Jump to ratings and reviews
Rate this book

একাত্তরের দিনগুলি

Rate this book
একাত্তরের দিনগুলি বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমাম রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।

বইটি ব্যক্তিগত দিনলিপি আকারে লেখা, যার শুরু ১৯৭১ সালের ১ মার্চ এবং সমাপ্তি সেই বছরের ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা শহরের অবস্থা ও গেরিলা তৎপরতার বাস্তব চিত্র এতে উঠে এসেছে। বইটিতে তার সন্তান শফি ইমাম রুমী অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসেবে দেখা দেয়।

270 pages, Hardcover

First published February 1, 1986

184 people are currently reading
3411 people want to read

About the author

Jahanara Imam

29 books110 followers
Jahanara Imam (Bangla: জাহানারা ইমাম) was a Bangladeshi writer and political activist. She is most widely remembered for her efforts to bring those accused of committing war crimes in the Bangladesh Liberation War to trial. She was known as "Shaheed Janani" (Mother of Martyrs).

She obtained her Bachelor's Degree in 1947 from Lady Brabourne College of Calcutta University and a Master's Degree from University of Dhaka. She took teaching as her career.

After Bangladesh achieved independence, Jahanara Imam started her literary career. In 1986 she published her wartime diary একাত্তরের দিনগুলি (The days of Seventy One). Publication of this book was a seminal event in the history of Bangladesh. It proved to be a catalyst for the renewal of faith in the destiny of Bangladesh as an independent nation.

Jahanara Imam organized the Ghatak-Dalal Nirmul Committee (Committee to exterminate the Killers and Collaborators), and became its public face. The committee called for the trial of people who committed crimes against humanity in the 1971 Bangladesh Liberation War in collaboration with the Pakistani forces. The Ghatak-Dalal Nirmul Committee set up mock trials in Dhaka in March 1992 known as Gonoadalot (Court of the people) and 'sentenced' persons they accused of being war criminals. Imam and others were charged with treason.[citation needed] This charge was, however, dropped in 1996 after her death by the Chief Advisor Mohammed Habibur Rahman of the Caretaker government of that time.

She was died of cancer in 1994. She was honored with Bangla Academy Award in 1991.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
2,024 (68%)
4 stars
694 (23%)
3 stars
168 (5%)
2 stars
38 (1%)
1 star
17 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 179 reviews
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
December 15, 2017
বইয়ের রিভিউ অন্য কোনোদিন লিখবো। আজ শুধু দুটো কথা বলি।

১। বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য বইয়ের লিস্টে এই বইটা না থাকাটা রীতিমতো ক্রাইম। আমি খুব উদার মনের মানুষ। পাঠকের নিজস্ব রুচির ভিন্নত্বে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই বই যারা পছন্দ করেনি তাদের আমি জাজ করি।

২। মিউজিয়ামের মধ্যে স্মৃতি ধরে রাখার ব্যাপারটা অসাধারণ! কোনো একটা স্পেশাল ইভেন্ট কিংবা মানুষকে খুব সহজে মনে রাখা যায় সেইসব স্মৃতির মধ্য দিয়ে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- "চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে"।

এলিফ্যান্ট রোডে ইষ্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে ছোট্ট একটা গলি আছে। সেই গলিকে চিনতে হয় গ্রামীণ সুইটমিটের গলি পরিচয়ে। অথচ গলির শেষ মাথায় একটা জাদুঘর আছে। গলিটা জাদুঘরের নামেও পরিচিতি পেতে পারতো।

জাদুঘর ব্যাপারটা শুনলে আমার কল্পনায় চলে আসে অনেকটা জায়গা জুড়ে দাড়িয়ে থাকা প্রাচীর ঘেরা সাদা দালান। বাইরে বিশাল বড় একটা গেইট থাকবে। বড় বড় হরফে গেইটের উপরে প্লেকার্ডে জাদুঘরের নাম লেখা থাকবে। কল্পনার সাথে কখনওই বাস্তবের মিল থাকেনা। তাই শহীদ জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের বাইরের পরিবেশ দেখে কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। জননীর স্মৃতি সংরক্ষিত জাদুঘর একটা গুপচি গুলির ভেতর এমন অনাড়ম্বরভাবে পড়ে থাকবে এমনতো কথা ছিলনা!

জাহানারা ইমামের পুরোনো দোতলা বাড়ি "কণিকা" আর নেই। বাড়ির সামনে লন নেই। বাগানজুড়ে ফুল নেই। খুব সাদামাটা একটা ফ্লাটবাড়ি আছে। ফ্লাটবাড়ির ফার্স্ট ফ্লোরকে করা হয়েছে ঘরোয়া ধাঁচের একটা জাদুঘর। সেখানে খুব শান্তি শান্তি ভাব আছে। মুক্তিযুদ্ধের সাহসী সন্তান রুমী, তার ভাই জামী, দেশপ্রেমিক পিতা শরিফুল আলম ইমাম, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের অসংখ্য স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্ট আর বই দিয়ে সাজানো খুব সাদাসিধে অথচ কি অসাধারণ একটা জাদুঘর! ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময় জাগরণের গান বাজতে থাকে।

জাদুঘরে রুমীর সিগনেচার পোজে দাঁড়ানো সেই বিখ্যাত ছবিটা আছে, নিচে ক্যাপশন- "আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে"। জন্মদিনে গিফট পাওয়া তার প্রিয় এয়ারগানটি দেয়ালে ঝোলানো। তার ছোটবেলায় লেখা শপথবাক্য বাঁধানো আছে যেটা পাঠ করে বোঝা যায় কি অসাধারণ একজন সন্তান ছিল রুমী! রুমীর চাইতে অসাধারণ কোনো সন্তান আর কোনো মায়ের গর্ভে জন্মাতে পারেনা!

জাহানারা ইমামের বিয়ে হয়েছিল খুব সাদাসিধে ভাবে। কোনো সোনার অলংকার ছাড়াই শুধু রজনীগন্ধার মালা পড়ে যৌতুক বিহীন একটা বিয়ে হয়েছিল। সম্ভবত সে যুগের প্রথম যৌতুকবিহীন বিয়ে ছিল তাদের বিয়েটা। তাদের বিয়ের সেই সুখী সুখী ছবিটা দেখলে মন ভরে যায়। ছোট্ট একটা লাল টেলিভিশন আর একটা লাল ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল আম্মার। একটা সাইকেল রানার ছিল যেটা দেখে বোঝা যায় যুগের চাইতেও কত আধুনিকমনা ছিলেন তিনি! সেগুলো খুব যত্নে জাদুঘরে সংরক্ষীত আছে।

এবার একটা মন খারাপের কথা বলি। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ জুন। সাইফ ইমাম জামীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে। অথচ প্রতিষ্ঠার এতগুলো বছর পরেও জাদুঘরকে নিয়ে কোনো প্রচারণা নেই। কিন্তু এটা তো হতে পারেনা! কেন "শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর" কে সবাই এক নামে চিনবে না?? দেশের জাতীয় সম্পদ ছোট একটা গলির মধ্যে অনাদরে পড়ে থাকবে অথচ কেউ সেটার খোঁজ পাবেনা এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না!

যারা জননীকে ভালবাসে, রুমীকে ভালবাসে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দেশকে নিয়ে কোনোদিন একটু হলেও ভেবেছে তাদের সবার শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে আসা উচিত।

