Siam Mehraf's Blog
July 31, 2024
পাবলিসিটি স্ট্যান্ট কি?
অনেক বড় একটা ফেসবুক পেইজ একসময় মেন্টেইন করার কারণে অনেক পাবলিসিটি স্ট্যান্ট করা সেলেব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার আমি দেখেছি। কারো নাম নিয়ে কাউকে ছোট করাটা আমার উদ্দেশ্য না, তবে কিছু সত্য শুনে রাখলে ভবিষ্যতে বরং সবার উপকারই হবে। কারণ, এদের সবার সাইকোলজি প্রায় একইভাবে কাজ করে, এবং সুযোগ বুঝে এরা পল্টি মারতে এক সেকেন্ডও লাগায় না।
সরাসরি প্রসেসটা বলি এবার, প্রথমে একটা ভিডিও বানানো। সেই ভিডিও বানানোরও কিছু সিস্টেম থাকে। যেমন ধরুন, দামী ডিএসএলআরে ফুটেজ না নিয়ে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করা। এতে লাভ কি হয়? ভিডিওটা র্যান্ডমলি কোনো পেইজ থেকে যখন ছাড়া হয়, তখন এমন ক্যাপশন দিয়ে ছাড়া হয় যেনো এটা লুকিয়ে বাইরের কোনো মানুষের তোলা ভিডিও। ‘ভাইয়ের উদার মন’, ‘আপু অনেক ভালো’, ‘গরীবদের দেখলেই কান্না চলে আসে তার, তিনি আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু’, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিওটা নিলাম, একটা মানুষ কতোটা ভালো হতে পারে তা তাকে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না, রেসপেক্ট’ এই টাইপের ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটা বড় কোনো পেইজ টার্গেট করে ছাড়া হয়। আসলে নিজের পেইজে ছাড়লে নিজের মুখোশ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে পেইজের মালিককে টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয় পেইজে ভিডিওটা পাবলিশ করার জন্য।
এরপরে আরো কিছু ঘটনা ঘটে। এই ভিডিও নিজের পেইজে শেয়ার দিলে তো মান-ইজ্জত শেষ। তো এরপর কি করা যায়? এরপরে নিজের চ্যালাপেলাদের দিয়ে শেয়ার দেওয়ানো হয়। ভিডিও তো শেয়ার হচ্ছে, এখন নিজে থেকে ওখানে গিয়ে কমেন্ট করলে তো মানুষ ভাববে তাদের কাজ কর্ম নাই, মান ইজ্জতও যেতে পারে আবার। এর থেকে বাঁচার উপায় কি? লাগাও ট্যাগ! ওই পোষ্টগুলোতে তাদেরকে ট্যাগ করতে বলা হয়। এরপরে সেই সেলেব্রিটি ভাই বা আপু এসে কমেন্ট করেন, ‘ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ভাই, দোয়া করবেন যাতে মানুষদের পাশে এভাবেই থাকতে পারি’। এরপরে যেই পেইজ থেকে ভিডিওখানা ছাড়ালেন, সেখানে গিয়ে তারা একখানা কমেন্ট করেন, ‘আমি তো সারাজীবন বেঁচে থাকবো না, যতদিন বেঁচে থাকবো মানুষের জন্য করতে চাই। জানিনা এই ভিডিওটা কে করলো, তবুও ভালো কাজগুলো এভাবেই প্রমোট হতে থাকুক। সবাই ভালোবাসা নিবেন, আমার জন্য দোয়া রাখবেন।’ ওরে আমার দুঃখ আর ভালোবাসা! একেবারে উতলে পরতেছে! ওই কমেন্ট এখন আবার পিন করাও লাগে। যাতে ভিডিওখানায় ক্লিক করলেই, মানুষ সেই সেলেব্রিটির কমেন্ট খানা দেখতে পান। সেখানে সাধারণ মানুষেরা কমেন্টের রিপ্লাই করেন, ‘ভালোবাসা ভাই, বেঁচে থাকুন, এভাবেই করে যান।’
এরপর তার বদনখানি দেখে তার প্রফাইলে গিয়ে একটা ফলো দিয়ে আসে সাধারণ মানুষ, শেয়ারও দেয় ধুমায়ে, এই ভেবে যে মানুষটা অনেক ভালো! যেই মানুষগুলো ঠিকঠাক জানেওনা কি পরিমাণ গেইম খেলা হলো পুরো প্রসেসটায় তাদের সাথে, কি পরিমান বোকা বানালো হলো তাদের। এইরকম তথাকথিত সেলেব্রিটি দিয়ে আমাদের আশপাশ একদম ভরে আছে। একপাক্ষিক দোষ দেওয়া সম্ভব না, কারণ এতো সূক্ষভাবে মানুষের মস্তিষ্কের জায়গা নেওয়াটাই এদের কাজ। আমরা সাধারণ মানুষরা এই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি, এবং তাদের রেভিনিউ হতে থাকে আকাশ ছোঁয়া। যদিও তাতে কারোই কোনো সমস্যা নেই, যদি তারা সত্যিই সেই মানষিকতার হয়ে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো, যার উদ্দেশ্যই সৎ, সে কি এরকম পাবলিসিটি স্ট্যান্টের পার্ট আদৌতেও হতে চাইবে? চাইবে না।
পাবলিসিটি স্ট্যান্ট যখন বলছি, তখন আপনাদের বুঝতে হবে, ভালো কাজ প্রমোট করা এবং পাবলিসিটি স্ট্যান্ট দুইটা আলাদা জিনিস। একটা হচ্ছে ফেইমের লোভে কোনো কাজ ফেইক করে আপনার সিম্প্যাথি নিয়ে টাকা কামানো, ফেইম বাড়ানো, আরেকটা হচ্ছে মানুষকে ভালোর দিকে উৎসাহিত করা। আমি দ্বিতীয়টার পক্ষে, প্রথমটার নই। এবং আপনাকেও বুঝতে হবে, কাকে ফলো করবেন, কেনো করবেন। মনে রাখতে হবে, কোনো পাবলিসিটি স্ট্যান্ট করা কেউ যেনো আপনার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ফলো করাকে কেন্দ্রীভূত করে রেভিনিউ কামিয়ে, আপনার খারাপ সময়ে আপনাকেই লাত্তি মারতে না পারে, মানবতার ফেরিওয়ালা থেকে হুট করেই পল্টি মারতে না পারে। তাদের মাত্র একটা সেকেন্ড দরকার খোলস বা মুখোশ যাই বলেন সেটা পাল্টে ফেলতে। তাই আগেই সাবধান!!!
The post পাবলিসিটি স্ট্যান্ট কি? appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
January 11, 2024
কেমন গেলো আমার ২০২৩?
২০২৩ সালটা খুব বেশি একটা ভালো যায়নি আমার। বরং, গত কয়েকবছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময় যাওয়া বছরগুলোর একটাতে নিঃসন্দেহে জায়গা করে নেবে ২০২৩! পছন্দের সবগুলো কাজ থেকে দূরে ছিলাম প্রায় বহুদিন। এখনো আছি! তার মধ্যে লেখালিখি এবং বই পড়ার মতো প্রিয় দুটি কাজ থাকবে। তারপরেই থাকবে মুভি বা সিরিজ দেখা থেকে দূরে থাকা (যদিও এটার চাইতে উপরের দুটো আরো বেশি প্রিয় আমার)। এগুলোর থেকে দূরে থাকার কারণ যদি বলতে হয়, সেটা একাডেমিক প্রেসার, পারিবারিক কিছু সমস্যা ফেইস করা, মেন্টালি ডিস্টার্বড হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, কোনো কিছুতে খুব বেশি পরিশ্রম দিয়েও সেটাতে ভালো ফল না পাওয়ার উপর বর্তায়। এসব বলার কারণ হচ্ছে, এরকম বহু টুকিটাকি জিনিস আমাকে সবকিছু থেকে দূরে রেখেছে। সবগুলোরই পেছনের কিছু না কিছু লিখে রাখবো এখানে, যাতে সামনের দিনগুলোতে এগুলো আমাকে এই ভুলগুলো আবার করতে বাধা দেয়৷
এই বছরটার শুরু থেকেই আমি একটা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। যেখানে আমার কিছু না পাওয়া জিনিসকে আমি লিস্টে রেখেছিলাম, যা আমি অর্জন করতে চেয়েছি। যা পেতে চেয়েছি নিজের করে। কিছুই পাইনি! পাওয়ার জায়গাটা থেকে অনেক অনেক দূরেই আমার অবস্থান ছিলো পুরো বছর জুড়ে। জানুয়ারিতে লিট ফেস্ট দিয়ে শুরু আমার লিখে রাখার মতো জার্নি। ওহ হ্যা, বছরের শুরুর দিনটাই শুরু করেছিলাম আমার প্রিয় লেখকের বই (অগোচরা) পড়া দিয়ে এবং যথারীতি তার বই (কসমোজাহি) দিয়ে শুরু হবে আগামী বছরটাও। যদিও তার বই বের হওয়ার সাথে সাথেই পড়ে ফেলার আগ্রহ থাকে সবসময়, তবে উপরের সেই কারণগুলো আমার পথে আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ালো! তো এবার লিট ফেস্টে ফেরত আসা যাক! লিট ফেস্টে কিছু পরিচিত লেখকদের সাথে দেখা হলো আমার। তন্মধ্যে আমার প্রিয় লেখকও ছিলেন! এরপরে ফেব্রুয়ারীর পুরো বইমেলা জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো তো অন্যতম প্রাপ্তি ছিলো আমার। পেয়েছি কিছু প্রিয় লেখকদের পাশে থাকার সুযোগ, তাদের সাথে আড্ডা দেয়ার সু্যোগ, তাদের পাশে বসে চা-কফি খাওয়ার সুযোগ। কিছু প্রকাশক, কিছু না দেখা হওয়া পরিচিত মানুষদের সাথে সাক্ষাত থেকে শুরু করে বহু কিছুই ছিলো এই এক মাসে আমার প্রাপ্তি। মাস শেষে, অনেকগুলো বই হয়েছিলো আমার সঙ্গী। আর পুরো মেলার স্মৃতি! পেয়েছি দুজন খুবই কাছের মানুষ, যারা এখন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সময় সুযোগ পেলে, এখনো তাদের সাথেই আড্ডা আমার। এর গন্ডির বাইরে বের হতে চাইনি কখনোই। কারণ, অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো আমার সবাইকে, যেটার কোনো সঠিক উত্তর আমার কাছে ছিলোইনা। লিখিনা কেনো? লিখবো কবে? কি আমাকে আটকাচ্ছে? এইসব উত্তরের ভয়ে কোথাও পা রাখার সাহসটুকুও করতাম না। মেলা যাওয়ার পরে মায়ের অসুস্থ হয়ে যাওয়াটা আমাকে প্রচন্ডভাবে ভেঙ্গে দিয়েছিলো। সেই থেকেই আমার এই মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকার শুরু!
