Jump to ratings and reviews
Rate this book

ক্রীতদাসের হাসি

Rate this book
“ক্রীতদাসের হাসি” মূলত একটি অনুদিত উপন্যাস। শওকত ওসমান এক পাড়াগাঁয়ে বেড়াতে যেয়ে পুরোনো সহপাঠি রউফুনের দাদার থেকে উপন্যাসের মূল পান্ডুলিপি “আলেফ লায়লা ওয়া লায়লা”-র সন্ধান পান। এই গ্রন্থের অনেকগুলো উপন্যাসের একটি হলো “জাহাকুল আবদ” যা পরবর্তীতে বাংলায় ক্রীতদাসের হাসি নামে অনুবাদ করা হয়। এটি মূলত একটি উপন্যাস। তবে শওকত ওসমান সফলভাবেই নাটক আকারে গুছিয়েছেন। গোলামের উপর শাসকের নির্মম নির্যাতনের রূপক হচ্ছে উপন্যাসের মূল চরিত্র গোলাম তাতারী। গোলামকে সবকিছু দেয়ার বিনিময়ে একবার হাসি শুনতে চেয়েছিলেন খলিফা হারুনর রশীদ; তবে কেড়ে নিয়েছিল সবথেকে প্রিয় জিনিসটি। গোলামের আক্ষেপ; অতঃপর জোরালো প্রতিবাদে জয়ী হওয়ার গল্পই হচ্ছে ক্রীতদাসের হাসি। মূল গল্পে হারুনর রশীদ একদিন রাজপ্রাসাদের বাগিচায় রেড়াতে গেলে তিনি এক হাসির শব্দে বিস্মিত হন। হাসির রহস্য উদঘাটন করে জানতে পারেন এ হাসির মালিক তারই গোলাম তাতারী। তাতারী এবং রাজপ্রাসাদের আরেক বাঁদি মেহেরজান গোপনে বিয়ে করেছে এবং ইহা তাদের প্রণয়ের হাসি। গোলামের দুঃসাহসের শাস্তি না দিয়ে তিনি বরং মেহেরজান এবং তাতারীকে হসির পুরস্কারস্বরূপ দাসত্বমুক্ত করেন এবং তাতারীকে পশ্চিমের বড় বাগিচা দিয়ে পুরস্কৃত করেন; বিনিময়ে মেহেরজানকে তার থেকে দূরে সরিয়ে নেন এবং খলিফাকে হাসি শোনানোর শর্ত জুড়ে দেন। কিন্তু এবার আর তাতারী হাসতে পারে না। স্ত্রী মেহেরজানকে ছেড়ে সে আর হাসতে পারেনা।
কাহিনী গড়িয়ে একসময় খলিফা তাতারীর উপর নির্যাতন শুরু করেন এবং বিনা দোষে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কয়েকবছর নির্যাতনের পর কারাগার থেকে তাতারীকে এনে শুধু একটিবার রাজার সামনে হাসতে বললেও সে পারেনা। অতঃপর সামনে আনা হয় তাতারীর স্ত্রী মেহেরজানকে। তবে মেহেরজান এখন আর তার স্ত্রী নয় বরং খলিফার বেগম। তাতারী নিঃশেষ হয়ে যায় তবে প্রতিবাদে কমেনা এক সিকি। চাবুকের উৎকট শব্দের মাঝেও তিরস্কারের ধ্বনি উচিয়ে বলে “দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস কেন চলে। বান্দি কেনা সম্ভব; তবে ক্রীতদাসের হাসি - না - না - না -না”

95 pages, Kindle Edition

First published January 1, 1963

44 people are currently reading
852 people want to read

About the author

Shawkat Osman

71 books60 followers
Shawkat Osman (Bengali: শওকত ওসমান; Sheikh Azizur Rahman; 1917 – 1998) was a Bangladeshi novelist and short story writer.Osman's first prominent novel was Janani. Janani (Mother)is a portrait of the disintegration of a family because of the rural and urban divide. In Kritadaser Hasi (Laugh of a Slave), Osman explores the darkness of contemporary politics and reality of dictatorship.

Awards
Bangla Academy Award (1962)
Adamjee Literary Award (1966)
President Award (1967)
Ekushey Padak (1983)
Mahbubullah Foundation Prize (1983)
Muktadhara Literary Award (1991)
Independence Day Award (1997)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
247 (27%)
4 stars
385 (43%)
3 stars
187 (20%)
2 stars
51 (5%)
1 star
22 (2%)
Displaying 1 - 30 of 106 reviews
Profile Image for Zuberino.
429 reviews81 followers
October 30, 2018
পড়লাম - মোটামুটি লাগলো। আইয়ুবশাহীর বিরুদ্ধে তীর্যক প্রতিবাদ হিসেবে যথার্থ ছিল হয়তো, এমনকি সাহসীও, কিন্তু সফল উপন্যাস বলতে দ্বিধা হয়, নানা কারনে।

প্রথমেই আসে genre বা ক্যাটেগরির কথা। আকারে আঙ্গিকে বইটা যত না উপন্যাস, তার থেকে অনেক বেশি নাটক বা ড্রামার কাছাকাছি লাগলো। বইয়ের ১৫ আনাই সংলাপ নির্ভর, আর মঞ্চায়নে ব্যবহৃত "স্টেজ ডিরেকশনের" মত ব্র্যাকেট-বন্দী নির্দেশিকাও আছে প্রচুর। তাই ঠিক কি কারনে বইটা নাটক হিসেবে পরিচিত না হয়ে নভেল হিসেবে চিহ্নিত হলো, ঠিক পরিষ্কার না। অবশ্য সেটা খুব বড় ইস্যু না - প্রায় সম্পূর্ণ ডায়লগ-নির্ভর "উপন্যাস" অন্য ভাষাতেও আছে, বিলেতের Ivy Compton-Burnett-এর বইগুলো যেমন।

বইয়ের কন্টেন্ট - আপাতদৃষ্টিতে ঐতিহাসিক কাহিনী, অথবা বলা ভালো ১০০১ রজনীর পরে আরো একটা হারানো গল্প ছিল, সেটাই পুনরুদ্ধার করে পুনর্পাঠ। খলিফা হারুনুর রশীদের বাগদাদে এক তাতারী ক্রীতদাসের সাহস (পক্ষান্তরে বেয়াদবি) এবং তার বিরুদ্ধে খলিফার প্রতিক্রিয়া-প্রতিশোধ। স্বেচ্ছাচারি শাসক শুধু স্বেচ্ছাচারিতা করেই ক্ষান্ত থাকে না, ভিকটিমের কাছ থেকে তার বৈধতাও দাবি করে বসে। এমতবস্থায় ভিকটিমের কি করণীয়, ইত্যাদি। পাকি শাসনের রূপক, বা রূপকথা, হিসেবে মন্দ না। কিন্তু সত্যি কথা হলো যে গল্পটা পূর্ব-নির্ধারিত ছকে বাঁধা আর রূপকথার চরিত্রের মতোই একমাত্রিক কার্টুন গল্পের সব চরিত্রগুলো। রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে ঠাহর হয় না। একমাত্র কবি আবু নওয়াসের চরিত্রই একটু অগ্রসর হয়, কিছুটা ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট দেখা যায়। গল্পে তার ভুমিকা হলো 'যাত্রার বিবেক', তবে কথা-বার্তায় আকর্ষণীয় চরিত্র নি:সন্দেহে।