N.B. জাদুঘর খোলা থাকে প্রতি শনিবার দশটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত। ১টা থেকে ২টা এই সময়টা বিরতি।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
September 5, 2014
"সারা ঢাকার লোক একই সঙ্গে হাসছে আর কাঁদছে । স্বাধীনতার জন্য হাসি। কিন্তু হাসিটা ধরে রাখা যাচ্ছে না। এত বেশী রক্তে দাম দিতে হয়েছে কান্নার স্রোতেও হাসি ডুবে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে। " বইটা শেষ করার পর আমার অবস্থাও এরকম। বেশী খুশী হতে পারছি না, শেষের দিকের বিজয়ের দিনগুলার বর্ণনা পড়েও। এর জন্যে যে মূল্য দিতে হয়েছে তা যে একটু বেশীই চড়া।
নি:সন্দেহে আমার পড়া সেরা মুক্তিযুদ্ধের দিনলিপি। আমি মুক্তিযদ্ধ দেখি নি। কিন্তু বইটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিল যে যা ঘটছে একদম আমার চোখের সামনে ঘটছে। আমিও অংশ নিচ্ছি। বইটা পড়ার পর বুঝলাম যে শুধু ফ্রন্ট এই না প্রতিটা বাঙ্গালী ভেতরে ভেতরে যে যেভাবে পেরেছে যুদ্ধ করেছিল শত্রুবাহিনীর সাথে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল বাঙ্গালীর প্রতি শ্রদ্ধা।
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
March 21, 2021
সাহিত্যিকরা কত কষ্ট করেই নিজের মাথা খাটায় গল্পের প্লট বের করেন আর সেটা ছুড়ে দেন পাঠকদের হাতে। অখাদ্য হলে আমরা উগড়ে ফেলি আর সুখাদ্য হলে জাবর কেটেই যাই। কিন্তু কিছু বই জাবরও কাটা যায় না। মনে মনে থেকেই যায় সবসময়।
১৯৭১ প্রতিটা বাংগালীর জীবনে একটা অন্যরকম অধ্যায়। আমরা যারা যুদ্ধ দেখিনি তারা মনে করি ৯ মাস ব্যাপক ফাইট হইল আর আমরা জিতে গেলাম। ব্যাপারটা আসলে এত সহজ ছিলনা। সেটা কেমনে বুঝলাম?? এই একাত্তরের দিনগুলি পড়ে। এটাকে বই বলব? নাহ, এটা ডাইরি। সে সময়ের এক বাংগালী নারী দিনলিপিতে উঠে এসেছে সেই ভয়াল সময়ের বর্ণনা। আপনি কি কখনো ভাবতে পারেন আপনার জীবনের প্রতিটা মূহুর্তে আপনার ফিল হচ্ছে আপনি এখনি মরে যেতে পারেন। এরকম সময়ে আপনি ঠিক কদ্দিন এই মানসিক প্রেশার নিতে পারবেন?? আমার তোহ মনে হয় এখনি হার্টফেল করে ফেলব। এরকম ভয়াল সময়টা নিজের ডাইরিতে জাহানারা ইমাম তুলে ধরেছেন কখনো মা হিসবে, কখনো স্ত্রী হিসেবে আর কখনো যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে। মননশীল এই পরিবারের ছেলে রুমী, যে কিনা সে সময়ের আমেরিকার পড়ার হাতছানিকে উহ্য করে শুধু যুদ্ধেই যায়নি, দুঃসাহসী ক্রাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে যোগদান করে পাকবাহিনীকে কাপিয়ে দিয়েছিলেন। পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে শত অত্যাচারেও মুখ খোলেন নি। বরন করেছন শহীদের মর্যাদা। এসব গল্প শোনার পরে জেমস বন্ডের কাহিনী শুনার পরে হাসি পায়। আমি অনেক আগেই এ বইটি পড়েছি। কিন্তু রিভিউ লিখিনি। কারণ এ বইয়ের রিভিউ হয় না। শুধু স্যালুট হয়।
যারা মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে চান, তাদের এ বইটি বাইবেল হিসেবে পড়া উচিৎ।
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
October 13, 2023
খুব ভাল লেগেছিল যখন জানতে পারি আমাদের দেশের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বইটা পাঠ্যবই। সব মিডিয়ামেই এ বইটাকে পাঠ্য করা উচিত ছিল- জানি তা হবে না- কারন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কেউই সেটা চাইবে না।
আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন শহুরে মানুষের জীবন, সে সময়ের ভাবনা জানার জন্য এরচেয়ে ভাল বই বোধহয় নেই।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
April 17, 2017
গল্প শুনবে?

একদল পাগলাটে ছেলের গল্প?
রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি.. এমন অভিযানের গল্প?

তাহলে কিছুক্ষনের জন্য ঘুরে আসা যাক ১৯৭১ সাল থেকে...

গল্প শুরুর আগে নায়কদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। রুমি, বদি, আজাদ, জুয়েল, আলভী.. এমনি নাম না জানা আরও অনেক অনেক ছেলে। নিজের দেশকে অনাচার,অত্যাচার থেকে বাঁচাবে বলে যুদ্ধে গেল। যুদ্ধ কি আর এমনি এমনি হয় ?
প্রশিক্ষন লাগে, অস্ত্র লাগে, সাহস লাগে। সবচেয়ে বেশি যা লাগে তা হল দেশপ্রেম। ওই পাগল ছেলেগুলোর অন্য কিচ্ছু ছিল না.. অস্ত্র না, প্রশিক্ষন না.. ছিল শুধু দেশপ্রেম আর সাহস। আর আত্মবিশ্বাস ছিল কিছু একটা করে দেখানোর। তাইতো মা-বাবার আদর ছেড়ে, পড়াশোনাকে আপাতত মুলতুবি রেখে ছুটল প্রশিক্ষন নেয়ার জন্য। ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসে হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে যে! প্রশিক্ষন নিতে গেল ইন্ডিয়ার মেলাঘরে, সেখানে তাদের সে কি কষ্ট! খাবার পানির সংকট, খাবারের সংকট, প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র নেই, অস্ত্রের সংকট আরো কত্ত কি অসুবিধা! তার পরেও তারা বিন্দাস আছে.. এইতো কদিন পর যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে ফেলবে.. তখন আর কোন কষ্ট থাকবে না।

একে একে শেষ হয় রুমি, বদি, আজাদ, জুয়েলদের ট্রেনিং। অসম সাহসী ছেলেদেরকে নিয়ে বানানো হয় গেরিলা বাহিনীর বিশেষ স্কোয়াড। ক্র‍্যক প্লাটুন।

তার আগে বলে দেই গেরিলাদের কাজ কি... ওরা হানাদার বাহিনীর উপর ঝটিকা আক্রমণ করত। যতটুকু সম্ভব ক্ষয় ক্ষতি করে আবারও ফুশ মন্তর ফুশ! বেশ কিছু হামলা সফল ভাবে করলও। ঢাকার সব জায়গায় গেরিলাদের জয়জয়কার। এমনও দিন গেছে গেরিলারা ঝটিকা হামলা চালাচ্ছে আর জনতা হাততালি দিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে।

এবারে বোঝ অবস্থা! সাধে কি আর বিচ্ছু বাহিনী বলা হত ওদের?

এই বিচ্ছুদের একজন রুমি... তাঁর মা হলেন বিখ্যাত লেখিকা জাহানারা ইমাম। তিনি অবশ্য তখন বাংলাদেশের আরও আট-দশজন মায়ের মতই সাধারণ। যুদ্ধের পর যুদ্ধকালীন সময়ের দিনলিপি নিয়ে লেখেন ' একাত্তরের দিনগুলি '।

কী আছে এ ডায়েরিতে ?

একটা ছোট, সুখী পরিবারের এলোমেলো হয়ে যাবার গল্প।

একটা দেশ ও দেশের মানুষকে করা অত্যাচার ও নিপীড়নের গল্প।

হাসি আনন্দে মাখা কৈশোরকে ভয়াল বিভীষিকায় মাখিয়ে দেয়ার গল্প।

চোখের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখার গল্প।

এ গল্প একদল যুবকের... যারা দেশকে ভালবাসার অপরাধে হারিয়ে গেছে চিরতরে...

এ গল্প সাহসিকতার, হার না মানা একদল তরুণের..

সবচেয়ে বড় কথা.. এ গল্প এক মায়ের... যে তার নাড়ী ছেঁড়া ধনকে কোরবানি করে দিয়েছিল দেশের জন্য।

এটা কি তাহলে দেশের গল্প?

এই ডায়েরি শহীদ জননীর হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় ভরপুর নয় মাসের ভয়াল মুহূর্তগুলোর সাক্ষী। শহীদ জননীর চোখে দেখা একাত্তর। দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে রুমিকে। দেশ তাঁর ছেলেকে তাঁর বুকে ফিরিয়ে দেয়নি ঠিক কিন্তু রুমি আজও বেঁচে আছে এ দেশের প্রতিটি ছেলের হৃদয়ে..

আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে আছে ওরা। আমরা যতদিন বাংলায় কথা বলবো, যতদিন আমরা বাংলাকে ভালোবাসবো ততদিন ওরা বেচে থাকবে আমাদের মাঝে।
Profile Image for Nahar Trina.
Author 13 books60 followers
January 16, 2017
একজন মা যখন বলেন "দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা।" তখন সেই মায়ের প্রতি পাঠক হিসেবে কেমন অনুভূতি হতে পারে? দেশ-মাতৃকার প্রতি তাঁর আত্মনিবেদনের এই মহিমা ভাষায় প্রকাশ করা কী আদৌও সম্ভব? নাহ্, সে ব্যর্থ চেষ্টায় যাবার দুঃসাহস আমার নেই। এমন মা এবং তাঁর সন্তানের জন্য গর্ববোধে আক্রান্ত হতে পারি কেবল। তাঁর এই উৎসর্গের স্মরণের বেদীতে দু'ফোটা সশ্রদ্ধ অশ্রু রেখে দেয়া ছাড়া অসহায় পাঠক যেন বুঝে ওঠতে ব্যর্থ হয় ঠিক কিভাবে এই অবাক ইতিহাসের আখ্যানটিকে সম্মান জানানো যায়!