রমজানের প্রায় শেষের দিকে আমার বাসায় যাওয়ার কথা সেদিন। লঞ্চের টিকিটও কাটা আছে। জ্যাম হবে ভেবে আমি ২ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। হঠাৎই বাসা থেকে চাচার ফোন আসে। আমার মা অসুস্থ! হাসপাতালে ভর্তি! তার একটাপাশ পুরোপুরি অচল হয়ে আছে! আমি যেনো এখনই, বাস ধরে বাসায় চলে যাই! আমার সাথে ছিলেন আমার ফুপু-ফুপাও। আমার ইচ্ছে ছিলো তাদেরকে লঞ্চে পৌঁছে দিয়ে, আমি বাস ধরবো। কিন্তু তারাও আমার সাথে যেতে চাইলেন। এক প্রকার জোর করেই! “এখনই বাস ধরে বাসায় চলে যাই?” কথাটা ঠিক হজম হলোনা আমার। আমার পরিবারের সবাই জানেন, আমি মেন্টালি কতোটা উইক! তাই এসব বলে আমাকে থামাতে চাইছেন হয়তো, যাতে আমি ভেঙ্গে না পরি! এমনটাই ভাবতে লাগলাম আমি। মনে হলো, আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। আমি আবারও ফোন করলাম, আমার বোনকে চাইলাম। ওর মিথ্যে আমি ধরতে পারি। তবে ওর সাথে কথা বলে আমি বুঝলাম ও মিথ্যে বলছে না। আমি আম্মুর কাছে চাইলাম। তার সাথে কথা বললাম। একটু শান্ত লাগলো নিজেকে। পুরোটা তাও হতে পারছিলাম না। বাসে বসেই আজান দিলো মাগরিবের। সারাদিন প্রচন্ড গরমে রোজা রাখার পরে আমি একফোঁটা পানিও যে খাবো, সেই ইচ্ছেটুকুও আমার ছিলো না। আমি যখন বরিশালে গিয়ে, কেবিন রুমে পা বাড়াই, আমার মা সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন। নিজেকে কি পরিমাণ অসহায় লাগছিলো বোঝাতে পারবোনা। যারা এরকম পরিস্থিতিতে পরেছেন, তারা ঠিকই জেনে থাকবেন। এরপরের দিন আম্মুকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলাম, এখানে তার চিকিৎসা হলো এবং সে আগের চেয়ে সুস্থ বোধ করছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, সে অনেক দ্রুত রিকোভার করেছেন, যেটা আমাদের সবার কল্পনার বাইরে ছিলো। তবে মায়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে আমি সেইবার বুঝে গিয়েছিলাম, আমার কি করতে হবে, কি কি ধরতে হবে, কি কি ছাড়তে হবে, এবং আমার জন্য করণীয় কি! আমি সেই পথে হাঁটা ধরলাম। যদিও নিজের প্রিয় কাজগুলোকে ছেড়ে দেয়ার কাছে এই বিষয়টা একদমই সামান্য মনে হতে পারে, তবে আমার বিন্দুমাত্র রিগ্রেট নেই এই সিদ্ধান্তে। সেটা কখনো হবেও না। নিজের জন্য না হোক, অন্তত আমার মায়ের জন্য হলেও আমার জীবনটা গুছিয়ে নিতেই হবে। আমি সব থামিয়ে নিজের জীবনের দিকে তাকাতে শুরু করলাম, বাদ দিতে শুরু করলাম, নিজের জীবনের সবকিছু। শুধু আমার প্রিয় মানুষগুলোকে জিতিতে দিতে।
যদিও সেটুকু করতে গিয়ে মুখ লুকিয়ে চলতে হয়েছে অনেক, ওই প্রশ্নগুলোর ভয়েই। আবারও সেই একটাই কথা, জানি আমি উত্তর দিতে পারবোনা। মানুষ হাসবে, কারণ তাদের কাছে লজিক্যাল লাগবে না। কিন্তু ভেতর থেকে আমি কি নিয়ে ডিটারমাইন্ড ছিলাম, কেবল আমিই জানি। অনেকের সাথে কথা বলতে একটা ভয় কাজ করতো। আমার মনে হয়, প্রতিটা মানুষই জাজড হতে ভয় পায়, আমিও তেমনই। কিছু জায়গা, কিছু মানুষ, আর কিছু বাস্তবতা এড়িয়ে যেতে চেয়েছি। বিষয়টা এমন না, তাদের আশেপাশে যেতে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে, আসল বিষয়টা আমার ভয়। আমার মনে হয়, তাদের আশেপাশে থাকলেই আমি বরং আরও খুশি থাকি এবং থাকবোও। তবুও এই বিড়ম্বনা বলার মতো নয়। একাডেমিক বিষয়ের পিছনে দৌড়ে দৌড়েও শেষটা সুবিধার হলো না। ব্যাটে বলে মিললোও না। বারবার তারিখ পরিবর্তন হওয়াতে কোনো সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতেই পারছিলাম না আমি। যেদিকেই তাকাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো আর এক পা এগোলেই সামনে দাঁড়িয়ে আছে ব্যর্থতা। আমি তবুও সবকিছু মিলিয়ে চলার চেষ্টায় ছিলাম। সেখানেও ব্যর্থ। একাডেমিক দিকে এতোটা সময় ব্যয় করার পরেও আমার ফলাফল ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত। যেই ভয়টাই আমি করছিলাম! তবে টের পাচ্ছিলাম, সবকিছু থেকে ছিটকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম আমি। কিছু চাইলেও আঁকড়ে ধরে থাকার মতো নেই। সবদিক থেকেই আমার বিপদ আসন্ন। ঘোল পাকিয়ে ফেলায়, সবদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়। এবং আমার জীবনের এই নাটকীয়তায়, আমি ছিলাম কেবলই একজন নিরব দর্শক। যার কিছু করার ছিলো না!
কিছু মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে লাগলো, না চাইতেই। বছরের শুরুতে যেই সম্পর্ক ছিলো মজবুত, টাটকা এবং শক্তিশালী, বছর শেষ হতে না হতেই সেগুলো যেনো ভঙ্গুর হতে শুরু করলো। সবসময় একটা লাইন শুনতাম, ‘’কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর!” আসলেই তাই। আপনি আপনার প্রিয় মানুষদের যত কাছে যাবেন, বা তারা আপনার যত কাছে ঘেষবে, ততই একে অন্যের খুঁটিনাটি ভুলত্রুটিগুলো দেখতে পাবেন। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে, দূরে থাকার বিকল্প নেই বোধহয়। তবে মানুষ মাত্রই আমরা চাই কাছে ঘেষতে, তাই নয় কি? তাদের হয়তো, আচার-আচরণ থেকে শুরু করে মেন্টালিটিকে চিপ লাগা, আমাকে ছোট মনে হওয়া, অনেক কিছুই হয়েছে। তাদের জীবনের না পাওয়ার গল্পে হয়তো, “কারণটা আমি ছিলাম” ধরে নেয়া হয়ে গিয়েছে। আসলেও কি তাই ছিলাম? আসলেও কি তাদের কোনো কিছু না পাওয়ার পিছনে আমার হাত ছিলো? আসলেও কি আমি চেয়েছি, তারা হারাতে থাকুক? নাকি আমি সৎ ছিলাম? নিজের প্রতি? আমার চাহিদার প্রতি? যেটা আমাকে তাদের কাছে নিচু মানসিকতার বানিয়েছে দিনের পর দিন? ইচ্ছাকৃত ছিলো কিছু? মনে তো হয় না! আমি সৎ ছিলাম। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগার বিষয়ে। মানুষের ভালো লাগা, খারাপ লাগার সংজ্ঞা একেকজনের জন্য আলাদা, তাই না? তাদের কাছে আমার খারাপ লাগাটাকে ভালো মনে হলে, সেটা কি আসলেও আমার দোষ? একদমই না! আমার খারাপ লাগাটা আমারই। আমার খারাপ লাগে মানে, কারো কাছে ভালো লাগতে পারবে না এমনটা একদমই না। তবে তাই বলে, আমি নিশ্চয়ই নিজের মতামত জাহির করার জন্য খারাপও হয়ে যাইনা। অপরাধী হয়ে যাইনা। তাইনা? তবুও এই সমস্ত ক্ষেত্রে নিজের উপর ব্লেইম চাপিয়ে নেয়াটাই শ্রেয়। অন্তত, কারো উপর আমাকে আমার মতো না মেনে নেওয়ার কারণে দোষ বর্তায় না। তাই ভেতরে ভেতরে সেই ক্ষোভ কারো উপরে না থাকায় নিজেকে হালকাই লাগে বেশ।
এই বছরে পেয়েছি বহু শিক্ষা। সেই জিনিসগুলো অল্প অল্প করে লিখে না রাখলে বোধহয়, সামনের দিনগুলো একই ভুল আবার করে বসবো। তাই লিখতে হবেই। একঃ কিছু মানুষ হুট করেই আপনার প্রিয় হতে যেতে পারে। আপনি বুঝবেনও না কখন তারা আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে যাবে। তারাও জানবেনা, যে তারা ঠিক কিভাবে আপনার এতোটা কাছে চলে এলো! তারা আপনাকে সাহায্য করবে, বিপদ থেকে মাঝে মাঝে উদ্ধারও করবে। চেষ্টা করবে আপনাকে ভালো রাখার। অন্তত যতটুকু তাদের পক্ষে সম্ভব। দুইঃ আজ যার সাথে আপনার খুব ভালো সম্পর্ক, তারা সারাজীবনই একই রকমের থাকবে, একই রকমের এটেনশন দিবে, একই রকমের আগ্রহ দেখাবে কথা বলতে গেলেই এটা একটা মিথ। এটা কখনোই সম্ভব না। সিনেমায়, বা লেখায় এরকমটা বানিয়ে নেয়াই যায়। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। আজ যারা আপনার প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছে, ধীরে ধীরে আপনার কাছের একটা মানুষ হয়ে উঠেছে, কাল তারা আপনাকে অন্য চোখে দেখবে। তাদের জীবনের বহু ক্ষতির জন্য আপনাকে দায়ী হিসেবে ধরে নিবে। আপনার অনুভুতি কিংবা আপনার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে তাদের কাছে “টিপিকাল”, “ সিলি” ইত্যাদি লাগবে। তাদের মনে হবে, আপনি একটা নিচু মানসিকতার মানুষ। আপনার চিন্তা-ভাবনা, দুনিয়াকে দেখার চোখ, ইত্যাদি সমস্ত জায়গায় তারা ভুল খুঁজে পাবে। এবং আপনার কোনো খারাপ লাগাই তাদের কাছে জাস্টিফাইড হবে না। মোট কথা, তাদের কাছে আপনি দিনশেষে একটা খারাপ মানুষ হয়ে যাবেন। অথচ, শুরুর দিকে, তারা আপনাকে ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করতে পর্যন্ত পারতো না। এমনকি আপনিও না। তিনঃ না চাইতেও কিছু জায়গা থেকে আপনার দূরে সরে যেতে হবে। দেখবেন আপনার প্রায়োরিটি জায়গাটাতে কম। প্রথম দিকের মতো তো একদমই নেই। আপনি জানেনও না তারা কি প্রায়োটাইজ করে এখন। যেই জায়গাটাতে তাদের জীবনে আপনি ছিলেন, সেই জায়গাটাতে নিজেকে আর খুঁজে পাবেন না। শুধুমাত্র, আপনি আপনার নিজস্বতার কারণে তাদের চোখে বিষাক্ত হয়ে যাবেন। চারঃ অনেক মানুষকে আপনার কাছের মনে হতে পারে, তাদেরকে আপনার আপন মনে হতে পারে, এমনকি তারা সত্যি সত্যিই আপনার আপন হয়েও থাকতে পারে, তবুও নিজের মন খারাপ কিংবা নিজের ভেতরকার যন্ত্রণাগুলো সবকিছু তাদেরকে বলতে গেলে দিনশেষে আপনি একটা লাফাঙ্গা হয়ে যাবেন। আবারও, একই রকম ভাবে তাদের কাছে বিষয়গুলো জাস্টিফাইড হবে না, এবং তারা যথাযথ কোনো কারণ খুঁজে পাবে না, তাই তাদের কাছে আপনার শেয়ার করা বিষয়গুলো অতি সামান্য লাগতে পারে। যেটা আসলে আপনার জন্য এবং আপনার জীবনে অনেক বড় একটা বিষয়। তাদের কাছে সিলি হওয়া বিষয়টা আপনাকে ভীষণ রকমের কষ্ট দেয়। নিজের কষ্ট এবং মানসিক যন্ত্রণাগুলো একটু বুঝে শুনে শেয়ার না করতে জানলে, আপনি সামনের দিনগুলোতে অনেক বেশি যন্ত্রণায় থাকবেন। পূর্বের তুলনায় আরও আরও বেশি। যেই জিনিসটা আপনি কারো কাছে কখনো এক্সপ্লেইন করতে পারবেন না। কারণ, আপনার মন খারাপ কেনো হয়, সেটা অনেকেই শুনবে ঠিকই, কিন্তু বুঝতে চাইবেনা। জানতে চাইবেনা এসবের পিছনের ঘটনাগুলো। পাঁচঃ যদি কোনো কিছু আপনাকে ভেতর থেকে শান্তি না দিয়ে থাকে, তবে সেই জিনিসটা আপনার জন্য ক্ষতিকর এবং সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। কেউ সেটাকে কিভাবে দেখে কিংবা আপনার জন্য ক্ষতিকর হওয়া জিনিসটাকে অন্য কেউ ভালো চোখে দেখে কিনা, সেটার জন্য নিজেকে জাজ করতে যাবেন না। আপনি আমিত্ব তো হারিয়ে ফেলবেনই, সাথে সাথে হারিয়ে ফেলবেন আপনার স্বত্ত্বা, আত্মা এবং পুরো