যেহেতু শুধু সংলাপ লিখেই ক্ষান্ত হয়েছেন ওসমান, বিবরণের ধার তেমন ধারেন নাই। স্থান কাল পাত্র, কোন কিছুরই বিশদ বর্ণনা নাই, যা আছে খুব সামান্য, হালকার উপর। ঐতিহাসিক উপন্যাসের অনেকটা স্বাদ কিন্তু ঐসব উপকরণ থেকেই আসে। আরবি ফার্সি ভাষার ব্যবহার অতিরিক্ত, তা নিয়ে কারো আপত্তি আছে, তবে অন্তত এই কনটেক্সটে সেটা অত্যধিক ঠেকে নাই। শেষদিকে এসে কোন কারণ ছাড়া হঠাৎ সাধু ভাষার অবতারনা দেখে বিরক্তি লেগেছে।

বটম লাইন - ষাটের দশকে হয়তো ভালো জিনিস ছিল, কিন্তু সময়ের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ এই উপন্যাস। বর্তমানের পাঠকের কাছে "কিউরিয়সিটি ভ্যালু"-ই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি।
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
December 12, 2014
শওকত ওসমানের সব লেখাই ভালো লাগে। দারুণ একটা রুপক ব্যবহার করে এই লেখাতেও তিনি সাক্ষর রেখেছেন নিজের অনন্যতার।
Profile Image for জাহিদ হোসেন.
Author 20 books476 followers
October 2, 2020
ভয়ই লাগছে রেটিং দিতে যেয়ে। কিন্তু অতিনাটুকে প্লট, রাশি রাশি ফিল্মি ডায়লগ হজম হয়নি। হয়তোবা আমারই সমস্যা। হজম শক্তি ভালো না।
Profile Image for Ahmed Aziz.
381 reviews69 followers
January 12, 2024
রূপকের মাধ্যমে এরকম ধাক্কা দেওয়ার মত উপন্যাস বাংলায় বিরল। ষাট বছর পেরিয়ে এসেও এখনো পুরোদমে প্রাসঙ্গিক। টাকা দিয়ে গোলাম কেনা যায় কিন্তু গোলামের হাসি কেনা যায় না। তাতারীর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা আর কবি নওয়াসের অকুতোভয় বিবেকের অনবদ্য কাহিনি।
Profile Image for নিশাত জাহান ঊষা.
63 reviews30 followers
August 23, 2022
এই যুগে এসে এমন নাটুকে ও অতিরিক্ত আবেগময় সংলাপের উপন্যাস ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। আমারো প্রথমে তেমন একটা ভালো লাগেনি। বলতে গেলে একরকম জোর করেই পড়ে শেষ করেছি। বইটা শুরু করার আগ্রহ হয়েছিলো ভূমিকা পড়ার পর। সেখানে জানতে পারি এটা আলিফ লায়লার শেষ গল্প! তবে পড়তে যেয়ে ক্রমেই যেন আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছিলো! পড়া শেষে বুঝলাম এটা একটা রূপক গল্প! অল্প কিছু পৃষ্ঠার মাধ্যমে এক গভীর বার্তা।

এ নিয়ে আরো নাড়াঘাঁটা করতে যেয়ে জানলাম লেখক আইয়ূব খানের স্বৈরাচারী শাসনের প্রতীক এঁকেছেন এবং বিপদ এড়াতে আলিফ লায়লার মলাট লাগিয়েছেন শুরুতেই! কি অসাধারণ কৌশল!!! কৌশল কাজও করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই উপন্যাস প্রকাশ পাবার পর লেখক তৎকালীন সরকার (আইয়ূব খান) কর্তৃক "আদমজী পুরষ্কার" ভূষিত হন।

সব মিলে এই "না উপন্যাস, না নাটক" ঘরানার তীব্র প্রতীবাদ সম্পন্ন প্রতীকী সাহিত্যটি পাঁচটি তারা পাবার অত্যন্ত উপোযোগী❤️
Profile Image for Tamanna Binte Rahman.
184 reviews140 followers
October 27, 2020
শওকত ওসমানের এই ‘না-উপন্যাস, না-নাটক’ লেখাটার তুলনাই হয়না। প্রথমে সত্যিই ভেবেছিলাম আলিফ লায়লা (ওয়া লায়লানে!!!) এর শেষ গল্পের বাংলা অনুবাদ এটি যার কিছু পাতা আসলেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে অনুবাদও শেষ পর্যন্ত অসমাপ্তই রাখতে হয়েছে। পরে গুগল করে আর ভূমিকা পড়ে জানলাম লেখাটা স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের শাসনামলকে বিদ্রুপের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। যাতে শাসকগোষ্ঠি ধরতে না পারে তাই শুরুতে এমন আখ্যানের বর্ণনা করতে হল। তারপর আরব্য রজনীর স্টাইলে লিখতে হল। কী দুর্দান্ত চিন্তা! Satire at it best. যুগে যুগে যার কোন পরিবর্তন নেই।

এমন অভূতপূর্ব আয়োজনের জন্যই আসলে ৫ তারা দেয়া যায়।
Profile Image for Rafia Rahman.
416 reviews215 followers
July 5, 2024
❝দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দি কেনা সম্ভব_! কিন্তু_ কিন্তু_ ক্রীতদাসের হাসি_ না_ না_ না_ না_❞
❝হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।❞

"আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানে"- এর দুর্লভ পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে! তাও আবার বাংলাদেশে! পান্ডুলিপির শেষ কাহিনী "জাহাকুল আব্‌দ" অর্থাৎ গোলামের হাসি। বইয়ে এই কাহিনীর বাংলার তরজমা করা হয়েছে। শুরুতে এমনটাই বলা হয়েছে।

কিন্তু...
এটা কোনো আরব্য রজনী নয় বরং রুপকাশ্রয়ী উপন্যাস। আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে লেখক রুপকথার আশ্রয় নিয়ে এক ক্রীতদাসের প্রতিবাদের আড়ালে আসলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীদের নির্যাতিত ও প্রতিবাদী চেতনার কথাই বলেছেন। যদিও এতো এতো সংলাপের জন্য পড়ার সময় নাটক মনে হয়েছে। অতিনাটকীয় ও আবেগী সংলাপের জন্য বলতে গেলে বহু কষ্টে টেনে পড়ে গেছি।

বাগদাদের খলিফা হারুন রশীদের স্বেচ্ছাচারিতার বিপরীতে ক্রীতদাস তাতারীর সাহস ও প্রতিবাদ, কবি নওয়াসের বিবেক, মশ্‌রুর প্রভুভক্তি ও মেহেরজানের বিশ্বাসঘাতকতার এক অদ্ভুত কেচ্ছা বলা হয়েছে। শেষের টুইস্টটা... মনে থাকবে!

