Muhammed Zafar Iqbal (Bengali: মুহম্মদ জাফর ইকবাল) is one of the most famous Bangladeshi author of Science-Fiction and Children's Literature ever to grace the Bengali literary community since the country's independence in 1971. He is a professor of Computer Science & Engineering at Shahjalal University of Science and Technology (SUST). Before that, Iqbal worked as a research scientist in Bell Communication Research for six years until 1994.
Birth and Family Background: Iqbal was born on 23 December 1952 in Sylhet. His father, Foyzur Rahman Ahmed, was a police officer. In his childhood, he traveled various part of Bangladesh, because of his father's transferring job. Zafar Iqbal was encouraged by his father for writing at an early life. He wrote his first science fiction work at the age of seven. On 5 May 1971, during the liberation war of Bangladesh, the Pakistan's invading army captured his father and killed him brutally in the bank of a river.
Education: Iqbal passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1968 and HSC exam from Dhaka College in 1970. He earned his BSc in Physics from Dhaka University in 1976. In the same year Iqbal went to University of Washington to obtain his PhD and earned the degree in 1982.
Personal Life: Iqbal married Dr. Yasmeen Haque in 1978. Yasmeen is the Dean of the Life Science Department, Head of the Physics Department, Provost of the Shohid Janoni Jahanara Imam Hall and a researcher at SUST. They have two children - son Nabil and daughter Yeshim. Yeshim translated the book Amar Bondhu Rashed (Rashed, My Friend) written by her father. Iqbal's elder brother, Humayun Ahmed, was the most popular author and film-maker of Bangladesh since its independence. Humayun died after a nine-month struggle against colorectal cancer on the 19 July 2012. His younger brother, Ahsan Habib, is the editor of the satirical magazine, Unmad and one of the most reknowned cartoonist of Bangladesh.
Academic Career: After obtaining PhD degree, Iqbal worked as a post-doctoral researcher at California Institute of Technology (CalTech) from 1983 to 1988. He then joined Bell Communications Research (Bellcore), a separate corporation from the Bell Labs (now Telcordia Technologies), as a Research Scientist. He left the institute in 1994 and joined the faculty of the Department of CSE of SUST.
Literary career: Iqbal started writing stories from a very early age. Iqbal wrote his first short story at the age of seven. While studying in the Dhaka University Iqbal's story Copotronic Bhalobasa was published in a local magazine. But, a number of readers at that time felt that the story was based on a foreign story. To answer this allegation, he later rewrote the story and published the story in collection of stories named Copotronic Sukh Dukkho. Since then he is the most popular writer both in Bengali Science-Fiction and in Juvenile Leterature of the country.
Other Activities and Awards: Zafar Iqbal won the Bangla Academy Award, the highest award in literature in Bangladesh, in 2004. Iqbal also played a leading role in founding Bangladesh Mathematical Olympiad. In 2011 he won Rotary SEED Award for his contribution in field of education.
হঠাৎ করেই এই লাইনটা মনে পড়লো রিয়াজের কথা জানার পর থেকে, আপাতদৃষ্টিতে বিদেশবিভুঁইয়ে পরিজন বিবর্জিত আবহাওয়া থেকে বড় ঝামেলা আর কিছু মনে হওয়ার কথা নয় বিশেষ করে তার মতো বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের ,মায়ের কোলে মাথা রেখে তিন বেলা তার হাতের সুস্বাদু ব্যঞ্জন দিয়ে উদরপূর্তি, বোনের সাথে খুনসুটি,বাবার খুঁটি হয়ে থাকার মতো প্রশান্তির জীবন ছেড়ে অন্য দেশে থাকাটা নিশ্চয়ই কারো জন্য সুখকর নয় বিশেষ করে যার পারিবারিক এইসব সম্পর্কের জালে জড়ানো আজন্ম অভ্যাস বা বলা যায় সম্পর্ক সূত্রে পাওয়া, সেই ঘরের ছেলেই যখন পরবাসে পড়ার নিমিত্তে চাকরিতে প্রবেশ করে তার জন্য মন থেকে মায়া নামক বস্তু বের হয়ে আসবে সেটাই তো স্বাভাবিক
"আহারে !ছেলেটার কি কষ্টই না হয় সাদা চামড়ার দেশে!"
