Jump to ratings and reviews
Rate this book

হয়তো বলে কিছু আছে

Rate this book
মাহরীন ফেরদৌসের নির্মিত গল্পগুলো আধুনিক। স্বতঃস্ফ‚র্ত ভাষাশক্তিতে পূর্ণ। তবে সেখানে গড়পড়তা আনন্দের চেয়ে সূক্ষ্ম বিষাদ ও গাঢ় শূন্যতা প্রবল। প্রতিটি স্বতন্ত্র গল্প যেন মানুষের অভ্যন্তরের বেদনা প্রকাশের মুক্তি দিয়ে জড়ানো। যেখানে একই সাথে বসবাস করছে ভয়, দ্বিধা, অপরাধ, প্রেম, ভুল ও প্রায়শ্চিত্ত। যেন মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে যাওয়া পৃথিবীর দমকা বাতাস এসে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে একদল মানুষকে। গল্পপাঠ যেসব চিন্তাশীল পাঠকের জীবনচর্চার অংশ, যারা নতুনতর ভাবনায় আক্রান্ত হতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য মাহরীন ফেরদৌস রচিত বিশেষ সংযোজন ‘হয়তো বলে কিছু আছে’।

104 pages, Hardcover

First published February 1, 2023

1 person is currently reading
83 people want to read

About the author

Mahrin Ferdous

8 books208 followers
Mahrin Ferdous is the author of eleven books across adult and children’s literature. Her fiction inhabits the border of surrealism and magic realism, where social upheaval collides with psychological dislocation and the hidden architectures of memory. Her stories blur reality and the uncanny, drawing readers into worlds that are unsettling yet deeply human.

In 2019, she was named one of Bangladesh’s five most promising young writers by Banglalink Telecom. She received the BRAC Bank–Samakal Literary Award in 2022 for her contributions to Bangla literature. Beyond her books, she serves as Vice President of the Pencil Foundation, a nonprofit dedicated to youth creativity and social engagement.

She now lives in New York, where she continues to write and work.

Email: mahrinauthor@gmail.com

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
14 (31%)
4 stars
23 (51%)
3 stars
8 (17%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 24 of 24 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
April 9, 2023
৩.৫/৫

বইয়ের বেশিরভাগ গল্পের পটভূমি আপাতভাবে অদ্ভুত, বিচিত্র বা অতিপ্রাকৃত উপাদানসমৃদ্ধ। কিন্তু এর মাঝে লুকিয়ে থাকা জীবনবোধ, হাহাকার, দোটানা, গূঢ় অভিলাষ, অস্তিত্বের সংকট নাড়া দিয়ে যায়। গল্পের মানুষগুলোও আমাদের খুব চেনা। চেনা মানুষদের নিয়ে অচেনা এক ভুবনে যাত্রা করেন মাহরীন ফেরদৌস।এই সবসম্ভবের ভুবনে ঘটে যেতে পারে যে কোনো কিছুই। ঘটনা অলীক হলেও বাস্তবের ভিত্তিভূমি ছেড়ে যান না লেখিকা। যে কারণে চরিত্রদের সাথে আমরা একাত্ম হতে পারি। কিছু গল্প সাদামাটা লাগলেও বইয়ের অধিকাংশ গল্প সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে, রূপক ও প্রতীকে ঋদ্ধ এবং উল্লেখযোগ্য। মেরিনার মেঘমালা, গন্তব্য ফিফথ এভিনিউ, তাহের ফিরে এসেছিল, অবিকল - গল্পগুলোর কথা বহুদিন মনে থাকবে।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
February 8, 2023
ছোটগল্পের কাজ বা পরিণতি যদি হয় মনে রেশ রেখে যাওয়া, ভাবনার খোরাক জোগানো, মাঝে মাঝে হাতের বইটা উলটে রেখে পাঠককে আনমনে লেখক/লেখিকার কল্পনার জগত বা অন্তর্ভেদী দৃষ্টির জগত থেকে ঘুরিয়ে আনতে- তাহলে আমি বলবো হয়তো বলে কিছু আছে ষোলো আনা সফল৷ মাহরীন ফেরদৌস আপুর ছোটগল্পের মুন্সিয়ানার সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম বলে নিজের এই মুগ্ধতায় অবাক হইনি অবশ্য। তৃপ্তি পেয়েছি৷ মোট বারোটা মনস্তাত্ত্বিক গল্প। বেশিরভাগ গল্পই মনোলোগ ধাঁচের। সংলাপের ব্যবহার পরিমিত৷ কিছু কিছু গল্প বাস্তবতার মাত্রা হারিয়ে জাদুবাস্তবতার দেয়ালে গিয়ে আঘাত হানে৷ বরফ ঢাকা শুভ্র আমেরিকান শহর, ফার্মগেট ওভারব্রিজ কিংবা নামহীন কোন এক শহরে আমরা ঘুরে বেডাই ইসাবেলা, তাহের, সামরিন, অনিয়া কিংবা মেরিনার মনের অলিগলিতে৷ এরকম বিষাদে ডুব দিতেও কেন যেন ভালো লাগে। মাঝে মাঝে গল্পকথকের(কিংবা লেখিকার) কিছু ভাবনা হুট করে অস্থির আঘাত হানে মনের পর্দায়৷
গল্পগুলো আবারো পড়ার মতন। পড়বো অবশ্যই। অধীর অপেক্ষায় পরবর্তী বইয়ের জন্যে।
Profile Image for Camelia kongkon.
29 reviews13 followers
February 14, 2023
"শেষ হইয়্যাও হইলোনা শেষ"।
রবিন্দ্রনাথের এই আজ্ঞা পালনে লেখিকা আসলেই সফল এইটুকু আমি একজন পাঠক হিসেবে নিঃসন্দেহে বলতে পারি।
.
আপনি ভাবতে ভালোবাসলে নাম দেখেই দুইমিনিট ভাবতে বসে যাবেন। আসলেই তো, "হয়তো বলে কিছু একটা থেকে যায় আমাদের চারিপাশে।" বই পড়ার শেষে আবারো ভাবতে বসবেন, গল্পগুলোও নামের মতোই কম আশ্চর্য-পূর্ন নয়।
একটি পরিপূর্ণ ছোটগল্পের বই। প্রতিটা গল্প ধরে ধরে আসলে বিশ্লেষণ করার মতো কিছুই নেই। কোনোটায় বিষন্নতা, কোনোটা সাইকোলজিক্যাল, কোনোটা হয়তো শুধুই আমাদের বাড়ি ফেরার পথে ঘটে যাওয়া গল্পের মতো, কোনো গল্পের শেষে আবার মনে হবে "হয়তো বলে কিছু আছে"।
"ইসাবেলা, গন্তব্য ফিফথ অ্যাভিনিউ, মেরিনার মেঘমালা, চৈতালি সন্ধ্যায় সামরিন, অবিকল" গল্পগুলো ছিলো সবচে বেশি অসাধারণ।
একটা বিচিত্র ঘোর লাগা জগতের দরজায় বসিয়ে গল্প শুনিয়েছেন(টেকনিক্যালি পড়িয়েছেন) লেখিকা। সে জগতে পরিনতিটা আনন্দের চেয়ে একটু বিষাদ আর শুন্যতা নিয়েই হয়। তবুও সে জগতের প্রতি ভালোলাগা কমে না।
এই জগত, যেখানে মেরিনাদের স্বপ্নেই অন্যকে খুন হতে হয়, যেখানে সামরিনে সামরিনে ছেয়ে যায় পৃথিবী, তাহেররা প্রতিনিয়ত মরে গিয়েও জীবন্ত হয়ে যায়, অথবা দুই চেহারায় ঘুরে বেড়ায় দুইবোন যারা চাইলেই পালটে নেয় নিজেদের জীবন....হয়তো সে জগতের অলিগলিতে আমরা খুঁজে পাই এমন সব বাড়ি যেখানে শান্তারা নিজেদের অকাল মৃত্যুর মুক্তি খোঁজে।
পরিনতি?
ওইযে প্রথমেই বললাম, শেষ হইয়্যাও হইলোনা শেষ।

