মধ্যরাত কিংবা ক্যাকোফোনি
ভয় জন্মেছিলো রাতে, অনেকরাতে। হলদে ফুসফুসে চিমনি বেয়ে আসা বাতাস আর ক্যাফেইন এর গাঢ় নিশ্বাস একাকীত্বের স্পর্শে যেন আরো বলিষ্ঠ হয়ে উঠছিলো। মধ্যরাতে টিভি বেয়ে ভেসে আসা ঝিরঝির শব্দ, রান্নাঘরে সিংক এর চকচকে শরীরে দু’য়েক ফোঁটা পানির নৃত্য আর ইঁদুরের দাঁত কুটমুটে অভিযান রাতের নিস্তব্ধতায় কোলাহল ডেকে আনে! ওপাশ থেকে পোলকা ডট টাইটা হ্যাংগার এর গলায় ঝুলে একবার ডানে আরেকডান বামে আর কিছুটা স্থির হয়ে বিড়বিড় করে, “রাত আর কত বাকি!”

তিন ঘন্টা তেত্রিশ মিনিট ধরে একটা চুয়িংগাম চিবোচ্ছে বর্গীয়-জ প্রথমাক্ষরের কেউ। পানসে গালে কামড় বসাতেই মনে পড়লো কেউ একজন তাকে মনে করছে। বাইরের জানালা দিয়ে দেখলো রাস্তায় কয়েকটা কুকুর ডেকে যাচ্ছে একনাগাড়ে। মাঝেমধ্যে টহল পুলিশের বাঁশির শব্দ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জেগে থাকার খোয়াইশ আরো বাড়লো। গ্যাসলাইটের আগুণ, মার্লবোরো এডভান্স। সিগারেটের ধোঁয়ায় অবশ ঠোঁটে বিরবির করে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো! কিছু একটা! কিন্তু কাকে? কে শুনবে?
ড্রয়ার থেকে একটা সেডিল ৫ এম.জি মুখে ছুড়ে দেয়। ফ্রিজ খুলে কাঁচের ঠান্ডা পানির বুদবুদ আকারে ভেসে ওঠা মাছের খাবি খাওয়ার মতন। খেয়াল করে দেখে, একবার বাম চোখ ছোট করে তো আরেকবার ডান। দেখতে দেখতে আস্ত ট্যাবলেট টাই গিলে ফেলেছে পানি ছাড়া। অন্ধকারে কটকটে সবুজ ডিম লাইটের আলো একটু আলোর নিশানা পেয়ে সমস্ত ফ্রিজের শরীরে লেপটে পড়েছে। টিকটিকি দেয়ালে বসে ঠিকঠিক করে। ঘড়ির কাঁটার শব্দ, কুকুরের ডাক, পুলিশের বাঁশি, ট্যাপের পানির আছড়ে পড়া আর বুকের ভেতর ড্রামস। অদ্ভুত সাইকেডেলিয়া!
মধ্যরাত পেরিয়ে এসেছে প্রায়। চারটে বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট। লুসিড ড্রিমস এ জীবন্ত করুণ ক্যাকোফোনি কপাল জুড়ে হাতুড়ি পিটায়। এলার্ম বাজার আগেই উঠে পড়ে। অফিসে যেতে হবে যে! আগেরদিন ইস্ত্রি করে রাখা কালো শার্ট-প্যান্ট পড়তে ইচ্ছা করেনা। হঠাৎ করে ভ্যাপসা গরম ভেসে আসে। টলটলে জলে ভেসে ওঠা চোখে ঘুম চশমার চিকন ফ্রেম এ কয়েদীর মত নিষ্প্রভ। আরো একটা দিন, নতুন ভোর, কর্পোরেট জীবন যুদ্ধ, “ডু নট স্কিপ মিলস” টুং করে বেজে ওঠা, বাসে ঠাসাঠাসি করে ঘরে ফেরা, নিঃসঙ্গ রাত, সিগারেটের ধোঁয়া আর পোলকা ডট টাই এর ফিসফিসিয়ে বলতে থাকা, “রাত আর কত বাকি?”
Shoroli Shilon's Blog
- Shoroli Shilon's profile
- 8 followers

