে কিছু লেখকের বইয়ে ফেক আইডি কিংবা মামা চাচা খালু টাইপের আইডি দিয়ে সমান তালে ৫ তাঁরা আর রিভিউ দেওয়ার চল তৈরি হয়ছে। অনেকগুলো চোখের সামনে দেখেছি)। যাইহোক, আবার শুরু করলুম পড়া। ১৫৭ পৃষ্ঠা পড়ে বিরক্ত খানিকটা কমলো। তবে আমার মতে এ পর্যন্ত যা লেখক আমাদেরকে দিলেন তা প্রচন্ড স্লো। জাস্ট ঢিমেতালে গল্পটার প্লট টাকে বা জালটাকে বিছাতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক তখন নিজেই লাস্ট লাইনে বলে দিচ্ছেন সিট বেল্ট বেঁধে নিতে। তাই নড়েচড়ে বসে পড়লুম।

সত্যি বলতে লেখক কিন্তু এরপর দুর্দান্ত দেখিয়েছেন। পুরো গল্পটার ছেড়া সুতোগুলো জোড়া লাগাতে শুরু করেছেন। পরবর্তী ১০০ পৃষ্ঠা বেশ দ্রুত এগিয়েছি। তারপর মোটামুটি আবার সেই স্লো মোশান।

তো সম্পূর্ণ উপন্যাসটা শেষ করতে গিয়ে যে বিরক্তি আমাকে ঘিরে ধরেছিল তার মধ্যে আরো কয়েকটা এলিমেন্ট আছে। এক নাম্বারে 'সুলতানা আজমি'। কোন প্রয়োজন ছিল না গল্পের জন্য। মেয়েলি কন্ঠ পেলেই ছেলেরা গলে পড়ে এইটা হাস্যকর। সুলতানা আজমির সাথে মুল চরিত্রের কথোপকথনটাও এ যুগে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের সাথে যায় না। দু নাম্বারে, মুল চরিত্রের নিজের পরিচয় বড় হুজুরের কাছে এক্সপোজ করা। বোকা বোকা আর হাস্যকর লাগছিল মুল চরিত্রকে। একদম শেষে দেখিয়েছে, হাসানের বাবার নাম নাকি আব্দুল্লাহ ছিল। অথচ পুরো গল্পে মারুফ নামেই দেখেছি।

আরো একটা ব্যাপার না বললেই নয়। অধ্যায় ৯৬, অন্তীম পর্বে লেখক পুরো গল্পটা যে রিটেলিং করেছেন ঐটা লেখকের পাওয়া নথির সাথে সবকিছুই মিলে যায়। সেক্ষেত্রে একই জিনিস দুবার দেওয়ার চেয়ে শুধু নথিটা সংযুক্ত করে বাকিটুকু পাঠকের উপর ছেড়ে দেওয়াই উচিত। তাতে পাঠক চিন্তা করার সুযোগ পাবে। যে কোন পাঠক শুধূ অন্তীম পর্ব পড়েই সম্পূর্ণ গল্পটাকে ক্যাপচার করতে পারবে। যেটা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ হয় না ।

তো পুরো গল্পটা আমার কেমন লেগেছে? এমন প্রশ্নে আমি বলব, মোটামুটি খারাপ না। তবে গল্পের মেদটুকু বাদ দিয়ে কিছু পৃষ্ঠা কমিয়ে দিলে গল্পটা বেশ গতিময় হতো। গল্পটা যে হট টপিক নিয়ে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কিছু খাপ ছাড়া বিষয় আর মেদের জন্যই বারবার গল্পটা মনোযোগ হারিয়েছে।

শেষমেশ আমার অভিমত, এইসব রিভিউ রেটিংয়ের গেড়াকলে পড়বেন না। ঝটপট হাতে নিন। নিজে স্বাদ গ্রহণ করুন।
Profile Image for Sohel Reza.
6 reviews2 followers
February 27, 2023
তরুণ লেখক হাসান ইনামের প্রথম বইটা মনে দাগ কাটতে পারেনি। কিন্তু এটুকু বুঝেছিলাম যে তাকে দ্বারা হবে। জলতরঙ্গ সেটারই প্রমাণ। এরকম বিষয় নিয়ে লিখতে হলে বুকের পাটা লাগে।
Profile Image for Muntasir Dhip.
165 reviews4 followers
May 18, 2023
" হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদি ঈসা,
কে জানে কাহার অন্ত ও আদি,
কে পায় কাহার দিশা?"

(~কাজী নজরুল ইসলাম)

কাহিনি সংক্ষেপ:

কথা বলছিলাম হাসান ইনামের দ্বিতীয় উপন্যাস জলতরঙ্গ কে নিয়ে। লেখকের ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল হলো এই উপন্যাস! ভূমিকাটা পড়েই বইটার প্রতি আমার অনেক আগ্রহের তৈয়ার হয়।

প্লটের শুরু থেকেই একরকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রুহিন খান নামক এক জনপ্রিয় লেখক ধর্মকে অবমাননা করে বই লিখে প্রকাশ করে। এতে করে অনেক মানুষের মতবিরোধের শুরু হয়। কেউ বইটার পক্ষে সাফাই গাচ্ছে কেউবা এর বিপক্ষে। অপরদিকে গল্পকথক তাঁর বন্ধু মামুন ও সাবরিনা এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে জনতার মঞ্চ নামক এক স্থানে হাজির হয় সেখানে বক্তব্য দেয় নোয়েল নামক এক অনলাইন এক্টিভিস্ট। উক্ত ঘটনার আকষ্মিকভাবে একটা গাড়ি তীব্র গতিতে এসে আঘাত হানে জনতার মঞ্চের উপর; সেখানে প্রাণ খোয়ায় মামুন নামের ছেলেটার। গাড়িটা ছিলো সৈয়দ মাহফুজ হক নামের এক নামকরা ইসলামিক চিন্তাবিদের। সবাই ধারণা করে তাঁর দল ইত্তেহাদুল উম্মাহের কাজ এটি! আসলেই কি তাই?অপরদিকে মাহফুজ হক এর একমাত্র সন্তান উক্ত ঘটনার পর থেকে হয়ে যায় নিখোঁজ! এক রকম অস্থিরতার সৃষ্টি হয় পুরো বাংলাদশে জুড়ে। সবাই সবার সুবিধা মতো একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাতে থাকে। কেউ কেউ বলে এটি সরকারের ষড়যন্ত্র। বিরোধী দলীয় নেতারা ডাক দেয় সরকার পতনের ঘোষণা দিয়ে! একের পর এক নামকরা সাংবাদিক এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিদের গুম আর খু*ন চলতেই থাকে। ঘটনার সত্যিটা যাঁরাই জেনেছে তাদেরই প্রাণবায়ু ত্যাগ করতে হয়েছে। এসবের পিছনে কলকাঠি নাড়ে কে? কোনো গোপন সংস্থা? নাকি এমন কোনো কিছু! যা আপনিও কল্পনা করতে পারবেন না। এসব কিছু জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে বইটি।

পাঠ অভিজ্ঞতা:

শুরুর দিকটায় বেশ স্লো ছিলো বইটা। মূল প্লট ধরতে আমার বেশ সমস্যা হয়েছিলো। তবে বেশ কিছু পেইজ পড়ার পরে, দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ হতে শুরু করে সবকিছু আমার কাছে। পলিটিক্যাল থ্রিলার হিসেবে বেশ ভালোই ছিলো বইটা। চরিত্র গাঁথুনিতে সুলতানা আজমি আর সাবরিনা দু'টো চরিত্র তে আরেকটু সময় দেওয়া উচিৎ ছিলো। অন্যান্য চরিত্র গুলোতে বেশ প্রাণবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছিলো লেখক; বলা যায় আলাদা করে সময় দিয়েছেন। আর লেখনশৈলী তেও দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। প্লটের মাঝামাঝি দিকের টুইস্ট গুলো এবং শেষের দিকে সব কিছু যখন একই সুতোতে গেঁথে ফেলা হয়েছিলো তখন বুঝতে পেরেছিলাম প্লট এর শুরুর দিকটা কেনো এতো খাপছাড়া লেগেছিলো! বইয়ের শেষ দিকটায় এসে বুঝতে পেরেছিলাম বইটা আসলেই আমার ভালো লেগেছিলো। সবশেষে দারুণ এক রোমাঞ্চকর যাত্রার সঙ্গী হয়েছিলাম জলতরঙ্গের সাথে।

বাদবাকি:

বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইতে বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক চোখে এসে লেগেছে। অনেক সময় পড়ার সময় বুঝতে কিছুটা অসুবিধে হয়েছিলো। পরবর্তী সংস্করণে এগুলো ঠিক করার বিশেষ অনুরোধ রইলো।

জলতরঙ্গ যারা পড়েছেন তারা জানাবেন কেমন লাগলো। যারা পড়েন নি তারা পড়তে পারেন বইটি। গতানুগতিক ধারার না হলেও কোনো রকমের বিরক্ত ছাড়াই একটানা পড়ে ফেলবার মতো বইটা।

লেখকের কাছে আমার একটা প্রশ্ন। বইটার কি কোনো সিকুয়েল বের হবে?