মাহরিন ফেরদৌসের লেখা প্রথম পড়লাম। অরিগমির গোলকধাঁধায় পড়ার খুব ইচ্ছে ছিলো গতবছর, সম্ভব হয়নি। আপুর লেখার মন থেকে প্রশংসা করতে হয়। স্বতঃস্ফূর্ত লেখনি তার। এবং প্রতিটা গল্পই আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে হারুকি মুরাকামির স্টাইলে লেখা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। সেজন্য আরও বেশিই উপভোগ্য ছিলো গল্পগুলো। আসলেই এই "হয়তো" জগতের রেশ অনেকদিন ঘিরে থাকবে পাঠকদের মনে। লেখিকার জন্য শুভকামনা অনেক। পরবর্তীতে আরও এমন লেখার অপেক্ষায় থাকবো।
গল্প পড়তে যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য তৃপ্তির একটি বই হবে "হয়তো বলে কিছু আছে"।
হ্যাপি রিডিং❤️
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
May 2, 2023
৩.৫/৫
প্লট আহামরি তেমন না তবে গদ্যশৈলী মুগ্ধ করলো। লেখিকার বেশিরভাগ প্রধান চরিত্রই নারী। যার ফলে সে দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পগুলো দেখার সুযোগ হয়েছে। এমনিতে সব মিলিয়ে ভালোই লাগলো।
Profile Image for Monowarul ইসলাম).
Author 32 books177 followers
February 12, 2023
এই বইটা আমার- ঠিক এমন অনুভব হলো গল্পগুলো পড়ে। একবারেই সমালোচনার সুযোগ বোধ হয় নেই। আর নয়তো আমার ইচ্ছে নেই।
Profile Image for Zillur  Rahman Shohag.
46 reviews3 followers
February 18, 2023
মোটামুটি অর্থে সেই গল্পেই বুদ হওয়া যায় যেখানে অনুদিত হয় একান্ত ব্যক্তিগত নির্জনতা কিংবা অভিজ্ঞতার ভাষা। লেখক মূলত একজন গল্পসার্কাসের রিংমাস্টার। তিনি যদি বইয়ের মলাট উল্টে ঢুকে পড়া দর্শকরুপী পাঠকের মনস্তত্ত্ব একবার ধরে ফেলতে পারেন, তবে নি:সন্দেহে তিনি পাঠককে নিয়ে যাবেন সেই আকাঙ্খিত অভিজ্ঞতার পাহাড়চূড়ায়। “আছে কিংবা নেই” মানুষের জীবনের চূড়ান্ত একটা ডিসকোর্স প্রতিনিয়ত যার সাথে জুড়ে আছে “আশাবাদ” ও “নৈরাশ্যবাদ” নামক ফ্লিপিং কয়েন। মানুষ জীবনভর এই দু’য়ের যে কোন একটার চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছতে চায়। “হয়তো বলে কিছু আছে” গল্পগ্রন্থের নামকরণে সেই ফ্লিপিং কয়েনের আশাবাদমুখী যাত্রার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

যেহেতু মলাট উল্টে গল্পের ভেতর ঢুকে পড়তে কোন পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না, সেক্ষেত্রে শুরুতেই বলা যায়
গল্পকার মাহরীন ফেরদৌস একজন যথার্থ রিংমাস্টার। গল্পসার্কাসে ঢুকে পড়া পাঠকদের মনস্তত্ত্বটা তিনি বেশ ভালোভাবে জানেন বলেই সহজেই নির্মাণ করে ফেলেন তার গল্পের জগত যেখানে কল্পনা ও বাস্তবের মিশেলটা হয় যথাযথ।

সচেতন পাঠকমাত্রই বারবার অদ্ভুতসব প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন যেমন মৃত মানুষেরা কি ফিরে আসতে পারে জীবিতদের ভীড়ে? কিংবা একজন মানুষ সত্যিই কি পারে স্থান-কালের প্যারাডক্স ভেঙ্গে তার একাধিক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে? পরিনতি এড়াতে চাওয়া মানুষগুলো হুটহাট ঢুকে পড়বে অন্যকারো দু:স্বপ্নের ভেতর আর এখানেও খুঁজে পাওয়া যাবে জীবনের বদলে জীবন ফিরে পাবার সেই আদি মিথ।

কখনো কখনো ক্লান্তি আসবে যা খুবই স্বাভাবিক। কেননা যাপিত জীবনের একঘেয়ে দিনলিপির পুনরাবৃত্তি থেকে মুক্তি পেতেই না পাঠক সাগ্রহে ঢুকে পড়তে চায় গল্পের জগতে? আবার কখনো কখনো গল্পের গোলক ধাঁধায় আটকে পড়া পাঠকের কেউ কেউ হয়তো জপমন্ত্রের মতো আওড়ে যাবে অ্যাডগার অ্যালান পোর কবিতা।
All that we see or seem
Is but a dream within a dream

জীবন মূলত এক দীর্ঘ ভ্রমনবৃত্তান্ত । আর এই দীর্ঘযাত্রায় ইচ্ছা বা অনিচ্ছার চোরাবালিতে ডুবে যেতে যেতে মানুষ মূলত ভালোবাসে আশাবাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে। ইসাবেলা, গন্তব্য ফিফথ অ্যাভিনিউ, মেরিনার মেঘমালা, চৈতালী সন্ধ্যায় সামরিন, স্মৃতিচিহ্ন শিরোনামের গল্পগুলো সত্যিকার অর্থেই শক্তিশালী। লেখকের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেই নির্দ্বিধায় ঢুকে পড়া যাবে “হয়তো বলে কিছু আছে” গল্পগ্রন্থের যাদুকরী জগতে।
Profile Image for আহসানুল করিম.
Author 3 books27 followers
March 10, 2024
মাহরীন ফেরদৌসের “হয়তো বলে কিছু আছে” পড়ছিলাম । ছোটগল্পের কালেকশন। মানুষের মনের ভয়, দ্বিধা, নিশ্চয়তাবোধ, নাজুকতা, একাকিত্ব, আফসোস, আশা-নিরাশা এরকম নানারকম বিষয়াশয় নিয়ে সব গল্প। বাস্তবের সীমারেখায় থেকে হয়ত সবটা গল্প কখনোই বলা যায় না। মানুষের গহীন অভিজ্ঞতার কথা হাজারো মানুষের সাথে কমিউনিকেট করতে অনেকগুলো দেয়াল ভাঙা মনে হয় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। এরকম একটা চেষ্টা চোখে পড়ে বইয়ের গল্পগুলোতে।

হয়তো এসব গল্পের চরিত্ররা বাস্তবে একজিস্ট করে কোথাও। লেখক তাঁর বাস্তব জীবন থেকেই হয়তো তুলে এনেছেন এদের। ‘হয়তো’ নামের কোন মহাজাগতিক হাতুড়ির আঘাতে বাস্তবের দেয়াল ভেঙে সেইসব চরিত্রের গল্পে যা বলার ছিল তা বলে যাওয়া হয়েছে।

