দেশে বিদেশে Quotes
দেশে বিদেশে
by
Syed Mujtaba Ali2,315 ratings, 4.56 average rating, 227 reviews
দেশে বিদেশে Quotes
Showing 1-20 of 20
“কিন্তু বাঙালি আর কিছু পারুক না পারুক,বাজে তর্কে খুব মজবুত ।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ী ময়লা। কিন্তু আমার মনে হল চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ী, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়!”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“ভাষাতত্ত্ব নিয়ে আমার মনে তখন আরও একটা খটকা লাগল ৷ রেডিয়ােওয়ালার চোস্ত ফার্সী জানার কথা। তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘ঐ যে সরাইওয়ালা বলল, ‘মাল-জানের’ তদারকি আপন আপন কাঁধে এ কথাটা আমার কানে কেমনতরো নূতন ঠেকলো। সমাসটা কি ‘জান-মাল’ নয়?’
অন্ধকারে রেডিয়োওয়ালার মুখ দেখা যাচ্ছিল না। তাই তার কথা অনেকটা বেতারবার্তার মত কানে এসে পৌঁছল। বললেন, 'ইরানদেশের ফার্সীতে বলে, 'জান-মাল' কিন্তু আফগানিস্থানে জান সস্তা, মালের দাম ঢের বেশী৷ তাই বলে 'মাল-জান’।
আমি বললুম, 'তাই বোধ করি হবে। ভারতবর্ষেও প্রাণ রেজায় সস্তা --- তাই আমরাও বলি ‘ধনে-প্রাণে’ মেরো না। ‘প্রাণে-ধনে’ মেরাে না কথাটা কখনো শুনিনি৷”
― দেশে বিদেশে
অন্ধকারে রেডিয়োওয়ালার মুখ দেখা যাচ্ছিল না। তাই তার কথা অনেকটা বেতারবার্তার মত কানে এসে পৌঁছল। বললেন, 'ইরানদেশের ফার্সীতে বলে, 'জান-মাল' কিন্তু আফগানিস্থানে জান সস্তা, মালের দাম ঢের বেশী৷ তাই বলে 'মাল-জান’।
আমি বললুম, 'তাই বোধ করি হবে। ভারতবর্ষেও প্রাণ রেজায় সস্তা --- তাই আমরাও বলি ‘ধনে-প্রাণে’ মেরো না। ‘প্রাণে-ধনে’ মেরাে না কথাটা কখনো শুনিনি৷”
― দেশে বিদেশে
“সর্দারজী হেসে বললেন, 'কিছু ভয় নেই, পেশাওয়াৱ স্টেশনে এক গাড়ি বাঙালী নামে না, আপনি দু'মিনিট সবুর করলেই তিনি আপনাকে ঠিক খুঁজে নেবেন।'
আমি সাহস পেয়ে বললুম, 'তা তাে বটেই তবে কিনা শৰ্ট পরে এসেছি ---'
সর্দারজী এবার অট্টহাস্য করে বললেন, ‘শর্টে যে এক ফুট জায়গা ঢাকা পড়ে তাই দিয়ে মানুষকে চেনে নাকি?”
― দেশে বিদেশে
আমি সাহস পেয়ে বললুম, 'তা তাে বটেই তবে কিনা শৰ্ট পরে এসেছি ---'
সর্দারজী এবার অট্টহাস্য করে বললেন, ‘শর্টে যে এক ফুট জায়গা ঢাকা পড়ে তাই দিয়ে মানুষকে চেনে নাকি?”