বই: জলতরঙ্গ
জনরা: পলিটিক্যাল থ্রিলার
লেখক: হাসান ইনাম
পৃষ্ঠা: ৩২০
প্রকাশন: বাতিঘর
মলাট মূল্য: ৫২০৳
Profile Image for Siam Mehraf.
Author 4 books19 followers
February 16, 2023
মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। কিছু ঘটে যাওয়া জিনিস সেই অদ্ভুত জীবনটাকে বানিয়ে দেয় আরও রহস্যময়। সেই উত্তর সারাজীবন বসে খুঁজে বেরিয়ে যায় মানুষ। মাঝে মাঝে উত্তরটা পেয়ে যায়, মাঝে মাঝে পাওয়া হয়না। তবে সবসময়ই উত্তর পেয়ে গেলেই যে সবকিছু শেষ বিষয়টা তেমনও নয়। ঘোলাটে রয়ে যায় অনেককিছুই। এ��� সবকিছু মিলিয়েই জীবনের যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, কিংবা চলতে থাকে সেটাই জলতরঙ্গ।

পাঠ প্রতিক্রিয়া: লেখকের প্রথম উপন্যাস 'ঢাকায় ফাগুন' হলে���, আমি জলতরঙ্গ দিয়েই শুরু করেছিলাম তার গল্প পড়ার যাত্রা। এই যাত্রায় সামিল হতে গিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলাম অটোগ্রাফকৃত প্রথম বইটিই। যাত্রার শুরুতেই চলছিলো কিছু গুচ্ছ গুচ্ছ ঘটনা। এখন এখানে, তো পরে অন্য কোথাও। এভাবে চলছিলো প্রথম দিকের যাত্রা। গল্প পড়তে পড়তে কখনো ঘুরে এসেছি কুয়েত, কখনো বা উপসাগরে, কখনো ঢাকার চিরচেনা জায়গাগুলোতে। গুচ্ছ গুচ্ছ কয়েকটা ঘটনাকে সামনে এনে, অধ্যায় জুড়ে তিনি তৈরি করেছেন গল্পের ক্যানভাস। যেখানে এনেছেন বহু চরিত্র। ক্যানভাস তৈরি করতে না করতেই, চরিত্রগুলোতে তিনি ছেড়েছেন চোখের সামনে। সেখানেই তারা তাদের জীবন অতিবাহিত করছে, আর মনে হচ্ছিলো সেগুলো আমি দেখেছি নিজ চোখেই!

গল্পটা বিশাল বড় ক্যানভাসের। যেটা লেখনীর গুনে অসাধারণভাবে সামলে গিয়েছেন লেখক। লুপোহোল নামক শব্দটা নেই এই গল্পে। এতো বড় গল্প এভাবে সামলানোটা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। যদিও কিছুক্ষন আগে বলেছি, গল্পটা বিশাল ক্যানভাসের, তবুও যদি গল্পটা সম্পর্কে কিছু কথা বলতেই হয়, সে হিসেবে গল্পটা জীবনের, কিছু মানুষের, বন্ধুত্বের, আর এসবের পেছনে ঠকঠক করে দরজায় কড়া নেড়ে যাওয়া রাজনীতির। বন্ধুর জন্য বন্ধুর যে টান সেটা দেখা গিয়েছে এই গল্পে। এবং সেটা করতে গিয়ে মোটেও কোনো নাটকীয়তার আশ্রয় নেননি লেখক। যদি বলতে হয়, পুরোটাই একদম নিখুঁতভাবে লেখা। এছাড়াও রয়েছে রাজনীতির ভয়াবহ চাল, যেই চাল বুঝে ওঠা আপনার আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সেটাও ন্যাচারালিই দেখিয়েছেন লেখক।

ক্যানভাসের ব্যাপারটা বলতে গেলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে দারুন বিষয় এতো বিশাল প্লট নিয়ে কাজ করা। যেটার জন্য লেখক সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এতো এতো কিছু টেনে এনেছেন গল্পে, সেগুলোর কোনোকিছুই অসংগতিপূর্ণ নয়। সবকিছুই এসেছে গল্পের প্রয়োজনে। আবার ছুটেও যায়নি হাত থেকে কিছুই। সবগুলোকেই একটা দারুন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন লেখক। এতোগুলো চরিত্রকে গল্পে এনে দাঁড় করানো, একই সাথে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে দেয়া সবকিছুই ভালো লেগেছে লেখকের লেখনীর গুনে।

লেখনী সম্পর্কে বলতে গেলে, লেখক খুবই ভালো গল্প বলতে পারেন। প্রতিটা অধ্যায়ের শেষের লাইনগুলো গতানুগতিক লেখার মতো নয়। লেখক পুরোপুরিই আলাদা একটা ধাঁচের ফিনিশিং লাইন দিয়ে অধ্যায় শেষ করেছে। প্রায় অধ্যায়গুলোতেই সেটা পরিলক্ষিত। আপনার পাঠক হিসেবে কি জানার থাকতে পারে, সেটাও আপনার হয়েই বলে গিয়েছেন লেখক। এটা করতে গিয়ে হেয় করেননি পাঠকদেরকে। বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতি পদে, যে তিনি যা বলতে যাচ্ছেন সেটার সাথে পাঠকের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিংবা পাঠক সেটা ইতোমধ্যে জানেন। এসবের বিচারে লেখার ধরণ দারুন ছিলো পুরো গল্প জুড়েই। এমন কিছুই আসেনি যা পড়ার পথে বাধাগ্রস্ত করতে পারে পাঠক হৃদয়কে।

চরিত্র সম্পর্কে আসি এবার। চরিত্রগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক রাখা হয়েছে। সবাই খুবই সাধারণ মানুষ। যারা আমাদের মতোই। হাসে, কাঁদে, আবার কষ্ট পেলেও হাসিমুখে কথা বলে যেতে পারে। আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকেই দেখাতে চেয়েছেন লেখক গল্পে। এমন কেউই নেই যার সাথে নিজেকে রিলেট করতে গেলে ব্যাপারটা কষ্টসাধ্য হবে। চরিত্রগুলোকে ডেভেলপ করতে ভালো সময় দিয়েছেন লেখক। অযথা কিছু না বলেই, চরিত্রগুলোকে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বিষয়টা ভালো লেগেছে অনেক। মনে হয়েছে, লেখার সময় লেখক তাদের জীবনটা অনুভব করতে পারছে! আবার, এটাও বলে যেতে পারে লেখক তাদেরকে খুব ভালো করে চেনে। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। একটা গল্প লিখতে গিয়ে তার টেনে আনা চরিত্রগুলোকে এমনভাবে তিনি তুলে ধরছেন, যেনো তাদের সবাইকে লেখক চেনেন, বিষয়টা দারুন। কিছু কিছু সময় তিনি দরদ হীন ভাবে চরিত্রগুলোর প্রতি নির্দয় হয়েছেন, সহমর্মিতা দেখাননি। সব মিলিয়ে এক্ষেত্রেও লেখক দারুন কাজ দেখিয়েছেন।

টুইস্ট রয়েছে গল্পটাতে। তবে অবশ্যই একটা নয়। পলিটিকাল থ্রিলার, তার উপর এতো বিশাল ক্যানভাস, এতোগুলো চরিত্র, এসব কি শুধু শুধুই? মোটেও না। কয়েকটা ধাপে রয়েছে সেই টুইস্ট। কিছু টুইস্ট আপনি চার ভাগের তিন ভাগ গল্প পড়ার আগেই আপনাকে বলে দেয়া হবে। আপনি তখনও ভাবতে পারবেন না, এই গল্পে পড়ার আর কিছু নেই, টুইস্ট জেনে গিয়েছি, আর পড়বোনা ইত্যাদি। বিশাল ক্যানভাস জুড়ে তিনি এই জিনিসটাই ধরে রেখেছেন। শেষ দিকে গিয়ে একটা টুইস্ট দিলেও, আপনার মনে হতে থাকবে, ওই নির্দিষ্ট বিষয়টা সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। কিংবা গত অধ্যায়ের শেষে বলা কথাটার কোনো জাস্টিফিকেশন নেই আপনার কাছে। তখন আপনি আবারও সামনে আগাতে বাধ্য হবেন, আবারও পৃষ্ঠা উল্টাবেন। যখন কোনো লেখক তার গল্প দিয়ে পাঠককে এভাবে ধরে রাখতে পারে তখন সেই লেখকের লেখাটা স্বার্থকতা পায়। সেখানেও লেখক বরাবরের মতোই সফল। শেষ টুইস্ট গুলো ছিলো অসাধারণ। মূল জিনিসগুলো জানার পরে, আপনি সবকিছু রিলেট করতে পারবেন। কেনো বলা হয়েছে এতো গল্প, কেনো দেয়া হয়েছে এতো জায়গার বিবরণ, কেনো রয়ে গেছে এতো চরিত্র বিভিন্ন জায়গায়! একদম শেষের টুইস্টটা আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে বহুবার, শতবার। মনে হতে থাকবে, পুরো গল্প জুড়ে তাহলে কি শুধুই আপনি ভুল ভেবে গেলেন? তাহলে কি যা হচ্ছিলো সবকিছু অন্য কারণেই হচ্ছিলো? এভাবেই আপনাকে শেষের দিকে ভাবাবেন লেখক। এটাই ছিলো গল্পের শেষ মাস্টারস্ট্রোক!

ফিনিশিং দারুন ছিলো এই গল্পের। এতো বড় ক্যানভাস যাতে আপনি শেষে গিয়ে খেই হারিয়ে না ফেলেন, তার জন্য লেখক করেছেন দারুন ব্যবস্থা। শেষের দিকে, সব তথ্যগুলো সাজানো আছে আপনার সুবিদার্থে। তবে ভুলেও ভাববেন না, এসব গল্পের বাইরে। এই সাজানো দিকগুলোও গল্পের ভেতরেই দারুনভাবে ইমপ্লিমেন্ট করেছেন লেখক। পুরোটাই গল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যাখা। বই শেষ করার পরে পড়ছেন, বা সেভাবে লেখা হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। লেখক যে এই বিষয়টা মাথায় রেখেছেন পাঠকের জন্য, সেটার জন্য তিনি প্রশংসার দাবীদার। সবগুলো পয়েন্ট আকারে বলে গিয়েছেন এবং আপনি তখনই বুঝতে পারবেন, শুরুর দিকে কোন ব্যাখাটা কিংবা কোন কাজটা কিংবা কোন জায়গাটা কেনো এনেছিলেন তিনি গল্পে।

সর্বোপরি, জলতরঙ্গ দারুন একটি উপভোগ্য উপন্যাস। যেটার গল্প, চরিত্র, ফিনিশিং, এন্ডিং আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। আর এই মুগ্ধ হওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকেই এতোক্ষনে বলে গেলাম জলতরঙ্গ সম্পর্কে আমার মতামত। আশা করি, আপনাদেরও এই উপন্যাসটি ভালো লাগবে। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে মোটেও নিজের ভাবনাগুলোকে সত্যি ভাবতে যাবেন না, লেখক তাহলে আপনার ভাবনাগুলোকে ধোঁকা দিতে তৈরিই আছে জেনে রাখবেন। জলতরঙ্গের সাথে আপনার যাত্রা নিরাপদ হোক!
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
August 26, 2023
৩.৫★

