শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ
|
জঙ্গলে জঙ্গলে
|
|
* Note: these are all the books on Goodreads for this author. To add more, click here.
“মায়ার্স-এর পদে এলেন অলিভার। তারপর এলেন ডাক্সবেরী, জুয়েল, বেনেট, বুনিন ও ইয়েগার। প্রথম তিনজন ম্যালিগনেন্ট ম্যালেরিয়াতে ভুগে ভুগে চলে যায়। এদের মধ্যে একজন ফেরার পথে ব্ল্যাকওয়াটারে আক্রান্ত হয়ে সমুদ্রবক্ষেই মারা পড়ে। মধ্যে ক্যাপলিন নামক এক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বিলাত থেকে বহু টাকা বেতন ও প্রথম শ্রেণীর ভাড়া দিয়ে আনানাে হয় ও তাঁর জন্যে একটি সুরম্য কুটির তৈরি করিয়ে স্বয়ং ডাফ্ সাহেব সহকারীসহ দরজা, জানালা ও থামগুলিতে রাত জেগে রঙ করেন। ততদিনে চাইবাসা হয়ে চক্রধরপুরে যাওয়ার উপযােগী মােটর রাস্তাও চালু হয়ে গেছে। ডাফ্ সাহেব তাঁর নিজের ভাল গাড়িটি পাঠালেন হাওড়া-নাগপুর মেন লাইনে, পাছে লােকটির রেলের গাড়ি বদল করতে কোন কষ্ট হয়। নতুন ম্যানেজারকে অভিনন্দন জানাতে কর্মীবৃন্দ জমায়েত হলাে। তিনি ডাফ্ সাহেবের সঙ্গে করমর্দন করে বাড়ি দেখতে চললেন।
সেদিনের ঘটনা বােসের কাছে শোনা। আমি দীর্ঘাকৃতি সদ্য বিলাত থেকে আসা গলদা চিংড়ি রঙের চেহারাটি কলকাতার দপ্তরে দেখেছিলাম একবার।
লােকটি নবরচিত আবাসটির সামনে থমকে দাঁড়িয়ে একবার মাথা নেড়ে বিনা বাক্যব্যয়ে গাড়িতে উঠে হুকুম করলেন, “যেখান থেকে এসেছি সেখানে নিয়ে চল।”
অন্য সাহেবরা তাে হতভম্ব। ড্রাইভার চক্রধরপুরের দীর্ঘপথে যাওয়া-আসা করে সন্ধ্যার সময় ফিরে এসে বললে, “সাহেব রেলওয়ে থানা কামরায় বিয়ারের বােতল খুলে বসে আমাকে বিদায় হতে বললেন।”
কোম্পানিকে ফিরে যাওয়ার জাহা ও গাড়ি ভাড়া ছাড়া আর কি গুনাগার দিতে হয়েছিল স্মরণে নেই।
যত কৃপণতা ভারতীয়দের বেলায়।”
― জঙ্গলে জঙ্গলে
সেদিনের ঘটনা বােসের কাছে শোনা। আমি দীর্ঘাকৃতি সদ্য বিলাত থেকে আসা গলদা চিংড়ি রঙের চেহারাটি কলকাতার দপ্তরে দেখেছিলাম একবার।
লােকটি নবরচিত আবাসটির সামনে থমকে দাঁড়িয়ে একবার মাথা নেড়ে বিনা বাক্যব্যয়ে গাড়িতে উঠে হুকুম করলেন, “যেখান থেকে এসেছি সেখানে নিয়ে চল।”
অন্য সাহেবরা তাে হতভম্ব। ড্রাইভার চক্রধরপুরের দীর্ঘপথে যাওয়া-আসা করে সন্ধ্যার সময় ফিরে এসে বললে, “সাহেব রেলওয়ে থানা কামরায় বিয়ারের বােতল খুলে বসে আমাকে বিদায় হতে বললেন।”
কোম্পানিকে ফিরে যাওয়ার জাহা ও গাড়ি ভাড়া ছাড়া আর কি গুনাগার দিতে হয়েছিল স্মরণে নেই।
যত কৃপণতা ভারতীয়দের বেলায়।”
― জঙ্গলে জঙ্গলে