― দেশে বিদেশে
“খুদাবখ্শ আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি বদ্ধ উন্মাদ। কিন্তু মুখে কথা ফুটল। বললেন, 'আপনি পর্যন্ত এই কথা বললেন? ছেলে মরেছিল তো কি? আবার ছেলে হবে। বিবি মরেছেন তো কি? নূতন শাদী করব। কিন্তু ভাই পাব কোথায়?' তারপর আবার হাউহাউ করে কাঁদেন আর বলেন, 'আমার ভাই মরে গিয়েছে।'
অধ্যাপক বলা শেষ করলে আমি বললুম, 'লক্ষ্মণের মৃত্যুশোকে রামচন্দ্রও ঐ বিলাপ করেছিলেন।”
― দেশে বিদেশে
অধ্যাপক বলা শেষ করলে আমি বললুম, 'লক্ষ্মণের মৃত্যুশোকে রামচন্দ্রও ঐ বিলাপ করেছিলেন।”
― দেশে বিদেশে
“বোরকা পরে, ঐ যা। তা না হলে পাঠান মেয়েও স্বাধীন।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“অমর সিং নূতন গাড়ি চালিয়ে সুখ পায় না। পদে পদে যদি টায়ার না ফাটল, এঞ্জিন না বিগড়ল, ছাতখানা উড়ে না গেল, তবে সে মোটর চালিয়ে কি কেরামতি? সে গাড়ি তো বোরকা-পরা মেয়েই চালাতে পারে।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“বাঙালী আপন দেশে ব'সে, এভারেস্টের গায়ে ফিতে না লাগিয়ে, চূড়োয় চড়তে গিয়ে খামখা জান না দিয়ে ইংরেজকে বাৎলে দেয়নি, ঐ দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়?”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“আমি আর কি করি। বললুম, 'হবে, হবে। সব হবে। কিন্তু টাগোর সাহেবের কোন্ কবিতা আপনার বিশেষ পছন্দ হয়?'
আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, 'আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ-'
বুঝলুম, এ হচ্ছে,
'ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর-”
― দেশে বিদেশে
আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, 'আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ-'
বুঝলুম, এ হচ্ছে,
'ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর-”
― দেশে বিদেশে
“সায়েব যেমন যেমন তার সব খাবার বের করতে লাগল আমার চোখ দুটো সঙ্গে সঙ্গে জমে যেতে লাগল। সেই শিককাবাব, সেই ঢাকাই পরোটা, মুরগী মুসল্লম, আলু-গোস্ত। আমিও তাই নিয়ে এসেছি জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে। এবার সায়েবের চক্ষুস্থির হওয়ার পালা। ফিরিস্তি মিলিয়ে একই মাল বেরতে লাগল। এমন কি শিককাবাবের জায়গায় শামীকাবাব নয়, আলু-গোস্তের বদলে কপি-গোস্ত পর্যন্ত নয়। আমি বললুম, 'ব্রাদার, আমার ফিঁয়াসে নেই, এসব জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে কেনা।'
একদম হুবহু একই স্বাদ। সায়েব খায় আর আনমনে বাইরের দিকে তাকায়। আমারও আবছা আবছা মনে পড়ল, যখন সওদা করছিলুম তখন যেন এক গাব্দাগোব্দা ফিরিঙ্গী মেমকে হোটেলে যা পাওয়া যায় তাই কিনতে দেখেছি। ফিরিঙ্গীকে বলতে যাচ্ছিলুম তার ফিঁয়াসের একটা বর্ণনা দিতে কিন্তু থেমে গেলুম। কি আর হবে বেচারির সন্দেহ বাড়িয়ে- তার উপর দেখি বোতল থেকে কড়া গন্ধের কি একটা ঢকঢক করে মাঝে মাঝে গিলছে।”
