ছোট এই উপন্যাসে আহসান একাধিক বয়সের ও একাধিক প্রজন্মের যোগসূত্রও বটে। তা হলে শেষ পর্যন্ত কি কোনও স্বপ্নদ্রষ্টা সে? নাকি অপরাধদর্পে আক্রান্ত, সমাজ-সংস্কৃতির চাপে ভুল খোয়াবে আচ্ছন্ন মানুষ? মানসিকভাবে সে ঝুঁকে পড়ে প্রথানুগতভাবে যাদের শ্রদ্ধা করা হয়, সেই বয়োবৃদ্ধদের দিকেই। চান মিয়ার ছোট মেয়ে রাবেয়াকে মনেপ্রাণে চায় সে। কিন্তু তাকে কি প্রেম বলা চলে? নাকি তা এই সমাজে একজন ব্যক্তি তার পূর্ণতা পেতে যা চাইতে পারে, তা থেকে সৃষ্ট কুহকাচ্ছন্ন কামনা? আধুনিক সময়ের উপন্যাসে নায়কোচিত মানুষের ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে যেমন মানুষই হোক, তাকে এখন খোয়াব দেখতে হয়। আর খোয়াব প্রায়শই প্রাপ্তির সঙ্গে জড়িত থাকে না; বরং তা ভবিষ্যতের দৃশ্য নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আর এই খোয়াবে, এই ব্যস্ততায় আক্রান্ত যেন সমাজের একটি পুরো প্রজন্ম।
আহসান সে সমাজের, সে প্রজন্মের প্রতিনিধি। তার এইসব মানসিক দোলাচলকে অবলম্বন করে প্রজন্মের স্থবিরতার গভীর চিত্র তুলে ধরতে ইমতিয়ার শামীম যেন নিবিষ্ট সংবাদদাতার মতো প্রবেশ করেছেন প্রজন্মের মনের গহীনে। তুলে এনেছেন খোয়াব রন্ধন সংবাদ।
ইমতিয়ার শামীমের জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালে, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আজকের কাগজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের শুরু নব্বই দশকের গোড়াতে। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ডানাকাটা হিমের ভেতর’ (১৯৯৬)-এর পান্ডুলিপি পড়ে আহমদ ছফা দৈনিক বাংলাবাজারে তাঁর নিয়মিত কলামে লিখেছিলেন, ‘একদম আলাদা, নতুন। আমাদের মতো বুড়োহাবড়া লেখকদের মধ্যে যা কস্মিনকালেও ছিল না।’
ইমতিয়ার শামীম ‘শীতের জ্যোৎস্নাজ্বলা বৃষ্টিরাতে’ গল্পগ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার (২০১৪), সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশের প্রায় সকল প্রধান সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
চমৎকার "গল্প"। কাহিনির উদ্ভব, বিন্যাস, ক্রমবিকাশ,পরিণতি সবই ছোটগল্পের জন্য উপযোগী; উপন্যাসের জন্য নয়। গল্প হিসেবে এটি উল্লেখযোগ্য। প্রধান চরিত্র আহসান বর্তমান বাঙালি মুসলমানের সার্থক প্রতিনিধি। সে সবখানেই আছে।সে প্রেমে আছে, চটি বইয়ের খোঁজে আছে, ধর্মে আছে, প্রগতিশীলতায় আছে, সবার সাথে তাল মেলাতেও আছে, প্রবল কুসংস্কারেও আছে।
গল্প বলার তরিকা যে জানে,প্লট যতই কমন হোক,সেটা মনোলোভা হয়ে উঠতে বাধ্য। তার উপর লেখক যদি ইমতিয়ার শামীম হয়,সেখানে তো আর কথা বলা চলে না। দিব্যি।
তবে আমি ইমতিয়ার শামীমের একেবারে নতুন কিছু চাই,ঠিক "আমরা হেঁটেছি যারা" মত কিছু। তীক্ষ্ণ,বিষন্ন সুন্দর সর্বোপরি দীর্ঘদিন স্মৃতিতে গেঁথে যাওয়ার মতো গদ্য,যেমনটা শামীম সাহেব সচরাচর লিখে থাকেন।
মফস্বলে সরকারি চাকরি করা আহসানের চিন্তার জগতে আমাদের নিয়ে যান ইমতিয়ার শামীম। ওর দুলতে থাকা চিন্তার জগতে আমরা দেখতে পারি মিড থার্টিজে থাকা আহসান আমাদের বর্তমান যুগের সাধারণ বাঙালি মুসলিমের প্রতিবিম্ব যার উপস্থিতি সবখানেই। বড্ড রিয়ালিস্টিক ক্যারেক্টার! ফ্ল্যাপ বলছে, "ছোট এই উপন্যাসে আহসান একাধিক বয়সের ও একাধিক প্রজন্মের যোগসূত্রও বটে। তা হলে শেষ পর্যন্ত কি কোনও স্বপ্নদ্রষ্টা সে? নাকি অপরাধদর্পে আক্রান্ত, সমাজ-সংস্কৃতির চাপে ভুল খোয়াবে আচ্ছন্ন মানুষ?"
