Syed Manzoorul Islam
Born
in Sylhet, Bangladesh
January 18, 1951
Died
October 10, 2025
Genre
|
The Merman's Prayer and Other Stories
—
published
2013
|
|
|
বেলা অবেলার গল্প
—
published
2012
|
|
|
তালপাতার সেপাই ও অন্যান্য গল্প
|
|
|
প্রেম ও প্রার্থনার গল্প
—
published
2005
|
|
|
আজগুবি রাত
—
published
2010
|
|
|
কাঁচ-ভাঙ্গা রাতের গল্প
|
|
|
ইতিহাসের রূপকার তাজউদ্দীন আহমদ
—
published
2019
|
|
|
সেরা দশ গল্প
—
published
2016
|
|
|
অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প
—
published
2001
—
2 editions
|
|
|
লেখাজোখার কারখানাতে
|
|
“সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের 'শকুনের ডানা' উপন্যাসের এক অংশে এনজিও কর্মী সিমি ও টিভি রিপোর্টার রিয়ার মাঝে একটা কথোপকথন। তারা দু'জনেই দেশে রক্তচোষাদের দৌরাত্ম্য নিয়ে হতাশ, বিক্ষুব্ধ। তারা একটা বুফে খাবারের ব্যবস্থার রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলছিলো। দু'জনেরই খাওয়ার ইচ্ছা নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু পয়সা দেওয়া হয়ে গেছে। তাদের কথোপকথন -
"খাবার নিতে নিতে সিমি বলল, যাক, এসব কুটিল বিষয়ে এখন বেশি ভাবলে ক্ষিধাটাই নষ্ট হবে। না খেলে অসুবিধা নেই, কিন্তু টাকাটা নষ্ট হবে। সেজন্য খাব। এবং খাওয়াটা যাতে হজম হয়, সেজন্য তোমাকে একটা ঘটনা বলব।
চোখে কৌতূহল নিয়ে টেবিলে বসল রিয়া।
হজমির গল্প? মানে জোক?
না, তবে কাছাকাছি। সিমি বলল, এবং অন্যদের অনেকবার বলা একটা গল্প শুরু করল। তার এক মামার গল্প। দূরসম্পর্কের। সরকারি এমন এক দপ্তরে কাজ করতেন, যেখানে চেয়ারে বসে থাকলেও খাম ভর্তি টাকা ড্রয়ারে চলে আসে। ভালো মানুষ ছিলেন মামা, শুরুতে এসব অনাচারের প্রতিবাদ করতেন। সিমিরা ছোটবেলায় মামার সততার গল্প শুনে তাকে একটা বীরের আসনে বসিয়েছিল। একসময় সরকারি বরাদ্দের একটা জমি পেলেন। সেখানে ব্যাংক থেকে টাকা কর্জ নিয়ে তিনতলা একটা বাড়ি বানালেন। বেশ কিছুদিন শান্তিতেই চলছিল জীবন। কিন্তু হঠাৎ করে মামা বদলে গেলেন। তার চোখের সামনে তখন অন্য ছবি। তার জুনিয়র ফ্ল্যাট কিনেছে গুলশানে, লন্ডন জুরিখ যাচ্ছে ছুটি কাটাতে, পরিবার তো বটেই, শ্যালিকার দেবরদের নিয়েও। ঢাকায় চালাচ্ছে কোটি টাকার গাড়ি। মামা আস্তে আস্তে সরব হলেন। ফলে খাম আসা শুরু হলো। প্রথমে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে, গ্রামের নতুন বউয়ের মত, ধীর পায়ে। কিন্তু একদিন মামা তার ধরাচূড়া খুলে নেমে পড়লেন মাঠে। বছর দুই গেল না। তিনি জুনিয়রদের তো বটেই চার-পাঁচ সিনিয়রকে ছাড়িয়ে গেলেন। তার শখের জিনিস বলতে প্রথমেই ছিল গুলশানে বিরাট একটা ফ্ল্যাট। মামা ততদিনে লাজলজ্জা ভুলে গেছেন। কাছের মানুষদের বলেছেন, চার কোটি গেছে শুধু কিনতে। ভেতরের ডেকোরেশনে তো মিনিমাম এক কোটি।
