“আমি আমার আব্বু আম্মুর প্রথম বাচ্চা। এর আগে তারা কখনো ছোট বাচ্চা দেখে নাই। আমার যখন জন্ম হল তারা বুঝতে পারিছিল না আমি ছেলে না মেয়ে-সেটা বোঝার জন্যে কোথায় দেখতে হয় জানতো না-কেউ বলেও দেয় নাই।” খালেদের মুখ হা হয়ে গেল, সেইভাবে বলল, “তুমি বলতে চাইছ-” “হ্যাঁ। আব্বু আর আম্মু মনে করেছে আমি মেয়ে, তাই মেয়ের নাম দিয়ে বসে থেকেছে।” খালেদ আবার বলল, “তুমি বলতে চাইছ-” আমি মুখ গম্ভীর করে বললাম, “হ্যা। আমার বয়স যখন চার তখন প্রথম ধরা পড়লো যে আমি ছেলে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
Muhammed Zafar Iqbal (Bengali: মুহম্মদ জাফর ইকবাল) is one of the most famous Bangladeshi author of Science-Fiction and Children's Literature ever to grace the Bengali literary community since the country's independence in 1971. He is a professor of Computer Science & Engineering at Shahjalal University of Science and Technology (SUST). Before that, Iqbal worked as a research scientist in Bell Communication Research for six years until 1994.
Birth and Family Background: Iqbal was born on 23 December 1952 in Sylhet. His father, Foyzur Rahman Ahmed, was a police officer. In his childhood, he traveled various part of Bangladesh, because of his father's transferring job. Zafar Iqbal was encouraged by his father for writing at an early life. He wrote his first science fiction work at the age of seven. On 5 May 1971, during the liberation war of Bangladesh, the Pakistan's invading army captured his father and killed him brutally in the bank of a river.
Education: Iqbal passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1968 and HSC exam from Dhaka College in 1970. He earned his BSc in Physics from Dhaka University in 1976. In the same year Iqbal went to University of Washington to obtain his PhD and earned the degree in 1982.
Personal Life: Iqbal married Dr. Yasmeen Haque in 1978. Yasmeen is the Dean of the Life Science Department, Head of the Physics Department, Provost of the Shohid Janoni Jahanara Imam Hall and a researcher at SUST. They have two children - son Nabil and daughter Yeshim. Yeshim translated the book Amar Bondhu Rashed (Rashed, My Friend) written by her father. Iqbal's elder brother, Humayun Ahmed, was the most popular author and film-maker of Bangladesh since its independence. Humayun died after a nine-month struggle against colorectal cancer on the 19 July 2012. His younger brother, Ahsan Habib, is the editor of the satirical magazine, Unmad and one of the most reknowned cartoonist of Bangladesh.
Academic Career: After obtaining PhD degree, Iqbal worked as a post-doctoral researcher at California Institute of Technology (CalTech) from 1983 to 1988. He then joined Bell Communications Research (Bellcore), a separate corporation from the Bell Labs (now Telcordia Technologies), as a Research Scientist. He left the institute in 1994 and joined the faculty of the Department of CSE of SUST.
Literary career: Iqbal started writing stories from a very early age. Iqbal wrote his first short story at the age of seven. While studying in the Dhaka University Iqbal's story Copotronic Bhalobasa was published in a local magazine. But, a number of readers at that time felt that the story was based on a foreign story. To answer this allegation, he later rewrote the story and published the story in collection of stories named Copotronic Sukh Dukkho. Since then he is the most popular writer both in Bengali Science-Fiction and in Juvenile Leterature of the country.
Other Activities and Awards: Zafar Iqbal won the Bangla Academy Award, the highest award in literature in Bangladesh, in 2004. Iqbal also played a leading role in founding Bangladesh Mathematical Olympiad. In 2011 he won Rotary SEED Award for his contribution in field of education.