বই: ক্রীতদাসের হাসি
লেখক: শওকত ওসমান
প্রচ্ছদ: কাইয়ুম চৌধুরী
প্রকাশনী: সময়
প্রথম প্রকাশ: অক্টোবর ২০০৩ (প্রথম সংস্করণ ১৯৬৩)
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮০
মুদ্রিত মূল্য: ১৫০/-
Profile Image for Arifur Rahman Nayeem.
205 reviews107 followers
December 10, 2023
‘ক্রীতদাসের হাসি’ নাটক না হয়ে উপন্যাস কেন? কাঠামো এবং সমস্ত উপকরণ তো নাটকের। নিরীক্ষা? কী ধরনের নিরীক্ষা? লেখক নাটক লিখে বললেন, না, এটা নাটক নয়, এটা উপন্যাস। ব্যস, হয়ে গেল উপন্যাস? বইয়ের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অবশ্যই ভালো (এ বাবদ এক তারা)। মূর্খ শাসকগোষ্ঠীকে বোকা বানিয়ে বইটির আদমজী সাহিত্য পুরস্কার বাগানোর ঘটনাটি খুব আমোদ জাগানিয়া (আরেক তারা এজন্য)। আরবি-ফারসি শব্দের যথার্থ প্রয়োগের জন্য দিতে হয় কিছু। দিলাম অর্ধ তারা। কত হলো? আড়াই। হ্যাঁ, শওকত ওসমানের বিখ্যাত না-উপন্যাসটি আমার থেকে পাবে আড়াই তারকা।
Profile Image for Nabil Muhtasim.
Author 23 books275 followers
January 10, 2019
অ্যারাবিয়ান নাইটসের হারানো পান্ডুলিপির আদলে লেখা। এই একটা জিনিসই আমাকে আগ্রহী করতে যথেষ্ট ছিলো। শক্ত একটা কাহিনীর কাঠামো আর চমৎকার চরিত্র চিত্রন করে শওকত ওসমান বইটাকে অসাধারণ করেছেন।

আরবি ফার্সি শব্দের ব্যবহার একদম লাগসই। আবু নওয়াস প্রিয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে আমার। মধ্যযুগীয় আরব কবিকে তো আমরা এরকমই কল্পনা করি।

আর রূপকের ব্যাপারটা তো আছেই। পরাধীনতা। স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে?
Profile Image for Ismail.
Author 66 books204 followers
November 10, 2018
রূপক উপন্যাস। শক্তিশালী বার্তা রয়েছে এর ভেতরে। কেন এত বিখ্যাত, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না। তবে উপন্যাসের কাঠামো নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত। অনেকখানি অংশই নাটকের মত করে লেখা। তা ছাড়া কোথাও কোথাও সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণে দুষ্ট। তারপরেও সত্যিই ক্লাসিক হিসেবে মর্যাদা পাবার যোগ্য।
Profile Image for Rehnuma.
444 reviews21 followers
December 24, 2021
বইটা পড়া শুরু করেছিলাম এবছর মার্চের ২২তারিখে। ভাষার কাঠিন্যের দরুণ শেলফে পড়েছিল দীর্ঘ নয় মাস। আজকে আবার পড়া শুরু করলাম। বলাই বাহুল্য এবার আর তেমন কঠিন ঠেকেনি। আরবী কিছু ভাষার অর্থ বুঝতে একটু সমস্যা হলেও ভালো উপভোগ করেছি। যদিও শেষটা অসম্পূর্ণ।
Profile Image for K. R. B. Moum .
209 reviews17 followers
October 31, 2017
"যুক্তির পেছনে থাকে মুক্তির স্বপ্ন। এই মুক্তির স্বপ্নই মানুষকে মানুষ বানায়। আমি তাই দুনিয়ার তামাসা ভাল করে দেখি।" [পৃঃ ৭৩]

আর আমি হাসি।
Profile Image for Rezwan  Toha.
13 reviews2 followers
January 3, 2022
"দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে, বান্দী কেনা সম্ভব—! কিন্তু–কিন্তু–ক্রীতদাসের হাসি–না-না-না-না—"

সম্পদ আর ক্ষমতা- এই দুইটা জিনিস থাকলে দুনিয়ার তাবৎ জিনিস কিনতে পারা যায়। কিন্তু মানুষের হাসি কি দিয়ে কিনতে পারা যায়? বা স্বাধীনতার ক্রয়মূল্য কি হবে? আসলেই কি কেনা যায়?

"ক্রীতদাসের হাসি" মূলত একটি রূপক উপন্যাস। অবশ্য পুরোপুরি উপন্যাসও না। নাট্য সংলাপের আশ্রয়ের উপন্যাস। "ক্রীতদাসের হাসি" তে যে ক্রীতদাসের হাসি নিয়ে গল্প এগিয়েছে সে খলীফা হারুনর রশিদের এক ক্রীতদাস। তার হাসি শোনার জন্যই খলীফা তাকে নানান ধন-সম্পদ দিলেও সে হাসেনা। কারণ "সম্পদ দিয়ে গোলাম বাদী কেনা যায়, কিন্তু ক্রিতদাসের হাসি কেনা যায় না৷" "হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।"

উপন্যাসটা প্রধানত তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খানের শাসনকে নিয়ে। সে বাংলার স্বাধীনতাকে ক্ষমতা দিয়ে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছে। দমন করতে চেয়েছে বাংলাকে। আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী মনোভাব ও বাংলার আপামর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে লেখক এক কল্পিত গল্পের মাধ্যমে তুলে এনেছেন। যেখানে আইয়ুব খানকে খলীফা হারুনর রশিদের সাথে এবং বাংলার স্বাধীনতাকে ক্রীতদাস তাতারীর হাসির সাথে তুলনা করেছেন। অবাক করা বিষয়, উপন্যাসটি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লিখলেও সেবছর এটি বছরের সেরা উপন্যাসের তকমা পায়।

পাঠ্যালোচনাঃ বইয়ের শুরুতেই একটা ভূমিকা দেয়া। যেখানে দেখা যায় আরব্য রজনী বা আলিফ লায়লার রাত ১০০১ টা না হয়ে ১০০২ টা হয় এবং সেই হারিয়ে যাওয়া গল্পটিই এটি। কিন্তু আদতে আমার মনে হয় এটিও উপন্যাসেরই একটি অংশ। যেন কেও গল্পের মর্মার্থটা সহজেই অনুধাবন করতে না পারে, সেজন্যই তিনি শুরুতে আরও একটি গল্পের অবতারণা করেছেন।

