ফ্যামিলি স্টাইল: স্টাইল সে জিনে কা

চমৎকার একখানা গ্রাফিক নভেল। 'আমেরিকান বর্ন চাইনিজ' বা এশিয়ান ইমিগ্রেন্টদের গল্প ভালোবাসলে বলাই যায়, 'ফ্যামিলি স্টাইল'-ও সম্ভবত আপনার মন কাড়বে। একটা ইমিগ্রেন্ট ফ্যামিলিকে ওয়ার জোন থেকে পালিয়ে নতুন দেশে (বিশেষ করে যদি দেশটা আমেরিকা হয়) এসে থিতু হতে গেলে যে সমস্ত বাধাবিপত্তির সামনে পড়তে হয়, দাঁতে দাঁত চিপে ছেলেমেয়ের মুখ চেয়ে যে সব স্বার্থত্যাগ করতে হয়, তার সব কিছুই এখানে আছে, কিন্তু তাই বলে বইটা কখনওই ন্যাকা প্যানপ্যানে বা ক্লিশে হয়ে ওঠেনি। লেখায় যত্ন আর আবেগ, দুইই সমান পরিমাণে আছে। আঁকাও দিব্যি। যাকে বলে কমপ্লিট প্যাকেজ! ঝকঝকে পাতা। দগদগে অতীত। ফুরফুরে হিউমার। কুড়মুড়ে সংলাপ। কামিং অফ এজ ড্রামা, গ্রেট আমেরিকান ড্রিম... কিছুরই অভাব নেই।সাধেই কি আর আইসনার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে?কিন্তু, এসব ছাড়াও যে কারণে বইটা আমার কাছে আলাদা করে কিছুটা স্পেশাল হয়ে উঠল, তা হল এই স্মৃতিকথায় খাদ্য সংস্কৃতির এক বিশেষ ভূমিকা আছে। এক ভিয়েতনামিজ ইমিগ্রেন্ট ফ্যামিলি, যে দুই পুঁচকেকে নিয়ে নৌকায় করে থাইল্যান্ডে এসে ইউএস রিফিউজি ক্যাম্পে উঠেছে আর মাসের পর মাস কোনোক্রমে দিন কাটিয়ে আমেরিকায় থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তাদের জীবনে খাবারের ভূমিকা এমন কি জোরদার? সারভাইভ করে গেলেই তো হল!কিন্তু জীবন অত সহজ পথে চলে না। হাফপ্যান্ট পরা পুঁচকে ছেলেটা যখন জলে ভিজে হাফ সাঁতরে, হাফ ঠেলা খেয়ে, সমুদ্রের জল গিলে রিফিউজি ক্যাম্পে এসে পৌঁছচ্ছে আর প্রথম তরমুজ আর ফারমেন্টেড ফিশ মুখে তুলছে, তার কাছে তরমুজের মিষ্টি আর মাছের টকটাই জীবনের একমাত্র স্বাদ হয়ে ধরা পড়ছে। সেটাই তখন তার একমাত্র স্মৃতি, ছোটবেলার প্রথম স্মৃতি। তখন সে জানেও না তিরিশ বছর পর এই কাহিনি সে আঁকতে শুরু করবে, কিন্তু তার অজান্তেই এই খাবারগুলো চিরদিন তার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থেকে গিয়েছে। অনেক কিছু হয়তো আস্তে আস্তে আবছা হয়ে গেছে, কিন্তু এক একটা রেসিপি, এক একটা পদ, এক একটা খাদ্যভাস তার মাথায় রয়ে গেছে। নৌকায় মায়ের হাত থেকে নিয়ে রাইসবল খাওয়া, পেট চালানোর জন্য রিফিউজি ক্যাম্পে সবাই মিলে ভিয়েতনামিজ খাবারের দোকান দেওয়া, আমেরিকার সান জোসে গিয়ে প্রথম স্টেক খাওয়া, স্কুলে ফ্রি লাঞ্চে পাওয়া আপেল আর সালিসবারি স্টেক, বড় হয়ে আমেরিকান ফাস্ট ফুডের অ্যাডিকশন আর বার্গারের নেশায় মায়ের সযত্নে রাঁধা খাবার ময়লার বাক্সে ফেলে দেওয়া... প্রতিটা চ্যাপ্টারই একটা খাবারকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে। আরেকটা জিনিস যা খুব পছন্দ হল, তা হল বইয়ের শেষে এক একটা পাতায় বইসংক্রান্ত ছোট ছোট কমিক আঁকা। যেমন, এই বইটা আমি কী করে আঁকলাম? বাবা মা বইটা পড়ে কী বলল? ওই দুষ্টু ছেলেটার সঙ্গে এখনও দেখা হয় কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। মজার ছলেই লেখা, কিন্তু জেনুইন।সব নিয়ে চমৎকার কাজ। সোজাসাপটা। ইমোশনাল। হিউমারাস। ব্যালেন্সড। ফিলগুড তো বটেই। পড়লে আশা করি মন্দ লাগবে না।First SecondKindle edition 797/-
Published on May 08, 2025 03:50
No comments have been added yet.