স্যারের একটি অসাধারণ কিশোর উপন্যাস , কাজলের দিনরাত্রি । তের বছরের এক কিশোর - কাজল । তার জীবন বড় বিচিত্র । এই বয়সেই তাকে দেখতে হয় জীবনের নানারুপ রুঢ় বাস্তবতা । কাজলের বাবা আলতাফ নবী । কোটিপতি ব্যবসায়ী । কয়েক কোটি টাকা এদিক সেদিক হয়ে গেলেও তেমন কোন ক্ষতিই হবেনা এরকম বিশাল ব্যবসায়ী । কাজলের সাথে তার বাবার সম্পর্কের একটা দূরত্ব আছে । সেটাকে শুধু একটা ভদ্রতার সম্পর্ক বলা যায় ; যা না হলেই নয় ।
আর মায়ের সাথে কাজলের সম্পর্কটা ঠিক তার উল্টা । কাজলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত যেন মুখস্ত করে রেখেছেন কাজলের মা ; কোন একটা কিছু বলার আগেই স্নেহময়ী জননীর মত তা বুঝে ফেলেন । কাজলের মা শায়লার সাথে তার বাবার নানারকম দাম্পত্য কলহ । একসময় কাজলের মা কাজলের বাবাকে ছেড়ে চলে যায় । কাজল মা কে ছাড়া থাকতে পারবেনা,তাই কাজলও চলে যায় তার মায়ের সাথে । জীবন যেন হঠাত্ করেই পাল্টে গেল কাজলের । একসময়ের দামী স্কুল,কম্পিউটার,দামী গাড়ী,দামী দামী সব জিনিসপত্র,বিলাসবহুল গাড়ী এসব ছেড়ে মায়ের সাথে কাজলকে দাঁড়াতে হয় স্রেফ একটা সাধারণ জীবনের প্লাটফর্মে এসে । তার নতুন স্কুল,নতুন বন্ধু - পুরো নতুন একটা জীবন,নতুনভাবে ছুটে চলা । নতুন বন্ধুরা কাজলের মত এক কোটিপতির ছেলেকে দেখে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে,তাদের চোখ থেকে সেই বিস্ময় যেন আর সরেনা ।
উপন্যাসের শেষ দিকে আছে কয়েকজন কিডন্যাপারের সাথে কাজল ও তার বন্ধুদের একটা অ্যাডভেঞ্চার । এভাবেই কাজল নামে এক কিশোরের জীবনের রংবদল,জীবনের পদে পদে নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর হাজারো বৈচিত্র্যতার ছবি যেন ভাসে কিশোর উপন্যাসটির পাতায় পাতায় ।
কিভাবে জাফর ইকবালের মতন করে কিশোর উপন্যাস লিখবেন? - খুব সহজ ফর্মুলা। শুরুতে প্রোটাগনিস্ট অনেক সুখে রাখবেন। একে বারে সব দিক দিয়ে এক্কেবারে ননীর পুতুলের মতন। দেন কোন একটা এক্সিডেন্ট টাইপের কিছুর মাধ্যমে প্রোটাগনিস্টকে এক্কেবারে সাধারনের পর্যায়ে নামায়ে হার্ডশিপের মাঝে ফেলবেন যাতে প্রোটাগনিস্টের নাকের জল চোখের পানি এক যায়গায় হয়ে যায়। দেন দেখানো শুরু করবেন কি করে প্রোটাগনিস্ট বাংলা সিনেমার মতন আস্তে আস্তে সব কিছু ওভারকাম করে নিজের জোরে ভাল একটা পজিশনে দাঁড়ায়। আর লাস্টে একচিমটি এডভেঞ্চার। এক্ষেত্রে প্রোটাগনিস্ট কোন ডাকাত কিংবা কিডন্যাপার কিংবা রাজাকারের সাথে বুদ্ধি দিয়ে হারিয়ে হিরো হয়ে যায়। খুব সহজ না? কিন্তু মজার বিষয় হল এত কিছুর পরও জাফর ইকবালের বই পড়তে খারাপ লাগে না যদিও একই কুমিড়ের বাচ্চা তুমি বার বার দেখাতে দেখাতে কুমিড়ের লেজের খাজ পর্যন্ত আমাদের মুখস্ত করিয়ে ছাড়িয়েছেন। যাই হোক কাহিনীতে চলে আসি। :/