আমার কাছে বইটা খারাপ লাগেনি, শুরু এবং শেষের অংশটুকু কেন যেন খুব একটা মনমতো হয়নি। লেখকের প্রথম বই পড়লাম, বেশ ভালো লিখেন। লেখনী বেশ সুন্দর। কিন্তু ব্যক্তিগত মতামত, কিছু জায়গায় মনে হয়েছে ব্যপ্তিটা আরেকটু কম হলে ভালো লাগতো কিন্তু গল্পের শুরুর দিকে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনীগুলোকে এক সুতোয় নিয়ে আসার যে প্রচেষ্টা সেখানে আরেকটু ব্যপ্তি বাড়ানো হলে শুরু থেকেই বেশ গতিশীল একটা বই হত। সব মিলিয়ে বইটা ভালোই। আশা করি লেখকের থেকে আরো ভালো ভালো মৌলিক থ্রিলার পাবো।
Profile Image for Jayed Malik.
8 reviews
February 9, 2023
���্রথম থেকে যদি বলি তাহলে সমসাময়িক বেশ কিছু ঘটনাকে সামনে তুলে আনবে জলতরঙ্গ। মনে হয় এ নিখাদ বাস্তব থেকে তুলে আনা ঘটনাক্রম। যদিও গল্প উপন্যাস সব বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি তবুও এই গল্পের সাথে বাস্তবতার মিল যেনো একটু বেশিই।

দ্বিতীয়ত যেটা আমি গল্পের মাঝামাঝি অনুভব করেছি যে গল্পের গতিধারা, টুইস্ট এবং থ্রিলিং ভাবটা লেখক যেন একটু ঢিলেঢালা ভাবে দিচ্ছিল। সন্দিহান ছিলাম শেষটা কত রোমাঞ্��করভাবে শেষ করতে পারে। অনেকটা এমন আপনি এ্যাট এ টাইমে এক প্লেট কাচ্চি খাচ্ছেন সেটার অনুভূতি এবং বিপরীতে এক ঘন্টা পরপর এক লোকমা করে কাচ্চি খাচ্ছেন এমন অনুভূতি দিয়ে পার্থক্য করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু শেষে?
শেষে মনে হবে এক লোকমা বা দুই লোকমায় তিন কিংবা চারপিস মাটন পিস খেয়ে ফেলেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে একদম শেষের টা লেগ পিস ও হতে পারে। অর্থাৎ মাথা ঘোরানো কিছু টুইস্ট 🌼

রূঢ় বাস্তবতাই উঠে এসেছে গল্পে। বর্তমান পৃথিবীতে চলমান সংকট যে ষড়যন্ত্রের প্রতিফল তা আপনি সহজেই অনুমান করতে পারেন।

কিন্তু যে দিকটা আমাকে সবচেয়ে আন্দোলিত করেছে সেটা হচ্ছে। লেখকের সাহস এবং বর্ণনাভঙ্গি। অতি সহজ। কোনো জটিলতা নেই। যেন সবকিছু সাজিয়ে পরিবেশেন করা হয়েছে।

পরিশেষে, বইটি পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাবো।
Bet you cant read less!
Profile Image for Marjiur Rahaman Chowdhury.
2 reviews7 followers
March 8, 2023
কিছু বই লেখা হয় সময়ের প্রয়োজনে। জলতরঙ্গ সেই বইদের দলে।
Profile Image for Fahmida Rini.
67 reviews33 followers
March 24, 2023
একটা ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে পুরো দেশের রাজনৈতিক চিত্র। এতো তুচ্ছ একটি ঘটনাকে ঘিরে এতো বড় বড় দুর্ঘটনাগুলো নিছকই ঘটনাচক্র না-কি পরিকল্পিত এটা ভাবতে বাধ্য হবেন আপনি পড়তে পড়তেই।
জনপ্রিয় এক লেখক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ চিত্র তার লেখার মাধ্যমে তুলে ধরলে দেশের সাধারণ মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে এবং লেখক ও সাহিত্যিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই আরেকদল এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা(কিংবা দুর্ঘটনা)।
কখনো দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া হাসান,মামুন এবং সাবরিনাকে।কখনো পটভূমিতে দেখা দেন দেশের বিখ্যাত স্কলার সৈয়দ মাহফুজ হক।
একটা সময় নিজেকে আবিষ্কার করবেন টিএসসির চায়ের দোকানে,কখনোবা জনতার মঞ্চে আবার কখনো নিজেকে খুঁজে পাবেন জিবুতি,বাহরাইন কিংবা কুয়েতে।
স্থানের সাথে সাথে ব্যপক পরিবর্তন ঘটেছে সময়েরও।
হঠাৎই আবিষ্কার করবেন আপনি বর্তমান সময় থেকে পিছিয়ে এসেছেন ২০০ বছর পেছনে!

পড়া শুরু করার আগে আমি বইটিকে নিছকই একটি রাজনৈতিক থ্রিলার ভাবছিলাম। যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ, মন্ত্রীপরিষদ, আলোচনা,মিটিং-মিছিল এবং রাজনৈতিক স্বার্থের ভেতরই সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে পড়তে বসে ভুল ভেঙেছে একটু একটু করে।
গল্পের বিস্তৃতি বর্তমান সময়,রুহিন খানের বই,ইসলামিক স্কলারের খানকা ছাড়িয়েও বহুদূর পর্যন্ত চলে গিয়েছে।
অনেকদিনের চিন্তা-ভাবনার ফসল যে এই লেখা তা পাঠক সহজেই ধরতে পারবেন।

🔸বইটিতে কিছু বিষয় আমার ভালো লাগেনি-

**বইয়ে গল্পের প্রয়োজনেই সুলতানা নামক একটি নারীচরিত্র আনা হয়েছে। উক্ত চরিত্রের সাথে হাসানের প্রাথমিকভাবে জড়িয়ে পড়া এবং কথোপকথন আমার কাছে কিছুটা বিরক্তিকর লেগেছে।
**বইয়ে কিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে যা একেবারেই সামান্য। খুব সম্ভবত প্রিন্টিংজনিত কারণে এমনটা হয়েছে যেমন - মুক্তি শব্দটি এসেছে 'মিক্তা' এরকম আরো কিছু শব্দ আছে যার বেশিরভাগই এখন আমার মনে নেই।
**বইতে বেশ কয়েকবার 'আগাচ্ছে'/'আগালো' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে 'এগোচ্ছে/'এগোলো' ব্যবহার করলে ভালো লাগতো বলে মনে হয়েছে আমার।

🔸বইটিতে আমার ভালো লেগেছে বেশ কয়েকটি জিনিস -

➤ লেখক প্রথমেই অনেকটা জুড়ে গল্পকে গুছিয়ে এনেছেন। হয়তো এতোটা পড়তে বিরক্তি এসে যেতো তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছোট ছোট অধ্যায়ে(২/৩ বড়জোর ৫ পৃষ্ঠা) ভাগ করা থাকায় পড়তে একঘেয়েমি আসেইনি বরং সহজেই পড়ে ফেলা গেছে অনেকটুকু।

➤ঘন ঘন পট পরিবর্তন, এবং কথোপকথনে প্রথমে বুঝতেই কষ্ট হচ্ছিলো ঠিক কি হচ্ছে। তবে এই ব্যাপারটাই শেষপর্যন্ত দারুণ অবাক করেছে আমাকে। প্রতিটা ঘটনা আপনি শেষপর্যন্ত খুব বিস্তারিতভাবেই জানতে পারবেন। আমার বেশ কয়েকবার পিছের পাতাগুলো দেখে আসতে হয়েছে ঘটনা ধরতে। মজার ব্যাপার হচ্ছে পুরো লেখাটা যখন শেষ করে এনেছেন তখন কোনো ভুল করেননি বরং পুরো ঘটনাটা বেশ সুন্দরভাবে গুছিয়ে এনেছেন।

➤বর্তমান সময়ের লেখকদের আমরা দেখি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার লেখায় অতোটা আনেননা বা আনলেও তার ব্যবহার ঠিক সুন্দরভাবে ফুটে উঠে না।তবে এই গল্পের প্রায় বিরাট অংশ প্রভাবিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা। জিনিসটাকে আমার সময়োপযোগী এবং লেখকের বিচক্ষণতার অংশ বলে মনে হয়েছে।

➤আরেকটা ব্যাপার লক্ষনীয়, 'ঢাকায় ফাগুন' এর মতো এই বইটিতেও অনেক অনেক তথ্য ব্যবহার করার পরও বইটিকে বোরিং লাগেনি। বরং তথ্যগুলোকে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। প্রথম উপন্যাসের চেয়ে দ্বিতীয় উপন্যাসে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে যা আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লেগেছে।

🔹শেষমেশ বলবো 'জলতরঙ্গ'কে আমার ভিন্নধাচের প্লট নিয়ে লেখা একটি সফল থ্রিলার বলে মনে হয়েছে। তবে একে টানটান উত্তেজনার থ্রিলার বলা যাবে না। বইটি এগিয়েছে ধীরে ধীরে। সযত্নে গল্পের পেছনের গল্প সাজানো হয়েছে,ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে পাঠকের মস্তিষ্কে তারপর একের পর এক আস্তিনে লুকোনো তাস বের করে লেখক সামনে রেখেছেন পাঠকের।
টানটান উত্তেজনার না হলেও পড়ার সময় আপনার নিজেকে জোর করা লাগবে না। স্বচ্ছ-স্বাভাবিক,সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সুন্দর লেখনশৈলীর জন্যে সহজেই পড়ে যেতে পারবেন এবং কখন যে শেষের পাতায় চলে এসেছেন টেরও পাবেন না।