ইমতিয়ার শামীমের উপন্যাসের প্রতিটা নায়কই আসলে বাস্তবের মানুষ, এজন্য বোধহয় কাহিনীর সাথে পাঠকের মেলবন্ধন ঘটে জলদিই। তবে "খোয়াব রন্ধন সংবাদ" আসলে উপন্যাস হয়ে উঠতে পারেনি কেননা ঘোর লাগা শুরু হওয়ার আগেই তা শেষ হয়ে গেছে আহসানের খোয়াবে।
একজন দ্বিধাগ্রস্ত ও হতাশ যুবক আহসান। তার চিন্তার জগতে ঘুরিয়ে এনেছেন ইমতিয়ার শামীম। যেটা তার প্রতি লেখাতেই দেখা যায়। তার চিরাচরিত লেখার মতোই এটাও পড়তে খারাপ না। তবে অন্যান্য গল্পের তুলনায় এর প্লটকে দুর্বলের কাতারেই ফেলব। বইয়ের আকারও যথেষ্ট ছোট।
Story about a quiet, lonely (and horny) guy, almost detached from reality, living inside of his own head and the fantasy he's created around Himself and a girl- as a coping mechanism to swim through his mundane life..
I liked the writer's careful choice of words and the tone of kindness for the character. Levity- without a single borderline remark on the guy's intellectual shortfall and insecurities, also the pronounced sarcasm on the character's one track mind didn’t ruin the ambience of amusement for me.
Bit of a light reading with linear storytelling- in Imtiar Shamim standard.
ইমতিয়ার শামীমের থেকে এক্সপেকটেশন অনেক বেড়ে গেছে তাই মোটামুটি ভালো মানের বই হলেও মনে হয়, নাহহ শামীম সাহেবের লেভেলে হইলো না।
আগা গোড়া দুর্বল একজন মানুষ আহসানের নিজের চিন্তার সাথে সাথে বইটি আগায়। বইয়ের ব্যাপ্তি খুবই ছোট, এটা নভেলা হিসেবে না নিয়ে বড় গল্প হিসেবেও চালিয়ে দেয়া যায়। বইটিতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে লেখক যে আশকারা আহসান চরিত্রটিকে দিয়েছেন, একদম দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতি লেখক একটা স্নেহের ভাব ফুটিয়ে তুলেছেন।
ইমতিয়ার শামীমের লেখনী বাদে এই থেকে আর কিছু পাওয়া গেল না।
"আহসান তাকে সেই গর্ত খুঁড়তে দেখে এবং সে জানে না, টেরও পায় না, নিজের অজান্তেই তার চোখ বোধহয় বোঝার চেষ্টা করে, চান মিয়ার ছোট মেয়েটি ঘরের বাইরে বের হলো কি না।"
