সন্ধ্যাক্রান্ত দুপুর
মৃত্যু এতো বাস্তব, কঠিন তবু এই ঘটনাটিকে আমার চিরকাল অলৌকিক মনে হয়। মানে আমাদের সঙ্গে থাকছে, হাসছে, গল্প চলছে, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি চলছে এমন মানুষেরা স্রেফ জীবন থেকে নেই হয়ে যায় একদিন হুট করে। কোনো কোনো সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মনে হয়, সোফার একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রৌদ্রদগ্ধ খাঁ খাঁ দুপুরের শূন্যতা, রান্নাঘরে চামচ নাড়ানাড়ির শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখব কেউ নেই। হঠাৎ রাত একটায় কোনো বই শেষ করে উত্তেজিত হয়ে খুঁজব যাকে, দুটো কথা ভাগাভাগি করা যাবে এমন অসাধারণ বই নিয়ে, কিন্তু সেই মানুষটাকে, মানুষগুলোকে আর পাওয়া যাবে না। কোনোদিন আর দেখা হবে না, কন্ঠস্বর আসবে ভেসে কেবল স্মৃতি থেকে।
আবার দেখি যে, মধ্যবিত্তের দুঃখবিলাসের সঙ্গে এই অলৌকিকতা যাচ্ছে। গত সপ্তায় আগারগাঁও থেকে বাংলামোটর যাবার পথে সেই যে অনেক মানুষের দেখা পেলাম, জায়গাটার নাম কী? পান্থকুঞ্জ। ফুলের বাগানের পিছন দিকটায় দেয়াল ঘেঁষে গোটা বিশেক পরিবার সংসার পেতেছে। ছাদ নেই মাথার উপর। শুধু সরঞ্জাম, মলিন বিছানা, একে অন্যের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে নারীরা, পুরুষেরা বিড়ি ফুঁকছে, শিশুরা ঘুমিয়ে কাদা আর কেউ কেউ নানান যায়গা থেকে ফিরে আসছে। এদের কাছে মৃত্যু কেমন? এক যে বৃদ্ধ ফুটপাথে গর্তের ধারে বসে পেশাব করছিল, উন্মুক্ত পিঠ, চামড়া ঢলঢলে, পাঁজরের হাড় গোনা যায় আর খুব খুব কাশে, উনি মারা গেলে স্বজনেরা কী করবে? পরের দিন যাদের আহারের সংস্থান নেই, ঘুমানোর জায়গাটি যে কোনো সময় উচ্ছেদের চিন্তায় কাঁপছে, তাদের মাঝে কেউ মারা গেলে অনেক হ্যাপা। লাশ সৎকারে টাকা লাগে। কবরস্থানে ওদের জন্য মাটিও কি মেলে?
তবু জানি, মৃত্যু সবার কাছেই একই রকম। যার শোক করবার অবসর নেই, উদাসিনতা কাকে বলে যে জানে না, সে তো আসলে এও জানে না তার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে আছে আরেকটি হৃদয়। সেই গোপন মন তাকে না জানিয়েই ক্ষত-বিক্ষত হয়। যে ক্ষত তার থেকে কিছু কিছু করে জীবন শুষে নেয় মলম হিসেবে, ইটের ভাঁটায়, কন্সট্রাকশন সাইটে খোয়া ভাঙতে ভাঙতে মনের ভুলে তাদের হাতে হাতুড়ির ঘা পড়ে না? মলিন পোশাক, পায়ে জুতো নেই, চুল তামাটে হয়েছে অপুষ্টিতে এমন যুবক কোনো ভাইকে আমরা দেখি না নগরের রাস্তায় দৌড়াচ্ছে? বোনটিকে বাঁচাতে হবে, মারণব্যাধি, তবু চিকিৎসা না হলেই নয়। এই ভাইটির বেদনা আমাদের ঐ মাঝরাতে মৃতদের জন্য টের পাওয়া শূন্যতায় কেমন মিলে যায়!