মিলাবেন নাকি? কাজল বিশাল এক ধনী বাবার এক মাত্র সন্তান। ধনী মানে বাড়াবাড়ি রকম ধনী। তার বাবার এতই টাকা তার নাম শুনলে মানুষ মমের মতন গলে যায়। ভালই কাটছিল সব (নাকি খাপছাড়াই ছিল?) একদিন সুখের সংসারেও আগুন লাগে। ধনীদের যা হয় আর কি। স্কান্ডাল। কাজলের মা মেনে নিতে পারে না। বাসা থেকে বের হয়ে আসেন এক কাপড়ে। কাজলও কিছু না বলে মাএর সাথে সাথে বের হয়ে আসে বাসা থেকে। শুরু হয় তাদের বাড়াবাড়ি ধনী জীবন থেকে বাড়াবাড়ি রকম টানাটানির সংসার। কাজলের বাবা এর মাঝে এসে বলে যায় তারা ৩ মাসও টিকতে পারবে না তার টাকা ছাড়া। কাজলের মাও প্রতিজ্ঞা করেন যেভাবেই হোক নিজের মতন করে সব গুছায়ে নিবেন। কাজল এর মাঝে ভর্তি হয় বাংলা মিডিয়াম এক স্কুলে। নতুন পরিবেশে নতুন বন্ধুর সাথে পরিচয় হয় তার। ঘটতে থাকে নতুন নতুন সব ঘটনা। এই সব কিছু নিয়েই কাজলের দিন কাজলের রাত্রি। (নামটা শুনে রাতুলের দিন রাতুলের রাত নামের বই এর কথা মনে পড়ে গেল)
সুন্দর করে লেখা হয়েছে বইটা। বইয়ের কাজলকে আমার বেশ বোঝদার একটা ছেলে মনে হয়েছে। এত বড়লোকের ছেলে, হাইফাই সোসাইটিতে চলেও লাইফটাকে এত সহজভাবে নিতে অনেকেই পারেনা। তাও কিশোর বয়সে। বলা যায় মায়ের মতই হয়েছে কাজল। গল্পে বাস্তব ব্যাপারগুলো সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিল, "ইসস ইংলিশ মিডিয়ামের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে যদি কাজলের মত হতো।" আসলে আমি আমার লাইফে যতগুলো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়ে দেখেছি তাদের সবাই-ই বাংলা মিডিয়ামকে কিছু মনেই করেনা! বিশেষ করে আমি বাংলা মিডিয়ামে পড়ি এটা শুনলে ওদের মুখের ভঙ্গিটাই বদলে যায়। যেন নিজেরা বিরাট বড় কিছু হয়ে গেছে আর আমরা যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়ি তারা যেন নর্দমার কীট। মনে করে, আমরা বুঝি কিছুই জানিনা এই পৃথিবীর। জানি সবাই এক না। কিন্তু আমি জানি আমরা যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়ি আমরা ওদের মত এত ভালো ইংলিশ না জানলে, চ্যাটাংচ্যাটাং ইংলিশে কথা না বলতে পারলেও জীবনের অর্থ কি ওদের চেয়ে হাজার গুণ বেশি ভালো করে জানি! আমাদের জগতটা আসলেই অনেক বড়, এক একজন অনেক বেশি বাস্তববাদী মানুষ আমরা। সেভাবেই বড় হয়ে উঠি। আর ওদের চেয়ে ভালো পারি আমরা। সেটা বইয়ে আরও ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাই যখন ওরা আমাকে ওদের ইংলিশ মিডিয়ামের গল্প শুনায়, ওদের স্কুল কোন কোন দেশে স্টাডি ট্যুরে নিয়ে যায়, তোমাদের কি কোথাও নিয়ে যায় না হেনতেন তখন আমি মুচকি মুচকি হেসে ওদের গল্প শুনি। বলুক না একটু! বেচারাদের জগতটা তো ছোট, নিজের ঢোল পিটিয়ে শোনানোর মত কাউকে পায় না। আর আমরা কাউকে বলি না, দেখিয়ে দেই। আমি বাংলা মিডিয়ামে পড়ি আর সেটা নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। সেই গর্বের কথা ওদের কাছে বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয়না। জানি কিচ্ছু বুঝতে পারবে না। বুঝার ক্ষমতা ওদের নেই। তাই আমি বলার প্রয়োজন মনে করিনা। আর হ্যাঁ, আমাদের ধৈর্যও কিন্তু অনেক!! 😂
