দ্য হুইলস অন দ্য বাস গো রাউন্ড অ্যান্ড রাউন্ড

ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। পেটে ছুঁচোর দল সুড়সুড়ি দিচ্ছে। চোখ বুজে অহেতুক বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলোকে মগজে আশ্রয় দিলে আরেক হ্যাপা। রাত ভ’রে ঠোঁটের পাতলা চামড়া কামড়াতে কামড়াতে কখন যে ভোর হয়ে যায়—খেয়াল থাকে না। মাথাটায় একটা ভোতা ব্যাথা অনুভূত হয়। ওদিকে বৃষ্টি হয়েছে সারারাত। শান্ত, মোলায়েম বাতাস৷ বিছানা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার কষ্টটা কর্পোরেট যোদ্ধারা ভালো বুঝবে। যেই ঘুম চোখ দুটোয় এসে বসে ওমনি পাখিদের কলরবে বোঝার আর বাকি থাকে না—ওরা বলছে, ‘হারামজাদী কতক্ষণ আর শুয়ে শুয়ে কাটাবি?’ 

উঠে কতক্ষণ এ ঘর ও ঘর করে প্রস্তুতি নিতে নিতে আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসে। সাড়ে সাতটার বাস ধরতে হবে, যে করেই হোক।

একটা অটো রিক্সায় উঠে চড়লে সূচের মত বৃষ্টির ফোঁটাগুলো শরীরে এক রকমের সিরসিরে অনুভূতি দেয়। দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই রিক্সাওয়ালা মামাকে, ‘মামা একটু দ্রুত চলো, বাস ধরতে হবে’ বললেই মনে হয় সে যেন এ কথার অপেক্ষাতেই ছিল এতক্ষণ।

আষাঢ়ে বৃষ্টি ভীষণ বেহায়া। একবার আসলে চলে যাওয়ার নাম-গন্ধ নেই। কতদিন যে সূর্য দেখিনা! এখন মনে হচ্ছে রোজ রোজ এই বৃষ্টির যন্ত্রণার চেয়ে ক্ষরায় ও মরা ভালো। ওদিকে দু’দিন আগেও বৃষ্টি বৃষ্টি করে মরেছি। মানুষ বোধহয় নিশ্চিত ভাবে কোন কিছুই চায় না। যা পায় তার বিপরীতের তাকায়। কেবল অনুপস্থিতিতেই বুঝতে পারে সে জিনিসের মূল্য।

বাস ধরতে পারলেও লাভ হলো না কিছু। ছাড়বে বলল আরো পনেরো মিনিট পরে। দুই সিট সামনে তিন জেনারেশনের তিন জন নারী। মা, মেয়ে এবং নানী। বাচ্চা মেয়েটা খালি পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আর বাইরে যাবে বলে কাঁদছে। তখন বৃষ্টির তেজ বেড়েছে আরো। বাসে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। এবং বাইরে তাকে নিয়ে যেতেই হলো। যাত্রাপথে বাচ্চা সামলানো বাবা-মা কে দেখলে ইদানীং ভীষণ খারাপ লাগে। বাচ্চারা কান্নাকাটি করলে অন্যরা যে ভীষণ বিরক্ত হয়—এটা ভেবে ইতস্তত বোধ করেন তারা। না চাইতেও বিরক্ত লাগছে তাই চেষ্টা করলাম সহনশীল হতে।