ওলগা তোকারচুকের একটা উপন্যাস পড়ছিলাম বেশ কিছুদিন আগে যেটা শেষ করা হয়ে ওঠেনি। ড্রাইভ ইওর প্লাউ ওভার দ্য বৌনস অফ দ্য ডেড। উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট মহিলাটি তার এক প্রতিবেশি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন যে তার প্রতিবেশি একজন সাহিত্যিক। একারণে তিনি তাকে এড়িয়ে চলতে চান। তার মাঝে একটা ভয় কাজ করে লেখককে (সাধারণভাবে সব লেখকদের নিয়ে) ঘিরে। ভয়টা হল এরা আশপাশ থেকে অর্থাৎ বাস্তব জীবন আর সেই জীবনে যেসব মানুষের আনাগোনা আছে সেখান থেকেই লেখার চরিত্র আর উপাদান খুঁজে নেয়। উপন্যাসের সেই চরিত্রটির ভয় ছিল, বাস্তব থেকে এটাওটা নিয়ে লেখার সময় বাস্তবের জটিলতার সবটুক এরা ধরতে পারে না। তাই সরল করে তাদের লিখতে হয়। একারণে তিনি সেই লেখিকার লেখার কোন চরিত্র হয়ে উঠতে চাইতেন না বা এরকম কিছু ছিল বিষয়টা। গল্পগুলো পড়তে পড়তে কেন জানি না উপন্যাসটির সেই চরিত্রের কথা মনে এলো, অপ্রাসঙ্গিকভাবে।
Profile Image for Shoroli Shilon.
164 reviews71 followers
July 17, 2023
কুৎসিত এক শব্দ, "হয়তো"। শব্দটাকে ভাঙলে এর মানে দাঁড়ায় উভয়সংকট। হয় তীরে এসে তরী ডুবাবে নয় কোনো একটা মিরাকল ঘটাবে। এই শব্দটাকে কেউ উচ্চারণ করলে আমি যেমন ভয়ে ভয়ে গিলে ফেলি লেখিকা ঠিক সেভাবে কিছু গল্প বলে গিয়েছেন!

"হয়তো বলে কিছু আছে" ছোটগল্প সংকলন। ব্যাতিক্রমধর্মী সব ক'টা গল্প। এর আগে লেখিকার অরিগামির গোলকধাঁধা পড়েছি। সাধারণত বেশি এক্সপেকটেশন নিয়ে বসে থাকার কথা। কিন্তু সেটা করিনি কারণ অতিরিক্ত আশা পরবর্তীতে যে বই পড়া হয় সে বইয়ের ইভ্যালুয়েশন ঠিকঠাক ভাবে করতে দেয় না। আর ছোটগল্পের বিশ্লেষণ করা বেশ কঠিন। পুরো বই মিলিয়ে যদি একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া থেকে যায়। শেষমেশ বইয়ের তকমা লাগিয়ে দিতে হয় 'এভারেজ'! আমিও তেমনটাই করতাম তবে "বোকামানুষি", "চৈতালি সন্ধ্যায় সামরিন", "স্মৃতিচিহ্ন" শিরোনামের গল্পগুলো সেটা অনেকটা বাঞ্চাল করে দিলো। বিশেষ করে "বোকামানুষি" গল্পটাতে লেখিকাকে একটু নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম। "মেরিনার মেঘমালা" গল্পটাতে যে সুরিয়্যালিজম ব্যাপারটা দেখা গিয়েছে সেটা জুঞ্জি ইতোর একটা গল্পের ছায়াতলে উঠে এসেছে কিনা তাতে সন্দেহ থেকে যায়।

আর কিছু কথা থাকে না? যে কথাগুলো শুনলে মনে হয়, 'আরেহ এই কথাগুলো তো আমার!' অন্য কেউ কীভাবে জানলো? লেখিকার লেখা আমার কাছে ঠিক এমন অনুভূতির জানান দেয়। প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া সুন্দর, সূক্ষ্ম অভিব্যাক্তি খুব গুছিয়ে লিখে ফেলেন তিনি। মনে হয় যেন একদম নিজের কায়দার বই!
Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
March 8, 2023
কোনো বই খুব বেশি পছন্দ হলে সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারিনা। ভয় হয়। এই বুঝি আমার অগোছালো কিছু মন্তব্যে বইয়ের সৌন্দর্যহানি হলো। মোট বারোটা মনস্তাত্ত্বিক গল্পের সংযোজন "হয়তো বলে কিছু আছে" ঠিক তেমনই একটা বই। কিছু বই আছে সাইজে ছোট,পৃষ্ঠা সংখ্যাও কম কিন্তু একটানা পড়ে ফেলা যায় না। পৃষ্ঠায় আঙুলের সবক রেখে উদাস হয়ে ভাবতে হয়, কিছু লাইন বারবার পড়ে মনে মনে আওড়াতে হয় কবিতার মতো। আর পড়া শেষ করে মন কেমন করা একটা অনুভূতি নিয়ে ভাবনার দোলাচালে দুলতে হয় আরো কিছুক্ষণ। হ্যাঁ। এটা ঠিক তেমনই একটা বই।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
March 5, 2023
"হয়তো বলে কিছু আছে" একটি ছোট গল্পের সংকলন। লেখক মাহরীন ফেরদৌস। উনার লেখা এইবার প্রথম পাঠ করলাম। ঋজু গদ্য। ফলে,ধুমকেতুর গতিতে পড়ে ফেললাম। ভালোই।
Profile Image for Mahrufa Mery.
201 reviews115 followers
December 16, 2025
খুব ভাল লেখনি। বইমেলায় নারী লেখকের বই আলাদা ভাবে নজর করে খুজি আমি । মাহরীন ফেরদৌসের নাম জেনেছিলাম বইমেলা চলাকালীন জলজ লকার বই সংক্রান্ত প্রচারণার সময়। এত প্রচারণা চলেছিল যে, মনে হয়েছিল এই লেখকের আগের লেখা বই দিয়ে শুরু করা যাক , তাই কৌতুহলবশত এ বইটা কেনা। একদমই হতাশ হতে হয়নি, গল্পগুলো স্বার্থক, ক্ষেত্র বিশেষে মনে দাগ কেটেছে যেটা ছোটগল্পের কাছ থেকে প্রত্যাশাই থাকে তেমন। প্রত্যাশা পূরণ হওয়াতে এবং নারী লেখক কোটায় আলাদা মুগ্ধতা কাজ করাতে খুশি হয়ে এক স্টার বেশি দিয়ে দিলাম। লেখকের কাছ থেকে প্রত্যাশার একটা বেঞ্চমার্ক সেট হল।
Profile Image for মোহতাসিম সিফাত.
180 reviews50 followers
November 11, 2025
আমরা গল্প পড়ি মূলত চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যাপিত জীবনের ঘটনাগুলোকে মর্মচক্ষু দিয়ে আরেকবার দেখার জন্যে। জীবন যেমন অপ্রত্যাশিত ও বৈচিত্রময়, গল্পেরও তাই শেষ নেই। অনাদিকাল থেকে মানুষ গল্প লিখছে, তাও এখনো নতুন ঘটনা, নতুন প্লটে গল্প লেখা বাকি আছে, ছোট গল্পের বিশেষত্বই সম্ভবত এখানে, নতুন গল্পের কোনো শেষ নেই, নতুন করে গল্প সব সময় বলা যাবে...
'জলজ লকার' উপন্যাস পড়ে ভালো লেগেছিল লেখিকার সহজ শব্দে সুন্দর উপস্থাপনায় গল্প বলা। 'অরিগামির গোলকধাঁধায়' পড়ে উনার ছোটগল্পের সাথে পরিচিত হয়েছি (মুগ্ধ হয়েছি বলা চলে)। এই বইটিতেও নিরাশ করেন নি লেখিকা।
সব সময়ের মানুষ মনে করে যে এই মুহূর্তে আমরা বিজ্ঞানের সর্বোচ্য শিখরে আছি এবং এই মুহূর্তে আমাদের হতাশার পরিধিও সর্বোচ্য অবস্থানে আছে। বর্তমান সময়ের মানুষের একাকিত্ব, অস্তিত্বের সংকট, আর মানবীয় চিন্তাধারাকে পুঁজি করে লেখিকা এই বইতে তাঁর গল্পগুলো সাজিয়েছেন। প্রায় গল্পই শহরকেন্দ্রিক, শহরের মানুষের মাঝে ডিপ্রেশনের বোঝাটা এক্টু বেশি কি না! (শেষ গল্পে একটা খাঁটি লাইন পড়লামঃ "মানুষ যত বেশি নির্ভেজাল আর পরিপাটি থাকে, তত�� সে হতাশায় ভোগে") একই সাথে গল্পগুলোতে উঠে এসেছে সামাজিক কিছু সমাধানহীন সমস্যা, আমরা যেসব চাইলেও কাটিয়ে উঠতে পারছি না, কিংবা চাইছি না। কিছু পরাবাস্তব এলিমেন্ট যোগ করেছেন কয়েকটা গল্পে, যদিও সেগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। মনোলগ ধাঁচের গল্পগুলো পড়তে পড়তে ভালো সময় কাটলো।
লেখিকার আরো গল্প পড়বার আশা থাকবে।
Profile Image for Enamul Reza.
Author 5 books174 followers
March 11, 2023
গল্পের বই থেকে আমাদের চাওয়ার পরিধিটা আসলে কে���ন? এর এক রকম উত্তর হয় না, সম্ভবত। তবে, গল্প পড়তে বসলে একটা বিষয় আমাদের মধ্যে কাজ করে, আমরা প্রস্তুতি নেই যে অনেক রকম চরিত্র ও তাদের জগতের সাথে কিছু সময় আমরা কাটাবো। সে সব জগতের ব্যপ্তি ক্ষুদ্র বা বিশাল হতে পারে, কিন্তু বেশি সময় আমরা পাবো না। অল্প সময়েই ওদের চিনে নিতে হবে, বুঝে নিতে হবে। আমরা অপেক্ষা করবো এমন কিছুর জন্য, যা আসলে আমরা নিজেরাও পরিষ্কারভাবে জানি না।

