দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান এবং দস্তয়েভস্কি

আমি একজন অসুস্থ লোক। দুষ্টু লোক ও বলতে পারেন। দেখতেও সুবিধার নই! এদিকে স্টমাক পেইনে নড়তে পারছি না। জানিনা কি হয়েছে! ডাক্তার দেখানো জরুরি কিন্তু ডাক্তারের কাছে যেতে আমার বড় অনীহা। তাকে যে আমার পছন্দ নয়! তবে হ্যাঁ, যেহেতু পড়াশোনা করেছি ডাক্তারী পেশাকে তো আর অসম্মান করতে পারি না! আর কুসংস্কারেও আমার অবিশ্বাস। শুধুমাত্র অপছন্দের খাতিরেই ডাক্তারের কাছে কখনোই যেতে চাই না। এজন্য লোকসানই বা হচ্ছে কার? আমারই তো! নাকি? হতে থাকুক। এভাবেই তো বিশ বছর পার করে ফেলেছি ইতিমধ্যে..

নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড

উপরের এই কথাগুলো বুঝে উঠতে পারবেন না এটা স্বাভাবিক ধ’রলে আপনি পড়বেন ঠিক ওই ডাক্তার কিসিমের লোকের দলে। আর আমি আজ ঢুকে যাবো ক্ষ্যাপা ঐ আন্ডারগ্রাউন্ড এর লোকটার মগজে।

সাধারণ মানুষের ধর্ম হচ্ছে-তারা কথায় কম, কাজে বেশি বিশ্বাসী। ঘুম থেকে উঠবে, ঘুমাতে যাবে এবং মাঝের সময়টাতে ‘ল অব ন্যাচার’ কে মাথায় রেখে জীবন আরোপিত করবে। ইতিহাস এবং আধুনিকতার উদাহরণ টানলে দেখা যায় মানবসভ্যতা কোনো দরকারে মানুষের বৈশিষ্ট্যকে নমনীয় ক’রে তোলে নি। বরং মানুষ দিনে দিনে হয়েছে অনুভূতিহীন, অনিশ্চিত, যান্ত্রিক। তারা সজাগ থেকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ সমস্ত পথ বেছে নিয়েছে যেখানে নিজস্ব প্রবৃত্তির তোয়াক্কা করা হয় না। যে সমস্ত পথ তাদেরকে আরো সচেতন করে তোলে। যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য কল্যানকর।
কারণ দেখা যায় আমরা যেটা সবসময় চাই সেটা হতে পারে সমাজের যাবতীয় নিয়মকানুন বহির্ভূত এবং গতানুগতিক ধারনার বাইরে। এই আক্ষাঙখা গুলো কোনো যুক্তি মানেই না বরং জন্ম দেয় অযাচিত ফলাফলের, বিশৃঙ্খলার।

অন্যদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান বিশ্বাস করে সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা ধর্মে আশ্রিত নিয়ম কানুন ‘ল অব ন্যাচার’ এর মানদণ্ড অনুসরণ করে চলে ঠিকই। তবে তাতে অনেকটা নিজস্ব ইচ্ছাবৃত্তির (ফ্রি উইল) মৃত্যুও হয়। প্রকৃতি আপনাকে নাড়াচ্ছে যেভাবে সেভাবেই আপনি নড়ছেন। অনেকটা কাঠের পুতুলের মতন।

ক্রিস্টোফার হিচেন্সই তো বলেছিলেন, “ইয়েস আই হ্যাভ ফ্রি উইল; আই হ্যাভ নো চয়েজ বাট টু হ্যাভ ইট।”
তারমানে কি এই না-যে-এটা সহজাত কোনো উপহার। যেটাকে বর্জন করা তো যায়-ই না বরং গ্রহণ করার পর প্রয়োগ করা যায় কিনা কিংবা ঠিক কতটুকু করা উচিৎ-সেটাই বুঝে ওঠা কঠিন!

ধরা যাক, আজ থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান সমাজের নিয়মকানুনের ধার ধরবে না। তলকুঠুরিতে গিয়ে লুকাবে। আবার হঠাৎ একদিন লোকটার ইচ্ছে হবে তার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে কসিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে বা তখনকার রাশিয়ার সমাজব্যবস্থাকে। তার এমন বেপরোয়া ইচ্ছার কারন হতে পারে অতি সামান্য কিংবা বৃহৎ। ধরা যাক, ইচ্ছে পূরনও হলো। ফলাফল কি প্রতিকূলে যাবে নাকি অনুকূলে?

এই সমস্ত উটকো ইচ্ছাবৃত্তিরই অতিরঞ্জিত ব্যবহারেরা জন্ম দেয় অযৌক্তিক আচরণের; যার ফলাফল এর সম্মুখীন হতে আবার নারাজ আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেরা। কিন্তু কেন?

অনেকটা অনুমেয় সত্য-
সাধারণ মানুষেরা প্রতিশোধপরায়ণ। তাদের ধারণা শুধুমাত্র প্রতিশোধেই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজস্ব কৃতকর্মের দ্বারা তৈরি দেওয়ালের মুখোমুখি হতে জানে তারা। কেবলমাত্র তারা যৌক্তিক আচরণ এ বিশ্বাসী এবং ইচ্ছাবৃত্তিকে তোয়াক্কা করে না বলেই কি এমনটা সম্ভব? অপরদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেরা তাদের সমস্যার সম্মুখে সজাগ হলেও, প্রতিশোধ এর আকাঙ্ক্ষা অনুভব করলেও প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতাকে যথাযোগ্য কিংবা যথেষ্ট কারণ মনে করে না। তাদের মতে, কেবলমাত্র ঘৃণার বশেই এমন আচরণ।

শুধুমাত্র মাত্রাতিরিক্ত সজাগ ব’লেই কি তাহলে আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যানেরা না পারে ফ্রি উইলের প্রয়োগ করে তার ফলাফলের সম্মুখীন হতে, না পারে আর দশটা মানুষের মত সাধারণ হয়ে থাকতে? কিন্তু এই কনশাসনেস জন্য তাদের তো গর্বেরও কোনো শেষ নেই। পরোক্ষণেই আবার এমন গর্ববোধের জন্য অপরাধবোধে মারাও যায়। নিজেকে মনে করতে থাকে ইঁদুরের মত তুচ্ছ কোনো প্রানী।

কেমন হতো যদি তিনি পোকার মত কোনো প্রকার বোধ ছাড়াই জন্মেছেন। তাতে তো উদ্ভট সব কৃতকর্মের ফলাফলের ঝক্কি সামলাতে হতো না অন্তত! সেটাও বা হতে পেরেছেন কই? চোখ খোলা রেখে, কান খাড়া করে অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই উপলব্ধি করা যে আশীর্বাদ-তাতে কোনো সন্দেহ নেই.. অথচ অভিশাপটা ঠিক কোথায় একটু ভেবে দেখেন তো! বেশি গভীরে যাবেন না। বেশি সজাগ হবেন না। কারণ আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যান যে নিজেই বলেছে,
“I swear to you, gentlemen, that to be overly conscious is a sickness, a real, thorough sickness.”

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on April 22, 2024 10:34
No comments have been added yet.


Shoroli Shilon's Blog

Shoroli Shilon
Shoroli Shilon isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Shoroli Shilon's blog with rss.