রিয়া একটু অধৈর্য হচ্ছিল গল্পটা শুনে। সিমি, সে বলল, তোমার গল্প্টা তো উলটো আমার ক্ষিধা মেরে দিচ্ছে।
শোনো, আর এক মিনিট, সে বলল, এবং সরাসরি গল্পের পাঞ্চলাইনে চলে গেল। মামা ঘোষণা দিয়ে ফ্ল্যাটে ওঠার দিনক্ষণ ঠিক করলেন। উঠলেনও। কিন্তু প্রথম আসা মেহমানদের একটা ট্যুর দিতে পারলেন না ফুটবল মাঠের সমান ফ্ল্যাটটার, বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন...।
মারা গেলেন, তাইতো, রিয়া বলল, পুরানো গল্প। এই গল্প শুনিয়ে তুমি ঈশপের মতো কোন নীতিকথা তুলে ধরতে চাইছ? দুর্নীতি করে বাড়ি তুললে সেই বাড়িটা আপনার কবর হয়ে দাঁড়াতে পারে- এরকম কিছু তো? হা হা। রেস্টুরেন্ট কাঁপিয়ে হাসল রিয়া। তোমার মামার মত লোক কয়জন? স্ট্যাটিসটিক্যালি ইনসিগনিফিকেন্ট। পরিসংখ্যানের হিসাবেও আসে না। বরং এরকম মাঠের মত ফ্ল্যটে অতঃপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল মানুষের সংখ্যাই বেশি। বেশি মানে প্রায় একশভাগ। এবং এতে কি প্রমাণিত হয়, জানো? রিয়া জিজ্ঞেস করল।
বিমর্ষ সিমি বলল, কী? কিন্তু তার বলায় কোন জোর নেই। রিয়া বলল, প্রমাণ করে, করাপশন পে'জ, দুর্নীতি করলে টাকার জোর বাড়ে, তার সঙ্গে শরীরেরও। রাজনৈতিক শক্তিও। যে মানুষের ব্যাংকে একশ কোটি টাকা আছে, সে তোমাকে কেনা গোলামের মত ব্যবহার করতে পারে।
তা না হলে এদের মধ্যে আমি এমন মানুষও কেন পাই, যাদের কপালের মাঝখানটায় কালো দাগ, অর্থাৎ ধর্মকর্ম করেন। কেন?
সিমি আর এ বিষয়ে কথা বলতে চায় না। তুমি তো সাঙ্ঘাতিক নেগেটিভ মেয়ে, রিয়া, এতটা ভাবি নি।
নেগেটিভ না হয়ে এদেশে নিঃশ্বাস নিতেও পারবে না তুমি। নেগেটিভ না হলে রাতে শান্তি নিয়ে ঘুমাতেও পারবে না, সে হেসে ফেলল। তবে একেবারে নেগেটিভ থেকে যাত্রা শুরু করলে পজিটিভে হয়তো একদিন পৌঁছাতে পারব। সেই পৌঁছানোটা হবে অনেক বেশি আনন্দের।"
‘শকুনের ডানা’
ঢাকা
৫ই ডিসেম্বর ২০১৬”
―
"খাবার নিতে নিতে সিমি বলল, যাক, এসব কুটিল বিষয়ে এখন বেশি ভাবলে ক্ষিধাটাই নষ্ট হবে। না খেলে অসুবিধা নেই, কিন্তু টাকাটা নষ্ট হবে। সেজন্য খাব। এবং খাওয়াটা যাতে হজম হয়, সেজন্য তোমাকে একটা ঘটনা বলব।
চোখে কৌতূহল নিয়ে টেবিলে বসল রিয়া।
হজমির গল্প? মানে জোক?