আপনাকেই। আপনার কষ্ট পাওয়ার কারণ, অন্যের কাছে আপনার ‘টিপিক্যাল/চিপ মেন্টালিটি’ প্রকাশ করতে পারে, কখনো কখনো আপনাকে ‘টক্সিক’ও মনে হতে পারে, তবে মনে রাখবেন, আপনার জন্য আপনার কষ্টটাই বড়। আপনি কষ্ট পাচ্ছেন তো পাচ্ছেন, এটার উপর অন্য কারো ভাবনা প্রভাব ফেলা মানে, আপনি তাদের মতো করে ভাবতে শুরু করলেন। যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তা কেনো দেয় কিংবা এটার পেছনে লজিক খুঁজতে যাবেন না। অন্য মানুষ আপনার এই কষ্ট পাওয়াটাকে সিলি বানিয়ে দিলেও, নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না। যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তা শুধুই আপনার জন্য দুঃস্বপ্ন এবং আঘাত। সুতরাং, সেটাকে অন্যের জন্য জাস্টিফাইড করতে যাওয়ার মানেই হয়না। বরং, কেউ সেটাকে চিপ, টিপিকাল, সিলি ভেবে থাকলে মুচকি হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। কারণ তখন মনে রাখবেন, তারা আপনি হয়ে আপনার জীবনটা বেঁচে দেখেনি। তাদের কাছে যেটা সিলি, সেটা আপনার জন্য হাজার রাত নির্ঘুম থাকার কারণ হতে পারে। সুতরাং, কারো কাছে সিলি লাগলেও নিজেকে জাস্টিফাইড করতে গিয়ে ছোট করবেন না। এতে আপনার কষ্ট কমবে না, বরং ওই মানুষগুলো আপনাকে আরও নানান রকমের ট্যাগ লাগিয়ে দিতে পারে। যেগুলো হয়তো আপনি আরও নিতে পারবেন না। ছয়ঃ কেউ যদি আপনার সামনে অন্য কারো প্রশংসা করে, সেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আপনি সুন্দরভাবে মেনে নিতে শিখুন। তবে যদি আপনার বিন্দুমাত্র মনে হয়ে থাকে, যে অন্য কাউকে আপনার সামনে প্রশংসা করার কারণে বা ‘ট্যালেন্টেড’ দাবি করার কারণে, আপনি ছোট হয়ে যাচ্ছেন, তাহলে সেটাকে ওভারলুক করবেন না। টেইক ইট পার্সোনালি। আপনার সামনে অন্যের প্রশংসা করা মানুষটা, আপনাকে ওভারলুক করে গেলে সেই বিষয়টা খেয়াল রাখতে চেষ্টা করুন। যে মানুষটা আপনার সামনে বসে অন্যের প্রশংসা নিয়ে ব্যস্ত, সে আপনার কোনো ট্যালেন্ট কিংবা কাজকে যদি ওভারলুক করে যায়, এটা লং রানে অনেক সমস্যার। এবং এই জিনিসটা সামনের দিনগুলোতে আপনাকে বাজেভাবে আঘাত করতে পারে। তাই যারা আপনাকে আপনার মতো দেখতে পারে, বুঝতে পারে, তাদের সাথেই একটা দীর্ঘ সময় চলার স্বপ্ন আপনি দেখতে পারেন। নয়ত, কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আবারও আঘাত পেতে পারেন। সাতঃ কোনো একটা আড্ডাতে গেলে আর দুই-চারজনের মতো আপনি প্রায়োরিটি পাচ্ছেন কিনা খেয়াল রাখবেন। মনে রাখবেন, আড্ডার চাইতে বেশি প্রয়োজনীয় আপনার সেল্ফ রেসপেক্ট। সেই জিনিসটা কোথাও গিয়ে হারিয়ে গেলে, সেই আড্ডায় আপনি একট থার্ড পার্সন কিংবা আউটসাইডার হয়েই থাকবেন, এর বেশি কিছু না। তবে একটা আড্ডায় অনেক মানুষ থাকতে পারে, সবাইকে সবাই ঠিকভাবে সময় কিংবা প্রায়োরিটি দিতে পারবে এমনটা ভাবাটা বা আশা করাটা ভুল। সেক্ষেত্রে, তাদের আপনাকে প্রায়োরিটি দেয়ার চেষ্টাটুকু বুঝে নিতে হবে আপনাকে। যদি দেখেন সেই চেষ্টাটুকু তাদের ভেতরে নেই। এভোয়েড করুন। প্রয়োজনে একাই থাকুন। হাজারের মধ্যেও কারা আপনাকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে, তাদের আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করুন। প্রতিটা মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। এইসবের পরেও কারা আপনার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার দিচ্ছে কিংবা আপনার জন্য আলাদা সময় বরাদ্ধ রাখছে, তাদেরকে আগলে রাখুন। শক্ত করে জীবনের চলার পথে তাদেরকে রেখে দিন। আটঃ উপরের কয়েকটা পয়েন্টের সাথে মিল আছে। কিন্তু তবুও, নিজের আবেগ, ভালোবাসা, সময়, প্রায়োরিটি ইত্যাদি প্রকাশের জায়গাগুলোতে সতর্ক থাকুন। কে আপনাকে আপনার সবকিছু শুনে জাজ করছে, আর কে আপনাকে সামলাচ্ছে দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। অবশ্যই, নিজেকে এমন জায়গায় কখনো ফেলবেন না, যেখানে প্রতিনিয়ত, আপনি শুধুমাত্র আপনি থাকার কারণে তাদের চোখে খারাপ কেউ হয়ে উঠছেন। তারা আপনাকে বুঝতে পারছেনা, কিংবা বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করছেনা, এরকম অবস্থায় মানুষগুলো আপনার প্রিয় হয়ে থাকলেও বুঝে নিবেন, এই প্রিয় মানুষগুলোর চোখে একটা সময় বিষাক্ত হয়ে যেতে আপনার সময় লাগবেনা। সুতরাং, সাবধান হোন। যারা আপনার পয়েন্ট অফ ভিউটা বোঝার চেষ্টা করে তাদেরকে সবসময়ই আগলে রাখুন। যারা আগেই জাজ করে না ফেলে, আপনার পেছনের ঘটনাগুলো শুনতে চায় কিংবা আপনাকে আরও ভালো ভাবে জানতে চায়, আপনার সবকিছু শুনার জন্য তৈরি রাখে নিজেকে, আপনি ভালো হোন, খারাপ হোক, সবকিছু যাদের কাছে জাস্টিফাইড, তাদেরকে সবসময়ই আগলে রাখুন। এই মানুষগুলোর আজকাল বড্ড অভাব। আজকাল তো, আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে গেলে হাজারবার আপনাকে জানান দিতে হবে, যে অমুক হয়েছে, তমুক হয়েছে। ঠিক এইরকম সময়ে এসে ওই মানুষগুলো মহামুল্যবান। সবসময় মনে রাখবেন, আপনার জীবনে পা রাখা প্রত্যেকটা মানুষ, সারাজীবন থাকার জন্য আপনার জীবনে আসেনা। কেউ কেউ আসে, শুধু আপনাকে একটা শিক্ষা দিয়ে যেতে। আবার কেউ কেউ আসে সারাজীবন আগলে রাখতে। কাদের সাথে থেকে আপনি নিজেকে ভালো রাখবেন, সেটা আপনার হাতেই। নয়ঃ নিজেকে নিয়ে সবসময় সৎ থাকবেন। কখনোই নিজেকে অন্য কারো ভাবনার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। নিজের চিন্তা-ভাবনা, কষ্ট, দুঃখ, একদম কোনো কিছুকেই জাস্টিফাইড করবেন না। আপনি এমন তো এমনই, কারো ভালো নাই লাগতে পারে। সে আপসাইড ডাউন হতে পারে। তাই বলে আপনি কোনোভাবেই এসব চিন্তাভাবনা বহন করেন বলে খারাপ হয়ে যাচ্ছেন না। আবার সেই মানুষটাও উল্টো চিন্তাধারা বহন করে বলে খারাপ হয়ে যাচ্ছেনা। প্রত্যেকটা মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবেশ, পরিবার সবকিছু আলাদা। সুতরাং, আপনি আপনার ধারণা বহন করেই বলে সেটাই খারাপ, বা অন্য কেউ ট্যাগ লাগিয়ে দিলেই সেটা খারাপ, এমনটা মোটেও না। আপনি যদি আপনার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সৎ থাকেন, এবং আপনার কাছে যথেষ্ট ভ্যালিড কারণ থাকে, তাহলে কোনোভাবেই অন্য কারো মতামত নিজের উপর চাপিয়ে নেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার এই ভাবনাই আপনাকে আর চার-পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা করে। দশঃ সবসময়ই যে মানুষের আপনার জন্য স্যাক্রিফাইস করতে হবে এই জিনিসটা ভাবা বন্ধ করুন। কেউ আপনার জন্য ১% করলে, তার জন্য ১০% করতে তৈরি থাকুন। একপাক্ষিক স্যাক্রিফাইস করাতে গিয়ে যদি, আপনি তার জন্য কিছু না করতে পারেন, মানুষ হিসেবে আপনি একদমই শুন্য হয়ে যাবেন। কেউ আপনার জন্য যদি একটু সময় রাখে, তার জন্যেও আপনার দিনের মধ্যে কিছু সময় রাখা উচিত। কেউ যদি আপনার জন্য ১টা কাজ করে, একটু চেষ্টা করে, তার জন্য আপনার ১০টা কাজ করা উচিত। সুতরাং, কেউ করেই যাবে আপনার জন্য, আপনি কিছুই করবেন না, তাদের জন্য ভাববেন না, তাদের জন্য সময় বের করবেন না, প্রায়োরিটি লিস্টে রাখবেন না এই চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি কারো থেকে ডিসার্ভ করলে, অন্য কেউও ডিসার্ভ করে। যে যেটা ডিসার্ভ করে তাকে সেটা দিতে শিখুন। সে আগলে রাখলে, তাকে আরও দ্বিগুন শক্তি দিয়ে আগলে রাখুন। মানুষের সিচুয়েশন বোঝার চেষ্টা করুন, তাদের ইফোর্টকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। তাদের মানসিক অবস্থা, তাদের চিন্তাধারণার মূল্য দিতে শিখুন। এক্ষেত্রে কেউ আপনারটা না বুঝে আপনাকে জাজ করলেও, তাকে তার মতো বুঝতে পারার চেষ্টা করুন। আপনাকে কেউ হয়ত আপনার মতো মেনে নিতে পারবেনা, তবে তার জীবনে আপনি তাকে তার মতো মেনে নেওয়ার মানুষ হয়ে উঠুন।
২০২৩ সালে এমন অনেক কিছুই আছে যেটার কারণে আমি খুশি। সেই জিনিসগুলোও বলাটা জরুরি। সময় গড়ালে যখন মেমোরিস-এ দিনটা আসবে, তখন নস্টালজিক হয়ে স্মরণ করা যাবে এসব কিছু। প্রথমত, আমার মায়ের দ্রুত রিকোভার হওয়াটা আমার জন্য ভীষণ জরুরি ছিলো। সেটা হয়েছেও। বরং, সময়ের বহু আগে হয়েছে। এই কারণে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। কিছু মানুষের সাথে পরিচয়, যেগুলো আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বইমেলা জুড়ে কিংবা বইমেলার আগে যেসব লেখকদের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে, তাদের সাক্ষাত বা তাদের সাথে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছেটা আমার বহু আগে থেকেই ছিলো, সেটা পূরণ হয়েছে। বরাবরের মতো শিখতে পেরেছি অনেক কিছুই। কাজে লাগাতে হয়তো পারিনি সেই শিক্ষাগুলো, তবে সামনের দিনগুলোতে পারবো এই আশা রাখছি। এই বছরটাতে নিজের কাছের মানুষদের বিপদে-আপদে পাশে থাকতে পেরেছি। তাদেরকে নিজের সেরাটা দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছি। ফলাফল ভালো না আসলেও শিখেছি ধৈর্য্য ধরে পড়াশুনা করা। ব্যক্তিগত জীবনেও শিখেছি ধৈর্য্য ধরতে। কিছু জিনিস স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে শিখেছি। অনেক ভারী জিনিসকে হালকাভাবে মেনে নিতে শিখেছি। নিজেকে চিনেছি। নিজে কি করতে পারি সেই সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছি। এগুলোই হয়তো এবছরে খুশি হওয়ার মতো কিছু কারণ।