তবে খারাপ লাগার মাঝে রয়েছে খলীফা হারুন-অর-রশীদের মতো একজন ন্যায়পরায়ণ শাসককে এরকম খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করায়। লেখক চাইলে অন্য কোনোভাবে বা অন্য কাওকে নিয়ে এভাবে লিখতেন। এরকম একজন ন্যায়পরায়ণ শাসককে নিয়ে এভাবে লেখা আমার কাছে কখনই ভালো মনে হয়নাই। কিছুটা ইসলাম বিদ্বেষই মনে হলো। তবে লেখক কি ভেবে লিখেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। বইটি পড়ার আগে সাবধান হয়ে নেবেন যে, এই হারুনর রশীদ পুরোটাই কল্পিত চরিত্র যার সাথে ইতিহাসের কিছুই মিল নেই, এটিকে একটি উপন্যাসমাত্র মনে করেই পড়তে হবে। উপন্যাস দিয়ে খলীফা হারুন-অর-রশীদকে বিচার করতে যাবেন না।
এছাড়া কিছু এডাল্ট সংলাপ আছে, যেগুলা না দিলে উপন্যাসের কোনো কমতিই হতোনা। চাইলেই এগুলোকে পরিহার করা যেত। তাই পড়ার সময় এদিকটাও মাথায় রেখে পড়তে হবে।
Profile Image for Sayeem Shams.
Author 17 books74 followers
April 17, 2021
প্রথমত, এটা কোনো মৌলিক রচনা নয়। লেখক শওকত ওসমান শুরুতেই উল্লেখ করেছেন, এই বইটি আরব্য রজনী তথা “আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানে”র অন্তর্গত “জাহেকুল আব্দ” নামের একটি অসমাপ্ত গল্পের বাংলা অনুবাদ মাত্র। উইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন মিডিয়াতে এই বইকে “অন্যভাবে” উপস্থাপন করা হয়েছে দেখলাম। যেটার কোনো কার্যকারণ আমি খুঁজে পেলাম না।
.
এই যুগে এসে গল্পটা তেমন আকর্ষণীয় মনে না হলেও স্বীকার করতেই হচ্ছে, এখানে চমৎকার কিছু সংলাপ আছে। দার্শনিক, আধ্যাত্মিক কথাবার্তাও আছে বেশ। আরব্য রজনী’র অন্যান্য কাহিনীর মতো এখানেও যৌনতা আছে। তবে সেন্সর করা হয়েছে বলে মনে হলো।
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
December 9, 2024
অসাধারণ বই! খলিফা হারুণ অর রশিদের নেগেটিভ অ্যাপিয়ারেন্স হয়তো অনেকেই নিতে পারেন নাই, কিন্তু একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে এটার কার্যকারণ বোঝা যায়। ব্রিলিয়ান্ট ওয়ার্ক!
Profile Image for Raihan Atahar.
120 reviews26 followers
May 13, 2019
বাগদাদের খলিফা হারুনর রশীদ। প্রচন্ড জাত্যাভিমান তার। জাত্যাভিমানে অন্ধ হয়ে নিজের বোন আব্বাসাকেও হত্যা করেন তিনি। কিন্তু এতে করে তার মধ্যে এক ধরনের মানসিক অশান্তি দেখা দেয়। হাসতে ভুলে যান তিনি। এমন এক সময় নিজের কর্মচারী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু মশরুরকে নিয়ে বাগানে ঘোরার সময় তিনি হাসির শব্দ শুনতে পান। হাসি শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে এর উৎস খুঁজতে থাকেন৷

এক পর্যায়ে তিনি আবিষ্কার করেন, হাসির শব্দ আসছে তার গোলাম তাতারীর ঘর থেকে। তাতারী ও আর্মেনীয় বাদী মেহেরজানের প্রণয়ের সময় তাদের হাসি খলিফার কানে পৌঁছে। তাতারী ও মেহেরজানকে লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন খলিফার স্ত্রী বেগম জোবায়দা। খলিফা এই খবর পেয়ে ভেতরে ভেতরে রেগে থাকলেও কৌশলে তাতারী ও মেহেরজানকে আলাদা করে দেন। কারণ মেহেরজানের রূপে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তাতারীকে মুক্ত করে তিনি বাগিচা উপহার দেন। আর মেহেরজানকে নিজের বেগম বানিয়ে ফেলেন।

খলিফা ভেবেছিলেন তাতারী বাগিচা পেয়ে খুশি হবে। কিন্তু হয়েছিলো তার উল্টোটা। তাতারীর মুখের হাসি চলে গেল। কারণ তার প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছ থেকে তাকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। কিছুদিন বাদে খলিফা তার বন্ধুদের নিয়ে তাতারীর হাসি দেখতে যান। কিন্তু ব্যর্থ হন। তাতারীর মুখের হাসি ফেরাতে বাগদাদের সেরা নর্তকীকে পাঠান তার ঘরে। কিন্তু তাতারী তাকে প্রত্যাখ্যান করে। আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকা নর্তকী আত্মহত্যা করে। এতে করে খলিফা ক্ষেপে গিয়ে তাতারীকে বন্দী করেন। তার উপর অত্যাচার করা হয়। তাতারীকে হাসতে হবে। না হাসতে পারলে তাকে বন্দী হয়ে অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে।

এভাবেই এগিয়ে গেছে শওকত ওসমান রচিত 'ক্রীতদাসের হাসি' উপন্যাসটি। এটি একটি অনুবাদমূলক উপন্যাস। আরব্য রজনীর বিখ্যাত উপন্যাস 'আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা' অর্থাৎ 'সহস্র ও এক রাত্রি' সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি আসলে 'আলিফ লায়লা ওয়া লায়লানে' অর্থাৎ ' সহস্র ও দুই রাত্রি'। এর শেষ গল্পটি 'জাহাকুল আবদ' বা 'ক্রীতদাসের হাসি'।

ঔপন্যাসিক শওকত ওসমান দৈবক্রমে উপন্যাসটির পান্ডুলিপি পান। তাঁর সহপাঠিনীর বাড়িতে বেড়াতে যেয়ে তার দাদা শাহ ফরিদউদ্দীন জৌনপুরীর কাছ থেকে তিনি এই দুষ্প্রাপ্য পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। হালাকু খান বাগদাদ ধ্বংসের (১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ) সময় এই পান্ডুলিপি হিন্দুস্তানে আসে। নানা হাতবদলের মাধ্যমে আসে শাহ সুজার কাছে। তিনি আরাকান পলায়নের সময় পান্ডুলিপি মুর্শিদাবাদের এক ওমারাহের কাছে রেখে যান। সেখান থেকে জৌনপুর। সেখান থেকে ফরিদউদ্দীন জৌনপুরী তা উদ্ধার করেন।

#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ
মূল উপন্যাসটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে রচিত হলেও ঔপন্যাসিক অনুবাদের ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখিয়েছেন৷ যে সব আরবি-ফারসি শব্দ উপন্যাসে ব্যবহার হয়েছে, তার বাংলা অর্থ শেষে দেয়া হয়েছে। ফলে উপন্যাসটি বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না৷

উপন্যাসটিতে নাটকের মত সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে। তাই একে সংলাপনির্ভর উপন্যাস বললেও ভুল হবে না। সংলাপগুলো উপন্যাসটিকে প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য করেছে৷ এর মধ্যে ভালো লাগা উক্তিগুলো তুলে দিচ্ছি-

১. মরজী যেখানে ইনসাফ সেখানে কোন কিছুর উপর বিশ্বাস রাখতে নেই।

২. এই লোভের (রাজত্বের লোভের) আগুনের কাছে হাবিয়া-দোজখ সামাদানের ঝিলিক মাত্র। বিবেক, মমতা, মনুষ্যত্ব- সব পুড়ে যায় সেই আগুনে।

৩. জায়গা বিশেষে কানের চেয়ে চোখের কিমৎ বেশি।

৪. শাস্ত্রকে চোখ ঠারা যায়, কিন্তু বিবেককে চোখ ঠারা অত সহজ নয়।

৫. হাসির জন্য ওয়াক্ত লাগে, যেমন নামাযের জন্য প্রয়োজন হয়।

৬. জমিন-দরদী দেহকান (চাষী) যেমন নহরের পানি নিজের জমির জন্য বাঁধ দিয়ে বেঁধে রাখে, প্রেমিক-নারী তেমনই সমস্ত লজ্জা-সঙ্কোচ একটি হৃদয়ের জন্য সঞ্চিত রাখে।