এমন অনেক অনেক আত্ম উৎসর্গের হাত ধরে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা। কত মা যে তাঁর সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, তার সবটুকু লেখা নেই সেভাবে। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের আত্মার অংশ সবুজের বুকের লাল অংশটুকু কত কত বুকের রক্তে লাল হয়েছে। কত লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া সে পতাকা, স্বাধীনতা। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর আশ্চর্য নির্মোহ লেখনী দিয়ে লিখে গেছেন ১৯৭১ এর সেই উত্তাল দিনের ঘটনাচক্র। তাঁর শোক, তাঁর কষ্টের হাহাকারকে শব্দের আড়ালে রেখেই তিনি লিখে গেছেন দিনপুঞ্জীর মত এই অনন্য সাধারণ বইটি, যার নাম "একাত্তরের দিনগুলি"। যে সন্তানকে তিনি দেশ মাতৃকার জন্য উৎসর্গ করেন, তাঁর নাম শহীদ শাফি ইমাম রুমী। কী প্রখর সম্ভাবনাময় এক তরুণ ছিলেন রুমী। যাঁর পড়তে আসবার কথা ছিল ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে। কিন্তু দেশে তখন যুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। স্বার্থপরের মত রুমী পালিয়ে না গিয়ে যুদ্ধে যাবার জন্য তৈরি হন....বাকিটা তো ইতিহাস। সে ইতিহাসের ধারাবাহিক এক নিবিড় প্রামান্য দলিল "একাত্তরের দিনগুলি।" এই বই বার বার পড়া যায়। আবারও পড়বো নিশ্চয়ই!
Profile Image for Rafia Rahman.
416 reviews215 followers
May 15, 2023
নাম: একাত্তরের দিনগুলি
লেখক: জাহানারা ইমাম
জনরা: মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্মৃতিকথা
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী
প্রকাশনী: সন্ধানী
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৮
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০/-

❝একাত্তরের দিনগুলি❞- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ডাইরির অংশবিশেষ যা তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখেন, আছে কিছু চিঠিও। বইটিতে ফুটে উঠেছে সেসময়ের বাঙালিদের করুন আর্তনাদ। একদিকে হায়েনারা আক্রমণ করে একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞের পৈশাচিক দামামা বাজিয়ে চলছে তো অপরদিকে একে একে কেড়ে নিচ্ছে কারো প্রিয়জনদের। এমনি এক সংকটকালের বেদনা এক মায়ের। যিনি মাতৃভূমি আর সন্তানের ভালোবাসার বাঁধনে আঁটকে পড়েছেন। হায়েনারা দেশ খুবলে খাচ্ছে যেমন দেখতে পারছেন না তেমনি যুদ্ধে যদি সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন এই ভয় তিলেতিলে যেন অস্থির করে তুলে শহীদ জননীকে। কিন্তু দেশপ্রেমের কাছে নতিস্বীকার করে সন্তানপ্রেম। কিন্তু মায়ের মন কি সন্তানের চিন্তা থেকে কখনও মুক্ত হয়? উৎকন্ঠিত দিন পার করেন, অপেক্ষায় থাকেন রুমি স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু কোনো বড় অর্জনের পিছে কি কোনো বড় ত্যাগ থাকে না? কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা কি এত সহজেই পেয়েছি আমরা? লাখো শহীদের আত্মত্যাগ, কোটি স্বজনের আর্তনাদ, শত শত বীরাঙ্গনার আহাজারি কি ছিলো না মহান স্বাধীনতার মূল্য?

কম করে হলেও তিন-চারবার পড়া এই বই। কিন্তু যতবারই পড়ি কষ্ট-আতংক যেন নতুন করে ছুয়ে যায়। কী ভয়ানক-বিভৎসই না ছিল সেদিনগুলো! কল্পনাকেও যেন হার মানায়। যাঁদের উপর সে নিদারুণ ঝড় বহে গেছে তাঁরাই জানেন কী ছিলো ❝একাত্তরের দিনগুলি❞...

যদিও ডায়েরি আকারে লেখা তবুও সহজ-সাবলীল লেখনশৈলী কথাসাহিত্যিক জাহানারা ইমামের। লেখনী এতটাই জীবন্ত যেন পাঠক নিজেই অনুভব করতে পারবে বিভীষিকাময় সেই দিনগুলি। ভালোমন্দ বহু ঘটনার বিবরণ রয়েছে বইয়ে। রাতের পর যেমন দিন আসে তেমনি কালো রাত পেরিয়ে স্বাধীনতার সূর্য উদয় পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা বলে গেছেন শহীদ জননী। কিন্তু কালো রাত যেমন মরণঘাতী হয় তেমনি হারিয়েছেন তিনি অনেককিছুই। আমরাও হারিয়েছি আমাদের বীরদের কিন্তু অমরত্ব লাভ করেছেন তাঁরা তাঁদের সীমাহীন ত্যাগের জন্য। চিরস্থায়ী আবাস গড়েছেন তাঁরা কোটি কোটি হৃদয়ে।

বাংলাদেশের সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি ❝একাত্তরের দিনগুলি❞। যা শুধু পাঠককে ভাবাবেই নয় বরং নিয়ে যাবে দেশ গঠনের সেই সময়ে যাঁদের অবদানেই পেয়েছি আমরা কাঙ্ক্ষিত দেশ ও স্বাধীনতা।
Profile Image for Wasee.
Author 49 books784 followers
January 26, 2019
তৃতীয়বার।
Profile Image for Tarik Mahtab.
167 reviews3 followers
March 21, 2024
বইটা পড়তে দেরি করে ফেললাম আসলেই। পুরোনো বইটার দুর্বল রংচটা মলাটের মাঝে ঝুরঝুরে হলদে পাতাগুলো নিষ্ঠুর এক বাস্তব সময়কে বন্দি করে রেখেছে। সেই বাস্তবতা আমার স্বপ্নেও হানা দিয়েছে বেশ কয়েকদিন। লেখিকার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অটুট থাকবে সর্বদা।
Profile Image for Akhtaruzzaman Shohag.
3 reviews1 follower
April 16, 2015
জাহানারা ইমাম এর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে এ যেন কোন এক মা তার আদরের সবটুকু পেলব মিশিয়ে অক্ষরের জালে বুনেছেন এক নকশী কাঁথা। যার ফোঁড়ে ফোঁড়ে রয়েছে সুচ-ফোটা যন্ত্রণা, রয়েছে মশালের জৌলুশ, বারুদের গন্ধ, মুহুর্মুহু গুলির ঝংকার। আরও রয়েছে বিশ্বাসঘাতকদের প্রবঞ্চনার দগদগে ঘা, রয়েছে উদ্বিগ্ন মায়ের বিনিদ্র রাত্রিযাপনের রুদ্ধশ্বাস বয়ান।

১লা মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১। জাহানারা ইমাম এ বইটিতে তুলে এনেছেন এই সময়টাকে, তাঁরই ব্যক্তিগত দিনলিপি আকারে। বইটি পড়তে গিয়ে এক সময় লেখিকাকে মনে হয় খুব আপনার। আপন করে নিই তাঁর সন্তান রুমী-জামীকে। আত্মীয়তায় বাঁধা পড়ে যান তাঁর সংগ্রামী দেশপ্রেমিক স্বামী শরীফ ইমামও।

লেখিকা যখন উত্তাল মার্চের কথা বলেন তখন উত্তপ্ত বাতাসের হলকা ছুঁয়ে যায় আমাকেও। জননী যখন ৭ই মার্চের কথা লেখেন তখন আমিও যেন নিজেকে আবিষ্কার করি রুমী-জামী-শরীফ কিংবা কাজের লোক সুবহান-বারেকের পাশে, অধীর আগ্রহে বসে থাকি ‘শেখের’ বক্তৃতা শুনব বলে। স্পষ্ট দেখতে পাই সেই মানুষগুলোকে যারা চব্বিশ ঘণ্টার পথ পায়ে হেঁটে গামছায় চিড়ে-গুড় বেঁধে সেদিন হাজির হয়েছিল রেসকোর্স ময়দানে।

তখন আমার জন্মও হয়নি। অথচ বইটি পড়তে গিয়ে ২৫ শে মার্চের কালো রাত আমার সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে। নিজের কাছে প্রশ্ন করি, আসলে কি কালো ছিল রাতটা? নাকি আগুনের লেলিহান শিখা আর রক্তের ফল্গুধারায় সেজেছিল সে রক্তকরবী! বইয়ের পাতা উল্টাতেই পুড়ে যেতে দেখি ঘরবাড়ি, বস্তি, কাঁচা-বাজার। সেই সাথে মানুষও। মুহুর্মুহু গুলিতে কেঁপে উঠতে দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। আরও এগোলে আঁৎকে উঠি পাকিস্তানী নরপিশাচদের হাতে নির্মমভাবে নিরস্ত্র বাঙালিদের জবাই হতে দেখে। বইয়ের পাতায় পাতায় দেখতে পাই বিহারিদের নৃশংসতা, ধারালো ছুরির দেবে যাওয়া তাজা মানুষের গলায়।

বইটি পড়তে গিয়ে জানতে পারি তখন রুমীর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাওয়া ঠিক হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। কিন্তু দেশের সেই ক্রান্তিলগ্নে লেখাপড়া করে মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়াটা রুমীর কাছে বড্ড ‘সেকেলে’ মনে হয়। মায়ের কাছে তাই সে বিদেশে পড়তে যাওয়ার বদলে অনুমতি ভিক্ষা করে যুদ্ধে যাওয়ার।