এরকম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে যারা দুঃখ বিলাস করতে যাবেন তাদের জন্য আছে বেশ বড়সড় দুটো চমক, রিয়াজের লালনপালন কারী মা তার সমস্ত স্মৃতি জড়িয়ে থাকলেও যার সুধায় ক্ষুধায় তিলতিল করে গড়ে উঠে এই পৃথিবীর আলো বাতাস দেখেছে সে তার কথাটাই তার মন থেকে বেমালুম মুছে গেছে!
অবশ্য যে মারা গেছে তাও মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা সময়ে যেখানে ত্রিশ লক্ষ লোকের বলি চড়েছে সেখানে এমন এক আধটা মৃত্যু কি খুব বেশি প্রভাব ফেলে?হোক না সে মা,তিন বছরের শিশু মনে তাকে দেখার সেই শেষ স্মৃতি যদি বর্তমানে ঝাপসা হয়ে আসে তার জন্য ও কি রিয়াজকে দায়ী করা যায়?
কিন্তু একদিন যদি সামনে আসে তার গর্ভধারিনী এখনো জীবিত,এখনো সে রয়েছে তারই আশেপাশে, একাত্তরের এক ঘটনায় তার সাজানো সংসার স্বপ্ন জীবন নিমিষেই কাঁচের দেয়ালের মতো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে তাকে বানিয়েছে পাথরের সম কঠিন আবেগশূন্য,তখন?
আশা করে যাকে খুঁজে খুঁজে আবিষ্কার সেই যদি এমন কঠিন হয়ে থাকে তবে কি রিয়াজের এক সমুদ্র নোনাজলে ডুবে স্মৃতির ভাঙা কাঁচের টুকরোয় ক্ষতবিক্ষত হওয়া কি অস্বাভাবিক?
আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে এই উপন্যাসটা প্রথমে কোন পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পড়া হয়েছিল তখনই, কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা সংলাপ ছাড়া আর কিছু মাথায় ছিল না। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা যে সব বই তাদের প্রাপ্য প্রতিক্রিয়া পায়নি এই বইটা তাদের অন্যতম। যারা তাঁকে সায়েন্স, সায়েন্স ফিকশন আর শিশুতোষ লেখার লেখক মনে করেন তারা আসলে 'আকাশ বাড়িয়ে দাও', 'একজন দুর্বল মানুষের গল্প' বা 'দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় প্রহর' পড়েননি। এবং তারা 'কাচ সমুদ্র'ও পড়েননি। লেখক হিসেবে তাঁর ক্ষমতা বা বহুমাত্রিকতা বোঝার জন্য এই বই একটা শক্ত দৃষ্টান্ত। বইটার কাহিনী, ভাষা, কাঠামো নিয়ে আমি কিছুই বলবো না। কারণ, আমি চাই পাঠক নিজে পড়ে সেগুলো জানুন, বুঝুন। আর যারা বইটা পড়তে আগ্রহী না, তাদেরকে কিছু বলার নেই - পৃথিবীর তাবৎ ভালো বইয়ের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগও তারা পড়েননি, সেই না-পড়ার তালিকায় কেবল আরেকটা ভালো বইয়ের নাম যুক্ত হবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনেক বই আছে যেগুলো পড়লে déjà vu হয়। বইমেলাতে অমন কয়েক গণ্ডা বই বের না করে বছরে এমন একটা বই বের করলে কেবল তাঁর পাঠকদের প্রতিই সুবিচার করা হয় না, সাথে আরও অনেক জরুরী কাজ করা হয়ে যায়।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রধানত সাইন্স ফিকশন লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত ও পরিচিত। কিন্তু তিনি যখনই 'বড়দের' লিখা লিখেছেন খুব পরিণত লেখা লিখেছেন। উনার তথাকথিত বড়দের লেখা বা সিরিয়াস সাহিত্য আশ্চর্যজনকভাবে বেশ ডার্ক ও ব্রুটাল হয় । জীবনের নানাবিধ জটিলতা ও আশ্চর্যময়তা উপন্যাসে লিপিবদ্ধ করার ক্ষমতা উনার বেশ ভালোই ছিলো। কেন যে তিনি সেটা ব্যবহার করলেন না বুঝে উঠতে পারিনি। ছকবাধা লেখা ই লিখতে থাকলেন একটানা।