না, তবে কাছাকাছি। সিমি বলল, এবং অন্যদের অনেকবার বলা একটা গল্প শুরু করল। তার এক মামার গল্প। দূরসম্পর্কের। সরকারি এমন এক দপ্তরে কাজ করতেন, যেখানে চেয়ারে বসে থাকলেও খাম ভর্তি টাকা ড্রয়ারে চলে আসে। ভালো মানুষ ছিলেন মামা, শুরুতে এসব অনাচারের প্রতিবাদ করতেন। সিমিরা ছোটবেলায় মামার সততার গল্প শুনে তাকে একটা বীরের আসনে বসিয়েছিল। একসময় সরকারি বরাদ্দের একটা জমি পেলেন। সেখানে ব্যাংক থেকে টাকা কর্জ নিয়ে তিনতলা একটা বাড়ি বানালেন। বেশ কিছুদিন শান্তিতেই চলছিল জীবন। কিন্তু হঠাৎ করে মামা বদলে গেলেন। তার চোখের সামনে তখন অন্য ছবি। তার জুনিয়র ফ্ল্যাট কিনেছে গুলশানে, লন্ডন জুরিখ যাচ্ছে ছুটি কাটাতে, পরিবার তো বটেই, শ্যালিকার দেবরদের নিয়েও। ঢাকায় চালাচ্ছে কোটি টাকার গাড়ি। মামা আস্তে আস্তে সরব হলেন। ফলে খাম আসা শুরু হলো। প্রথমে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে, গ্রামের নতুন বউয়ের মত, ধীর পায়ে। কিন্তু একদিন মামা তার ধরাচূড়া খুলে নেমে পড়লেন মাঠে। বছর দুই গেল না। তিনি জুনিয়রদের তো বটেই চার-পাঁচ সিনিয়রকে ছাড়িয়ে গেলেন। তার শখের জিনিস বলতে প্রথমেই ছিল গুলশানে বিরাট একটা ফ্ল্যাট। মামা ততদিনে লাজলজ্জা ভুলে গেছেন। কাছের মানুষদের বলেছেন, চার কোটি গেছে শুধু কিনতে। ভেতরের ডেকোরেশনে তো মিনিমাম এক কোটি।
রিয়া একটু অধৈর্য হচ্ছিল গল্পটা শুনে। সিমি, সে বলল, তোমার গল্প্টা তো উলটো আমার ক্ষিধা মেরে দিচ্ছে।
শোনো, আর এক মিনিট, সে বলল, এবং সরাসরি গল্পের পাঞ্চলাইনে চলে গেল। মামা ঘোষণা দিয়ে ফ্ল্যাটে ওঠার দিনক্ষণ ঠিক করলেন। উঠলেনও। কিন্তু প্রথম আসা মেহমানদের একটা ট্যুর দিতে পারলেন না ফুটবল মাঠের সমান ফ্ল্যাটটার, বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন...।
মারা গেলেন, তাইতো, রিয়া বলল, পুরানো গল্প। এই গল্প শুনিয়ে তুমি ঈশপের মতো কোন নীতিকথা তুলে ধরতে চাইছ? দুর্নীতি করে বাড়ি তুললে সেই বাড়িটা আপনার কবর হয়ে দাঁড়াতে পারে- এরকম কিছু তো? হা হা। রেস্টুরেন্ট কাঁপিয়ে হাসল রিয়া। তোমার মামার মত লোক কয়জন? স্ট্যাটিসটিক্যালি ইনসিগনিফিকেন্ট। পরিসংখ্যানের হিসাবেও আসে না। বরং এরকম মাঠের মত ফ্ল্যটে অতঃপর সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল মানুষের সংখ্যাই বেশি। বেশি মানে প্রায় একশভাগ। এবং এতে কি প্রমাণিত হয়, জানো? রিয়া জিজ্ঞেস করল।
বিমর্ষ সিমি বলল, কী? কিন্তু তার বলায় কোন জোর নেই। রিয়া বলল, প্রমাণ করে, করাপশন পে'জ, দুর্নীতি করলে টাকার জোর বাড়ে, তার সঙ্গে শরীরেরও। রাজনৈতিক শক্তিও। যে মানুষের ব্যাংকে একশ কোটি টাকা আছে, সে তোমাকে কেনা গোলামের মত ব্যবহার করতে পারে।
তা না হলে এদের মধ্যে আমি এমন মানুষও কেন পাই, যাদের কপালের মাঝখানটায় কালো দাগ, অর্থাৎ ধর্মকর্ম করেন। কেন?
সিমি আর এ বিষয়ে কথা বলতে চায় না। তুমি তো সাঙ্ঘাতিক নেগেটিভ মেয়ে, রিয়া, এতটা ভাবি নি।
নেগেটিভ না হয়ে এদেশে নিঃশ্বাস নিতেও পারবে না তুমি। নেগেটিভ না হলে রাতে শান্তি নিয়ে ঘুমাতেও পারবে না, সে হেসে ফেলল। তবে একেবারে নেগেটিভ থেকে যাত্রা শুরু করলে পজিটিভে হয়তো একদিন পৌঁছাতে পারব। সেই পৌঁছানোটা হবে অনেক বেশি আনন্দের।"
‘শকুনের ডানা’
ঢাকা
৫ই ডিসেম্বর ২০১৬”
―
Topics Mentioning This Author
| topics | posts | views | last activity | |
|---|---|---|---|---|
| 21st Century Lite...: DSC Prize for South Asian Literature | 7 | 33 | Aug 21, 2016 09:07AM | |
| Around the World ...: Bangladesh | 16 | 1112 | Jan 09, 2025 08:48PM |





