[এতো দীর্ঘ আলোচনা করে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। এতোটা সময় ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ 🌸]
Profile Image for Ummey Kulsum.
12 reviews
January 28, 2023
দারুণ একটা বই, লিস্টে রাখার মতো। পড়ে আশাহত হবেন না, এটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি।
Profile Image for Mohammad  Saad.
85 reviews43 followers
Read
May 5, 2023
ঘুণে ধরা এক ফাঁপা রাষ্ট্রের আর্তনাদ মিশ্রিত প্রতিচ্ছবি যেনো লেখকের শব্দের বুননে ফুটে উঠলো। জনতার দেহ পিষে ঘুণপোকাদের তাল মাতাল ছন্দপতন আর এ লোভী ঘুণপোকাদের লালসার নাচ নাচিয়ে ফায়দা লুটতরাজ হায়েনাদের নোংরামিও সকলের বিবেকের আদালতে হাজিরা দিয়ে গেলো। লেখা বেশ ঝরঝরে। গল্প সাজানোও যথেষ্ট সুন্দর। আবার গল্পের ভাঁজে লেখক নিরপেক্ষ আসনে ডান বাম সব দিক থেকে ফড়িংদের
যুক্তিফাঁদে ফেলেছেন। গল্পের আঁচড়ে ডান বাম উভয়ের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়াদি সুন্দর খোলাসা করেছেন। গতিময় এক গল্প। শেষ করে লেখকের নতুন লেখার অপেক্ষায় বসে গেছি। বছরের একটা ভালো বই পড়ে শেষ করলাম।
Profile Image for Rihan Hossain.
109 reviews2 followers
February 19, 2023
হাসান ইনামের এই বইটি একটি বারুদ! দেশের সমসাময়িক ঘটনাবলী সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল তারা বইটি বেশ উপভোগ করবেন।
শাহবাগের জনতার মঞ্চ থেকে শুরু করে ১৭৯৯ সালে শুরু হওয়া এক গোপন মিশনের গল্পটাতে উঠে এসেছে এমন অনেককিছু, যা আপনি কখনোই বলতে পারেননি; কিংবা বলতে চাননি। যা কিছু আপনি দেখতে পাননি, কিংবা দেখতে চাননি।

একটা ছোট সাজেশন রাখা যেতে পারে লেখকের জন্য, বই পড়ুয়াদের সকলে হয়তো ভিন্ন ভাষার বা সাধারণ মহলে অপ্রচলিত কিছু শব্দ যেমন "মুতায়ালা, দরস, খানকাহ"- ইত্যাদির অর্থটা ঠিকঠাক অনুধাবন না করতে সমর্থ না হতে পারেন। এই শব্দগুলোর সরল অর্থ জুড়ে দিলে মাধুর্য আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

তরুণ লেখক হাসান ইনামের জন্য শুভকামনা!
4 reviews
March 11, 2024
অনেক অনেক কাহিনি, অনেক অযথা চরিত্র তৈরি করেছেন লেখক। রেটিং দেখে আমার বুঝে আসল না এই বইতে এত রেটিং কেনো!

একটা পার্টে প্রেমের গল্প আছে, মূল গল্পের সাথে কোনোভাবেই যাচ্ছে না! আবার এত রহস্যেময় এত এত চরিত্র লেখক তৈরি করলেন তাদের না আছে কোনো বিস্তারিত না আছে কোনো ভূমিকা! এক দেশ থেকে অন্যদেশে চরিতদের ঘুরালেন, শেষমেশ পুলিশের একটা ছোটোখাটো অভিযানের কাছে সব শেষ!

বই শেষ করে আমার অনুভূতি হইছিল - কেন লিখছে এসব! আর কেন আমি টাকা দিয়া এই বই কিনলাম😂😂
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Manzurul Hasan.
35 reviews1 follower
February 23, 2023
পল্টন এলাকা কেন্দ্র করে কিছু মাতামাতি, কিছু ঘটনা, দুর্ঘটনা থেকে জলতরঙ্গের গল্প ডালপালা গজিয়েছে। আমার বাসাও পল্টনে। আমার নিত্যদিনের আপন দৈনিক বাংলা, পল্টন মোড়, বিজয়নগর, বাইতুল মুকাররম ইত্যাদি গল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য, আমি যেভাবে ফিল করে পড়ছি এটা কতোজনে পেরেছে আমি জানিনা।

স্পয়লার দিচ্ছি, গল্পের একটা পর্যায়ে বাইতৃল মুকাররমের একটা মিনার ভেঙ্গে পড়ে। এটা যখন পড়ছি তখন আমার অবস্থান বাইতুল মুকাররমের পাশেই।

কোচিং সেন্টারের লেকচার শিট নিয়ে বাইতুল মুকাররমে সাউন্ড পরিবেশে পড়তে গেসি। সঙ্গে নিয়ে গেছি জলতরঙ্গ। কারণ, এই বইটায় গল্পকথকের কৌতুহল আর আমার কৌতুহল মিশে গেছে। কৌতুহল না মেটানো পর্যন্ত স্বস্থি পাচ্ছিলাম না। গল্পের এক পর্যায়ে ইত্তিহাদুল উম্মাহের নায়েবে আমীর ভয়ঙ্কর এক ঘোষনা দিলো, সরকার পতনের। ঘোষনাটি দেয়া হয় বাইতুল মুকাররমের ভিতরের মিম্বরে। আমি তখন বাইরের চিল্লাপাল্লা আর শব্দদূষনে বিরক্ত হয়ে মিম্বরের সামনে বসে পড়তেসিলাম...

যাকগে, এগুলো মুলকথা না। মুলকথা, আমি অসম্ভব ইনজয় করেছি। গল্পের গাথুনী, চরিত্র, জায়গাগুলো, প্রেক্ষাপট আপন ছিল। আমি সিনেমার মতো ভিজুয়াল করে ফেলছিলাম। পড়তে পড়তে হঠাৎ মাথায় বেজে ওঠে কোনো থ্রিলিং এম্বিয়েন্ট সাউন্ড ইফেক্ট কিংবা কোনো হলিউড সিনেমাটিক টাইপ এম্বিয়েন্স... এসব ছিলো জলতরঙ্গের ঘোর।

জলতরঙ্গ আমাকে কল্পনার জগতে বিচরণ করতে দিয়েছে। জগতটার কালার গ্রেড বেশ সফট টোনের ছিলো। ভালো রিভিউ লিখতে পারলাম না। অগোছালো হয়ে গেছে লেখাটা।

প্রচ্ছদটা সুন্দর ছিলো।

দশে সাড়ে আট। (দের মার্ক কাটা হয়েছে হুদাই। নম্বরপত্রের গাম্ভীর্য ধরে রাখার জন্য)
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Samma Irtifa.
43 reviews12 followers
May 23, 2024
"হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈসা,
কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় তাহার দিশা?"

লেখক হাসান ইনামের "জলতরঙ্গ" পড়লাম। পলিটিক্যাল থ্রিলার জনরার বই। দেশের এক সময়ের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে থ্রিলার বইটা রচিত হয়েছে।
কাহিনীর বিস্তার অনেক বেশী। লেখক বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে গল্পের ডালপালা ছড়িয়েছেন। শুরুতে অনেক চরিত্র এবং ভিন্ন ভিন্ন সময় আর স্থানের চিত্র দেখবে পাঠক।
মূল চরিত্র হাসান ভার্সিটির একজন ছাত্র। তার বন্ধুর মৃত্যু রহস্য উন্মোচনে তাকে যেভাবে ফিল্ডওয়ার্ক করে আগাতে দেখা গেছে সেটা খুব ভালো লেগেছে। পুলিশ কিংবা গোয়েন্দার তদন্ত ছাড়াও যে একজন সাধারণ অনুসন্ধিৎসু ছেলের রহস্য উন্মোচন নিয়ে টানাটান উত্তেজনাকর থ্রিলার লেখা যায়, সেটা হাসান ইনাম করে দেখিয়েছেন।
গল্পের বুনট শুরু থেকেই বেশ গ্রিপিং ছিলো। তবে মাঝে এসে কিছুটা অতিরিক্ত বর্ণনা এবং আলাপচারিতায় মনোযোগ হারিয়েছিলাম। এগুলো চাইলে সম্পাদনার মাধ্যমে কাটছাঁট করা যেত।
টুইস্ট আরেকটু কম দিলেও চলতো। বাস্তব সম্মত একটা রাজনৈতিক প্লটের গল্পটা শেষে হালকা করে দিয়েছে। এতো কাকতালীয় ব্যাপার ঠিক মেনে নিতে পারিনা। যুক্তি দিয়ে টুইস্ট উপস্থাপন করলে সেটা বেশি উপভোগ্য হয়।
লেখনশৈলী এক কথায় অসাধারণ। লেখকের ভাষাজ্ঞান বেশ সমৃদ্ধ। প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা বইটা পড়তে বেশ ভালো লেগেছে।

ব্যক্তিগত রেটিং 3.75/5
(গুডরিডসে ভগ্নাংশ দেয়া যায়না বলে ৪ দিয়েছি)
Profile Image for Tanshit Mona.
46 reviews3 followers
February 21, 2023
থ্রিলারের বিভিন্ন ধরণ আছে। কিছু থ্রিলার শুরু থেকেই টুইস্টে ভরপুর আবার কিছু থ্রিলারে লেখক রয়েসয়ে টুইস্টের অবতারণা করেন। জলতরঙ্গ দ্বিতীয় ক্যাটাগরির থ্রিলার। হালকাপাতলা উত্তেজনা দিয়ে শুরু, মাঝের অংশ গল্পের গাঁথুনি এবং সবশেষে হা হয়ে যাওয়ার মতো গুটিকয়েক টুইস্ট– সুতরাং থ্রিলার শুনেই টানটান উত্তেজনার আশা করা যাবে না; ধৈর্য নিয়ে বসতে হবে আপনাকে।

সারসংক্ষেপ:-

আপাতদৃষ্টিতে গল্পের শুরু বিখ্যাত লেখক রুহিন খানের নতুন প্রকাশিত বইকে কেন্দ্র করে এক আন্দোলনকে ঘিরে। নির্দিষ্ট একটা শিক্ষাব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে কুৎসা রটিয়েছেন তিনি। একটা বই লেখার জের ধরে কান নিয়েছে চিলে'র মতো করে সবাই চিলের পিছে ঘুরে মরছে। এ ওর গায়ে কাদা ছুড়ে মারছে। ঘোলা জলে মাছ শিকারের সুযোগ তো কেউ ছাড়বে না তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মাঠে নেমেছে দেশের সরকারি আর বিরোধী উভয় দলই। তিলকে তাল করার মতো জল গড়াতে গড়াতে এক সময় পরিণত হয় বিশাল এক তরঙ্গের।

কিন্তু গল্পের শুরু আদতেও কী আমরা যা দেখছি তাই?
দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট এই দেশটার অস্থিতিশীলতার সাথে পুরো পৃথিবীর অতীত-বর্তমানে ঘটে যাওয়া খণ্ড খণ্ড নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলার সম্পর্ক কী আসলে?