যুদ্ধে যাওয়ার আগের দিন রাতে রুমী মায়ের কাছে বায়না ধরে, ‘আম্মা, আজকে একটু বেশি সময় মাথা বিলি করে দিতে হবে কিন্তু।’ সেদিন ছোটভাই জামীও উদার। বলে ওঠে, ‘মা, আজ আর আমার মাথা বিলি করার দরকার নেই। ওই সময়টাও তুমি ভাইয়াকেই দাও।’ মা রুমীর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে থাকেন। আমার চোখ ভিজে আসে, ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।

শহীদ জননী বলেছিলেন ‘দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা, তুই যুদ্ধে যা।’ তাই রুমী যুদ্ধে যাচ্ছে, টের পাই। কোন পিছুটান নেই তাঁর। কাঁধে এয়ারব্যাগ, তার মধ্যে টুকটাক কাপড়-চোপড়, তোয়ালে, সাবান, স্যান্ডেল আর দু’টো বই- ‘জীবনানন্দের শ্রেষ্ট কবিতা’ আর ‘সুকান্ত সমগ্র’।

মেলাঘর থেকে ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসে রুমী, বিশেষ অপারেশনে। তাঁর বয়ানে শুনি ‘রূপকথার চেয়েও রোমাঞ্চকর’ সব কাহিনী; রক্ত পানি করা ট্রেনিং, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষার জন্য হাসপাতাল স্থাপন, তাদের অপারেশনের রোমহর্ষক বর্ণনা। পাক আর্মিদের চোখের পলকে ধরাশায়ী করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া, কিংবা সেতু, পাওয়ার স্টেশন ইত্যাদি উড়িয়ে দেওয়ার গল্প শুনে গর্বিত হয়ে উঠি সেই সব গেরিলাদের জন্য যারা জানে, ‘কোন স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না; চায় রক্তস্নাত শহীদ।’

আগস্টের শেষে এসে দেখি তথাকথিত ‘দেশপ্রেমিক নাগরিক’ রাজাকারদের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রুমী-জামী-শরীফদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রেপ্তার হয় আরও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে। উদ্ধার হয় বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। সবার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এক সময় শরীফ-জামী-অন্যান্যরা বাড়ি ফিরে এলেও রুমী আর ফিরে আসে না।

সময় প্রবাহিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ দানা বাঁধতে থাকে। বাংলার টগবগে দামাল ছেলেদের গেরিলা বাহিনী, তাদের সহযোগী ভারতীয় মিত্র বাহিনী। তাদের আক্রমণের তীব্রতায় নাজেহাল হতে থাকে পাক-বাহিনী। যখন স্বাধীনতার সূর্য পুব আকাশ রাঙিয়ে উঠবে উঠবে করছে, ঠিক সেই সময়, ১৩ই ডিসেম্বর লেখিকা হারান তার স্বামী শরীফ ইমামকে।

জননী লিখে যান, ‘আকাশের বুকেও অনেক ব্যথা। তার কিন্তু আমার মতো চেপে রাখার দায় নেই।’ বইটিতে তাই লক্ষ্য করি, জননী ‘চেপে রাখার দায়’ নিয়ে, বুকের কষ্ট বুকেই দাফন করে সময়ের নির্যাস তুলে রাখেন তাঁর রোজনামচায়। সে রোজনামচায় দেখা মেলে ২৫শে মার্চের বর্বরোচিত হামলার পরেও কিভাবে বাঙালি ঘুরে দাঁড়াল, শোক কিভাবে তাদের হৃদয়ে শক্তির বীজ বুনল। যারা বাঙালির রক্তক্ষয়ী সে সংগ্রামের ইতিহাস বক্ষে ধারন করে হতে চান সত্যাগ্রহী, তাদের জন্য ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এক অবশ্য-পাঠ্য গ্রন্থ বলে মনে করি, পরিশেষে এই একটি কথাই বলব।
Profile Image for Akash.
446 reviews148 followers
November 21, 2022
দুঃখ যদি না পাবে তো, দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে?
বিষকে বিষের দাহ দিয়ে, দহন করে মারতে হবে
মরতে মরতে মরণটারে, শেষ করে দে একেবারে…


পাঠক হিসেবে বই পড়ার সময় আমরা যখন কল্পনা করি সেই বইয়ের কাহিনীর সাথে তখন আমরা সেই সময়ে চলে যাই। বই আমাদের কাঁদায়; বই আমাদের হাসায়। অনেকে হাসি-কান্নার এক অনুভূতিকে ন্যাকামি মনে করে। কিন্তু এই অনুভূতির মাঝে আছে স্বর্গীয় সুখ। যা আমাদের অনাবিল শান্তি দেয়; অতীত স্মরণ করিয়ে দেয়; অনুপ্রেরণা দেয়; বেদনা দেয়। যা মনের গহীনে সযত্নে আগলে রেখে গর্বে বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকি।

যুদ্ধে যাওয়ার সময় রুমির ব্যাগে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা এবং সুকান্ত সমগ্র বই দুটি ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছিল প্রবলভাবে। কবিতা সাহস যুগিয়েছিল। এজন্য আমার কাছে কবিতার মূল্য অনেক বেশি। যখন চীন-আমেরিকা আমাদের বিপক্ষে, জাতিসংঘ আমাদের সাহায্য করছে না তখন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যুক্তিকে জলাঞ্জলি দিয়ে সম্পূর্ণ আবেগের বশে না ঘুমিয়ে, না খেয়ে যুদ্ধ করেছে। এজন্য আমার কাছে যুক্তির চেয়ে আবেগ-অনুভূতির মূল্য অনেক বেশি।

মুক্তিযোদ্ধাদের শরীর থেকে সুঁই-সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত শুষে নিয়ে পাষাণ্ড-বর্বর আহত কুত্তা বাহিনীর শরীরের ঢুকানো হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার মা-বোনদের নষ্ট করেছে। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দিয়ে গেছে। আমি দেশের বাহিরে যাওয়া-আসার সময় কোনোদিন পাকিস্তানের উপর দিয়ে যাব না, কসম।

ভারতীয় বিগ্রেডিয়ার পান্ডে যখন মেলাঘর ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে গ্রেনেডের পাত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের খেতে দেখে তখন বাসন-প্লেট দেওয়ার হুকুম দেয়; তার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধ���রা পান্ডেকে বুলেট দিতে বলে বুলেট। আমাদের রুমি, বদি, আজাদ ভাইরা তাদের ভবিষ্যত নষ্ট করে আমাদের ভবিষ্যত গড়ে দিয়েছে। আমরা রুমি ভাইদের ঋণ শোধ করতে পারব না। স্বাধীনটার ৫১ বছর পরও তোমরা আমাদের হৃদয়ে আছো; থাকবে যতদিন বাংলাদেশের অস্তিত্ব আছে।

আমার নানা একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি নানাকে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে। একটা পঙ্গু পা নিয়ে দুই বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ৫০টা বছর দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে। দুঃখের বিষয় নানার কাছ থেকে আমি কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে চাইনি। আমার নানার জন্য কষ্ট হচ্ছে; গর্ব হচ্ছে।
Profile Image for Farhana.
325 reviews202 followers
February 18, 2017
গত দুইদিনে ৩-৪টা বই খুলে একটু আধটু করে পড়ে রেখে দিয়েছি , নিজের ভাষার বই পড়লে বোধহয় একটা আলাদা শান্তি, প্রিসাইজলি বললে একটা স্থিতি বোধহয় খুঁজে পাওয়া যায়। It liquidated me inside.
একাত্তরের সমসাময়িক সময়ের যে কয়টা স্মৃতিকথা পড়েছি তার মধ্যে এটা সব থেকে detailed. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর ডায়রিতে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সরব থাকলেও ৭১ নিয়ে তেমন কিছুই যোগ করেন নি। সুফিয়া কামালের ডায়রিটা এটার মত দৈর্ঘ্যে এতখানি বিপুল ছিল না কিন্তু ভালো। হুমায়ূন আহমেদ আর জাফর ইকবালের তাঁদের বাবা এবং ৭১ নিয়ে যে স্মৃতিকথা সেখানে হুমায়ূন আহমেদের লেখা অংশটুকু বরাবরের মত তাঁর লেখায় যে একটা ভাবালুতা তৈরির চেষ্টা সেটা ছিল । জাহানারা ইমামের লিখাটা অনেক খানি জায়গা জুড়ে ফোকাস করা ।
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
March 23, 2021
Farzana Raisa আপুর রিভিউ এর ১ম লাইন অনুসরণ করে মনে হলো,
৭১ এর বর্ণনা শুনতেই মনে হয় বেশি ভালো লাগে। শুনতে শুনতে হঠাৎ করেই গা শিউরে ওঠে,পশমগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড ধরে। তারপর বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

এই বইটির একটি কপি ঘরে রেখে দেয়া দরকার। ঘরের ভেতর বইখানা নাম প্রদর্শন করে যাবে দীর্ঘ সময় ধরে,প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে; কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আগ্রহ দেখাবে,জানতে চাইবে এদেশ কি করে এল!

হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ ! হঠাৎ বাংলাদেশ 🎵

এই বইয়ের কিছু অংশ পাঠ্য বইয়ে পড়েছিলাম বছর কয়েক আগে।তখনও আমার মফস্বলের স্কুলটিতে ম্যাম শব্দের প্রচলন হয় নি। ম্যাডাম ক্লাসে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন; কয়েকটা পার্ট সিলেক্ট করে দিয়ে বললেন তোমরা পড়ো, পড়া ধরবো।আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,'রিফাত! সব ভালো করে পড়া হয়েছে?' আমি ঘাড় নাড়লাম।ম্যাডাম মুখ টিপে একটা হাসি দিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, আমি উত্তর দিতে পারি নি। উত্তরটা ছিল সোমবার।
ভারী অবাক লাগে! যিনি এই সত্যগল্প লিখেছিলেন তিনিও নেই আর যিনি আমাকে প্রথম এই গল্প শুনিয়েছিলেন তিনিও চলে গেছেন বছর দুই আগে!

আমার আর কিছু বলার নেই। শুধু জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হয় - একাত্তরের দিনগুলি কেমন ছিল !কেমন ছিল যুদ্ধে যাওয়া যোদ্ধাদের পরিবারের অবস্থা! জানতে ইচ্ছা করে না !?

ইচ্ছা করলে গল্প কথন by কল্লোল এর প্লে লিস্ট থেকে শুনতে পারেন পুরোটা।

~ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
Profile Image for Alvi Rahman Shovon.
467 reviews16 followers
June 23, 2025
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি বইটির দিনলিপির বিবরন শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে যখন পুরো বাংলা জুড়ে অরাজকতা আর মানুষের মধ্যে উত্তালতা। দিনলিপির শেষ গিয়ে ঠেকে ঠিক বিজয়ের শেষ দিনে; ১৭ই ডিসেম্বরে। পুরো বই জুড়ে মুক্তিযুদ্ধ,দেশের তৎকালীন পরিস্থিতি, মানুষের মধ্যের হাহাকার, দেশপ্রেম সব কিছুর আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে বই পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো। যেই মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি লেখিকার লেখনীর বয়ানে যেন চোখের সামনে সব দেখছি।
Profile Image for Sheikh Marzia Amin.
45 reviews1 follower
April 11, 2021
বইটি আসলেই অসাধারণ। এটি একটি আশ্চর্যজনক গল্প, জাহানারা ইমাম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছেলে এবং স্বামীকে হারিয়েছিলেন এটি তাঁর জন্য একটি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল, তবে তার পুরো পরিবার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। এবং জাহানারা ইমামের রুমিকে হারানোর যে কষ্ট তা আসলেই কোন ভাষায় বক্তা করা যায় না।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
October 1, 2019
অল টাইম ক্লাসিক বই বোঝেন? যে বই পড়তে কখনো ক্লান্তি আসবে না, যে পুস্তক পড়ে নিজের শেকড়কে চিনতে শিখবেন, তেমনই বই হলো ' একাত্তরের দিনগুলি'।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের দিনলিপি শুধু নিত্যদিনের রোজনামচা মাত্র নয়৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অক্ষত, অবিনশ্বর দলিলও বটে।

এক মায়ের আকুতি তার সন্তানের জন্য, একদল যোদ্ধার সংগ্রামের কাহিনি, একটি অবরুদ্ধ জনপদকে শত্রমুক্ত করার মহাকাব্যিক আখ্যানের নামই ' একাত্তরের দিনগুলি '৷
Profile Image for Shahin Alam.
20 reviews1 follower
June 5, 2022
"স্বাধীনতা তুমি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি”

জেমসের এই গান শুনে রক্তে আগুন ধরে যায়নি কিংবা কাঁদেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। আবেগী বাঙালির জন্য আবেগপূর্ণ এই গান। এই গানে বাংলাদেশের অসংখ্য মহাপ্রাণ মানুষের কথা বলা হয়েছে। ওপরের লাইনটিতে বলা জাহানারা ইমামকে নিয়েই আজকের এই নিবেদন। জাহানারা ইমাম, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আর তার লেখা 'একাত্তরের দিনগুলি' নিয়েই আজ আলোচনা। এই দিনলিপি যে কবে তাঁর দিনলিপি থেকে আমাদের দিনলিপি হয়ে উঠেছে, তা ঠিক করে বলা যায় না।

১৯২৯ সালে জন্ম নেয়া এই নারী। উচ্চশিক্ষিত এই নারী রংপুর, কলকাতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

স্বামী শরীফ ইমাম ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। স্বামী, দুই ছেলে শফী ইমাম রুমী আর সাইফ ইমাম জামী, সাথে শ্বশুর এবং আরও কিছু আত্মীয়স্বজন নিয়ে তাঁর সংসার। এলিফ্যান্ট রোডের ছোট্ট বাসা, কনিকা। সবসময় নানা মানুষের কোলাহলে পূর্ণ থাকত।

ইমাম পরিবার ‌
১৯৭১ সালে নিজের বড় ছেলে রুমী ইমামকে হারান। আর এর কয়েক মাসের মধ্যে বিজয়ের অল্প কিছুদিন আগে হারান স্বামী শরীফ ইমামকে। বিজয়ের পরে রুমীর সব বন্ধুসহ সকল মুক্তিযোদ্ধা তাকে তাদের জননী হিসেবে মেনে নিয়েছিল। এক শহীদের জননী, হাজার শহীদের জননী, হাজার মুক্তিযোদ্ধার জননী হয়ে ওঠা তিনি আমাদের সবার শহীদ জননী।

বিজয়ের এক দশক পরে ১৯৮২ সালে, মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। ১৯৯২ সাল থেকে ক্যান্সারের সাথে লড়াইয়ের পাশাপাশি লড়েছিলেন দেশের রাজাকারদের বিরুদ্ধে। গঠন করেছেন 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'। ১৯৯৪ সালে পরপারে পাড়ি জমান এই মহীয়সী নারী।

তার লেখা অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে একটি 'একাত্তরের দিনগুলি'। বাঙালি আর বাংলাদেশী কিন্তু এই বইয়ের কথা জানে না, সেরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এটি কোনো উপন্যাস বা গল্প নয়, এটি ১৯৭১ সালের দিনলিপি। উত্তাল মার্চ থেকে বিজয়ের ডিসেম্বর, প্রায় ১৯৭১ সালের পুরো ৯টি মাস খুব সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করে গেছেন জাহানারা ইমাম। এ ন’মাসে অনেক উত্থান-পতন, কান্না, প্রিয় মানুষ হারানো- সবকিছু সাথে নিয়েই লিখে গেছেন তিনি।

মার্চ ১, ১৯৭১ সাল থেকে শুরু তার দিনলিপি। সেই সময়ের উত্তাল ঢাকা, উত্তাল বাংলাদেশের চিত্র আমরা দেখতে পারি। রুমী ক্রিকেট খেলা শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে বাড়িয়ে হ্যামবার্গার খেতে আসবেন। বাজার থেকে ফিরেই জানতে পারেন, 'জাতীয় পরিষদের অধিবেশন' স্থগিত করা হয়েছে। চারদিকে শোরগোল।

মার্চ এর ২ তারিখ, বাংলার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলার প্রথম ��তাকা। লাল-সবুজের পতাকা, মাঝখানে তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানচিত্র আঁকা হলুদ রঙে।

শাফী ইমাম রুমী

রুমী ছিলেন বেশ অদ্ভুত ধরনের। তার সাথে কথায় কেউ পারত না। কখনও বাংলা, কখনও ইংরেজি কবিতা কিংবা উপন্যাসের যুক্তি দিয়ে মা-বাবাকে কথায় হারিয়ে দিতেন, কখনো বা হৃদয়-গলানো হাসি। বেঁচে থাকলে উদ্দাম এই তরুণ হয়তো বিশ্বজয় করতে পারতেন। অত্যন্ত মেধাবী ছেলে ছিলেন রুমি। মাত্র আইএসসি পাশ করে ১৯৭১ সালে তখনকার দিনের 'ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ' (বুয়েট) এ ভর্তি হলেন, শুধু ক্লাস শুরুর অপেক্ষা। আমেরিকার শিকাগো শহরের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতছানি তাকে ভোলাতে পারেনি, তাকে টেনেছিল দেশমাতৃকার ডাক।

মা অন্তঃপ্রাণ ছেলে রুমী। একদিন তার যুদ্ধে যাবার সুযোগ এসে গেল। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রুমী হয়তো পারতেন বিদেশে গিয়ে নিজের জন্য কিছু করতে। আর দশজন বাঙালি যুবকের মতো সদ্য তারুণ্যে পা রাখা রুমী ইমামের মনে নাড়া দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে যাবার আহ্বান । বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ভাষণ,