পরের বছরেও এবছরের মতো বেশ কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখতে চাই, যদিও সেটা পূরণ হবে কিনা সেটা সময়ের হাতে। তবে আমি আমার সেরাটা দিয়ে যেতে চাই আমার লক্ষ্য পূরণে। সেটার মধ্যে প্রথমেই আসবে নিজেকে সময় দেওয়া। দুনিয়ার কোলাহল এবং সবকিছুর ব্যস্ততায় নিজেকে একটু সময় দেয়ার চেষ্টা করবো। নিজেকে অল্প সময়ের জন্য হলেও, নিজে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। এবছরে মোট সম্ভবত ১০/১২টা বই পড়তে পেরেছি, এই সংখ্যাটা বাড়াতে চাই। অন্তত ৩০টা বই পড়তে চাই আগামী বছরে। পড়তে পড়তে শিখতে চাই বহু কিছু। হোক ফিকশন বা নন-ফিকশন, তবে এই অভ্যাসটা আরও বাড়াতে চাই। ফোনের স্ক্রিনে সময় দেয়া এবছর অনেক কমিয়ে ফেলেছি, আরও কমিয়ে ফেলতে চাই আগামী বছর। টুকটাক কিছু ভালো স্কিল ঝালাই এবং আরও কিছু নতুন স্কিল শিখতে চাই। লেখালিখিতে সময় দিতে চাই। বই প্রকাশ করার চাইতে বেশি, নিজের লেখালিখিতে নিজেকে স্যাটিস্ফাইড দেখতে চাই। আয়ত্তে রাখতে চাই লেখালিখি। গল্প বলার বিভিন্ন ধরণ শিখতে চাই। নিজে পুরোটা আত্মতৃপ্তি পেলে তারপরে প্রকাশের চিন্তা, এর আগের কাজ শুধু পড়ে যাওয়া, লিখে যাওয়া এবং শিখে যাওয়া। ফেসবুকেও টুকটাক লিখতে চাই, সেটা হোক নিজের মতামত কিংবা ধারণা। অন্য কারো কথা মাথায় না এনে নিশ্চিন্তে প্রকাশ করে যেতে চাই আমার মতামত, বক্তব্য। ইউটিউব চ্যানেলটাকে আরো সক্রিয় করতে চাই এবছর। খুব বেশি পারবো বলে মনে হয়না, তবুও মাঝে মাঝে নিজের মতামত শেয়ার করবো, একান্তই নিজের ফিউচার সেল্ফের জন্য। ‘না’ বলা শিখতে চাই, আরও দারুনভাবে। নিজের ভালোটা নিজে বুঝে নিতে চাই। তবুও কারো সাহায্যে আসতে পারলে , সেটা করতে প্রস্তুত থাকবো অবশ্যই। তবে যেখানে বা যাদের কাছে নিজের সম্মানটা নেই, সেখানে পা না দেয়ারই চেষ্টা থাকবে। এবং বারবারই সেখানে ‘না’ বলতে চাই। যারা নেগেটিভ ভাইভ দিবে, তাদের থেকে অনেক অনেক দূরে থাকতে চাই। মানসিক শান্তি সবচেয়ে বড়, তাই নিজের শান্তির জায়গাগুলো নিজে খুঁজে নিতে চাই। কারো জন্য না, কাউকে ইমপ্রেস করতে না, নিজেকে ইমপ্রেস করতে সবকিছু করতে চাই। এক একটা দিন, আস্তে আস্তে নিজেকে আরও ভালো মানুষে পরিণত করতে চাই। মানুষকে কষ্ট কম দিতে চাই। শুনতে চাই মানুষের কষ্টের গল্প কিংবা সুখের। শ্রোতা হতে চাই। সুযোগ পেলেই কারো পাশে দাঁড়াতে চাই, হোক সেটা কাছের মানুষ কিংবা বাইরের কেউ। পুরো পৃথিবীটাকে দেখার নজর বদলে ফেলতে চাই। হতে চাই আরও পজেটিভ। নিজের আত্মবিশ্বাস, কমিউনিকেশন স্কিল এসব আরও বৃদ্ধি করতে চাই। কৃতজ্ঞ হতে চাই আরো বেশি। অল্পতে খুশি হয়ে যাওয়া শিখতে চাই। নিজের টুকটাক শখগুলো পূরণ করতে চাই। টং এর দোকানে চা খাওয়া, কিংবা বিএফসির চিকেন অথবা ডোমিনোজের পিজ্জা, হতেও পারে কোনো একটা বই কেনার শখ, বা কম দামী কিছু! মন চাইলেই বাসার বাইরে দু-এক পা হেঁটে আসার শখ। একাডেমিক যে ধাক্কাটা এবার খেয়েছি, সেই ধাক্কাটা হয়তো আর উতরে যাওয়া সম্ভব না, তবে সামনের দিনগুলোতে যতো কষ্টই হোক একাডেমিক দিক থেকে সাফল্য পেতে চাই। যেদিকেই পা রাখি, অর্জন করে নিতে চাই সেই রাস্তা। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে। যারা নিজের খুশির সময়গুলোতে আমাকে কাছে রাখেনা, তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবো। নিজেদের ব্যস্ততম সময়ে, যাদের জীবনে আমার প্রয়োজন বা গুরুত্ব ‘’শুন্য” তাদের থেকে সবসময়ই দূরে সরে থাকবো। যদিও কষ্ট দিয়ে না, সরাসরি ইগনোর করে না। তবুও আস্তে আস্তে নিজেকে এসব জায়গা থেকে সরিয়ে নিবো। যারা যারা সুখের সময় পার করছে, ঠিক ওই একই সময়ে আমি যদি কষ্টে থাকি, সেটা যাদের বোধগম্য হবেনা, তাদের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখবো। মানুষের লাইফ নিয়ে একদমই ভাববো না। কারো প্রতি কনসার্নড হবো না। আমার জীবনে থাকা মানুষগুলো যে যার ইচ্ছেমতো চলতে পারবে, তবে সেক্ষেত্রে তাদের কোনো আচরণ বা কাজে আমার কষ্ট হলে আমি চেষ্টা করবো তাদেরকে সুধরে না দিয়ে, নিজে সরে যাওয়ার। এতে করে কাউকে আমার জন্য বদলাতে হবেনা, কারো বদলানোর কারণ আমাকে হতে হবেনা। সবাই সবার মতো বাঁচতে পারবে। যারা আমাকে সবকিছুর উপরে রাখে তাদের জন্য সবকিছু করতে তৈরি থাকবো, তাতে যত কষ্টই হোক। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো প্রতিটা মূহুর্তে। তাদেরকে আগলে রাখার চেষ্টা করবো। আমি বিশ্বাস করি, এই দুনিয়ার সবচেয়ে দামী জিনিস সময়, সেই সময় কেউ আমাকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমার পেছনে ব্যয় করলে তার জন্য করতে প্রস্তুত থাকতেই হবে। নয়ত দিনশেষে, অকৃতজ্ঞ হয়ে যাবো নিজের কাছেই। সেই অকৃতজ্ঞ মানুষটা হয়ে বাঁচার ইচ্ছে নেই। তাই, যে করবে সে দ্বিগুন পরিমাণেই ফেরত পাবে। যে করবেনা, তার জন্য কোনো আফসোস থাকবেনা, কোনো ক্ষোভ, রাগ থাকবেনা। এসব মনেও রাখবোনা। তাদেরকে তাদের মতো ভালো থাকতে দেয়ার চেষ্টা থাকবে। প্রিয় মানুষগুলোর কাছে, নিজেকে আরও এক্সপ্রেসিভ করতে চাই। জানিনা কতোটুকু পারবো। তবে চাই, তাদের জন্য কি কি করতে পারি, কতোটা পথ পাড়ি দিতে পারি এই ধারণাটুকু তাদের অন্তত থাকুক। সবসময়ই চাইবো তাদের প্রতি নিজের অনূভুতির জানান দিতে। তারা যেনো টের পায় তাদের জন্য কি ফিল করি আমি, এতোটুকুই শুধু! না পাওয়ার হিসেব ছিলো অনেক এই বছরটাতে, আগামী বছরে পাওয়ার হিসেবের খাতাটা ভর্তি থাকুক এটাই উপহার হিসেবে চাইবো নিজের কাছে। নিজের সৎ থাকা, পরিশ্রম করে যাওয়া, লক্ষ্য অর্জনে আপ্রাণ চেষ্টা, সব দিক থেকেই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। হতে চাই আরও বেশি নমনীয়, ব্যবহারের দিক দিয়ে অমায়িক। সর্বশেষে, সব কষ্টকে হারিয়ে দিয়ে, দিনশেষে হাসিমুখে ঘুমোতে যেতে চাই। এটাই হবে আমার শ্রেষ্ঠ ইচ্ছা ২০২৪ সালের জন্য।
আপাতত এইটুকুই! সম্ভবত আমার দেয়া সবচেয়ে বড় ফেসবুক পোষ্ট হতে যাচ্ছে এটা। তবুও সেল্ফ রিমাইন্ডার হিসেবে থাকলো। নিজেকে বারবার এই লেখাটার সবকিছু বাস্তবে পূর্ণ করতে দেখতে চাই। আল্লাহ যেনো সেই তৌফিক দান করেন। আপনাদের যাদের যাদের নতুন বছরে কোনো লক্ষ্য আছে, সবার সেই লক্ষ্য যাতে পূরণ হয় সেই কামনাই করি। আপনাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো, রইলো দোয়া এবং ভালোবাসা। আমার জন্যেও সবাই দোয়া রাখবেন। এই বছরে যা যা খারাপ হলো তা পুষিয়ে গিয়ে, দ্বিগুন পরিমাণ ভালো কাটুক আপনাদের নতুন বছর। প্রিয় মানুষদের আগলে রাখবেন, কাছাকাছি থাকবেন এবং মন খুলে ভালোবাসবেন। বিদায় ২০২৩ এবং এবছরের মতো আপনাদেরকেও!
The post কেমন গেলো আমার ২০২৩? appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
December 19, 2023
আমরা কি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভাবি?
মানসিক ট্রমা কিংবা মানসিক দূর্বলতাকে অনেকেই খুব হালকাভাবে নিয়ে ফেলে। দেখা যায়, যাদের কাছে বিষয়গুলো বলা হচ্ছে তারাও, ‘সবার জীবনেই এরকম কিছু না কিছু হয়’, ‘সবাই-ই জীবনে এরকম কিছু না কিছু ফেইস করে’ ইত্যাদি টাইপের বুলি আওড়ায়। তবে একটা মানুষ ঠিক কিসের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে, কিসের কিসের সম্মুখীন হয়েছে, এবং সেই সমস্ত বিষয়গুলো তার উপরে ঠিক কতোখানি বাজে রকমের প্রভাব ফেলেছে, সেটা সত্যিই তার জীবনের সবকিছু নিজে ফেইস না করলে বলাটা সম্ভব নয়। এবং কেউ চাইলেই বলতেও পারবেনা৷ সবার জীবনেই এরকম হয়, বা ঘটে টাইপের বিষয়গুলোর কিছু নির্দিষ্ট সীমা আছে। এই সীমাগুলো কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বরং আরও বেশি এক্সট্রিম হয়ে যায়। একই রকমের জিনিস, একেকজনের নেয়ার ক্ষমতাভেদে তার কাছে গুরুত্ব পায়। রাস্তায় মারামারি হলে যেমন, কিছু মানুষ সেখানে দৌড়ে গিয়ে দেখতে থাকে কি হচ্ছে, অন্যদিকে ভিড় দেখে কিছু মানুষ জায়গাটাকে এড়িয়ে দ্রুত কেটে পড়লেই বাঁচে। এই একটা জায়গার ক্ষেত্রে যেরকম দেখা যায়, দুটো মানুষের দুইরকমের পার্সপেক্টিভ। ঠিক একইভাবে সবার নেয়ার ক্ষমতাও একেকরকম। তাই নিজের জায়গা থেকে কারো সমস্যা কিংবা মেন্টাল ইস্যুকে উড়িয়ে দেয়ার মতো যথাযথ কারণ কারো হাতেই আছে বলে মনে করিনা। প্রতিটা মানুষের জীবনেই কষ্ট আছে সত্য, তবে সেই কষ্টের কারণগুলো ভিন্ন এবং একই সাথে সেই কষ্টের ইমপ্যাক্টগুলো কারণভেদে থেকে শুরু করে মানুষভেদেও ভিন্ন।
আমি কিছু মানুষকে চিনি, যাদের অতিরিক্ত শব্দে সমস্যা হয়। আবার এমন মানুষকেও চিনি, যে ওই একই শব্দ শুনার পরেও, সাউন্ড আরও বাড়াতে বলবে। সুতরাং, প্রথম যে ব্যক্তি তাকে যদি আপনি ২য় ব্যক্তির উদাহরণ দেখিয়ে বলেন, ‘ওর তো সমস্যা হয়না, তোমার হচ্ছে কেনো?’ এই বিষয়টা মোটেও ভ্যালিড একটা বিষয় না। শব্দ জোরে আস্তে থেকে শুরু করে, চিৎকার-চেঁচামেচি, এক্সিডেন্ট সবকিছু দেখার এবং সহ্য করার সহনশীলতা আলাদা। কারো সমস্যা নেই এইসবে, এই বিষয়টাকে আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারলেও, কারো যে এইসবে সমস্যা থাকতেও পারে সেটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারিনা। তখন ওই নিজস্ব জায়গা থেকে, নিজস্ব চিন্তা-ধারার প্রভাব মানুষটার উপর বিস্তার করিয়ে, কিংবা সেটা বিস্তার না করতে পারলেও ওই দ্বিতীয় মানুষটাকে উদাহরণ হিসেবে আমরা কাজে লাগাই।
যে মানুষ ঘুমন্ত থাকা অবস্থায়ও চারপাশে কোন সাউন্ড শুনলে হঠাৎই লাফিয়ে উঠে এবং তার বুক ধরফর করতে থাকে, এসব বিষয়কে আপনার একদম স্বাভাবিক মনে হতেই পারে, তবে ওই মানুষটার জন্য সেটা ভয়াবহ-ও যে হতে পারে সেই বিষয়টাও আমাদের আমলে নিতে হবে। অন্তত চেষ্টাটুকু করতে হবে। তবে চেষ্টা না করে যদি, সেটাকে উড়িয়ে দেই, কার কার সমস্যা নেই সেটা তার সামনে জাহির করতে বসে যাই, তাহলে সেটা তাকে আরও অবিশ্বাসিই বানাবে। মানুষের প্রতি, আমাদের প্রতি, সমাজের প্রতি এবং সে হয়ে যাবে একা। চারপাশে তাকালে দেখতে পাবে, তাকে তার মতো করে বোঝার কেউ নেই। তার এঙ্গেল থেকে তার বিষয়গুলো বোঝার কেউ নেই। এবং সে ধরেই নিতে শুরু করবে, এইসব বুলি আওড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো সহানুভূতি নেই তাদের প্রতি। এসব বলে, আমরা তাকে শান্তনা দিয়ে গায়েব হতে পারলেই যেনো বেঁচে যাই। সে এরপর আবারও একা। আবারও, তার নিজেকে নিয়ে বাঁচতে হবে। কে বুঝবে, কে বুঝবেনা, এই হিসেব করতে করতে সে ব্যস্ত হয়ে যাবে। সে হয়ত নিজেও জানেনা, সে তাকে ধীরে ধীরে শেষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে আগুনে ঘি ঢালার মতো করে, তাদেরকে সেই শেষের দিকে ঠেলে দিচ্ছি আমরাও!