চোখের সামনে যা দেখা যায় তাই সবসময় বিশ্বাস করা ঠিক নয়। গল্পের পেছনে গল্প থাকে, তার পেছনে থাকে আরও গল্প। বিশাল তরঙ্গের শুরুর গল্প জানতে হলে পিছাতে হবে আরও কয়েক কদম পিছনে, যেতে হবে তরঙ্গের কেন্দ্রবিন্দুতে। মোটাদাগে এই জার্নিটাই জলতরঙ্গ।

পাঠপ্রতিক্রিয়া:-

৩২০ পৃষ্ঠার মোটামুটি ঢাউস সাইজের বইটা শুরু করে এক টানে পঁচাত্তর পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছি। ঢাকায় ফাগুনের পাঠক হিসেবে একটু অবাক হয়েছি বলা যায়। কারণ লেখকের লেখার গতি বেশ মসৃণ হয়েছে আগের তুলনায়। মাঝখানে গল্প খানিকটা ঝিমিয়ে এসেছিল কিন্তু শেষ হলো চমৎকারভাবে। সমাপ্তি টানতে লেখক বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।

স্পয়লারের ভয়ে প্লট বিস্তারিত বলতে পারিনি তবে এরকম প্লটে আমার পড়া প্রথম বই এটা। গত এক দশক ধরে চলা রাজনৈতিক পরিক্রমায় চোখ রাখলে যে কেউ ধরে ফেলতে পারবে লেখক কোন ঘটনাকে পুঁজি করে গল্পের জাল বুনেছেন এবং নিঃসন্দেহে এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ।

মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমসাময়িক ধ্যানধারণার কথা সবাই জানি। তারা যে সুবিধাবঞ্চিত এটা কেউ মানতেই চায় না। লেখক ব্যাপারটাকে তুলে ধরেছেন দেখে ভালো লাগলো।

এছাড়াও সমসাময়িক গল্প-উপন্যাসে দাড়ি-টুপি পরিহিত, পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মেনে চলে এরকম কাউকে মূল চরিত্রের কাছাকাছি সম্মান দেয়া কল্পনার বাহিরে। এক্ষেত্রেও লেখকের প্রশংসা করতে হয়।
সৈয়দ মাহফুজ হক চরিত্রটা আমার বিশেষ পছন্দের একটা চরিত্র।

মামুন চরিত্রটাকেও ভালো লেগেছিল। মামুনকে সামনে পেলে সত্যি সত্যিই জিজ্ঞেস করতাম মৌলবাদের সংজ্ঞাটা আসলে কী?
ভালোলাগার আরেকটা চরিত্র মি���্জা নূর। যদিও বেচারার স্ক্রিণটাইম কম ছিল :')

এই তো গেলো গল্পের সব ভালো দিক।
এবার একটু সমালোচনা করা যাক।
গল্পের কয়েকটা চরিত্র ছিল যাদের পেছনে লেখক আরেকটু সময় ব্যয় করতে পারত। যেমন ডেভিড ওরফে মোস্তফার চরিত্রটাকে লেখক ঢেলে সাজাতে পারত। সুলতানা আযমির ব্যাপারেও ধোঁয়াশা রয়েই গেলো। তাছাড়াও দুয়েকটা জায়গায় কিছু ঘটনা একটু বেশিই কাকতালীয় লেগেছে।
আর বাতিঘরের বইয়ের বানান সম্পাদনার কথা কী বলব! আগের তুলনায় এখন কমেছে যদিও। তবুও চোখে লাগে এরকম কয়েকটা জায়গায় টাইপিং মিস্টেক ছিল।

যাহোক, সব মিলিয়ে জলতরঙ্গের সাথে যাত্রাটা মন্দ কাটেনি। থ্রিলার পাঠকদের জন্য বইটা রেকমেন্ডেড। নিশ্চিন্তে হাতে তুলে নিতে পারেন।

ও হ্যাঁ, বইয়ের প্রচ্ছদ মারাত্মক সুন্দর, এটা স্বীকার করতেই হবে।


বই: জলতরঙ্গ
লেখক: হাসান ইনাম
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২০
প্রকাশনী: বাতিঘর
প্রথম প্রকাশ: বইমেলা, ২০২৩
মুদ্রিত মূল্য: ৫২০ টাকা
রেটিং: ৪/৫
Profile Image for Masum Hamim.
6 reviews1 follower
March 9, 2023
তেইশের প্রথম পড়া বই জলতরঙ্গ। বইটা বেশ ঝক্কিঝামেলার ভেতর দিয়েই পড়েছি জন্য সময় বেশি লেগেছে। অনেক সময় এমন হয়েছে যে– একই অধ্যায় বার কয়েকও পড়েছি মজা বা টান ধরে রাখতে অথবা সাধ্যের পূরোটা চেখে দেখতে।

থ্রিলারের আমি একজন নতুন পাঠক যদিও তবে মোটামুটি ধারণা তো রাখি যে থ্রিলার কেমন হয়, কোনভাবে সাজানো থাকে একটা গল্প। সেই স্বল্প জ্ঞানের চেয়ে ভিন্নতা দিয়েই ঠাসা জলতরঙ্গ। জলতরঙ্গ পাঠের সময়টা আমার রোমাঞ্চকরই কেটেছে। এতএত টুইস্ট, এতএত গল্পের শাখাপ্রশাখা। এবং সবচে বেশি ভালো লেগেছি যে বিষয়টা তা হচ্ছে– থ্রিলারের একেকটা থ্রিল বা জটের সমাধান লেখক সময়ে সময়ে করে বইটার শেষদিকে পুরোটার নির্জাস একটা অধ্যায়ে তুলেছেন। যার কারণে, আমার প্রায় আড়াই মাস ধরে পড়তে থাকা বইটা শেষ করে মনে হয়েছে– এই বসলাম আর এই উঠলাম। কাহিনি পুরোটাই মাথায় থেকেছে, একটুও ফাঁকফোকর হয়নি।

গল্পের প্লটটাও দারুণ। তারচেয়ে দারুণ ব্যাপার হচ্ছে– বইয়ের বা গল্পের শেষটা। শেষটা যে এমনভাবে হতে পারো তা পাঠক বুঝতেই পারবে না একদম শেষ পর্যন্ত না গিয়ে। সামসময়িক প্রেক্ষাপটের আশ্রয়ে এমন একটা বই লিখে ফেলা বিশাল হিম্মতের ব্যাপারে। খুব চওড়া বুক না থাকলে এই হিম্মত করা দুস্কর্মই বটে। হাসান ইনামের জন্য সু-কামনা সমেত প্রত্যাশা– তার থেকে এমন দারুণ লেখা ঘনঘন চাই। পরিশেষে বইটার সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
Profile Image for Shawn.
185 reviews8 followers
October 18, 2024
প্লট ভালোই। লেখনি টা আরো ভালো হতে পারতো। দেখা গেছে যে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাই পুনরায় আবার রিপিট করতেছে। শেষেতো গল্পের নায়ক বই লিখেছে এজন্য পুরো গল্পটাই আবার সামারাইজ করে দেওয়া হয়েছে, এসব সত্যিই বিরক্তিকর।
Profile Image for Sakib A. Jami.
334 reviews36 followers
March 24, 2023
একটি বাটারফ্লাই ইফেক্টের গল্প বলি। বাটারফ্লাই ইফেক্ট কী জানেন তো? ওই যে, সামান্য একটি ঘটনা। আদতে যার মূল্য নেই ভাবা হলেও পরবর্তীতে সেই সামান্য ঘটনাকে বৃহৎ বলে মনে হয়। একটি ছোট্ট একটি ঘটনার পরিণতিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি যা ভাবনার বাইরে। একেই তো বলে বাটারফ্লাই ইফেক্ট! না কি?

রুহিন খান একটি ভুল করে ফেলেছেন। ভুল, না-কি ইচ্ছাকৃত? সে প্রশ্ন অবশ্য করা যায়। আমরা ভুল ধরেই এগিয়ে যাই। এই উপমহাদেশে ধর্ম নিয়ে কথা বলা পাপের শামিল। খুব সহজেই যেন সেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। এতটা ঠুনকো সে অনুভূতি! এখানেও যেন সেই আঘাত জোরদার। রুহিন খানের সেই উপন্যাসে উঠে এসেছে মাদরাসা ও এর অভ্যন্তরীণ কিছু ত্রুটি। তাতেই তেতে উঠেছে হুজুর সম্প্রদায়। এর এক বিহিত করতেই হবে। সরকারও যেন এক মন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই তো গৃহবন্দী করে রেখেছে লেখককে।

মানুষ তা মানবে কেন? নোয়েল চৌধুরী নামের একজনের এক কথায় রাস্তায় নেমে এলো হাজার জনতা। তৈরি হলো জনতার মঞ্চ। পল্টনের মোড়ে দেশের সবচেয়ে বড়ো প্রতিবাদের দৃশ্যপট যেন মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। এক ভাগে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে সুশীল শ্রেণী। কেউ যেন কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এর পরিণতি কী হবে?

ছেলেটার নাম হাসান। ছোটোবেলা থেকে খুব একটা বন্ধু ভাগ্যে জোটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক মাত্র বন্ধু মামুন। মামুনের কাছেই জনতার মঞ্চের কথা প্রথম শোনে হাসান। মামুনের বান্ধবী সাবরিনাও জানায় এই মঞ্চের কথা। প্রতিবাদের মঞ্চ এই জনতার মঞ্চ। কিন্তু এর পেছনের ষড়যন্ত্র কি কেউ আঁচ করতে পেরেছে? ভয়াবহ এক দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে। যার সূত্রপাত কি তবে মামুনকে দিয়ে? বন্ধুকে হারিয়ে দিশেহারা হাসান কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

হুজুরদের নেতা সৈয়দ মাহফুজ হক বিচক্ষণ মানুষ। তিনি পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন বলেই তার অনুসারীদের বলছেন চুপ থাকতে। কিন্তু কার এত ধৈর্য আছে? ধর্মের অবমাননাকারীকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে না? সত্য, মিথ্যা এসব ভাবার সময় কি এখন আছে? জনতার মঞ্চে হামলা হবে, এমন কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে কি সত্যিই আক্রমণের দিন ঘনিয়ে আসছে?