ইমতিয়ার শামীমের"খোয়াব রন্ধন সংবাদ" বই থেকে উদাহরন স্বরূপ এই লাইনটার দিকে একটু খেয়াল করি। এই লাইনটা দীর্ঘ না করে ছোট ছোট করেও লেখা যেত হয়তো। কয়েকটা খন্ডে। কিন্তু ইমতিয়ার শামীমের বহু লাইন-ই অনেক দীর্ঘ করে লেখা। তার অনেক বইয়ে বা বলা চলে তার লেখার স্ট্যাইলটাই এমন। যেমন, লেখকের "তা হলে বৃষ্টি দিন, তা হলে ১৪ জুলাই" উপন্যাসের একদম শুরুতে ১ম লাইনটা বাদ দিয়ে ২য় লাইনটা ৩৫ শব্দে এবং ৩য় লাইনটা পাক্ক ৫০ শব্দে লেখা। একটা দীর্ঘ লাইন পড়লে যেটা হয়, পড়তে পড়তে আপনি লাইটা শেষ করে দৃশ্যকল্পটা যখন মানসপটে আসি আসি করে, তখন সেটার স্পষ্টীকরণের জন্যে ২য় বার বা আরো কয়েকবার পড়ার এটেম্প নেন। একজন পাঠক সেটা নিজের তাগিদেই করেন। পাঠকের বাড়তি মনোযোগ দাবি করে লাইনটি। এটা কি ইমতিয়ার শামীমের একটা "টেকনিক" কিনা সেটা নির্ধারন কঠিন নিশ্চিতভাবে। তবে লেখকের লেখার ধরণটাই যে এমন সেটা তার সব বইয়ের কম-বেশি বিদ্যমান।
দুই.
"খোয়াব রন্ধন সংবাদ" ইমতিয়ার শামীমের খুব ছোট একটা উপন্যাস। কোন পাঠক যদি একে একটা "বড় গল্প" বলেও অভিহিত করেন সেটাও মানানসই হবে। গল্পের নায়ক আহসান। চাকরিসূত্রে বাস মফস্বলে। এই উপন্যাস আহসানের মনোজগতের নান টানাপড়েনের। সেই টানাপড়েনের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে কখনো অপরাধদর্পে আক্রান্ত এক চরিত্রাংশ; কখনো খোয়াবে আচ্ছন্ন এক মানুষ। নায়কোচিত কোন চরিত্র নয় এই আহসান, তবে অন্য সব মানুষের মতোই স্বপ্নে বিভোর। খোয়াবে আচ্ছন্ন।
স্বপ্ন? খোয়াব? কি তার খোয়াব? প্রথানুগতভাবে তার সকল জাগ্রত চেতনা বয়োবৃদ্ধ চান মিয়ার দিকে। তবে তা সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উদ্দেশ্য যতগুলোই হোক - প্রচ্ছন্ন বা স্পষ্ট; একটা উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তা হলো চান মিয়ার অবিবাহিত মেয়ে রাবেয়া। এই উদ্দেশ্যর নাম কি প্রেম? নায়কোচিত না হলেও সেটা যে অনেকটা মানসিক(পুরোট নয় বা এই সিদ্ধান্ত পাঠকের) সেটা তার নানা টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে প্রকট হয়ে ওঠে।
আহসানের টানাপড়েন মূলত যেন অনেকগুলো "খন্ডিত" আহসানের রূপ। যেগুলো অনেকগুলো মানুষ এবং প্রজন্মের স্বাক্ষী। গল্পের শূরু মাগবিবের সাথে সাথে। চান মিয়ার মৃ/ত্যু এবং ক/বরে নামাবার প্রস্তুতি দিয়ে। এবং গল্প শেষ এশার পরপর। এই সামান্য সমেয়ে মধ্যে "খোয়াব রন্ধন সংবাদ" একদম নতুন একধরনে��� তৃপ্তি নিয়ে আসে।
তিন.