প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে বাস ছাড়লো। তার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে একজন দম্পতি বাসে উঠলো তার দুই ছেলেকে নিয়ে। কাপড়চোপড় দেখে বোঝা গেলো ভীষণ ধার্মিক। মহিলার আপাদমস্তক ঢাকা এবং পুরুষটির এবং সঙ্গে ছেলে দুটির পরণেও সাদা জোব্বা, সাথে মাথায় টুপি। বাসে উঠেই ছোট ছেলেটার হিস্যু পেয়েছে জানলে তার মা তাকে প্রথমে মানা-ই করলো বাস ছেড়ে দিবে যেহেতু। কিন্তু এ জিনিস কি আর কারো বারণ মানে? ছেলেটা তৎক্ষনাৎ বাস থেকে নামলে মহিলা তার স্বামীকে বলে সঙ্গে যেতে। ডান সাইডের জানালা থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ছেলেটার যাতায়াত। বাসের পাশেই পুলিশ কার্যালয়। প্রথমে সে সেখানেই ঢুকলো। অনবরত সামনের দিকে হাঁটছে। তার সমান্তরালে বসে এ দৃশ্য দেখছি। জানালার কাঁচ বন্ধ অবস্থায় বাসে বসে থাকা বাবা-মা ছেলেকে ডাকছে। বাপটা নিচে না নেমে বলেই চলছে, ‘আরে ও যাচ্ছে টা কই?’ একটা জায়গা হাত দিয়ে দেখিয়ে বলছে, ‘এখানেই কর, এখানেই কর।’ ছেলে ওদিকে বুঝছেই না কোথায় কাজটা সারবে। শুধু এদিক-ওদিক তাকিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছে আশেপাশে মানুষজন আছে। তাদের এসব কান্ডকারখানা দেখে হাসছিলাম বসে বসে। অতঃপর বাস ছাড়লে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসে উঠে আসে পায়জামা ফিতায় গিঁট দিতে দিতে। বসে বসে ভাবছি—পাশেই একটা পাবলিক টয়লেট পড়ে আছে। ওটাতে কি গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?

বাস ছাড়ার পরে এবং একের পর এক স্টপেজ এ কম করে হলেও বিশ মিনিটের মত দাঁড়ালো। যাত্রীরা গালাগালি করলো ভীষণ। সুপারভাইজারকে ডেকে ইচ্ছামত গালি দিল এক বয়স্ক লোক। এক মহিলা তো রাগে তার বাচ্চা মেয়েকে বলেই ফেলল ‘এখানে হাইগে দে তো! পরিষ্কার করবে ওই শয়তান ডিরাইভার।’ এত বিরক্তির মাঝেও হাসি আটকাতে পারলাম না। একটা কথাই মনে হলো, আষাঢ়ে বৃষ্টির চাইতেও বেহায়া বাসের ড্রাইভার এবং তার সুপারভাইজার। যাদের কোন কথাতেই টনক নড়ছে না। কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ বাস চালক জানাল, ‘গাড়িতি লোক কম উঠিছে আইজকে, আপনারা এট্টু কষ্ট কইরে পিছনের গাড়িতে ওঠেন। আমাইগে কম্পানিরই গাড়ি।’

এবং সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে সবাই বাস থেকে নেমে আরেক বাসে গিয়ে উঠলো। আগের বাসে পাশে কেউ ছিল না কিন্তু এবার গিয়ে বসলাম মধ্যবয়সী এক মহিলার পাশে। কানে হেডফোন লাগিয়ে একের পর এক ভিডিও দেখে যাচ্ছে। আর বাদাম থেকে শুরু করে ইঁদুর মারা ওষুধ পর্যন্ত যা যা বাসে বিক্রি করতে আসলো সবকিছুই কিনছে ওদিকে চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে ওমনি একটা ব্রেকে লাফ দিয়ে বসলাম। সামনের সিটে বসা যুবক—বাসে খুঁজে পাওয়া তার পাড়াতো কাকুর সঙ্গে চোদ্দগুষ্টির গল্প করছে। পাশে বসা মহিলা একবার তার মেয়েকে জানালো এখনো তার পৌঁছাতে অনেক দেরি। খানিকক্ষণ বাদেই তার আরেকটা কল আসলো। না চাইতেও চোখ চলে গেল ফোনের স্ক্রিনে। মধ্য বয়স্ক এক যুবকের ছবি ভেসে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে। এবং তাকে জানালো হলো, ‘দুপুরেই কাপড় বদলানোর সময় কল করছিলাম, তাতো ধরলা না।’ এবং শুদ্ধ ভাষায় আহ্লাদী বিভিন্ন কথাবার্তায় বোঝার আর বাকি রইলো না কিছু।  অতঃপর এক ঘন্টার পথ তিন ঘন্টায় বাস আমার গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছালে ঘোড়ার বেগে ছুটটে থাকলাম সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত..

 •  0 comments  •  flag
Share on Twitter
Published on October 13, 2025 11:32
No comments have been added yet.


Shoroli Shilon's Blog

Shoroli Shilon
Shoroli Shilon isn't a Goodreads Author (yet), but they do have a blog, so here are some recent posts imported from their feed.
Follow Shoroli Shilon's blog with rss.