মামুনের মৃ ত্যু মেনে নিতে পারছে না হাসান। তার একমাত্র বন্ধু এভাবে চলে যাবে? শেষ বেলায় হাসানকে কিছু বলতে চেয়েছিল মামুন। কিন্তু আয়ু যেখানে সীমিত, সেখানে কিছু যে করা সম্ভব। পল্টনের মোড়েই মৃত্যু ঘনিয়ে এলো। একটি মৃত্যু, তা নিয়ে যেন রাজনীতির পসরা সাজিয়ে বসেছে সুবিধাবাদীরা। এসব সহ্য হয় না। হাসান তা সহ্য করবে না। বন্ধুর মারা যাওয়ার কারণ জানতে যত গভীরে যেতে হয়, হাসান যাবে। এর এতে করে নিজের জীবনে নিয়ে এসেছে মৃত্যুর পরোয়ানা। যেখান থেকে ফেরার উপায় নেই।

লড়াইটা যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, তখন তারা-ই বা বাদ থাকবে কেন? ধর্মীয় সংগঠন ইত্তেহাদুল উম্মাহ গড়ে উঠেছে সম্পূর্ন অরাজনৈতিক চিন্তাধারায়। লক্ষ্য শুধু প্রতিবাদের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে তোলা। যেন কেউ ভুল করেও ইসলামের অবমাননা করতে না পারে। কিন্তু কে জানত, যার কাঁধে এই গুরু দায়িত্ব, সে-ই নিজেকে বিক্রি করে দিবে! জাতীয় মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের দায় কি তার? না-কি কোনো জঙ্গি সংগঠন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে? র ক্তের হোলি খেলায় মেতেছে একদল। যেখানে জীবন নামের ঠুনকো বিষয় নিয়ে কারো মাথা ব্যথার যেই। মরল না হয় কয়েকজন। তাতে কী? বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র কিছু জীবন জলাঞ্জলি দিলে দোষের কিছু না। সেই বৃহৎ স্বার্থটা কী?

এক ষড়যন্ত্রের বীজ পোতা হয়ে গিয়েছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে যা করা সম্ভব হয়নি, এবার শেষ লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশটি। ষড়যন্ত্র পেরিয়ে গল্পটা বিশ্বাসঘাতকতার। গল্পটা বন্ধুত্বেরও, কিংবা পারিবারিক বন্ধনের। একের পর এক মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা হয়েও যেন একটু বাঁচার চেষ্টা। কিন্তু শেষটা যে সবসময় সুখকর হয় না। খেলা যে অনেকটাই বাকি...

▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :

একটি বই শেষ করার পর, তার রেশ দিন দুয়েক ধরে যখন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়; তখন বইটা কেমন হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই গল্প তো আমাদের সমাজেরই। যেই সমাজকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন লেখক হাসান ইনাম। সময়ের পরিভ্রমণে কিছু গল্প হারিয়ে যায়, সেই হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলোই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠেছে লেখকের লেখনীতে।

"জলতরঙ্গ" উপন্যাসে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল ইসলাম ধর্মের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা, কিংবা প্রচুর পরিমাণে বিদ্বেষ। অন্ধভাবে কোনো বিশ্বাসই ভালো নয়। হোক ভালোবাসা বা তীব্র ঘৃনা। সবসময় চোখ কান খোলা রেখে চলতে হয়। এই সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা ধর্মকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থসি��্ধির চেষ্টা চালায়। আবার অনেকে আছেন, যারা মনে করে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে আধুনিক হওয়া যায়। অথচ দুই অংশের পাশাপাশি একসাথে চলা উচিত। এতে করেই সমস্ত অরাজকতা দূর হয়ে যাওয়া সম্ভব।

একটি ক্ষুদ্র ভুলের পেছনে গভীর এক ষড়যন্ত্র থাকে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ সেই সুযোগটা নিতে পিছপা হয় না। রাজনীতি বিষয়টাই তো এমন। একটু সুযোগ পেলে দু'হাত ভরে ফায়দা নাও। ক্ষমতার লোভ, চারিদিকে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে নিজের কাজ গুছিয়ে নেয় তারা। রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও, সাধারণ মানুষের জীবনে আঁধার ঘনিয়ে আসে। আমরা খালি চোখে যা দেখি, তা কি সবসময় সত্যি? দৃষ্টির আড়ালে থাকা অনেক কিছুই কখনো কখনো সত্যি হতে পারে।

"জলতরঙ্গ" উপন্যাসে সবচেয়ে ভালো লেগেছে লেখকের লেখনশৈলী। ধীরস্থির ভাবে লেখক গল্প এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। প্রতিটি অংশ যেন খুব যত্ন করে, স্পষ্ট করে তৈরি করা। আগেই শুনেছিলাম, গল্পের শুরু কিছুটা ধীর। তবে যতটা বলা হয়েছিল ঠিক ততটা না, যে গল্পের গতিতে বাঁধা হবে। কিছু ক্ষেত্রে এমন ধীর গতিতে এগিয়ে যাওয়া গল্পকে ভালো লাগে। কাহিনির প্লটকে মস্তিষ্কে স্থান দেওয়ার সময়ের প্রয়োজন হয়। সেই সময়টা লেখক দিয়েছেন। ভারী ভারী গল্পের সমাহার যেখানে ঘটেছে, এই সময়ের প্রয়োজন ছিল।

ভালো কিংবা খারাপ... বিষয়টা আপেক্ষিক। কারো কাছে যেই কাজ ভালো মনে হয়, অন্যের কাছে তা ভালো নাও লাগতে পারে। ব্যক্তিগত এই পছন্দ-অপছন্দের মিশেল মাঝেমাঝে ক্ষতির কারণ হতে পারে। "জলতরঙ্গ" উপন্যাসে ভালোর যেই অরাজকতার দৃশ্য মঞ্চায়িত গিয়েছে, এর পেছনে গভীর এক ষড়যন্ত্র আছে। মানুষের মৃত্যুর সেই কারণ অনেকের কাছে ভালো দিক ইঙ্গিত করতে পারে। তাই বলে কী ভালো কিছু সামনে এসেছে? এর মৃত্যু, এত মানুষের হারিয়ে যাওয়া। মৃ ত্যুর তোড়ে ভেসে গিয়ে একটি সাধারণ জীবন যে শক্তপোক্ত হয়ে উঠেছে।

ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, রাজনীতির মারপ্যাঁচ পেরিয়ে এই গল্পটা বন্ধুত্বের। বন্ধুর জন্য আপনি কতটা করতে পারেন? জীবন বাজি রেখে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়া, শুধু বন্ধুর জন্য; এই বইয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল এটি। একই সাথে পারিবারিক বন্ধনের যে দৃঢ়তা লেখক দেখিয়েছেন, তা অনন্য। সবার আগে পরিবার সত্য, তাহার উপরে নয়। বাবা-মায়ের সাথে একজন সন্তানের বন্ধনের শক্তি ঠিক কতটা হতে পারে, তাই যেন এখানে উপজীব্য হয়ে উঠেছিল।

লেখকের শব্দচয়ন মুগ্ধ করেছে বেশ। একই সাথে গল্পের বর্ণনাশৈলী যেন দারুণ এক অনুভূতি দিয়ে গিয়েছিল। ঠিক যেভাবে গল্পের ধারা চেয়েছিলাম, যেন সেভাবেই এগিয়ে চলেছে। মাঝেমাঝে অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য মেজাজ খারাপ লেগেছে। কোনো অধ্যায়ে চমক দিয়ে শেষ করে লেখক যখন পরের অধ্যায়ে গিয়েছিলেন, পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল চিত্রনাট্য। বেশ কয়েক অধ্যায় জুড়ে আগের ঘটনার কোনো যোগসূত্র নাই। লেখক যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছেন সেই ঘটনা। মেজাজ খারাপ হয় কি না বলেন? যখন অপেক্ষা অধৈর্যের পর্যায়ে চলে আসে, তখনই লেখক আবার সেই অংশ নিয়ে আসেন। কী হয়েছিল এরপর? জানার তীব্র আকাংখা থেকে আমিও পৃষ্ঠা উল্টে চলেছি।

"জলতরঙ্গ" উপন্যাসের সিকুয়াল আসা সম্ভব? লেখক যেভাবে গল্প শেষ করেছেন, এভাবে সমাপ্তি আসলে খারাপ হয় না। যথাযথ সমাপ্তি। আবার চাইলে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নতুন কিছু সামনে আনা যায়-ই। লেখক কী করবেন, তিনিই ভালো জানেন। এমন সমাপ্তি তৃপ্তিদায়ক। পুরো বইটি তৃপ্তি নিয়ে পড়েছে। সিকুয়াল এলে হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে হয়তো। আবার না এলেও ক্ষতি নেই।

▪️চরিত্রায়ন :

"জলতরঙ্গ" উপন্যাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ চরিত্র। উপন্যাসটি দুই ভাবে এগিয়ে গিয়েছে। গল্পের গতিপ্রকৃতি যতটা না বইটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তার চেয়ে চরিত্রগুলোর জন্য গতি পেয়েছে আরও। একেকটা চরিত্র উপন্যাসটির প্রাণ।

৩২০ পৃষ্ঠার বইকে কি ঢাউস সাইজের বই বলা যায়? মাঝারি আকারের এই বইয়ে অসংখ্য চরিত্রের আনাগোনা ছিল। প্রতিটি চরিত্র যেন যত্ন করে, হিসেব করে তৈরি করা। উপন্যাসটিকে যদি অনেকগুলো অংশে ভাগ করা যায়, প্রতিটি অংশের ক্ষেত্রে একেক চরিত্র এসেছে। সেই অংশটিকে পূর্ণতা দান করেছে। আবার প্রয়োজন মিটিয়ে হারিয়ে গিয়েছে।

গল্পের প্রধান চরিত্র হাসান। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবক বন্ধুকে হারিয়ে যেন সব হারিয়ে ফেল। সাধারণ ঘরের ছেলে হয়েও নিজের প্রিয় বন্ধুর জন্য দৃঢ় মানসকিতার একজনে পরিণত হয়। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি যে মানুষকে বদলে দেয়; তার ছাপ যেন রেখে গিয়েছে বইয়ের প্রতিটি পাতায়।

সৈয়দ মাহফুজ হককে আমার বেশ পরিচিত হয়েছে। শান্তশিষ্ট, ধীরস্থির... বিচার-বিবেচনা করে সব সিদ্ধান্ত নেন। একই সাথে বাহ্যিক অবয়বে কঠোর মানসিকতা ধারণ করলেও ভেতরে যেন সুপ্ত কোমলতা ধারণ করেন।

আচ্ছা, মৃত্যু কী সবকিছু শেষ করে দেয়? একজনের মৃত্যুতে হয়তো জীবনের গল্প শেষ হয়। আবার সেই শেষ থেকেই নতুনের শুরু। মৃত্যুর সেই নির্মম ঘটনা থেকে শুরু হয় রাজনীতির নোংরা খেলা। যেখানে মরে গিয়েও বেঁচে যাওয়ার কথা, সেখানে যেন আরো নোংরা রাজনীতি চলে। কেন এমন হয়?