― দেশে বিদেশে
একদম হুবহু একই স্বাদ। সায়েব খায় আর আনমনে বাইরের দিকে তাকায়। আমারও আবছা আবছা মনে পড়ল, যখন সওদা করছিলুম তখন যেন এক গাব্দাগোব্দা ফিরিঙ্গী মেমকে হোটেলে যা পাওয়া যায় তাই কিনতে দেখেছি। ফিরিঙ্গীকে বলতে যাচ্ছিলুম তার ফিঁয়াসের একটা বর্ণনা দিতে কিন্তু থেমে গেলুম। কি আর হবে বেচারির সন্দেহ বাড়িয়ে- তার উপর দেখি বোতল থেকে কড়া গন্ধের কি একটা ঢকঢক করে মাঝে মাঝে গিলছে।”
― দেশে বিদেশে
“এই তালতলারই আমার এক দার্শনিক বন্ধু একদিন বলেছিলেন যে, এমেটিন ইনজেকশন নিলে মানুষ নাকি হঠাৎ অত্যন্ত স্যাঁৎসেঁতে হয়ে যায়, ইংরিজীতে যাকে বলে 'মডলিন'- তখন নাকি পাশের বাড়ির বিড়াল মারা গেলে মানুষ বালিশে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বিদেশে যাওয়া আর এমেটিন ইনজেকশন নেওয়া প্রায় একই জিনিস।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“বলা তো যায় না, ফিরিঙ্গীর বাচ্চা- কখন রঙ বদলায়।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“যদি বলা হয় আফগানরা মুসলমান হয়ে গেল বলে তাদের অন্য ইতিহাস তাহলে বলি, তারা একদিন অগ্নিউপাসনা করেছিল, গ্রীক দেবদেবীর পূজা করেছিল, বেদবিরোধী বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল। তবুও যখন দুই দেশের ইতিহাস পৃথক করা যায় না, তখন তাদের মুসলমান হওয়াতেই হঠাৎ কোন্ মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল? বুদ্ধের শরণ নিয়ে কাবুলী যখন মগধবাসী হয়নি তখন ইসলাম গ্রহণ করে সে আরবও হয়ে যায়নি। ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে মুসলিম আফগানিস্তান বিশেষ করে কান্দাহার, গজনী, কাবুল, জলালাবাদ— বাদ দিলে ফ্রন্টিয়ার, বানু, কোহাট এমন কি পাঞ্জাবও বাদ দিতে হয়।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“ডিমোক্রেসি বড় ঠুনকো জিনিস; কখন যে কার অভিসম্পাতে ফেটে চৌচির হয়ে যায়, কেউ বলতে পারে না। তারপর আর কিছুতেই জোড়া লাগে না।”
― দেশে বিদেশে
― দেশে বিদেশে
“দোস্ত মুহম্মদ জিজ্ঞাসা করলেন, রাইফেলের জন্য তারা লড়েছিল?
আমি বললুম, না, সুন্দরীর জন্য।
দোস্ত মুহম্মদ বললেন, তওবা! তওবা! স্ত্রীলোকের জন্য কখনো জব্বর লড়াই হয়? মোক্ষম লড়াই হয় রাইফেলের জন্য। রাইফেল থাকলে সুন্দরীর স্বামীকে খুন করে তার বিধবাকে বিয়ে করা যায়। উত্তম বন্দোবস্ত। সে বেহেস্তে গিয়ে হুরী পেল তুমিও সুন্দরী পেলে।”
― দেশে বিদেশে
আমি বললুম, না, সুন্দরীর জন্য।
দোস্ত মুহম্মদ বললেন, তওবা! তওবা! স্ত্রীলোকের জন্য কখনো জব্বর লড়াই হয়? মোক্ষম লড়াই হয় রাইফেলের জন্য। রাইফেল থাকলে সুন্দরীর স্বামীকে খুন করে তার বিধবাকে বিয়ে করা যায়। উত্তম বন্দোবস্ত। সে বেহেস্তে গিয়ে হুরী পেল তুমিও সুন্দরী পেলে।”
