আন্তোনিও লুবো আন্তুনেস: পর্তুগিজ মাস্টার

 

আন্তোনিও লুবো আন্তুনেস এই মুহুর্তে বা বলা যায় গত কুড়ি বছর আগে থেকেই সমসাময়িক পর্তুগিজ লেখকদের মধ্যে লেজেন্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তাঁকে নোবেল দেওয়ার কথাও প্র‍তি বছরই উঠে থাকে। কিন্তু প্রায় সকলেই একবাক্য বলেন, আন্তুনেসকে অনুবাদ করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, একে তো তিনি অন্য কোনও লেখকদের মতোই লেখেন না, হোসে সারামাগো বা ফের্নান্দো পেসোয়ার গদ্যের চেয়ে তাঁর গদ্যের চলন সম্পূর্ণ আলাদা, তার ওপর আন্তুনেসের লেখায় একটা আনঅ্যাপোলজেটিক 'নগ্নতা' আছে। সেই নগ্নতা সাহিত্য এর বেশ ধরে গদ্যকে আবৃত করে রাখে, পর্তুগিজ পাঠক বুঁদ হয়ে এই গদ্যের জাদুতে পড়ে চলে। এক একটা বাক্য চলছে তো চলছেই, এক পাতা দু পাতা চার পাতা, মাঝে মাঝে ছয় সাত পাতা ধরে একটাই বাক্য, কিন্তু ঝানু পাঠক বাদেও আম জনতা নেশায় পড়ে সেই লেখা পড়ছে, কেউ মাঝখান থেকে ছেড়ে দেয় না। ও জিনিস ইংরেজিতে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব, কারণ ভাষার একটা সীমাবদ্ধতা তো থাকেই।আমার আপাতত অনুবাদ ক্লাসিক পড়ার ফেজ চলছে, তাই আন্তুনেসের এই বইটা আবার নতুন করে অনুবাদ হয়েছে বলে পড়ার ইচ্ছে হল। আরেকটা কারণ, মার্গারেট জুলি কোস্তা ভীষণ ভালো অনুবাদ করেন, সেটা 'দ্য বুক অদ ডিসকোয়াইট' পড়েই বুঝতে পেরেছিলাম। আগের অনুবাদের সঙ্গে এই অনুবাদের কিছু পার্থক্য তো থাকবেই, মূল লেখার স্বাদও অনেকটা বেশি থাকবে বলেই আন্দাজ করেছিলাম। পড়ে বুঝলাম, আন্দাজটা ঠিকই ছিল।আন্তুনেসের এই বইটা কোনো উপন্যাস নয়। ভদ্রলোক আর্মিতে ডাক্টার ছিলেন, পর্তুগিজ যখন সত্তরের প্রথম দিকে সালাজারের স্বৈরাচারী শাসনের শেষ পর্যায়ে, আফ্রিকার কলোনিগুলোতে মারামারি চলছে। দেশে বিধ্বস্ত অবস্থা, এদিকে আঙ্গোলার মতো জায়গায় লোকাল রিভোল্ট দমানোর জন্য ছেলেছোকরাদের জুতে দেওয়া হয়েছে, যুদ্ধ শিবিরে পাঠানো হয়েছে আন্তুনেসকেও। সেই দু আড়াই বছরের স্মৃতিচারণাই এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু। বলা যায়, এক দীর্ঘ বিটার, মেলানকলিক মোনোলগ। সমসাময়িক পর্তুগাল আর আঙ্গোলার খুঁটিনাটি জানা যায়, সৈনিকদের মনোস্থিতি ধরা পড়ে, কিন্তু লেখার আসল জায়গা হলে সেই অসামান্য গদ্য, আন্তুনেসের সিগনেচার 'নিউড প্রোজ'। একেবারে মোহগ্রস্ত করে ফেলার ক্ষমতা আছে লেখকের। পুরো লেখাটাই 'তোমাকে' উদ্দেশ্য করা লেখা, সেই শ্রোতার পরিচয় পেতে পেতেই বই শেষ, এবং তার পরিচয়ের বিশেষ কোনও প্রয়োজনও ছিল না। গোটা বই জুড়ে রাগ, বিরক্তি, নস্টালজিয়া আর যুদ্ধের অসহায়তা... ফিলগুড মোমেন্ট একটাও আছে বলে মনে পড়ছে না। আন্তুনেস পরবর্তীতে একের পর এক ক্লাসিক লিখেছেন, সে সবও আশা করি নতুন করে অনুবাদ হবে। কিন্তু তাঁর গদ্যের ম্যাজিক ইংরেজিতে ধরার জন্য জুলি কোস্তা যে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন তাতে কোনও সন্দেহই নেই। প্লটবিহীন লিটারারি মেমোয়ার পড়ার ইচ্ছে হলে চমৎকার বই।
 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on September 18, 2024 14:15
No comments have been added yet.