"জলতরঙ্গ" উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র সমাজ থেকে নেওয়া। আমাদের চারপাশেই এমন সব মানুষ আছে। সুবিধাবাদী, নির্দয়, নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চাওয়া মানুষ। আবার কেউ কেউ ভালো কিছুর জন্য বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেও কার্পণ্য করে না। মোট কথা, উপন্যাসে অংশ নেওয়া সবগুলো চরিত্রকে আমাদের আশেপাশেই দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের জীবনকে ধরে রাখা এসব চরিত্রের বিভিন্ন অংশ উপন্যাসকে প্রাণ দিয়েছে, এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

▪️বানান, সম্পাদনা ও প্রচ্ছদ:

বাতিঘর প্রকাশনীর বানান ভুল নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভুলের আধিক্য অনেকখানি কমে গিয়েছে। তবে "জলতরঙ্গ" উপন্যাসটি এই বিষয়ে একটি হতাশ করেছে।

আমার মনে হয়, লেখক যে ফাইল জমা দিয়েছেন, সেই ফাইলটিই প্রকাশ করা হয়েছে কোনরকম সম্পাদনা ছাড়াই। টাইপ করার সময় স্বভাবত যে ভুলগুলো হয়, সেগুলোর পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এছাড়া অনেকাংশে দুইটি শব্দের মাঝে স্পেস দেওয়া ছিল না। আ-কার, ই-কার, উ-কারের মধ্যে অদলবদল ছিল। টুকটাক দুয়েকটা বানান ভুল চোখে পড়েছে। প্রকাশনীর পক্ষ থেকে এই অংশে আরেকটু কাজ করা যেত বলে মনে হয়েছে।

প্রচ্ছদটা আমার বেশ ভালো লাগে। তরঙ্গের স্রোতে যেন সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়, এমন আবহ দিয়ে যায়। যা বইয়ের মুখ্য বিষয়। বাহ্যিক দিক দিয়ে প্রচ্ছদকে গল্পের সাথে মিল না পাওয়া গেলেও, গল্পের কাহিনিতে প্রবেশ করলে মিল পাওয়া যায়। বাঁধাই বেশ ভালো ছিল।

▪️পরিশেষে, এই সমাজে অনেকে হারিয়ে যায়। কেউ শারীরিকভাবে, কেউবা মানসিকভাবে। শারীরিকভাবে হারিয়ে যাওয়া মানুষের খোঁজ একসময় চলে। হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর মনের দিক দিয়ে হারিয়ে গেলে? সেই হারিয়ে যাওয়ার খোঁজ কেউ করে না। হয়তো করে। কিন্তু আপন হয়ে উঠলেও তা বোঝার সাধ্য যে সবার থাকে না। এভাবে হারিয়ে গিয়েই একদিন নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। তারপর?

▪️বই : জলতরঙ্গ
▪️লেখক : হাসান ইনাম
▪️প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী
▪️প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩২০
▪️মুদ্রিত মূল্য : ৫২০ টাকা
▪️ ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৮/৫
Profile Image for Khalid Hasan.
7 reviews8 followers
November 25, 2023
একটি সাধারণ বইকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মানুষ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। মারামারি, হিংসা, বিদ্বেষ তরঙ্গের মত ছড়িয়ে পড়ল দিক বিদিক। ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের মানুষের আগ্রাসন, সরকার পতনের জন্য সাধারণ মানুষের বিদ্রোহসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদে দেশ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। তবে এসকল কিছুর মূলে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিনদেশী এক সংগঠনের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে তারা ডেকে আনতে চান পবিত্র ত্রাণকর্তাকে। যিনি আসবেন তমসাচ্ছন্ন পৃথিবীতে আলোর পথ দেখাতে।

পাঠ প্রতিক্রিয়া - জলতরঙ্গ বইটি একেবারে সাধারণভাবে শুরু একটি স্লো বার্ন বই। তবে পড়তে পড়তে কখন বইয়ের পাতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলি তার টেরই পেলাম না। বইটিতে অন্যান্য থ্রিলারের মত প্রচুর পরিমাণে থ্রিল, সাসপেন্স, একশন নেই। লেখক একেবারে সাধারণ কিছু চরিত্র নিয়ে বেশ বড়সড় একটি প্লট নিয়ে কাজ করেছেন। গল্পের ধারাবাহিকতায় কাহিনী একেবারে ইংরেজ আমল হতে শুরু তুরস্ক, কুয়েত, মৌড়িতানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গড়িয়েছে। ফলে চরিত্র ও জুটেছে বেশ ভালো পরিমাণের। লেখক নিদারুণভাবে এত এত চরিত্র, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে প্লটের সামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করেছেন।
এটি আমার পড়া লেখকের প্রথম বই এবং লেখকের লৈখনশৈলির উপর আমি মুগ্ধ। বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র হাসান একেবারে সাধারণ এক যুবক। সম্পূর্ন বইতে লেখক বর্ণনা বা সংলাপের মাধ্যমে কাহিনীর ক্রমব্যাপ্তি না ঘটিয়ে ঘটনার মাধ্যমে কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন যা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে।

পুরো বইজুড়ে ভালো ও খারাপের দ্বন্দ্ব থাকলেও লেখক যার যার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোমন্দের দিকটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

সর্বোপরি বলব, বইটিতে একশন, থ্রিল বেশ কম হলেও সম্পূর্ন বই ঘিরে আছে রহস্য, সাসপেন্স। বইটি একদমই হতাশ করেনি।
ধন্যবাদ হাসান ইনাম ভাইকে এত দারুণ একটি বই পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্যে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Profile Image for Shahriar  Fahmid.
113 reviews15 followers
January 28, 2023
জনশ্রোতা তাকিয়ে আছে পল্টনে সদ্য গড়ে তোলা ভাসমান মঞ্চের দিকে।মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে নোয়েল চৌধুরীর কথাগুলো।উল্টোদিক থেকে দুম করে এসে একটা শাদা রঙের জিপ মঞ্চটাকে গুড়িয়ে দিলো।তরঙ্গের মতো ছুটতে শুরু করেছে লোকজন অতর্কিত এই হামলায়।এরই মাঝে এক ফেসবুক পোস্ট আগুনে ঘি ঢালার মতে কাজ করেছে।কারও আর বুঝতে বাকি রইলো না অতর্কিত এই হামলার দায় ভার কাদের।ওদিকে বিশাল জনস্রোতের জমায়েত হয়েছে বায়তুল মোকাররমের দিকে।সবার মাথায় টুপি আর গায়ে ঢিলেঢালা জোব্বা। ড্রোন দিয়ে দেখলে মনে হবে এ যেন কোটি কোটি পিপিলিকার জনসমাবেশ।সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমিরসাবে ভাষণের জন্য।খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন আমিরের সাথে দেখা করতে।হঠাৎ এক বিকট শব্দে কেঁপে উঠলো বায়তুল মোকাররম ও তার আশেপাশের এলাকা। লোকজন যে যার জীবন নিয়ে ছুটছে কিন্তু মৃত্যু থেকে কি সত্যিই পালানো যায়? বিরোধী দলীয় নেতারা ক্রমাগত দোষ দিয়ে যাচ্ছে সরকার পক্ষকে এই হামলার জন্য কিন্তু এর পেছনে কারা রয়েছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

গল্পের কথক সহ বেশ কয়েকজন লোক হুট করেই গুম হতে শুরু করেছে ঢাকা শহর থেকে।কেউ কেউ ফিরে আসছে তো কেউ কেউ হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে।কারা করছে এসব গুম আর হত্যা?যাদেরকে গড়পড়তা সবাই সন্দেহ করে প্রতিদিন তারাই নাকি এর পেছনেও রয়েছে ভিন্ন কোনো গল্প?