জাফর ইকবাল স্যারের আরেকটা মাস্টারপিস। শিল্পপতি স্বামীর প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে রাতের বেলা এক কাপড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে কাজলের মা। কোন কিছু চিন্তা না করেই হুট করে মায়ের সাথে সাথে কাজলও বেরিয়ে আসে। তারপর বিত্তবান থেকে হঠাৎ করে গরিব হয়ে যাওয়া মা-ছেলের বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু হয়। অসাধারণ একটা বই।
“কাজলের দিনরাত্রি” মূলত একটি কিশোর উপন্যাস, যেখানে প্রধান চরিত্র কাজল নামের এক কিশোর, যে জীবনযুদ্ধে একা একা সংগ্রাম করে টিকে থাকার চেষ্টা করে। বইটি পড়তে পড়তে এক ধরনের বাস্তবতামিশ্রিত বেদনা অনুভব হয়, যেটা মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখার একটা স্বতন্ত্র গুণ।
গল্পের শুরুতেই দেখা যায় কাজল একা, পথশিশুদের মতো জীবনযাপন করছে। তারপরও সে বাঁচে, হাসে, স্বপ্ন দেখে। একটি দারুণ অংশ ছিল যেখানে কাজল বলে: “আমার তো কিছু নেই, কিন্তু তারপরও আমি হাসতে পারি। এটাও কি কম কিছু?” এই লাইনটা খুব ছুঁয়ে গেছে।
তবে বইয়ের কিছু জায়গায় মনে হয়েছে ঘটনাগুলো একটু বেশিই দ্রুত এগিয়ে গেছে, আর চরিত্রগুলোর গভীরতা পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। শেষের দিকে কিছুটা আবেগপ্রবণতা বাড়তি মনে হয়েছে, যেটা হয়তো কিশোর পাঠকদের জন্য উপযুক্ত, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের কাছে খানিকটা সরল ও অপ্রত্যাশিত লেগে যেতে পারে।
কাজলের চরিত্রে আত্মবিশ্বাস ও জীবনের প্রতি আশাবাদ স্পষ্ট। সমাজের অবহেলিত শিশুদের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে নিখুঁতভাবে। ভাষা সহজ, তরুণ পাঠকদের জন্য উপযোগী।
পার্শ্বচরিত্রগুলোর উন্নয়ন হলে ভালো হতো। কিছু অংশে প্লটের বাস্তবতা কমে গেছে। লেখার গতি মাঝে মাঝে অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো মনে হয়েছে।
সব মিলিয়ে, “কাজলের দিনরাত্রি” একটি মানবিক গল্প। যদিও আমার কাছে এটি খুব গভীর প্রভাব ফেলেনি, তবুও সমাজের অবহেলিত শিশুদের জীবন নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। ছোটদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বই, তবে বড়দের জন্য হয়তো একটু বেশিই সোজাসাপ্টা।
