দ্য কুইন অফ শর্ট নভেলস: বেলজিয়ান সাহিত্যের রানি
ভালো সাহিত্যিক হওয়া আর ভালো স্টোরিটেলার হওয়া এক জিনিস নয়। দুটো মুচুয়ালি এক্সক্লুসিভ হবে এমন জরুরি নয়, তবে হবে না তার গ্যারান্টিও কেউ দিতে পারবে না। মহৎ সাহিত্য লিখেও তার মধ্যে একটা নিটোল গল্প বুনে দেওয়ার বিদ্যা যাঁরা আয়ত্ত করেছেন, তাঁরা নমস্য মানুষ। তার চেয়েও বেশি ক্রেডিট সেই সমস্ত কলমের, যাঁরা গল্প হয়তো সেভাবে বলছেন না, কিন্তু যাই বলছেন, পাঠক গল্পের মতো করে পড়ে যাচ্ছে, একবারের জন্যও হোঁচট খাচ্ছে না। আমেলি নাথোম্ব এই ঘরানার সাহিত্যিক। উচ্চারণে হেরফের হতেই পারে, মাফ করবেন।হঠাৎ করে আমেলির কথা মনে পড়ল কেন? কারণ, কাল সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হবে আর বেটিং টেবিলের ঊর্ধ্বে থাকা যে কয়েকজন কলমের দিকে অনেকে তাকিয়ে থাকেন, তিনি হয়তো আগামীতে এই লিস্টে চলে আসলেও আসতে পারেন। প্রথমত, বেলজিয়ামের সাহিত্যিকদের মধ্যে হয়তো কেউই আমেলির মতো প্রলিফিক নন। তাঁকে বলা হয় দ্য কুইন অফ শর্ট নভেলস। অজস্র গল্প, নভেলা, উপন্যাস লিখেছেন, ফি বছর একটা তো আসেই। আমি আগে বেশ কিছু পড়েছি, আর বারবার মনে হয়েছে, ইনি 'ওস্তাদ' লেখিকা। আমেলির অধিকাংশ কাজই যাকে বলে অটোবায়োগ্রাফিকাল, কিন্তু পড়তে একঘেয়েমি হয় না, কারণ পার্স্পেক্টিভের জায়গা থেকে তিনি প্রতিবার এমন একটা স্ট্যান্ড নেন, যা আগে পাওয়া যায়নি। ন্যারেটিভে সত্তা, অবসাদ, প্রত্যাশা, মৃত্যু সম্পর্কিত যে সমস্ত প্রশ্ন উঠে আসে, যেভাবে উঠে আসে, তাতে পাঠক লেখার গভীরতা অনুভব করে ঠিকই, কিন্তু সেই ক্রাইসিস মাথায় নিয়ে মাঝজলে ডুবে যায় না। তবে, এই উপন্যাসটার ছবি দিয়েছি একটা বিশেষ কারণে। আমেলির এই ছোট্ট একশো কুড়ি পাতার বইটা অটোফিকশন নয়, বরং তাঁর বাবার জীবন নিয়ে লেখা একটা কাহিনি। অনেকটাই বাস্তব, তবে কতটা কল্পনা কতটা বাস্তব বোঝার উপায় নেই। প্রসঙ্গত, আমেলির বাবা ডিপ্লোম্যাট ছিলেন, তিনি নিজে নানান দেশে থেকে বড় হয়েছেন। কঙ্গোতে ষাটের দশকে বিপ্লবীরা তাঁর বাবা সমেত অনেককে হোস্টেজ নিয়ে রেখেছিল, প্রায় চার মাস ধরে নেগোশিয়েশন চলেছিল তাঁর সঙ্গে। বইয়ের প্রথমেই দেখা যায়, তিনি বন্দুকধারীদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, এক্ষুনি ফায়ারিং স্কোয়াডের গুলি তাঁকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এমন সময় তাঁর বাবা প্যাট্রিক নাথোম্ব তাঁর অতীত জীবনের কথা ভাবতে শুরু করেন। যে সাবলীল ভাবে এই স্মৃতিচারণ এগিয়ে গিয়েছে, তাতে মাঝপথে থামতে ইচ্ছে করে না। আমেলির বাবা কোভিডের সময় মারা গিয়েছেন, যতদূর জানা যায় খুবই ইমোশনাল, চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার অভাব ছিল না। আমেলি বহুদিন ধরে তাঁর বাবার অতীত ও জীবনকে আবিষ্কার করার জন্য লেগে আছেন। হয়তো এই বইটা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন! বাবাকে নিয়ে কতজন কত লেখাই তো লেখে, কিন্তু ফার্স্ট পারসনে লেখা এমন অভিনব, সৎ, আউট অফ দ্য বক্স বাস্তবানুগ উপন্যাসিকা ক'টা লেখা হয় কে জানে?
Published on October 08, 2024 12:49
No comments have been added yet.