৭. যুক্তির পেছনে থাকে মুক্তির স্বপ্ন। এই মুক্তির স্বপ্নই মানুষকে মানুষ বানায়।

৮. কালো পাথর কোনদিন নকল হয় না। সাদা আর ঝলমলে পাথরই সহজে নকল করা যায়।

১০. ভুলকে ভুল বলা কবিদের ধর্ম।

১১. সত্য তিক্ত পদার্থ।

১২. দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দি কেনা সম্ভব! কিন্তু ক্রীতদাসদের হাসি না-

১৩. হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।

রিভিউ শেষ করার আগে একটি বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করতে চাই। এটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা নয়৷ তাই তৎকালীন কোন ব্যক্তি বা সময়ের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ভেবে উপন্যাসটিকে পড়লে ভুল ভাবা হবে। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিক কিছুটা রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। উপন্যাসটি ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয়। তখন আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ জর্জরিত। ঔপন্যাসিক রূপকের মাধ্যমে ঐ অবস্থাটিকে তুলে এনেছেন বলে মনে করা হয়। খলিফা হারুনর রশীদ যেন আইয়ুব খানের প্রতিমূর্তি, আর তাতারী বাংলার মানুষের। মজার ব্যপার হল, এই উপন্যাসের জন্য পাকিস্তান সরকার ১৯৬৬ সালে তাঁকে 'আদমজী সাহিত্য পুরস্কার' প্রদান করে। তারা উপন্যাসটির মর্মার্থ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সবমিলিয়ে 'ক্রীতদাসের হাসি'-কে একটি চমৎকার ও সুখপাঠ্য উপন্যাস বলে মনে হয়েছে। ৮০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে 'সময় প্রকাশন'। গায়ের মূল্য মাত্র ১০০ টাকা৷ আগ্রহীরা পড়তে পারেন।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Galib.
276 reviews69 followers
March 18, 2018
এতো বিখ্যাত বইটা আমার কাছে ভালো লাগলো না ক্যান ? :O
মে বি , জাতে উঠতে পারি নি :3

[ তিনি যদি একনায়কতন্ত্র নিয়ে লিখতে চান , তহলে সফল হইছেন -এটুকু বলতে পারি । কিন্তু এখানে এতো যৌন সুঁড়সুঁড়ি যুক্ত সংলাপ ছিলো যে .....এটাকে 'নিচু শ্রেনী'র বই হিসেবেই আমার কাছে মনে হইছে । স্রষ্টা + ফেরেশতাদের চরিত্র নিয়ে বলা বাক্যগুলোর কথা উল্লেখ না-ই-বা করলাম ]
Profile Image for Ryhan hossain.
71 reviews4 followers
July 2, 2021
এই জগৎ সংসার বড়ই অদ্ভুত । এখানে মানুষ মানুষের হাসিও জোর করে কিনে নিতে চায় ।
51 reviews
July 21, 2020
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনকালে পাকিস্তানে সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল । তৎকালীন শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয় । গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি।রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ।

তাইতো তাতারী বলেছিলো শোন, হারুনর রশীদ । দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে । বান্দি কেনা সম্ভব ! কিন্তু- কিন্তু- ক্রীতদাসের হাসি না- না- না- না-

এই কথার মাহাত্ন্য বুঝতে হলে আমদের জানতে হবে যে , হাসি মানুষের আত্নারই প্রতিধ্বনি ।
Profile Image for Arif  Raihan Opu.
212 reviews7 followers
February 5, 2022
অসাধারণ একটি উপন্যাস। চমৎকার বর্ণনা ও ভাষা শৈলীর কারণে বইটি পড়তে একদম খারাপ লাগেনি। বিশেষ ভাবে তীর্যকভাবে যে কথা গুলো বলা হয়েছে সেটা চমৎকার।
.
যদিও অনেকেই এই উপন্যাসের কথা বা ধরতে পারবে না বা পারেনি। কিন্তু উপন্যাসের তাৎপর্য ও তার বিশেষত্ব সম্ভব এখানেই। কারণ ঔপন্যাসিক এখানে তার কথা গুলো শব্দের মাধুর্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে উপমা দিয়ে প্রকাশ করে গিয়েছেন সত্যকে।
.
যদিও এই সময়ে এসে অনেকের কাছেই উপন্যাসটি ভাল না লাগতে পারে। তবে সময়ের হিসেবে বইটি এখনও ক্ল্যাসিক হিসেবেই আমার কাছে থাকবে। এমনকি বাংলা সাহিত্যের ক্ল্যাসিক হিসেবে বইটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Profile Image for Fårzâñã Täzrē.
274 reviews19 followers
November 6, 2024
প্রানখোলা হাসি হাসতে হলেও দরকার হয় তেমন চিন্তা চেতনার, তেমন শক্তিশালী ব্��ক্তিত্বের। নাহ হাসি কখনো রাশি রাশি টাকা পয়সা থাকলেই যে পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। নাহলে হাবশি গোলাম তাতারী কীভাবে প্রেয়সী মেহেরজানকে বুকে নিয়ে ওমন প্রাণখোলা হাসি হাসতে পারে? তাতারী তো সামান্য গোলাম। তাঁর তো রাশি রাশি ধনসম্পদ নেই, তবে কীভাবে সম্ভব এত তৃপ্তি নিয়ে হাসি। যে হাসি দূর থেকে শুনলেও প্রাণ শীতল হয়। মনে একটা আলোড়ন তোলে।

বাগদাদের খলীফা হারুন উর রশীদ অনেকদিন ধরে হাসতে পারছেন না। মনে কোনো শান্তি নেই। বোন জামাইয়ের জন্য নিজে আদেশ দিয়েছিলেন কতল করার। তারপর আছে কত সব চিন্তা। বেগমদের মহলে মন টানে না। মন শান্ত হয় না। জল্লাদ মাশরুর জাহাপনার হুকুমের দাস। খলীফাকে নিয়ে সে আসে বাগানে মন ভালো করতে। ঠিক তখনই খলীফার কানে আসে সেই প্রাণখোলা হাসির ক্ষীণ শব্দ। খলীফা এই হাসির শব্দে আকুল হয়ে উঠলেন। কে হাসে এমন হাসি? মাশরুরকে আদেশ দিলেন খুঁজে বের করতে।

পরবর্তীতে জানা গেল এই হাসি সেই গোলাম তাতারীর। যাকে তারপর খলীফা প্রচুর ধনরত্ন, গোলাম দিয়ে ধনী করে দিলেন, থাকার জন্য বাড়ি দিলেন। শর্ত একটাই তাতারীকে শুধু হাসতে হবে খলীফা দেখবেন সেই হাসি। এতেই খলীফার শান্তি। আর তাতারীর প্রেয়সী বধূ মেহেরজানকে খলীফা নিজের দখলে নিয়ে নিলেন তাঁর রুপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে। ফতেয়া জারী হলো তাতারী এবং মেহেরজানের বিয়ে অবৈধ। তাতারীকে পাঠানো হলো সেই সাজানো বাড়িতে।