মাহরীন ফেরদৌসের নতুন গল্পের বই ‘হয়তো বলে কিছু আছে’ হাতে নিয়েও ঐ অনিশ্চয়তাবোধের বিষয়টা টের পেতে চাইছিলাম আমি। যেহেতু তার লেখা অনেক দিন ধরেই পড়ছি। এবং তার শেষ গল্পের বই 'অরিগামির গোলকধাঁধায়' বেশ ভালো লেগেছিল। কেননা, ঐ গল্পগুলোয় এক রকমের ‘অবলীলা’ ধরণের ব্যাপার ছিল, যেখানে বাস্তব-অবাস্তব অতি স্বচ্ছন্দে ব্লেন্ড হয়ে যেতে পারে। এবং, মনে হচ্ছিল মাহরীন আসলে এভাবেই তার গল্পবিশ্বের নির্মিতিকে আকার দিতে চান।

‘হয়তো বলে কিছু আছে’ পড়তে পড়তে পূর্ব-ধারণাগুলো বেশ কাজেও লাগছিলো। শুরুর গল্প ইসাবেলা নিয়েই বলি। তুষারের বর্ণনা, লেখকের মনোজগৎ, প্রবাসজীবনের নির্লিপ্তি - এই বিষয়গুলোর মাঝখানে আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি অনাহুত ইসাবেলাকে। ‘আত্মপরিচয়’ নামক উপজীব্য বিষয়টি এ গল্পে কাজ করতে গিয়েও ঠিক করে ওঠে না। শেষ পর্যন্ত গল্পটা এক ভুতুড়ে পরিণতি পায়।

কিন্তু 'আত্মপরিচয়' যে এ বইয়ের প্রায় কেন্দ্রীয় বিষয় হতে যাচ্ছে, তা বুঝতে আরও কয়েকটি গল্প পরপর আমাকে পড়ে নিতে হয়। পড়তে আমার আনন্দও লাগে।

গন্তব্য ফিফথ এভিনিউ একটা সাদামাটা গল্প থেকে শেষে গিয়ে যে বিষণ্ণ এক দার্শনিক লব্ধিতে পৌঁছে, তা প্রশংসার দাবিদার। সেই চিরায়ত প্রশ্নের সামনে দাঁড়াই আমরা - অতীত আর ভবিষ্যতের মাঝখানে ঝুলে থাকা মানুষের কি বর্তমান বলে কিছু থাকে?

তাহের ফিরে এসেছিলো চমকপ্রদ। তাহের কেনো বারবার ফিরে আসে গল্পের নায়ক জানে না। যেভাবে আমরা জানি না যে, কেনো আমরা এ জীবনে যা নিজেদের প্রাপ্য বলে মনে করি, অন্যেরা সেই প্রাপ্য ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একবার না, বারবার। কিন্তু, এভাবে না দেখেও গল্পটা পড়া সম্ভব।

মজার বিষয়, এসব গল্পের মাঝে ভুতুড়ে উপাদান মাহরীনের গল্পগুলোকে ছেড়ে যেতে পারে না। বরং আমি বলবো, মেরিনার মেঘমালা একটা খাঁটি ভৌতিক গল্পই হয়ে উঠেছে। একইভাবে, চৈতালি সন্ধ্যায় সামরিনকেও আরেকটু চেষ্টা করলে ভুতুড়ে গল্পের কাতারে নিয়ে আসতে পারতেন লেখক। কিন্তু, এই গল্পটিতেও আত্মপরিচয়ের সংকট কোনোভাবেই মনে হয় না পাঠকের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে।

আমি প্লট নিয়ে আলাপে যাবো না। অন্তর্গত বিষয় ধরে কথা বলি বরং। এ গল্পের নায়ক তার স্বাভাবিক ও সফল জীবন থেকে অস্বাভাবিক এক পরিস্থিতিতে ডুবে যেতে থাকে সম্পর্ক বিষয়ক জটিলতায়। নিজের স্ত্রী সামরিনের সঙ্গে তার সম্পর্কটা ঠিক কেমন, সে বুঝে উঠতে পারে না। তাই তার জীবনে একই সঙ্গে যেন কয়েকটি সামরিন এসে প্রবেশ করে। কোন সামরিন খুব বন্ধুবৎসল, কেউ তার প্রতি খুব যত্নবান, কেউ বা তার প্রতি বিরক্ত, কেউ অনেক অভিমানী। এত রকমের সামরিনের সামনে নিজের অবস্থান ঠিক বুঝে উঠতে পারে না গল্পের নায়ক। একটা ধাঁধাঁচক্রে পড়ে যায়।

তবে, প্রায় সব কয়টা গল্প ছাপিয়ে একেবারেই আলাদা এক শক্তিমত্তা নিয়ে যে গল্পটা দাঁড়ায়, তার নাম স্মৃতিচিহ্ন। আমার ধারণা, নারী-পুরুষের সম্পর্কের বিভিন্ন স্তর আবিষ্কারের অভিযাত্রী মাহরীন এই গল্পটিতে খুঁজে পেয়েছেন এক আশ্চর্য দ্বীপদেশ। মা-মেয়ের অসুখী সম্পর্কের সুতো ধরে পাঠকের যাত্রা শুরু হবে এমন কোথাও, যেখানে আলো আছে না অন্ধকার, ঠিক ঠাহর করা যায় না। এ গল্পে সমর্পণের প্রকৃতি, ভালোবাসাবাসিতে প্রত্যাশার ফলাফল, মাতৃত্বকে আরেক রকম আতশ কাচের নিচে ফেলে দেখার প্রচেষ্টাকে সফলই বলবো আমি। রীতিমত চমকে উঠতে হয় গল্পের একটা পর্যায়ে গিয়ে।

তবে, 'হয়তো বলে কিছু আছে' আমাদের এ পর্যন্তই দেখাতে পারে। শেষের দিকের গল্পগুলো যেন ঠিক সেই প্রথম গল্পের অনাহূত ইসাবেলার মত। এ বইয়ে কেউ ওদের চায় না। ব্যহত হয় এ বইয়ের Thematic Ambiance বা সুর। লেখকের প্রতি কিছুটা ক্ষোভও জাগে। সেই ক্ষোভ একেবারে শেষের গল্পটা, অবিকল-এ কিছুটা প্রশমিত হতে চায় যদিও।