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”

যারা দেশকে ভালোবাসে, এ ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা ছিল না তাদের। রুমীও পারেননি সেই ডাককে অবহেলা করতে।

একদিকে যেমন মেধাবী, আত্মপ্রত্যয়ী আর অন্যদিকে রাজনীতি সচেতন, দেশপ্রেমিক ছেলে রুমী। মাকে বলেছিলেন, এই উত্তাল সময় এখন সব দলের উর্দ্ধে, তাকে যুদ্ধে যেতে হবে। রুমী পালিয়ে যেতে পারতেন, সুযোগ ছিল তার হাতে, কিন্তু মাকে না জানিয়ে কোনো কাজ তিনি করতেন না। তাই এলেন মায়ের কাছে অনুমতি নিতে। মায়ের মন বলে কথা, সে কি আর সহজে মানে নিজের নাড়ি ছেঁড়া ধনকে বিসর্জন দিতে? কিন্তু যুগে যুগে মায়েরা বুকে পাথর বেঁধে সন্তানকে বিভিন্ন বৃহত্তর স্বার্থে বিসর্জন করে এসেছেন।

১৯ এপ্রিল, ১৯৭১। সেই ভয়াল দিন। নাছোড়বান্দা মা জাহানারা ইমাম বলেছিল "দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানী করে"।

দাদার কাছ থেকে 'ইসকারশন'-এ যাবার কথা বলে রুমী বিদায় নিয়েছিলেন, কিন্তু বলে না যে, অন্ধ মানুষ, সাধারণ মানুষের চাইতেও প্রখর বুদ্ধির অধিকারী? বোধহয় তিনিও কিছুটা আঁচ করেছিলেন।

রুমী যুদ্ধে গিয়েছিলেন, নানা চড়াই-উৎরাই পার করে মেলাঘরে গিয়ে ট্রেনিং নিলেন; সাথে ছিলেন আজাদ, বাচ্চু, ইসরাক, বদি, জুয়েলসহ কত মানুষ। রুমী খালেদ মোশাররফের সেক্টর-২ এ ট্রেনিং শেষ করে যোগ দেন ক্র্যাক প্লাটুনে। ধানমন্ডিতে গেরিলা আক্রমণের পরে রুমী সবার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন। বাবা-মাকে চমকে দিয়ে আগস্ট মাসের শেষদিকে তিনি নিজ বাড়িতে আসেন। ২৯ আগস্ট, আজাদ, জুয়েল, বদীসহ বেশ কয়েকজন গেরিলা যোদ্ধার পাক হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন রুমী। এরপরে তার কোনো খোঁজ কেউ পায়নি। তিনি কতদিন বেঁচে ছিলেন, তার লাশই বা কোথায়, কেউ জানে না আজও।

এদিকে রুমীর সাথে বাবা শরীফ ইমাম, ভাই জামি ইমামও পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী হন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুমীকে ভাই ও বাবাসহ এক জায়গাতে নিয়ে আসে হানাদার বাহিনী। বিচক্ষণ রুমী সবাইকে শিখিয়ে দেন, তাদের যুদ্ধে জড়িত না থাকার কথা বলবার জন্য। গেরিলা আক্রমণের সব দায়ভার তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন। এরপরে আসে ভয়াল ৩০ আগস্ট। সেদিনের পর রুমীকে আর কোনোদিন দেখা যায়নি। অন্যদিকে পাক বাহিনীর অকথ্য অত্যাচারের পরও প্রচণ্ড শক্ত ছিলেন শরীফ ইমাম।

শারীরিক আর মানসিক এই অত্যাচারে ভেতরে ভেতরে বেশ ভেঙে পড়েন তিনি, কিন্তু নিজের স্ত্রী-বাবা-ছোট ছেলেকে কিছুই বুঝতে দেননি। আর তাই সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে যখন ইয়াহিয়া খান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, তখন শরীফ ইমাম ছেলের জন্য পাপীদের কাছে হাত পাততে চাননি। চাননি ছেলের প্রাণভিক্ষা। যুদ্ধের শেষদিকে এসে মারা যান শরীফ। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও দেখে যেতে পারলেন না। বাবা আর ভাইকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিল ছোট্ট জামী।

এত তাণ্ডব, এত মনঃকষ্ট, সবকিছুকে সামলে নিয়ে এক হাতে নিজের শ্বশুর, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য, নিজের মায়ের সেবা, নিজের সংসার সামলানো- সবটাই করে গেছেন জাহানারা ইমাম। কোথায় কোন খাবার লাগবে, কী ওষুধ লাগবে, কতটা ব্যান্ডেজ লাগবে, কীভাবে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের টাকা পাঠানো যায়, কোন রাস্তার মাথায় গেরিলা বাহিনীকে পৌঁছে দিতে হবে- সবটাই ছিল তার মাথায়।

সাথে নিজের মাকে বাজার করে দিয়ে আসা, রান্না খাবার পৌঁছানো, অসুস্থ শ্বশুরের আলাদা যত্ন নেওয়া- কোনো কিছুতেই নিজেকে উজার করে দিতে ভোলেননি। নিজের ঘরে জমিয়ে রেখেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর থেকে একাধিকবার নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। নিজের অনেক আত্মীয়স্বজনকেও আশ্রয় দিতে একটুও ভয় পাননি তিনি।

১৬ ডিসেম্বর যখন সমগ্র দেশ বিজয়ের আনন্দে মেতেছে, ঠিক সেই সময়ে, স্বামীর কুলখানির জন্য রসদ ঘর খুলে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই সেদিনের রাত, পরদিন সকালের খাবার রসদ নিলেন। এই রসদ তিনি রেখেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের জন্য।

যে পতাকা ২৫ মার্চ তুলেছিলেন, কিন্তু হানাদার বাহিনীর ভয়ে নামিয়ে ফেলেছিলেন- সেই পতাকা ৯ মাস বাদে ১৭ ডিসেম্বর আকাশে উড়িয়েছিলেন। একদিকে বিজয়ের আনন্দ, অন্যদিকে শুনছিলেন আল-বদর বাহিনীর হাতে হত দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের কথা। একদিকে ভাবছেন রুমীর কথা, অন্যদিকে স্বামী। আবার শোকে কাতর জামীর জন্য তিনি অস্থির। বাবার মৃত্যুর পর থেকে স্তব্ধ সে। পাঁচদিন তার মুখে কথা নেই, মাঝে মধ্যে উন্মাদের মতো করছে।

জাহানারা ইমাম
সমগ্র বাংলাদেশ একইসাথে বিজয়ের আনন্দে ভাসছে, অন্যদিকে বুকে স্বজন হারানোর তীব্র যন্ত্রণা। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। হাসি-কান্নার মিলনে বুকের মধ্যে যে একটা চাপা ব্যথা হয়, যা না যায় সহ্য করা- না যায় বোঝানো। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত সমস্ত কষ্ট একাই বহন করেছেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য তাকে শহীদ জননী বলা হয়, শুধু কি তা-ই? নিজের আত্মার ধনকে যে মা বিসর্জন দিতে পারে, যে মা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে, যে মা হাজার শহীদ মায়ের প্রতিচ্ছবি- তাকে তো শহীদ জননী বলতেই হয়।

জাহানারা ইমামের মতো আর এক মা ছিলেন, শহীদ আজাদের মা সাফিয়া বেগম। শহীদ আজাদও একই সময়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন প্রায়। শহীদ আজাদের মায়ের সাথে বেশ সখ্য ছিল জাহানারা ইমামের। সাফিয়া বেগমকে নিয়ে লেখা আনিসুল হক এর 'মা' বইটিতে জানতে পারা যায়, যেদিন আজাদের মায়ের দাফন হয়, অসুস্থতা নিয়েও তিনি গিয়েছিলেন সেই দাফনের কাজে, গাড়িতে বসেছিলেন। সেদিন অঝোরে বৃষ্টি নেমেছিল, বোধহয় শহীদেরা এসেছিল তাদের এক মাকে শেষ বিদায় দিতে। অন্যরকম এক গন্ধে ভরেছিল সেদিন চারপাশ। সেদিনের সেই বৃষ্টিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হয়তো শেষবারের মতোই ছেলের স্পর্শ খুঁজেছিলেন।

নানা উত্থান-পতন এসেছিল তার জীবনে, নিজের জীবনের সেই ভয়ঙ্কর কালো দিনগুলো তবুও লিপিবদ্ধ করে গেছেন আমাদের জন্য। তার বই যতবার পড়ি, ততবার মনে হয়- নতুন করে দেখছি সবকিছু। পাক বাহিনীর অত্যাচারের কথা পড়ে আর একবার ঘৃণায় মনে পড়ে পাকিস্তানিদের।

ভালো থাকুক রুমী-আজাদেরা, আর তাদের মহিয়সী মায়েরা। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।

Profile Image for Zerin Hasan.
190 reviews99 followers
October 7, 2013
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু মায়ের বইয়ের মাধ্যমে আমি তার শ-ভাগের দুই ভাগ অনুভব করতে পেরেছি..

description

মাত্র ৫টি স্টার কম হয়ে যায় বইটার জন্য!!
Profile Image for Ishani.
106 reviews30 followers
February 12, 2021
The first war memoir I read. Its the pages of author’s diary compiled in a book and is based on the happenings of the Bangladesh Liberation war of 1971. This being the format of the book, there can only be a reader’s feelings about the entire episode but not a review.