আমি জলতরঙ্গ পড়েছি প্রায় একমাস হবে তাই স্বাভাবিক অর্থেই অনেক চরিত্রের নাম মনে নেই তবে কি করছে সেটা ঠিকি মনে আছে। আবার আমি ইচ্ছে করেই চরিত্র গুলোর নাম বেশি নেই নাই কজ চরিত্র মুখ্য একটা পার্ট কোনো উপন্যাসের।সেটা রিভিল করলে অনেক মজাই ফিকে হয়ে যায়।
জলতরঙ্গ একটা পলিটিকাল থ্রিলার আর তার চেয়েও বড় বিষয় ইটস আ ফিকশন।তবে আপনি যদি রাজনীতি সচেতন হোন কিংবা দশ বারো বছর এদেশে কি কি হইছে সেসব ঘটনা সম্পর্কে ওয়কিবহাল থাকেন কিংবা আরে সহজ করে বললে শাপলা শাহবাগ হেফাজত সেকুলার এসব বিষয়ে একটা ক্লিয়ার ওয়ার্ল্ড ভিউ থাকে দ্যান আই মাস্ট সে ওয়ান থিং টু অল অফ ইউ  দ্যাট ইট উইল বি আ গ্রেট জার্নি অফ ইউ উইথ ❝জলতরঙ্গ❞। আপনার কাছে দ্যান বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। আর গল্পের যে হোল প্লট হাসান ইনাম যেভাবে সাজিয়েছে তাতে এটা আপনাকে থ্রিল দিবে, আপনার সংকোচিত জ্ঞানের ভান্ডারকে প্রসারিত করবে,শেষের দিকে এমন একটা জিনিস আপনার সামনে দুম করে  রিভিল করবে যে আপনি বলে উঠবেন ❝ব্রো দিস ইজ ইনসেইন❞। মানে জিনিসটা যখন আমার সামনে রিভিল হয় তখন আমি ভাবতেও পারি নাই হাসান ভাই জিনিসটাকে এভাবে এই জায়গায় নিয়ে আসবেন।তবে হ্যা একটা স্পয়লার দিয়ে শেষ করি।প্রথম কিছু অধ্যায়ে ঢাকায় ফাগুনের মতো একটু আধটু টাইম ট্রাভেলও করতে পারেন তবে সেটা সেটা সশরীরে কিনা সেটা নিজ দায়িত্ব জেনে নিয়েন।

আরো অনেক কিছু বলার আছে যেগুলো বই প্রকাশিত হওয়ার পর আমি বইটার ছবি তুলে লিখবো ইন শা আল্লাহ। ওগুলো এখন বলে দিলে পরে আর কথা খুঁজে পাবো না।

Best wishes for upcoming জলতরঙ্গ।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Arfaz Uddin.
91 reviews7 followers
August 20, 2023
বইটি শেষ করে একটা আছন্নের মধ্যে রয়েছি এখনো। খুব কম বইয়ের ক্ষেত্রেই এরকম টা ঘটেছে। পুরো বইটির গল্পের ভেতর আমি যেনো হাসান হয়ে পুরো ঘটনাটি ই প্রত্যক্ষ করেছি।

হাসানের সাথে এক দিক দিয়ে আমার সাযুজ্য রয়েছে। সেটা এখানে বললে গল্পের কিছু অংশ প্রকাশ হতে পারে তাই সেটা বললাম নাহ। তবে সেই কিছু অংশ আমার জীবনের সবথেকে অন্ধকার এক অংশ। যা হয়ত পাতার কালো অক্ষরে দেখে আমার মনের মাঝে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া খেলে গিয়েছে।
বইটিকে ঠিক কিভাবে জাজ করবো সেই মানদন্ড সম্পর্কে আমার কোনো ধারনা নেই। পুরো গল্প আয়নার মত কাজ করেছে। কিরকম আয়না আর সেই আয়না কিসের প্রতিফলন, তা আমি নাই ই বললাম। বইয়ের পাঠক আর লেখকের মাঝেই রইলো, উচ্চারিত নাই বা হোক।

লেখনি ইনাম ভাইয়া বেশ ভালোমতই রপ্ত করেছেন। প্রতিটি চ্যাপ্টারের পরবর্তী বইয়ে আটকে রাখার মত এত চমৎকার গল্প আর রিয়ালিস্টিকতার এত ভয়ংকর ছোয়া আমি বই হাতে নেওয়ার পর আশা করিনি। বইটি যখন হাতে নিচ্ছি তখনো বইয়ের সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিলোনা। কিন্তু বইয়ের গল্পে ঢোকার পর আমি যেনো জলতরঙ্গের তরঙ্গে নিমজ্জিত হয়ে গেলাম।

প্রতিটি বই পড়ার পর লেখকের কিছু নেগেটিভ দিক তুলে ধরি, কিন্তু এক্ষেত্রে আমি কিছুই বলছিনা কারন লেখক সে সুযোগ দেননি। এটি লেখকের দ্বিতীয় বই অথচ এটির সাবলীলতা আর অনন্য বৈশিষ্ট্য খুবই কম বইয়ে দেখা যায়।

অবাক করার বিষয় হচ্ছে বইটি যখন হাতে নিচ্ছি তখনো এই বই সম্পর্কে আমি তেমন শুনিনি। বইটি যথেষ্ট হাইপ তোলার কথা। যা আমার আসলে বোধগম্য হলো নাহ। এ বই সর্বক্ষেত্রেই নিজ স্বকীয়তা রক্ষা করতে পেরেছে।

রিয়ালিজম এর দাড়িপাল্লায় ই শুধু নয়, মৌলিক থ্রিলারের ক্ষেত্রেও বইটি উল্ল্যেখযোগ্য বলে আমি মনে করছি।
Profile Image for রায়হান রিফাত.
255 reviews8 followers
January 20, 2024
একাধিক টাইম লাইনের উপন্যাস কেন যেন আমার কখন ও ই ভাল্লাগেনা।
কিন্তু এই উপন্যাস টা বেশ ভাল লাগছিলো, কিছু জায়গায় খেয় হারিয়ে ফেললেও আবার ধরতে পারছিলা।।

ইভেন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত ও বেশ চলছিলো, কিন্তু শেষ হ���ে হতে যেন নিরামিষ হয়ে গেলো।

যেহেতু আমি মাংসাশী প্রাণী হিসেবে নিজেকে রেইট করি, তাই নিরামিষ এই উপন্যাস শেষে এসে ব্যাপক হতাশ করলো।


প্লট সুন্দর, প্লটের প্রয়োগ ও সুন্দর কিন্তু কিছু জায়গায় কেন যেন খাপ ছাড়া খাপছাড়া লাগলো!!

অনেকের ভাল লাগবে আশা করি, কারণ লেখনী বেশ ভাল। ইনাম ভাই এর লেখনশৈলী বেশ শক্তিশালী!!

তবে বই এর রেটিং : ৫/১০
Profile Image for অতি অল্প হইল .
4 reviews1 follower
March 19, 2023
প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বড় বড় কয়েকটি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে এই বই৷ কিন্তু, যেহেতু এটি একটি ফিকশন, তাই অবশ্যই বাস্তবের সাথে অনেক খানি কল্পনার মিশ্রন রয়েছে৷ গল্প বলার ধরন বেশ সাবলীল আর কাহিনী ও এগিয়েছে দ্রুত৷ কিন্তু শেষের দিকে এই গতির সাথে তাল মেলাতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল৷ আমার মনে হয়েছে আরো প্রায় ৪০-৫০ পৃষ্ঠা আগেই গল্পটা শেষ করে দেয়া যেত৷ এবং সেটাই মনে হয় ভালো হত৷ অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘায়িত করার জন্যই হয়তো কিছু টিপিকাল "থ্রিলার নাটকীয়তা" চলে এসেছে, যা আমার কাছে একদমই প্রয়োজনীয় মনে হয় নি৷ ওইটুক বাদ দিলে 'জলতরঙ্গ' বেশ সুখপাঠ্য একটা বই৷
হাসান ইনাম একজন তরুণ ও নবীন লেখক৷ প্রথম বই 'ঢাকায় ফাগুন' দিয়েই তিনি তার জাত চিনিয়েছেন৷ সেটি এক অনবদ্য বই, সন্দেহ নেই৷ তাই এই বইমেলায়ও 'হাসান ইনাম' নামটি দেখেই চোখ বন্ধ করে হাতে তুলে নেই 'জলতরঙ্গ'৷ মাত্র দ্বিতীয় বই হিসেবে লেখক অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার৷ আশা করি ভবিষ্যতে এই ছোটখাটো কমতিগুলো শুধরে নিয়ে নিয়মিত লিখে যাবেন এই পাঠকদের জন্য৷

নাম: জলতরঙ্গ
প্রকাশক: বাতিঘর প্রকাশনী
জনরা: থ্রিলার / পলেটিক্যাল থ্রিলার
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২০
গায়ের মূল্য: ৫২০/-
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪/৫
Profile Image for Farzana Tisa.
44 reviews7 followers
August 12, 2023
পুরো বই টা পড়ার পর আমার একটাই প্রশ্ন লেখকের কাছে এটা কি শুধুই বই। বই টা পড়ছিলাম আর চোখের সামনে কিছু ঘটনার দৃশ্য আবছা ভাবে ধরা দিচ্ছিলো। একটা ঘটনা শুধুই কি একটা ঘটনা নাকি পিছনে আছে আরো অসংখ্য ঘটনার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
মনে আরো কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়।
লেখকের গল্প বলার ধরন ভালো লেগেছে।
বই পড়ুন, সময়কে কাজে লাগান।
Profile Image for Sarah Haque.
427 reviews105 followers
November 18, 2023
আমার ইদানীং দেখা একটা ব্যাপার হচ্ছে, বাংলায় বেশ ভালো পলিটিক্যাল থ্রিলার লেখা হয়। হতে পারে কারণ, আমরা তো বসবাস করিই পলিটিক্যাল থ্রিলারে, তাই নয় কী?

এই বইটার ক্ষেত্রে আমার প্রথম অর্ধেকে বেশ ভালোই লেগেছে। লেখা ঝরঝরে, পড়ে ফেলা সোজা।

গোলমালটা বাধলো পরের দিকে গিয়ে। অনেকগুলি সাবপ্লট যা কিছুই আনা হলো মনে হলো ডেভেপড না হয়েই বইটা শেষ হয়ে গেল।

এত কিছু করে শেষপর্যন্ত তাহলে হলটা কী?
Profile Image for Sumaiya.
289 reviews4 followers
October 3, 2023
3/5 ⭐️
পলিটিক্যালি বিশাল ব্যাপার স্যাপার… হয়তো আরও ছোট করাও যেতে পারত।
গল্পের থিম নিয়ে কিছু নাহয় না ই বললাম!
তবে লেখার ধরণ খুব সুন্দর ছিলো।
Profile Image for Parvez Alam.
306 reviews12 followers
July 25, 2024
বাংলাদেশের বড় একটা আন্দোলন কে ফিকশন ভাবে লেখা বইটা কিন্তু নাম, স্থান গুলা পাল্টানো। রেটিং ৩.৫/৫
Displaying 1 - 27 of 27 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.