The post আমরা কি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভাবি? appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
July 5, 2023
জলতরঙ্গের ক্যানভাস
জলতরঙ্গ হাসান ইনামের দ্বিতীয় উপন্যাস। যা প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ বইমেলায়। মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রকাশিত হওয়া এই বইটি নিয়ে চলছে হৈ-হুল্লোড়। পাঠকের দিনগুলোও জলতরঙ্গের সাথে কাটছে দারুনভাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অধ্যয়নরত এই লেখক, তার জাদুকরী কৌশল দেখিয়েছে জলতরঙ্গে। সেক্ষেত্রে তার অধ্যয়নরত বিষয়টি তাকে সাহায্য কতোটুকু করেছে জানিনা, তবে তার মনে গল্পটা যতটুকু জায়গা জুড়ে ছিলেন পুরোটাই তিনি ঢেলে দিয়েছেন বইয়ের ভেতরে। প্রতিটা প্যারায়, প্রতিটা অধ্যায়ে তিনি দক্ষতার ছাপ দেখিয়ে গিয়েছেন। শিরোনাম দেখে ইতোমধ্যে আপনাদের বুঝে যাওয়ার কথা আমি জলতরঙ্গ নিয়ে কি আলোচনা করতে যাচ্ছি সামনে। তবুও আপনাদের সুবিদার্থে আরও একবার বলেই দেই আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে জলতরঙ্গের ক্যানভাস বা চিত্রপট!
১০০ অধ্যায়ের এই উপন্যাসটি শুরু হয়েছে কিছু চিত্রপট দিয়ে। আসলে ‘কিছু’ বললে ভুল বলা হবে, বরং বলা ভালো ‘বহু চিত্রপট’ দিয়ে। সেটার ভেতরে আমাদের প্রাণের, কিন্তু জ্যামের ফাঁদে পড়ে বিরক্ত হয়ে গালি দেয়া শহর ‘ঢাকা’ তো রয়েছেই, এছাড়াও রয়েছে কুয়েতসহ আরও অনেক স্থানের খন্ডচিত্র। স্থান বিষয়ের আলোচনায় আমরা যাবোনা, তবে বহু স্থান যে রয়েছে সেটা তো জেনেই গিয়েছেন। শুরু থেকে বেশ কয়েকটা অধ্যায়েই এরকম অর্ধেক চিত্র রেখে গিয়েছেন লেখক। মনে হয়েছে, যেনো নিজের প্রবল শিল্পের দক্ষতা এবং ক্ষমতার গুনে সুতো বুনছেন গল্পে। এই সুতো বুনতে গিয়েছে বহু মানুষের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছেন লেখক। যেভাবে তিনি শুরুর দিকে ১৭৯৯, ১৮০০ ইত্যাদি সালগুলোর বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছিলেন সেটাতে বুঝতে আর পাঠকের বাকি থাকবেনা, যে কিভাবে টুকরো টুকরো জায়গাগুলোকে তিনি সুক্ষভাবে দেখাতে চেয়েছেন। এরপরে, পরিচয় করালেন তোপকাপি প্রসাদ, উত্তাল পারস্য উপসাগর, ঢাকার কেন্দ্রিয় কারাগার, মৌরিতানিয়া আরও অনেক কিছুর সাথেই। পাঠকের বোঝার স্বার্থে প্রথম কিছু অধ্যায়ে এসব জায়গার গল্প বলে যাওয়ার পাশাপাশি, তা হজম করার সময়ও দিয়েছেন তিনি। কয়েকটা প্রেক্ষাপট,কিছু গল্প এবং সেটা কন্টিনিউ করে গিয়ে পাঠককে আটকে রেখেছেন তার আঁকা ক্যানভাসে। এরপরে আবারও খন্ডচিত্র, আবারও সেই পরিচিত কয়েকটা চিত্রে কিছুক্ষণ গল্প বলে যাওয়া, সবই করেছেন দক্ষতার সাথে। তবে সবকিছুর পরেও সবচেয়ে আগ্রহ জাগানিয়া বিষয় ছিলো, এতোগুলো প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি সুতো বুনতে শুরু করেছেন ঠিকই, তবে সবকিছু কি এক জায়গাতেই ঠেকাতে পারবেন তিনি? প্রশ্নটার উত্তর খুবই সহজ, আশা করি এই উত্তরটাও আপনারা এতোক্ষণের আলোচনার কিছু লাইন পড়ে বুঝে গিয়েছেন।
এতোগুলো প্রেক্ষাপটকে একস্থানে মেলানোটা একটা দক্ষযজ্ঞের মতো কাজ, সেটা দৃশ্যমান ছিলো গল্পে। চিত্রপটে এতো জায়গা ছিলো, যে নাকানিচুবানি খাওয়াবেন লেখক আপনাকে। তবে সেটা অবশ্যই ভালো অর্থে। পাঠককে বোকা বানানোর মতো কিছুই করেননি তিনি। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে করে গিয়েছেন, বলে গিয়েছেন একটা দারুন গল্প। ‘কে’, ‘কি’, ‘কিভাবে’, কেনো’ ইত্যাদি প্রেক্ষাপটগুলোই কিন্তু আসলে এই গল্পের ক্যানভাস বা চিত্রপট। তবে এই প্রেক্ষাপটগুলো সব উপন্যাসেই কমবেশি থাকে। তবে জলতরঙ্গের সবচেয়ে স্ট্রং পার্ট ছিলো গল্পের প্রতি জাস্টিফাই করার জন্য লেখকের দারুন উত্তর। সব উপন্যাসে এরকম প্রশ্ন থাকলেই যে আপনি দারুনভাবে উত্তর পাবেন, ব্যাপারটা একদমই সেরকম নয়। এখানেই লেখকের লেখার স্বার্থকতা। ভালো একটা গল্প বলা মোটেও সহজ কাজ নয়, তাও এতোগুলো প্রেক্ষাপট নিয়ে। যদি ধরেও নেই যে বিষয়টা সহজ, তাহলেও গল্পের শেষে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা কিংবা শেষটাকে দারুন না করতে পারাটা আরেকটা ব্যর্থতা। তবে উভয় ক্ষেত্রেই লেখক পুরোপুরি সফল।
যাই হোক, ক্যানভাস দিয়ে বলতে বলতে এইযে অন্যদিকেও ঘুরে এলাম আমরা, ঠিক এমন করেই লেখকও আপনাকে একটা গল্প বলতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে যাচ্ছে। লিখতে লিখতে একটা জিনিস মাথায় এলো। সেটা না বললে, লেখকের চিত্রপটের বিষয়টা আসলে অব্যক্তই থেকে যায়। ধরুন, জলতরঙ্গ হচ্ছে একটা আর্ট পেপার। যেখানে আছে মানুষ, পাখি, ঘড়, গাছ-পালা, পুকুর আরও বহু কিছু। আর লেখক সেই জিনিসগুলোই এঁকে গিয়েছেন দক্ষ শিল্পির মতো। মানুষ নিয়ে কথা বলার পরে তিনি সরাসরি চলে গেলেন আকাশে, পাখি নিয়ে কথা বলতে। এরপরে দেখা গেলো, সেই পাখিগুলো উড়ে যাচ্ছে ডানা মেলে চিত্রপটের পুকুরটার উপর দিয়ে। সাথে সাথেই লেখক শুরু করলেন সেই পুকুরটার বর্ণনা। উপরে যা বললাম, সেটা শুধুমাত্র লেখকের দক্ষতা বোঝাতে। এভাবেই সবকিছু একটার সাথে আরেকটার মিলবন্ধন রেখে গল্প বলে গিয়েছেন লেখক। একটা ক্যানভাসেরই বহুদিক এভাবেই ফুটে উঠেছে তার লেখায়।
আলোচনা যেহেতু শুধুমাত্র গল্পের ক্যানভাসটা নিয়ে তাই সেটা নিয়েই কথা বলে গেলাম। গল্পটা তো নি:সন্দেহে দারুন, তবে যেহেতু বিশাল ক্যানভাসে লেখা, সেটা নিয়ে বলতে গেলে আলোচনা এতো তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। স্পয়লারহীন বক্তব্য রেখে যাওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছি আলোচনার শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত। আমার এই আলোচনার উদ্দেশ্যই ছিলো লেখকের বিশাল ক্যানভাসে গল্পটা বলার ভঙ্গিমা সম্পর্কে কিছু বলা, আশা করি সেটা আমি এতোক্ষণে কিছুটা হলেও আপনাদেরকে বোঝাতে পেরেছি। আমার এই লেখাটা পড়ে তেমন কিছু জানতে বা বুঝতে পারবেন না বলে দু:খিত। এতোটুকু আমি বলতে পারি, যে গল্পটা শেষ হওয়ার পরপরই আপনি বুঝে যাবেন যে কেনো জলতরঙ্গের ক্যানভাসটা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো। গল্পটার পড়ার পরপরই মনে হয়েছে এটা নিয়ে কথা বলা যায়। প্লট নিয়ে কথা অনেকেই বলে যাবে সামনের দিনগুলোতে, তবে লেখকের বোনা এই বিশাল ক্যানভাসটা অবশ্যই দারুন একটা আলোচনার যোগ্য। গল্পটার গভীরতা বোঝাতে গিয়ে অনেক বিষয়ে কিছু অতিরিক্ত বক্তব্য ছিলো বলে দু:খিত, তবে গল্পটা পড়ার পরে এই বক্তব্যগুলোর অর্থ খুঁজে পাবেন বলেই আশাবাদী। আলোচনাটা দারুন হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা আমার নেই। তবে মুগ্ধ আপনাকে হতেই হবে জলতরঙ্গের ক্যানভাসে।
জলতরঙ্গের ক্যানভাস
-সিয়াম মেহরাফ
The post জলতরঙ্গের ক্যানভাস appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
July 3, 2023
দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
মানুষের জীবনে কিছু এমন অধ্যায় থাকে, যেই অধ্যায়গুলোকে চাইলেই মানুষ ভুলে যেতে পারেনা। সেগুলো তাকে পোড়ায়, বাধ্য করে আরও জঘন্য কিছু করতে। কিছু কিছু অতীত ভুলে যাওয়াটা আসলেই কখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনা মানুষের জন্য। নতুন জীবনেও সেই বিশ্রি অতীত তাকে জ্বালাতে-পোড়াতে থাকে। যতোটাও সহজ মনে হচ্ছে উপরের কথাগুলো, ততটাও সহজ নয় সবকিছু। আর এসব মিলিয়েই দরিয়া-ই-নুর।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: ছোট একটা গল্পে এতো বিশাল পরিসরে মনে জায়গা দখল করে নেয়া লেখক বোধহয় এই একজনই আছেন। তিনি গল্প বলতে বলতে টেনে আনেন চরিত্রগুলো, যারা আপনার সামনেই হাঁটবে, চলবে, আবার জড়িয়েও যাবে রহস্যে। সেভাবেই শুরু হয় গল্পটা। একটা চরিত্র যে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, তার জীবনটা কেমন হতে পারে সেটা বলার মধ্য দিয়েই গল্পটা শুরু করেছেন লেখক। এরই ভেতরে বলে গিয়েছেন মূল চরিত্রের কিছু চড়াই-উতরাই। কেনো সে জেলে? কি অপরাধ তার? সুন্দর জীবন তো সবারই প্রাপ্য, সেই সুন্দর জীবনের লোভ? নাকি ঠকে যাওয়া কোনো মানুষ হয়েই তার ঠিকানা হয়েছে জেল? সেই উত্তর দেয়া আছে দরিয়া-ই-নুর গল্পে।
পড়তে গিয়ে বারবার অজানা আশংকা তৈরি হয়েছিলো বুকের ভেতরে। তাহলে কি উনিই এসবের জন্য দায়ী? নাকি সে? নাকি কেউ না? এই প্রশ্নগুলো যখন একটা ছোট লেখা পড়তে গিয়ে বারবার আসে, তখন বলাই বাহুল্য লেখক সেখানে সফল। তবে তারচেয়েও সফল তিনি তখনই হয়েছেন, যখন এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর মনের সামনে উঁকি দেয়ার পরেও দেখা যায় আমাদের ভাবনার উত্তরগুলো মিথ্যা।
বারবারই এই আশংকা তৈরি করতে গিয়ে মনোযোগ দিয়েছেন চরিত্রগুলোতেও। একেকটা চরিত্রের ভার ছিলো বিশাল। চরিত্রগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি, যেটা আসলে সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। ছোট পরিসরের গল্পে চরিত্রের ডেভেলপমেন্ট করাটা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। গল্পটা শেষ করার পরে চরিত্রগুলো আপনার সাথে থেকে যাবে বহুদিন।
কে আপন, কে যে পর সেই ভাবনাটা আমাকে ভাবিয়ে গিয়েছে পুরো গল্প জুড়ে। প্রতিবারের মতো এবারেও শুরতেই ভেবে নিয়েছিলাম, এভাবে ভাবনার তীর সঠিক জায়গাতেই লাগবে। তবে এবারেও পাঠক মনকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে জিতে গিয়েছেন লেখক।
গল্পটার সবচেয়ে দারুন বিষয় হচ্ছে এটার ফিনিশিং বা এন্ডিং। শেষে খুব কম সময়ে সবকিছু চোখের সামনে টেনে এনে লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন তার লেখনীর সবচেয়ে জাদুকরী কৌশল। ফিনিশিংটা এতো সুন্দর যা খুবই প্রশংসনীয়। আমার ভেতরে দারুন অনুভূতি হচ্ছিলো শেষের লাইনগুলো পড়তে গিয়ে। হচ্ছিলো মিশ্র অনুভূতি। কিছুটা কষ্টের, কিছুটা হয়তো সুখের। তবে যেই অমরত্ব তিনি শেষে এসে চরিত্রকে দিয়েছেন, সেটার জন্যেই গল্পটা বহু পাঠকের মনে জায়গা করে রাখবে সারাজীবনের জন্য।
সর্বোপরি, বলতে বলতে অনেক কিছুই বলে ফেললেও, এই গল্পটার ইফেক্ট আমার জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছে তা আমি বলতে ব্যর্থই হবো বরাবরের মতো। আরও একবার, ঞ্চ
এক বসায় পড়ে ফেলার মতো গল্প দরিয়া-ই-নুর। যা আপনাকে জাগিয়ে রাখবে, বসিয়ে রাখবে গল্পটা শেষ না করা অবধি।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ভুলেও বইটা নিয়ে হাসনাহেনা নামক কোনো মেয়ের পাশে বসবেন না, তাহলে আপনি তাকে ভয় পেতে শুরু করতে পারেন।
বইঃ দরিয়া-ই-নুর
লেখকঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০
The post দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
কাঠগড়া – সামসুল ইসলাম রুমি
একজন তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন আইনজীবী শাহীনুর রায়হান, যার বুদ্ধির তুলনা নেই একদমই। খুবই স্মার্ট এবং যথেষ্ট ঠান্ডা মস্তিষ্কের যিনি। এরকম একটা মানুষও কি স্বার্থের পেছনে? নাকি তিনি স্বার্থের পেছনে যারা তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছেন স্বেচ্ছার? কে জানে সেই রহস্য? যেই আগুনের তান্ডবে এতো ধোঁয়া উড়ছে, মানুষ চিৎকার করছে, মরছে একের পর এক, সেখানে স্বার্থ উদ্ধারে নেমেছেই বা কারা? তাদের চাহিদাই বা কি? সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন কাঠগড়ার পৃষ্ঠায়!