সব মিলিয়ে এ বই নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। গল্পের শরীর ও চরিত্র নির্মাণে মাহরীনকে খালি চোখে চমকপ্রত্যাশীই মনে হয়। কিন্তু, ভিতরে ভিতরে তার শান্ত-নিমগ্ন অনুসন্ধিৎসাটাও টের পাওয়া চলে। এই সত্ত্বাটিকে লেখক বেশি যত্ন করবেন আগামীতে, এটা আমার আশা।
Profile Image for মারজানা সাবিহা.
3 reviews3 followers
Read
May 4, 2023
হয়ত বলে কিছু আছে- মাহরীন ফেরদৌসের গল্পগ্রন্থ। । বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় এই তরুণ লেখকের বারোটি গল্পে সাজানো বইটি প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের বইমেলায় কথাপ্রকাশ থেকে।
মাহরীন ফেরদৌসের গল্পগুলোতে বিষাদের ঘ্রাণ সুস্পষ্ট, ঠিক তেমনি বিভ্রান্তিরও। তার চরিত্রগুলো যেন দ্বিধার দোদুল্যমানতায় ভোগে, ঠিক তেমনি পাঠককেও দ্বিধার দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে দেয়। যা বুঝলাম ঠিক বুঝলাম তো, যা ভাবছি তাইই কি সত্যি? ভাবনার জগতে একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্নের মুখোমুখি হয় পাঠক- এমনও কি হতে পারে? হয়তো…কে জানে…হয়তোর জগতে সবই সম্ভব, গল্পগুলো পাঠকের মনে একটা সংশয়ের চারা রোপণ করে দেয়- হয়তো বলে সত্যিই কিছু আছে হয়তো…
মাহরীন তার বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন- একজন গল্পকার যখন গল্প লেখেন তখন তিনি চলে যান একটি ভ্রমণে। কখনো সেই ভ্রমণ হয় ভয়ংকর নৈরাজ্যের। কখনো-বা সেই ভ্রমণ হয় তীব্র বোধের কিংবা অবিমিশ্রিত ভালোলাগার। ঠিক একই কথা মাহরীনের গল্পের পাঠকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একটি গল্পের সাথে এগিয়ে যাওয়া একটি ভ্রমণের মতোই। যে ভ্রমণের পথে পথে আছে অনিশ্চয়তা, পথের বাঁকে রয়েছে অজানা চমক, অচেনা মুখ । এ এমন এক ভ্রমণ যেখানে পাঠক জানে না তার গন্তব্য। আঁচ করার উপায় নেই গল্পের ট্রেন কোন স্টেশনে থামবে। অথবা পাঠককে মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে গল্প কোনো অচেনা গন্তব্যে চলে যায়, দূর থেকে আর ঠাহর করবার উপায় থাকে না তার পরবর্তী যাত্রাপথ কেমন হবে। “গন্তব্য ফিফথ অ্যাভিনিউ” পড়ার পরে যেমন মনে হয়- আসলে কি এটুকুই গন্তব্য, না এর পরেও কিছু আছে? কখনো বা গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তার পাড়ি দিয়ে আসা পথটির চিহ্ন থাকে না। যেমন তাহেরের ফিরে আসার নেপথ্যের গল্পগুলো ধোঁয়াশার ঘেরা, গল্প শেষ হলেও তার পেছনের গল্পগুলি আমাদের অজানা থেকে যায়। শেষ হয়েও শেষ হয় না, ভাবনার খোরাক থেকেই যায় তাতে।
মাহরীনের গল্পগুলো মনস্তাত্ত্বিক। যতটা না ঘটনাবহুল, তার চেয়ে মনোজগতের ওলিতে-গলিতে ঘোরাঘুরি তার বেশি। তরতরিয়ে কাহিনির ডালপালা বেয়ে এগোনোর চেয়ে ভাবনার মালমশলা বিছিয়ে দুদণ্ড ভাববার আয়োজনই এখানে জোরালো। তার গল্পের চরিত্রদের মনোভূমি কিছুটা জটিল, কিছুটা ধোঁয়াশা ঘেরা। অথবা একটি সরল চরিত্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় জটিল কোনো একজন। যেমন “ইসাবেলা” গল্পের গল্পকথকের সাথে যে মেয়েটি দেখা করতে আসত, গল্পের শেষে সে বিরাট একটি প্রশ্ন রেখে যায় পাঠকের জন্য।
কিছু গল্প চেনা মনে হতে হতেই ছুঁয়ে ফেলে জাদুবাস্তবতার সীমানা। সে আর পাঠকের সহজ বোধগম্যতার নাগালে থাকে না, তাকে বুঝতে কল্পনার ডানা একটু বেশিই মেলতে ���য়। “চৈতালী সন্ধ্যায় সামরিন” গল্পটিও পাঠককে ঠিক সেভাবেই বিহবল করবে। কোন সামরিন আসল? কোন সামরিন গল্পকথকের হ্যালুসিনেশন, অথবা প্রত্যেকেই বিদ্যমান বাস্তবেই? অথবা “মেরিনার মেঘমালা” গল্পের মেঘে ঝুলে থাকা মেয়েটি, এবং তার হাতের আগ্রাসী ফাঁস দেওয়া দড়িটি, এক বিষণ্ণ ভাবালুতার মুখোমুখি করবে পাঠককে।
কয়েকটি গল্প সম্পর্কে আলাদাভাবে বলার তাগিদ অনুভব করছি। “বিষাদের ডাকনাম” গল্পটি ছোট হলেও চমৎকার, একটি বাড়ির অনুভূতিময় সত্তা বেশ বিশ্বাসযোগ্যভাবেই মনকে ছুঁয়ে যায়।
“স্মৃতিচিহ্ন” গল্পটির মা মনকে নাড়া দেয় বেশ। তাকে না পারা যায় অপছন্দ করতে, না পারা যায় মমতার চোখে দেখতে। ঠিক যেমন মা-ও পারেন না তার সাতাশ বছরের কন্যাটিকে মন থেকে গ্রহণ করতে, অথবা তার অস্বিত্বকে অস্বীকার করে উপেক্ষা করতে।
“বোকামানুষি” গল্পের শান্তার জন্য বিষাদে আক্রান্ত হতেই হয়। এমন এক সমাজ আমাদের, নিজের পরিবারও নিরাপদ নয় মেয়েদের জন্য। বরং পুরুষের কামলোলুপতার শিকার মেয়েটির কপালেই জোটে তীর্যক বাক্যবাণ অথবা দুশ্চরিত্রা খেতাব। আশ্রয়দানকারীর কুৎসিত স্পর্শের চেয়েও ভাইয়ের সহানুভূতিহীনতা তাই শান্তাকে কষ্ট দেয় বেশি। ক্লিষ্ট অপমানে আত্মঘাতি শান্তার প্রতিশোধপরায়ণতাকেও তাই সমর্থন না করে থাকা যায় না। যদিও –বা তা হয়ত কথকের কল্পনাতেই।
“মেয়েটি এসেছিল শরতের শেষে”-একটি সম্ভাব্য মিলনাত্মক গল্প। ভাবতে ভালো লাগে- গল্পের যেখানে ইতি টেনেছেন লেখক, সেখান থেকেই শুরু আর একটি নতুন গল্পের, ভালোবাসার হাত ছুঁয়ে দুটি হৃদয়ের কাছে আসার গল্প।
“এইটা তোমার গল্প কিংবা আমার”-পড়তে পড়তে শেষাবধি ইতিবাচক পরিণতির প্রত্যাশায় থাকলেও চমকে যেতে হয়। গল্পের বাঁকে এসে অদেখা শেষটায় চোখ বুলালে দুঃখবোধেরা ভিড় করে মনের ভেতর।
একজন মানুষ কীভাবে আরেকজনের মতো হয় হুবহু? আর এই অবিকল হয়ে ওঠার বিরক্তিকে ছাপিয়ে যখন জীবনকে অদল-বদল করে নেওয়ার ইচ্ছা জাগে, ভাবতে বাধ্য হই-এর পিছনের মনস্তাত্ত্বিক কারণটি কী? জীবনে কিছুটা বৈচিত্র্যের স্বাদ আনা? নাকি ক্লান্তি, ক্লান্তির অবিরাম ভার! “অবিকল” গল্পের শেষাংশ সহজে মেনে নিতে চায় না মন।
তবুও, হয়ত বলে কিছু তো থাকেই, সেই হয়তোর অমিত সম্ভাবনাই মাহরীন তার গল্পগুলোতে আমাদের দেখিয়েছেন। যে গল্প পাঠককে ভাবিত করেছে, চমকিত করেছে। শেষ কথাটিও লেখকের ভাষাতেই বলি- এসব গল্প বিশ্বাস করতে নেই। তবে কোনো কিছু অবিশ্বাস করার জন্য আগে তা জানাটা অত্যন্ত জরুরি।