কিন্তু সেই বাড়িতে গিয়ে গোলাম তাতারী পড়েছে বিব্রত অবস্থায়। তাঁর মুখে এখন আর হাসি নেই। খলীফা চাকরদের তিরস্কার করলেন তাঁরা বোধহয় তাতারীর ঠিক করে সেবা করছে না, তাই তাতারী হাসছে না। তাতারীকে আনন্দ দিতে শহরের সেরা নর্তকী বুসায়নাকে পাঠানো হলো। যার কাছে মাথা নোয়াতে দ্বিধা করে না পুরো বাগদাদ শহর। কিন্তু সেই বুসায়নাও তাতারীর মন জয় করতে ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মহত্যা করলো কারণ এমনিতেই তাঁর শাস্তি হিসেবে গর্দান যেত। কবি আবু নওয়াসের কাছে বাজি ধরা খলিফা চরম অপমানিত হলেন। রাগে ক্ষোভে খলীফা মাশরুরকে আদেশ দিলেন তাতারী বুসায়নাকে খুন করেছে ওকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক। কিন্তু তাঁকে শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দেয় কবি নওয়াস। যাকে পুরো বাগদাদ চেনে পাগল, মাতাল হিসেবে।

এরপরই তাতারীর জীবনে নেমে আসে অসহনীয় অত্যাচার। সে না হাসছে, না কোনো কথা বলছে। কিন্তু খলীফার জেদ তিনি তাতারীকে হাসিয়ে ছাড়বেন। যতক্ষণ না হাসে চলবে শুধু কোড়ার আঘাত। দেখতে দেখতে কেটে গেল তিন বছর।তাতারী কী আর হাসবে? নাকি নওয়াসের কথা সত্যি হবে? নওয়াস তাতারীর প্রেয়সীকে কেড়ে নিয়ে তাঁকে ধনসম্পদ দেয়ার সময় খলীফাকে বলেছিল এই গোলাম আর কখনো হাসবে না। মেহেরজান কেমন আছে খলীফার বেগম হয়ে?গল্পটা তথাকথিত স্বৈরাচার আইয়ুব খানকে উদ্দেশ্য করে লেখা। আরব্য রজনী গল্প বলা হলেও এটা স্বৈরাচারী আইয়ুবের অপশাসন নিয়ে লেখা। এবং এটাই নাকি বিষ্ময়কর সত্যি।


//পাঠ প্রতিক্রিয়া

শওকত ওসমানের লেখা ক্রীতদাসের হাসি বইটি আমার ভালো লেগেছে মূলত প্রধান কারণ হয়েছে এর ভেতরকার জোরালো বক্তব্য। এবং এই আরব্য রজনীর আড়ালে শওকত ওসমান এমনভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্বৈরাচারী সরকারের যা আসলেই প্রশংসনীয়।

ভাষা একটু কঠিন কারণ আরবি শব্দের ব্যবহার রয়েছে বেশি তবুও ধৈর্য ধরে পড়া শেষ হলে শেষটা আপনার দারুন লাগবে এর সাহসী সমাপ্তির জন্য। আমি বেশ খুশি হয়েছি শেষটা এমন হয়েছে বলে। এবং দুনিয়ার শান সওকাত সবাই যে তাঁর মুখাপেক্ষী নয় এটাই যেন প্রমাণ হলো। পুরো উপন্যাসটি অনেকটা নাটকের আদলে লেখা হলেও ভালো লেগেছে এর শব্দচয়ন।

রুপক অর্থে এমন গোটা উপন্যাস বোধহয় আরও আছে কী না এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না তবে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে লেখকরা যখন তুলে নেন কলম হাতে তখন তার ফলাফল আসে এমনি দারুন সব সাহিত্যকর্ম। বেশ ভালো লেগেছে সব মিলিয়ে।

🏹বইয়ের নাম: "ক্রীতদাসের হাসি"
🏹 লেখক: শওকত ওসমান
🏹 প্রকাশনা: সময় প্রকাশনী
🏹 ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৪/৫
Profile Image for অনিরুদ্ধ.
143 reviews23 followers
August 26, 2020
বইটা হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত উপন্যাস বলেই জানতাম। কিন্তু বই খুলে কেমন যেন একটা খটকা লাগছিলো। মানে কোনো নাটিকার মতো, মঞ্চনাটকের মতো নির্দেশনা দেয়া আছে। আর নাটকের মূল যে 'সংলাপ' তার প্রাধান্যই বেশি, ব্যাখার পরিমাণ কম। কিন্তু আমার সাহিত্যজ্ঞান তেমন নেই বিধায়, এটা কোন ভাগে পরে সে বিচার বাদ দিয়ে পড়া শুরু করলাম।

বাগদাদের খলিফা হারুন রশিদ। বিক্ষুদ্ধ মনে একদিন নৈশভ্রমণে যেয়ে তিনি শুনতে পান হাসির শব্দ। শব্দটা ঝনঝন করে বাজতে থাকে তাঁর কানে। হাসিটা এক গোলামের। খলিফা বিশ্বাস করতে পারেনা এমন হাসি হতে পারে কোনো কেনা গোলামের! সে তাকে অনেক সম্মান মর্যাদা দেয়, কিন্তু খলিফার আরজি একটাই, তাকে হাসি শোনাতে হবে। কিন্তু গোলাম যে পারেনা। সে পারেনা আগের মতো হাসতে! ধীরে ধীরে সে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। চলতে থাকে নানান রকম অত্যাচার। কিন্তু তবু্ও সে 'কালো পাথর।' এটাই কি শেষ? না..

ইতোপূর্বে শওকত ওসমানের লেখা 'জননী' পড়া হয়েছে। এরপরই তারঁর বিখ্যাত বই 'ক্রীতদাসের হাসি' পড়ার সৌভাগ্য হয়ে যাই। ব্যক্তিগত মতামত চাইলে বলব, তাঁর লেখায় অন্যরকম একটা ছন্দ আছে। যে ছন্দ নিয়ম মেনেও দোলে না, আবার তা অনিয়মতই ঘটে না। কোথায় যেন একটি নিবিড় সৌন্দর্য, গভীর কোন বোধ নাড়িয়ে দেয় পাঠককে। এই বইটিও সেক্ষেত্রে সার্থক বলা যায়।

উর্দু-ফার্সি ভাষার ব্যবহারে পড়তে অসুবিধা হচ্ছিল যদিও শেষে শব্দপঞ্জী দেয়া আছে। আকারে ছোট হলেও 'ক্রীতদাসের হাসি' পাঠককে সম্পূর্ণভাবেই আকৃষ্ট করতে সক্ষম।
Profile Image for Rony Rahman.
71 reviews6 followers
October 31, 2024
ধারে পাওয়া স্বাধীনতায় তাতারীর হাসি হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় এক হাবসী গোলাম, যেমন করে হারিয়ে যায় কাজল হারা শবনমের হাসি।

৩.৫/৫.০
Profile Image for Rabeka Mustarina.
48 reviews24 followers
December 26, 2021
রেটিং: ৩.৭
মূল বক্তব্যটা অনেক ভালো লাগলেও লেখার ধরণটা অতটা পছন্দ হয়নি। চরিত্রগুলোর আরেকটু বিকাশ প্রয়োজন ছিল।
Profile Image for শৌণক.
112 reviews17 followers
January 3, 2020
নাফরমানা বান্দার হাসি হারিয়ে গেল বাগদাদের অলিতেগলিতে...