' কাচ সমুদ্র ' আমেরিকায় পড়তে যাওয়া একজন তরুণের গল্প। প্রথমে মনে হয়েছিলো নিছক প্রেমের গল্প বুঝি কিন্তু শেষে আমরা দেখি এই গল্প আসলে নায়কের ব্যক্তিগত জীবনের এক করুণ ট্র্যাজিক উপাখ্যান যা শেষদিকে ব্যক্তি পেরিয়ে হয়ে উঠে একইসাথে মা ও দেশ-মাতৃকার দুঃখার্ত কাহিনী ও।
এক প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রিয়াজের গল্প 'কাচ সমুদ্র'।বিদেশি বান্ধবী,সামার ভ্যাকেশনের পার্টটাইম জব,মাস্টার্সের থিসিস সব মিলিয়ে ছিপছাম সুন্দর জীবন কাটছিলো তার।এর মধ্যেই এক মধ্যরাতে আচমকা বাংলাদেশ থেকে ফোন আসে রিয়াজের কাছে।একটি নিরীহ ফোনকলে পাল্টে যায় তার সম্পূর্ণ জীবন।কি সত্য অপেক্ষা করছে তার জন্যে বাংলাদেশে?
জাফর ইকবাল স্যার আমার কাছে এক আফসোসের নাম।সায়েন্স ফিকশনের জগতের বাইরে আরও বড় কিছু করার সামর্থ্য তার ছিলো।তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এ উপন্যাসটি।এরকম ম্যাচিউরড উপন্যাস জাফর ইকবাল স্যার আর এখন লিখেন না যা মেনে নেয়া কষ্টকর।
আমরা যারা সাধারণত মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাদের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা অনুধাবন করা কষ্টকর।নয়মাসের এক যুদ্ধে বাংলাদেশের লাখ লাখ পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতাকে আরও একটু ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্যে হলেও বইটি পড়ুন।এরচেয়ে বেশি বললে স্পয়লার হয়ে যাবে!
বইঃ কাচ সমুদ্র লেখকঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পেজঃ ৭৮ মূল্যঃ ৫৫ টাকা
আমরা সবাই একটা পরিচয় নিয়ে সমাজে বাস করি। বাবা মা ভাই বোন সবাই আমাদের পরিচয় বহনে সাহায্য করে। সৎ মা, সৎ বাবা পরিচয় বহন করলেও অনেকে বাবা, মা এর সাথে সৎ কথা থাকার কারনে তাদের গ্রহন করতে অনিহা প্রকাশ করে। কেউ যখন জীবনের অনেক গুলো বছর অতিক্রম করার পর জানতে পারে সে আসলে যে মায়ের কাছে থেকে বড় হয়েছে তিনি আসলে তার আসল বাবা মা না, তখন জীবন হয়ে ওঠে দূর্বিষহ। সে তখন তার আসল মায়ের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে। কত জন খুঁজে পায় কত জন পায় না।
মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ছোট উপন্যাস কাচসমুদ্র। এ উপন্যাস টি অনেক আগে পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ত্রিশ লক্ষ জীবন আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের দামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং যুদ্ধপরর্বতী সময়ে মায়েদের কথা চিন্তা করেন। মায়েদের কি হয়েছিল? বা মায়েদের ছেলেদের? তাঁরা কী আবার এক হতে পেরেছিল? নাকি নাড়ির বাঁধন কেটে দিয়েছিল সমাজ? ঠিক এ রকম পটভুমিকায় রচিত ৭৮ পেজের উপন্যাস কাচসমুদ্র।
গল্পের নায়ক একজন প্রবাসী তরুণ রিয়াজ। যিনি মাস্টার্স শেষ করার আগে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ৩ মাস কাজের সুযোগ পেয়ে যায়। সেখানে পরিচিত হয় বব, জিম, এবং ক্রিস্টিনার সাথে। রিয়াজ তখনো জানতো না ক্রিস্টিনা নামের এই মেয়েটির সাথে একটা বিচিত্র সম্পর্ক গড়�� উঠবে?