তবে এই তৃপ্তি যে খুব সহজেই আসে তা না। ইমতিয়ার শামীমের গল্পে দেখা যায় যে, কিছু গল্পে পাঠকের প্রবেশটা সহজ হয়। কোন রকম বেগ পেতে হয় না। শুরু থেকেই পাঠক গল্পের মধ্যে ঢুকে যান। আর কিছু গল্প উল্টা। মানে গল্পটা কি নিয়ে বা আসল কাহিনি কি অথবা কাহিনি কোন দিকে আগাচ্ছে সেটার ঠাঁই পেতে পাঠককে ডুব দিয়ে দম আটকে রাখতে হয় জলের নীচে। "খোয়াব রন্ধন সাংবাদ" ঠিক তেমনি একটা বই।
মাত্র ৯৬ পৃষ্ঠার একটা বই। একদম শেষের পেজের একটু আগেও পড়তে পড়তে ভাবতেছিলাম "বেহুদাই এই গল্প ফাঁদা" র মতো একটা অনুভূতি। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল ছেঁড়ে দেই। তারপর ভাবলাম, অল্প কটা পেজই তো। শেষ করি। কিছু কবিতায় যেমন শেষ লাইনে থাকে একটা দুর্দান্ত "পাঞ্চ লাইন" যেটা পুরো কবিতার আবহে আলাদা মেজাজ নিয়ে আসে। এই বইয়েরও শেষ পৃষ্ঠা… … … আরো স্পেসিফিক করে বললে একদম শেষ প্যারাটা পুরো গল্পটাকে একটা পরিপূর্ন গল্পের রূপ দেয়। অন্তত আমি একটা মৃদু হাসি ও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পেরেছি।
এই শেষ প্যারাটাই পুরো গল্পের শরীরে তার মেরুদন্ড হয়ে ওঠে। উপন্যাসের নামের খোলাসাও হয়ে ওঠে।
চার.
১৯৬৯ সালে "চিত্রালী" পত্রিকার কোন এক সংখ্যায় সৈয়দ শামসুল হক "সে" নামে একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন (গল্পটি লেখকের কোন বইয়ে আর সংকলিত হয়নি হারিয়ে যাবার কারনে)। সেই গল্পে লেখক প্রথমবারের মতো কোন রকম সংলাপ রাখেনি। ইমতিয়ার শামীমের লেখায় এই সংলাপ একদম না থাকা না, বরং এদমই সীমিত আকারে থাকে। দুর্দান্ত ন্যারেটিভে তার গল্প বেড়ে ওঠে। সংলাপের যে ফরমেট আমরা বহুকাল ধরেই দেখে আসতেছি সেটা না করে তার এই সীমিত আকারের সংলাপ থাকে গল্পের বর্ণনার ভিতরে।
পাঠক বইটা হাতে নিয়ে যদি শুধু পৃষ্ঠা উল্টে যান তাহলে মনে হবে একটানা দীর্ঘ বর্ণনায় আক্রান্ত লেখা। সত্যি বলতে পুরো লেখায় হাতে গোনা কিছু সংলাপ। ইমতিয়ার শামীমের লেখার ধরনই এমন। অনেকের হয়তো ভালো লাগে না ব্যাপারটা। তবে একটানা বর্ণনা সাথে রূপকের সমাহারে গদ্যের শরীরে কাব্যের ইঙ্গিত আমাকে খুব সহজেই ইমতিয়ার শামীমের ট্রেডমার্কের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। "খোয়াব রন্ধন সংবাদ" ও ঠিক তেমনি একটি গল্প। ন্যারেটিভ বর্ণনায় তিনি ধীরে ধীরে গল্পে ডালপালা মেলে ধরেন, একটি চরিত্র এবং তার কথোপকথনে তৈরী হয় আরো অনেকগুলো চরিত্র।
পাঁচ.
ইমতিয়ার শামীমের সাহিত্য প্রস্তুতি খুব সবলভাবেই প্রতিয়মান তার সব লেখায়। তিনি তার লেখায় বানান এবং অন্য সকল বিষয়েই খুব সাবধানী। সে কারনে তার লেখায় নামের ভুল অথবা বানান ভুলও পাওয়া যায় না। তবে "খোয়াব রন্ধন সংবাদে" তিনি চোখে পড়ার মতোই একটা ভুল করেছেন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আহসানের "সালমান শাহ্'র খু/নের দায়ে ফাঁ/সি হবে কিনা এবং ঐশ্বরিয়া রাই এর সাথে বিয়ে হবে কিনা" ভাবনায়"সালমান শাহ্" এর জায়গায়"সালমান খান" হবে।
তবে যদি লেখক আহসানকে "নায়কোচিত কোন চরিত্র নয়" এবং মফস্বলের বাসিন্দা হবার কারনে তার অজ্ঞতাকে ফঁটিয়ে তুলতে ইচ্ছেকৃতভাবে এটা করে থাকেন (যেটার সম্ভাবনা আমার মতে এদমই ক্ষীন) -তাহলে সেটাও দারুন বুদ্ধিদীপ্ত একটি কাজ হবে। তবে আহসানের মতে এই মফস্বলে "ষ্টিফেন হকিং" এর নাম হয়তো সে একা জানে - এই ভুল দাবির প্রেক্ষিতে তার উক্ত নামদুটো সম্পর্কেও পরিচিতি থাকা স্বাভাবিক। সে কারনে এটা বইয়ের এবং লেখকের ভুল বলে ধরে নেয়া যায়।
ছয়.