Profile Image for চারুলতা আরজু.
Author 2 books12 followers
May 5, 2023
লেখক যখন শিল্পী কম শিক্ষক বেশী হয় তখন লেখায় শৈল্পিক সৌন্দর্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।অর্থাৎ যে লেখা কিছু শেখাতে যাওয়ার প্রয়াস নিয়ে লিখা হয় সেখানে সাহিত্যরস কমই থাকে। লেখা হবে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ ও দর্শন থেকে। তবে পরোক্ষভাবে পাঠক সব জায়গা থেকেই কিছু না কিছু শিখে থাকে । সেটা আমি অস্বীকার করছি না। আসলে, এ বিষয় নিয়ে দু কথা দিয়ে শেষ করা যাবে না। সেটা না হয় অন্য কোন সময় আলোচনা করা যাবে।

আজ আমি যে বইটি নিয়ে সামান্য কথা বলবো সে বইটির সাহিত্য রসে আমি মুগ্ধ। মাহরীন ফেরদৌসের ‘হয়তো বলে কিছু আছে’ গল্পগ্রন্থটি নিয়েই বলছি। লেখক এখানে বিষণ্ণতার সৌন্দর্য, শূন্যতার অতি শূন্যতা বোধ ও নির্জনতার কলহ নিয়ে চমৎকার বর্ণনাধর্মী বারোটি ছোট গল্প রচনা করেছেন। হয়তো অনেকেই জানতে চাইবেন নির্জনতার কলহ আবার কি জিনিস? নির্জন মানুষের জীবনে অনেক বেশী মৌন চিৎকার থাকে। অনেক বেশী দ্বন্দ্ব থাকে, কলহ থাকে, যা আমরা শুনতে পাই না, জানতে পাই না। সেই কলহের কথাই আমি বলতে চেয়েছি। । লেখক এখানে সেই শুনতে না পাওয়া কথাগুলো অর্থাৎ মনস্তত্ত্বের অতি সূক্ষ্ম অলিগলিতে বিচরণ করেছেন এবং সেই অচেনা, অজানা বিষয়গুলোই তুলে আনার চেষ্টা হয়তো করেছেন নিজের মত করে। আমার ধারনা লেখক তার সে চেষ্টায় যথেষ্ট সফলও হয়েছেন।
এখানে গল্পগুলোতে শুধুই আবেগ নয় বরং চিন্তার খোরাক রয়েছে। সমাজের সেই চেনা মানুষগুলোকে বিচিত্র ও ভিন্ন আঙ্গিকে রুপায়ন করতে মাহরীন ফেরদৌস যথেষ্ট দক্ষ, সেটা তার আগের গল্প পড়েও উপলব্ধি করেছি। যেমন এই গল্পগ্রন্থের ‘স্মৃতিচিহ্ন’ গল্পটিতে মা মেয়ের যে সম্পর্ক দেখা গিয়েছে তা হয়তো সচরাচর দেখা যায় না, বা দেখা গেলেও আমাদের গল্পকারেরা মাকে ভিন্ন আবেগেই ফুটিয়ে তুলতে ভালোবাসেন, কিন্তু মাহরীন এখানে ভিন্ন এক মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পাঠককে, যেখানে আবেগের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে নিষ্ঠা ও সততা চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে।

‘গন্তব্য ফিফথ অ্যাভিনিউ’ গল্পটি এসেছে লুবনার নির্জন জীবনের কিছু মুহূর্ত নিয়ে। এখানে সেই অর্থে গল্প নেই, বরং আছে জীবনবোধ। ড.কুমারের সাথে ক্ষণিক মুহূর্ত, কফি ও বৃষ্টিভেজা দিন পাঠককে ছুঁয়ে দিতে বাধ্য। কারণ তার বর্ণনা এতোটাই জীবন্ত যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। কিংবা ‘ইসাবেলা’ গল্পটি পড়লে মনোবিজ্ঞান হয়তো নানান থিওরি ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে সচেষ্ট হবেন। কিন্তু লেখক কোন ব্যাখ্যায় যায়নি। প্রকৃত পাঠক হয়তো এই গল্পের সাহিত্যরস উপলব্ধিই করবে, কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যাবে না। বরং ইসাবেলাকে নিয়েই ভাববে। হয়তো ভাববে, ‘ হয়তো বলে কিছু আছে’ , যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানে নেই।

এই গল্পগ্রন্থটির প্রতিটি গল্পই কম বেশী মনস্তাত্ত্বিক ও বর্ণনাধর্মী লেখা, যেখানে কাহিনীর চেয়েও জীবনবোধ ও সাহিত্যিক বর্ণনা প্রাধান্য পেয়েছে। বইটি প্রকাশ পেয়েছে কথাপ্রকাশ থেকে এবারের একুশে বইমেলায়। মাহরীন ফেরদৌসকে জানাই অভিনন্দন চমৎকার এই বইটির জন্য।
Profile Image for Shahriar  Fahmid.
113 reviews15 followers
May 2, 2025
ভেবেছিলাম তিন তাঁরা দেবো কিন্তু শেষের গল্পটা একবার শেষ করে আবার পেছনের পাতায় গেলাম, বিষয়টা কি হলো সেটা বোঝার জন্য। এজন্য চার তাঁরা না দেয়াটাই বরং খাপছাড়া।

ছোটগল্প আমার ইদানীং বেশ ভালো লাগে। অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু রেশ থেকে যায় প্রগাড় ভাবে। যদি পার্ফেক্ট ছোটগল্প বলি তাহলে সেটা “তাহের ফিরে এসেছিল"। ছোটগল্পের কাজ ছোট পরিসরে অনেকখানি গল্প বলা। সেই গল্পে কল্পনা থাকবে, লেখকের জীবনবোধ থাকবে, থাকবে দর্শন। ভাবনার উদ্রেক ঘটাবে। হুট করে এমনভাবে শেষ হবে যেন থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হয়, যেমনটা বসেছিলাম, “এইটা তোমার গল্প কিংবা আমার" পড়ার পর। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো অতিপ্রাকৃত জনরার গল্পগ্রন্থ তবে প্রথম গল্পটা ছাড়া কোনটাই অতিপ্রাকৃতের ছাঁচে ফেলা যাবে না। এক দুটোকে হয়তো জাদুবাস্তবতার কাতারে ফেলা যাবে। “বোকামানুষি” গল্পটা মাহরীন ফেরদৌসের ট্রেডমার্ক লেখাগুলোর সাথে মিলে যায়। আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কে ঘেরা মানুষগুলোর কুৎসিত আর নোংরা ফ্যান্টাসি কিংবা প্রোটাগনিস্টের কাপুরুষোচিত বোকামানুষি!