রিয়াজ থাকে নিউওর্য়াক শহরে আর তার অফিস নিউজার্সিতে। অফিসের কাছাকাছি থাকার মত একটা বাসা খুঁজতে ক্রিস্টানার সাথে সে বেরিয়ে পড়ে। ক্রিস্টিনার সাথে আলাপ চারিতায় তারা পরিবার পর্যায়ের আলোচনায় চলে যায়। রিয়াজ তার মায়ের কথা, বাবার কথা আর বোনের কথা বলে। কিন্তু রিয়াজ জানতো না তার জন্মদাত্রী মাতাকে নিয়ে কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে?
একমাসের ট্যুর করতে ক্রিস্টিনা দেশের বাইরে যাবার আগে রিয়াজকে তার ফ্ল্যাটে থাকতে অনুরোধ করে বিনিময়ে রিয়াজ ক্রিস্টিনার পোষা বিড়াল কিটি কে সামলে রাখবে। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ক্রিস্টিনা ফিরে আসে অত্যান্ত বিধস্ত অবস্থায়। রিয়াজ তাকে সেবা যত্ন করে সুস্থ্য করে তুললেও ক্রিস্টিনা মনে মনে আঘাত নিয়ে বাঁচতে থাকে।
ক্রিস্টিনা অনেক অনুরোধ করার পরেও রিয়াজ তার ফ্লাটে থাকে নি। সে পুনরায় তার আগের আস্তানায় ফিরে আসে। দুরে থাকলেও তারা একই অফিসে কাজ করে, রেস্টুরেন্টে যায় গল্প করে। ক্রিস্টিনা তখন রিয়াজের কাছে একটা অদ্ভুত আবদার করে। ক্রিস্টিনা রিয়াজের কাছে একটা বাচ্চা চায়। কিন্তু রিয়াজ কি দিবে ক্রিস্টিনাকে বাচ্চা?
তিন মাসের কাজ শেষে রিয়াজ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ফিরে আসে। সব কিছু রুটিন মত গুছিয়ে নেয়ার পর হঠাৎ তার ছক বাঁধা জীবনের সবকিছু ওলোট পালোট হয়ে গেল। রাত দেড়টায় বাংলাদেশ থেকে ফোন করে তার বোন শিউলি। ফোনে অত্যান্ত খারাপ সংবাদ সাথে একটা চিঠির কথা বলে রিয়াজকে দেশে চলে আসতে বলে তাড়াতাড়ি।
রিয়াজ দেশে আসে। তার বাবা মৃত্যুশয্যায় লাং ক্যান্সার এর শেষ পর্যায়ে। বাবার মৃত্যুর যন্ত্রনা তাকে না যত কস্ট দেয় তার থেকে বেশী কস্ট দেয় তার মায়ের প্রতি বাবার নিষ্ঠুরতা। কিন্তু কোন অংশটি বেশী নিষ্ঠুর ক্রিস্টিনা, পাকিস্তাণী মেজর, নাকি তার বাবার নিষ্ঠুরতা? কি ছিল সেই নিষ্ঠুরতা জানতে হলে পড়তে হবে এ উপন্যাসটি।
ব্যক্তিগত মতামতঃ বইটা পড়ে কান্না আটকানোর চেস্টা করেছি। কেননা ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, সবাই নাকি একে মেয়েলি বলে। কিন্তু আমি কত টুকু কান্না আটকাতে পেরেছি? জাফর ইকবালের কয়েকটা আবেগময় উপন্যাসের মধ্যে কাচসমুদ্র একটা। উপন্যাসটি প্রথমে শুরু করে বুঝতেই পারি নি বইতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন কিছু ফুটে উঠবে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছি এটি মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীতে লিখিত। বইটির কাহিনী আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু অত্যান্ত ছোট পরিসরে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সুন্দর ভাবে কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছেন। এটি অন্যান্য উপন্যাসের মত সুখপাঠ্য।