ইমতিয়ার শামীর তার নিজের লেখালেখি প্রসঙ্গে কোন এক ফিচারে শুরু করেছিলেন এভাবে:- "সমতলের আমরা সমুদ্র আর অরণ্যের স্বাদ পাই শ্রুতির অনুষঙ্গে।" আর পাঠক আমরা ইমতিয়ার শামীমের লেখার ঘ্রান পাই তাঁর আখ্যান বুননের শিল্পসিদ্ধির পরিচয়ে। তার রূপকের কাব্যিক বর্ণনায়। উপন্যাসের আকর্ষণ তাই এর চরিত্রচিত্রণ এবং ন্যারেটিভে।
"খোয়াব রন্ধন সংবাদ" ঠিক এমনি এক উপন্যাস। এই গল্পের জগৎ খুঁজতে এদিকওদিক যাওয়ার দরকার নেই পাঠকের। এই গল্পের উৎসমূল পাঠক খুঁজে পাবেন নিজের মধ্যে, চারপাশের সবকিছু জুঁড়ে। আহসান এবং তার মানসিক টানাপড়েনের এই চিত্র আমাদের ভেতরকার খুব স্পষ্ট অথবা অবচেতন মনেরই প্রকাশ। তাই কোন চরিত্রই আমাদের সামনে হুট করে সারপ্রাইজিং কিছু হাজির করে না, বরং আমরা যেন আগে থেকেই প্রস্তুত এই সকল দৃশ্যে। মুগ্ধতা এখানে যে, আমরা সেই কথাগুলো হয়তো শব্দে প্রকাশের বা সামনে ফেস করার উপলক্ষ পাই নি। অথবা করা হয়নি। "খোয়াব রন্ধন সংবাদ" আমাদের সেই কথাগুলোর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।
"খোয়াব রন্ধন সংবাদ" লেখকের গভীর অভিনিবেশ এবং পাঠকের কৌতূহলের দারুন এক যেগাসূত্র।
সাত.
"খোয়াব রন্ধন সংবাদ" যেন উস্কেখুস্কে চুলোর মতো। যে গল্পের শেষ প্যারাটা চিরুনির শেষ আঁচড় - যার স্পর্শে গল্পটা হয়ে ওঠে পরিপাটি চুলোর মতো। এই উপন্যাস একটু ধৈর্য্য ধরে পড়লে পাঠক মুগ্ধ হবেন শেষটায়।
এইবইটা আমাকে খেলারাম যা খেলে বইটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। যদিও মিল নেই বললেই চলে। তবুও ওই বইয়ের অনুভূতিগুলো এখন জড়ো হয়ে আছে। আমি এই বই না পড়লেও চলতো,এই বই না কিনে অন্য বই কিনলে পারতাম,এমন অনুভূতি। ইমতিয়ার শামীমের ধারালো লেখার ঝলক এই বইয়ে দেখা যায় না।
ওবায়েদ হকের মতো ইমতিয়ার শামীমের বইতেও আমার লিখনশৈলীর দিকে নজর বেশি থাকে। গল্পটাকে মনে হয় উপরি পাওনা। এই বইটাও মোটামুটি ভালোই। তবে গল্পের দৈর্ঘ্য অযথাই বাড়ানো হয়েছে যেন। সবমিলিয়ে উপভোগ করেছি বলা চলে।