পাঠ প্রতিক্রিয়া: গল্পটা শুরু হয় একজন আইনজীবীর দক্ষতা কেমন সেটা দেখিয়ে, যেটা খুবই ভালো লেগেছে। এরকম একটা স্মার্ট আইনজীবীর গল্প পড়তে গেলে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই সেটা একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়, আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিলো।
গল্পটার সবচেয়ে স্ট্রং পার্ট হচ্ছে গল্পের প্লট নিজেই। অযথা, প্লট প্যাচিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করেননি লেখক। যতোটুকু দরকার ছিলো, ঠিক ততোটুকুই দৃশ্যমান ছিলো গল্পে। এমন একটা প্লট নিয়ে লেখক কাজ করেছেন, যেটা নিয়ে কথা বলতে গেলেই মনে হচ্ছে স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই সেভাবে কিছুই বলছি না। গল্পের ব্যাপারে টুকটাক যা বলার উপরেই বলে দিয়েছি।
এরপরে যেটা না বললেই না, সেটা হচ্ছে গল্পের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট। ১৬০ পৃষ্ঠার একটা গল্পে লেখক ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট-এর দারুন খেলা দেখিয়েছেন। কিভাবে সেটা তিনি করেছেন জানা নেই, তবে ক্যারেক্টারগুলো আমার মনে বেশ ভালো রকমেরই প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। এতো অল্প সময়ে মনের একটা জায়গা দিয়ে দিয়েছি ক্যারেক্টারগুলোকে। সবারই ইনফ্লুয়েন্স গল্পটায় আছে। ক্যারেক্টারগুলোকে ভালোই জায়গা দিয়েছেন লেখক, তারা গুরুত্বপূর্ণ জটগুলো ছাড়াতে সাহায্য করবে পাঠককে।
প্লট গেলো, ক্যারেক্টার গেলো, এরপরে আর কি থাকে? লেখনী? যদিও সেটা নিয়ে কথা বলাটা আগেই প্রয়োজন ছিলো, তবে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছি। কারণ, এটা নিয়ে বিশাল আকারে বলতে হবে। তবুও সংক্ষেপ করার চেষ্টাটা চালিয়ে যাবো। এই একটা জায়গায় লেখকের প্রতি আমার অভিযোগ রয়ে গিয়েছে। ১৬০ পৃষ্ঠার একটা বই কিনলাম, গল্পটা এবং চরিত্রগুলোর সাথে কিছুক্ষন থাকার জন্য সেটা লেখক হতে দিলেন না। লেখকের লেখার হাত এবং ভঙ্গিমা এতোই সাবলীল যে গল্পটা পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। এতো সাবলীল আর সহজ-সরল ভাষায় গল্প লিখলে বরং সেটাই স্বাভাবিক। পড়তে কম সময় লাগলেও, ক্যারেক্টারগুলোর প্রতি যে টান অনুভব করেছি সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে লেখকের লেখার যে ধাঁচ, সে হিসেবে মনে হয়েছে আরও দু-চারশ পৃষ্ঠা থাকতে নিমিষেই পড়ে ফেলা যেতো।
গল্পের শেষের দিকের অংশটুকু পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো কিছু উত্তর পাচ্ছিনা। কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছিলো, ভেবেছিলাম লেখক হয়তো গল্পের শেষদিকে এসে খেই হারিয়ে ফেলেছেন কিংবা ভুলে গিয়েছেন এরকম কিছু বাদ যাচ্ছে তার লেখায়। তবে আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে, পরবর্তীতে সময়গুলোতেই লেখক সবটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
একেবারে শেষের দিকে এসে যখন দুই-এক পৃষ্ঠা বাকি একটা প্রশ্ন মনে ঘাটাচ্ছিলো বেশ। কিন্তু উত্তর পাচ্ছিলাম না, ওইদিকে পৃষ্ঠা আর বাকি নেই বেশি। লাইনের পরে লাইন পড়ে যাচ্ছি, তবে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত। এরপরে একদম শেষ লাইনে এসে লেখক দারুন ভাবে সেই উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। যদিও সেই উত্তরটা হজম করা সহজ ছিলোনা। আর উত্তরটা এমনভাবে দিয়েছেন লেখক, যেটাতে মনের মধ্যে হাহাকার রয়ে গিয়েছে প্রবল। ১৬০ পৃষ্ঠায় কিছু একটা তুলে এনে, সেটাকে নিয়ে একদম শেষ অধ্যায়ের, শেষ লাইনে যে হাহাকার সৃষ্টি করেছেন লেখক, তা পাঠককে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
সর্বোপরি, পুরো গল্পটাই বেশ দারুন উপভোগ্য ছিলো। আইনজীবীদের তদন্তের প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে দারুন আইডিয়া পেলাম। আরেকটা দারুন বিষয় হচ্ছে, লেখা পড়েই মনে হচ্ছিলো লেখক বেশ পরিশ্রম দিয়েছেন গল্পটার পেছনে, তবে এটা সেই দারুন বিষয়টা না। দারুন বিষয়টা হচ্ছে, এতোকিছু জানার পরেও লেখক পুরো বই জুড়ে পাঠককে এমন কিছু ফিল দেয়ার চেষ্টা করেননি যে লেখাটা যারা আইন বিষয়ে জানে তাদের জন্য। বরং, তিনি সবকিছু খুবই সহজ স্বাভাবিকভাবে সবকিছু বলে গিয়েছেন। যেটা সবচেয়ে বেশি টেনেছে গল্পটার প্রতি। আইন বিষয়ক কিছু না জেনেও, এই বই ধরার সাহস করে যে ভুল করিনি সেটা লেখকের এই কর্মগুনের জন্যেই সম্ভব হয়েছে। সবশেষে, কাঠগড়া দারুন একটা গল্প। যারা বাংলা সাহিত্যে কোর্টরুম থ্রিলার বা কোর্টরুম ড্রামা পড়তে আগ্রহী, কিন্তু এতোদিন পড়ার মতো কিছুই খুঁজে পাননি, লেখকের তরফ থেকে এটাই তাদের জন্য গিফট। আশা করছি, সামনে আরও ভালো কিছু উপহার দেবেন সম্ভাবনাময় এই লেখক। আমার ব্যক্তিগত রেটিং ৫/৫।
বইঃ কাঠগড়া
লেখকঃ সামসুল ইসলাম রুমি
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৮০
The post কাঠগড়া – সামসুল ইসলাম রুমি appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
জলতরঙ্গ – হাসান ইনাম
মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। কিছু ঘটে যাওয়া জিনিস সেই অদ্ভুত জীবনটাকে বানিয়ে দেয় আরও রহস্যময়। সেই উত্তর সারাজীবন বসে খুঁজে বেরিয়ে যায় মানুষ। মাঝে মাঝে উত্তরটা পেয়ে যায়, মাঝে মাঝে পাওয়া হয়না। তবে সবসময়ই উত্তর পেয়ে গেলেই যে সবকিছু শেষ বিষয়টা তেমনও নয়। ঘোলাটে রয়ে যায় অনেককিছুই। এই সবকিছু মিলিয়েই জীবনের যে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, কিংবা চলতে থাকে সেটাই জলতরঙ্গ।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘ঢাকায় ফাগুন’ হলেও, আমি জলতরঙ্গ দিয়েই শুরু করেছিলাম তার গল্প পড়ার যাত্রা। এই যাত্রায় সামিল হতে গিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলাম অটোগ্রাফকৃত প্রথম বইটিই। যাত্রার শুরুতেই চলছিলো কিছু গুচ্ছ গুচ্ছ ঘটনা। এখন এখানে, তো পরে অন্য কোথাও। এভাবে চলছিলো প্রথম দিকের যাত্রা। গল্প পড়তে পড়তে কখনো ঘুরে এসেছি কুয়েত, কখনো বা উপসাগরে, কখনো ঢাকার চিরচেনা জায়গাগুলোতে। গুচ্ছ গুচ্ছ কয়েকটা ঘটনাকে সামনে এনে, অধ্যায় জুড়ে তিনি তৈরি করেছেন গল্পের ক্যানভাস। যেখানে এনেছেন বহু চরিত্র। ক্যানভাস তৈরি করতে না করতেই, চরিত্রগুলোতে তিনি ছেড়েছেন চোখের সামনে। সেখানেই তারা তাদের জীবন অতিবাহিত করছে, আর মনে হচ্ছিলো সেগুলো আমি দেখেছি নিজ চোখেই!