― দেশে বিদেশে
“দক্কার পাশের সেই কাবুল নদীর কৃপায় এই জলালাবাদ শস্যশস্পশ্যামল। এখানে জমি বোধ হয় দক্কার মত পাথরে ভর্তি নয় বলে উপত্যকা রীতিমত চওড়া একটু নিচু জমিতে বাস নামার পর আর তার প্রসারের আন্দাজ করা যায় না। তখন দুদিকেই সবুজ, আর লোকজনের ঘরবাড়ি। সামান্য একটি নদী ক্ষুদ্রতম সুযোগ পেলে যে কি মোহন সবুজের লীলাখেলা দেখাতে পারে জলালাবাদে তার অতি মধুর তসবির। এমনকি যে দুটো-চারটে পাঠান রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তাদের চেহারাও যেন সীমান্তের পাঠানের চেয়ে মোলায়েম বলে মনে হল। লক্ষ্য করলুম, যে পাঠান শহরে গিয়ে সেখানকার মেয়েদের বেপর্দামির নিন্দা করে তারি বউ-ঝি ক্ষেতে কাজ করছে অন্য দেশের মেয়েদেরই মত। মুখ তুলে বাসের দিকে তাকাতেও তাদের আপত্তি নেই। বেতারকর্তাকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি গভীরভাবে বললেন, আমার যতদূর জানা, কোনো দেশের গরীব মেয়েই পদ মানে না, অন্ততঃ আপন গাঁয়ে মানে না। শহরে গিয়ে মধ্যবিত্তের অনুকরণে কখনো পর্দা মেনে ভদ্রলোক হবার চেষ্টা করে, কখনো কাজ-কর্মের অসুবিধা হয় বলে গাঁয়ের রেওয়াজই বজায় রাখে।
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, আরবের বেদুইন মেয়েরা?
তিনি বললেন, আমি ইরাকে তাদের বিনা পর্দায় ছাগল চরাতে দেখেছি।”
― দেশে বিদেশে
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, আরবের বেদুইন মেয়েরা?
তিনি বললেন, আমি ইরাকে তাদের বিনা পর্দায় ছাগল চরাতে দেখেছি।”
― দেশে বিদেশে
“অফিসারটি শিক্ষিত লোক। একলা পড়েছেন, কথা কইবার লোক নেই। আমাকে পেয়ে নির্জনে জমানো তার চিন্তাধারা যেন উপছে পড়ল। হাফিজ-সাদীর অনেক বয়েৎ আওড়ালেন এবং মরুপ্রান্তরে একা একা আপন মনে সেগুলো থেকে নিংড়ে নিংড়ে যে রস বের করেছেন তার খানিকটা আমায় পরিবেষণ করলেন। আমি আমার ভাঙা ভাঙা ফারসীতে জিজ্ঞাসা করলুম, সঙ্গীহীন জীবন কি কঠিন বোধ হয় না? বললেন, আমার চাকরী পল্টনের, ইস্তফা দেবার উপায় নেই। কাজেই বাইরের কাবুল নদীটি নিয়ে পড়ে আছি। রোজ সন্ধ্যায় তার পাড়ে গিয়ে বসি আর ভাবি যেন একমাত্র নিতান্ত আমার জন্য সে এই দুর্গের দেয়ালে আঁচল বুলিয়ে চলে গিয়েছে। অন্যায় কথাও নয়। আর দুচারজন যারা নদীর পারে যায়, তাদের মতলব ঠাণ্ডা হওয়ার। আমিও ঠাণ্ডা হই, কিন্তু শীতকালেও কামাই দিইনে। গোড়ার দিকে আমিও স্বার্থপর ছিলুম, কাবুল নদী আমার কাছে সৌন্দর্য উপভোগের বস্তু ছিল। তার গান শুনতুম, তার নাচ দেখতুম, তার লুটিয়ে-পড়া সবুজ আঁচলের এক প্রান্তে আসন পেতে বসতুম। এখন আমাদের অন্য সম্পর্ক। আচ্ছা বলুন তো, অমাবস্যার অন্ধকারে যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন আপনি কখনো নদীর পারে কান পেতে শুয়েছেন?