শিল্পপতি স্বামীর প্রতারণা সহ্য না করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে কাজলের মা। কোন কিছু চিন্তা না করেই হুট করে মায়ের সাথে সাথে কাজলও বেরিয়ে আসে। তারপর বিত্তবান থেকে হঠাৎ করে গরিব হয়ে যাওয়া মা-ছেলের বেঁচে থাকার সংগ্রাম এর গল্প শুরু হয়। একবার সে ও তার কিছু বন্ধু মিলে সিলেট ঘুরতে যায়। সেখানে ঘটে যায় একটি মজার অ্যাডভেঞ্চার।
এটা অনেক ভাল একটা বই এবং আমার প্রিয় বইগুলোর মধ্যে একটি। প্রথম দিকে পড়ার সময় এই বই টি আমার মোটেও ভাল লাগে নি। কিন্তু যখন কাজল এবং তার মা বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন তারপরের কাহিনি গুলো অনেক মজার ছিল। আমার সব থেকে ভাল লেগে ছিল যখন কাজল এবং তার বন্ধুরা চা-বাগানে বন্দি ছিল। আর ভাল লেগে ছিল যখন কাজল ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়া শুরু করেছিল।
বইঃ কাজলের দিন রাত্রি লেখকঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ধরনঃ কিশোর উপন্যাস পেজঃ ৮৮
একটা প্রশ্ন করি সবাইকে- "জীবনে বেশী টাকা হওয়া কি ভাল না খারাপ"? আমাদের যা থাকা সম্ভব সবই আছে, কাজেই সবকিছু নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকতে কেমন লাগে সেটা আমরা জানি। কিন্তু হঠাৎ করে সব কিছু হারিয়ে গেল, তখন কোনো কিছু ছাড়া বেঁচে থাকতে আমাদের কেমন লাগবে, ভেবে দেখেছেন কী? এটা পরীক্ষা করতে হলে আপনার বেঁচে থাকার সব উপকরন ছেড়ে একদম অন্যভাবে জীবন শুরু করতে হবে।
ঠিক এরকম কোন কিছু ছাড়া বেঁচে থাকতে কেমন লাগে সেই অনুভুতি প্রকাশ পেয়েছে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা একটা মাস্টারপিস কিশোর উপন্যাসে "কাজলের দিনরাত্রি"। যেখানে বিত্তবান থেকে হঠাৎ করে গরীব হয়ে যাওয়া মা ছেলের বেঁচে থাকার সংগ্রাম অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মুল কাহিনীতে আসা যাক- শহরের বাড়াবাড়ি রকমের ধনী পরিবারের সন্তান কাজল। তার বাবা এতটাই ধনী যে সবাই যেমন বাথরুমে যায়, কাজলের বাবা সেরকম ভাবে বিদেশ যায়। কাজলের বাবা কাজলকে সময় দিতে পারে না, কদাচিৎ কাজলের সাথে দেখা হয়। কাজলের মা হচ্চে কাজলের কাছের মানুষ। অতিরিক্ত টাকা থাকার কারনে সবাই কাজলকে বন্ধু হিসেবে চায়, কিন্তু প্রকৃত বন্ধু না। সুময়ের বন্ধু আরকি।
একদিন সুখের সংসারে আগুন লাগে। ধনী পরিবারে যেটা সচারচর ঘটে স্কান্ডাল আরকি। ২০ বছরের বিবাহিত জীবন তখন কাজলের মায়ের কাছে এক নিমেষে চূর্ন বিচূর্ন হয়ে যায়। বিশ্বাস ভঙ্গের প্রতারনা সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে,কাজল ও তার মায়ের সাথে বের হয়ে আসে। শুরু হয় তাদের বাড়াবাড়ি রকমের ধনী জীবন থেকে বাড়াবাড়ি রকমের টানাটানি সংসার। টানাটানির এ সংসারে কাজলের বাবা তাদের বলে দেয় তারা ৩ মাসের বেশী এ রকম ভাবে টিকে থাকতে পারবে না। কাজল আর কাজলের মা কি পারবে এ রকম টানাটানির সংসারে টিকে থাকতে?