গল্পটা বিশাল বড় ক্যানভাসের। যেটা লেখনীর গুনে অসাধারণভাবে সামলে গিয়েছেন লেখক। লুপোহোল নামক শব্দটা নেই এই গল্পে। এতো বড় গল্প এভাবে সামলানোটা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। যদিও কিছুক্ষন আগে বলেছি, গল্পটা বিশাল ক্যানভাসের, তবুও যদি গল্পটা সম্পর্কে কিছু কথা বলতেই হয়, সে হিসেবে গল্পটা জীবনের, কিছু মানুষের, বন্ধুত্বের, আর এসবের পেছনে ঠকঠক করে দরজায় কড়া নেড়ে যাওয়া রাজনীতির। বন্ধুর জন্য বন্ধুর যে টান সেটা দেখা গিয়েছে এই গল্পে। এবং সেটা করতে গিয়ে মোটেও কোনো নাটকীয়তার আশ্রয় নেননি লেখক। যদি বলতে হয়, পুরোটাই একদম নিখুঁতভাবে লেখা। এছাড়াও রয়েছে রাজনীতির ভয়াবহ চাল, যেই চাল বুঝে ওঠা আপনার আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সেটাও ন্যাচারালিই দেখিয়েছেন লেখক।
ক্যানভাসের ব্যাপারটা বলতে গেলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে দারুন বিষয় এতো বিশাল প্লট নিয়ে কাজ করা। যেটার জন্য লেখক সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এতো এতো কিছু টেনে এনেছেন গল্পে, সেগুলোর কোনোকিছুই অসংগতিপূর্ণ নয়। সবকিছুই এসেছে গল্পের প্রয়োজনে। আবার ছুটেও যায়নি হাত থেকে কিছুই। সবগুলোকেই একটা দারুন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন লেখক। এতোগুলো চরিত্রকে গল্পে এনে দাঁড় করানো, একই সাথে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে দেয়া সবকিছুই ভালো লেগেছে লেখকের লেখনীর গুনে।
লেখনী সম্পর্কে বলতে গেলে, লেখক খুবই ভালো গল্প বলতে পারেন। প্রতিটা অধ্যায়ের শেষের লাইনগুলো গতানুগতিক লেখার মতো নয়। লেখক পুরোপুরিই আলাদা একটা ধাঁচের ফিনিশিং লাইন দিয়ে অধ্যায় শেষ করেছে। প্রায় অধ্যায়গুলোতেই সেটা পরিলক্ষিত। আপনার পাঠক হিসেবে কি জানার থাকতে পারে, সেটাও আপনার হয়েই বলে গিয়েছেন লেখক। এটা করতে গিয়ে হেয় করেননি পাঠকদেরকে। বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতি পদে, যে তিনি যা বলতে যাচ্ছেন সেটার সাথে পাঠকের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিংবা পাঠক সেটা ইতোমধ্যে জানেন। এসবের বিচারে লেখার ধরণ দারুন ছিলো পুরো গল্প জুড়েই। এমন কিছুই আসেনি যা পড়ার পথে বাধাগ্রস্ত করতে পারে পাঠক হৃদয়কে।
চরিত্র সম্পর্কে আসি এবার। চরিত্রগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক রাখা হয়েছে। সবাই খুবই সাধারণ মানুষ। যারা আমাদের মতোই। হাসে, কাঁদে, আবার কষ্ট পেলেও হাসিমুখে কথা বলে যেতে পারে। আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকেই দেখাতে চেয়েছেন লেখক গল্পে। এমন কেউই নেই যার সাথে নিজেকে রিলেট করতে গেলে ব্যাপারটা কষ্টসাধ্য হবে। চরিত্রগুলোকে ডেভেলপ করতে ভালো সময় দিয়েছেন লেখক। অযথা কিছু না বলেই, চরিত্রগুলোকে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বিষয়টা ভালো লেগেছে অনেক। মনে হয়েছে, লেখার সময় লেখক তাদের জীবনটা অনুভব করতে পারছে! আবার, এটাও বলে যেতে পারে লেখক তাদেরকে খুব ভালো করে চেনে। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা। একটা গল্প লিখতে গিয়ে তার টেনে আনা চরিত্রগুলোকে এমনভাবে তিনি তুলে ধরছেন, যেনো তাদের সবাইকে লেখক চেনেন, বিষয়টা দারুন। কিছু কিছু সময় তিনি দরদ হীন ভাবে চরিত্রগুলোর প্রতি নির্দয় হয়েছেন, সহমর্মিতা দেখাননি। সব মিলিয়ে এক্ষেত্রেও লেখক দারুন কাজ দেখিয়েছেন।
টুইস্ট রয়েছে গল্পটাতে। তবে অবশ্যই একটা নয়। পলিটিকাল থ্রিলার, তার উপর এতো বিশাল ক্যানভাস, এতোগুলো চরিত্র, এসব কি শুধু শুধুই? মোটেও না। কয়েকটা ধাপে রয়েছে সেই টুইস্ট। কিছু টুইস্ট আপনি চার ভাগের তিন ভাগ গল্প পড়ার আগেই আপনাকে বলে দেয়া হবে। আপনি তখনও ভাবতে পারবেন না, এই গল্পে পড়ার আর কিছু নেই, টুইস্ট জেনে গিয়েছি, আর পড়বোনা ইত্যাদি। বিশাল ক্যানভাস জুড়ে তিনি এই জিনিসটাই ধরে রেখেছেন। শেষ দিকে গিয়ে একটা টুইস্ট দিলেও, আপনার মনে হতে থাকবে, ওই নির্দিষ্ট বিষয়টা সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। কিংবা গত অধ্যায়ের শেষে বলা কথাটার কোনো জাস্টিফিকেশন নেই আপনার কাছে। তখন আপনি আবারও সামনে আগাতে বাধ্য হবেন, আবারও পৃষ্ঠা উল্টাবেন। যখন কোনো লেখক তার গল্প দিয়ে পাঠককে এভাবে ধরে রাখতে পারে তখন সেই লেখকের লেখাটা স্বার্থকতা পায়। সেখানেও লেখক বরাবরের মতোই সফল। শেষ টুইস্ট গুলো ছিলো অসাধারণ। মূল জিনিসগুলো জানার পরে, আপনি সবকিছু রিলেট করতে পারবেন। কেনো বলা হয়েছে এতো গল্প, কেনো দেয়া হয়েছে এতো জায়গার বিবরণ, কেনো রয়ে গেছে এতো চরিত্র বিভিন্ন জায়গায়! একদম শেষের টুইস্টটা আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে বহুবার, শতবার। মনে হতে থাকবে, পুরো গল্প জুড়ে তাহলে কি শুধুই আপনি ভুল ভেবে গেলেন? তাহলে কি যা হচ্ছিলো সবকিছু অন্য কারণেই হচ্ছিলো? এভাবেই আপনাকে শেষের দিকে ভাবাবেন লেখক। এটাই ছিলো গল্পের শেষ মাস্টারস্ট্রোক!
ফিনিশিং দারুন ছিলো এই গল্পের। এতো বড় ক্যানভাস যাতে আপনি শেষে গিয়ে খেই হারিয়ে না ফেলেন, তার জন্য লেখক করেছেন দারুন ব্যবস্থা। শেষের দিকে, সব তথ্যগুলো সাজানো আছে আপনার সুবিদার্থে। তবে ভুলেও ভাববেন না, এসব গল্পের বাইরে। এই সাজানো দিকগুলোও গল্পের ভেতরেই দারুনভাবে ইমপ্লিমেন্ট করেছেন লেখক। পুরোটাই গল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যাখা। বই শেষ করার পরে পড়ছেন, বা সেভাবে লেখা হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। লেখক যে এই বিষয়টা মাথায় রেখেছেন পাঠকের জন্য, সেটার জন্য তিনি প্রশংসার দাবীদার। সবগুলো পয়েন্ট আকারে বলে গিয়েছেন এবং আপনি তখনই বুঝতে পারবেন, শুরুর দিকে কোন ব্যাখাটা কিংবা কোন কাজটা কিংবা কোন জায়গাটা কেনো এনেছিলেন তিনি গল্পে।
সর্বোপরি, জলতরঙ্গ দারুন একটি উপভোগ্য উপন্যাস। যেটার গল্প, চরিত্র, ফিনিশিং, এন্ডিং আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। আর এই মুগ্ধ হওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকেই এতোক্ষনে বলে গেলাম জলতরঙ্গ সম্পর্কে আমার মতামত। আশা করি, আপনাদেরও এই উপন্যাসটি ভালো লাগবে। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে মোটেও নিজের ভাবনাগুলোকে সত্যি ভাবতে যাবেন না, লেখক তাহলে আপনার ভাবনাগুলোকে ধোঁকা দিতে তৈরিই আছে জেনে রাখবেন। জলতরঙ্গের সাথে আপনার যাত্রা নিরাপদ হোক!
বইঃ জলতরঙ্গ
লেখকঃ হাসান ইনাম
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩২০
মুদ্রিত মূল্যঃ ৫২০
The post জলতরঙ্গ – হাসান ইনাম appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
July 1, 2023
বেঁচে থাকার গুজব – জুবায়ের ইবনে কামাল
কিছু কিছু অপরাধের সূত্র খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে কিন্তু তিক্ত অভিজ্ঞতা। হতেও পারে সেটা দশ বছর পুরোনো কিছুর সাথে পুরোপুরি জড়িত! বাস্তবতার এই নিষ্ঠুরতা টের পাওয়া বড় দায়। আমরা বুঝে উঠতে পারিনা কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে। কারণ, সেই গল্পটা আমাদের এখনও অজানা।
‘বেঁচে থাকার গুজব’ জুবায়ের ইবনে কামাল-এর প্রথম বই। ফেসবুকে তার লেখালিখির ভক্ত অনেক আগে থেকে থাকলেও, বইতে তিনি তার সেই ভক্তকে নিরাশ করেছেন কিনা সেটা নিয়েই আলোচনা করবো আমি আজ।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : রাস্তার মাঝখানে হুট করেই হয়ে গেলো দুটো খুন। সেটাও সবার সামনে। খুন হওয়া মানুষগুলোর সাথে এতো কিসের ক্ষোভ খুনির? নাকি অন্য কারো ক্ষোভের আগুন নেভাতেই কেউ নেমেছে মাঝরাস্তায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার পাশাপাশি আরো কিছু প্যাঁচিয়ে যাওয়া রহস্যের উত্তর দিতেই এই ১৪৪ পৃষ্ঠার বই বেঁচে থাকার গুজব!
প্রথমত, গল্পটা লেখার ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা অবলম্বন করেছেন লেখক। সেই ভিন্নতা যদিও একটা ছিলোনা। ‘পার্সপেক্টিভ’ জিনিসটা লেখক বিভিন্ন কোণ থেকে দেখিয়েছেন। এই মুহূর্তে যেটা আপনি আপনার চোখের সামনে দেখছেন, সেই একই ঘটনা আপনার অপর পাশের মানুষটা কিভাবে দেখছে কিংবা যার দ্বারা হচ্ছে সে কিভাবে দেখছে এভাবে গল্পটা বলে গিয়েছেন লেখক। এক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে কয়েকটি। একই গল্পে কে কিভাবে ভাবছে সেটা বুঝতে পারা যাচ্ছিলো খুব স্পষ্টভাবেই। এছাড়াও সবার পক্ষ থেকেই একটা জাস্টিফিকেশন ছিলো, যেখানে সবাই তারা ঠিক। এই পার্সপেক্টিভ বিষয়টায় দারুন খেলা দেখিয়েছেন লেখক। মনে করুন আপনি রিকশায় ছড়ে কোথাও যাচ্ছেন, এই সময়ে আপনি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছেন, আর রিকশাওয়ালা মামা রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে। আপনার অনুভূতিটা ঠিক তখন কেমন হবে? আর ওই একই সময়ে রিকশাওয়ালা মামার অনুভূতিটা কেমন হবে? দুটোই কোনো না কোনোভাবে আলাদা হবে তাইনা? সুতরাং, এরকম কিছু যদি দুইদিক থেকে দেখার সুযোগ হয়, তবে সেটা সত্যিই দারুন বিষয়। আমি সেক্ষেত্রে ফিল করতে পেরেছি, নিরপরাধ আর অপরাধী দুই পক্ষের মানুষেরই চাহিদা, ইচ্ছা কিংবা বলা যেতে পারে ‘পার্সপেক্টিভ’
ভিন্নতার দ্বিতীয় ধাপে, প্রতিটা অধ্যায় শেষেই লেখক বিখ্যাত কিছু কবিদের কবিতার লাইন, কুরআনের আয়াত, বাইবেলের লাইন ইত্যাদি রেখেছেন। এটাকে ট্রিবিউট বললেও ভুল হবেনা। যাদেরকে আপনি ছোটবেলা থেকে চেনেন তাদেরকে আপনি একটা বইয়ের ভেতরেই পড়তে পারছেন, কিংবা যা আপনি বিশ্বাস করেন সেসবও পড়তে পারছেন, এটা সত্যিই দারুন মুগ্ধতার একটা বিষয়। তবে এক্ষেত্রে কবিতার লাইন কিংবা আয়াত বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন লেখক।