Jahanara Imam was from Dhaka, the then center (not yet capital) of East Pakistan, and since most of the war was fought, directed and planned from Indo-East Pak border, she documents the horrors and some glimpses of the aimless massacre and the fetish of killing people by West Pakistan as narrated by her relatives and friends who survived those. It focusses on the guerrilla activities of Muktibahini in Dhaka and indirect accounts in the border areas.

Its not a detailed or a researched account of the ABC of the war - how it started, what all happened and how it ended. This is all that the general people of Dhaka felt saw and lived through. There are bone chilling incidences that most of the people don’t know about. Its not possible for us to imagine to go through that ordeal. The only thing which could have completed the book was a brief description of why the Bangladeshis wanted freedom. Otherwise people with no prior knowledge may find it just another separatist movement which it was not.

The author lost almost everything but she survived. This book is the original Bengali version. But people should read the English translation of it to know the barbaric activities West Pakistan (now simply Pakistan) met out to Bangladeshis (then east pakistanis).
Profile Image for Hanif.
154 reviews5 followers
January 3, 2024
মুক্তিযুদ্ধের অনবদ্য এক প্রমাণপত্র!
Profile Image for সা কিব.
58 reviews11 followers
July 19, 2016
একাত্তরের দিনগুলি ও আমার কিছু অনুভুতি


গল্প টা আমাদের ।

আমাদের আশে পাশের প্রতিটি মানুষের সাথে জড়িয়ে আছে এই গল্পের সূতো।

নিয়তির অমোঘ টানে বাধা পড়েছি জড়িয়ে গিয়েছি এই গল্পের মাঝে ।

একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধ দেখেছেন আপনি ?

আপনি দেখেছেন এক মুক্তি যোদ্ধার বুকের ভেতরের জমে উঠা হাহাকার ?

মানুষ কেন বেপোরোয়া হয়ে উঠে জানেন ?

জীবনের মায়া ত্যাগ করে কখন ঝাপিয়ে পড়ে হাতে একটা স্টেন গান নিয়ে ?

আপনার মা , বোন , সহধর্মিনী স্ত্রী কে চোখের সামনে ধর্ষণের দৃশ্য সহ্য করার মতো ক্ষমতা আছে আপনার ?


মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধারা কি বুলেট ব্যাবহার করেছে জানেন ? একেকটি বুলেটের মাঝে ছিল ভালোবাসা , হাহাকার , ক্ষোভ দাবির প্রতিচ্ছবি ।

নিজের ছেলেকে দেশের জন্য কোরবানী করার অনুভুতি কি আপনার আছে ?

পারবেন নিজের ছেলেকে কোরবানী করতে দেশের জন্য ?

হয়তো পারবেন হয়তো পারবেন না , আর সব প্রশ্ন কিন্তু উত্তরের আশায় জন্মও নেয় না ।




হৃদয়কে পাথর করে, বুকের গহীনে বহন করা বেদনাকে সংহত করে দুঃখের নিবিড় অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনি বিন্দু বিন্দু মুক্তোদানার মতো অভিজ্ঞতার সকল নির্যাস। আমরা ফিরে তাকাই আমাদের চরম শোক ও পরম গৌরবে মন্ডিত মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর দিকে। এক মুক্তিযোদ্ধার মাতা, এক সংগ্রামী দেশপ্রেমিকের স্ত্রী, এক দৃঢ়চেতা বাঙালি নারী আমাদের সকলের হয়ে সম্পাদন করেছেন এই কাজ। বুকচেরা আর্তনাদ নয়, শোকবিহ্বল ফরিয়াদ নয়, তিনি গোলাপকুঁড়ির মতো মেলে ধরেছেন আপনকার নিভৃততম দুঃখ অনুভূতি। তাঁর ব্যক্তিগত শোকস্মৃতি তাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় আমাদের সকলের টুকরো টুকরো অগণিত দুঃখবোধের অভিজ্ঞতার সঙ্গে, তাঁর আপনজনের গৌরবগাঁথা যুক্ত হয়ে যায় জাতির হাজারো বীরগাঁথার সঙ্গে। রুমী বুঝি কোন অলক্ষ্যে হয়ে যায় আমাদের সকলের আদরের ভাইটি, সজ্জন ব্যক্তিত্ব শরীফ প্রতীক হয়ে পড়েন রাশভারী স্নেহপ্রবণ পিতৃরূপের।

কিছুই আমরা ভুলবো না, কাউকে ভুলবো না, এই অঙ্গীকারের বাহক জাহানারা ইমামের গ্রন্থ নিছক দিনলিপি নয়, জাতির হৃদয়ছবি ফুটে উঠেছে এখানে।

'মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়' এই অমর পঙক্তির মর্মার্থ সামনে রেখে আমরা স্মরণ করতে পারি এক বাঙালি নারী, গৃহবধূ, লেখিকা এবং লড়াকু জননী জাহানারা ইমামকে। স্বাধীনতা — উত্তর বাংলাদেশে এক জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন প্রেরণা ও আস্থার ধ্রুবলোক। তাঁর মধ্য দিয়ে সব অপূর্ণতা পূর্ণ, খন্ড অখন্ডের সঙ্গতি পেয়ে থাকে; আর তিনি জীবনবেদ থেকে উৎসারিত জায়মান চেতনা ছড়িয়ে দেন দুঃসময়ে অসহায় মানবাত্মার সম্পূর্ণ মুক্তির উদ্দেশ্যে।


কিছু কিছু বই থাকে যাকে নোবেল দিলেও মনে হয় না যে তাকে যথার্থ সম্মান দেয়া হবে । থাকে এমন কিছু বই যাকে শুধু বই হিসেবে পড়া যায় না ।

আসলে বলতে চেয়েছি আবেগ এসে যায় বইয়ের পাতায় ।

চোখের জ্বলুনিকে কে হয়তো আপনি তেমন একটা উপেক্ষা করতে পারবেনই না । আবেগ নাড়া দিয়ে যাবে । অদ্ভুদ লেখনী মন ছুয়ে যাবে । মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ার মতো আপনার মনের জানালায় দাগ বসিয়ে দিয়ে যাবে ঘ্যাচ করে । কাদতে চাইবেন না
Profile Image for Ayesha Mashiat.
187 reviews23 followers
July 18, 2021
This journal of Jahanara Imam is such a nourished and extraordinary piece of Bangla literature. Her writing style has been simple throughout the book but somehow she kept a firm grip on me just using those simple words. I read a small part of her diary entry in class 10 and was instantly amazed by the aura of that small part.

As a girl born in independent and sovereign Bangladesh I couldn't fathom the amount of hardships that she, her family and the people at that time suffered. Each of her entries had simple notes on people's lives back then. But those managed to create the big, colorful and real picture.

Jahanara Imam was one of the upper middle class people back then in East Pakistan and still her hardships were so crucial. This also projects a contrast image of how bad was it for the lower income people.

At the end of the book, we find the ultimate turmoil of events. A segment portrays 'Ma' by Anisul Haque. Her desperation as a mother was so powerful and vivid in those entries. It's sometimes so hard to believe that this women wrote this as a diary entry and not as a complete piece of literature.