ছেলেবেলা থেকেই পাঠ্যপুস্তকে পড়ে এসেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ত্রিশ লক্ষ জীবন আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের দামে। দেশের জন্য আত্মত্যাগের কারণে কারো ইজ্জত সত্যি সত্যিই যেতে পারে নাকি বাড়তে পারে সেটা আলাদা প্রশ্ন, যদিও তাঁদের ইজ্জত না দিয়ে আমরা ইজ্জত হারিয়েছি নিঃসন্দেহে।
যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা স্বর্গে বসে হয়তো তাঁদের জীবনদান কতটুকু সার্থক হলো সেই হিসেব করছেন। আর মা-বোনেদের মাঝে বোনেদের কথা বাদ দিলাম, সে আরেকদিন দেখা যাবে। মায়েদের কথা বলি। মায়েদের কি হয়েছিল? বা মায়েদের ছেলেদের? তাঁরা কী আবার এক হতে পেরেছিল? নাকি নাড়ির বাঁধন কেটে দিয়েছিল সমাজ?
উত্তরটা সবার জানা। লজ্জ্বায় মাথা নিচু করেই তাই ছিলাম বইটা পড়তে গিয়ে। কারণ সমাজের শিকার এমন এক মা আর এক ছেলের গল্প এটা। জাফর ইকবাল স্যারের সবচেয়ে আবেগময় কয়েকটা বইয়ের একটা "কাচ সমুদ্র"। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, দেখলে সবাই তাকে মেয়েলি বলে। সেই ভয়ে বইটা পড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করেছিল এক কিশোর, কতটুকু পেরেছিল কে জানে! হয়তো তার চোখের কোণে জল ঠিকই এসেছিল।
জাফর ইকবাল স্যার সায়েন্স ফিকশন কিশোর উপন্যাসের বাইরে সাধারণ উপন্যাস খুব বেশি লেখেননি। কিন্তু যা লিখেছেন সেগুলোর প্রত্যেকটাই একেকটা মাস্টারপিস। উনি আরো দুয়েকটা এরকম বই লিখলেও হয়তো পারতেন।
তবে গুডরিডসের রেটিং দেখে খানিকটা হতাশই হই বলতে হবে। স্যারের অনেক গতানুগতিক কিশোর উপন্যাস গতানুগতিক অ্যাডভেঞ্চারের গুণে গুডরিডসে এর চেয়ে অনেক ভালো রেটিং নিয়ে আছে। হয়তো পাঠক উনার কাছ থেকে আর কোনো "কাচ সমুদ্র" চায়নি, তাই তিনি দেননি।
মূল চরিত্র রিয়াজের এক চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আসা নিয়ে গল্পটা শুরু।চাকরিতে ক্রিস্টিনা নামের এক মেয়ের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠা, নিজের জীবনের এক গোপন সত্য উদঘাটন করা। প্রথম কিছু অংশে বাড়াবাড়ি রকম ডিটেইলস দেয়া যেটা পড়তে বিরক্ত লেগেছে। শেষটা ও কেমন জানি খাপছাড়া,অসম্পূর্ণ।
ছোট্ট, মাত্র ৭৮ পৃষ্ঠার বই।এরমধ্যেই অনেকগুলো বিষয় অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। উনার আরসব লেখা থেকে একটু অন্যরকম লাগছে। সম্ভবত, ছোটদের জন্য লেখা নয় বলেই।
গল্পের পটভূমি প্রবাসে, দেশের বাইরে পাড়ি জমানো এক যুবক উপন্যাসের মূল চরিত্র। অনেক আগে প্রথম পড়েছিলাম বইটা, মনে হয় আরেকটু পরে পড়া উচিত ছিল!! যাহোক, এক কথায় খুব ভাল বলতে পারছিনা। কাহিনী একটু এলোমেলোভাবে এগোলেও শেষদিকে পরিণতি লাভ করেছে মোটামুটি ভালমতই। প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটির আবেগের পুরোটাই উঠে এসেছে, ভিনদেশী ক্রিস্টিনার সাথে বাঙালি তরুণের অদ্ভুত রসায়ন, সীমাহীন এক আকর্ষণের সাথে প্রাচ্যদেশীয় অনুভূতির সংমিশ্রণটা বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করা গিয়েছে।
