Md. Fuad Al Fidah's Blog

September 3, 2022

শুতেন দোওজি

জাপানের লোকগাথায় অনেক দানবই আছে। তাদের মাঝে সবচাইতে ভয়ানক এবং সবচাইতে অশুভের তালিকা করলে প্রথম দিকেই থাকবে শুতেন দোওজির নাম। ইয়োকাইদের মাঝে সে ওনি-তে পড়ে। তার নামের অর্থ—মাতাল পিচ্চি
ওনিরা সাধারণত অশুভ হয়, সেই সঙ্গে মারাত্মক হিংস্র। যেখানে ওনি আছে, সেখানে আছে রক্তপাত-হত্যা-মৃত্যু! চেহারা এমন ভয়ানক যে পিলে চমকে দেবার জন্য ওনিদের চেহারা দেখানোটাই যথেষ্ট।
জন্ম থেকেই ওনি ছিল না শুতেন দোওজি। তার মা ছিল মানুষ, আর মানুষ বাবা পেশায় ছিল এক স্থানীয় কামার। শুতেন দোওজির বাবা-মা বাস করত ওয়ানাউ শহরে। সেখানকার লোকে বলত: যদি তোচি মাছ কোনো গর্ভবতী নারী খায়, তাহলে ছেলেসন্তান হলে সে বড়ো হয়ে হবে ডাকাত। আর যদি মেয়ে হয় তো হবে গণিকা।
শুতেন দোওজির মা সেই মাছটি খায়, তারপর গর্ভে ষোলো মাস বহন করার পর জন্ম দেয় সন্তানকে। যখন শুতেন দোওজি জন্ম নেয় তখন তার চুল আর দাঁত পুরোপুরি গজিয়ে গেছে! মায়ের পেট থেকে বেরিয়েই সে হাঁটতে পারে, কথা বলতে শুরু করে পাঁচ-ছয় বছর বয়সি বাচ্চাদের মতো। শরীরের শক্তি আর বুদ্ধিমত্তায় হার মানাতো ষোলো বছরের তরুণকেও।
ছোটোবেলা থেকেই অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা আর প্রায় অপার্থিব শক্তির প্রমাণ দিয়ে আসছিল বলে আশপাশের সবাই তাকে বাঁকা চোখে দেখত, কথা বললেও বলত খোঁচা দিয়ে। এতটাই যে কালক্রমে সমাজের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেল ছেলেটা। এমনকী ছয় বছর বয়সে দেখা গেল—নিজের মা পর্যন্ত ওকে পরিত্যাগ করেছে!
তাই কিয়োতোর হেইয়ি পর্বতে গিয়ে যাজকের সহকারী হিসেবে নাম লেখাল শুতেন দোওজি। বলাই বাহুল্য, অন্যান্য সহকারীদের তুলনায় চটপটে আর শক্তিশালী ছিল সে। আর তাই একই ঘটনা ঘটল এখানেও—ওকে এড়িয়ে চলতে লাগল সবাই। আগেই ওনি বাচ্চা উপাধি পেয়েছিল, মন্দিরে এসে মদ্যপান শুরু করায়—যদিও তা যাজকদের জন্য নিষিদ্ধ—তার নাম হলো: শুতেন দোওজি বা মাতাল পিচ্চি।
এক রাতে, মন্দিরে তখন অনুষ্ঠান চলছিল, বেহেড মাতাল অবস্থায় উপস্থিত হলো শুতেন দোওজি। একটা ওনি-মুখোশ পরে, দুষ্টুমি করতে লাগল অন্য যাজকদের সঙ্গে। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে ভয় দেখাল, অদ্ভুত সব শব্দ করে তাড়া করল তাদের।
রাতের বেলা ঘুমুতে গিয়ে যখন চেষ্টা করল মুখোশটা খোলার তখন আবিষ্কার করল—কোনোভাবেই পারছে না; ওটা পুরোপুরি সেঁটে গেছে চেহারার সঙ্গে!
লজ্জায়-অপমানে মিইয়ে গেল বেচারা। এদিকে ওর শিক্ষক যাজকরাও খেপে গেছেন। মদ পান করার জন্য ইচ্ছেমতো বকতে লাগলেন তারা। হতাশ শুতেন দোওজি তখন পালিয়ে গেল পর্বতে, যেখানে না কোনো মানুষের সঙ্গে ওর দেখা হবে, আর না কথা হবে!
ক্রমেই মানুষের প্রতি বাড়তে শুরু করল তার রাগ। তাদেরকে নিজের চাইতে দুর্বল, বোকা...এককথায় তার শিকার বলে ভাবতে শুরু করে দিল। কিয়োতোতে বহুদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রেখেছিল সে, ইচ্ছেমতো খাবার আর মদ কেড়ে নিতো শহরবাসীদের কাছ থেকে।
ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে তার নাম, তখন দলে দলে আরও লোক এসে জড়ো হয় তার দলে। এরা ছিল চোর, ডাকাত, প্রতারক এবং অন্যান্য অপরাধী।
ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল শুতেন দোওজির ক্ষমতা। তবে জ্ঞানের অন্বেষণ চালু রাখল—যদিও সেই জ্ঞান ওকে নিয়ে গেল অন্ধকারের পথে। কালো জাদুতে দক্ষ হয়ে উঠল, শেখাতে লাগল অনুসরণকারীদের। ধীরে ধীরে পরিণত হলো পুরোদস্তর ওনিতে। অচিরেই দেখা গেল—ওনিদের আস্ত একটা দল ওর কথায় উঠছে-বসছে। তাদেরকে ব্যবহার করে কিয়োতোতে একরকম রাজত্বই করতে লাগল। ডেরা হিসেবে বেছে নিলো ও-য়ে পর্বত।
নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করল সে—রাজধানী দখল করে সম্রাট হবে! সেই সঙ্গে অত্যাচার তো চলছেই। ইচ্ছেমতো লোকজনকে ধরে এনে তাদের হাড়-মাংস-রক্ত খেতে লাগল তার দল, পান করল রক্ত! অচিরেই দেখা গেল, পঞ্চাশ ফুট লম্বা হয়ে গেছে তার দেহ; ত্বকের রং রক্ত লাল, মাথায় পাঁচটি শিং। চোখের সংখ্যা পনেরোটা, একটা পা সাদা আর অন্যটা কালো। হাতের একটা হলদে, অন্যটা নীল।
কিয়োতোতে এমন ভয়ংকর এক দানবের দৌরাত্ম্যের খবর পৌঁছল সম্রাট ইচিজোর কানে। বিখ্যাত এক বীর, মিনামোতো-নো-রাইকো-কে তিনি পাঠান তাকে দমন করতে। রাইকো তার চার সহকারী এবং ফুজিওয়ারা-নো-হোশো-কে নিয়ে রওনা দেন কিয়োতোর দিকে। তাদের হাতেই মৃত্যু হয় ভয়ানক এই ওনির । শুতেন-দোওজির কাটা মস্তক নিয়ে ফিরে আসে দলটা।
কিন্তু যেহেতু ওনির মাথাও অশুভ এবং অপবিত্র, তাই শহরের সীমান্তের বাইরে সেটাকে কবর দেওয়া হয়। Md. Fuad Al Fidah
4 likes ·   •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 03, 2022 00:24 Tags: ক-ম, জ-প-ন, প-র-ণ