মেয়েদের বুকের ওপর ওড়না দিলেই বা কি! যার চোখ ও পর্যন্ত নামতে পারে, তার দৃষ্টি ওড়নার সুতোর বুনটকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কুরআনে হয়তো আল্লাহ এজন্য নারী-পুরুষ দুজনের করণীয় নিয়েই উপদেশ দিয়েছেন কিন্তু আমরা এক নারীর করণীয় নিয়েই ব্যতিব্যস্ত!

“চৈতালি সন্ধ্যায় সামরিন” কিংবা “অবিকল" দুটো গল্প পড়ার সময়ই মনে হয়েছে শেক্সপিয়ারের মিস্টেকেন আইডেন্টিটির কথা, যদিও অবিকলের সাথে এই থিমটা বেশি যায়। তবে প্রোটাগনিস্টের তিন ধরনের সামরিন কে দেখাটাকে আমার অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ কে দেখতে পাচ্ছে বলে মনে হয়েছে। অর্থাৎ তিন কালের তিনরকম সামরিন, একই সময়ে প্রোটাগনিস্ট একই পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন রোলে প্লে হতে দেখছেন। এটা নিতান্তই আমার উদ্ভট চিন্তা!

“পালট” গল্পটা ভালো লাগে নাই, জমে নাই “বিষাদের ডাকনাম!"

মাহরীন আপুর লেখা নিয়ে তো আলাদা করে কিছুই বলার নেই। আপু দূর্দান্ত লেখেন।

Ratings: 4/5
6:04 PM; Fri, May 2
1 review
December 23, 2023
"হয়তো" কথাটা আমরা ঠিক কখন বলি? কিংবা ভাবি!
হতাশা থেকে; নাকি স্বপ্ন দেখে নতুন আশা জাগাতে!
প্রায়ই কি আমরা হয়তো কথাটা দিয়ে নিজেদের স্বান্ত্বনা দেই না?
আবার এমনও হয়, খারাপ কিছু হবে জেনেও মনের মধ্যে আশা ধরে রাখি আর ভাবি হয়তো এমন কিছুই হবেনা, বেশি বেশি ভাবছি!
শব্দ একটিই "হয়তো" কিন্তু শব্দের ব্যবহার আমাদের বহুমাত্রিক অনুভূতি আর ভাবনার সাথে সম্পর্কিত। আর এই "হয়তো" শব্দ নিয়ে এতসব ভাবনা জন্মেছে কথাসাহিত্যিক মাহরীন ফেরদৌসের গল্পবই "হয়তো বলে কিছু আছে" বইটির নামকরণ দেখে। নামকরণের মত বই এর গল্পগুলো ও ‘হয়ত’ বলে আদৌ কিছু থেকে যায় কিনা এই বোধের বিস্তার ঘটায়।

খেলাচ্ছলে কিংবা নানা সময় একটা কথা আমরা বলে থাকি - ‘’আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখ?”
কিন্তু কথাটির আসল মর্মার্থ উপলব্ধি করেছি এই বই এর গল্পগুলো পড়ার সময়।
বিষয়টি হল – আমাদের প্রত্যেকের দেখার চোখ, উপলব্ধি করার জায়গা থেকে একদম আলাদা। একই জিনিস এই আলাদা সত্তার কারণেই কারও কাছে খুব ভাল লাগে বা লাগেনা কিংবা কারও কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়!
সুলেখিকা মাহরীন ফেরদৌস এর লেখার ধরন, দৃষ্টিভঙ্গি আর যে বোধ ‘হয়ত বলে কিছু আছে’ বই এর গল্পগুলোর মাঝে রয়েছে, সেই বিষয়গুলো পড়তে যেয়ে আমার অধিকাংশ সময় মনে হয়েছে আমি যা দেখি যেভাবে দেখি লেখিকা হয়ত তার আশেপাশের জগত সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখছেন।
মানুষ সাধারণত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখলে তৃপ্তি পায়, বইটিও আমাকে সেই তৃপ্তি দিয়েছে।
আলাদা করে বলতে গেলে বই এর ১২টি গল্পের মধ্যে ‘গন্তব্য ফিফথ এভিনিউ’ , ‘মেয়েটি এসেছিল শরতের শেষে’ ‘এইটা তোমার গল্প কিংবা আমার’ ‘তাহের ফিরে এসেছিল’ আর ‘অবিকল’ গল্পগুলোর রেশ মনে থাকবে বহুদিন এবং জীবনের নানা ঘটনায় ঘুরে ফিরে বই এর নামটা মাথায় ঘুরপাক খাবে – হয়ত বলে কি আসলেই কিছু আছে? কিছু কি থাকে?

Profile Image for Mamur Nur.
2 reviews1 follower
February 28, 2023
সন্ধ্যার এলোপাতাড়ি বাতাসে অপসৃয়মান আলোয় যে অদ্ভূত এক রহস্যময়তা কাজ করে- মাহরীন ফেরদৌসের লেখা কখনো সখনো সে অনুভূতি দেয়। ছোটগল্পের ব্যাপারে যে ছোট থাম্বরুল- যে ব্যাপ্তি কম হলেও রেশ রয়ে যাবে কিছুক্ষন, সেটি পূর্বের প্রকাশনাগুলির মত বারোটি ছোটগল্পের এই সংকলনটিতেও উপস্থিত। সেটি লেখকের ক্ষেত্রে আর একটু বেশিই গাঢ় কেননা খুব কমই পাঠককে তিনি গল্প শেষ করতে দিয়েছেন স্বস্তিতে।

গল্পগুলি পড়তে গিয়ে পাঠককে বেরুতে হয় মনস্তাত্ত্বিক যে ভ্রমনে, তাতে কখনো পথিমধ্যে এসে পড়ে ছোট শ্যাওলা ধরা বিষন্ন মফস্বল, অসীম দূরত্বের পরবাস, রূপালী জ্যোৎস্নায় নিঝঝুম রাত্তিরে হেঁটে যাওয়া মধ্যবয়ষ্কা নারী কিংবা অনেকদিনের অপেক্ষায় থাকা নিঃসঙ্গ বাস্তুভিটা। কিছু চরিত্রের জন্য গভীর মায়াবোধ হবে পাঠকের, কোনো কোনো চরিত্রকে মনে হবে নিদারূন যন্ত্রনার- বোঝার মত, কোনো চরিত্রকে দেখে মনে হবে- আরে, এ তো সেই বয়সেরই আমি! ব্যক্তিগতভাবে 'গন্তব্য ফিফথ এভিনিউ' ছিলো এ সংকলনে সবচেয়ে পছন্দের গল্পটি। স্থান ও কালের চকিত রদবদলে অনভ্যস্ত মন কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও অনুভূতিখানি পরিচিত হওয়ায় শেষমেশ এটিই হয়ে উঠেছে বেশি ভালো লাগার। বিষয়ের অভিনবত্বও ভাবনার খোরাক দেয়। কখনো সেটি মূল চরিত্রকে ছাপিয়ে পুণর্জনমের ঠিক বিপরীত ব্যাপারটির গল্পের নায়ক হয়ে ওঠায়, কখনো সেটি একটা আস্ত গল্পের ইতি টানা কোনো চরিত্রের নাম উল্লেখ না করায়; আর কখনোবা নিতান্ত এক জড়বস্তুর সাথে আষ্টেপৃষ্টে থাকা মানব অনুভূতির মিশেলে তাকে জান্তব করে তোলায়- অসাধারন!