উল্লেখ আছে মুক্তিযুদ্ধের, দেশপ্রেমের ছাপ পাওয়া গেছে ভালমতই। লেখক জাফর ইকবালের টিপিকাল বইয়ের থেকে অনেকটাই ভিন্নধর্মী।
এর আগে জাফর ইকবালের বেশকিছু সায়েন্স ফিকশন ও কিশোর উপন্যাস পড়া হলেও এই ধরণের লেখা পড়া হয়নি। একবারের বসায় পড়ে ফেলার মতো বই। ভালো লাগলো, শুধু ভালো না, বেশ ভালো বলা যায়। শেষটা প্রেডিক্টেবল ছিল যদিও। 🙂
যুদ্ধের গল্প আমি সবসময়ই এড়ানোর চেষ্টা করি। সেটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ যাই হোক না কেন। যেকারনে আমার অনেক বিখ্যাত বই পড়া বা মুভি দেখা হয় নি। একটা গল্পে সুখ, দুঃখ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্ত যুদ্ধের গল্পে থাকে যন্ত্রণা, এবং যেগুলো সত্যি সত্যি ঘটেছে। যেজন্য কাহিনীকে কোনভাবেই অস্বীকার করার কোন উপায় থাকে না। এই বইটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত। কিন্ত আমি সেটা জানতাম না। নাম দেখেও বোঝার কোন উপায় নেই। ২০০৯/১০ সালের দিকে আমি নাইন/ টেনে থাকতে এক সকাল বেলা বইটা শুরু করি। বইয়ের শুরুটা খুবই নিরীহ। আমেরিকা প্রবাসী এক ছাত্রের ব্যাচেলর লাইফ। আমি ততদিনে জাফর স্যারের সায়েন্স ফিকশন, কিশোর উপন্যাস মোটামুটি শেষ করে ফেলেছি। ভাবলাম, দেখি উনার উপন্যাস লেখা কেমন। ঘটনা আগাতে লাগল। একটু পরেই বিরক্তি ধরা শুরু করল। এলোমেলো কাহিনী লিখে যাচ্ছে লেখক। বইয়ের অনেকখানি শেষ। এরপরেও কাহিনী কোন দিকে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই কাহিনীর মোড় ঘুরল। এবং আমি বুঝলাম, একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। গল্পে কোন একটা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ঘটনা আছে। কিন্ত আমার কন্ট্রোল ততক্ষণে লেখকের হাতে, বই শেষ না করে কোনভাবে উঠার উপায় নেই। লেখক তীক্ষ্ণ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে ঘটনা এগিয়ে নিতে লাগলেন। যতটা নিরীহভাবে শুরু ভাবে করেছিলেন, এবার ঠিক উলটোভাবে আগাতে থাকলেন। বই শেষ করে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। মানুষের নৃশংসতার আরেকটা রূপ উন্মোচিত হল। যুদ্ধের বই আমি অনেক ধরণের পড়েছি। কোনটাতে এই ধারনা নিয়ে ফোকাস করা হয় নি। বা এই ধরণের ঘটনাও যে ঘটতে পারে, সেটা আমার কল্পনাতীত ছিল। কিন্ত বই পড়ার পর মনে হয়েছে, এটা যুদ্ধের সময়কার খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। যেটা হাজার হাজার মানুষের জীবনে ঘটেছে। বাংলাদেশের কোন লেখক হয়ত ওইভাবে খেয়াল করে নি, অথবা ইচ্ছে করেই চায় নি এমন একটা ব্যাপার লিখতে। এই বইয়ে যুদ্ধের ঐরকম কোন বর্ণনা নেই। পুরো ঘটনাটা যুদ্ধের পরবর্তী সময়কার। ওই সময় আমার জাফর স্যারকে অন্য একটা গ্রহের মানুষ মনে হয়েছিল, এমন সূক্ষ্ম একটা ব্যাপার এত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন বলে। ইদানীং বইটার কথা মনে পড়ায় কেন যেন মনে হচ্ছে, না উনি এরকম একটা চরিত্র সত্যি সত্যি দেখেছিলেন। নইলে এত বিস্তারিত হয়ত লিখতে পারতেন না। আমি আর দ্বিতীয়বার বইটা পড়ি নি, সাহস হয় নি সত্যি বলতে। কিন্ত KIN এর বইমেলায়, অথবা অন্য সময়ে অসংখ্য মানুষকে এই বই পড়তে বলেছি বা কিনে দিয়েছি। আমাদের সবারই সত্যিকার অর্থেই জানা দরকার কত মানুষের, কত পরিবারের আত্মত্যাগে আজকের এই স্বাধীনতা।