All in all, the book will always be in my top favorites. My heart was broken and rebuilt. As a person born amidst independence and freedom, this book taught me not to take these things for granted. This independence of mine is a debt of blood by my ancestors who gave away their lives for people like me to have the right to be called Bangladeshi. I could've written this review in Bangla but I think people should know, specially western world how far reached our literature is.
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
Read
December 17, 2017
এ বইটা রেট করতে চাই না। কিছু বই থাকুক না রেট করা। যখন পড়ছিলাম, পৃষ্ঠা কয়েক পড়েই উঠে পড়ছিলাম, বাইরে গিয়ে একটু হাওয়া খেয়ে আসছিলাম।
একজন মা কতটা শক্ত হলে তার সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করেন যুদ্ধে যেতে। আর রুমিও যে মেধা ও মননে সেরাদের সেরা- এক পায়ে খাড়া যুদ্ধে যেতে! অন্যদের খবর নিতে কতটা ব্যাকুল ছিলেন জাহানারা ইমাম। এরা কেমন আছে, ওরা গ্রামের বাড়ি চলে গেছে কিনা, ওমুককে বলিস তো একবার সম্ভব হলে আসতে, তমুককে বলিস এখানে এসে থাকতে; একশটা প্রশ্ন রুমি ফিরলে। আর ডানপিটে সদ্য যুবক ছেলে সারা শহর গেরিলাপনা আর শত্রু ঘায়েল খেলায় মত্ত, মুখে এক বিন্দু পানি তোলার সময়ই নেই। যেন সারা শহরের খোঁজ নেয়ার আর শত্রুমুক্ত করার দায়িত্ব তাদের মা-ছেলের শুধু! অভুক্ত যোদ্ধা কি পলায়নরত নাগরিক, কেউই তাদের বাসায় এসে খালি পেটে ফিরে যায় নি যুদ্ধের ভেতরেও। প্রতিটা শস্য-দানা সঞ্চয় করেছিলেন পরিচিত-অপরিচিত মানুষদের জন্য। মা তো থাকেন সুযোগ খুঁজে কিভাবে সন্তানের পাতে এক চামচ খাবার বেশি তুলে দেবেন সে চেষ্টায়। অথচ রুমি মারা গেল, শহীদ হল, তাঁর চোখের পানি হল গৌরবের অশ্রু। রুমি যুদ্ধে যাবে, শহীদ হবে আর তার জন্য জমা সঞ্চয় দেশের মানুষের পাতে তুলে দেবেন; জানতেন, তিনি জানতেন।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
April 1, 2022
স্কুলের পাঠ্যবই��ে খন্ড আকারে কয়েকদিনের দিনলিপি ছিলো। সেটা পড়েই ইচ্ছে জাগে পুরোটা পড়ার। এরপর স্কুলের লাইব্রেরী থেকে ধার করে এনে আম্মার চোখ ফাকি দিয়ে পড়া।

মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটা সর্বপ্রথম কাছ থেকে অনুভব করেছিলাম এই বই পড়ার সময়ে। কি বিভীষিকাময় একেকটা দিন!
Profile Image for Tirtha Nandi.
19 reviews2 followers
January 5, 2020
এক কথায় অসাধারণ, অনবদ্য, অতুলনীয়। এই উপন্যাস পাঠ্যপুস্তকে সামিল করা উচিত। তাহলে দেশে পাকি প্রেমী কমবে আর দেশপ্রেমিক বাড়বে।
Profile Image for Raihan Ferdous  Bappy.
226 reviews13 followers
June 16, 2024
১৭ই জুন, সোমবার
রাত ১২:১৫।

প্রথমতই, ঈদ মোবারক। যদিও বানানটা এখন "ইদ" হবে তবে ইদ লিখলে কেনো জানি ঈদ ঈদ লাগে না। যাইহোক, কাজের কথায় ফেরা যাক। শেষ করলাম জাহানারা ইমামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিকথা "একাত্তরের দিনগুলি।"

আমার মনে হয়, কিছু বই আছে যেগুলা এই দেশের প্রত্যেকটা শিক্ষিত মানুষের পড়া বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। নি:সন্দেহে সেগুলোর মধ্যে এটা একটা৷ আমরা তো পেয়ে গেছি একটা স্বাধীন দেশ। কোনো টেনশন ছাড়াই জাতীয়তার পাশে লিখে দিচ্ছি বাংলাদেশী। কিন্তু এই দেশ পেতে, এই জাতীয়তা পেতে যে মূল্য দিতে হয়েছে তা কি অনেক বেশিই না? নাহ! প্রশ্নে ভুল হলো। প্রশ্নটা হবে, তা কি আদৌ পরিশোধযোগ্য? যুদ্ধ আমরা কেউ চোখে দেখিনি। শুধু জানি ৯ মাস যুদ্ধের পরে আমরা জিতে গেছি। আসলেও কি এইটুকই ছিলো? জাহানারা ইমামের এই বই, এই দিনলিপি আপনাকে নিয়ে যাবে যুদ্ধের সেই দিনগুলোতে। প্রত্যেকটা দিন কিভাবে গেছে, কত কষ্টে গেছে, কত নির্যাতন সহ্য করেছে, কতোই না নৃশংসতা দেখেছে এই দেশের মানুষ তা একদম কাছ থেকে দেখতে পাবেন। যুদ্ধের প্রস্তুতি, যুদ্ধে অংশগ্রহণ, আহা! দামাল ছেলেদের কি অদম্য মরণনেশা! সব জানতে পারবেন এই দিনলিপির মাধ্যমে।

আমি এই বই পড়ে একজন সুপারহিরোকে দেখলাম। তবে সবচাইতে অবাক করা বিষয় হলো, সে সুপারম্যানের মতো উড়তে পারে না, স্পাইডির মতো স্পাইডার সেন্স নাই। কোনো কল্পকাহিনী থেকেও উঠে আসেনি সে। তবে, সে একজন সুপারহিরো। কার কথা বলছি? শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে রুমীর কথা বলছিলাম। আহা! কি ছেলে ছিলো! দেশের প্রতি কি টান! এরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আসল নায়ক। এরকম লক্ষ রুমির মাধ্যমেই পেয়েছি এই সোনার বাংলাদেশ। স্যালুট!

পরিশেষে, এই বইটি সবার জন্য মাস্ট রিড একটা বই। প্রত্যেকটা বাংলাদেশীর এটা পড়া উচিৎ। আমি গর্বিত এই দেশ পেয়ে। ভালোবাসি বাংলাদেশ..
Profile Image for Farhana Lüba.
216 reviews16 followers
December 7, 2022
মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হলো বলিদান
লেখা আছে অশ্রুজলে।
Profile Image for Maruf Rosul.
Author 13 books12 followers
October 3, 2024
“Ekattorer Dinguli” is an extraordinary narrative of the war of independence in 1971, where three million lives lasted for nine months, leaving the country almost destroyed. However, behind those numbers and visible losses, there was excruciating pain suffered by the ones who survived. “Ekattorer Dinguli” reveals those painful memories in a diary written by Jahanara Imam. Just as the Holocaust needed Anne Frank to bring the pain of war down to a much more relatable, personal level, Sahid Janani does the same for the War of Independence, narrating her day-to-day experience of living through the war as a mother and a wife.

A highly educated and patriotic woman, she could not say no to her elder son Rumi when he asked permission from her to join the war. He never returned. Her husband died of a heart attack shortly after the war. Paying such a personal price for independence, she resembles millions of Bangladeshi women of her time whose lives were turned upside down, never to be the same. It is still one of the most read and least controversial accounts of 1971, written from a woman’s perspective.
Profile Image for Shafi Abdullah .
24 reviews
April 22, 2018
এক মায়ের আবেগ ,তাঁর সন্তানের প্রতি ভালবাসার বিপরীতে দেশ ও আত্মমর্যাদা এ দৃঢ় মানসিকতার এক উজ্জ্বল দিনলিপি। লেখক অবশ্যই এক জন পরীক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে নিজেকে তখনই নিয়ে গিয়ে চিলেন।তাই বইটির সাহিত্যগুণ নিয়ে আলোচনা করা অর্থহীন। বইটা ১৯৭১ আর উত্তাল সময়ে রচিত।সে সময়ের বহু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বইটায়ে উঠে এসেছে। রুমি,বদি আজাদ, জুয়েল সহ ঢাকার ক্রাক প্লাটুনের অনেকের কথা আসে।ছেলের নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জানা সত্তেও শুধুমাত্র দেশএর স্বার্থ ও শিত্রুর সামনে মাথা নিচু না করার প্রত্যয়ে মারশি পিটিশন করেন না লেখিকা। এই সময়ে যেকোনো মায়ের বুকে কি পরিমান হাহাকার চলে টা কল্পনা করাও অসম্ভব।কিন্তু, এসময়ে লেখিকা যে কিপরিমান সাহসিকতা আর কঠিন ভূমিকা নিয়েছএন বিশ্বাস করাও দুষ্কর। এক পর্যায়ে তাঁর স্বামীও তাকে ছেঁড়ে চলে যান না ফেরার দেশে। বলা যায় যুদ্ধই তাঁর কাস থেকে তাঁর ছেলে ও স্বামী কে কেড়ে নিএচিল।এই রকম সময়েও তিনি যন্ত্রণায়ে জর্জরিত হয়েও ডেয়ারি কন্তিনিউ করছেন। বিশ্বাস করতে সত্যি কষ্ট হয়।
Profile Image for Jishnu Banerjee.
31 reviews11 followers
June 17, 2017
শহীদ জননীর কলমে একাত্তরের দিনলিপি। একাত্তরের পুরোটা সময় জুড়ে জননী ঢাকা শহরেই ছিলেন। যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন নিজের বড় ছেলে রুমীকে। যে দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুনের কথা আমরা পড়ে শিউরে উঠি, রোমাঞ্চিত হই, সেই ক্র্যাক প্লাটুনকে খুব কাছ থেকে দেখা হয়েছে এই বইয়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা সবচেয়ে উঁচুদরের বইগুলোর একটা, সবচেয়ে উঁচুদরের একজনের কলমে।

প্রথমবারের মত কোন বই রিভিউ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে যে এইটা রিভিউ করার যোগ্যতা আমার নেই। থামি!
Displaying 1 - 30 of 179 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.