“ফুটবল খেলার মরসুমে অনেকের সঙ্গে আলাপ হলো। টীমের প্রায় সকলেই ছিল ইংরেজ অথবা এ্যাংলো ইণ্ডিয়ান, কিন্তু পরিচালক ছিলেন জনৈক ভারতীয় অফিসার। একদিন কথায় কথায় জানতে পারলাম তিনি ছিলেন আমার দাদার সহপাঠী। স্কটিশচার্চ স্কুলে একসঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিয়ে বার্ড্ কোম্পানিতে চাকরি পান এবং অত্যন্ত অধ্যবসায়ের সঙ্গে ইংরাজী উচ্চারণ রপ্ত করেন।
আমাকে উপদেশ দিলেন, অফিসের ত্রিসীমানার মধ্যে যেন কোন কারণেই বাংলা ভাষায় কথা না বলি। বললেন, “উন্নতি করতে চাও তাে দেশী লোকেদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছাড়া কথাই কইবে না—কাজের কথাও বলবে ইংরিজিতে।”
― জঙ্গলে জঙ্গলে
আমাকে উপদেশ দিলেন, অফিসের ত্রিসীমানার মধ্যে যেন কোন কারণেই বাংলা ভাষায় কথা না বলি। বললেন, “উন্নতি করতে চাও তাে দেশী লোকেদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক ছাড়া কথাই কইবে না—কাজের কথাও বলবে ইংরিজিতে।”
― জঙ্গলে জঙ্গলে
“...কিন্তু প্রথম দিনই প্রশ্ন উঠলাে বেতন পাই সামান্য একশ’ টাকা, অঙ্গের বর্ণও শ্যাম, পােশাক অমসৃণ, অথচ ক্রাউন কলােনিতে জন্ম — নাম উঠবে কোন খাতায়? ইউরােপীয়, না ভারতীয়?
নির্দেশ এলাে আমাকে ইউরােপীয় কোঠায় ফেলা যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে আমার আর অন্য সাধারণ ভারতীয় সহকর্মীদের মধ্যে একটা বিচ্ছেদ এসে গেলাে। আমার দ্বিগুণবয়সী অধিকতর শিক্ষিত, তিনগুণ বেতনপ্রাপ্ত ওজস্বী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বড়বাবুর কাছে গেলে উঠে দাঁড়াতে শুরু করলেন। হিসাব বিভাগের সব চেয়ে সম্মানিত বড়বাবু জীবনকৃষ্ণ পাইন মহাশয় পর্যন্ত যখন কপালে হাত ঠেকিয়ে অভিবাদন করলেন তখন আমি বিচলিত হয়ে আমার মাতুল অধ্যাপক মন্মথ বসুকে বললাম। তিনি খুব খুশি হয়ে বললেন, “তােকে তাে খাতির করবেই, তুই তাে ব্রিটিশ বর্ন্।”
― জঙ্গলে জঙ্গলে
নির্দেশ এলাে আমাকে ইউরােপীয় কোঠায় ফেলা যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে আমার আর অন্য সাধারণ ভারতীয় সহকর্মীদের মধ্যে একটা বিচ্ছেদ এসে গেলাে। আমার দ্বিগুণবয়সী অধিকতর শিক্ষিত, তিনগুণ বেতনপ্রাপ্ত ওজস্বী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বড়বাবুর কাছে গেলে উঠে দাঁড়াতে শুরু করলেন। হিসাব বিভাগের সব চেয়ে সম্মানিত বড়বাবু জীবনকৃষ্ণ পাইন মহাশয় পর্যন্ত যখন কপালে হাত ঠেকিয়ে অভিবাদন করলেন তখন আমি বিচলিত হয়ে আমার মাতুল অধ্যাপক মন্মথ বসুকে বললাম। তিনি খুব খুশি হয়ে বললেন, “তােকে তাে খাতির করবেই, তুই তাে ব্রিটিশ বর্ন্।”
― জঙ্গলে জঙ্গলে
Is this you? Let us know. If not, help out and invite শ্যামলকৃষ্ণ to Goodreads.