ইংলিশ মিডিয়াম ছেড়ে কাজল ভর্তি হয় বাংলা মিডিয়ামের স্কুলে, সেখানে নতুন বন্ধু বান্ধব, নতুন পরিবেশে কাজলের শুরু হয় নতুন জীবন। ঘটতে থাকে নতুন নতুন সব ঘটনা। কাজল মনে করে পৃথিবীতে তার অসাধ্য আর কোনো কাজ নেই। ধনী পরিবেশে সে নিজেকে লুতুপুতু একটা ছেলে মনে করলেও, এখন সে নিজেকে অনেক বড় মানুষ মনে করে। চলতে থাকে কাজলের দিন আর রাত্রি।
এবার কাহিনীতে যোগ হবে সিলেট ভ্রমনের এ্যাডভেঞ্চার। কাজল আর তার বন্ধুরা মিলে সিলেটে ঘুরতে যায়। সেখানে ঘটে এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী। সিলেটে হঠাৎ কাজলের দরকার পড়ে ২০ লাখ টাকা। সে কি করে যোগাড় করবে এতো গুলো টাকা। নাকি সে তার মা কে ছোটো করে টাকার জন্য নিজের ধনী বাবার কাছে হাত পাতবে? ঠিক কি হবে শেষ দৃশ্যে তা জানতে হলে পড়তে হবে অসাধারন এ উপন্যাসটি।
ব্যক্তিগত মতামতঃ সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার লেগেছে। এটি একটি কিশোর উপন্যাস। বই ছোটো হলেও জাফর ইকবালের লেখার ধরন আপনাকে কাছে টানবে।
কাজলের দিনরাত্রির সাথে আমার পরিচয় ছবির মাধ্যমে। অনেকদিন আগে ছবিটা দেখেছিলাম। এবার বইয়ের পাতায় পড়লাম।
কাজল শহরের ধনী বাবার সন্তান। তার বাবা এতটাই ধনী যে স্কুলের প্রিন্সিপাল পর্যন্ত তার বাবার নাম শুনে থমকে যায়। একজন মানুষ যেভাবে বাথরুমে যায়, কাজলের বাবা সেভাবে বিদেশ যায়। স্কুলে কাজলের সাথে অনেকে বন্ধুত্ব করতে চায় কিন্তু সেটা তার বাবার অনেক টাকার জন্য। তার সত্যিকারের কোন বন্ধু নাই্।
একদিন কাজলের বাবার সাথে তার মার কোন একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয় এবং কাজলের মা তার বাবাকে ছেড়ে চলে যান, সাথে কাজলও মার সাথী হয়। শুরু হয় তাদের নতুন জীবন। এ সময়টায় অনেকটা কষ্ট করে তাদের থাকতে হয়। তবে যত কষ্টই হোক তার মা তার বাবার টাকা নিবে না। নতুন পরিবেশে দিন দিন কাজল নিজেকে মানিয়ে নেয়। সে একটা নুতন স্কুলে ভর্তি হয়। সেখানে সে ভালোই উপভোগ করছিল। স্কুলের এক অনুষ্ঠানে কাজল অভিনয় করে হিরো হয়ে যায়।
একবার সে ও তার কিছু বন্ধু মিলে সিলেট ঘুরতে যায়। সেখানে ঘটে যায় একটি মজার অ্যাডভেঞ্চার। ঠিক কি হয়েছিল তা বলা যাবে না এখানে। তাহলে বই পড়ার সময় মজা পাবেন না।
সবকিছু মিলিয়ে এটা একটা চমৎকার কাহিনী। এটি একটি কিশোর উপন্যাস। পড়ে ফেলতে পারেন। :)
শুরু থেকেই কাজল নামের শান্তশিষ্ট ভালমানুষ কিশোর ছেলেটাকে ভাল লাগছিল। গল্প যত এগিয়েছে, ভাল লাগার পরিমাণও বেড়েছে।
আমার মতে, কিশোর উপন্যাস হিসেবে বেশ মনকাড়া লেখা। ঐ বয়সে ঠিক যেসব ব্যাপার আকর্ষণ করে, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল খুঁজে খুঁজে ঐসবই নিয়ে এসেছেন। একই সাথে পটভূমি হিসেবে উঠে এসেছে অসম্ভব উচ্চবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া কাজলের মধ্যবিত্ত সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার গল্প। এই বই যখন প্রথম পড়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল যে কথা আর চিন্তাগুলো তো আমাদের আশেপাশের মানুষজনেরই। সব মিলিয়ে উপভোগ্য কিশোর উপন্যাস।