মৃত্যু অলৌকিক এই কারণেও, সে সবার কাছে সমান হয়ে আসে। জীবন যে একটা সিঁড়ির নানান স্তরে আমাদের রাখে, এত এত বৈষম্য, সমতাহীনতা, মৃত্যু এসে ওসব ভেঙে দেয়। মৃতেরা নিশ্চয় তাদের জগত পার করে নাতিশীতোষ্ণ মৌসুমের সীমানাহীন এক সমতল ভূখন্ডে, কোনো উঁচু নিচু নেই, এমনকি সমান ওখানকার সবুজ ঘাসগুলোও।
//৩রা মার্চ, ২০১৮, মঙ্গলবার
আবার দেখি যে, মধ্যবিত্তের দুঃখবিলাসের সঙ্গে এই অলৌকিকতা যাচ্ছে। গত সপ্তায় আগারগাঁও থেকে বাংলামোটর যাবার পথে সেই যে অনেক মানুষের দেখা পেলাম, জায়গাটার নাম কী? পান্থকুঞ্জ। ফুলের বাগানের পিছন দিকটায় দেয়াল ঘেঁষে গোটা বিশেক পরিবার সংসার পেতেছে। ছাদ নেই মাথার উপর। শুধু সরঞ্জাম, মলিন বিছানা, একে অন্যের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে নারীরা, পুরুষেরা বিড়ি ফুঁকছে, শিশুরা ঘুমিয়ে কাদা আর কেউ কেউ নানান যায়গা থেকে ফিরে আসছে। এদের কাছে মৃত্যু কেমন? এক যে বৃদ্ধ ফুটপাথে গর্তের ধারে বসে পেশাব করছিল, উন্মুক্ত পিঠ, চামড়া ঢলঢলে, পাঁজরের হাড় গোনা যায় আর খুব খুব কাশে, উনি মারা গেলে স্বজনেরা কী করবে? পরের দিন যাদের আহারের সংস্থান নেই, ঘুমানোর জায়গাটি যে কোনো সময় উচ্ছেদের চিন্তায় কাঁপছে, তাদের মাঝে কেউ মারা গেলে অনেক হ্যাপা। লাশ সৎকারে টাকা লাগে। কবরস্থানে ওদের জন্য মাটিও কি মেলে?
তবু জানি, মৃত্যু সবার কাছেই একই রকম। যার শোক করবার অবসর নেই, উদাসিনতা কাকে বলে যে জানে না, সে তো আসলে এও জানে না তার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে আছে আরেকটি হৃদয়। সেই গোপন মন তাকে না জানিয়েই ক্ষত-বিক্ষত হয়। যে ক্ষত তার থেকে কিছু কিছু করে জীবন শুষে নেয় মলম হিসেবে, ইটের ভাঁটায়, কন্সট্রাকশন সাইটে খোয়া ভাঙতে ভাঙতে মনের ভুলে তাদের হাতে হাতুড়ির ঘা পড়ে না? মলিন পোশাক, পায়ে জুতো নেই, চুল তামাটে হয়েছে অপুষ্টিতে এমন যুবক কোনো ভাইকে আমরা দেখি না নগরের রাস্তায় দৌড়াচ্ছে? বোনটিকে বাঁচাতে হবে, মারণব্যাধি, তবু চিকিৎসা না হলেই নয়। এই ভাইটির বেদনা আমাদের ঐ মাঝরাতে মৃতদের জন্য টের পাওয়া শূন্যতায় কেমন মিলে যায়!
মৃত্যু অলৌকিক এই কারণেও, সে সবার কাছে সমান হয়ে আসে। জীবন যে একটা সিঁড়ির নানান স্তরে আমাদের রাখে, এত এত বৈষম্য, সমতাহীনতা, মৃত্যু এসে ওসব ভেঙে দেয়। মৃতেরা নিশ্চয় তাদের জগত পার করে নাতিশীতোষ্ণ মৌসুমের সীমানাহীন এক সমতল ভূখন্ডে, কোনো উঁচু নিচু নেই, এমনকি সমান ওখানকার সবুজ ঘাসগুলোও।
//৩রা মার্চ, ২০১৮, মঙ্গলবার
Published on March 22, 2018 04:58
No comments have been added yet.