'হয়তো বলে কিছু আছে' এর নামের মতই অসম্পূর্ণ, অব্যক্ত অথচ বাঙময় অনুভূতির- জিজ্ঞাসু ও কৌতূহলোদ্দীপক। শুধুমাত্র সব্যসাচী হাজরার করা প্রচ্ছদটি সহজ ও আরামদায়ক- শিল্পী একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন!
Profile Image for Tisha.
205 reviews1,118 followers
April 14, 2025
‘হয়তো’, শব্দটা কখনো একটা রহস্য, কখনো একটা উত্তরহীন প্রশ্ন আবার কখনো সম্ভাব্যতা। আর ‘হয়তো বলে কিছু আছে’ নামের এই বইয়ের গল্পগুলোতে রহস্য, উত্তরহীন প্রশ্ন, সম্ভাব্যতা সবকিছুরই উপস্থিতি আছে। সে হিসেবে বইয়ের নামকরণ একদম দশে দশ। এবার আসি গল্পগুলো কেমন লাগলো সে বিষয়ে। সোজা সাপটা কথায় ভালো লেগেছে, বেশ ভালো লেগেছে। গল্পগুলোর বিষয়বস্তু বেশ অন্যরকম, অদ্ভুত, রহস্যময়। সামনের পাতায় কি হবে এই ভেবে একের পর এক পাতা ওলটানো! আর শেষটুকু পড়ে নিজের মতো করে প্রশ্নের উত্তরগুলো তৈরি করে নিজেকে বলা, “হয়তো এরকম হয়েছিলো, না হয় সেরকম!” সোজা কথায় বেশ এঙ্গেজিং একটা বই। দুই একটা গল্পে একটু শাহাদুজ্জামান স্টাইল অনুভূত হয়েছে, বিশেষ করে তাহের ফিরে এসেছিলো গল্পের শুরুটায়। নেগেটিভ অর্থে বলছি না। একদমই অল্প সময়ের জন্য মনে হয়েছে। কয়েক লাইন পরেই আবার লেখিকার স্বকীয়তা ফিরে এসেছে। লেখিকার লেখা আগে পড়েছি ফেসবুকে এবং ব্লগে। বই এই প্রথম। সুন্দর, সাবলীল লেখার ধরণ। টানা পড়ে ফেলা যায়, ক্লান্ত লাগে না। সময়ের অভাবে আজকাল যে কোন বই পড়ে সময় নষ্ট করাটা বিলাসিতা মনে হয়। তাই গুডরিডসে ঢুঁ মারি রিভিউর খোঁজে। মাঝে মাঝে চমৎকার কিছু বই খুঁজে পাই। তবে তার মধ্যে হাতে গোনা অল্প কটাই থাকে নারী লেখকদের। এই যেমন এটা! :)
48 reviews
May 28, 2023
It may have happened, it may not have happened but it could have happened.
~Mark Twain

'হয়তো বলে কিছু আছে' - এই গল্পগ্রন্হে মোট ১২ টি গল্প আছে! প্রায় সবকটা গল্পই মনস্তাত্ত্বিক এবং অতিপ্রাকৃত ধাচের।
প্রথম গল্প "ইসাবেলা" র শেষটা ঠিক বুঝিনি। "গন্তব্য ফিফথ অ্যাভিনিউ", "পালট", "তাহের ফিরে এসেছিল", "চৈতালি সন্ধ্যায় সামরিন", "অবিকল" এইগুলো তেমন ভালো না লাগলেও বাকি গল্পগুলো ভীষণ সুন্দর।

"মেরিনার মেঘমালা" গল্পটা অদ্ভুত সুন্দর এবং শেষটায় কেমন রোমহষর্ক লেগেছে। সত্যি বলতে এটা পড়ে একটু ভয় ভয় করেছিলো! "স্মৃতিচিহ্ন", "বোকামানুষি", "বিষাদের ডাকনাম", "মেয়েটি এসেছিল শরতের শেষে", "এইটা তোমার গল্প কিংবা আমার" এই গল্পগুলোর জন্য বইটা আমার প্রিয় তালিকায় থাকবে।

"মাহরীন ফেরদৌস" - লেখিকা যে এতো সুন্দর লিখেন জানতাম নাহ। ওনার লেখা,বাচনভঙ্গি,শব্দশৈলী কেমন আরাম আরাম আর এতো গুছিয়ে লেখেন যে বইটা পড়ে সত্যি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছি। অনেকদিন পর একখানা ভালো ছোটগল্পের বই পড়লাম। আশা করি এমনই লিখে যাবেন।

চট করে পড়ে ফেলার মতো ছিমছাম একখানা সুন্দর মলাটের বই। একটানা পড়তে পড়তে বারোটা গল্প কখন শেষ হয়ে গেলো টেরই পেল���মনা। মনে হচ্ছিলো আরো কয়েকটা গল্প থাকলে কি দারুণ ব্যাপার হতো! রেকোমেন্ডেড!

রেটিং : ৪
Profile Image for Monisha Mohtarema.
86 reviews2 followers
February 19, 2023
'একটি গাছ যেভাবে মাটির অতলে শিকড়ের কারনে আটকা পড়ে থাকে,আমিও সেভাবে আটকে আছি।সবাই আমার শরীরটাকেই দেখছে আর ভাবছে আমি মুক্ত,বিচ্ছিন্ন।কেউ দেখতে পাচ্ছে না মাটির নিচে আমাকে আটকে রেখেছে আমার শিকড়!'

এই লাইন গুলো বইমেলায় সদ্য প্রকাশিত মাহরীন ফেরদৌসের বই 'হয়তো বলে কিছু আছে' বইয়ের 'স্মৃতিচিহ্ন' গল্প থেকে নেয়া।বাংলায় কিছু শব্দ আছে যা আমার ভীষণ প্রিয়;এই যেমন বিষন্ন সুন্দর!এই বইটা কিছুটা এরকম ই।কিছু কিছু গল্প মনকে ভাবায়,বিষন্ন করে তোলে।আর কিছু কিছু গল্পের রেশ শেষ হয়েও হয় না।কি সুন্দর সাবলীল লেখনি।একজন গল্পকারের সার্থকতা সেখানেই যখন পাঠক সেই গল্পগুলোর মধ্যে নিজর জীবনের কোন কিছুর প্রতিফলন দেখতে পায়।দু 'একটা গল্প আমার খুব কাছের মনে হয়েছে।মনকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে।যেমন 'এইটা তোমার গল্প কিংবা আমার' গল্পটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম।মনটা বিষন্নতায় ভরে গিয়েছিলো।আমরা যা ভাবি আর যা হয় তার উর্ধ্বে গিয়েও পৃথিবীতে হয়তো বলে কিছু আছে।এই হয়তো'র দোলাচলে আমরা ভাসতে থাকি আশা নিরাশার মাঝে।এইতো!

অনেকদিন পর একটা ভালো বই পড়লাম, ভালো লাগলো।হ্যাপি রিডিং!🌼
Profile Image for Rumnaz Fatema.
20 reviews9 followers
February 28, 2023
Commencing with an incredible story the book will allow you to ponder on what you have just read. The author has masterly captured the essence of writing short stories.
Profile Image for Jobaida Jui.
51 reviews3 followers
July 2, 2023
"একটা কথা চিন্তা করে দেখো,মানুষের নাম জীবন হয় কিন্তু কখনোই মৃত্যু হয় না।ইন্টারেস্টিং না?"


১২টি ছোটগল্প রয়েছে বইটিতে।
~চৈতালি সন্ধ্যায় সামরিন
~মেয়েটি এসেছিলো শরতের শেষে
~এইটা তোমার গল্প কিংবা আমার
এই ৩টি গল্প আমার বেশি ভালো লেগেছে।গল্পগুলো খুব আহামরি না কিন্তু তাও কেনো জানি পড়ে আরাম পেয়েছি।প্রতিটি গল্প আমাকে ভাবিয়েছে।মাহরীন ফেরদৌসের লেখা প্রথমবার পড়া হলো।এত গুছিয়ে কি সুন্দর লিখেন উনি! যাক এতদিনে তবে ভালো মানের লেখকের পাশাপাশি লেখিকার দেখা মিললো।লেখিকার আরেকটি জনপ্রিয় বই 'অরিগামির গোলকধাঁধায়' কোনো এক ফাঁকে কিনে পড়ে ফেলতে হবে।
Displaying 1 - 24 of 24 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.