দ্বিতীয়ত, ধরুন লেখক আপনাকে বলে দিয়েছেন আগেই যে খুনি খুনটা কিভাবে করেছে। এরপরে গোয়েন্দারা এলেন এবং খুঁজে যাচ্ছেন কি হয়েছে আসলে এখানে। তবে আপনি শুরু থেকেই বিষয়টা জানেন। গোয়েন্দারা যেখানে হিমসিম খাচ্ছে খুনের প্যাটার্ন খুঁজে বের করতে, সেখানে ইতোমধ্যে আপনাকে বলে দেয়া হয়েছে সমস্ত কিছুই। এই জেনে যাওয়া বিষয়টা পাঠক হিসেবে আমাকে দারুন অনুভূতি দিয়েছে। ‘আরেহ! আমি তো জানিই কিভাবে হয়েছে!’ এই অনুভূতিটা ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য। তবে প্যাটার্ন আগেই বলে দেয়ার বিষয়টা অনেকটা রিক্সি হয়ে যায়। কারণ, পাঠক তখন গল্পটা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে কিংবা বোরিং ফিল করতে শুরু করে। তবে সেক্ষেত্রেও উতরে গিয়েছেন লেখক। সবকিছু বলে দেয়ার পরেও মোটিভের অপেক্ষায় আটকে রেখেছেন পাঠককে।
তৃতীয়ত, ‘এই ভালো এই খারাপ, ওওওও’ ভাববেন না তৃতীয়ত বলে এটা কেনো লিখলাম। এই গানটা আপনারা শুনেছেন কিনা জানিনা, তবে এই গানটার এই একই লাইনটাই লেখক যেভাবে তার লেখায় টেনে এনেছে সেটা আমাকে হাসতে রীতিমতো বাধ্য করেছে বলা যায়। পুরো লেখার ভেতরে এরকম কয়েকটা জিনিস আছে যেগুলো পড়ে খুবই হাসি পাচ্ছিলো। সেক্ষেত্রে লেখকের চেষ্টা এক্ষেত্রেও সফল। তিনি হাসাতে পেরেছেন, এরকম সিরিয়াস একটা গল্প বলতে গিয়েও।
গল্পটার প্লট নিয়ে যদি বলতে হয়, তবে ফ্ল্যাপে যতোটা সাবলীলভাবে লেখাটা ততটা মোটেও নয়। লেখকের গল্পের ডিজাইন ছিলো অন্যরকম। তিনি পুরো বই জুড়ে পাঠককে ধরে রাখতে খুব দারুনভাবে সক্ষম হয়েছে। অধ্যায় শেষে, কবিতার লাইনের আগে রেখে গিয়েছেন কিছু দারুন লাইনও। যেগুলো আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেবে, আপনার মোটেও তখন ইচ্ছে করবেনা বইটাকে হাত থেকে রেখে অন্য কিছু করতে। দুটো খুনের সম্পর্ক কি? কেনো হয়েছে এটা? এই খুনগুলোর সাথে পুরোনো কোনো একটা রহস্যের সংযোগটাই কিংবা কোথায়? এতোগুলো প্রশ্ন তৈরি করেছেন লেখক খুব দ্রুতই। যেখানে ফ্ল্যাপ পড়ে আমি জাস্ট দুটো খুনের হত্যার কারণ জানতে লেখকের সাথে ছিলাম, সেখানে লেখক হাজারও অজানা প্রশ্ন তুলে এনে পুরো থমকে দিলেন আমাকে। যেনো তিনি পৃথিবীর গল্প শোনানে এনে, কল্পনায় ঘোরাচ্ছেন পুরো সৌরজগত। এক্ষেত্রেও লেখক প্রশংসার দাবিদার। একটা গল্পকে অনেকগুলো এঙ্গেল থেকে দেখা যায়, সেটা বুঝিয়ে দিলেন লেখক।
চরিত্রগুলোর ভেতরে খুব ক্ষমতাবান মানুষজন থাকলেও, তাদেরকে স্বাভাবিক আর সাধারণ রেখেছেন পাঠকের স্বার্থে। সব গোয়েন্দা অফিসারই যে সবসময় কফিই খাবেন, বাস্তবে কিন্তু এমনটা হয়না। হতেও পারে তিনি অন্য কিছু খাচ্ছেন স্বাভাবিক মানুষের মতো। আবার এও হতে পারে তিনি পেঁপে খাচ্ছেন সাধারণ মানুষগুলোর মতো, তাইনা? এভাবেই রেখে গিয়েছেন তিনি চরিত্রগুলোকে বইয়ের প্রতিটা পাতায়। তাদের তদন্তের ধাপগুলোকে খুবই সাবলীলভাবেও দেখিয়েছেন একইসাথে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় লেখক এটাই চেয়েছিলেন, যে তার সবগুলো চরিত্রই হিউম্যান বিইং আকারে থাকুক। সেক্ষেত্রেও তিনি সফল হয়েছে শতভাগ।
গল্প শেষ। খুনি ধরা পড়েছে। জবানবন্দি দিয়েছে। এরপরেও ছিলো কিছু বাড়তি পৃষ্ঠা। কে জানে, কি করতে চাচ্ছেন লেখক এই বাড়তি পৃষ্ঠাগুলোতে! এই ভেবেই যখন পড়া শুরু করলাম, দেখা গেলো রোলার কোস্টার রাইড রেখে গিয়েছেন তিনি শেষ কয়েকটা পাতাতেও। শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু জানতে পেরে গিয়েছি, ভাবতে না ভাবতেই মুহুর্তের মধ্যে লেখক শুরু করে দিয়েছিলেন তার শেষ চাল। পুরোপুরিই রোলার কোস্টার রাইড ছিলো শেষের অংশটুকু। যেখানে তিনি রেখে গিয়েছেন প্রশ্ন। বিশাল বড় প্রশ্ন। আমার সেই প্রশ্নটা দেখে মনে হয়েছিলো, ‘এই গল্প আমার এখনও অজানা’
সর্বোপরি, দারুন একটা সময় কেটেছে জুবায়ের ইবনে কামাল-এর প্রথম বই ‘বেঁচে থাকার গুজব’ এর সাথে। এবং তিনি আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। তার লেখার হাতের প্রতি থাকা বিশ্বাসের জন্যেই অনেকদিন থেকে অপেক্ষা করছিলাম এই বইয়ের। অধ্যায় শেষে কবিতা রেখে যাওয়ার মতো করেই তিনি, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার লেখনীর গুনে তিনি আটকে রেখেছেন আমাকে তার গল্প জুড়ে। শুরুর দিকের অধ্যায়গুলোতে খুবই সফট টোনেও বলে গিয়েছেন কিছু গল্প। সেই সফট টোন যেমন মুগ্ধ করেছে, মুগ্ধ করেছে ক্রাইমের ক্ষেত্রে তার সাবলীলভাবে ব্যবহার করা ‘থ্রিল’ টোন। সবমিলিয়ে পড়া শেষ করে মনেই হয়নি এটা তার প্রথম বই। এই যাত্রায়ও তিনি আবার নিজেকে প্রমাণ করলেন। লেখকের জন্য মন থেকে শুভকামনা। তিনি সামনের দিনগুলোতে যেনো আরও নানা গল্পে তার লেখনশৈলীর জাদুতে বুদ করে রাখতে পারেন পাঠক হৃদয়। সেটাই কাম্য।
‘তুমি যা ভাবছো, তা যদি দেখতে না পাওভেবোনা আমি মনে মনে রেখেছি সে গল্প,মন্ত্রমুগ্ধের মতো তুমি সে গল্পেই বুধ হয়ে রওকিছু উত্তর দেবোই, যা পুরোটা না হলেও অল্প!’-সিয়াম মেহরাফ
বইঃ বেঁচে থাকার গুজব
লেখকঃ জুবায়ের ইবনে কামাল
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
পৃষ্ঠাঃ ১৪৪
মুদ্রিত মূল্যঃ ২২০
The post বেঁচে থাকার গুজব – জুবায়ের ইবনে কামাল appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
June 27, 2023
অস্বীকার করতে পারবে?
তুমি যাওয়ার পরদিন থেকেই আমার বিকেলে গাছপালা উড়িয়ে দেয়া ঝড় নামে। এই ঝড় কি আমার বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগ, অভিমান নাকি আমার না পাওয়ার কষ্টগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার উচ্ছাস তা জানার উপায় নেই। তবুও এই ঝড়ে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি হয়ে নামতে থাকে আমার করুন কস্টের সুর। প্রকৃতির বিষন্নতাও সায় দেয় আমার বিষন্নতার সাথে। আর তার হিংস্রতার ভয়ে কাঁপতে থাকি আমি। তোমার অভিমানের মতো কড়া মেজাজ এই হিংস্রতারও আছে। আমার সাথে তাল মেলায়না ওরা। আমার গা ঘেঁষে বাতাস সাই-সাই করে ছুটে চলে যেতে থাকে। সে বাতাসকে হাতের মুঠোয় বন্দি করতে গেলেই তা যেনো মিইয়ে যায়। যেভাবে তুমি এই ঝড়ের আগে মিইয়ে গিয়েছিলে আমার বুকের মুঠো থেকে। এই ঝড়ো বাতাসের মতো আমাকেও পাশ কাটিয়ে যাওয়া কি তুমি অস্বীকার করতে পারবে?
তোমার অপেক্ষায় আমি যে ঠিক ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি, যেভাবে প্রখর রোদে পুড়তে থাকা পথিক আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা করে। সে জানেনা কবে আকাশ ভেঙ্গে আসবে সেই তীব্র প্রতিক্ষায় থাকা বৃষ্টি, তবুও যেনো তার আকুল আবেদন। সেই আবেদনের মতো করে, আমি তোমায় ফিরে পাওয়ার আবেদন করতে থাকি। চাতক পাখি কিংবা ওই পথিক দুজনেরই অপেক্ষার চাইতেও যে আমার অপেক্ষা তীব্র তা কি তুমি অস্বীকার করতে পারবে?
সেভাবেই ঝড়ে ভেঙ্গেচুরে পরতে থাকে গাছের ডাল-পালা, যেভাবে আমি ভেঙ্গেচুরে পরতে থাকি তোমার সাথে আমার তৈরি হওয়া দূরত্বে। তবুও আকাশে মেঘে মেঘে ঘর্ষণের মতো করে তোমার আর আমার দেখা হওয়া হয়না। দুই প্রান্তের দুই পাখি ঝড় টের পেলে দিগ্বিদিক যেভাবে ছুটতে থাকে, সেভাবেই তুমি ছুটে চলে যাও আমার থেকে বহুদূরে। মরুভূমির উপর দিয়ে হেঁটে চলতে থাকা মানুষটার মাথার উপর দিয়ে মেঘ আসি আসি করেও চলে গিয়ে যেভাবে তার পিপাসাকে বাড়ায় বর্ষার লোভ দেখিয়ে, তুমি আমার থেকে দূরে চলে গিয়ে তোমাকে দেখার সেই পিপাসা বাড়িয়ে দাওনি তা কি তুমি অস্বীকার করতে পারবে?
“অস্বীকার করতে পারবে?”
-সিয়াম মেহরাফ
২৮ মে ২০২৩, রাত ১০ টা ৪২
The post অস্বীকার করতে পারবে? appeared first on সিয়াম মেহরাফ.
কারো ‘প্রিয় মানুষ’ হয়ে যাওয়া কি খুব সহজ?
কারো জীবনের প্রিয় মানুষ হয়ে যাওয়াটা খুব বেশি সহজ নয়। প্রিয় মানুষ হয়ে থাকতে গেলে অভিমান বুঝতে হয়, বুঝতে হয় কথার ধরণ, মুখের কথার আর মনের কথার ভেতরের ব্যবধান বোঝার যোগ্যতাও থাকতে হয় খুব করে, বুঝতে হয় তার ধ্যান-ধারণা, করতে হয় তার চিন্তা-ধারার পরিমাপও।
আপনি যার জীবনের প্রিয় মানুষ, তার জন্য আপনিই তার জীবনের ফার্স্ট প্রায়োরিটি। সে সব কাজ ফেলে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে, আপনার কথা শুনবে, আপনাকে সময় দেবে। অথচ, আপনি জিজ্ঞেস করলে বলবে, “সমস্যা নেই।” এই ‘সমস্যা নেই’ এর মাঝেও যে পরিমাণ সমস্যাকে অগোচরে রেখে সে আপনার জন্য এই মুহুর্তে উপস্থিত, এবং তার ভেতরে সেই সমস্ত সমস্যাকে উপরে ফেলতে গিয়ে আপনাকে দূরে ঠেলে দেয়ার কোনো বাহানা নেই সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে এই ‘সমস্যা নেই’-টুকুর ভেতরে তার অনেক কাজ আটকে গেলেও সে আপনার জন্য সবসময় উপস্থিত থাকতে চায়। থাকতে চায় আপনার পাশে। সে তার হাজারো কাজ বাদ দিয়েও যখন আপনাকে বলছে, তার আসলেই কোনো ‘সমস্যা নেই’, সেটার মানে হচ্ছে আপনি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেউ। এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা হতে গেলে তার মতো আপনাকেও দিতে হবে নিজস্ব ইফোর্ট।
যে তার সব কিছু ফেলে আপনার জন্য সবসময় উপস্থিত থাকে, তার ক্ষেত্রে অবহেলা করে ফেললেই আপনি তার প্রতি থাকা নিজের দায়িত্ববোধগুলোকে তুচ্ছতায় ভরিয়ে ফেলবেন। তার ইফোর্ট সর্বোচ্চ থাকার পরেও, আপনার এফোর্ট সর্বনিম্ন স্তরে কিংবা তার ইফোর্টের সাথে না মিললে সেই ব্যর্থতার দায়ভারটুকুও সম্পূর্ণ আপনার।
কারো প্রিয় মানুষ হয়ে, সেই জায়গাটা ধরে রাখাটা আসলেই সহজ নয়। যে তার সবকিছু ফেলে আপনার জন্য একধাপ এগিয়ে থাকে, তার জন্য আপনি নিজের ব্যর্থতাকে ডিঙ্গিয়ে না যেতে পারলেই আর আপনি তার প্রিয় মানুষ হিসেবে যোগ্য থাকবেন না। যে আপনার জন্য করে, তার জন্যেও করতে পারাটা তার একান্ত প্রাপ্য।
-সিয়াম মেহরাফ
২রা এপ্রিল ২০২৩
The post কারো ‘প্রিয় মানুষ’ হয়ে যাওয়া কি খুব সহজ? appeared first on সিয়াম মেহরাফ.