"অন্ধকারে দুইজনে অনেকক্ষণ হাসতে থাকে। কেন? সে তারা-ই ভাল জানে, আর জানে বিধাতা"
"আর এতো হেসোনা, এখনই আমীরুল মুমেনীন তা কিনে নিবেন"
Profile Image for Shihab Uddin.
289 reviews1 follower
January 3, 2023
"নারীর বিবসনা হওয়ার প্র‍য়োজন আছে। কিন্তু সে কেবল প্রেমে। নারীর নির্লজ্জ হওয়ার অধিকার আছে ; তা-ও শুধু প্রেমে। একটি মানুষ যার সান্নিধ্যে তার অস্তিত্ব অর্থবান হয় - তেমন মানুষের জন্য । জমিন-দরদী দেহ্কান (চাষী) যেমন নহরের পানি জমির জন্য বাঁধ দিয়ে বেঁধে রাখে, প্রেমিক- নারী তেমনই সমস্ত লজ্জা- সংকোচ একটি হৃদয়ের জন্য সঞ্চিত রাখে। তোমার দেহের দিকে তাকাও। ও ত সওদাগরের দোকান, লেবাস আর অলংকারে ঠাসা। দীরহাম দিলেই পাওয়া যায়। নারীর মূল্য অত সস্তা নয়। যে নারী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানব-জাতির শিশু-কে পৃথিবীতে আমন্ত্রন দিয়ে আনে, যে নারী শাশ্বত মানবতার জননী - বসুন্ধরার অনন্ত অঙ্গীকার , সে অত সস্তা হয় না। "

" জীবন অনেক মূল্যবান। আত্নহত্যা ভীরু মুজ্দীলের কাজ। মানুষ জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায়, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ায়। সে পিছু হটে না। জন্তুরা যেমন লেজ গুটিয়ে পালায়, তেমন পালায় না।"

" দুঃখ আর মৃত্যু এক জিনিস নয়। দুঃখের গান গাই দুঃখকে দূর করার জন্যে, দুঃখের মোকাবিলায় দাঁড়াতে পারব, তার জন্যে। যারা এই জীবন জিইয়ে তুলতে পারে না, তারা কবিতা লেখে শকুনদের জন্যে। পারশীরা শকুনের কাছে যেমন মড়া ফেলে দেয়, ওই কবিরা তেমন কবিতা ছুঁড়ে দেয় পাঠকদের জন্যে। আজান দিয়ে মুসল্লি ডাকে, তুমি কবিতা দিয়ে মানুষ ডাকার বন্দোবস্ত করো।"

"যুক্তির পেছনে থাকে মুক্তির স্বপ্ন । এই মুক্তির স্বপ্নই মানুষকে মানুষ বানায়।"

" রুপের হাট-ই আসল হাট। মানুষ যদি না আবিষ্কার করত, এই দুনিয়ার বাঁচার আর কোন মজা থাকত না। ফুল তো বনে ফোঁটে। কিন্তু তাকে আমরা সাজিয়ে ফোঁটাতে চাই। তাই বাগান করি। রুপের নেশা থেকেই কাজের উৎপত্তি....আর কাজই সমস্ত সংসারকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।"

★★ আলোচনাঃ উপন্যাসটি শওকত ওসমানের মৌলিক রচনা নয়। উপন্যাস বলা হলেও এটি আসলে অনুবাদ গ্রন্থ। এই বইটি আরব্য রজনী তথা " আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানে'র অন্তগত "জাহেকুল আব্দ" নামের একটি অসমাপ্ত গল্পের অনুবাদ মাত্র।

প্রথমে পড়তে ভীষন বিরক্ত লেগেছে। এই যুগে এত্ত আবেগের বুলি আর কে পড়ে । তবে ধীরে ধীরে বইটিতে দার্শনিক ও আধ্যাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে মূল চরিত্র হচ্ছে তাতারী।

★ক্রীতদাসের হাসি মূলত একটি রুপক উপন্যাস বা নাট্যসংলাপে আশ্রিত উপন্যাস ।
★★ক্রীতদাসের হাসিতে যে ক্রীতদাসের হাসি নিয়ে গল্প এগিয়েছে সে হচ্ছে বাদশা হারুন-উর-রশিদের ক্রীতদাস। তার হাসি শোনার জন্য খলিফা অনেক ধন -জহরত দিতে রাজি হলেও সে হাসতে নারাজ। " কারন সম্পদ দিয়ে গোলাম বাদী কেনা যায়, কিন্তু কৃতদাসের হাসি কেনা যায় না। "হাসি মানুষের আত্মার প্রতিধ্বনি। "

শেষোক্ত চরণঃ- তাতারী কতৃক, বাদশা হারুনুর-রশিদ দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে, বান্দী কেনা সম্ভব -! কিন্তু-কিন্তু -কৃতদাসের হাসি - না - না -না -না- না-না।

★★★ মূল বক্তব্যঃ ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো। এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়। এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্যই আবার নেমে আসে সামরিক শাসন তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী। খলিফা হারুনর রশীদ কোনো কিছুর বিনিময়েই তাতারীর হাসি শুনতে পান না। খলিফার নির্দেশে হাসার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেছে তাতারী। তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া।

পাঠ অনুভূতিঃ বেশ কয়েকটি বিষয় বোধদয়ের বাইরে ছিলো। বইটি চলনসই। গতানুগতিক লেখার একটু বাইরে। অসাধারণ রুপক অনুবাদ করেছেন। তবে ইসলামিক আঁখীতে উপমার ভুল প্রয়োগ বিদ্যমান।
1 review
Read
April 24, 2019
ক্রীতদাসের হাসি
শওকত ওসমান

লেখকের  উক্তি
"বুঝবেনা রাজত্বের লোভ কত। ওই লোভের আগুনের কাছে হাবিয়া-দোজখ সমাদানের ঝিলিক মাত্র । বিবেক ;মমতা ,মনুষ্যত্ব  সব পুড়ে যায় সেই আগুনে।