আমি বললুম, নৌকোতে শুয়ে অনেক রাত কাটিয়েছি।
তিনি উৎসাহের সঙ্গে বললেন, তা হলে আপনি বুঝতে পারবেন। মনে হয় না কুলকুল শুনে, যেন আর দুদিন কাটলেই আরেকটু, আর সামান্য একটু অভ্যাস হয়ে গেলেই হঠাৎ কখন এই রহস্যময়ী ভাষার অর্থ সরল হয়ে যাবে। আপনি ভাবছেন আমি কবিত্ব করছি। আদপেই না। আমার মনে হয় মেঘের ডাক। যেমন জনপ্রাণীকে বিদ্যুতের ভয় জানিয়ে দেয়, জলের ভাষাও তেমনি কোনো এক আশার বাণী জানাতে চায়। দূর সিন্ধুপার থেকে সে বাণী উজিয়ে উজিয়ে এসেছে, না কাবুল পাহাড়ের শিখর থেকে বরফের বুকের ভিতর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এখানে এসে গান গেয়ে জেগে উঠেছে, জানিনে।”
― দেশে বিদেশে
আমি বললুম, নৌকোতে শুয়ে অনেক রাত কাটিয়েছি।
তিনি উৎসাহের সঙ্গে বললেন, তা হলে আপনি বুঝতে পারবেন। মনে হয় না কুলকুল শুনে, যেন আর দুদিন কাটলেই আরেকটু, আর সামান্য একটু অভ্যাস হয়ে গেলেই হঠাৎ কখন এই রহস্যময়ী ভাষার অর্থ সরল হয়ে যাবে। আপনি ভাবছেন আমি কবিত্ব করছি। আদপেই না। আমার মনে হয় মেঘের ডাক। যেমন জনপ্রাণীকে বিদ্যুতের ভয় জানিয়ে দেয়, জলের ভাষাও তেমনি কোনো এক আশার বাণী জানাতে চায়। দূর সিন্ধুপার থেকে সে বাণী উজিয়ে উজিয়ে এসেছে, না কাবুল পাহাড়ের শিখর থেকে বরফের বুকের ভিতর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এখানে এসে গান গেয়ে জেগে উঠেছে, জানিনে।”
― দেশে বিদেশে
“বাঙালী বোমা মারে কেন মারে খোদায় মালুম, রাইফেলে তো তার শখ নেই— ইংরেজ বোমা খেতে পছন্দ করে না কিন্তু বাঙালীর গোঁ সে খাওয়াবেই। তার জন্য সে জান দিতে কবুল, নিতেও কবুল। আমি কেন ইংরেজকে আপনার হাড়হদ্দের খবর দেব? জান লেনদেনের ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষের দূরে থাকা উচিত।
আমি বললুম, হক কথা বলেছেন। রাসেলেরও ঐ মত। ভ্যালুজ নিয়ে নাকি তর্ক হয় না। ইংরেজ পাঠানে বিস্তর মিল দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাঙালী কেন বোমা মারে সে তো অত্যন্ত সোজা প্রশ্ন। স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা পেয়ে গেলে সেটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাইফেলের প্রয়োজন হয়। তাই বোধ করি স্বাধীন আফ্রিদীর কাছে রাইফেল এত প্রিয়বস্তু।
আহমদ আলী অনেকক্ষণ আপন মনে কি যেন ভাবলেন। বললেন, কি জানি, স্বাধীনতা কিসের জোরে টিকে থাকে? রাইফেলের জোরে না বুকের জোরে।”
― দেশে বিদেশে
আমি বললুম, হক কথা বলেছেন। রাসেলেরও ঐ মত। ভ্যালুজ নিয়ে নাকি তর্ক হয় না। ইংরেজ পাঠানে বিস্তর মিল দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাঙালী কেন বোমা মারে সে তো অত্যন্ত সোজা প্রশ্ন। স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা পেয়ে গেলে সেটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাইফেলের প্রয়োজন হয়। তাই বোধ করি স্বাধীন আফ্রিদীর কাছে রাইফেল এত প্রিয়বস্তু।
আহমদ আলী অনেকক্ষণ আপন মনে কি যেন ভাবলেন। বললেন, কি জানি, স্বাধীনতা কিসের জোরে টিকে থাকে? রাইফেলের জোরে না বুকের জোরে।”
― দেশে বিদেশে
“কিন্তু টাগোর সাহেবের কোন্ কবিতা আপনার বিশেষ পছন্দ হয়?
আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ—
বুঝলুম, এ হচ্ছে,
ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর—
বললুম, সে কি কথা, খান সাহেব? এ কবিতা তো আপনার ভালো লাগার কথা নয়। আপনারা পাঠান, আপনারা প্রেমে জখম হলে তো বাঘের মত রুখে দাঁড়াবেন। ঘোড়া চড়ে আসবেন বিদ্যুৎগতিতে, প্রিয়াকে একটানে তুলে নিয়ে কোলে বসিয়ে চলে যাবেন দূরদূরান্তরে। সেখানে পর্বতগুহায় নির্জনে আরম্ভ হবে প্রথম মানঅভিমানের পালা, আপনি মাথা পেতে দেবেন তার পায়ের মখমলের চটির নিচে–
আমাকেই থামতে হল কারণ আহমদ আলী অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির লোক, কারো কথা মাঝখানে কাটেন না। আমি আটকে গেলে পর বললেন, থামলেন কেন, বলুন।
আমি বললুম, আপনারা কোন্ দুঃখে ইনিয়ে বিনিয়ে কাদবেন ম্যা ম্যা, মা মা করে।
আহমদ আলী বললেন, হু, এক জর্মন দার্শনিকও নাকি বলেছেন স্ত্রীলোকের কাছে যেতে হলে চাবুকটি নিয়ে যেতে ভুলে না।।
আমি বললুম, তওবা তওবা, অত বাড়াবাড়ির কথা হচ্ছে না।
আহমদ আলী বললেন, না, দাদা, প্রেমের ব্যাপারে হয় ইপার না হয় উপার। প্রেম হচ্ছে শহরের বড় রাস্তা, বিস্তর লোজন। সেখানে গোল্ডন মীন বা সোনালী মাঝারি বলে কোনো উপায় নেই। হয় কীপ টু দি রাইট অর্থাৎ ম্যা ম্যা করে হৃদয়বেদন নিবেদন, না হয়, লেফট অর্থাৎ বজ্রমুষ্টি দিয়ে নীটশে যা বলেছেন। কিন্তু থাক্ না এসব কথা।
বুঝলুম প্রেমের ব্যাপারে পাঠান নীরব কর্মী। আমরা বাঙালী, দুপুররাত্রে পাড়ার লোককে না জাগিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে পারিনে। আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরে আমাকে যেন খুশী করার জন্য আহমদ আলী বললেন, পেশাওয়ারের বাজারে কিন্তু কোনো গানেওয়ালী নাচনেওয়ালী ছমাসের বেশী টিকতে পারে না। কোনো ছোকরা পাঠান প্রেমে পড়বেই। তারপর বিয়ে করে। আপন গায়ে নিয়ে সংসার পাতে।
সমাজ আপত্তি করে না? মেয়েটা দুদিন বাদে শহরের জন্য কান্নাকাটি করে না?