2024 T20 ওয়ার্ল্ড কাপে সাউথ আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশ যখন মাত্র ৬ রানে হারলো তখনও কষ্টের দাগ শুকায় নাই কিন্তু তখনই বইটি পড়ে ফেললাম। সামনে পেলাম আর পড়লাম টাইপ। কিন্তু শেষে বইটি পড়া শেষ করে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।
পুরো উপন্যাসই সুন্দর সাবলীল ভাবে এগিয়ে যেতে থাকে। রিয়াজ চাকুরী করে, ক্রিস্টিনার সাথে বন্ধুত্ব হয়, সেখান থেকে সম্পর্ক গভীর হয়, আবার ভার্সিটিতে ফিরে যায়। সব কিছুই ঠিক। কিন্তু হঠাৎ দেশ থেকে খবর আসে ওর বাব মারা যাচ্ছে। দেশে সেই সময়ই যেতে হবে। কিন্তু তার চেয়েও বড় ঘটনা তার জন্য অপেক্ষা করছিল যেটা খুব বেদনার, বিভীষিকাময়।
অবসর সময়ে চাইলেই পরে ফেলতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে।
অনেক টুনটুনি, অনেক প্রডিজি, অনেক রুহানের ভিড়... যাদের একজনের সঙ্গে আর একজনের মুখ গুলিয়ে যায় বারবার... পার করে এসে এইরকম দু একটা লেখার কাছে চুপ করে বসা যায় খানিকক্ষণ। সবুজ ভেলভেট, বিবর্ণ তুষারের পর এই আরও একবার।
জাফর ইকবাল এত বেশি লেখেন কেন? জাফর ইকবাল এত কম লেখেন কেন?
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর কিশোর উপন্যাস ও সাইন্স ফিকশন এর ভিড়ে অন্যরকম এক বই। লেখক হিসেবে তাঁর ক্ষমতা বা বহুমাত্রিকতা বোঝার জন্য এই বই একটা শক্ত দৃষ্টান্ত। বইয়ের শুরুতে ভাবি নি বইতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন কিছু ফুটে উঠবে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছি এটি মুক্তিযুদ্ধের প্লটে লিখিত। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতাকে আরও একটু ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্যে হলেও বইটি পড়া উচিত।
অনেক আগে বইটা পিডিএফে পড়েছিলাম। এই বইমেলায় হার্ডকপি পেয়ে যাওয়ায় আরেকবার পড়া হল। বইটা লিখা হয়েছে সম্ভবত মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের প্রবাস জীবনের সময়কালে। গল্পের নায়ক একজন প্রবাসী তরুণ। যিনি মাস্টার্স শেষ করার আগে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ২ মাস কাজের সুযোগ পেয়ে যায়। গল্পের এই ২ মাস সময় ব্যাপ্তিতে সহসাই তরুণের জীবনের কিছু অবিশ্বাস্য গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা ঘটে যায়। উপন্যাসটির কলেবর অনেক বড় হতে পারতো। কিন্তু ছোট পরিসরের উপন্যাসটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের অন্যান্য উপন্যাসের মতই সুখপাঠ্য।