মূল কাহিনী
" ক্রীতদাসের হাসি " বাংলা সাহিত্যে নাটক এর আদলে লেখা উপন্যাস । উপন্যাসিক ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাসটিতে হারুনর রশীদ চরিত্রটি দাড় করেছেন তৎকালীন ১৯৬২ সালে ইয়াহিয়ার রূপক চরিত্র হিসেবে। অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনে,  নিষ্পেষিত জনগণ যখন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন কিছু লেখক শাসকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিল রূপক অর্থে। "ক্রীতদাসের হাসি  " উপন্যাসটিতে হারুনর রশীদ মধ্যরাতে হঠাৎ একদিন তার প্রাসাদে মধুর হাসির  ধ্বনি শুনতে পায়। কয়েকদিন অনুসন্ধান শেষে হারুন জানতে পারে তার গোলাম তাতারী এবং মেহেরজান হাসাহাসি করছে।  আরো জানতে পারে তারা গোপনে বিয়ে করেছে। নারী লুলাপু খলিফা মেহেরজান কে নিজের বিবি করে নেয়  এবং তাতারী কে বিলাসবহুল প্রাসাদ উপহার দেয়।  বিনিময়ে হারুনর রশীদ শুধু তাতারীর  হাসি শুনতে চাই।  কিন্তু তাতারী মেহেরজান কে হারিয়ে একদম মলিন হয়ে পড়ে। যেন সে  সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
একদিন খলিফা তাতারীর প্রাসাদে আসে তার হাসি শুনতে কিন্তু তাতারী হাসে না। এতে খলিফা রেগে যায়। পরদিন বাগদাদ শহরের সবচেয়ে সুন্দরী নারী কে পাঠায় তাতারী কে হাসানোর জন্য কিন্তু তাতারী হাসে না। এতে খলিফা ক্রোধান্বিত হয়ে   তাতারী কে বন্দি করে  এবং যতদিন পর্যন্ত না তাতারী হাসবে ততদিন নির্যাতনের হুকুম দেয় ।
দীর্ঘ চার বছর তাতারীকে  বন্দী করে রাখার পর একদিন  খলিফা তাতারীকে বলে,  তার সব অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তাকে অনেক ধন-সম্পদ দেওয়া হবে। বিনিময়ে শুধু একবার হাঁসতে হবে কিন্তু তাতারী হাসে না,  কথাও বলে না।  তখন মেহেরজানকে তাতারীর সামনে নিয়ে আসা হয়।  কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস  মেহেরজান তাতারীকে  চিনতেও পারে না। তারপর মেহেরজানকে  তাতারীর সামনে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
  তখন হঠাৎ  তাতারী মুখ খুলে এবং বলে শোন হারুনর রশিদ দিরহাম, দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্ধি কেনা সম্ভব। কিন্তু কিন্তু ক্রীতদাসের হাসি না- না -না -না।

আমার উপলব্ধি
মানুষের বাঁকা ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি অন্তরের সুখের প্রতিধ্বনি । তাই এ হাসিতে সম্মোহন হয় না এমন লোক খুব কমই আছে। ধন-দৌলত, অর্থবিত্ত, জোর- জুলুম, করে হয়তো কাউকে কৃত্রিম  হাসি হাসানো  যাবে। কিন্তু সেখানে কী অন্তরের সুখের প্রতিধ্বনি হবে??
খাচার ভেতর বন্দী  থাকা পাখির সৌন্দর্য দেখা আর কৃত্রিম হাসি দেখা একি। কাউকে বন্দী না মুক্ত করে তার মুক্ত বিচরণের সৌন্দর্য দেখুন তাহলে প্রকৃত আনন্দ হাসি অনুধাবন করা সম্ভব।

Profile Image for Nidra.
28 reviews4 followers
February 18, 2024
বইটা শুরু হওয়ার সময় আমার দুটা ধারণা হয়। প্রথমটা হচ্ছে এটা একটা নাটক এবং এটা ভুল। এটা একটা উপন্যাস। দ্বিতীয় ধারণাটা তৈরি হয়েছিল বইটার প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে। আরব্য রজনীর আলিফ লাইলা সম্পর্কে একটা প্রাচীন পান্ডুলিপি আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা দিয়ে গল্প শুরু হয়। তার কারণে ভেবেছিলাম এই রিলেটেট কিছু হয় এবং এই ধারণাটাও ভুল। এটা একটা রূপক উপন্যাস।

বাগদাদের একজন ক্রীতদাস তাতারি এবং দাসী মেহেরজানের প্রেম হয় এবং বাগদাদের খলিফার স্ত্রী'র অনুমতিতে তাদের বিয়ে হয়। রাতে তাদের দেখাও হয়। এবং সেই সময় প্রেমিকপাখি দুটি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হয়ে যায়। তারা ভাব-আলাপে ব্যস্ত থাকতো এবং খুব হাসতো। একদিন বাগদাদের খলিফা তাদের হাসির আওয়াজ শুনে এবং তাদের একসাথে দেখে। খলিফা তাতারিকে একটা রাজ্যের রাজত্ব দেয় এবং মেহেরজানকে রানীর মর্যাদা দিয়ে প্রসাদে নিয়ে আসে। বিনিময়ে শুধু তাতারি প্রাণখোলা হাসিটা তিনি শুনতে চান। কিন্তু তাতারির হাসির উৎস হচ্ছে মেহেরজান। মেহেরজান তো এখন রাজ্যের রানী। তাই সে হাসতে পারে না এবং খলিফা তাতে অপমানিত বোধ করেন। নানাভাবে চেষ্টার পরও তাতারি সামান্য হাসিটুকু ঠোঁটের কোণে আনতে পারে না। তা সে প্রাণখোলা হাসি তো দূরের কথা।পরে খুনের দায়ে তাতরিকে মৃত্যুদ���্ড দেওয়া হয়।

তৎকালীন পাকিস্তানিদের বাঙালির প্রতি অত্যাচারকে এভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। এবং খুব মজার ব্যাপার হচ্ছে তার জন্য ইয়াহিয়া খানই নিজহাতে লেখককে পুরষ্কার দেন। অবশ্য রূপকধর্মী উপন্যাস বলে বুঝতে পারেনি বলেই।

"শোন, হারুনর রশিদ। দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব! কিন্ত ক্রীতদাসদের হাসি না।"

শেষ হয় উপন্যাসটা চমৎকার একটা লাইন দিয়ে।

"হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।"
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
January 5, 2016
হাসি জিনিসটা ভেতর থেকে আসে। তবে মেকি হাসির কথা ভিন্ন। সেটা সবসময় মুখে ধরে রাখা যায়। কিন্তু সে হাসিতে প্রান থাকে না। আমরা বেশির ভাগ সময় মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখি। কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে হাসি বা বলতে পারেন যে খুশি আসবে সেটা মহা মূল্যবান। আপনি পার্থিব সম্পদ দিয়ে সে হাসি কিনতে পারবেন না। যেমন পারেননি এই উপন্যাসের খলিফা হারুনুর রশীদ। ক্রীতদাস তাতারির প্রাণোচ্ছল হাসি শুনে বিমোহিত খলিফা ভেবেছিল তিনি তাতারির হাসি কিনে নিতে পারবেন। যখন ইচ্ছে সেই হাঁসি শুনতে পাবেন যেন তাতারি চাবি দেওয়া পুতুল। যখন চাবিতে মোচড় দেবেন তখনি সে হাসতে শুরু করবে। সেই চেষ্টায় খলিফা তাতারি কে দাস থেকে মুক্ত করে অঢেল সম্পত্তি প্রদান করলেও কেড়ে নেন তাতারির হাসির মূল উৎস মেহেরজান কে।

মেহেরজান থেকে আলাদা হয়ে তাতারি কি হাসতে পারে! না পারেনি তাতারি। ক্রুদ্ধ খলিফার নির্দেশে চাবুকের আঘাত তাতারির কালো চামড়া ফালি ফালি হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু হাসি ফিরে আসেনি। না আর দশটা মানুষের মতো তাতারি পারেনি মেকি হাসি মুখে লেপটে রাখতে। পারেনি অঢেল সম্পত্তি পেয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে।

"ক্রীতদাসের হাসি" দারুণ একটা উপন্যাস। সাইজে বেশ ছোট হলেও গভীরতায় সমুদ্রসম। ভালো লাগবে সবার আশা করি।
Displaying 1 - 30 of 106 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.