সমাজ আপত্তি করবে কেন? ইসলামে তো কোনো মানা নেই। তবে দুদিন বাদে কান্নাকাটি করে কি না বলা কঠিন। পাঠান গাঁয়ের কান্না, শহরে এসে পৌঁছবে এত জোর গলা ইনজানেরও নেই। জানকী বাঈয়ের থাকলে আমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হত না। হলপ করে কিছু বলতে পারব না, তবে আমার নিজের বিশ্বাস, বেশীর ভাগ মেয়েই বাজারের হট্টগোলের চেয়ে গ্রামের শান্তিই পছন্দ করে। তার উপর যদি ভালোবাসা পায়, তা হলে তো আর কথাই নেই”
― দেশে বিদেশে
আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ—
বুঝলুম, এ হচ্ছে,
ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর—
বললুম, সে কি কথা, খান সাহেব? এ কবিতা তো আপনার ভালো লাগার কথা নয়। আপনারা পাঠান, আপনারা প্রেমে জখম হলে তো বাঘের মত রুখে দাঁড়াবেন। ঘোড়া চড়ে আসবেন বিদ্যুৎগতিতে, প্রিয়াকে একটানে তুলে নিয়ে কোলে বসিয়ে চলে যাবেন দূরদূরান্তরে। সেখানে পর্বতগুহায় নির্জনে আরম্ভ হবে প্রথম মানঅভিমানের পালা, আপনি মাথা পেতে দেবেন তার পায়ের মখমলের চটির নিচে–
আমাকেই থামতে হল কারণ আহমদ আলী অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির লোক, কারো কথা মাঝখানে কাটেন না। আমি আটকে গেলে পর বললেন, থামলেন কেন, বলুন।
আমি বললুম, আপনারা কোন্ দুঃখে ইনিয়ে বিনিয়ে কাদবেন ম্যা ম্যা, মা মা করে।
আহমদ আলী বললেন, হু, এক জর্মন দার্শনিকও নাকি বলেছেন স্ত্রীলোকের কাছে যেতে হলে চাবুকটি নিয়ে যেতে ভুলে না।।
আমি বললুম, তওবা তওবা, অত বাড়াবাড়ির কথা হচ্ছে না।
আহমদ আলী বললেন, না, দাদা, প্রেমের ব্যাপারে হয় ইপার না হয় উপার। প্রেম হচ্ছে শহরের বড় রাস্তা, বিস্তর লোজন। সেখানে গোল্ডন মীন বা সোনালী মাঝারি বলে কোনো উপায় নেই। হয় কীপ টু দি রাইট অর্থাৎ ম্যা ম্যা করে হৃদয়বেদন নিবেদন, না হয়, লেফট অর্থাৎ বজ্রমুষ্টি দিয়ে নীটশে যা বলেছেন। কিন্তু থাক্ না এসব কথা।
বুঝলুম প্রেমের ব্যাপারে পাঠান নীরব কর্মী। আমরা বাঙালী, দুপুররাত্রে পাড়ার লোককে না জাগিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে পারিনে। আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরে আমাকে যেন খুশী করার জন্য আহমদ আলী বললেন, পেশাওয়ারের বাজারে কিন্তু কোনো গানেওয়ালী নাচনেওয়ালী ছমাসের বেশী টিকতে পারে না। কোনো ছোকরা পাঠান প্রেমে পড়বেই। তারপর বিয়ে করে। আপন গায়ে নিয়ে সংসার পাতে।
সমাজ আপত্তি করে না? মেয়েটা দুদিন বাদে শহরের জন্য কান্নাকাটি করে না?
সমাজ আপত্তি করবে কেন? ইসলামে তো কোনো মানা নেই। তবে দুদিন বাদে কান্নাকাটি করে কি না বলা কঠিন। পাঠান গাঁয়ের কান্না, শহরে এসে পৌঁছবে এত জোর গলা ইনজানেরও নেই। জানকী বাঈয়ের থাকলে আমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হত না। হলপ করে কিছু বলতে পারব না, তবে আমার নিজের বিশ্বাস, বেশীর ভাগ মেয়েই বাজারের হট্টগোলের চেয়ে গ্রামের শান্তিই পছন্দ করে। তার উপর যদি ভালোবাসা পায়, তা হলে তো আর কথাই নেই”
― দেশে বিদেশে
